১১. নির্বাচিত বিবাহ

১১. নির্বাচিত বিবাহ

যুক্তিসঙ্গতভাবে বিচার করলে বিবাহকে সন্তানদের অনুপস্থিতি দ্বারা চিহ্নিত করা যায়; উর্বর বিবাহ-প্রথাকে সহজেই অদ্রবনীয় মনে করা যায়। কারণ শুধুমাত্র শিশুরাই যৌনসম্পর্কেকে সামাজিক গুরুত্ব দিয়েছে এবং তার প্রতি আরোপ করেছে আইন গত প্রসারের বোধশক্তি। অবশ্য চার্চ একথা স্বীকার করে না। সেইন্ট পলের প্রভাব অনুসারে তারা এখনো মনে করে বিবাহ হলো কৌমার্য লাম্পট্যের বিকল্প প্রথা! সন্তান-উৎপাদন অপেক্ষা এর গুরুত্ব বেশি। সাম্প্রতিক কালে পুরোহিতরা পর্যন্ত এই ব্যাপারে অবগত আছেন যে, নারী অথবা পুরুষ যৌনসঙ্গমের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যে বিবাহ অবধি অপেক্ষা করে না।

পুরুষরা যেহেতু গণিকাদের প্রতি অনুরক্ত এবং আসক্তিকে সুচারুরূপে গোপন রাখতে পারে তাই তাদের মার্জনা করাটা তুলনামূলকভাবে সহজ কিন্তু ব্যবসায়িক বারাঙ্গনা ব্যতিত মহিলাদের ঐতিহ্য সম্পন্ন নৈতিকতাবাদীরা অসৎ মনোনাবৃত্তির কঠিন বাঁধনে আনতে চান। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানি ও স্ক্যানডিনেভিয়াতে যুদ্ধোত্তরকালে বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেছে। সম্মানিত পরিবারের মেয়েরা তাদের পরিত্রতা রক্ষার জন্যে আর ভাবিত নন। অপর পক্ষে তরুণ যুবকরা গণিকাদের কাছে আশ্রয় নেবার পরিবর্তে সমশ্রেণির রমণিদের সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে এবং যদি তারা যথেষ্ট বিত্তবান হয়, তাহলে বিবাহ করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছে। আমার মনে হয় নিয়ন্ত্রণ ও অটোমোবাইলসের জন্যে এই প্রথা ইংল্যান্ড অপেক্ষা আমেরিকায় অধিকতর শক্তিশালী। নিয়ন্ত্রণের ফলে আনন্দঘন ভোজে সকলেই কিছু না কিছু মাত্রায় মদ্যপ হয়ে যায়। যেহেতু মেয়েদের বিরাট অংশের গাড়ি আছে তাই তারা সহজে বাবা-মা ও প্রতিবেশিদের দৃষ্টি এড়িয়ে প্রেমিকদের সঙ্গে পালিয়ে যেতে পারে।

বিচারক লিনডসের গ্রন্থাবলিতে এই ঘটনাবলির বর্ণনা আছে। প্রবীণরা তাকে অভিযুক্ত করে কিন্তু যুবকরা করে না। সাধারণ পথিকের মতো আমি তরুণ সমাজকে এ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে ব্যথা পেয়েছি। তরুণা এই বোধকে অস্বীকার করতে চাইছে না। সমগ্র আমেরিকা জুড়ে এই ঘটনা আজ স্বীকৃত সত্য যে, মেয়েদের এক বিরাট অংশ, যারা পরবর্তীকালে বিবাহ করে এবং সর্বোচ্চ সম্মান পায়, তারা যৌন অভিজ্ঞতা লাভ করেছে প্রায়শ একাধিক প্রেমিকে সঙ্গে। এমনকি যেখানে চরম সম্পর্কে গড়ে ওঠেনি সেখানে তাদের দেহ ও অশ্লীল আচরণ এত বেশি মাত্রায় ঘটে যে, সম্পূর্ণ সহবাসের অনুপস্থিতিতে তাকে মানসিক বিকৃতিরূপে চিহ্নিত করা যায়।

বর্তমানের এই অবস্থাবলিকে আমি আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করে সন্তোষজনক বলতে পারি না। ঐতিহ্যবাদী নীতিবাগীশরা কয়েকটি অপ্রাসঙ্গিক বৈশিষ্ট্যসমূহকে চাপিয়ে দিয়েছেন এবং যতদিন চিরন্তন নৈতিকতার পরিবর্তন না ঘটবে, আমার মনে হয় না ততদিন এইসব অনভিপ্রেত বৈশিষ্ট্যগুলি অদৃশ্য হবে। বন্দি অ্যালকোহলের থেকে স্বাধীনতাহীন যৌনতা নিন্দনীয়। আমার মনে হয়, কেউই অস্বীকার করবেন না যে, তরুণ সমাজের মধ্যে মদ্যপতা বিপুল পরিমাণে বেড়ে গেছে। এবং তরুণীদের মধ্যে, বিশেষ করে বিত্তবান আমেরিকাবাসী পরিবারে, নিয়ন্ত্রণের পরে এই মাত্র বেড়েই চলেছে।

ঐ আইনটি পরিবেষ্টন করার সময় অবশ্য কিছু কিছু মিথ্যা ভাষণ ও চাতুর্যের অহঙ্কারের অবতারণা করা হয়। যথন মদ্যপান সম্পর্কিত আইনটিকে পরিবেশিত করা হয় তখন সাধারণভাবেই যৌন প্রথাগুলিকে পরিবেশন করা হয়। এখানেও বেপরোয়া মনোবৃত্তি কামোদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এর ফলে অল্পবয়েসিদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক তার সম্ভাব্য চরম নিবোধ অবস্থায় পৌঁছে দেয়। কেননা তার মধ্যে স্নেহ থাকে না, থাকে উন্মাদনা ও তরল আসক্তি। মদের মতো যৌনতাকে কেন্দ্রিভূত ও তিক্ত অবস্থায় গ্রহণ করা যায়। কেননা এই বিষয়টি দুটি কর্তৃপক্ষের নিষেধকে অগ্রাহ্য করতে পারে। বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে সম্মানিত যুক্তিবাদীরা সার্বিক পরিবর্তন প্রয়াসী। আমার মনে হয় আমেরিকার ক্ষেত্রে এটি বিবাহ ব্যতীত সম্পর্কের প্রতি আরোপিত হওয়া উচিত। এই অবধি নৈতিকতাবাদীরা সফল হয়েছেন। তাঁরা কৌমার লাম্পট্যকে প্রতিরোধ করতে পারেন নি, পক্ষান্তরে যৌনতাকে রসালো করে এর বিরোধী অবস্থার সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তারা একটা ব্যাপারে সফল হয়েছেন, তারা প্রমাণ করেছেন যে, এটি হলো অনাকাঙ্ক্ষিত? যেমনভাবে তারা সমস্ত অ্যালকোহলকে বিষাক্ত বলে প্রমাণ করতে চায়।

দৈনন্দিন সাহচর্যতা, সাধারণ কাজ এবং সমস্ত মনস্তাত্ত্বিক ঘনিষ্ঠতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যৌনতা ভোগের বিষয়টিকে তারা নিন্দা করেছেন। নিরীহ শ্রেণির যুবসমাজ চরম যৌন সম্পর্কের অবস্থায় উপনীত হতে পারে না কিন্তু নিজেদের তৃপ্ত রাখে তৃপ্তিহীন দীর্ঘ যৌন উত্তেজন অবস্থার মধ্যে। এই জাতীয় অবস্থাকে আমরা স্নায়ুগত কারণে ক্ষতিকারী বলতে পারি এবং এই ঘটনা পরবর্তীকালে অনুভূত যৌন আনন্দকে কঠিন অথবা অসম্ভব করে তোলে। আমেরিকার যুব সমাজের মধ্যে যে ধরনের যৌন উত্তেজনা প্রচলিত আছে তার আর একটি ক্রটি হলো, সেই উত্তেজনা কাজে অলসতা আনে অথবা নিদ্রা হরণ করে। কেননা তার সঙ্গে এমন নৈশভোজের সংযুক্তি আছে, যে ভোজনগুলি গভীর রাত্রি অবধি চলে।

যখন আনুষ্ঠনিক নৈতিকতার নির্দিষ্ট কেন্দ্রে অবস্থান করছে, তখন আমরা মাঝে মধ্যে অনুভূতি হতাশার সম্ভাবনাকে শোকাবহ ঘটনা বলতে পারি। দুর্ভাগ্যক্রমে এমনও ঘটে যায় যে, অনেক সময় নৈতিকতাবাদী পিতা-মাতার কানে কোনো তারুণের কাজ কর্মের খবর আসে। এবং কলঙ্কের বিপদগ্রস্ততার মধ্যে সৃষ্টি হয় সু উপযুক্ত চেতনা। এবং যেহেতু আমেরিকার তরুণ সমাজের পক্ষে জন্মনিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ব্যাপারে নিখুঁত জ্ঞান অর্জন করা সম্ভবপর, তাই অনভিপ্রেত ঘটনা বিরল নয়। এই সব ঘটনাকে আকস্মিক পারম্পর্য দ্বারা চিহ্নিত করার চেষ্টা করা যায়। কিন্তু এই প্রয়াসটি হলো বিপজ্জনক। কেননা বেআইনি কাজকে কোনোমতেই গোপন রাখা যায় না।

.

তরুণদের নৈতিকতার সঙ্গে সম্প্রতি আমেরিকার প্রযুক্ত বৃদ্ধাদের নৈতিকতার বিরাট পার্থক্য হলো আরেকটি। প্রকৃত অন্তরঙ্গতা অথবা বন্ধুত্ব না থাকায় বাবা মায়েরা তাদের ছেলেমেয়েদের জ্ঞান কিংবা সহানুভূতি দিতে পারে না।

মূৰ্ছাগ্রস্ত আলোড়ন না ঘটিয়ে বিস্ফোরক কলঙ্কের অনুপস্থিতিতে তরুণ সমাজ তাদের বাবা-মাকে অসুবিধার কথা জানাতে পারে না। এমনভাবে বাবা-মা ও সন্তানের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে। এখন বাবা-মায়েরা শিশুর কৈশোরোত্তর যুগে কোনো দরকারি সাহায্য পালনে অক্ষম হন। ট্রোবিয়াট দ্বীপপুঞ্জবাসীরা কত বেশি মাত্রায় সুসভ্য! সেখানে একজন পিতা অনায়াসে তাঁর কন্যার প্রেমিককে বলতে পারে– তুমি আমার মেয়ের সঙ্গে শুয়েছো, ঠিক আছে, তুমি ওকে বিয়ে করো।

অনেকগুলি অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও প্রবীণ ও নবীনদের তুলনামূলক আলোচনায় নিঃসন্দেহে বলা চলে, এই প্রথার অনেকগুলি শুভ দিক আছে। তারা সংস্কার থেকে মুক্তি পায়, যৌক্তিক ভীতিবিহীন কর্তৃপক্ষ দ্বারা কম মাত্রায় আচ্ছন্ন থাকে। আমার মনে হয় সর্বদা তারা কম নিষ্ঠুর হবার চেষ্টা করে, হৃদয়হীন হয় না বরং বয়স্কদের অপেক্ষা কম মাত্রায় হিংসাশ্রয়ী হয়ে পড়ে।

আমেরিকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো যৌনতা দ্বারা অতৃপ্ত বন্য প্রবৃত্তিগুলির মুক্তির জন্যে হিংসার আশ্রয় নেওয়া। এমনও আশা করা যায় যে, আজকের যুবকরা একদিন মধ্য বয়সে পরিণত হবে। তারা যৌবনের ঘটনাবলি ভুলে যেতে পারবে না এবং যৌন অভিজ্ঞতাকে সহ্য করে নেবে যেগুলিকে আজকের দিনে প্রযুক্ত গোপনীয়তা সার্থক করে তুলেছে।

ইংল্যান্ডের অবস্থা বহুলাংশে আমেরিকার মতো। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ দ্বারা এই অবস্থাকে অতিক্রম করা যায়। আমি বিশ্বাস করি শুধুমাত্র ইংল্যান্ডে নয়, সম্ভবত সমগ্র ইউরোপীয় মহাদেশে, সর্বশেষ তৃপ্তি দ্বারা যৌন অভিজ্ঞতা লাভের ব্যাপারটি বিরল। ইংল্যান্ডের সম্মানিত লোকেরা পুরো ঘটনা সম্পর্কে আশান্বিত হয়ে আমেরিকা জাতিকে অবমূল্যায়িত করে। অবশ্য এর কিছু সম্মানজনক ব্যতিক্রম রয়েছে। ইংল্যান্ড ও আমেরিকার প্রথাগত অবস্থিতির মধ্যে সামান্য তফাৎ আছে।

বিচারক বেন লিণডসে যিনি ডেনভারের শিশু আদালতের দায়িত্বে বহু বছর অতিবাহিত করেছেন এবং তার ফলে তথ্য সংগ্রহে অপ্রতিদ্বন্দ্বী সুযোগ সুবিধা অর্জন করেছেন, তিনি বিবাহের এক নতুন প্রথার উদ্ভাবন করেছেন। তিনি এর নামকরণ করতে চান সাহচর্য মূলক বিবাহ। দুর্ভাগ্যবশত তিনি তাঁর পদটি হারালেন। কেননা দেখা গেল যে, যুবসমাজের মধ্যে আনন্দ প্রদান করার পরিবর্তে তিনি তাদের পাপ চেতনা দিচ্ছেন। তাই কু-ক্লাকস্ ক্লান এবং ক্যাথলিকরা সমবেতভাবে তাকে অপসারিত করল। সাহচর্যমূলক বিবাহ প্রস্তাবটি হলো বিবেচনাপ্রসূত নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন। যুবসমাজের যৌন সম্পর্কের মধ্যে কিছু পরিমাণ নিরাপত্তা ও নির্দিষ্টতা প্রবর্তনের জন্যে এটি একটি প্রয়াস মাত্র, যার ফলে সমকালীন বিচার হীন যৌন সংসর্গকে অপসারিত করা যায়।

.

তিনি সেই অনিবার্য সূত্রটি উদঘাটিত করেছেন যে, অর্থাভাবে যুবকরা বিবাহ থেকে বিরত হয় এবং বিবাহের জন্যে আকাঙ্ক্ষিত অর্থ আংশিকভাবে ব্যয়িত হয় সন্তান-সন্ততিদের জন্যে। আংশিক ব্যয়িত হয় স্ত্রীকে প্রতিপালনের জন্যে। কেননা স্ত্রী আর নিজস্ব জীবিকা অর্জন করতে পারে না। তিনি মনে করেন যে, যুবসমাজ নতুন ধরনের বিবাহ পদ্ধতির মধ্যে প্রবেশ করবে, তিনটি বৈশিষ্ট্য দ্বারা এটি সাধারণ বিবাহ প্রথা হতে পৃথক।

প্রথাসিদ্ধভাবে সন্তান ধারণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট নিয়মনীতি থাকবে না এবং প্রাপ্তব্য শ্রেষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি তরুণ দম্পতাঁকে সরবরাহ করা হবে। যতদিন পর্যন্ত সন্তান উৎপাদিত হবে না এবং স্ত্রী গর্ভবতী হবেনা, পারস্পরিক সম্মতি দ্বারা বিচ্ছেদকে আইনসিদ্ধ করতে হবে এবং বিচ্ছেদের সময় স্ত্রী কোনো অর্থসাহায্য পাবে না। তিনি যে মতবাদ প্রকাশ করেছেন সে সম্পর্কে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হলো, যদি আইন দ্বারা এমন পদ্ধতিকে প্রতিষ্ঠিত করা যায় তাহলে বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণী, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীগণ প্রবেশ করবে অপেক্ষাকৃত অধিক স্থায়ী জীবনসঙ্গি নির্বাচন অবস্থায়, যা থেকে সাধারণ জীবন সৃষ্টি হবে এবং যা তাদের বর্তমান যৌন সম্পর্কের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মদ্য উৎসবের বৈশিষ্ট্যসমূহ থেকে মুক্ত থাকবে।

তিনি প্রমাণ করেছেন, যে সমস্ত ছাত্ররা বিবাহিত তারা অবািহিত ছাত্রের তুলনায় বেশি কর্মঠ হয়। এ ব্যাপারটা অনিবার্য স্বীকৃতি পেয়েছে যে, নৈশভোজ ও অ্যালকোহল সংক্রান্ত উন্মাদনার আলোড়ন ও উন্মত্ততার তুলনায় কর্তব্য ও যৌনতাকে আরও সহজে স্থায়ী সম্পর্কে গ্রথিত করা যায়। এ কথার স্বপক্ষে কোনো যুক্তি নেই যে, কেন দুই তরুণ মানব-মানবীর যৌনজীবনের ব্যয় পৃথক জীবনের খরচ অপেক্ষা অধিক হবে। যে সমস্ত অর্থনৈতিক কারণে বর্তমানে বিবাহকে বিলম্বিত করা হয় তার আর অস্তিত্ব থাকে না। এ বিষয়ে আমার সামান্যতম সন্দেহ নেই যে, যদি বিচারক লিন্ডসের প্রকল্পকে আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করা হয় তাহলে সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়বে এবং সকলে একমত হবেন যে, সেই প্রভাবকে নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করে অনুমোদন সাপেক্ষ করতে হবে।

শ্রদ্ধাশীল সামাজিক ব্যক্তিরা এই মতবাদকে সর্বান্তকরণে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বিরুদ্ধবাদীরা সংবাদপত্রে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করেন। তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা হয় যে, তিনি জীবনের পবিত্রতাকে আক্রমণ করেছেন এবং বলা হয় যে, বিবাহের মধ্যে সন্তান উৎপাদননের বিষয়টি অন্যতম উপাদানরূপে সংযোজিত না করে তিনি আইন স্বীকৃত কামনার দরজাকে উন্মুক্ত করছেন। এমনও বলা হয়েছিল যে, তিনি বহিবৈবাহিক যৌনসম্পর্কের সুযোগকে বাড়িয়ে তুলেছেন এবং তিনি পবিত্র আমেরিকান নারীত্বকে কলঙ্কিত করেছেন। যে নারীত্বের সান্নিধ্যে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর বয়স অবধি উফুল্ল চিত্তে অবস্থান করেন।

এইসব অভিযোগ আরোপিত হলেও আমি বিশ্বাস করি, যারা এই অভিযোগ করেছে তাদের সকলে এতে বিশ্বাসী নয়। বিচারক লিন্ডসের বিচারে আনীত অনেকগুলি যুক্তি আমি শ্রবণ করলাম। কিন্তু অবশেষে আমার মনে এই ধারণা জন্মাল যে, ঐ সকল যুক্তির মধ্যে দুটি বিষয়ের বাধা আছে।

প্রথমত, মহান যীশু বিচারক লিন্ডসের প্রস্তাবনাগুলিকে হয়তো অনুমোদন করবেন এবং দ্বিতীয়ত, আমেরিকান স্বর্গীয়তার উদারনৈতিক মনোভঙ্গি এগুলিকে অনুমোদন করবে না। এই যুক্তিদ্বয়ের মধ্যে শেষোক্তটিকে অধিকতর ভাব সম্পন্ন ও সুপ্রযুক্তি বলে মনে হয় কেননা অপরটি সম্পূর্ণ অবান্তর। সেই কারণে গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো মানুষ কিন্তু এমন কথা বলেন নি যাতে মনে হতে পারে যে, বিচারক লিডসের প্রস্তাবনাগুলি মানবিক আনন্দের পরিমাণ কমিয়ে দেবে এই ঘটনা আমাকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে যে, ঐতিহ্য সম্পন্ন নৈতিকতাবাদীরা এ ভাবনাকে সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন বলে মনে করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে, যৌনমূলক বিবাহ সর্বাংশে সুপ্রযুক্ত হতে পারে না, যদিও এর দ্বারা অনেক সন্ত্রস্তু আহত হয়। আমি মনে করি না এই ব্যবস্থা সামাজিক সীমার বাইরে অবস্থান করবে। আমি বিশ্বাস করি, যে সমস্ত যৌনসম্পর্ক সন্তান উৎপাদন কেন্দ্রিক নয় সেগুলোকে পবিত্র ব্যক্তিগত ঘটনা হিসেবে সম্মান করতে হবে এবং যদি একটি পুরুষ ও আরেকটি নারী সন্তানবিহীন অবস্থায় একত্রে বসবাস করতে চায় তাহলে সেটি হবে তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। সে সম্পর্কে কেউ মন্তব্য করতে পারে না।

আমার মনে হয় পুরুষ অথবা নারী যেন পূর্ববর্তী যৌন অভিজ্ঞতা ব্যতিত সন্তান বহনকারী গুরুত্বপূর্ণ বিবাহকার্যে প্রবেশ না করে। একথা চিন্তা করার সপক্ষে যথেষ্ট যুক্তি আছে। প্রথম যৌন অভিজ্ঞতার হবে এমন এক ব্যক্তির কাছ থেকে যার পূর্ববর্তী জ্ঞান আছে। কেননা যৌনসহবাস মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি নয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত এর মধ্যে কোনো নির্দিস্ট উদ্দেশ্য না থাকে ততক্ষণ এটি ফলপ্রসূ হতে পারে না। এই যুক্তি ছাড়াও আমরা বলতে পারি যে, পারস্পরিক যৌন সহনশীলতা সম্পর্কে উপযুক্ত জ্ঞানের অবর্তমানে কোনো মানুষ যেন জীবনব্যাপী সম্পর্কের মধ্যে প্রবেশ না করে। এটি হলো সেই ঘটনার মতোই অবাস্তব যেখানে একজন মানুষ কেনার আগে বাড়িটি দেখার অনুমতি পাচ্ছে না।

যদি বিবাহের জৈবিক কর্তব্যগুলিকে যথাযথ স্বীকৃতি দেওয়া হয় তাহলে বলা উচিত যে, স্ত্রীর প্রথম গর্ভাবস্থার পূর্বে কোনো বিবাহকেই আইনগ্রাহ্য বন্ধনে পরিণত করা উচিত নয়। যদি যৌনসহবাস অসম্ভব হয় তাহলে সমকালীন বিবাহকে অর্থহীন করা যেতে পারে, অর্থাৎ সন্তান অপেক্ষা যৌন-সহবাসকেই অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

আংশিকভাবে এই মতবাদ সেই অবস্থার ওপর নির্ভর করে যে সৃষ্টি আকাক্ষা এবং নিছক যৌন-আনন্দের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা এনেছে গর্ভনিরোধক ঔষধি। গর্ভ নিরোধক ঔষধিরা যৌনতা ও বিবাহের পুরো ভাবনাটিকে রূপান্তরিত করেছে এবং অপূর্ব অপ্রযুক্ত বিষয়গুলির বিশ্লেষণকে অপরিহার্য করেছে।

গণিকাবৃত্তির ক্ষেত্রে যেমন ঘটে তেমনভাবে মানুষ শুধুমাত্র যৌনতার তাগিতে একত্রিত হতে পারে অথবা বিচার লিন্ডসের সাহচর্যমূলক বিবাহ পদ্ধতিতে অনুসৃত যৌন-উপাদানমূলক অন্তরঙ্গতার ভিত্তিতে মিলিত হতে পারে, অথবা পারিবারিক ব্যবস্থা বহনকল্পে বিবাহে আবদ্ধ হতে পারে। এ সবকটি হলো বিভিন্ন অবস্থা। এর এমন কোনো নৈতিকতা নেই যা আধুনিক পারিপার্শ্বিকতায় এই তিনটি অবস্থাকে পরিণত করবে বাছবিচারহীন সত্তায়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *