১১. কৃষ্ণগহ্বর এবং শিশু মহাবিশ্বসমূহ

১১. কৃষ্ণগহ্বর এবং শিশু মহাবিশ্বসমূহ*

[* ১৯৮৮ সালের এপ্রিল মাসে বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত হিচকক বক্তৃতা।]

কৃষ্ণগহ্বরের পতন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর ভয়ঙ্কর ব্যাপারগুলোর একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলে এখন বলা যায় কৃষ্ণগহ্বরগুলো বিজ্ঞানের বাস্তবতার অংশ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর অংশ নয়। এখন আমি বলব কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব আছে এই ৮ ভবিষ্যদ্বাণী করার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে এবং পর্যবেক্ষণ করা সাক্ষ্য সজোর নির্দেশ দেয় যে, আমাদের নীহারিকায় একাধিক কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে এবং আরও অনেক রয়েছে অন্যান্য নীহারিকায়।

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর লেখকদের সত্যিকারের সাফল্য হয়েছে, আপনি যদি কৃষ্ণগহ্বরে পতিত হন তাহলে কি হবে সেই ব্যাপারে। একটি সাধারণ অভিভাবন (suggestion) হল কৃষ্ণগহ্বরটি যদি ঘূর্ণায়মান হয় তাহলে আপনি স্থান-কালের ঘোট একটি গর্ত দিয়ে পড়ে মহাবিশ্বের জন্য অঞ্চলে গিয়ে উঠতে পারেন। এর ফলে স্পষ্টতই মহাকাশ ভ্রমণের অনেক সম্ভাবনা খুলে যায়। সত্যিই, অন্য নীহারিকার কথা বাদ দিলেও আমাদের যদি অন্য তারকায় ভ্রমণ ভবিষ্যতে বাস্তবে পরিণত করতে হয় তাহলে এরকম একটা কিছু প্রয়োজন হবে। তাছাড়া, যেহেতু আলোকের চাইতে দ্রুত কিছু চলতে পারে না, সেজন্য নিকটতম তারকায় যাতায়াতে অন্তত আট বছর লাগবে। আলফা সেঞ্চাওরি (Alpha Centauri) তে সাপ্তাহান্তিক ছুটি কাটানোর ব্যাপারটা এই পর্যন্ত। অন্য দিকে কেউ যদি কৃষ্ণগহ্বরের ভিতর দিয়ে যেতে পারে তাহলে হয়ত সে মহাবিশ্বের যে কোন জায়গায় ভেসে উঠতে পারে। কি করে গন্তব্যস্থান স্থির করতে হবে সেটা স্পষ্ট নয়। আপনি ছুটি কাটাতে ভার্গো (Virgo) রওনা হয়ে ক্র্যাব (crab) নীহারিকায় গিয়ে শেষ করতে পারেন।

ভবিষ্যৎ নীহারিকায় ভ্রমণকারীদের হতাশ করতে হচ্ছে সেজন্য আমি দুঃখিত। এই দৃশ্যপট অবাস্তব। আপনি যদি কৃষ্ণগহ্বরে ঝাঁপ দেন তাহলে আপনি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন এবং প্রচণ্ড চাপে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে আপনার অস্তিত্বই মুছে যাবে। কেউ যদি একটি কৃষ্ণগহ্বরে গিয়ে সেমাই (spaghetti) হয়ে যায় তাহলে তার দেহের কণিকাগুলো হয়ত বেঁচে যেতে পারে–এই সম্ভাবনায় তিনি কোন সান্ত্বনা পাবেন কিনা তা আমার জানা নেই।

আমি সামান্য হাল্কাভাবে কথাটা বলেছি কিন্তু রচনাটির ভিত্তি কঠিন বিজ্ঞান। আমি যা বলেছি তার বেশিরভাগই এখন এই ক্ষেত্রে যারা কাজ করছেন সেই সমস্ত বৈজ্ঞানিকরা মেনে নেন তবে এ স্বীকৃতি এসেছে খুবই সম্প্রতি। এই রচনার শেষ অংশটির ভিত্তি কিন্তু খুবই সাম্প্রতিক গবেষণা এবং এ সম্পর্কে এখনও সাধারণ মতৈক্য হয়নি। কিন্তু এই গবেষণায় প্রচুর আগ্রহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।

যদিও আমরা এখন যাকে কৃষ্ণগহ্বর বলি সেই কল্পন প্রায় দুশ বছরের পুরানো তবুও কৃষ্ণগহ্বর নামটি দিয়েছিলেন আমেরিকান পদার্থবিদ জন হুইলার John Wheeler) ১৯৬৭ সালে। এই নামকরণ এক মহাপ্রতিভার সাক্ষ্য। এই নামের পরে কৃষ্ণগহ্বর নিশ্চিতভাবে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পুরাণের অংশ হয়ে দাঁড়ায়। এই নামের ফলে বৈজ্ঞানিক গবেষণা উদ্দীপিত হয় তার কারণ আগে যার কোন সন্তোষজনক নাম ছিল না সে জিনিসের একটি নির্দিষ্ট নিশ্চিত নামকরণ হল। বিজ্ঞানে ভাল একটি নামের গুরুত্বকে ছোট করে দেখা উচিত নয়।

আমি যতদূর জানি কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে যিনি প্রথম দিকে আলোচনা করেছিলেন তার নাম জন মিচেল John Michell)। তিনি ১৭৮৩ সালে এগুলো সম্পর্কে একটা গবেষণাপত্র লেখেন। তার কল্পনটি ছিল এরকম : অনুমান করা যাক, আপনি ভূপৃষ্ঠ থেকে উল্লম্বভাবে একটি কামানের গোলা ছুঁড়েছেন। উপরে উঠতে উঠতে মহাকর্ষের ক্রিয়ার জন্য এর গতি ক্রমশ হ্রাস পাবে। শেষ পর্যন্ত গোলাটা উপরে যাওয়া বন্ধ করে পৃথিবীতে এসে পড়বে। যদি এটা একটা বিশেষ ক্রান্তিক দ্রুতির চাইতে বেশি দ্রুতিতে চলা শুরু করে তাহলে এটা কখনোই উপরে উঠা বন্ধ করে নিচে এসে পড়বে না। গোলাটা তখন অপসরণ করতেই থাকবে। এই ক্রান্তিক দ্রুতির নাম মুক্তির বেগ (escape velocity)। পৃথিবীর ক্ষেত্রে মুক্তির বেগ সেকেন্ডে প্রায় ৭ মাইল এবং সূর্যের ক্ষেত্রে মুক্তির বেগ সেকেন্ডে প্রায় ১০০ মাইল। এই দুটো গতিবেগই বাস্তব কামানের গোলার দ্রুতির চাইতে বেশি। কিন্তু আলোর গতিবেগের চাইতে অনেক কম। সে গতিবেগ সেকেন্ডে ১,৮৬,০০০ মাইল। এর অর্থ মহাকর্ষের আলোকের উপর বিশেষ কোন ক্রিয়া নেই। আলোক স্বচ্ছন্দে পৃথিবী কিংবা চন্দ্র থেকে মুক্তি পেতে পারে। তবে মিচেল যুক্তি দেখিয়েছিলেন এমন কোন একটা তারকা খুঁজে পাওয়া যেতে পারে যেটা যথেষ্ট ভরসম্পন্ন এবং আকারে যথেষ্ট ক্ষুদ্র। তাহলে তার মুক্তির বেগ হবে আলোকের গতিবেগের চাইতে বেশি। এরকম তারকা আমরা দেখতে পাব না। তার কারণ তার পৃষ্ঠ থেকে আলোক আমাদের কাছে পৌঁছাবে না। তারকাটা একে নিজস্ব মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে টেনে রাখবে। তবে এই তারকাটির নিকটবর্তী পদার্থের উপরে যে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে তার ক্রিয়ার সাহায্যে আমরা তারকাটির অস্তিত্ব ধরতে পারব।

আলোককে কামানের গোলার মতো বিচার করা বাস্তবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না। ১৮৯৭ সালে করা একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা অনুসারে আলোক সবসময়ই একই অচর গতিবেগে চলাচল করে। তাহলে মহাকর্ষ কি করে আলোকের গতি হ্রাস করবেঃ ১৯১৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত আলোকের উপর মহাকর্ষের ক্রিয়া সম্পর্কে কোন সামঞ্জস্যপূর্ণ তত্ত্ব তৈরি হয়নি। সেই সময় আইনস্টাইন ব্যাপক অপেক্ষবাদ গঠন করে। তবুও পুরাতন তারকা এবং অন্যান্য উচ্চভরসম্পন্ন বস্তুপিণ্ডগুলো সাপেক্ষ এ তত্ত্বের নিহিতার্থ ১৯৬০ এর । দশকের আগে সাধারণভাবে বোধগম্য হয়নি।

ব্যাপক অপেক্ষবাদ অনুসারে ভাবা যেতে পারে স্থান এবং কাল যুক্তভাবে একটি চারমাত্রিক স্থান গঠন করে, তার নাম স্থান-কাল। এই স্থান সমতল নয়, এটার ভিতরের পদার্থ এবং শক্তির দ্বারা এটা বিকৃত কিংবা বক্র। এই আলো কিংবা রেডিও তরঙ্গগুলো আমাদের কাছে আসার পথে সূর্যের কাছে চলমনা থাকে। তখন এই তরঙ্গগুলোর বেঁকে যাওয়া দেখে আমরা এই বক্রতা পর্যবেক্ষণ করতে পারি। আলোকের সূর্যের নিকট দিয়ে গমনের সময় বক্রতা হয় খুবই সামান্য। তবে সঙ্কুচিত হতে হতে তার সূর্যের আকার যদি আড়াআড়ি কয়েক মাইলের ভিতরে এসে যায় তাহলে বক্রতা এত বেশি হবে যে, সূর্যকে যে আলোক পরিত্যাগ করতে চাইছে সে পালাতে পারবে না, সূর্যের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র তাকে পিছনের দিকে টেনে রাখবে। ব্যাপক অপেক্ষবাদ অনুসারে কিছুই আলোকের দ্রুতির চাইতে দ্রুততর গমন করতে পারে না। সুতরাং এমন একটি অঞ্চল থাকবে যেখান থেকে কোন কিছুর মুক্তি পাওয়া অসম্ভব হবে। এই অঞ্চলের নাম হবে কৃষ্ণগহ্বর। এর সীমানাকে বলা হয় ঘটনা দিগন্ত (event horinzon)। যে আলো কৃষ্ণগহ্বর থেকে পালাতে চাইছে কিন্তু পারেনি, শুধুমাত্র বিফল হয়েছে just fails) কিন্তু কিনারার চারপাশে ইতস্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই আলো দিয়েই ঘটনা দিগন্ত গঠিত।

সূর্য সঙ্কুচিত হয়ে আড়াআড়িভাবে কয়েক মাইলে দাঁড়াবে এ কথাটা হাস্যকর মনে হতে পারে। মনে হতে পারে পদার্থকে এতটা সঙ্কুচিত করা সম্ভব নয় কিন্তু দেখা যায় সম্ভব।

সূর্য অত উত্তপ্ত বলেই তার আকার এত বড়। এটা নিয়ন্ত্রিত একটা হাইড্রোজেন বোমার মতো হাইড্রোজেন পুড়িয়ে মিলিয়াম করছে। এই প্রক্রিয়াতে যে তাপ মুক্ত হচ্ছে সেই তাপ একটি চাপ সৃষ্টি করে এবং সে চাপ সূর্যকে তার নিজস্ব মহাকর্ষকে বাধা দিতে সক্ষম করে। এই মহাকর্ষ চেষ্টা করে সূর্যকে ক্ষুদ্রতর করতে।

শেষ পর্যন্ত কিন্তু সূর্যের পারমাণবিক জ্বালানি ফুরিয়ে যাবে। এ রকম ঘটনা পাঁচশ কোটি বছরের আগে হবে না। সুতরাং অন্য তারকায় যাওয়ার জন্য টিকিট কাটার কোন তাড়া নেই। তবে সূর্যের চাইতে অধিক ভরসম্পন্ন তারকাগুলো তাদের জ্বালানি আরও দ্রুত জ্বালিয়ে শেষ করবে। তাদের জ্বালানি যখন ফুরিয়ে যাবে তখন তার তাপ কমতে থাকবে এবং তারা সঙ্কুচিত হবে। তাদের ভর যদি সূর্যের ভরের দ্বিগুণের চাইতে কম হয় তাহলে তারা শেষে সঙ্কুচিত হওয়া বন্ধ করবে এবং একটা সুস্থির অবস্থায় স্থিতি লাভ করবে। এরকম একটি অবস্থার নাম শ্বেত বামন (white dwarf)। এগুলোর ব্যাসার্ধ কয়েক হাজার মাইল এবং ঘনত্ব প্রতি ঘন ইঞ্চিতে কয়েকশ’ টন। এরকম আরেকটি অবস্থার নাম নিউট্রন তারকা। এগুলোর ব্যাসার্ধ প্রায় দশ মাইল কিন্তু এর ঘনত্ব প্রতি ঘন ইঞ্চিতে বহু মিলিয়ন (দশ লক্ষ) টন।

আমাদের নীহারিকায় আমাদের নিকট সান্নিধ্যে বহু শ্বেত বামন আমরা পর্যবেক্ষণ করি। নিউট্রন তারকাগুলো কিন্তু ১৯৬৭ সালের আগে দেখা যায়নি। তখন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জোসেলিন বেল Jocelyn Bell) এবং অ্যান্টনি হিউয়িশ (Antony Hewish) পালসার (Pulsar) নামে একরকম বস্তুপিণ্ড আবিষ্কার করেছিলেন। আমরা কোন অপরিচিত সভ্যতার সংস্পর্শে এসেছি কি না। সত্যি আমার মনে আছে, যে ঘরে এই আবিষ্কার ঘোষণা করার জন্য বক্তৃতা দেওয়া হচ্ছিল, সেই ঘরটা ক্ষুদ্র সবুজ মানুষের চিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছিল। শেষে কিন্তু তারা এবং আর সবাই অনেক কম রোমাঞ্চকর সিদ্ধান্তে এসেছিলেন। সে সিদ্ধান্তটা হল এই বস্তুপিণ্ডগুলো ছিল আসলে ঘূর্ণায়মান নিউট্রন তারকায়। যারা স্থানভিত্তিক অ্যাডভেঞ্চারের গল্প লেখেন তাঁদের পক্ষে এটা ছিল দুঃসংবাদ, কিন্তু আমাদের মতো স্বল্পসংখ্যক যে কয়জন তখনকার দিনে কৃষ্ণগহ্বরে বিশ্বাস করতেন তাদের পক্ষে এটি ছিল সুসংবাদ। তারকাগুলো যদি সঙ্কুচিত হয়ে আড়াআড়ি ১০-২০ মাইল হয়ে নিউট্রন তারকায় পরিণত হতে পারে, তাহলে আশা করা যেতে পারে যে অন্য তারকাগুলো আরও বেশি সঙ্কুচিত হয়ে কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হতে পারে।

সূর্যের চাইতে প্রায় দ্বিগুণ বেশি ভরসম্পন্ন একটি তারকা শ্বেত বামন কিংবা নিউট্রন তারকারূপে স্থিতিলাভ করতে পারে না। কোন কোন ক্ষেত্রে তারকাটি বিস্ফোরিত হতে পারে এবং যথেষ্ট পদার্থ নিক্ষেপ করে নিজের ভরের নিচে নামিয়ে আনতে পারে। কিন্তু সবক্ষেত্রে এ রকম হবে না। কোন কোন তারকা ক্ষুদ্র হয়ে যাবে যে, তাদের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রগুলো আলোককে বাঁকিয়ে এমন জায়গায় নিয়ে আসবে যে, সেই আলো তারকাতেই আবার ফিরে আসবে আর কোন আলোক কিংবা কোন কিছুই পালাতে পারবে না। এই তারকাগুলো হয়ে দাঁড়াবে কৃষ্ণগহ্বর।

পদার্থবিদ্যার বিধিগুলো কাল-প্রতিসম (time symmetric)। সুতরাং কৃষ্ণগহ্বর নামে যদি এমন বস্তুপিণ্ড থাকে, যাতে জিনিসগুলো পড়তে পারে কিন্তু বেরিয়ে আসতে পারে না, তাহলে এমন বস্তুপিণ্ড থাকা উচিত যা থেকে জিনিসগুলো বেরিয়ে আসতে পারে, কিন্তু যার ভিতরে জিনিস পড়তে পারে না। এগুলোর নাম দেওয়া যেতে পারে শ্বেতগহ্বর। দূর কল্পনা করা যেতে পারে যে, একজন একস্থান কৃষ্ণগহ্বরে লাফিয়ে পড়ে অন্যস্থানে শ্বেতগহ্বর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। বহুদূরে স্থানে ভ্রমণ সম্পর্কে এর আগে বলা হয়েছিল উপরে উল্লিখিত পদ্ধতি হবে তার একটি আদর্শ উপায়। আপনার প্রয়োজন হবে শুধু কাছাকাছি একটি কৃষ্ণগহ্বর খুঁচে পাওয়া।

প্রথমে স্থানে এই ধরনের ভ্রমণ সম্ভব মনে হয়েছিল। আইনস্টাইনের ব্যাপক অপেক্ষবাদের এমন কতগুলো সমাধান আছে যাতে কৃষ্ণগহ্বরে পড়ে শ্বেতগহ্বর দিয়ে বেরিয়ে আসা সম্ভব। পরে গবেষণায় অবশ্য দেখা গেছে এই সমাধানগুলো খুবই অস্থির (unstable) : একটি মহাকাশযানের উপস্থিতির মতো সামান্য একটু বিক্ষোভই কৃষ্ণগহ্বর থেকে শ্বেতগহ্বরে যাওয়ার ওই সরু সুড়ঙ্গ পথকে (wormhole or passage) ধ্বংস করে দেবে। এটাও আরেকটা পিপেতে চড়ে নায়েগ্রা যাওয়ার মতো।

তারপরে মনে হল ব্যাপারটার কোন আশা নেই। কৃষ্ণগহ্বর দিয়ে ময়লা ফেলা কিংবা কোন বন্ধুকে ফেলে দেওয়ার মতো কাজ হতে পারে। কিন্তু সেগুলো এমন দেশ যেখান থেকে কোন পথিক ফিরে আসে না। এতক্ষণ পর্যন্ত আমি যা বলেছি তার সবটাই কিন্তু আইনস্টাইনের ব্যাপক অপেক্ষবাদের ভিত্তিতে গণনার সাহায্যে। এই তত্ত্বের সঙ্গে আমরা যে পর্যবেক্ষণ করেছি তার অতিসুন্দর ঐক্য রয়েছে কিন্তু আমরা জানি এটা সম্পূর্ণ। সত্য হতে পারে না। তার কারণ কণাবাদী বলবিদ্যা অনিশ্চয়তার নীতি এর অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অনিশ্চয়তার নীতি বলে কণিকাগুলোর সুসংগতি অবস্থান এবং সুসংজ্ঞিত গতিবেগ দুই-ই থাকতে পারে না। যত নিখুঁতভাবে আপনি একটি কণিকার অবস্থান মাপবেন তত কম নিখুঁতিভাবে আপনি তার গতিবেগ মাপতে পারবেন এবং তার বিপরীতও সত্য।

১৯৭৩ সালে আমি গবেষণা করতে শুরু করি, কৃষ্ণগহ্বরের ব্যাপারে অনিশ্চয়তার নীতি কি পার্থক্য সৃষ্টি করবে সেই বিষয়ে। আমি দেখলাম এর অর্থ হবে কৃষ্ণগহ্বর সম্পূর্ণ কৃষ্ণ নয়। এই গবেষণার ফলে আমি এবং আর সবাই অবাক হয়ে গেলাম। কৃষ্ণগহ্বরগুলোর স্থির হারে কণিকা এবং বিকিরণ প্রেরণ করবে। অক্সফোর্ডের কাছে একটি কনফারেন্সে আমি যখন আমার গবেষণার ফল ঘোষণা করলাম তখন সবাই ঐ ঘোষণা অবিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন। ঐ সভার সভাপতি বলেছিলেন গবেষণার ফলটি একেবারেই অর্থহীন। তিনি এই মত প্রকাশ করে একটি গবেষণাপত্র লিখিয়েছিলেন। কিন্তু অন্য সবাই যখন আমার গণনা আবার করে দেখলেন তারাও একই অভিক্রিয়া (effect) পেলেন। সুতরাং সভাপতিও মেনে নিলেন আমি সঠিক ছিলাম।

একটি কৃষ্ণগহ্বরের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র থেকে বিকিরণ কি করে পলায়ন করতে পারে? কি করে পারে সেটি বুঝবার কয়েকটি উপায় আছে। যদিও তাদের খুবই পৃথক মনে হয় তবুও আসলে তারা তুল্য। একটি উপায় : অনিশ্চয়তার নীতি কণিকাগুলোর আলোকের চাইতে বেশি গতিবেগে ক্ষুদ্র দূরত্ব অতিক্রম অনুমোদন করে–এ তথ্য মেনে নেওয়া। এর ফরে কণিকাগুলো এবং বিকিরণ ঘটনা দিগন্ত দিয়ে বেরিয়ে কৃষ্ণগহ্বর থেকে পলায়ন করতে পারে। কৃষ্ণগহ্বর থেকে যা বেরিয়ে আসে সিটে কিন্তু কৃষ্ণগহ্বরে যা পড়েছিল তার চাইতে পৃথক। শুধুমাত্র শক্তিটা একরূপ থাকবে।

কৃষ্ণগহ্বর থেকে কণিকা এবং বিকিরণ নির্গত হলে তার ভর হ্রাস পাবে। এর ফলে কৃষ্ণগহ্বরটি ক্ষুদ্রতর হবে এবং কণিকাগুলো দ্রুততর গতিতে বাইরে প্রেরিত হবে। শেষ পর্যন্ত এর ভর শূন্যে পরিণত হবে এবং কৃষ্ণগহ্বরটি সম্পূর্ণ মিলিয়ে যাবে। সম্ভাব্য মহাকাশযান এবং অন্য যে বস্তুগুলো কৃষ্ণগহ্বরের ভিতর পড়েছিল সেগুলোর কি হবে? আমার সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা অনুসারে এ প্রশ্নের উত্তর : তারা তাদের নিজস্ব ক্ষুদ্র একটি শিশু মহাবিশ্বে চলে যাবে। একটি ক্ষুদ্র স্বয়ংসম্পূর্ণ মহাবিশ্ব, মহাবিশ্বের আমাদের অঞ্চল থেকে শাখা বিস্তার করবে। এই শিশু মহাবিশ, আবার স্থান-কালের আমাদের অঞ্চলে একটি কৃষ্ণগহ্বর। সেটা গঠিত হয়েছিল এবং উবে গিয়েছিল। যে কণিকাগুলো একটি কৃষ্ণগহ্বরে পড়েছিল সেগুলোকে মনে হবে অন্য কৃষ্ণগহ্বর থেকে উৎসর্জিত হয়েছে এবং এর বিপরীতও হবে (and vice versa) সত্য।

শুনে মনে হবে কৃষ্ণগহ্বরের ভিতর দিয়ে মহাকাশে ভ্রমণের জন্য যা প্রয়োজন এগুলো শুধুমাত্র তাই। আপনি আপনার মহাকাশযানটিকে চালিয়ে নিয়ে একটা উপযুক্ত কৃষ্ণগহ্বরে পড় ন। মহাকাশযানটি বেশ বড় হওয়া ভাল। তাছাড়া ভিতরে যাওয়ার আগেই মহাকর্ষীয় বলগুলো আপনাকে ছিঁড়ে সেমাই (saghetti) বানিয়ে দেবে। তাহলে আশা করতে পারেন অন্য কোন কৃষ্ণগহ্বর দিয়ে আপনি বেরিয়ে আসবেন। তবে কোথায় সেটি আপনি বেছে নিতে পারবেন না।

কিন্তু এই আন্তঃনীহারিকা পরিবহন পরিকল্পনায় একটা বাধা আছে। কণিকাগুলো যে শিশু মহাবিশ্বে পড়েছিল সেই শিশু মহাবিশ্ব যাকে আমরা কাল্পনিক কাল বলি সেই কাল্পনিক কালেই হয়েছিল। বাস্তব কালে যে মহাকাশচারী কৃষ্ণগহ্বরে পড়বে তার এরকম চটচটে মৃত্যু (sticky end) হবে। মাথার দিকের আর পায়ের দিকের আর পায়ের দিকের মহাকর্ষীয় বলের পাথক্য তাকে ছিঁড়ে ফেলবে। যে কণিকাগুলো তার দেহ গঠন করেছিল সেগুলোও বেঁচে থাকবে না। একটি অনন্যতায় এসে বাস্তব কালের গণনায় তাদের ইতিহাস শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু কাল্পনিক কালের হিসেবে তাদের ইতিহাস চলতে থাকবে। তারা শিশু মহাবিশ্বে প্রবেশ করবে এবং অন্য কৃষ্ণগহ্বর থেকে বেরিয়ে আসা কণিকারূপে আবার নির্গত হবে। সুতরাং এক অর্থে মহাকাশচারীরা মহাবিশ্বের অন্য অঞ্চলে পরিবাহিত হবে। তবে যে কণিকাগুলো নির্গত হবে সেগুলোকে দেখতে ঠিক মহাকাশচারীর মতো হবে না। সে বাস্তব কালের অনন্যতায় ঢুকে পড়েছিল, তার কণিকাগুলো যে কাল্পনিক কালে বেঁচে থাকবে এ তথ্য তাকে খুব একটা সান্ত্বনা দেবে না। কৃষ্ণগহ্বরে যে পড়বে আবশ্যিকভাবে তার নীতিবাক্য হওয়া উচিত কাল্পনিকের কথা চিন্তা কর।

কণিকাগুলো পুনর্বার কোথায় নির্গত হবে সেটা কে নির্ধারণ করে? শিশু মহাবিশ্বে কণিকাগুলোর সংখ্যা হবে কৃষ্ণগহ্বরে যে কণিকাগুলো পড়েছিল তার সংখ্যা এবং কৃষ্ণগহ্বরটি উবে যাওয়ার সময় কৃষ্ণগহ্বর থেকে কণিকাগুলো নির্গত হয় তার সংখ্যা যোগফলের সমান। এর অর্থ একটি কৃষ্ণগহ্বরে যে কণিকাগুলো পততি হয় সেগুলো প্রায় একই ভরের অন্য একটি গহ্বর দিয়ে বেরিয়ে আসে। সুতরাং যে কৃষ্ণগহ্বরে কণিকাগুলো পতিত হয়েছিল সেই আকারের কৃষ্ণগহ্বর সৃষ্টি করে চেষ্টা করা যেতে পারে কণিকাগুলো কোথা থেকে নির্গত হবে সেই জায়গা নির্বাচন করা। তবে কৃষ্ণগহ্বরগুলোর মোট একই শক্তিসম্পন্ন অন্য এক কেতা (set) কণিকা উৎসর্জনের একই রকম সম্ভাবনা আছে। তাহলেও যে কণিকাগুলো অন্য গহ্বরে ঢুকেছিল উৎসর্জিত কণিকাগুলো সেই কণিকাগুলো কিনা বলা সম্ভব নয়। কণিকাগুলোর পরিচয়পত্র থাক না, এক ধরনের সমস্ত কণিকা দেখতে একরকম।

এসবের অর্থ হল কৃষ্ণগহ্বরের ভিতর দিয়ে যাওয়া মহাকাশ ভ্রমণের জনপ্রিয় এবং বিশ্বাসযোগ্য পদ্ধতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। প্রথমত, আপনাকে কাল্পনিক কালে ভ্রমণ করে সেখানে পৌঁছাতে হবে এবং আপনার ইতিহাস বাস্তব কালের হিসেবে যে একটা চটচটে অন্তিম অবস্থায় পৌঁছেছিল তা নিয়ে চিন্তা করলে চলবে না। দ্বিতীয়ত, আপনি সত্যিই নিজের গন্তব্যস্থল নির্বাচন করতে পারবেন না। এই ভ্রমণ হবে কতগুলো বিমান পরিবহন কোম্পানির বিমানে ভ্রমণ করার মতো, সে কোম্পানিগুলোর নামও আমি করতে পারি।

যদিও শিশু মহাবিশ্বগুলো মহাকাশ ভ্রমণে খুব কার্যকর হবে না তবুও মহাবিশ্বের সব জিনিস ব্যাখ্যা করার মতো সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব আবিষ্কারের চেষ্টায় এর গুরুত্বপূর্ণ নিহিতার্থ আছে। আমাদের বর্তমান তত্ত্বগুলোতে একটি কণিকার বৈদ্যুৎ আধানের মতো কতগুলো রাশি রয়েছে, এই রাশিগুলোর মূল্যাঙ্ক সম্পর্কে আমাদের তত্ত্বের দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। তার বদলে আমাদের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে ঐক্য থাকবে এই রকম রাশি বেছে নিতে হয়। অধিকাংশ বৈজ্ঞানিকেরই বিশ্বাস এমন একটি মূলগত ঐক্যবদ্ধ তত্ত্বের অস্তিত্ব আছে, যে তত্ত্ব এই রাশিগুলোর মূল্যাঙ্ক আগাম প্রকাশ (predict) করতে পারে।

এরকম একটি তত্ত্ব থাকতে পারে। বর্তমানে এ বিষয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থীর নাম হেটারোটিক অতিতত্ত্ব (heterotic superstring)। চিন্তনটা এই রকম : স্থান কাল ক্ষুদ্র তত্ত্বের টুকরোর মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফাঁসে পূর্ণ। যেগুলোকে আমরা মৌলকণা বলি সেগুলো আসলে বিভিন্নভাবে কম্পমান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফাস (loops)। এই তত্ত্বে এমন কোন সংখ্যা নেই যার মূল্যাঙ্কের সমন্বয় (adjust) করা যেতে পারে। সুতরাং আশা করা উচিত একটি কণিকার বৈদ্যুৎ আধানের মতো যে সমস্ত সংখ্যার মূল্যাঙ্ক বর্তমান তত্ত্বগুলোর দ্বারা অনির্ধারিত থাকে, ঐক্যবদ্ধ তত্ত্বের উচিত হবে সেই মূল্যাঙ্কগুলো সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার সামর্থ্য থাকা। যদিও আমরা অতিতন্ত তত্ত্বের সাহায্যে এই পরিমাণগুলোর কোনটি সম্পর্কেই ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারিনি, তবুও অনেকের বিশ্বাস আমরা শেষ পর্যন্ত এই ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারব।

তবে শিশু মহাবিশ্ব সম্পর্কিত এই মানসচিত্রগুলো যদি সঠিক হয় তাহলে এই পরিমাণগুলো সম্পর্কে আমাদের ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা হ্রাস পাবে। কারণ, কতগুলো শিশু মহাবিশ্ব রয়েছে যেগুলো মহাবিশ্বে আমাদের অঞ্চলে যোগদান করার জন্য অপেক্ষা করছে, যেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি না। এমন শিশু মহাবিশ্ব থাকতে পারে যাতে সামান্য কয়েকটি কণিকামাত্র রয়েছে। এই শিশু মহাবিশ্বগুলো এত ক্ষুদ্র যে এগুলোর আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া কিংবা আমাদের শাখারূপে বিস্তৃত হওয়া আমরা লক্ষ্য করতে পারব না। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলে কিন্তু একটি কণিকার বৈদ্যুৎ আধানের মতো পরিমাণগুলোর আপাতদৃষ্টি মূল্যাঙ্কের পরিবর্তন হবে। শিশু মহাবিশ্বের সংখ্যার একটি বিস্ফোরণ হতে পারে (population explotion)। তবে মানুষের ক্ষেত্রে যা হয় এক্ষেত্রে খাদ্য সরবরাহ কিংবা দাঁড়াবার স্থানের মতো কোন সীমক উপাদান (limiting factor) থাকবে না। মহাবিশ্বগুলো তাদের নিজের রাজ্যেই বর্তমান। এটা অনেকটা এই প্রশ্নের মতো : একটি আলপিনের ডগায় কয়জন দেবদূত নাচতে পারে?

ছোট হলেও মনে হয় অধিকাংশ পরিমাণ সাপেক্ষই শিশু মহাবিশ্বগুলো খুবই অল্প হলেও, ভবিষ্যদ্বাণী করা মূল্যাঙ্কে নির্দিষ্ট নিশ্চিত পরিমাণ অনিশ্চয়তা উপস্থিত করে। তবে এরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিমাণ অর্থাৎ তথাকথিত মহাজাগতিক ধ্রুবকের পর্যবেক্ষিত মূল্যাঙ্কের একটা ব্যাখ্যা হয়ত দিতে পারে। এটা ব্যাপক অপেক্ষবাদের সমীকরণগুলোর একটা শব্দ। এই শব্দ স্থান-কালের অন্তঃস্থিত একটা প্রসারণ কিংবা সঙ্কোচনের ঝোঁক স্বীকার করে। প্রথমে আইনস্টাইন খুব ক্ষুদ্র একটি মহাজাগতিক ধ্রুবক প্রস্তাব করেছিলেন। তাঁর আশা ছিল এই ধ্রুবকের সাহায্যে তিনি পদার্থের যে সঙ্কোচনের ঝোঁক মহাবিশ্বকে সঙ্কুচিত করে; তার সঙ্গে একটি ভারসাম্য তৈরি করতে পারবেন। যখন আবিষ্কৃত হল যে মহাবিশ্ব প্রসারমাণ তখন এই উদ্দেশ্য আর রইল না, কিন্তু মহাজাগতিক ধ্রুবকের থেকে মুক্তি পাওয়া অত সহজ ছিল না। আশা করা যেতে পারে কণাবাদী বলবিদ্যায় যে হ্রাস-বৃদ্ধি অন্তর্নিহিত রয়েছে সেটা একটা অতি বৃহৎ মহাজাগতিক ধ্রুবক দান করবে। তবুও আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি মহাবিশ্বের প্রসারণ কিভাবে কালের সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং এইভাবে আমরা নির্ধারণ করতে পারি মহাজাগতিক ধ্রুবক খুবই ক্ষুদ্র। এ পর্যন্ত পর্যবেক্ষিত মূল্যাঙ্ক কেন এত ক্ষুদ্র তার কোন ভাল ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে শিশু মহাবিশ্বসমূহের আমাদের কাছ থেকে শাখায়িত হওয়া এবং আমাদের সঙ্গে আবার যোগদান করা মহাজাগতিক ধ্রুবকের বিভিন্ন সম্ভাব্য মূল্যাঙ্ক হবে। তবে প্রায় শূন্য মূল্যাঙ্কই হবে সবচাইতে বেশি সম্ভাব্য। এটা ভাগ্যের কথা, কারণ, যদি মহাজাগতিক ধ্রুবকের মূল্যাঙ্ক অত্যন্ত ক্ষুদ্র হয়, শুধুমাত্র তাহলেই মহাবিশ্ব আমাদের মতো জীবের বাসযোগ্য হবে।

সংক্ষিপ্তসার : মনে হয় কণিকাগুলো কৃষ্ণগহ্বরে পতিত হতে পারে এবং উবে গিয়ে মহাবিশ্বের আমাদের অঞ্চল থেকে অদৃশ্য হতে পারে। কণিকাগুলো শিশু মহাবিশ্বে গমন করে, সেই শিশু মহাবিশ্বগুলো আমাদের মহাবিশ্ব থেকে শাখায়িত হয়। তারপর এই শিশু মহাবিশ্বগুলো অন্য কোথাও যুক্ত হতে পারে। এগুলো মহাকাশ ভ্রমণের পক্ষে খুব ভাল হতে পারে। কিন্তু সেগুলোর অস্তিত্বের অর্থ : আমরা যা আশা করেছিলাম, আমরা তার থেকেও কম ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারব, এমনকি যদি আমরা সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব আবিষ্কার করতে পারি তাহলেও। অন্যদিকে আমরা মহাজাগতিক ধ্রুবকের মতো কিছু পরিমাণে মাপিত মূল্যাঙ্কের ব্যাখ্যা দিতে সমর্থ হতে পারি। গত কয়েক বছর বহুলোক শিশু মহাবিশ্ব নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করেছেন। আমার মনে হয় না স্থানে ভ্রমণের একটা পদ্ধতি হিসেবে এর পেটেন্ট নিয়ে কেউ বিরাট অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। কিন্তু গবেষণার জগতে এই বিষয়ে খুবই উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *