৪. কিটি লোরিংয়ের ঘরে

১৬.

কলেভিন শেষ রাত্তিরে, যদিও সোৎসাহ পুলকে নয়, কিটি লোরিংয়ের ঘরে ঢুকেছে। কিটির তখন নেশাগ্রস্ত অবস্থা নয়। ঘুম ভেঙে জেগে উঠেছে। কলেভিন অবরুদ্ধ গলায় বললো, খুব মুশকিল পড়ে গেছি ডার্লিং। তোমার সাহায্য চাই।

 ভনিতা না করে যা বলবার বলে যাও।

 কলেভিন বললো, ডেপুটি ট্রেভারস ধরতে পেরেছে, একটা বড় রেমিংটন মেশিনে টাইপকরা চিঠি এলিসকে লেখা হয়েছিল এবং ঐ মেশিনটার দুটো অক্ষর ভাঙা। এরা এবার সেই টাইপ রাইটারটা সন্ধান করতে করতে ব্যাচেও ঢুকে যেতে পারে। হয়তো আজকাল।

তার মানে, ব্যাঙ্কে একবার পুলিশ উঁকি মারলেই কেলা ফতে।

 আমি ব্যাঙ্কের মেশিনটাকে ভন্টের মধ্যে রেখে ওখানে অন্য একটা মেশিন বসাতে চাই।

 কিটি বললো, তাই করো।

তোমার যে টাইপ রাইটারটা আছে, সেটা আমায় কদিনের জন্য ধার দাও। ফাড়াটা কাটুক, তারপর আবার ফেরৎ নিয়ে আসবে।

কিটি বিস্ময় প্রকাশ করে, ওমা! সেটা যে নেহাৎ ছোট, পোর্টেবল। স্মিথ কোনরি কোম্পানীর।

কলেভিন ঈষৎ অস্থির, তাতেই কাজ হবে। এছাড়া উপায় কি?

জটিল আওয়াজে কিটি বললো, নিয়ে যেও। কিন্তু একটা কথা

 কি?

আমাকে কিছু টাকা দাও।

 টাকা! এখন কোত্থেকে পাব? আমার যা টাকা ছিল, সব দিয়ে তো সেই পুরনো গাড়িটা কাজ সারবার জন্য কিনেছিলাম।

কিটির স্বর প্রলম্বিত, লুঠের মাল থেকেই এক থাবা তুলে এনো।

এখন ওখানে থাবা বসানো যাবে না। আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তুমি বরং সেই উকিলের থেকে তোমার জবানবন্দীটা নিয়ে এসো।

আহারে চাঁদু আমার, আমি তোমার হাতে খুন হতে চাই না।

তাহলে মদ খাওয়া কমাও। যে হারে গিলছো, লিভার ফেটে মারা যাবে আর পুলিশও সব জানতে পারবে।

কিটি হি হি করে হেসে ওঠে-আচ্ছা ফাঁদে ফেলেছি বাস্তু ঘুঘুটাকে।

বলেই কলেভিনকে এক হেঁচকা টানে নিজের ওপর এনে ফেলবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় কিটি।

 বিপন্ন স্বরে কলেভিন বললে আমি মনের দিক থেকে বিশেষ ব্যস্ত ও অস্থির ডার্লিং। এখন সম্ভব নয়।

কিন্তু আমি যে দৈহিক দিকে ভীষণ ক্ষুধার্ত। আমার খিদে কে মেটাবে?

কেন, আমি আসার আগে তোমার চাহিদা কে মেটাত?

ঠোঁট উঁচিয়ে কিটি বলে, দরকারই পড়ত না। তুমিই তো এসে আমার সেই ছাইচাপা আগুনকে খুঁচিয়ে তুলেছ। এখন সাড়া দেবে না, তা তো হয় না।

 ভীষণ রিক্তভাবে কলেভিন বললো, কামটা তত তোমার কদিন যাবৎ তুঙ্গে উঠেছে। এটাও অ্যালকোহলের প্রভাব। আজ আমি মদের বোতলটা ভাঙ্গব।

খিলখিলিয়ে হেসে কিটি বলে, তুমিই আবার নতুন বোতল কিনে সযত্নে আমার শিয়রে রেখে যাবে। কারণ তুমি এখন আমার পোষা জীব। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় বাধ্য হবে। জানো তো রোমান সম্রাট নীরোর এক পরমা সুন্দরী স্ত্রী উন্মাদ সম্রাটের সংসর্গে সুখী না হওয়ায় এক ক্রীতদাসকে অন্তঃপুরে আনিয়ে চুটিয়ে ব্যাপারটা সেরে নিত। অতবড় চেহারার ক্রীতদাস ক্ৰমশঃ রুগ্ন ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। সম্রাট তাকে এমন এক শিবিরে চালান দিলেন যেখানে কেবল কুষ্ঠরোগীরা থিক থিক, করছে।

 দাঁতে দাঁত চেপে কলেভিন বলে, তুমিও কি আমাকে কুষ্ঠরোগীদের শিবিরে পাঠাতে চাও নাকি?

 ফিক করে হেসে কিটি বলে, কুষ্ঠরোগীদের শিবিরে নয়, আমাকে আনন্দ দিতে না পারলে পুলিশের খপ্পরে গিয়ে পড়বে। আমি তো আর মরতে ভয় পাই না। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এখন আমার আঠারো আনা। থাকবার মধ্যে আছে মদ্যতৃষ্ণা আর দৈহিক কামনা। তোমাকে এই দুটো মিটিয়ে যেতেই হবে।..কি হলো, দাঁড়িয়ে কেন? পোশাকটা খুলে ফেল।…এইখানে বস।

 সেই অশেষ বিরক্তিকর ব্যাপারটা তাকে সারতে হবে, উপায় নেই।

.

ব্যাঙ্ক ম্যানেজার একটা হোল্ডল হাতে নিয়ে সাত সকালে ব্যাঙ্কে ঢুকতে যাবে। রাস্তার অন্যধারে শেরিফ সাহেবের অফিস থেকে ট্রেভারর্স ছুটে এসে বলে, এত সকালে? হাতে হোল্ডল?

কলেভিন ঘুরে সুন্দর নিষ্পাপ হাসি উপহার দিলো, ব্যাঙ্ক ম্যানেজাররা তো ক্রীতদাসদেরও অধম। অডিটর বাহিনী যা ফিরিস্তি দিয়ে গেছে তা গুছিয়ে নিতে আমি তো গলদঘর্ম। তা নতুন কোন সূত্র পেলেন না কি ডাকাত পাকড়াতে?

পেয়েছি, পাচ্ছি এবং পাবো। আপনার অফিসের টাইপ রাইটারটা কোন্ কোম্পানীর?

সকৌতুকে কলেভিন বলে, জানি, আপনি একটি প্রমাণ সাইজের রেমিংটনের খোঁজ করছেন। কিন্তু আমি দুঃখিত, এই অফিসের টাইপ রাইটারটি আকারে ক্ষুদ্র, পোর্টেবল এবং রেমিংটন কোম্পানীর নয়।

ব্যাঙ্কের মতন প্রতিষ্ঠানে পোর্টেবল টাইপরাইটার। অবাক ব্যাপার!

সত্যি তাই। আমার মনেও খটকা লেগেছিল। আসলে প্রাক্তন ও মৃত ম্যানেজার মিঃ ল্যাম্ব, সব সময়ই ব্যাঙ্কের খরচ কমাতে চেষ্টা করতেন।

 কোন প্রকারে ট্রেভারসকে সামলিয়ে কলেভিন ব্যাঙ্কে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দেয়। এখনই বোঝা গেল, সে কতটা বিচলিত। কয়েক মিনিট দম নিয়ে মোটা নাকে বিবিধ শব্দ তুলতে তুলতে হোল্ডল খুলে কিটির ছোট টাইপরাইটারটা বের করলো। বড় টাইপরাইটারকে একটা পুরনো অব্যবহৃত বাক্সের মধ্যে ঢোকালো।বড়টার জায়গায় ছোটটা কেমন যেন বেখাপ্পা দেখাচ্ছে। অতবড় রবারের মাদুরের ওপর অতটুকু একটা টাইপরাইটার। কিন্তু এই মুহূর্তে কলেভিন অন্য কিছু ভাবতে পারছে না।

 পরিবেশ কখনো অনুকূল, কখনো প্রতিকূল। শেষ রক্ষা হবে তো?

ইস্টনকে তো সে পকেটে পুরেছিল।

কিন্তু ঐ ট্রেভারস–ছোকরা যেন মাত্রাতিরিক্ত ধারালো। পুলিশ ডিপার্টমেন্টে এ ধরণের ছোকরাদের চাকরি দেওয়া উচিত নয়। কারণ এরা ভীষণ কলেভিনের মতন একজন চতুর অপরাধীকে এরা ধরে ফেলতে পারে।

কিন্তু তুমি যখন দেখতে পাবে তোমার উপরওয়ালা, তোমার দেশনেতা জঘন্য অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে বসে, তখন কি করবে?

নিদারুণ হতাশায় তুমি চাকুরি ছেড়ে দেবে!সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি অপরিসীম ঘৃণায় তুমি নিজেই একজন জাঁদরেল সমাজবিরোধী হয়ে উঠতে পার।

ইরিস যথাসময়ে এলো। ব্যাঙ্ককর্মী হিসেবে এই তার প্রথম প্রবেশ। কলেভিন তাকে স্বাগত জানালেও তার চোখে মুখে অস্বস্তি ও চাঞ্চল্য লক্ষ্য করে। তবে কি ট্রেভারর্স কিছু বলেছে? তার ওপর গোয়েন্দাগিরি করতে তার আত্মরক্ষার পদ্ধতিগুলিকে বানচাল করবার জন্যেই কি ট্রেভারস ইরিসকে কাজে লাগাবে?

ইরিস কাজের অছিলায় সেইটাইপরাইটারের দিকে যায়। তখনই ধক্ করে ওঠে বুকটা! ওখানে যে একটা বড় মেশিন বসানো ছিল তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। তাছাড়া ঐ ছোট টাইপ রাইটারটা যে তার খুব পরিচিত। সে কতদিন কিটির ঘরে গিয়ে ওটা ব্যবহার করেছে। সে মেশিনটার দিকে চেয়ে থাকে আর দূরে দাঁড়িয়ে কলেভিন তা লক্ষ্য করে।

 আশঙ্কা সত্যে পরিণত। তীরে এসে তরী ডুববার মতন ঘটনা। মেয়েটার চোখের পাতা নড়ছে না।

 কলেভিন নাক দিয়ে ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ তুলছে। তার মনে হল, কতকাল আমি গীর্জায় যাইনি। আমি মাত্র একবারই আমার মায়ের কবরে ফুল দিয়েছিলাম। আচ্ছা, এলিসকে খুন করবার পর আমি যদি তাকে কোথাও কবর দিয়ে আসতাম, হয়তো এতটা বিপদ…।

ঐ সুন্দরী মেয়েটার বিস্ময় ও বিমূঢ়তার মধ্যে এমন তাৎপর্য জমাট বেঁধে আছে যে এখনো সে পলকহীনভাবে চেয়ে আছে।

 ইরিস টিফিনের সময় বাইরে ছুটে এলো। ট্রেভারস তার জন্য অপেক্ষা করছে। দুজনে একটা পার্কে গিয়ে ঢোকে।

ইরিস–ম্যানেজার বড় মেশিনটাকে সরিয়ে সেখানে একটা ছোট মেশিন বসিয়েছে।

 ট্রেভারস–আমি এটাই আশংকা করেছিলাম।

ইরিস–কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার কি জানো,ঐ ছোট টাইপরাইটারটা আমার মায়ের।

ট্রেভারস ঠোঁট কামড়ায়, তাহলে আজই ব্যাটা মালটা হোল্ডলে ভরে ব্যাঙ্কে ঢুকেছিল। আমি ওকে হোন্ডল হাতে ব্যাঙ্কে ঢুকতে দেখেছি।

ইরিস–আমার এখন কি করণীয়?

ট্রেভারস–প্রমাণিত হচ্ছে, বড় টাইপরাইটারটা এখনো ব্যাঙ্কের মধ্যেই লোকানো রয়েছে।

 তুমি কি তাহলে তল্লাশির পরোয়ানা নিয়ে আসবে?

সেটা আমি করতে পারি, কিন্তু তাহলে ইস্ট সব টের পেয়ে যাবে। সেও তো ষাট হাজার ডলারের পেছনে ঘুরছে।

বিষণ্ণ স্বরে ইরিস বলে, তাহলে ঐ বাকুশলী মহাধূর্ত শয়তানটাকে সপ্রমাণ ধরবার উপায় কী?

উপায় একটা আছে। তুমি তো এখন ঐ ব্যাঙ্কেরই কর্মী। আগেকার টাইপ করা চিঠির দু একখানা কারবন কপি আমাকে এনে দিতে হবে, ব্যাস। কি পারবে না?

ইরিস ঢোক গেলে, পারবো।

কিন্তু ব্যাঙ্ক ম্যানেজার টিফিনের সময় স্থানীয় রেস্তোরাঁয় ঢুকে ওখানকার জায়গায় চোখ রেখে দেখলো, ইরিস ট্রেভারসের সঙ্গে পার্কে ঢুকছে।

ব্যাপারটার সম্ভাব্য তাৎপর্য বুঝে কলেভিন তাড়াতাড়ি ব্যাঙ্কে এসে ফাইলের মধ্যে যত পুরনো চিঠির কপি ছিল সব সরিয়ে ভল্টের মধ্যে একটা পুরনো বাক্সে রেখে দিল।

 ইরিস যখন টাইপ করতে করতে একটা পুরনো কারবন কপির খোঁজ করছে তখন কলেভিন নিঃশব্দে পিছনে দাঁড়িয়ে মোলায়েম কণ্ঠস্বরে বলল, পুরনো কারবন কপি আমিও বিশেষ কিছু দেখবার সুযোগ পাই নি। এলিস খুব একটা গুছিয়ে কাজ করতে জানত না। তুমি ভেবো না। ফাইলিংয়ের কাজটা আমিই করবো।

আতঙ্কে দমবন্ধ ইরিস টের পাচ্ছে, তার পেছনে দাঁড়িয়ে এমন একজন যে হাসতে হাসতে যে কোন মেয়ের কণ্ঠনালী ভেঙ্গে দিতে পারে।

.

১৭.

 জেমসইস্টও একটা বিশেষ রেমিংটন মেশিনের সন্ধানে পড়তি বেলায় ব্যাঙ্কে এসে হানা দিয়ে গেল। ইস্টকে সামাল দেওয়া অবশ্য কিছুই না কলেভিনের, কারণ ইস্ট আগেই ধারণা করেছে, ডেভ কলেভিন একজন বুদ্ধিমান, কর্মঠ ও সৎ ব্যাঙ্ক অফিসার যার অমন চেহারা ও অতুলনীয় হাসি সে অন্ধকারের বাসিন্দা হতে পারেনা। তদুপরি কিটি লোরিংয়ের মতন জেনানাকে যে গেঁথে ফেলেছে, তার মত সুখী খুন, ডাকাতিতে জড়াতে পারে না। কলেভিন ইস্টনকে জানালো, সত্যি এই ব্যাঙ্কের যে বড় স্ট্যান্ডার্ড রেমিংটন টাইপরাইটারটা ছিল কলেভিন এসে সেই মেশিনটার খোঁজ পায়নি। হয়তো অকেজো হওয়ায় সেটা কোথাও সরিয়ে রাখা আছে। পরিবর্তে ভাড়া করে টাইপরাইটারে কাজ চলছিল। আজই ম্যানেজার সাহেব তার নর্ম সহকর্মী কিটি লোরিংয়ের ছোট হাতে বহনযোগ্য মেশিনটাকে ব্যাঙ্কে নিয়ে এসেছে অডিট সম্পর্কিত কিছু জরুরী চিঠি টাইপ করাতে।

ঘুর্নিচেয়ারে দোল খেতে খেতে কলেভিন যখন ইস্টকে এসব ফিরিস্তি দিচ্ছিলো চেম্বারের দরজা খোলা থাকায় ইরিস সব শুনতে পায়। কলেভিন লোকটা যে অসম্ভব মানসিক শক্তি ও বুদ্ধির অধিকারী ইরিসকে শোনাবার জন্যেই বেশ জোরে সে এসব কথা বলছিল। |||||||||| ঘড়ির কাঁটা পাঁচটা ছুতেই ইরিস হরিণীর মতন অফিসের বাইরে চলে এল। কলেভিন জানিয়েছে, আজ তার ফিরতে রাত পৌনে আটটা হয়ে যাবে। ইরিস ট্রেভারসকে সবকিছু জানালো। ট্রেভারস বললো, তাহলে দেখা যাচ্ছে, ইস্টও প্রকৃত অপরাধীর কাছাকাছি পৌঁছিয়েছে। আমাদের আর সময় নষ্ট করলে চলবেনা। আচ্ছা তিনশহাজার ডলারের মতন বিপুল টাকা কলেভিন লুকিয়ে রাখলো কোথায়? লোকটা তার হোটেল এবং অফিসের বাইরে কোথাও টু মারে না। ওর ঘরের ভেতরটা তোমাকে একবার দেখতে হবে।

সঙ্গে সঙ্গে ইরিস রাজি হয় কারণ কলেভিন আজ পৌনে আটটার আগে ফিরবে না। ইরিস হোটলে ফিরেই কিটির ঘরের দরজা দিয়ে কলেভিনের ঘরে ঢুকলো। সে আলো জ্বালিয়ে দ্রুত তল্লাসি শুরু করলো। সব উল্টে পাল্টে দেখেও সে একটা পাই পয়সাও পেল না। কেবল জামা– কাপড়, মোজা, গলফের বল উল, বই এইসব। কিটি রান্নাঘরে। অন্য বাসিন্দারা টিভির সামনে। তল্লাশিতে ক্ষান্ত দেবে তখনই সিঁড়িতে ভারী পায়ের শব্দ। ডেভ কলেভিন পৌনে আটটার অনেক আগেই ফিরেছে। চকিতে সুইচ অফকরে ইরিস কিটির ঘরের দরজার আড়ালে আত্মগোপন করে।

 কলেভিন ঘরে ঢুকে চারিদিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে।তারপরই বেমক্কা কিটির ঘরে ঢুকে অপ্রস্তুত ইরিসকে আবিস্কার করে।

 তুমি–ইরিস! আমি ভেবেছি কিটি আমার ঘরে ঢুকে বুঝি কিছু খুঁজছে। দূর থেকে আলো জ্বালা দেখতে পেয়েছি তো।

 দুবার ঢোক গিলে ইরিস বললো, আপনার ঘরটা নোংরা হয়েছিল। মিস ক্লেকে দেখতে না পেয়ে আমি নিজেই

আরো মৃদু ও মোয়ায়েম স্বরে কলেভিন বললো, তুমি বড় চমৎকার মেয়ে ইরিস। কিন্তু তোমারও তো বিশ্রামের দরকার। সর্বক্ষণ নিজেকে ব্যস্ত রেখো না। ইরিস কোনরকমে নিজের ঘরে ফেরে। সে আতঙ্কে কাঁপছে।

.

১৮.

মেঘ না চাইতেই যেন জল এবং সুযোগটাকে কাজে লাগাতে ইরিস একপায়ে খাড়া। কলেভিন অ্যাসট্রেতে সিগ্রেটটা খুঁজতে খুঁজতে বললো, আজ শনিবার, আমাকে আবার পৌনে বারটার ট্রেন ধরে ফ্রান্সিসকো ছুটতে হবে বড় সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে। অথচ এখানে কাজের অন্ত নেই।..আচ্ছা, ইরিস, আমি যদি ব্যাঙ্কের চাবিগুলি দিয়ে যাই, তুমি কি কাজটা এগিয়ে রাখতে পারবে না?

ইরিস ভাবে এই সুযোগে তিনশ হাজার ডলার খুঁজে দেখা যাবে। মনের উত্তেজনা চেপে রেখে ইরিস ঘাড় কাৎ করে, আপনি আমার ওপর নির্ভর করতে পারেন।

খুব ভালো।

কলেভিন চাবির থোকাটা ইরিসের দিকে ঠেলে দেয়। সহসা গুপ্তধন লাভের মতন ইরিস থোকাটাকে চেপে ধরে। কলেভিন চোরা চোখে কৌতুকে ঠাসা ইরিসের মুখ দেখে। বেসিনে হাতমুখ ধধায়ার অছিলায় কলেভিন ব্যাঙ্কের পিছনের দরজাটা খুলে রেখে আসে। তারপর হাত ব্যাগটা দোলাতে দোলাতে ব্যাঙ্কের সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গাড়িতে স্টার্ট দেয়। এমন সহজ মৌকা হাতে পেয়ে ইরিস কিঞ্চিৎ বিভ্রান্ত, তাড়াতাড়ি ব্যাঙ্কের দরজা বন্ধ করে দেয়। পিটসভিলের ব্যাঙ্কে ডাকাতির কিনারা করায় ট্রেভারসের সঙ্গে তার ফিয়াসে ইরিসের নামও সগৌরবে উচ্চারিত হবে। টাকাটা যে এই অফিসের মধ্যেই কোথাও লুকানো আছে নিঃসন্দেহ। এবার সে টাকাটা খুঁজে বের করবেই।

ইরিস ট্রেভারসকে ফোনে খবর দিল, কিন্তু ট্রেভারসকে পাওয়া গেল না। সে কোন এক বিশেষ কাজে পার্শ্ববর্তী শহরে গেছে।

অস্থিরভাবে ইরিস পায়চারি করে। ট্রেভারসের জন্যে অপেক্ষা করবে কি? দরকার নেই, সে নিজেই টাকাটা খুঁজে বের করে ট্রেভারসকে চমকে দেবে।

 এবার ইরিস ভল্টের মধ্যে ঢুকলো। তার চোখের তারা ঘুরতে থাকে। একটার পর একটা ডিড বক্স ছাদ পর্যন্ত সাজানো আছে। খুনীম্যানেজার নিশ্চয়ই যে কোন একটিতে সাত রাজার ধন লুকিয়ে রেখেছে। পর পর দুটো বাক্স খুলে ইরিস কতকগুলো অপ্রয়োজনীয় কাগজে ঠাসা দেখল। তৃতীয়টি খুলতেই ইরিস উল্লসিত–টাকা, টাকা, অজস্র টাকা, তিনশ হাজার ডলার।

 ইরিস টাকাগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে, টেরও পেল না, কখন বাঘ মুখ নিয়ে নিঃশব্দে কলেভিন পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে ভল্টের মধ্যে এসে দাঁড়িয়েছে। যখন কলেভিনের নাক দিয়ে ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ হলো তখন সে টের পেয়ে ভল্টের কপাট দুহাতে বন্ধ করে দেয়।

ইরিসের মুখ অতিমাত্রায় চমকিত ও আতঙ্কে রক্তশূন্য। তারা পরস্পরের মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তারপর শীতল হাসির সঙ্গে কলেভিন বললো, আমি এটাই আশা করেছিলাম। তুমি তো শুধু টাকা ভর্তি বাক্সটা খুলেছে। আর একটা বাক্স আছে যেটায় এলিসের সেই বিচিত্র কোট ও টুপি যা পরে তোমার মা পর পর কয়েকদিন এবং খুনের রাত্রে এলিস সেজে সকলের চোখে ধুলো দিয়েছে। আর একটা বাক্স খুললে তুমি পাবে সেই পোশাক ও নকল গোঁফ যা ব্যবহার করে আমি এলিসের প্রেমিক একর্সের ভূমিকা করে গেছি।

 কলেভিন কথাগুলো বলতে বলতে কয়েক পা এগিয়ে আসা মাত্র ইরিস প্রায় আর্তনাদ করে ওঠে, খবরদার আপনি আমাকে ছোঁবেন না।

অকপট হাসি কলেভিনের মুখে, আমি তোমাকে ছুঁতে যাবো কেন? তুমি তো সেই মেয়ে, যে যথাসাধ্য সাহায্য করবে। তুমি নিজের হাতে টাকা গুছিয়ে নিয়ে যাবে ডাউন সাইড রেলস্টশনে। তোমাকে পৌঁছে দেবে প্রেমিকপ্রবর ডেপুটি শেরিফ কেন ট্রেভারস। তোমাকে সন্দেহ বা বিরক্ত করবে না। স্টেশনে ঢুকে ক্লোকরুমে টাকার ব্যাগটা রেখে ক্লোকরুমের চাবিটা আমাকে দিয়ে যাবে। আর আমি ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে তোমার মাকে বগলদাবা করে স্টেশানে যাবো, টাকাটা বের করে নেবো, তারপর নিরুদ্বেগচিত্তে রওনা দেবো সুদূর পশ্চিমে। এখানে তুমিও ট্রেভরসকে শাদি করে সুখে ঘরকন্না করবে। ইরিস বিষম খায়, তার দুচোখ বিস্ফারিত।

 আপনি সুস্থ আছেন তো? কলেভিনকে বলে ইরিস।

 আমি ভীষণ সুস্থ। আমার মাথা খুব পরিষ্কার বলেই ভবিষ্যতের পরিকল্পনাগুলো বলে দিতে পারি। আসলে কি জানো ইরিস, তুমি আমার জন্য এই সামান্য পরিশ্রম স্বীকার করতে বাধ্য। না, আর কোন ধন্দে না রেখে প্রকৃত ব্যাপারটা তোমাকে জানাই,এই যে ব্যাঙ্ক থেকে তিনশহাজার ডলার হাতানো এবং এর জন্যে এলিসকে খুন করা–এসবের জন্য আমার চেয়ে তোমার মার দায়িত্ব কিছু কম নয়।

ইরিস চিৎকার করে, এ হতে পারে না।

গলা খাঁকারি দিয়ে কলেভিন বললো, নিজের মাকেই জিজ্ঞেস করো। আমার মনে ডাকাতির বাসনা জাগিয়ে দিতে, তোমার মা-ই এলিসকে খুন করতে উৎসাহ দিয়ে সক্রিয় সাহায্য করে। কিটি এখন আমার সঙ্গে এমনভাবে জড়িত যে, একে অপরকে ছাড়া এগোতে বা পিছোতে পারব না। তাই, মাথা ঠাণ্ডা রেখে সব ভাবো। ষাট হাজার ডলার সমেত ট্রেভারসের সঙ্গে ফুরফুরিয়ে উড়বে, না মাকে গ্যাস-চেম্বারের সামনে ঠেলে দেবে? মেয়ে হিসেবে তুমি কোন দায়িত্বটি পালন করতে চাও, যদি এখুনি মা ও আমাকে মারতে চাও? এখুনি ট্রেভারসকে এখানে ফোন করে ডাকতে পারো। আমি পরিষ্কার স্বীকারোক্তি দেবো। আর যদি মার প্রতি তোমার মমত্ব ও কর্তব্য থাকে তাহলে কাল পরশুর মধ্যে টাকাটা এখান থেকে পাচার করতে আমাদের সাহায্য করবে।

ইরিসমুহূর্তের জন্য কেমন একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল।কলেভিন তারকাঁধে হাত রাখামাত্র সেকান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।কলেভিনবলে,কেঁদোনা। স্বাভাবিকভাবে মেনেনাও,জীবনবড় বিচিত্র…

 এতকাল ইরিস কিটির মাতলামি সবচেয়ে বড় সমস্যা ভাবতো। এখন যে সমস্যার মুখোমুখি সে হয়েছে, তার কোন সুরাহা সে দেখতে পাচ্ছে না। তার ভবিষ্যৎ ট্রেভারসের সঙ্গে লালিত সব স্বপ্ন জড়িত…। কলেভিনের কথাগুলো কানে বেজে চলেছে, প্রতিটি শব্দ, এ সবই জীবনের অঙ্গ জীবন যা কিনা বড় বিচিত্র। ন্যায়-অন্যায় বোধ, মানুষ তার প্রয়োজনবোধে এক সময় এক একরকম ব্যাখ্যা করে থাকে। তুমি যদি সারাটা জীবন দারিদ্র ও অনটনের মধ্যে নিজের সতোর গর্ব করো, সেটা হবে নিকৃষ্টমানের আত্মপ্রবঞ্চনা। তোমার মা জীবনে অনেক আঘাত সহ্য করেছে। দারিদ্র ও অনিশ্চয়তা ছিল তার সাথী। এখন সেই প্রেমহীন ও কন্টকময় জীবন থেকে সে যদি আমার সাহায্যে মুক্তি পাবার চেষ্টা করে থাকে তবে মেয়ে হিসেবে তোমার কি উচিত তাকে আরো হতাশ ও বিপন্ন করা? আর তুমিও তো ট্রেভাসকে নিয়ে আগামী দিনগুলি মধুময় করতে চাও। কিন্তু তোমারই এক চিলতে সাহায্যের অভাবে তোমার মা যদি আজ ফাঁসিকাঠে পা রাখে, কোথায় থাকবে তোমার সেই সুখ সম্ভাবনা! সুতরাং বুদ্ধি ও ধৈর্য হারিও না। যা সত্য, যা বাস্তব, তোমার স্বার্থের অনুকূলে সেই পথে এগিয়ে যাও। মানুষ সব পারে, তুমিও পারবে, উঠে দাঁড়াও। নিজের দুপায়ের ওপর শক্ত হয়ে দাঁড়াও।

ইরিস তার দুপায়ের ওপর দাঁড়াল ঠিকই, কিন্তু পা দুটো টলছে। পায়ের তলার জমি খুঁজে পাচ্ছে না।

.

১৯.

ইরিস লোরিং ও কিটি লোরিং মনে মনে তার প্রতি যতই বিমুখ হোক না কেন, ডেভ কলেভিন অনুভব করে, তার পরিকল্পিত অঙ্কটা প্রায় মিলে যাচ্ছে।

অবশ্য পাংশুমুখ ইরিস টাকার বস্তাটা স্টেশনের ক্লোকরুমে রাখতে রাজি হয়নি। তবু সে যা করলো, তার মূল্যও অপরিসীম। সে নিজের মার ভূমিকা ও বিপদের কথা ট্রেভারসকে জানিয়ে দিয়েছে। ট্রেভারস ভাবল, যদি সে ডেপুটি শেরিফের পদে বহাল থাকে, তাহলে কলেভিনের সঙ্গে ইরিসের মাকেও গ্রেপ্তার করতে বাধ্য। এইরকম পরিস্থিতিতে ট্রেভারস শেরিফের কাছে ছুটে গিয়েছিল চাকুরিতে ইস্তফা দিতে। শেরিফের অনুরোেধ উপরোধ উপেক্ষা করে সে পিস্তল ও কার্তুজ সমেত কোমরের বেল্ট এবং ব্যাগটাকে টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখলো। তারপর ইরিসকে নিয়ে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতেরওনা দিলো। ইরিস যখন হারিয়ে যাচ্ছে কিটি তখনো সমানে মাল গিলছে। সকৃতজ্ঞ কলেভিন ইরিসকে ট্রেভারসের গাড়ি অব্দি এগিয়ে দেয়।

 দৃষ্টির বাইরে গাড়িটা মিলিয়ে যাচ্ছে।

কলেভিন নিজেকে খুব হাল্কা অনুভব করে। এরা সত্যিকারের প্রেমিক প্রেমিকা, যা আজকের দিনে লভ্য নয়। ইরিস এখান থেকে পালাতে পারলে বাঁচে। আর বেচারি ট্রেভারস তার প্রেমিকার জন্য যে আত্মত্যাগ করল, তার তুলনা হয় না।

সুতরাং পরিকল্পিত অঙ্কটা তার প্রায় মিলে গেল।

ট্রেভারস যখন আর মঞ্চে উপস্থিত নেই, তখন কলেভিনের পক্ষে টাকাটা নিয়ে চম্পট দেওয়া তেমন কিছু সমস্যা নয়। তাকে এ কাজে মোটা বুদ্ধি পুলিশ অফিসার জেমসইস্ট সাহায্য করতে পারবে। লোকটা কলেভিনের প্রতি শ্রদ্ধায় একেবারে গদগদ। গাড়ির সীটের মধ্যে টাকাটা ঢুকিয়ে সেই গাড়ির চালক করা যাবে ইস্টনকে। কিটিকে নিয়ে কলেভিন চাকুরি ছেড়ে চিরদিনের মতন পিটভিল ছেড়ে চলে যাচ্ছে–শোকার্ত ইস্ট সারথি হয়ে হবু দম্পত্তিকে ট্রেন অব্দি তুলে দেবে। পথে তাহলে আর কোন পুলিশ বা শেরিফ বিরক্ত করতে আসবে না। সবচেয়ে হাস্যকর, ইস্ট এরপরেও আরো কিছুকাল ষাট হাজার ডলারের লোভে খুনে ডাকাতটাকে খুঁজবে।

স্বপ্ন, ধৈর্য, তিতিক্ষা, সাহস–এই সমস্ত গুণের মিশেল দিয়ে তৈরি মানুষ আমি কেমন সাংঘাতিক সাফল্যের দুয়ারে এসে উপস্থিত হয়েছি।

 কয়েক পা মাত্র, তারপরই এতদিন মাথার ওপর দারুণ ভারী হয়ে চেপে বসা ভাবনাটা বিলকুল ফাঁকা হয়ে যাবে।

ঐ কিটিকে নিয়েই একমাত্র অশান্তি। সমানে মদ গিলছে, তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে, কলেভিনকে অস্রাব্য খিস্তি দেয়। ও কেঁসে যাওয়া মানেই কলেভিনের গলায় ঝুপ করে ফাঁসির দড়ি নেমে আসা। আচ্ছা হারামি মেয়েছেলে। চেহারা খাই খাই হলে কি হবে, বিছানায় একেবারে গোবর, মেজাজ সব সময় উচ্চগ্রামে। সুখ দুঃখের গল্প নেই, আবেগ জাগে না। ওর সঙ্গে প্রেমালাপ করতে যাওয়া মানে আদিখ্যেতারও অধম।

তবুও ওকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। একদিকে তিনশহাজার ডলারকে উপভোগ করবার আনন্দ, অন্যদিকে একটা মাথা খারাপ মেয়েমানুষকে তোয়াজ করে চলা–কি কুৎসিৎ বিপরীত চিত্র রে বাবা! একেই বুঝিবলে বিত্তের অভিশাপ।

কোনদিন আমার জীবনে নিখাদ প্রশান্তি আসে নি। সব সময় একটা না একটা পেরেক হাতের; তালুতে লেগে থাকে।

 একটাই উপায়–কিটি লোরিংকে খুব পটাতে হবে। কথায়, আচরণে একটা বাতাবরণ তৈরি করতে হবে, যেখানে কিটি ধীরে ধীরে তার ওপর আস্থা ফিরে পাবে আর সেই আস্থাই একদিন তার উকিলের কাছ থেকে কলেভিনের সর্বনাশা নির্দেশনামাটা তুলে আনবে।

কিন্তু কোন পথে অগ্রসর হওয়া উচিৎ?

 কিটির আস্থা কি উপায়ে জয় করা যাবে?

তখনই কলেভিনের মাথায় একটা পরিকল্পনা এসে যায়।

 আমি যদি কিটি লোরিংকে মা করতে পারি? ওর এখনো মা হবার মতন বয়স ও সম্ভাবনা আছে। আর আমি তো সক্ষম পুরুষ। যদি কিটির মনে মাতৃত্বের স্বাদ নতুন করে জাগিয়ে দিতে পারি? সে কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থায় যাবেনা। আমার ঔরসজাত সন্তানের মুখ দেখলে তার চোখের সামনে দুনিয়ার রংই বদলে যাবে। আমাকে তখন সর্বাংশে ভালবাসবে আর সেই সুযোগেই…।

কলেভিন নিজের বুদ্ধিকে রিফ জানায়।

একটু আবার বিষণ্ণও বোধ করে। তার একার পক্ষে এতগুলি ব্যাপারে মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে না। কখনো কখনো ক্লান্ত হয়ে তার মনে হয়, এর চেয়ে নির্বিরোধ একটি গরিব মানুষ হওয়াই শ্রেয় ছিল। বিত্তের অভিশাপ বড় নির্মম!

কলেভিন তখনো তার পূর্ণ হদিশ পায় নি বিত্তের অভিশাপ যে আরো কতটা নির্মম হতে পারে! তিনশ হাজার ডলার একটা বড় চামড়ার ব্যাগে পুরে সে নিজের গাড়ির সীটে রেখে এলো। তারপর ব্যাঙ্কের রিজিওন্যাল ম্যানেজারকে ফোন করলো, স্যার, আমি ডেভ কলেভিন বলছি পিটভিল ব্যাঙ্কের ম্যানেজার।

 ও, মিঃ কলেভিন। বলুন কি খবর?

ইরিস লোরিং নামের যে মেয়েটাকে এখানে বহাল করা হয়েছিল, সে এক পুলিশ অফিসারের প্রেমে নিজেকে উৎসর্গ করে আজই চাকুরিতে ইস্তফা দিয়ে পালিয়েছে।

খুব মুশকিল তো।

 আপনারা তো উপরতলার লোক। মুশকিলের আঁচ আপনাদের আর কতটুকু লাগে?

 কি বলছেন?

ঠিকই বলছি ব্যাঙ্কের কাজে যাঁরা ওপর থেকে হুকুম টুকুম চালান দেন নীচের তলায় তাদের সামান্য চক্ষুলজ্জাও থাকেনা। হেড অফিসে বসেনানারকম পরিকল্পনা, আত্মতৃপ্তি আর শুচিবাইকে লালন করা সহজ, আপনারা তো ভুলেই গেছেন আপনাদের ব্যাঙ্ক চালাবার অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা।

মিঃ কলেভিন, ভুলে যাবেন না, আপনি আপনার ওপরওয়ালার সঙ্গে কথা বলছেন। কথাগুলি বিনয় ও সংযমের সঙ্গে বলুন।

 বিনয় ও সংযম শুকিয়ে গেছে স্যার, এখন কেবলই বিরাগ। আসলে আমি আর পারছি না। একার পক্ষে গোটা ব্যাঙ্কের ঝক্কি

আর একটি স্থানীয় যুবক বা যুবতাঁকে কাজে নিয়ে নিন।

আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ঐ সব আনকোরা লোক নিয়ে

তাহলে দুদিন অপেক্ষা করুন, আমি একজন ক্লার্ক পাঠাচ্ছি।

দুদিন কি বলছেন, দুঘণ্টাও অপেক্ষা করা সম্ভব নয়।

 মাথা ঠিক রাখুন, মিঃ কলেভিন।

মাথা ঠিক রেখেই বলছি। আরো জানাচ্ছি, এই ব্যাঙ্কের চাকুরিই আমি ছেড়ে দিচ্ছি, এই দণ্ডে।

নিরুত্তর অপর পক্ষ।কলেভিন কল্পনা করছে, রিজিওন্যাল ম্যানেজার সাহেব রাগে কেমন নীল হয়ে গেছেন। পিটভিল ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের মতন একজন নেহাৎ ছোটমাপের অফিসার যুক্তিহীন বশ্যতার গণ্ডীকে চূর্ণ করে দিচ্ছে। ভাবাই যায় না।

হ্যালো, শুনুন

অনেক শুনেছি স্যর, অনেক শুনেছি। আপনি যদি দুঘণ্টার মধ্যে বদলি ম্যানেজারকে পাঠাতে পারেনভালোনা হলে আমি এইশহরের শেরিফের হাতে ব্যাঙ্কের চাবিগুলি সিল করে দিয়ে যাচ্ছি। আমার ইস্তফাপত্র ডাকযোগে পেয়ে যাবেন…না, না, এ ব্যাপারে আমার সিদ্ধান্ত একেবারে পাকা। কলেভিন দুম করে রিসিভারটি নামিয়ে রাখলো, তার চিবুকের ডোলে টস টস করছে খুশীর উল্লাস, তার চোখে মুখে আনন্দ। একজন সাংঘাতিক যৌবনবতীর গোপন চুম্বন উপভোগ করবার পরও বুঝি এত আনন্দ হয় না। সে ডাকাত, খুনী। কিন্তু তার এই রেওয়াজ বিরুদ্ধ প্রতিবাদটি অকৃত্রিম।

 কাউন্টারে গ্রাহকদের ভিড় বাড়ছেই। ম্যানেজার সে-ই যে চেম্বারে ঢুকেছে বের হচ্ছে না কেন? কলেভিন পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে বেশ আনন্দ পায়। তাদের দিকে এগিয়ে পরপর কয়েকটা চেককে ভাঙ্গিয়ে দেয়। গ্রাহকদের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে কিন্তু ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠল। ফোন কানে তুলতেই শেরিফ সাহেবের গলা, ভীষণ–অতি ভয়ঙ্কর উদ্বেগ সূচক এক বার্তা ঝঙ্কত।

 হ্যালো…হ্যাঁ, আমি কলেভিন…সেকী!.কখন?.আইজেন হাওয়ার আ্যভিনিউতে সেই বিরাট স্টিল-টাওয়ারটার ওপর?…উঠলো কিভাবে?…ও ঈশ্বর!..মাতলামি, পাগলামি…নিশ্চয়, আমি এখুনি যাচ্ছি।

 ভেঙ্গে গেল সমস্ত স্বপ্ন।

ডেভ কলেভিন দুর দর করে ঘামতে লাগল। শেরিফের কাছ থেকে এমন সংবাদ তার মানসিক দৃঢ়তা ও স্থৈর্যকেও আলগা করে দিয়েছে।

 সেই কিটি লোরিং, সেই মাতঙ্গিনী। সর্বনাশী নেশার ঘোরে কিংবা কন্যা ইরিস পুলিশ ট্রেভারসকে নিয়ে চম্পট দেওয়ায় হয়তো কলেভিনকেই একহাত নেবার তাড়নায় এমন কাণ্ড বাঁধিয়েছে, যাতে কলেভিনের হৃদকম্পন কেবল বাড়ে নি, পিটভিলের আবালবৃদ্ধবনিতা সার্কাস দেখবার মজায় কাতারে কাতারে সমবেত হচ্ছে, হাততালি দিচ্ছে, শিস মারছে…।

স্টিলের তৈরি দুশ ফিট উঁচু একটি টাওয়ার আছে এই শহরতলির হাইজেন হাওয়ার এভিনিউতে। শ্রীমতি কিটি লোরিং এক পেট মাল খেয়ে এখন ঐ সবচেয়ে উঁচু, সবচেয়ে সরু বিপজ্জনক ফ্রেমটার ওপর দাঁড়িয়ে সমবেত সকলকে মজা দেখাচ্ছে। তার লম্বা চুল পিঠের ওপর ছড়ানো গাঢ় নীল রঙের স্কার্টটা বাতাসে উড়ছে, নীচ থেকে তাকালে ঠিক পুতুলের মতন দেখায়। ওখানে ওঠবার জন্য কোন লিফট্‌ নেই, নেই যা ভরসা।

দমকলের লোকেরা তাকে নামিয়ে আনবার চেষ্টা করে ব্যর্থ,-কিটি চোখ রাঙিয়ে বলছে, তাকে ছোঁবার চেষ্টাকরলেই সে লাফ দেবে। পুলিশও ঐহুমকির সামনে হতভম্ব। এখন একমাত্র কলেভিন ভরসা।

কলেভিন একটা লাফ দিয়ে এক গ্রাহককে ধাক্কা দিয়ে চো চো ছুটে তার গাড়িতে এসে বসে–সে গাড়ির ব্যাকে শুয়ে আছে তিন শ হাজার ডলার।

গাড়ি উল্কার বেগে ছুটছে।

গাড়ির পিছনে কুবের বড় দাঁত মেলে হিংস্র হাসি হাসছে। কুবেরের অভিশাপ!

সেই দৃশ্য দেখতে কাতারে কাতারে মানুষ সব ছুটছে।

 হারামিরা কি কোনদিন সার্কাসও দেখেনি?…কুত্তী, বেশ্যা, হারামজাদি কিটি। আঃ! একবার যদি নিশ্চিন্তে ওর গলাটা টিপে ধরতে পারতাম।

কলেভিনের হাতে স্টিয়ারিং কাপে।

ভিড়ে ভিড়াক্কার। বৈচিত্র্যের প্রতি মানুষের যে কী ভয়ঙ্কর যুক্তিহীন টান, এই মুহূর্তে এখানে এলে তা টের পাওয়া যায়।

বিশাল উঁচু স্টিলের টাওয়ার কিটি লোরিং একটি ছোট নীল পুতুল। এক একজন ক্রেন চালক পালা করে করে কিটির মুখোমুখি যাচ্ছে আর শুনছে কিটির অশ্রাব্য, অশ্লীল খিস্তি ও হুমকি, স্কার্ট তুলে নিজের যৌনাঙ্গ চেখাচ্ছে কিটি। যেন এক ফনাওয়ালা সপিনী তীব্র সম্ভোগ বাসনায় শরীর মোচড়াচ্ছে।

 শেরিফের সহায়তায় ক্রেন বাহিত ছোট্ট ব্রাকেটের ওপর বিশালদেহী কলেভিন গিয়ে দাঁড়াল। একটু অসাবধানী হলেই তাৎক্ষণিক মৃত্যু। কিন্তু কলেভিন জানে, কিটির মৃত্যু মানে তারও খেল খতম। কিটি মারা যাবার বারো ঘন্টার মধ্যে সেই অজ্ঞাত উকিলটি কিটির খাম খুলবে, তারপর ঝাঁকে ঝাঁকে পুলিশ ছুটবে, তাকে গ্যাস চেম্বারের পথে টেনে আনতে। যে ইস্টন এখনো ঘুণাক্ষরেও কলেভিনকে সন্দেহের মধ্যে আনে নি, তার তলপেটে সেই একটার পর একটা লাথি মারবে।

সেই সব ভয়াল সম্ভাবনাকে ঠেকিয়ে রাখার অন্তিম প্রয়াসে মহাশূন্যে দুলতে দুলতে ডেভ কলেভিন দুশ ফিট উঁচুতে কিটির মুখোমুখি হতে এগিয়ে চলেছে।

খিক খিক করে হেসে ওঠে কিটি কলেভিনকে দেখে, এই আমার রসের নাগর এসে গেছে মাইরি। আমি তোমার অপেক্ষাতেই ছিলেম গো, শোবে নাকি এখানে আমার সঙ্গে?

কলেভিন বলে, কি পাগলামি করছো কিটি! প্লিজ নেমে এসো।

 চুপ শয়তান। তোর মিষ্টি কথায় গলে গিয়ে নামবো বলে উঠিনি। স্টিলের ফ্রেম ধরে নামবো না। নেমে তো যাবোই তবে এক মোক্ষম লাফে।

আতঙ্কে বিস্ফারিত কলেভিনের চোখ, কেন–কেন তা করবে?

 তোর ওপর প্রতিশোধ নিতে। স্বামী মারা যাবার পর আমি আমার শরীর কাউকে দিইনি। তুই খেলি।

এর জন্যেই কি তোমার এত ক্রোধ?

 ধ্যাৎ! তারপর এলিসের মতন শান্ত, নরম, নির্বিরোধ মেয়েকে আমার সামনে খুন করলি। আমাকেও খুন করার চেষ্টা করেছিলি। তারপর আমার মেয়েকে ব্যাঙ্কের মধ্যে ঢুকিয়ে ব্ল্যাকমেল করা শুরু করলি। আমার একমাত্র মেয়ে ইরিস-ভাঙ্গা মন নিয়ে আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আর ট্রেভারস, আহারে, চাকরি ছেড়ে শূন্য হাতে ইরিসের সঙ্গে চলে গেল। কুত্তার বাচ্চা, এ সবের জন্য তুই-ই দায়ী। আমি তোকে ছেড়ে দেবো ভেবেছিস? আমি তোকে যোগ্য প্রতিদান দেবো।

 আমাকে ক্ষমা করো, ডার্লিং। তুমি বিত্তের চুড়োয় বসে থাকবে। তিনশহাজার ডলার। আমি দুই তৃতীয়াংশই তোমাকে দেবো। ঈশ্বরের নামে শপথ করছি।

 কিটি দাঁতে দাঁত দিয়ে রি রি করে ওঠে, লাথি মারি তোর ঐ ডাকাতির পয়সায়। আর একটা কথা বললে আমি লাফ দিয়ে পড়বে।

কলেভিনের মধুর স্বপ্ন ছিঁড়ে যাচ্ছে। সভয়ে সে মাটিতে নেমে এলো।

এখন সবকিছুই বিস্বাদ কলেভিনের কাছে। মাথাটা ঝিম্ ঝিম্ করছে। নিজের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে–যদি সত্যিই কিটি আত্মহত্যা করে তাহলে তার সময় বার ঘণ্টার মধ্যেই কিছু করতে হবে। কিন্তু টাকা সমেত কে তাকে পৌঁছে দেবে রাস্তার পুলিশী ব্যুহ ভেদ করে? হুঁ, একমাত্র ইস্টই এ কাজ করতে পারে।

কলেভিন সন্ধানী চোখে ইস্টনকে খোঁজে। ঐ সময়ই কোত্থেকে জমায়েতকে দুহাতে সরিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ইস্টনের আবির্ভাব। সে কলেভিনকে বললো, আমি তো মশাই হেড কোয়ার্টারে ছিলাম। সেখানে টি. ভি.র মারফৎ খবর পেয়ে পড়ি কি মরি ছুটে এসেছি। ওর মতন একজন চমৎকার মহিলার একি অভাবনীয় আচরণ।

বিষণ্ণ হেসে কলেভিন, মানসিক রোগ, চাপা ছিল, হঠাৎ বেরিয়ে পড়েছে।

 কি করা যায়?

আর একবার চেষ্টা করবো যদি না পারি তবে আপনাকে নিয়ে আমি ডাকসাইডে গিয়ে মনের দুঃখ ভুলতে বারে ঢুকে মদ খাবো।

নিশ্চয় আমি আপনার সঙ্গে থাকবো। সত্যি, আপনার মত মানুষের কপালেও এত কষ্ট থাকতে পারে।

শেষবারের মতন চেষ্টা করতে কলেভিন ক্রেনে চড়ে ধীরে ধীরে দুলতে দুলতে উপরের দিকে উঠতে থাকে। কিটি তখন আর আগের মতন বহাল তবিয়তে নেই। চোখে মুখে কেমন যেন অসহায় বিহ্বলতা। পা দুটোও কাঁপছে, তবুও কলেভিনকে দেখে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। তারপর হাসিটা কান্নায় রূপান্তরিক হয়, আমি নামবো ডেভ।

তাহলে নামতে শুরু করো।

কিটি বললো, শক্তিতে কুলোবে না। আমাকে তোমার ঐ ক্রেন ব্রাকেটে তুলে নাও।

আঁতকে ওঠে কলেভিন, এটুকু স্থানে দুজনের অবস্থান কোনমতেই সম্ভব নয়। তুমি যেভাবে উঠেছিলে, সেভাবেই ধীরে ধীরে নেমে যাও।

 এখন আর আমি তা পারবো না তখন হুইস্কির মাধ্যমে আমার ঐশ্বরিক ক্ষমতা ছিল। নেশা কেটে এখন আমার হাত পা কাঁপছে।… প্লিজ, প্লিজ, ডেভ, তুমি আমার হাতটা ধরো, আমি তোমার ওখানে চলে যাই ।

ভীত কলেভিন দেখলো, একখানা নখযুক্ত হাত তাকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে। যদি ঐ হাত তাকে ধরতে পারে, তাহলে কলেভিনের পক্ষে ভারসাম্য রাখা সম্ভব হবে না।

ফলে কলেভিন ব্রাকেটটাকে শরীরের দোলায় দূরে সরিয়ে নিলো।

এবং তখনই

 তখনই মহাশূন্যে কিটি লোরিং ঝপ দিলো। তার শরীর পাক খেতে খেতে বিপুল বেগে নীচের দিকে নামতে থাকে।

.

২০.

 ট্রেভারস টি. ভি.-র পর্দায় সেই বিচিত্র দৃশ্য দেখে ঘটনাস্থলে ছুটে এলো, কিটি লোরিংয়ের চূর্ণ বিচূর্ণ প্রাণহীন দেহটা তখন কাপড়ে মুড়ে এ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে।

ট্রেভারস গিয়ে শেরিফকে বললো, স্যার, আমি চাকুরীতে ইস্তফা দিতে চাইনা। ইরিসের মা ই যখন আত্মহত্যা করলেন তখন ব্যাঙ্ক ডাকাতি আর এলিস খুনের এক নম্বর অপরাধী ডেভ কলেভিনকে আমি ছাড়বো কেন?

 তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি না।

সংক্ষেপে কলেভিন ও কিটির কীর্তির কথা ট্রেভারস ব্যাখ্যা করে, ব্যাকুল স্বরে বলে, কলেভিনটা কোথায়?

শেরিফ বিচলিত হয়ে বলে, সে লোকটা তো ইস্টনকে নিয়ে ডাউন সাইডে গেল।

কতক্ষণ আগে? কার গাড়িতে?

মিনিট দশেক আগে কলেভিনের নিজস্ব গাড়িতে, চালকের আসনে স্বয়ং ইস্টন।

সর্বনাশ। শয়তানটা টাকা সমেত গা ঢাকা দেবার তালে আছে। বলেই ট্রেভারস শেরিফকে নিয়ে গাড়িতে ওঠে।

তারা ঝড়ের গতিতে ছুটলো।

.

কলেভিনের কালো হিম পিস্তলের নলটা ইস্টনের চর্বিবহুল উদরে লাগানো রয়েছে।

এক একবার খোঁচা খায়, আর প্রাণাতঙ্কে ইস্টন গাড়ির গতি তুঙ্গে তুলে দেয়। স্পিডোমিটারের কাটাটা থরথরিয়ে কাঁপছে।

পথ অবরোধকারী পুলিশরা ইস্টনকে চালকের আসনে দেখে সরে যায়। গাড়ি উল্কার বেগে পাহাড় ও বনের দিকে ধেয়ে চললো।

কলেভিনের প্রত্যাশা, একবার সে ঐ বনের মধ্যে ঢুকতে পারলে বারো ঘন্টা পরে জেগে ওঠা পুলিশ আর তার সন্ধান পাবে না। ইস্ট তো আর জীবিত অবস্থায় ফেরত যাচ্ছে না।

 এবার ইস্টন বুঝতে পারে, ঐ বনের মধ্যে একবার গাড়ি নিয়ে ঢুকলে কলেভিন তাকে আর বাঁচিয়ে রাখবে না, কুকুরের মতন গুলি করে মারবে। কী ভয়ঙ্কর, ছদ্মবেশী, খুনী ডাকাত। ইস্ট তাকে দশ মিনিট আগেও সন্দেহ করতে পারে নি।

শেষ মুহূর্তে নিছক মৃত্যুভয় ইস্টনকে অসম্ভব সাহসী ও বেপরোয়া করে তুললো। সে বনের। কাছাকাছি এসেও গাড়ির গতি না কমিয়ে সোজা একটা বড় গাছকে লক্ষ্য করে ছুটে চলে।যথাসময়ে কলেভিন সতর্ক হবার আগেই গাড়িটা সজোরে গাছটাতে ধাক্কা মারলো, গাড়ির সামনেটা ভেঙ্গে তুবড়ে গেল, হিংস্র কলেভিনের পিস্তলটা গর্জে উঠলো।দুহাত পিছনে ঠেলে চকিতে লাফিয়ে উঠে । জেমসইস্ট একেবারে স্থির হয়ে গেল।

 কলেভিন সতর্কতা সত্ত্বেও যেভাবে জখম হলো, কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে ঐ অবস্থায় আধ হাত এগিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। তার কপালে ঢুকে গেছে অন্ততঃ ছয় ইঞ্চি কাঁচের ছুরি, তার বাঁ হাতখানা গ্রন্থিচ্যুত হয়ে কোন রকমে দেহের সঙ্গে ঝুলে আছে মাত্র, আর ডান পায়ের হাড় অন্তত তিনটে টুকরোয় ভাগ হয়ে গেছে। যে পরিমাণ রক্তস্রাবে সে স্নান করছে, একজন সাধারণ মানুষের শরীরে অত রক্ত সঞ্চয় থাকে না।

সে যে ডেভ কলেভিন, সেকারণেই দেহটাকে ঘষটে ঘষটে গাড়ির পেছনে নিয়ে যায়, সেখান থেকে ডান হাতে টানতে টানতে টাকার থলিটা বের করে আনে। তারপর থলিটাকে গলায় বেঁধে সে গড়াতে গড়াতে বনের মধ্যে ঢুকবার চেষ্টা করে।

শেরিফ ও ট্রেভারসের গাড়ি তার আগেই সশব্দে এসে থামলো।

প্রথমে শেরিফ পরে ট্রেভারস লাফিয়ে নামলো।

উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা কলেভিনের চোখ ভাটার মতন জ্বলছে। তার বুকের তলায় টাকা–অনেক টাকা তিনশ হাজার ডলার।

সে শেরিফকে লক্ষ্য করে তার পিস্তলের ট্রিগার টেপে।

 লক্ষ্যভ্রষ্ট। শেরিফ মাটির বুকে শুয়ে পড়েছে।

ট্রেভারস এবার অস্ত্র তুললো।

আবার শব্দ ও ধুলোর পাতলা মেঘ।

এবারে লক্ষ্য অব্যর্থ।

নিস্পন্দ মৃত ডেভ কলেভিনের চোখ দুটো বিস্ময়করভাবে অনেকক্ষণ ধরে জ্বলছিল।