১১. উপসংহার

১১. উপসংহার (Conclusion)

আমরা দেখতে পাই একটি বিভ্রান্তিকর জগতে আমাদের বাস। আমাদের সবদিকে আমরা যা দেখতে পাই আমরা চাই তার একটি অর্থ খুঁজতে আর প্রশ্ন করতে চাই : এই মহাবিশ্বের ধর্ম (nature) কি? এখানে আমাদের স্থান কি? কোথা থেকে এটা এল? আমরাই বা এলাম কোথা থেকে? পৃথিবীটা যেমন, কেন তেমন হল?

।এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য আমরা একটি বিশ্বচিত্র” (world picture) গ্রহণ করি। বহু কচ্ছপ দিয়ে তৈরি অসীম উচ্চ একটি স্তম্ভের উপর সমতল পৃথিবী স্থাপিত রয়েছে যেমন, সেরকম একটি চিত্র, অতিতন্তু (super string তত্ত্বও তেমনি একটি চিত্র। দুটিই মহাবিশ্ব বিষয়ক তত্ত্ব তবে প্রথম তত্ত্বটির তুলনায় শেষেরটি অনেক বেশি গাণিতিক এবং স্পষ্টরূপে নির্দিষ্ট (precise)। দুটি তত্ত্বের কোনটির সপক্ষেই পর্যবেক্ষণলব্ধ সাক্ষ্য নেই; বিরাট একটি কচ্ছপ পৃথিবীকে পিঠে করে রয়েছে এরকম কেউ কখনো দেখেনি কিন্তু একটি অতিতন্তুও কেউ দেখেনি। তবে কচ্ছপতত্ত্ব একটি উত্তম বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হয়ে উঠতে পারেনি, তার কারণ এ তত্ত্বের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে পৃথিবীর কিনারা থেকে পড়ে যাওয়া সম্ভব। এ ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে অভিজ্ঞতা মেলেনি অবশ্য যারা বারমুডা ত্রিভুজে (Bermuda Triangle) অদৃশ্য হয়েছেন বলে অনুমান করা হয় তাদের সেই অদৃশ্য হওয়ার ব্যাখ্যা যদি পৃথিবীর কিনারা থেকে পড়ে যাওয়া না হয়।

মহাবিশ্বের বিবরণ দেয়া এবং মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করার প্রাচীনতম প্রচেষ্টা ছিল যে চিন্তাধারা সে চিন্তাধারা অনুসারে ঘটনাবলি এবং স্বাভাবিক পরিঘটনা কয়েকটি সত্তার (spirit) নিয়ন্ত্রণে। তাদের ভাবাবেগ ছিল মানুষেরই মত এবং মানুষেরই মত ছিল তাদের ক্রিয়াকর্ম। তাদের সে ক্রিয়াকর্ম সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা ছিল অসম্ভব। এই সত্তাগুলো নদী, পাহাড়, অন্তরীক্ষের বস্তুপিণ্ড (celestial bodies) ইত্যাদি স্বাভাবিক বস্তুতে অধিষ্ঠান করতেন– এর ভিতরে চন্দ্র সূর্যও ছিল। ঋতুর আবর্তন এবং জমির উর্বরতা নিশ্চিত করার জন্য তাদের শান্ত করা এবং তাদের আনুকূল্য ভিক্ষা করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ক্রমশ নিশ্চয়ই লক্ষ্য করা গিয়েছিল কিছু কিছু নিয়মের অস্তিত্ব। যেমন : সূর্য সবসময়ই পূর্ব দিকে ওঠে এবং পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। সূর্যদেবতাকে পূজা করা হোক কি না হোক তাতে কিছু এসে যায় না। তাছাড়া সূর্য, চন্দ্র এবং বিভিন্ন গ্রহ আকাশে স্পষ্টরূপে নির্দিষ্ট পথে চলে এবং তাদের চলন সম্পর্কে যথেষ্ট নির্ভুলভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব। তা সত্ত্বেও চন্দ্র, সূর্য দেবতা হতে পারেন কিন্তু সে দেবতার কঠোর নিয়মানুবর্তী বিধি মেনে চলেন– মেনে চলেন আপাতদৃষ্টিতে কোন রকম ব্যতিক্রম ছাড়াই। অবশ্য যদি জোসুয়ার Joshua) জন্য সূর্যের থেমে যাওয়ার কাহিনী বিশ্বাস না করা যায়।

প্রথমে এই নিয়ম এবং বিধিগুলো শুধুমাত্র জ্যোতিবিজ্ঞান এবং অন্যান্য কয়েকটি পরিস্থিতিতে সুস্পষ্ট ছিল। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষ করে গত তিনশ বছরে, ক্রমশ বেশি বেশি নিয়ম আবিষ্কৃত হয়েছে। এই সমস্ত বিধির সাফল্যের ফলে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে লাপ্লাস (Laplace) বৈজ্ঞানিক নিমিত্তবাদ (scientific determinism)(১) নামক স্বীকার্য (postulate) মেনে নেন। তাঁর বক্তব্যের ইঙ্গিত ছিল : যে কোন এক সময়ে মহাবিশ্বের গঠন জানা থাকলে মহাবিশ্বের বিবর্তন নির্দিষ্ট স্পষ্টরূপে (precisely) নির্ধারণ করে এরকম এক কেতা বিধির (set of laws) অস্তিত্ব থাকবে।

লাপ্লাসের নিমিত্তবাদের দুটি অসম্পূর্ণতা ছিল। এই নিমিত্তবাদ বলেনি কিভাবে বিধিগুলো বেছে নেয়া হবে, তাছাড়া পৃথিবীর প্রাথমিক গঠন (configuration) কি রকম ছিল সেটাও নির্দিষ্টভাবে বলেনি। এগুলো ছেড়ে দেয়া হয়েছিল ঈশ্বরের উপর । ঈশ্বরই ঠিক করবেন পৃথিবী কিভাবে শুরু হয়েছিল এবং কি কি বিধি মহাবিশ্ব মেনে নিয়েছিল কিন্তু মহাবিশ্ব একবার শুরু হওয়ার পর তিনি আর হস্তক্ষেপ করবেন না। কার্যত যে সমস্ত অঞ্চল ঊনবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের বোঝার ক্ষমতার অতীত ছিল সেই সমস্ত অঞ্চলেই ঈশ্বরকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল।

আমরা এখন জানি লাপ্লাসের নিমিত্তবাদের আশা বাস্তবায়িত হতে পারে না। অন্ততপক্ষে যে শর্তাবলি তার মনে মনে ছিল সে শর্তাবলি অনুসারে তা নয়ই! কণাবাদী বলবিদ্যার অনিশ্চয়তার নীতি নিহিতার্থ হল : একটি কণার অবস্থান এবং গতিবেগের মত কয়েকটি সংখ্যা জোড়ের (pairs of quantities) দুটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়।

কণাবাদী বলবিদ্যা এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করে এক শ্রেণীর কণাবাদী তত্ত্বের মাধ্যমে। এই তত্ত্বগুলোতে কণাগুলোর যথাযথভাবে নির্ধারিত অবস্থান এবং গতিবেগ থাকে না, এগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে একটি তরঙ্গ। এই কণাবাদী তত্ত্বগুলো নিমিত্তবাদী (deterministic) অর্থাৎ তারা কালের সঙ্গে তরঙ্গের বিবর্তনের বিধি প্রদান করে। সুতরাং একটি কালে তরঙ্গটিকে জানা থাকলে অন্য একটি কালে সেটিকে গণনা করা যেতে পারে। ভবিষ্যদ্বাণীর অতীত এলোমেলো উপাদান তখনই আসে যখন আমরা চেষ্টা করি কণিকার অবস্থান এবং গতিবেগের বাগ্বিধিতে তরঙ্গকে ব্যাখ্যা করতে। হয়ত সেটা আমাদেরই ভুল : হয়ত কণিকার অবস্থান এবং গতিবেগ বলে কিছু নেই, আছে শুধু তরঙ্গ। আমরা তরঙ্গগুলোকে শুধুমাত্র আমাদের পূর্বকল্পিত অবস্থান এবং গতিবেগের ধারণার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করি। তার ফলে খাপ খাওয়ানোতে যে গোলমাল হয় সেটাই ভবিষ্যদ্বাণীর অতীত হওয়ার আপাতদৃষ্ট কারণ।

কার্যত আমরা বিজ্ঞানের কর্তব্য পুনর্নিধারণ করেছি। সে কর্তব্য হল এমন বিধি আবিষ্কার করা যার সাহায্যে আমরা অনিশ্চয়তার বিধি দ্বারা নির্ধারিত সীমান্ত পর্যন্ত ঘটনাবলি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারব। কিন্তু প্রশ্নটি থেকে যায় : মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থা এবং বিধিগুলো বেছে নেয়া হয়েছিল কি করে এবং কেন?

যে বিধিগুলো মহাকর্ষ নিয়ন্ত্রণ করে এই বইয়ে সেই বিধিগুলোর উপর আমি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। তার কারণ, চার জাতীয় বলের ভিতরে মহাকর্ষ সবচাইতে দুর্বল হলেও মহাকর্ষই বৃহৎ মনে (large scale) মহাবিশ্বের গঠন নির্ধারণ করে। প্রায় আধুনিক কাল পর্যন্ত ধারণা ছিল কালের সঙ্গে মহাবিশ্বের কোন পরিবর্তন হয় না। এই চিন্তাধারার সঙ্গে মহাকর্ষীয় বিধি খাপ খায় না। মহাকর্ষ যে সবসময়ই আকর্ষণ করে এই ঘটনার অর্থ : মহাবিশ্ব হয় প্রসারিত হচ্ছে নয়ত সঙ্কুচিত হচ্ছে। ব্যাপক অপেক্ষবাদ অনুসারে অতীতে একটি অসীম ঘনত্বের অবস্থা নিশ্চয়ই ছিল এবং ছিল বৃহৎ বিস্ফোরণ (Big Bang)। সেটা হত কালের কার্যকর আরম্ভ। একইভাবে বলা যায় সমগ্র মহাবিশ্ব আবার চুপসে গেলে ভবিষ্যতে আর একটি অসীম ঘনত্বের অবস্থা আসবে। সেটা হবে বৃহৎ সঙ্কোচন (big crunch) এবং সেটাই হবে সময়ের অন্ত। যদি সমগ্র বিশ্ব আবার নাও চুপসে যায় তাহলে যে কোন স্থানিক অঞ্চলে অনন্যতা দেখা দেবে এবং সেটা চুপসে গিয়ে কৃষ্ণঘর সৃষ্টি করবে। এই কৃষ্ণগহ্বরগুলোর ভিতরে যারা পড়বে তাদের ক্ষেত্রে সেই পতন হবে কালের অন্তিম। বৃহৎ বিস্ফোরণে এবং অন্যান্য অনন্যতাগুলোতে সমস্ত বিধি ভেঙে পড়ে সুতরাং কি ঘটেছিল এবং কিভাবে মহাবিশ্ব শুরু হয়েছিল সে ব্যাপারে ঈশ্বরের তখনো সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে।

কণাবাদী বলবিদ্যার সঙ্গে ব্যাপক অপেক্ষবাদ সংযুক্ত করলে এমন একটি সম্ভাবনা মনে আসে যে সম্ভাবনা আগে ছিল না। যেমন : স্থান এবং কাল একত্রে অনন্যতাবিহীন এবং সীমানাবিহীন অথচ সীমিত এবং চারমাত্রিক স্থান গঠন করতে পারে। সেটা হবে পৃথিবী পৃষ্ঠের মত কিন্তু তার মাত্রা (dimension) হবে বেশি। মহাবিশ্বে যে সমস্ত অবয়ব পর্যবেক্ষণ করা যায় তার অনেকগুলোই মনে হয় সেই চিন্তন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন- বৃহৎ মাত্রায় (large seale) সমরূপত্ব এবং স্বল্পতর মাত্রায় (small Scale) সমরূপত্ব থেকে বিচ্যুতি। যেমন– নীহারিকা, তারকা এবং মানুষ। আমরা যে কালের তীর দেখতে পাই সেটাও হয়ত এই চিন্তন ব্যাখ্যা করতে পারে। কিন্তু মহাবিশ্ব যদি সম্পূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়, যদি কোন অনন্যতা (singularities) কিম্বা সীমানা না থাকে এবং যদি একটি ঐক্যবদ্ধ তত্ত্বের সাহায্যে তার বিবরণ দেয়া যায়, তাহলে স্রষ্টা ঈশ্বরের ভূমিকা সম্পর্কে তার নিহিতার্থ হয় গভীর।

আইনস্টাইন একবার প্রশ্ন করেছিলেন– “মহাবিশ্ব গঠনে ঈশ্বরের কতটুকু স্বাধীনতা (choice) ছিল?” যদি সীমানাহীতার প্রস্তাব নির্ভুল হয় তাহলে প্রাথমিক অবস্থা নির্বাচনে প্রায় কোন স্বাধীনতাই তার ছিল না। তা সত্ত্বেও অবশ্য যে বিধিগুলো মহাবিশ্ব মেনে চলবে সে বিধিগুলো নির্বাচনের স্বাধীনতা তার থাকত কিন্তু বাস্তবে বেছে নেয়ার এ স্বাধীনতাও হয়ত খুব বেশি একটা কিছু হত না। হয়ত হেটারোটিক (Heterotic) অন্ততত্ত্বের মত শুধুমাত্র একটি কিম্বা সামান্য কয়েকটি সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব থাকত, সেগুলোর হয়ত অন্তর্নিহিত সামঞ্জস্য থাকত এবং সে তত্ত্ব হয়ত মানুষের মত জটিল গঠনের জীবের অস্তিত্ব অনুমোদন করত। সে মানুষ এমন জীব যে তারা মহাবিশ্বের বিধি অনুসন্ধান করতে পারে এবং ঈশ্বরের ধর্ম (nature of God) নিয়ে প্রশ্ন করতে পারে।

যদি একটিই সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব থাকে তাহলে সেটাও হবে কয়েক কেতা নিয়ম এবং সমীকরণ (set of rules and equations)। কি এই সমীকরণগুলোকে জীবনদান করে এবং তাদের জীবন দান করার জন্য মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে? বিজ্ঞানের সাধারণ পদ্ধতি হল একটি গাণিতিক প্রতিরূপ গঠন করা। কিন্তু সে প্রতিরূপ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না : প্রতিরূপ বিবরণ দেবে সেজন্য একটি মহাবিশ্ব থাকবে কেন? অস্তিত্বের ঝামেলা মহাবিশ্ব কেন নিতে গেল? ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব কি এমনই ক্ষমতাশালী (com;elling) যে সে নিজেরই অস্তিত্ব নিয়ে আসতে পারে? না কি এর জন্য একটি স্রষ্টা দরকার? তাই যদি সে নিজেরই মহাবিশ্বের তার আর কি অভিক্রিয়া থাকতে পারে? তাছাড়া তাঁকে কে সৃষ্টি করেছিল?

এখন পর্যন্ত অধিকাংশ বৈজ্ঞানিকরা মহাবিশ্বের প্রকৃতি নিয়ে তত্ত্ব গঠনে ব্যস্ত ছিলেন, কিন্তু কেন এই মহাবিশ্ব এ প্রশ্ন করার সময় তাদের হয়নি। অন্যদিকে এ প্রশ্ন করা যাদের কাজ সেই দার্শনিকরা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের অগ্রগতির সঙ্গে তাল রাখতে পারেননি। অষ্টাদশ শতাব্দীতে দার্শনিকরা ভাবতেন বিজ্ঞান তথা সমগ্র মানব জ্ঞান ভাণ্ডারই তাদের কর্মক্ষেত্র। তারা এই ধরনের প্রশ্ন করতেন : মহাবিশ্বের কি কোন আরম্ভ ছিল? কিন্তু ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান হয়ে দাঁড়াল অতিরিক্ত গাণিতিক এবং বিশেষ রকম প্রযুক্তিবিদ্যা ভিত্তিক। সেজন্য কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ছাড়া দার্শনিক কিম্বা অন্য যে কোন মানুষের কাছেই সে বিজ্ঞান হয়ে দাঁড়াল অনধিগম্য। দার্শনিকরা তাদের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এতই কমিয়ে আনলেন যে এই শতাব্দীর সবচাইতে বিখ্যাত দার্শনিক উইটগেনস্টাইন (Wittgenstein) বলছেন– “দর্শনের কর্মক্ষেত্রের ভিতরে একমাত্র অবশিষ্ট ক্ষেত্র ভাষা বিশ্লেষণ”। অ্যারিস্টটল ও কান্টের বিরাট ঐতিহ্যের কি অধঃপতন!

কিন্তু আমরা যদি সম্পূর্ণ একটি তত্ত্ব আবিষ্কার করি তাহলে শুধুমাত্র কয়েকজন বৈজ্ঞানিকেরই নয়, কালে কালে সে তত্ত্ব বোধগম্য হওয়া উচিত সবার, অন্ততপক্ষে বোধগম্য হওয়া উচিত সে তত্ত্বের মূল রেখাগুলো। তাহলে আমরা, দার্শনিকরা, বৈজ্ঞানিকরা, এমন কি সাধারণ মানুষরাও এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারব : আমাদের এবং মহাবিশ্বের অস্তিত্বের কারণ কি? আমরা যদি এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই তাহলে সেটাই হবে মানবিক যুক্তির চূড়ান্ত জয়–তার কারণ তখন আমরা জানতে পারব ঈশ্বরের মন।

———-
১. Scientific Determinism: সব ঘটনাই মানুষের ইচ্ছাবহির্ভুত কোন না কোন নিমিত্ত হইতে উদ্ভূত–এই দার্শনিক মতবাদ।–অনুবাদক

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein)

পারমাণবিক বোমার রাজনীতির সঙ্গে আইনস্টাইনের সম্পর্ক সুবিদিত। ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট (Franklim Roosevelt) কে লেখা যে বিখ্যাত চিঠি যুক্তরাষ্ট্রকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতে প্ররোচিত করেছিল, সে চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন আইনস্টাইন এবং যুদ্ধপরবর্তী যুগে পারমাণবিক যুদ্ধে বাধা দেয়ার প্রচেষ্টার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। কিন্তু এগুলো শুধুমাত্র একটি বৈজ্ঞানিককে রাজনৈতিক জগতে জোর করে টেনে আনার ফলস্বরূপ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ক্রিয়াকর্ম নয়। আইনস্টাইনের নিজের ভাষায় বলা যায়। আসলে তার জীবনটা ছিল “রাজনীতি আর সমীকরণে বিভক্ত”।

আইনস্টাইন সর্বপ্রথম রাজনৈতিক কাজ করেছিলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়। তখন তিনি বার্লিনে অধ্যাপক। মানব জীবনের অপচয় তাঁর কাছে ন্যাক্কারজনক মনে হয়েছিল। তিনি যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভমিছিলে জড়িত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর অহিংস আইন অমান্য সমর্থন এবং জনসাধারণকে বাধ্যতামূলক সামরিক বাহিনীতে যোগদান করতে অস্বীকার করতে প্রকাশ্যে উৎসাহ দানের ফলে তিনি তার সহকর্মীদের ভালবাসা খুব সামান্যই অর্জন করতে পেরেছিলেন। যুদ্ধের পর তিনি চেষ্টা করেছেন দ্বন্দ্ব মেটাতে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নতি করতে। এর ফলেও তিনি জনপ্রিয় হননি। রাজনীতির জন্য অনতিবিলম্বে তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়াও কঠিন হয়ে গেল। এমনকি অসুবিধা হতে লাগল বক্তৃতা দিতে যাওয়ারও।

আইনস্টাইনের জীবনের দ্বিতীয় প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জাইয়নিজম (Zionism ইহুদিদের জাতীয় স্বার্থ এবং জাতীয় বাসভূমির সপক্ষে আন্দোলন)। ইহুদিবংশে জন্মানো সত্ত্বেও আইনস্টাইন বাইবেলের ঈশ্বর সম্পর্কীয় ধারণা পরিত্যাগ করেন। কিন্তু যুদ্ধের আগে এবং যুদ্ধের সময় বর্ধমান ইহুদি বিরোধিতা সম্পর্কে চেতনা তাঁকে ধীরে ধীরে ইহুদি সমাজের সঙ্গে একাত্ম করেছিল এবং শেষে তিনি জাইয়নিজমের সোচ্চার সমর্থন হয়েছিলেন। এবারও জনপ্রিয়তার অধিকতর অভাবের জন্যও তিনি নিজের মনের কথা বলা বন্ধ করেননি। তাঁর তত্ত্বগুলোকেও আক্রমণ করা হয় : এমনকি আইনস্টাইন বিরোধী একটি সংগঠনও তৈরি হয়। আইনস্টাইনকে হত্যা করার জন্য অন্য লোককে প্ররোচিত করার অপরাধে একজনের শাস্তিও হয় (এবং মোটে ৬ ডলার জরিমানা হয়)। কিন্তু আইনস্টাইন সহজে রাগ করতেন না। “আইনস্টাইন বিরোধী একশত লেখক” নামে বইটি যখন প্রকাশিত হয় তখন বলেছিলেন– “আমি ভুল করে থাকলে একজন লেখকই তো যথেষ্ট।”

১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতায় আসেন। আইনস্টাইন তখন আমেরিকাতে। তিনি ঘোষণা করলেন জার্মানীতে আর ফিরবেন না। যখন নাজি মিলিশিয়া তাঁর বাড়িতে হামলা করে এবং তাঁর ব্যাঙ্কের টাকা বাজেয়াপ্ত করে তখন বার্লিনের একটি সংবাদপত্রের শীর্ষে লেখা হয়- “আইনস্টাইনের কাছ থেকে সুখবর, তিনি আর জার্মানীতে ফিরছেন না।” নাজি সন্ত্রাসের মুখে তিনি যুদ্ধবিরোধিতা পরিত্যাগ করেন। জার্মান বৈজ্ঞানিকরা পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে এই ভয়ে তিনি প্রস্তাব করেন যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব পারমাণবিক বোমা তৈরি করুক। কিন্তু প্রথম আণবিক বোমা বিস্ফোরণের আগেই তিনি প্রকাশ্যে আণবিক যুদ্ধের বিপদ সম্পর্কে সাবধানবাণী ঘোষণা করেছেন এবং আণবিক অস্ত্রের আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ প্রস্তাব করেছেন।

আইনস্টাইনের সারাজীবনের শান্তি প্রচেষ্টায় কোন দীর্ঘস্থায়ী ফল হয়েছে বলে মনে হয় না এবং খুব বেশি বন্ধুলাভও তার হয়নি। জাইয়নিস্ট দাবির প্রতি তার সোচ্চার সমর্থন কিন্তু ১৯৫২ সালে বিধিমত স্বীকৃতি পায়। তাঁকে ইজরায়েলের রাষ্ট্রপতি পদ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়। তিনি অস্বীকার করেন, বলেছিলেন তাঁর ধারণা রাজনীতিতে তিনি অপরিপক্ক (naive)। কিন্তু বোধ হয় আসল কারণ ছিল অন্য। আবার তাঁর ভাষাতেই বলা যায়– “আমার কাছে সমীকরণের গুরুত্ব বেশি। কারণ রাজনীতি শুধু বর্তমানের জন্য, কিন্তু সমীকরণ চিরকালের জন্য।”

.

গ্যালিলিও গ্যালিলি (Galileo Galilei)

আধুনিক বিজ্ঞানের জন্মের জন্য যে কোন একক ব্যক্তির চাইতে বোধ হয় গ্যালিলিওই সবচাইতে বেশি দায়ী। ক্যাথলিক চার্চের সঙ্গে বিখ্যাত দ্বন্দ্ব ছিল তাঁর দর্শনের কেন্দ্রে। এর কারণ গ্যালিলিওই প্রথম বলেন, বিশ্বের ক্রিয়াকর্ম বোঝার আশা মানুষের রয়েছে। এবং আমরা এ আশা পূর্ণ করতে পারি শুধুমাত্র বাস্তব জগৎ পর্যবেক্ষণ করে।

প্রথম থেকেই গ্যালিলিও কোপারনিকাসের তত্ত্বে (গ্রহগুলো সূর্যকে পরিক্রমণ করে) বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু এই চিন্তাধারার সমর্থনে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়ার পরই তিনি জনসাধারণের সমক্ষে এই চিন্তাধারা সমর্থন করা শুরু করেন। কোপারনিকাসের তত্ত্ব সম্পর্কে তিনি লেখেন ইতালীর ভাষায় (সাধারণ পণ্ডিতি (academic) লাতিনে নয়]। অল্পদিনের ভিতরেই তাঁর মতবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও বিরাট সমর্থন লাভ করে। এর ফলে অ্যারিস্টটলবাদী অধ্যাপকরা বিরক্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হন এবং কোপারনিকাসবাদ নিষিদ্ধ করার জন্য ক্যাথলিক চার্চকে প্ররোচিত করতে থাকেন।

গ্যালিলিও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে রোমে যান ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে। তার যুক্তি ছিল বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সম্পর্কে কিছু বলার উদ্দেশ্য বাইবেলের ছিল না। যেখানে বাইবেলের সঙ্গে সাধারণ বুদ্ধির দ্বন্দ্ব, বাইবেল সেখানে রূপক (allegory)। কিন্তু চার্চের নিন্দার ভয় ছিল এ নিন্দায় প্রোটেস্টান্টবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ক্ষতি হতে পারত। সুতরাং তারা দমন নীতি গ্রহণ করেন। ১৬১৬ সালে তারা কোপারনিকাসবাদকে “মিথ্যা এবং ভ্রমাত্মক” বলে ঘোষণা করেন এবং গ্যালিলিওকে কখনও এ মতবাদ “মেনে না চলতে কিম্বা এর সপক্ষে প্রচার না করতে আদেশ দেয়া হয়। গ্যালিলিও এ আদেশ মেনে নেন।

১৬২৩ সালে গ্যালিলিওর বহুদিনের এক বন্ধু পোপ নির্বাচিত হন। গ্যালিলিও তৎক্ষণাৎ ১৬১৬ সালের আদেশ নাকচ করানোর চেষ্টা করেন। তিনি বিফল হন কিন্তু অ্যারিস্টটল এবং কোপারনিকাস দুজনেরই তত্ত্ব আলোচনা করে একটি বই লেখার অনুমতি সংগ্রহ করেন। তবে দুটি শর্ত ছিল– তিনি কোন পক্ষ নেবেন না এবং তাঁকে সিদ্ধান্তে আসতে হবে : মানুষ কোনক্রমেই বুঝতে পারবে না পৃথিবীর ক্রিয়াকর্ম কি করে চলে তার কারণ ঈশ্বর একই ক্রিয়া মানুষের অকল্পনীয় উপায়ে করতে পারেন। ঈশ্বরের সর্বশক্তিমত্তার কোন সীমা মানুষ বেঁধে দিতে পারে না।

“বিশ্বের দুটি প্রধান তন্ত্র বিষয়ে কথোপকথন (Dialogue Concerning the Two Chief World Systems)” বইটি সম্পূর্ণ হয়ে প্রকাশিত হয় ১৬৩২ সালে। এ বিষয়ে সরকারি আধিকারিকদের (censor) পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। বইটি অবিলম্বে সাহিত্য এবং দর্শন বিষয়ে সমগ্র ইউরোপে মুখ্য রচনারূপে (masterpiece) অভিনন্দিত হয়। অনতিবিলম্বে পোপ বুঝতে পারলেন বইটিকে লোকে কোপারনিকাসবাদ সমর্থনের যুক্তিরূপে গ্রহণ করছে। এই বইটি প্রকাশনার অনুমতি দেয়ার জন্য তাদের অনুশোচনা হল। পোপের যুক্তি ছিল যদিও বইটি সরকারি আধিকারিকের আশীর্বাদ পেয়েছে তবুও গ্যালিলিও ১৬১৬ সালের আদেশ অমান্য করেছেন। গ্যালিলিওকে তিনি বিচারসভায় পাঠালেন। বিচারকরা গ্যালিলিওকে যাবজ্জীবন গৃহবন্দী থাকার আদেশ দিলেন এবং আদেশ দিলেন জনগণের সামনে প্রকাশে কোপারনিকাসের মতবাদ পরিত্যাগ করতে। দ্বিতীয়বারও গ্যালিলিও রাজি হয়ে গেলেন।

গ্যালিলিও বিশ্বাসী ক্যাথলিকই থেকে গিয়েছিলেন কিন্তু তাঁর বিজ্ঞানের স্বাধীনতায় বিশ্বাস চূর্ণ করা যায়নি। ১৬৪২ সালে তাঁর মৃত্যুর চার বছর আগে গৃহবন্দী অবস্থাতেই তাঁর দ্বিতীয় প্রধান বই হল্যান্ডের এক প্রকাশকের কাছে চোরাপথে পাঠিয়ে দেয়া হয়। “দুটি নতুন বিজ্ঞান” (Two New Sciences) নামে এই বইটিই আধুনিক বিজ্ঞানের জনক। এ বিষয়ে এই বইটির গুরুত্ব কোপারনিকাসকে তার সমর্থনের গুরুত্বের চাইতে বেশি।

.

আইজাক নিউটন (Isaac Newton)

আইজাক নিউটন মিষ্ট স্বভাবের মানুষ ছিলেন না। পণ্ডিত সমাজের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে ছিল কুখ্যাত। তার শেষ জবিনের অধিকাংশই জড়িত ছিল তপ্ত কলহে। তাঁর ‘প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা’ (Principia Mathematica) নিঃসন্দেহে এ পর্যন্ত পদার্থবিদ্যার যত বই লেখা হয়েছে তার ভিতরে সবচাইতে প্রভাবশালী। এই বই প্রকাশের পর তিনি দ্রুত খ্যাতি লাভ করেন। তাকে রয়্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ করা হয় এবং বৈজ্ঞানিক হিসেবে তিনিই প্রথম নাইট (Knight) উপাধি লাভ করেন।

অনতিবিলম্বে নিউটনের দ্বন্দ্ব শুরু হয় রাজকীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী জন ফ্ল্যামস্টীডের John Flamsteed) সঙ্গে। ফ্ল্যামস্টীড এর আগে প্রিন্সিপিয়ার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাত্ত জোগাড় করে দিয়েছিলেন কিন্তু সেবার তিনি নিউটনের কাছে। প্রয়োজনীয় সংবাদ আটকে দিয়েছিলেন। নিউটন অস্বীকৃতি মেনে নিতে রাজি হননি। তিনি নিজেকে রয়্যাল অবজারভেটরীর পরিচালকমণ্ডলীতে নিযুক্ত করার ব্যবস্থা করেন এবং তার পর চেষ্টা করেন উপাত্তগুলো তৎক্ষণাৎ প্রকাশ করতে বাধ্য করতে। শেষ পর্যন্ত তিনি ফ্ল্যামস্টীডের গবেষণাফল অধিগ্রহণ (seize) করে ফ্ল্যামস্টীডের পরম শত্রু এডমন্ড হ্যাঁলি (Edmond Halley) কে দিয়ে সেগুলো প্রকাশের ব্যবস্থা কনের। কিন্তু ফ্ল্যামস্টীড আদালতের শরণাপন্ন হন এবং শেষ মুহূর্তে আদালতের আদেশে চুরি করা গবেষণাপত্রগুলো বণ্টন বন্ধ করেন। নিউটন রেগে যান এবং প্রতিশোধ নেয়ার জন্য প্রিন্সিপিয়ার পরবর্তী সংস্করণগুলো থেকে ফ্ল্যামস্টীড সম্পর্কিত সমস্ত উল্লেখ বাদ দিয়ে দেন।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বন্দ্ব হয়েছিল জার্মান দার্শনিক গটফ্রীড লীবনিজের (Gottfried Leibniz) সঙ্গে। লীবনিজ এবং নিউটন দুজনেই স্বতন্ত্রভাবে ক্যালকুলাস নামে গণিতশাস্ত্রের একটি শাখা আবিষ্কার করেন (developed)। ক্যালকুলাস আধুনিক পদার্থবিদ্যার অধিকাংশের ভিত্তি স্বরূপ। যদিও আমরা এখন জানি নিউটন লীবনিজের বহু বছর আগে ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেছিলেন তবুও তার গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হয়েছিল অনেক পরে। কে প্রথম– তাই নিয়ে এক বিরাট দ্বন্দ্ব শুরু হয়। বৈজ্ঞানিকরা সক্রিয়ভাবে দুই প্রতিযোগীরই পক্ষ সমর্থন করতে থাকেন। কিন্তু একটি ব্যাপার লক্ষণীয় : নিউটনের সপক্ষে লেখা অধিকাংশ প্রবন্ধই ছিল আসলে নিউটনের নিজের হাতে লেখা। শুধুমাত্র প্রকাশিত হয়েছিল বিভিন্ন বন্ধুর নামে। ঝগড়া বেড়ে চলছিল। সেই সময় লীবনিজ একটি ভুল করলেন। তিনি ঝগড়া মেটানোর জন্য অ্যাপীল করলেন রয়্যাল সোসাইটির কাছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিউটন অনুসন্ধানের জন্য একটি নিরপেক্ষ’ কমিটি গঠন করেন। ঘটনাচক্রে কমিটির সবাই ছিলেন নিউটনের বন্ধু। কিন্তু এটাই সব নয়। তারপর নিউটন কমিটির রিপোর্টটি নিজেই লেখেন এবং রয়্যাল সোসাইটিকে দিয়ে প্রকাশ করান। সরকারিভাবে লীবনিজকে কুম্ভীলক(১) (plagiarist) বলে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়। এতেও খুশি না হয়ে নিউটন রয়্যাল সোসাইটির নিজস্ব পত্রিকায় লেখকের নাম না দিয়ে ঐ রিপোর্টের একটি সমালোচনা প্রকাশ করেন। শোনা যায়, লীবনিজের মৃত্যুর পর নিউটন বলেছিলেন–”লীবনিজের মন ভেঙে দিয়ে (breaking his heart) তিনি খুব খুশি হয়েছেন।”

এই দুটি দ্বন্দ্বের আগেই নিউটন কেম্ব্রিজ এবং পণ্ডিত সমাজ ত্যাগ করেছেন। তিনি কেম্ব্রিজে এবং পরবর্তীকালে পার্লামেন্টে ক্যাথলিক বিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। পুরস্কারস্বরূপ তাঁকে রাজকীয় টাকশালের (Royal Mint) ওয়ার্ডেন (Warden) পদ দেয়া হয়। এই পদে প্রচুর অর্থাগমের সুযোগ ছিল। এই পদে থাকার সময় তিনি তার কুটিলতা এবং তীব্র বিদ্বেষের প্রতিভা সামাজিকভাবে অনেক গ্রহণীয় কর্মে নিয়োগ করেন। এখানে তিনি সাফল্যের সঙ্গে জালিয়াতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন এবং বেশ কয়েকজনকে প্রাণদণ্ড দেয়ার ব্যবস্থা করেন।

———-

১. কুম্বীলক– যে অন্যের লেখা নিজের নামে চালায়, Plagiarist.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *