০৯. জনতের ভয়

৯. জনতের ভয়

খুব কম লোকই সুখী হতে পারে, যদি সামগ্রিকভাবে তাদের জীবনধারা ও পৃথিবী নিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী, যাদের সাথে তাদের সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে এবং বিশেষভাবে যেসব প্রতিবেশীদের সাথে বাস করতে হয়, তারা অনুমোদন না করে। বর্তমান সমাজের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা আলাদা আলাদা গোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং তাদের নৈতিকতাবোধ ও বিশ্বাসও পরস্পর থেকে ভিন্নতর। এই অবস্থা শুরু হয়েছে যোড়শ শতকের পোপবিরোধী ধর্ম বিপ্লবের সময় থেকে সম্ভবত বলা উচিত বেঁনেসার সময় থেকে এবং ক্রমেই প্রবলতর হয়ে উঠছে। প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ক্যাথলিকদের কথা বলা যায়, তারা যে শুধু ধর্মতত্ত্বে আলাদা তাই নয়, অনেক বৈষয়িক ব্যাপারেও তারা আলাদা। অনেকগুলি কাজ অভিজাত শ্রেণীর অনুমোদিত ছিল, যা সহ্য করত না মধ্যবিত্ত শ্রেণী (বুর্জোয়া)। তারপর আগমন ঘটল উদারপন্থী এবং স্বাধীন চিন্তার সমর্থকদের। তারা ধর্মীয় কর্তব্য পালন স্বীকার করতেন না। আমাদের নিজেদের কালে ইউরোপ মহাদেশ জুড়ে লোকেরা খুব বেশি রকমভাবে ভাগ হয়ে গেছে সমাজতন্ত্রী এবং অন্যান্য দলে, যেখানে শুধু রাজনীতি নেই, রয়েছে জীবনের সকল বিভাগ। ইংরেজি ভাষাভাষি দেশসমূহে এই বিভক্তি অসংখ্য। কিছু দল চিত্রশিল্পকে নন্দিত করে। কিছু দল মনে করে ওটা শয়তানের চিন্তা, অন্তত আধুনিক হলে তো কথাই নেই। কারো কারো মতে সাম্রাজ্যে আনুগত্য একটি মহৎ গুণ, কারো মতে এটি পাপ, আবার কারো মতে এটা এক ধরনের বুদ্ধিহীনতা। সাধারণ নৈতিকতায় বিশ্বাসী মানুষ ব্যভিচার একটি ঘৃণ্যতর অপরাধ বলে মনে করে। আবার এক বিপুল সংখ্যক লোক একে প্রশংসাযোগ্য মনে না করলেও ক্ষমাযোগ্য অপরাধ বলে মনে করে। ক্যাথলিকদের বিবাহ-বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ কিন্তু অধিকাংশ অ-ক্যাথলিক একে বৈবাহিক চাপ থেকে মুক্ত হওয়ার প্রয়োজনীয় অপনোদক বলে গ্রহণ করে।

এই ধরনের বিচিত্র সব দৃষ্টিভঙ্গীর জন্যে কোনও নির্দিষ্ট রুচি ও বিশ্বাসযুক্ত মানুষ এক গোষ্ঠীর মধ্যে নিজেকে সমাজচ্যুত মনে করবে, কিন্তু অন্য গোষ্ঠীর কাছে তিনি সম্পূর্ণ সাধারণ এবং স্বাভাবিক মানুষ বলে গৃহীত হবেন। এইভাবে অনেক অসন্তুষ্টি জন্ম নেয় বিশেষভাবে তরুণদের মধ্যে, কোনও তরুণ বা তরুণীর মনে কোনওভাবে যেসব ধারণা জন্ম নেয়, তা যেন বাতাস থেকে ধরা। কিন্তু তারা দেখতে পায় যে বিশেষ সামাজিক পরিবেশে তারা বাস করছে সেখানে এইসব ধারণা (খ্রিস্টান) ধর্মমন্দির থেকে পাওয়া অভিশাপ যেন। তাই তরুণ সমাজের মনে সহজেই এটা মনে হতে পারে, তারা যে সামাজিক পরিবেশের সাথে পরিচিত তা সমগ্র বিশ্বের মধ্যে প্রতিনিধি স্থানীয়। তারা বিশ্বাস করতেই চাইবে না, যেসব মতো তারা ধৃষ্টতা বলে বিবেচিত হতে পারে মনে করে এখানে প্রকাশ করতে ভয় পায়, সেইসব অন্য জায়গায় ভিন্ন পরিবেশে এ যুগের অত্যন্ত সাধারণরূপে বিবেচিত হবে। দেখা যায়, পৃথিবী সম্বন্ধে অজ্ঞতার কারণে নানা ধরনের অনেক অনাবশ্যক দুঃখ ভোগ করে কখনো শুধুমাত্র তরুণ বয়সে, কখনো জীবনভর। এই অন্তরণ শুধু যে বেদনার উৎস, তা নয়, এতে বিপরীত পরিবেশের বিরুদ্ধে মানসিক স্বাধীনতা রক্ষার অপ্রয়োজনীয় কাজে শক্তির অনর্থক অপচয় হয় এবং একশটির মধ্যে নিরানব্বইটি ক্ষেত্রে ধারণাসমূহের যুক্তিপূর্ণ পরিণতির পক্ষে পরিচালিত করতে এক ধরনের ভয়ের সঞ্চার হয়। ব্ৰন্টি ভগ্নিরা(১) তাদের বই প্রকাশিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কোনও সহানুভূতিশীল লোকের দেখা পাননি। এসব এমিলিকে স্পর্শ করেনি। তিনি তেজস্বিনী ছিলেন এবং তাতে দীপ্তি ছিল। কিন্তু শারলেট এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। কারণ, প্রতিভা থাকলেও তার দৃষ্টিভঙ্গী ছিল একজন গৃহশিক্ষিকার। এমিলি ব্রন্টির মতো ব্লেকও(২) মনের দিক থেকে সম্পূর্ণ অন্তরীণ ছিলেন। কিন্তু তিনি এমিলির মতোই নিজের ভুল দিকটাকে শুধরে নিতে পেরেছিলেন। তিনি যে নির্ভুল ছিলেন এবং তাঁর সমালোচকরাই ভুল ছিলেন সে বিষয়ে তার মনে কোনও দ্বিধা ছিল না। জনমত বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গী নিচের কটি চরণে প্রকাশিত হয়েছে :

একমাত্র লোক যে আমার পরিচিত
যে আমার বমন-উদ্রেক কোনও রকমে
বন্ধ করেছিল, তার নাম ফুঞ্জেলি–
তিনি ছিলেন একসাথে তুর্কি এবং ইহুদি।
 সুতরাং প্রিয় খ্রিস্টান বন্ধুগণ
তোমরা কি করছো?

কিন্তু অন্তৰ্জীবনে এমন শক্তি ধারণ করেন তেমন লোকের সংখ্যা বেশি নয়। প্রায় প্রত্যেকের পক্ষেই সহানুভুতিশীল পরিবেশ সুখের জন্যে প্রয়োজন। অবশ্য অধিকাংশ লোকই নিজেদের চারপাশে যে পরিবেশ খুঁজে পায় তা সহানুভূতি ভরা। তারা তরুণ বয়সে প্রচলিত সব কুসংস্কার আত্মভূত করে নেয় এবং চতুর্পাশে যেসব বিশ্বাস এবং রীতিনীতির সন্ধান পায় তার সাথে সহজভাবে মানিয়ে নেয়। কিন্তু বেশ কিছু সংখ্যক লোকের পক্ষে, যাদের কোনও রকম বুদ্ধিবৃত্তিক বা শৈল্পিক দক্ষতা রয়েছে এই ধরনের সব কিছু নির্বিবাদে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কোনও লোক যদি ছোট মফঃস্বল শহরে জন্মান, তবে শৈশব থেকেই তার মানসিক উৎকর্ষের জন্যে যা কিছু প্রয়োজন তার প্রত্যেকটির বিরোধিতার দ্বারা নিজেকে পরিবেষ্টিত দেখবে। যদি তার গভীর কোনও বই পড়তে ইচ্ছা করে, অন্য ছেলেরা তাকে অবজ্ঞা করবে। শিক্ষকেরা বলবেন এই ধরনের বই মনকে বিক্ষিপ্ত করে। যদি তার শিল্পের প্রতি আকর্ষণ দেখে তাহলে সমবয়সীরা তাকে ভাববে পৌরুষহীন আর গুরুজনরা মনে করবে অনৈতিক। যদি সে কোন সম্মানজনক পেশা গ্রহণ করতে চায়, যা তার নিজের সম্প্রদায়ের লোকদের কাছেই অসাধারণ মনে হয় তাহলে তারা বলবে সে নিজেকে সম্প্রদায়ের ওপরে তুলতে চায়। আরও বলবে যা তার বাপ-দাদার জন্যে ভাল তার জন্যেও মঙ্গল। যদি সে তার বাবা মায়ের ধর্মীয় মতবাদ বা রাজনৈতিক আনুগত্য নিয়ে সমালোচনার প্রবণতা দেখায়, তা হলে সে নিজের জন্যে সমূহ বিপদ ডেকে আনবে। এইসব কারণে বিশেষ যোগ্যতার অধিকারী অধিকাংশ তরুণ-তরুণীর বিকাশশীল বয়ঃসন্ধিকালটা খুব দুঃখের সময়। তাদের যেসব সঙ্গী খুব সাধারণ মানের তাদের জন্যে এই সময়টা আনন্দ এবং উপভোগের কারণ হতে পারে, কিন্তু যারা নিজেরাই গুরুত্বপূর্ণ কিছু করতে চায় এবং ঘটনাচক্রে তার যে পরিবেশে তারা জন্মেছে সেখানে বড়দের মধ্যেও পায় না। সমবয়সীদের মধ্যেও পায় না।

এইরকম তরুণ-তরুণীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে তখন তারা মনে হয় মনের সঙ্গী পেয়ে যায় এবং কয়েক বছর আনন্দে কাটায়। যদি তারা ভাগ্যবান হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করার পরেও এমন কাজ পেয়ে যেতে পারে যেখানে মনের সঙ্গী পাওয়া তখনো হয়তো সম্ভব। লন্ডন বা নিউইয়র্কের মতো মহানগরে বাস করছে এমন বুদ্ধিমান ব্যক্তি সাধারণত যাদের সাথে মনের মিল হয় তেমন একদল সঙ্গী পেতে পারে। যেখানে তাদের কোনও লুকোচুরি বা ভণ্ডামির প্রয়োজন তাদের হবে না। কিন্তু কাজের স্বার্থে তারা যদি ছোট কোনও জায়গায় থাকতে বাধ্য হয়, বিশেষভাবে যেখানে সাধারণ লোকের শ্রদ্ধা ধরে রাখার প্রয়োজন হয়, যেমন দরকার হয় চিকিৎসক বা আইনজীবীব, তাহলে তাদের জীবনভর নিজের আসল ধারণা ও বিশ্বাসকে নিত্যদিন সংস্পর্শে আসা অধিকাংশ লোকদের কাছ থেকে অবশ্যই গোপন রাখতে হবে। বিশাল দেশ হওয়ার কারণে, আমেরিকার পক্ষে এটা বিশেষ করে সত্যি। উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিমে অভাবিত সব জায়গার নিঃসঙ্গ লোকদের দেখা মিলবে। যারা বইয়ে এমন সব জায়গার কথা পড়েছে, যেখানে যেতে পারলে তাদের একাকীত্ব ঘুচতে পারে, কিন্তু সেখানে বাস করার সুযোগ তারা পায় না। তারা যেখানে থাকে সেখানে মন খুলে কথা বলার ন্যূনতম সুযোগ পর্যন্ত নেই। যারা ব্লেক ও এমিলি ব্রন্টির মতো উচ্চমার্গের লোক নন, তাদের পক্ষে এমন পরিবেশে প্রকৃত সুখ লাভ করা অসম্ভব। এটি সম্ভব করতে হলে এমন কোনও পথ খুঁজে নিতে হবে, যার সাহায্যে জনমতের পীড়ন হয় কমানো, না হয় এড়ানো যেতে পারে এবং যার দ্বারা বুদ্ধিমান সংখ্যালগুর দল নিজেদের জানতে পারবে এবং পরস্পরের সমাজকে উপভোগ করতে পারবে।

অনেক ক্ষেত্রেই অকারণ ভীরুতা অনাবশ্যকভাবে ঝামেলা বাড়িয়ে দেয়। জনমতকে যারা ভয় করে, জনমত তাদেরই ওপর বেশি অত্যাচার করে, যারা ভয় করে না তাদের কিছুই করে না। যারা কুকুর দেখে ভয় পায় কুকুর তাদের দেখে বেশি ঘেউ ঘেউ করে এবং তাদের কামড়াতে তৎপর হয়। কিন্তু যারা কুকুরকে উপেক্ষা করে তাদের সে কিছু করে না। মানুষের চরিত্রের বৈশিষ্ট্যও অনেকটা এইরকম। যদি তাদের দেখে আপনি ভয় পান তাহলে তারা বুঝবে আপনি তাদের ভাল শিকার, আর আপনি যদি নির্লিপ্ততা দেখান তাহলে তারা নিজেদের ক্ষমতার বিষয়ে সন্দিহান হবে এবং আপনাকে ছেড়ে দেওয়াই ভাল বলে মনে করবে। আমি অবশ্য চরম অবজ্ঞা প্রকাশের কথা চিন্তা করছি না, আপনি যদি রাশিয়ার প্রচলিত মতবাদ কেনসিংটনে ধরে রাখেন অথবা কেনসিংটনে প্রচলিত মতবাদ রাশিয়ায় বসে ধারণ করেন, তবে তার পরিণাম অবশ্যই আপনাকে মেনে নিতে হবে। আমি এরকম চরম অবস্থার কথা ভাবছি না। আমি ভাবছি প্ৰচলিত রীতিনীতি থেকে সামান্য বিচ্যুতি, যেমন যথাযথভাবে পোশাক না পরা কিংবা কোনও গীর্জার সাথে সম্পর্ক না রাখা অথবা বুদ্ধিদীপ্ত বই পড়া থেকে বিরত থাকা। এসব ত্রুটি যদি খেলার ছলে এবং উদাসীনতার কারণে ঘটে, কোনও জেদ থেকে নয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা হলে খুব রক্ষণশীল সমাজেও তা সহ্য করা হবে। ক্রমে সর্বজনস্বীকৃতভাবে পাগলের পদলাভও সম্ভব হয়ে উঠতে পারে এবং অন্যদের ক্ষেত্রে যা সহ্য করা হয় না তার ক্ষেত্রে সে ধরনের কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে। এটি এক বিশেষ ধরনের ভাল প্রকৃতি এবং সৌহার্দ্যের বিষয়। রক্ষণশীল লোকেরা প্রচলিত রীতিনীতির ব্যতিক্রম দেখলে ক্রুদ্ধ হয় প্রধানত এই কারণে যে এটা তাদের কাছে নিজেদের সমালোচনা বলে মনে হয়। চলিত রীতিনীতির অনেক স্খলনকে তারা ক্ষমা করতে পারে যদি দেখে সেই লোক প্রফুল্ল মেজাজে এবং বন্ধুত্বের সাথে নির্বোধতম লোকটিকেও বুঝিয়ে দিতে পারে যে সে তাদের সমালোচনা করবে না।

কিন্তু যাদের পছন্দ এবং মতো দলের লোকদের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়, তাদের ভর্ৎসনা এড়িয়ে চলার এই রীতি অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাদের সহানুভূতিহীনতা তাদের জন্যে অস্বস্তির কারণ হয় এবং বাইরে বড় ধরনের ঝামেলা সামলে নিতে কিংবা এড়াতে পারলেও তাদের মনে কলঙ্কপ্রিয়তা জাগিয়ে তোলে। যেসব লোক নিজের গোষ্ঠীর সাথে রীতিনীতির ব্যাপারে মানিয়ে চলতে পারে না তাদের মনে খোঁচা লাগে এবং অস্বস্তি হয় এবং তাদের বিস্তৃত সরস মনোভাব থাকে না। এই একই লোক যদি আর এক দলে রপ্তানী হয়, যেখানে তার মতকে কেউ অদ্ভুত মনে করবে না, তাহলে মনে হবে যেন তার সম্পূর্ণ চরিত্রই বদলে গেছে। আগে ছিল গম্ভীর, সংকুচিত এবং নিভৃতচারী; এখন প্রফুল্লময় এবং আত্মবিশ্বাসী। আগে ছিল কৌণিকতাযুক্ত, এখন সরল ও মসৃণ, আগে ছিল আত্মকেন্দ্রিক, এখন সামাজিক এবং বহির্মুখী।

সুতরাং যেখানেই সম্ভব, তরুণেরা, যারা নিজেদের পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারছে না, তাদের এমন পেশা বেছে নিতে চেষ্টা করা উচিত, যা তাদের সুযোগ দেবে মনের মতো পরিবেশ পেতে। এতে যদি উপার্জনের দিক থেকে অনেকটা ক্ষতি হয়, তবুও, অনেক সময় এরা জানেই না এরকম সম্ভব। কারণ বিশ্ব সম্পর্কে তাদের জ্ঞান খুবই সীমিত এবং তারা সহজেই মনে করতে পারে তারা বাড়িতে যেসব কুসংস্কারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে তা ছড়িয়ে আছে বিশ্বময়। এ বিষয়ে বয়স্ক লোকেরা তরুণদের অনেক সহায়তা দিতে পারেন, কারণ এতে মানুষ সম্পর্কে বিশদ অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন।

যখন কোনও তরুণ তার পরিবেশে বেমানান হয়, তখন মনস্তাত্ত্বিক গণ্ডগোলই যে তার কারণ এটা অনুমান করা বর্তমান সময়ের মনোবিশ্লেষণ রীতি। আমার মনে হয় এটা সম্পূর্ণরূপে ভুল। ধরা যাক, কোনও তরুণের বাবা-মা বিবর্তনবাদকে মনে করে অগ্রহণযোগ্য মতবাদ। অন্য কিছু নয় শুধুমাত্র বুদ্ধিমত্তাই এই ধরনের ঘটনায় প্রয়োজন হয় তরুণটির সাথে তার বাবা-মার সহানুভূতির বন্ধন ছিন্ন করতে। নিজের পারিপার্শ্বিকতার সাথে মানিয়ে নিতে পারা অবশ্যই দুর্ভাগ্যের। কিন্তু তা এমন দুর্ভাগ্য নয় যে, যে কোনও মূল্যে তাকে এড়াতে হবে। পরিবেশ যেখানে বুদ্ধিহীন, পক্ষপাতমূলক সংস্কারাচ্ছন্ন অথবা নিষ্ঠুর, যেখানে তাকে মেনে নিতে না পারা যোগ্যতারই পরিচয়বাহী। প্রায় প্রত্যেক পরিবেশেই কিছু পরিমাণে হলেও এই বৈশিষ্ট্য রয়েছে। গ্যালিলিও(৩) এবং কেপলারের(৪) ছিল “বিপদজনক মতবাদ” (জাপানে যেমন বলা হয়)। আজকের দিনেও তেমন ব্যক্তি রয়েছেন। এ রকম বরেণ্য ব্যক্তি তাঁদের মতবাদের জন্যে সামাজিক শত্রুতার মুখে পড়বেন যাকে তাদের বিরুদ্ধ মতবাদীরা প্ররোচিত করে। সামাজিক বোধ এই মাত্রায় বেড়ে যাওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। যেটা কামনীয় তা হচ্ছে এই ধরনের শত্রুতা যতটা সম্ভব কমিয়ে ফেলা এবং অকার্যকর করার পথ খুঁজে বের করা।

বর্তমান বিশ্বে এই সমস্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি উদয় হয় তরুণ বয়সে। কোনও ব্যক্তি যদি একবার উপযুক্ত পরিবেশে উপযুক্ত পেশাটি গ্রহণ করতে পারে, তাহলে সে সামাজিক অত্যাচার প্রায়ক্ষেত্রেই এড়িয়ে চলতে পারে। কিন্তু তার যখন বয়স কম এবং যোগ্যতাও পরীক্ষিত হয় নি, তখন তার ভাগ্য সম্পূর্ণ অজ্ঞ লোকের হাতে গিয়ে পড়তে পারে। যারা তাদের অজানা বিষয়ে মতামত দেওয়ারও যোগ্য বলে মনে করে নিজেদের এবং বিশ্ব সম্বন্ধে এত বিপুল অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও তাদের চেয়ে বয়সে অনেক কম এক তরুণ তাদের চেয়ে বেশি জ্ঞানী, এই রকম কোনও ধারণায় নিজেদের চূড়ান্ত অপমানিত মনে করে। অনেকে যারা শেষ পর্যন্ত অজ্ঞতার অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়েছে তাদের এমন কঠিন যুদ্ধ করতে হয়েছে এবং দীর্ঘদিন অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তাদের মন তিক্ত হয়ে উঠেছে এবং তাদের শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। একটি সহজ মতবাদ রয়েছে যে, প্রতিভা তার পথ খুঁজে নেবেই আর এই মতবাদকে বিশ্বাস করে অনেকেই মনে করে তরুণ প্রতিভা নির্যাতিত হলেও তার খুব বেশি ক্ষতি হয় না। এই মতবাদকে স্বীকার করে নেওয়ার তেমন কোনও যুক্তি নেই। খুন জানাজানি হবেই’ অনেকটা এই মতবাদের তুল্য। মনে হয়, আমরা যতগুলি খবর জানতে পারি, তা সবই ধরা পড়ার পর। কিন্তু আমরা জানি না এমন আরো কত খুনের কথা, যাদের খবর আমাদের কানেও আসেনি। এইভাবে যাদের কথা আমরা শুনেছি, সেসব প্রতিভা প্রতিকূল পরিবেশকে জয় করেই দীপ্ত হয়েছেন, কিন্তু তাতে একথা অনুমান করার কোনও কারণ নেই যে, অনেক প্রতিভা মুকুলিতই হতে পারেনি। অধিকন্তু এই কথা প্রতিভাবানদের বেলায় নয়, সাধারণ মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বেলায়ও বলা চলে। কারণ তারাও সমাজের পক্ষে সমভাবে প্রয়োজনীয়। এটা কোনও ভাবে নির্যাতন থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপার নয়। অতিক্ত মন এবং অক্ষতিগ্রস্ত শক্তি নিয়েও বেরিয়ে আসার ব্যাপার। এইসব কারণেই তরুণদের চলার পথ অতি দুর্গম করে তোলা উচিত নয়।

বয়োবৃদ্ধরা তরুণদের সব ইচ্ছাকে সম্মান দেখাবেন এটা অবশ্যই কামনীয়, কিন্তু তরুণরা বয়োবৃদ্ধদের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখাবে, সেটা অবশ্য কামনীয় নয়। এর কারণ খুব সহজ। উভয় ক্ষেত্রেই তা তরুণদের জীবনের ব্যাপার, বয়োবৃদ্ধদের নয়। তরুণরা যখন বৃদ্ধদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করে, যেমন বিধবা বা বিপত্নীক মা-বাবার পুনর্বিবাহে আপত্তি জানায়, তাহলে তারা ততটুকু অন্যায় করে, বড়রা ঠিক ছোটদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে যতটুকু অন্যায় করেন। বড় হোক কিংবা ছোট বিচারশক্তি অর্জন করার বয়সে পৌঁছে গেলে তাদের নিজেদের পছন্দে চলার অধিকার স্বীকার করতে হবে। এমন কী অন্যায় করা হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, তুমি একজন তরুণ, তোমার ইচ্ছা নাট্যমঞ্চে যোগ দেওয়ার; কিন্তু তোমার বাবা-মার এতে আপত্তি, এই কারণে যে, তারা এটাকে অনৈতিক বা নিচুস্তরের সামাজিক কাজ বলে মনে করেন। তারা যতদূর সম্ভব তোমার ওপর চাপ প্রয়োগ করবেন, হয়তো বলবেন তাদের কথা না শুনলে তারা তোমাকে পরিত্যাগ করবেন, বলবেন এমন কাজ করলে তুমি কিছুদিনের ভিতর অনুতাপে দগ্ধ হবে, যতরকম খারাপ হবে সব একে একে তোমাকে বলবেন এবং বোঝাবেন তুমি যা করতে চাও তা করে বহু তরুণের সর্বনাশ হয়েছে। তারা হয়তো ঠিকই মনে করেছেন, তোমার পক্ষে নাট্যমঞ্চ উপযুক্ত নয়। হতে পারে তোমার তেমন অভিনয় দক্ষতা নেই অথবা তোমার কণ্ঠস্বর খুব খারাপ। যদি তাই হয় সে কথা তুমি অল্পদিনের মধ্যেই জানতে পারবে থিয়েটার শিল্পীদের কাছ থেকে। তারপরও অন্য একটা পেশা নির্বাচন করার যথেষ্ট সময় তুমি পাবে । বাবা-মার যুক্তি তোমার চেষ্টা থেকে দূরে থাকার যথেষ্ট কারণ হতে পারে না। তাদের এত সব যুক্তি সত্ত্বেও তুমি নিজের ইচ্ছায় দৃঢ় থাক, তাহলে তারা অল্পদিনের মধ্যেই শান্ত হয়ে যাবেন। এমন কী, তোমার বা তাদের অনুমানের অনেক আগেই। অন্যদিক যদি পেশাদারদের অভিজ্ঞ মতামত তোমাকে নিরুৎসাহিত করে তো আলাদা ব্যাপার। কারণ পেশাদারদের অভিমত সূচনাকারীদের মেনে নেওয়া উচিত।

আমার মনে হয়, সাধারণভাবে, বিশেষজ্ঞদের মতামত না ধরে যে কোনও বিষয়ে ছোট বা বড় যাই হোক, অন্যদের মতামতের ওপর একটু বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। জনমতকে ততটাই সম্মান জানানো উচিত যতটা নিয়মসংগত, যা অনাহার এড়ানো বা কারাগারের বাইরে থাকার জন্যে প্রয়োজনীয়। কিন্তু তা অতিক্রম করে গেলে এটা হবে অহেতুক নির্যাতনের কাছে মাথা নত করা এবং সুখের সব রকম পথে অন্তরায় সৃষ্টি করা। খরচের ব্যাপার ধরা যেতে পারে। অনেক লোককে দেখা যায়, তারা নিজেদের পছন্দ যা অনুমোদন করেন, তা থেকে ভিন্ন বিষয়ে অর্থ খরচ করেন, কারণ তাদের ধারণা ভাল একটা গাড়ি থাকলে অথবা সুন্দর নৈশভোজ খাওয়াবার ক্ষমতা থাকলেই তারা প্রতিবেশীদের সম্মান অর্জন করতে পারবেন। বাস্তব ব্যাপার হল, যে কোনও ব্যক্তি, যার গাড়ি কেনার ক্ষমতা আছে অথচ মনের দিক থেকে দেশভ্রমণ বা একটি ভাল গ্রন্থাগার পছন্দ করেন, শেষ পর্যন্ত অন্যেরা যেভাবে চলতে চান সেভাবে না চলেন, তাহলে অনেক বেশি মর্যাদা পাবেন। অবশ্য জোর করে জনমতকে অস্বীকার করার মধ্যে কোনও কৃতিত্ত্ব নেই, সেটাও জনমতের আধিপত্য মেনে নেওয়ার মত, যদিও একটু ঘুরপথে। কিন্তু যদি আন্তরিকভাবে তার প্রতি নিস্পৃহ থাকা যায় তা শক্তির পরিচায়ক এবং সুখের উৎস হয়ে উঠবে। যে সমাজে নারীপুরুষ সকলেই একই ধরনের আচরণ করে, তার চেয়ে যে সমাজে তারা প্রচলিত প্রথার কাছে খুব বেশি মাথা নোয়ায় না, সেই সমাজ অনেক বেশি মনোহর। যেখানে প্রতিটি মানুষের চরিত্র ব্যক্তিগতভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়, সেখানেই মানুষের স্বভাবের বৈচিত্র্য রক্ষিত হয় এবং নতুন মানুষের সাথে দেখা হওয়াটা উপকারী হয়। কারণ তারা যাদের সাথে একবার দেখা হয়েছে তাদের পদমর্যাদা তাদের জন্মের ওপর নির্ভরশীল, তারা নিজের খেয়ালখুশী মতো ব্যবহারের সুযোগ পায়। আধুনিক বিশ্বে আমরা সামাজিক স্বাধীনতার উৎসটি হারাতে চলেছি। সুতরাং সবকিছু একাকার হয়ে যাওয়ার বিপদ সম্পর্কে সুচিন্তিত ধারণা কামনীয়। আমি বলতে চাই না মানুষ ইচ্ছা করে খামখেয়ালি হয়ে উঠুক, কারণ তা রীতি মেনে চলার মতোই অপ্রীতিকর । আমি বলতে চাই মানুষ স্বাভাবিক হোক এবং তাদের স্বাধীন ইচ্ছামূলক পছন্দ অনুসরণ করে চলুক যতক্ষণ পর্যন্ত তা নিশ্চিতভাবে অভিজাতদের মতো না হয়। বর্তমান বিশ্বে দ্রুত চলাচল ব্যবস্থার সুযোগে মানুষ আর আগের মতো নিকটতম ভৌগোলিক প্রতিবেশীদের ওপর নির্ভরশীল নয়। যাদের গাড়ি আছে তারা বিশ মাইলের ভিতর বাস করে এমন যে কোনও লোককে প্রতিবেশি মনে করতে পারেন। তাই তাদের সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষমতাও আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। যে কোন জনাকীর্ণ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে যে মানুষ বিশ মাইলের মধ্যে মনের সঙ্গী খুঁজে পায় না, তাকে নিশ্চিতভাবেই হতভাগ্য বলা যায়। নিকট প্রতিবেশীদের সাথে পরিচিত হওয়া উচিত, এই ধারণা ঘনবসতিপূর্ণ নগরে আর বেঁচে নেই, কিন্তু ছোট শহরে এবং গ্রামাঞ্চলে এখনো রয়ে গেছে। সামাজিকতার জন্যে নিকটতম প্রতিবেশীদের ওপর নির্ভরশীলতা যখন অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে, তখন এই ধারণাও অর্থহীন হয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র কাছে থাকা লোকের মধ্যে সঙ্গী খুঁজে নেওয়ার পরিবর্তে মনের মতো সঙ্গী নির্বাচন করার সুবিধা বেড়ে গেছে। সমজাতীয় পছন্দ ও সমমতের মানুষের সঙ্গলাভ সুখ বাড়িয়ে তোলে। এই পথেই সামাজিক সম্পর্ক নানাভাবে গড়ে উঠবে এটা আশা করা যায় এবং এই পথেই যে নিঃসঙ্গতা এখনো বহু মানুষকে বেদনায় ভরে তুলছে তা কমে যাবে বলে আশা করা যায় এবং তা প্রায় শূন্যেই অন্তর্লীন হবে। এতে সন্দেহাতীতভাবে তাদের সুখ বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত পথে চলা লোকদের কাছে পেয়ে তারা যে বর্বর আনন্দ উপভোগ করে তার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যাবে। আমি মনে করি না এটা এমন কোনও আনন্দ নয় যাকে রক্ষা করার জন্যে কোনওরূপ ভাবনার প্রয়োজন আছে।

অন্যান্য ভয়ের মতো জনমতের মতো ভয় যন্ত্রণাদায়ক এবং বিনাশের পথে বাধাস্বরূপ। এ রকম ভয় প্রবল হলে কোনও বড় কিছু করাই সম্ভব নয় এবং যে চিত্তস্বাধীনতায় আসল সুখ পাওয়া যায়, তা অসম্ভব হয়ে ওঠে। কারণ আমাদের স্বতোৎসারিত চিত্তবৃত্তি থেকে যে জীবনধারা গড়ে ওঠে তাই হল সুখের মূল উৎস। আমাদের প্রতিবেশী বা আপনজনদের কাছ থেকে পাওয়া আকস্মিক কোনও পছন্দ বা ইচ্ছা থেকে আহরিত জীবনধারা নয়। নিকটতম প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ভয় নানা কারণে আগের তুলনায় কমে গেছে সেটা ঠিক, কিন্তু নতুন এক ভয়ের কারণ দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে সংবাদপত্র কী বলবে সেই মতামত নিয়ে ভয়। মধ্যযুগের ডাইনি-শিকারের মতো ভয়ংকর ভয়ের ঘটনার সাথেই শুধু এর তুলনা করা যায়। যখন কোনও সংবাদপত্র কোনও নিরীহ লোককে অন্যের দোষের ভারবাহী ব্যক্তি হিসাবে বেছে নেয় তার পরিণাম হয় ভয়ংকর। সৌভাগ্যক্রমে অধিকাংশ মানুষ অখ্যাত হওয়ার জন্যে এই পরিণাম এড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু প্রচার রীতি যতই আরো নিখুঁত হতে থাকবে, এই ব্যাপারে ততই সামাজিক নির্যাতনের এই অভিনব কৌশলটির সাহায্যে আরও বেশি বিপদের কারণ হয়ে উঠবে। যিনি একবার এর হাতে বলি হয়েছেন, তার পক্ষে কোনভাবেই এই গুরুতর বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া চলে না। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার স্বপক্ষে যত কথাই বলা হোক, আমি মনে করি, বর্তমান মানহানির আইনে যেভাবে রয়েছে সেই সীমারেখা তার চেয়ে বেশি স্পষ্ট করে টানা উচিত এবং নিরীহ মানুষদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে এমন যে কোনও বিষয় সংবাদপত্রে প্রকাশ নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। এমন কী তারা এমন কিছু যদি করে থাকে বা বলে থাকে, যা বিদ্বেষপূর্ণভাবে প্রকাশ করলে তাদের জনপ্রিয়তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তারও প্রকাশ নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। এই অন্যায়ের একমাত্র চূড়ান্ত প্রতিকার হচ্ছে জনগণের দিক থেকে আরও বেশি সহনশীল হতে অভ্যস্ত হওয়া। সুখের সন্ধানে সহনশীলতা বৃদ্ধির শ্রেষ্ঠ পথ হচ্ছে সুখী মানুষের সংখ্যা বাড়ানো যাতে তারা তাদের সহচরদের বেদনাহত করাকেই জীবনের প্রধান সুখ বলে মনে না করে।

———-
১. ফ্রন্টি ভগ্নিরা, Bronte Sisters। ভিক্টোরীয় যুগের ব্ৰন্টি ভগ্নিরা হলেন ঔপন্যাসিক এমিলি ব্ৰন্টি (১৮১৮-৪৮), শার্লেট ব্ৰন্টি (১৮২৬-৫৫) এবং এ্যান ব্ৰন্টি (১৯২০-৪৯)। স্বল্প জীবনের অধিকারিণী এই তিন ভগ্নির উপন্যাসে বিক্ষুব্ধ, নির্যাতিত আশার বিদ্রোহ ঘোষণা এবং নারীসমাজের পূর্ণতর জীবনের অধিকারের প্রশ্ন প্রখরভাবে ফুটে উঠেছে।

২. ব্লেক, William Blake, (১৭৫৭-১৮২৭)। ইংরেজ কবি ও চিত্রকর, যোগ্য স্বীকৃতি পেয়েছেন মৃত্যুর পর।

৩. গ্যালিলিও, Galileo, (১৫৬৪-১৬৪২)। ইতালির বিখ্যাত গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তাঁর বিপজ্জনক মতবাদ হল, ‘Eppar si move’– পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। এই মতবাদ বাইবেল-বিরোধী। সেজন্যে বৃদ্ধবয়সে তাঁকে নির্যাতিত হতে হয়, ভোগ করতে হয় কারাদণ্ড। ১৯৯৪ সালে তার মৃত্যুর ৩৫২ বছর পর ভ্যাটিকান চার্চ তাঁর মতবাদ মেনে নেয়।

৪. কেপলার, Johaunes Kepler (১৫৭১-১৬৩০), জার্মান গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং প্রকৃতি-দার্শনিক।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *