০৭. যৌনজ্ঞানের প্রতি নিষেধাজ্ঞা

০৭. যৌনজ্ঞানের প্রতি নিষেধাজ্ঞা

নতুন যৌননৈতিকতা প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকল্পে প্রথমেই আমরা প্রশ্ন করতে পারি যে, যৌন সম্পর্ককে কিভাবে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে। যৌন সংক্রান্ত তথ্য থেকে নারী, পুরুষ ও শিশুকে সরিয়ে রাখার জন্যে কৃত্রিম অজ্ঞতার আচরণ সৃষ্টি করার মধ্যে কি কোনো মঙ্গল লুকিয়ে আছে? এই বিষয়টিকে সর্বপ্রথম উত্থাপন করার অন্তরালে আমার একটি নিজস্ব যুক্তি আছে।

বর্তমান অধ্যায় আমি পাঠকের মনে এই প্রশ্ন তুলতে চাই, যৌন সংক্রান্ত ব্যাপারে অজ্ঞতা ব্যক্তিগত সত্তার কাছে অসাধারণ ক্ষতিকারকরূপ বিবেচিত হয়। সেই কারণে যে ব্যবস্থা অজ্ঞতার চিরন্তরতায় বিশ্বাসী তাকে কি গ্রহণযোগ্য বলা যায়? আমি বলবো যৌন নৈতিকতা হলো এমন একটি বিষয় যার আলোচনা করতে হবে শিক্ষিত মানুষ সঙ্গে, আমরা কখনোই তত্ত্বের উপর নির্ভর করবো না।

যুক্তির অচ্ছেদ্য আলোক দ্বারা প্রতিভাত সুবিস্তৃত মতাদর্শের এই সামান্য অংশটি এযাবকাল সরকার অথবা রক্ষিবাহিনী দ্বারা অস্বীকৃত রয়ে গেছে। এই মতাদর্শের মূল বক্তব্য হলো, কয়েকটি বিরল ব্যতিক্রম ভিন্ন সৎচরিত্র কখনো অজ্ঞাত অথবা বিদ্যাবিমুখতা দ্বারা গঠিত হয় না। এখানে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে, যদি A-র ইচ্ছানুসারে কোন B একটি কাজ করে যার মধ্যে A-র লাভ হবে কিন্তু B-র কোনো লাভ নেই। তাহলে B A এর প্রকৃত দুর্বলতাকে অনুধাবন করতে সক্ষম হবে।

স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি সুস্পষ্টরূপ অনুধাবিত হয়। কিন্তু এটি নীতিশিক্ষার উচ্চতর বিভাগের অন্তর্গত নয়। এই নীতি সরকারকে বিপুল পরিমাণে সাহায্য করে, বিশেষ করে তথ্য গোপন রাখার ব্যাপারে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, যুদ্ধের পরাজয়ের সংবাদে সরকারের পতন ঘটতে পারে। এর মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িতে আছে কিন্তু A সরকারের উদ্দেশ্য সাধিত হয় কি? যৌন সভ্যতা যদি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিভাগের অন্তর্গত, কিন্তু A ব্যাপারটি উৎসগতভাবে আংশিক ক্ষেত্রে একই মনোভঙ্গির ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রথমে শুধুমাত্র নারীজাতিকে অজ্ঞতার অন্ধকারে রাখা হলো এবং তাদের অজ্ঞতার সুযোগে পৌরুষ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হলো। ক্রমে ক্রমে রমণিরা মনে করল যে, অজ্ঞতা তাদের পুণ্যচরিত্রের পক্ষে অপরিহার্য। আংশিকভাবে তাদের প্রভাবে স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে শিশু-কিশোররা যৌন বিষয় যতটা সম্ভব অজ্ঞ হয়ে যায়।

এই অবস্থায় মনোভঙ্গিতার আসল উদ্দেশ্য হারিয়ে অকারণ নিষেধের সীমানায় প্রবেশ করে। অজ্ঞতা গ্রহণযোগ্য কিনা সে প্রশ্ন পরীক্ষিত হয় নি। এবং অজ্ঞতাকে ক্ষতিকারক করার প্রয়াসকে বেআইনি ঘোষণা করা হলো।

এই বিষয়ে প্রমাণ স্বরূপ আমি ১৯১৯ সালের ২৫ এপ্রিল তারিখের ম্যানচেস্টার গারডিয়ান পত্রিকার অংশবিশেষ উপস্থাপিত করছি।

মিসেস মেরি উয়ার ডেনেস্ট্রের বিচার ব্যবস্থার বহিঃপ্রকাশে আমেরিকার লিবারলরা বিষাদগ্রস্ত হয়েছেন। গতকাল ওই ভদ্রমহিলাকে ডাকযোগে অশ্লীল সাহিত্য পাচারের অপরাধ দোষী সাব্যস্ত করেন ব্রুকলিনের ফেডারেল জরি। মিসেস ডেনেট হলেন অতিমাত্রায় প্রশংসিত এবং বিপুল প্রচারিত পুস্তিকার লেখিকা, যার মধ্যে সম্ভ্রান্ত ভাষায় শিশুদের যৌন সংক্রান্ত প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। তাঁকে পাঁচ বছরের কারাজীবন অথবা এক হাজার পাউন্ড জরিমানা অথবা উভয় শাস্তি প্রদান করা হতে পারে।

সুপরিচিতা সমাজ সেবিকা শ্রীমতি ডেনেট হলেন দুই প্রাপ্ত বয়স্ক পুত্রের জননী এবং এগার বছর আগে তাদের শিক্ষার জন্যে তিনি প্রথম পুস্তিকা রচনা করেন। প্রথমে এটি চিকিৎসা সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তারপর সম্পাদকের অনুরোধে পুস্তিকা পুনর্মুদ্রিত হয়। বিশিষ্ট চিকিৎসকবৃন্দ, পুরোহিতগণ এবং সমাজতাত্ত্বিকেরা এই পুস্তিকার ব্যাপক ব্যবহার করেছেন, হাজার হাজার কপি বিতরণ করা হয়েছে ইয়ং মেনস, এবং ইয়ং উইমেনস ক্রিশ্চিয় এসোসিয়েশন দ্বারা। নিউইয়র্কের অভিজাত উপনগরী ব্রনক্সভিলের মিউনিসিপ্যাল বিদ্যালয়ে এটি ব্যবহৃত হয়েছে।

নিউ ইংল্যান্ড থেকে আগত ফেডারেল জার্জ ওয়ারেন্ট বি. বরজ, যিনি প্রধান আসন গ্রহণ করেন, সমস্ত উদ্ধৃত তথ্যাবলিকে অসমর্থন করেন এবং মিসেস ডেনেটের স্বপক্ষে সাক্ষ্য দেবার অধিকার থেকে বিশিষ্ট শিক্ষাব্রতী ও চিকিৎসকদের বিরত করেন। শ্রীমতি ডেনেটের রচনার সমর্থনে বিশিষ্ট সাহিত্যিকেরা কিছু বলার অধিকার পান নি। এই বিচার কার্যের অন্যতম বিষয় ছিল ব্রুকলিনের বয়স্ক বিবাহিত পুরুষবৃন্দ দ্বারা গঠিত জুরি কর্তৃক উচ্চৈঃস্বরে পুস্তিকাটি পাঠ। ঐ পুরুষদের মধ্যে কেউ-ই এইচ. এল. মেনসক্যানো অথবা হ্যাভলক ইলিসের রচনা পাঠ করেন নি। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, প্রসিকিউটিং অ্যাটর্নি ওই লেখকদ্বয়ের লেখা আদালতে পেশ করেন।

নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড পত্রিকার মতবাদকে সমর্থন করা যায়। এই পত্রিকা মতপ্রকাশ করেছে যে, শ্রীমতি ডেনেটের রচনাকে প্রকাশ করার অনুমতি দেওয়া না হলে, আমেরিকার তরুণ প্রজন্মের কাছে যৌন সম্পর্কিত সৎ জবানবন্দি দাখিল করা যাবে না। উচ্চ আদালতে আবেদনের জন্যে মামলাটি গৃহীত হয়েছে। রুদ্ধশ্বাস আকর্ষণে এখন ওই আদালতের রায়ের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে।

 আমেরিকাতে যে ঘটনা ঘটেছে তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে ইংল্যান্ডে কেননা এই সংক্রান্ত আইন হলো আমেরিকার মতো। এমন দেখা গেছে যে, আইন তরুণ প্রজন্মকে যৌন তথ্য সরবরাহের বিষয়টি অনুমোদন করে না এমনকি এ সম্পর্কে বিশেষত্বের সুচিন্তিত মতামত প্রয়োগ করা হলেও। আরও পরিলক্ষিত হয়েছে যে, যখন এ ব্যাপারে সরকারি উকিলের সাহায্য নেওয়া হয় তখন প্রসিকিউসন এমনভাবে জুরিকে গঠন করে যাতে তার মধ্যে থাকে সম্পূর্ণ অজ্ঞ পুরুষবৃন্দ, যারা কখনো কিছু পাঠ করে নি, তার ফলে বিচারবুদ্ধিসহকারে মামলাটি অনুধাবন করতে পারে না।

আইন ঘোষণা করে যে, শিশু ও তরুণরা যৌন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবজ্ঞাত থাকবে। এবং সেই জ্ঞান সৎ অথবা অসৎ কিনা সে প্রশ্ন হলো একেবারে অপ্রাসঙ্গিক। অবশ্য যেহেতু আমরা আদালতে অবস্থান করছি না এবং যেহেতু বর্তমান রচনাটি শিশুদের উদ্দেশ্যে রচিত হয় নি, তাই আমরা এই প্রশ্ন নিয়ে তর্ক করার অনুমতি পেতে পারি যে, আনুষ্ঠনিকভাবে শিশুদের অজ্ঞতার অন্ধকারে রাখার ঐতিহ্য সম্পন্ন প্রথাটি গ্রহণযোগ্য অথবা বর্ণনীয় কিনা।

বাবা-মা ও শিক্ষকদের দ্বারা প্রদত্ত সুপ্রাচীন অজ্ঞতার ধারাটিকে শিশুদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিশুরা কখনও তাদের পিতামাতকে নগ্ন অবস্থায় দেখেনি এবং আদিম যুগের পরে (অবশ্য যদি বাসস্থানের যথেষ্ট বিস্তার থাকে। তারা বিপরীত লিঙ্গের ভাইবোনেদের উলঙ্গ অবস্থায় দেখেনি। তাদেরকে শেখানো হয়েছে তারা যেন কখনও যৌন অঙ্গ স্পর্শ না করে এবং সে বিষয়ে একটি কথাও না বলে। যৌন সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে চুপ-চুপ জাতীয় বিষাদগ্রস্ত কণ্ঠস্বরে। পিতামাতারা জেনে এসেছেন যে, শিশুদের মানুষ করতে হবে গুজবেরি ঝোপের মধ্যে।

আগে অথবা পরে শিশুরা সব ব্যাপারে জেনে ফেলে। সাধারণত অন্যান্য শিশুদের কাছ থেকে ওইসব নোংরা বিশেষণে অভিহিত শিশুর দল সঙ্গোপনে সংবাদ পাচার করে। শিশুরা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, তাদের বাবা-মা পরস্পরের সঙ্গে যে ব্যবহার করছে তা হলো নিন্দনীয় এবং সে সম্পর্কে তারা নিজের লজ্জিত, কেননা এ ব্যাপারটিকে গোপন করার জন্যে তাদেরকে অনন্ত কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে।

তারা আরো জানতে পারে যে, যাদের ওপর তারা অন্ধভাবে নির্ভর করেছিল তারা তাদের সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে ঠকিয়েছে। বাবা-মা, বিবাহ ও বিপরীত লিঙ্গের প্রতি এমনভাবে গড়ে ওঠে এক অপ্রতিষেধ্য বিষাদ মনোভাব। মুষ্টিমেয় কজন পুরুষ ও মহিলা ঐতিহ্য আশ্রিত পদ্ধতি দ্বারা যৌনতা ও বিবাহ সম্পর্কে সুচারু মনন লাভ করে।

তাদের শিক্ষা এই সত্য প্রকাশ করে যে, গোপনীয়তা ও মিথ্যা ভাষণকে প্রশংসনীয় পুণ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সমস্ত দোষ পিতামাতা ও শিক্ষকবৃন্দের। বিবাহ অন্তর্বতী যৌন সম্পর্ক কিছু মাত্রায় হতাশা উদ্রেককারী। মানুষ তার প্রজাতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জান্তব প্রবৃত্তি গ্রহণ করে এবং নারীরা দুঃখজনক কর্তব্যে হয় আত্মনিবেদিতা। এই মনোভাব-ই বিবাহকে নারী ও পুরুষ উভয়ের কাছেই অতৃপ্তির উৎস করেছে। সহজাত তৃপ্তির অভাবে মানুষ নৈতিকতা সম্পর্কে নিষ্ঠুর মনোভাব অর্জন করতে বাধ্য হয়।

যৌনশিক্ষার ব্যাপারে গোঁড়া নীতিবাগীশের মন্তব্যটি আমি নিম্নে উপস্থিত করছি–

যৌন কামনা হলো অত্যন্ত শক্তি বৃদ্ধির পর্যায়ে এটি বিভিন্ন আকার ধারণ করে। শৈশবে এই বাসনা সীমাবদ্ধ থাকে শরীরের কয়েকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্পর্শ করা এবং তা নিয়ে খেলা করার মধ্যে। বালক অবস্থায় সেই বাসনা নিষিদ্ধ বিষয় এবং অশ্লীল বাচনে রূপান্তরিত হয়। কিশোর বেলায় সুপ্ত কামনা আরও পরিপূর্ণ আকার ধারণ করে। এ বিষয়ে কোনো নিয়ম নেই যে, যৌবন ভাবনা থেকেই যৌনবিকৃতির সূত্রপাত। পবিত্রতার পথে অগ্রগামী হওয়ার সবচেয়ে বড় উপায় হলো যৌনতার সঙ্গে সম্পর্ক বিহীন বিষয়ে তরুণ সমাজকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিয়োজিত রাখা।

যৌন সম্পর্কে তারা কিছুই জানবে না। পরস্পরের সঙ্গে আলোচনার সময় তারা কোনো কথা বলতে পারবে না এবং প্রাপ্ত বয়স্করা এমন ভাব করবেন যে, এ জাতীয় কোনো আলোচ্য বিষয়ই নেই। এইভাবে আমরা বিবাহ রাত্রির আগ পর্যন্ত সম্পূর্ণ অজ্ঞ রাখতে পারি। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সভ্যতা এসে তাকে এমনভাবে আলোড়িত করবে যাতে সে যৌন সম্পর্কে বিশেষ একটি মনোভাব গঠন করতে পারবে। প্রতিটি সুশিক্ষিত নীতিবাগীশ ওই মনোভঙ্গিকে রমণিদের পক্ষে গ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করবেন।

বালকদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়ায় কেননা আমরা আশা করতে পারি না যে, আঠারো-উনিশ বছর বয়স অবধি কিশোররা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অজ্ঞ থাকবে। তাদের সুস্থ প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে উপলব্ধি করতে পারে যে, স্বমেহন উন্মাদ অবস্থার পরিণতি হতে পারে এবং গণিকাদের সঙ্গে সহবাস আবশ্যম্ভাবীভাবে যৌনরোগের সৃষ্টি করতে পারে। এই দুটি উত্তরে কোনটিই সত্য নয়, বলা যায় সৎ মিথ্যা ভাষণ। যেহেতু নীতিবাগীশদের জন্যে এগুলি করা হয়েছে। একটি বালককে শেখানো উচিত যে, কোনো অবস্থাতেই সে যৌন বিষয় কথা বলার অনুমতি পাবে না, এমন কি বিবাহের ক্ষেত্রেও।

এভাবে শিক্ষাপ্রাপ্ত হলে সে বিয়ের পরে তার স্ত্রীকে যৌন-বিরক্তি উপহার দেবে, এভাবে সহধর্মিনীকে রক্ষা করবে চারিত্রিক পতন হতে। বিবাহ ব্যতীত যৌনতা পাপ। বিবাহ দ্বারা উৎপন্ন যৌনতা পাপ নয়। কেনা মানব প্রজাতি সংরক্ষণের জন্যে এই ব্যবস্থার প্রচলন আছে। কিন্তু এটি হলো পুরুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অস্বীকৃত কর্তব্য যা তাকে পতনের শাস্তি দিতে পারে। আমরা যেমনভাবে শল্যচিকিৎসকের কাছে আত্মসমর্পণ করি, এখানেও সেই মনোভঙ্গির প্রয়োজন। দুর্ভাগ্যবশত যৌন উদ্দীপনার মধ্যে যন্ত্রার সংযুক্তি নেই, আছে বিচিত্র আনন্দ। তাই যথাযথ নৈতিক প্রয়াসে একে নিয়ন্ত্রিত করা যেতে পারে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে।

ইংল্যান্ডের আইন অনুসারে সেই জাতীয় প্রকাশনাকে শাস্তিযোগ্য বলা হয়, যা স্ত্রীকে সঙ্গমজনিত যৌনতৃপ্তির শিক্ষা প্রদান করে। আমি একটি পুস্তিকার কথা শুনেছি, যার মধ্যে এই তথ্য থাকায় আদালত কর্তৃক অশ্লীলতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

যৌন ব্যাপারে এই মনোভঙ্গির প্রভাবের কথা আলোচনা করার আগে আমি অন্যান্য ক্ষেত্রে তার ফলশ্রুতি সম্পর্কে কথা বলে নিতে চাই। আমার মতে, সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে ক্ষতিকারক ফল এই, যে ব্যবস্থা তরুণসমাজের বৈজ্ঞানিক ঔৎসুক্যকে দমন করে, বুদ্ধিমান শিশু পৃথিবীর সব ব্যাপারে জ্ঞান-অর্জন করতে চায়, ট্রেন মোটর গাড়ি এবং এরোপ্লেন সম্পর্কে অজস্র প্রশ্ন করে, জানতে চায় বৃষ্টি কেন হয়, শিশু কিভাবে জন্মায়? সবকটি অনুসন্ধিৎসাকে এই পর্যায়ে ফেলা যায় কেননা শিশুটি লব্ধ তথ্য অনুযায়ী কারণ অন্বেষণ করেছে মাত্র। এই আগ্রহই হলো বৈজ্ঞানিক চেতনার মূল উৎস। শিশুটি যখন জ্ঞানের মহৎ আকাঙ্ক্ষা করছে তখন তাকে বোঝানো হলো যে, এই কৌতূহল নিন্দনীয়। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা সম্পর্কে তার সমগ্র চেতনাকে সীমায়িত করা হলো। প্রথমে সে বুঝতে পারে না যে, কোন ধরনের কৌতূহল অনুমোদনীয় এবং কোনগুলি নিন্দনীয়। যদি শিশুজন্মের প্রশ্নটি এড়িয়ে যাওয়া হয় তাহলে কেন এরোপ্লেন সংক্রান্ত প্রশ্নটি বাতিল করা হবে না।

এর ফলে সে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা হলো ক্ষতিকারক অনুভূতি। কোনোকিছু জানার আগে একজনকে উদ্বিগ্নচিত্তে অন্বেষণ করতে হবে যে, এটি মঙ্গল প্রদায়ী অথবা ক্ষতিকারক জ্ঞান কিনা। যেহেতু উপযুক্ত জবাব পাবার আগে পর্যন্ত যৌন কৌতূহলের মাত্রা অত্যন্ত দৃঢ় থাকে তাই শিশুটি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, তার ইচ্ছাধীন যেকোনো জ্ঞানই হলো নিন্দনীয় এবং মানব সমাজ যাকে জোর করে চাপিয়ে দিয়েছে সেই জ্ঞানকে অনিচ্ছা সহকারে গ্রহণ করতে হবে। যেমন হলো নামতার তালিকা।

সমস্ত সরল সুস্থ শিশুর স্বতোৎসারিত প্রবৃত্তি হিসেবে যে জ্ঞানচেতনাকে চিহ্নিত করা যেত তা এইভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হলো এবং শিশুটি পরিণত হলো কৃত্রিমতার আচরণে ঢাকা মূর্খতায়। ব্যক্তিগতভাবে আমি অস্বীকার করতে পারি না যে, নারীরা অপেক্ষাকৃত বোকা। এবং আমি বিশ্বাস করি এর প্রধান কারণ হলো, যৌবনকালে তারা যৌনজ্ঞানের পবিত্র জগত হতে বিচ্ছিন্ন হয়।

বুদ্ধিজৈবিক পতন ছাড়াও নৈতিকতার ক্ষতি হতে পারে। ফ্রয়েড যেমন বিশ্লেষণ করেছেন এবং উৎসাহী সকলেই আবিস্কার করেন যে, নানা ধরনের রঙিন উপকথাকে শিশুরা সহজেই অস্বীকার করে। এইভাবে তাদের মনে ধারণা জন্মায়, বাবা-মায়েরা মিথ্যা ভাবতে অভ্যস্ত। ওরা যদি একটি বিষয় মিথ্যা বলে তবে আরেক বিষয়ে মিথ্যা বলবে। এভাবে বাবা-মায়ের নৈতিক ও বুদ্ধিজৈবিক কর্তৃত্ব ধ্বংস হয়ে যায়। যেহেতু বাবা-মায়েরা যৌনসংক্রান্ত ব্যাপারে গোপনীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করে তাই শিশুদের ধারণা হয় যে, তারাও এ বিষয়ে মিথ্যা বলবে।

তারা পরস্পরের মধ্যে এ ব্যাপারে আলোচনা করে এবং গোপনে স্বয়ং রতিতে প্রবৃত্ত হয়। এইভাবে তারা গোপনীয়তা ও একক সত্তাকে লালিত করে। বাবা-মায়ের ভয় তাদের জীবন ভীতির মেঘে আচ্ছন্ন করে দেয়। হস্তমৈথুনের কুফলগুলি সম্পর্কে বাবা-মা অথবা গুরুজনেরা যে ভয় দেখায়, তাতে শিশুর স্নায়ুগত বৈকল্য দেখা দিতে পারে। শুধুমাত্র শিশুর ক্ষেত্রেই যে এটি প্রযোজ্য নয়, যুবকের প্রতিও গ্রহণীয় তারও প্রমাণ পাওয়া যায় মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে।

যৌন সম্পর্কে প্রথাগত ব্যবস্থাপনার প্রভাবে জড়তা, মূর্খামি, জটিলতা ও বিষাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তারা উন্মাদ অবস্থার প্রান্তসীমায় উপনীত হয়।

বুদ্ধিজীবী মহলে তখন এই সত্যটাকে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, তরুণদের সঙ্গে সঠিক ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু আইন অথবা আইনের রক্ষাকর্তাদের কাছে এই সত্যটা এখনও সম্যকভাবে উপলদ্ধি হয় নি, উদ্ধৃতিসহকারে যার প্রমাণ আমি দিয়েছি এই অধ্যায়ের প্রথম পর্বে। এর ফলে অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, শিশুশিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিচ্ছন্ন মনের অধিকারী যেকোনো মানুষকে বর্তমানে একটি সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়: সে কি আইনের নিয়মনীতি ভাববে? অথবা তার অধীনে অবস্থিত শিশুদের অপ্রতিরোধ্য নৈতিক ও মানসিক অপকর্ষতার দিকে সুনিশ্চিতভাবে ঠেলে দেবে?

আইনের পরিবর্তন করা সহজসাধ্য নয়, কেনা অধিকাংশ বয়স্ক ব্যক্তি বিকৃত মনের অধিকারী এবং তারা ভাবে যে, যৌন আনন্দ নির্ভর করে যৌনতাকে নোংরা ও গোপন ভাবার মধ্যে। আমার ভয় হয়, এখনকার প্রবীণ বা মধ্য বয়স্কদের মৃত্যু না হওয়া অবধি আইনের পরিবর্তন সাধন করা সম্ভব হবে না।

এতক্ষণ আমরা যৌন সীমানার বাইরে যে কুফল পরিলক্ষিত হয়েছে, যার উৎস হলো প্রথাগত প্রয়োগ পদ্ধতি, সে সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এখন আমরা এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট যৌন দিকগুলি চিন্তা করতে চলেছি। নৈতিকতাবাদীরা অন্যতম উদ্দেশ্য হলো যৌন সম্পর্কিত বিষয়ে অশ্লীলতাকে প্রতিরোধ করা। বর্তমানে এই জাতয়ি অশ্লীলতা অসাধারণভাবে বেড়ে গেছে।

ইটনে এক প্রাক্তন প্রধান শিক্ষকমহাশয় আবিস্কার করেছেন যে, স্কুল বালকদের সংলাপের মধ্যে বুদ্ধিহীনতা অথবা অশ্লীলতার ছাপ রয়েছে। যদিও যে-সমস্ত স্কুল বালকদের তিনি অনুসন্ধান করেছেন তারা সকলেই প্রথাগত পদ্ধতিতে বড় হয়েছে। প্রকৃত তথ্য হলো, যৌন ব্যাপারে রহস্যময়তা–এই বিষয় সম্পর্কে তরুণীদের সাধারণ ঔৎসুক্যকে প্রচন্ডভাবে বাড়িয়ে তোলে।

অন্য বিষয়ের আলোচনায় প্রাপ্তবয়স্করা যে মনোভঙ্গির পরিচয় দেয়, যৌনতার সংলাপে তার যদি সেই বাস্তবতাবোধের পরিচয় দিতে পারতো, শিশুর সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতো, এবং শিশুটি যতখানি অনুধাবন করতে সক্ষম ততখানি তথ্য সরবরাহ করতে পারতো, তাহলে শিশুটি কখনও অশ্লীলতাকে ডেকে আনত না। কেননা, এই অনুভূতিটি এসেছে কয়েকটি বিষয়কে গোপনীয়তার আবরণে ঢেকে রাখার মধ্যে। অন্য সকল অনুসন্ধিৎসার মতো তৃপ্তির সঙ্গে সঙ্গে যৌন কৌতূহলের মৃত্যু ঘটে, তাই যৌন বিকৃতির হাত থেকে তরুণতম সমাজকে রক্ষা করার সর্বোত্তম উপায় হলো তারা যতটা জানতে আগ্রহী ততটা জানানো।

এই বক্তব্যের মধ্যে আমি স্বেচ্ছাচারিতার সওয়াল করছি না। আমি অভিজ্ঞতার ওপরে নির্ভর করতে চাই। আমার বিদ্যালয়ে পাঠরত শিশুদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ করে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, শিশুদের মানসিক বিকৃতির অন্তরালে আছে প্রাপ্তবয়স্কদের মননের অবক্ষয়। আমার নিজস্ব সন্তান দুটিকে (সাত বছরের একটি ছেলে এবং পাঁচ বছরের একটি মেয়ে) কখনও বলা হয়নি যে, যৌনতা অথবা নিঃসরণের ব্যাপারে কোনো বিচিত্রতা আছে। এবং যতটা সম্ভব স্বচ্ছ-স্বভাবিক জ্ঞান দেওয়ার জন্যে আমি সদা-সর্বদা সতর্ক থেকেছি। সৌন্দর্যমন্ডিত চিন্তাশক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নোংরামি অনিবার্যভাবে আলোচিত হয়েছে। শিশুর উৎপত্তি সম্পর্কে তারা স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যসম্মত ঔৎসুক্য দেখিয়েছে কিন্তু ইঞ্জিন অথবা রেলওয়ের মতো বিষয়ের ন্যায় অনুসন্ধিৎসা তাদের নেই।

তাদেরকে কখনও বলা হয় নি যে, তারা প্রাপ্ত বয়স্ক লোকেদের অবর্তমানে এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করবে। বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিশুদের সম্পর্কে আমাদের ধারণা হয়েছে যে, যদি তারা ২/৩ অথবা ৪ বছর বয়সে আমাদের কাছে আসত তাহলে তাদেরকে আমরা ঠিক সেভাবে মানুষ করতাম, যেভাবে মানুষ করেছি আমাদের নিজস্ব দুটি সন্তানকে। ৬/৭ বছর বয়সে যারা আমাদের কাছে আসে তাদেরকে ইতিমধ্যেই সেখানো হয়েছে যে, যৌন-অঙ্গ সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়কে অযৌক্তিক মনে করতে হবে।

অন্যান্য বিষয়ের মতো এ সম্পর্কে গোপনীয়তাবিহীন আলোচনা শুনে তারা প্রথমে অবাক হয়ে যায়। এবং কিছুদিন ধরে এই ভেবে আনন্দবোধ করে যে, এ যাবত শাস্তিযোগ্য কথোপকথনে কত সহজে অংশগ্রহণ করা যাচ্ছে। ক্রমে তারা অনুধাবন করে, এসব ব্যাপারে গোপনীয়তার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। তারা ধীরে ধীরে স্বচ্ছ মনের অধিকারী হয়ে ওঠে।

কিন্তু আমাদের বিদ্যালয় হতে প্রাপ্ত শিক্ষার আলোক যখন শিশুদের ব্যক্তিগত গৃহকোণে গিয়ে পড়ে তখনই বিবাদ শুরু হয়। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যাতে এই বিষয়ের মধ্যে পবিত্র বাতাস প্রবাহিত হতে পারে, যাতে এটিকে জীবানুমুক্ত করা যায় এবং যে সমস্ত মারাত্মক জীবাণু একে অন্ধকারে রেখেছিল সেগুলি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আমি মনে করি না, অন্য কোনো উপায় প্রয়োগ করে একদল শিশুর মনোবৃত্তিকে সুন্দরতার দিকে সার্থকভাবে রূপান্তরিত করা যায়।

এই প্রশ্নের আর একটি দিক আছে। আমার মনে হয় খ্রিস্টীয় নৈতিকতাবাদীরা যারা যৌনতাকে নোংরামি থেকে পরিস্কার করতে চেয়েছিল, তারা এটিকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি। যৌনতার বিষয়টার সঙ্গে প্রাকৃতিভাবে জড়িয়ে আছে নিঃসরণের পদ্ধতি, এবং যতদিন অবধি এই সকল পদ্ধতিকে বিষাদময়তার সঙ্গে চিন্তা করা হবে, ততদিন অবধি যৌনতার সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিকভাবে সংযুক্ত থাকবে হতাশাগ্রস্ত নিরানন্দতা।

তাই শিশুদের এ ব্যাপারে সতর্ক করা উচিত যে, নিঃসরণের পদ্ধতিতে অতিমাত্রায় বিচলিত বোধ করার কোনো কারণ নেই। কিন্তু জলনিস্কাশনের দিক থেকে কয়েক প্রকার সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কেননা যে মুহূর্তে শিশুরা অনুভব করে, এই সতর্কতা শুধুমাত্র শরীর শিক্ষাকেন্দ্রিক, এর সঙ্গে শারীরিক অবক্ষয়ের কোনো সংযোগ নেই। তখন তারা মানসিকভাবে অনেক বেশি সাহসী ও জঙ্গি হয়ে উঠে।

বর্তমান অধ্যায়ে আমি যৌন ব্যবহার কি হওয়া উচিত সে সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই না কিন্তু আমি বিশ্লেষণ করতে চাই যৌনশিক্ষা সংক্রান্ত প্রশ্নের প্রতি আমাদের মনোভঙ্গিটাকে। এ যাবতকাল যৌনশিক্ষার যে বিষয়গুলি নিষিদ্ধরূপে পরিগণিত হয়েছে তাতে আমি আশা করি ও বিশ্বাস করি তা আধুনিক শিক্ষাব্রতি আলোকিত মানবিকতার সহানুভূতি অর্জনে সক্ষম হয় নি। যদিও এখন আমি আরও বিতর্কিত বিষয়ের অবতারণা করতে চলেছি, আমার মনে হয় সেই বিষয়ের বিশ্লেষণায় পাঠক সমাজের সহানুভূতি অর্জন করাটা হবে দুরুহ কাজ। এটি হলো অশ্লীল সাহিত্যের বিষয়। ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় আইন ঘোষণা করে যে, যে সমস্ত সাহিত্যকে অশ্লীল বলে বিবেচিত করা হবে, কর্তৃপক্ষ কয়েকটি ক্ষেত্রে তাকে বিনষ্ট করতে পারবে এবং লেখক ও প্রকাশককে শান্তি প্রদান করা যাবে। ইংল্যান্ডে যে আইনের অধীনে এই বিষয়টির অবস্থিতি সেটি হলো লর্ড ক্যাম্পবেলের ১৮৫৭ সালের আইন।

এই আইন ঘোষণা করছে–

যদি কোনো অভিযোগ অনুসারে জানা যায় যে, গৃহে অথবা অন্যান্য স্থানে বিক্রয় অথবা বিতরণের জন্য অশ্লীল পুস্তক রাখা হয়েছে এবং যদি প্রমাণিত হয় যে, এই ধরনের এক বা একাধিক বস্তুকে বিক্রয় অথবা বিতরণ করা হয়েছে তবে বিচারক বিশেষ আইন প্রয়োগ করে ওইসব বস্তু বাতিল করার আদেশ দিতে পারেন। তবে প্রমাণ করতে হবে যে, ঐ সকল পাঠক সাধারণের চরিত্র বিকৃতি ঘটাতে পারে। গৃহির অধিকতাকে দোষী সাব্যস্ত করার পর উক্ত বিচারক অথবা অন্য বিচারক আবিষ্কৃত বস্তুগুলিকে ধ্বংস করার আদেশ প্রদান করতে পারেন।

এই আইন অশ্লীল শব্দটিকে কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দ্বারা বিশ্লেষিত করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে ম্যাজিস্ট্রেট যদি কোনো প্রকাশনাকে অশ্লীল বলে মনে করেন তবে সেই প্রকাশনাকে আইনত অশ্লীল বলা যাবে। এক্ষেত্রে তিনি সুখ্যাত ব্যক্তিদের মন্তব্য শুনতে বাধ্য নন। এই কথা বলার অর্থ হলো, যেকোনো ব্যক্তি একটি উপন্যাস অথবা সমাজতান্ত্রিক প্রবন্ধ অথবা যৌন সংক্রান্ত ব্যাপার প্রযুক্ত আইনের পরিববর্তনকারী নিবন্ধ লিখুন না কেন তার রচনাকে ধ্বংস করতে পারে কয়েকজন অজ্ঞ প্রবীণ ব্যক্তি, তাদের কাছে ওই লিখনীর অর্থ অশ্লীলতা ভিন্ন আর কিছু নয়।

এই আইনের ফলগুলো হলো অতিমাত্রায় ক্ষতিসাধনকারী। সকলেই অবগত আছেন যে, হ্যাভলক এলিস প্রণীত যৌনমনস্ত সম্পর্কিত আলোচনা [Studies in the psychologh of sex by Havelock Ellis] শীর্ষক গ্রন্থের প্রথম খণ্ডটিকে এই আইন দ্বারা নিন্দনীয় করা হয়। সৌভাগ্যবশত আমেরিকা এ সম্পর্কে উদার দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে সক্ষম হয়েছে।

আমি মনে করি না যে, হ্যাভল এলিসের উদ্দেশ্যকে কেউ কুপ্রণোদিত বলে দেবেন। এই জাতীয় সুবিশাল সুপ্রযুক্ত ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ পাঠ করবেন এমন শ্রেণির পাঠকেরা যারা শুধুমাত্র অশ্লীল উত্তেজনা পেতে চান এই ব্যাপারটি পীড়াদায়ক। অবশ্য সাধারণ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এই জাতীয় গ্রন্থের আলোচনা করার অর্থ হলো এটিকে তাঁর স্ত্রী অথবা কন্যাদের কাছে প্রকাশ করা। কিন্তু এই জাতীয় পুস্তক রচনাকে নিষিদ্ধ করলে, এই ব্যাপারে জ্ঞান অন্বেষণকারী কৃতি ছাত্রদের অসুবিধা হতে পারে।

ঐতিহ্যশালী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমি কল্পনা করতে পারি যে, হ্যাভলক এলিসের গ্রন্থের সবচেয়ে নিন্দনীয় বিষয় হলো বাস্তব ঘটনা উপস্থাপনা, যা প্রমাণ করেছে যে, অসার্থক পদ্ধতিগুলি কিভাবে পবিত্রতা ও মানবিক স্বাস্থ্যের হানি করে চলেছে। কয়েকটি তথ্যে যৌনশিক্ষার ব্যাপারে তার্কিক বিচার দানের সপক্ষে যুক্তি দেখানো হয়েছে। আইন ঘোষণা করেছে যে, এই জাতীয় তথ্য জানার জন্যে আমরা অনুমিত পাব না এবং এক্ষেত্রে আমাদের বিচারবুদ্ধি অজ্ঞতা দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকবে।

নিঃসঙ্গতার অভিশাপকে (Wellof Loneliness) আক্রমণ করার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় উন্মোচিত হয়েছে। এটি ঘোষণা করেছে যে, উপন্যাস সমকামিতার প্রয়োগ বেআইনি। মহাদেশীয় রাষ্ট্রপুঞ্জের ছাত্রেরা সমকামিতা সম্পর্কে সবিশেষ জ্ঞান অর্জন করে। কেননা আইন সেখানে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী। কিন্তু ইংল্যান্ডে এই জাতীয় জ্ঞান অর্জন করার পথে প্রধান বাধা হলো সুদৃঢ় আইন। তাই কাল্পনিক উপন্যাস থেকে তাকে অর্জন করা হয়।

পুরুষদের মধ্যে সমকামিতাকে ইংল্যান্ড বেআইনি ঘোষণা করেছে কিন্তু নারীদের মধ্যে এ ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। অশ্লীলতার অভিযোগে এই বিষয়টিকে পরিবর্তন করার সপক্ষে যেকোনো যুক্তি আনয়ন করা কষ্টসাধ্য। এই বিষয়ে যিনি পড়াশোনা করেন তার জানা আছে যে, বর্বরোচিত ও অজ্ঞতাপূর্ণ কুসংস্কারের প্রভাব কতটা মারাত্মক। যার সপক্ষে কোনো যুক্তিযুক্ত মতবাদকে প্রয়োগ করা যাবে না।

বেআইনি যৌনাচার সম্পর্কে একই মন্তব্য করা যেতে পারে।

তাই এই অপরাধে অভিযুক্তদের সম্পর্কে নতুন আইন প্রযুক্ত হয়েছে এবং সেই আইনের স্বপক্ষে অথবা বিপক্ষে যুক্তি অবতারণাকে লর্ড ক্যাম্পবেলের আইন অস্বীকার করেছে। সেইসব যুক্তিগুলিকে অনির্দিষ্টভাবে ও শক্তি হননকারী বস্তু হিসেবে যত্নসহকারে প্রযুক্ত করা হয়নি, তবে সেগুলি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

লর্ড ক্যাম্পবেলের আইনের আর একটি আকর্ষণীর ব্যাপার হলো কয়েকটি বিষয়কে অতিমাত্রায় উচ্চশিক্ষিত মানুষ নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ ব্যবহারিক শব্দগুচ্ছ দ্বারা আলোচনা করতে পারবে। যাকে সাধারণের পক্ষে গ্রহণযোগ্য ভাষায় উপস্থাপিত করা যাবে না। যৌনাঙ্গ সম্পর্কিত প্রকাশনায় কয়েক প্রকার সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কিন্তু এই শব্দগুলিকে এক ছন্দ বিশিষ্ট প্রতিশব্দ দ্বারা প্রয়োগ করার অনুমতি দেওয়া হয় নি। অতি সম্প্রতি এই বিষয়টির ব্যাপক আলোচনা হলো Sleevelests Errand মামলায়। কয়েকটি ক্ষেত্রে এই নিষেধ মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করে। উদাহরণ স্বরূপ কর্মরত মহিলাদের উদ্দেশ্যে লিখিত শ্রীমতি স্যানজারের জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত পুস্তিকাটির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এটিকে অশ্লীল ঘোষণা করা হলো কেননা কর্মরত মহিলার এর অর্থ অনুধাবণে সক্ষম।

ডাঃ মেরিয়া স্পোপেসের গ্রন্থাবলিকে বেআইনি ঘোষণা করা হয় নি, কেননা তাদের ভাষা অনুধাবন করতে হলে পাঠকদের কিছুটা শিক্ষার প্রয়োজন। তার ফল হইল এই যে, অভিজাতদের কাছে জন্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষাদান করার অনুমতি পাওয়া যেতে পারে কিন্তু চাকরিজীবী ও তাদের স্ত্রীদের ক্ষেত্রে এই জাতীয় শিক্ষা প্রচারকে শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে। আমি ইউজেনিক্স সোসাইটির কাছে এই ব্যাপারটি উপস্থাপিত করি। এই সংস্থা দীর্ঘ গবেষণায় সিদ্ধান্ত করেছে যে, শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে শিশু জন্মের হার মধ্যবিত্ত শ্রেণি অপেক্ষা বেশি। আইনের যেসব কারণে এই ফলশ্রুতি লাভ করা হয়েছে সেগুলিকে বিবেচনা করতে হবে।

অশ্লীল প্রকাশনা সম্পর্কিত আইনের পরিণতি সম্পর্কে অনেক মানুষ দুঃখ প্রকাশ করবেন। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে এও ভাববেন যে, আইন অপরিহার্য। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি না যে, এইসব প্রভাব ছাড়া অশ্লীলতার বিরুদ্ধে কোনো আইনও প্রণয়ন করা যেতে পারে। এই সত্য অনুধাবন করলে আমরা বলতে পারি যে, এই বিষয়ে কোনো আইন পক্ষপাতশূন্য হতে পারে না। একদিকে বলা যায় পৃথিবীর কোনো আইন ক্ষতিকারক ঘটনা অথবা ধ্বংসকারী শক্তিগুলিকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে পারে না। অপরদিকে বলা যায়, সার্থক যৌনশিক্ষার ব্যবস্থা করা হলে অতি মাত্রায় অশ্লীল সাহিত্য সমাজের সামান্যতম ক্ষতিও করতে পারবে না।

গবেষণার প্রথম অংশটি লর্ড ক্যাম্পবেলের আইনের (যা ইংল্যান্ডে প্রযুক্ত হয়েছে) দীর্ঘ ইতিহাস দ্বারা অবিসংবাদিতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেকোন ব্যক্তি লর্ড ক্যাম্পবেলের আইন সংক্রান্ত বিতর্কগুলি অধ্যয়ন করে আবিষ্কার করবেন যে, এই আইন প্রত্যক্ষভাবে যৌন সাহিত্য দমনে নিয়োজিত। যখন এই আইনটি রচিত হয় তখন চিন্তা করা হয় নি যে, অন্য ধরনের সাহিত্যের ক্ষেত্রে এটি সম্পূর্ণ কার্যহীন। যদিও এই বিশ্বাস অনেকাংশে নির্ভর করে রক্ষি বাহিনীর চাতুর্যের অপ্রযুক্ত প্রশংসা এবং বিচারকমণ্ডলির বুদ্ধিহীনতার ওপরে।

মরিস আরনেস্ট [Morris Ernest] এবং উইলিয়াম সেগাল [William seagle] প্রণীত একটি পুস্তকের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সপ্রশংসভাবে প্রযুক্ত হয়েছে। তাঁরা ব্রিটিশ ও আমেরিকান এই উভয় প্রকার অভিজ্ঞতাকে অন্যত্র অপ্রাপ্তব্য সংক্ষিপ্ততার দ্বারা বিশ্লেষণ করেছেন। অভিজ্ঞতার লব্ধ জ্ঞানে জানা গেছে যে, বিশেষ করে ইংল্যাণ্ডের ক্ষেত্রে নাটকীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দ্বারা কুরুচিপূর্ণ নাটকের উত্তেজক কামনা কর্তৃপক্ষের চোখ এড়িয়ে যেতে সক্ষম।

যিনি কিছু মাত্রায় চতুর তাঁর পক্ষে এই ত্রুটিটিকে ব্যবহার করা সহজ। কিন্তু শ্রীমতি ওয়ারেনের জীবিকা [Mrs Warrens Profession] নামাংকিত গুরুত্বপূর্ণ নাটকটি বহু বছর ধরে আটক থাকার পর কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাভ করেছে। দি সেনসি [The Senci] নামক অপূর্ব কাব্যিক সৃষ্টিকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। কিন্তু সেন্ট এন্টনীর পক্ষে গ্রহণযোগ্য এমন একটিও কামনাময় শব্দ এখানে নেই।

লর্ড চেম্বারলিনে পৌরুষোচিত ভিত্তি হতে উৎসারিত মনোভঙ্গির পরিবর্তনের জন্যে শতাব্দী বাহিত হতাশাব্যঞ্জক আঘাতের প্রয়োজন। এই কারণে আমরা ঐতিহাসিক তথ্যপুঞ্জের ওপর নির্ভর করতে পারি। কেননা গুরুত্বপূর্ণ কাব্যিক সৃষ্টি অথবা বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিরুদ্ধে প্রযুক্ত বিধিনিষেধের নিয়মনীতিগুলিকে সংযত করতে হবে। কারণ, কুরুচিপূর্ণ মানুষ সহজেই সামাজিক নৈতিকতাকে ফাঁসি দিতে পারে।

এই প্রথার বিরোধিতা করার সপক্ষে আরও একটি কারণ আছে। আমরা গোপনীয়তার ও নিষেধের আবরণে অশ্লীল সাহিত্যকে অকারণে ক্ষতিকারক করে তুলেছি। যদিও এ ব্যাপারে স্বচ্ছ ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অশ্লীল সাহিত্য সামান্যই ক্ষতি করতে পারবে। আইনের প্রয়োগ সত্ত্বে সাধারণভাবে উচ্চবিত্তসম্পন্ন পাঠকশ্রেণি তাদের কৈশোরকালে অশ্লীল চিত্রাবলির দর্শনজনিত অভিজ্ঞতা অর্জন করেন এবং সগ্রহহেতু অসুবিধা থাকায় সেগুলি অধিকার করে ঈষৎ গর্ববোধ করেন। ঐতিহ্যসম্পন্ন পুরুষবৃন্দ এই মতবাদে বিশ্বাস যে, এই সকল বস্তু নিয়ে সাধারণের পক্ষে অতিমাত্রায় ক্ষতিকারক, কিন্তু তারা কেউই স্বীকার করেন না যে, এগুলি তাদের পক্ষেও ধ্বংসকারী।

এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, তারা বাসনার্থ মনোভাবের স্বচ্ছ অনুভূতিতে স্পন্দিত হৃদয়ের অধিকারী। কিন্তু যৌনগতভাবে শক্তিশালী পুরুষ চিত্তে এই জাতীয় আবেগ অনুভূতিগুলি পরস্পরের স্পন্দন অথবা মননদ্বারা বারংবার জনমত আলোড়িত হয়েছে। একজন পুরুষ যে নারী সাপেক্ষে কামাবেগের ওপর নির্ভর করে সেটি তার শারীরিক শর্তাবলির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ওর সঙ্গে সামাজিক পরিবেশের কথা চিন্তা করতে হবে। এই পুরুষ যে সামাজিক অবস্থিতির সঙ্গে আবাল্য সংযুক্ত, সেই সামাজিকতার বিচার বিশ্লেষণ প্রয়োজন।

ভিক্টোরিয়ান যুগে কোনো নারীর উন্মুক্ত হাঁটু যথেষ্ট উত্তেজনার সৃষ্টি করতে পারত। কিন্তু আধুনিক যুগের পুরুষ অনাবৃত উরুদেশ দর্শনেও অবিচলিত থাকতে পারেন। এটিকে পরিচ্ছদ সংক্রান্ত প্রশ্ন বলা যায়। যদি উলঙ্গতাই সাজসজ্জার রীতি হয় তাহলে সে আর আমাদের উত্তেজিত করতে সক্ষম হবে না। এবং যদি কয়েকটি বর্বর জাতির নিয়মের মতো মহিলাদের পোশাক পরতে বাধ্য করা হয় তাদের যৌনগতভাবে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যে, তাহলে বস্ত্রহীনতা আমাদের উত্তেজিত করতে সক্ষম হবে।

সাহিত্য ও চিত্রাবলির ক্ষেত্রে একই প্রকার অনুভূতির সঞ্চার করতে পারে। ভিক্টোরিয়ান যুগে যাকে উন্মাদনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হতো সেগুলি বর্তমানে সহজ বিষয়ে পর্যবসিত হয়েছে। যৌন সঙ্গমের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার কাঠিন্য যে, মাত্রায় কমতে শুরু করেছে তা আরও কমে যাবে যদি তার প্রযুক্তিকরণ সংক্রান্ত কার্যক্ষমতা ক্রমশই হ্রাস পেতে থাকে। মানব-মানবীর চিরন্তর যৌন আবেদনের দশ ভাগের নয় ভাগ এসেছে নীতিশাস্ত্র বহির্ভূত যৌনবিষয়ক অশ্লীল অনুভূতি দ্বারা। সমাজ সংস্কারকরা এই নয় ভাগকে তরুণ প্রজাতির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। বাকি এক ভাগকে নিতান্ত সুকুমারবৃত্তীয় বলে অভিহিত করা যায়।

.

এই সকল তথ্য আলোচনা করে আমি সাবধানতা সহকারে এই মন্তব্য করতে চাই যদিও আমি জানি যে, পাঠক সমাজের সামান্য অংশ আমার সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হবেন, অশ্লীল প্রকাশনা সংক্রান্ত সকল প্রকার আইনের বিরোধিতা করাই হবে নবলব্ধ জ্ঞানের পরিচায়ক।

যৌন বিষয়ে নান্দিক দৃষ্টিভঙ্গির সামনে সবচেয়ে বড় প্রাচীর হলো নগ্নতা সম্পর্কিত নিষেধ। শিশুদের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটিকে এখন বিপুল সংখ্যক স্বীকার করে নিয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে স্থাপিত হলে শিশুরা পরস্পরকে এবং তাদের পিতামাতাকে নগ্ন অবস্থায় অবলোকন করতে পারে। সম্ভবত তিন বছর বয়সে ক্ষণকালের জন্যে তার মনে এই অনুভূতির উদ্রেক হতে পারে যে, বাবা ও মায়ের শারীরিক অবস্থিতির মধ্যে বৈসাদৃশ্য বর্তমান এবং সে তখন তার নিজের ও তার বোনের মধ্যে যে পার্থক্য আছে সেই পার্থক্যের সঙ্গে বাবা-মায়ের বৈসাদৃশ্যের বিশ্লেষণ করবে। কিন্তু এই অবস্থাটি অনতিবিলম্বে অতিক্রান্ত হবে এবং এর পরে সে উলঙ্গতা সম্পর্কে কোন আকর্ষণ প্রকাশ করবে না।

যতদিন পর্যন্ত বাবা-মায়ের নগ্নতা সম্পর্কে গোপনীয়তার মনোভাব প্রকাশ করবে ততদিন অব্দি এই বিষয়টি রহস্যময় বলে বিবেচিত হবে এবং এর সঙ্গে তারা কলঙ্ক ও অশ্লীলতাকে একীভূত করার চেষ্টা করবে। অশ্লীলতাকে অস্বীকার করার একটি মাত্র উপায় আছে, তা হলো রহস্যকে অস্বীকার করা।

সুপ্রযুক্ত পরিবেশে নগ্নতার সপক্ষে স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের উপস্থাপন করা যায়। যেমন সূর্যদীপ্ত আবহাওয়ায় বহির্মুখি পরিবেশে এই নগ্নতা গ্রহণযোগ্য। কেননা উন্মুক্ত ত্বকের উপর সূর্যের কিরণে স্বাস্থ্যবর্ষণকারী প্রভাব পড়ে। তাছাড়া যারা দেখেছেন যে, শিশু সাবলীলভাবে নগ্নদেহে খোলা বাতাসে ছুটোছুটি করছে তারা অনুধাবন করতে পারবেন এই অবস্থাই তাদের বস্ত্রাচ্ছাদিত অবস্থা অপেক্ষা অনেক বেশি স্বেচ্ছাধীন, স্বাধীন ও অভিব্যক্তিব্যঞ্জক বলে অভিহিত করা হয়েছে। ঘরের মধ্যে যদি প্রখর সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে এবং জীবনধারণের পক্ষে উপযোগী জলের সরবরাহ পাওয়া যায় তাহলে আমরা আরও বেশি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবো। ত্বকের সঙ্গে বাতাস ও সূর্যের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে ত্বকের গঠন আরও সুন্দর হবে, এবং সৌন্দর্য। চেতনার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত থাকবে স্বাস্থ্য চেতনা। কেননা, সে ক্ষেত্রে রূপময়তা শুধুমাত্র মুখশ্রীর সঙ্গে যুক্ত না হয়ে সমগ্র শারীরিক অবস্থিতি ও তার গঠনের ওপর নির্ভর করে। এই বিষয়ে গ্রিকদের মনোবৃত্তির প্রশংসা করতেই হবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *