১. জলখাবারের ট্রে

আই হোল্ড ফোর এসেস – জেমস হেডলি চেজ
ভাষান্তর : পৃথ্বীরাজ সেন

০১.

ঠেলে জলখাবারের ট্রেটা সরিয়ে দেবার আগে খুঁটিয়ে দেখে নিল শেষ বারের মত আর কিছু পড়ে আছে কিনা খাবার মত। কিছু নেই ছোট্ট কফি পটেও। জ্যাক আর্চার হতাশ হয়ে সস্তা দামের ফরাসী সিগ্রেট ডালয়েজ ধরাল, তার মনটা গুটিয়ে গেল আবার ঘরের চারদিকে দৃষ্টি দিতেই।

ও যে আগে কখনও এই সেন্ট কেবিনের চেয়েও খারাপ হোটেলে থাকেনি তা নয়, তবে সেগুলোর মত তত বেশি নোংরা গরীব গরীব ভাব এই হোটেলটায় নেই। সবচেয়ে বড় কথা হল এর চেয়ে সস্তা হোটেল প্যারিসে আর নেই। জ্যাক সময় দেখে নিল ঘড়িতে। দেখা করতে হবে জো প্যাটারসনের সঙ্গে, অতএব বেরিয়ে পড়াই ভাল। আবার কেমন যেন হয়ে গেল মনটা। অনেক দূর যেতে হবে পাতাল রেলে চড়ে। সেই প্লাজা এথিনী হোটেলে ডুবোক, ইনভালিদেস, কনবাদে, ফ্রাঙ্কলিন, রুজভেল্ট এবং সবশেষে আলমা মারকু স্টেশন পার হয়ে যেতে হবে। এই মন খারাপ হবার কারণ, ফেলে আসা দিনগুলোর কথা চিন্তা করেই। আগেকার দিন হলে, এই ভাবে ট্রেনে করে যেতে হতনা, গা এলিয়ে দিত পেছনের সীটে, আরামে, তাকে ড্রাইভার পৌঁছে দিত ঠিক জায়গায়। কিন্তু কোনো লাভ নেই এসব ভেবে।

জ্যাক আর্চার কোটটা গায়ে গলিয়ে দেখল আয়নায়, পঞ্চাশ বছরের লম্বা মোটাসোটা গড়নের একটি মানুষের ছায়া পড়েছে পাতলা হয়ে আসছে মাথার চুল, মাংসের আধিক্য গাল চিবুকে, ফ্যাকাশে হয়ে এসেছে গায়ের রঙ, সেই দীপ্তি নেই চোখের তারায়। খানিকটা বেশ ভুড়ি হয়ে যাওয়ার ফলে বেঢপ লাগছে কোটটাকে, অথচ লন্ডনের এক নামী দামী দর্জীর থেকে তৈরি এই স্যুটটাকে বলবে এখন দেখলে তা, জ্যালজ্যালে হয়ে গেছে কয়েকটা জায়গায়। মনে মনে আয়নায় ছায়াকে উদ্দেশ্য করে জ্যাক আর্চার বলল, যাই হোক না কেন চেহারাটা এখনও মোটের ওপর ভালই আছে। সেই রাশভারী আগেকার দিনের ব্যক্তিত্বের সবটাই দেখছিনষ্ট হয়ে যায়নি।

বাইরে তাকাল জানালা দিয়ে। শহর যেন হাসছে সুর্যের সোনালী আলোয়। সামনের রু দ্য মেসেস রাস্তাটা বেশ সরু, জ্যাম হয়ে আছে ট্রাফিকে। যেন গড়িয়ে গড়িয়ে এগোচ্ছে গাড়িগুলো। জ্যাক শেষ পর্যন্ত ওভার কোটটা পরতে গিয়েও পরলো না, আরও জরাজীর্ণ ওটার অবস্থা? টুপি?

 নাঃ, চলবে না টুপি নেওয়াও। লাভ কি বাজে খরচে? প্লাজা এথিনী হোটেলের টুপি রাখার কাউন্টারের মেয়েটাকে তিন ফ্রা বকশিশ অন্তত দিতে হবে টুপি রাখতে হলে। ঘরের বাইরে এল জীর্ণ ব্রীফ কেসটা হাতে ঝুলিয়ে। দরজায় তালা লাগিয়ে লিফটের দিকে এগিয়ে গেল।

একজন বেরিয়ে এল লিফটের পাশের ঘর থেকে, চাবি লাগিয়ে বোতাম টিপলো লিফটের।

আর্চার দূর থেকে ওকে দেখতে পেয়ে, আস্তে করে হাঁটতে শুরু করল। প্রায় ছফুট তিন ইঞ্চি লম্বা, দেখতে দারুণ সুন্দর। আর্চার জীবনে বহু পুরুষের সংস্পর্শে এসেছে, কিন্তু দ্বিতীয়টি দেখেনি এমন মানুষ। ছিপছিপে গড়ন, তবে ক্ষমতা রাখে গায়ে, পিছন দিকে গাঢ় বাদামী রঙের চুল ওল্টানো। লম্বাটে মুখটা, খাড়া নাক ঈগল পাখির মত। অন্তর্ভেদী চোখের দৃষ্টি। আর্চার কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই জরীপ করে নিয়েছিল লোকটিকে, শুধু যে ভাল দেখতে তা নয়, লোকটা একটা দারুণ দামী স্যুটও পরেছিল। সিনেমার নায়ক নিশ্চয়ই।বিখ্যাত গুক্তি কোম্পানীর জুতো পায়ে আর বেল্ট কোমরে। সাদা ধপধপে সার্ট, স্টাইল নিখুঁত, কিন্তু কিছু নয় এগুলোও, আর্চারকে সবচেয়ে বেশি যেটা অভিভূত করল সেটা হল প্রাচীন, ঐতিহ্য মণ্ডিত ইটনের টাই। আর্চার ইংল্যান্ডে ছিল বেশ কিছুদিন। মনে মনে ওখানকার এই স্ট্যাটাস সিম্বলটাকে ও ঈর্ষা করতো।

লোকটা আর্চারের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল লিফটের মধ্যে ঢুকে। দামী আফটার শেভ লোশনের গন্ধ পেল, আর্চার ভেতরে পা দিয়েই। আর্চারকে অভ্যর্থনা জানালো মিষ্টি হাসি দিয়ে।

বুকের ভেতরটা ঈর্ষায় জ্বলে উঠলো আর্চারের, ইসস, বাপরে পুরুষের এত রূপও হয়। যেন মূর্তিমান কামদেব। বয়স তিরিশের কোঠার শেষের দিকে। রোদ পোয়ানো মসৃণ চামড়া, দাঁত ঝকমকে-যেন কলগেট কোম্পানীর বিজ্ঞাপন। দেখে নিল এক ঝলকে,কজীতে সোনার ওমেগা ঘড়ি। সোনার আংটি আঙুলে, তাতে নাম লেখা। বাঁ হাতের কজীতে সোনা আর চেন প্ল্যাটিনামের, লাভলি ডে, আর্চার লিফটের দরজাটা বন্ধ করতে করতে কথাগুলো শুনলো। দারুণ সুরেলা গলার স্বর, মাদকতায় ভরা।

হ্যাঁ এত দামী একটা মানুষকে এই রকম একটা সস্তা হোটেলে দেখে এতই চমকে উঠেছে আর্চার যে ঐ এক অক্ষরের উত্তর ছাড়া আর যেন কিছুতেই অংকটা মিলছে না।

হীরে বসানো নামের প্রথম অক্ষর লেখা একটা সোনার সিগ্রেট কেস পকেট থেকে বের করতে করতে বলল লোকটা,দেখছি তোআপনি সিগ্রেট খাচ্ছেন, তার মানে দরকার নেই অফার করবার? হীরে বসানো ডানহিঙ্কল লাইটার অন্য পকেট থেকে বের করে ধরালো নিজের সিগ্রেটটা। তারপর মন মাতানো মৃদু হেসে বলল, বড় বিশ্রী অভ্যেস..সবাই বলে আর কি।

অতক্ষণে লবিতে নেমেছে লিট। লোকটা ভদ্রতাসূচক মাথা নুইয়ে চাবিটা দিল রিসেপশন টেবিলে গিয়ে, তারপর ভীড়ের মধ্যে রাস্তায় নেমে মিলিয়ে গেল।

আর্চার এই হোটেলে আছে প্রায় তিন সপ্তাহ হলো, তার বেশ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে রিসেপশনের মঁসিয়ে ক্যাভিলের সঙ্গে। চাবিটা দিয়ে বলল–কে এই ভদ্রলোকটি?

উনি হলেন মঁসিয়ে ক্রিস্টোফার গ্রেনভিল। জার্মানী থেকে কাল রাতে এসেছেন।

 জার্মানী থেকে? কিন্তু সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই, উনি যে ইংরেজ।

 হ্যাঁ, মঁসিয়ে আর্চার, ইংরেজ উনি।

 তা এখানে থাকছেন কতদিন?

 এক সপ্তাহের জন্য ঘর নিয়েছেন।

একটু হাসলো আর্চার, প্যারিসে ঠিক সময়েই এসেছেন, বটে…বসন্তের প্যারিস, আর্চার বিদায় নিয়ে নামলো পথে।

প্যারিসের এই সভা হোটেলে গ্রেনভিলের মত ধনী লোক উঠেছে, এ যে ভাবা যায় না! কুড়ি হাজার ফ্রা-ই হবে সোনার সিগ্রেট কেসটার দাম। ভারী অদ্ভুত, আর্চার পাতালরেলের স্টেশনে পৌঁছেই গ্রেনভিলের কথা ভুলে গেল। চিন্তায় ডুবে গেল জো প্যাটারসন আর তার কিন্তুত প্রস্তাবের কথায়।

প্যাটারসনের মতো বাজে লোকের হয়ে কাজ করার অবস্থা মাত্র আঠারো মাস আগেও তার ছিল না। কিন্তু দুর্ভাগ্য…ভিক্ষের ধন কাড়া বা আকাড়া বিচারের আর কোন অধিকারই নেই তার।

আবার আর্চার অতীতে ফিরে গেল সেকেন্ড ক্লাসের কামরায় বসে সে মাত্র আঠারো মাস আগেও ছিল সুইজারল্যান্ডের এক বিখ্যাত আন্তর্জাতিক অ্যাটর্নী ফার্মের সিনিয়র পার্টনার। তারই ওপর ভার ছিল হেরমান রলফের সুইস অ্যাকাউন্ট দেখা শোনার, পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী লোকেদের অন্যতম এই হেরমান রলফ, হেরমান রলফ ওনাসিসদের সঙ্গে পাল্লা দিতেন। রলফ যে টাকা খাটাতেন সুইজারল্যান্ডে, তার দেখাশোনা করত আর্চার এবং বলফের স্ত্রী হেলগা। কম নয় টাকার পরিমাণও, দুকোটি ডলার।

 আর্চার ট্রেনের দোলানির সঙ্গে ভারী শরীরটা দোলাতে দোলাতে চিন্তা করছিল, চাঁদ ধরতে চেয়েছিল আকাশের, তাই এভাবে তাকে ভাগ্য পথে বসিয়েছে।বড়লোক হবার সত্যিকারের একটা, দারুণ সুযোগ হাতের মুঠোর মধ্যে তার এসে গেছে ভেবে, টাকা এমন একটা ব্যবসায় খাটাতে গিয়েই তো তার আজ এই অবস্থা। পেয়েছিল গোপন খবর, প্রচুর নিকেল পাওয়া যাবে অস্ট্রেলিয়ার একটা খনিতে,বন্ধুর কথায় নামমাত্র দামে একটুও দ্বিধা না করে অনেক শেয়ার কিনে ফেলল ঐ ব্যবসার। কুড়ি লক্ষ ডলার তুলে নিয়েছিল রন্সফের ব্যাঙ্ক থেকে, ভেবেছিল আবার কদিনের মধ্যেই টাকাটা আস্তে আস্তে রেখে দেবে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে দেখা গেল হুহু করে শেয়ারের দাম কমে যাচ্ছে, যদি রলফের স্ত্রী হেলগা সহযোগিতা করত ওর সাথে, তাহলে তাকে আজ এভাবে ডুবতে হতোনা। নিশ্চিত জানতে আর্চার যে ওর বিরুদ্ধে রলফ তহবিল তছরুপের মামলাকরবেন, কিন্তু করেন নি। তার কারণ হয়তো রলফ বুঝতে পেরে গিয়েছিলেন যে তার স্ত্রী হেলগার গুপ্ত প্রেমিক ছিলো আর্চার। নোংরামি ছড়াবে মামলা করলে, এই ভয়েই মামলা হয়ত হলো না। তাকে কিন্তু শাস্তি পেতে হলো, অন্য ভাবে। আর্চারের নাম ব্যবসার জগতে রলফ ব্ল্যাক লিস্টেড করে দিয়েছিলেন। ফলে সবাই জেনে গিয়েছিল, আর্চার সুবিধের লোকনয়। পরিণামে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কাজ পাওয়ার পথ।

 তার টাকা রলফ তুলে নিতেই আর্চারের ফার্মও তাদের পাততাড়ি গুটিয়ে নিতে বাধ্য হলো। অন্য পার্টনার দুজন বুড়ো, তারা বাঁচলো হাঁফ ছেড়ে। আর্চারকে তারা পঞ্চাশ হাজার এককালীন দিয়ে বিদায় করে দিল। আর্চার প্রথম দিকে ভেবেছিল ওর পক্ষে একটা কাজ জুটিয়ে নেওয়া সহজ হবে। কিন্তু সুদূর প্রসারী রলফের ক্ষমতা। এমনকি উনি মারা গেছেন এই পাঁচ মাস আগে অথচ কেউ পাত্তা দিতে চাইছে না আর্চারকে।

 ওকে কোনো নামকরা ফার্মও নিল না, আর্চার ধীরে ধীরে এক অদ্ভুত শ্রেণীর দালাল জাতীয় লোক হয়ে উঠলো, কাজ হলো শঠ, লোভী ব্যবসায়ীদের এজেন্ট হওয়া। আর বিক্রি করা সেই সব জিনিস, যার অস্তিত্বই নেই কোন।

 শুধু নামকরা অন্তর্জাতিক অ্যাটনী ছিল যে আর্চার তাই নয়, ট্যাক্স কনসালটেন্ট হিসেবেও তার সুখ্যাতি ছিল অপরিসীম। এছাড়া দুরন্ত ফরাসী আদব কায়দায়, অনর্গল কথা বলতে পারে জার্মান আর ইতালীয়ান ভাষায়। শুধু তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ একেবারে নষ্ট হয়ে গেল লোভীর মত একটা ভুল চালে। কিন্তু উঠতে হবে ওকে, চেষ্টাও করে চলেছিল মরিয়া হয়ে। তবে বাঁচার জন্যে নয়, অন্ততঃ খাবার জন্যে দুমুঠো।

এডমান্ডো শাপিলো, দক্ষিণ আমেরিকার, এক প্রস্তাব পাঠিয়েছে ওর কাছে। বড় বড় ব্যবসায়ীদের যেসব কোম্পানীনতুন প্ল্যান জোগায় এবং ব্যবসা চালু করতে সেই অনুযায়ী সাহায্য করে ঐ ধরণের একটা পোমোটার কোম্পানী একজন আইনজ্ঞ পরামর্শদাতা চাইছে, এক কথায় রাজী আর্চার। সামান্যই টাকাটা, একশো ডলার সপ্তাহে আর শতকরা দেড় ভাগ লেনদেনের। বেশ মেজাজ দেখিয়ে শাপিলো লাখ লাখ ডলারের গল্প শোনাতেই কাৎ আর্চার। আরো একটা বড় টোপ শাপিলো দেখিয়েছে, একজন ধনী মার্কিনী আছে ওর হাতে, যে সম্পত্তি কেনা বেচার কাজ করতে চাইছে।

মানুষের মনে চাহিদার সৃষ্টি করা আর ঐ চাহিদার জন্য টাকা পয়সা লগ্নী করার কাজ করার ব্যাপারে অসাধারণ প্রতিভা আছেমিঃ প্যাটারসনের। উনি এখন কথাবার্তা বলছেন ইরানের শাহের সঙ্গে। ভীষণ আগ্রহী শাহ। এসব ব্যাপারে আমার আইনের দিক তো আছেই–যদি ঐ দিকটা দেখেন আপনি, তাহলে ভাল হয়। এই ধরনের কাজ আশা করি আপনি ভালই জানেন।

আর্চার ঘাড় নাড়লো শাপিলোর কথায়। তারপর ওকে কয়েকটা রঙীন প্যাম্পলেট আর কাগজপত্র দিয়ে শাপিলো বলল–যদি এগুলো পড়ে মনে করেন সাহায্য করতে পারবেন আপনি, তাহলে প্লাজা এথিনী হোটেলে দেখা করা যাবে মিঃ প্যাটারসনের সঙ্গে।

যে কোম্পানী গড়া হবে তার নামও মোটামুটি ঠিক করা ছিল র স্কাই হলিডে ক্যাম্প। এই একটা ক্যাম্প তৈরি করা হবে ইউরোপের অনেকগুলো স্বাস্থ্যকর জায়গায়। ছবি ছিল একটা প্যাম্পলেটে, এক ঘরের খড়ের চাল দেওয়া ক্যাম্প। খেলাধুলো, আমোদ প্রমোদের নানা রকমের ঢালাও ব্যবস্থার বর্ণনা। আর্চার সবকিছু পড়ে দেখলো, এটানতুন কোনো ব্যাপার নয়। ইউরোপের বহু জায়গায় ঐ ধরনের ক্যাম্প আছে। বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে আছে ফরেন এক্সচেঞ্জের অসুবিধের জন্য। এসব ভেবে কিন্তু তার কোন লাভ নেই কারণ একশো ডলার সপ্তাহে হাতছাড়া করা বোকামি।

তাছাড়া বলতে পারে কে, বোকার মত ইরানের শাহ এতেই খাটাতে পারেন টাকা।

প্লাজা এথিনী হোটেলের লবিতে এগারোটা বাজার কয়েক মিনিট আগে ঢুকতেই দেখলো শাপিলো দাঁড়িয়ে সেই পেটেন্ট হাসিটা নেই মুখে, আর্চারের মনটা দমে গেল খুব।

 শুকনো গলায় আর্চার প্রশ্ন করল, গণ্ডগোল কিছু হল নাকি?

 গণ্ডগোল? তার চেয়ে বলা ভাল সব ভণ্ডুল হয়ে গেছে।

আর্চারকে জোর করে টেনে একটা চেয়ারে শাপিলো বসাতে বসাতে বলল, তবে কি জানো আমি এতে ভড়কাবার লোক নই। হঠাৎ ব্যাপারটা থেকে শাহ হাত গুটিয়ে নিয়েছে, হাঁদা…লাভ হতো ভালো।

এই আশঙ্কাই করছিল আর্চার। হতাশ হল সেটা মিলে যেতেই। একশো ডলার সপ্তাহে পাবার আগেই কাজ খতম। মুখে বলল–দুঃখ হচ্ছে খুব শুনে।

হ্যাঁ, তা ঠিক। তবে শেষ নয় এটাই। অন্য জায়গাও আছে, দেখতে হবে সেগুলো। আপনার সঙ্গে মিঃ প্যাটারসন দেখা করতে চান। ওর মেজাজ যদিও এখন খুব বিগড়ে আছে। মানিয়ে নেবেন একটু। এমনিতে মজার লোক খুব, তবে–আজকের ব্যাপারটা ভিন্ন।

বেশ কিছুক্ষণ শাপিলোর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে আর্চার প্রশ্ন করল আমাকে কি এখনও উনি রাখতে চান?

আমার তো মনে হয় তাই। একশো ডলার সপ্তহে এমন কিছু বেশি টাকা নয়। আপনার ডিগ্রী টিগ্রী দেখে উনি একেবারে মোহিত। এমনিতে তো একজন নামকরা লোক আপনি।

ঝকঝকে তকতকে একটি কেবিনের মধ্যে আর্চারকে নিয়ে গেল আর অপেক্ষা না করে। দিনের চতুর্থ ডবল হুইস্কি খাচ্ছিলো তখন জো প্যাটারসন।

বেঁটে, মোটা, লাল মুখটা, পুরো ব্রনের পদচিহ্ন ভরা মুখ প্যাটারসনের, কালো কলপ লাগানো চুল পাতলা হয়ে আসছে, লাল নাকের ডগাটা, ছোট আর ধূর্ত চোখ দুটো।

 আর্চার যে ধরণের মার্কিনদের অপছন্দ করে তার ব্যতিক্রম নয় প্যাটারসন। কথা বলে চেঁচিয়ে, অশ্লীল, রঙচঙে দারুণ পোশাক আর চুরুট অপরিহার্য।

একটু মাতাল হয়ে উঠেছে প্যাটারসন, ওদের ইশারা করল কুতকুতে চোখ তুলে।

 তাহলে…আপনিই আর্চার, তাই না, খাবেন কি?

আর্চার ধন্যবাদ জানিয়ে বলল, জিন মার্টিনি খাবো।

একজন ওয়েটারকে ডেকে শাপিলো অর্ডার দিল, ব্রীফকেসটা পায়ের তলায় রেখে গুছিয়ে বসলো আর্চার।

শাপিলো বলেছে আপনি আমাদের সব বুঝে গিয়েছেন কাজটার ব্যাপার-স্যাপার, আপনার কি মনে হয়?

 মনে তো হয় যে আগ্রহী মানুষদের এতে ভালোভাবেই প্রয়োজন মিটবে। আর্চার খুব সতর্ক হয়ে উত্তর দিল।

সাবাশ, মাইরী দারুণ বলেছেন, এই না হলে কথা। তাহলে, এমন প্রস্তাব বাতিল করে দিল কেন নচ্ছারগুলো?

আর্চার পরিষ্কার জানালো, কারণ থাকতে পারে একাধিক মত আমি প্রকাশ করতে চাই না, কারণ আমি আলাপ আলোচনার সময় তো ছিলাম না।

 আর পারা যায় না এই উকিলগুলোকে নিয়ে। প্যাটারসন একগাল ধোয়া ছেড়ে বলল, এরা কিছুতেই সোজা উত্তর দেবে না। যাকগে আসা যাক অন্য কথায়। শাপিলো কাল বিকেলে সৌদি আরব যাচ্ছে। বিকেলে। অঢেল টাকা ওখানকার নচ্ছারগুলোর। ইরান গেছে যাক। আরবের নচ্ছারগুলোর কাছ থেকে টাকা আমরা পাবো। কেমন হয় যদি আইনের দিকটা দেখার জন্যে ওর সঙ্গে আপনিও যান?

ব্লু স্কাই হলিডে ক্যাম্পের মতো ব্যবসার জন্যে আর্চারের কাছে সৌদি আরবের মন্ত্রীদের ধরার ব্যাপারটা হাস্যকর লাগলেও সপ্তাহে একশো ডলারের কথা চিন্তা করে গভীর ভাবে চিন্তা করতে লাগলো। তারপর বললে মাথা নেড়ে, হ্যাঁ, আমি যেতে রাজি। তবে ঐ সপ্তাহে একশো ডলারে নয়। আর্চার বেশ মেজাজ দেখিয়ে বলল।

কে বলেছে ঐ ভাবে যেতে। যাতায়াতের খরচ সব আমার, আর দু পার্সেন্ট পাবেন কার্যোদ্ধার করে আসলে, আশা করি সেটা কম টাকা হবে না।

কতবার যে এরকম কথা আর্চার শুনেছে তার ইয়ত্তা নেই। লাখ লাখ টাকা, আর কমিশন।

প্যাটারসনকে প্রশ্ন করল, কেউ জানাশোনা আছে নাকি ওখানে।

উপুড় করে গ্লাসটা গলায় ঢেলে আর্চারের দিকে তাকালো প্যাটারসন।

না, নেই। বড় কঠিন ঠাই প্যারিসের নচ্ছারগুলো। অযথা এখানকার এমব্যাসীতে না ঘুরে সরোজমিনে গিয়ে একেবারে কাজ করা ভালো আমার মতে।

মাথা নেড়ে শাপিলো সায় দিলো, বেশ চলে যাও, সেরে ফেল কাজটা।

 এক চুমুকে মদটা শেষ করে আবার ভরবার জন্যে বলল প্যাটারসন।

ওয়েটারকে ডাকতে শাপিলো মুখ ফেরালো। সেই ফাঁকে দ্রুত চিন্তা করে নিল আর্চার। সৌদি আরব বিনা পয়সায় ঘুরে আসা, ভালই হবে। কে বলতে পারে হয়তো কাজ কর্ম জুটে যেতে পারে ওখানে।

যখন মদ এনে ওয়েটার প্যাটারসনের গ্লাসে ঢালছিল তখন লিফটের সামনের করিডরে দেখা দিল একটু উত্তেজনা।

দুজন পুরুষ, একজন মহিলা, হোটেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার তাদের সঙ্গে, কুলীদের হাতে ঠেলা ট্রলারে দারুণ দামী দামী মালপত্তর আসছে করিডর দিয়ে।

আর্চারের বুক কেঁপে উঠলো মহিলাটিকে চিনতে পেরে, হায় ভগবান হেলগা রলফ।

ওর স্বামীর কাছে তহবিল তছরুপের ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখার জন্যে ব্ল্যাকমেল করতে হেলগাকে যে ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল আর্চার, তারপর ওকে দেখল এই প্রথম। হাতের আড়ালে তাড়াতাড়ি মুখ ঢাকলো, ও চায় না ওকে দেখুক হেলগা।

হেলগার দুজন পুরুষ সঙ্গী তাল মিলিয়ে ওর সঙ্গে হাঁটবার চেষ্টা করছিল। লম্বা সঙ্গীটি কি যেন বলছিল মাথা নিচু করে, ঠিক মতো তাল রাখতে পারছিল না বেঁটে ভদ্রলোকটি।

সবাই ওরা লিফটে উঠে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। চিড়িয়া দারুণ তো? ওটা কে?বলে উঠলো  প্যাটারসন।

 এই সুযোগে একটু চমকে দিতে হবে এই আনকালচারড, আমেরিকানটিকে। আর্চার এই ভেবে বলল, উনি হলেন ম্যাডাম হেলগা রলফ।

ভ্রু কুঁচকালো প্যাটারসন, রলফ, তার মানে বিখ্যাত রলফ, ইলেকট্রনিক্সের?

হ্যাঁ, তবে রলফ মারা গেছে কয়েকদিন আগে। খুব মেজাজে মার্টিনিতে চুমুক দিতে দিতে আর্চার বলল, এখন ব্যবসা হেলগাই দেখাশোনা করছে, আর ব্যবসা ভালই চালাচ্ছে।

প্যাটারসনের কুতকুতে চোখ অবাক বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল। তাই নাকি?ঐ নচ্ছারগুলো সঙ্গে কারা?

চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে আর্চার ডালয়েজের প্যাকেটটা বের করল। সিগারের বাক্স বের করে প্যাটারসন বলল, আরে মশাই পুরুষের নেশা করুন, সিগ্রেট ফিগ্রেট, ছছাঃ।

সিগার তুলে নিল ধন্যবাদ জানিয়ে আর্চার।

 স্ট্যানলি উইনবর্ণ হল ঐ লম্বা লোকটা, রলফের আইন বিভাগের বড় কর্তা। করপোরেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রেডরিক লোমান ঐ বেঁটে মোটাটা। আমার তো ধারণা কয়েক শ কোটি ডলার ওদের কোম্পানীর দাম। আমি জানি দশ কোটি ডলার আছে শুধু, হেলগার নিজের অ্যাকাউন্টেই।

যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে প্যাটারসনের, ওরে বাপরে, এতো টাকা।

 তা বলতে পারেন, বাকী মদটুকু আর্চার হেসে গলায় ঢেলে সিগারে জোরে টান দিল।

 ওঁকে খাওয়াও আর এক পাত্তর হে শাপিলো, হঠাৎ প্যাটারসন উদার হয়ে উঠলো।

শাপিলো ডাকতে লাগল ওয়েটারকে, প্যাটারসন সেই ফাঁকে ঝুঁকে পড়ে বলল, মনে হচ্ছে এই চিড়িয়াটাকে আপনি খুব ভালো ভাবেই জানেন।

ঠিক এই জায়গায় এসে আর্চারের উচিত ছিলো মুখ বন্ধ রাখা। কিন্তু সকালে বাজে জলখাবার খাবার পর মার্টিনি খেয়ে উদার হয়ে গিয়েছিল তার মনটা, জানি, মানে রলফের সুইস অ্যাকাউন্ট কিছুদিন আগে পর্যন্ত আমিই দেখাশোনা করতাম, আমরা খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম। আর্চার চোখ টিপলো।

এসব শুনে প্যাটারসন ঘাবড়ে গেল, তার মানে ওর সঙ্গে তুমি শুয়েছ টুয়েছ নাকি?

 মদ দিয়ে গেল ওয়েটার, এক চুমুক লাগিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে খানিকটা বলল, বলা যাক বরং খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম আমরা।

হুম, পরিষ্কার হয়েছে ছবিটা। ভাল কথা, তুমি ওর সম্বন্ধে জানো কতদুর, ওর কোটি টাকা আছে?

তা হবে, মদ অর্ধেকটা গলায় ঢেলে আর্চার ফিরে পেয়েছে মেজাজ।

 কিন্তু তোমরা কি এখন একসঙ্গে নেই, প্যাটারসনের চোখে সন্ধানী দৃষ্টি।

মনে মনে আর্চার বলল, সাবধান বেশি দূর এগোন আর ঠিক হবে না। তারপর বলল, কাজ করা কঠিন ওর সঙ্গে। তাই ছেড়ে দিলাম। আসা যাক অন্য কথায়, তাহলে শাপিলো তো সৌদি আরবের টিকিট কিনছে?

কি দরকার? যখন এখানেই হাজির মাল, তখন প্রশ্নই ওঠে না সৌদি আরবে যাওয়ার।

 হাঁ হয়ে গেল আর্চার প্যাটারসনের কথা শুনে, হাজির এখানেই? কোথায়? আপনার কথা ঠিক আমি বুঝতে পারছি না।

আর্চারের গায়ে হাত রেখে প্যাটারসন বলল, একটু বুদ্ধি খাটাও। আর্চার তোমার যা খাতির রলফ চিড়িয়াটার সঙ্গে তাতে কাজের ব্যাপারে আমাদের ওর কাছ থেকেই পাওয়া যাবে টাকাটা। ওর কাছে হাতের ময়লা কয়েক লাখ ডলার। টাকাটা ওখান থেকেই আদায় করো। ঠিক আছে?

হাত-পা আর্চারের অবশ হয়ে এল, আমি ওকে খুব ভালভাবে চিনি মিঃ প্যাটারসন। ও টাকা ঢালবে না এই হলিডে ক্যাম্পের ব্যাপারে। না, সুবিধে হবে না ওখানে।

 ওর দিকে বেশ কিছুক্ষণ প্যাটারসন কুঁচকে তাকিয়ে থাকার পরে শাপিলোকে বলল, চলো কিছু খাওয়া যাক। কোন্ দিকে যেন খাবার ঘরটা?

হাত তুলে শাপিলো লম্বা করিডরটা দেখালো। উঠে দাঁড়িয়ে প্যাটারসন আর্চারকে বলল, আর্চার, সোজা কথার মানুষ আমি। আমার সঙ্গে একটা মিটিং করিয়ে দাও ওই রলফ চিড়িয়ার। টাকাটা আদায় করার ভার আমার, তোমায় ওসব ভাবতে হবেনা। আর পছন্দ করি আমি কাজের লোক। হয় করিয়ে দাও এটা, নয় তো কেটে পড়

তারপর করিডর দিয়ে হেঁটে চলে গেল কোন কথা না বলে। শাপিলো হতভম্ব আর্চারকে জানিয়ে দিল তার যখন হেলগার সঙ্গে অত মাখামাখি ছিল তখন না করতে পারলে এ কাজটা কোন লাভ নেই। আবার দেখা হবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে গেল শাপিলোও।

দিনের খাবার সামান্য স্যান্ডউইচ দিয়ে শেষ করে আর্চার হোটেলে ফিরল। বেশি আঁট মারতে গিয়ে আর্চার হেলগার ব্যাপারে নিজের ফাঁদে পড়ে গেছে। বুড়ো হয়ে যাচ্ছে, বুদ্ধিংশ হচ্ছে এবার?

 হিসেব করে দেখল টাকা পয়সা ক্রমশঃ কমে আসছে, নতুন কোনও কাজ নেই হাতে। হবার আশাও দেখা যাচ্ছে না। যাই হোক হেলগার কাছেও যাওয়া চলবে না।

যখন হেলগার সাথে শেষবার দেখা হয়েছিল তখনও আর্চারকে জেল খাটরার ভয় দেখিয়ে ছিল দশ বছরের। এখন যদি নিয়ে যায় ওই প্যাটারসনের মতো বাজে লোককে তবে রক্ষে নেই আর।

তাহলে এখন কি করা যাবে?

বিছানায় গা এলিয়ে দিল কোটটা খুলে। ঘুমিয়ে পড়ল মার্টিনির কল্যাণে চিন্তা করতে করতে।

বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছিল ঘণ্টা চারেক। ঘুম ভাঙলোদরজায় ধাক্কার আওয়াজ শুনে। ঘড়িতে সন্ধ্যে ছটা বেজে কুড়ি মিনিট।হয়তো ঝি চাকর কেউ এসেছে ঘর পরিষ্কার করার আলো জ্বেলে। বিরক্ত হয়ে খুললো দরজা। হায় ভগবান, সেই চমৎকার চেহারার ক্রিস্টোফার গ্লেনভিল।

সরি, এইভাবে আপনাকে বিরক্ত করাতে, আমি খুবই দুঃখিত। ফুরিয়ে গেছে সিগ্রেট, তাই এসেছিলাম দু-একটা যদি পাওয়া যায় আপনার কাছে, কিন্তু ঘুমোচ্ছিলেন জানলে,..আমি খুবই দুঃখিত, সেই সুরেলা গলা।

না, না কি হয়েছে তাতে, সবারই তো হয় ওরকম। জ্যাক আর্চার আমার নাম…বলতে বলতে বাড়িয়ে দিল ডালয়েজের প্যাকেটটা।

 আপনি নিশ্চয়ই ইংরেজ?

ভয়ংকর ভাবে ইংরেজ।

 আমি ক্রিস্টোফার গ্রেনভিল, নিতে পারি দুটো সিগ্রেট, দেখছি তো আপনারও বেশি নেই।

আর্চার ওঁর নিখুঁত পোশাক, জুতো, সোনা আর প্ল্যাটিনামের চেন দেখে নিল।

 ঠিক আছে, নিন যা খুশি, আজ খুব খাটুনী গেছে সকালে, তাই বিশ্রাম নিচ্ছিলাম একটু। আপনার হাতে সময় থাকলে একটু বসুন না, গল্প করা যাক।

না, মানে অসুবিধে ঘটাতে চাই না আপনার মুখে বললেও গ্রেনভিল চেয়ারে বসে পড়ল, হোটেলটা হোটর মধ্যে খারাপ নয়, তাই না?

মন্দ নয়, মোটামুটি চলে যায় স্বচ্ছন্দে হেসে উঠল গ্রেনভিল, আর্চারের কথায়, বরং বেশ সস্তা বলা যায়।

ওর দিকে চেয়ে আর্চার হঠাৎ বেশ ফ্রী হয়ে গেল। এটাই নিঃসন্দেহে প্যারিসের সবচেয়ে সস্তা হোটেল।

জানি আমি, হোটেল সব যাচাই করেই তো এসেছি এখানে, গ্রেনভিল হেসে বলল।

ভ্রু কুঁচকে আর্চার বললো, বলতে হচ্ছে তাহলে বাইরের চেহারাটা আপনার দারুণ, একটা ছলনার ছবি।

আবার হাসলো গ্রেনভিল, ওটা বাইরের চেহারার ধর্ম। যেমন যতদূর জানি আমি, আপনি একজন খেয়ালি লাখপতি।

হলে মন্দ হত না, আর্চার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আসলে একজন আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞ আমি। যদি কিছু মনে না করেন, কোন লাইন আপনার।

 গ্রেনভিল ঝকঝকে জুতোর দিকে তাকিয়ে বলল, আমি একজন সুবিধাবাদী বলতে পারেন। আমি একটা সুযোগের সন্ধানে আছি ঠিক এই মুহূর্তে। আমার কর্মক্ষেত্র এই বিরাট পৃথিবীই।

 আর্চার সিগারেটের ছাই ফেলতে ফেলতে ভাবল এমন সুন্দর পদ্ধতি নিজের পরিচয় দেবার আর কেউ জানে কিনা জানি না, সুবিধাবাদী একজন।– একটুনীরসসুরে আর্চার বললো, কিন্তু আপনাকে তো পোশাকে-আশাকে বেশ কাজের লোক মনে হচ্ছে, কোনো কাজ হাতে আছে কি?

মানে, জানতে চাইছেন তো আমার ধান্দার কথা, গ্রেনভিল নিজের প্ল্যাটিনামের চেনটিনাড়তে নাড়তে বলল, একটা না একটা ধান্দা থাকে প্রত্যেক সুবিধাবাদী লোকের। আর পোশাকের কথা বলছেন, আমাদের মতো লোকের পোশাকের চটক গেলে সব চলে যায়।

 কথাটা সত্যি বলে মেনে নিল বটে আর্চার, কিন্তু একটু আহত হল মনে মনে। আমি একমত আপনার সঙ্গে। কিন্তু আপনি এখনো আমার প্রশ্নের উত্তর দেননি।

 কোনো কাজ হাতে আছে কিনা? নেই এই মুহূর্তে, কিন্তু কে জানে, পেয়ে যেতে পারি কালকেই। আশা নিয়েই বেঁচে থাকে সুবিধাবাদীরা।

আর্চার ওর সুন্দর চেহারা, নিখুঁত, পোশাক সহজ সরল ব্যবহার, হাসি মন মাতানো তা লক্ষ্য করছিল। ভাবলো কাজে ঠিক মতো লাগাতে পারলে একে দিয়েই প্যাটের মনের সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে।

হয়তো আপনাকে একটা ইন্টারেস্টিং কাজ দিতে পারি, আর্চার খুব সাবধানে চেষ্টা করলো এগোতে।

 গ্রেনভিল বললো, আমার ইন্টারেস্ট আছে সব কিছুতেই আচ্ছা আপাতত এক কাজ করলে হয় না, বুকচাপা এই ঘরটা ছেড়ে দুজনে মিলে এক প্লেট স্পঘেটি খেলে কেমন হয়। বলতে গেলে আমি সকাল থেকে কিছুই খাই নি। আর খালি পেট থাকলে তেমন খোলেনা আমার মাথা। গ্রেনভিল বেশ জোরে হেসে নিল।

 সেই লোকটাই এই লোক যাকে দিয়ে কাজ হবে তার, নিঃসন্দেহ হল আর্চার। সঙ্গে সঙ্গে আর্চার উঠে পড়ল, আরও একটু ভাল কিছু খেতে হবে। ভাল ডিনার তোমায় খাওয়াব, চলো যাওয়া যাক।

 রাস্তার ধারের ছোট্ট অতি সাধারণ হোটেলে ঘণ্টা খানেক পরে মোটামুটি ভাল খাবার দিয়ে দুজনে পেট ভরালো। লক্ষ্য করল আর্চার যে ভাবে খাচ্ছিল গ্রেনভিল, তার অর্থ বেশ কিছুদিন পেট ভরে খাবার খায়নি সে। গ্রেনভিল খেতে খেতে তার সুন্দর গলায় পৃথিবীর রাজনীতি, শিল্পকলা প্যারিসের নানা বই সম্বন্ধে একতরফা নানা কথা অনর্গল বলে যাচ্ছিল। ওর কণ্ঠস্বরের মাদকতায় আচ্ছন্ন হয়ে শুনছিল আর্চার আর ভাবছিল লোকটা কি সর্বজ্ঞ।

গ্রেনভিল কাঁটা চামচ সরিয়ে দিয়ে বলল, খুব ভাল খাওয়া হল, এবার আসা যাক কাজের কথায়, কি একটা ইন্টারেস্টিং কাজের কথা যেন বলছিলে।

 একটা কাঠি নিয়ে আর্চার দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে বলল–আমরা দুজনে মনে হচ্ছে একটা লাভজনক কাজ করতে পারবো, তবে তোমার সম্বন্ধে তার আগে আমি কিছু জানতে চাই। নিজেকে তো তুমি সুবিধেবাদী বলে খালাস। কিন্তু তার মানে কি?

গ্লেনভিল এ কথার উত্তর না দিয়ে বলে উঠলো, যা আছে তোমার পকেটে তাতে কি চীজ খাওয়া যেতে পারে, একটু করে?

চীজ দিয়ে খাওয়া শেষ না করলে বিশ্রি লাগে খুব।

একটু কঠিন হয়ে আর্চার বলল, যা আছে পকেটে তাতে কফি ছাড়া আর কিছু সম্ভব নয়।

তবে তাই, হোক গ্রেনভিল একটু হেসে বলল, আর সামান্য একটু আভাস তোমার প্ল্যান সম্বন্ধে না দিলে আমি আমার নিজের সব কথা উজাড় করে বলি কি করে?

হ্যাঁ…সেটা ঠিক। আমি দেখাশোনা করছি আইনের দিকটা একটা পোমোটারের ব্যবসায়। একজন মার্কিন,এর উদ্যোক্তা।হলিডে ক্যাম্প করার জন্যে ইউরোপের নানা জায়গায় টাকা তুলতে চায়, অন্ততঃ দরকার কুড়ি লাখ ডলার। একটু কটকটে লোকটা, তবে মানুষ খাঁটি, একটু চেষ্টা করলেই আমার মনে হয়, তোমাকে ও কাজ দেবে। এই মাত্র মাথায় এসেছে আইডিয়াটা। ওর সঙ্গে একবার কথা বলে দেখি। ও তোমার চেহারাতে ভুলবে, কিন্তু ওর কাছে যাবার আগে কিছু খবর তোমার সম্বন্ধে জেনে রাখা ভাল আমার।… যদি ইচ্ছে হয় বলবে…

 গ্রেনভিল কফিতে চুমুক দিয়ে বলল, এখন ঐ সব হলিডে ক্যাম্প নিয়ে ফরেন এক্সচেঞ্জের রেটের জন্য আর কেউ মাথাই ঘামায় না, ওতে লাভ হবে না।

মাথা নেড়ে আর্চার সায় দিল। দারুণ সেয়ানা লোকটা, আমরা পরে আসছি ও ব্যাপারে। নিজের কথা বলল তোমার।

সেই মনমাতানো হাসি হেসে সিগ্রেট ধরিয়ে গ্রেনভিল শুরু করলো, আমায় ক্রিস বলে ডাকে বন্ধুরা…এবার থেকে তুমিও ডাকবে তাই। খোলাখুলি বলছি একজন গিগোলা আমি, পুরুষ সঙ্গী। ঘৃণ্য পেশাটা, কিন্তু ভুল করো না, একটা পেশা তো বটেই এটা। একটু বেশি বয়সের মহিলাদের কাছে পুরুষ সঙ্গীর প্রয়োজনটা যেকতো এটা যেনা বুঝবেতারা ঘৃণাই করবে আমাদের পেশাটাকে। যে কোন হোটেলে যাও দেখবে, বারম্যান ওয়েটার বা অবিবাহিত পুরুষদের বয়স্ক মহিলারা উত্যক্ত করছে। ধনী, মোটা বা শুটকে অসুন্দরী, নির্বোধ মানসিক রোগগ্রস্থ নিঃসঙ্গ মহিলা আছে হাজার হাজার। যারা জীবনকে শেষবারের মতো ভোগ করতে চায় যৌন অস্তমিত হবার আগে পুরুষ সঙ্গী নিয়ে ঘুরতে চায়, কাঙাল হয়ে ওঠে আদর পেতে, তাদের কাছে তার জন্যে টাকাটা কোন ব্যাপারই নয়। যারা ওদের এই সব চাহিদা মেটায় তাদেরই একজন আমি। পোশাক আশাক এই যে দেখছ এগুলো মহিলাদের কাছ থেকে ঐ ধরণের হতাশায় উপহার হিসেবে পাওয়া। এক বুড়ী দিয়েছিল এই চেনটা, কেমন ধারণা হয়ে গিয়েছিল আমি ওর প্রেমে পড়েছি। এক ধুমসী অস্ট্রিয়ান কাউন্টেসের কাছ থেকে এই সিগ্রেট কেসটা পেয়েছি। তিন সপ্তাহ ধরে প্রতি রাতে নাচতে হবে তার সঙ্গে আবদার ছিল। সৌভাগ্য আর দুর্ভাগ্য বশত আমার কাউন্টেসের হয়ে গেল হার্টের অসুখ। তা না হলে তার সঙ্গে এখন আমি নাচছি, ভাবতেওবুক কাঁপে।উনচল্লিশ বছর আমার বয়স। বয়স্কা মহিলাদের গত কুড়ি বছর ধরে আমি সুখ দেবার যথাসাধ্য চেষ্টা করে আসছি। শেষ চুমুক কফিতে লাগিয়ে আবার আর্চারের দিকে সেই ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে বলল, জ্যাক বুঝলে, আমার সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত এটাই।

 আর্চার আনন্দের অতিশয্যে ফুলে উঠতে লাগল ভেতরে ভেতরে। ও সঠিক মানুষ চিনতে ভুল করেনি, মন্দ হয় না একটু চীজ খেলে।

 প্লাজা এথিনী হোটেলের লবিতে প্রায় মাঝরাতে প্যাটারসন ঢুকে ডেস্ক থেকে চাবি নিতে হাত বাড়িয়েছে এমন সময় এগিয়ে এল আর্চার-গুড ইভনিং মিঃ প্যাটারসন।

 মোটা শরীরটা ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে বেঁকিয়ে প্যাটারসন পিছন দিকে তাকালো। আর্চার তার অপেক্ষায় প্রায় দুঘণ্টা ধরে বসে আছে।

আপনি কি চান?

আপনার সঙ্গে একটা জরুরী ব্যাপারে আলোচনা করতে চাই, কিন্তু অনেক রাত হয়ে গেছে এখন…

ঠিক আছে ঠিক আছে, ফুর্তি করে এলাম একটু, তাহলে কী রাজী হয়েছে ঐ চিড়িয়াটা?

প্যাটারসন কথা বলতে বলতে একটা ঢাকা কেবিনে ওকে নিয়ে ঢুকলোএকটু পান করা যাক, বলে ডাকল ওয়েটারকে।

মদ দিয়ে গেল ওয়েটার, প্যাটারসন সিগার ধরিয়ে জাঁকিয়ে বসে প্রশ্ন করল, আর্চার খুব ব্যস্ত ছিলেন তাই না, বলে কী রলফ চিড়িয়াটা? হওয়া কী সম্ভব?

হ্যাঁ ম্যাডাম রলফকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে কুড়ি লাখ ডলার বাগানো অসম্ভব হবে না খুব একটা।

 আপনার কথা হয়েছে ওর সঙ্গে? তবে এই যে বললেন, ছোঁবেই না ও এসব প্রজেক্ট।

আমার প্রথমে তাই মনে হয়েছিল। তারপর অনেক চিন্তা করে দ্বিতীয়বার দেখলাম বোঝানো ওকে যেতে পারে।

আঃ সেটা ঠিক, দ্বিতীয় চিন্তার মতো ভাল জিনিষ আর নেই। তা ওর সঙ্গে কি আপনি যোগাযোগ করেছেন?

আর্চার একটু ভেবে নিয়ে উত্তর দিল–দারুণ জটিল সমস্ত ব্যাপারটা মিঃ প্যাটারসন।না, আমি যোগাযোগ করিনি ওর সঙ্গে এবং করবোও না। তবুও কুড়ি লাখ ডলার ওকে বুঝিয়ে আদায় করা যে সম্ভব হবে, আমি এ বিষয়ে সুনিশ্চিত।

হুমকি দিয়ে উঠলো প্যাটারসন, বলবেন না দুরকম কথা, আপনি কি বলতে চাইছেন? :

মিঃ প্যাটারসন যদি ব্যাপারটা আপনি বুঝতে চান, তবে একজন নিমফো ম্যানিয়াক হেলগা, রলফ।

হাঁ করে তাকিয়ে প্যাটারসন শুধু বলল–নিমকো…কি?

আর্চার বুঝিয়ে দিল যে সময়ে পুরুষ না হলে মেয়েদের চলে না। চোখ বড় হয়ে উঠলো প্যাটারসনের তার মানে বলতে চান হট সেক্স আছে মহিলার।

একটু বেশি তার চেয়ে। হেলগাকে আমি চিনি গত বিশ বছর ধরে। প্রতিদিনের খাদ্যের মতই সেক্স ওর কাছে প্রয়োজনীয়।

প্যাটারসন খুব গভীর ভাবে কী যেন চিন্তা করতে করতে বলল, কিন্তু একটা ভাল চিড়িয়াও তো বটে ও। আমরা একসঙ্গে শুতে পারি তুমি কি মনে করো। আর ওকে এব্যাপারে সন্তুষ্ট করতে পারলে অসুবিধে হবে না টাকা পেতে।

 ওর বসন্তের দাগওলা ঘামে ভরা বিশ্রি মুখটা দেখে আর্চার ভাবলো, হায়রে যদি মানুষ অপরের চোখ দিয়ে দেখতে পারতো নিজেদের।

মিঃ প্যাটারসন ঠিক তা নয়। শুধু বিশেষ এক ধরণের সুন্দর পুরুষকে পছন্দ করে হেলগা। হতে হবে লম্বা, ছোট হতে হবে বয়সে। সুন্দর অসাধারণ, চালাক চতুর, রসিক, জ্ঞানও থাকা উচিত শিল্প টিল্প সম্বন্ধে, যেহেতু অনেক ভাষা জানে হেলগা নিজে, তাই জার্মান ফ্রেঞ্চ ইতালীয়ান ভাষা সেই পুরুষকে জানতে হবে, অন্ততঃ হলে ভাল হয়।

 সিগারটা চিবোতে চিবোতে প্যাটারসন বলল, হায় ভগবান মনে হচ্ছে দারুণ কঠিন ব্যাপার এরকম একটা কামুক চিড়িয়াকে খুশি করা।

দশ কোটি ডলার ওর দাম। কঠিন ঠাঁই তো হবেই।

নাক চুলকে প্যাটারসন বলল, তা ঠিক, শাপিলোকে দিয়ে চলবেনা? স্প্যানিশ ভাষাও জানে, দেখতেও ভাল।

 মাথা নাড়লো আর্চার, মনে তো হয়না, ওকে দিয়ে হবে। যোগ্যও নয় হেলগারলফের। একটা আইডিয়া আছে আমার মাথায়, বলবোধরা যাক আমরা পেলাম এ ধরণের একটা আদর্শ পুরুষকে। দেখা হল হেলগার সঙ্গে, ওর প্রেমে পড়ল হেলগা। আমি ভালো ভাবে চিনি হেলগাকে। ও যাকে একবার ভালোবেসে ফেলে সব কিছু তার জন্যে করতে পারে। এ লোকটি হেলগাকে সপ্তাহ খানেক পরে ব্লু স্কাই-এর প্ল্যানটা বলল, মতামত চাইল ওর। আপনার হয়ে কাজ করছে ও বলবে। আর যা বলেছেন আপনি, কুড়ি লাখ ওর কাছে হাতের ময়লা।হেলগাকে বলবে ওই লোকটা ওর চাকরী চলে যাবে কাজটা না করতে পারলে। খুব সুক্ষ্মভাবে করতে হবে পুরো কাজটা। আমি চিনি হেলগাকে তাই দেখাশোনা করতে হবে আমাকেই এবং টাকা দেবে হেলগা..আপনাকে গ্যারান্টি দিতে পারি আমি।

অনেক সময় নিয়ে প্যাটারসন চিন্তা করতে লাগল, আর্চার ইত্যবসরে ঘামতে শুরু করল। প্যাটারসন শেষ পর্যন্ত মাথা নেড়ে বলল, মন্দ লাগছে না শুনতে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ছবিটা। আইডিয়াটা ভাল দিয়েছে বটে। তাহলে খুঁজে বের করতে হয় ঐরকম একটা লোককে, মনে হয় না খুব কঠিন হবে বলে, কি বলো?

 হাঁফ ছেড়ে বাঁচল আর্চার, ঠিক ঐরকম একটা লোক খুঁজে না পেলে এত রাতে আসবো কেন আপনার কাছে আমি, তাছাড়া আপনি আমাকে তো এর জন্যই মাইনে দিচ্ছেন।

 সোজা হয়ে বসল প্যাটারসন, অমন লোক তুমি পেয়েছো?

 মনের মত মানুষ হেলগার, হেলগার পক্ষে ওর আকর্ষণ এড়ানো অসম্ভব হবে।আর্চার জোর দিয়ে বলল।

হায় ভগবান, কি করে তা পেলে?

আর্চার অপেক্ষা করছিল এই প্রশ্নটার জন্যে আর এ সম্বন্ধে আলোচনা করেও এসেছে গ্রেনভিলের সঙ্গে।

একজন পেশাদার গিগোলা, পুরুষ সঙ্গী, খুব হাই ক্লাশ সঙ্গী, ওর কারবার মাঝ বয়সী আর বেশী বয়সী ধনী মহিলাদের সঙ্গে। আমার এক পুরনো মহিলা মক্কেলের দেখাশোনা করত কয়েক বছর আগে। জানাশোনা এই সূত্রেই। ওর সঙ্গে হঠাৎ দেখা, আর তখুনি মনে হল কার্যোদ্ধার হবে একে দিয়েই। আপনার সঙ্গে দেখা হলে ভাল হয়।

নাক চুলকোতে চুলকোতে প্যাটারসন বলল, গিগোলা? নরক, নরক, আমি ঘেন্না করি এই নরকগুলোকে। কিন্তু তুমি বলছ রলফ চিড়িয়াটাকে ও পারবে সামলাতে?

ও পারবে আমি জানি, নিশ্চিত না হলে এখানে এত রাত পর্যন্ত বসে থাকতাম না আপনার জন্যে।

বেশ, খারাপ নয় আইডিয়াটা, ঠিক আছে কাল সকাল এগারোটায়। আসতে বলল এখানে।

 গ্রেনভিল কিন্তু দেখা করার সময় আর জায়গাটা সম্বন্ধে কথা বলে রেখেছিল ভীষণ জোর দিয়েই। যদি প্যাটারসন নাও চায় আমাকে, অন্ততঃ ওর কাছ থেকে ভালো একটা লাঞ্চ আদায় করে নিতে হবে।…ওকে বোলো রিসে দেখা হবে একটার সময়, তা নাহলে নেই আমি।

 সাবধানে এগোল আর্চার ঐ কথাটা মনে রেখে, এখানে দেখা করাটা মিঃ প্যাটারসন ঠিক হবে না। যদি হঠাৎ মাদাম রলফ আপনাদের দুজনকে একসঙ্গে দেখে ফেলেন তবে ভেস্তে যাবে সব। নানা কাজে ব্যস্ত ও, লোকটা কালকে রিসে দেখা করতে পারে একটার সময়।

 ক্ষেপে গেল প্যাটারসন, আরে ও কাজে ব্যস্ত কি ব্যস্ত নয়, কেন আমি এসব দেখবো। ওকে। আমিই যাচ্ছি কাজ দিতে।

কিন্তু দিচ্ছেন কি দিচ্ছেন না, তা তো স্থির হয়নি এখনও, তাছাড়া লোকটা আদৌ সস্তা দরের লোক নয়। অসংখ্য কাজ ওর, যদি বুদ্ধি খাঁটিয়ে কাজ করেন আপনি, ওর সঙ্গে দেখা করেন ওখানেই, তবে লাভ বই লোকসান হবে না।

প্যাটারসন একটা বাজে গালাগাল দিল গ্রেনভিল সম্বন্ধে। মোলায়েম সুরে আর্চার বলল, কাজে লাগে ওরাও বুঝলেন, দেখবেন ও যখন মাদাম ওলফের কাছ থেকে আদায় করে কুড়ি লাখ এনে দিচ্ছে। তখন অখুশি হবেন না আপনি।

 চুরুট নিভিয়ে প্যাটারসন উঠে দাঁড়ালো, আর্চারের পিঠ চাপড়ে বলল, ঠিক আছে, দেখা হবে রিৎসেই, বেশ ভালই কাজে এগোচ্ছো তুমি, এই নাও একশো ডলার তোমার।

রিৎসে হোটেলের ল এস লাফনা গ্রীনরুমের এক কোণে বসে থাকা প্যাটারসন আর আর্চার লক্ষ্য করল গ্রেনভিল ঢুকছে। ওই সেই লোক মিঃ প্যাটারসন, ইশারায় দেখাল আর্চার।

গ্রেনভিল প্রায় পনেরো মিনিট দেরী করে এসেছে, খাপ্পা হয়ে আছে প্যাটারসনের মেজাজ

কি মনে করে লোকটা নিজেকে?হ্যাঁ বাজে একটা গিগোলা ছাড়া আর অন্য ওর কি পরিচয়? মুখে কথাটা বললেও গ্রেনভিলের চলন, বলন, চেহারা ওকে যে মুগ্ধ করেছে বোঝা যাচ্ছিল তা। নিখুঁত হালকা বাদামী রঙের স্যুট পরনে, গ্রেনভিল একটু দাঁড়ালো খাবার ঘরের দরজায়। ইতস্তত ভাব নেই কোন রকম। ভরপুর আত্মবিশ্বাস আর অপূর্ব সুন্দর।

 তাড়াতাড়ি ওর দিকে এগিয়ে গেল গ্রীনরুমের ম্যানেজার, মিসিয়ে গ্রেনভিল, আপনাকে দেখে কি আনন্দই হচ্ছে, আমাদের ভুলেই গেছেন দেখছি আপনি।

 লোকটা ফরাসী ভাষায় কথাগুলো বলল, বুঝতে না পেরে প্যাটারসন, চোখ কুঁচকে তাকালো আর্চারের দিকে লোকটা কি বলছে?

গ্লেনভিলকে ম্যানেজার বলছে আবার দেখে খুব আনন্দিত উনি।

তাই নাকি? তা আমাকে তো নচ্ছারটা একথা বলিনি।

লক্ষ্য করল প্যাটারসন, গ্রেনভিল ম্যানেজারের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে কথা বলল। তারপর সযত্নে ম্যানেজার গ্রেনভিলকে নিয়ে আসতে লাগল প্যাটারসনের টেবিলের দিকে। অনেক ওয়েটার একটু পেয়েই ওকে মাথা ঝুঁকিয়ে সেলাম জানালো, হালকা ঠাট্টা করতে করতে গ্রেনভিলও এগিয়ে এল।

চোখ যেন ঠিকরে আসছে প্যাটারসনের, এখানে দেখছি লোকটাকে সবাই চেনে।

 শুধু এখানে নয়, ওর এই রকম খাতির প্যারিসের সব বড় বড় হোটেলে, আমি তো বলেছি দারুণ লোক ও।

টেবিলের কাছে এল গ্রেনভিল, হ্যালো জ্যাক। তারপর প্যাটারসনের দিকে ফিরে বলল, আপনি নিশ্চয়ই মিঃ প্যাটারসন। আমি গ্রেনভিল।

কুতকুতে চোখ দিয়ে প্যাটারসন যেন পরীক্ষা করতে লাগল গ্রেনভিলকে। এই লাগল বলে আর্চারের মনে এমন একটা আশংকা হতে শুরু করল। কিন্তু না প্যাটারসনকে বোকা বানিয়ে ছাড়ল গ্রেনভিল তার অসাধারণ রূপ আর ব্যক্তিত্ব দিয়ে। গ্রেনভিল বসে পড়ল চেয়ার টেনে।

হ্যাঁ, আপনার কথা বলছিল আর্চার।

 এখানে এলাম প্রায় এক বছর পরে, পুরনো জায়গার পুরনো স্মৃতি।

 এক পাশে দাঁড়াল ওয়েটার, নিশ্চয়ই আপনার পছন্দের জিনিষ আনবো, মিঃ গ্রেনভিল।

গ্লেনভিল মাথা নাড়তেই ওয়েটার চলে গেল মদ আনতে। প্যাটারসনকে প্রত্যেকটা ব্যাপারই চমকে দিচ্ছে।

ম্যানেজার ঢুকলো মেনু নিয়ে। প্যাটারসনকে দেখিয়ে গ্রেনভিল বললো, চার্লস, আমরা মিঃ প্যাটারসনের অতিথি। চিনে রাখ ওঁকে, দারুণ প্রভাবশালী আর উনি নামকরা লোক।

 মিঃ গ্রেনভিল নিশ্চয়ই, ম্যানেজার বোঁ করে ঘুরে চলে গেল প্যাটারসনের পাশে, সামনে তুলে ধরল মেনু কার্ডটা। ফরাসী জানে না প্যাটারসন, অতএব কার্ড দেখা না দেখা দুই সমান। ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে উঠল শুধু পেঁয়াজের স্যুপ আর মাংসের রোস্ট খাব আমি।

মার্টিনি মদ এসে গেলো গ্রেনভিলের জন্য, এক চুমুক খেয়ে মাথা নেড়ে জানালো, ঠিক আছে চার্লস, একেবারে দারুণ ভাল।

যেমন মুরগী তার ছানার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে থাকে ঠিক সেই ভঙ্গীতে ঝুঁকে পড়ে গ্রেভিলের ওপর ম্যানেজার বলল, আর কি নেবেন আপনি মিঃ গ্রেনভিল?

 মেনুর দিকে গ্রেনভিল ফিরেও তাকালো না, বলল, লুইস, ল্যাঙ্গোস্টিন প্রথমে খাবো, কি বলো?

 মঁসিয়ে দারুণ বলেছেন।

তারপর গ্র্যাতিন দ্য ল্যাঙ্গোস্টিন আর ক্যাপিটেন এন কোকোতে হবে, কেমন?

 স্যার এর থেকে আর ভালো চয়েস হয় না। আপনার রুচির তারিফ না করে থাকা যায় না।

আর্চারের দিকে গ্রেনভিল ফিরে বলল, আর্চার তুমিও এই খাও, ভাল হবে।

পেট জ্বলছিল আর্চারের খিদেতে, মাথা নাড়লো।

এক ঝলক হাসি দিয়ে গ্রেনভিল নতুন করে প্যাটারসনকে অভ্যর্থনা জানালো, সব ব্যাপারটা জ্যাক বলেছে আমাকে, আর আমার ভাল লাগবে মনে হয় কাজটা। আমি বলি কি, ভাল করে বসে খাওয়ার পর আলোচনা হবে। আমি পছন্দ করি না খেতে খেতে ব্যবসার কথা বলা।তারপর ভুবন মোহিনী সেই হাসি হেসে বললেন, আনন্দ করো আগে এবং কোনো কথা বলার সুযোগ প্যাটারসনকে না দিয়ে বলে যেতে লাগল রিৎস হোটেলের ইতিহাস, এখান থেকে কোন নামকরা লোকেরা গেছেন, কোন ছিটিয়াল মানুষ সব কি কি মজার কাণ্ড করেছিল, হাঁ করে প্যাটারসন বোকার মত শুনে যেতে লাগল সব।

পিঁয়াজের স্যুপ আর গ্র্যাতিন দ্য ল্যাঙ্গোস্টিন এল, ওয়েটার মদ সার্ভ করার জন্য এসে দাঁড়াল গ্রেনভিলের পাশে। গ্রেনভিল আড় চোখে তাকিয়ে বলল, চার্লস মিঃ প্যাটারসনের অতিথি আমরা। মিঃ প্যাটারসন জানেন কি, দারুণ বিখ্যাত এখানকার মদের ভাড়ার। যদি আপনি এঁদের মাসকাডেট ১৯২১ টেস্ট না করে থাকেন তবে উচিত করা, আচ্ছা চার্লস, এখনও আছে কি তোমাদের মাগগ ৫৯?

 মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো মদের ওয়েটারের, নিশ্চয়ই আপনার জন্যে আছে সঁসিয়ে গ্রেনভিল।

একেবারে আনাড়ী প্যাটারসন মদের ব্যাপারে এসব শুনে বিস্ফারিত নয়নে চেয়ে বলল, আমরা ঠিক ওটাই খাব।

খেতে খেতে গ্রেনভিল দারুণ গল্প বলতে লাগল। মর্ডান পেন্টিং দিয়ে শুরু করল। দারুণ একজিবিশন হচ্ছে নদীর তীরে, দেখে আসুন গিয়ে, দুজনের ভবিষ্যৎ ওদের মধ্যে খুব উজ্জ্বল। কারসিনো হল একজন, এখন সকলে না চিনলেও, ও একদিন পিকামো হয়ে উঠবে।…গান, বাজনার কথা তারপরেই, পিয়ানোবাদিকা এসেছে একজন, বাজায় দারুণ, নাম শালিনস্কি।

খাবে কি প্যাটারসন, ওর অবস্থা ক্রমশঃ ফঁদে পড়া পাখির মত হয়ে উঠছে। বেশ মজা পাচ্ছিল আর্চার ওর ওই অবস্থা দেখে, প্যাটারসনকে যেন গ্রেনভিল বাঁদর নাচ নাচাচ্ছে। একটা কথা বলার সুযোগ প্যাটারসন পাচ্ছে না।

 শেষ হল খাওয়া, ওয়েটার যথারীতি শ্যাম্পেন, শরবৎ নিয়ে এল। গ্রেনভিল, প্যাটারসন দুজনেরই আপত্তি। কফি এতো খাওয়ার পর ওয়েটারকে ডেকে গ্রেনভিল ওর প্রিয় মদ বানিয়াক ১৯০৬ দিতে বলল। এতক্ষণ প্যাটারসন চুপ করেছিল, বলে উঠল জোর গলায়, না, ডবল হুইস্কি আমার জন্য।

মদে চুমুক দিতে দিতে সোনার সিগারেট কেস বের করে গ্রেনভিল সিগ্রেট নিল, আর্চারকে বাড়িয়ে দিয়ে প্যাটারসনের দিকে ফিরে বলল, আপনাকে কিনতু দিচ্ছি না, কারণ আপনি যে সিগার খাওয়া লোক, নয়।বুঝেছি তা দেখেই।.

 মাথা নেড়ে প্যাটারসন সিগার ধরালো। বুঝে গেছে আর্চার, প্যাটারসন এখন একেবারে গ্রেনভিলের হাতের মুঠোয়।

মিঃ প্যাটারসন এবার শুরু করা যাক কাজের কথা, চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে গ্রেনভিল বলল, যাকে কাজে লাগাতে চাইছেন আপনি, তার সম্বন্ধে আপনার কিছু জানা দরকার। আমার পরিচয় সংক্ষেপে এইবয়স আমার উনচল্লিশ বছর। লেখাপড়া করেছি ইংরেজী, ইটন আর কেমব্রিজে, জামান, ফ্রেঞ্চ আর ইতালিয়ান ভাষা অনর্গল বলতে পারি। টেনিস খেলেছি রড লেভারের সঙ্গে। অ্যামেচার ওপেন গলফ চ্যাম্পিয়ান, স্কী করতে পারি। জানি তরোয়াল খেলাও। বাজাতে পারি পিয়ানো, গানও জানি। দু একবার স্কালা থিয়েটারে অভিনয়ও করেছি। ঘোড়ায় চড়তে এবং পোলো খেলতে পারি। আমার আগ্রহ আছে আধুনিক শিল্পকলায়। কেমব্রিজ ছাড়ার পরে আমার বাবা, চেয়েছিলেন আমি তার কারবারে জয়েন পার্টনার হয়ে জুনিয়ার করি। পছন্দ হয়নি আমার, একটু হাসল গ্রেনভিল, দেখলাম বয়স্ক ধনী মহিলাদের সঙ্গে আনন্দ পাওয়া যায়, ফষ্টিনষ্টি করে ঐ ব্যাপারে মেয়েদের সুখী করার ক্ষমতা একটু বেশিই আছে আমার। আমি এইভাবে পেশাদার পুরুষসঙ্গী হয়ে কাজ করে আসছি গত বিশ বছর ধরে। হেলগা রলফের ব্যাপারে জ্যাক বলেছে আপনি আমার মত অভিজ্ঞ একজন লোক চাইছেন। আমি দেখিনি মহিলাকে, তবে বিশ্বাস আছে সামলাতে পারব তাকে। একটা সম্পত্তি কেনার ব্যাপারে তার কাছ থেকে আপনি ইনভেস্টমেন্ট, চান কুড়ি লক্ষ ডলারের, তাই তো? যদি একটা চুক্তি হয় আমার আর আপনার মধ্যে তবে কথা দিতে পারি আমি, টাকাটা জোগাড় হয়ে যাবে আপনার।

প্যাটারসন সিগারে দীর্ঘ টান দিয়ে বলল, মনে হচ্ছে হা..পারবেন আপনি।

 কোন ব্যাপার নেই মনে হওয়ার মিঃ প্যাটারসন, আমি করে দেব কাজ।

প্যাটারসন অনেকক্ষণ ধরে ভাবতে লাগলো, ভেতরে ভেতরে উদ্বিগ্ন আর্চার ঘামছিল।

 বেশ, ঠিক আছে। তবে কাজটা কিভাবে করবেন?

 সেটা আমার ব্যাপার সম্পূর্ণ। সময় লাগবে কয়েক সপ্তাহ, আর টাকা কিছু দিতে হবে।

আর্চারের দিকে কুঁচকে প্যাটারসন তাকালো। আর্চার বললো তাড়াতাড়ি, আপনাকে কথা দিচ্ছি আমিও মিঃ প্যাটারসন, তার কথা রাখে ক্রিস।

বেশ…..বলুন তারপর, যেন আরও কিছু জানতে চায় প্যাটারসন।

কফিতে চুমুক দিয়ে গ্রেনভিল বলল, আমার দিক থেকে স্বাভাবিক ভাবেই শর্ত আছে কিছু। ধরে নেব যে আমি ম্যাডাম বলফের ভার নিলে আপনি আমার খরচের দিকটা দেখবেন।

মুখ চোখ প্যাটারসনের কঠোর হয়ে উঠল, এর মানে আপনি কি বলতে চাইছেন?

 আমি সমান তালে তাল দিয়ে ম্যাডাম রলফের সঙ্গে মিশতে চাই। ঘর নেব প্লাজা এথিনীতে ভাড়া নিতে হবে দামী গাড়ী, আর আমার খরচের জন্য চাই পাঁচ হাজার ফ্র।…..যা বিল হবে আমার সব আপনি মেটাবেন, গ্লেনভিল হাসল।

চিন্তা করার সুযোগ প্যাটারসনকে না দিয়ে আর্চার বলল, কুড়ি লাখ ডলার মিঃ প্যাটারসন পেতে হলে আপনার কাছে এটুকু খরচ করা এমন কিছু হবে বলে মনে হয় না। আপনি তো তাছাড়া আমাকে আর শাপিলোকে পাঠাচ্ছিলেন সৌদি আরবে, কম খরচ তত তাতেও হতো না?

মুখের মধ্যে সিগারটা ঘোরাতে ঘোরাতে কি একটু ভেবে নিয়ে বলল প্যাটারসন, হা, ঠিক আছে, কিন্তু গ্রেনভিল শোনো,কাজটা করে দেওয়া চাই, তা না হলে ঝাটে পড়বে তুমি। তোমার ওপর আমি বাজী ধরছি, আর কাজ তুমি পুরো করে দাও।

 সুন্দর মুখ কালো হয়ে উঠলো গ্রেনভিলের। তীক্ষ্ম গলায় বললো, মিঃ প্যাটারসন আপনাকে আমি মনে করিয়ে দিতে চাই যে আপনার দেশের কোনো লোকের সঙ্গে আপনি লেনদেন করছেন না। প্রায়ই আপনাদের মত ব্যবসায়ীরা খুব সুবিধের হয় না। এটা আপনাদের, কারবারের অঙ্গ কিন্তু আপনি আমাকে ধমকাবেন তা সহ্য করবো না আমি। আপনাকে বলেছি আমি ম্যাডাম রলফের কাছ থেকে আপনার ব্যবসার জন্য বিশ লাখ ডলার আদায় করে দেব, কিন্তু আমার শর্তে। যদি আমার ওপর আস্থা না থাকে আপনার, তবে এখনই তা বলে দিন। কিন্তু, আমাকে কখনোই ভয় দেখাবেন না বা ধমকাবেন না। সোজা হয়ে বসে একদৃষ্টিতে চেয়ে বলল, নিশ্চয় বুঝতে পারছেন কথাটা।

 চোখ সরিয়ে নিল প্যাটারসন, আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে। বলতে হবে না আর। বুঝেছি আমি, ভুলে যাও যা বলেছি।

ঘামছিল আর্চার, এবার শান্ত হল মেজাজ। তাহলে টাকা পয়সার ব্যাপারটা ঠিক করে নিন আর্চারের সঙ্গে। হোটেলে এলেই টাকাটা যেন পেয়ে যাই। কাজ আছে আমার, চললাম, ধন্যবাদ ডিনারের জন্য, গুড বাই।

 উঠে দাঁড়াতেই ম্যানেজার ছুটে এল, অসুবিধে হয়নি তো? গ্রেনভিল চলে গেল হ্যান্ডশেক করে।

নাঃ, এলেম আছে বটে লোকটার, দারুণ, দারুণ। উদ্বেলিত হয়ে উঠল প্যাটারসন।

 ঐ বিশ লাখ ডলার যদি কেউ আদায় করতে পারে, তবে তা পারবে.গ্রেনভিলই, মিঃ প্যাটারসন।

কোন সন্দেহ নেই সে বিষয়ে।

বিল মেটাতে গিয়ে প্যাটারসনের চোখ কপালে উঠলো, ঈশ্বরের কাছে আর্চার মনে মনে প্রার্থনা করল যেন ব্যর্থ না হয় গ্রেনভিল।

.

০২.

হেলগা রলফ স্নান করছিল, প্লাজা এথিনী হোটেলের সুইটের বাথরুমের বিরাট বাথটবে গরম সুবাসিত জলে গা ডুবিয়ে। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মহিলাদের অন্যতম। জল নাড়াচ্ছিল সুন্দর সুগঠিত পা দিয়ে, স্তন দুটো দু হাত দিয়ে মুঠি করে ধরে অনুভব করতে চাইছিল, ওগুলো এখনো শিথিল হয়ে নুয়ে যায়নি।

ভি. আই. পি. ভাবে সব সময় ঘুরলেও, দারুণ তোয়াজ এয়ার হোস্টেসরা করলেও হেলগার দূরপাল্লার যাত্রা ভাল লাগে না কখনই, সেই যাত্রায় বিশেষ করে যদি সঙ্গী হয় স্ট্যানলী উইনবগ, যাকে অপছন্দ করে হেলগা, আর ফ্রেডরিক লোমান, বৃদ্ধটি বিরক্তিকর। কিন্তু ঠিকমত ইলেকট্রনিক করপোরেশন চালাবার জন্যে কোনমতেই এ দুজনকে বাদ দেওয়া যায় না।

যখন কর্পোরেশনের প্রেসিডেন্ট হয়েছিল হেলগা তখন ভেবেছিল একবার বিদায় দিই এই দুজনকেই। কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত বুঝতে পেরেছিল এতই কাজের লোক দুজনে, যে বাদ দেওয়াটা হবে বোকামি।

প্রথমে মাথায় ঢোকায় কথাটা লোমানই,ইলেকট্রনিক কর্পোরেশনের একটা ব্রাঞ্চ ফ্রান্সে খুললে কেমন হয়? এরা উৎসাহিত বোধ করে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথাবার্তায়। অনেক বেশি সুবিধে। রাজীও হল হেলগা। বাকী কথাবার্তা সেরে নেবার জন্যে লোমান বলেছিলেন উনি আর উইনবর্গ চলে যাবেন ফ্রান্সে।

চমকে দিয়ে ঐ দুজনকে হেলগা বলেছিল প্যারিসে সেও যাবে। কিন্তু এমন ক্লান্তিকর সাতঘণ্টা ওড়ার পরে, বাথটবে গা এলিয়ে হেলগা ভাবছিল, বোধ হয় ঐ সিদ্ধান্তটা নেওয়া বোকামিই হয়ে গেছে।

যতই মধুর শোনাক না কেন বসন্তে প্যারিস যদি কাটাতে হয় নিঃসঙ্গ বা দুটো মাথা মোটা একঘেয়ে বুড়ো কারবারী সঙ্গী এবং বুঝতে পারা যায় যে সব সময়ে ওৎ পেতে আছে ফরাসী সংবাদপত্রের লোকেরা, নিশ্চয়ই তাহলে ভাল লাগবে না।

হেলগা পা দিয়ে জল নাড়তে নাড়তে চিন্তা করছিল, ও বিধবা হয়েছে প্রায় পাঁচ মাস হল। কোটি কোটি টাকার সিন্দুকের রহস্যের চাবিকাঠি হেরমান রলফের এখন হাতের মুঠোয়। কয়েক কোটি ডলার আছে ওর নিজেরই। বিরাট প্রাসাদ প্যারাডাইস শহরে আর বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি নিউইয়র্কে, আর তার ডিলুক্স মডেলের বাগানবাড়ি আছে সুইজারল্যান্ডে। খবরের কাগজে ওর প্রত্যেকটি কাজের কথা ছাপা হয়ে যায়, তাই এই রিপোর্টারদের ও ঘেন্না করে।

মাতালের কাছে মদের আকর্ষণের মত হেলগার কাছে সেক্সও এক পরম আকর্ষণীয় বস্তু। হেরমান রলফ মারা যাওয়ার পর ভেবেছিল ও মনোম একজনকে বেছে নেবে স্বামী হিসেবে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এটাও ভাবল যে কোন সদিচ্ছা তার নেই খবরের কাগজে শিরোনাম হয়ে ওঠার মতো, ফলে স্বামী বেঁচে থাকতেই পোপন প্রেম যেভাবে চালাতো, ধরে রইল সেই পথই।

 তথাকথিত তার এই পাঁচ মাসের স্বাধীন জীবনে প্রেমিক জুটেছে তিনজন–একটা কুলি নিউইয়র্ক হোটেলের, একটা বুড়ো, ভাবাই যায় না যুবকদের মত তার যৌন ক্ষমতা, আর একটা হিপি গায়ে দুর্গন্ধওলা, ওকে হেলগা গাড়িতে লিফট দিয়েছিলো। আর হিপিটা হেলগাকে গাড়ির পেছনের সীটে শুইয়ে ধর্ষণ করেছিল জোর করে।

কিন্তু এভাবে তো চলতে পারে না, শেষ নেই আমার অর্থের, সবকিছুই আছে। যৌন সঙ্গীবাদে। একটা সুন্দর প্রেমিক স্বামী জোগাড় করতেই হবে যাকে পাওয়া যাবে চাইলেই হাতের কছে। ছুটতে হবে না গোপন কারবারে, অতএব চাই স্বামী।

 হেলগা বাথটব থেকে উঠে দাঁড়ালো আয়নার সামনে,বয়স চুয়াল্লিশ অতএব তার ওপর বয়স করুণা বর্ষণ করে চলেছে, তাকে যে ডাক্তার বিউটিসিয়ান আর পরিমিত আহারও যে সাহায্য করছে না তা নয়। উন্নত বুক, দীর্ঘল শরীর, নিতম্ব সরু, সোনালী চুল, নীল বড় বড় চোখ, পুরুষ্ট ঠোঁট, নিখুঁত রঙ, হেলগাকে দশ বছর কম দেখায়। কিন্তু লাভ কি এতে? হেলগা চিন্তা করতে লাগল গা মুছতে মুছতে। যদি পুরুষের পুজোই না পায় এই বরতনু তবে কিসের প্রয়োজন।

ঘরে ঢুকে দেখল জামা কাপড় সব আয়া গুছিয়ে রেখেছে। হোটেলে খাবার ঘরে লোমান আর উইনবর্গের সঙ্গে খেতে যাবে বলেও রেখেছে। একটা আঁটো কালো সিল্কের পোশাক পরে কালো অস্ট্রিচের পালকের স্টোল গায়ে জড়িয়ে হেলগা নীচে নেমে গেল।

 টেবিলে লোমান আর উইনবর্গ অপেক্ষা করছিল। হেলগা বুঝতে পারছিল ঘরের সবাই তাকাচ্ছে ওর দিকে। ব্রনর ক্ষত চিহ্নিত মোটা সোটা একজন মার্কিনী বিশেষ করে খেতে খেতে ওর দিকে বার বার তাকাচ্ছিল।

মনে মনে প্যাটারাসন ঘাড় নাড়লো, ঠিকই বলেছে আর্চার, খুব সাবধানে এই চিড়িয়াটাকে খেলাতে হবে। মাথা ঝুঁকিয়ে দুজন বুড়োর সঙ্গে কথা বলার সময় একেবারে স্থির নিশ্চল হল প্যাটারসন।

 ডবল গ্লাস হুইস্কি খাওয়া শেষ করে গ্লাস নিয়ে প্যাটারসন নাড়াচাড়া করছিল। হেলগাকে রাত দশটার পর ঐ বুড়ো দুটো লিফট পর্যন্ত পৌঁছে দিল।

 হেলগা চিন্তা করছিল হে ঈশ্বর, আবার সেই দুটো ঘুমের পিল, কবে যে পূর্ণ হবে মনের ইচ্ছে।

সুইটে ঢুকে জানলার ভারি পর্দা সরিয়ে দৃষ্টি মেলে দিল নিচের রাস্তায়, গতিময়, আলোকোজ্জ্বল রাতের প্যারিস। উত্তেজনা, মানুষের মিছিল, অথচ নিঃসঙ্গ একা অবস্থায় একজন মহিলা শুধু দেখা ছাড়া আর কি করতে পারে।

পর্দাটা এক ঝটকায় টেনে বিরাট প্রাণহীন ঘরটাতে হেলগা চোখ বোলালো। একটা স্বামী চাই, আর এটাই একমাত্র সমস্যার আসল সমাধান। স্বামী চাই।

সব পোশাক ছেড়ে, হেঁটে গেল বাথরুমে নগ্ন অবস্থায়। ঘুমের ওষুধের শিশিটা বের করল আলমারী খুলে। মুখে ফেলে দিলো দুটো, একবার নিজের নগ্ন শরীরটা আয়নায় দেখল।

 বসন্তের প্যারিসে তাহলে এই হল তার প্রথম রজনী। ছোট একটা শোবার পোশাক পরে বেডরুমে গিয়ে নেতিয়ে পড়ল বিছানায়। এমন হয়েছে কতবার, ঘুমের পিল খেতে হয়েছে স্বামীর বদলে, হেলগার স্মরণে নেই।

ঘুমিয়ে পড়ল স্বামীর কথা চিন্তা করতে করতে।

হেলগা পরদিন সকালের সোনা রোদে বেরিয়েছে বেড়াতে, একটা ছুঁচো মার্কা প্রেস ফটো গ্রাফার ওৎ পেতে ছিল। হেলগা দূর থেকেই হাসি দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানালো। প্রেসকে চটাতে নেই তা অভিজ্ঞতায় জেনেছে।

হেলগা সাঁজে লিজে রাস্তার রেস্টুরেন্টে চলে এসেছে হাঁটতে হাঁটতে। হ্যাঁ, সত্যিই বসন্তের নিজস্ব রূপ আছে প্যারিসের।

 বসল খালি টেবিল দেখে। ওয়েটারটা ছুটে এল ওর দামী ফারের পোশাক দেখে। হেলগা ভোদকা মার্টিনির অর্ডার দিল। সে দেখতে লাগল মানুষের বিচিত্র মিছিল। বোকা বোকা মুখের টুরিস্ট, পাথর সেট করা চশমা আর বিচিত্র টুপি পরা। বৃদ্ধা আমেরিকান হেলগার ভালই লাগছিল। একসঙ্গে খাবার কথা বলেছিল উইনবর্গ, কিন্তু ইচ্ছে করে এড়িয়ে গেছে কেনাকাটার নাম করে। খাবে একা একা সেও ভাল, ঐ বুড়োদের ব্যবসার কচকচানির চেয়ে তো সেটা ভাল।

 অথচ বসন্তের প্যারিসে কি একা একা সুন্দরী নারী যেতে পারে।

 ব্যাগ থেকে সিগারেট বের করল। মাত্র ঠোঁটে লাগিয়েছে, এমন সময় ক্লিক করে একটা শব্দ হল, আলো জ্বলে উঠলো হীরে বসানো সোনার লাইটারে। সিগারেটটা শিখায় ডুবিয়ে মুখ তুললো হেলগা।

 একঘন্টা আগে থেকেই যে গ্রেনভিল অপেক্ষা করছিল হোটেলের বাইরে আর ওকে অনুসরণ করে এত দূর এসেছে, এটা জানার কথা নয় হেলগার।

 হেলগা সেই পুরুষটির বাদামী চোখের দিকে তাকালো, এক উত্তপ্তকামনার ঢেউ এসে হেলগার মধ্যে আছড়ে পড়ল। এই তো একজন মানুষের মত মানুষ। নিখুঁত সব দিক দিয়ে। স্যুট ক্রিম রঙের, কালোনীল টাই, হাতে সোনা, প্ল্যাটিনামের চেন, লোমশ কবজি, হাসির ফাঁকে মুক্তোর মত দাঁত।

দুজনকে দুজনে দেখতে লাগল।

প্যারিসের বসন্ত। উপভোগ করতে চায় সকলেই প্রাণ দিয়ে, কিন্তু এর চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারে না সঙ্গী না থাকলে। গ্রেনভিল সুরেলা গলায় বলল।

হেলগার প্রশ্ন আপনি কিন্তু নিঃসঙ্গ নন নিশ্চয়ই।

 আমিও আপনাকে কি ওই প্রশ্নটা করতে পারি?

হাসল হেলগা, পারেন এবং আমি নিঃসঙ্গ।

 দারুণ হয়েছে। তাহলে দুজনেই আমরা এখন আর নিঃসঙ্গ নই।

হাসল হেলগা, বহুবার অতীতে মনের মত এই ধরণের মানুষের সংস্পর্শে এসেছে, পরে করতে হয়েছে অনুতাপও। অথচ পেটে আজ মদ, বাইরে রোদের, মিষ্টি আমেজ, প্যারিসের মাতাল আবহাওয়া বেপরোয়া করে তুললো হেলগাকে।

প্যারিসে প্রায় এক বছর আসিনি। মনে হচ্ছে প্যারিস একটুও বদলায়নি।

কাঁধ ঝাঁকালো গেনভিল, স্থির হয়ে কি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে? বদলেছে প্যারিস, বদলায় সব কিছুই। দেখুন এই লোকগুলোকে, গ্রেনভিল হাত তুলে দেখাল টুরিস্টদের স্রোতের দিকে, আজকাল কি মনে হয় আমার জানেন, বেমানান হয়ে উঠছে আপনার আমার মত লোকেরাই। এই সব নোংরা পোশাক পরা, চুল বড় বড়, গিটার হাতে–এরাই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে পৃথিবীতে। রুচিবান আমাদের মত লোকেরা, যারা তফাৎ বুঝতে পারে ভাল মন্দের, তারাই পিছু হটে যাচ্ছে ক্রমশঃ। তরুণ এই যে প্রজন্ম, এরা যদি মূল্য না বুঝতে পারে জীবনের ভাল দিকগুলোর, যেমন বুঝতে পারি আমি আপনি, তবে তারা কি বুঝতে পাচ্ছে পারে না সেটাও এমন কি, কি যে হারাচ্ছে তাও জানে না।

 গ্রেনভিলের কথায় তেমন মনোযোগ না দিয়ে শুধু হেলগা তাকে লক্ষ্য করে যাচ্ছিল। কথা বলুক, জানে বলতে। ঘুমপাড়ানিয়া ভাব সুরেলা কণ্ঠস্বরে।

একটানা দশ মিনিট কথা বলার পর হঠাৎ চুপ করে গেল গ্রেনভিল, আপনাকে বড় বিরক্ত করলাম।

আদৌ নয়। ভাল লাগছে আপনার কথা শুনতে।

হাসল গ্রেনভিল। পুরুষের মত পুরুষ বটে, চিন্তা করল হেলগা।

হয়তো কারুর সঙ্গে আপনার দেখা করার আছে। যদি না থাকে, তাহলে লাঞ্চ একসঙ্গে খেলে কেমন হয়? কাছেই একটা খুব ভাল রেস্টুরেন্ট আছে।

হেলগা দেখল লোকটা দারুণ খেলোয়াড়, এগোতে চাইছে এত তাড়াতাড়ি। কিন্তু ভালও লাগল। ওর চেয়ে কয়েক বছরের ছোটই লোকটা হবে। হেলগাকে দেখছে মুগ্ধদৃষ্টিতে। যাওয়াই যাক।

মন্দ হয় না। তার আগে পরিচয় জানা উচিত আমাদের পরস্পরের। আমি হেলগা রলফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কথাটা বলেই হেলগা ওর মুখের দিকে তাকাল, কোনো প্রতিক্রিয়া হয় কিনা তা দেখার জন্যে। ওর নাম বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শোনা মাত্র লোকেরা চকিত হয়ে ওঠে সম্ভ্রমে। অথচ এর ব্যতিক্রম গ্রেনভিল।

ক্রিস্টোফার গ্রেনভিল, ওয়াটারকে হাতছানি দিয়ে ডেকে নিজের কফি আর হেলগার । মার্টিনির দাম চুকিয়ে দিয়ে বলল, অপেক্ষা করুন এক মিনিট, গাড়িটা নিয়ে আসি আমার।

 ওর চলে যাওয়া চেহারাটা হেলগা লক্ষ্য করতে লাগল। লম্বা, দেহ সুগঠিত, তার নিঃশ্বাস ঘন হল। পুরুষ বন্ধু অতীতে বাছতে গিয়ে ভুল করেছে অনেকবার সে। যে ছেলেটাকে বন শহরে ফেলে পালিয়ে এসেছিল, দেখা গেল তার কারণ, ও সমকামী। নাসুর দো-আঁশলা পুরুষটা ছিল ডাইনী-ডাক্তার। তবে মনে হচ্ছে, এবার ভুল হবে না।

 গ্রেনভিল রাস্তার ওপর থেকে হেলগাকে হাত তুলে ডাকল। একটা গাঢ় নীল রঙের দারুণ সুন্দর মাজোরাটি গাড়ি। হেলগাকে দরজা খুলে সাহায্য করল বসতে। প্রায় মাঝ রাস্তায় গাড়ি দাঁড়িয়ে, চারদিক থেকে গাড়ির হর্ণ বাজতে লাগল। ভ্রূক্ষেপ না করে গ্রেনভিল হেলগাকে নিয়ে ধীরে সুস্থে এগোল।

গ্রেনভিলের তির্যক মন্তব্য প্যারিসের লোকগুলো ভদ্রতা জানে না।

 হেলগা বলল, প্যারিসে গাড়ি চালাতে আমার আতঙ্ক হয়।

সুন্দরী মেয়েদের গাড়ি চালানো উচিতই নয়, সব সময় একজন সঙ্গী থাকা দরকার, গ্রেনভিলের কথার উত্তাপ হেলগার হৃদয় স্পর্শ করল।

 লিজে এভিনিউয়ের শেষে সাঁজে সেইন নদীর বাঁ তীরে গিয়ে ট্রাফিক পার হয়ে দারুণ কায়দায় গাড়ি পার করলো গ্রেনভিল। হেলগার গাড়িটা খুব পছন্দ।

মাজোরাটি গাড়ি, তাই না? কখনও চড়িনি এর আগে।

প্যাটারসনের কত খরচ হবে এই গাড়ির জন্য, সে কথা গ্রেনভিল চিন্তা করতে লাগলো।

 দারুণ চলে ফাঁকা রাস্তায়, শহরে…।

গলির রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করালো কয়েক মিনিট পরে, এবার সমস্যা পার্কিংয়ের। এক জায়গায় অতি কষ্টে চট করে গাড়ি ঢুকিয়ে দিয়ে নামল দুজনে। হেলগার হাত ধরে বলল হাঁটতে হবে একটু, তারপরে ভাল লাগবে। নিশ্চয়ই খুব ক্ষিদে পেয়েছে।– ভাল লাগবে। নামজাদা প্যারিসের হোটেলে হেলগার ঘোরা অভ্যেস। এই রকম একটা। ভোজনালয় আর নোংরা, পর্দা নোংরা, দরজার পেতলের কাজ ময়লা ধরা,হায় ভগবান। যাই হোক যখন এসে পড়েছি। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দারুণ ভিড় দেখা গেল, বেশি বয়সের ফরাসী লোকগুলো খাচ্ছে গোগ্রাসে।

কাউন্টারের পাশ থেকে গ্রেনভিলকে দেখেই জালার মত একটা পেটমোটা লোক এল এগিয়ে, মঁসিয়ে গ্রেনভিল? দেখছি তো ঠিক? আসেন নি কদ্দিন।হাসতে হাসতে বলল গ্রেনভিল, এনেছি এক বিশিষ্ট বন্ধুকে…মাদাম রলফ তারপর বলল, হেলগার দিকে ফিরে, এ হল ক্লদ, আগে হেডকুক ছিল টুর দ্য আরজেন্টের। বহুদিনের জানাশোনা আমাদের।

 হেলগা একটু হতচকিত হয়ে হাত মেলালো ক্লদের সঙ্গে। ক্লদ একটু বিশেষ খাবার চাই,– তবে যেন খুব গুরুপাক না হয়, দিও হালকার ওপরে। বুঝেছ?

 মঁসিয়ে গ্রেনভিল নিশ্চয়ই, আসুন এদিক দিয়ে, একটা ছোট্ট ছিমছাম ঘরে নিয়ে গিয়ে ওদের বসালো, টেবিল সাজানো চারজানের জন্যে। নিরালা বেশ এবং সাজানো নিখুঁত।

এতটা আশা করে নি হেলগা, চেঁচিয়ে উঠল প্রায়, কিন্তু ভারী চমৎকার এ জায়গাটা তো। ভাবতেই পারি না আমি প্যারিসে এমন সুন্দর জায়গা আছে।

ক্লদ আর গ্রেনভিল হাসলো পরস্পরের দিকে চেয়ে। আছে এবং প্রিয় জায়গা আমার এটা।…বলুন কি খাবেন এবার? মাছ পছন্দ হয়?

 হ্যাঁ।

ক্লদকে বলল গ্রেমভিল, তাহলে দুজনের জন্যে বেলুন দুটো করে আর সোল কার্ডিনাল। মাসকাঁদেৎ তার আগে।

 ক্লদ চলে গেল অর্ডার নিয়ে। হেলগাকে আশ্বাস দিল গ্রেনভিল, হতাশ হতে হবে না আপনাকে। এখানকার সোল কার্ডিনাল খাবারটা প্যারিসের বিখ্যাত।

গ্রেনভিল এর ফাঁকে হেলগাকে সিগারেট বাড়িয়ে দিল।কেসটা দারুণ সুন্দর তো?

হ্যাঁ, একজন অস্ট্রিয়ার কাউন্ট আমাকে প্রেজেন্ট করেছিলেন এটা, তার একটু সামান্য উপকার করেছিলাম। চিন্তা করল গ্রেনভিল, সেই মোটা মহিলার সঙ্গে বলরুমে নাচা যে কত শক্ত তা বোঝানো কঠিন।

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে হেলগা দেখে নিল একবার গ্রেনভিলকে, ব্যাঙ্গের ঝিলিক যেন ওর বাদামী চোখে।

তা আপনি প্যারিসে কি করছেন?

ব্যবসা আর আনন্দ উপভোগ করতে, তারপর নিজের ব্যাপারে উদাসীনতা দেখিয়ে বলল, কি জন্য এসেছেন আপনি? জামা কাপড় কিনতে?

ব্যবসা করতে আমিও এসেছি। তবে কাপড়ও কিনবো।

 প্যারিসে ব্যবসা করতে এসেছেন আপনার মত সুন্দরী মহিলা, এ আমি বিশ্বাস করতে পারি না সব বাজে কথা বলছেন।

তারপর কপাল চাপড়ে হঠাৎ বলল, হায় হায় আমি কি হাঁদা। মাদাম রলফ, তাই না? বিখ্যাত মাদাম রলফ?

গুড়োবরফের ওপর বসানো ঝিনুক এল। ঝুঁকে পড়ে ক্লদ বলল, এগুলো অত্যন্তউৎকৃষ্ট শ্রেণীর ঝিনুক, এদের আমি খাওয়াই নিজের হাতে।

 সত্যিই খেতে চমৎকার। গ্রেনভিল প্রশংসায় মাথা নাড়ল।ক্লদ অন্য খাবার আনতে চলে গেল।

গ্রেনভিল হেসে বলল, তাহলে সেই কিম্বদন্তীর মাদাম রলফ আপনিই। আপনার কথা সব কাগজেই থাকে। খুব গর্বিত মনে করছি নিজেকে আর দুজনে আমরা উঠেছি একই হোটেলে, কি আশ্চর্য।

 গ্রেনভিলের মুখের দিকে তাকাল হেলগা, অত্যন্ত ধনী করে দিয়েছে আমাকে ভাগ্য। তবে আমার কাছে বড্ড নীরস লাগে জীবন, এই আমার পজিশনে।

 তার দিকে গ্রেনভিল তাকিয়ে সহানুভূতি দেখাল।

হ্যাঁ বুঝতে পারছি আমি, খবরের কাগজের লোকেদের, সজাগ দৃষ্টি স্বাধীনতা বলতে গেলে থাকারই মত অথচ দায়িত্ব প্রচুর, মাথা নেড়ে একটা ঝিনুক খুলতে খুলতে বলল গ্রেনভিল, হা অসুবিধে হয় না বুঝতে, আপনার অবস্থা।

মনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া এই লোকটার সম্বন্ধে হেলগা ক্রমশঃ আগ্রহী হয়ে উঠছে। হঠাৎ দুম্ করে প্রশ্ন করে বসলো কি ব্যবসা আপনার?

এটা সেটা। প্লীজ খাবারটাকে নষ্ট করবেন না ব্যবসার মত নীরস কথা দিয়ে। আপনার পদতলে প্যারিস। পৃথিবীর উত্তেজকশহরগুলোর মধ্যে তুলনাহীন প্যারিস।সঙ্গে সঙ্গে প্যারিসের ইতিহাস বলতে গ্রেনভিল শুরু করল আর হেলগা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতে লাগল। কথা বলার ফাঁকে সোল কার্ডিনাল চলে এল। খাওয়া শেষ করে কফিতে চুমুক দেওয়া পর্যন্ত কথা বলে গেল একটানা গ্রেনভিল।

এত আনন্দ পাইনি বহুদিন খাবার খেয়ে, আর শিখিও নি এত কিছু হেসে বলল হেলগা।

গ্রেনভিল তাচ্ছিল্যের ভঙ্গীতে বলল, হ্যাঁ মন্দ ছিল না খাবার। আর আমি কথা বলি, তবে মনের মত সঙ্গী না পেলে বলি না। আচ্ছা উঠতে হবে এবার? এক জায়গায় ব্যবসার ব্যাপারে যেতে হবেই আমাকে। চলুন হোটেলে পৌঁছে দিয়ে আসি আপনাকে।

 ওরা বেরিয়ে পড়ল টাকা পয়সা চুকিয়ে। গাড়ি স্টার্ট করার আগেবলল, এর পুনরাবৃত্তি আপনি পছন্দ করবেন কিনা জানি না। কম কথা বলতে চেষ্টা করবো আমি। একটা ছোেট্ট রেস্টুরেন্ট আছে ফনতেন রুতে। ওখানে কাল রাতে ডিনার খেলে কেমন হয়।

 একটুও দ্বিধা করল না হেলগা। রহস্যময় লাগছে লোকটাকে, ভালও লাগছে, প্লাজা এথিনী হোটেলে পৌঁছে দিল গ্রেনভিল। হেলগাকে লিফট পর্যন্ত এগিয়ে দিল।

আমি কি তোমাকে হেলগা বলে ডাকতে পারি?…ভারী মিষ্টি নাম,বলল গ্রেনভিল।

ক্রিস নিশ্চয়ই ডাকবে।উত্তর দিল হেলগা।

 তাহলে ঐখানেই দেখা হবে কাল রাতে আটটার সময়।

হেলগা গ্রেনভিলের হাত মৃদু স্পর্শ করে উঠে গেল লিফটে।

জো প্যাটারসন একটা ঘেরা জায়গায় বসে অবাক হয়ে দেখছিল ওদের।

 হেলগা চলে যেতেই গ্রেনভিল এগিয়ে গেল প্যাটারসনের দিকে।

 মিঃ প্যাটারসন চিন্তা করবেন না…আর কয়েকটা দিন, তারপর হাঁ করা অবস্থাতেই প্যাটারসনকে ও ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। একটা খাম আর কাগজ চাইল রিসেপশন ডেস্কে।

 লিখল কার্ডে, হেলগা, তোমার অতুলনীয় রূপ আর সঙ্গদানের জন্য ধন্যবাদ।

খামে কাগজটা ভরে হেলগার নাম লিখল ওপরে, মাদামরলফকেবায়োটালাল গোলাপ পাঠিয়ে দেবেন, আমার নামে বিলটা হবে, গ্রেনভিল মেজাজের মাথায় কথাটা বলে হোটেল ছেড়ে বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে পড়ল। গ্রেনভিল ও আর্চার সেদিন সন্ধ্যে বেলায় প্যাটারসনের সঙ্গে দেখা করল জর্জ ফিফ হোটেলের ডাইনিং হল-এ। প্যাটারসনের মেজাজটা খুব ভাল, তবে একটু মাতাল।

আর্চার তুমি ঠিক লোককে বেছেছে। গ্রেনভিলকে লক্ষ্য করে খাবারের অর্ডার দেবার পর বলল, তুমি সত্যিই দারুণ, তুখোড়। ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি তুমি এগোতে পারবে।ওই চিড়িয়াটির মাথা তুমি ঘুরিয়ে দিয়েছ। এখন ও লটকে গেছে।

 ভ্রূ কুঁচকে গ্রেনভিল বলল, মিঃ প্যাটারসন এটাই আমার পেশা।

হ্যাঁ, তুমি ঠিক দারুণ কাজের লোক।

প্যাটারসন খাবার খেতে খেতে বুঝিয়ে দিল কি করতে হবে গ্রেনভিলকে। কিভাবে তৈরি হবে। হলিডে ক্যাম্প, দক্ষিণ ফ্রান্সে কত কষ্ট করে এক টুকরো জায়গা জোগাড় করতে পেরেছে কাজে হাত দেওয়া যাবে বিশ লাখ ডলার পেলেই। শুধু এখন কেরামতি গ্রেনভিলের। টাকাটা হেলগার কাছ থেকে বের করতে পারলেই কেল্লা ফতে। ছাপানো হয়ে গেছেনশা ইত্যাদি।ব্যাপারটা দারুণ ঝকমকে। গ্রেনভিল যেন ওগুলো পড়ে নেয় ঠিকমতো।

মাথা নাড়লো গ্রেনভিল। প্যাটারসন, বলে চলল ওকে যদি একবার বঁড়শিতে গাঁথতে পারো, তবে অন্য জায়গাও খোঁজা যাবে। কর্সিকার একটা সুন্দর জায়গার ওপর নজর আছে আমার। বলেও রাখতে পারো ওকে। 

 এতদূর শোনার পর আর্চারের মনে হল প্যাটারসন বড় বাড়াবাড়ি করছে, একটু বাস্তব জগতে ওকে নামিয়ে আনা উচিত, মিঃ প্যাটারসন। আমার উচিত যে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া, হেলগা এক কঠিন ঠাই। টাকা ঢাললেও ওই ব্যাপারে কিন্তু ঘুমন্ত পার্টনার হয়ে থাকবেনা, মাথা গলাবেই। কন্ট্রোলও হয়তো চাইবে খানিকটা।

 চেঁচিয়ে উঠলো প্যাটারসন, আমার ব্যবসায় একটা বাজে মেয়ে মানুষকে মাথা গলাতে দেবো না। তুমি ওকে বলে দেবে গ্রেনভিল, ও তার টাকার শতকরা ২৫ ভাগ পাবে, কন্ট্রোল না।

 গ্রেনভিল আর্চারকে চমকে দিয়ে মিষ্টি করে বলল, কোনো সমস্যা এতে হবে বলে মনে হয় না। পূর্ণ বিশ্বাস আমার ওকে আমি রাজি করাতে পারবো আপনার শর্তেই।

প্যাটারসন খুশিতে ডগমগ হয়ে ওর পিঠ চাপড়ে দিল, কথা হল এই তো। পড়ে নাও এগুলো সব, তারপর এগোবে কিভাবে ঠিক করে নাও। টাকা ওর কাছ থেকে বের করতে সময় কত লাগবে বলে মনে হয়?

 কাঁধ ঝাঁকালো গ্রেনভিল, খাবার এল নতুন, গ্রেনভিল খেতে খেতে বলল, তাড়াহুড়ো করা

এ ব্যাপারে বুদ্ধিমানের কাজ হবে না মিঃ প্যাটারসন। তবে দিন দশেক লাগবে বলে মনে হয়।…একবার বিছানায় ওকে তুলতে হবে।

 বাঃ চমৎকার। তবে একটু টেনে চললে খরচের দিকটা ভাল হয়।

খাবারের ওপর গ্রেনভিল ছুরি চালাতে চালাতে বলল, বিশ লাখ ডলারের পিছনে ছুটতে হলে এসব ছোটখাট খরচে বিচলিত হলে চলে না। মাদাম রলফের ধারণা হয়েছে আমি বড় লোক। বজায় রাখতে হবে সেই ঠাঁটটা।

নিশ্চয়ই, তবে খেয়াল রেখো, আমি তো আর টাকার গাছ নই।

কেই বা হতে পারে আজকালকার দিনে টাকার গাছ? গ্লেনভিল কথাগুলো বলে সম্পূর্ণ অন্য কথায় চলে গেল। রাতের প্যারিস আর তার রঙ্গরস।

খাওয়া শেষ হলে একটা কাগজে নামকরা এক বেশ্যাবাড়ির ঠিকানা লিখে প্যাটারসনের হাতে দিল, গল্পের মধ্যে এরনাম করতে, প্যাটারসন যাবার জন্যে উৎসুক হয়ে উঠেছে ঠিক আছে, ওখানে গিয়ে ক্লদের খোঁজ করবেন।

প্যাটারসন চলে যেতেই গ্রেনভিল ওয়েটারকে ডেকে আরও একটু ব্র্যান্ডি দিতে বলল।

 বাজে নোংরা টাইপের লোক, কটাক্ষ করল গ্রেনভিল প্যাটারসন সম্বন্ধে।

 তা ঠিক, কিন্তু রুজিরোজগারের একমাত্র আমার ভরসাস্থল বর্তমানে, উত্তর দিল আর্চার।

 হেলগা এই হাস্যকর ব্যাপারে মত দেবে বুঝি, একেবারেই তুমি বিশ্বাস করো না?

মাথা নেড়ে গ্রেনভিলের প্রশ্নের উত্তরে সায় দিল আর্চার, বিশ্বাস করি না আদৌ, কিন্তু প্যাটারসন যতদিন মনে করবে হেলগা, টাকা দিতে পারে আমার লাভ ততদিনই। একশো ডলার পাব সপ্তাহে আর তুমি ওর পয়সায় মৌজ করে বেড়াতে পারবে।

আর যখন হেলগা না বলবে তখন?

 একটু কঁধ ঝাঁকিয়ে আর্চার বলল, তুমি তখন ছুটবে অন্য কোন ধনী বিধবার পেছনে আর খুঁজে বেড়াবো আমি উদ্যমী নতুন কোনো ব্যবসায়ীকে।

গ্রেনভিল কফিতে চিনি ফেলে বলল, তুমি আদৌ এ ব্যাপারটায় সিরিয়াস নও, তাই না।

ওর দিকে আর্চার তাকাল, সত্যকে মেনে নেওয়াই কি ভাল নয়।

 এটা তো পরাজিতের মনোভাব। খুঁটিয়ে দেখা যাক ব্যাপারটা। পৃথিবীর সেরা একজন ধনী মহিলাকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমি জয় করে ফেলেছি। দারুণভাবে চাইছে ও আমাকে শয্যাসঙ্গী করতে। প্রেমিকের আসনে একবার বসতে পারলে আর খুব বুদ্ধিমানের মত এগোলে ওর কোটি কোটি টাকার নাগাল পেয়ে যাবো আমি। স্বীকার করছি এইসব ফন্দী আঁটা যে ষড়যন্ত্র করা আমার লাইনের কাজ নয়। তোমার কাজ বলেই ওটা আমার ধারণা। শুধরে দেবে ভুল বললে, কেমন? এবং তারপরে আর বলার কিছু নেই।

বলে যাও, থেমো না, অনেক কিছু মনে হচ্ছে বলতে চাও তুমি, মনে মনে আর্চার সাবধান হয়ে উঠলো।

আমি বলি কি আমরা প্যাটারসনকে বাদ দিই, একসঙ্গে তুমি আর আমি পার্টনার হই।হেলগার কাছ থেকে যা টাকা পাওয়া যাবে ভাগ করে নেবো দুজনে।

আর্চার অনেকক্ষণ চিন্তা করে মাথা নাড়লল, ক্রিস খুব ভাল হবে না জিনিষটা। প্যাটারসনের টাকা পয়সার সাহায্য না পেলে আমরা এগোতে পারবনা এক পাও। মাজোরাটি গাড়ি চড়া তোমার পক্ষেও হবেনা বা থাকা হবেনা প্লাজা এথিনীতে। আর অর্থকষ্টের শেষ থাকবেনা আমার। মানছি যে প্যাটারসনকে বাদ দিলে ভালই হতো আমাদের পক্ষে, কিন্তু টাকার কি হবে? আর একটা কথা হেলগার, তুমি তো শুধু একটা দিকই দেখেছ আর ভাল দিক সেটা। আমি ওকে চিনি। অন্যদিকে আছে ওর ধূর্ততা, কঠোরতা, আর টাকা পয়সা ও দারুণ বোঝে। ওর সম্বন্ধে বলে রাখি কয়েকটা কথা। একজন নামকরা অ্যাটর্নি ছিলেন হেলগার বাবা এবং আইন অর্থনীতিতেও ওর নিজের ভাল ডিগ্রী আছে। ও মউসানাতে ওর বাবার ফার্মে কাজ করেছে, আমিও একজন পার্টনার ছিলাম ওখানে, তাই আমি জানি ওর ক্ষমতা কতটা। ওকে হালকা ভাবে কখনও নিও না। ও মুহূর্তের মধ্যে জালিয়াতির ব্যাপার ধরে ফেলতে পারে। খুব ভাল বুদ্ধিও। তবে দুর্বলতাও আছে ওর। আর সেটা হল সেক্স। ওর কাছে প্রাধান্য পাবে না ওর দেহগত প্রেমের ব্যাপারটা, টাকা পয়সার কথা যদি তাতে জড়িয়ে থাকে?

দেখা যাক কি হয় শেষ পর্যন্ত,বললো গ্রেনভিল। তবে ধন্যবাদ এ খবরগুলোর জন্যে। কিন্তু এখনও আমার মনে হচ্ছে প্যাটারসনকে বাদ দেওয়া যেত। বলছি না এখুনি, নয় আগে বধ করি হেলগাকে তারপর। এটা কিন্তু জ্যাক এখন নির্ভর করছে তোমার উপর। বুদ্ধি খাঁটিয়ে তুমি যদি একটা পথ বের করতে পার তবে ওর কাছ থেকে কয়েক লাখ হাতাতে পারবো। আমি এটুকু আশ্বাস দিচ্ছি হেলগাকে আমি সামলাতে পারবো, তবে, তোমায় ছকতে হবে প্ল্যানটা।

আর্চার চোখ আধবোজা করে চিন্তা করতে লাগলো, ও হেরে গেছে শেষ লড়াইয়ে হেলগার কাছে। হয়তো এবার সুযোগ আসছে প্রতিশোধ নেবার, কিন্তু কি ভাবে? চিন্তা করে দেখি,আর্চার বললো।

 আমার কথাও তাই। সময় আছে হাতে দশ দিন। ততদিন টাকা পেয়ে যাবো এই বাজে লোকটার কাছ থেকে। বোঝাব ওকে, উৎসাহ দেব এই বলে খুব এগোচ্ছি আমরা। তারপর ফেলে পালাবো। অতএব চিন্তা করো না।

 ক্রিস তোমাকে কিন্তু আমি আবার সাবধান করে দিচ্ছি, হালকা ভাবে নিও না হেলগাকে। ও দারুণ ধূর্ত।

 গ্রেনভিল হাসল সুরেলা গলায়, যদি তুমি দেখতে কিভাবে ও আমাকে আজ দুপুরে দেখছিল তাহলে ভাবতে না এত। টুকটুক করছে পেকে, পড়বে হাত পাতলেই।

 সেই ছোট্ট ঘরে হোটেলের মধ্যে ফিরে প্রায় দু ঘণ্টা গা এলিয়ে চিন্তা করেও আর্চার কোনো পথ পারল না বের করতে।

শেষ পর্যন্ত রাত এগারোটার খবর শোনার জন্যে ক্লান্তিতে হতাশায় রেডিওটা চালিয়ে দিল। সেদিনের সবচেয়ে বড় খবর হল প্যারিসের ওরাল এয়ারপোর্টে, পাঁচজনকে বন্দী করে রাখা হয়েছে মুক্তিপণ হিসেবে এক কোটি ফ্ৰা না দিলে ছাড়া হবে না ওদের।

রেডিও বন্ধ করে বিরক্ত হয়ে জামাকাপড় ছেড়ে শোবার বন্দোবস্ত করতে করতে হঠাৎ বন্ধ রেডিওর দিকে তাকিয়ে। তার মাথায় একটা চিন্তা এল এটা নাকি একটা বড় কোনো ব্যাপারের

 ছোট্ট রেস্টুরেন্ট ফন্তেন ব্লু প্যালের কাছে একটা গলিতে, নাম রিলেই দ্য ফ্লোরে। মাদাম তোরেন হোটেলের মালকিন, হেলগা আর গ্লেনভিলকে সাদর অভ্যর্থনা জানালেন।

 যত্ন করে হেলগাকে বসিয়ে গ্রেনভিল বলল, আমি আগেই অর্ডার দিয়ে রেখেছি, চিকেন অলিভার ফ্রান্সের বিখ্যাত খাবার তোমাকে খাওয়াবো। খেতে দারুণ আর এ রান্নাটা মাদাম তোরেন খুব কষ্ট করে শিখেছেন। একটা অন্য কিছু পানীয় ততক্ষণে খাওয়া যাক।

 হেলগা একটা দারুণ সুন্দর পোশাক পরেছিল। হাসলো শুধু, প্যারিস সম্বন্ধে প্রায় সব কিছুই জানো তুমি ক্রিস। ভাল লাগছে দারুণ জায়গাটা, বড় বড় হোটেল দেখলে আজকাল আমার গা রি রি করে।

এ কথা মুখে বললেও হেলগা মনে মনে ভাবছিল, খুব রহস্যময় লোকটা। মনে হয় চমৎকার হবে শয্যাসঙ্গী হিসেবেও, তুলনাহীন স্বামী হিসেবেও।

আমি ঘুরতে ভালবাসি। তোমাকে নিয়ে আমার ইচ্ছে ভিয়েনা, প্রাগ মস্কোর রেস্টুরেন্টে রেস্টুরেন্টে ঘুরি। ও সব কথা থাক। শোনো চিকেন অলিভারের কথা। সবার সেরা ফ্রান্সের রন্ধন শিল্পী হলেন অলিভার। রান্না করাও খুব কঠিন, এতে নানা জিনিস দরকার, ডিমের কুসুম দুটো, পুরু সর, মাখন, মদ বানিয়াক, ট্যারাগন, স্যালাড, আরও অনেক কিছু। এই কারণে খেতে এত ভাল হয় যে মাংসটা সব শেষে চুবিয়ে দেওয়া হয় চিংড়ী মাছের সঙ্গে।

মনে হয় এটা পৃথিবীর ব্যাপার নয়, বলল হেলগা।

 অসাধারণ, উপযুক্ত খাদ্য অসাধারণ সুন্দরী মহিলার।

স্তাবকতায় হেলগার মাথা ঘুরে গেল। প্রাথমিক হালকা মদ খাবার সময় হেলগা বলল, ক্রিস, একটা কথা বলল, কি করো তুমি মানে কি করে চলে তোমার?

 আর্চার সকালেই গ্লেনভিলকে ডেকে পাঠিয়েছিল। বলেছিল খুব সূক্ষ্মভাবে একটা ব্যাপার এসেছে ওর মাথায়, তবে ভাবতে হবে আরও এবং কি করে খেলাতে হবে হেলগাকে তার বিস্তারিত বর্ণনা তাকে দিয়েছে। মাথা নেড়ে প্রতিটি কথায় সায় দিয়েছিল গ্রেনভিল।

হেলগাকে নিয়ে আজ রাতে ঘোরাফেরা করে পৌঁছে দিও হোটেলে। কিন্তু ওর সঙ্গে কিছুতেই শুয়ো না। আমি চিনি হেলগাকে, যত ওকে টাঙিয়ে রাখবে তত সাহসী হবে ওকে খেলানো। হোটেল থেকে পরদিন সকালে কেটে পড়বে দুদিনের জন্যে। চিঠি লিখে মিষ্টি করে জানিয়ে দেবে বাইরে যাচ্ছ ব্যবসার কাজে। বেশ তেতে উঠতে দাও ওকে, এবং তাতবেই ও হেলগাকে নিয়ে দুদিন পরে ফিরে যা খুশি তাই করবে। দেখবে তখন ওকে নিয়ে কোন অসুবিধে আর হচ্ছে না।

 গ্রেনভিলের উপদেশটা মনঃপুত হয়েছিল। কাঁধ ঝাঁকিয়ে হেলগার প্রশ্নের উত্তরে বলল, সামান্য কিছু ব্যক্তিগত আয় গ্রেনভিল ট্রাস্ট থেকে আমার আছে। তাতেই খরচ চলে যায় আমার। আমি এখন ব্যবসা পত্তরের ব্যাপারে টাকা জোগাড় করার কাজ করছি একজন ধনী আমেরিকান ভদ্রলোকের হয়ে। কথা বলতে হয় আজেবাজে লোকেদের সঙ্গে। তাদের খোসামোদ করতে হয় টাকা দেবার জন্যে।…দিন কেটে যায় এই করেই। বলা যায় না, কাজটা তো লেগেও যেতে পারে। তাহলে টাকা হয় বেশ কিছু।

জানতে চাইল হেলগা, স্কীমটা কি তোমাদের?

 তুমি ইন্টারেস্টেড হতে পারো এমন কিছু নয়। আর্চারের কথামতো গ্রেনভিল অভিনয় করলো, বাদ দাও, হাতের কাছে এত সুন্দরী সঙ্গিনী থাকলে খারাপ লাগে ব্যবসা বাণিজের কথা চিন্তা করতে।

খাবার এল ঠিক সেই সময়। সত্যিই এত ভাল খাবার কখনও হেলগা খেয়েছে বলে মনে হয়না।

খাবার সময় হেলগা গ্রেনভিলকে কথা বলতে বাধা দিল না। অন্য কথা সে ভাবছিল। গ্রেনভিল যেন সম্পত্তি বেচাকেনার কথা বলছিল। অঢেল টাকা আছে হেলগার। গ্রেনভিলকে এই স্কীমের ব্যাপারে বাড়িয়ে বললে ওকে হাতের মুঠোর মধ্যে পেতে পারবে।

প্যারিসে ফেরার সময় মাজোরাটিতে চেপে হেলগা বলল, সম্পত্তি সংক্রান্ত ব্যবসার এই ব্যাপারটা ঠিক কি? ক্রিস হয়ত আমি আগ্রহী হতে পারি।

মনে মনে হাসলো গ্রেনভিল। সত্যিই এই মহিলাটিকে চিনেছে হাড়ে হাড়ে।

 নিশ্চয়ই না। তোমার রলফ ইলেকট্রনিক নিয়ে তুমি ব্যস্ত থাকো ভীষণ। না…তোমার জন্যে এসব ব্যবসা নয়।

 তুমি সেটা জানলে কি করে? ভাল লাগতেও তো পারে আমার, হেলগা একটু কেঁঝে উঠলো।

বস এর সঙ্গে আমি কথা না বলে আলোচনা করতে পারি না তোমার সঙ্গে। দুঃখিত হেলগা, কিন্তু আমার পক্ষে অন্য কিছু করা চলবে না, তবে তোমাকে আমি বলছি এ বিষয়ে কোনো আগ্রহ তোমার থাকবে না।

হেলগা ভ্রূ কুঁচকে বলল, ঠিক আছে।

তারপর ফন্তের ব্লু জঙ্গলের প্রাচীন ইতিহাস বলতে শুরু করলেন গ্রেনভিল। ভাল লাগছিল না হেলগার। তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল ঐ সম্পত্তি। কেনাবেচার কথাটা, আর ভাল লাগছিল না অন্য কিছুই। আর্চার বলে রেখেছিল এরকমই হবে। যদি ভাল হয় এই স্কীমটা তবে হাতানো যেতে পারে কিছু টাকা। হেলগা ভাবলো আর বাড়তি সুবিধে হল তাতে ও কাছে পাবে তার প্রাণের ক্রিসকে।

প্লাজা এথিনী হোটেলে ফিরে এল। হেলগা, খুবই দুঃখের কথা, ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে আমার বসের সঙ্গে দেখা করার কথা।…ভালই কাটলো সন্ধ্যেটা, বিশেষ করে মধুর সঙ্গের জন্য ধন্যবাদ।

প্যাটারসন একটা কেবিনে বসে সব লক্ষ্য করছিল।

এবং ধন্যবাদ তোমাকেও ক্রিস। ভাল লেগেছে দারুণ, বিশেষ করে ওই খাবারটা।

 ওকে লিফ্ট পর্যন্ত গ্রেনভিল পৌঁছে দিল। আলগাভাবে হাতে চুমু খেয়ে তাকালো হেলগার দিকে গভীর ভাবে।

 রাত এগারোটা। মানসিক সুখ নিয়ে বহুদিন পরে হেলগা ঘুমিয়ে পড়ল আরামে। আমাকে লোকটা ভালোবেসেছে। বিশেষ করে লিটের কাছে তাকানোর পর হেলগা বুঝে নিয়েছে তার প্রেমে পড়ে গেছে গ্রেনভিল। অমন গভীরভাবে কোনো পুরুষ তাকাতে পারে না নারীর দিকে। হায় যদি জানতো হেলগা যে পেশাদার প্রেমিক গ্রেনভিল।

 আঁতকে উঠলো হেলগা বিছানায় শুয়ে। আবার কবে দেখা হবে গ্রেনভিলের সঙ্গে তার? কোন কথা তো হয়নি? ওর সঙ্গ বিনা প্যারিসে দিন কাটানো মুশকিল। গ্রেভিলহীন প্যারিস তার কাছে শোন। নিজের মনেই একটু পরেই বলল, হেলগা উত্তেজিত হয়ো না, তোমাকে ও ভালোবেসে ফেলেছে, কোথায় যাবে। নিজের থেকেই কালকেই টেলিফোন করবে।

অথচ ঘুম আসছে না দুশ্চিন্তায়। ঘুমের ওষুধ শেষ পর্যন্ত খেতেই হল।

 পরদিন সকাল দশটায় ঘুম ভাঙলো। কফি নিয়ে বসেছে এমন সময় টেলিফোন এল। টেলিফোন ধরলো লাফিয়ে গিয়ে, রিসেপশন কাউন্টার থেকে বলছি আমরা, একটি চিঠি আছে আপনার মাদাম, সেটা কি পাঠিয়ে দেব?

হেলগা হতাশ হয়ে বলল পাঠিয়ে দিন।

একটা বাচ্চা চাকর এল কয়েক মিনিট পরে একগোছ গোলাপ আর চিঠি নিয়ে।

চলে যেতে হচ্ছে নীরস ব্যবসার খাতিরে। গত সন্ধ্যায় তোমাকে খুব কাছে পেয়ে ভাল লেগেছিল। দুদিন পরে আশা করি দেখা হবে আবার–ক্রিস।

হেলগা খবরটা পেয়ে হতাশ হয়ে গেল। তবে ঐ টুকুই আশার আলো, আবার ও দেখা করতে চাইছে আমার সঙ্গে।

হেলগা জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়ালো। প্যারিস ঝলমল করছে বসন্তের সোনালী আলোতে। কিন্তু তার কাছে এই দুদিন প্যারিস অন্ধকার হয়ে থাকবে।

হেলগা নরক যন্ত্রণা ভোগ করল দুটো দিন, যেমনটি আর্চার চেয়েছিল। লোমান আর উইনবর্গ ওকে ভার্সাইয়ের কাছে একটা জায়গা দেখাবার জন্যে নিয়ে যেতে চাইলেন, জায়গাটা ভাল হবে কিনা নতুন কারখানার জন্য। গেল বাধ্য হয়েই, হাতে তত আর কোন কাজ নেই। আলোচনাও হল রাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। তবে হেলগা কোন কিছুতেই উৎসাহ পাচ্ছিল না। গ্রেনভিলের কথা তার মনে পড়ছিল। মন্ত্রী ডিনারের নেমন্তন্ন করলেন, ব্যাপারটা পাকাপাকি করার জন্যে। অগত্যা হেলগাকে যেতেই হল।

 লোমান আর উইনবর্গ পরের দিন কথা বললেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। হোটেলের ঘরে হেলগা শুয়ে ভাবতে লাগলো, গ্রেনভিলও অবিরাম তার কথা চিন্তা করে চলেছে কিনা। সেই পিলের আশ্রয় নিয়ে আবার রাতে ঘুম।

প্যারিস থেকে বেশ কিছু দূরে গ্রেনভিল হোস্ত দ্য শ্যাতুতে ঘুরে বেড়ালো। খেলো পেট ভরে আর ঘুমলো, প্যাটারসনের টাকার শ্রাদ্ধ করে। হেলগার কথা তার মনেই এল না!

সকাল এগারোটা, আন্দাজ দুদিন পরে প্লাজা এথিনী হোটেলে ফিরে এল। টেলিফোনে কথা হল আর্চারের সঙ্গে।

 এবার যাও আর, জয় করে ফেলল ওকে। আমার কথা হয়েছে প্যাটারসনের সঙ্গে। ও খুব ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।তারপর কি কি করতে হবে আর্চার গ্রেনভিলকে তার এক লম্বা ফিরিস্তি দিল।

 গ্রেনভিল ঐ ভাবেই এগোবে সে জানালো। তবে একটা কথা, টাকা ফুরিয়ে আসছে। আর্চার এ ব্যাপারে সরাসরি প্যাটারসনের সঙ্গে কথা বলতে বললো।

সেইমত প্যাটারসনের ঘরে গিয়ে দেখল কর্সিকার একটা ম্যাপ নিয়ে শাপিলোর সঙ্গে দুজনে। খুব ব্যস্ত। প্যাটারসন গ্রেনভিকে দেখেই গর্জে উঠলো, কি হচ্ছে কি? কোথায় ডুব মেরেছিলে দুদিন?

 একটা চেয়ার টেনে গ্রেনভিল হেসে বসলো। একটু ভালোমত হেলগাকে তেতে ওঠার সময় দিচ্ছিলাম। এই নিয়ে জ্যাকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। চরমে উঠবে আজ রাতেই।

তা আজ রাতে কি হবে?

কিছুতেই যেন সন্তুষ্ট হবে না প্যাটারসন।

 ওকে ব্লু-স্কাই-এর কথা বলে আমি ওর সঙ্গে বিছানায় গিয়ে শোব।

একটু চিন্তা করে নিয়ে প্যাটারসন বললো, মনে হচ্ছে, তারপর কাজ হবে?

ভবিতব্য সবটাই। মনে হয় আমার এই ব্যাপারটা নিয়ে ও চিন্তা করবে, তবে কি হবে তা বলা যায় না। হতে পারে টোপ সঙ্গে সঙ্গে গিলবে, যদি না হয় হাল ছাড়বো না আমি। আমি কথা দিচ্ছি মিঃ প্যাটারসন, টাকাটা দশ দিনের মধ্যে আপনি পেয়ে যাবেন।

 প্যাটারসন সিগারে-বিরাট টান দিয়ে বললো, ঠিক আছে, তোমার পুতুল তুমি যে ভাবে খুশি খেলবে।

 তা তো খেলবোই, তবে কিছুটাকার যেদরকার এখন। পাঁচ হাজার আপনার দেওয়া শেষ। অদ্ভুতঃ আরও পাঁচ হাজার চাই।

 প্যাটারসন যেন ভস্ম করে দেবে ওকে, একটা পয়সাও আর দেবো না। নিজে খরচ কর তুমি। কমিশন পাবে কাজ হলে। কিন্তু এখন দেব না আর। বেশ গম্ভীর হয়ে গ্রেনভিল বললো, দুর্ভাগ্যবশতঃ আমার একটাকানাকড়িও নেই। আমার ধারণা ছিল সেটা আপনি জানেন। হয় আরও পাঁচ হাজার দিন, নয় বন্ধ করুন কাজ।…সোজা কথা।

রাগে লাল হয়ে উঠলো প্যাটারসনের মুখ, যে টাকা দিয়েছিলাম, খরচ করেছ কিসে? হিসেব দাও।

 দাঁড়িয়ে পড়ল গ্রেনভিল, তা দেবো, মিঃ প্যাটারসন তবে কিনা, ব্যাপারটা বিশ লাখ ডলারের আর কিঞ্চিৎ বিসদৃশ আপনার মনোভাবটা। ঠিক আছে এখানেই কি সব ব্যাপারটার যবনিকা পড়বে? অন্য কাজ আছে আমার। আমার ভাল লাগে না দরাদরি করতে।

 একটু দ্বিধা করতেই প্যাটারসন শাপিলো সায় দিল মাথা নেড়ে। তিন হাজার ফ্রাঁ মানিব্যাগ খুলে বের করে টেবিলে রাখলো, ব্যাস এর বেশি পাবে না।

 মিঃ প্যাটারসন, ঠিক আছে ব্যাপারটা এখনেই ইতি হোক। দেখুন অন্য কাউকে আমি যখন পাঁচ হাজার বলি তখন পাঁচ হাজারই নিই। তারপর শাপিলোর দিকে ফিরে বললো, চলে যাচ্ছি আজ সন্ধ্যেবেলাতেই। একটা পুরনো দুর্গ কিনতে চায় এক ধনী বিধবা। খালি বেচারী হেলগার জন্যই যা দুঃখ। শধুমাত্র দু হাজার ফ্রা-এর জন্য এমন একটা ভাল প্রেমিককে হারাচ্ছে। আমি কিন্তু বলি সব সময়েই একজন মহিলার ক্ষতি মানে অন্য মহিলার লাভ।এগোতে এগোতে দরজার দিকে গুডবাই জানালো প্যাটারসনকে।

এই দাঁড়াও।

দাঁড়াল গ্রেনভিল, তাকালো ভ্রু কুঁচকে।

 তোমার পাঁচ হাজার, এই নাও। কিন্তু আমার কাজ চাই-ই।

আরো দুহাজার রাখল প্যাটারসন টেবিলের ওপর। এগিয়ে এসে গ্লেনভিল পকেটে টাকাগুলো ভরতে ভরতে বললো, আমার ধারণা মিঃ প্যাটারসন সে প্রতিশ্রুতি আমি আগেই দিয়েছি। আর একটা কথা,কখনো আমাকে ভয় দেখাবেন না বা ধমকাবেন না। আমার রীতি কাজ করে যাওয়াই, গ্রেনভিল ঘর থেকে এই কথার শেষেই বেরিয়ে গেল।