৪. পরিচিত লাগছে জায়গাটা

১৬.

“পরিচিত লাগছে নাকি জায়গাটা?” প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞেস করলাম।

মাথা দুলিয়ে না করে দিলো সে।

এই ব্যাপারে আমার সন্দেহ ছিল, কিম বেলস তার বিশ বছর আগের ঠিকানাতে এখনও থাকবে কি না। কিন্তু বলা তো যায় না।

আমরা গাড়ি থেকে নামলাম। রেডকে বললামম গাড়িটা দুই ব্লক দূরে পার্ক করে রাখতে। সে গাড়ি নিয়ে চুপচাপ চলে গেল। আমরা পাথর দিয়ে বাঁধানো সিঁড়িটা বেয়ে ওপরে উঠতে লাগলাম। আমি সবার সামনে, মাঝখানে ডিটেক্টিভ রে আর একদম পেছনে কনর সুলিভান।

“আপনার কি আসলেও মনে হয় সে জেসির খুনের ঘটনার সাথে কোনভাবে জড়িত? প্রেসিডেন্ট জিজ্ঞেস করলো আমাকে। “সে তার নিজের মেয়েকে খুন করবে?”

জবাবে শুধু কাঁধ ঝাঁকালাম আমি। “দেখা যাক।”

কলিংবেলে চাপ দিলাম।

এক মিনিট হয়ে গেল কিন্তু কোন সাড়াশব্দ পেলাম না।

আবার চাপ দিলাম।

ভেতরে আলো জ্বলে উঠলো। পায়ের আওয়াজ শুনলাম। একটু পরেই দরজাটা খুলে গেলে।

“কি চাই?” যে মহিলা দরজা খুলে দিল তাকে দেখেই চিনতে পারলাম। কিন্তু আগের ছবির সাথে খুব যে মিল আছে তা নয় কিন্তু। ইন্টারনেটের ছবিটার থেকে এখন প্রায় দ্বিগুণ মোটা সে। কিন্তু চোখজোড়া একই রকম বাদামি আছে। মেয়ের সাথেও চেহারায় মিল আছে তার।

জেসিকাকে খুন করার পক্ষে শারীরিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালি তিনি।

আমি রে’কে নিয়ে একপাশে সরে দাঁড়ালাম।

মহিলার চোখদুটো বড় হয়ে গেল। “কনর?!”

“কিম,” এটুকু বলেই মাথাটা কেবল একটু নাড়ল প্রেসিডেন্ট।

“আমরা কি ভেতরে আসতে পারি?” একবার আশেপাশে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি।

“আসুন, বাইরে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন?” এই বলে দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো সে। আমরা তার পেছন পেছন ভেতরে ঢুকলাম।

লিভিং রুমে গিয়ে বসলাম সবাই।

আমি আমার পরিচয় দিলে আস্তে করে আমার সাথে একবার হাত মেলালেন তিনি। রে তার পুলিশের ব্যাজটা দেখাল। লক্ষ্য করলাম, সাথে সাথে মহিলা জমে গেলেন।

“তো, কি ব্যাপারে এখানে এসেছেন আপনারা?” মহিলা জিজ্ঞেস করলেন কিন্তু জোর নেই তার গলায়।

“জেসির ব্যাপারে কথা বলতে,” প্রেসিডেন্ট উত্তর দিলো। সাথে সাথে যেন মনে হল ঘরের পরিবেশটা আরো গুমোট হয়ে গেল যেন।

“জেসি?”

আমি তার চেহারা দেখে বোঝার চেষ্টা করলাম, তার মনে কি চলছে। মনে হচ্ছে তার শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। ঘনঘন চোখের পাতা পড়ছে আর ঠোঁটটা একবার ভিজিয়ে নিলেন। হয়ত অপরাধবোধ থেকে এমন হচ্ছে তার। কিংবা বলা যায় না, বদহজমও হতে পারে।

“আজ প্রায় আট বছর ধরে তার সাথে কোন যোগাযোগ নেই আমার, চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো বললেন মহিলা।

আমরা তিনজন মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম।

সুলিভানকে দেখে মনে হল না সে বিশ্বাস করেছে এ কথা। “ফালতু কথা,”বলল সে।

মহিলা কোন জবাব দিলেন না।

সুলিভানকে দেখে মনে হল তার মাথায় রক্ত উঠে গেছে। এই মহিলাই তাকে এরকম একটা গ্যাঁড়াকলের মধ্যে ফেলে দিয়েছে, এই মহিলার জন্যেই আজ তার এই অবস্থা। তার রাগ করাটাই স্বাভাবিক। মনে হচ্ছে যেকোন মুহূর্তে মহিলার উপর চড়াও হবে সে। আর আমি বাধা না দিলে হয়ত সেটা করেও বসবে।

এমন একটা কাজ কিভাবে করলে তুমি নিজের মেয়েকে খুন করার আগে একবারও হাত কাঁপলো না তোমার?” চিৎকার করে মহিলাকে বলল প্রেসিডেন্ট।

“খুন? কাকে? জেসিকে?”

“তুমিই জেসিকে খুন করেছ আর আমাকে ফাঁসিয়েছ এই মামলায়।”

কিম একবার আমার দিকে তাকালেন আরেকবার রের দিকে, “জেসি…জেসি মারা গেছে?”

এবার সুলিভান আমার দিকে তাকালো। তারপর আবার মহিলার দিকে তাকিয়ে বলল, “তার মানে তুমি বলতে চাও, তুমি জেসিকে খুন করোনি?”

“না! আমি জানতামও না…আর আমি কিভাবে খুন করব ওকে? যদিও মানুষ হিসেবে খুবই খারাপ ছিল মেয়েটা। মাথায় ছিট ছিল। কিন্তু হাজার হলেও তো ওর মা আমি। ও আসলেও মারা গেছে? ওহ…কখন? কিভাবে?”

আমি জানতাম খুনটা এই মহিলা করেননি কিন্তু এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল, তিনি এটাও জানেন না তার মেয়ে মারা গেছে।

“আপনি আসলেও জানেন না, সে মারা গেছে?” জিজ্ঞেস করলাম তাকে।

“না।”

“সত্যি? গত বিশ মিনিটের মধ্যে এই প্রথম রে কথা বলল। “প্রেসিডেন্টের গ্রেফতারের ব্যাপারে কিছু জানেন আপনি?”

“হ্যাঁ, এরকম কিছু একটা শুনেছিলাম,” এই বলে সুলিভানের দিকে তাকালেন তিনি একবার। “কিন্তু বিশ্বাস করতে চাইনি কথাটা। পেপারে এ নিয়ে একটা আর্টিকেলও পড়া শুরু করেছিলাম, কিন্তু পুরোটা পড়ে শেষ করতে পারিনি।”

তার চোখের দিকে একবার তাকালাম। বুঝতে পারলাম, এখনও সুলিভানকে মনেপ্রানে ভালোবাসেন মহিলা।

“কিন্তু সোল বছর বয়সের পরে অন্তত একবার আপনার সাথে দেখা হয়েছিল জেসির?” জিজ্ঞেস করলাম আমি।

“হ্যাঁ, শুধু একবার,” স্বীকার করলেন তিনি। “দু-বছর আগে একবার এসে জিজ্ঞেস করে, আমার কাছে কোন টাকা পয়সা আছে কিনা। অন্য কোন কথা না, এতদিন পরে দেখা হল এটা নিয়ে কোন বিকার দেখলাম না। শুধু টাকার কথাই জিজ্ঞেস করেছিল।”

“দিয়েছিলেন নাকি টাকা?”

মাথা নেড়ে না করে দিলেন মহিলা। “না। ঐ মেয়েটার জন্য আমার জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। বার বছর বয়সেই মাদকের পাল্লায় পড়ে, আর তের বছর বয়সে ছেলেদের সাথে বিছানায় যাওয়া শুরু করে। ওর জন্য আমার বিয়েটাও ভেঙে যায়। কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালি আমি ওর পেছনে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে। আমার বাসাটা পর্যন্ত মর্টগেজ রাখতে হয়। ঐ মিথ্যোবাদি হারামিটাকে আমি আর একটা পয়সাও দেইনি। ও যেদিন বাসা ছেড়ে পালিয়েছিল, হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম আমি।”

“তাহলে হারানো বিজ্ঞপ্তির তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেননি কেন?”

“কখনও মাথায় আসেনি এটা।”

“তুমি অন্তত আমাকে বলতে পারতে,” সুলিভান বলল তাকে।

“কি বলব?”

“জেসি আমার মেয়ে ছিল।”

“তোমার মেয়ে?!”

“হ্যাঁ।”

“জেসি তোমার মেয়ে হতে যাবে কেন?”

“ও আমাকে যে ডিএনএ টেস্টের রেজাল্ট দেখিয়েছিল ওটাতে তো সেরকমই উল্লেখ ছিল।”

জবাবে কিম নাক দিয়ে ঘোৎ করে একটা শব্দ করলেন। “জেসি একটা চরম মিথ্যেবাদি মেয়ে ছিল। চরম মিথ্যেবাদি। মাত্র সাত বছর বয়স থেকে কম্পিউটারে তার নিজের রিপোর্ট কার্ড নকল করা শুরু করে। একদম হুবহু নকল করত সে। এমনকি ওর স্কুলের টিচাররাও কোন খুঁত বের করতে পারেনি। এগার বছর বয়সে একটা ষাট হাজার ডলারের চেক জাল করে সে। আর স্কুলের সবার জন্যে নকল আইডি কার্ড করে দিত।”

এবার বোঝা গেল তার নকল পরিচয়ের রহস্য।

“কিন্তু যে কোম্পানি টেস্টটা করেছিল তাদেরকেও কল করেছিলাম আমি। যদিও আমাকে তারা খুব বেশি তথ্য দিতে পারেনি, তবে এটুকু জেনেছিলাম, তাদের ফাইলে জেসি ক্যালোমেটিক্স নামে একটা মেয়ের নাম আছে।”

“ওটা বোধহয় এজন্যে ছিল, জেসি একবার আসলেও পরীক্ষা করে দেখেছিল তার আসল বাবা কে। পল নাকি তুমি।”

“তাহলে পলই ওর বাবা?”

“হ্যাঁ।”

“ও! “

সুলিভানের রাগ করার পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। কারণ জেসি তার নিজের মেয়ে এই তথ্যের ভিত্তিতেই সে তাকে প্রায় তিরিশ লাখ ডলার দিয়েছে।

তবে তার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছিল একটা ব্যাপারে তার বুক থেকে পাথর নেমে গেছে। রিকির ব্যাপারটা। আসলে তার ছেলে আর সৎ মেয়ের মধ্যে কোন সম্পর্ক ছিল না, কারণ জেসি আসলে তার মেয়েই নয়।

“এজন্যেই সে আপনাকে ছবিটা পাঠায়,” আমি প্রেসিডেন্টকে বললাম। “কারণ এই বার যদি সে আবার বলত আপনিই তার বাবা তাহলে হয়ত আপনি আরো ভালো করে যাচাই করে দেখতেন ব্যাপারটা। তাই আপনার ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ায় সে। সে জানতো তাহলে আপনি মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হবেন।”

“তোমার ছেলের সাথে ওর সম্পর্ক ছিল?” কিম জিজ্ঞেস করলেন।

পরের দশ মিনিটে সুলিভান তাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলল। কিভাবে জেসির সাথে প্রথম দেখা হয় তার, কিভাবে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করে। কিভাবে তাকে বাসায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

আমার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালাম একবার। তিনটা পঞ্চাশ বাজে।

আর দশ মিনিট।

সুলিভান আমার দিকে তাকালো, “তাহলে আরেকটা কানাগলিতে এসে পড়লাম আমরা?”

বাইরের রাস্তায় এই সময় একটা হেডলাইটের আলো জ্বলে উঠলো।

উজ্জ্বল হতে হতে বাসার সামনে এসে নিভে গেল ওটা।

আমি ঠোঁটে আঙুল দিয়ে সবাইকে চুপ করতে বললাম।

দশ সেকেন্ড পরে কেউ একজন দরজায় নক করল।

“বিনস,” একটা কণ্ঠ ভেসে আসলো। বিনস, আমি এসে গেছি। দরজা খোল।”

আমি আস্তে করে দরজাটা খুলে দিলাম।

*

১৭.

পল ক্যালোমেটিক্সের পরনে সেই একই পোশাক যে পোশাকে আমি তাকে প্রথম দেখেছিলাম। তার কপাল কুঁচকে আছে দুশ্চিন্তায়। আর ফ্রেঞ্চ-কাট দাড়িটা এখনও সুন্দরভাবে ছাটা। মুখ অবশ্য হা-হয়ে আছে তার এখন।

“কি খবর, পল?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“কি তামাশা শুরু করেছ তুমি এখানে, বিনস?” জিজ্ঞেস করল সে উত্তর না দিয়ে। এরপর একবার তার প্রাক্তন স্ত্রী, তার ডিটেক্টিভ পার্টনার আর প্রেসিডেন্টের ওপর নজর বুলিয়ে শেষে আমার দিকে দৃষ্টি নিবন্ধন করল সে।

“কিম? রে? এসব কী হচ্ছে এখানে?”

“তুমিই আমাকে বল, ক্যাল। জেসির ব্যাপারে কিছু জানাওনি কেন তুমি আমাকে?” রে জিজ্ঞেস করল চড়া সুরে।

প্রেসিডেন্ট যখন তার বিয়ের নিবন্ধন উল্টাপাল্টা হওয়ার ঘটনাটা শোনাচ্ছিলো আমাদের তখন একবার পল ক্যালোমেটিক্স নামটা বলেছিলো। এরপরই রে পুরো চুপ মেরে যায়। আমি তখনই বুঝেছিলাম, সে ধাঁধার টুকরোগুলো এক করার চেষ্টা করছে।

ক্যাল? তার পার্টনার, একজন খুনি?

ক্যাল একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের দিকে তাকালো। দৌড় দেয়ার কথা চিন্তা করলো হয়তো। কিন্তু কী মনে করে দিল না। একবার শয়তানি একটা হাসি দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে এলো শুধু।

“আমার পেছনে যাদের লাগিয়ে রেখেছিলে তুমি, তারা কি এখনও হাসপাতালে?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“আমি জানি না তুমি এসব কী বলছ।”

“আলবৎ জানো। দু-জন অফ-ডিউটি পুলিশ অফিসারকে তুমি আমার উপর নজর রাখার জন্যে লাগিয়ে রেখেছিলে। যাতে করে আমি তোমার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে না পারি।” কিন্তু এটা ক্যালের জানা ছিলো না, কিম ঠিকানা বদলে এখন এই বাসাটায় থাকে। না-হলে গাধার মত এখানে এসে ধরা দিত না সে।

“আমি এখনও জানি না তুমি এসব কী বলছ।”

“তুমি দেরি করে ফেলেছ আসতে,” আমি ক্যালকে এই ঠিকানাটা মেসেজ করি রে’র গাড়ির জানালায় টোকা মারার আগে। তাকে বলি তিনটা পঁয়তাল্লিশে সময় আমার সাথে এখানে দেখা করতে। একা।

“তুমি এটা কেন করেছ, ক্যাল?” রে জিজ্ঞেস করল।

“কি করেছি?”

“মেয়েটাকে মেরেছ কেন?”

“ছি! তুমিও এই পাগলটার কথা বিশ্বাস করে বসে আছো? আমি জানতামই না ওটা জেসি, যতক্ষন না প্রেসিডেন্টের সাথে ওর ছবিটা দেখি আমি। আর জেনেও বা কী লাভ হত? উনি তো মেরেই ফেলেছেন মেয়েটাকে,” প্রেসিডেন্টের দিকে ইশারা করলো সে।

“আপনি যদি না বলেন তবে আমিই সবাইকে বলতে বাধ্য হব, কি ঘটেছিল ঐ রাতে,”বললাম তাকে।

“আমি মেয়েটার কোন ক্ষতি করিনি।”

একটা জিনিস খেয়াল করলাম, ক্যাল মেয়েটা বলছে বারবার, যেন ওর নিজের মেয়ে নয়।

ঘড়ির দিকে একবার তাকাল। তিনটা চুয়ান্ন। আর ছয় মিনিট।

“জেসি যে আপনার বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগ এনেছিল তারপর কি হয়েছিল?” বোমাটা ফাটালাম এবার।

ইন্টারনেটে এই খবরটা পেয়েছিলাম আমি। জেসি ক্যালোমেটিক্স লিখে গুগলে যখন সার্চ দেই তখন এক কোণে ভেসে ওঠে খবরটা। বারো বছর বয়সে জেসি তার বাবা, তকালীন মেরিল্যান্ড পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য পল ক্যালোমেটিক্সের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনে। যদিও পরে বেকসুর খালাস পেয়ে যায় সে। তবুও তখন বেশ বড়সড় খবর হয়েছিল এটা।

“আর কি কি মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল মেয়েটা আপনার বিরুদ্ধে?”

ক্যালের চেহারাটা লাল হয়ে যাচ্ছে।

“আপনার কষ্টার্জিত কত টাকা তার পেছনে নষ্ট করেছিলেন? তার মাদকাসক্তি দূর করার জন্য?”

“আমি দুঃখিত।”

প্রেসিডেন্টের দিকে তাকালো ক্যাল।

“আমি দুঃখিত,” আবার বললো সুলিভান।

ক্যাল নাক দিয়ে শুধু আওয়াজ করল একবার। এরপরই সব বাধ ভেঙে পড়ল তার।

“সব তোর দোষ!” প্রেসিডেন্টের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো সে। দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে এখন। “তুই যদি কিমের সাথে না শুতি তাহলে আর এই দিনটা দেখতে হত না আমাকে। ঐ কুত্তি মেয়েটার জন্য আমার জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেছে।” ক্যালের মুখ থেকে লালা ঝরতে লাগলো কথা বলার সময়। “সুযোগ পেলে আবার ওর গলাটা টিপে ধরতাম আমি,” বলে এমাথা থেকে ওমাথা পায়চারি শুরু করল সে।

আমরা চারজন কোন শব্দ না করে চুপচাপ শুনতে লাগলাম।

“তোমরা কি জানো, জেসি-কুত্তিটা আমাকে কি বলে শাসিয়েছিল ওর চৌদ্দতম জন্মদিনের পর? ও আমাকে বলেছিল, ওর ষোলতম জন্মদিনে আমি যদি ওকে ওর পছন্দের গাড়িটা কিনে না দেই তাহলে ও আবার সবাইকে বলে বেড়াবে আমি নিয়মিত ওকে ধর্ষণ করি। ওর জন্যে আমাকে পুলিশের চাকরি থেকে লাথি মেরে বের করে দেয়া হয়। কেউই একথা বিশ্বাস করেনি, আমি ওকে কখনও ছুঁয়েও দেখিনি। এমনকি আদালতে যখন আমি নির্দোষ প্রমাণিত হলাম তারপরও না। আর আমার স্ত্রী-” এই বলে কিমকে দেখাল সে। “আমার স্ত্রী ভেবেছিল আমি একজন অসুস্থ মানসিকতার লোক, যে কিনা তার নিজের মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয় সে।

“এরপর দু-মাস আগে একটা স্ট্রিপ ক্লাব থেকে কল আসে আমার কাছে। নেশায় চুড় হয়ে এক মেয়ে অন্য এক কাস্টমারের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করছে। গিয়ে দেখি, আমার নিজের মেয়ে। আমি তাকে বাসায় পৌঁছে দেই। ঐ মাতাল অবস্থাতেই সে আমাকে বলে, তার আসল বাবা কে। ও নাকি আসলে আমার মেয়ে-ই না। ওর আসল বাবার চুল নাকি ও ফ্রিজে রেখে দিয়েছে প্রমাণ হিসেবে। ও ঘুমিয়ে পড়ার পর আমি ওর বাসায় সব কিছু খুঁজে দেখি। কম্পিউটারে দেখি একটা ইমেইল ওপেন হয়ে আছে। প্রেসিডেন্টকে পাঠানো একটা ইমেইল। সেখানে লেখা, প্রেসিডেন্ট নাকি তাকে দু-দিনের মধ্যে বিশ লাখ ডলার পৌঁছে দিয়ে যাবে তাকে।

“আসলে তা-ও ওকে মারার ইচ্ছে ছিল না আমার। আমি শুধু টাকাটা নিয়ে চলে যেতাম। কিন্তু ওর হাতে প্রেসিডেন্টের ফোনটা দেখে তাকে ফাঁসানোর লোভটা সামলাতে পারিনি। ওকে গ্যারেজে টেনে নিয়ে গিয়ে গলা টিপে হত্যা করি আগে, এরপর প্রেসিডেন্টের ফোনটা গাড়ির নিচে ফেলে দিয়ে ফ্রিজ থেকে তার চুলগুলো নিয়ে বিছানার উপর ছড়িয়ে দেই। জেসির ফোনটা দুই ব্লক দূরে ডাস্টবিনে ফেলে দেই কাজ শেষে।”

“তাহলে তুমিই এফবিআইকে জানিয়েছিলে সবকিছু?” রে জিজ্ঞেস করল।

“আমাদের ক্যাপ্টেন তো শালার একটা হিজড়া!”

“কিন্তু তুমিই তো পরে বলছিলে, তুমি নিশ্চিত সুলিভান খুনটা করেনি?”

“তো, আর কী বলতাম আমি, ইনগ্রিড? উল্টাপাল্টা কিছু বলে ফাঁসবো নাকি?”

“ও তোমারই ছিল,” কিম বলল।

ক্যাল তার প্রাক্তন স্ত্রীর দিকে তাকালো।

“জেসি আসলে তোমারই মেয়ে ছিল। ও অনবরত মিথ্যে কথা বলে গেছে আর তুমি সেটা বিশ্বাস করেছ। ও যখন বাচ্চা ছিল তখন আমি নিজেই একবার ওর ডিএনএ পরীক্ষা করিয়েছিলাম।”

ক্যালের মুখ মুহূর্তের মধ্যে ফ্যাকাসে হয়ে গেল। দেখে মনে হল, পড়ে যাবে এখনই।

আমি তাকে ধরার জন্য সামনে এগিয়ে গেলাম।

“না-না-না!” পাগলের মত চিৎকার করে উঠলো সে।

আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার পেছনে চলে এলো। পাঁজরে পিস্তলের নলের অস্তিত্ব টের পেলাম।

“ঐ কোণায় গিয়ে দাঁড়াও সবাই,” অন্য তিনজনের উদ্দেশ্যে বলল এবার।

“শান্ত হও, ক্যাল,” এই বলে রে আস্তে আস্তে হাত তার নিজের পিস্তলের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।

“ও-কথা মাথায়ও এনো না।”

রে’র হাত থেমে গেল যেখানে ছিল সেখানেই।

“দেখ, এরকম করে কোন লাভ নেই এখন,” আমি বলার চেষ্টা করলাম।

এখন বাজে তিনটা আটান্ন।

আর দুই মিনিটের মধ্যে আমি ঘুমিয়ে পড়ে যাব আর ক্যাল ভাববে আমি কিছু করার জন্যে চালাকি করে নিচু হয়েছি। তারপর সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে দেবে সে।

“শালা, তুই যদি নিজের চরকায় তেল দিতি তাহলেই আর কিছু হতো না।”

“আমার ভাগ্যটাই খারাপ,” বললাম আমি। যদিও মনে হয় না এই মুহূর্তে তার মাথায় কিছু ঢুকবে। ও এখন পালানোর চিন্তায় ব্যস্ত। আমার কানের কাছে তার নিঃশ্বাস নেয়ার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।

বিশ সেকেন্ড পার হল।

তিরিশ।

তিনটা উনষাট।

কিছু একটা করতে হবে। এখনই!

অদ্ভুত একটা কাজ করলাম এরপর। হাতটা উপরে উঠিয়ে ভিক্টরি সাইন দেখালাম। আশা করি, অন্তত ক্যাল এটাই ভেবে নেবে।

“নড়তে না করেছি না?” চেঁচিয়ে উঠলো ক্যাল।

আমি আবার সাইনটা দেখালাম দুই আঙুলে।

দুই।

এরপর একটা আঙুল গুটিয়ে নিলাম।

এক।

এরপর বাকি আঙুলটাও গুটিয়ে নিলাম।

এখনই!

তাড়াতাড়ি মাথাটা একপাশে সরিয়ে নিতে না নিতেই জোরে কাঁচ ভাঙার আওয়াজ পেলাম।

ক্যালের দিকে ঘুরে তাকিয়ে দেখি, তার কপালের মাঝ বরাবর একটা গুলির ছিদ্র।

ঘুমিয়ে পড়ার আগ মুহূর্তে রেডকে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকতে দেখলাম।

ওর হাতে একটা স্নাইপার রাইফেল।

*

‘প্রেসিডেন্ট নির্দোষ!’

সুলিভান খুনি নন!’

‘পুলিশ অফিসার ফাঁসিয়েছিল প্রেসিডেন্টকে!’

‘ইনোসেন্ট-গেট!’

পরের দিনের হেডলাইন ছিল এগুলোই।

এফবিআই আমাদের সবার জবানবন্দি নিয়েছিল পরে। যদিও আমারটা ফোনেই সারা হয়েছিল। ঘটনার মূল প্রমাণ ছিল ক্যালের সবকিছু স্বীকার করে নেয়ার একটা অডিও-রেকর্ডিং। প্রেসিডেন্টের শার্টের সাথে লাগানো ছিল মাইক্রোফোনটা, আর বাইরে থেকে রেড শুনতে পাচ্ছিল সব ওটার মাধ্যমে।

আমি রেডের বন্দুকের স্কোপের একটা ঝিলিক দেখতে পাই বাইরে, তাই সেই দুঃসাহসটা দেখাই শেষ মুহূর্তে। ভাগ্যিস ক্যাল সেটা দেখেনি।

পরের ঘুম ভেঙে দেখি আমি আমার বিছানায়। প্রেসিডেন্ট নাকি নিজে আমাকে তিনতলায় দিয়ে গেছে ঘুমন্ত অবস্থায়। আমার বিছানার পাশের টেবিলটায় একটা কার্ড দেখতে পাই ঘুম থেকে জেগে উঠে। এই কার্ডটা দিয়ে দেশে যেকোন কিছু করা যাবে। কিন্তু মাত্র একবার।

সেটাও প্রায় চার রাত আগের কথা।

“কিরে, কী করব আমরা এই কার্ডটা দিয়ে?” ল্যাসিকে জিজ্ঞেস করলাম।

মিয়াও।

“না, তাজমহল অনেক দূরে।”

মিয়াও।

“জাস্টিন টিম্বারলেকের সাথে তোর ব্যাপারটা কি রে?”

মিয়াও।

“এক বস্তা ইঁদুর? হ্যাঁ, এবার একটু লাইনে এসেছিস!”

মিয়াও।

“জেটপ্যাক? হ্যাঁ, এটাও করা যায়!”

মিয়াও।

“নাহ। আমার মনে হয় না, অ্যাঞ্জেলিনা জোলির জামাইর কাছ থেকে অনুমতি পাব আমরা!”

মিয়াও।

“বিশটা মারডকের ক্লোন? আসলেই?!”

এভাবে চলতে থাকলে ব্যাটা সারাজীবনই তর্ক চালিয়ে যাবে। তা না হলেও অন্তত আজকের বাকি সাতচল্লিশ মিনিট তো চলেই যাবে! যেতও, যদি না নাইট ড্রেস পরা এক সুন্দরি মেয়ে ঠিক ঐ মুহূর্তেই হাতে দুটো কর্ন ফ্লেকসের বাটি নিয়ে বিছানায় এসে না উঠতো!

“আজকে বিছানাতেই হবে সবকিছু,” এই বলে আমার পাশে উঠে পড়ল রে। চামচ দিয়ে আমাকে কর্ন ফ্লেকস খাইয়ে দিতে দিতে বলল, “জাস্টিন টিম্বারলেকের কনসার্ট দেখার প্ল্যানটা কিন্তু খারাপ না!”

“আসলেও খারাপ না,” হেসে বললাম।

তিনটা পঞ্চান্নর সময় হাঁপাতে হাঁপাতে আমার দিকে তাকালো রে, “আবার একবার হবে নাকি এই পাঁচ মিনিটে?”

“দেখাই যাক না, কতটুকু হয়!” বলে আবার জড়িয়ে ধরলাম ওকে।

1 Comment
Collapse Comments

অসাধারণ ছিল গল্পটা।
এরকম বই পড়ে আনন্দিত।
আপনাদের অনেকে ধন্যবাদ। এত কষ্ট করে আমাদের বই উপহার দেওয়ার জন্যে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *