৪. ইংলন্ড থেকে ফিরে

১৬.

ইংলন্ড থেকে ফিরে পরদিন সকালে সেন্ট ওমরে ম্যাজিস্ট্রেট হয়টেটের ঘরে তার সঙ্গে দেখা করলাম আমরা। জ্যাক রেনাল্ডকেও সেখানে আনা হয়েছিল।

আমাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে মঁসিয়ে হয়টেট বললেন, আপনি আসাতে স্বস্তি ফিরে পেলাম। হতভাগা জিরয়েড যে কেলেঙ্কারি করেছে, এ মারাত্মক ভুল কি করে সংশোধন করা যাবে বুঝতে পারছি না। মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনি অন্য কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেন না?

সেই সম্ভাবনা যথেষ্ট আছে। এখনো অনেক পয়েন্টই অস্পষ্ট রয়েছে। জ্যাক রেনাল্ডকে আমি অপরাধী ভাবতে পারছি না। কিন্তু তার সপক্ষে কি বলার আছে?

–আত্মপক্ষ সমর্থন করতে ব্যর্থ হয়েছে সে, বললেন মঁসিয়ে হয়টেট, তার কাছ থেকে অপরাধের স্বীকারোক্তি ছাড়া কিছু পাওয়া মুশকিল। ভাবছি, আগামীকাল তাকে আমি আবার জিজ্ঞাসাবাদ করব। আপনিও উপস্থিত থাকবেন।

কথা শেষ করে সামনের কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে একটা চিঠি বার করে আনলেন মঁসিয়ে হয়টেট।

-মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনার এই চিঠিটা আমার কাছে ছিল।

ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠিটা হাতে নিল পোয়ারো। চিঠিটা তখুনি না খুলে পকেটে রেখে দিল পোয়ারো। তারপর যাওয়ার জন্য উঠল।

-তাহলে কাল আমাদের দেখা হচ্ছে মঁসিয়ে হয়টেট।

 ঘর থেকে বেরিয়ে আসার মুহূর্তেই জিরয়েডের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।

-ওহ, মঁসিয়ে পোয়ারো, বলল জিরয়েড, আপনাকে দেখে নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। আশা করতে পারি এ কেসের চূড়ান্ত রায় এবারে শিগগিরই ঘোষিত হবে।

–আমি আপনার সঙ্গে একমত মঁসিয়ে জিরয়েড।

–তরুণ রেনাল্ডকে শেষ পর্যন্ত যে আপনি দোষী সাব্যস্ত করে সন্তুষ্ট হয়েছেন, এটা খুবই আনন্দের সংবাদ।

-মাপ করবেন মঁসিয়ে, আমার মতে জ্যাক রেনা নির্দোষ।

 –পাগল! তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে উঠল জিরয়েড।

-মঁসিয়ে জিরয়েড, তদন্তের শুরু থেকেই লক্ষ্য করেছি আপনি আমাকে নানাভাবে অপমান করার চেষ্টা করে গেছেন। আপনার জন্য উপযুক্ত জবাব আমি তৈরি করে রেখেছি। আপনার আগেই মঁসিয়ে রেনাল্ডের খুনীকে আমি খুঁজে পেয়েছি। আমি পাঁচশো ফ্রাঙ্ক বাজি রাখতে রাজি। আপনি প্রস্তুত?

একটু ইতস্ততঃ করে জিরয়েড বলল, বেশ, আমি প্রস্তুত।

-ধন্যবাদ মঁসিয়ে জিরয়েড। এসো হেস্টিংস যাওয়া যাক।

 পোয়ারোর চ্যালেঞ্জকে জিরয়েড কিভাবে নিল বোঝা গেল না। কিন্তু পোয়ারো পরিষ্কার ঘোষণা করে ফেলেছে, মঁসিয়ে রেনাল্ডের খুনীকে সে খুঁজে বার করেছে। পোয়ারোর মনে কি আছে বোঝা যাচ্ছে না। বেলাকে নিয়েই চিন্তা হতে লাগল।

রাস্তায় চলতে চলতে এসব চিন্তাই মাথায় ঘুরতে লাগল। পোয়ারোর সঙ্গে কোনো কথা হল না।

হোটেলে ঢোকার মুখে গ্যাব্রিয়েল স্টোনরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল। আমাদের সঙ্গে হোটেলে আসতে রাজি হয়ে গেল।

তারপর, বলুন মঁসিয়ে স্টোনর, বলল পোয়ারো, এদিকে কি মনে করে?

–একজন বন্ধুর ওপর যদি অন্যায় অবিচার হয়, তার পাশে সবারই দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করি। বলল স্টোনর।

–আপনি বিশ্বাস করেন না যে জ্যাক রেনাল্ড তার বাবাকে খুন করেছে?

নিশ্চয়ই না। জ্যাক রেনাল্ডকে আমি জানি। সে খুন করেছে একথা আমি কখনো বিশ্বাস করব না।

জেনে খুশি হবেন যে, তার খালাস পাবার সম্ভাবনাই বেশি। তার বিরুদ্ধে এমন কোনো প্রমাণ জিরয়েড উপস্থিত করতে পারেনি।

-মঁসিয়ে পোয়ারো, জিজ্ঞেস করল স্টোনর, আপনি তাকে অপরাধী বলে বিশ্বাস করেন?

না। তবে তার নির্দোষিতা প্রমাণ করা খুবই কষ্টকর হবে। জিরয়েড তার ওপর যতই অবিচার করে থাক, মাদাম রেনাল্ডের শেষ জবানন্দীর ওপরই তার ভাগ্য নির্ভর করছে। তবে জ্যাকের আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা সন্তোষজনক নয়।

–সে রাতে জ্যাকের কাছে যে কোনো ছুরিই ছিল না, সেকথা মাদাম রেনাল্ড জানেন। বললাম আমি।

আমি জ্যাক রেনাল্ডের অফিসে গিয়েছিলাম, বলল পোয়ারো, আমি জানতে পারি কোম্পানির কারখানা থেকে তিনটি ছুরি তৈরি করিয়েছিল। তার একটা দিয়েছিল তার মাকে, একটা বেলা ডুবিনকে আর তৃতীয় ছুরিটা জ্যাক যে তার নিজের জন্য রেখেছিল, তা বলা যায়। অতএব ছুরির প্রশ্ন তুলে জ্যাককে নির্দোষ প্রমাণ করা যাবে না।

–বিচারের এতবড় ভুল, চিৎকার করে উঠলাম আমি, পোয়ারো, তুমি ছাড়া ওকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। তাকে তুমি বাঁচাও।

–যা অসম্ভব তাই তুমি আমাকে করতে বলছ হেস্টিংস। যাক…এখন এই চিঠিটা দেখা যাক।

পোয়ারো পকেট থেকে খামটা বার করে আনল। ভেতর থেকে চিঠিটা বার করে চোখের সামনে মেলে ধরল। মুহূর্তে তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।

দুর্বোধ্য হাতের লেখায় চিঠিটা এরকম ছিল :

প্রিয় মঁসিয়ে পোয়ারো,
আমি বড় অসহায় বোধ করছি। আমার সাহায্য পাওয়ার কোনো জায়গা নেই। দয়া করে আমাকে আপনি সাহায্য করুন। যেকোন মূল্যে জ্যাককে বাঁচাতে হবে। আপনি সদয় হোন।
আপনার।
মার্থা উওব্রেয়ুইল

পড়া হলে চিঠিটা পোয়ারোর হাতে ফিরিয়ে দিলাম।

–হেস্টিংস এখুনি চল মার্থার সঙ্গে কথা বলে আসা যাক। বলল পোয়ারো।

 আধঘণ্টার মধ্যেই ভিলা মারগুয়েরিটা পৌঁছলাম আমরা। মার্থা ডওব্রেইল সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে বলল, আপনাদের দেখে বুকের বল ফিরে পেলাম। বড় বিপদ আমার, কি করব বুঝতে পারছি না। জেলে জ্যাকের সঙ্গে ওরা আমাকে দেখা করতে দেবে না। আমি এক মুহূর্তের জন্যও বিশ্বাস করি না সে খুন করেছে।

-আমারও তাই ধারণা মাদমোয়াজেল, বলল পোয়ারো, জ্যাক রেনাল্ড কাউকে আড়াল, করতে চাইছে কিনা বুঝতে পারছি না।

মার্থা ডওব্রেইলের ভ্রুকুটি দেখা দিল।–এরকম একটা সন্দেহ আমিও করেছিলাম। তার মাকে আড়াল করার একটা সম্ভাবনা আছে। মঁসিয়ে রেনাল্ডের সমস্ত সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী এখন তিনিই।

জ্যাক গ্রেপ্তার হওয়াতে তিনি দারুণ আঘাত পেয়েছেন দেখাতে চাইছেন। পাকা অভিনেত্রী তিনি। দেখলেন না কেমন অজ্ঞান হয়ে গেলেন। স্টোনার তাকে সাহায্য করছে। যদিও দুজনের বয়সের ব্যবধান অনেক, তবু বলব, তাদের সম্পর্ক সন্দেহজনক। বুঝতেই পারছেন।

–ব্যাপারটা আরও একটু প্রাঞ্জল করে নিতে চাই মাদমোয়াজেল, আমাকে আপনি সাহায্য করুন। আপনাকে আমি একটা প্রশ্ন করব।

–হ্যাঁ, বলুন মঁসিয়ে।

–আপনি আপনার মায়ের প্রকৃত নাম জানেন?

একটা ধাক্কা খেল যেন মার্থা। মুহূর্তের জন্য পোয়ারোর দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে থেকে দুহাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।

–আপনি তাহলে জানেন।

কাঁধে হাত বুলিয়ে পোয়ারো তাকে সান্ত্বনা দিল।

–শান্ত হোন। এবারে আর একটা প্রশ্নের জবাব দিন। মঁসিয়ে রেনাল্ডের প্রকৃত পরিচয় আপনি জানেন?

–মঁসিয়ে রেনাল্ড!

বুঝতে পারছি আপনি জানেন না। তাহলে এবার আমার কথাগুলো মন দিয়ে শুনুন। এরপর একেবারে গোড়া থেকে সমস্ত ঘটনা একে একে বলে গেল পোয়ারো। ইংলন্ড থেকে ফেরার পথে আমাকে যা যা বলেছে সেসবও বাদ দিল না।

–আপনি অসাধারণ মঁসিয়ে পোয়ারো, পোয়ারোর সামনে হাঁটু মুড়ে বসে সকাতরে মিনতি জানাল মার্থা, আমি ওকে ভালোবাসি–আপনি ওকে বাঁচান–

.

১৭.

 পরদিন সকালে ম্যাজিস্ট্রেট মঁসিয়ে হয়টেট শেষবারের মতো জ্যাক রেনাল্ডকে জেরা করবেন। আমরাও উপস্থিত হয়েছি যথাসময়ে।

বিধ্বস্ত চেহারার জ্যাককে দেখে স্থির থাকা যায় না। দুচোখের কোলে কালি জমেছে। চোয়াল দুটো ঝুলে পড়েছে।

–রেনাল্ড, আমার কয়েকটা প্রশ্নের ঠিক ঠিক জবাব দিন, জেরা শুরু করলে ম্যাজিস্ট্রেট, আপনার বাবার খুন হওয়ার রাত্রে আপনি মারলিনভিলে ছিলেন, নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন?

কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে জ্যাক নিভকণ্ঠে জবাব দিল, আমি আগেই বলেছি, তখন আমি চেরবুর্গে ছিলাম।

এরপর রেল স্টেশনের দুজন সাক্ষীকে হাজির করা হল। তাদের একজনকে আমি চিনতে পারলাম। মারলিনভিল রেল স্টেশনের প্রধান পোর্টার। সে তার সাক্ষ্যে জানাল, জ্যাক রেনাল্ডকে সে ভালো ভাবেই চেনে। গত ৭ জুন রাত এগারোটা চল্লিশের ট্রেন থেকে তাকে নামতে দেখেছে।

দ্বিতীয় সাক্ষী একজন রেল কর্মচারী, পোর্টারের বক্তব্যের সমর্থন জানাল।

 ম্যাজিস্ট্রেট জ্যাকের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কিছু বক্তব্য আছে রেনাল্ড?

–আমার বলার কিছু নেই।

 –এটা আপনি চিনতে পারেন? ম্যাজিস্ট্রেট একটা ছুরি তুলে ধরলেন।

–হ্যাঁ। ছুরিটা আমি আমার মাকে উপহার দিয়েছিলাম।

 –এরকম আর কোনো ছুরি আছে বলে আপনার মনে হয়?

 –আমার জানা নেই। তবে ছুরিটার নক্সা আমিই তৈরি করেছিলাম।

 অপরাধীর এমন স্পষ্ট স্বীকারোক্তিতে ম্যাজিস্ট্রেট একটু থমকে গেলেন।

এরকম আর একটা ছুরি যে জ্যাক বেলাকে দিয়েছিল। সেকথা সে সম্পূর্ণ চেপে গেল।

আমি বুঝতে পারলাম বেলাকে আড়াল করার জন্যই তার এই মিথ্যা স্বীকারোক্তি। একসময় মেয়েটিকে সে ভালোবাসতো, কিন্তু তার জন্য এখন এতটা আত্মত্যাগ তার কিসের জন্য? পোয়ারো ঠিকই বলেছিল, এখন বুঝতে পারছি, ছুরির প্রসঙ্গ জ্যাকের কোনো উপকার করতে পারবে না।

–রেনাল্ড, ম্যাজিস্ট্রেট আবার বলতে শুরু করলেন, মাদাম রেনাল্ডের ছুরিটা তাঁর ড্রেসিং টেবিলের ওপরে ছিল, তিনি আমাদের বলেছেন। আমরা কি ভাবব, তিনি কথাটা ভুল বলেছিলেন, অথবা ছুরিটা ভুল করে আপনি প্যারিসে যাবার সময় সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন? আপনি কি একথা অস্বীকার করবেন?

জ্যাক রেনাল্ড একমুহূর্ত ইতস্ততঃ করল পরে বলল, না, অস্বীকার করব না। এটা সম্ভব।

ম্যাজিস্ট্রেট অপরাধীর সহজ স্বীকারোক্তির প্রবণতা লক্ষ্য করে তার মনোভাব পরিবর্তন করলেন সম্ভবতঃ। তিনি সামান্য ঝুঁকে আন্তরিকতার সঙ্গে বললেন, রেনাল্ড, আপনার বক্তব্যের গুরুত্ব আপনি বুঝতে পারছেন তো? আপনি যা বললেন, তাতে আপনার ফাঁসি রদ করা যাবে না।

মুহূর্তের মধ্যে জ্যাক রেনাল্ডের মধ্যে অদ্ভুত একটা পরিবর্তন ঘটে গেল। তার মলিন বিষণ্ণ মুখে দৃঢ় প্রত্যয়ের ছাপ ফুটে উঠল।

–মঁসিয়ে হয়টেট, আমি শপথ নিয়ে বলছি, আমি খুনী নই, আমার বাবাকে আমি খুন। করিনি।

অদ্ভুতভাবে হেসে উঠলেন ম্যাজিস্ট্রেট। তার সেই হাসি ছিল ইঙ্গিতপূর্ণ।

–কিন্তু রেনাল্ড, আপনার স্বীকারোক্তিতে সেই ইঙ্গিত ছিল না। আপনার অপরাধের কথা আপনি স্বীকার করেছেন। আপনার সমর্থনে কোনো অ্যালিবি নেই। আপনি আপনার বাবাকে খুন করেছেন এটা পরিষ্কার। আর তা করেছেন অর্থের লোভে।

আপনার বিশ্বাস ছিল, আপনার বাবার মৃত্যুর পর তার ধনসম্পত্তির মালিক হবেন আপনি। আর এর মূলে ছিলেন আপনার মা। আদালত তার বিচার অবশ্যই করবে। কিন্তু আপনার অপরাধ বিবেচনার অযোগ্য।

ঠিক এই সময় দরজা খুলে আর্দালি ঘরে ঢুকে জানাল, একজন মহিলা তার বক্তব্য জানাতে চান।

স্বভাবতঃই ম্যাজিস্ট্রেট বিরক্তি প্রকাশ করলেন। কিন্তু তাঁর বক্তব্য শেষ হবার আগেই একজন মহিলা ঘরে ঢুকল।

সমস্ত আদালতের দৃষ্টি মহিলার ওপর নিবদ্ধ হল। ওড়না ঢাকা মুখ। পরনে কালো পোশাক।

এগিয়ে এসে মহিলা ওড়না সরিয়ে দিল। বিস্মিত হয়ে দেখলাম অবিকল সিনডেরেলার মুখ-কিন্তু সিনডেরেলা নয়। জ্যাক রেনাল্ডের ঘর থেকে পোয়ারো যে ফটোগ্রাফ পেয়েছিল, মহিলার মুখের সঙ্গে তার অদ্ভুত মিল।

–আমার নাম বেলা ডুবিন। আদালতে দাঁড়িয়ে আমি স্বীকার করছি, মঁসিয়ে রেনাল্ডকে আমিই খুন করেছি।

.

১৮.

 হোটেলে এসে একটা চিঠি পেলাম। কাগজের ভাঁজ খুলে পড়তে লাগলাম–

বন্ধু,
সবকথা তোমাকে না জানিয়ে আর পারা গেল না। চিঠিটা পড়লেই বুঝতে পারবে।

বেলাকে ঠেকানো গেল না। খুনের অপরাধে নিজেকে জড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। নিশ্চয় বুঝতে পারছ, তোমাকে আমি সত্য কথা বলিনি। কিন্তু কেন তা করতে হল, তোমার জীবন থেকে চিরতরে সরে যাওয়ার আগে তা জানিয়ে যেতে চাই। নিজের স্বার্থের কথা ভেবে কোনো অন্যায় কাজ আমি করিনি। তাই আমার বিশ্বাস, তুমি আমাকে ক্ষমা করবে।

তোমার সঙ্গে প্যারিসে যেদিন প্রথম দেখা হল, তখন আমার মন জুড়ে ছিল বেলার জন্য প্রচণ্ড অস্বস্তি। মারলিনভিলে গিয়ে জ্যাক রেনাল্ডের সঙ্গে দেখা করার জন্য বেরিয়ে পড়েছিল সে।

জ্যাকের প্রতি তার ভালোবাসায় আন্তরিকতার অভাব ছিল না। কিন্তু তার সন্দেহ হয়েছিল, জ্যাক অন্য মেয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তাই মরিয়া হয়েই সে চলে এসেছিল।

বোনকে রুখবার জন্য ছুটতে হল আমাকে। ক্যালাইনের ট্রেনে ওকে পেলাম না। প্যারিস থেকে আসা পরবর্তী ট্রেনে ওর দেখা পেলাম। কিন্তু আমার কোনো কথা সে শুনল না। কিছুতেই ইংলন্ডে ফিরে যেতে রাজি হল না।

আমি হোটেলেই রইলাম, বেলা রওনা হয়ে গেল মারলিনভিলের উদ্দেশ্যে। তবে কথা দিয়ে গেল হোটেলে ফিরে আসবে। পরদিন বেলা হোটেলে ফিরে না আসায় আমি ভাবলাম, জ্যাকের ব্যাপারে ও হয়তো তার বাবার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করবে। কিন্তু সেখানে সে বিশ্রীভাবে অপমানিত হয়ে থাকবে।

কিছু করা যায় কিনা ভেবে সকালেই আমি ভিলায় খোঁজ নেবার জন্য এলাম। সেখানেই তোমার সঙ্গে আমার দ্বিতীয়বার দেখা হয়ে গেল। তারপরের ঘটনা তো সবই তুমি জান।…সেই শেডের ভেতরে জ্যাকের ওভারকোট পরা জ্যাকের মতো দেখতে মৃত ব্যক্তি, সেই কাগজকাটা ছুরি সবই তুমি আমাকে দেখালে।

ছুরিটা জ্যাক বেলাকে দিয়েছিল। তাই আমার বুক কেঁপ উঠল ভয়ে, ছুরিতে নিশ্চয়ই বেলার হাতের ছাপ রয়েছে। সেই মুহূর্তে আমি কর্তব্য স্থির করে ফেললাম, যেভাবে হোক ছুরিটা সরিয়ে ফেলতে হবে।

এরপর অভিনয়ের আশ্রয় না নিয়ে আমার উপায় ছিল না।…আমার জন্য তুমি জল আনতে গেলে, সেই সুযোগে ছুরিটা হস্তগত করলাম। তারপর ইংলন্ড ফেরার পথে ছুরিটা সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি।

ছুরিটার কথা বেলাকে জানালাম। অদ্ভুতভাবে সে হেসে উঠল শুনে। আমার ভয় হল প্রচণ্ড মানসিক চাপে ও পাগল না হয়ে যায়। তার মন খানিকটা হাল্কা হবে এই ভরসায় তাকে নিয়ে আমি থিয়েটারে কাজের চুক্তি করে ফেললাম।

কিন্তু বন্ধু, তারপরও আমরা নিষ্কৃতি পেলাম না। দেখলাম তুমি আর তোমার বন্ধু আমাদের ওপর নজর রাখছ। বুঝতে পারছিলাম না আমাদের সন্দেহ করছ কিনা। সত্যি ব্যাপারটা জানবার জন্য আমি বেপরোয়া হয়ে তোমাকে অনুসরণ করলাম। তোমার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলাম, বেলাকে নয়, তুমি সন্দেহ করছ আমাকেই। ছুরিটা চুরি করেছিলাম আমি, তাই আমাকে বেলা বলে ভুল করা অস্বাভাবিক ছিল না।

প্রিয়তম, আমাকে অভয় দিয়ে বলেছিলে তুমি রক্ষা করবে আমাকে। জানি না, বেলাকে রক্ষা করবে কিনা। তবে আমার বিশ্বাস, আমাকে ক্ষমা করবে।

আমি আর বেলা যমজ বোন। বেলার জন্য আমাকে তাই ঝুঁকি নিতে হয়েছিল, তোমাকে মিথ্যা কথা বলেছিলাম। বেলার জন্য না ভেবে যে আমি পারি না। যদি কখনো সুযোগ পাই…তোমার মনে বিশ্বাস ফেরাবার চেষ্টা আমাকে করতেই হবে।

খবরের কাগজে জ্যাক রেনাল্ডের গ্রেপ্তারের খবর দেবার পরই বেলার মতিগতি পাল্টে যায়। আমি বুঝতে পারি তাকে আর রোখা যাবে না…জ্যাকের কি হয় দেখার জন্য সে অপেক্ষা করে থাকবে না। জানি না কি হয়। বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আর লিখতে পারছি না।
— তোমার
ডুলসি ডুবিন

পোয়ারো কাছেই ছিল। চিঠি পড়া শেষ করে বুঝতে পারি সর্বাঙ্গে শিথিলতা। শান্ত চোখে পোয়ারোর দিকে তাকালাম।

চিঠিটা আমার হাতে ফেরত দিয়ে পোয়ারো বলল, আমি আগেই জানতাম।

–সে অন্য মেয়ে জেনেও আমাকে বলনি কেন?

–এরকম একটা ভুল তুমি করবে আমি ভাবতে পারিনি। ফটোটা তুমি হাতে নিয়ে দেখেছিলে। যমজ বোন হলেও তাদের আলাদা ভাবে চেনা অসম্ভব ছিল না।

-সেই সুন্দর চুল

-নাচগানের সময় ওরকম পরচুল তাদের ব্যবহার করতে হয়। দুই বোনের চুল দুই রঙের। একজনের কালো, অন্য জনের হালকা রং। তাছাড়া কভেন্ট্রির হোটেলে এমন নাটকীয় পরিস্থিতি ছিল যে তোমাকে বলার সুযোগ ছিল না।

অবশ্য, এটাও স্বীকার করছি, তোমাদের প্রেম কতটা সত্য তা জানার ইচ্ছাও আমার ছিল। তবে বন্ধু, তোমাকে আমি ভুলের মধ্যে ফেলে রাখিনি।

পোয়ারোর গলায় আন্তরিকতার সুর, এক ঝটকায় যেন তার সম্পর্কে আমার ধারণা পাল্টে দিল। আমার সত্যিকার বান্ধব সে।

তুমি কি মনে করো, সে আমার কথা ভাবে?

–চিঠির প্রতিটি ছত্রে তোমাকে নিয়ে তার ভাবনার কথা প্রকাশ পেয়েছে। তুমি কি তা বুঝতে পারনি?

–কিন্তু চিঠিতে তো কোনো ঠিকানা নেই…তাকে আমি পাব কোথায়?

–তার জন্য অধীর হবার কিছু নেই। তোমার পোয়ারো রয়েছে..

.

জেল থেকে ছাড়া পেল জ্যাক রেনাল্ড। মারলিনভিলে ফিরে যাবার আগে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এল। স্টোনর তার সঙ্গে ছিল।

–মাঁসিয়ে পোয়ারো, মেয়েটিকে আড়াল করার চেষ্টা কোনো কাজে এলো না। এভাবে সে উপস্থিত হবে ভাবতে পারিনি। বিষণ্ণ হেসে বলল জ্যাক।

-তার না এসে উপায় ছিল না, বলল স্টোনর, আপনাকে সে ফাঁসিকাঠে ঝুলতে দিতে পারে না ।

কিন্তু জিরয়েড লোকটা যে এতবড় গর্দভ জানা ছিল না। বলল জ্যাক, বেলার জীবনে এখন কি ঘটতে চলেছে ঈশ্বর জানেন।

–বেলার ব্যাপারে ভাবিত হবার কিছু নেই, সহজ গলায় বলল পোয়ারো, ফরাসি আদালত যুবতী ও সুন্দরীদের ব্যাপারে যথেষ্ট সহৃদয়।

–কিন্তু মঁসিয়ে পোয়ারো, বাবার খুনের ব্যাপারে নৈতিকভাবে আমি দায় এড়াতে পারি না। বেলার ব্যাপারে আমার জড়িয়ে পড়ার জন্যই তাকে অকালে এভাবে চলে যেতে হল। এই বেদনা আমাকে আজীবন বয়ে চলতে হবে।

একটু থেমে সামান্য কেশে গলাটা পরিষ্কার করে নিয়ে জ্যাক আবার বলল, বেলা বাবাকে খুন করেছে, কথা মনে হলেই শরীর শিহরিত হয়। মার্থার সঙ্গে জড়িত হবার পর বেলার মানসিকতা বুঝতে আমি ভুল করেছিলাম। তাকে আমার নির্লজ্জ বলেই বোধ হয়েছিল। চিঠি লিখে তাকে যে অক্ষমতা জানাবো সে সাহসও পাইনি। ব্যাপারটা মাথার কানে যাবার ভয় ছিল। এখন বুঝতে পারছি, কাজটা কাপুরুষের মতো হয়ে গিয়েছিল। অথচ সে কোনো পেছুটান না রেখেই আমাকে বাঁচানোর জন্য সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে এসেছে। আমি বেঁচে থাকব ঠিকই কিন্তু অহরহ বুকে একটা হাহাকার আমাকে দগ্ধে মারবে।

দু-একটা বিষয় কিন্তু এখনো আমার কাছে পরিষ্কার হল না মঁসিয়ে পোয়ারো, সেই লোকদুটি যখন মায়ের ঘরে প্রবেশ করে তখন রাত দুটো বাজে বলে কেন যে মায়ের ভুল হল বুঝতে পারছি না। আমি মায়ের ঘরে প্রবেশ করেছিলাম, একথা মা ভাবতেও পারেননি। আর হল, সে-রাতে বাবার পোশাক আর আমার ওভারকোট নিয়ে আপনি বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন।

–ওসব নিয়ে আপনার ভয়ের কোনো কারণ নেই মঁসিয়ে, বলল পোয়ারো, আপনাকে পরে আমি সব বুঝিয়ে বলব। এখন সে-রাতের কথাটা আপনার কাছ থেকে শুনতে চাই।

-বলার মতো বিশেষ কিছু নেই মঁসিয়ে পোয়ারো। আগেও বলেছি মার্থার সঙ্গে দেখা করার জন্য চেরবুর্গ থেকে ফিরে আসি। ট্রেন লেটে পৌঁছেছিল। পথ কমাবার জন্য গলফ লিঙ্কের পথ ধরেছিলাম।

বাড়ির কাছাকাছি যখন পৌঁছাই, কেমন একটা দমফাটা চিৎকার আমার কানে এলো। তাড়াতাড়ি একটা ঝোপের আড়াল নিলাম। আকাশে চাঁদ ছিল। চাঁদের আলোয় কবরটা চোখে পড়ল। বাবা সেখানে দাঁড়িয়ে। একটা ছায়ামূর্তি, হাতে ছুরি। বাবাকে পেছন থেকে ছুরিবিদ্ধ করার জন্য উদ্যত হয়েছে। সেই মুহূর্তে আমাকে দেখতে পেয়ে সে আঁৎকে উঠেছিল। আমি বুঝতে পারলাম, আমি ভেবে, সে আমার বাবাকে খুন করেছে।

চিৎকার করে কেঁদে উঠে সেই মুহূর্তে সে ছুটে পালিয়ে যায়।

-তারপর? জানতে চায় পোয়ারো।

–বিদ্যুৎ চমকের মতো আমার মাথায় খেলে যায় এখানে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপদ নয়। এখনি আমাকে পালাতে হবে। নইলে মেয়েটির বিরুদ্ধে আমাকে সাক্ষী দিতে ডাকবে ওরা। আমাকে যে তারা সন্দেহ করতে পারে সেকথা তখন মনে হয়নি। আমি হাঁটাপথে বেউভয়াসে পৌঁছে সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে চেরবুর্গে ফিরে যাই।

এই সময় হোটেলের বয় স্টোনরের হাতে একটা তারবার্তা দিয়ে গেলো। মারলিনভিল থেকে আসা তারবার্তায় জানানো হয়েছিল মাদাম রেনাল্ডের জ্ঞান ফিরে এসেছে।

–অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ। চলুন, তাহলে সকলে মিলে মারলিনভিলে যাওয়া যাক।

বেলা ডুবিনের কেসের তদারক করবার জন্য জ্যাক স্টোনরকে থাকতে বলল। তারপর আমাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে মারলিনভিলে রওনা হল।

.

ভিলা মারগুয়েরিটের কাছে জ্যাক গাড়ি থেকে নেমে গেল মার্থাকে তবে খালাস পাবার শুভসংবাদটা দেওয়ার জন্য। আর মাদাম রেনাল্ডকে তার ছেলের মুক্তির সংবাদ দেওয়ার জন্য আমরা চললাম ভিলা জেনেভিয়েভের উদ্দেশ্যে।

ভিলায় পৌঁছে আমরা দেখা করতে চাই জানিয়ে ফ্রাঙ্কেইসকে দিয়ে ওপরে খবর পাঠিয়ে দিল পোয়ারো।

আমরা নিচে যখন অপেক্ষা করছি তখন দেখা গেল জ্যাক আর মার্থা ভিলায় ঢুকছে। পোয়ারো ঝট করে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে তাদের সঙ্গে মিলিত হল।

-মঁসিয়ে রেনাল্ড, আপনারা এখন ভেতরে ঢুকবেন না। আপনার মা খুবই মুষড়ে পড়েছেন। দ্রুত বলে গেল পোয়ারো।

-কিন্তু আমাদের যে তার কাছে এখনই যেতে হবে। বলল জ্যাক রেনাল্ড।

-তাহলে আপনি বরং একা যান। মাদমোয়াজেলকে এখন নেবেন না। আমার পরামর্শ শুনুন

এমন সময় পেছনে পায়ের শব্দ পেয়ে ফিরে তাকালাম সকলে। লিওনির হাতে ভর দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছেন মাদাম রেনাল্ড।

–আপনার সহযোগিতার জন্য অশেষ ধন্যবাদ সঁসিয়ে পোয়ারো

।–মা—

ওপরের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলো জ্যাক।

সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে পড়ে কঠিন স্বরে বলে উঠলেন মাদাম রেনাল্ড, আমাকে তুমি আর মা বলে ডাকবে না। তুমি আর আমার ছেলে নও। এই মুহূর্ত থেকে আমি তোমাকে ত্যাগ করলাম।

-মা—

করুণ কণ্ঠে চিৎকার করে উঠল জ্যাক। তার দৃষ্টি স্থির।

পোয়ারো এগিয়ে গিয়ে মাদামকে কিছু বোঝাতে চায়। তাকে বাধা দিয়ে মাদাম রেনাল্ড জ্যাকের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন, তোমার হাতে তোমার বাবার রক্ত লেগে রয়েছে। তুমিই তোমার বাবার মৃত্যুর কারণ।

এই মেয়েটির জন্য তুমি তোমার বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করেছ। আর একটি মেয়েকেও তুমি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে চলেছ। তোমার মুখ আমি দেখতে চাই না। এই মুহূর্তে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও।

তোমার বাবার এক কপর্দকও যাতে তুমি স্পর্শ করতে না পার, কালই আমি সেই ব্যবস্থা করব। যে মেয়েটির জন্য তোমার বাবাকে মরতে হল, তাকে সঙ্গে নিয়ে এবারে নিজের পথ খুঁজে নাও গে।

কথা শেষ করে তিনি ধীরে ধীরে ওপরে চলে গেলেন।

ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা সবাই হতবাক স্তব্ধ। কারোর মুখে টু শব্দ নেই। জ্যাক আর সইতে পারছিল না। তার শরীর টলতে লাগল। আমি আর পোয়ারো ছুটে গিয়ে তাকে ধরলাম।

-এত মানসিক চাপ উনি সইতে পারছেন না, মার্থাকে বলল পোয়ারো, ওকে এখন কোথায় নেওয়া যায় বলুন তো?

-আমার প্রিয় জ্যাক। আমাদের ভিলাতেই সে থাকবে। আমি আর আমার মা তার শুশ্রূষা করব।

জ্যাক রেনাল্ডকে ধরাধরি করে আমরা ভিলা মারগুয়েরিটে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার এসে পরীক্ষা করলেন। তিনি জানালেন, মানসিক চাপে শরীর বইতে পারছে না। পূর্ণ বিশ্রাম আর ভালো শুশ্রূষা পেলে সুস্থ হয়ে উঠবেন।

সেদিন শেষ পর্যন্ত মার্থার হাতেই জ্যাকের দায়িত্ব দিয়ে আমরা হোটেলে গিয়ে উঠলাম। দুটো ঘর ভাড়া নেওয়া হল।

হোটেল ম্যানেজার পোয়ারোকে জানাল, ইংলিস লেডি মিস রবিনসন আপনাদের জন্য সেলুনে অপেক্ষা করছেন মঁসিয়ে।

পোয়ারো এবার আমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো। পরে চোখ নাচিয়ে বলল, শোন হেস্টিংস, আমি তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করেছি।

–কিন্তু

–কিন্তুর কিছু নেই। মারলিনভিলে আনার জন্য ডুবিনকে ওই নামের পোশাকটা পরাতে হয়েছে। পুলিস গন্ধ পেলে

আসলে ডুবিন নয়–আমার সিনডেরেলা। সেলুনে ছুটে গিয়ে আমি তাকে উষ্ণ আলিঙ্গনে টেনে নিলাম।

 পোয়ারো এগিয়ে এসে বলল, মাদমোয়াজেল, আমাদের কাজ এখনো অনেক বাকি। আপাততঃ তুমি ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নাও। হেস্টিংস আর আমাকে এখনি বেরতে হবে। কাল আবার তোমাদের দেখা হবে।

-এখুনি কোথায় যাচ্ছেন আপনারা?

–ব্যস্ত হয়ো না, কালই সব জানতে পাবে।

–আমি আপনাদের সঙ্গে যাব–কোনো কথা শুনব না। জেদ ধরল সিনডেরেলা।

 পোয়ারো কথা বাড়াল না। বুঝতে পারল লাভ হবে না। বলল, তাহলে এসো সঙ্গে।

.

ভিলা জেনেভিয়েভ রাতের অন্ধকারে ডুবে আছে। কোনো ঘরেই আলো দেখা যাচ্ছে না। আমরা দাঁড়িয়ে আছি মাদাম রেনাল্ডের শোওয়ার ঘরের নিচে। জানালা খোলা ছিল। পোয়ারো সেদিকে স্থির চোখে তাকিয়ে আছে।

পোয়ারোর উদ্দেশ্য কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তাই তাকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে আমরা এখন কি করছি?

–সজাগ থাক। বলল পোয়ারো। ঘণ্টা দুয়েক হয়তো আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

পোয়ারোর কথা শেষ হতে পেল না, একটা আর্ত চিৎকার রাতের নিস্তব্ধতা খান খান করে দিল।

বাঁচাওবাঁচাও–আমাকে বাঁচাও

দোতলার একটা ঘরে আলো জ্বলে উঠল। চিৎকারের শব্দটাও সেদিক থেকে আসছে। চোখে পড়ল জানালার কাছাকাছি দুটি অস্পষ্ট মূর্তি লড়াই করছে।

–মাদাম নিশ্চয়ই তার ঘর বদল করে থাকবেন।

বলতে বলতে ছুটে গিয়ে পোয়ারো সামনের দরজায় করাঘাত করতে লাগল। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। শিগগিরই খোলার সম্ভাবনা ছিল না। ওদিকে সমানে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার উঠছে।

পোয়ারো অস্থির ভাবে ছুটে এসে বললো, কি করা যায় বলো তো?

সেই মুহূর্তে আমাকে হতবাক করে দিয়ে সিনডেরেলা কাঠবিড়ালির মতো দেয়াল বেয়ে ওপরে সেই ঘরের জানালার দিকে উঠে যেতে লাগল।

–হ্যায় কপাল। ও যে পড়ে যাবে।

আমি অসহায় ভাবে চিৎকার করে উঠলাম।

 –ঘাবড়িও না হেস্টিংস। ওটাই ওর পেশা। ও এসে দেখছি ভালোই হল।

এক মিনিটের মধ্যেই জানলা টপকে ঘরের ভেতরে লাফিয়ে পড়ল সিনডেরেলা। পরক্ষণেই তার চিৎকার ভেসে এলো, সরে দাঁড়ান আপনি। আমার কব্জি দুটো সাধারণ মনে করবেন না। লোহার মতো কঠিন।

ঠিক এমনি সময় ফ্রাঙ্কেইস বাড়ির দরজা খুলে দিল। আমরা ছুটে ওপরে উঠে গেলাম।

ঘরের ভেতর থেকে ধস্তাধস্তির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ ছিল। একটু পরেই দরজা খুলে দিল সিনডেরেলা।

–মাদাম নিরাপদ তো? জানতে চাইল পোয়ারো।

–হ্যাঁ, তবে খুবই বিধ্বস্ত। আমার আসতে একমুহূর্ত দেরি হলেই সর্বনাশ হয়ে যেত।

বিছানার ওপরে কাত হয়ে পড়েছিলেন মাদাম রেনাল্ড। ভীষণভাবে হাঁপাচ্ছিলেন।

-গলা টিপে ধরেছিল আমার। দম টানতে টানতে বললেন তিনি।

সিনডেরেলা উবু হয়ে মেঝের ওপর থেকে একটা দড়ি পাকানো মই তুলে পোয়ারোর হাতে দিল।

–এটা ব্যবহার করেই ওপরে উঠে এসেছিল, বলল পোয়ারো, কিন্তু কোথায় সে?

 আঙুল তুলে ঘরের এক কোণায় নির্দেশ করল সিনডেরেলা। মুখটা কাপড়ে ঢাকা।

–মরে গেছে নাকি? পোয়ারো জানতে চাইল।

–মনে হয়। পাথরে মাথা ঠুকে গিয়ে থাকবে।

–কিন্তু ওটা কে? জানতে চাইলাম আমি।

–মঁসিয়ে রেনাল্ডের খুনী। মাদাম রেনাল্ডকে সে খুন করতে চেয়েছিল।

আমি হাঁটু মুড়ে বসে মুখের ওপর থেকে কাপড়টা সরিয়ে দিলাম। বিস্ময়ে কথা হারিয়ে গেল আমার। একটা সুন্দর মুখ আমাকে যেন ব্যঙ্গ করল। সে মুখ মার্থা উওব্রেয়ুইলের।

সেই রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়েছিল।

এমন একটা নাটকীয় ফাঁদ পাতার পর আমরা আবিষ্কার করলাম মাদাম রেনাল্ডের ঘরে মাথা ডওব্রেয়ুইলের মৃতদেহ।

পোয়ারো বলল, মাদামের ঘরে তাকে আবিষ্কার করা হলেও মঁসিয়ে রেনান্ডের প্রকৃত খুনী সেই।

কিন্তু বেলা ডুবিনই তো তাকে খুন করেছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তি করল। বললাম আমি।

–সে খুনী বলে যে স্বীকারোক্তি দিয়েছে তা ঠিক নয় হেস্টিংস। সে খুন করেনি।

 –তাহলে এরকম স্বীকারোক্তি করার স্বার্থ কি তার?

জ্যাক রেনাল্ডকে ফাঁসির হাত থেকে বাঁচানো। তাকে সে আন্তরিকভাবে ভালোবাসত। মামলাটা খুবই জটিল হয়ে পড়েছিল। তবে গোড়া থেকেই আমার মনে হয়েছিল, কেসটা পূর্বপরিকল্পিত ঠান্ডা মাথার একটা খুন। পুলিসকে অন্ধকারে রাখার জন্য নিজেকে নিজে খুন করার যে অদ্ভুত পরিকল্পনা নিয়েছিলেন মঁসিয়ে রেনাল্ড, ঘটনাচক্রে সেই পরিকল্পনাই তার খুনী সুচতুরভাবে কাজে লাগিয়েছিল।

–কিন্তু তুমি তো বলেছিলে, মঁসিয়ে রেনান্ডের পরিকল্পনার কথা একমাত্র মাদাম রেনাল্ডই জানতেন।

–হ্যাঁ, তিনিই একমাত্র জানতেন। এবং তাকেই আমাদের সন্দেহ করার কথা। কিন্তু তার অপরাধ প্রমাণ করার মতো কোনো তথ্য ছিল না। স্বভাবতই ভাবনা হল, তাহলে আর কে খুনী হতে পারে?

মার্থা উওব্রেয়ুইলের স্বীকারোক্তি থেকেই সেই তথ্যের আভাস পাওয়া গেল। সে বলেছিল বাগানে সেই ভবঘুরে লোকটার সঙ্গে মঁসিয়ে রেনাল্ডের বচসার সময় সে আড়াল থেকে শুনেছিল। আমি অনুমান করলাম, তাহলে সে রেনাল্ড দম্পতির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও শুনে থাকতে পারে, অবশ্য যদি তারা বাগানের বেঞ্চিতে বসে আলোচনা করে থাকেন।

–যদি ধরে নিই তাদের আলোচনা সে শুনেছে, তবে মঁসিয়ে রেনাল্ডকে সে খুন করতে চাইবে? কি স্বার্থ উদ্ধার হবে তার?

–স্বার্থ খুবই সরল। তা হলো অর্থ। তাহলে এই দিকটা নতুন করে সাজিয়ে দিচ্ছি দেখ।

 বলে পোয়ারো চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল। পরে তার ব্যাখ্যা শুরু করল, মার্থা তরুণ রেনাল্ডকে ভালোবাসতো, তবে অন্তর থেকে নয়, তার অর্থের দিকে তাকিয়ে, বিত্তবান পিতার পুত্র হিসেবে সে জানত, বাবার মৃত্যুর পর জ্যাক তার ধনসম্পত্তির অর্ধেক পাবে, আর জ্যাকের স্ত্রী হিসেবে সেই টাকার সেও হবে একজন দাবিদার। এদিক থেকে মার্থার কার্যকলাপ তার মায়েরই মতো।

এর পরে আসে ছুরির প্রসঙ্গে। জ্যাক তিনটে ছুরি তৈরি করেছিল। একটা সে দিয়েছিল মাকে, একটা বেলা ডুবিনকে আর তৃতীয়টা, নিজের জন্য না রেখে দিয়েছিল মার্থাকে। সে কখনোই স্বীকার করেনি যে একটা ছুরি নিজের জন্য রেখেছে। তাহলে তৃতীয় ছুরিটা মার্থার কাছে থাকাই সম্ভব।

তাহলে মার্থার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো কি দাঁড়াচ্ছে দেখ, প্রথমতঃ মঁসিয়ে রেনান্ডের পরিকল্পনার কথা মার্থা আড়াল থেকে শুনে থাকবে। দ্বিতীয়তঃ র্মসিয়ে রেনাল্ডের মৃত্যুতে তার আগ্রহ থাকার সঙ্গত কারণ রয়েছে।

তৃতীয়তঃ মার্থা হল এমন একজন কুখ্যাত অপরাধীর সন্তান, যে অন্ততঃ সরাসরি খুন না করে থাকলেও নৈতিক দিক থেকে সে তার স্বামীর খুনী। সেই খুনের সঙ্গে জর্জেস কনিউ-এর নামও অবশ্য জড়িত। সবশেষে সেই ছুরির প্রসঙ্গ।

একটু থামল পোয়ারো। পরে আগের প্রসঙ্গের জের টেনে বলল, বেলা ডুবিন স্বেচ্ছায় মঁসিয়ে রেনাল্ডকে খুন করার কথা স্বীকার করেছে। আপাতঃদৃষ্টিতে এখানেই মামলার যবনিকা পড়েছে। কিন্তু আমি এতে সন্তুষ্ট হতে পারিনি।

গোড়া থেকে সমস্ত ঘটনার পর্যালোচনা করার পর আমি আমার অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে থাকি। আমার মনে হল, বেলা ডুবিনকে বাদ দিলে আর একজনকেই মঁসিয়ে রেনাল্ডের খুনী হিসেবে ভাবা যেতে পারে, আর সে হল, মার্থা ডওব্রেয়ুইল।

কিন্তু তার বিরুদ্ধে দাঁড় করাবার মতো প্রমাণ অনুপস্থিত। সে সন্দেহের ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখেছে নিজেকে।

বাধ্য হয়েই আমাকে অন্য পথ ধরতে হল। তার বিরুদ্ধে আমার আগে বলা দ্বিতীয় তথ্যটাকেই আমি খুঁটি হিসেবে চালতে চাইলাম। মাথার ভেতরের মানুষটাকে বাইরে টেনে না আনা পর্যন্ত নিঃসন্দেহ হওয়া যাচ্ছিল না।

–তাহলে কি মাদাম রেনাল্ড

–হ্যাঁ, প্রিয় বন্ধু, মাদাম রেনাল্ড আমারই পরামর্শে প্রকাশ্যে ছেলে জ্যাককে ত্যাগ করার কথা সেই সঙ্গে নতুন করে উইল করে তার বাবার সমস্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছিলেন।

ওই এক মোক্ষম খোঁচাতেই মার্থার ভেতর অবধি নাড়া খেয়ে গেল। তার সামনে দ্বিতীয় কোনো পথ ছিল না–মাদাম রেনান্ডের উইল করার পথ বন্ধ করার জন্য।

জ্যাক তার বাবার ধনসম্পত্তির অর্ধেক থেকে বঞ্চিত হতে চলেছে–যার দিকে লক্ষ্য রেখেই তার ভালোবাসার জাল বিস্তার, সেই সম্ভাবনা রোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠল মার্থা। পরদিন মাদাম রেনাল্ড তার উইল পরিবর্তনের সঙ্কল্প কার্যকরী করার আগেই তাকে খুন করাতে বদ্ধ পরিকর হয়।

নির্বিঘ্নে কাজটা সম্পন্ন করতে পারলে মঁসিয়ে রেনাল্ডের ধনসম্পত্তির কেবল অর্ধেক নয়, সম্পূর্ণই হবে জ্যাকের অধীন। আর জ্যাক অর্থবিত্তের অধিকারী হওয়ার অর্থ তারই সবকিছুর মালিক হওয়া।

মার্থা এমনভাবে ছক কষেছিল যাতে মাদাম রেনান্ডের হত্যাটা আত্মহত্যার ঘটনা বলে প্রমাণ হয়। তার জন্য সব রকম প্রস্তুতিই তার সঙ্গে ছিল। ক্লোরোফর্মের বোতল আর বিষাক্ত হিপোডারমিক সিরিঞ্জ নিয়েই সে ঘরে ঢুকেছিল। তার হিসেব ছিল, প্রথমে ক্লোরোফর্ম প্রয়োগ করে মাদাম রেনাল্ডকে অজ্ঞান করে ফেলবে। পরে বিষাক্ত সিরিঞ্জ দেহে ফুটিয়ে তাকে হত্যা করবে। সিরিঞ্জটা ফেলে রাখবে শয্যার পাশে।

পরদিন সকাল পর্যন্ত ক্লোরোফর্মের চিহ্ন উবে যাবে। মৃতদেহের পাশে সিরিঞ্জ পেয়ে পুলিস ধারণা করবে, মানসিক উত্তেজনার বশেই তিনি নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন।

মার্থার সম্ভাব্য এই পরিকল্পনা ব্যর্থ করার জন্য আমিও প্রস্তুত হয়েছিলাম। আগেই মাদামকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল যাতে তিনি আক্রমণের আগেই ঘুম থেকে জেগে ওঠেন এবং তিনি তা করেছিলেন। এর পরের ঘটনা তো সবই তোমার জানা।

কাহিনী শেষ করে পোয়ারো সেই পরিচিত দৃষ্টি ক্ষেপণ করল আমার দিকে। যার অর্থ, আমার কিছু জিজ্ঞাস্য আছে কি না।

পোয়ারোর ব্যাখ্যা মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম। তার বক্তব্য শেষ হলে বললাম, মার্থা যখন প্রকাশ করল সে বাগানে সেই ভবঘুরে লোকের সঙ্গে মঁসিয়ে রেনাল্ডের তর্কবিতর্ক শুনেছে, তুমি কি তখন থেকেই তাকে সন্দেহ করতে শুরু করেছ?

-না বন্ধু, পোয়ারো বলল, তার অনেক আগে থেকেই। প্রথম যেদিন আমরা মারলিনভিলে আসি সেদিনের কথা তোমার নিশ্চয় মনে আছে। সেদিন এই সুন্দরী মেয়েটিকে দেখে তুমি মুগ্ধ হয়েছিলে।

কিন্তু আমি মেয়েটির যা লক্ষ্য করেছিলাম তা তোমাকে বলেছিলাম, সেই প্রথম দিনই তার চোখে আমি উদ্বেগের ছায়া পড়তে দেখেছিলাম। তার সেই উদ্বেগই তাকে আমার সন্দেহের আওতায় নিয়ে এসেছিল।

কেন না, সেই সময় জ্যাকের জন্য উদ্বিগ্ন হবার কোনো কারণই তার ছিল না। জ্যাক যে মারলিনভিয়ে ফিরে এসেছে, তখন সে জানতোই না।

যাইহোক, জ্যাক সুস্থ হয়ে উঠল। সমস্ত ঘটনা জানতে পেরে সে পাথর হয়ে গিয়েছিল। ইতিমধ্যে পুলিস তাদের কাজ সম্পন্ন করেছে, কারার অন্তরালে ডুবিনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে মার্থা। তাকে বাঁচাবার সব পথ রুদ্ধ হয়েছে।

মাদাম রেনাল্ড আর জ্যাক-মাতাপুত্রের মধ্যে নতুন করে আবার মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

জ্যাক তার বাবার অতীত ইতিহাস জানতে পেরেছে। পোয়ারের পরামর্শেই মাদাম রেনাল্ড অনেক দুঃখের সঙ্গে তাকে সব কথা জানিয়েছেন। সত্যকে গোপন করে কখনোই ভালো ফল লাভ করা যায় না।

পোয়াবোর কাছ থেকেই জ্যাক রেনাল্ড তার বাবার প্রকৃত পরিচয় জানতে পারে। জানতে পারে তার সর্বসহা মায়ের প্রতি কত অবিচার করা হয়েছে। পোয়ারো তাকে বলেছে, নানা খুঁটিনাটি ব্যাপার নিয়ে পুলিস হয়তো ধাঁধায় পড়বে, তবে তাদের সমস্যার সমাধান সহজেই আমি করে দেব।

সবচেয়ে বড় কথা হল, এ কেসে আমি সারাক্ষণ পুলিসের হয়ে কাজ করিনি। আমি কাজ করেছি আপনার বাবার হয়ে। আমি কেবল জানি, জর্জেস কনিউ আর আপনার বাবা–দুজন মানুষ নয়–একই ব্যক্তি।

.

আমাদের কাজ শেষ হয়েছিল। দিনকয়েক পরেই আমরা লন্ডন ফিরে যাই।

সপ্তাহখানেক পরেই জ্যাক রেনাল্ড এল আমাদের সঙ্গে দেখা করতে।

জ্যাক বলল, মঁসিয়ে পোয়ারো, দক্ষিণ আমেরিকায় বাবার বিরাট ব্যবসা রয়েছে। মাকে নিয়ে আমি সেখানেই চলে যাচ্ছি। তাই যাবার আগে আপনার কাছ থেকে বিদায় নিতে এলাম। বাবার সেক্রেটারি স্টোনরও যাচ্ছে আমাদের সঙ্গে। নতুন করে আবার সব শুরু করতে চাই আমি।