পর্ব ৩ : মনোবল বদলে দেবে আচরণ

তৃতীয় পর্ব – মনোবল বদলে দেবে আচরণ

সবচাইতে উৎপাদনশীল ব্যক্তিত্ব হওয়ার উপায়

ফাইভ সেকেন্ড রুলটিকে আমি অ-জ্ঞানবাদী পরিবর্তন বলতে চাই। যে কোনো আচরণগত পরিবর্তন, আপনি যা আনতে চাইছেন, সেসব ক্ষেত্রে রুলটি কাজ করবে। ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির প্রয়োগ আপনার কল্পনার দ্বারা সীমাবদ্ধ। আপনি যদি কোনো ইতিবাচক নতুন অভ্যাস আত্মীকরণ করতে চান, তাহলে রুলটি ব্যবহার করুন এবং নিজেকে ধাক্কা দিন।

আপনি রুটি ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজেকে ধ্বংসাত্মক আচরণ যেমন– জুয়া, মদ্যপান, ড্রাগ এবং আবেগতাড়িত আচরণ যেমন– নিজ দলের ক্ষুদ্রতম ব্যবস্থাপনা, হতাশায় হাত কামড়ানো বা অতিরিক্ত টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন। বিধ্বংসী আচরণ থেকে আপনার দৃষ্টি সরাতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে শুধুমাত্র ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করুন। তারপর ঘুরে দাঁড়ান এবং এর থেকে দূরে সরে যান। অন্যসব চ্যালেঞ্জ-এর মতোই এটি খুব সাধারণ কিন্তু সহজ কিছু নয় এবং রুলটি আপনাকে তা সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে।

তিনটি আচরণগত পরিবর্তন, যে সম্পর্কে আমি ক্রমাগত ই-মেইল পেয়েছি– স্বাস্থ্য, উৎপাদনশীলতা ও দীর্ঘসূত্রতা, বইটির এই অংশে আমি তাদের উল্লেখ করব। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণালব্ধ কৌশলের সঙ্গে ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি ধাপে ধাপে জানতে পারবেন আপনার জীবনের এই তিনটি প্রধান এলাকার উন্নয়ন কি করে করতে হবে।

প্রথমত– আপনি আপনার স্বাস্থ্য উন্নয়নের গোপনীয়তা জানতে পারবেন। এটি আপনার পছন্দ হবে না কিন্তু কাজ করবে এবং বিশ্বজুড়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে আপনি বিভিন্ন মানুষের পোস্ট দেখতে পাবেন যারা নিজেদের জন্য অসাধারণ কিছু করতে রুলটি ব্যবহার করছেন।

দ্বিতীয়ত– ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কি করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং আরো জানতে পারবেন দৃষ্টিপাত, উৎপাদন ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক সাম্প্রতিক গবেষণা সম্পর্কে। ঘুমিয়ে পড় বোতামটির বিষয়ে এখানে একটি বিশেষ তথ্য রয়েছে এবং এটি আপনার উৎপাদনশীলতার উপর কি প্রভাব বিস্তার করে তা জেনে সত্যিই অবাক হবেন।

তৃতীয়ত– আপনি একটি বিষয়ে এখানে বিশদভাবে জানতে পারবেন যা আমাদের সবাইকে ভীষণ উৎপাত করে থাকে– দীর্ঘসূত্রতা। এর দুটি রূপ সম্পর্কে এবং ১৯ বৎসরের গবেষণার সাথে ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করার মাধ্যমে কি পদ্ধতিতে ধাপে ধাপে দীর্ঘসূত্রতাকে একবার এবং চিরতরে পরাস্ত করা যায় তা জানতে পারবেন।

যা কিছুই আপনি শিখতে চলেছেন তার সবই তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োগযোগ্য এবং বিজ্ঞান দ্বারা সমর্থিত। আপনার সম্ভাব্যতায় পৌঁছানোর জন্য নিজেকে অবশ্যই ধাক্কা দিতে হবে– অন্য কোনো উপায় নেই।

হয় আপনি দিনটিকে চালাবেন, না হয় দিনটি আপনাকে চালাবে।

*

(৯) স্বাস্থ্যের উন্নতি

মনোবল হলো সাফল্যের নিশ্চয়তা ছাড়াই শুরু করার অঙ্গীকার।

– ইয়োহান উলফগ্যাঙ ভন গ্যেটে

আমি যাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে বার্তা পেয়েছি তাদের প্রায় অর্ধেকের মতো মানুষ স্বাস্থ্যের উন্নতি চান, আপনার আমার মতোই। পাতলা হওয়া, মোটা হওয়া, ওজন কমানো, কোলেস্টেরল কমানো, রোগমুক্তি, স্বাস্থ্যকর খাওয়া কিংবা শক্তি ও নমনীয়তা বৃদ্ধিসহ যাই হোক না কেন, আপনি এর জন্য ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করতে পারেন।

আসলে স্বাস্থ্যবান হওয়ার চিন্তা আপনাকে স্বাস্থ্যবান করবে না। এমনকি ধ্যান, যা একটি মানসিক ব্যায়াম, তা সত্ত্বেও আপনাকে কাজটি করতে হবে। এর আশপাশে অন্য কিছু নেই। আপনাকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিষয়টি হলো, স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার মতো আমাদের জীবনের আর কোনো এলাকার উপর এত পরিমাণ তথ্য, সহায়তা, গবেষণা, বিকল্প অথবা বিনামূল্য উপাদান নেই। আপনি ডায়েট লিখে গুগল সার্চ দিতে পারেন, ২০টি প্রধান অনুসন্ধান ফলাফল ডাউনলোড করতে পারেন, মুদ্রণ / প্রিন্ট করে নিতে পারেন, তালিকাটি একটি ডার্টবোর্ড-এর উপর বসাতে পারেন এবং তারপর আপনি যে কোনো একটি ডায়েট অনুসরণ করতে পারেন যেটিকে আপনার ডার্ট ফলাটি আঘাত করবে। আপনি সত্যি যদি অনুসরণ করেন, এটি কাজ করবে। ডায়েট বা খাদ্যটি কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হলো ডায়েট-এর ব্যাপারে আপনার অনুভূতিগুলো। এটি ব্যায়াম বা শারীরিক কসরতের ব্যাপারেও সত্যি।

এনার মতে– আমরা শারীরিক কসরত করার ব্যাপারটি কখনোই অনুভব করি না এবং স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠার পথে এই অনুভূতিগুলোকে প্রতিবন্ধক হিসেবে প্রবেশ করতে দিই। এনা ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে রুলটি ব্যবহার করে নিজেকে ধাক্কা দিয়েছিলেন এবং জিমনেসিয়াম এর সাইকেলে চড়ে বসেছিলেন। হ্যাঁ, আপনি হয়তো সাইকেলে প্যাডেল মারার সাথে সাথে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে যাবেন, কিন্তু কি আসে যায়। এটা অন্তত ঘরে বসে অজুহাত তৈরি করার চাইতে অনেক ভালো।

প্রতিটি খাবার, শারীরিক কসরত, জিমনেসিয়াম পরিক্রমা, শরীরচর্চা ক্লাস, শারীরিক চিকিৎসা বিধি, আড়াআড়ি প্রশিক্ষণসূচি, ধ্যান কর্মসূচি এবং ক্রমাগত যোগব্যায়াম আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে। কিন্তু বিষয়টি হলো– আপনাকে এটি করতে হবে। এবং বিশ্বাস করুন, শারীরিক কসরত আমার খুবই অপছন্দ, বিশেষ করে বাইরে যখন বৃষ্টি হচ্ছে কিংবা খুব ঠাণ্ডা। আমি এটা ঘৃণা করি যেমন করি খুব ভোরে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়া। ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির সাহায্য ব্যতীত আমি হয়তো কখনোই এটা করতে পারতাম না।

স্বাস্থ্যবান হওয়া কেন এত কঠিন? ইতিমধ্যে আপনি উত্তরটি জেনে গেছেন– আপনার অনুভূতি। আপনি যদি রুটি খাওয়া ছেড়ে দিতে চান। তাহলে গ্রুটিনমুক্ত খাদ্যভ্যাসের সাথে আপনার আর থাকা হবে না। আপনি যদি চিন্তা করেন যে পরবর্তী ১১৩ দিন কেমন করে সালাদ খেয়ে থাকবেন, তাহলে নিজেকে আপনি এটা না করতে উদ্বুদ্ধ করবেন। আপনি যখন দিনের বিশদ শরীরচর্চা সূচিটি বিবেচনা করবেন, দরজা খুলে বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে আপনি উৎসাহ বোধ করবেন না।

কোনো একটি খাদ্যভ্যাসের সাথে আটকে থাকা কি আপনাকে সুখী হতে সাহায্য করে? অবশ্যই। আপনার বন্ধুদের শারীরিক কসরত করতে দেখা কি আপনাকে সুখী করে? আপনি বিশ্বাস করুন, এটা করে। মেলানিকে জিজ্ঞেস করুন, যিনি রুলটি খুঁজে পাবার আগে বিছানা ছেড়ে উঠে আসতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছিলেন। এবং একবার যখন চলতে শুরু করলেন, মেলানি স্বাধীনতা ও বাঁধভাঙার অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন যা আমরা সবাই পেতে চাই।

যে মুহূর্তে আপনি এই সত্যকে গ্রহণ করবেন যে আমরা শুধু এমন কিছু করতে চাই যা সহজ বলে মনে হয়, আপনি বুঝতে পারবেন সুস্থ হওয়ার গোপন সূত্রটিও খুব সহজ– আপনি কখনোই এটি অনুভব করবেন না। শুধু ক্ষণ গণনা করুন ৫-৪-৩-২-১ এবং এগিয়ে যান।

জিমনেসিয়াম যাওয়া বন্ধ করা, চলার পথে বার্গারের জন্য প্রবেশ করা এবং ফেসবুক-এ সময় অপচয় করা– খাদ্য তালিকা থেকে মিষ্টি বাদ দেওয়ার চাইতে অনেক সহজ। আপনি যদি ওজন কমাতে চান, একটি খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। আপনাকে অবশ্যই একটি জিনিস করতে হবে– অনুভূতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা বন্ধ করা। আপনার অনুভূতি বিবেচ্য বিষয় নয়। আপনি যা করবেন তাই শুধু বিবেচ্য।

এরিকা এটা বুঝতে পেরেছিলেন। ওজন কমানোর যাত্রা শুরু করার পরও তিনি শরীরচর্চা করার অনুপ্রেরণা হারাচ্ছিলেন এবং জিমনেসিয়াম-এ না যাওয়ার একটি অজুহাত সবসময়ই তার প্রস্তুত থাকত। একবার যখন বুঝতে পারলেন যে– শরীরচর্চা করতে যাওয়ার জন্য তিনি অনুভব করছেন না, ৫ সেকেন্ড জানালার সুযোগটি তিনি খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং তারপর নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য তা ব্যবহার করেছিলেন। অনুশীলনের বিষয়টি সম্পূর্ণ মানসিক। আপনার মস্তিষ্ক ধাক্কা না দিলে আপনার শরীর কখনোই সচল হবে না। আর তাই ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি আপনার স্বাস্থ্য বদলের একটি চমৎকার উপায়।

রুলটি কেমন করে ব্যবহার করবেন :

• ৫-৪-৩-২-১– এগিয়ে যান এবং জিমনেসিয়াম-এ ঢুকে পড়ুন।

• ৫-৪-৩-২-১– এগিয়ে যান এবং ডোনাটটি নামিয়ে রেখে একটি গ্রিল করা মুরগির টুকরো খান।

• ৫-৪-৩-২-১– এগিয়ে যান এবং বেকারি থেকে সটকে পড়ন, এমনকি যদি রুটি ও মিষ্টি আপনাকে কুহকিনীর মতো আকর্ষণ করে থাকে, তারপরও।

সারা পৃথিবীজুড়ে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা আপনার চাইতে অনেক বেশি মোটা, অলস ও বেঢপ। যারা নিজেদের শরীর, মানসিকতা ও জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিতে রুলটি ব্যবহার করেছেন।

যেমন চার্লি। এই মানুষটি প্রথম যখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তার ওজন ছিল ৩৮৩ পাউন্ড এবং কোমড় ৫৪ ইঞ্চি। কল্পনা করুন তার ভয়ানক অবস্থা। আর এখন যদি আপনি তাকে দেখেন, বুঝতে পারবেন তিনি জীবনকে উদযাপন করছেন। আক্ষরিক অর্থেই তিনি এখন একজন ভিন্ন মানুষ। কেমন করে সম্ভব হলো? পানীয় পান করার মাধ্যমে, যার স্বাদ ছিল ঘাসের মতো। আপনি হয়তো বলবেন– ওয়াক থু। কিন্তু লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাকে এটাই করতে হয়েছিল। আজ তিনি শক্তিশালী রস পান নামক একটি ব্যবসা পরিচালনা করছেন যা মানুষকে তাদের স্বাস্থ্যবান সংস্করণ হতে সাহায্য করছে।

৫২৯ দিন যাবত এই লোকটি নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য নিজেকে ধাক্কা দিয়েছেন। কেন? এই জন্য নয় যে তিনি এটা অনুভব করেছিলেন, এই জন্য যে তিনি বলেছিলেন এটা করবেন। কল্পনা করুন, চার্লি বিগত ৫২৯ দিন যাবত পছন্দের পানীয় পান না করে ১৭৬ পাউন্ড ওজন কমানোর কথা চিন্তা করছেন।

আলেকজান্দ্রাও পানীয় পানের অভ্যাস দ্বারা একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা খুঁজে পেয়েছিলেন। চার্লি ও আলেকজান্দ্রা বুঝতে পেরেছিলেন যে, আপনি যখন আপনার প্রবৃত্তিকে অনুসরণ করবেন যা আপনাকে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে একটি সুস্থ জীবনধারার দিকে পরিচালিত করে, আপনার জীবনে তখন পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে।

কোনো কিছু শুরু করতে প্রয়োজন– মনোবল। এর সাথে লেগে থাকতে এবং পৃথিবীর সাথে একে শেয়ার করতে অবশ্যই প্রয়োজন হবে মনোবলের। এটাই প্যাকিনাম আমাকে বলেছিলেন। মনোবল হলো যা আপনার ওজন কমাতে প্রয়োজন কারণ কখনো কখনো প্যাকিনাম যেমনটি লিখেছেন– যেখানে আপনি আছেন এবং যেখানে আপনি যেতে চান, এই দুইয়ের মধ্যকার পার্থক্য এত বিশাল মনে হয়, যার জন্য, যে পরিমাণ কাজ আমাদেরকে করতে হবে আমরা এমনকি তার মুখোমুখিও হতে পারি না। প্যাকিনাম লিখেছিলেন :

হাই মেল,

জীবনভর আমি অতিরিক্ত ওজন বহন করেছি। এখন আমি আমার জীবনে প্রথমবারের মতো ডায়েটিং করার চেষ্টা করছি। মনে হচ্ছে আমি হারিয়ে গেছি অথবা আটকা পড়েছি, কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার ভেতরে একটি বিশাল নিরাপত্তাহীনতা ও অরক্ষিত বোধ রয়েছে। আপনি কি দয়া করে এর ব্যাখ্যা দিতে পারেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো– আপনি এই মুহূর্তে যা এবং ভবিষ্যতে যা হতে চান, এই দুইয়ের মধ্যকার পার্থক্য এত বড় মনে হতে পারে যে ফাঁকটি অতিক্রম করা আপনার কাছে অসম্ভব মনে হবে। এভাবে অনুভব করাটাই স্বাভাবিক, তবে অনুভূতিগুলোকে আপনার মনের উপর ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ করে দেওয়ার অর্থ হবে নিজেকে অবমাননা করা।

এজন্যই আমি চার্লিকে ভালোবাসি। যে কেউ ধাক্কা দিয়ে স্কেল/মানদণ্ডের সংখ্যাটিকে বদলে দিতে পারে। আজ কিছু শুরু করতে চাইলে চার্লি আপনার জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে। এবং এর সাথে লেগে থাকার জন্য তার কাজের ফলাফল আপনাকে উৎসাহিত করবে।

আমার কাছে অন্য কেউ একজন আছেন যার সাথে আমি চাই আপনি দেখা করুন। মার্ক, নিজেকে দায়বদ্ধ রাখার জন্য তার ইনস্টাগ্রাম বন্ধুদের ব্যবহার করেছেন। মাসে ৫,০০০ বুকডন? রক্ষা করুন! আমি প্রতিদিন খুব বেশি হলে ৫টি দিতে পারি। নিয়মিত শরীরচর্চা এবং শৃঙ্খলা মার্ককে ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ও বিক্রয়ের উপর একটি বই লেখার ব্যক্তিগত ও পেশাগত লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে। মার্ক-এর প্রাত্যহিক শরীরচর্চা, বইটি লিখে শেষ করার জন্য তার মস্তিষ্ককে প্রস্তুত হতে সহায়তা করবে। এগিয়ে চলুন মার্ক। আপনার বইটি বাজারে আসার সাথে সাথে আমাদের জানাবেন।

মাসে ৫,০০০ বার বুকডন একটু হয়তো বাড়াবাড়ি কারণ এটা আক্ষরিক অর্থে আপনাকে মেরে ফেলতে পারে। অসুবিধা নেই। একটি শারীরিক সক্ষমতার চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আপনার কি মত? আনুক-কে দেখুন, এটি তার তৃতীয় সপ্তাহ। তিনি আমাদের স্বাস্থ্য ও শরীরচর্চা সম্পর্কে সহজ সত্যটি জানাচ্ছেন– আমি সত্যি সত্যি এটা অনুভব করতে পারিনি কিন্তু যে করেই হোক কাজটি আমি করেছি। বুম বুম বুম। আনুক আপনাকেও বুম! আপনি বোধ করেননি অথচ তারপরও কাজটি করতে নিজেকে ধাক্কা দিয়েছিলেন। অসাধারণ!

 আপনি যদি এটি বাস্তবে কল্পনা করে বিহ্বল বোধ করেন তাহলে এলিস এর সাথে দেখা করতে পারেন। এলিস যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ১৯ বৎসর বয়সী একজন নারী, যিনি আমাকে লিখেছিলেন কারণ তিনি সত্যিই একটি খারাপ অবস্থায় ছিলেন। এখানে তিনি সেটি বর্ণনা করেছেন :

আমার উদ্বেগ ও উন্মুক্ত স্থান ভীতি ছিল, যারা সত্যিই আমার উপর ছড়ি ঘোরাত। আমার প্রায় ৩০ পাউন্ড ওজন বেড়ে গিয়েছিল যা আমাকে আরো দুর্দশাগ্রস্ত করে তুলেছিল এবং আমি আরো অধিক পরিমাণে ঘরকুণো হয়ে পড়ছিলাম। উপরন্তু আমার বাবা-মা চাচ্ছিলেন যে একটি নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যলয় থেকে আমি যেন একটি নির্দিষ্ট ডিগ্রি অর্জন করি যা আমার উপর চাপ সৃষ্টি করছিল এবং তাদের খুশি করতে এ ব্যাপারে নিজেকে আমি রাজি করিয়েছিলাম। আমি আপনার ভিডিও দেখেছি এবং এটি আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে– সত্যিই কি আমি এটা চাই? আমি কি আমার আকৃতি নিয়ে সন্তুষ্ট? আমি যা চাই তার জন্য আমি কি যোগ্য? মিথ্যে বলব না, আমার কিছুটা সময় লেগেছিল কিন্তু প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার আপনার বক্তৃতা আমি শুনেছি, অতঃপর উদ্বুদ্ধ হয়েছি।

তার প্রবৃত্তি ছিল নিজের সঙ্গে বাস্তববাদী হওয়ার। নিজেকে প্রমাণ করার এবং নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার আকুতি ছিল তার। পরিবর্তীত হওয়ার ইচ্ছে ছিল তার এবং তিনি তা করেছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি বাবা মার সঙ্গে কথা বলেছিলেন কিন্তু নিজের বড় ধরনের রূপান্তর করতেও সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন :

আমার পছন্দের বিশ্ববিদ্যলয় ও কোর্স গ্রহণ করেছি এবং এই অক্টোবরে তা শুরু হওয়ার কথা। আমার ওজনের বিষয়টি– গত ডিসেম্বর মাস থেকে এ পর্যন্ত আমি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে ২৮ পাউন্ড ওজন কমিয়েছি, একটি ভালো শরীরচর্চা সূচি অনুসরণ করছি, আর এই সবকিছুর কৃতিত্ব আপনার ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির।

আশা করি আপনার বেশি সময় নিচ্ছি না কিন্তু আমি আপনাকে সত্যিই বলতে চাইছি আপনার বক্তৃতা আমাকে কতটা প্রভাবিত করেছে। এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া বাকি কিন্তু যখনই আমি নিজেকে হতাশ মনে করি, আপনার বক্তৃতা শুনি।

বিষয়টি এরকমই। এলিস যা করেছিলেন তা করতে মনোবল লাগে। আপনি যা করতে চান তার জন্য নিজের সঙ্গে সৎ হতে প্রয়োজন হবে মনোবল। নিজেকে মূল্যায়ন করে কোনো কিছু শুরু করতে হলে চাই মনোবল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম পদক্ষেপটি সবচেয়ে কঠিন। আপনি যদি বগি থেকে পড়ে যান বা পিছলে পড়েন, আপনার সুযোগ আছে ফিরে আসার। তবে এমন দিনও আছে যখন আপনি কিছু অনুভব করবেন না। মনে রাখবেন, আপনি আবারো সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে পারেন, পাঁচ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে। ক্রিস্টিনকে জিজ্ঞেস করে দেখুন। তিনি তার ইনস্টাগ্রাম পোস্ট-এ সত্যিই কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন– প্রথম পদক্ষেপ– বিছানা ছেড়ে বের হয়ে আসা– কঠিনতম, কিন্তু মূল্যবান। আপনি কতবার অনুশীলন করেছেন তা কোনো বিষয় নয়। প্রতিটি দিন শুরু করাই হলো কঠিনতম অংশ।

মনে আছে আমি বলেছিলাম যে, আমি চাই আপনি রুলটি উঠে পড়ার চ্যালেঞ্জটির মাধ্যমে পরীক্ষা করুন? এভাবেই আপনি সক্রিয়করণ শক্তির অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন। এটা হলো কিছু শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যা ক্রিস্টিন উল্লেখ করেছেন। এবং তিনি একদম ঠিক। সত্যি বলতে কি, আপনার অজুহাতগুলোকে পার হয়ে নিজেকে ধাক্কা দিতে শেখার চাইতে মূল্যবান আর কিছু নেই এবং এর মাধ্যমে জীবন, শরীর অথবা আপনার স্বপ্ন দেখা ভবিষ্যতের একধাপ কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব।

আপনার স্বাস্থ্য হয়তো জিম-এ যাওয়ার চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো নয়। এটা হয়তো আরো ভয়ঙ্কর কিছু, যেমন– কোনো অসুস্থতার সঙ্গে যুদ্ধ করছে। আপনি একা নন। প্রতিনিয়তঃ আপনার রোগমুক্তির জন্য, বাঁচার জন্য ও শক্ত থাকার জন্য প্রয়োজন মনোবল। অনেকেই আমাকে তাদের ক্যান্সারের সাথে সংগ্রাম ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে লিখেছেন এবং জানতে চেয়েছেন কেমন করে তারা তাদের যুদ্ধ করার শক্তি ও মনোবল ফিরে পাবেন। ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি এমন একটি হাতিয়ার যা আপনি আপনার ভেতরের শক্তি খুঁজে বের করে গুরুতর অসুস্থতার মুখোমুখি হওয়ার মতো কাজে ব্যবহার করতে পারেন।

গ্রেগ একজন অনুসরণ করার মতো বিশাল ব্যক্তিত্ব। তৃতীয় স্তরের ক্যান্সার। আর তিনি কি করলেন? ক্যান্সার নির্ণয়ের পর ১০টি ম্যারাথন দৌড়ে অংশগ্রহণ। কি অবিশ্বাস্য!

এটি হয়তো ম্যারাথন দৌড়ে অংশগ্রহণ সংক্রান্ত কিছু নয়। আপনার জন্য স্বাস্থ্য মানে হয়তো বাৎসরিক ম্যামোগ্রাম (বিশেষ করে টিউমার শনাক্তকরণের জন্য তোলা বুকের এক্স-রে ছবি) সম্পন্ন করার মতো সাহসী হওয়া। এমি রোবাচ, গুডমর্নিং আমেরিকার উপস্থাপককে যখন বলা হয়েছিল স্তন ক্যান্সার সচেতনতার মাসে তার ম্যামোগ্রাম প্রক্রিয়াটি প্রথমবারের মতো টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করার জন্য, তার প্রাথমিক মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া ছিল– কোনো উপায় নেই, কি করে সম্ভব? রোগটির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না আর তিনি এটাও চাননি যে সবাই ভাবুক তিনি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। এমি পরামর্শের আশায় তার সহকর্মী উপস্থাপক রবিন রবার্টস ও একজন স্তন ক্যান্সার থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির দিকে ঘুরে তাকালেন। এমি কখনোই ম্যামোগ্রাম করেননি কথাটি বলার পর মি. রবিন উত্তর দিলেন :

এমি, এটিই মূল বিষয়। শুনুন, চিকিৎসা বিষয়ক কোনো প্রক্রিয়ায় আপনাকে মানুষের দেখতে পাওয়াটা কতটা অস্বস্তিকর হতে পারে তা আমার চাইতে ভালো কেউ বুঝবে না। কিন্তু, একটি জীবন রক্ষা করতে পারাও অসাধারণ ব্যাপার। আপনাকে কখনোই অনুশোচনা করতে হবে না। আর আমি আপনাকে এই নিশ্চয়তা দিতে পারি যে অন্তত একটি জীবন হলেও রক্ষা পাবে। আপনার ম্যামোগ্রাম প্রক্রিয়া শুরু করা এবং এর ফলাফল সবাইকে জানানোর মাধ্যমে কেউ না কেউ জানতে পারবে যে তিনিও ক্যান্সার আক্রান্ত যা তার জানা ছিল না। এমি, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ৮০% নারীর এ সংক্রান্ত কোনো পারিবারিক ইতিহাস নেই।

এমি তাৎক্ষণিকভাবে মি. রবিন-এর প্রসাধন কক্ষে বসে মনস্থির করলেন যে তিনি ম্যামোগ্রাম করাবেন। তিনি প্রক্রিয়াটি সরাসরি সম্প্রচার করলেন এবং এক সপ্তাহ পর– যা তিনি টেলিভিশনে সম্প্রচার করেছিলেন, তা তার জীবন বাঁচিয়ে দিল। কারণ ম্যামোগ্রাম-এ তার স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ল। তারপর এমি দুটি সার্জিকাল অপারেশন ও আট রাউন্ড কেমোথেরাপি সম্পন্ন করেছিলেন এবং আজ তিনি ক্যান্সারমুক্ত।

এমি তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময় ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করেননি। তিনি একটি জটিল সময়ে মি. রবিন-এর কাছ থেকে ধাক্কা খেয়েছিলেন এবং পাঁচ সেকেন্ড সময়ের একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ধন্যবাদ যে তিনি তা করেছিলেন। আপনি এমির মতো সহকর্মী পাওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট ভাগ্যবান নাও হতে পারেন কিন্তু সবসময় নিজেকে এই ধাক্কাটি দিতে পারেন, ৫-৪-৩-২-১ এগিয়ে যাও।

নিজের স্বাস্থ্যের উন্নতি করা সম্পূর্ণই কাজের উপর নির্ভরশীল। আপনি হয়তো চালির মতো এতটা ওজন কমাতে পারবেন না অথবা গ্রেগ-এর মতো ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিতে পারবেন না, কিন্তু ডেন্টিস্টের কাছে যেতে, শরীরচর্চা করতে অথবা ম্যামোগ্রাম বা প্রোস্টেট পরীক্ষার জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে আপনি নিজেকে ধাক্কা দিতে পারেন। যেসব মানুষের কথা এখানে জানলেন, তাদের মতো যদি আপনি নিজেকে ধাক্কা দিতে পারেন, আপনার বদলে দেয়া জীবন আপনার নিজের হবে।

আমরা যেরকম পছন্দ করি, জীবন তাই। এই বইয়ে আমি বারবার উল্লেখ করেছি যে, আপনি যা করতে চান তা নির্বাচন করতে পারেন। আপনি যদি স্বাস্থ্যবান হতে চান তাহলে আপনাকে সোজাসুজি কিছু কাজ করতে হবে। অনুসরণ করার জন্য একটি পরিকল্পনা হাতে নিন, যে কোনো পরিকল্পনা, অতঃপর ক্ষণ গণনা করুন ৫-৪-৩-২-১ এবং এগিয়ে যান। পরবর্তীতে একমাত্র যে জিনিসটি আপনাকে নির্বাচন করতে হবে তা হলো প্রতিদিন কাজটি করে যাওয়া এমনকি, আনুক যেমনটি বলেছেন– আপনি যদি সত্যি সত্যি তা অনুভব না-ও করে থাকেন।

আমি বলেছি, আপনাকে যা করতে হবে তা খুবই সাধারণ কাজ। কিন্তু বলিনি যে এটা হবে সহজ। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এর মূল্য আছে। শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্য একটি সাধারণ নিয়মের অধীন– আপনাকে এটি অনুভব করতে হবে না, আপনাকে শুধু কাজটি করতে হবে।

*

(১০) উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি

আপনি কিছু করার আগে কোনোকিছুই কাজ করবে না।

– মায়া এঞ্জেলো

একটি শব্দে উৎপাদনশীলতাকে বর্ণনা করা যেতে পারে– ফোকাস / কেন্দ্রবিন্দু। উৎপাদনশীলতা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দুধরনের ফোকাস রয়েছে : (১) বিভ্রান্তি নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা যাতে করে আপনি হাতে থাকা কাজের উপর প্রতি মুহূর্তে ফোকাস করতে পারেন এবং (২) বড় মাপে আপনার কাছে সত্যি কি গুরুত্বপূর্ণ, তার উপর ফোকাস করার দক্ষতা যাতে অর্থহীন কাজের পেছনে আপনার সময় নষ্ট না হয়।

আমরা দুধরনের ফোকাসই বিশ্লেষণ করতে যাচ্ছি। বিষয়টির উপর সর্বশেষ গবেষণার দিকে তাকাব এবং প্রয়োজনের সময় আপনার কাছে যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তার উপর ফোকাস করা ও বিভ্রান্তি নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা অর্জন করার জন্য ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি কেমন করে ব্যবহার করতে হবে তা শিখব।

বিভ্রান্তি/বিচ্যুতি নিয়ন্ত্রণ করতে ঐকান্তিক হওয়া প্রয়োজন।

বিভ্রান্তি নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাপনা অনেকটা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত লক্ষ্য অনুসরণ করার মতো। আপনি এটা কখনোই অনুভব করতে পারবেন না। আপনার শুধু কাজটি করার জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে। আপনি ইতিমধ্যে জেনে গেছেন যে আপনার ফোনের প্রতি আসক্তি, মুঠোফোনে বার্তা পাঠানো, কিংবা ই-মেইল-এর উত্তর দেওয়া এক ধরনের বিভ্রান্তি…. এবং একে থামানো আপনার কাছে অসম্ভব মনে হয়।

যদিও আপনি জানেন এসব বন্ধ করা উচিত। আপনার ফোনটিকে নীরব করুন এবং প্রতি ৫ মিনিট অন্তর ই-মেইল চেক করা বন্ধ করুন। এসব জ্ঞান আপনার আচরণ পরিবর্তন করবে না। এটা কতটা খারাপ সেই সংক্রান্ত গবেষণার দ্বারা আমি আপনাকে কবর দিয়ে দিতে পারি কিন্তু তাতে করে আপনার আচরণ পরিবর্তীত হবে না। এখানেই ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি চলে আসে। আপনাকে এটা চাইতে হবে না, আপনাকে শুধু এটা করার জন্য নিজেকে ধাক্কা দিতে হবে।

প্রথমত, আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে বিভ্রান্তি কোনো ভালো জিনিস নয়। যে কোনো ধরনের বাধা আপনার উৎপাদনশীলতার জন্য মৃত্যুচুম্বন স্বরূপ। গবেষণায় দেখা গেছে অফিসের খোলা স্থানসমূহ ফোকাস করার জন্য সহায়ক নয়। ই-মেইল চেক করা একটি আসক্তিতে পরিণত হতে পারে কারণ আচরণগত গবেষকরা একে এলোমেলো প্রতিদান নাম দিয়েছেন। আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনার লক্ষ্যসমূহ প্রজ্ঞাপণ দিয়ে নাড়াচাড়া করার চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণভাবে।

অতঃপর আপনি তাদের মুছে ফেলুন। আমি দাবি করছি না যে এটাই একমাত্র উপায়। আমি আপনাকে এটাও বলব না যে এটি করা খুব সহজ। কিন্তু আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আপনি যদি ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করেন, কাজটি আপনি সত্যি করতে পারবেন। আপনি যখন বিভ্রান্তিসমূহ মুছে ফেলতে শুরু করবেন এবং আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর প্রতিমুহূর্তে ফোকাস করতে সক্ষম হবেন, আপনার কোনো ধারণা নেই এটা আপনাকে কি পরিমাণ সাহায্য করবে। কারেন আমাকে যেমন লিখেছিলেন :

আপনি জানেন না, প্রতিটি দিন আপনি আমাকে কি পরিমাণ সাহায্য করেছেন। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ।

সম্প্রতি আমি আমার হাইস্কুল বয়সী কন্যা কেন্ডাল-এর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলছিলাম। সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো পছন্দ করে তবে মুঠোফোন নিয়ে এত বেশি সময় কাটায় যে এতে করে তার পড়াশোনায় গুরুতর বিচ্যুতি ঘটছে। তাছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া নামকরা ব্যক্তি ও সুপারমডেলদের পোস্ট-এর সাথে সবসময় নিজেকে তুলনা করতে গিয়ে অনিরাপদ বোধ করে।

আপনার আমার মতো সেও জানত যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো তার উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে বিশেষ করে যখন হোমওয়ার্কের উপর তার অনেক বেশি ফোকাস করা দরকার। কেন্ডাল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সামাজিক মাধ্যমগুলোর বিভ্রান্তি নিয়ন্ত্রণ করার সর্বোত্তম উপায় হলো এর প্রলোভন থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা আর তাই সে তার ফোন থেকে ইনস্টাগ্রাম-এর ফটো শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশন-এর মতো জিনিসগুলো মুছে ফেলেছিল। তার ভাষায় :

এগুলো মুছে ফেলার পর পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে আমার জীবনে এসব কতটা গুরুত্বহীন ব্যাপার ছিল। এই অ্যাপগুলো যতক্ষণ আমার ফোনে ছিল, ততক্ষণ একধরনের অনিচ্ছাকৃত কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এগুলোর উপর ক্লিক করা এবং তাকিয়ে থাকা। এখন যখন অ্যাপগুলো আর নেই, এগুলোর দিকে তাকানোর আগ্রহও আমার আর নেই।

বিভ্রান্তি শুধুমাত্র প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই হয় না। সারাহ দেখতে পেলেন বিশৃঙ্খলা তার জীবনে একটি অন্যতম প্রধান বিচ্যুতি এবং তিনি এ ব্যাপারে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি গোপনে জমে থাকা আবেগগুলোকে পরাস্ত করার জন্য ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করেছিলেন এবং প্রচুর অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দান, পুনর্ব্যবহার, বিক্রয় এমনকি ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। তার মতে– অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ভেতর ডুবে যাওয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার অনুভূতি– অসাধারণ।

সুতরাং আপনি যদি কেন্ডাল-এর মতো সামাজিক মাধ্যম দ্বারা কিংবা সারাহর মতো অপ্রয়োজনীয় জিনিস দ্বারা বিভ্রান্তির ভেতর নিজেকে খুঁজে পান, তবে সেটি হবে একটি বিশাল মুহূর্ত। জেগে উঠুন এবং এটাই সময়, আপনার পরিবেশটিকে ৫-৪-৩-২-১ একটি ঝাঁকুনি দিন। বিভ্রান্তি দূর করুন। এটা সত্যি খুব সহজ কাজ এবং এর পুরস্কারগুলো শক্তিশালী।

দ্বিতীয় ধরনের ফোকাস টিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আরো কঠিন ও শক্তিশালী কাজ করতে হবে– বড় মাপের ফোকাস। এখানে একটি জিনিস আছে, যা আমি ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছি এবং এটি আমার বড় মাপের ফোকাসটিকে অন্য যে কোনো কিছুর চাইতে প্রসারিত করেছে, আর তা হলো– আমার সকালগুলোর নিয়ন্ত্রক হওয়া।

আপনার সকালগুলোর মালিক হোন আপনি।

আপনার সকালগুলোর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ উৎপাদনশীলতার জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। আমি যেভাবে করেছিলাম তা হলো সকালের জন্য একটি কার্যসূচি তৈরি করা। এলিসা তার সকালের কার্যসূচি বাস্তবায়ন করার পর খেয়াল করলেন যে, তিনি তার দিনটিকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছেন। এলিসা ঠিক যেমনটি বলেছেন– আপনি যখন সকালের জন্য একটি কার্যসূচি তৈরি করেন এবং তা অনুসরণ করেন, আপনি আসলে আপনার উদ্দেশ্যগুলোকে ছকে সাজান।

আমার সকালের কার্যসূচির জন্য আমি ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধ্যাপক ড্যান অ্যারেলিরর কাছে ঋণী। তার মতে সম্পূর্ণ জেগে ওঠার পর দিনের প্রথম ২/৩ ঘণ্টা আপনার মস্তিষ্কের শ্রেষ্ঠ সময়। সুতরাং, আপনি যদি ভোর ৬টায় বিছানা থেকে উঠে পড়েন তাহলে আপনার ব্যস্ত চিন্তা ও উৎপাদনশীল সময় হলো সকাল ৬ :৩০মি. থেকে সকাল ৯ :০০টা পর্যন্ত।

আপনার ঘরের জিনিসপত্র যদি আমাদেরগুলোর মতো হয়, তাহলে বেশির ভাগ সকালেই তা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। কুকুরকে খাওয়ানো, নাশতা তৈরি করা আর তিনটি বাচ্চাকে তৈরি করে স্কুলে পাঠাতে পাঠাতে আমার সকালের সবচেয়ে উৎপাদনশীল একটি ঘণ্টা চলে যায়। আর তাই সকালগুলোর ব্যাপারে আমাকে আরো সতর্ক হতে হবে যদি আমি আমার দিনটির মালিক হওয়ার পরিকল্পনা করে থাকি। আর এটা শুরু করতে হবে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ার মাধ্যমে যাতে করে দিনটি আমাকে অপহরণ করে নেওয়ার আগে বড় মাপের উদ্দেশ্যগুলোর উপর ফোকাস করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় হাতে পাওয়া যায়। আমি কিভাবে নিয়ন্ত্রক হয়ে আমার অগ্রাধিকারগুলোর উপর ফোকাস করার জন্য নিজের কার্যসূচি পরিবর্তন করেছিলাম, এখানে তা উল্লেখ করা হলো :

আমার প্রাত্যহিক কার্যসূচি :

(১) অ্যালার্ম বেজে ওঠার সাথে সাথে আমি উঠে পড়ি

আমরা এর গুরুত্ব সম্পর্কে জেনেছি যখন আপনি উঠে পড়ার চ্যালেঞ্জটির ব্যাপারে শিখছিলেন। অ্যালার্ম বাজা, উঠে পড়া, এবং শেষ। ব্যস্ত উৎপাদনশীলতার জন্য কখনোই ঘুমিয়ে পড় বোতামটি চাপবেন না। এর একটি স্নায়ুতাত্ত্বিক কারণ রয়েছে যা আমি এই বইটির জন্য গবেষণা করার সময় শিখেছি।

আপনি নিশ্চয় জানেন উৎপাদনশীলতার জন্য একটি ভালো ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমি বাজি ধরে বলতে পারি, আপনি জানেন না যে কিভাবে জেগে উঠবেন যা আপনার ঘুমের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, আপনি যখন ঘুমিয়ে পড় বোতামটি চাপেন, এর একটি নেতিবাচক প্রভাব আপনার মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ও উৎপাদনশীলতার উপর পড়ে যা ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। আপনাকে যা জানতে হবে :

আমরা একটি চক্রের মধ্যে ঘুমাই যা সম্পূর্ণ হতে সময় নেয় ৯০ থেকে ১১০ মিনিট পর্যন্ত। আপনি জেগে ওঠার প্রায় ২ ঘণ্টা আগে এই ঘুমচক্র সমাপ্ত হয় এবং আপনার শরীর ধীরে ধীরে উঠে পড়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। আপনার ঘড়ির অ্যালার্ম যখন বেজে ওঠে, আপনার শরীর তখন উঠে পড়ার জন্য প্রস্তুত। এখন আপনি যদি ঘুমিয়ে পড় বোতামটি চেপে দিয়ে আবার শুয়ে পড়েন, তাহলে আপনি আপনার মস্তিষ্ককে নতুন একটি ঘুমচক্রে প্রবেশ করতে বাধ্য করছেন যা ৯০ থেকে ১১০ মিনিট দীর্ঘ।

১৫ মিনিট পর যখন ঘুমি পড় অ্যালার্মটি বন্ধ হয়ে যায় তখন আপনার মস্তিষ্কের কটিক্যাল অংশ যা সিদ্ধান্ত, মনোযোগ, সতর্কতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী, সেটি তখনো ঘুমচক্রে অবস্থান করছে। এটি সহসাই উঠে পড়তে পারবে না– ঘুমিয়ে পড় বোতামটি যা শুরু করেছিল তা শেষ করতে এর আরো ৭৫ মিনিট সময় লাগবে।

নিদ্রাহীনতা অবস্থাটি ঝেড়ে ফেলতে এবং আপনার জ্ঞান-নির্ভর কার্যক্রম তাদের পূর্ণ ক্ষমতা ফিরে পেতে চার ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আর তাই ঘুমিয়ে পড় বোতামটি টিপে দেওয়ার পর আপনি যখন উঠে দাঁড়ান তখন কিঞ্চিৎ মাতাল বা টলটলায়মান বোধ করেন। এর কারণ এই নয় যে আপনার পর্যাপ্ত ঘুম হয়নি। এর কারণ আপনি ঘুমিয়ে পড় বোতামটি টিপে একটি নতুন ঘুমচক্র শুরু করার পর তা আবার বিঘ্নিত করেছেন। যেদিন আপনি এই কাজটি করবেন, কোনোভাবেই আপনি সেদিন আপনার সেরা অবস্থায় থাকবেন না।

সুতরাং, এই ব্যাপারে আমি খুবই সিরিয়াস– যখনই অ্যালার্মটি বন্ধ হবে, আর ঘুমিয়ে পড় বোতাম নয়। উঠে পড়ুন। কোনো সংকোচ ছাড়াই। এখানে আলোচনা করার কোনো সুযোগ নেই।

(২) আমি বাথরুমের দিকে হাঁটতে শুরু করি এবং অ্যালার্মটি বন্ধ করে দিই

আমার এবং আমার স্বামীর ফোন কিংবা অ্যালার্ম ঘড়ি আমাদের শোবার ঘরে কিংবা কোনো স্ট্যান্ডের উপর থাকে না। থাকে বাথরুমে। খুব কাছেই, তাই কেউ ফোন করলে কিংবা ভোরে অ্যালার্ম বাজলে আমরা শুনতে পাই। কিন্তু যথেষ্ট দূরে, তাই এর প্রলোভনে পড়ি না। আমার ফোনটি যদি বিছানার পাশে স্ট্যান্ডের উপর থাকে, তাহলে হয়তো কোনো রকম চিন্তা ছাড়াই আমি সেটি হাতে তুলে নিতে পারি এবং বিছানায় বসে ই-মেইলগুলো পড়া শুরু করতে পারি। আপনি জানেন আপনিও একই কারণে দোষী। এটি নাগালের মধ্যে থাকলে কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই হাতে তুলে নেয়া সহজ। একটি বিশাল সংখ্যক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিছানা থেকে উঠে পড়ার আগে ব্যক্তিগত ই মেইল পড়ে থাকেন এবং ডেলয়েট রিপোর্টস-এর এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এক-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক ও ৩৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে অর্ধেকই মাঝরাতে জেগে ওঠে এবং তাদের ফোনগুলো পরীক্ষা করে থাকে। আমার ফোন বা অ্যালার্ম ঘড়িটি বাথরুমে রেখে আসার মাধ্যমে এর কাছে পৌঁছানোর অভ্যাসে নিমজ্জিত হওয়াকে আমি কঠিন করে দিয়েছি এবং রাতে একটি ভালো ঘুম দেওয়ার ব্যবস্থা পাকাঁপোক্ত করেছি।

(৩) আমি দাঁত ব্রাশ করি এবং সামনের দিনটির উপর ফোকাস করি

আমি মুখ ধোয়া এবং দাঁত ব্রাশ ও ফ্লস করার জন্য ৩ থেকে ৫ মিনিট সময় ব্যয় করি, অতঃপর নিজের জন্য সত্যি আমি কি চাই ও তার জন্য কি করতে হবে এবং বড় মাপের লক্ষ্যগুলোর ব্যাপারে আমার চিন্তা-ভাবনার উপর ফোকাস করি। এটা কার্যতালিকা নয়। এটা হলো অবশ্য করণীয় তালিকা। এটা সেই মুহূর্ত যখন আমি সচেতনভাবে আমার চিন্তা-ভাবনাগুলো জড়ো করি, এক বা দুটি বিষয় নিয়ে ভাবি যা করার ব্যাপারে আমি হয়তো কিছু বোধ করি না কিন্তু যা আজই আমাকে করতে হবে– আমার লক্ষ্য, স্বপ্ন এবং ব্যবসায়িক উন্নতির জন্য। গবেষকরা যাকে বুদ্ধিদীপ্ত/স্মার্ট লক্ষ্য নামে ডাকেন (নির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য, অর্জনযোগ্য, বাস্তব এবং সময়োপযোগী)। আমি শুধু বলতে পারি, যা কিছু আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ সেই ব্যাপারে এগুলো আগামী অগ্রগতির নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। সাধারণতঃ এটা অনেকটা জঘন্য কিছু যা আমি করার ব্যাপারে অনুভব করি না, মরফিন যেমনটি বর্ণনা করেছেন :

আপনার টেড টক দেখেছি। আজকে ১ ঘণ্টা আগেই উঠে পড়েছি এবং শেষ পর্যন্ত করার ব্যাপারে অনুভব করি না এমন কিছু জঘন্য কাজ করতে নিজের উপর জোর খাটাতে পেরেছি, যা খুব মূল্যবান। ধন্যবাদ মেল।

(৪) আমি কাপড় পড়ি, বিছানা গুছাই, রান্নাঘরে যাই এবং এককাপ কফি ঢালি

আপনি কি খেয়াল করেছেন যে আমার এখনো শেষ হয়নি? আমি আমার ফোনটির দিকে তাকাইনি অথবা ই-মেইল পরীক্ষা করার জন্য অন্তর্জালে প্রবেশ করিনি। কারণ আমি জানি, যে মুহূর্তে এটি করব, আমি আমার ফোকাস হারাব। যে মুহূর্তে আপনি ই-মেইল পরীক্ষা করতে যাবেন, সংবাদপত্র পাঠ কিংবা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বেন– আপনার সামনে অন্য কারো অগ্রাধিকারসমূহ লাফ দিয়ে পড়বে। আপনার কি মনে হয়– বিল গেটস কিংবা অপরাহ উইনফ্রে বিছানায় শুয়ে শুয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোর ভেতর হামাগুড়ি দিয়ে বেড়ান? না, এবং আপনারও করা উচিত নয়। আপনার নিজেকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং সারাদিনের পরিকল্পনা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত ই-মেইল চেক করা বন্ধ রাখুন।

(৫) ১ থেকে ৩ পর্যন্ত কাজগুলো যা অবশ্য করণীয় এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ তা লিখে ফেলি

১ থেকে ৩ পর্যন্ত কাজগুলো যা আজ আমাকে অবশ্যই করতে হবে বলে অনুভব করি সেগুলো অফিস স্টোর থেকে কেনা সস্তা ডেইলি প্ল্যানার-এ আমি নিজের জন্য লিখে ফেলি। এটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ তার দুটি কারণ রয়েছে : (১) আমি একজন চাক্ষুষ ব্যক্তিত্ব এবং (২) ক্যালিফোর্নিয়ার ডমিনিকান বিশ্ববিদ্যলয়-এর মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক প্রফেসর ড. গেইল ম্যাথিউস-এর গবেষণা অনুযায়ী– আপনার লক্ষ্যগুলো লিখে রাখার কারণে ৪২% অধিক সম্ভাবনা থাকে সেগুলো অর্জন করার।

আমার ডেইলি প্ল্যানার-এ এগুলো লিখে রাখার অর্থ হলো– দিনভর আমি তাদের দেখব এবং কাজ করার জন্য নিজেকে মনে করিয়ে দেব। কেন গুরুত্বপূর্ণ লেখা থাকার কারণে এটি আমাকে একটি অতিরিক্ত ধাক্কা দেবে।

আমি যদি এগুলো যান্ত্রিক ক্যালেন্ডারে লিপিবদ্ধ রাখি, তবে হয়তো ভুলে যেতে পারি। একটি ঘরে প্রবেশ করে হয়তো মনে করতে পারব না যে কেন এই ঘরে এসেছি– সুতরাং আমি আমার অবশ্য করণীয় তালিকা সাথে করে সদর্পে হেঁটে যেতে পছন্দ করি। আপনি এটি কোনো ছোট নোটবই কিংবা ক্যালেন্ডার, যে কোনো জায়গায় লিখতে পারেন– শুধু লিখে রাখুন এবং তা আপনার সাথেই রাখুন। শ্যারন যেমনটি করেছে– আমার কাজের তালিকা এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। ধন্যবাদ দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল।

(৬) আমি সকাল ৭টা ৩০ মিনিটের আগে ৩০ মিনিট সময় ব্যয় করি দিনের পরিকল্পনা করার জন্য

আমার ফোন বা ই-মেইল চেক করে দেখার আগেই আমি আমার অবশ্য করণীয় সম্পর্কে পরিকল্পনা করি এবং প্রায়শঃই তা কার্যকর করে থাকি। এটা করার জন্য আমি একটি হাতিয়ার ব্যবহার করি যাকে আমি ৭টা ৩০ মিনিট এর আগে ৩০ মিনিট নামে ডাকি।

আমি সকাল ৭টা ৩০ মিনিট এর আগে ৩০ মিনিট সময় ব্যয় করি দিনের পরিকল্পনা করার জন্য। এই সময়ের মধ্যে, আমি দিনের পরবর্তী সময়ের জন্য অবশ্য করণীয় হিসেবে নির্ধারিত দুতিনটি কাজ শুরু করে দেই। আমি বাড়িতে থাকলে সকাল ৭টায় এই পরিকল্পনার কাজটি শুরু করি যখন আমাদের শেষ বাচ্চাটি তার স্কুল বাস ধরতে বেড়িয়ে যায়। এই ৩০ মিনিট সময় আমার সফলতার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

দিনের পরিকল্পনা নির্ধারণ করার মাধ্যমে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, আপনি ঠিক জিনিসগুলোর উপর ফোকাস করেছেন। জেরেমি যেমন করে থাকে। অনেক বেশি উৎপাদনশীল ও দিনের লক্ষ্য পূরণে সফল হওয়ার জন্য আপনার নিজেকে প্রাধান্য দিতে হবে।

একবার আপনি যদি অফিসে ঢুকে পড়েন, তাহলে আর ৭টা ৩০ মিনিট এর আগে ৩০ মিনিট ধারণাটি সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এটা অবশ্যই আপনাকে ঘরে অথবা প্রিয় কোনো কফি সপ-এ অথবা ট্রেন বা পার্কিং এলাকায় আপনার গাড়িতে বসে করতে হবে। আমি মজা করছি না। যে মুহূর্তে আপনি অফিসে ঢুকে প্রথম ই-মেইলটির জবাব দেবেন অথবা প্রথম ফোন কলটি গ্রহণ করবেন, ধরে নিতে হবে আপনার দিনটি চলে গেছে।

প্রফেসর সান ক্লারসন গবেষণা করে দেখেছেন কি করে সি.ই.ওরা এত বেশি পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করে থাকেন। এই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের গোপন রহস্য কি? তারা বাড়িতে ৯০ মিনিটের মতো কাজ করে থাকেন কারণ সেখানে মনযোগী হওয়ার কিছু সুযোগ থাকে। কর্মস্থলে তারা প্রতি ২০ মিনিট অন্তর একবার বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। আর বাধা সম্পর্কে আমি কি বলেছিলাম নিশ্চয় মনে আছে? এটা উৎপাদনশীলতার জন্য মৃত্যুচুম্বনস্বরূপ।

কেন পরিকল্পনা এবং সবচেয়ে দরকারি কাজগুলো প্রথমে করা এত গুরুত্বপূর্ণ? মনে রাখবেন, ড. অ্যারিলে যেমনটি বলেছিলেন– দিনের প্রথম ২/৩ ঘণ্টা সময় আপনার কাজ বা লক্ষ্য অর্জনের উপর ফোকাস করার শ্রেষ্ঠ সময় যা আপনার ব্যক্তিগত বা পেশাদারী লক্ষ্য পূরণে অগ্রগতি নিয়ে আসে। সেই সময়টি অপ্রয়োজনীয় কাজ করে অপচয় করা চরম বোকামি।

ই-মেইল-এর জবাব দেওয়া, ফোন কল গ্রহণ করা অথবা কর্মিসভায় উপস্থিতি আপনার পরিকল্পিত সময়সূচি দখল করে নেয় এবং আপনার জীবনের বড় কোনো উন্নতির পথে খুব কমই নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। দিনের প্রথম কয়েকটি ঘণ্টা আপনার নিজের সুখ ও কাজের ওপর গভীর ফোকাস করার জন্য প্রয়োজনীয় সময়কে সুরক্ষা করতে ধরে রাখা উচিত। এর জন্য দরকার হলে যুদ্ধ করুন।

আপনি যদি দুটি বিষয়ের উপর কাজ করে থাকেন যেগুলো আপনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন, তাহলে আপনার গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পসমূহে অগ্রগতি হচ্ছে বলে আমি মনে করি এবং আপনি লম্বা খেলায় জিতে চলেছেন। তাড়াতাড়ি উঠে পড়া এবং দিনের পরিকল্পনা করার বিশাল সুবিধা রয়েছে। মারিকে জিজ্ঞেস করে দেখুন।

আপনার টেড টক আমার পছন্দ হয়েছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে আমি ব্লগ-এ লিখেছি এবং একটি বই লিখতে শুরু করেছি। সপ্তাহ দুএক ধরে আমি ভোর ৫টায় উঠে পড়ছি এবং বিপুলভাবে এর সুবিধা ভোগ করছি। আমি আমার প্রাত্যহিক কার্যকলাপের চেকলিস্ট হিসেবে একটি সাময়িকী লিখছি। এই বইটি আমি যে পথ অনুসরণ করার মাধ্যমে বছরব্যাপী যা কিছু অর্জন করেছি, তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করবে।

আমি কয়েক সপ্তাহ পর মারিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তার সকালের কার্যক্রম কেমন চলছে। জবাব ছিল :

আজ আমার ভোর ৫টা বা তার আগে উঠে পড়া এবং সকালের কার্যক্রম অনুসরণ করার ৫৪তম দিন। ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি আমাকে শীতের সকালে বিছানা থেকে উঠে পড়া ও দিনের প্রথম কাজগুলো শেষ করার ব্যাপারে প্রচুর সহায়তা করছে।

এটা সত্যি অসাধারণ মারি, ৫৪দিন একজন বসের মতো! টনি ঠিক এটাই করেছিল এবং প্রতিদিন ভোর ৫টায় জিমনেসিয়াম-এ ফিরে যেতে পেরেছিল।

আমি জানি এত সকালে উঠে পড়া এবং সরাসরি শরীরচর্চা শুরু করতে পারা একটি কঠিন কাজ। কিন্তু ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে আপনি যখন সেই প্রতিবন্ধক অনুভূতিগুলোকে পরাস্ত করার সক্রিয়তা শক্তি খুঁজে পাবেন, তখন তা আপনাকে আপনার দিনটির নিয়ন্ত্রক হতেই শুধু সাহায্য করবে না, বরং আপনার শ্রেষ্ঠ সংস্করণটিকে সক্রিয় করে তুলবে।

(৭) আমি আমার অব্যাহতির সময় পরিকল্পনা করি

গবেষণা থেকে আমি এখানে আরো কিছু শিখেছি। দিনের পরিকল্পনা করা ছাড়াও আমি পরিকল্পনা করি কখন আমার কাজ শেষ করতে হবে। এটা ঠিক, প্রত্যহ আমি যখন দিনটি শুরু করি, আমি এটাও নির্ধারণ করি যে ঠিক কখন আমি কাজ শেষ করব এবং পরিবারের সাথে সময় কাটাব। শেষ করা বা নতুন শুরু করার নির্ধারিত সময়সূচি আমার জন্য দুটি কাজ করে থাকে, আর তা হলো– এটি আমাকে সময়ের ব্যাপারে আন্তরিক এবং অধিক উৎপাদনশীল করে তোলে।

পারকিনসন্স আইন নামে একটি নীতি রয়েছে– এটি হলো, যত সময় দেয়া হবে তা প্রসারিত হবে। আপনার কার্যদিবসকে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা দিন। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা শারীরিক সক্ষমতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা আপনাকে ফোকাস করতে ও কাজ থেকে বিরতি নেওয়ার ব্যাপারে বাধ্য করতে জোর খাটাবে। এটা একটি বিরতি যা আমাদের পরিবারের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন এবং আমাদের মস্তিষ্ককে এটি বিশ্রাম নিতে, পুনঃশক্তি অর্জন করতে ও পুনঃস্থির হতে প্রয়োজনীয় সময় দিয়ে থাকে। মিথ্যে বলছি না, দিনের কাজ শেষ করার জন্য প্রায়শই আমার কম্পিউটারটি বন্ধ করতে ও নিজের উপর জোর খাটাতে ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি আমি ব্যবহার করেছি।

এই দৈনন্দিন কর্মপদ্ধতি কতভাবেই না আমাকে সাহায্য করেছে। এর মাধ্যমেই আমি আমার অগ্রাধিকার সমূহকে দিনের কার্যসূচিতে প্রাধান্য দিতে পেরেছি। আমি অনেক নিয়ন্ত্রিত বোধ করেছি কারণ অ্যালার্ম বাজার মুহূর্ত থেকে আমি আমার কৃতকর্মের মালিকানা হাতে পেয়েছি। আমি অনেক বেশি স্বচ্ছতা পেয়েছি (যা সুযোগ চিহ্নিত করতে সাহায্য করে থাকে), এবং বড় মাপে আমি ২/৩টি অবশ্য করণীয় সংজ্ঞায়িত করতে পেরেছি যা আমার লক্ষ্য সমূহকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

আমি যদি নিজেকে আমার রুটিন ছেড়ে অন্য পথে চলতে অথবা বিভ্রান্ত হতে দেখি, যেটি একটি শক্তিশালী মুহূর্ত, সঠিক পথে ফিরে আসতে আমি তখন রুলটি ব্যবহার করি। আপনি অবশ্যই কার্যকর যে কোনো রুটিন তৈরি করতে পারেন তবে আপনি যদি শুরু করার উপায় খুঁজে থাকেন, তবে আমারটি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। অনেক মানুষ তাদের সকালের কর্মসূচিতে ব্যায়াম, ধ্যান ও কৃতজ্ঞতাবোধ তালিকা যোগ করার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সাফল্য খুঁজে পেয়েছেন। আপনার জন্য কোনটি ভালো কাজ করবে তা সবগুলো পরীক্ষা করে বের করুন।

আপনাকে যা বলছি তা খুব সাধারণ, অবশ্যম্ভাবী ও কার্যকর। একে নিজের মতো সাজিয়ে নিন যাতে আপনার জন্য কাজ করে, কিন্তু যে কোনো উপায়ে তা করতে ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করুন। আপনি যখন আপনার দিনটির নিয়ন্ত্রক হওয়ার জন্য কাজ করবেন, ক্রিস্টি যেমনটি বলেছেন– এটি খেলার ধরনই বদলে দেবে। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদবিটি অর্জন করেছিলেন এবং খুব ভালো আছেন। এবার আপনার পালা।

প্রস্তুত হওয়ার আগেই শুরু করে দিন। তৈরি হতে হবে না, এগিয়ে যান।

*

(১১) দীর্ঘসূত্রতার সমাপ্তি

আরম্ভ করতে হলে, শুরু করুন।

–উইলিয়াম ওয়র্ডসওয়ার্থ

ফাইভ সেকেন্ড রুল হলো দীর্ঘসূত্রতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি অসাধারণ অস্ত্র। কিভাবে এটা ব্যবহার করতে হবে তা বিস্তারিত জানার আগে প্রথমে দীর্ঘসূত্রতা কি তা সংজ্ঞায়িত করা দরকার। এটা কি অথবা কি নয়। এই বইয়ের গবেষণায় আমি যখন দীর্ঘসূত্রতার কারণ সম্পর্কে জেনেছি, আমাকে তা বিস্মিত করেছে। আমার জানা সবকিছু ভুল ছিল।

আমি এটা জেনে আরো বিস্মিত হয়েছি যে দুধরনের দীর্ঘসূত্রতা বিদ্যমান রয়েছে– (১) ধ্বংসাত্মক দীর্ঘসূত্রতা : আপনি যখন কোনো কাজ এড়িয়ে চলেন যা শেষ করা দরকার ছিল এবং (২) উৎপাদনশীল দীর্ঘসূত্রতা : যা কোনো সৃজনশীল প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আসুন, ভালোটি দিয়ে শুরু করি।

উৎপাদনশীল দীর্ঘসূত্রতা

আপনি যদি কোনো সৃজনশীল বা উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে কাজ করে থাকেন, তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘসূত্রতা এক্ষেত্রে ভালোই শুধু নয়, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সৃজনশীল প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সুতরাং আপনি যখন একটি প্রকল্প কিছুদিন বা কয়েক সপ্তাহের জন্য নির্ধারণ করবেন, আপনার মস্তিষ্ক প্রকল্পটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সময় পাবে। একটু বেশি সময় নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে আপনি অনেক বেশি সৃজনশীল ও ভিন্ন প্রকৃতির ধারণা তৈরি করতে পারবেন যা আপনার প্রকল্পটিকে আরো উন্নত করবে।

উৎপাদনশীল দীর্ঘসূত্রতা ছিল আমার জন্য শেখার বিষয় যা বিপুলভাবে ধারণার স্বাধীনতা প্রদান করে, বিশেষ করে আমি যখন এই বইটি লেখার জন্য সংগ্রাম করছিলাম। উৎপাদনশীল দীর্ঘসূত্রতা সম্পর্কে জানার আগে আমি আমার নিজের উপর প্রায়ই রেগে যেতাম কারণ প্রতিনিয়ত : আমি ব্যর্থতা ও রাইটার্স ব্লক অনুভব করতাম এবং নিজেকে আমার খারাপ, অলস বা অক্ষম লেখক বলে মনে হতো। সত্যি কথা হলো, এই মাত্রার একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া একটু সময় নেয়।

চিন্তা-ভাবনা করার জন্য আমার মস্তিষ্কের সময় ও বিরতি দরকার ছিল। এটি শেষ করতে আমি যা ভেবেছিলাম তার চাইতে ৭ মাস বেশি সময় লেগেছিল এবং এই কারণে বইটি ১০০ গুণ বেশি ভালো হয়েছে। আপনি যদি কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে ব্যর্থ হন তাহলে প্রকল্পটির জন্য কিছু সময় ব্যয় করুন, অন্য কোথাও আপনার শক্তিকে ফোকাস করুন এবং তারপর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফিরে আসুন।

সুতরাং, আপনি যদি কোনো সৃজনশীল প্রকল্পে যুক্ত থাকেন এবং আপনার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা না থেকে থাকে, তাহলে এটা দীর্ঘসূত্রতা নয়। যদি আপনি আপনার প্রকল্প কিছুদিনের জন্য স্থগিত রেখে মস্তিষ্ককে চিন্তা করার সুযোগ করে দেন, তবে এটাই সৃজনশীল প্রক্রিয়া। দীর্ঘসূত্রতার ফলে আপনি যে নতুন ধারণাগুলো পাবেন তা আপনার কাজটিকে আরো অধিক দক্ষ করে তুলবে।

ধ্বংসাত্মক দীর্ঘসূত্রতা

ধ্বংসাত্মক দীর্ঘসূত্রতা একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রাণী। এটি দেখা যায় যখন আমরা কোনো কাজ এড়িয়ে চলি অথচ তা শেষ করা দরকার এবং আমরা জানি যে কাজটি না করলে নেতিবাচক ফলাফল ভোগ করতে হবে। এই অভ্যাসটিই আবার দিনের শেষে আপনাকে কামড়াতে আসবে।

আমাদের সবার কাছেই এমন সব কিছু রয়েছে যা আমরা করে উঠতে পারি না। যেমন– ছবির অ্যালবামটি হালনাগাদ করা, একটি তথ্য তালিকা বিশ্লেষণ করা, একটি প্রস্তাব পেশ করা, বাড়িঘর পরিষ্কার করা অথবা একটি কার্যতালিকার ভেতর দিয়ে যাওয়া যা আপনার ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি করবে। এগুলো এমন কিছু যা সত্যিই শেষ করা দরকার অথচ আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে তা এড়িয়ে চলি।

এভেলিন নিজেকে দীর্ঘসূত্রতার মাঝে খুঁজে পান এবং শাস্তি দিতে থাকেন। তার ভাষায়– বছরব্যাপী আমি নিজেকে সবকিছুর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি রুলটি কাজে লাগিয়েছিলেন এবং এটা ছিল অসাধারণ। এভেলিন প্রশ্ন করা বাদ দিয়ে কাজগুলো শেষ করতে নিজেকে ধাক্কা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন যা এমনকি তাকেও বিস্মিত করেছিল।

তিনি সম্ভবতঃ জানতেন না কেন সব কাজে তার বিলম্ব হচ্ছিল। আমাদের অধিকাংশ যেমন জানেন না। দীর্ঘদিন যাবত মানুষ বিশ্বাস করেছে যে দীর্ঘসূত্রতার অর্থ হলো– দুর্বল সময় ব্যবস্থাপনা, ইচ্ছাশক্তির অভাব, অথবা শৃঙ্খলার অভাব। হায়! আমাদেরই ভুল। দীর্ঘসূত্রতা কোনোভাবেই অলসতার একটি ধরন নয়। এটা চাপ বা ধকল সামলানোর একটি প্রক্রিয়া।

দীর্ঘসূত্রতা ও ধকলের মধ্যে সংযোগ

কার্লটন বিশ্ববিদ্যলয়-এর মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক টিমোথি পাইচিল ১৯ বৎসরের বেশি সময় ধরে দীর্ঘসূত্রতার উপর পড়াশোনা করছেন। ড, পাইচিল দেখতে পান, প্রধান যে কারণে দীর্ঘসূত্রতার উদ্ভব হয় তা কেবল মাত্র কাজ এড়ানো নয়, বরং ধকল এড়ানো। দীর্ঘসূত্রতা হলো ঠিক এই মুহূর্তে ভালো অনুভব করার অবচেতন মনের একটি ইচ্ছা যাতে করে আপনি চাপমুক্ত বোধ করতে পারেন।

আমরা সবাই একটি সাধারণ ভুল চিন্তা করে থাকি যে, দীর্ঘসূত্রতা মানুষের ইচ্ছাকৃত পছন্দের ফসল। আসলে, বেশির ভাগ মানুষ যারা দীর্ঘসূত্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করেছেন, তারা গবেষকদের কাছে বলেছেন যে, তাদের ধারণা, এর উপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এবং তারা সঠিক, কারণ তারা কেউই বুঝতে পারেননি যে সবকিছুতে কেন তাদের বিলম্ব হচ্ছে।

আমরা বিলম্ব করি কারণ আমরা চাপ অনুভব করি। বিষয়টি হলো– কাজের ব্যাপারে আপনি চাপ অনুভব করেন না, এটি ঘটে আরো বড় কোনো কারণে যেমন– টাকা-পয়সা, সম্পর্কজনিত সমস্যা অথবা সাধারণ অর্থে জীবন সম্পর্কিত বিষয়ে। আপনি যখন কাজ বন্ধ রাখেন, অথবা ১৫ মিনিট অনলাইন কেনাকাটা বিষয়ে গবেষণা করেন অথবা গতরাতের কোনো খেলার উল্লেখযোগ্য অংশ টেলিভিশনে দেখেন, আপনি তখন সামগ্রিক ভাবে একটি বড় চাপ বোধ থেকে একটি ছোট চাপ-বিরতি গ্রহণ করেন।

এটা মনের জন্য মানসিক খাদ্যস্বরূপ। আপনি যখন কঠিন কোনো কাজ এড়িয়ে চলেন, আপনার তখন এক ধরনের হালকা বোধ হয়। সাথে সাথে আপনি যখন কোনো কাজ উপভোগ করেন, যেমন– ফেসবুকে ঘুরে বেড়ানো বা কোনো ভাইরাল ভিডিও দেখে মজা করা, আপনি তখন একটি স্বল্পমেয়াদি মাদকতা লাভ করেন। আপনি যত বেশি বিলম্ব করবেন ততবেশি এই আচরণের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। সমস্যাটি হলো– একটি বিড়ালের ভিডিও দেখে আপনি যখন সাময়িক হালকাবোধ করবেন, এই কাজটির পুনরাবৃত্তি আপনার জন্য এড়িয়ে চলা কাজের পাহাড় তৈরি করে দেবে যা আপনার জীবনে আরো অধিক চাপ সৃষ্টি করবে।

স্কট এ ব্যাপারে একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি আমাকে লিখেছিলেন কারণ তার নিজের মাথা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সাহায্যের দরকার ছিল। তিনি যাদেরকে তার সমস্যার কথা বলেছিলেন তারা সবাই তাকে উত্তর দিয়েছিল– তিনি নিজেই তার নিজেকে পেছনে টেনে ধরে রেখেছেন। এবং তারা ঠিকই বলেছেন।

স্কট একজন পি-এইচ-ডি ছাত্র এবং শরীরবিদ্যা গবেষণাগারে কাজ করছিলেন। তিনি বিবাহিত এবং তিনি ও তার স্ত্রী তাদের প্রথম পুত্রসন্তানের গর্বিত পিতা-মাতা হয়েছিলেন। তিনি তার জীবনকে যেভাবে বর্ণনা করেছেন :

প্রচুর অর্থনৈতিক চাপা যা আমার পড়াশোনার কারণে স্বাভাবিক ধরে নেয়া সত্ত্বেও বাড়িতে সবকিছুই ছিল অসাধারণ। আমার প্রাত্যহিক জীবনে সমস্যা ছিল এবং গবেষণাগারে কাজ করার কারণে আমি আমার সব দায় দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছিলাম না। মূলতঃ আমি ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন কাজ করা বন্ধ রাখতাম যতক্ষণ না এটি একটি পর্যায়ে এসে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিক্রম করছে অথবা কাউকে বিপর্যস্ত করছে।

নিজের জন্য আমার অনেক উচ্চাশা ছিল এবং আক্ষরিক অর্থে প্রতিরাতে ঘুমাতে যাবার আগে আমি আমার নিজেকে বলেছি যে, আগামীকাল নতুনভাবে শুরু করব এবং প্রচুর পরিমাণ শক্তি সঞ্চয় করে সবকিছুই আমি মোকাবেলা করব। কিন্তু তারপর আবার দিনের পর দিন ব্যর্থ হতে থাকি এবং ফিরে পাওয়া আত্মবিশ্বাস বিবর্ণ হতে শুরু করে। মূলতঃ আমি আমার পূর্ণ সম্ভাবনার কাছাকাছি কোথাও বসবাস করছি বলে কখনো মনে হয়নি, যা ছিল হতাশাজনক।

স্কট-এর নোট পড়লে আপনি দেখতে পাবেন তিনি নিজের উপর হতাশাবোধের একটি দুষ্টচক্রে আটকা পড়ে গিয়েছিলেন। আমি তার সাথে সম্পূর্ণভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পারছি কারণ একটা সময় আমি যখন বিছানা ছেড়ে উঠে আসার ব্যাপারে সংগ্রাম করছিলাম তখন একই রকম বোধ হয়েছিল। স্কট জানতেন তাকে কি করতে হবে (কাজের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া এবং তা শেষ করা), কিন্তু তার নিজের কাছে মনে হচ্ছিল না যে এটা তিনি করতে পারবেন।

স্কট-এর নোট আমাকে সুযোগ দিয়েছে এটা ব্যাখ্যা করার– যখন কেউ দীর্ঘসূত্রতার ভেতর দিয়ে যায় তখন আসলে কি ঘটে? তিনি আমাদের জানিয়েছিলেন যে তিনি এবং তার স্ত্রী প্রচুর আর্থিক চাপের মধ্যে রয়েছেন। এই চাপ বোধটি কখনো ভালো নয়। এটা আরো ব্যাখ্যা করে কেন তিনি অর্থনৈতিক চাপমুক্তির জন্য সবকিছুতে বিলম্ব করছেন। মনে রাখবেন, আমরা যখন কোনো কঠিন কাজের পরিবর্তে সহজ কিছু প্রতিস্থাপন করি, তখন এক ধরনের উৎসাহ ও নিয়ন্ত্রণ বোধ করে থাকি। এটা স্বজ্ঞানবিরোধি, কিন্তু স্কট এর যেসব কাজ ল্যাব-এ শেষ করার দরকার ছিল, তা না করার কারণ তিনি তার জীবনের অর্থনৈতিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন।

তাহলে, কিভাবে তিনি এটাকে থামাবেন? সৌভাগ্যক্রমে, এখানে তিনটি সহজ ও গবেষণা সমর্থিত ধাপ রয়েছে এবং ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি সেগুলো করতে আপনাকে সহায়তা করবে। আপনি স্কট-এর মতো কাজ এড়িয়ে চলা, এভেলিন-এর মতো পরিষ্কার করা কিংবা জে, লোসোর মতো অনুশীলন করা, যাই করে থাকুন না কেন, প্রতিবার দীর্ঘসূত্রতাকে পরাজিত করার জন্য আপনি রুলটি ব্যবহার করতে পারেন।

নিজেকে ক্ষমা করুন

গবেষণা প্রথম যে কথাটি আমাদেরকে বলছে– দীর্ঘসূত্রতার জন্য নিজেকে আপনার ক্ষমা করতে হবে। এটা রূপকথা নয়, বিজ্ঞান।

কার্লটন বিশ্ববিদ্যলয় থেকে আমাদের বিশেষজ্ঞকে মনে আছে? ড. পাইচিল একটি নিবন্ধের সহ লেখক হিসেবে লিখেছিলেন– দীর্ঘসূত্রতার জন্য যে সকল শিক্ষার্থী নিজেদেরকে ক্ষমা করেছিল তারা পরবর্তী পরীক্ষায় অপেক্ষাকৃত কম বিলম্ব করেছে। অদ্ভুত শোনাচ্ছে? কিন্তু সমস্যার একটি অংশ যা মনোবিজ্ঞানীরা উন্মোচন করেছিলেন তা হলো– বিলম্বকারীরা নিজেদেরকে ক্ষমা করার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর হয়ে থাকে।

ত্রাশকি দেখতে পেয়েছিলেন নিজেকে ক্ষমা করতে সক্ষম হবার পর তার জীবন বদলে গিয়েছে। নিজেকে শাস্তি দেওয়ার বদলে তিনি দীর্ঘসূত্রতার সমাপ্তি টেনেছিলেন। অসাধারণ।

আপনি রায়ান-এর সাথেও সংযোগ স্থাপন করতে পারেন যিনি একটি নতুন ব্যবসা শুরু করার প্রাথমিক পর্যায়ে আমাকে লিখেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন যে– যতই তিনি চাইতেন তার প্রকল্পটি কাজ করুক, এর পেছনে সময় ব্যয় করা তার কাছে ততই কঠিন মনে হতো। এটা দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন এবং এর আসল কারণ ছিল ব্যর্থতার ভয়।

আমার ভালো লেগেছে যা তিনি সবশেষে বলেছিলেন– জয় হোক কিংবা পরাজয়, অন্তত আমি কিছু একটা তো করেছি। নিজের সঙ্গে সৎ হতে এবং যা করা প্রয়োজন তার উপর ফোকাস করাটা কতটা কঠিন তা স্বীকার করতে প্রচুর পরিমাণ সাহস লাগে।

আরেকটি নিখুঁত উদাহরণ হলো স্কট, আমাদের পি-এইচ-ডি ছাত্র। মনে আছে তিনি কি লিখেছিলেন? নিজের জন্য আমার অনেক উচ্চাশা রয়েছে। প্রতিবার যখনি তিনি বিলম্ব করেন, তার লজ্জা ও অপরাধবোধ হয়। ঐ নেতিবাচক অনুভূতিগুলো পরবর্তীতে স্কট-এর জন্য আরো বেশি চাপ তৈরি করে যেমনটি তিনি বলেছিলেন– আমার দ্বারাই আত্মবিশ্বাসগুলো পরবর্তীতে বিবর্ণ হতে শুরু করে। আর এই কারণে তিনি আরো অধিক চাপ অনুভব করেন এবং এমনকি আরো অধিক দীর্ঘসূত্রতার উদ্ভব হয়।

সুতরাং, স্কট-এর প্রতি এই পরামর্শ প্রয়োগ করা যাক, প্রথম ধাপ– নিজেকে ক্ষমা করার মাধ্যমে চক্রটি বন্ধ করুন। পাঁচ সেকেন্ড সময় নিন ৫-৪-৩-২-১, মানুষকে বিপর্যস্ত করা, পিছিয়ে পড়া এবং নিজের পূর্ণ সম্ভাবনা অনুযায়ী কাজ না করার জন্য নিজেকে ক্ষমা করুন। আপনি যদি বুঝে গিয়ে থাকেন যে, ল্যাব-এ আপনার দীর্ঘসূত্রতার কারণ হলো অর্থ সংক্রান্ত চাপ, তাহলে আপনার জন্য এটি একটি সুযোগ– নিজেকে প্রমাণ করার ও নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার। প্রসঙ্গক্রমে, আপনি নিয়ন্ত্রণ নিতে চান যাতে করে আপনার লক্ষ্য পূরণ হয় এবং আপনি যা হতে চান তা হতে আপনাকে সাহায্য করে।

এটা আমাদেরকে দ্বিতীয় ধাপে পৌঁছে দেবে।

ভবিষ্যতে আপনি কি করতে চান?

আমাকে ব্যাখ্যা করতে দিন। ড. পাইচিল-এর গবেষক দল আমাদের বর্তমান সত্তা ও ভবিষ্যৎ সত্তা নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছেন। মজার ব্যাপার হলো, গবেষণা প্রমাণ করে যে আপনি যখন আপনার ভবিষ্যতের আপনাকে আঁকতে সক্ষম হবেন, এটা বর্তমানের আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যবস্তু স্থির করে দেবে। গবেষকরা যখন মানুষকে তাদের ভবিষ্যতের ছবি প্রযুক্তির মাধ্যমে এঁকে দেখিয়েছেন, দেখা গেছে ভবিষ্যতের জন্য তারা আরো বেশি করে সঞ্চয় করছেন। আমার ধারণা দৃষ্টি সংস্থা কাজ করার এটি একটি ব্যাখ্যা। তারা আপনার ভবিষ্যতের ছবি এঁকে দিতে সাহায্য করবে যা বর্তমান আপনার জন্য চাপ মানিয়ে নেয়ার একটি পদ্ধতি হিসেবে কাজ করবে। সুতরাং, মি. স্কট, একটি দৃষ্টি সংস্থা তৈরি করুন অথবা একটি মানসিক প্রতিচ্ছবি যা আপনার বর্তমান ছাত্র জীবনের চাপকে পেছনে ফেলে ভবিষ্যতের প্রফেসর স্কটকে প্রদর্শন করবে। যে মুহূর্তে আপনার নিজেকে আপনি দীর্ঘসূত্রতার ভেতর আবিষ্কার করবেন, জিজ্ঞেস করুন– প্রফেসর স্কট এক্ষেত্রে কি করবেন?

এটা আমাদেরকে তৃতীয় ধাপে পৌঁছে দেবে।

ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি দিয়ে শুরু করুন

অবশেষে একবার আপনি যখন বুঝতে পারবেন দীর্ঘসূত্রতার উৎস কি, ড. পাইছিল-এর প্রিয় উপদেশ হলো– শুরু করে দিন। শুরু করার গুরুত্ব সম্পর্কে তিনিই একমাত্র কথা বলছেন না, গবেষকদের মতে নতুন অভ্যাস তৈরি করার শক্তিশালী উপায় হলো– একটি প্রারম্ভিক আনুষ্ঠানিকতা সৃষ্টি করা। ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির চাইতে ভালো প্রারম্ভিক আনুষ্ঠানিকতা আর কিছু হতে পারে না। এখন আমিও এইসব বিজ্ঞান বুঝতে পারছি। আমি ব্যাখ্যা করতে পারব কেন শুরু করে দিন ধারণাটি কাজ করে থাকে।

দীর্ঘসূত্রতা যদি একটি অভ্যাস হয়ে থাকে, আপনাকে তাহলে খারাপ (পরিহার) আচরণের ধরনটিকে ইতিবাচক আচরণ (শুরু করা) দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে হবে।

→ যে মুহূর্তে আপনি দ্বিধাবোধ করেন, আপনি সহজ কাজগুলো করেন অথবা কঠিন কাজগুলো এড়িয়ে চলেন। ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করে রুলটি ব্যবহার করার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা করা আপনার জন্য অতি প্রয়োজন, তা করতে নিজেকে ধাক্কা দিন।

→ শুরু করা আমাদের প্রকৌশলকে সিসকো ও লোকাস অব কন্ট্রোল এ ফিরিয়ে নিয়ে যায়। দীর্ঘসূত্রতার কারণে আপনার মনে হবে নিজের উপর আপনার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যখনি আপনি নিজেকে যাচাই করবেন এবং শুরু করে দেবেন, আপনি সেই মুহূর্তটি ও আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবেন।

ডানিয়েলা তার অনুশীলনে রুলটিকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে ক্ষমতাবান ও সক্ষম বোধ করেছিলেন যা আমাদেরকে দেখিয়েছে– দীর্ঘসূত্রতাকে পরাস্ত করার সুবিধা কাজের চাইতে বেশি কিছু এবং নিজের সঙ্গে নিজের সম্পর্কোন্নয়নের আরো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিস্তৃত।

যেমনটি আমি পুরো বইটি জুড়ে ব্যাখ্যা করেছি, ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার প্রচেষ্টা আপনার মস্তিষ্কের গিয়ারগুলোকে সক্রিয় করে এবং কাজ শুরু করার জন্য আপনার প্রিফ্রন্টাল করটেক্সকে অনুমতি দেয়। প্রত্যেকবার আপনি যখন রুলটি ব্যবহার করবেন, দীর্ঘসূত্রতা বন্ধ করা সহজ থেকে সহজতর হয়ে যাবে এবং আপনি শুরু করে দিতে পারবেন। সাই যেমনটি দেখতে পেয়েছিলেন– কলটি করার জন্য, ই-মেইলটির উত্তর দেওয়ার জন্য, অর্থহীন কাজটি শেষ করার জন্য নিজেকে বলা এবং শুরু করাই হলো গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ শেষ করার গোপন সূত্র।

যদিও এটি করা তার পছন্দ ছিল না, তবুও তিনি যেভাবেই হোক কাজ শুরু করার অভ্যাসটি গড়ে তুলেছিলেন এবং এই মানসিকতার দ্বারা একটি বিশাল প্রকল্প শেষ করতে পেরেছিলেন।

স্কট ল্যাবরেটরিতে ফিরে ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করে নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার মাধ্যমে দ্রুত কাজে ফিরে যেতে পারেন। তিনি এখন বুঝতে পারছেন তার দীর্ঘসূত্রতার (আর্থিক চাপ) উৎস কি এবং তিনি নিজেকে ক্ষমা করে দিয়েছেন (অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ) এবং একবার যখন তিনি ভবিষ্যতের প্রফেসর স্কটকে আঁকবেন, নিয়ন্ত্রণ যাচাই, টেবিলে ফিরে যাওয়া এবং কাজ শুরু করার জন্য– তিনি ক্ষণ গণনা শুরু করতে পারবেন। ভবিষ্যতে তিনি যদি নিজেকে বিচ্যুত হতে দেখেন তাহলে আবার তিনি ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করতে পারেন। রুলটি এগিয়ে যাওয়াকে সহজ করে তোলে যা কাজের উপর নিয়ন্ত্রণ পেতে স্কটকে সহায়তা করবে এবং সামনের অন্যান্য আর্থিক চাপগুলো মোকাবেলা করার জন্য অনেক বেশি প্রস্তুত করে তুলবে।

আন্দ্রে দীর্ঘসূত্রতা পার হয়ে লক্ষ্যের উপর কাজ করতে রুলটি ব্যবহার। করেছিলেন। আন্দ্রের বয়স ১৬ কিন্তু তিনি ইতিমধ্যে শিখে গেছেন কি করে দীর্ঘসূত্রতাকে পরাস্ত করতে হয় এবং একটি বই লিখতে শুরু করেছেন। তিনি লিখেছেন– তার সবসময় প্রস্তুত নই, যথেষ্ট করিতকর্মা নই জাতীয় অজুহাত তৈরি থাকত। রুলটি তাকে ঐ অজুহাতগুলোকে পেছনে ফেলতে সাহায্য করেছিল এবং এখন তিনি তার বই লেখায় মনোযোগী হতে পেরেছেন।

আন্দ্রে আমাদের দেখিয়েছেন, যে কোনো বয়সে বা লক্ষ্যের পথে নিজেকে অর্জন করা, ভেতরে তাকানো, একটি পদক্ষেপ নেওয়া, কোনো চেষ্টা করা বা জীবন পরিবর্তন করার মতো শক্তি আমাদের রয়েছে। শুরু করা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ আপনিও হয়তো এর মাঝে আটকে যেতে পারেন, গবেষকরা যাকে বলেন– অগ্রগতি নীতি, যা ক্ষুদ্র বিজয়, মনকে উজ্জীবিত করা এবং সুখ ও উৎপাদনশীলতার মাত্রা বৃদ্ধি করা সহ যে কোনো অগ্রসরমানতাকে বিবৃত করে থাকে।

সবকিছুর ওপর, একবার আপনি যখন একটি প্রকল্প শুরু করবেন, আপনার মস্তিষ্ক একে কার্য তালিকায় অন্তর্ভুক্তির একটি প্রক্রিয়া শুরু করে দেবে। পূর্বে আমি যেমনটি উল্লেখ করেছিলাম, আমাদের মস্তিষ্ক সমাপ্ত কাজের চাইতে অসমাপ্ত কাজগুলোকে বেশি মনে রাখে। একবার আপনি যখন কাজ শুরু করবেন, আপনার মস্তিষ্ক তা শেষ করতে আপনাকে ক্রমাগত খোঁচা দিতে থাকবে।

আমি আরো বলেছিলাম যে ঘুমিয়ে পড় বোতাম অভ্যাসটি ছিল এক প্রকার দীর্ঘসূত্রতা। এখন বুঝতে পারছি কেন। এটা আমার জীবনের বড় চাপগুলো থেকে আমাকে মুক্তি দিয়েছে। একারণেই আমি শুরু করতে পেরেছি। যখন ফিরে তাকাই, দেখতে পাই যে আমি একটি শুরুর আনুষ্ঠানিকতা চালু করেছি যার নাম দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল। আমার ঘুমিয়ে পড় বোতাম অভ্যাসটি একটি নতুন অভ্যাস দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। ৫-৪ ৩-২-১ ক্ষণ গণনা করা, তারপর উঠে পড়া এবং দিনটি শুরু করা। সাত বৎসর পর, প্রতিদিন ভোরে এখনো আমি নিজেকে বিছানা থেকে টেনে তুলতে উল্টো ক্ষণ গণনা করি।

সংক্ষেপে, দীর্ঘসূত্রতাকে পরাস্ত করতে কিভাবে আপনি ফাইভ সেকেন্ড রুল টি ব্যবহার করবেন :

শুরু করার জন্য নিজেকে তৈরি করতে এটি ব্যবহার করুন। ছোট করে শুরু করুন। ১৫ মিনিট সময় ধরে আপনি যা কিছু এড়িয়ে চলেন তাকে আক্রমণ করুন। তারপর একটি বিরতি নিন এবং কিছু ক্যাট ভিডিও দেখুন। মনে রাখবেন আপনি শুধুই একজন মানুষ।

এগুলো সাধারণ জ্ঞানের বিষয়। আপনি ঘরের ভেতর এক কামড়ে একটি হাতি খেয়ে ফেলতে পারেন। এই বইটিতে আমরা বারবার যা শিখেছি তা হলো– যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি আপনার খারাপ অভ্যাস বোধগুলোকে পরাস্ত করতে পারবেন এবং শুরু করার জন্য নিজেকে ধাক্কা দিতে পারবেন, আপনি কখনোই বদলাবেন না।

আপনাকে হয় কোনো একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে, না হয় একটি অজুহাত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *