৩. সব্যসাচী হয়ে কাজ

১১.

কলেভিনকে সকাল থেকে সব্যসাচী হয়ে কাজ সারতে হচ্ছে। কাজের ভারে নুয়ে পড়বার যোগাড়। তার ওপর কাস্টমারদের কেবল একই জিজ্ঞাসাব্যাঙ্ক ডাকাতি সম্পর্কে। বিজনেস আওয়ার শেষ হতে কলেভিন খানিকটা ফুরসৎ পায়। আপন মুদ্রাদোষ অনুসারে সেইতিমধ্যে অন্তত পঞ্চাশবার ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ তুলেছে। এখন নিজের হাতে ব্যাঙ্কের দরজা বন্ধ করে চেম্বারে ঢুকে স্যান্ডউইচেকামড় লাগায়। এভাবেব্রাঞ্চ চালানোসম্ভবনয়। একবার হেড অফিসে ফোন করেছিল। রিজিওন্যাল ম্যানেজার এই মুহূর্তে তার কোন স্থায়ী কর্মীকে পিটসভিলে পাঠাতে পারছেন না। পরিবর্তে নির্দেশ দিলেন, কলেভিন যেন স্থানীয় কোন শিক্ষিত যুবককে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করে। সে যদি উপযুক্ত হয়, ব্যাঙ্ক পরে তাকে ঐ পদে স্থায়ীও করতে পারে। আরো জানা গেল, ঐরকম দুর্ঘটনা ঘটে যাবার পর যে কোন মুহূর্তে ব্যাঙ্কের অডিটর দলবল নিয়ে পিটভিল ব্রাঞ্চে গিয়ে হাজির হতে পারেন–ডেভ কলেভিন যেন এর জন্য প্রস্তুত থাকে।

 কলেভিন অনেক পরিশ্রম সত্ত্বেও তার সাফল্যের ঘোরে যেন ঝুঁদ হয়ে আছে। সব যেন আঙ্কিক। নিয়মে চলছে। ঐ তো একটা পুরনো বাক্সের মধ্যে তিন হাজার ডলার ঘুমিয়ে আছে। কলেভিন ঐ দিকে তাকিয়ে নিজের মধ্যে বিপুল প্রতিরোধ শক্তি অনুভব করে।

হবে, হবে…সব হবে। সব কিছুই তার হাতের মুঠোয় এসে যাবে। ঈশ্বর এসে তার পকেটে বসবেন। এই উপমহাদেশে যত রকমের মজা ও উত্তেজনা আছে, কলেভিন তা উপভোগ করবে। প্রকাণ্ড গাড়ি নিয়ে যখন এক নাইট ক্লাব থেকে আরেক নাইট ক্লাবে ছুটে যাবে, যখন রাজকীয় ভঙ্গিমায় এক জুয়ার আসর থেকে অন্য জুয়ার আসরে যাবে, যখন সপরিষদ গিয়ে দাঁড়াবে শেয়ার মার্কেটে, চোখে দূরবীন লাগিয়ে রেসের মাঠে বসবে, সেরা সুন্দরীরা, হলিউডের অনন্যা উর্বশীরাও কটাক্ষে তাকে বিদ্ধ করবার চেষ্টা করবে। ডলারে কি না হয়, আঁ? ডলার কেবল সুখ ও আনন্দ দেয় না, প্রৌঢ়কে যুবক করে তোলে। কলেভিন বহুকাল একটি সমর্থ যুবক হয়ে থাকবে। কেবল এই দমবন্ধ মুহূর্তগুলোকে পার করা। ব্যাস।…

কলেভিন কিছুক্ষণ বাদে ফোন করে ইরিসকে ব্যাঙ্কে ডেকে আনলো। সে ইরিসের দিকে তাকিয়ে পুলক অনুভব করে–মা ও মেয়ের মধ্যে কত পার্থক্য।

 কলেভিন-ইস, সারাটা দিন আমার ওপর দিয়ে যেন ঝড় বয়ে গেল। একার পক্ষে এত সামলানো সম্ভব? আজকালের মধ্যেই আবার অডিটর সাহেব এসে যাবেন। কাজের বহর তো আছেই, আপ্যায়নের ঝামেলাও কি কম।

 ইরিস–সত্যি, কি বিরাট দুর্ঘটনা ঘটে গেল। বিপর্যয়ও বলা যায়। এলিসের মতন মেয়ে–সত্যি ভাবাও যায় না। কেনও বলছিল।

কলেভিন–কি বলছিল?

 ইরিস-বলছিল মিস ক্ৰেগের পক্ষে টাকা সরানো সম্ভবই নয়। নিশ্চয় কেউ ওকে জোর করে দুষ্কর্মটা করিয়ে ওকে কিডন্যাপ করেছে।

কলেভিন শক্ত হয়ে ওঠে। প্রকাশ্যে বলে, তা হতে পারে। কেনের কথায় যুক্তি আছে। ইরিস–আমাকে ডেকেছেন কেন?

কলেভিন–তুমি এই ব্যাঙ্কে চাকরি করবে?

 ইরিস–আমি!

কলেভিন-হুঁ, তুমি। মাইনে খারাপনয়, সপ্তাহে পঁচাত্তর ডলার। সিনেমা হলের কাজটা ছেড়ে দাও। আমি চাই, আমার ভাবীকন্যা আমার সঙ্গে কাজ করুক। আমি ঠিক তৈরি করে নেবো।

ইরিস সম্মতি জানিয়ে সানন্দে ফেরে।

কলেভিন আবার ফোনের বোম টেপে। এবার মিস ক্লের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।.কে, ম্যানেজার সাহেব বলছেন?

ঠিক। একবার মিসেস লোরিংকে ডেকে দেবে?

তিনি তো ঘরে খিল তুলে শুয়ে আছেন। বললেন, শরীর খারাপ, কেউ যেন তাকে বিরক্ত না করে।

ঠিক আছে। ডাকতে হবে না। 

কলেভিন লাইন কেটে দেয়। আবার তার খুনীর মেজাজ চড়ছে। হাত পা ঘামছে, দাঁতে দাঁত ঘষে, কিছুতেই ওকে মদ থেকে সরানো যাচ্ছে না।

ধক করে ওঠে বুকের মধ্যে পুলিশের কাছে কখন যে কি ফাঁস করে দেবে।

কিটি লোরিংকে মরতেই হবে।

কিটিই একমাত্র প্রাণী, যে তার পথের কাঁটা। এমন কাটা, যার প্রয়োজনীয়তা আছে অথচ বিপজ্জনক।

কিটিকে কিভাবে নিকেশ করা যায়?

খুনের হরেক ছক কলেভিনের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সে দাঁতে দাঁত ঘষে। তার চোখে রক্ত ঠেলে আসে। হাতের পাতা ঘামতে থাকে। দুনিয়ার পেশাদার খুনীরা যেমন অবিচলিত থাকে কলেভিন তা পারছে না। অনেক কষ্টে সে নিজের হিংস্র উত্তেজনাকে বাগে আনে।

.

১২.

 বাহাদুরি খুব রেডিও ও দূরদর্শনের। সাড়া পাওয়া গেল ঠিক উৎস থেকে। যে লোকটা এলিস ক্ৰেগের তথাকথিত বয়ফ্রেন্ডের কাছে সেকেন্ড হ্যান্ড লিংকন গাড়িটা বিক্রি করেছিল, সে-ই টেলিফোনে ইস্টনের সঙ্গে যোগাযোগ করলো। ইস্ট ট্রেভারসকে নিয়ে তার গ্যারেজে হাজির হলো। ক্রেতার বর্ণনা যথারীতি একই রকম-লম্বায় চওড়ায় দশাসই, ঝাকড়া গোঁফ, ডান গালে জডুল। গাড়ি বিক্রেতা আরো একটি তথ্য যোগান দিলো–সেই ক্রেতার নাকি একটি মুদ্রাদোষ আছেনাক দিয়ে ঘোঁৎ ঘোঁৎ আওয়াজ তোলে।ইস্টন তেমননানাকরলেও ট্রেভারর্সের হৃদস্পন্দন কিন্তু বৃদ্ধি পায়। মুদ্রা দোষ, নাক দিয়ে ঘোঁৎ ঘোঁৎ আওয়াজ তোলা। মানুষ ছদ্মবেশের আড়ালে অনেক কিছুই লুকিয়ে রাখতে পারে। পারে না নিজের মুদ্রা দোষ।

গাড়ির বর্ণনা ও নম্বর মাথায় গেঁথে ইস্টন ও ট্রেভারস বের হলো, যদি কোথাও গাড়িটাকে পরিত্যক্ত অবস্থায় আবিস্কার করা যায়।

 ট্রেভারস বললো, গাড়ি যদি ওরা ফেলে রেখে যায়, তবে তা থাকবে কোন বড় সড় পার্কিং গ্রাউন্ডে।

তারা পিটসভিল থেকে ডাউন সাইড যাবার পথে প্রতিটি পার্কিং গ্রাউন্ডে খুঁজতে থাকে। তারা যখন স্টেশানের দিক চলেছে ট্রেভারসের নজরে একটা অতিকায় পার্কিং গ্রাউন্ড পড়লো। সেঅধীর গলায় চিৎকার করল, গাড়ি থামান। ঐ দেখুন স্যার, একটা লিংকন গাড়ি পার্ক করা। কয়েকটা গাড়ির মধ্যে সেঁধিয়ে আছে। শরীরটা বাদামী, মাথাটা লাল। দুজনেই গাড়ি থেকে লাফিয়ে নামে এই, সেই বস্তুটাই। কোন সন্দেহ নেই। তখনই স্থানীয় থানায় খবর পাঠানো হলো। দারোগা গাড়ির মিস্ত্রী নিয়ে এলেন। ইস্ট মরীয়া হয়ে পরীক্ষা করতে লাগল, বলা যায় না, হয়তো তিন শ হাজার ডলার সমেত ব্যাগও আবিস্কৃত হতে পারে। ট্রেভারসের কেবল মনে হচ্ছে–একটা অশ্রুসজল বিয়োগান্তনাটকের আধার এই গাড়িটা। তারপর যখন মিস্ত্রীকে দিয়ে পিছনের ডালাটা ভোলা হলো সকলের বুকে দামামা বেজে উঠলো। কুমারী এলিস ক্ৰেগের দুর্গন্ধময় লাশ রয়েছে।

 ট্রেভারর্স প্রস্তরবৎ। সে স্থির দৃষ্টিতে গলিত শবের দিকে চেয়ে আছে। অঙ্কটা মিলে যাচ্ছে। সিঁড়িভাঙ্গা অঙ্ক। কিন্তু অঙ্ক তো কেবল মিলনেই চলবে না, যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে।

কী দুর্গন্ধ! এই হল মানুষের দেহ। এরজন্য এতো সাধ্য ও সাধনা। ট্রেভারসের বুক ক্ষণিকের জন্য হু হু করে ওঠে।

তারপর সে শপথ নেয়, আসল আসামীকে সে নিজের হাতেই শাস্তি দেবে।

.

১৩.

মদে চুর, এলো চুল, কিন্তু নেতিয়ে নেই, বরং বেশ স্পর্ধিত কোমর ও বুক। কিটি লোরিং আকস্মিক অভাবিত গলায় দপ করে জ্বলে উঠলো কলেভিনের প্রস্তাব শুনে। খবদার। ইরিসকে যদি তোমার ঐ ব্যাঙ্কের খোঁয়াড়ে ঢোকাও আমি কুরুক্ষেত্র করে ছাড়বো।

কলেভিন নাক দিয়ে ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ করে হেসে বলে, তুমি ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না ডার্লিং। ইরিসের কাছ থেকে কেন ট্রেভারর্স, মানে পুলিসের কার্যধারা ও অভিমতের প্রাত্যাহিক বিবরণ পাবো।

 কিটির মুখে বিদ্বেষ বিচ্ছুরিত হয়, থাক। ওসব কথায় আমাকে ভেজাতে পারবেনা। তোমার মতন খুনে, লম্পট, মেয়ে পটাতে ওস্তাদ ইরিসকে যে কোন দিকে নিয়ে যেতে পারে, তা আমি ভালোই বুঝি।

কলেভিন জিভ বের করে, ছিঃ ছিঃ, আমাকে অতটানীচ মনেকরোনা।ইরিস আমার ভাবীকন্যা এবং তুমি আমার মহার্ঘ প্রণয়িনী।

ঘৃণা ভরে কিটি বললো, ওসব মিষ্টিকথা আমার কাছে এখন মূল্যহীন। ইরিসকে ব্যাঙ্কে ঢোকাবার পরিকল্পনা ত্যাগ করো। ইরিস যেমন আছে তেমনি থাকবে। তোমার মতন শয়তানের সাহায্যে ওর ভাগ্যোদয়ের দরকার নেই।

কলেভিন ক্রোধে নিজের ঘরে ফিরল। সশব্দে দরজাটা বন্ধ করলো কিটি। কলেভিন আবদ্ধ হিংস্র জানোয়ারের মতন ঘরময় পায়চারী করতে থাকে। আর অপেক্ষা নয়–আজই ঐ সর্বনাশীকে খতম করতে হবে। ও যখন বাথরুমে ঢুকবে, মানে ব্যাপৃত হবে…দরজার নাটবল্ট তো আলগা করাই আছে।…অস্ত্র? পৌণঃপুনিক ব্যবহারেও যে আয়ুধ বিশ্বস্ত, সরল ও নিরাপদ তা তৈরির কায়দাআমার জানা।…একটা বড় মোজার মধ্যে পাঁচটা গলফ বল ঢোকালোকলেভিন। সেটা হাতে নিয়ে কয়েক পাক ঘোরালো। বেশ ভারী এবং মোক্ষম।…কলেভিনের কপাল ঘামছে। আজ অব্দি স্বার্থহীন ভাবে সে কিছু করেনি।…কারুর মুখে উচ্চারিত হবে না, কিটি লোরিং খুন হয়েছে। সবাই জানবে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনাটা এমন সময়ে ঘটেছে যখন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার গ্যারেজে তার গাড়ি সারাচ্ছেন। খুনই যখন নয়, তখন তলকুল আর কে খুঁজতে যাবে?…একটা শর্ট ও স্পোর্টস গেঞ্জি গায়ে দিয়ে কলেভিন নীচে নেমে গেল হলঘরে। দূরদর্শন দর্শকের সংখ্যা মাত্র দুই। মেজর হার্ডি ও মিসপীয়ারসন, মারদাঙ্গা থ্রিলার ও সেক্সপ্রধান প্রেমে জমাট বেঁধে আছে। এই মুহূর্তে ভিলেন অর্ধনগ্নিকানায়িকার দিকে তাকিয়ে। নিছক ভদ্রতার খাতিরে হার্ডি কলেভিনকে জিজ্ঞাসা করলো,

চললেন কোথায়?

 গ্যারেজে গাড়ির পরিচর্যায়।…একদম সময় পাই না।

 অতএব কলেভিন গ্যারেজে ঢুকলো। আর কোন বাধাই দুর্ল মনে হচ্ছে না। শরীরে ধুলো কালি লাগিয়ে গাড়ির কিছু কল কজা সে খুলে রাখলো। কিছুক্ষণ গ্যারেজে কাটিয়ে হোটেলের পিছনে এসে দাঁড়ালো। তারপর সে অনায়াসে একটার পর একটা জানালার সানসেট ধরে ধরে তিনতলায় নিজের ঘরে পৌঁছে গেল।

 সে ঘরে ঢুকে লোরিং কখন বাথরুমে ঢুকবে সেই আশায় বসে থাকে। স্নায়ু খুব টান টান, যে টেনশন একজন যুবককে অকালবৃদ্ধ করতে পারে!নীচতলায় থ্রিলারের রোমাঞ্চে রোমাঞ্চিত দুজন। একটি চোরা সুশৃঙ্খল খুনের পক্ষে আদর্শ পরিবেশ। অথচ কিটি তো এখনো স্নানঘরে ঢুকছেনা। কলেভিন অস্থির হয়ে ওঠে।

 তখনই মৃদু শব্দ, কিটি হাঁটছে। বাথরুমে গিয়ে ঢুকলো। কলেভিন গলফ বলে ঠাসা মোজাটাকে মুঠোতে পাকিয়ে স্নান ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। নীচতা-শঠতা উহ্য থাক। আসলে হলো তার সাহস, বুদ্ধি ও শক্তি। বাথটাবে জল পড়বার শব্দ শুনতে পেলো। একসময় শব্দটা বন্ধ হয়ে গেল তার মানে বাথ টাবটা এখন পরিপূর্ণ। জলের মধ্যে কিটির পা নাড়বার শব্দ। সুতরাং সময় উপস্থিত।

বন্ধ দরজায় জোরে ধাক্কা মারতেই বাথরুমটা খুলে গেল।কলেভিন ভেতরে লাফিয়ে ঢুকলো।

 কিন্তু

কিন্তু কলেভিন ভেতরে ঢুকেই নুনের মুখে জোকের মতন কুঁকড়ে গেল। তার সামনে উদ্যত পিস্তলেরকালোনল-দেয়ালে পিঠ দিয়ে তার দিকে তাক করে আছে কিটি লোরিং।শরীরে জলের চিহ্নমাত্র নেই, রুখু সুখু মুখাবয়ব, চোখ দুটো জ্বলছে। সে হিস হিস শব্দে বললো, জানতাম, তুমি এখানে আমাকে খুন করতে ঢুকবে। জলে শব্দ তুলে তোমাকে এখানে টেনে এনেছি। খুন,ব্যাপারটা তোমার কাছে জলভাত, তাই না, ডেভ?

 এখন তো অতি বুদ্ধিমানের যেন গলায় দড়ি।

ততক্ষণে কলেভিন সামলে উঠেছে। মুখে সেই মনোমুগ্ধকর মোলায়েমহাসি, তোমার ধারণা একেবারেই ভুল।

 তোমার ঐ হাসি হাসিবচন আর আমাকে ভোলাতে পারবেনা, ডেভ। ভুল যা করবার আগেই করে ফেলেছি।…শোন, আমাকে মারলে তুমিও মরবে। কারণ, তোমাকে চিনতে পেরেই আমার দীর্ঘ জবানবন্দী খামবন্দী করে এক সলিসিটরের কাছে গচ্ছিত রেখেছি। বলা আছে, কোন কারণে আমার মৃত্যু ঘটলেই ঐ খাম যেন পাঠ করা হয়। বুঝতেই পারছ, খামে কি লেখা আছে।

 কলেভিন পাথরের মতন নিশ্চল। অসহায়ের মতো উৰ্ব্ব লোকের করুণা ভিক্ষা করতে হবে হয়তো।

 কিটি পিস্তলটাকে স্কার্টের পকেটে রেখে কলেভিনকে নিয়ে কলেভিনের ঘরে ঢুকলো। যথেষ্ট ভারিক্কীগলায় বললো, এবার আমি তোমাকে শাদিকরতে রাজী। কেবল শাদিনয় তোমাকে এখন থেকে আমার ইচ্ছানুযায়ী পথে পরিচালিত করবো। এতদিন আমার ওপর অনেক কর্তৃত্ব করেছ। এবার আমার পালা।

কিটি হি হি করে হেসে ওঠে।

হঠাৎই ক্যাসেট প্লেয়ারটা চালিয়ে নাচতে শুরু করে। তার নাচে অদ্ভুত অদ্ভুত সব মুদ্রা, প্রবল প্রতিহিংসা ও হতাশা ফুটে উঠছে ঐ নাচে। নিজেকে আংশিক উদোম করে কলেভিনকে সে তার দোদুল্যমান স্তনযুগল দেখায়। নাচতে নাচতে কোমর দিয়ে কলেভিনকে ধাক্কা মারে। কলেভিনের দিকে তার মাংসল বক্তিদেশ একবার এগিয়ে আনে আবার সরিয়ে নেয়। ঠিক যেন এক সার্কাসের রিং মাস্টার তার আফিংখোর দুর্বল জানোয়ারটাকে নিয়ে ইচ্ছেমত খেলা দেখাচ্ছে।

.

১৪.

 হরেক রকমকর্মব্যস্ত হয়ে ফেডারেল গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধান মিস্টারমার্থী স্বয়ং পিটসভিলে এসে হাজির,ব্যাঙ্ক ডাকাতি জনিত যেচাঞ্চল্য ওপর তলায়,তারই অনিবার্যতাকে ডেকে এনেছে। এখানে এসেই শেরিফের অফিসে এক আলোচনা সভা ডেকেছে। সেই সভায় মিঃ মাথী, ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দা ইস্ট, শেরিফ, ডেপুটি শেরিফ ট্রেভারস এবং ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ডেভ কলেভিন উপস্থিত থাকবে।

সন্ধ্যা নাগাদ হোটেল থেকে বেরিয়ে শেরিফের অফিসের দিকে যাবার পথে কলেভিন লক্ষ্য করলো, শহরের প্রতিটি পথে বর্ম চর্ম পরা পুলিশের ভীষণ তৎপরতা–প্রতিটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে চালক ও যাত্রীদের মুখের ওপর টর্চের আলো ফেলছে। হয়তো এরপর বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে সংসর্গরত নারী-পুরুষদের টেনে টেনে আনবে ডাকাত সন্দেহে। কোন লোককেই ওরা পিটসভিল এবং ডাউন সাইডের গণ্ডীর বাইরে যেতে দেবে না। কলেভিন বুঝতে পারে না, ওরা কি করে ধরে নিলো যে এলিসের খুনীটা এখনো এখানেই টাকা আঁকড়ে ঘাপটি মেরে রয়েছে? সমস্যা ক্রমশই জটিলতর কলেভিনের অস্থিরতা বাড়ছে, নানা ভয়ের ছবি মনে এসে যায়। সবচেয়ে অস্বস্তি কিটিকে নিয়ে। আচ্ছা চাল দিয়ে রেখেছে বটে। ওর বাঁচা মরার ওপরই নাকি কলেভিলের নিরাপত্তা নির্ভর করছে। এরকম চরম পরিস্থিতি তার স্বপ্নাতীত, এখন সে সত্যিই সভয়ে কিটিকে মান্য করে চলছে। এমনকি, মাতাল মেয়েমানুষটারকাম উথলে উঠলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কলেভিনকে সক্রিয় হতে হয়। ঐ সময়ে কিটি লোরিং-এর অসভ্য আচরণ এক চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। বন্য, অভাবনীয় উত্তেজক, ঘৃণ্য,লজ্জাশূন্য আদিতে সমাজ ও পরিবার যে মাতৃতান্ত্রিক ছিল, কিটিকে। দেখে তা অনুভব করা যায় এবং এই পরীক্ষাটা ডেড় কলেভিনের ওপর চালানো হচ্ছে, যে কিনা নিজেকে অন্যতম কঠিন প্রাণ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পুরুষপ্রধান মনে করে থাকে। এমনও হতে পারে-কলেভিন তার ধৈর্যের সুতো হারিয়ে ফেলেছে…সঙ্গমকালে প্রচণ্ড হিংস্র আক্রমণ চালাল সে কিটির ওপর–পরদিন কিটির রক্তাক্ত প্রাণহীন দেহ আবিস্কৃত হলকলেভিন আরো নিঃস্ব, আরো বিপন্ন এক মানুষ হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে পুলিশ ও আইনের হাত থেকে রেহাই পাবার জন্যে।..না, এমন হয় না। এমন হতে পারে না…কলেভিন তার মেজাজ হারিয়ে কেবল স্নায়ুর চাপ সহ্য করো। নাক দিয়ে নিজের অজান্তেই ঘোঁৎ ঘোঁৎ আওয়াজ তোলে।

সকলে শেরিফের চেম্বারে সমবেত। কলেভিন ট্রেভারসের পাশের চেয়ারে বসে। মিঃ মার্থীর সরু মুখে তীক্ষ্ণ বুদ্ধিও তৃপ্তিবোধের ছায়া। তার ইঙ্গিতে বক্তব্য শুরু করলো ইস্ট, উপরওয়ালার সামনে তার স্বর বেশ খরশান, আমি সুনিশ্চিত অপরাধী এক ব্যাঙ্কের মহিলাকর্মী এলিস ক্রেগকে পটিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা হাতায়। তারপর এলিসকে খুন করে পরিত্যক্ত গাড়ির মধ্যে লাশ রেখে এখান থেকে পালাবার চেষ্টা করেও পালাতে পারেনি।

কলেভিন গালে তর্জনি রেখে যথাসাধ্য চেষ্টা করে স্বাভাবিক নির্বিকার থাকতে।

মার্থী বললো, এরকম সিদ্ধান্তের কারণ কি?

উৎসাহের সঙ্গে ইস্ট বলে, কারণ, ঐ দিনই স্থানীয় পুলিশ হাসপাতাল থেকে এক দাগী অপরাধী চম্পট দেয়। সেই আসামীকে পাকড়াও করতে পিটসভিল ও ডাউন সাইড থেকে বের হবার প্রতিটি রাস্তা পুলিশের জোর প্রহরায় একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি রেলপথেও তাদের ঐ কড়াকড়ি। আবার তার পরদিন থেকে ব্যাঙ্কের ডাকাত ধরতে আমরাও কোন লোককে বিনা তল্লাশীতে এ জায়গা ছেড়ে যেতে দিচ্ছি না। তাই, সেই খুনী এবং এলিসের কপট প্রেমিক এক এখানেই ঘাপটি মেরে আছে।

 মার্থী বললো, হু, তোমার কথা আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না। কিন্তু ভল্ট থেকে টাকা সরাতে গেলে দুটো চাবির দরকার। তার একটি ছিল এলিসের কাছে, অন্যটি ছিল ম্যানেজার মিঃ কলেভিনের পকেটে। আমার প্রশ্ন হলো, দুটো চাবি একত্রিত করা কি করে সম্ভব হলো? কিন্তু ডুপ্লিকেট হলেও এলিস তৈরি করার সুযোগ পেল কিভাবে?

 কলেভিন এবার মুখ খুললো, এটা আমার স্বীকৃত দুর্বলতা যে, আমি বরাবরই আমার সহকর্মীকে খুব বিশ্বাস করে ফেলি। আর মিস ক্রেগকে তো সন্দেহ করার প্রশ্নই নেই। শুধু আমি কেন মিস ক্রেগ ছিলেন তার সকল পরিচিতজনের আস্থাভাজন। তাই অনেক সময়ই আমি চাবিসমেত কোটটা চেয়ারের ওপর রেখে বাইরে গেছি। এলিস তখন ব্যাঙ্কের মধ্যেই থেকেছে। তার পক্ষে সাবান বা মোমের ওপর আমার চাবির ছাপ নেওয়াটা সহজ কাজ। তাছাড়া প্রাক্তন ম্যানেজার মিঃ ল্যাম্ব হঠাৎ অসুস্থ হলে দুটো চাবিই এলিসের হাতে ছিল।

মার্থীর হতাশ মন্তব্য, ব্যাঙ্কের দেখছি, বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো।

নিঃশব্দে হাসে কলেভিন।

ট্রেভারস বললো, স্যার, আমার কিছু বলবার আছে।

 বলো।

 মিঃ ইস্টনের এটা কোন দুঠুক্তি নয় যে, খুনী পিটসভিল বা ডাউন সাইডেই রয়ে গেছে। তবে আমার সংযোজন এই যে, লোকটার বিশেষ গোঁফ ও নকল জডুল ছদ্মবেশ মাত্র। কলেভিনের বুকের মধ্যে যেন বিস্ফোরণ ঘটে।

 মিঃ মার্থীর ভ্রূকুটিল, তোমার অমন সিদ্ধান্তের হেতু?

হেতু হলো এলিসের ঘরে রেখে যাওয়া টাইপ করা চিঠিখানা। ঐ চিঠিটা একটা বড় স্ট্যান্ডার্ড রেমিংটন টাইপরাইটারের দ্বারা টাইপ করা। যে মেশিনের ভি এবং টি এই অক্ষর দুটি ভাঙা। কোন মানুষ অতবড় মেশিন নিয়ে স্থানান্তরে ঘুরে বেড়াতে পারে না। দ্বিতীয়তঃ, আমরা জেনেছি খুনী তার গাড়িখানা স্থানীয় এক গাড়ি বিক্রেতার কাছ থেকে খরিদ করে। সে যদি বাইরের লোকই হবে, তাহলে নিশ্চয় এখানে গাড়ি কিনত না। তৃতীয়তঃ, মাত্র পাঁচজন লোককে বাদ দিলে তার ঐ গোঁফ ও জডুল মার্কামুখ এই এলাকার আর কেউ দেখেনি। অথচ এই ছোট শহরে মানুষ মানুষের সান্নিধ্য সহজেই উপভোগ করে, আর নতুন কেউ এলেই তার সম্পর্কে কৌতূহলী হয়ে ওঠে। আমার তাই দৃঢ় বিশ্বাস এলিসের প্রতারক প্রেমিক এই শহরেরই কেউ, হয়তো দোর্দণ্ড প্রতাপে বিরাজমান কেউ, লম্বা চওড়া তাগড়াই চেহারা, গোঁফ আর জডুল লাগিয়ে দিব্যি ভঁওতা দিতে পেরেছে মিসেস লোরিং, মেজর হার্ডি, মিস পীয়ারসন, পেট্রল পাম্পের কর্মচারী এবং ব্যাঙ্ক ম্যানেজার মিঃ কলেভিনকে। আমাদের এবার খুঁজে বের করতে হবে এই শহরতলীতে যে কটা স্ট্যান্ডার্ড রেমিংটন টাইপ রাইটার আছে তার মধ্যে কোনটার দুটো নির্দিষ্ট অক্ষর অক্ষত নয়। একটা নিরেট টাইপরাইটারকে খুঁজতে খুঁজতেই আমরা আসল খুনীকে দেখতে পাবো।

 দুচোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে মিঃ মার্থীর, চমৎকার বিশ্লেষণ। এবার আমি একটি দারুণ উদ্দীপক সংবাদ পেশ করছি। ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন যে, যে তোক এই ব্যাঙ্ক ডাকাত ও এলিসের খুনীর সন্ধান দিতে পারবে ব্যাঙ্ক তাকে নগদ ষাট হাজার ডলার পুরস্কার দেবে।

ষাট হাজার ডলার।

চিবুক ঊর্ধ্বে তুলে মিঃ মার্থী ঘোষণা করে।

ট্রেভারস ও ইস্টনের সবিস্ময় উচ্চারণ ধ্বনিত হয়, ষাট হাজার ডলার! ট্রেভারসের ভাবনার গতি স্তব্ধ থাকে না, এটাই তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সুযোগ। ষাট হাজার ডলার পেলে সে পুলিশের চাকুরী ছেড়ে দেবে। ব্যবসা করে, সে দ্রুত ধনী হবে। তখন মিসেস কিটি লোরিং আর তার মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে অরাজি হবে না।

 ইস্টনের মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেহয়তো ঐ ষাট হাজার ডলার পেতে চলেছে। পেলেই চাকুরি থেকে অবসর নেবে আর মুখ বউকে তালাক দেবে এবং একটি ডঙ্কা যুবতাঁকে, রয়ে বসে উপভোগ করবে।

 একটু ডান দিকে হেলে ট্রেভারস দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে খেয়াল করে। সে ডেভ কলেভিনের পাশে বসে আছে এবং পর পর দুবার নাকের ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ শুনতে পেল।

একটা সাধারণ শব্দ যদিও মুদ্রাদোষজনিত এবং স্নায়ুর প্রভাবে যা ধ্বনিত–ট্রেভারসের মনে হল–এ যেন তুষার মগ্ন কোন পর্বতমালার মধ্যে হঠাৎই ইয়েতিকে আবিস্কার করার মতন ঐতিহাসিক ঘটনা। এই শব্দের সঙ্গেই যেন হাজার হাজার ডলারের ঝঙ্কার জড়িয়ে আছে। খুন, গলিত শব, উন্নতি অবনতি, অপ্রতিরোধ্য উচ্চাকাঙ্খ, ইস্ট ও ট্রেভারসের মধ্যে অদৃশ্য প্রতিযোগিতা, ট্রেভারসের ভবিষ্যৎ, অনিবার্য সুখ–পরপর মনের মধ্যে ছায়া ফেলে গেল।

.

১৫.

এই সান্ধ্য শহরটিকে বিশদভাবে স্নান করিয়ে দিলো শন শন ভোঁ ভোঁ বাতাসের সঙ্গে ঝলক ঝলক বৃষ্টি। রাস্তার আলোগুলো ঝাপসা, কোথাও কালিময়। এ হেন অসময়ে ইরিস সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে পথে বিব্রত হয়ে এদিক ওদিক তাকায়, মাথার ওপরকার আকাশ আজ তার আশ্রয় নয় চুল ভিজছে, গাল ভিজছে, উদ্ভিন্ন বুক ভিজছে–তাকে সিক্ত করতেই বুঝি প্রকৃতির এমন উন্মাদনা।

 একটা গাড়ি হঠাৎ তার পাশে এসে থামলো। কপাট খুলে ট্রেভারস মুখ বের করে, বৃষ্টিতে ভিজলে বিছানা নেবে, শিগগীর ভেতরে এসো।

ইরিস তার ভেজা পোশাক সমেত গাড়িতে ঢুকলো, ট্রেভারসের পাশে।শীতের প্রভাবকমাতে ঠোঁট দিয়ে ইরিসের শিস বেরিয়ে আসে, বৃষ্টির নর্তন এখন কম মনে হয় তার।

রাস্তা জনহীন, গাড়িটা ডেডস্টপ। ট্রেভারস ইরিসকে জড়িয়ে ধরে, ইরিসও তাকে। ঠোঁটের ওপর ঠোঁট, হাত কখনো ইরিসের পিঠের ওপর, কখনো কোমরে, গাড়ির মধ্যে রেডিওতে নীচু পর্দায় বিলি হলিডে চলছে। কিছুক্ষণ চুম্বনাবদ্ধ থাকার পর ট্রেভারস বললো, আমি তোমাকে ভীষণভাবে খুঁজছিলাম। কোনরকমে অফিস থেকে বেরিয়ে এসেছি।

দুচোখে ইরিসের কৌতুক–কি ব্যাপার? কিসের জন্য এত ব্যক্ততা?

ট্রেভারস গাড়িটা চালিয়ে নির্জন স্থানে এনে বললো, আমার মানে আমাদের ভাগ্য এবার খুলে যাচ্ছে ডার্লিং। পয়সার জন্য আমাদের আর কোন লোককে রেয়াৎ করতে হবে না।

ট্রেভারসের তপ্ত সাহচর্য উপভোগ করতে করতে ইরিস জিজ্ঞেস করে, কি রকম?

 আমি ষাট হাজার ডলার পেতে চলেছি।

 তুমিও একটা ব্যাঙ্ক ডাকাতি করবে নাকি?

না, একদম বাজে কথা বলছি না। তবে একথা একমাত্র তোমাকেই বলা যায়, তৃতীয় কারুর কানে গেলেই সব ভেস্তে যাবে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছেন, যে লোক খুনে ডাকাতটার ঠিক হদিশ দিতে পারবে তাকে ষাট হাজার ডলার দেবে। বুঝলে ডার্লিং ষাট হাজার ডলার।

 হুঁ, টাকার অঙ্কটা মাথা ঘুরিয়ে দেবার মতই। কিন্তু তুমি সেই উবে যাওয়া মহামানবটির সন্ধান পাবে কি করে?

মহামানবটি মোটেই উবে যায় নি। সে এখানে আর পাঁচজনের সঙ্গেই দিব্যি হাঁটছে চলছে খাচ্ছে দাচ্ছে, আমি তাকে চিনে ফেলেছি। ইস্ট বা শেরিফ সাহেব চিনতে পারেননি।

বটে, সে কি?

ইরিসের মুখের দিকে চেয়ে তার দৃষ্টি তীক্ষ্ণতর হতে থাকে। চাপা স্বরে বললো, তার নাম : শুনলেতুমি কেবল চমকে উঠবেনাআঘাতও পাবে।কিন্তু যা সত্যি, তা মেনে নিতেই হবে। একমাত্র তোমাকেই আমি বলতে পারি কারণ গোপনকরেরাখবার মতনমানসিক দৃঢ়তা তোমার আছে।

ইরিসের চোখেমুখে সন্দেহ ও শঙ্কার ছায়া ঘনায়, কে সে?

ট্রেভারস আরো চাপাস্বরে উচ্চারণ করলে, ব্যাঙ্ক ম্যানেজার মিঃ ডেভ কলেভিন।

ভূমিকম্পেও ইরিস বোধহয় এতটা চমকে উঠতো না। নিস্তব্ধতার পর তীব্রস্বরে প্রায় চিৎকার করে ওঠে, তুমি কি সুস্থ মস্তিষ্ক? তুমি যা বলছে, তার তাৎপর্য বোঝ?

দৃঢ়স্বরে ট্রেভারস বলে, বুঝি এবং আমি সম্পূর্ণ সুস্থ মনস্ক, দায়িত্ব নিয়েই নামটা তোমাকে জানালাম।

তুমি কি জানো, তিনি আমার মাকে বিয়ে করতে চলেছেন?

ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, এখনো সেই দুর্ঘটনাটা ঘটেনি। তোমার উচিত, রুখে দাঁড়ানোন…..শোন, ইরিস, আমার অনুমান যদি সত্যি হয় তাহলে তুমি ঐ ব্যাঙ্কে ঢুকে এমন একটি স্ট্যান্ডার্ড রেমিংটন টাইপ রাইটারের সন্ধান পাবে, যার ভি আর টি অক্ষর দুটো ভাঙা-যার সাহায্যে এলিস ক্রেগকে তার প্রেমিক চিঠি লিখেছিল এবং এলিস ব জিনিস সরিয়ে ফেললেও ঐ চিঠিটাকে রেখে গেছে পুলিশের কাজকে জলবৎ করে দিতে। কী সাংঘাতিক ষড়যন্ত্রী এই ডেভ কলেভিন।

তুমি যখন অত জোরের সঙ্গে বলছে তখন আমি নিশ্চয় ব্যাঙ্কে ঢুকে পরখ করে আসবো। তৃবে তোমার ঐ সন্দেহ নেহাৎ আলপটকা, ভিত্তিহীন ও মারাত্মক সিদ্ধান্ত।

ট্রেভারস ভাবে যদি ইরিস সফল হয় তবে ট্রেভারস ও ইরিস এক নতুন যুগে প্রবেশ করবে আর যদি সফল না হয় ব্যর্থতার নিরেট পাথরে ট্রেভারস আছড়ে পড়বে। কিন্তু ইরিস সত্যি যদি টাইপ মেশিনটা পায়, আরো ভয়ঙ্কর কোন সত্য প্রতিভাত হয়ে উঠবে না তো? তার প্রত্যয় জন্মায়–পুলিশের চাকুরীটা মূলতঃ বাম্বলের নয়, বুদ্ধি ও অনুভূতির।

 ইরিস ঝিম্ ঝিম্ মাথা নিয়ে ঘরে এলো। নিজের ঘরে ঢুকবার মুখে থমকে দাঁড়ায়–কিটির ঘরে আলো। ইরিস দরজা খুলে ভেতরে আসে। কিটি মদ গিলছে।ইরিস ক্ষোভের সঙ্গে বললো,

ছিঃ! মা, তুমি আবার মদ খাচ্ছ?

কিটি ক্রোধে ফেটে পড়ে, আলবাৎ গিলবো। তুই কেন ব্যাঙ্কে কাজ নিতে রাজি হয়েছিস?

 তাতে ক্ষতিটা কি?

না, তুই ডেভের অফিসে ঢুকবি না।

কারণ দেখাও।

 নিজের মঙ্গল যদি চাস, ওখানে যাবি না।

কারণ দেখাতে না পারলে তোমার কথাই বা আমি মানতে যাবো কেন?…মাতালের প্রলাপ। ইরিস আপন মনে বিড় বিড় করতে করতে নিজের ঘরে ঢুকলেও মনে হলো, এক বিকট প্রহেলিকা তাকে আচ্ছন্ন করে রাখছে।

মা কিসের ইঙ্গিত দিতে চাইছে?

কেনই বা ট্রেভারসের মনে হচ্ছে কলেভিনই সম অপরাধের উৎস? আর ইরিসের মনে প্রতিফলিত হচ্ছে, অন্য ধরনের অনুভূতি। অমন বুদ্ধিদীপ্ত, যৌন সমৃদ্ধ, বিশাল দেহী পুরুষ! হাসিটা কী দারুণ। যে কোন নারীকে কজা করে ফেলার পক্ষে ঐ হাসির গভীরতা অপরিমিত।

ইরিসের নিজেরই তো কেমন যেন একটা দোলা লেগেছিল কলেভিনের মুখোমুখি হবার পর…এমন কি মার সঙ্গে সম্পর্কের কথাটা শুনবার পরও।

সেকলেভিনের কাছ থেকে ছুটে ট্রেভারসের পাশে না দাঁড়ানো পর্যন্ত নিজের আত্মবল খুঁজে পাচ্ছিল না। ইরিস আত্মসমীক্ষা করতে ভয় পায়।