১১. আমাদের যৌনতামূলক নীতিসমূহ

১১. আমাদের যৌনতামূলক নীতিসমূহ

(প্রথম প্রকাশ ১৯৩৯ সালে) মানবজীবনের অন্যান্য যে-কোন উপাদানের চেয়ে যৌনতাকে বেশির ভাগ মানুষ অযৌক্তিকভাবে দেখে থাকে। গণহত্যা, মহামারী, উন্মত্ততা, সোনা, মূল্যবান রত্ন– এইসব বস্তু, বস্তুত যৌনভাবাবেগমূলক আশা ও ভয়ের বিষয়–যা এখনও চলছে। অতীতেও চলেছিল পৌরাণিক কাহিনী বা ঘটনার মধ্য দিয়ে অথবা কোন কুয়াশাচ্ছন্ন যাদুর মধ্য দিয়ে। কিন্তু এখানে সেখানে কিছু জায়গা ছাড়া সব জায়গায় যুক্তির সূর্য উঠে সেই কুয়াশাকে দূর করে দিল। যৌনতার অঞ্চলে যে ঘন মেঘ জমে ছিল তা স্বাভাবিক ছিল কেননা যৌনতা মানবজীবনের সব চেয়ে ভাব-বিহ্বল অংশ।

যদিও বর্তমানে এই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে আসছে যে আধুনিক জগতের অবস্থা এমন ভাবে কাজ করছে যাতে যৌনতার প্রতি আচরণ ও মনোভাব পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কি ধরণের পরিবর্তন বা পরিবর্তনসমূহ সে ঘটাবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারবে না। কিন্তু এটা লক্ষ্য করা সম্ভব যে এখন কিছু শক্তি বা বল এই বিষয়ে কাজ করছে এবং এর ফলে সামাজিক কাঠামোতে কি ধরণের ঘটনা ঘটবে তা নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব।

মানব-প্রকৃতি যতদূর জানা যায় তার ভিত্তিতে বলা যায় এমন কোন সমাজ গঠন একেবারে অসম্ভব যেখানে বিবাহের বাইরে যৌন মিলন ঘটবে না। এর জন্য যে-সব শর্ত একান্ত প্রয়োজন তা বর্তমান জীবনে কোনভাবেই মেনে চলা সম্ভব নয়। কেন সম্ভব নয় এবং সেই শর্তসমূহই বা কি–আসুন সে সম্পর্কে আমরা আলোচনা করি।

যে অঞ্চলে কতিপয় প্রতিবেশী বসবাস করে সেখানে একবিবাহ প্রথা কার্যকরী করে তোলার ক্ষেত্রে বিরাট প্রভাব সৃষ্টি করা গেলেও তা অচলতার সৃষ্টি করে। যদি কোন এক ব্যক্তি কখনও বাড়ি থেকে না বেরোয় এবং নিজের স্ত্রী ছাড়া কখনও অন্য কোন মহিলাকে দেখতে না পায়, তাহলে তার পক্ষে বিশ্বস্ত হওয়াটা অনেক সোজা। কিন্তু যদি সে তার স্ত্রী ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করে অথবা জনবহুল কোন শহরতলীতে বসবাস করে তা হলে সমস্যাটি সমানুপাতিকভাবে সমস্যাসঙ্কুল হয়ে দাঁড়াবে। একবিবাহের পক্ষে সব থেকে সাহায্যকারী বিষয়টি হল কুসংস্কার। যারা বিশ্বাস করে যে ‘পাপ’ অনন্ত শাস্তির পথ সৃষ্টি করে, আশা করা যায় যে তারা পাপকে এড়িয়ে চলবে এবং কিছুদূর পর্যন্ত তা এড়িয়ে চলবার চেষ্টা করবে, কিন্তু যতটা আশা করা যেতে পারে ততটা এড়িয়ে চলতে পারবে না। জনতার সমর্থন মানেই পুণ্য। যেমন কৃষিজীবী সমাজ, যেখানে একজন মানুষ যা যা করে তা সবই তার প্রতিবেশীরা জানতে পারে, সেক্ষেত্রে যা-কিছু প্রথার দিক থেকে নিন্দনীয় তাকে এড়িয়ে চলার শক্তিশালী কারণসমূহ তার থাকে। কিন্তু সঠিক আচরণের জন্য সমস্ত কারণসমূহ আগে যতটা প্রভাবশালী ছিল ততটা প্রভাবশালী আর রইল না। বিচ্ছিন্নভাবে অতি অল্প মানুষের মধ্যে ছাড়া সমস্ত মানুষের মধ্যে থেকে নরকের আগুনের প্রতি বিশ্বাস চলে গেল এবং একটা বড় শহরে কেউই জানে না তার প্রতিবেশী কি করে। এইজন্য আধুনিক শিল্পবাদের উত্থানের আগে তারা একবিবাহের প্রতি যতটা অনুরাগী ছিল আর যে তা রইল না তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই।

যদিও বলা যেতে পারে নৈতিক নীতিসমূহের প্রতি সজাগ থাকার ক্ষেত্রে ব্যর্থ জনতার সংখ্যা বাড়তে থাকল বলেই আমাদের জীবনের নৈতিক মানসমূহ বদলে গেল। আমাদের বলা হয়ে থাকে যে যারা পাপ করে তাদের জানা উচিত বা ভাবা উচিত যে তারা পাপ করে এবং আমাদের এও বলা হয়ে থাকে যে নৈতিক উপদেশ বা আইনসমূহ মেনে জীবনে চলাটা খুবই দুষ্কর। উত্তরে আমি বলব যে ভালো বা মন্দের প্রশ্নটা নির্ভর করবে মানুষ সুখী হতে পারছে কি পারছে না তার উপর। বহু প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সেই সমস্ত জিনিস বিশ্বাস করে থাকে যা তাদের শৈশবে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল এবং যখনই তাদের জীবন রবিবারের প্রার্থনা-সভায় যাবার সময় করে উঠতে পারে না বা তার সঙ্গে সঙ্গতিসম্পন্ন হতে পারে না তখনই তারা তাদের হৃদয়ে নিজেদেরকে পাপী বলে অনুভব করে থাকে। ক্ষতিটা কেবল আত্মজ্ঞান ও বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ও আত্মজ্ঞানবিহীন ও শিশুসুলভ ব্যক্তিত্বের মধ্যেই একটা ব্যবধান সৃষ্টি করে না, উপরন্তু প্রথাগত নৈতিকতার ভালো দিকগুলো অচল দিকগুলোর জন্য দুর্নাম কুড়োয় এবং এর ফলে মনে করা হয় যে যদি ব্যাভিচারিতা ক্ষমার যোগ্য হয় তবে আলস্য, অসততা, দয়ামায়াহীনতাও ক্ষমার যোগ্য। এই ভয়ঙ্কর দিকটি সেই ব্যবস্থা থেকে অবিচ্ছেদ্য যে ব্যবস্থা যুবকদের শিক্ষা দিয়ে থাকে এবং সেই সব যুবককে পরিণত বয়সে বহুসংখ্যক বিশ্বাসকে নিশ্চিতভাবে পরিত্যাগ করতে হয়। তাই সামাজিক অর্থনৈতিক বিপ্লবের প্রক্রিয়ায় তারা ভালোগুলোকেও মন্দের সঙ্গে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।

ঈর্ষামূলক ভাবাবেগ ও বহুবিবাহের প্রতি আগ্রহমূলক ভাবাবেগের দ্বন্দ্ব থেকে কাজ চালানো যায় এমন যৌনমূলক নীতিতে পৌঁছনোর বিষয়ে সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। প্রবৃত্তিগত দিক থেকে দেখতে গেলে ঈর্ষা নিঃসন্দেহে খুবই মামুলী ব্যাপার। যার স্ত্রী অবিশ্বাসিনী, সমাজে সেই মানুষটিকে হাস্যাস্পদ হবার যোগ্য বিষয় হিসেবে ভেবে নেওয়া হয়। এর ফলে যেখানেই তার স্ত্রী সম্পর্কিত সেখানেই সে ঈর্ষান্বিত, এমনকি স্ত্রী সম্পর্কে কোন আকর্ষণ না থাকলেও সে এইরকম ঈর্ষা বোধ করে থাকে। ঈর্ষা সম্পত্তি সম্পর্কীয় জ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত, তাই যেখানে এই সম্পত্তির বিষয়টি যত কম সেখানে ঈর্ষা ব্যাপারটিও তত কম। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী বিশ্বস্ততাকে যেভাবে আশা করা হয়ে থাকে তা যদি না করা হয় তবে ঈর্ষা ব্যাপারটিও হ্রাস পাবে, যদিও মানুষ যতটা মনে করে তার থেকেও ঈর্ষাকে অনেক কমিয়ে দেওয়া সম্ভব। যতদিন পিতাদের অধিকার ও কর্তব্যসমূহ বজায় থাকে ততদিন ঈর্ষার একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকে। যতদিন এই ব্যাপারটি বজায় থাকবে ততদিন পুরুষমানুষ এই বিষয়ে অবশ্যই নিশ্চয়তা চাইবে যে তারা তাদের স্ত্রীদের সন্তানের পিতা। যদি মহিলাদের যৌন-স্বাধীনতা পালনের অধিকার দেওয়া হয়, তাহলে পিতাদের গুরুত্ব ম্লান হয়ে যায়, ফলে স্ত্রী আর বেশি দিন তার স্বামীর সমর্থন আশা করতে পারে না। যথাসময়ে এই ধরণের ঘটনাই ঘটবে। কিন্তু সেটা এক মৌলিক সামাজিক পরিবর্তনের ফলেই ঘটবে এবং ভালো বা মন্দ যে-কোন কারণেই হক এর ফল অনিশ্চিত।

ইতিমধ্যে, যদি বিবাহ ও পিতৃত্বকে সামাজিক প্রথা হিসেবে টিকে থাকতে হয় তবে বিশৃঙ্খলতা ও সারা জীবন ধরে একবিবাহের মধ্যে একটি বোঝাঁপড়ামূলক স্থান একান্তই প্রয়োজন। কিন্তু কোন একটি নির্দিষ্ট সময়ে সব থেকে সঠিক বোঝাঁপড়াটা কি হবে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ নয়, কেননা সময় ও কালের পরিপ্রেক্ষিতে জনসংখ্যা ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিসমূহের বিশ্বাসযোগ্যতার উপর সিদ্ধান্ত নেবার বিষয়টি নির্ভর করে। স্পষ্টতার উপর নির্ভর করেই কিছু বলা যেতে পারে।

সর্বপ্রথমে শারীরবিদ্যাগত ও শিক্ষাগত উভয় দিক দিয়েই এটি কখনই কাম্য নয় যে কুড়ি বছরের আগেই মহিলাদের বাচ্চা-কাচ্চা হবে। এইজন্য আমাদের নীতিসমূহ এমন হওয়া উচিত যাতে এই ধরণের ঘটনা একদম না ঘটে।

দ্বিতীয়ত, পূর্ব যৌন অভিজ্ঞতা ছাড়া, পুরুষ কি মহিলার দৈহিক আকর্ষণ ও বিবাহকে সফল করে তোলবার জন্য যে সহানুভূতির একান্ত প্রয়োজন তা বুঝতে সমর্থন হবে এরকম আশা করা যায় না। অধিকন্তু নিয়ম অনুযায়ী অর্থনৈতিক কারণসমূহ পুরুষকে বিবাহ রোধ করতে বাধ্য করে এবং এটাও আশা করা যায় না যে তারা কুড়ি থেকে তিরিশ বছর বয়স পর্যন্ত কুমার থেকে যাবে। শারীরবিদ্যাগত দিক থেকেও তারা এরকম করবে তা আশা করা যায় না, এর থেকে এটা ভালো যদি তাদের নিজেদের ক্লাসের মেয়েদের সঙ্গে তাদের অস্থায়ী সম্পর্ক থাকে এবং সেই সম্পর্ক কোনভাবেই পেশাগত হওয়া উচিত নয়, কেননা সেই সম্পর্কের উদ্দেশ্য টাকা নয় স্নেহ। এই উভয় কারণে যুবক অবিবাহিত মানুষের এই বিষয়ে যথাযোগ্য স্বাধীনতা থাকা উচিত যা শিশুদের বেলায় এড়িয়ে চলা দরকার।

তৃতীয়ত, বিবাহ-বিচ্ছেদ কোন পক্ষকেই দোষারোপ না করে করা সম্ভব এবং কোনভাবেই বিষয়টিকে ঘৃণার চোখে দেখা উচিত নয়। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের যে কোন কারুর ইচ্ছায় একটি বন্ধ্যা বা শিশুহীন বিবাহিত জীবনের সমাপ্তি টানা যায় এবং পারস্পরিক বোঝাঁপড়ার মধ্যে দিয়ে যে-কোন বিবাহের সমাপ্তি টানা যায় এবং পারস্পরিক বোঝাঁপড়ার মধ্যে দিয়ে যে-কোন বিবাহের সমাপ্তি হওয়া দরকার– যদি প্রয়োজন হয় তবে এর জন্য এক বছরের নোটিশ উভয় পক্ষ থেকেই দেওয়া যেতে পারে। যদিও বিবাহ-বিচ্ছেদ ব্যাপারটি অন্যান্য কারণেও ঘটা সম্ভব যেমন পাগলামি, মানসিক বিষণ্ণতা, নিষ্ঠুরতা এবং এরকম আরও কারণে, কিন্তু পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমে করাটাই স্বাভাবিক কারণ।

অর্থনৈতিক দোষ থেকে যৌনতাকে মুক্ত করতে সম্ভবপর সব কাজই করা উচিত। বর্তমানে স্ত্রীরা পতিতাদের মতোই তাদের যৌন সৌন্দর্যকে বিকিয়ে বাঁচে, এমনকি অস্থায়ী স্বাধীন সম্পর্কের ক্ষেত্রেও পুরুষ উভয়পক্ষের খরচ চালাবে এটাই আশা করা হয়ে থাকে। এর ফলে যে ঘটনাটি ঘটে তা হল টাকা ও যৌনতার মধ্যে একটি হীন। সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং এইরকম ক্ষেত্রে মহিলাদের উদ্দেশ্যের মধ্যে কোনরকম দয়ামায়ামূলক জায়গা থাকে না। যৌনতা চার্চের দ্বারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হলেও কখনও তা পেশা হওয়া উচিত নয়। ছেলেমেয়ে দেখাশুনো করা, ঘরদোর সামলানো, রান্নাবান্না করা ইত্যাদির জন্য মহিলাদের বেতন দেওয়াটা উচিত, কিন্তু কেবলমাত্র পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক রাখার জন্য টাকা নেওয়াটা ঠিক নয়। কোন মহিলা একবার যখন ভালোবেসেছে বা কোন পুরুষের ভালোবাসা পেয়েছে তখন দুজনের কারুর দিক থেকে তা থেমে গেলে কেবলমাত্র টাকার অনুদানের উপর নির্ভর করে তার জীবন চিরদিন চলতে পারে না। একজন মহিলা অবশ্যই পুরুষের মতোই তার জীবিকা অর্জনের জন্য কর্ম করবে এবং একজন অলস স্ত্রী আবশ্যিকভাবে আর সম্মানের যোগ্য থেকে না।

(২)

বর্তমান যৌন আচরণের গৃহীত নীতির উদ্ভবের মধ্যে খুবই স্বতন্ত্রভাবে দুটি আদিম ভাবাবেগ অংশগ্রহণ করে থাকে। এদের মধ্যে একটি হল বিনয় আর অপরটি হল ঈর্ষা। যে-কোন আকারে ও যে-কোন মাত্রায় বিনয় মানবজাতির মধ্যে প্রায় একটি চিরন্তন বিষয় এবং এটি এমন একটি ধর্মীয় মানা-না-মানার পরিমণ্ডল সৃষ্টি করে যাকে নির্দিষ্ট কিছু আকার ও শিষ্টাচারবিধি অনুযায়ী অবশ্যই ভাঙতে হবে অথবা কিছু স্বীকৃত ভদ্র-আদব কায়দার সঙ্গে সঙ্গতি সম্পন্ন হতে হবে। না সব কিছু দেখা যায়, না সব ঘটনাকে উল্লেখ করা যায়। এটি ভিক্টোরীয় যুগের আবিষ্কার বলে কিছু আধুনিক মানুষ মনে করেন বটে, তবে তা নয়। বিপরীতভাবে বলতে গেলে, নৃতত্ত্ববিদরা প্রাচীন বর্বরদের মধ্যে বিনয়ের পরাকাষ্ঠাকে বিশদ আকারে লক্ষ্য করেছেন। মানব-চরিত্রের গভীর মূলে অশ্লীলতার কল্পনা আছে। আমরা এর বিরুদ্ধে যেতে পারি বিপ্লব-প্রীতির মধ্য দিয়ে অথবা বৈজ্ঞানিক উৎসাহের দ্বারা, কিংবা বায়রনের মতো এটাকে খারাপ বা বাজে বলে ভাবার ইচ্ছার দ্বারা, কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও আমরা আমাদের স্বাভাবিক ভাবাবেগ থেকে তাকে কখনই মুছে ফেলতে পারি না। কোন একটি গোষ্ঠীতে নিঃসন্দেহে কোনটি কুৎসিত বলে নির্ধারণ করা হবে তা নির্ণয় করে সেই গোষ্ঠীর রীতির উপর। কিন্তু এমন কিছু রীতিনীতি থাকে যেগুলো মানব-প্রকৃতির উৎসের সঙ্গে চরমভাবে জড়িত, তাই সেগুলোকে শুধুমাত্র রীতি বলে ছেড়ে দিলেই হবে না। প্রায় সমস্ত সমাজেই যৌনতা উদ্রেককারী অশ্লীল গ্রন্থ ও যৌন আবেদনের জন্য শরীর প্রদর্শন ব্যাপারটিকে এক ধরণের অপরাধ বলে মনে করা হয়, কিন্তু একমাত্র তখনই ব্যাপারটিকে ছেড়ে দেওয়া হয় যখন তা ধর্মীয় উৎসবের আকার ধারণ করে, যা প্রায়শই সমস্ত সমাজে ঘটে থাকে।

কৃচ্ছ্রতাবাদ– বিনয়ের সঙ্গে যার মনস্তাত্ত্বিক সংযোগ থাকলে থাকতেও পারে আবার না-ও পারে– এমন একটি ভাবাবেগ যা সভ্যতার একটি বিশেষ স্তরে পৌঁছবার পরেই হয়তো উখিত হয়েছে এবং তার পরে তা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ওল্ড টেষ্টামেন্ট বা পুরোনো বাইবেলের গ্রন্থগুলোতে এই বিষয়টিকে দেখা যায়নি। কিন্তু পরবর্তীকালে অ্যাপোক্রিফা ও নব্য বাইবেল প্রভৃতি গ্রন্থে তা দেখা যায়। একইভাবে গ্রীসেও পুরোনো যুগে বিষয়টিকে খুব কমই দেখা গেছে, কিন্তু যত দিন গেছে তত তা বেড়ে উঠেছে। ভারতবর্ষে খুব প্রাচীন যুগে বিষয়টি গড়ে উঠেছিল এবং তা খুবই তীব্রতা অর্জন করেছিল। আমি বিষয়টির উৎস সম্পর্কে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করতে আগ্রহী নই কিন্তু বিষয়টি যে বেশিরভাগ সভ্য জাতির মধ্যে একটি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবাবেগ রূপে কিছুটা জায়গা দখল করে নিতে পেরেছে সে সম্পর্কে আমি নিঃসন্দেহ। বিনয় ব্যাপারটির ধরন বোঝা যায় যখন আমরা কোন সম্মানিত ব্যক্তি, বিশেষ করে যে ব্যক্তি ধার্মিক পবিত্রতার গুণে গুণান্বিত, তাকে কোন প্রেমের খেলার সঙ্গে যুক্ত ভাবতে অনিচ্ছুক হই, কেননা যে-কোন মর্যাদার উচ্চতম মাত্রার ক্ষেত্রে বিষয়টি কখনই সুসংগত নয়। রক্তমাংসের দাসত্বের থেকে আত্মাকে মুক্ত করার ইচ্ছা জগতের বহু মহান ধর্মকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং আধুনিক বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে এখনো তা একটা শক্তিশালী জায়গা দখল করে রেখেছে।

কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে ঈর্ষা বিষয়টি যৌনতামূলক নৈতিকতার সম্পর্কে একমাত্র প্রভাবশালী কারণ। ঈর্ষা প্রবৃত্তিগত ভাবেই ক্রোধের উদ্রেক করে এবং ক্রোধ যুক্তিসংগত কারণেই নৈতিক অসন্তুষ্টির সৃষ্টি করে। সভ্যতার বিবর্তনের কোন একটি প্রাচীন স্তরে পুরুষ জাতির মধ্যে পিতৃত্বকে নিশ্চিত করবার আকাক্ষার মধ্য দিয়ে পুরোপুরিভাবে প্রবৃত্তিগত এই উদ্দেশ্যে বা গতি সঞ্চারক বিষয়টি শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। এই বিষয়ে নিশ্চয়তা ছাড়া পিতৃতান্ত্রিক পরিবার গড়ে ওঠা অসম্ভব ছিল এবং পিতৃত্ব তার সমস্ত রকমের অর্থনৈতিক দায়দায়িত্ব পালন করেও কখনও সামাজিক প্রথাসমূহের ভিত্তিস্বরূপ হয়ে উঠতে পারত না। তদনুযায়ী কোন মানুষের স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তা সামান্যও দূষণীয় নয়। ব্যভিচারীকে নিন্দা করার জন্য সব থেকে বড় বাস্তব কারণটি হল যে সে বিহ্বলতা বা গোলমালের সৃষ্টি করে এবং রক্তপাতও ঘটায়। স্বামীর অধিকারসমূহকে অসম্মমান করার জন্য বিরাট যুদ্ধের উদাহরণ আমরা দেখেছি ট্রয়কে দখল করার মধ্যে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের অপমানও এ ধরণের ঘটনা ঘটাত, তবে তা নিতান্তই অল্প। সেই সময় স্ত্রীদের অধিকার বলতে কোন কিছুই ছিল না এবং স্ত্রীদের প্রতি স্বামীদের কোন কর্তব্যই থাকত না, যদিও এক স্বামী অপর স্বামীর সম্পত্তিকে সম্মান করার কর্তব্য পালন করত।

যে নৈতিক আদর্শের উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা মনোভাব সম্পর্কে আমরা এতক্ষণ ধরে আলোচনা করছি তার উপর ভিত্তি করে পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের পুরোনো ব্যবস্থা বলতে গেলে সাফল্যই পেয়েছিল। সেখানে দমিয়ে রাখার ক্ষমতা পুরুষ মানুষের হাতেই ছিল তাই তাদের হাতে ছিল অপর্যাপ্ত স্বাধীনতা। অন্যদিকে নারী, যারা ছিল নির্যাতিত, তারা এমন দাসত্বের বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল যে তাদের অসুখী মনোভাব কোনরকম আমলই পেত না। বর্তমান জগতে পুরুষের সঙ্গে সমতার যে দাবি নারী করেছে তা এক প্রয়োজনীয় নতুন ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে। এই সমতা দু’ভাবে নিশ্চিত করা যায় হয়– পুরুষমানুষ একবিবাহ প্রথায় কঠোরভাবে আবদ্ধ হ’ক যা তারা অতীতে নারীর উপর জোর করে চাপিয়ে দিত অথবা পুরুষের সঙ্গে সমভাবে নারীকেও বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ঐতিহ্যময় নৈতিক আদর্শের বেড়াজাল থেকে মুক্তি দেওয়া হ’ক। মহিলাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদের বেশিরভাগ অগ্রদূতরা প্রথম পথটিকেই বেছে নিয়েছিলেন। গীর্জাও এই পথটিকে সঠিক পথ হিসেবে ধরে নিয়েছে কিন্তু দ্বিতীয় পথটি অনেক বেশি মানুষ কার্যকর পথ হিসেবে গ্রহণ করেছে, যদিও তত্ত্বগত দিক থেকে তাদের বেশিরভাগ অংশ নিজেদের আচরণ ন্যায়সংগত কিনা সে বিষয়ে সন্দিহান এবং যারা এটা বুঝতে পেরেছে যে কিছু নতুন নৈতিক নীতির প্রয়োজন তারা সেই নীতির উপদেশ বা পথ কি হওয়া উচিত তা নিয়ে মুস্কিলে পড়েছে।

অভিনবত্বের অন্য আর একটি উৎস আছে এবং তা হল বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাবের ফলে দুর্বল হয়ে যাওয়া যৌন জ্ঞান সম্পর্কে ধর্মীয় নিষেধসমূহ। এটা বুঝতেই হয়েছে যে রোগের মতো বিভিন্ন ধরণের অনিষ্টকর ঘটনার সঙ্গে ততদিন কার্যকরভাবে এঁটে ওঠা যাবে না যতদিন না এ বিষয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি খোলাখুলিভাবে বলা যাবে এবং এটা দেখা যাবে যে যৌনভাব ও অজ্ঞতা ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারে অনেক বেশি ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করবে। সমাজবিদ্যা ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ মনোযোগী ছাত্রদের যৌন ব্যাপারে নীরব না থাকার পরামর্শদান করে। অনেক বাস্তববাদী শিক্ষাবিদ বাচ্চাদের সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা থেকে ওই একই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে। মানব-আচরণ সম্পর্কে যাদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে তাদের পক্ষে কোন কার্যকে ‘পাপ’ বলে চিহ্নিত করাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তারা মনে করেন যা আমরা করি তার উৎস আমাদের বংশধারা, আমাদের শিক্ষা ও আমাদের পরিবেশের মধ্যে নিহিত, তাই তার পেছনের কারণগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে তাকে বন্ধ করতে হবে, তাকে দোষারোপ বা নিন্দা করে নয়। এইভাবেই সমাজের ক্ষতিসাধন করাটাকে রোধ করা যেতে পারে।

এই কারণে, যৌন আচরণ সম্পর্কে নতুন জ্ঞানের খোঁজ করতে গিয়ে আমরা যেন প্রাচীন কালের অযৌক্তিক সেইসব ভাবাবেগের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে পড়ি যে ভাবাবেগের দ্বারা পুরোনো নৈতিক নিয়ম গড়ে উঠেছিল। যদিও কোন দৈবাৎ কারণে আমরা এটা মনে করতেই পারি যে এইসব নীতিসমূহের মধ্যে এমন মঙ্গলময় কিছু ছিল যার জন্য সম্ভবত দুর্বল হয়ে গেলেও সেগুলো সমস্যার বিষয়গুলোর মধ্যে রয়ে গেছে। ধনাত্মকভাবে যে কাজটা আমরা করতে পারি তা হল আমরা নিজেদেরকে জিজ্ঞাসা করতে পারি কোন্ নৈতিক নিয়মসমূহ মানবিক সুখসমূহকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিন্তু একটা কথা আমাদের মনে রাখতেই হবে যে নিয়ম যাই হোক না কেন তা কখনও চিরন্তন বা সার্বজনীন হয়ে উঠবে না। নিয়মগুলির মধ্যে বাস্তবে যে কার্যকর প্রভাব থাকবে সেগুলোর সম্পর্কে আমাদের বিবেচনা করে দেখতেই হবে, কিন্তু তাদের সম্পূর্ণ কার্যকর প্রভাবটি দেখার পর তাদের বিবেচনা করে দেখার কোন প্রশ্নই ওঠে না।

(৩)

এবার সেই যৌন বিষয়ের জ্ঞানের প্রশ্নে আসা যাক যা সেই প্রাচীন যুগ থেকে চলে আসছে এবং আমাদের বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে যুক্ত সেই প্রশ্নগুলি নিতান্তই সরল ও এমন যা সন্দেহপূর্ণ নয়। শিশুদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোনভাবে সত্যকে গোপন করে যাওয়ার পেছনে কোন সঠিক যুক্তি নেই। তাদের কৌতূহলপ্রসূত সমস্ত প্রশ্নের উত্তর সরাসরিভাবে দেওয়া দরকার। যা তাদের ভালো লাগে তাদের মনকে আকর্ষণ করে, যেমন মাছ ধরার অভ্যাসের বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতোই যৌনতা সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর সরাসরিই বলা দরকার। কিন্তু উত্তর দিতে গিয়ে যেন কোন রকম ভাবাবেগ না থাকে, কেননা ছোট ছেলেমেয়েদের ক্ষমতা থাকে না। মাথার উপর দিয়ে চলে যাওয়া উচ্চ কথাবার্তা বোঝার মতো কোন ঘটনা তারা দেখে উঠতে পারে না। মৌমাছি ও ফুলের মধ্যে ভালোবাসার কথা বলে শুরু করাটা ভুল হয়ে যাবে। জীবনের বাইরে থেকে জীবনের ঘটনাসমূহকে ব্যাখ্যা করতে যাওয়ার কোন কারণ নেই। শিশু যা জানতে চায় সর্বদাই এ বিষয়ে কথাবার্তা শোনে ও জানতে পারে তারা এ বিষয়ের উপর এত কথাও বলে না এবং এত চিন্তাও করে না। প্রথাগত অজ্ঞতা ও বাস্তবজ্ঞান তাদেরকে তাদের বড়দের কাছে ভণ্ডামী ও কপটতা করতে শেখায়। অন্যদিকে জীবনে যদি সত্য করে কোন অজ্ঞতা থাকে তবে তা কঠিন আঘাত ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ও বাস্তব জীবনের সঙ্গে মানিয়ে চলার ব্যাপারে মুস্কিল হয়ে যায়। সমস্ত ধরণের অজ্ঞতাই দুঃখজনক, কিন্তু যৌনতার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে অজ্ঞতা ভীষণভাবে বিপজ্জনক।

যখন আমি বলি যে শিশুদের যৌনতার বিষয়ে বলা দরকার, তখন আমি এটা বলতে চাই না যে তাদের এ বিষয়ে কেবলমাত্র মনস্তাত্ত্বিক ঘটনাসমূহ বলা হোক। তাদের সেইটুকুই বলা হোক যেটুকু তারা জানতে চায়। প্রাপ্তবয়স্কদের সাত্ত্বিক করে তোলার কোন চেষ্টার দরকার নেই। অন্যদিকে, তাদের এ কথা বলাও উচিত নয় যে যৌনতা কেবলমাত্র বিবাহিত জীবনের জন্য। শিশুদের বঞ্চনা করার কোনরকম অজুহাত করা উচিত নয়। যখন কোন শিশু তার পিতামাতাকে মিথ্যা কথা বলতে দেখে তখন তারা নিজেদের মধ্যে দৃঢ়তা হারায় এবং পরে পিতামাতার কাছে মিথ্যা কথা বলাটাকে ন্যায়সংগত বলে ধরে নেয়। জোর করে শিশুদের মনে কোন কিছু ঢোকাবার কথা আমি বলছি না। কোন্টা সত্য নয় এ ধরণের কথা তাকে বলার চেয়ে যে-কোন বিষয়ে যে-কোন কথা তাকে দ্রুত বলে দেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। মিথ্যা ঘটনার বা সাত্তিত্বকতার যে ধারণা গড়ে ওঠে তা সঠিক পুণ্য নয়। কেবলমাত্র তত্ত্বের উপর নির্ভর করেই কথা বলা উচিত নয়, কথা বলা দরকার বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। আমি মনে করি যৌনতা বিষয়ে খোলাখুলি মনোভাব শিশুকে সেই বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা, নোংরা ও অসম্পূর্ণ চিন্তাভাবনা থেকে বিরত করতে পারে। একমাত্র এই পথটিই আলোকিত যৌন নৈতিকতার দিকে নিয়ে যাবার জন্য অনিবার্যভাবে একটি প্রাথমিক পথ।

যেখানে প্রাপ্তবয়স্কদের যৌন আচরণের বিষয় যুক্ত সেখানে যৌন বিষয় সম্পর্কে একটি আপোসমূলক জায়গায় আসাটা খুব সহজ ব্যাপার নয়, কেননা সেখানে পরস্পর-বিরোধী দুটি শিবির ক্রিয়াশীল যারা নিজের নিজের জায়গায় যথেষ্ট শক্তিশালী। মৌলিক সমস্যাটা হল ঈর্ষান্বিত ভাবাবেগ ও যৌন বৈচিত্র্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব। কিন্তু এটা সত্য যে দুটি ভাবাবেগের মধ্যে কোনটা চিরন্তন নয়। এমন কিছু মানুষ দেখা যায় (যদিও তা খুবই অল্প) যারা কখনই ঈর্ষান্বিত হয় না। এমন কিছু মানুষও থাকে (পুরুষের মতো মহিলাদের মধ্যেও) যারা তাদের পছন্দ করা পাত্র বা পাত্রীর উপর থেকে তাদের স্নেহ বা আসক্তি কখনও মুছতে পারে না। যদি এই দুই ধরণের মানুষের আচরণকে চিরন্তন করে তোলা সম্ভব হত তবে এ বিষয়ে সন্তোষজনক নৈতিক আইন তৈরি করা সহজ হত। এটা স্বীকার করে নিতেই হবে যে লক্ষ্যে পৌঁছতে প্রথাসমূহের দ্বারা এই দুই ধরণের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষ পৃথিবীতে গড়ে তোলা যেতে পারে।

অনেক কিছুর ভিত্তি যৌনতার নৈতিকতার দ্বারা আচ্ছাদিত আছে। কিন্তু আমি মনে করি না যে ততক্ষণ আমরা কোন কিছুর সম্পর্কেই খুব একটা ধনাত্মকভাবে বলতে পারি যতক্ষণ বিভিন্ন ব্যবস্থাজাত কার্য ও যৌন বিষয়ে যৌক্তিক শিক্ষাজাত অভিজ্ঞতা অনেক পরিমাণে অর্জন করতে পারি। এটা পুরোপুরি পরিষ্কার যে প্রথা হিসেবে বিবাহ ব্যবস্থা কেবলমাত্র শিশুদের জন্যই রাষ্ট্রকে উৎসাহিত করে। কিছু শিশু ছাড়া এই ব্যবস্থাটিকে একেবারেই ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে দেখা দরকার। এটাও পরিষ্কার যেখানে শিশুরা যুক্ত সেখানে রাষ্ট্র পিতার দ্বারা তাদের প্রতি কর্তব্য করিয়ে নেবার জন্য উৎসাহিত হয় এবং যে কর্তব্যটি প্রধানত আর্থিক হয়ে থাকে। স্ক্যানডিনেভিয়ার মতো দেশে যেখানে বিবাহবিচ্ছেদ বিষয়টি খুব সহজ সেখানে বিবাহবিচ্ছেদের পর শিশু মায়ের সঙ্গে চলে যায়, যার ফলে সেখানে পিতৃতান্ত্রিক পরিবার-ব্যবস্থা একেবারে মুছে যেতে বসেছে। যেখানে মজদুরীনির্ভর শ্রমজীবীদের প্রশ্ন যুক্ত সেখানে এই বিষয়টি বেড়ে গেলে রাষ্ট্র পিতার উপর ন্যস্ত কর্তব্যকে অধিগ্রহণ করবে, ফলে যুক্তিসংগত অবস্থা ও সামর্থ্য না থাকার জন্য সেখানে বিবাহ করবার রেওয়াজটি রোধ হবে এবং সম্ভবত ধনিক শ্রেণী ও ধার্মিকদের মধ্যে ব্যবস্থাটি কেবলমাত্র প্রচলিত রীতি হিসেবে থেকে যাবে। এর আগে পুরুষ ও নারী উভয়ে যদি যৌন সম্পর্ক, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদে সহ্যগুণ, দয়া-মায়া, সত্যবাদিতা ও সুবিচারকে অভ্যাস করে তবে ভালো হয়। প্রথাগত ধারণা অনুযায়ী যারা যৌন পবিত্রতার অধিকারী তারা প্রায়শই মনে করে থাকে যে তারা সুন্দর মানুষের মতো আচরণ করার হাত থেকে মুক্ত। বেশিরভাগ নৈতিক মানুষ যৌন বিষয়টির দ্বারা এতটাই আবিষ্ট থাকেন যে তারা নৈতিকভাবে নিন্দনীয় কিন্তু সামাজিকভাবে প্রয়োজনীয় বিষয়ের উপর অতি সামান্যই জোর দিয়ে থাকেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *