৩. মিলচেস্টারে পৌঁছে

১১.

মিলচেস্টারে পৌঁছে ক্র্যাডক চিফ কনস্টেবল রাইডেসডেলের কাছে তার ভ্রমণের রিপোর্ট পেশ করলেন।

-তাহলে মিস ব্ল্যাকলক যা বলেছেন তা প্রমাণিত হল। পিপ আর–এমা! বললেন তিনি।

-প্যাট্রিক আর জুলিয়া সিমন্স প্রায় ওদেরই বয়সী। যদি প্রমাণ করা যায় মিস ব্ল্যাকলক বাচ্চা বয়সে ওদের দেখেননি

তাকে বাধা দিয়ে রাইডেসডেল বললেন, আমাদের হয়ে সেই কাজ ইতিমধ্যে মিস মারপলই করেছেন। মিস ব্ল্যাকলক দুমাস আগেই তাদের প্রথম দেখেন।

–তাহলে তো স্যার।

–না, ক্র্যাডক, তা হবার নয়। অনেক যাচাই বাছাইয়ের ব্যাপার রয়েছে। যতদূর জানা যাচ্ছে, প্যাট্রিক আর জুলিয়া এসবের মধ্যে নেই। প্যাট্রিক নৌবাহিনীতে ছিল, তার রেকর্ডেও ত্রুটি নেই। ক্যানেতে মিসেস সিমন্সের সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ করেছি। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন, তার দুই ছেলে মেয়ে চিপিং ক্লেগহর্ন তার আত্মীয়া মিস ব্ল্যাকলকের কাছে আছে।

-কিন্তু আমার ধারণা

রাইডেসডেল একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, পড়ে দেখ মিসেস ইস্টারব্রুক সম্পর্কে এটা জানা গেছে।

কাগজের ওপর চোখ বুলিয়ে ক্র্যাডকের ভ্রূ উঠে গেল।

কিন্তু এ ঘটনার সঙ্গে এর সম্বন্ধ তো পাচ্ছি না।

–আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে নেই–মিসেস হেমস সম্পর্কেও এরকম আছে।

-তাহলে ভদ্রমহিলার সঙ্গে আর একবার কথা বলতে হবে স্যার। এ খবর প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। স্যর, ফ্লেচার কি রকম করেছে–

–সে তো কাজ করে চলেছে। মিস ব্লকব্লকের অনুমতি নিয়ে সমস্ত বাড়ি সার্চ করে দেখেছে। এটাও পরীক্ষা করে দেখেছে, বাড়িতে কেউ না থাকার সময় যে কেউ বাড়িতে ঢুকে দরজায় তেল লাগাতে পারে।

–ফ্লেচার কি বলছে, সকলেই কি খাবার সময়েই বাড়িতে ঢুকেছিল। জানতে চাইলেন ক্র্যাডক।

–প্রায় সবাই। এরপর তিনি যে বিবরণ শোনালেন তা এরকম–একটা মুরগী নিয়ে মিস মারগাটরয়েড ঢুকেছিলেন ডিমে তা দেওয়ানোর জন্য।

এরপর আসেন মিসেস সোয়েটেনহ্যাম। মিস ব্ল্যাকলক বরাবর তার জন্য ঘোড়ার মাংস এনে দেন। সেটা থাকে রান্নাঘরের টেবিলে, মিৎসির অনুপস্থিতিতে মিসেস সোয়েটেনহ্যাম নিয়ে যান। মিৎসিকে তিনি সহ্য করতে পারেন না বলে এরকমই বরাবর চলছে।

মিস বলেছেন ইদানীং ওদিকে যাননি, কিংবা গেলেও মনে করতে পারছে না। কিন্তু মিৎসি তাকে পাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখেছিল। মিসেস বাট বলে স্থানীয় একজনও দেখেছেন সেটা।

মিসেস ইস্টারব্রুক কুকুর নিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, সেই সময় একবার ঢুকেছিলেন মিস ব্ল্যাকলকের কাছে সেলাইয়ের নক্সা জানতে। তবে তিনি বাড়ি ছিলেন না।

-আর কর্নেল?

–বিবরণ শুনতে শুনতে জিজ্ঞেস করলেন ক্র্যাডক।

–ভারতের ওপরে লেখা একটা বই মিস ব্ল্যাকলক চেয়েছিলেন, তিনি সেটা নিয়ে গিয়েছিলেন।

-আমাদের সহযোগিনী মিস মারপলও কাজ করেছেন বলে ফ্লেচার জানিয়েছে। উনি ব্লুবার্ড কাফেতে সকালে কফি পান করতে গেছেন, আর লিটল প্যাডকসে চা পান করতে।

মিসেস সোয়েটেনহ্যামের বাগান দেখে প্রশংসা করেছেন, কর্নেল ইস্টারব্রুকের ভারতীয় কিউরিও সংগ্রহও দেখেছেন।

-কর্নেল ইস্টারব্রুক প্রকৃতই কর্নেল কিনা তিনি জেনেছেন?

-না জেনে থাকলেও জানবেন নিশ্চয়ই। তাছাড়া প্রাচ্যের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই যাচাই করে নেওয়া যাবে।

–ইতিমধ্যে মিস ব্ল্যাকলকের ক্লেগহর্ন থেকে সরে থাকাই মঙ্গল। উনি কি রাজি হবেন বলে মনে হয়, স্যার? মিস বানারকে সঙ্গে নিয়ে তিনি স্কটল্যাণ্ডে মিসেস গোয়েডলারের কাছেই গিয়ে কিছুদিন থাকতে পারেন।

মিসেস গোয়েডলারের মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা? এ ব্যাপারে মনে হয় রাজি হবেন না।

-কিন্তু ব্যাপারটা খুবই গুরুতর, তাঁর জীবন রক্ষার প্রশ্ন। সময়ের ব্যাপারটাও তো মাথায় রাখা দরকার।

–কথাটা অবশ্য ঠিকই বলেছে ক্র্যাডক।

-মিসেস গোয়েডলারের অবস্থা এখন তখন। খুনীর পক্ষে সময় বড়ই কম। সে জানে, আমরাও কেউ বসে নেই। সবকিছুই পরীক্ষা করে দেখছি।

রাইডেসডেলকে চিন্তাগ্রস্ত দেখাল।-হ্যাঁ, যাচাইয়ের ব্যাপারটা ভারতে করতে হবে-সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

-একারণেই বলছি স্যার বিপদ আমাদের ঘাড়ের ওপর। বহু টাকা যেখানে জড়িত

–এই সময়, একজন কনস্টেবল ঘরে ঢুকে জানাল, চিপিং ক্রেগহন থেকে কনস্টেবল ফোনে কথা বলতে চাইছেন।

চিফ কনস্টেবল লাইনটা ধরে কথা বললেন। তাঁর মুখ ভাব কঠিন হয়ে উঠেছে।

–একটা দুঃসংবাদ পাওয়া গেল ক্র্যাডক। মিস বানার–নিজের অ্যাসপিরিনের বোতল খুঁজে না পেয়ে মিস ব্ল্যাকলকের বোতল থেকেই দুটো নিয়ে খেয়েছিলেন। বোতলে মোট তিনটে ছিল। সেটা পরীক্ষার জন্য ডাক্তারের কাছে পাঠানো হয়েছিল, তিনি জানিয়েছেন কিছুতেই অ্যাসপিরিন না।

মিস বানার কি মারা গেছেন স্যার?

-হ্যাঁ আজ সকালে মৃত অবস্থায় তাকে বিছানায় পাওয়া গেছে। ডাক্তার জানিয়েছেন, ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছে। স্বাভাবিক মৃত্যু কিনা তার সন্দেহ রয়েছে। অবশ্য আজ রাতে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যাবে।

–আমি দেখেছি মিস ব্ল্যাকলকের বিছানার কাছেই অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট রাখা থাকত। দু-একদিনের মধ্যে ওই বাড়িতে কেউ কি এসেছিল? জানতে চাইলেন ক্র্যাডক।

–আমাদের ছকের মধ্যে যারা রয়েছে তারা সকলেই গতকাল সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। মিস বানারের জন্মদিনের পার্টি ছিল। ওদের যে কারোর পক্ষে ওপরে উঠে গিয়ে ট্যাবলেট বদলে রাখা অসম্ভব নয়। তাছাড়া বাড়ির লোকেদের পক্ষেও তা সম্ভব।

.

১২.

 বাইরে বেরুবার আগে ভিকারেজের দরজার সামনে বাঞ্চ মিস মারপলের হাতে একটা লেখা দিলেন।

বললেন, মিস ব্ল্যাকলককে বলবে লেখাটা নিয়ে জুলিয়ান যেতে পারল না বলে দুঃখিত। একজন মরণাপন্ন মানুষকে এখনই তাকে দেখতে যেতে হবে। লেখাটা অন্ত্যেষ্টির জন্য। ইনকোয়েস্ট বুধবার হতে পারে। অন্যের জন্যে রাখা বিষাক্ত অ্যাসপিরিন খেয়ে বেচারা বানি মারা গেল। তোমার কষ্ট হবে যেতে, জেন মাসি, কিন্তু বাচ্চাটাকে নিয়ে এখুনি আমার হাসপাতালে না গেলেই নয়।

ঝড়ের মত কথাগুলো বলে বাঞ্চ চলে গেল। মিস মারপল ধীরে ধীরে হেঁটে মিস ব্ল্যাকলকের ড্রইংরুমে এসে উপস্থিত হলেন।

ওপরে খবর পাঠিয়ে তিনি ড্রইংরুমটা খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন।

ডোরা বানার একদিন ব্লুবার্ডে দেখা হলে বলতে চেয়েছিলেন, প্যাট্রিক ল্যাম্প নিয়ে কি কারসাজি করেছিল, যাতে আলো নিভে যায়।

ল্যাম্প নিয়ে প্যাট্রিক কি কারসাজি করেছিল মিস মারপল বুঝতে পারছিলেন না।

খিলানের কাছে টেবিলে ছোট একটা ল্যাম্প রয়েছে। ডোনা বানার বলেছিলেন ড্রেসডেনের চীনামাটির তৈরি ল্যাম্পটা। আগে সেটা বাতিদান ছিল। পরে বিদ্যুতের ল্যাম্প বানিয়ে নেয়া হয়।

মিস মারপলের মনে পড়ল, এক চাষী বউয়ের মূর্তির আকারের ল্যাম্প, ডোনা বলেছিলেন, মাথায় বড় শেড। ল্যাম্পটা জোড়ার একটা। তাহলে চাষী আর চাষী বউ। ঘটনার দিন টেবিলে ছিল চাষীবউ, তার পরদিন যেটা দেখা গেল, সেটা চাষীর মূর্তি। রাতের মধ্যেই ল্যাম্পটা বদলে দেওয়া হয়েছিল। ডোরা বানার সন্দেহ করেছিলেন, কাজটা করেছে প্যাট্রিক।

কিন্তু কাজটা প্যাট্রিক করল কি ভাবে? সামনে থাকা ল্যাম্পটা দেখতে দেখতে চিন্তা করতে লাগলেন মিস মারপল।

ল্যাম্পের তার প্লাগে লাগানো। তার টেবিলের ওপর দিয়ে গেছে। তারের মাঝে বরাবর একটা সুইচ। বিদ্যুতের ব্যাপারে কোন ধারণা নেই মিস মারপলের তাই এর কিছুই বুঝতে পারলেন না তিনি।

কিন্তু এটা তো দেখা যাচ্ছে চাষীর মূর্তি। চাষী বউ ল্যাম্পটা তাহলে কোথায়? গুদাম ঘরে কি থাকা সম্ভব? না অন্য কোথাও। তিনি ভাবলেন ব্যাপারটা ইনসপেক্টর ক্র্যাডককে জানানো দরকার।

প্যাট্রিকের ওপরে সন্দেহ মিস মারপলেরও ছিল। বিজ্ঞাপনটা দেখে সেই ওটা দিয়েছে বলে তিনি ভেবেছেন। প্যাট্রিকের এরকম মজা করার স্বভাবের ব্যাপারটা জানতেন বলেই তিনি এরকম ভেবেছিলেন।

সুদর্শন তরুণ যুবক প্যাট্রিক। তরুণীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয় সন্দেহ নেই। প্যাট্রিকই কি তবে পিপ? যুদ্ধের সময় সে নৌবাহিনীতে ছিল। একবার যাচাই করা দরকার। ছদ্মবেশ হলে ধরা পড়বে।

এই সময় মিস ব্ল্যাকলক ঘরে ঢুকলেন। এই কদিনে তার বয়স যেন আরও বেড়ে গেছে।

মিস মারপল ঘুরে দাঁড়ালেন। বললেন, অসময়ে আপনাকে বিরক্ত করতে হল বলে দুঃখিত মিস ব্ল্যাকক।

বলে বাঞ্চের দেওয়া লেখা কাগজটা বাড়িয়ে দিলেন।

–এক মরণাপন্ন লোককে দেখতে গেছেন বলে ভিকার আসতে পারলেন না। বাঞ্চও একটা বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে। ভিকার কিছু লিখে পাঠিয়েছেন আপনাকে।

ধন্যবাদ জানিয়ে হাতবাড়িয়ে কাগজটা নিয়ে পড়লেন মিস ব্ল্যাকলক।

-ভাইকার খুবই সহৃদয়। বললেন তিনি, তাঁকে জানাবেন, তার ইচ্ছা মতই সব হবে।

বলতে বলতে তার চোখ অশ্রুসজল হয়ে এল। গলা বুজে এল।

অনেক কষ্টে তিনি নিজেকে সংযত করলেন। মুখ তুলে বললেন, ডোরাই ছিল অতীতের সঙ্গে আমার যোগসূত্র।

ও চলে গেছে–আমি একা হয়ে গেলাম।

 মিস মারপল তাকে সহৃদয় সহানুভূতি জানালেন–যে মনে রাখে সে চলে গেলে মানুষ বড়ই একা হয়ে যায়।

এই সময় বাইরে পায়ের শব্দ শোনা গেল। ইনসপেক্টর ক্র্যাডক ঘরে প্রবেশ করলেন। মিস মারপলকে এসময়ে তিনি সেখানে আশা করেননি। বিরক্তির স্পষ্টে ছাপ পড়ল তার মুখে।

মিস মারপল বুঝতে পারলেন তার উপস্থিতি ক্র্যাডকের পছন্দ নয়। তিনি বিদায় জানিয়ে ঘরের বাইরে চলে গেলেন।

ক্র্যাডক ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, আপনাকে সহানুভূতি জানিয়ে সময় নষ্ট করব না মিস ব্ল্যাকলক। মিস বানারের মৃত্যুতে নিজেকে অপরাধী বোধ করছি। আমাদের এটা ঠেকানো উচিত ছিল।

–আপনারা আর কি করতে পারতেন।

-হ্যাঁ, খুব সহজ হত না কাজটা। এখন আমাদের দ্রুত কাজ করতে হবে। আপনার ওপর দুবার আক্রমণ হল–যে আড়াল থেকে এসব করছে, সে সম্ভবত আবারও চেষ্টা করবে।

মিস ব্ল্যাকক নীরব দৃষ্টিতে অসহায় ভাবে তাকালেন ক্র্যাডকের দিকে।

–মিসেস গোয়েডলারের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। কিছু সাহায্য পাওয়া গেছে। পিপ ও এমা–এমন দুজন যারা আপনার মৃত্যুতে লাভবান হবে। একবয়সী প্যাট্রিক আর জুলিয়া সিমন্সের কথা স্বভাবতই মনে আসে, কিন্তু তাদের অতীত জীবন পরিষ্কার। তবু কেবল এই দুজনের ওপর নজর রাখলেই আমাদের চলবে না। মিস ব্ল্যাকক, আপনি এখন দেখলে সোনিয়া গোয়েডলারকে কি চিনতে পারবেন?

–সোনিয়াকে, চিন্তিতভাবে বললেন মিস ব্ল্যাকলক, অনেক দিনের কথা; প্রায় ত্রিশ বছর…তারও যথেষ্ট বয়স হয়েছে…মনে হচ্ছে চিনতে পারব না।

-যে সময় তাকে দেখেছিলেন, এখনকার তার চেহারাটা কি মনে আছে?

-সোনিয়া, একটু ভাবলেন মিস ব্ল্যাকলক, গাঢ় রঙ..ছোটখাট চেহারা…

কোন বিশেষত্ব মনে করতে পারেন…কোন মুদ্রাদোষ

–না, তেমন কিছু ছিল বলে মনে হয় না…তবে বেশ হাসিখুশি ছিল।

–তার কোন ফটোগ্রাফ আছে?

ফটোগ্রাফ..দাঁড়ান মনে করে দেখি…কোথাও একটা অ্যালবামের মধ্যে অন্তত একটা ছবিও থাকা উচিত। হ্যাঁ, আছে

-আছে, সেটা একবার দেখতে পারি?

নিশ্চয়ই। কিন্তু অ্যালবামটা…কোথায় রেখেছি দেখতে হবে।

–আচ্ছা মিস ব্ল্যাকলক, মিসেস সোয়েটেনহ্যাম কি আপনার মনে হয় সোনিয়া গোয়েডলার হতে পারেন?

–মিসেস সোয়েটেনহ্যাম? অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন মিস ব্ল্যাকলক, কিন্তু ওর স্বামী তো সরকারী চাকরি করতেন…প্রথমে ছিলেন ভারতে তারপরে হংকং-এ।

–সেটা তো সোনিয়ার বলা কথা–নিজে কি জেনেছেন?

–না, তা অবশ্য নয়…কিন্তু না…মিসে সোয়েটেনহ্যাম…অবাস্তব—

সোনিয়া গোয়েডলার কখনও অভিনয় করতেন? মানে অপেশাদার কোন অভিনয়?

 –ওহ হ্যাঁ–হ্যাঁ ও ভালই করত।

–মিসেস হারমনের মুখে শুনেছি মিসেস সোয়েটেনহ্যাম পরচুলা পরেন।

–হ্যাঁ…ওরকম থোকা…পরচুলা হতে পারে–তবু ও খুব ভাল…সোনিয়া হওয়া অসম্ভব।

 –আর একটা কথা। আরও দুজন রয়েছেন এরকম

মিস হিঞ্চক্লিফ আর মিস মারগাটরয়েড। ওদের কেউ

–তাহলে মিস মারগাটরয়েড?

–ওহ না…কোনোভাবে না

–আপনি তো চোখে ভাল দেখেন না, তাই না?

কাছের জিনিস দেখতে অসুবিধা হয়।

যাই হোক, সোনিয়া গোয়েডলারের ছবিখানা একবার দেখতে চাই। অনেকদিন আগের হলেও একটা আদল পাওয়া সম্ভব হবে।

–এখনই দেখবেন?

–হলে ভাল হয়।

সেদিন আলমারি সাফ করার সময় জুলিয়া সঙ্গে ছিল। জুলিয়া বোধহয়

 –ঠিক আছে আমি তাকে ডেকে আনছি।

ক্র্যাডক সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে জুলিয়ার নাম ধরে বার কয়েক হাঁক পাড়লেন।

জুলিয়ার সাড়া পাওয়া গেল। সে একটা ঘোঘারানো সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল।

–আমি চিলে কুঠিতে ছিলাম, কি হয়েছে?

ক্র্যাডক তাকে অ্যালবাম খোঁজার কথাটা জানালেন।

ও হ্যাঁ মনে পড়েছে, ঘরে ঢুকে সে বলল, স্টাডি রুমে সব রাখা আচ্ছে–এনে দিচ্ছি। কয়েকখানা পুরনো অ্যালবাম পাওয়া গেল।

ড্রইংরুমে ফিরে এসে ক্র্যাডক বললেন, এগুলো কি?

-হ্যাঁ। বললেন মিস ব্ল্যাকলক। এর মধ্যে ছিল একেবারেই খেয়াল ছিল না। ক্র্যাডক পাতা উল্টে অ্যালবামগুলো দেখতে লাগলেন। টুপি মাথায় টিলা পোশাকের মেয়েদের নানা আকারের ছবি। কালি দিয়ে তলায় বর্ণনা লেখা। অনেক লেখাই অস্পষ্ট হয়ে গেছে।

একটা অ্যালবামের তৃতীয় পাতা খুলে মিস ব্ল্যাকক বললেন, এখানে সোনিয়ার বিয়ের আগেকার ছবি থাকা উচিত।

কিন্তু ছবি খুঁজতে গিয়ে থমকে গেলেন তিনি। পাতায় কয়েকটা ফাঁকা জায়গা। অনেক কষ্টে ক্র্যাডক তলার অস্পষ্ট লেখার পাঠোদ্ধার করলেন।

সোনিয়া আর বেন সমুদ্রের তীরে, সোনিয়া ও আমি। শার্ট, আমি আর সোনিয়া।

লেখাগুলো পড়ে গম্ভীর হয়ে গেল ক্র্যাডকের মুখ। বললেন, ছবিগুলো এখানে ছিল, কিন্তু কেউ সরিয়েছে।

–সেদিন আমরা যখন দেখি তখন এত ফাঁকা জায়গা ছিল না তাই না লেটি মাসী।

সম্ভবত খুব শিগগিরই সরানো হয়েছে সোনিয়া গোয়েডলারের সমস্ত ছবি। চিন্তিত স্বরে বললেন ক্র্যাডক।

.

১৩.

 স্টাডিরুমে আগুনের পাশে বসে ইনসপেক্টর ক্র্যাডক কথা বলছিলেন মিসেস হেমসের সঙ্গে।

-আপনাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করতে এলাম মিসেস হেমস।

-বলুন।

-বলেছিলেন আপনার স্বামী ইতালিতে যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু আসল সত্যটা সেদিন আমাদের জানালেই ভাল করতেন যে তিনি সেনাবাহিনী থেকে একজন পলাতক।

মুহূর্তে মিসেস হেমসের মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেল। তিনি বারবার হাত মুঠো করতে লাগলেন।

–অতীতকে কি খুঁড়ে বার না করলেই নয় ইনসপেক্টর। তিক্তস্বরে বললেন ফিলিপা হেমস।

–নিজেদের সম্পর্কে সকলেরই উচিত সত্য কথা বলা। বললেন ক্র্যাডক।

–কিন্তু এসব কথা সকলে জানুক আমি চাই না।

 –না, কেউ জানবে না।

 –আমার ছেলে, হ্যারি, এসব জানে না। আমি চাই না সে জানুক।

–কিন্তু সেটা কি খুব ঝুঁকির ব্যাপার হয়ে যাবে না মিসেস হেমস। বড় হয়ে সে যদি কোন দিন নিজে জানতে পারে তার বাবার কথা, সেটা তার পক্ষে ভাল হবে মনে হয় না।

–তা করা আমার ইচ্ছে নয়। ওর বাবা যুদ্ধে মারা গেছে একথাই সে জানবে।

 –কিন্তু আপনার স্বামী কি এখনো জীবিত? বললেন ক্র্যাডক।

–হয়তো। আমি কিছুই জানি না।

 –তাকে শেষ কবে দেখেছেন?

বহু বচ্ছর তাকে দেখিনি।

–দিন পনেরো আগে তার সঙ্গে কি আপনার দেখা হয়েছে?

 –আপনার একথার উদ্দেশ্য?

–সামার হাউসে রুডি সার্জের সঙ্গে দেখা করেছেন, একথা আপনি অস্বীকার করলেও মিৎসি জোর দিয়েই কথাটা বারবার বলেছে। আমি বলতে চাইছি, মিসেস হেমস, সেদিন সামার হাউসে আপনার স্বামীর সঙ্গেই কথা বলেছিলেন।

–না, সামার হাউসে কারো সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।

–টাকার দরকারে হয়তো দেখা করতে এসেছিল।

–আমিতো বলছি আমার সঙ্গে কারো দেখা হয়নি।

–দেখুন পলাতকরা বড় দুঃসাহসিক হয়ে পড়ে। ছিনতাই ডাকাতি অনায়াসে তারা করে ফেলে। বিদেশী রিভলভারও তাদের কাছে থাকতে পারে।

–আমার কিছু বলার নেই ইনসপেক্টর, বহু বছর আমার স্বামীকে আমি দেখিনি।

–এই তাহলে আপনার শেষ কথা, মিসেস হেমস।

–আমি দুঃখিত।

.

রাগ হলেও নিজেকে সংযত রাখলেন ক্র্যাডক। তবে কিছুটা বাঁধা পড়লেন তিনি। ফিলিপা মিথ্যা বলছেন তিনি বুঝতে পারছিলেন। কিন্তু প্রাক্তন ক্যাপ্টেন হেমস সম্পর্কে আরও খবর কি করে বার করা যায় তা বুঝতে পারছিলেন না।

নানা কথা যখন ভাবছিলেন ক্র্যাডক অকস্মাৎ তার মনে পড়ে গেল জুলিয়া চিলেকুঠিতে ছিল বলেছে, সে ওখানে কি করছিল?

কথাটা মনে হতেই তিনি উঠে দাঁড়ালেন। কাছে ধারে কেউ ছিল না। যে ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে জুলিয়া নেমে এসেছিল সেই সিঁড়ি ধরেই ওপরে উঠে গেলেন তিনি।

ছোট্ট চিলেকুঠিতে বাতিল আসবাব, ভাঙ্গা ট্রাঙ্ক, সুটকেস ভঁই হয়ে আছে। তার মধ্যে অনেক টুকিটাকি জিনিস, ভাঙ্গা চেয়ারের হাতল, ছেঁড়া পাপোস, কাপ ডিস, একটা চীনামাটির ল্যাম্প। কয়েকটা ট্রাঙ্ক খুলে কিছু পুরনো মেয়েদের কাপড়, পরদার কাপড় ছাড়া কিছু পেলেন না।

এটা সেটা হাটকে পরে একটা স্যুটকেস খুলে কাগজপত্র আর অনেক চিঠিপত্র পাওয়া গেল।

 চিঠিগুলো লেটিসিয়া ব্ল্যাকলকের বোন শার্লটের। কয়েকটা চিঠিতে দ্রুত চোখ বোলালেন ক্র্যাডক।

মিস ব্ল্যাকলকও পঙ্গু বোনটিকে কিছু চিঠি লিখেছেন। বোনের জন্য তার মানসিক দুশ্চিন্তা। আর ভাবনার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ক্র্যাডক আশান্বিত হলেন, এখানেই কোন সূত্র পেয়ে যাবেন তিনি। অজানা অনেক কিছু। কয়েকটা ফটোও রয়েছে। যে অ্যালবামের ছবি সরিয়েছে, এখানে সোনিয়ার ছবি থেকে থাকলে নিশ্চয় তার সন্ধান সে পায়নি।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন ছবি পাওয়া গেল না। কয়েকটা চিঠি পকেটস্থ করে ক্র্যাডক নিচে নেমে এলেন।

সিঁড়ির গোড়াতেই মিস ব্ল্যাকলকের সঙ্গে তার দেখা হয়ে গেল।

-ওহ, আপনি চিলে কোঠায় ছিলেন? শব্দ পেয়ে আমি দেখতে যাচ্ছিলাম কে–

মিস ব্ল্যাকলক, বহুবছর আগে অসুস্থ বোন শার্লটকে লেখা আপনার কয়েকটা চিঠি খুঁজে পেয়েছি। এগুলো নিয়ে গিয়ে আমাকে পড়তে হবে।

প্রচণ্ড ক্রোধ অনেক কষ্টে সংবরণ করলেন মিস ব্ল্যাকলক। তিনি কোনক্রমে বলতে পারলেন, এগুলো সব ব্যক্তিগত চিঠি ইনসপেক্টর। আপনি যা খুঁজছেন, এতে কিছুই পাবেন না। এগুলো নিয়ে যাবার ক্ষমতা হয়তো আছে, কিন্তু এ ধরনের কাজ

–আপনার নিরাপত্তার কথা ভেবেই আমার সব কিছু ঘেঁটে দেখা দরকার মিস ব্ল্যাকলক। বিপদটাকে আপনি অস্বীকার করতে পারেন না, এগুলোতে হয়তো কিছু পাওয়া যেতে পারে সোনিয়ার বিষয়ে।

একমুহূর্ত চুপ করে রইলেন মিস ব্ল্যাকলক। তার চোখ ছলছল করতে লাগল। নিজেকে সংবরণ করে বললেন, বিপদের কথা আমি জানি ইনসপেক্টর। বনি আমার জন্য রাখা অ্যাসপিরিনের বড়ি খেয়ে মারা গেছে। এরপর হয়তো আমার জন্য রাখা চকোলেট বা পানীয় খেয়ে মারা যাবে আর কেউ। প্যাট্রিক বা জুলিয়া কিংবা মিৎসি বা ফিলিপা। তবু আমি বলছি সোনিয়ার কোন বিষয় চিঠিগুলো থেকে আপনি পাবেন না। নিয়ে যান আপনি চিঠি। শার্লট আর আমার কাছে ছাড়া এগুলোর কোন দাম নেই। পড়া হয়ে গেলে পুড়িয়ে ফেলবেন। শেষ হয়ে যাক অতীতের সব স্মৃতি।

গলায় ঝোলানো চমৎকার কৃত্রিম মুক্তোগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন মিস ব্ল্যাকলক।

পরদিন বিকেলে ভিকারেজে মিস মারপলের সঙ্গে দেখা করলেন ক্র্যাডক। বাঞ্চ পাশেই ছিলেন।

ক্র্যাডক একটা চিঠি মিস মারপলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সেটা কিভাবে পেলেন সেই বিবরণ শোনালেন।

–এই চিঠিটা আপনি পড়ে দেখুন মিস মারপল। জীর্ণ হয়ে আসা কাগজের চিঠিটা মিস মারপল চোখের সামনে তুলে ধরলেন। প্রিয় শার্লট,

এখানে প্রচণ্ড এক পারিবারিক জটিলতায় জড়িয়ে যাওয়ার জন্য দুদিন তোমাকে চিঠি লিখতে পারিনি। তোমার নিশ্চয় মনে আছে র‍্যাণ্ডালের বোন সোনিয়া একবার তোমাকে গাড়িতে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিল। ডিমিট্রি স্ট্যামফোরডিস নামে একজনকে সোনিয়া বিয়ে করবে মনস্থ করেছে। কিন্তু র‍্যাণ্ডাল সেই লোকটিকে একেবারে সহ্য করতে পারেন না। এই নিয়ে দুজনে প্রচণ্ড রাগারাগি হয়ে গেছে।

আমাকেও এ নিয়ে ওদের দুজনের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে। কিন্তু র‍্যাণ্ডাল লোকটির সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছে। যত দূর জানা গেছে সে গ্রহণযোগ্য নয়।

র‍্যাণ্ডাল আমার কাজে খুবই সন্তুষ্ট। নির্ভর করেন। কথায় কথায় সে কথা জানাতেও ভুল করেন না। মাঝে মাঝে বলেন, তুমি আমাকে সবসময়েই সোজা পথে চলতে সাহায্য কর ব্ল্যাকি। আইনের বাইরে কোন কাজ র‍্যাণ্ডাল করেন না।

বেলও সোনিয়ার ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করেছে। সে বলেছে, তার টাকা আছে, যাকে সে ভালবাসে তাকে কেন বিয়ে করতে পারবে না? এর মধ্যে কোন ভুল নেই–পরে অনুশোচনা করতে হলেও। র‍্যাণ্ডাল আর সোনিয়ার মধ্যে হয়তো আর বনিবনা হবে না।

বাবা কেমন আছেন? তাকে আমার ভালবাসা জানিও। তুমি মনমরা হয়ে থেকো না। লোকজনের সঙ্গে কথা বলো।

সোনিয়া বলেছে তোমাকে জানাতে, তাকে মনে রেখো। ওকে একটা রাগী বিড়ালের মত মনে হচ্ছে। র‍্যাণ্ডালের ওপর সে খুবই রেগে গেছে। আমার ভয় হয় সে না র‍্যাণ্ডালকে খুন করে বসে।

অনেক ভালবাসা রইল। আমি খোঁজ নিয়েছি, আয়োডিন চিকিৎসায় বেশ ভাল ফল পাওয়া যাবে। –তোমার প্রিয় বোন
লেটিসিয়া

মিস মারপল অন্যমনস্ক ভাবে চিঠিটা ফিরিয়ে দিলে ক্র্যাডক বললেন, সোনিয়া সম্পর্কে আপনার কি ধারণা হল বলুন, মিস মারপল।

–দেখুন ইনসপেক্টর, অন্য একজনের মনের কথা থেকে কারো সম্পর্কে কোন ধারণা গড়ে নেয়া সহজ নয়।

-তাকে রাগী বেড়ালের মত লাগছে, প্রচণ্ড রেগে গেছে। তাকে না খুন করে বসে…এসব মন্তব্য থেকেও…

মিস মারপল কোন উত্তর করলেন না। কেবল অন্যমনস্কভাবে তাকিয়ে রইলেন ক্র্যাডকের দিকে।

–ওই রিভলভারটা…ওটা রুডি সার্জের নয় জানা গেছে। ওটা কোথা থেকে আসে তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। চিপিং ক্লেগহনে কার রিভলবার আছে জানা দরকার। বললেন ক্র্যাডক।

-কর্নেল ইস্টারব্রুকের একটা আছে। বললেন বাঞ্চ। সেটা তার কলার রাখার ড্রয়ারে রাখা থাকে।–আপনি তা কি করে জানলেন মিসেস হারসন?

–মিসেস বাট বলেছেন তিনি সপ্তাহে দুদিন আমার কাজ করে দিয়ে যান। তিনিই বলেছেন, চোরডাকাতের ভয়ে কর্নেল অস্ত্রটা হাতের কাছে রাখেন।

–একথা কবে বলেছিলেন তিনি?

–অনেক দিন আগে, কয়েক মাস হবে।

-কর্নেল ইস্টারব্রুক, ভদ্রলোক একটা বই দিতে একদিন লিটল, প্যাডকসে গিয়েছিলেন। তাঁর পক্ষে দরজায় তেল লাগান অসম্ভব নয়।

মিস মারপল বাঞ্চকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি মিস ব্ল্যাকলকের লেখা কাগজটা ইনসপেক্টরকে দেখাও।

বাঞ্চ কাগজটা ক্র্যাডকের হাতে তুলে দিলেন।

আমি খোঁজ নিয়েছি প্রতি বৃহস্পতিবার তিনটের পর যে কোন সময়। আমার জন্য যদি কিছু থাকে যেখানে সাধারণত থাকে, সেখানেই রেখে যাবেন।

লেখাটা পড়ে কিছুই বুঝতে পারলেন না ক্র্যাডক। তার মুখভাব লক্ষ্য করে বাঞ্চ হারসন হাসলেন।

ব্যাখ্যা করে বললেন, একটা খামারে প্রতি বৃহস্পতিবার মাখন তৈরি হয়। যার দরকার নিয়ে আসে। মিস হিনচক্লিফই সবার হয়ে মাখন নিয়ে আসেন। এর মধ্যে একটা বদলাবদলির ব্যাপারও রয়েছে। কেউ মাখন পেয়ে পাঠিয়ে দেয়। কেউ শুয়োর মারা হলে মাংস। এমনি আর কি। এক জিনিসের বদলে অন্য জিনিস কিছুটা মনে হয় বেআইনী কাজ।

–আমাকে এসব কথা না শোনানোই ভাল, এরকম বদলাবদলির কাজ সবটাই বেআইনী।

একটু থেমে তিনি হতাশ স্বরে বললেন, আমি আপাতত পিপ আর এমাকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি। পর পর দুটো খুন হল, একজন পুরুষ একজন মহিলা, আরও একজন মহিলা সম্ভবত খুন হতে চলেছেন। নির্দিষ্ট করে কিছুই জানা সম্ভব হচ্ছে না। সোনিয়াকে সামনে রেখে আপাতত এগুবার চেষ্টা করছি। তিনি দেখতে কেমন ছিলেন জানতে পারলে ভাল হত। চিঠিতে এসম্পর্কে কিছুই জানা গেল না।

–চিঠিতে যে তার ছবি নেই কিভাবে জানলেন?

–মিস ব্ল্যাকলক বলেছেন, তিনি ছিলেন বেশ গাঢ় বর্ণের ছোটখাট চেহারার।

–তাই বলেছেন? মিস মারপল আগ্রহ প্রকাশ করলেন।

–অ্যালবামেও এমন ছবি পাওয়া যায়নি যাকে দেখে ওরকম মনে হতে পারে। মিসেস সোয়েটেনহ্যাম অল্প বয়সে গাঢ় রঙের ছিলেন, আপনার মনে হয়?

বাঞ্চ বললেন, খুব গাঢ় রঙ ছিল না। চোখের তারা নীল ছিল।

–ডিমিট্রি স্ট্যামফোরডিসের একটা ছবি পেলেও কিছুটা সাহায্য হত। যাই হোক, চিঠিটা পকেটে ঢুকিয়ে বললেন ক্র্যাডক, চিঠিটা থেকে বলছেন আপনার মনে কোন ধারণা জন্মায়নি?

–হয়েছে বৈকি, মিস মারপল বললেন, সেই জায়গাটা আবার পড়ে দেখুন–র‍্যাণ্ডাল গোয়েডলার ডিমিট্রি স্ট্যামফোরডিসের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছিলেন।

ক্র্যাডক অবাক হয়ে তাকালেন। ঠিক এই সময়ই টেলিফোন বেজে উঠল।

বাঞ্চ উঠে গিয়ে টেলিফোন ধরলেন। তিনি ফিরে এসে ক্র্যাডককে জানালেন, আপনার ফোন।

ক্র্যাডক উঠে গিয়ে রিসিভার তুলে নিলেন। ওপাশে কথা বলছিলেন চিফ কন্সটেবল রাইডেসডেল।

–ফিলিপ হেমসের সঙ্গে তোমার কথাবার্তার রিপোর্ট দেখলাম। সে জোর দিয়ে জানিয়েছে দীর্ঘদিন স্বামীর সঙ্গে তার দেখা হয়নি। তোমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি, দিন দশেক আগে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল–একটা লোক লরিচাপা পড়েছিল। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ আর মেরুদণ্ড ভাঙা অবস্থায় তাকে মেলচেস্টার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

মনে পড়েছে স্যার, একটা বাচ্চাকে লরির প্রায় নিচ থেকে উদ্ধার করেছিল লোকটি। কিন্তু নিজেই শেষে চাপা পড়েছিল।

–হ্যাঁ, সেই ঘটনাটার কথাই বলছি। লোকটি গতরাতে মারা গিয়েছে, তাকে সনাক্ত করতে কেউ আসেনি। তবে তাকে সনাক্ত করা হয়েছে–সে সেনাবাহিনী থেকে পলাতক, লোকটির নাম রোলাণ্ড হেমস, দক্ষিণ লোমসায়ারের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন।

–ফিলিপা হেমসের স্বামী?

-হ্যাঁ, তার পকেটে চিপিং ক্লেগহনের বাসের টিকিট আর বেশ কিছু টাকা ছিল। সম্ভবত স্ত্রীর কাছ থেকেই টাকা পেয়েছিল।

লোকটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ২৮ তারিখ। লিটল প্যাডকসের ডাকাতির ঘটনা ঘটে ২৯শে। এতে দেখা যাচ্ছে ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে তার যোগ থাকা সম্ভব নয়। তার স্ত্রী দুর্ঘটনার বিষয়ে কিছু জানত না। তার হয়ত ধারণা হয়েছিল, ওই ঘটনার সঙ্গে তার স্বামী জড়িত, তাই ওরকম মুখ বন্ধ করেছিল।

–কিন্তু স্যর, তার কাজটি কিন্তু বীরত্বের।

–হ্যাঁ, লরি দুর্ঘটনা থেকে শিশুটিকে বাঁচানো বীরত্বের কাজ বৈকি। সেকারণেই মনে হয় না কাপুরুষতার জন্য হেমস পলাতক ছিল। শোন, এই কেসটা গোড়া থেকে তোমারই তদন্তে রয়েছে। খবরটা তুমিই তাকে জানিও।

–তাই করব স্যর। তিনি লিটল প্যাডকসে ফিরে এলেই বলব। তবে তার আগে একজনের সঙ্গে কথা বলে নেব ভাবছি।

.

১৪.

 টেবিলের ল্যাম্পটা সরিয়ে মিস মারপলের সামনে এনে রাখলেন। বাঞ্চ মিস মারপল সেলাই করছিলেন।

–মনে হচ্ছে ঝড় উঠবে জেন মাসী। আলোটা তোমার কাছে এনে দিলাম।

টিগলথ পিলেজার নামের বাড়ির পোষা বেড়ালটা পায়ে পায়ে ঘুরছিল। হঠাৎ তড়াক করে লাফিয়ে টেবিলের ওপরে উঠে বসল। ল্যাম্পের তারগুলো চোখে পড়ায় সে আঁচড়াতে শুরু করল।

–এরকম করে না পিলেজার। ছিঁড়ে গেছে–শক লেগে যাবে-

-বলে মিস মারপল হাত বাড়িয়ে ল্যাম্পের সুইচ টিপতে গেলেন।

দাঁড়াও, ফুলগুলো সরিয়ে দি। সুইচটা তারের শেষে আছে। একটা ফুল দানি থেকে বাঞ্চ বড়দিনের কিছু লাল গোলাপ ফুল সরিয়ে নেবার জন্য হাত বাড়াল, অমনি পিলেজার ওর হাত আঁচড়ে দিল।

বাঞ্চের হাত কেঁপে গেল। আর ফুলদানি থেকে বেশকিছুটা জল ছিটকে পড়ল বৈদ্যুতিক তারের ছেঁড়া অংশে।

মিস মারপল এবারে লম্বাকৃতি সুইচটা টিপলেন। সঙ্গে সঙ্গে ফাঁশ করে একটা শব্দ আর আলোর ঝিলিক জেগে উঠল। আলো নিভে গেল।

-যাঃ ফিউস হয়ে গেল। বাঞ্চ বলে উঠল, সব অন্ধকার হয়ে গেছে, টেবিলের এ জায়গাটা পুড়েও গেছে–দুষ্টু টিগলাথের জন্য–কি হল জেন মাসী?

মিস মারপল হঠাৎ স্থির হয়ে গিয়েছিলেন। বললেন, না কিছু না। ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল, আগেই এটা বোঝা উচিত ছিল।

বাঞ্চ ফিউজটা ঠিক করার কথা বললে, মিস মারপল বললেন, ব্যস্ত হয়ো না। আমাকে একটু চুপচাপ ভাবতে দাও।

বাঞ্চ তার কাজে চলে গেল। মিস মারপল একটি কাগজ টেনে নিলেন। তারপর প্রথমে লিখলেন, ল্যাম্প…তারপর একমিনিট চিন্তা করলেন, আর একটা কথা লিখলেন…তারপর লিখে চললেন…

.

বুলডার্সের শোবার ঘরে মিস হিনক্রিফ মিস মারগাটরয়েডের কাছ থেকে কিছু কথা উদ্ধার করবার চেষ্টা করছিলেন।

–আমার কিছুই মনে পড়ছে না। বললেন মারগাটরয়েড।

–তুমি মনে করবার চেষ্টা করো। শোন আমি দৃশ্যপটটা বলে যাচ্ছি। ছোটঘরের দরজায় আগেই কেউ তেল লাগিয়ে রেখেছিল যাতে খুলতে কোন শব্দ না হয়। ওই দরজাটা বরাবর বন্ধ থাকত।

যাক শোন, আলো নিভে গেল। অমনি নিয়মিত দরজা খুলে গেল, লোকটা টর্চ নিয়ে ঘরে ঢুকল। ঘরের ভেতরে আমরা হুল্লোড় শুরু করলাম। সেই সময় আমাদের অজানা একজন ছোট ঘরের দরজা দিয়ে ঢুকে নিঃশব্দে সুইস ছোকরার পেছনে এসে দাঁড়াল। তাকে গুলি করল। তারপর হাতের রিভলবারটা ছোকরার পাশে ফেলে দিল যাতে প্রমাণ হয় ওই সুইস ছোকরাই গুলি ছুঁড়েছে আর আলো জ্বলে ওঠার আগেই সেই অজ্ঞাত লোকটি আবার ছোট ঘরে ঢুকে পড়ল। ব্যাপারটা এবারে বুঝতে পেরেছ?

–পরিষ্কার বুঝতে পেরেছি….কিন্তু ওই লোকটি কে?

–কেবল তুমিই সে কথা বলতে পার মারগাটরয়েড। কেন না তুমি নিয়মিত দরজার পাল্লার পেছন দিকে ছিলে।

-হ্যাঁ, সেটা মনে আছে।

–আর সে সময় দূরে ড্রইংরুমে ছিল প্যাট্রিক সিমন্স, ফিলিপি হেমস আর কর্নেল ইস্টারবুক। তুমি ছিলে দরজার পেছনে। টর্চের আলো যেদিকে পড়েছিল, তুমি ছিলে তার বিপরীত দিকে। আমাদের সকলের চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল, তোমার তা হয়নি।

–কিন্তু…হ্যাঁ…টর্চের আলো ঘুরছিল–সবার মুখের ওপর পড়ছিল।

তাতে কি দেখা যাচ্ছিল—

-হ্যাঁ, মনে পড়ছে, মিস বানার বিহ্বল হয়ে তাকিয়েছিল, আর মিসেস হারসন একটা চেয়ারের হাতলের ওপরে বসেছিলেন। চোখ বন্ধ করে রেখেছিলেন

–হ্যাঁ, এই তো এতক্ষণে পথে এসে গেছ। কাদের তুমি দেখেছ, এটা মনে করতে পারলেই বেরিয়ে পড়বে সে সময় কাকে তুমি দেখতে পাওনি। অনেকেই ছিল যেমন জুলিয়া সিমন্স, মিসেস সোয়েটেনহ্যাম, মিস ইস্টারব্রুক…এরাই আরো। কিন্তু এদের মধ্যে এমন কেউ ছিল যে ওখানে ছিল না…মনে করার চেষ্টা কর মারগাটরয়েড

মিস মারগাটরয়েড চোখ বুজে ভাবতে লাগলেন। আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন, টর্চের আলো পড়ল হ্যাঁ…মিসেস হারমান…ডোরা বানার…টেবিল…টেবিলল্যাম্প… খিলান… আচমকা রিভলবারের গুলি তারপর…তারপর…হা, ওই মহিলা ওখানে ছিলেন না…হা শোন…

এই সময় আচমকা টেলিফোন বেজে উঠল। মিস হিনচক্লিফ এগিয়ে গিয়ে টেলিফোন ধরলেন।

-হ্যাল্লো–কে–পুলিস স্টেশন–বলুন–মিস হিনচক্লিফ জানতে পারলেন সকাল থেকে তার কুকুরটা থানায় রয়েছে। একফোঁটা জলও মুখে তোলেনি। পুলিস তাকে ভুল করে নিয়ে গিয়েছিল। দুঃখ প্রকাশ করে পুলিস অনুরোধ করেছে কুকুরটাকে নিয়ে আসার জন্য।

মিস হিনচক্লিফ যখন মিস মারগাটরয়েডের দিকে ফিরলেন তখন তিনি বলে চলেছেন…ওই মহিলা…ওখানে ছিলেন না…

ফিরে আসার পর শুনব মারগাটরয়েড় আমি পুলিস স্টেশনে কুকুরটাকে আনতে যাচ্ছি, সকাল থেকে নাকি থানায় রয়েছে, একফোঁটা…

বলতে বলতে তিনি দ্রুত গতিতে গ্যারেজের কাছে পৌঁছে গেছেন।

গাড়িতে স্টার্ট দিতে দিতে মিস মারগাটরয়েডও ওখানে পৌঁছে গেলেন–কথাটা শুনে যাও হিনচ..ওই মহিলা ওখানে ছিলেন না…

গাড়ি চলতে শুরু করেছে ততক্ষণে।

মিস মারগাটরয়েড গাড়ির দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে শুরু করল। কিছু পশমী পোশাক রোদ্দুরে ছড়ান ছিল। সেগুলো তুলতে ছুটলেন তিনি।

মিস মারগাটরয়েড যখন ক্লিপ খুলে সোয়েটারগুলো তুলছেন এমন সময়…এমন সময় পেছনে কার পদশব্দ জাগল।

পর মুহূর্তেই একটা স্কার্ফ তার গলায় জড়িয়ে দিল কেউ, তারপর আচমকা টানে সেটা গলার ওপরে চেপে বসল…মিস মারগাটরয়েডের মুখ হাঁ হয়ে গেল..দম আটকে গেল স্কার্ফ আরও শক্ত হয়ে চেপে বসল… . থানা থেকে ফেরার পথে মিস হিনচক্লিফ রাস্তা থেকে মিস মারপলকে গাড়িতে তুলে নিলেন। কুকুরটা দেখে মিস মারপল প্রশংসা করলেন, ভারি সুন্দর কুকুর।

গাড়িতে আসতে আসতে মিস হিনচক্লিফ বললেন, আমি আর মারগাটরয়েড সেদিনের ওই খুনের ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করছিলাম…সেই সময় থানা থেকে ফোন পেলাম…

গাড়ি এসে বাড়ির সামনে দাঁড়াল। কুকুরটা লাফিয়ে নেমে দৌড়ে ভেতরে ঢুকে গেল। পরক্ষণেই তার চিৎকার শোনা গেল।

মিস হিনচক্লিফ ভেতরে এসে দেখতে পেলেন ঝুলতে থাকা কিছু পোশাকের নিচে কিছু শুঁকতে চেষ্টা করছে তার কুকুর বিউটি।

-কি হল ওখানে—

তিনি দ্রুত এগিয়ে গেলেন সেদিকে। মিস মারপলও তার পেছনে গেলেন।

বৃষ্টি সমানে পড়ছে। তার মধ্যে এগিয়ে গিয়ে দুজনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। সামনে পড়ে থাকা প্রাণহীন দেহটা নীলাভ হয়ে উঠেছে।

–মেয়েমানুষটাকে একবার পেলে আমি খুন করব। চাপা ক্রুদ্ধ কাতর স্বরে বলে উঠলেন মিস হিনচক্লিফ।

–মেয়ে মানুষ। প্রশ্ন করলেন মিস মারপল। অসহায় ভঙ্গীতে তার দিকে তাকালেন মিস হিনচক্লিফ।

-হ্যাঁ, মেয়েমানুষ..আমি প্রায় জেনে…ফেলেছিলাম।

 কিছুক্ষণ মৃতা বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে থেকে তিনি বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন।

–পুলিসকে এখুনি জানাতে হবে। ও খুন হল আমারই জন্য। ব্যাপারটা আমি খেলার ছলেই নিয়েছিলাম…

ভেতরে এসে ফোন তুলে তিনি সবকথা পুলিসকে জানালেন।

এরপর মিস মারপলের দিকে ঘুরে বললেন, কুকুরটাকে আনার জন্য থানায় যাবার আগে আমি আর মারগাটরয়েড সেই ঘটনা নিয়ে কথা বলছিলাম। ও কিছু বললে আমি বুঝতে পেরেছিলাম–ওই মহিলা এখানে ছিল না। ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন, মিস মারপল, তিনজন মহিলা, মিসেস সোয়েটেনহ্যাম, মিসেস ইস্টারব্রুক, জুলিয়া সিমন্স। ওদের বাদ দিতে পারিনি। এদেরই একজন ড্রইংরুমে ছিল না…তার মানে যে ছিল না সে নিশ্চয়ই অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে হল ঘরে চলে যায়।

-হ্যাঁ, ব্যাপারটা বুঝতে পারছি।

–ওই তিনজনের মধ্যে একজন…তবে কে ঠিক জানা হল না।

 মিস মারপল চিন্তিত ভাবে বললেন, এটা সন্দেহজনক ইঙ্গিত বলেই মনে হচ্ছে…হ্যাঁ, এতে ব্যাপারটা অনেকখানিই বদলে যেতে পারে।

.

১৫.

 বাইরে গাড়ির শব্দ হল। মিৎসি ভেতরে খবরটা পৌঁছে দিল, আবার পুলিস এসেছে।

ক্র্যাডক অসম্ভব গম্ভীর মুখে ঘরে ঢুকলেন। তিনি মিস ব্ল্যাকলককে বললেন, মিস মারগাটরয়েড খুন হয়েছে। মাত্র একঘন্টা আগে শ্বাসরুদ্ধ করে তাকে মারা হয়েছে।

জুলিয়া আর প্যাট্রিক সিমন্স সবে মাত্র বাইরে থেকে ফিরেছিল। তারাও সেখানে উপস্থিত ছিল।

–মিস সিমন্স, আপনি আজ সারাদিন কোথায় ছিলেন? জিজ্ঞেস করলেন ক্র্যাডক।

 –মেলচেস্টারে, এইমাত্র ফিরলাম।

–আর প্যাট্রিক আপনি?

–আমি আগের বাসেই এখানে ফিরেছি।

–তারপর কি করেন?

–মাঠের দিকে একটু হাঁটতে যাই।

এমনি সময়ে টেলিফোন বেজে উঠল। মিস ব্ল্যাকলক রিসিভার তুললেন।

-হ্যাঁ-কে, বাঞ্চ? কি বলছ…না উনি আসেননি। আমার জানা নেই…হ্যাঁ, এখানে আছেন।

মিস ব্ল্যাকলক ক্র্যাডকের দিকে রিসিভার এগিয়ে দিয়ে বললেন, মিস হারসন আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান। মিস মারপল ভিকারেজে ফেরেননি, তাই চিন্তায় পড়েছেন।

ক্র্যাডক রিসিভার তুলে বললেন ক্র্যাডক বলছি

–খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছি ইনসপেক্টর, জেন মাসী কোথায় গেছেন জানি না। শুনলাম মিস মারগাটরয়েড মারা গেছেন

-হ্যাঁ, মিস হারসন। মিস মারপল তো ঘটনাস্থলেই ছিলেন। আধঘণ্টা আগে বেরিয়ে যান। এখনও ফিরে না থাকলে হয়তো পড়শীদের কারও বাড়িতে গেছেন।

-না, আমি সবাইকেই ফোন করেছি। কি হবে ইনসপেক্টর, আমার ভয় লাগছে।

–আমি আসছি আপনার ওখানে।

–আসুন। একটা কাগজ পেয়েছি, জেন মাসি বেরুবার আগে লিখেছিলেন। কিছু বুঝতে পারছি না অবশ্য

ক্র্যাডক রিসিভার নামিয়ে রাখলেন চিন্তিত মুখে।

মিস মারপলের কিছু হয়নি তো? উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞেস করলেন মিস ব্ল্যাকলক।

–আমিও তাই আশা করছি। বললেন ক্র্যাডক।

 মিস ব্ল্যাকলক তার গলায় ঝোলানো মুক্তোর মালা নাড়াচাড়া করছিলেন। চাপা গলায় বললেন, ক্রমশই অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে ইনসপেক্টর। কোন উন্মাদই এসব করে চলেছে

চিন্তাচ্ছন্ন চোখে তার দিকে তাকালেন ক্র্যাডক। মিস ব্ল্যাকলককে খুবই উত্তেজিত মনে হচ্ছিল। তার অসতর্ক টানে হঠাৎ গলার মালা ছিঁড়ে গোলাকার মুক্তোগুলো মেঝেয় ছড়িয়ে পড়ল।

-আমার মুক্তো, মিস ব্ল্যাকলক কাতরে উঠলেন, পরক্ষণে একটা যন্ত্রণাময় শব্দ করে দাঁড়ালেন। গলায় হাত চেপে ঘর থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেলেন।

ফিলিপা মুক্তোগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছিল। বলল, সব সময় এটা পড়তেন। কেউ দিয়েছিল হয়তো। তাই এমন ভেঙ্গে পড়লেন।

–হতে পারে। ক্র্যাডক বললেন।

–এগুলো কি আসল মুক্তো? একটা মুক্তোদানা হাতে তুলে নিয়ে পরীক্ষা করলেন। তার মনে হল এতবড় মুক্তো আসল হওয়া শক্ত। কিন্তু যদি কোনভাবে আসল হয় তাহলে, অবশ্যই অমূল্য। র‍্যাণ্ডাল গোয়েডলারের দেওয়া যদি হয় তাহলে তো এর দাম

ক্র্যাডকের মাথায় ঘুরতে থাকে–মিস ব্ল্যাকলক বলেছিলেন, এ বাড়িতে কোন মূল্যবান জিনিস নেই। যদি মুক্তোগুলো আসল হয়…আর এর সন্ধান যে জানে সে অনায়াসে খুনের ঝুঁকি নিতে পারে।

মিস মারপলের কথা মনে হল, বাস্তবে ফিরে এলেন ক্র্যাডক। তিনি নিখোঁজ। এখনই তাকে ভিকারেজে যেতে হবে।

.

বাঞ্চ আর তার স্বামী জুলিয়ান চিন্তিত মুখে বসেছিলেন। ক্র্যাডক বললেন, উনি এখনও ফেরেন নি? কোন কাগজের লেখার কথা বলছিলেন।

বাঞ্চ কাগজটা এগিয়ে দিলেন। ক্র্যাডক সেটা টেবিলে বিছিয়ে পড়তে চেষ্টা করলেন।

 প্রথম শব্দ ল্যাম্প

তারপর, বেগুনী ফুল, অ্যা

সপিরিনের বোতল কোথায় গেল?

 রমনীর মৃত্যু?

 মিৎসি…চেক…উনি খোঁজখবর করছিলেন…দারুণ দুঃখ সহ্য করেছেন…আয়োডিন… মুক্তো …লেটি…বেন।

সব শব্দের অর্থ ক্র্যাডকের কাছে বোধগম্য হল না। তিনি বাঞ্চের দিকে তাকিয়ে বললেন, উনি মুক্তোর উল্লেখ করলেন কেন? আচ্ছা, মিস ব্ল্যাকলক কি ওই তিন সারি মুক্তোর মালা সবসময় ব্যবহার করেন?

-হ্যাঁ। সবসময় গলায় থাকে। ওঁর ধারণা তাকে ভাল দেখায়। তবে নকল

–অন্য কোন কারণ…

–আপনি বলতে চাইছেন ওগুলো আসল?

-ওই আকারের মুক্তো তো দুলমবার্ড মিসেস হারসন। যাক এখন আসল কাজ হল মিস মারপল–তাকে খুঁজে পেতে হবে।

ক্র্যাডক মিস মারপলের পেন্সিলের লেখা দেখে বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি পরের পর সূত্র অনুসরণ করছিলেন। সেটাই তার বিপদ ডেকে আনেনি তো? তার মনে হল, একবার ফ্লেচারের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার।

ক্র্যাডক ভিকারেজ থেকে বেরিয়ে তার গাড়ির দিকে এগোলেন। এমনি সময় লরেল ঝোপের আড়াল থেকে সার্জেন্ট ফ্লেচার বেরিয়ে এল।

–স্যার…