তামসিকতা

তামসিকতা

একজন বিদেশি সাংবাদিকের সঙ্গে বসে, আমার কথা হচ্ছিল। সাংবাদিক ভদ্রলোককে বিদেশি বললেই মোটামুটি বুঝে নেওয়া যায়, আমরা যাকে ফিরেন বলি, উনি সেরকম একজন ফরেন পত্রিকার ফরেন জার্নালিস্ট অথবা, এঁকে জার্নালিস্ট না বলে করেসপন্ডেন্ট বলাই উচিত, যার বাংলা মানে বোধহয় সংবাদদাতা। সেই হিসাবে ইনি এক্সক্লুসিভ।

কথা হচ্ছিল ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের গ্রাউন্ড ফ্লোরের পিছনে, রেস্তোরাঁ রুমের চায়ের টেবিলে বসে। আমরা একটা কোণে বসে ছিলাম, যেখান থেকে সুইমিং পুল খুব কাছেই। কাঁচের দেয়াল দিয়ে পুল ও লন দৃশ্যমান। দুই-তিনটি বিদেশি ললনা, পুল-এর জলে সন্তরণ ক্রীড়া-কেলিতে মগ্ন। দু একজন বিদেশি লনে বসে ধূমপানে রত। জলে নামবার আগে ঘাম মারা হচ্ছে। ফরেন করেসপন্ডেন্টের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল। অধিকাংশই সদ্য স্বাধীন নতুন বাংলাদেশ সম্পর্কে। এঁর সঙ্গে আজ সকালেই, কলকাতার এক সাংবাদিক বন্ধু আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। ভদ্রলোককে নানান কারণেই আমার খুব ভাল লেগেছে। ইনি পৃথিবীর বহু দেশ ঘুরেছেন, অনেক বিচিত্র এবং বিস্ময়কর সংবাদ পরিবেশন করেছেন। বিশেষ করে ইতিমধ্যেই ইনি বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি জেলা। ঘুরেছেন। সাধারণ অসাধারণ বিবিধ ব্যক্তির সঙ্গে কথাবার্তা ও আলাপ-আলোচনা করেছেন। আমি সব বিষয়ে ওঁর সঙ্গে একমত হতে না পারলেও, বাংলাদেশ সম্পর্কে ওঁর অনেক বক্তব্য এবং মন্তব্যই বেশ সুচিন্তিত এবং অভিজ্ঞ।

চেন স্মোকার বলতে যা বোঝায়, ইনি তাই। স্যাঁকা তামাকের সিগারেট সবসময় প্রায় ওঁর ঠোঁটে ঝুলিয়েই, উনি অনর্গল স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলে যেতে পারেন। তামাটে রং, বোধহয় ওই দেশের জলহাওয়ার দাগ। প্রায় মাসখানেক এ দেশে আছেন। ঋজু লম্বা, একমাথা ধূসর চুল আর গালপাট্টা জুলফি। উজ্জ্বল বাদামি চোখে সবসময়েই যেন একটা বিশেষ অনুসন্ধিৎসা আর কৌতূহল। হাসিটা বেশ প্রাণখোলা আর দরাজ, মেজাজটিও বেশ প্রসন্ন। কিন্তু চিংড়ি মাছের মতো লাফানো, হাসিখুশিতে তরল, সেরকম মোটেই না। শক্ত চওড়া মুখে, অর্থাৎ কপালে ও চিবুকের কাছে কয়েকটি গভীর ভাঁজ ওঁর মুখাবয়বে একটি বৈশিষ্ট্য এনে দিয়েছে, যা দেখলেই মনে হয়, দূর-বিসারী ও গভীর অভিজ্ঞতা দাগ ফেলেছে।

এখন অপরাহ্ন, বিকাল সাড়ে চারটা বাজে। দুপুরে এই হোটেলে দল বেঁধে খাবার পরে, আমি অন্যত্র একটু গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখছি, ভদ্রলোক তাঁর রুমে যাননি, নীচেই বসে আছেন। আমাকে ডেকে বসালেন। কিছু কথাবার্তার পরে, এ দেশের জলহাওয়া, প্রকৃতি ও মানুষের বিষয়ে কথা হল। উনি কোথায় কোন জেলায় গিয়েছেন, কী দেখেছেন, এ সব নিয়েই কথা হচ্ছিল। তারপরে এক সময় সিগারেট মুখে দিয়ে, সুইমিং পুলের দিকে ললনাদের সন্তরণ নিরীক্ষণ করলেন, এবং হঠাৎ একটু হেসে বললেন, ব্যক্তিগত ভাবে আমি লোকটা সাত্ত্বিক ও রাজসিক ভাবের মোটেই না। আমাকে তামসিক বলা যায়। মেয়েদের সম্পর্কে আপনার ইন্টারেস্ট কেমন?

কথাগুলো খুবই আকস্মিক। সম্ভবত, সাধারণভাবে ওঁর বক্তব্যের ত্রিবিধ গুণই আমাদের মধ্যে কম বেশি মিলেমিশে থাকে, এবং আমাদের আচরণও সেই রকমেরই হয়। কিন্তু উনি যেভাবে নিজেকে তামসিক বললেন, এবং তারপরেই মেয়েদের সম্পর্কে আমার উৎসাহের প্রশ্ন করলেন, একটু অবাক না হয়ে পারলাম না। ওঁর চোখে কৌতূহলের ঝিলিক, ঠোঁটের কোণে হাসি। আমি হেসেই বললাম, সাধারণ যেমন থাকে, সেই রকমই।

সংবাদদাতা হাসলেন। বললেন, তা ঠিক। তবে আমার সাধারণটা, অন্যের পক্ষে অসাধারণ মনে হতে পারে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন ব্যক্তির স্বাভাবিকতাও ডিগ্রির মাত্রায় তফাত হতে পারে। এ ব্যাপারে আমরা কেউই বোধহয় ছকে ফেলা যন্ত্রের মতো না।

কথাগুলো কেন বলছেন, তা যতক্ষণ বুঝতে না পারছি, ততক্ষণ মুখ থেকে কথা খসাতে বাধছে। যদিও, মোটামুটি ওঁর কথা এক দিক থেকে ঠিকই। এ সব বিষয় কেবলমাত্র রুচি দিয়েই বিচার হয় না। মানসিক গঠন এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনেকখানি দায়ী। মেয়েদের সম্পর্কে অনেক অত্যুৎসাহী লোক দেখেছি, অথচ তাদের সবাইকেই মোটেই তামসিক বলা যায় না। তামসিক কথাটা অর্থবহ এবং ইঙ্গিতময়। কেননা, এমন লোকও দেখেছি, যারা মেয়েদের বিষয়ে কথা উঠলেই বোবা হয়ে যায়। মেয়েদের সামনে একেবারে মুখচোরা লাজুক, এবং তাদের সম্মান দেখাবার জন্য অস্থির। অথচ সেই লোকই যৌনতার জালে এমন জড়ানো, এবং প্রায় রুচিহীন ঘৃণ্য যে, কল্পনাই করা যায় না। এদের বাইরে থেকে মোটেই বোঝা যায় না।

এক ভদ্রলোককে আমি জানি, যিনি পেশায়, সামাজিক জীবনে, সব দিক থেকেই যথেষ্ট সম্ভ্রান্ত, এবং বেশ কয়েকটি পুত্র কন্যার জনক। কিন্তু ভদ্রলোক দগ্ধ শুক্রের জাতক। গণিকা গৃহে না গিয়ে তিনি থাকতে পারেন না। এ ভদ্রলোককে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, মেয়েদের সম্পর্কে ওঁর ইন্টারেস্ট কতখানি, তিনি হয়তো আমারই মতো হেসে বলবেন–সাধারণ যা থাকা উচিত, তা-ই। সে হিসাবে এই বিদেশি সংবাদদাতার মন্তব্য কিছু ভুল না। বললাম, আপনার কথা এক দিক থেকে ঠিক। কিন্তু আপনার প্রশ্নটা আর একটু ঋজু করুন।

সংবাদদাতা হেসে, চোখে ঝিলিক দিয়ে বললেন, আমি আপনাকে কোনও দার্শনিক প্রশ্ন করিনি। আমার প্রশ্ন খুবই সোজা, মেয়েদের বিষয়ে আপনার উৎসাহ কী রকম!

বললাম, ভালই।

যথা?

বিদেশি যেন আমাকে বেকায়দায় ফেলতে চান। ঠোঁটের হাসিটাও রহস্যজনক। বললাম, যথা, ভাল মানে ভাল। তাদের সান্নিধ্য আমাকে অখুশি করে না।

তাতে মাত্র এটুকুই বোঝা গেল, আপনি তেমন পিউরিটান নন। জিজ্ঞাস্য, তাদের কী রকম সান্নিধ্য আপনাকে খুশি করে। যদিও প্রশ্নটা খুবই ব্যক্তিগত। কিন্তু সেটা মাথায় না রেখে বলুন, কারণ আমি আমার ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে কিছু বলব বলেই আপনাকে চেপে ধরেছি। বলে ভদ্রলোক জোরে হেসে উঠলেন।

আমি কোনও রকম বিরক্তি বোধ করলাম না, বরং কৌতুক ও আনন্দ বোধ করলাম। বললাম, বন্ধুত্বমূলক এবং মর্যাদাসম্পন্ন সান্নিধ্যেই আমি খুশি।

সংবাদদাতা আবার হাসলেন। বললেন, পিছলে বেরিয়ে যাচ্ছেন, স্পষ্ট করে কিছু বললেন না। যাই হোক, আমি বুঝে নিলাম, আপনি অরসিক নন, কিন্তু তামসিকতা আপনার মধ্যে নেই।

জিজ্ঞেস করলাম, তামসিকতা বলতে আপনি কী বোঝাতে চাইছেন?

 সংবাদদাতা জবাব দেবার আগে সিগারেট ধরালেন, তারপরে বললেন, ইন্দ্রিয়পরায়ণতা।

বললাম, সেটা রাজসিকদের ক্ষেত্রেও খাটে। তারাও ইন্দ্রিয়পরায়ণ হয়।

সংবাদদাতা সিগারেটে দীর্ঘ টান দিয়ে বললেন, হয়, কিন্তু সেই ইন্দ্রিয়পরায়ণ ভোগের রূপটা আলাদা। তাদের অনেক রকম যাচাই বাছাই থাকে। আমার সেরকম নেই। আমি যেখানেই যাই, মেয়েদের না পেলে থাকতে পারি না।

এরকম একটা স্পষ্টোক্তি শুনে কেমন যেন বিমূঢ় হয়ে পড়ি। আমি সংবাদদাতার দিকে সন্দিগ্ধ বিস্মিত দৃষ্টিতে দেখলাম। কথাটা ঠাট্টা হিসাবে নেব কি না, বুঝতে পারছি না। সংবাদদাতা সেইরকম হাসিমুখেই বললেন, আপনার জীবনে এরকম চরিত্র হয়তো এই প্রথম দেখলেন?

বললাম, আপনার কথা যদি সত্যি হয়, তা হলে আমাকে বলতেই হচ্ছে, না। আপনার মতো লোক আমি দু-একজন দেখেছি। কিন্তু আপনার মতো, এভাবে তাদের বলতে শুনিনি।

সংবাদদাতা বললেন, মানে, স্বীকার করতে শোনেননি। কিন্তু স্বীকার না করার মতো কিছু নেই। পৃথিবীর যেখানেই যখন গিয়েছি, কাজকর্মের শেষে, মেয়ের সন্ধান আমার একটি বিশেষ কাজ। আপনাদের কাছে আমি নিশ্চয় দুশ্চরিত্র। কিন্তু তার জন্য আমি কোনও প্রশ্ন তুলব না। আমি ডন জুয়ান নই, প্রেম করার অবকাশ বা প্রেমিকা সংগ্রহ করার সময় আমার হাতে থাকে না, কিন্তু প্রয়োজনটা থাকে। আমার রক্তে। তবে আমি বিজেতা সৈনিক না, অতএব হরণ বা ধর্ষণের প্রশ্ন নেই। কোনও বান্ধবী না জুটলে-বান্ধবী বলতে এখানে শয্যাসঙ্গিনী বুঝতে হবে, দেহোপজীবিনীর দ্বারস্থ হতেই হয়। এটাই অবিশ্যি সব থেকে সহজ পন্থা। সেলারদের সঙ্গে আমাকে মেলাবেন না, কারণ ওরা দীর্ঘদিন জাহাজে ভাসতে ভাসতে, যেখানেই ভেড়ে, আগেই মেয়েদের আস্তানার খোঁজে ছোটে। আমার তা না।

সংবাদদাতা থামলেন। নিভে যাওয়া সিগারেটটা ছাইদানিতে গুঁজে দিয়ে, আবার একটা সিগারেট ধরালেন। আমি বললাম, এ রকম অবস্থায় আপনি তো আপনার স্ত্রীকে নিয়ে বেরোলেই পারেন।

ঠিক কথাই বোধহয়, কিন্তু বিয়েটা এখনও করা হয়ে ওঠেনি। তা ছাড়া ভ্রমণ ব্যাপারটা হয়তো ভাল, তথাপি তেমন স্ত্রী ভাগ্যে জোটা খুবই মুশকিল, যে যখন খুশি যে কোনও অবস্থায় পৃথিবীর যে কোনও জায়গায় যাবার জন্য প্রস্তুত থাকবে। সেটা হয়ে উঠবে তখন আর একটা সমস্যা, ঘর টিকিয়ে রাখাই দায়। আসল কথাটা বোধহয় সেখানেই নয়। আমার এই প্রবৃত্তিটা বোধহয় এতটা নির্ভেজাল না যে, বিভিন্ন দেশের রংফেরতাটা আমার ভাল লাগে না। অতএব বিয়ের ব্যাপারটা আমি আদৌ মনে স্থান দিই না।

এর থেকে স্পষ্ট ও সরল স্বীকারোক্তি আর হয় না। এবং অতঃপরও সংবাদদাতা লোকটিকে দেখে আমার মন ঘৃণায় রি রি করে উঠল না। না ওঠার কারণ আর কিছু না, মনুষ্য-চরিত্র সম্পর্কে, কোনও ছকে বসে নাক উঁচু করার মতো মনোভাব আমার নেই। কূপমকের সংখ্যা যে অনেক বেশি, দুর্ভাগ্যবশত আমার সে অভিজ্ঞতা কিঞ্চিৎ আছে। কিন্তু বর্তমানে, বাংলাদেশের এই হোটেলে বসে, সংবাদদাতা এরকম একটা প্রসঙ্গ হঠাৎ কেন তুললেন, কিছু বুঝতে পারলাম না। আমাদের আলোচনাটা চলছিল নিতান্ত অন্য বিষয়েই, বিশেষত, স্থান কাল এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী। সে কথাটা জিজ্ঞেস করতে গিয়ে দেখলাম, সংবাদদাতা সুইমিং পুলের দিকে তাকিয়ে আছেন। সেখানে তখন সোনালি মৎস্যকন্যাদের মতে, ললনারা ভেজা গায়ে ওপরে উঠেছেন। সংবাদদাতা তাড়াতাড়ি চোখ ফিরিয়ে বললেন, এরা পশ্চিম জার্মান থেকে এসেছে, একজনের সঙ্গে ইতিমধ্যেই আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। কিন্তু সে কথা যাক, আপনি কি চিটাগং গেছেন?

কথার মোড় দ্রুত বাঁক নিচ্ছে এবং প্রশ্নও তেমনি আকস্মিক। বললাম, যাইনি, দু-চার দিনের মধ্যেই যাব।

সংবাদদাতা বললেন, আমি গিয়েছি। এর আগে একবার গিয়েছি, জেনারেল আয়ুবের সময়ে, তখন এ দেশ ইস্ট পাকিস্তান ছিল। এবারও ঘুরে এলাম দিন কয়েক আগে। আমরা কয়েকজন গিয়েছিলাম। আপনাদের কলকাতারও দু-একজন ছিলেন। ওরকম সুন্দর দেশ খুব কমই হয়। প্রশস্ত নদী, সমুদ্র আর টিলাসংকুল চিটাগং সত্যিই অপরূপ। পার্বত্য চিটাগং আরও বেশি সুন্দর, অন্তত আমার চোখে। এবারও আমি এবং আর একজন বন্ধু কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমতি নিয়ে রাঙামাটি গিয়েছিলাম, কাতাই ড্যাম দেখে এসেছি, আর সেখান থেকেই স্পিডবোটে রাঙামাটি গিয়েছিলাম। আপনি যদি যান, যে ভাবেই হোক অনুমতি সংগ্রহ করে, কাপ্তাই আর রাঙামাটি যাবেন, এবং কাপ্তাই থেকে স্পিডবোটে রাঙামাটি যাবার চেষ্টা করবেন। পৌনে এক ঘণ্টার জার্নি, কিন্তু দেখবেন সেই বিশাল লেকে আর দুরন্ত বাতাসে, আপনার ফুসফুস আর হৃদ্যন্ত্র নতুন ভাবে তাজা হয়ে উঠেছে।

সংবাদদাতার কথা শুনতে শুনতে, আমি মনে মনে সেই দৃশ্যের কল্পনায় কাতর হয়ে উঠছিলাম। উনি আরও বললেন, মানুষের তৈরি এত বড় লেক বোধহয় আর হয় না। শুনেছি রাঙামাটির অনেক পুরনো বাড়ি-ঘর এবং শহরের একাংশকে সেই লেকের নীচে জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে। একজন পাহাড়ি চাকমা উপজাতির লোক আমাকে বলেছে, হাজার হাজার চাকমা গ্রাম ওই লেকের বুকে বিসর্জন দিতে হয়েছে, তবেই কাতাই ড্যাম করা সম্ভব হয়েছে।

আমি বললাম, আপনি আর বলবেন না, আমার দেখা আর জানার জন্য কিছু রেখে দিন।

 সংবাদদাতা হেসে উঠলেন। বললেন, তা যা বলেছেন। কিন্তু যা আপনার দেখা বা জানা হবে না, সে কথাই বলি। এবার চিটাগং গিয়ে প্রথমেই চলে গিয়েছিলাম কাপতাই। রাত্রিবাস করেছিলাম রাঙামাটিতে। সেখানে আমার প্রার্থিত

সংবাদদাতা হঠাৎ থামলেন, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। বললেন, কী বলছি, আশা করি বুঝতে পারছেন?

আমি বললাম, আপনার রক্তের মধ্যে যে থাবা উদ্যত হয়ে থাকে, তার কথা বলছেন নিশ্চয়ই?

সংবাদদাতা বললেন, একেবারে খাঁটি। এবং সেখানে রাত্রিটা আমার বেশ ভালই কেটেছে। যদিও অর্থের বিনিময়ে, তথাপি একাধিক হাসিখুশি যুবতী মেয়ের সঙ্গে পান-ভোজন করা গিয়েছিল। আমার সঙ্গে যে বন্ধুটি গিয়েছিল, সেও রাত্রিটা বেশ উপভোগ করেছে। কিন্তু গোলমাল হল তার পরের দিন, চিটাগং শহরে ফিরে এসে।

সংবাদদাতা সিগারেট ফেললেন, আবার নতুন ধরালেন। তারপরে একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে বলতে শুরু করলেন : ঢাকা থেকে আমাদের সঙ্গে আর যারা গিয়েছিল, তারা কেউ কেউ সেইদিনও চিটাগং-এ ছিল। কেউ কেউ সকালের ফ্লাইটেই ঢাকা ফিরে এসেছিল। রাঙামাটি থেকে ফিরে, আমরা বিশিষ্ট ব্যক্তি ও নেতাদের সঙ্গে কথা বললাম। সরকারি অফিসারদের কাছে নানান খবরাখবর নিলাম। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের সংবাদদাতাদের মধ্যে, একটা প্রতিযোগিতার ব্যাপার আছে। কে কী স্কুপ করতে পারছি, বা বিশেষ কোনও ঘটনা এক্সক্লসিভ সংগ্রহ করতে পারি। তখন আমরা অনেকটা বাজপাখির মতো শিকারি, বা চিতার মতোই গন্ধ শুঁকে এঁকে ফিরি। যদিও সেরকম কিছু পাওয়া গেল না। পাক ফৌজদের নৃশংস অত্যাচারের কিছু চিহ্ন বা ঘটনা দেখা বা জানা গেল। তার মধ্যেই, এক ভদ্রলোকের চেষ্টায়, আমি এবং আর একজন কয়েকটি লাঞ্ছিত মেয়েকে দেখতে গিয়েছিলাম। সত্যি বলতে কী, প্রায়ান্ধকার ঘরে, সেই সব গ্রাম্য মেয়েদের দেখে, যে কোনও অবস্থাতেই তাদের লাঞ্ছিত বলা যেতে পারত–যেমন করুণ তেমনি মর্মন্তুদ। শুনলাম, শহরের কাছেপিঠে গ্রামের দিকে তাদের বাড়ি। কিন্তু তারা বাড়ি যাচ্ছে না। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখ চেয়ে আছে। তাদের কারোরই বয়সও বেশি না, চোদ্দো থেকে যোনোর মধ্যে বয়স।

মনটা খারাপ হয়ে গেল, সেখান থেকে ফিরে এলাম। তারপরে সার্কিট হাউসে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির কাছে আমরা সবাই মিলে গেলাম। সেখানে চিটাগং-এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু প্ল্যানের কথা শোনা গেল, এবং তার সঙ্গে জানা গেল, শত্রুরা সেখানে কতখানি প্রবল হয়ে উঠতে পারে। কেননা, রাজাকার এবং পলাতক পাক ফৌজের কিছু লোক তখনও মিজোদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।

সেরকম কোনও কৌতূহল বোধ করলাম না। আমি জানি, আপাতত বাংলাদেশের মানুষ যে জয়লাভ করেছে, তার উল্লাস কাটতে না কাটতেই বহুতর জটিলতা এবং সংঘর্ষ দেখা দিতে পারে বা দেবে। আমরা হোটেলে ফিরে এলাম।

হোটেলটা আমার আগে থেকেই জানা ছিল। সাংবাদিকরা সকলেই প্রায় সেই হোটেলে উঠেছিল। হোটেলের চারতলায় আমি একটা ঘর পেলাম। খাবার বা পানীয়র জন্যও চিন্তা নেই। কিন্তু আমার একটা চিন্তা তো ছিলই। আমি পুরনো একজন বেয়ারার খোঁজ করলাম। তার নামটা ভুলে গিয়েছিলাম, চেহারাটা মোটামুটি মনে ছিল। নাম না জানা থাকায়, আমি ওপরে নীচে কিছুক্ষণ তাকে খোঁজাখুঁজি। করলাম। কোথাও তাকে দেখতে পেলাম না। বলা যায় না, হয়তো সে আর জীবিত নেই।

আমাকে ওরকমভাবে ওপর নীচে ঘোরাঘুরি করতে দেখে, একটু মাঝবয়সি একটি বেয়ারা আমাকে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল–আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?

আমি লোকটির মুখের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে একবার দেখলাম। তারপরে আমি তাকে আমার ঘরের নম্বরটা জানিয়ে দিয়ে একবার আসতে বললাম। সে রাজি হল, এবং বলতে গেলে প্রায় আমার পিছনে। পিছনেই এল। আমি কোনওরকম ভণিতা না করে তাকে স্পষ্টই জিজ্ঞেস করলাম, সে কোনও মেয়ের ব্যবস্থা করতে পারে কি না। লোকটা কয়েক মুহূর্ত ভাবল, তারপর বলল যে, দশ মিনিট বাদে এসে সে আমাকে জানাবে, কোনও ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে কি না।

ইতিমধ্যে আমার ঘরে কয়েকজন সাংবাদিক এল। সকলেই পানীয় নিয়ে বসল। আমিও বসলাম। প্রায় আধঘণ্টা বাদে সেই বেয়ারা এল। তাকে দরজার কাছে দেখতে পেয়েই আমি বাইরে গেলাম। সে বলল যে, ব্যবস্থা হয়েছে। একটি মেয়ে আসবে, কিন্তু সে হোটেলের বাইরে অপেক্ষা করবে, আমাকে গিয়ে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হবে। কেননা, মেয়েটিকে তা না হলে হোটেলে ঢুকতে দেবে না। তারপরেই সে টাকার অঙ্ক বলল। আমি তার সব কথাতেই রাজি হলাম। সে জানাল, মেয়েটি আধঘণ্টার মধ্যে আসবে। বেয়ারা নিজে গিয়ে মেয়েটিকে দেখিয়ে দিয়ে চলে আসবে।

আমার দু-একজন বন্ধু ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল, মুখ টিপে হেসেছিল। স্বাভাবিক, কেউ কেউ আমাকে বেশ ভালই জানে।

একজন ঠাট্টা করে বলল, পৃথিবীর কোথাও কিছু বাকি রাখলে না।

 আমি সে কথার কোনও জবাব দিলাম না।

আর একজন বলল, আজ আমি তোমার ঘরেই রাত্রিবাস করব।

জবাব দিলাম, নিশ্চয়ই করতে পারো, তবে দুজনে একসঙ্গে নিশ্চয়ই রাত্রিবাস করতে পারব না…ইত্যাদি কথা নিয়ে খানিকক্ষণ হাসিঠাট্টা হল। ইতিমধ্যে সকলেই হুইস্কির নেশায় একটু গোলাপি হয়েছে, হাসি কথাবার্তার আওয়াজ চড়ছিল। খিদে বাড়িয়ে সকলেই ডিনারের জন্য চলে গেল। আমি বেয়ারাকে ডেকে, আমার ডিনার ঘরে দিতে বললাম।

ঠিক আধঘণ্টা পরেই সেই বেয়ারা আমার দরজায় টোকা দিল। আমি বেরিয়ে এসে তার সঙ্গে নীচে গেলাম। হোটেলের বাইরে, কিছুটা গিয়ে একটি অন্ধকার জায়গায় দুজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। একজনকে দেখে মনে হল, সে বৃদ্ধ এবং তার দাড়ি আছে। আর একটি মেয়ে। অন্ধকারে আমি তার চেহারা ভাল করে দেখতে পেলাম না। তবু যতটা সম্ভব দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে দেখতে চেষ্টা করলাম। মনে হল, রোগা রোগা একটি মেয়ে, এবং তার গায়ের রং ফরসা। সে একবার যেন আমার দিকে মুখ তুলে দেখল, যদিও অন্ধকারে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছিল না, তারপরে সে মুখ ফিরিয়ে রাখল। মনে হচ্ছিল, তার মাথায় ঘোমটা টানা ছিল। আমি তাকে ডাকলাম কাম উইথ মি।

মেয়েটি কী করবে, ঠিক করতে পারছিল না, দাড়িওয়ালা বুড়োর দিকে মুখ তুলল। অন্ধকার থেকে বুড়োর ঘড়ঘড়ে গলা শুনতে পেলাম–গিভ মি ফিপটিন রুপিজ।

কেন দেব, তা জিজ্ঞেস না করেই, পার্স থেকে পনেরোটি টাকা বের করে লোকটার হাতে দিলাম। লোকটি আর একটি কথাও না বলে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। আমি হোটেলের দিকে এগোলাম, মেয়েটি আমার পিছনে পিছনে এল। হোটেলে ঢুকে, আমি মেয়েটির পাশে পাশে চলতে লাগলাম। তখন আলোয় দেখলাম, লাল রঙের শাড়ি পরা মেয়েটি মাথায় এমন ভাবে ঘোমটা টেনে দিয়েছে, তার মুখ প্রায় দেখাই যায় না। হোটেলের কর্মচারীরা আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখল, কেউ কোনও প্রশ্ন করল না। মেয়েটি তাদের চেনা কিনা, বা তারা কী ভেবেছিল, কিছুই জানি না। মেয়েটিকে ওপরে চারতলায় আমার ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম।

মেয়েটি পিছন ফিরে, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। মাথার ঘোমটা খানিকটা খসে পড়ায়, আমি তার তেলতেলে, কালো কুচকুচে কবরী দেখতে পাচ্ছিলাম। ঠিক ওভাবে দাঁড়াবার ভঙ্গিটা মোটেই দেহোপজীবিনীসুলভ মনে হচ্ছিল না। আমি কাছে গিয়ে, মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, মেয়েটির চিবুকে হাত দিয়ে তার নিচু মুখ তুলে ধরলাম। ধরেই আমি চমকে উঠলাম, অবাক হলাম, কারণ সে মুখ আমার খুবই চেনা চেনা মনে হল। মেয়েটির মুখ তুলে ধরা সত্ত্বেও সে আমার দিকে তাকাল না। প্রাণহীন পুতুলের মতো সামনের দিকে তাকিয়ে রইল।

আমি মেয়েটিকে ভাল করে দেখবার জন্য এক পা পিছিয়ে এসে তাকে দেখলাম। তার রক্তহীন মুখে ঘাম এবং পাউডার মিশে অদ্ভুত দেখাচ্ছিল। বোঝা গেল, সে খুব তাড়াতাড়ি সাজবার চেষ্টা করেছে। চোখে তেলতেলে কাজল, মোটা করে লাগানো। মাথার চুল তেলতেলে। রোগা রোগা হাতে কতগুলো রঙিন কাঁচের চুড়ি। শরীরের মাপের চেয়ে একটু যেন বড় জামা তার গায়ে, এবং স্পষ্টতই কোনও অন্তর্বাস ছিল না। পায়ে পুরনো বিবর্ণ এক জোড়া স্লিপার। তার শরীরের ফরমেশানটাও যেন কেমন একরকম দেখাচ্ছিল, যা আমি ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারি না। কিন্তু সন্দেহ নেই, এই মুখ ও চেহারা আমার দেখা। কোথায় দেখেছি, মনে করতে পারছিলাম না। একবার মনে হল, ঢাকায় এই ইন্টারক এ বোধহয় একে ভিন্ন বেশে দেখেছি। আমি তাকে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলাম, তাকে আমি কোথায় দেখেছি। এবং সে আমাকে চেনে কি?

মেয়েটি কোনও জবাব দিল না। কেবল আমার দিকে একবার তাকাল। আমার মনে হল, ঠিক যেন এ দেশের স্বাস্থ্যহীন অপুষ্ট একটি গাভীর চোখ আমাকে দেখল, করুণ বোবা এবং অসহায়। বুঝতে পারলাম, আমার কথা সে বুঝতে পারেনি। উর্দু আর হিন্দি মিশিয়ে, কাজ চালাবার মতো এক রকম ভাষা আমার আয়ত্তে ছিল। সেই ভাষাতেই আমি আমার প্রশ্নের পুনরুক্তি করলাম। তখন মেয়েটি সম্মতিসূচক ঘাড় নেড়ে, মুখ নিচু করে রইল।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, কবে, কোথায় তোমাকে দেখেছি?

মেয়েটি স্তিমিত সরু গলায় কেবল উচ্চারণ করল, আজ।

আজ? বলেই, আমি আবার তার আপাদমস্তক দেখলাম, এবং কয়েক সেকেন্ড মনে মনে হাতড়ে ফিরে, আর একবার চমকে উঠলাম। মনে পড়ে গেল, সেইদিনই দুপুরে তাকে আমি দেখেছি। পাক ফৌজের দ্বারা লাঞ্ছিত মেয়েদের মধ্যে সে একজন। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি এখানে কী করে এলে?

সে কোনও জবাব দিল না, একভাবে দাঁড়িয়ে রইল।

আমি এত বিস্মিত এবং বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম যে, মেয়েটিকে বসতে বলতেও ভুলে গিয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি এ সব কাজ আর করেছ?

মেয়েটি নিঃশব্দে কেবল মাথা নাড়িয়ে জানাল, না।

জিজ্ঞেস করলাম, তবে আজ কী করে এলে? কে তোমাকে আসতে বলল?

সে কোনও জবাব দিল না।

জিজ্ঞেস করলাম, ওই বুড়ো লোকটি তোমার কে হয়?

তবু সে জবাব দিল না। বুঝলাম, সে বলতে চায় না। তথাপি আমি না জিজ্ঞেস করে পারলাম না, এবং যে জিজ্ঞাসাটা একরকম বোকার মতোই করলাম কী জন্য তুমি এখানে এসেছ, তা তুমি জানো?

সে ঘাড় কাত করে জানাল, জানে।

জিজ্ঞেস করলাম, তুমি এ পথে কেন আসছ?

মেয়েটি এবারে উচ্চারণ করল, নাই জানতা।

তুমি কি ঘরে ফিরে যেতে চাও না?

ঘর নাই লেগা।

তোমার বাবা মা আছে?

সে নিঃশব্দে ঘাড় দোলাল, আছে। জিজ্ঞেস করে জানলাম, সে পাঁচ মাস পাক শিবিরে ছিল। বিশেষ কোনও একজন না, একাধিক ব্যক্তি তার ওপর অত্যাচার করেছে। ইতিমধ্যেই, এই সব কথাবার্তায়, আমার রক্তের মধ্যে উদ্যত থাবা গুটিয়ে গিয়েছিল। আমি যদি তাকে সেই দুপুরে না দেখতাম, তার পরিচয় না জানতাম, তা হলে, আমার যা করণীয় তাই করতাম। কিন্তু সেই লাঞ্ছিতার সামনে দাঁড়িয়ে, আমার তামসিকতা বিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। এই সব লাঞ্ছিত মেয়েদের নিয়ে গভীর কোনও দুশ্চিন্তাবোধ। আমার আছে বলে মনে হয় না, কিন্তু সেই মেয়েটি, যে তার নাম বলেছিল আসমা, তার দিকে তাকিয়ে আমি নিজেই যেন কেমন একটা অসহায় উদ্বেগ বোধ করছিলাম, এবং একটা ব্যথা আর বিক্ষোভের মিশ্রিত অনুভূতিতে আমি কয়েক মিনিট কথা বলতে পারিনি। তারপরে আমি ওর শরীরের দিকে তাকিয়ে সন্দিগ্ধ হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার পেটে কি বাচ্চা আছে?

আসমা সম্মতিসূচক ভাবে ঘাড় দোলাল, আছে।

তবু সে আজ দেহবৃত্তি করতে এসেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কত টাকা তোমাকে দিতে হবে?

 আসমা একবার আমার মুখের দিকে দেখে বলল, পঞ্চাশ।

দীর্ঘশ্বাসে আমার বুক সত্যি ভারী হয়ে উঠেছিল, তবু কেন যেন একটু হাসিও পেল। আমি তাকে পঞ্চাশটি টাকা দিয়ে বললাম, চলো, তোমাকে নীচে নামিয়ে দিয়ে আসি।

আসমা আমার দিকে তাকাল, তার গাভীর মতো চোখে ছোট একটি বিস্মিত জিজ্ঞাসা জাগল, আবার নিভে গেল, কিন্তু কিছু বলল না। আমি তার পিঠে হাত রেখে, দরজার দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলাম। পৌঁছে দিয়ে এলাম নীচে। যাবার সময় সে আমার দিকে একবারও ফিরে তাকাল না। কেন তাকাল না, তাও আমি জানি। আমার বিচলিত চিত্তকে সে মহত্ত্ব বলে ভুল বোঝেনি৷ মহত্ত্বের স্বরূপ কবে তার। সামনে এসে দাঁড়াবে, তা আমি জানি না।

.

সংবাদদাতা অনেকক্ষণ সিগারেট খাননি। এবার আর একটি সিগারেট ধরিয়ে হেসে বললেন, মাঝখান থেকে সেদিন রাত্রে আমার তামসিক চিত্ত নিদ্রায় বড় ব্যাঘাত বোধ করেছিল।

ইতিমধ্যে দিনের আলো প্রায় শেষ, আলো জ্বলে উঠেছে। সুইমিং পুল-এর নীল জলে তখনও সোনালি মাছেরা কেলি করছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *