২. পেশাদারী গোয়েন্দা

০৬.

পেশাদারী গোয়েন্দার থেকে শখের গোয়েন্দাদের সুবিধা অনেক বেশী। কাজের কোন ধরাবাঁধা নিয়ম থাকে না। সত্যি বলতে কি, মার্টিন একদিনে যা করেছিল, আমার লোক হলে সেই কাজ করতে দুদিন লাগত। সবচেয়ে বড় সুবিধে সে হ্যারির বন্ধু তাই সরাসরি ভিতরে যেতে পারছিল। আমাদের পক্ষে তা সম্ভব নয়।

মার্টিন এবার ডাঃ উইস্কলোরের সঙ্গে দেখা করতে চলেছে। হ্যারি লাইমের বন্ধু বলে কার্ড পাঠিয়ে ডাক্তারের বৈঠকখানায় বসে আছে। ঘরে পুরনো দিনের জিনিষে ভর্তি। দেওয়ালে অনেকগুলো ক্রশ ঝোলান, মনে হয় সপ্তদশ শতাব্দীর কাঠের ও আইভরির পুরনো মূর্তিগুলো চারদিকে ছড়ান। বড় বড় উঁচু চেয়ারও রয়েছে। ..

ডাঃ উইস্কলোরের ছোটখাট চেহারা, পোশাক চটকদার, গায়ে কালো কোট উঁচু কলার, ঘোট গোঁফ। মার্টিনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল–আপনি মিঃ মার্টিন? হ্যারির বন্ধু?

হ্যাঁ। তা আপনার সংগ্রহশালাটা তো ভারী চমৎকার।

আপনার আসার কারণ, অমি রুগী বসিয়ে এসেছিলো।

মার্টিন লজ্জা পেয়ে বলে বক্তব্য সংক্ষেপেই পেশ করব। আমরা দুজনেই তো হ্যারির বন্ধু ছিলাম, তাই না।

–আমরা বলতে কি আমাকেও বোঝাচ্ছেন?

–হ্যাঁ।

বাদ দিতে পারেন।

–কেন?

–আমি তার চিকিৎসক ছিলাম মাত্র।

–যাক্, হ্যারি আমায় এখানে ডেকেছিল তাকে কি একটা ব্যাপারে সাহায্য করতে। কিন্তু, এসে দেখি সব শেষ।

-সত্যি ব্যাপারটা বড় দুঃখের।

 –আমি সমস্ত ঘটনাটা জানতে চাইছি।

–আপনাকে জানাবার মত কিছু নেই।

–কিছুই নেই?

না।

—অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম আপনার কাছে।

–আমি যেটুকু জানি বলছি। গাড়ি চাপা দেওয়ার পর গিয়ে দেখি হ্যারি মৃত।

–আচ্ছা, ঐ ঘটনার পর কি জ্ঞান থাকা সম্ভব?

–কিছু সময়ের জন্য থাকলেও থাকতে পারে।

–আপনি কি নিশ্চিত, এটা নিছক দুর্ঘটনা?

দেওয়াল থেকে একটা ক্রশ তুলে নিয়ে ডাক্তার বলে–আমি সেখানে ছিলাম না। আর আমার কাজ মৃত্যু কি কারণে ঘটেছিল তার ওপর সীমাবদ্ধ। এতে অসন্তোষের কি কোন কারণ আছে?

পুলিশ হ্যারিকে বাজে ব্যাপারে জড়িয়েছিল। আমার মনে হয় এটা খুন নয়ত আত্মহত্যা।

এ ব্যাপারে কোন মতামত নেই।

–আপনি কুলার বলে কাউকে চেনেন?

না ঠিক মনে করতে পারছি না।

–হ্যারির মৃত্যুর সময় সে কিন্তু ওখানে ছিল।

–তাহলে নিশ্চয়ই দেখেছি। আচ্ছা মাথায় কি পরচুলা আছে?

না, আপনি কার্টসের সঙ্গে ভুল করছেন।

–সেখানে কিন্তু আরও একজন ছিল।

–আপনি কি অনেকদিন হ্যারির চিকিৎসা করছিলেন?

হ্যাঁ।

কতদিন হবে?

–তা প্রায় বছর খানেক।

আর আপনার সময় নষ্ট করব না। আপনার সঙ্গে পরিচিত হয়ে ভালই লাগছে, তাহলে চলি।

.

০৭.

অনুসন্ধান পর্বের এত বিবৃতির মধ্যে মার্টিন, কোন সন্দেহজনক কিছু পায়নি। ডাক্তারের বাড়ি থেকে বেরিয়ে হঠাৎ কি খেয়াল হল হ্যারির ফ্ল্যাটে গেল। সেই প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলা খুবই দরকার।

এক সময় হ্যারির পাশের ফ্ল্যাটে হাজির হয় সে। বেল টিপতে লোকটি বেরিয়ে আসে, মার্টিনকে দেখে চিনতে পারে। ইতিমধ্যে লোকটির স্ত্রীও এসেছে। তাকে বলল–এ পুলিশের লোক নয়, বিশ্বাস কর, হ্যারির বন্ধু, কদিন আগে এসেছিল।

ভদ্রমহিলা কোন জবাব দিল না, মনে হয় অবিশ্বাস করল, একবার স্বামীর দিকে একবার মার্টিনের দিকে তাকিয়ে চলে গেল। লোকটি এবার বলল–আমি সেদিন দুর্ঘটনাটা দেখেছি।

–আপনি কি করে বুঝলেন ওটা দুর্ঘটনা ছিল?

একটা কারণ আছে।

 –সেটাই তো জানতে চাই।

মার্টিনকে ফ্ল্যাটের ভিতরে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে সিগারেট দিয়ে লোকটি আবার শুরু করল।

হঠাৎ গাড়ির ব্রেক কষার শব্দ হতে জানালার কাছে গিয়ে দেখি, হ্যারিকে ধরাধরি করে বাড়ির মধ্যে নিয়ে আসছে।

আপনি কি এ ব্যাপারে সাক্ষী দিয়েছেন?

না।

–কেন?

–পুলিশে জড়াতে চাই না। তাছাড়া….।

–কি?

 –আমি তো সবটা জানি না।

–আচ্ছা দুর্ঘটনার পর কি মনে হচ্ছিল ও খুব কষ্ট পাচ্ছে?

না তো।

 –এ কথা কেন বলছেন।

কারণ ও সঙ্গে সঙ্গে মারা গেছে।

–আপনি কি ডাক্তার?

না।

–তাহলে কি করে বুঝলেন?

–আমি লাশ ঘরের হেড ক্লার্ক। তাই জানালা দিয়ে তাকিয়েই বুঝেছি, ও বেঁচে নেই।

-কিন্তু অনেকে বলেছে যে হ্যারি সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়নি।

মৃত্যুকে আমার মত কেউ চেনে না। আমার নাম হেরচক। আমার অভিজ্ঞতার কথা আশেপাশের লোকেদের জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন।

না না, আমি অস্বীকার করছি না। তবে খবর পেয়েছি হ্যারি ডাক্তার আসার আগেই মারা গেছে।

জোর দিয়ে বলে হেরচক–না। সঙ্গে সঙ্গেই মারা গেছে।

–তবে মিঃ হেরচক আপনার কোর্টে সাক্ষী দেওয়া উচিত ছিল।

–কিন্তু মিঃ মার্টিন পুলিশের ব্যাপারে সকলের সাবধান হওয়া উচিত। ইচ্ছাকৃতভাবে কে পুলিশের কাছে যায়, তাছাড়া আমি তো প্রত্যক্ষদর্শী নই।

আর কে কে ছিল?

–তিনজনকে দেখেছি হ্যারির দেহ বয়ে আনতে।

 –হ্যাঁ জানি। তাদের মধ্যে ড্রাইভার ছিল।

–না। ড্রাইভার গাড়ি থেকে নামেনি, গাড়িতেই বসেছিল।

 কথাটা শুনে মার্টিন চমকে ওঠে, বলে–সেই লোকগুলোর একটু বর্ণনা দিতে পারেন?

হেরচক জানায়, এই ঘটনার সঙ্গে যাতে না জড়িয়ে পড়ে তাই জানালা পরে বন্ধ করে দিয়েছিল। এবং সে সাক্ষী দিতে রাজী নয়।

মার্টিন চিন্তিত হয়ে পড়ে। এটা যে একটা খুন সে বিষয়ে নিশ্চিত, অথচ এরা কেউই হ্যারির মৃত্যুর সঠিক সময় জানাতে পারল না। এখন পর্যন্ত যে দুজন বন্ধুর সন্ধান পাওয়া গেছে যারা টাকা ও দেশে ফেরার টিকিট দিতে চেয়েছে। তাহলে তৃতীয় ব্যক্তিটি কে?

বেশ কিছুক্ষণ পর আবার হেচককে জিজ্ঞাসা করে আপনি কি হ্যারিকে ফ্ল্যাট থেকে বের হতে দেখেছেন?

না।

–কোন রকম চিৎকার চেঁচামেচি।

না, শুধু ব্রেক কষার শব্দ।

মার্টিন মনে মনে সিদ্ধান্তে এল: কার্টস,কুলার ও ড্রাইভার ছাড়া জানা যাবেনা হ্যারি খুন হয়েছিল কি না।

–হ্যারির ফ্ল্যাটের চাবি কার কাছে থাকে?

–আমার কাছে।

 –একবার ফ্ল্যাটটা দেখতে পারি?

–নিশ্চয়ই।

এরপর স্ত্রীকে ডেকে চাবিটা আনতে বলে। বোঝা যায় ভদ্রমহিলা খুশী নয়। হ্যারির ফ্ল্যাটটা খোলা হলে দেখা যায় বৈঠকখানা ঘরটা ছোট, ঘরে টার্কিস সিগারেটের গন্ধ যেন এখনও ভাসছে। শোবার ঘরে নিভাজ বিছানা। সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। দেখে যেন মনে হয় হ্যারি যেন কদিন। আগেও এখানে ছিল।

মার্টিন বলে উঠল–হ্যারির রুচি বোধ আছে। পরিষ্কারও বটে।

–কি ভেবে বললেন?

ফ্ল্যাটটা এত পরিষ্কার তাই।

ইলকে সমস্ত কিছু করেছে। আসলে হ্যারি তো গোছাল নয়।

ঘরে কি তেমন কোন কাগজপত্র ছিল?

 –এক বন্ধু এসে ওর ব্রিফকেস আর কাগজ ফেলার ঝুড়িটা নিয়ে গেছে।

বন্ধু নিয়ে গেছে?

–হ্যাঁ।

–কে সে বন্ধু?

–ঐ যে পরচুলা পরা লোকটা।

–ঠিক মনে আছে তো?

 –হ্যাঁ। ।

এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমি, হ্যারিকে খুন করা হয়েছে।

–খুন?

–হ্যাঁ।

 হঠাৎ হেরচক বলে–এসব অর্থহীন কথা বলবেন জানলে, এখানে আপনাকে আনতাম না।

আপনি আমায় অপমান করুন আর যাই করুন, আপনার সাক্ষী কাজে লাগত।

—আমার আর কিছু বলার নেই।

–নেই?

–না, আমি কিছুই দেখিনি। আপনি এবার আসুন।

বলেই সোজা দরজার দিকে এগিয়ে গেল হেরচক। মার্টিনকে চলে যাবার আগে বলে–এসব ব্যাপারে আমায় কিন্তু কিছুতেই জড়াবেন না।

পরে দেখা যাবে।

–ও কাজ করবেন না।

দয়া করে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করুন।

আমার যা বোঝার তা বুঝে গেছি।

–বোঝেননি, তাহলে এত করে বলতাম না।

–আপনি আমায় ক্ষমা করুন।

—মিঃ হেরচক!

বললাম তো।

–আপনি চান না সত্য প্রকাশ হোক।

–অসত্য কিছু থাকলে তো প্রকাশ হবে। আপনাকে তো আগেই বলেছি ওটা নিছক দুর্ঘটনা তবু জেদ করছেন। তাই আর আমার আগ্রহ নেই।

–আমার আছে।

 –তাতে আমি বাধা দিচ্ছি না।

–মুখে বলছেন কিন্তু সাহায্য করতে চাইছেন না।

আমি এবার বের হব।

–অর্থাৎ, আমায় যেতে বলছেন?

—হ্যাঁ।

ঠিক আছে চলি, আবার দেখা হবে।

না দেখা হলেই খুশী হব।

–কিন্তু সেটা যে আমার অখুশীর কারণ হবে।

চলি।

মার্টিন হোটেলে ফিরতে একজন কর্মচারী একটা চিঠি দিল। মার্টিন ঘুরে তাকায় চিঠি?

–হ্যাঁ।

–কে দিয়ে গেছে?

 –দেখিনি।

–তবে কোথায় পেলেন?

 –লেটার বক্সে পড়েছিল।

চিঠি খুলে দেখে ক্রাবিনের লেখা। তাতে আছে পরবর্তী অনুষ্ঠানসূচী নিয়ে আলোচনা হবে আর মার্টিনের সম্মানে আগামী সপ্তাহে একটা ককটেল পার্টির আয়োজন হচ্ছে। এবং আজকের অনুষ্ঠানে সে নিশ্চয়ই হাজির থাকবে। তাই ঠিক আটটা পনেরোতে গাড়ি আসবে হোটেলে মার্টিনকে নিয়ে যেতে।

চিঠিটা পড়ে এ ব্যাপারে কোন আগ্রহ না দেখিয়ে বিশ্রাম নিতে গেল মার্টিন।

.

০৮.

 কুলারের সাথে দেখা করবে বলে তার ফ্ল্যাটে মার্টিন পৌঁছাল পাঁচটার সময়। এই এলাকাটা আমেরিকার অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। ফ্ল্যাটের নিচেই একটা আইসক্রীমের দোকান। লোকও আছে। কুলারের ফ্লাটে গিয়ে বেল বাজাল মার্টিন। কুলার দরজা খুলে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলে–হ্যারির যখন বন্ধু তখন আমার বন্ধু। তাছাড়া আপনাকে আমি চিনি।

মার্টিন অবাক, বলে–আমায় চেনেন?

-হ্যাঁ।

–হ্যারির কাছে শুনেছেন বোধহয়?

না।

–তাহলে?

–আমি পশ্চিমী নভেলের খুব ভক্ত। বুঝতেই পারছেন।

অন্য সময় হলে খুশী হত মার্টিন কিন্তু এখন তেমন খুশী হল না। সবকিছু কেমন বাজে লাগছে। আসলে হ্যারির মৃত্যুকে সেঠিক মানতে পারছেনা। তবুও বলল–আপনি আমারনভেল পড়েছেন শুনে সুখী হলাম।

-না, না ওকথা বলবেন না।

–সত্যি কথা বললে তাই দাঁড়ায়।

–আমাকে একজন সমঝদার পাঠক ভাববেন না।

 –আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?

বলুন।

–হ্যারির মৃত্যুর সময় আপনি তো ওখানে ছিলেন?

-ও সে কি মর্মান্তিক দৃশ্য! আর ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস দেখুন সে সময় আমি হ্যারির : কাছেই যাচ্ছিলাম।

–কি করে ঘটল ঘটনাটা।

–হ্যারি আমাকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হতে যায়, তখনই একটা গাড়ি ছুটে এসে ধাক্কা মারে।

–গাড়ির ড্রাইভার ব্রেক কষেনি?

কষেছিল, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।

এবার একটু পানীয় নেওয়া যাক। হ্যারির এই সব কথা ভাবলে এর আশ্রয় নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

–দিতে পারেন। আচ্ছা মিঃ কুলার ড্রাইভার ছাড়া গাড়িতে আর কেউ ছিল?

গ্লাসে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে যায় সে। মার্টিনের দিকে তাকিয়ে বলে–কোন লোকটার কথা বলছেন?

–আমি শুনেছি আর কেউ ছিল।

–আমি জানি না।

জানেন না?

না। এসব কোত্থেকে শুনেছেন।

একটু থেমে আবার বলে ইচ্ছা করলে পুলিশ রিপোর্ট থেকে জেনে নিন।

তা অবশ্য জানা যায়, তবু আপনার কাছ থেকেই শুনতে চাইছিলাম।

–তখন আমি,কার্টসও ড্রাইভার ছাড়া কেউ ছিলনা। আপনি সম্ভবত ডাক্তারের কথা বলছেন?

–আমি হ্যারির পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ড্রাইভার ছাড়া আরও তিনজন লোক ছিল, এবং.

মার্টিন ইচ্ছে করে মাঝপথে থেমে যায়। তাকে রহস্যটা খুঁজে বের করতেই হবে।

এবং কি?

  তার মধ্যে ডাক্তার ছিল না। লোকটি জানালা দিয়ে সব দেখেছে।

–জানালা দিয়ে দেখেছে?

–হ্যাঁ। স্থির দৃষ্টিতে সে কুলারকে দেখতে থাকে।

-দেখতে ভুলও হতে পারে।

হতে পারে না, তা বলছি না। তবে…।

–কী? একটু ব্যস্ত মনে হয় কুলারকে।

হয়ত দেখতে তার ভুল হয়নি।

এবার আমার একটা কথার জবাব দেবেন?

–কি?

–সে কি কোর্টে সাক্ষী দিয়েছিল?

না।

-কেন?

–পুলিশে নিজেকে জড়াতে চায়নি তাই।

–ভালকরে দেখলে তো সাক্ষী দেবে।আপনি গেছেন,যাহোকমনগড়া কিছু একটা বলে দিয়েছে।

মনগড়া?

–হ্যাঁ। আপনি এসব ইওরোপীয়ানগুলোকে কোনদিন সুনাগরিক করে তুলতে পারবেন না।

–এ কথা কেন বলছেন?

ওর কোর্টে সাক্ষী দেওয়া উচিত ছিল।

–হ্যাঁ এ ব্যাপারে আমিও একমত।

দুর্ঘটনার পর রিপোর্ট নানাভাবে হতে পারে। তবে সবগুলোই প্রমাণের অপেক্ষা রাখে। মার্টিনের দিকে একটু ঝুঁকে বলে–ও আর কি দেখেছে! গলার স্বরে অস্বাভাবিকতা।

না আর কিছু দেখেনি, তবে হ্যারিকে যখন বাড়ির দিকে নিয়ে আসা হচ্ছিল তখন সে যে বেঁচে নেই একথা বলেছে।

হয়ত প্রসঙ্গ বদলারার জন্যই, কুলার বলল–প্রায় চেনাই বলেছে।

মার্টিনের দিকে তাকিয়ে বলল–আর একটু মদ দেব আপনাকে?

না আর দরকার নেই।

জানেন হ্যারিকে খুব ভালবাসতাম। ওর প্রসঙ্গ উঠলেই খুব কষ্ট হয়। তাই দয়া করে আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন না।

–আমি আর একটা কথা জিজ্ঞাসা করেই চলে যাব।

–কি কথা।

আন্না স্মিডকে চেনেন?

 –হ্যারির প্রেমিকা?

–হ্যাঁ।

–একবারের জন্য দেখেছিলাম। ওর কাগজপত্র আমিই ঠিক করে দিয়েছিলাম।

 বন্ধুর প্রেমিকার জন্য উচিত কর্তব্যই করেছেন। তবে কারণটা যদি বলেন।

–আসলে আন্না ছিল হাঙ্গেরিয়ান, বাবা জার্মানি। সব সময় রাশিয়ানদের ভয় পেত। এমন সময় টেলিফোন বেজে ওঠে। সরি বলে কুলার উঠে গিয়ে ফোনে কিছু কথা বলে ফিরে আসে। মার্টিন প্রশ্ন করে–পুলিশ হ্যারির ব্যাপারে যে কথা বলেছে সে সম্বন্ধে কিছু জানেন?

আমার মনে হয় না সে রকম কিছু থাকতে পারে। নিজের কর্তব্য সম্বন্ধে ও খুব সজাগ ছিল।

–কিন্তু পুলিশ বলেছে ও এ ব্যাপারে জড়িত ছিল।

–কোন মন্তব্য অবান্তর।

মার্টিন আর কোন কথা না বলে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসে। সবাই এত সংক্ষিপ্ত জবাব দিচ্ছে যে দিশেহারা অবস্থা, আবার দুর্ঘটনার সময় সে ছিল না। এরা সাহায্য না করলে খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজার অবস্থা হবে। না, যে করেই হোক হত্যাকারীকে খুঁজে পেতেই হবে।

.

০৯.

মার্টিন নদীর ধার দিয়ে হেঁটে চলেছে। রাত বেশ হয়েছে। অন্ধকারে বাড়িগুলোকে দৈত্যের মত লাগছে। কিছুটা দূরে একটা মিলিটারী থানার কাছে চারজন মিলিটারী একটা জীপে উঠছে।

কুলারের কাছে মদ খাওয়ার পর তার নারী সঙ্গের দরকার হয়ে পড়েছে। মনে পড়ছে বিগত সময়ের আমস্টারডাম ও প্যারিসের নারীসঙ্গের কথা। মার্টিন নিজেকে সংযত করে আমার বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। রাস্তায় বিজ্ঞাপনে দেখেছে আজ যোসেফস্টাডে কোন নাটক নেই। তার মানে। বেরিয়ে না গেলে আন্নাকে পাওয়া যাবে।

তার ফ্ল্যাটে গিয়ে বেল বাজায় মার্টিন। এখনো মদের নেশা কাটেনি মাথা ঝিমঝিম করছে। আন্না দরজা খুলতে মার্টিন মিথ্যে কথা বলে–আমি এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম, আপনার ফ্ল্যাটের দরজা খোলা দেখে চলে এলাম।

–কোথায় যাচ্ছিলেন? এতো শহরের শেষ প্রান্ত।

একটুও বিচলিত না হয়ে বলেকুলারের বাড়িতে একটু বেশী ড্রিঙ্ক করে ফেলেছি তাই রাস্তায় ঘুরছিলাম।

মার্টিনকে ঘরে বসিয়ে আন্না জানায় চা ছাড়া এখন আর অন্য পানীয় সে খাওয়াতে পারবে না।

মার্টিন বলে–না,না আপনি বিব্রত হবেননা। টেবিলে রাখা একটা বই দেখেকুণ্ঠার সঙ্গে আবার বলল-হঠাৎ এসে বিরক্ত করলাম না তো?

-না, না।

–আমি এখানে কিছুক্ষণের জন্য বসতে পারি?

–হ্যাঁ নিশ্চয়ই। একটু চুপকরে আবার বলে আপনার বেল বাজান শুনে আজ বারবার হ্যারির কথা মনে পড়ছে, এমনি করেই সে আমার কাছে আসত।

আন্না মনে মনে হ্যারির উপস্থিতি টের পাচ্ছে, তাই কখন মার্টিনের দিকে এগিয়ে গেছে নিজেই জানে না। মার্টিনও ইতিমধ্যে ঠাণ্ডা হাওয়া আসছে বলে জানলার পর্দা ফেলতে গেছিল, সে টের পায় মেয়েটির হাত তার হাতের মধ্যে। মার্টিন হেসে বলে–এ সময় হ্যারি কি করত?

সহসা গম্ভীর হয়ে বলে আন্না–পুরনো গান নিয়ে সে থাকত।ওগুলোই ওকে প্রেরণা জোগাত।

মার্টিন ভাবে কি করে তাকে খুশী করা যায়। পুরনো একটা গান, হ্যারির খুব প্রিয়। সেটা মনে পড়তেই শিস দিয়ে গাইতে থাকে।

আন্না যেন শ্বাস বন্ধ করে মার্টিনের দিকে তাকিয়ে থাকে।

মার্টিন বলে–হ্যারির কথা ভেবে আর কি করব! মায়া কাটিয়ে চিরদিনের মত চলে গেল। এলাম ওর সঙ্গে দেখা করতে, এসে শুনতে হল–হ্যারি নেই।

–তা আমি জানি, কিন্তু আমিও তো মানুষ। আমার একটা অবলম্বন দরকার।

–তুমিও একদিন সবকিছু ভুলে যাবে।

ভুলে যাব?

 –হ্যাঁ।

–একথা বলতে পারলে?

–এটাই তো নিয়ম। তার ব্যতিক্রম হবে কি করে?

ব্যতিক্রম হতেই হবে আমায় হ্যারির জন্য।

 –হলে ভাল। কিন্তু…

 –কিন্তু কি?

একদিন সব ভুলে গিয়ে আবার প্রেমে পড়বে। আয়া চেঁচিয়ে বলে–প্রেমে পড়ব? আমি? তোমার কথা কিছুতেই মানতে পারছি না। আমি এসব চাই না।

মার্টিন সরে আসে জানলার কাছ থেকে। ডিভানে এসে বসে। অন্যসব প্রসঙ্গ এড়িয়ে গত দুদিনের কথা শোনায় আন্নাকে। সব শোনার পর আন্না বলে কার্টস, কুলার দুজনেই মিথ্যে কথা বলেছে।

–সম্ভবতঃ এরা তৃতীয় বন্ধুর অসুবিধে মেটাতে চাইছেনা।তবে সে ধরা পড়লে এরাও রেহাই পাবে না। আর আমায় তো তাড়াতে পারলে বাঁচে। এখন আমি কি করব? যাব আর একবার হেরচকের কাছে।

–তাই চলো।

–তুমিও যাবে?

 –হ্যাঁ। আমার মনে হয় হেরচক ও তার স্ত্রী আমায় সরাসরি না বলবে না।

ঠাণ্ডা হাওয়া আর গুঁড়ি গুঁড়ি বরফের মধ্যে দিয়ে তারা রওনা হয় হেরচকের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

আন্না জিজ্ঞাসা করে হেরচকের ফ্ল্যাটটা কি খুব দূরে?

-না খুব বেশী দূরে নয়।

অপর পারে তাকিয়ে দেখে কিছু লোক। কিছুটা এগিয়ে দেখে মার্টিন চিৎকার করে বলে–আরে! হেরচকের বাড়ির তলায় তোক কেন?

–ও এটাই হেরচকের বাড়ি?

–হ্যাঁ। কিন্তু লোক কেন? কোন মিছিল নাকি?

 আন্না হঠাৎ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে বলে তুমি হেরচকের কথা আর কাকে বলেছ?

কয়েকজনকে বলেছি।

কারা?

তুমি আর কুলার।

আমার মনে হয়…। চলো ফিরে যাই।

–কেন? একটা জরুরী কাজে এসেছি।

–তুমি যাবে না?

না। তাছাড়া ওর বাড়ির কাছে এত লোক, তুমিই বল ব্যাপারটা না দেখে যাওয়া যায়।

 –তাহলে আমি চলে যাচ্ছি?

–তুমি চলে যারে?

–হ্যাঁ।

কিন্তু একটু আগেই তো আসতে চাইছিলে।

–তা অস্বীকার করছি না।

–তাহলে?

ওখানে লোক জড় হয়েছে কেন?

–সেটাই তো জানতে চাইছি।

 ভিড় আমার ভাল লাগে না।

 –সে কী। তুমি তো অভিনয় কর।

–সেটা আলাদা ব্যাপার।

মার্টিন এবার একাই এগিয়ে যায়। একজন বলে ওঠে–আপনিও কি পুলিশের লোক?

না।

পুলিশ এখানে কেন?

তারা তো আজ সারাদিন এ বাড়িতে ঢুকছে বের হচ্ছে।

—ও। আপনারা কার অপেক্ষা করছেন?

–লোকটাকে বাইরে আনলে একবার দেখতে পাই।

কাকে?

–হেরচককে।

মার্টিন ভাবে পুলিশ বোধহয় সাক্ষীর জন্য এসেছে। প্রশ্ন করে–হেরচক কি করেছে?

জানি না।

–তাহলে পুলিশ কেন?

–হেরচক খুন হয়েছে না আত্মহত্যা করেছে তা দেখবার জন্য।

–হেরচক নেই!

মার্টিন বিস্মিত ও হতাশা হয়ে পড়ল। তৃতীয় ব্যক্তির ব্যাপারে নিশ্চয়ই সে কিছু জানত তাই সরিয়ে দিল। তাহলে? হ্যারির মৃত্যু রহস্য আড়ালেই রয়ে যাবে?

ইতিমধ্যে একটা বাচ্চা ছেলে সেই ভদ্রলোকের জামা ধরে টানছে আর বলছে বাবা ফ্রাঙ্কও কত কাঁদছে।

–তুমি শুধু তাই দেখলে।

না বাবা। পুলিশ ওদের জিজ্ঞাসা করছে সেই বিদেশীকে দেখতে কেমন?

ছেলেটির বাবা হেসে ওঠে তারপর বলে–পুলিশ এটাকে খুন বলেই ধরে নেবে, কেননা হেরচক নিশ্চয়ই নিজের গলা ওভাবে কাটবে না।

ছেলেটি এবার মার্টিনকে ভাল করে দেখে বলে বাবা ঐ লোকটাও তো বিদেশী।

–আমার ছেলে বলছে আপনি বিদেশী।

মার্টিন কোন জবাব না দিলেও অস্বস্তি বোধ করে।

লোকটি আবার বলে–পুলিশনাকি আপনাকে খুঁজছে। মার্টিন কোন উত্তর দিলনা। এর মধ্যে পুলিশ হেরচকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল। পিছনেফ্রাঙ্ক ও ইলকে। মার্টিন পা বাড়ায় চলে যাবার জন্য। দেখে আন্না দাঁড়িয়ে আছে। গিয়ে বলে–একটা খারাপ খবর আছে।

–কি? খুন হয়েছে?

হা।

চল আমরা চলে যাই। হাওয়া সুবিধের বলে মনে হচ্ছে না।

–তাই চল।

 তারা তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে যায়। মার্টিন ভাবতে থাকে হেরচক যাবলেছেসব সত্যিই তাহলে? আমাকে বলে–এবার তুমি বাড়ি যাও।

–তাই যাচ্ছি। এগিয়ে দেবে না?

–না।

জরুরী কাজ আছে?

–আছে ঠিকই, তবে জরুরী নয়।

 –তাহলে চলো।

 –তোমার ভালোর জন্যই বলছি, এখন থেকে আমায় এড়িয়ে চলা উচিত।

 –কেন? তাছাড়া তোমাকে তো কেউ সন্দেহ করছে না।

–কে বলেছে? গতকাল যে হেরচকের বাড়ি গেছিলাম সে সম্বন্ধে পুলিশ খোঁজ নিচ্ছে।

–তাহলে পুলিশের কাছে যাও, তাতে ভালই হবে।

–কি ভাল হবে? ভাল কিছু হবে না। হ্যারি মারা যেতে সব শেষ হয়ে গেছে।

আন্না চুপ হয়ে যায়, হ্যারির নাম শুনে। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে বলে–তাহলে তুমি। সন্দেহ মুক্ত হতে পারতে।

–আর সন্দেহ মুক্ত। ওদের বিশ্বাস করি না, মাথায় কিছু নেই। নইলে হ্যারির কাঁধে দোষ চাপায়। তাছাড়া ক্যালাওকে মারতে গেছিলাম। সুতরাং ওরা কি আমায় ছেড়ে কথা বলবে?

–তুমি বিদেশী তোমার ওপর আক্রমণ করতে পারে না।

 –সে কথা কে বোঝাবে ওদের।

 –এটা অন্যায়।

ন্যায় অন্যায় কে বুঝবে বল।

–তাহলে আর পুলিশের কাছে গিয়ে কাজ নেই।

 না গেলে হয়ত ভিয়েনায় থাকতে দেবে না।

বললেই হল।

–তুমি বিদেশী আর ওরা পুলিশ। তোমার থেকে ওদের ক্ষমতা বেশী।

–তোমার তো কাগজপত্র ঠিক আছে।

–থাকলেই বা…

–তাহলে তোমার কিছু করতে পারবে না।

–তুমি ওদের চেন না। ওরা আমায় রীতিমত শাসিয়েছে। তবে…

–তবে কি?

–তবে না ঘাটালে কুলার ছাড়া কেউ ধরবে না।

কি ভেবে বলছ?

–মনে হল তাই বললাম।

–ধারণা ভুল হতেও পারে।

–তা পারে। এবার চলি হ্যাঁ।

–আচ্ছা। ও, হ্যাঁ একটা কথা বলার ছিল।

বল।

 –হেরচক সামান্য জেনেই খুন হয়েছে।

–তা বলতে পার।

–তুমি সাবধানে থেক।

 –ঠিকই বলেছ। আচ্ছা কি করে বলছ হেরচক খুন হয়েছে? আত্মহত্যাও হতে পারে।

না।

 –এতটা নিশ্চিত কি করে হলে?

–তা বলতে পারব না, আমার কথাটা মনে রেখ।

–রাখব।

চলি।

 মার্টিন হোটেলের দিকে পা বাড়ায় তার কানে যেন আন্নার শেষ কথাগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে। রাস্তা জনহীন, বরফ পড়েই চলেছে। কিছু শব্দ হলেই চমকে উঠছে সে, মনে হচ্ছে কেউ যেন তার পিছু নিয়েছে। ভালয় ভালয় হোটেলে পৌঁছে ঘরে যেতে যাবে, কে যেন পিছন থেকে ডাকে। পিছনে তাকাতে দেখে মিঃ স্মিড;বলে কর্নেল আপনাকে ডাকছে। ..

মার্টিন বুঝল সে ঝামেলায় পড়েছে। কিছুক্ষণ পর যাচ্ছি, বলে হোটেল থেকে সরে পড়ার চেষ্টা করে। বের হতে যাবে একটা লোক পথ আটকে দাঁড়াল। কাছেই একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে, লোকটা ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে–ঐ গাড়িতে গিয়ে বসুন।মার্টিন নিরুপায়। গাড়িতে বসতেই জোরে চলতে শুরু করে। মার্টিন ভয় পেয়ে চিৎকার করে–এত জোরে চালাচ্ছেন কেন? যে কোন মুহূর্তে বিপদ ঘটতে পারে।

আদেশ আছে–বলে ড্রাইভার যেমন চালাচ্ছিল তেমনি চালাতে থাকে।

আবার চিৎকার করে মার্টিন–এত জোরে চালাবার অর্থ কি? আমাকেও কি হ্যারীর মত খুন করার চেষ্টা চলছে?

কোন উত্তর আসে না।

–আর কতদূর নিয়ে যাবেন।

তাও সব চুপ।

হঠাৎ মার্টিনের মনে হল তাকে বোধহয় গ্রেফতার করা হয়নি, হলে পুলিশ থাকত। মনে হয় বিবৃতি নিয়ে ছেড়ে দেবে।

এক সময় গাড়িটা থামল। ড্রাইভার এসে বলল–ঐ সামনের বাড়িটায় যেতে হবে, আসুন।

বাড়িতে পা দিতে কিছু আওয়াজ কানে আসতে মার্টিন বলে–কোথায় নিয়ে এসেছে আমায় ড্রাইভার জবাব দেবার আগেই দরজা খুলে গেল। ঘরের উজ্জ্বল আলোয় চোখ ধাধিয়ে গেল ওর। জাবিনের গলা শুনতে পেল মার্টিন–আসুন আসুন মিঃ ডেকস্টার। আমরা সবাই চিন্তা করছিলাম একেবারে না আসার থেকে দেরী করে আসা ভাল।

 মার্টিন বেয়ারাকে দেখতে গিয়ে এক মহিলাকে দেখতে পেল। তার দুদিকে দুজন বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার যুবক আস্তে কথা বলছে। সামনে দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা বড় পারিবারিক ছবি টাঙান। হঠাৎ পিছন ফিরে দেখে দরজা বন্ধ। মার্টিনকে কিছু ভাবার অবকাশ না দিয়ে ক্রাবিন বলে কফি খেয়ে সভার কাজ শুরু করা যাক। একজন এসে মার্টিনকে কফি দেয়। এই সময়ে এক যুবক এসে বিনয়ের সঙ্গে বলে–আপনার বইতে যদি একটা সই দেন, ভীষণ খুশী হব।

হঠাৎ কালো সিল্কের শাড়ি পরিহিতা এক মহিলা বলে–মিঃ ডেকস্টার আপনার বই কিন্তু একেবারে ভাল লাগে না আমার। আমার মনে হয় উপন্যাসের গল্পটা সব সময় উচ্চ পর্যায়ের হওয়া উচিত।

–আমারও তাই মনে হয়। কিন্তু প্রশ্নোত্তরের সময় কথাগুলো বললে জবাব দিতে সুবিধা হবে।

আর একজন মহিলা বললেন–আমি খুব একটা ইংরাজী উপন্যাস পড়িনি। কিন্তু শুনেছি আপনার উপন্যাস।

মহিলাকে থামিয়ে ক্ৰাবিন মার্টিনকে কিছু গান করতে অনুরোধ জানায়। এরপরে যথারীতি আলোচনা সভা শুরু হল। ক্ৰাবিন প্রথমে সুন্দর বক্তৃতা দিল। এমনকী মার্টিনকে করা কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তার সম্মান বাঁচায়। মার্টিন প্রথম দিকে ঠিক প্রশ্নগুলো ধরতে পারছিল না।

বাদামী টুপী পরা এক মহিলা প্রশ্ন করল–আপনি কি নতুন কোন উপন্যাস শুরু করেছেন?

–হ্যাঁ।

–কি নাম দিয়েছেন? অবশ্য বলতে যদি আপত্তি না থাকে।

না, না আপত্তির কি আছে।

–তাহলে বলুন।

তৃতীয় পুরুষ।

বাঃ সুন্দর নাম।

ধন্যবাদ।

আর একজন প্রশ্ন করে কার লেখা আপনাকে সবথেকে বেশী প্রভাবিত করেছে?

সহজভাবে উত্তর দেয় মার্টিন–গ্রে।

— নামটা শুনে সবাই যেন বেশ খুশী হল। এক বয়স্ক অস্ট্রিয়ান কিন্তু বলে উঠল–আপনি কোন গ্রের কথা বলছেন? এই নাম তো আদৌ শুনিনি?

মার্টিন হাল্কা সুরে উত্তর দেয়–কেন জন গ্রের নাম শোনেননি।

এই জবাবে ইংরেজ শ্রোতাদের মধ্যে হাসির আলোড়ন তুলে দিল। ক্ৰাবিন সেই বয়স্ক লোকটিকে বলল–মিঃ ডেকস্টার আপনার সঙ্গে রসিকতা করেছেন।

রসিকতা? আমার সঙ্গে?

–হ্যাঁ। হাসে ক্রাবিন।

–কি ধরনের রসিকতা করলেন?

উনি কবি গ্রের কথা বলেছেন।

অপর একজন এবার প্রশ্ন করে-জেমসজয়েস সম্বন্ধে আপনার কি ধারণা?

 মার্টিন ভ্রূ কুঁচকে লোকটির দিকে তাকিয়ে বলে–আপনি কি বলতে চাইছেন?

লোকটি ইতস্ততঃ করে, তারপর বলে–মানে আমি বলতে চাইছিলাম আপনি কি তাকে শ্রেষ্ঠ লেখক মনে করেন?

-নামটা কি বললেন, জেমসজয়েস?

–হ্যাঁ।

 তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলে মার্টিন-আমি তো নামই শুনিনি। তা উনি কি লেখেন?

মার্টিনের এ হেন উত্তরে শ্রোতারা খুশী না হলেও সাহসিকতার তারিফ করল। ঝড়ের মত বিভিন্ন জন বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে আর মার্টিন দায়সারা গোছের জবাব দিতে থাকে, তার চোখের সামনে ভাসতে থাকে স্ট্রেচার, ফ্রাঙ্ক ও কচের হতাশ মুখ, হেরচকের মৃত্যু। তার মনে হয় যদি তাকে প্রশ্ন না করত ওভাবে তাহলে সে মারা যেত না।

 এক সময় সভা শেষ হয় সবাই চলে যেতে শুরু করে হঠাৎ আয়নার দিকে নজর পড়তে দেখে পুলিশ ঢুকছে। কাবিনের এক প্রহরীর সঙ্গে পুলিশ দরজায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে। মার্টিন কি করবে বুঝতে পারে না, সে বোধবুদ্ধি হারিয়ে দরজার দিকেই এগোয়। মিলিটারি পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসা করে আপনি কে? পাশ থেকে এক তরুণ বলে ওঠে উনি বেনজামিন ডেকস্টার।নামকরা লেখক। মার্টিন ঐ তরুণটিকেই জিজ্ঞাসা করল, বাথরুমটা কোনদিকে?

আবার পুলিশটা জিজ্ঞাসা করে আমাদের কাছে খবর আছে বোলো মার্টিন এখানে এসেছে।

তরুণটি উত্তর দেয়–ভুল করছেন। এরপর মার্টিনের দিকে তাকিয়ে বলে দরজার বাইরে দুনম্বর ঘরটা। ধন্যবাদ জানিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাবে, দেখে পেইন দাঁড়িয়ে আছে। পেইনকে আমিই পাঠিয়েছিলাম মার্টিনকে চিনিয়ে দেবার জন্য।

মার্টিন পেইনকে দেখেই পাশের একটা দরজা খুলে ঢুকে যায়। ঘরটা অন্ধকার। মার্টিন কাঁপা গলায় বলে–ঘরে কেউ আছেন?

হঠাৎ বাইরে থেকে কে বলে উঠল-মিঃ ডেকস্টার?

আবার সব চুপচাপ। হঠাৎ ঘরের লাইটটা জ্বলে ওঠে। দেখতে পায় পেইন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। বলে–আমরা অনেকক্ষণ ধরে আপনাকে খুঁজছি। কর্নেল আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান।

মার্টিন ভাবে এমন এক পরিস্থিতি হয়েছে এখন ক্রাবিনকেও সন্দেহের বাইরে রাখা যাচ্ছে না। ও কি সত্যিই লেখার ভক্ত, এই সভায় ডেকে আনার পিছনে নোংরা উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে নাকি?

.

১০.

মার্টিন দেশে ফিরে যায়নি খবর পেতেই ওর ওপরনজর রাখা শুরু করেছিলাম। পেইন মার্টিনকে নিয়ে আসলে তার কাছ থেকে কার্টস, কুলার ও ক্রাবিন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করার পর হ্যারির প্রসঙ্গে আসি। জানতে চাই আর কিছু জানতে পেরেছে কিনা।

মার্টিন মাথা নাড়ে–হ্যাঁ।

আমার কৌতূহল বেড়ে যায় বলি–আর কি?

–একটা অপ্রিয় কথা বলব?

–অপ্রিয় কথা বলুন।

–আমাদের চোখের সামনে অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছে আপনারা দেখেও দেখছেন না।

আমরা দেখেও দেখছি না?

না, বলতে বাধ্য হলাম।

–কোন ব্যাপারে বলুন তো?

 –হ্যারির ব্যাপারে।

–আবার কি ব্যাপার?

 –হ্যারি দুর্ঘটনায় মারা যায়নি।

দুর্ঘটনা নয়?

না।

 –তবে কি?

হ্যারি খুন হয়েছে।

 খুন হয়েছে!

-হ্যাঁ।

আমি রীতিমত অবাক, বললাম–আত্মহত্যা ভেবেছিলাম কিন্তু খুন হয়েছে বলে ধারণা ছিল না।

অনেক কিছু জানানোর পর শেষে মার্টিন বলল–এর একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিল।

–প্রত্যক্ষদর্শী!

–হ্যাঁ।

–সে কে? আর ছিল কেন বলছেন? সে কি বেঁচে নেই?

না বেঁচে নেই।

 –বেঁচে নেই?

না। আর তার কাছ থেকে অনেক কিছু জেনেছি।

জেনেছেন?

 –হ্যাঁ।

 –কি বলেছে।

–তার কাছ থেকে শুনে ব্যাপারটা রীতিমত রহস্যময় মনে হয়েছে।

রহস্যময়।

–হ্যাঁ।

বলুন সে কি বলেছে।

বুঝতে পারছি না সে কেন তৃতীয় ব্যক্তির ওপর এত জোর দিচ্ছিল।

—তৃতীয় ব্যক্তি?

-হ্যাঁ।

নাম বলেছে?

না।

–জানতে পারলেন না?

–পারলে তো সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।

–তা অবশ্য ঠিক।

 –সেই প্রত্যক্ষদর্শী আমাদের অনুসন্ধানে কোন রকম সাহায্য করতে চায়নি। তাছাড়া…

তাছাড়া কি?

–আপনার লোকও তার কাছে যায়নি।

আমি চুপ করে চিন্তা করতে থাকি।

সবাই মিথ্যে বলেছে।

সম্বিৎ ফিরে পেয়ে তার দিকে তাকাই।

বলছি সবাই মিথ্যে কথা বলেছে।

মিথ্যে বলেছে।

–হ্যাঁ।

মার্টিনের কথায় সব গুলিয়ে যাচ্ছে আমার। এটা যে দুর্ঘটনা তার প্রমান আছে অথচ ও বলছে খুন। হঠাৎ আমার হেরচকের কথা মনে পড়ে যায়। প্রশ্ন করি আপনার সেই প্রত্যক্ষদর্শী কি হেরচক?

-হ্যাঁ।

বিস্মিত হয়ে বলি–আপনি সেই লোক যার সঙ্গে কথা বলার পর হেরচক মারা যায়।

–তা জানি না।

–আপনার সুবিধের জন্যই জানাচ্ছি, অস্ট্রিয়ান পুলিশ আপনাকে সর্বত্র খুঁজছে।

নির্বিকার ভাবে বলল মার্টিন–আমাকে?

-হ্যাঁ। আরও খবর আছে?

–কি?

ফ্রাঙ্ক ও কচ বলেছে আপনি হেরচকের সঙ্গে কথা বলার পর সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।

কারণ?

–জানি না।

–তাকে এমন কিছু জিজ্ঞাসা করিনি যাতে ঐ অবস্থা হবে।

–এখন বলুন হেরচকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের কথা আর কে জানত?

 –আমি আন্না আর কুলারকে বলেছি।

–শুধু ওদের কে?

হ্যাঁ।

 –আর কাউকে না?

না।

 –ঠিক মনে করে বলছেন তো?

–হ্যাঁ। তবে একটা কথা মনে হচ্ছে।

 কি কথা?

–এমনও হতে পারে কুলারের ওখান থেকে বেরিয়ে আসার পর কুলার হেরচকের মুখ বন্ধ করার জন্য তৃতীয় ব্যক্তিকে খবর দিতে পারে।

–এটা কি শুধু আপনার ধারণা?

–হ্যাঁ।

কুলার কি কিছু আভাস দিয়েছিল?

–ঠিক মনে করার মত কিছু ঘটেনি।

–হয়ত কুলার কিছু করেনি কারণ আপনি যখন কুলারকে হেরচকের কথা বলতে গেছেন তার আগেই সে খুন হয়ে গেছে। এটাও মনে রাখতে হবে।

তার আগেই?

-হ্যাঁ।

–আপনার অনুমান যদি…।

 –কিছু খবর অন্ততঃ আমাদের ঠিক থাকে।

 মার্টিন ঘাড় নাড়ে।

আর আপনি যে রাতে হেরচকের বাড়ি গেছিলেন সে রাতেই ও খুন হয়েছে। আচ্ছা আপনি তো হোটেলে রাত সাড়ে নটায় ফিরেছিলেন তাই না?

–হ্যাঁ প্রায় ঐ সময়।

–তার আগে কি করছিলেন?

মার্টিন ভাবতে থাকে, তারপর বলে–সারাদিনের ঘটনা নিয়ে চিন্তা করছিলাম রাস্তায় ছিলাম তখন কিছু ঠিক ছিল না।

ঘুরে বেড়াবার কোন প্রমাণ আছে?

 –ঘুরে বেড়াবার প্রমাণ?

–হ্যাঁ।

না।

–আপনি ট্যাক্সি চড়েছিলেন?

উহু।

–অর্থাৎ ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকতে চাইছেন।

–তার মানে?

–আপনি হ্যাঁ বললে, ট্যাক্সির নাম্বারটা জিজ্ঞাসা করতাম। এই আর কি।

না চড়লেও বলতে হবে চড়েছি।

আমি মার্টিনকে ভয় পাওয়ার জন্য একথা বললাম। ওর পিছনে সবসময় আমার লোক ছিল, সুতরাং জানি ও নির্দোষ তবে একটু আধটু দোষ তো আছে। আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে জানি একজনের হাতে ছুরি থাকলেও অনেক সময় অন্য একজন খুনটা করে।

হঠাৎ মার্টিন বলে–একটা সিগারেট খেতে পারি?

সম্মতি পেয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে জিজ্ঞাসা করে–আপনি কি করে জানলেন আমি কুলারের বাড়ি গেছিলাম।

–জেনেছি, হেসে বলি।

কি ভাবে সেটাই তো জানতে চাই।

অস্ট্রিয়ান পুলিশের কাছ থেকে।

সিগারেটে টান দিতে গিয়ে থেমে যায় মার্টিন। বলে–মিথ্যে কথা। তারা আমায় চেনে না। এবার বলি–আপনি কুলারের বাড়ি থেকে চলে যাবার পর ওই আমায় ফোন করেছিল।

কুলার? আপনাকে?

–হ্যাঁ।

 মার্টিন শুনে বিড়বিড় করে তাহলে কুলারকে অপরাধীর পর্যায় ফেলা যাবে না।

একটু চেঁচিয়ে বলে–হ্যারির ব্যাপারে কুলারও মিথ্যে বলেছে।

কুলার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতেই আমায় ফোন করেছিল।

 –আপনি তাহলে কুলারকে সন্দেহ করছেন?

–হ্যাঁ। সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিতে পারি না। জ্বলন্ত দৃষ্টিতে মার্টিন আমার দিকে তাকিয়ে বলে–আমি বিশ্বাস করি না কুলার এ ব্যাপারে জড়িত। কুলারকে যতটা চিনি, তার সেই সতোর জন্য আমি বাজি ধরতে পারি।

মার্টিনের কথার জোরে আমার সন্দেহ চলে যায় কারণ আমিও তাকে চিনি। সে একজন টায়ার ব্যবসায়ী, ভালই পয়সা।

মার্টিন এবার বলে–আচ্ছা কোন সন্দেহজনক ব্যাপার কিছু ছিল যাতে হ্যারি জড়িত?

না না। ওসবের মধ্যে ও ছিল না। তবে হ্যারির ব্যাপারে কিছু কথা আপনাকে বলতে চাই।

–কি। থেমে গেলেন কেন? বলুন?

না কিছু না।

বলতে আপত্তি নেই, তবে আপনি আঘাত পেতে পারেন।

–তবু বলুন, আমি সব শুনতে চাই, সব কিছুর জন্য আমি প্রস্তুত।

–তাহলে শুনুন।

অস্টিয়ান পেনিসিলিন শুধু মাত্র মিলিটারী হাসপাতালগুলো পেত, কিন্তু বেসরকারীহাসপাতাল গুলোতে দেওয়া হত না। তারা প্রয়োজনে চড়া দামে বাইরে থেকে কিনত।

পেনিসিলিন বন্টন ব্যবস্থায় যারা কাজ করত তারা নিজেদের অপরাধী বলে ভাবত না।

-কেন ভাবত না?

–তারা বলত যারা আমাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছে তারাই আসল অপরাধী। অর্থের লোেভ বড় সাংঘাতিক, তাই তরল পেনিসিলিনের সঙ্গে রঙীন জল, গুড়ো পেনিসিলিনের সঙ্গে বালি মেশাতে লাগল, তাদের লাভ বেড়ে যেতেলাগলআরযারাব্যবহারকততারাউপকারেরবদলেঅপকার পেত।

-তাইতো স্বাভাবিক।

–যুদ্ধে হাত পা কাটা রোগী বা যৌন ব্যাধিগ্রস্ত রোগীদের বেশী ক্ষতি হতে লাগল।

শিশু হাসপাতালের কথা আর বলবেন না। সে মর্মান্তিক দৃশ্য।

–কেন? কি হয়েছিল?

–শিশুদের ম্যানিনজাইটিসের জন্য কিছু পেনিসিলিনের দরকার পড়ায় চোরাবাজার থেকে নেওয়া হয়েছিল। যার ফলে অনেক শিশুর মৃত্যু, বহু শিশু মানসিক রোগগ্রস্ত। এখনও অনেকে মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মার্টিন অধৈর্য হয়ে বলে-এর সঙ্গে হ্যারির কি যোগ আছে?

–আছে, মিলিটারী ফাইল খুলে তাকে শোনাই। প্রথমদিকে হ্যারিকে বিশেষ বিশেষ জায়গায় দেখা যেতে লাগল, বিশেষ কয়েকজন লোকের সঙ্গে অন্তরঙ্গতা বাড়তে থাকল সঙ্গে টাকার অঙ্কও। এরপর হ্যারি কিছুটা অসাবধান হয়ে পড়েছিল। আমরা যে তাকে সন্দেহ করছি সে বুঝতে পারেনি।

ওদের এসব কাজকর্ম জানার জন্য আমাদের একজন এজেন্টকে মিলিটারী হাসপাতালে পিয়নের কাজে লাগিয়ে দিলাম। চোরাকারবারে সে যে সব জায়গায় যোগাযোগ রাখত একদিন তার সন্ধান পেলাম, আমাদের হয়ে যে কাজ করত তার নাম হারবিল। তাকে ধমকে জিজ্ঞাসা করলাম কি নাম, কতদিন আছ?

–বেশী দিন নয়।

–তবু কতদিন?

–তিন চার মাস হবে।

–মিথ্যে কথা।

–স্যার ছমাসের বেশী না।

–তোমার কিন্তু বাঁচার আশা নেই।

–হুঁজুর আমায় বাঁচান। এমন কাজ কোনদিন করব না।

জানি তোমার জন্য কত শিশু মারা গেছে, পঙ্গু হয়েছে? আইনের কাছে তুমি রেহাই পাবে না। বড় সাজা তোমার হবে, কেউ তোমায় বাঁচাতে পারবে না। যদি…। ইচ্ছে করে থেমে যাই।

-যদি কি?

যদি তুমি আমাদের হয়ে কাজ কর।

 –তা কি করে সম্ভব।

–কেন?

–ওরা আমায় বিশ্বাসঘাতক ভেবে প্রাণে মেরে দেবে।

আমাদের হয়ে কাজ না করলে তোমায় ছেড়ে দেব ভেবেছ?

তারপর অনেক বুঝিয়ে চাপ দিয়ে ওকে রাজী করালাম। ওর সাহায্যে জানতে পারলাম কার্টস  এ ব্যাপারে জড়িত এবং এখানে একটা বড় ভূমিকা আছে ওর।

মার্টিন জিজ্ঞাসা করে–তাহলে কার্টসকে ধরলেন না কেন? বিশেষ করে সে যখন অপরাধী।

–ইচ্ছে করে ধরিনি।

–কেন?

ধরলে পুরো দলটা সজাগ হয়ে যাবে। আর আমাদের উদ্দেশ্য দলটাকে ভেঙে দেওয়া।

আমি ফাইল থেকে দুটো ছবি মার্টিনকে দিয়ে বললাম দেখলেই বুঝতে পারবেন এদের নেতা কে? ছবি দেখে মার্টিন স্তম্ভিত, এতদিনের বন্ধুত্ব যেন ভেঙে পড়ল। মনের মধ্যে একটা ব্যথা যেন অনুভব করে সে। দেখেই বোঝা যায় বেশ ভেঙে পড়েছে।

মার্টিনকে চাঙ্গা করার জন্য এক পেগ মদ দিলাম। বাধ্য ছেলের মত পান করে অসহায় ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে যেন সান্ত্বনার ভাষা খোঁজে।

এক সময় স্বাভাবিক হয়ে বলে–আচ্ছা এমনও তো হতে পারে, আপনারা যেমন হারবিলকে বাধ্য করিয়েছিলেন, তেমনি কোন গোপন চক্র তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য হ্যারিকেও কাজে লাগিয়েছিল। নইলে…।

মার্টিন এখনও যেন তার বন্ধুকে দোষী ভাবতে পারছে না।

 আমি বললাম–হতেও পারে আবার নাও পারে।

আপনারা হ্যারিকে ধরতে যাবেন বোধহয় ওরা আন্দাজ করেছিল তাই দুনিয়া থেকে ওকে সরিয়ে দিল। আমি আর এখানে থেকে কি করব, ফিরে যাই ইংলন্ডে।

না যাবেন না।

যাব না কেন?

–গেলে অস্ট্রিয়ান পুলিশ আপনাকেই সন্দেহ করবে।

–কেন?

–আমার দৃঢ় বিশ্বাস কুলার তাদের সব জানাবে।

কুলার?

–হ্যাঁ।

–ঠিক বুঝতে পারলাম না।

নিরাপদে কেনা থাকতে চায়। আর আমাদের হাতে কুলারের বিপক্ষে যাবার মত কিছু নেই।

–তাহলে তৃতীয় পুরুষ কে?—

–আমারও একই জিজ্ঞাসা আর তাকে ধরা না পর্যন্ত স্বস্তি নেই।