২. হাজতে

৬.

আমি এক রকম নিশ্চিতই ছিলাম এবার আমি ঘুম ভেঙে গেলে নিজেকে আবিষ্কার করবো হাজতে। সে নিয়ে অনেক দুঃস্বপ্নও দেখেছি রাতভর। কিন্তু না, আমি এখনো নিজের ঘরেই আছি।

তিনটা পঁচিশ মিনিটেও যখন কেউ আমার দরজায় নক করলো না, তখন আমার মাথায় তিনটা সম্ভাবনা উঁকি দিল। এক, আঙুলের ছাপ মেলাতে অন্তত চব্বিশ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। দুই, আমি কোন প্রকার ছাপই ফেলে আসিনি ঐ বাসায় (কারন বেশিরভাগ সময়ই আমি শার্টের হাতার ভেতরে হাত গুটিয়ে রেখেছিলাম)। আর না-হলে তিন, প্রেসিডেন্টের আঙুলের ছাপের সাথে তারা মিল খুঁজে পেয়েছে আর এখন প্রধান সন্দেহভাজনও সে।

কিন্তু ইন্টারনেট খুলে দেখলাম এই মুহূর্তে একটা কনফারেন্সে ব্যস্ত সে। কোন ধরণের খুনের মামলায় তাকে আসামি করা হয়নি।

তার মানে এক নম্বর কিংবা দুই নম্বর ধারণার কোন একটা সঠিক।

“চল্, একটু দৌড়ে আসা যাক, কি বলিস?”

মিয়াও।

ল্যাসি প্রায় এক মাইল আমার সাথে সাথে দৌড়াল। তারপর কোথায় জানি উধাও হয়ে গেল। আমি একটু আস্তে ধীরে দৌড়ানো শুরু করেছি ঠিক এমন সময় কালো রঙের একটা গাড়ি আমার দশ ফিট সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল। একটা ক্রাউন ভিক। কনর সুলিভানের ফোর্ড ফোকাসটার পর এটা আমার দেখা প্রথম গাড়ি।

আমি কান থেকে হেডফোন খুলে দাঁড়িয়ে গেলাম।

গাড়ির প্যাসেঞ্জার সিট থেকে রে নেমে আমাকে বলল, “আপনাকে একটু আমাদের সাথে আসতে হবে।”

ক্যাল ড্রাইভিং সিট থেকে নেমে পেছনের দরজাটা খুলে ধরল, “এখনই!”

আমি চুপচাপ পেছনের সিটে উঠে পড়লাম।

ওরা দুজনেই উঠে পড়লে গাড়িটা চলতে শুরু করল আবার।

এখন বাজে তিনটা তেত্রিশ।

*

“আপনি কি কখনো আপনার বাসার উল্টো দিকের বাড়িটার ভেতরে ঢুকেছিলেন?”

আমি ক্যালের মুখোমুখি বসে আছি। রে একটা দেয়ালে হেলান দিয়ে আছে।

“না, আমার মনে হল ওরা আমাকে বাজিয়ে দেখতে চাইছে। কারণ ওরা যদি আমার হাতের ছাপ পেত তাহলে সরাসরি গ্রেফতারই করত। এরকম একটা রুমে বসে জেরা করত না। তা-ও হাতকড়া না পরিয়ে।

“তার মানে আপনি কখনও ভেতরে ঢোকেননি?”

“কখনও না।”

“একবারও না।”

“না।”

“আপনাকে কেউ একবারের জন্যে ভেতরে দাওয়াতও দেয়নি কিংবা ঐ বাসার ফ্রিজে আপনি কখনও হাতও দেননি?”

আমার পেটের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। “না, কখনও না।”

“কয়টা বাজে এখন?” আমি জিজ্ঞেস করলাম। এই রুমের ভেতরে ফোন নিয়ে ঢোকার অনুমতি নেই।

একটু আগে এক মহিলা আমার ফোনটা জমা রেখে দিয়েছে। ফেরত দিয়ে দেবে অবশ্য। ফোনের ঘড়িতে তখন বাজছিল তিনটা তেতাল্লিশ। এটা প্রায় পাঁচ ছয় মিনিট আগের কথা।

এ সময় দরজাটা খুলে গেল। এক লোক এসে রের হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিল। ওরা আসলেই এতক্ষন আমাকে বাজিয়ে দেখছিল। রে তার কাগজটা ক্যালের দিকে বাড়িয়ে দিল। ওটা পড়ার পর কেমন যেন হাসি ফুটে উঠলো ক্যালের মুখে।

“বলো তো, ঐ বাসার সব জায়গায় কার হাতের ছাপ পাওয়া গেছে?” জিজ্ঞেস করল সে।

এবার শেষ আমি।

“গাড়িটার হুডের উপর, পেছনের টায়ারটায়, ফ্রিজের দরজায়, গেস্ট বেডরুমের আলমারির ভেতর আর কাঁচের দরজাটার হাতলে-কোথাও বাদ নেই দেখছি।”

“আমার হাতের ছাপ আপনারা কিভাবে পেলেন?”

“কি বলছিলাম এতক্ষণ, কানে ঢোকেনি? পুরো বাসাজুড়ে তোমার হাতের ছাপ পাওয়া গেছে।”

“হ্যাঁ, আমার কানে সবকিছুই ঢুকেছে ঠিকমত, কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি হাতের ছাপ যে মিলিয়ে দেখলেন আপনারা সেটা কিভাবে জোগাড় করলেন? আমি তো আগে কখনও গ্রেফতার হইনি। পুলিশের কাছে আমার সম্পর্কে কোন তথ্য থাকার কথা নয়,” রের দিকে তাকিয়ে বললাম। “আর যদি কোনভাবে এই ছাপ আপনারা গ্লাসটা থেকে পেয়ে থাকেন, যেটা বেআইনিভাবে আমার বাসা থেকে চুরি করেছেন গতকাল, তাহলে আদালতে সেই প্রমাণ কখনও টিকবে না।”

“জানি সেইটা আদালতে টিকবে না,” ক্যাল একটা হাসি দিল। কিন্তু আমরা তোমার হাতের ছাপ নিয়েছি তোমার ফোন থেকে, যেটা একটু আগেই তুমি জমা দিয়েছ। তখন কিন্তু একটা ফর্মও সাইন করেছিলে, তোমার উচিৎ ছিল সেটা ভালো করে পড়ে দেখার।”

ধুর!

“আমি আরেকবার ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করছি, আপনি কি কখনও ঐ বাড়ির ভেতরে গিয়েছিলেন?”

“হ্যাঁ।”

“তিনরাত আগে?”

“হ্যাঁ, কিন্তু মেয়েটা তিনরাত আগে খুন হয়নি, হয়েছে চার রাত আগে।”

“সেটা আপনি কিভাবে জানেন?”

“কারণ আমি তার চিৎকারটা শুনেছিলাম।”

*

“কনর সুলিভান?” কাল আবার জিজ্ঞেস করল। “মানে, প্রেসিডেন্ট কনর সুলিভান?।”

আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম।

সে রের দিকে তাকালো। রে-ও মাথা ঝাঁকাচ্ছে।

“কসম খেয়ে বলছি, ঐ রাতে আমি একটা চিৎকার শুনেছিলাম আর এরপরেই দেখি সামনের দরজাটা দিয়ে এক লোক বের হয়ে আসছে। ওটা যে কনর সুলিভানই ছিল সে-ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই।”

“আপনি বলতে চাইছেন, সে একটা ফোর্ড ফোকাস গাড়িতে চড়ে ভেগেছে?” রে হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করল। “তা, ওনার সিক্রেট সার্ভিস কোথায় ছিল তখন?”

“এটা গিয়ে উনাকেই জিজ্ঞেস করুন না।”

“তুমি মেয়েটাকে কেন খুন করেছ?” ক্যাল জিজ্ঞেস করল।

“কি?”

“তুমি-ক্যালি-ফ্রেইগকে-কেন-খুন-করেছ?!” চিবিয়ে চিবিয়ে আবার জিজ্ঞেস করল ক্যাল।

“আমি কাউকে খুন করিনি। মেয়েটাকে আমি আগে কখনও দেখিইনি, সেদিন ওর বাড়িতে ঢোকার আগ পর্যন্ত। সত্যি বলছি।”

“হ্যাঁ, সেটা তুমি আগেও কয়েকবার বলেছ। তখনও আমি তোমাকে বিশ্বাস করিনি, এখনো করছি না। তোমার জানালা দিয়ে ঐ বাড়িটা সরাসরি দেখা যায়। ওটা দিয়ে বাইরে তাকানোর সময় তুমি মেয়েটাকে কখনও দেখোনি এটা হতেই পারে না। আমার ধারণা ঐ জানালা দিয়ে দেখতে দেখতেই তুমি মেয়েটার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলে। আর ঐ রাতে সুযোগ বুঝে তুমি গলা টিপে তাকে মেরে ফেলেছ।”

“আমার হেনরি বিনস আছে।”

“আপনার নামই তো হেনরি বিনস,” রে বলল।

“হ্যাঁ, আর আমার হেনরি বিনস আছে। এটা একটা মেডিক্যাল কন্ডিশন। আমি দিনে এক ঘন্টা জেগে থাকি আর বাকি তেইশ ঘন্টা ঘুমাই। রাত তিনটা থেকে চারটা-এটুকুই আমার সময়।”

দু-জনেই মাথা নাড়তে লাগলো, যেন আমি পাগলের প্রলাপ বকছি।

“গুগল করে দেখুন না বিশ্বাস না-হলে,” আমি রে’কে বললাম। “তা না হলে চার মিনিট পরে হাতেনাতেই প্রমাণ পেয়ে যাবেন।”

“কি হবে চার মিনিট পরে, গাধার বাচ্চা?” ক্যাল চড়া গলায় জিজ্ঞেস করল।

“চার মিনিট পরে আমি এখানেই ঘুমিয়ে যাব। আর পরবর্তি তেইশ ঘন্টা ওভাবেই কাটাব। কোমার মত অনেকটা। এরপর আবার একঘন্টার জন্য জেগে উঠবো। এভাবেই চলতে থাকবে।”

ক্যাল ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো, যেন আমি এই মুহূর্তে শতাব্দির সেরা কৌতুকটা বললাম। “ব্যাটা বলে কী, ইনগ্রিড? এরকম গাঁজাখুরি গপ্পো আগে শুনেছ কখনও?” রে’কে বলল সে।

আমিও উঠে দাঁড়ালাম। “এজন্যেই আমার ছাপ ঐ গেস্ট বেডরুমটার আলমারিতে পেয়েছেন আপনারা। সেদিন মেয়েটার ফোন গাড়ির নিচ থেকে উদ্ধার করার পর আর বাসায় ফিরে যাওয়ার সময় ছিল না, তাই ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।”

“সেই ফোনটা, যেটা তুমি একটা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলে?”

“মানে?”

“মানে, তুমি ধরা পড়ে গেছ, গাধা। আমরা জিপিএস ট্র্যাক করে ফোনটা উদ্ধার করেছি।”

আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। দেয়ালটায় একটু হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম।

রে শেষ এক মিনিট ধরে চুপ মেরে আছে মোবাইলে কী যেন দেখছে সে। এবার বলে উঠলো, “ক্যাল, এটা দেখো। আমার মনে হয়, হেনরি বিনস আসলেই কোন–”

*

৭.

মাথাটা ব্যথায় দপদপ করছে।

চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ডানহাতটা উঠিয়ে মাথা ছুঁয়ে দেখি এক জায়গায় গজ কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজ করা। কিন্তু বামহাত দিয়ে আরো ভালোমত জায়গাটা ছুঁয়ে দেখতে গিয়ে দেখি, সেটা ওঠাতেই পারছি না। হাতকড়া দিয়ে বিছানার সাথে লাগিয়ে রাখা হয়েছে।

“এবার কি করেছ?” একটা পরিচিত কণ্ঠস্বর জিজ্ঞেস করল আমাকে। “চব্বিশ ঘন্টা খোলা থাকে এমন কোন ব্যাংকে ডাকাতি?”

সারা হচ্ছে আলেক্সান্দ্রিয়া জেনারেল হসপিটালের একজন নার্স আর আমার প্রাক্তন প্রেমিকাদের মধ্যে একজন।

আমাদের সম্পর্কটা শুরু হয় যখন আমি তৃতীয় বারের মত মাথায় ব্যথা পেয়ে এখানে ভর্তি হই। তার ডিউটির সময় ছিল সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত। এরপর সে আমার বাসায় চলে আসতো, আর আমি ঘুমিয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত সময়টা…থাক, এসব কথা আপনাদের জানার দরকার নেই, তাই না? কিন্তু আমার আগের চারটা সম্পর্কের মতনই সারার সাথে আমার সম্পর্কটাও টিকলো না, কারণ প্রতিদিন শুধু আধাঘন্টার জন্যে যাকে পাওয়া যায় তার সাথে থাকাটা আসলে কষ্টকর। কিন্তু সম্পর্কটা ভেঙে গেলেও আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বটা কিন্তু অটুট আছে।

“নাহ, ডাকাতি না। খুন।”

একটা হাসি দিল সারা। “আচ্ছা, ভালো খবর হচ্ছে মাথার চোটটা সেরকম গুরুতর কিছু না, কিন্তু তেরটা সেলাই লেগেছে, তাই বেশ অসুবিধে হবে।”

“এই নিয়ে তো তাহলে একশোর ওপর সেলাই হয়ে গেল আমার। এর পরে যদি কখনও সেলাই লাগে তাহলে সেগুলো ফ্রিতেই করে দেয়া উচিৎ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।”

“সে দেখা যাবে,” বলে আবার একটু হাসি দিল সে, যদিও সাথে সাথেই তার মুখ থেকে মুছে গেল সেই হাসি, যেন খারাপ কিছু একটা মনে পড়ে গেছে। “পুলিশ অফিসারদের জানাতে হবে, তুমি জেগে উঠেছে।”

আমি মাথা নাড়লাম।

আমার হাতে আলতো করে একটা চাপ দিয়ে সে বের হয়ে গেল ঘর থেকে।

রে আর ক্যাল আমার ঘরে এলো একটু পরই।

হাতকড়া পরানো হাতটা নেড়ে তাদের দেখালাম। “এটার মানে কি আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে?”

দু-জনেই মাথা নেড়ে সায় দিলো।

“সরাসরি কাজের কথা বলি-আপনারা এতক্ষনে নিশ্চয়ই হেনরি বিনস কন্ডিশনটার সম্পর্কে সব কিছুই জেনে গেছেন। আর এটাও দেখেছেন, আপনাদের সামনেই আমি ঘুমিয়ে টলে পড়ে গেছি, আমার মাথা ফেটে গেছে। এই হাসপাতালে এসে তো বুঝতেই পেরেছেন, জরুরি বিভাগে আমার ভর্তি হওয়াটা নতুন কিছু নয়।”

রে আবারো মাথা নেড়ে সায় দিলো।

“তারপরও এটা আপনারা বিশ্বাস করছেন, আমিই ক্যালি ফ্রেইগকে খুন করেছি? প্রতিদিন যে একঘন্টা সময় পাই, ঐ অতটুকু সময়ের মধ্যেই?”

“ঐ একঘণ্টার মধ্যেই কিন্তু আপনার পক্ষে মেয়েটাকে খুন করা সম্ভব। এই সম্ভাবনাটা কোনভাবেই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না, মি. বিনস। কারণ, এমন

যে, মেয়েটার বাড়ি আপনার নিজের বাড়ি থেকে খুব দূরে,” রে বলল। “তাছাড়া, মেয়েটার পুরো বাড়ি জুড়ে আপনার হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। আর আপনি এ পর্যন্ত যে কথাগুলো বলেছেন তার মধ্যে শুধু এই অদ্ভুত অসুখের ব্যাপারটা ছাড়া সবই মিথ্যে।”

আমার মনে চিন্তার ঝড় বইতে লাগলো।

“আমাকে একটা ফোনকল করতে হবে।”

“বাহ, এত তাড়াতাড়ি আইনজীবির সাথে যোগাযোগ করতে চাও?” ক্যালের গলা শুনে মনে হল, সে মজা পেয়েছে আমার কথাটা শুনে।

“আসলে আমি আমার বাবাকে কল করতে চাই। না-হলে তিনি অনেক দুশ্চিন্তা করবেন।”

রে তার নিজের মোবাইলটা আমার হাতে গুঁজে দিয়ে ক্যালকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।

বাবা যখন ফোনটা ওঠালেন, তার গলা শুনেই বোঝা গেল তিনি আসলেও দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলেন এতক্ষণ। আমার বাসায় তাস খেলতে এসে যখন দেখেন আমি নেই তখন আমার ফোনে কল করেছিলেন তিনি। সেটাও বন্ধ পাওয়াতে এরইমধ্যে হাসপাতালের দিকে রওনা হয়ে গেছেন।

“গাড়িটা ঘুরিয়ে আমার বাসায় ফিরে যান আবার।”

তিনি যখন আমার বাসায় পৌঁছালেন তখন তাকে বললাম কি করতে হবে।

ফোনটা কেটে দেয়ার আগে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, বাসার আশেপাশে কোন বিড়ালকে বসে থাকতে দেখেছেন কিনা।

না। কোন বিড়াল দেখা যায়নি।

*

বাবা যখন হাসপাতালে এসে পৌঁছালেন তখন একজন নার্স-সারা না, অন্য একজন-আমার মাথার ব্যান্ডেজ বদলায় দিচ্ছিল। বাবার পরনে একটা আর্মি জ্যাকেট আর প্যান্ট। গালে কয়েকদিনের শেভ না করা দাড়ি।

আমি তাকে ক্যাল আর রে’র সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। দু-জনেই এতক্ষণ আমার রুমে বসে উসখুস করছিল। আমি তাদের বলেছি বাবা এমন একটা প্রমাণ সাথে করে নিয়ে আসবেন, সেটা দিয়ে আমি প্রমাণ করতে পারব আমি নির্দোষ।

“এনেছেন জিনিসটা?” জিজ্ঞেস করলাম তাকে।

তিনি তার পকেট থেকে গোলাপি রঙের স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ফোরটা বের করে আমার হাতে দিলেন। চার্জ নেই বলে ফোনটা বন্ধ হয়ে গেছে।

“এটা আবার কি?” রে জানতে চাইলো।

“এটাই সেই ফোন যেটার কথা আমি বলেছিলাম। ঐ গাড়িটার নিচে খুঁজে পেয়েছিলাম। এবার প্রমাণ হল তো? আমি মিথ্যে কথা বলিনি।”

কিন্তু আমরা তো ক্যালি ফ্রেইগের ফোনটা এরমধ্যেই উদ্ধার করেছি, ক্যাল বলল।

“হতে পারে, তার দুটো ফোন ছিল,” রে শ্রাগ করে বলল।

আমি ফোনটা উঁচিয়ে ধরলাম, “এটার মালিক ক্যালি ফ্রেইগ না।”

“তাহলে এটা কার ফোন?” রে অবাক হয়ে জানতে চাইলো।

“প্রেসিডেন্টের।”

*

“প্রেসিডেন্ট?! মানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট” বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন।

“হ্যাঁ।”

ক্যাল হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়েই যাচ্ছিল প্রায়। এটাই তোমার প্রমাণ?” হাসির মাঝখানেই জিজ্ঞেস করল সে।

আমি ফোনটা রে’র হাতে দিয়ে বললাম, “এটা আসলেই তার ফোন।”

“প্রেসিডেন্টের কি নিজের কাছে মোবাইল রাখার অনুমতি আছে?” রে সন্দেহের সুরে জানতে চাইলো।

“অবশ্যই না,” জবাব দিল ক্যাল।

“হ্যাঁ, অনুমতি আছে।”

রে আর ক্যাল দু-জনেই ঘুরে আমার বাবার দিকে তাকালো।

“ওবামা এই সংশোধনিটা করেছিলেন। কারন তার নিজের ব্ল্যাকবেরি ফোনটা সবসময়ই নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিলেন তিনি।”

“আসলেই?” এবার আমি বললাম। এ-ব্যাপারে কোন ধারণাই ছিল না আমার।

“হ্যাঁ, তবে তারা কিছুটা মডিফাই করে দিয়েছিল ফোনটা নিরাপত্তার খাতিরে। তবে শেষ পর্যন্ত ওবামা তার ফোনটা নিজের কাছেই রাখার অনুমতি পেয়েছিলেন। আমাদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট কনর সুলিভানও তার মোবাইলফোন নিজের কাছে রাখেন, বাবা জানালেন আমাদেরকে।

“কিন্তু এটার রঙ তো গোলাপি! এটা কোনভাবেই প্রেসিডেন্টের ফোন হতে পারে না,” ক্যাল বলল।

“ফোনটার রঙ কিন্তু গোলাপি নয়, শুধু বাইরের কেসিংটা গোলাপি। আর এটা কোন সাধারন গোলাপি কেসিং না, একটু ভালোমত দেখুন,” আমি বললাম।

রে ফোনটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো। “হুম, এটার উল্টোদিকে একটা ফিতা আঁকানো। এটা একটা সুজান বি. কোমেন কেসিং।”

“ফাস্ট লেডি,” বাবা বললেন।

ফাস্ট লেডির দুই বছর আগে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল অসুখটা তখন। চিকিৎসার পর এখন সে কিছুটা সুস্থ।

ক্যাল একদম চুপ মেরে গেল।

রে নার্সদের ডাকার জন্যে যে বাটন আছে সেটা চাপ দিল। কিছুক্ষণ পর একজন নার্স ভেতরে ঢুকতেই রে তাকে জিজ্ঞেস করল, “এখানে কারো কাছে স্যামসাংয়ের চার্জার হবে?”

“দেখতে হবে,” এই বলে নার্স বের হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে এসে একটা চার্জার দিয়ে গেল সে।

রে সাথে সাথে ফোনটা চার্জে লাগিয়ে পাওয়ার বাটনটা চেপে দিল। প্রায় দশ সেকেন্ড পর স্ক্রিনটা জ্বলে উঠলো।

“এটা লক্ করা,” সবাইকে দেখিয়ে বলল রে।

“ওয়াশিংটন মনুমেন্ট,” আমার বাবা বলে উঠলেন।

“কি?” ক্যাল জিজ্ঞেস করল।

“স্ক্রিন সেভার হিসেবে যে ছবিটা দেয়া আছে সেটার পেছনে ওয়াশিংটন মনুমেন্ট দেখা যাচ্ছে।”

আমার বাসা থেকে মনুমেন্টটা মাত্র ছয় মাইল দূরে। আমি আশা করছি, জায়গাটা কনর সুলিভানের খুব প্রিয়।

বাবার দিকে তাকালাম, কিন্তু তিনি মাথা নাড়লেন। প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে অনেক কিছু জানলেও এই ব্যাপারটা তার জানা নেই।

“যদি লকই করা থাকে তাহলে আর কি বালটা হবে?” ক্যাল বলল। “এটা বরং হেডকোয়ার্টারে নিয়ে যাই, সেখানে আমাদের টেকনিশিয়ানরা খুলে ফেলতে পারবে লকটা। একমাত্র তখনই আমরা জানতে পারব, এটা প্রেসিডেন্টের ফোন নাকি অন্য কারোর।”

“কয়টা অক্ষর লাগবে এটা খুলতে?” বাবা জিজ্ঞেস করল।

“চারটা,” রে বলল জবাবে।

বাবা কী যেন একটা চিন্তা করলেন। “১৩ আর ৪৪ দিয়ে দেখুন তো,” অবশেষে বললেন তিনি।

রে নম্বরগুলো টিপে দিতে দিতে বাবা ব্যাখা করতে লাগলেন :

“১৩ নম্বর জার্সি পরে প্রেসিডেন্ট তার ভার্সিটি ফুটবল দলে খেলতেন। আর তিনি হচ্ছেন আমেরিকার চুয়াল্লিশতম প্রেসিডেন্ট।”

“না, কাজ করছে না,” মাথা নেড়ে বলল রে।

“নম্বরগুলো উল্টিয়ে দেখুন তো,” আমি বললাম তাকে।

“কি?”

“আগে ৪৪ এরপর ১৩।”

“চার-চার-এক-তিন,” রে জোরে জোরে বলতে লাগল নম্বরগুলো টেপার সময়। তারপরই মুখটা হা হয়ে গেল তার। হলি শিট!”

ক্যাল ছোঁ মেরে ফোনটা রে’র হাত থেকে নিয়ে নিল। স্ক্রিনের দিকে একবার দেখে চুপচাপ আবার ফোনটা রে’কে ফেরত দিয়ে দিল সে। রে আমাকে আর বাবাকে দু-জনকেই দেখাল স্ক্রিনে কি দেখা যাচ্ছে।

ওয়াশিংটন মনুমেন্টের জায়গায় এখন প্রেসিডেন্টের নিজের একটা ছবি ভেসে উঠেছে। তিনি তার বিখ্যাত ওভাল অফিসে বসে কাজ করছেন। ইন্টারনেটে এই ছবিটা লিক হয়ে গেলে মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।

রে কন্ট্যাক্ট লিস্টগুলো পড়তে লাগলো জোরে জোরে, “ভাইস প্রেসিডেন্ট, অর্থ সচিব, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, সিআইএ’র প্রধান-বাপরে। আর এই ছবিটা দেখো, প্রেসিডেন্টের একটা সেলফি। তার কুকুরেরও একটা ছবি আছে এখানে।”

এবার সে সরাসরি আমার দিকে তাকালো, “তার মানে আপনি সত্যি কথাই বলেছেন!”

আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম।

“এবার কি আমার হাতকড়াটা খুলবেন দয়া করে, যাতে আমি বাসায় যেতে পারি?”।

রের দিকে তাকিয়ে ক্যাল মাথা নেড়ে অনুমতি দিলে সে এসে হাতকড়াটা খুলে দিল।

‘কটা বাজে এখন?” জিজ্ঞেস করলাম আমি।

*

৮.

চোখ বোজা অবস্থাতেই বুঝতে পারলাম ল্যাসি আমার মুখটা চেটে দিচ্ছে।

কিন্তু চোখ খুলে দেখি ল্যাসি না। আমার বাবার একশ ষাট পাউন্ড ওজনের ব্রিটিশ কুকুরটা।

মারডক।

জানি কতক্ষন ধরে ব্যাটা আমার মুখ চেটে যাচ্ছে। শুধু তাই না, ব্যাটা মনে হয় এতক্ষণ আমার উপরই ঘুমিয়ে ছিল। কোমর থেকে নিচের অংশে কিছুই অনুভব করতে পারলাম না। মনে হচ্ছে যেন প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছি।

অক্ষত অবস্থাতে কি আর কোন দিন জেগে উঠতে পারবো না?

মারডককে সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। এরপর মাথার ব্যান্ডেজটা পাল্টে নতুন আরেকটা ব্যান্ডেজ লাগিয়ে যখন রান্নাঘরের টেবিলে গিয়ে বাবার পাশে বসলাম তখন বাজে তিনটা ছত্রিশ।

“এরকম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছ কেন তুমি?”

“আপনার গর্দভ কুকুরটা আমার পায়ের উপর ঘুমিয়ে ছিল।

মারডক এসে বাবার কোলে মাথা তুলে দিল। “না-না, তুই গর্দভ না,” বাবা ওটাকে আদর করতে করতে বললেন।

আসলেও ওটা গর্দভ না। কারন গর্দভ হতে হলে মাথায় একটু হলেও বুদ্ধি থাকতে হবে।

ফ্রিজটা খুলে দেখি ইসাবেল আবার নতুন করে স্যান্ডউইচ বানিয়ে রেখে গেছে। দুটো স্যান্ডউইচ আর একটা স্ট্রবেরি প্রোটিন শেক বের করে নিলাম। একটা টিনজাত মাছের ক্যান খুলে দরজার বাইরে রেখে দিলাম। বলা যায় না, যদি ল্যাসি ফিরে আসে।

স্যান্ডউইচগুলো খাওয়া শেষ করে ল্যাপটপের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম।

বাবা তাসগুলো গুছিয়ে রাখতে রাখতে বললেন, “প্রেসিডেন্টের ব্যাপারে কোন খবরই বের হয়নি। ও ব্যাপারে গুগল করে কিছুই খুঁজে পাবে না।”

ল্যাপটপটা বন্ধ করে পাশে সরিয়ে রাখলাম।

“কতটুকু জানেন আপনি?”

“তুমি ঘুমিয়ে পড়ার পর ঐ মহিলা ডিটেক্টিভটা আমাকে সব কিছুই খুলে বলেছে,” হেসে জবাব দিলেন তিনি। দেখতে কিন্তু খারাপ না মেয়েটা।”

জবাবে আমিও হাসলাম, “আসলেও খারাপ না।”

আমি জানি তিনি আমার মুখ থেকে আবার সব কিছু শুনতে চাচ্ছেন। তাই গোড়া থেকে সবকিছুই তাকে খুলে বললাম। কিছুই বাদ দিলাম না।

“তো, বিড়ালটাকে তুমি বাসায় নিয়ে এসেছ?” একটা হাসি দিয়ে তিনি বললেন। “কিন্তু আমি তো জানতাম, বিড়াল তোমার পছন্দ না।”

“বিড়ালটাকে ওখানে রেখে আসতে কেমনজানি মায়া লাগছিল। তাছাড়া ও ব্যাটা নিজেকে একটা কুকুর বলে মনে করে। তাই অতটা সমস্যা হয়নি।”

আরো কিছুক্ষণ তাস খেলে তিনটা আটান্নর সময় একবার আলিঙ্গন করে তাকে বিদায় জনালাম। যাওয়ার আগে মারডক আরো একবার আমার মুখটা চেটে দিয়ে গেল।

গত কয়েকদিনের মধ্যে এই প্রথম একটু শান্তিতে ঘুমাতে গেলাম আমি।

*

পরদিন যখন রে’র নম্বরে ফোন করলাম তখন বাজে তিনটা আট।

দু-বার রিং হওয়ার পরে সে ফোন তুলেই বলল, “প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি নাকি ফোনটা দু-দিন আগে হারিয়ে ফেলেছেন।”

“আর আপনারা এই কথা বিশ্বাস করেছেন?” আমি ফোনেই চিৎকার করে বললাম।

“অফিশিয়ালভাবে এটা জানানোও হয়েছে একটা রিপোর্টের মাধ্যমে। হোয়াইট হাউজে আমার একজন বন্ধু আছে, সে ঐ রিপোর্টটার একটা কপি আমাকে ফ্যাক্স করে পাঠিয়ে দিয়েছে।”

“ওটা তো সাজানোও হতে পারে?”

“হুম, তা পারে। কিন্তু সেটা প্রমাণ করা খুবই কঠিন হবে।”

“অন্তত ফোনটা থেকে আপনারা প্রেসিডেন্টের হাতের ছাপ তো পেয়েছেন?”

“না, কোন ছাপ পাওয়া যায়নি। মনে হয় ওটা সে আগেই মুছে দিয়েছে। ঐ বাড়িটাতেও তার কোন আঙুলের ছাপও খুঁজে পাওয়া যায়নি।”

“আর গাড়িটা? কোন ট্রাফিক ক্যামেরাতেই কি ফোর্ড ফোকাসটার কোন ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি?”

“না।“

“তাহলে আমাদের এখন কি করা উচিত?”

“আমাদের?!”

“না, মানে,..আপনাদের। আপনারা এখন কি করবেন?”

“আসলে, কিছুই করার নেই। কারণ শুধুমাত্র ঐ ফোনটাকে কোনভাবেই প্রমাণ হিসেবে চালানো যাবে না। আর এই মুহূর্তে অন্য কোন প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। তাছাড়া ফোনটাও সিক্রেট সার্ভিসের লোক এসে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে গেছে।”

“সিরিয়াসলি?!”।

“হ্যাঁ,” রে বলল। “শুধু তাই না, আমাদের পুলিশ ক্যাপ্টেনের সাথেও তারা যাওয়ার সময় কিছু কথা বলে গেছে। ক্যাপ্টেন আমাকে পুরোপুরি ধুয়ে দিয়েছেন এরপর। কেন আমি ওনাকে না জানিয়ে হোয়াইট হাউজে যোগাযোগ করেছি। যদি আমাদের কাছে এমন কোন ভিডিও-ও থাকতো যেটাতে প্রেসিডেন্ট মেয়েটার গলা টিপে ধরেছে তা-ও নাকি আমরা তার বালটাও ছিঁড়তে পারতাম না।”

“ক্যালের কি খবর? ও আপনার হয়ে কিছু বলেনি?”

“না।”

আমার মনে হচ্ছিল এই ব্যাপারে রে হয়ত আরো কিছু বলবে। কিন্তু সে আর কিছুই বলল না।

“তার মানে প্রেসিডেন্ট এভাবে পার পেয়ে যাবেন?”

“খুনের সাথে তার যোগসূত্রের দুটো প্রমাণ ছিল। আপনি আর ঐ ফোনটা। কিন্তু ফোনটা তো ইতিমধ্যেই হাতছাড়া হয়ে গেছে।”

“অন্য কোন না কোন সূত্র তো অবশ্যই আছে। আপনি কি এ ব্যাপারে নিশ্চিত, ক্যালি ফ্রেইগ কখনো হোয়াইট হাউজে চাকরি করেনি?”

“ক্যালি চার মাস আগে ওহাইও থেকে পাস করার পর এখানে এসেছিল। সে যদি ওহাইও’তে কোনভাবে প্রেসিডেন্টের সাথে তার দেখা করে থাকেও সেটা প্রমাণ করার কোন উপায় নেই।”

“মেয়েটার পরিবার আর বন্ধুবান্ধবের কাছে জিজ্ঞেস করলেই তো হয়।”

“এই পর্যন্ত না কোন পরিবারের সদস্যকে খুঁজে পাওয়া গেছে, না পাওয়া গেছে কোন বন্ধুকে।”

“কিন্তু ফোনের কল রেকর্ডটা তো আপনাদের কাছে আছে?”

“তা আছে, কিন্তু সেখানে দেখা গেছে কেবলমাত্র একটা নম্বরের সাথেই সে যোগাযোগ রাখতো। সেটাও এখন বন্ধ।”

“এই ব্যাপারটাতে খটকা লাগছে।”

“আসলেই। হয়ত এই নম্বরেই সে প্রেসিডেন্টের সাথে যোগাযোগ করতো। কিন্তু ফোন কোম্পানিও সেই নম্বরের ব্যাপারে বেশি কিছু জানাতে পারেনি। যদি আমরা আরো আগের তথ্য জানতে চাই, তাহলে ওয়ারেন্ট লাগবে। কিন্তু এরমধ্যেই যেরকম ঝাড়ি খেয়েছি বসের কাছ থেকে, ওরকম কিছু করার ইচ্ছে নেই আপাতত।”

“তার মানে প্রেসিডেন্ট বেঁচে যাবে?”

“অন্তত এখনকার জন্য সেটাই মনে হচ্ছে,” একটু থেমে জবাব দিল রে।

আমি কলটা কেটে দিলাম।

তিন মিনিট পরে আলেক্সান্দ্রিয়ার রাস্তা ধরে দৌড়াতে লাগলাম। চেষ্টা করলাম ক্যালি ফ্রেইগ, কনর সুলিভান কিংবা হোয়াইট হাউজের ব্যাপারে সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে। কিন্তু পারলাম না। ঘুরেফিরে ঐ একই জিনিস মাথায় ঘুরতে লাগলো।

আমি সহজে মেজাজ খারাপ করি না। কারণ রাগ পুষে রাখার মত সময় আমার কাছে নেই। কিন্তু এই ক্ষেত্রে ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে লাগলাম।

হঠাৎ করে একটা গাড়ি এসে আমার সামনে থেমে গেল। কয়েকজন লোক লাফিয়ে বের হয়ে আসলো দ্রুত।

আমি বামদিকে ঘুরে দৌড়ানো শুরু করলাম।

রে কি বলছিল আমার মনে পড়ে গেল-আমিই একমাত্র প্রমাণ যেটা প্রেসিডেন্টকে কেসটার সাথে জড়িয়ে রেখেছে।

যদি আমি না থাকি তাহলে আর কোনও প্রমাণও থাকবে না!

যে গাড়িটা আমাকে তাড়া করছে সেটা এখনো আমার থেকে দশ গজ দূরে। সোয়া মাইল দৌড়ানোর পরে আমি পটোম্যাক ব্রিজে পৌঁছে গেলাম। এখন দেখি অন্য দিক থেকেও একটা গাড়ি আসছে, পেছনেরটা তো আছেই। কিছুক্ষনের মধ্যেই দুটো গাড়ি আমার সামনে এসে থেমে যেতেই চারজন লোক লাফিয়ে নেমে এলো। কিছুই করার নেই আমার। ব্রিজ থেকে নিচে ঝাঁপ দিলাম।

পানি অনেক ঠাণ্ডা, কিন্তু এটা নদীর পানি না। একটা ড্রেইন পাইপের মুখে আমি। জানি নোংরা, কিন্তু কিছু করার নেই।

উপর থেকে পাইপের মুখটা দেখা যায় না। আমি আগেও একবার লাফ দিয়েছিলাম বলেই এটার কথা জানি। পাইপটা চার ফিটের মত চওড়া। আমি কোনোমতে মাথা নিচু করে বসে থাকলাম। ঘড়িতে বাজে এখন তিনটা ছেচল্লিশ।

দুই মিনিট পরে গাড়ির টায়ারের আওয়াজ শুনলাম। আমাকে যারা তাড়া করছিল তারা চলে যাচ্ছে।

যখন বাসার দিকে দৌড়ানো শুরু করলাম তখন আমার মাথায় দুটো চিন্তা। বাসায় পৌঁছাতে পারব তো সময়মত? আর হারামিগুলো যদি এখনো ঘাপটি মেরে থাকে?

আমি সাবধানে দৌড়াতে লাগলাম। যখন আমার বাসা থেকে এক মাইল দূরে তখন আর চার মিনিট বাকি। আমি উসাইন বোল্ট না যে এই সময়ের মধ্যে বাসায় পৌঁছাতে পারব।

আগামি তেইশ ঘন্টা নির্বিঘ্নে ঘুমাতে পারবো এমন একটা জায়গা খুঁজে বের করতে হবে তাড়াতাড়ি।

এমন একটা জায়গাই চিনি আমি।

একটা ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টের ডাস্টবিনের ভেতর ঢুকে গেলাম। অর্ধেকও ভরেনি এখনো। তার মানে ময়লা ওঠানোর গাড়ি আসতে আরো অন্তত দু-দিন বাকি। ভালোমত কয়েকটা ব্যাগ দিয়ে নিজেকে ঢেকে দিলাম। ঘুমিয়ে পড়তে এক মিনিটও লাগলো না।

.

৯.

হঠাৎ হঠাৎ এমন হয় যে, আমি এক-দুই মিনিট আগেই ঘুম থেকে উঠে যাই। দুইটা আটান্ন কিংবা ঊনষাট। এমনকি একবার দুটো সাতান্নতেও ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। কেমন যেন অজানা একটা ভালো লাগায় মন ভরে ওঠে তখন। মনে হয় প্রতিটা মিনিট আমার জন্য এক একটা উপহার। মনে হতে থাকে এই বাড়তি সময় কিভাবে কাজে লাগাবে। একটু বেশি সময় ধরে গোসল করব? নাকি যে বইটা পড়ছিলাম সেটার কয়েক পাতা বেশি পড়ব? আবার ইউটিউবে ভিডিও-ও দেখা যায়।

আজকে দুইটা আটান্নর সময় ঘুম ভেঙে গেল। দুই মিনিট বাড়তি।

এরমধ্যে এক মিনিট গেল ডাস্টবিন থেকে বের হতে। আরো এক মিনিট ধরে নিজেকে পরিস্কার করলাম। নুডলস, রুটির টুকরোগুলো চুল থেকে ঝেড়ে ফেললাম। দেখে যতটা খারাপই মনে হোক না কেন আমার অবস্থা, আমি কিন্তু খুশিই। কারণ এর থেকে ঢের বেশি খারাপ অবস্থায় থাকতে পারতাম আমি এখন। কালকের ঐ লোকগুলো আমাকে হয়ত এতক্ষনে খুনই করে ফেলতো কিংবা আমাকে ডাস্টবিনের ভেতর দেখে কেউ লাশ মনে করে ৯১১-এ কল করতে পারতো। কিন্তু সেরকম কিছু হয়নি। বরং ভালোই হয়েছে ঘুমটা।

আমি আমার বাসার দিকে রওনা দিলাম। আরো দুই ব্লক দূরে ওটা। কিন্তু বলা যায় না কালকের গুন্ডাগুলো হয়ত আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। তাই খুব সাবধানে দেখেশুনে যখন বাসায় ঢুকলাম তখন বাজে তিনটা ছয়।

জানালার পর্দার পেছন থেকে বাইরে উঁকি দিলাম। সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়ল না। কিন্তু কালকের লোকগুলো যারাই হোক না কেন মনে হয় না আমার পিছু এত সহজে ছেড়ে দেবে তারা। দরজাটা ভালোমত লক করে দিলাম। পরনের কাপড়গুলো একটা ব্যাগে ভরে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে গোসল করতে ঢুকে গেলাম বাথরুমে।

ফ্রেশ হয়ে যখন কম্পিউটারটার সামনে বসলাম তখন বাজে তিনটা সতের।

প্রেসিডেন্টের গ্রেফতারের ব্যাপারে কোন খবর নেই। এই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে গেছে সে। আর আমি যদি বেঁচে থাকতে চাই আমারও উচিত হবে না ব্যাপারটা নিয়ে আর মাথা ঘামানো।

আমার স্টকগুলো চেক করলাম-বেশিরভাগেরই দর পড়ে গেছে। প্রায় চল্লিশ হাজার ডলার ক্ষতি হয়েছে শেষ দু-দিনে। বাকি শেয়ারগুলো সময় থাকতেই বিক্রি করে দিলাম।

এরপর গেম অব থ্রেন্স দেখার চেষ্টা করলাম কিছুক্ষণ। কিন্তু পর্দায় কি হচ্ছে তাতে কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারলাম না। আমার মাথায় এখনো কালকের কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। তিনটা বিয়াল্লিশের সময় হাল ছেড়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। জীবনে এই প্রথম বোধহয় নিজে থেকেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

*

এর পরের কয়েকদিন খুবই একঘেয়েমির মধ্যে দিয়ে গেল। যেহেতু আমি ঠিক করেছি বাইরে আর বের হবনা দৌড়ানোর জন্যে তাই বাসার ট্রেডমিলটাতেই দৌড়াই এখন। ট্রেডমিলটা বেশ আধুনিক। দৌড়ানোর সময় সামনের স্ক্রিনে নিজের পছন্দের জায়গাটা ঠিক করে নেয়া যায়। পরশুদিনই কিনেছি। হোম ডেলিভারি দিয়ে গেছে বাসায়। ইসাবেল ছিল ডেলিভারি নেয়ার সময় এখানে।

বাইরে যাওয়ার কোন দরকারই নাই এখন, তাই না?

ট্রেডমিলে দৌড়ানোর পঞ্চম দিন। স্ক্রিনটাতে ওয়াশিংটন ডিসি সেট করে নিয়েছি। কিন্তু যখন সেটাতে হোয়াইট হাউজের ছবি ভেসে উঠলো সাথে সাথে বন্ধ করে দিলাম।

২.৪৩ মাইল দৌড়েছি। ঠিক এই সময় একটা মৃদু আওয়াজ শুনলাম। দরজার দিকে চোখ চলে গেল। কিন্তু সেটার ছিটকানিটা ঠিকমতই লাগান। আবার দৌড়ানো শুরু করলাম। কিন্তু একটু পরই শুনলাম শব্দটা।

ট্রেডমিল থেকে নেমে পা টিপে টিপে দরজার সামনে গেলাম। পিপহোল দিয়ে বাইরে উঁকি দিলাম আমি। কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

আমি কি উল্টাপাল্টা শব্দ কল্পনা করছি নাকি?

ঘুরে ট্রেডমিলটার দিকে এগোতেই আবার হল আওয়াজটা। আবার বাইরে তাকালাম পিপহোল দিয়ে। এবারও কিছু দেখলাম না।

খুব সাবধানে আস্তে আস্তে দরজাটা খুলে দিলাম।

মিয়াও।

“ল্যাসিইইইইইই!”

ব্যাটা লাফিয়ে আমার কোলে উঠে গেল।

ওকে ভালোমত আদর করতে গিয়েই চমকে গেলাম। “কিরে, একি অবস্থা হয়েছে তোর?” পুরো রক্তাক্ত ল্যাসির শরীর। পেটের কাছে কেটে গেছে, কানে কামড়ের দাগ। আর একটা চোখ ফুলে বন্ধই হয়ে গেছে প্রায়। কিন্তু ব্যাটার মুখ দেখে মনে হল যেন বলতে চাইছে–ঐ পাঁচজনের অবস্থা আরো খারাপ করে দিয়েছি আমি, হে হে।

সাবধানে টেবিলটার উপর রেখে একটা পাতলা কাপড় দিয়ে ওর গাটা মুছে দিলাম। গায়ে হাত দেয়ার সাথেই বেচারা কেঁপে কেঁপে উঠছে। কিন্তু সহ্য করে গেল শেষ পর্যন্ত।

ওকে দেখে এতোই খুশি হয়ে গিয়েছিলাম যে, তখন খেয়ালই করিনি ব্যাটার গা থেকে একটা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। “কীসের সাথে মারামারি করেছিস রে তুই, কোন বেজির সাথে?”

মিয়াও।

ওর লেজটার কাছে দেখি দুটো গাছের কাঁটা বিঁধে আছে। সাবধানে কাঁটা দুটো বের করে দিলাম।

“কাঁটাগাছের সাথে মারামারি করতে গেছিলি কেন আবার?”

মিয়াও।

আর হাসি চেপে রাখতে পারলাম না। আলতো করে আদর করে দিলাম ওকে। কিন্তু এতেও কেমন জানি কেঁপে উঠলো ওটা।

একটা টুনা মাছের ক্যান খুলে খাইয়ে দিলাম ওকে। এরপর সাবধানে গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে গা থেকে শুকনো রক্তগুলো মুছে দিলাম। চোখটা খুলে রাখতেও অসুবিধা হচ্ছিল ওর। “আর একটু সহ্য কর, ঠিক হয়ে যাবি।”

এরপর নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম ওকে। একটু পরেই ঘুমিয়ে গেল ব্যাটা।

*

“ল্যাসি…এই ল্যাসি।”

চোখটা আস্তে করে খুলে গেল একবার, কিন্তু নড়ল না একটুও।

এখন বাজে তিনটা তিন।

আস্তে করে ঘুরিয়ে দিলাম ওকে। পেটের কাটা জায়গাটা ফুলে লাল হয়ে গেছে বেচারার। হাত দিতেই চমকে উঠলো।

“ঠিক আছিস?”

কোন আওয়াজই করল না। নাহ, ঠিক নেই বেচারা।

“আহারে! দাঁড়া, তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।”

মিয়াও।

চোখে পানি চলে আসল আমার কেন জানি। একটা বিড়ালের এতটা খারাপ লাগার কি আছ? নিজেকেই বললাম। তাড়াতাড়ি ফোনটা নিয়ে আশেপাশের জরুরি পশু ডাক্তারের ঠিকানাটা খুঁজে বের করলাম। বেশি দূরে নয় জায়গাটা। দৌড়াতে গিয়ে একবার দেখেছি আগে।

কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও একটা ভেসপা আছে আমার। যদিও খুব কমই ব্যবহার করি সেটা।

ল্যাসিকে কোলে নিয়ে আর পিঠে একটা ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। ঐ রাতের পর এই প্রথম বাসা থেকে বের হলাম আমি। চারদিকে ভালোমত নজর বুলালাম একবার। নাহ কেউ নেই।

ল্যাসিকে ব্যাগে ভরে নিয়ে ভেসপাতে উঠে পড়লাম।

“দশ মিনিট লাগবে রে।”

কিন্তু সাত মিনিটেই পৌঁছে গেলাম আমি। ওকে কোলে করে নিয়ে আলেক্সান্দ্রিয়া পশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে গেলাম।

এই সময়ে ওখানে কেউ নেই আমরা ছাড়া। কিছু কাগজপত্রে সই করার পরে ডাক্তারের সাথে দেখা করলাম।

এখন বাজে তিনটা বিশ।

“তো, সমস্যাটা কি?” পশু ডাক্তার জিজ্ঞেস করল। কথা শুনে মনে হল লোকটা অস্ট্রেলিয়ান।

“প্রায় এক সপ্তাহের মত উধাও ছিল ও, কাল রাতে এরকম মার খেয়ে ফিরে এসেছে। আমার মনে হয় একটা বেজি আর কাঁটা গাছের সাথে লেগে গিয়েছিল ওর।”

“তাই নাকি?” ডাক্তার হেসে জিজ্ঞেস করল ওকে। “আয়, দেখি কি হয়েছে তোর।”

ল্যাসি ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো। “ঠিক আছে, কিছু করবে না তোকে,” আশ্বস্ত করলাম আমি ওকে।

ডাক্তার ওকে ঘুরিয়ে দিয়ে পেটের কাছের ক্ষতটা ঠিকমতো পরীক্ষা করতে লাগলো। “বেশ ভাগ্যবানই বলতে হবে আপনার বিড়ালটাকে। পেটের এই জায়গাটা বেশ নাজুক। ক্ষতটা আরো গম্ভীর হলেই খারাপ কিছু একটা হয়ে যেতে পারত।”

ল্যাসির পেটে একটা চাপ দিলো সে। আমি ভেবেছিলাম ব্যথায় ককিয়ে উঠবে ওটা। কিন্তু আমার ধারণা মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়ে চুপই থাকলো। তবে আরেকটু উপরে পাঁজরের কাছে যখন চাপ দিলো ডাক্তার, আস্তে করে ডেকে উঠলো ল্যাসি। ডাকটা শুনেই মনে হল ওর খুব ব্যথা করছে।

আমার পেটের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। মনে হচ্ছে ডাক্তার বোধহয় এখনই বলবে, ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে ওর। আর বাঁচানো যাবে না ওকে। কিন্তু আরো একটু দেখার পর ডাক্তার বলল, পাঁজরের কাছটায় একটু ছিলে গেছে, আর পেটের কাঁটাটাই ভোগাচ্ছে ওকে। কিন্তু গুরুতর কিছু হয়নি। একটা প্রেসক্রিপশনে কিছু ব্যথার ওষুধ আর একটা মলমের নাম লিখে দিলেন তিনি।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।

“শুনেছিস, সে-রকম কিছুই হয়নি তোর। খালি একটু কেটে ছিলে গেছে।”

মিয়াও।

“দু-দিনের মধ্যেই আবার দৌড়া দৌড়ি করতে পারবে ও।”

“ধন্যবাদ, ডাক্তারসাহেব।”

এ সময় এক সপ্তাহ আগের একটা জিনিস মনে পড়ে গেল আমার।

“আচ্ছা, ওকে দেখার সময় দেখলাম ওর কাঁধের কাছটা একটু ফুলে আছে, সেটা কি খেয়াল করেছেন?” ডাক্তারকে বললাম আমি।

ভদ্রলোক মাথা নেড়ে না করে দিলে আমি তার হাতটা নিয়ে ল্যাসির ডান কাঁধের ফোলা জায়গাটা দেখিয়ে দিলাম।

আমি অপেক্ষা করছিলাম, উনি হয়ত বলে উঠবেন, এটা ক্যান্সারের লক্ষণ।

“মাইক্রোচিপ।”

“কি?”

“একটা মাইক্রোচিপ। মাঝে মাঝে এটা ঘাড়ের পেছনেও লাগায়।”

আমাকে বিভ্রান্ত অবস্থায় দেখে সে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি ওর গায়ে মাইক্রোচিপ লাগিয়ে দেননি?”

“নাহ। আমি ওকে কিছুদিন আগে রাস্তায় খুঁজে পাই। কোন নেম ট্যাগ ছিল না ওর।”

“যাই হোক, ওর আগের মালিক বোধহয় এটা লাগানোর ব্যবস্থা করেছিল।”

আমার মাথায় চিন্তার ঝড় বইতে লাগলো।

“আপনি কি একটু দেখতে পারবেন, ওর আসল মালিকের নাম কি? দেখা যাবে না এটা? তাহলে হয়ত ওকে ফেরত দিয়ে আসতে পারতাম।”

“অবশ্যই, কেন পারবো না?” এই বলে ডাক্তার একটা স্ক্যানার বের করে কপিউটারের সাথে লাগিয়ে স্ক্যানারটা ল্যাসির কাঁধের উপর ধরলো। সাথে সাথে রিপ করে উঠলো সেটা। একটা ছোট কার্ডের উল্টোদিকে মালিকের নাম আর ফোন নম্বরটা লিখে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো সে।

নামটা পড়ে খুব কষ্ট করে মুখটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলাম।

*

যখন আমরা বাসায় ফিরে আসলাম তখন বাজে তিনটা ছেচল্লিশ।

একটা আঙুরের ভেতর ছোট দুটো ব্যথার ওষুধ পুরে ল্যাসিকে খাইয়ে দিয়ে মলমটা ওর কাটা জায়গাটাগুলোতে লাগিয়ে দিলাম। এরপর ওকে আর ল্যাপটপটা সাথে নিয়ে বিছানায় উঠে গেলাম আমি।

ডাক্তার আমাকে যে কার্ডটা দিয়েছে সেটা বের করলাম।

জেসিকা রেনয়। নিচে রিচমন্ডের একটা ঠিকানা লেখা।

‘জেসিকা রেনয় আর কনর সুলিভান’ লিখে গুগলে সার্চ দিলাম। সাথে সাথে বেশ কয়েকটা লিঙ্ক চলে আসলো।

একটা ছবিতে ক্লিক করলাম।

বিংগো!

জেসিকা আর তঙ্কালীন ভার্জিনিয়ার গভর্নর কনর সুলিভানের একটা ছবি ভেসে উঠলো।

জেসিকা রেনয়ই আমাদের ক্যালি ফ্রেইগ।

*

১০.

আসলে জোড়া খুন হয়েছে। বারো রাত আগে মারা গেছে ক্যালি ফ্রেইগ, কিন্তু একই সাথে খুন হয়েছে জেসিকা রেনয়ও। কারণ দু-জন একই মানুষ।

এখন বাজে তিনটা সাত।

আমি আর ল্যাসি দু-জনেই আমার বিছানায়। ওকে আরেকবার পেইনকিলার খাইয়ে দেয়ার পর ব্যাটা এখন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। ওর পেটের ক্ষতটা এই একদিনেই বেশ ভালো হয়ে গেছে। আর সে যে এখন কিছুটা ভালো বোধ করছে এটা সে আমার মুখ কয়েকবার চেটে বুঝিয়ে দিয়েছে একটু আগে।

গত দুই মিনিট ধরে আমি কম্পিউটার স্ক্রিনে জেসিকা রেনয় আর কনর সুলিভানের ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছি। নিচে লেখা আছে জেসিকা রেনয় কনর সুলিভানের গভর্নর ক্যাম্পেইনের সময় তার অফিসেই ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করত। এটা প্রায় ছয় বছর আগে তোলা ছবি।

পাশেই আরেকটা ছবিতে প্রায় পনেরজন মানুষ একই ধরণের সাদা টিশার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে। টিশার্টের সামনের দিকে লেখা : THE MAN WITH THE PLAN.

দেখে হাসিই পেল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় কনর সুলিভানের এই শ্লোগান বদলে হয়ে গিয়েছিল “I Have a plan for this great Nation।” কিন্তু যতটাই ব্যঙ্গ করি না কেন, তাকে কিছুটা কৃতিত্ব অবশ্যই দিতে হবে। কারণ সে আসার পরপরই অর্থনৈতিক দিক থেকে আমেরিকা আগের থেকেও শক্তিশালি হয়ে উঠেছে। আর বেকারত্বের হার গত এক যুগের মধ্যে সবচাইতে কম এখন। মধ্যপ্রাচ্য থেকেও সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।

পনেরজনের মধ্যে জেসিকা রেয় আর প্রেসিডেন্ট একদম সামনের দিকে দাঁড়িয়ে আছে। জেসিকার আত্মবিশ্বাসি ভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে মোটেও বিচলিত নয় সে এত গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষের পাশাপাশি দাঁড়াতে পেরে। যদিও তখন কেবল সদ্য হাইস্কুল থেকে পাশ করে বেরিয়েছে সে।

প্রেসিডেন্টের একটা হাত জেসিকার কাঁধের উপর। কিন্তু সেটা দেখে অস্বাভাবিক কিছু মনে হল না। অন্য ১৩জন ভলান্টিয়ারের মধ্যে যে কেউ জেসিকার জায়গায় দাঁড়াতে পারত।

বাকি ৪৫ মিনিট আমি জেসিকা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে নিতে কাটিয়ে দিলাম। কিন্তু খুব কম তথ্যই খুঁজে পেলাম।

*

পরের দিন ঘুম থেকে ওঠার প্রায় দশ মিনিট পরে মোবাইলটা হাতে নিলাম। রেকে কল দিতে গিয়েও কি মনে করে যেন আর দিলাম না। ওর সাথে কথা বলার আগে জেসিকার সম্পর্কে আরো তথ্য দরকার আমার।

নেটে একটা ওয়েবসাইটে ঢুকলাম যেখানে এন্ট্রি দিলে ওরা ঐ ব্যক্তির অতীত সম্পর্কে সব তথ্য খুঁজে বের করে দেবে। ওখানে জেসিকার নাম আর ওর ছয় বছর আগের ঠিকানাটা দিয়ে দিলাম। এরপর ক্রেডিট কার্ড থেকে ২০০ ডলার ট্রান্সফার করে দিতে হল ওদের অ্যাকাউন্টে।

“তাহলে আমাদের এখন একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে, কি বলিস?” ল্যাসিকে বললাম। সে এখন চেটে চেটে তার নাস্তা খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত। প্রায় ভালো হয়ে গেছে।

মিয়াও।

“অবশ্যই এটাতে তোর কিছু আসে যায়। কারণ এই মেয়েটাই তোর আগের মালিক ছিল!”

মিয়াও।

“হ্যাঁ, আমি জানি আমার সাথে তুই খুব ভালোই আছিস। তাও।”

মিয়াও।

“ক্যান্ডি খাবি? কোন ক্যান্ডি?”

মিয়াও।

“কিটক্যাট ক্যান্ডি না, ব্যাটা।”

মিয়াও।

“হ্যাঁ, নামের শেষে ক্যাট আছে ঠিকই। আচ্ছা, দেখি।”

আরো কিছুক্ষন এই ব্যাপারে যুক্তিতর্ক করে আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম আর সে গেল বারান্দার কোণায় তার কাজ সারতে।

বাইরে বেশ বাতাস। নাহ, আজ অবশ্যই বাইরে দৌড়াতে যাবো। শুভাগুলো জাহান্নামের চুলোয় যাক।

টেবিলের উপর একটা বাদামি রঙের প্যাকেজ রাখা। অ্যামাজন থেকে কালকেই ডেলিভারি দিয়ে গেছে। ভোলা হয়নি এখনো।

খুলে ভেতরের জিনিসটা বের করলাম। একটা ইলেক্ট্রিক টেসার। সবচেয়ে শক্তিশালি মডেলের।

ল্যাসিকে ওটা দেখিয়ে শাসালাম, “এরপর যদি কার্পেট নষ্ট করেছিস তো একেবারে ৪০০০ ভোল্টের শক খাবি।”

একটা হুডি গায়ে চাপিয়ে আর দৌড়ানোর জুতোটা পরে দরজা খুললাম। ল্যাসি তার মাথা একটু বের করল শুধু, তারপর বাইরে একবার নজর বুলিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো চুপচাপ। আমি আগের ঘটনা ভুলতে পারলেও ও বেচারা এখনো শকের মধ্যেই রয়ে গেছে।

“তোকেও একটা টেসার কিনে দিতে হবে।”

মিয়াও।

“না, ছুরি দেয়া যাবে না।”

মিয়াও।

“আচ্ছা, বাইরে থেকে এসে এ ব্যাপারে কথা বলব তোর সাথে।”

গত এক সপ্তাহ ট্রেডমিলে দৌড়ানোর পর এখন মুক্ত বাতাসে দৌড়াতে পেরে অন্যরকম ভালো লাগছে। বুক ভরে শ্বাস নিলাম।

এবার পালানোর পথগুলো আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছি। বলা যায়, যদি হঠাৎ দরকার পড়ে।

চারদিকে নজর রেখে দৌড়াতে লাগলাম। কেউ নেই। টেসারটা আমার ডানপকেটের সাথে ঝোলানো।

আমি চেষ্টা করছি মেয়েটা সম্পর্কে না ভাবতে, কিন্তু কোনভাবেই মাথা থেকে তাকে বের করতে পারছি না। না, আমি জেসিকা রেনয় বা ক্যালি ফ্রেইগের কথা বলছি না। ডিটেক্টিভ রে’র কথা বলছি। ওর ঐ আকর্ষণীয় চাহনি, লম্বা চুল, কিছুই ভোলার মত নয়। আর আমাকে জেরা করার সময় ওর মুখে যে হাসিটা ফুটে উঠেছিল না! একদম বুকের ভেতরে গিয়ে লেগেছে।

ওর সম্পর্কেই ভাবছি এমন সময় সামনে একজোড়া হেডলাইট দেখতে পেলাম।

পালাতে হবে!

আমি ডানদিকের রাস্তাটায় ঢুকে পড়লাম। আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছি কোন দিক দিয়ে পালাবো।

রাস্তায় পানি জমে ছিল। লাফ দিয়ে সেটুকু পার হয়ে সামার পার্কে ঢুকে পড়লাম।

আমার বামদিকে টেনিস কোর্টগুলো। দুটো কোর্টের চারদিকে প্রায় আঠারো ফিট লম্বা নেটের বেড়া দেয়া। বেড়াগুলোর দিকে এগিয়ে গেলাম আমি। একটু পরেই বেড়াটা ডিঙাতে শুরু করলাম। পেছনে ঘুরে দেখি তিনজন লোক আমার পিছু নিয়ে কোর্টে ঢুকে পড়েছে। তিনজনের পরনেই কালো রঙের স্যুট। এখনো গোলাগুলি শুরু করেনি কেন কে জানে!

কোনমতে বেড়াটার একদম উপরে উঠে লাফিয়ে অন্যপাশে নেমে পড়লাম।

লোকগুলোও বেড়া বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করল। ওরা যখন একদম উপরে তখন কাজটা করলাম।

“কি খবর?” কোন উত্তর এলো না।

টেসারটা নেটের বেড়ার গায়ে লাগিয়ে বাটনটা টিপে দিলাম।

তিনজনই ঝাঁকি খেয়ে তিনটা কাটা বস্তার মত পড়ে গেল বেড়া থেকে।

আমি দৌড়ানোর জন্যে ঘুরে দাঁড়ালাম।

“যেখানে আছে সেখানেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।”

বন্দুকের নলটা আমার বুকের দিকে তাক করা।

“টেসারটা ফেলে দাও হাত থেকে।”

তা-ই করলাম।

“তোমরা ঠিক আছে?” অন্য তিনজনকে জিজ্ঞেস করল লোকটা।

“শূয়োরের বাচ্চাটা কারেন্ট লাগায় দিসে বেড়াটার গায়ে।”

লোকটা মাটি থেকে টেসারটা তুলে নিয়ে আমার গায়ে চেপে ধরল।

এরপর সবকিছু অন্ধকার।

*

একটা গাড়ির ভেতরে আমি এখন।

“ঠিক আছেন আপনি?”

সবকিছু ঘোলা ঘোলা দেখছি। কটা বাজে এখন?” জিজ্ঞেস করলাম।

“তিনটা পঁয়ত্রিশ। চিন্তা করবেন না, চারটা বাজার আগেই আপনি আপনার বাসায় ফিরে যাবেন।”

এবার গলাটা শুনে চমকে উঠলাম। কিন্তু চেহারাটা এখনো স্পষ্ট দেখতে পারছি না।

“হেনরি বিনস,” আবার বলে উঠলো গলাটা।

এবার দৃষ্টি একটু পরিষ্কার হয়ে আসলো।

“মি. প্রেসিডেন্ট!”

*

গাড়ির মৃদু আলোতে কনর সুলিভানের চেহারাটা একদম ঐ রাতের মতোই লাগছে।

তার পরনে এখন একটা জিন্সের প্যান্ট আর ডেটন ইউনিভার্সিটির একটা সোয়েটার। দেখতে একদমই সাধারণ লাগছে তাকে। কিন্তু মোটেও সাধারণ কেউ নয় তিনি। এই মুহূর্তে তার চেয়ে ক্ষমতাধর লোক খুব কমই আছে এই পৃথিবীতে।

“আমার লোকদের পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আপনার কোন ক্ষতি করতে চায়নি ওরা।”

বুকের উপর লাল হয়ে জায়গাটাতে একবার হাত বুলিয়ে মাথা নাড়লাম।

“আমি জানি আপনার কাছে সময়ের মূল্য অন্যরকম, তাই সরাসরি কাজের কথায় আসি। আপনাকে জানালাটা দিয়ে সেদিন দেখেই বুঝেছিলাম যে কোন না কোন ঝামেলা পাকাবেন।”

তার সাথে চোখাচোখি হতেই আরেকবার সেই রাতের কথা মনে পড়ে গেল। আর ঝামেলা পাকায় যারা তাদের শেষ পরিণতি হয় ক্যালি ফ্রেইগের মত, মনে মনে বললাম।

“আমি মেয়েটাকে খুন করিনি,” ঠান্ডা গলায় বললো সে।

এর চেয়ে যদি বলতো, সে আকাশে উড়তে পারে সেটা হয়ত আরো বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হতো আমার কাছে।

আমি আস্তে করে হেসে উঠলাম।

“আপনাকে দোষ দিচ্ছি না আমি, মাথা নাড়তে নাড়তে বললো। “আপনার জায়গায় আমি হলেও ভাবতাম, খুনটা আমিই করেছি। সেই রাতে মেয়েটার চিৎকার, এরপরেই আমাকে দরজা দিয়ে বের হতে দেখা, তার পর আমার মোবাইলফোনটাও পেয়েছেন আপনি। এতক্ষনে নিশ্চয়ই এটাও খুঁজে বের করেছেন, মেয়েটার নাম জেসিকা রেনয়, আমার সাথে তার আগে থেকেই যোগাযোগ ছিল।”

আমি খুব কষ্ট করে মুখটা স্বাভাবিক রাখলাম। আমার বাড়রি দিকে নিশ্চয়ই নজর রেখেছিল ওরা।

“জেসিকা রেনয়ের সাথে আমার পরিচয় হয় আজ থেকে ছয় বছর আগে। আমার ইলেকশন ক্যাম্পেইনে ভলান্টিয়ার হিসেবে যোগ দিয়েছিল মেয়েটা। প্রথম যখন রুমে ঢোকে মেয়েটা, আঠার থেকে পঞ্চাশ বছর বয়সি সব পুরুষ মানুষের মাথা ঘুরে গিয়েছিল ওর দিকে।”

“আর ওর সাথে শুতে কত দিন লেগেছিল আপনার?”

“বেশিদিন না। ক্যাম্পেইনের একমাসের মাথাতেই হবে। একটা হোটেলে উঠেছিলাম আমরা সবাই। এক রাতে মেয়েটা নিজে থেকেই আমার রুমে চলে আসে। আমিও না করতে পারিনি।”

“আপনাকে দেখে অবশ্য মনে হয় না আপনি এরকম প্লেবয়,” আমি বললাম।

“গর্ব করার মত কিছু নয় এটা,” অন্যদিকে তাকিয়ে জবাব দিলো সে। কিছুটা দুঃখিত বলে মনে হল তাকে।

“আর ছয় বছর ধরে আপনি এই সম্পর্কটা চালিয়ে গেছেন।”

“না, ঐ একবারই ঘটেছিল।”

আমাকে নিশ্চয়ই খুব বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে।

“মেয়েটা ঐ রাতের ঘটনা গোপনে ভিডিও করেছিল। পরের দিন আমার কাছে এসে দশ লাখ ডলার দাবি করে সে।”

আমি ভ্রূ কুঁচকে তার দিকে তাকালাম।

“টাকাটা দিয়ে দিয়েছিলাম তাকে। এরপরের দিনই টাকাটা নিয়ে উধাও হয়ে যায় সে।”

“ও চাইতেই টাকাটা দিয়ে দিয়েছিলেন?”

“এছাড়া কোন উপায়ও ছিল না। ভিডিওটা ছড়িয়ে গেলে আমি শেষ হয়ে যেতাম। সে হাসিমুখে টাকাটা নিয়ে চলে গিয়েছিল। এরপর ছয় বছর আর তার কোন খবর আমার জানা ছিল না। এক মাস আগে একটা ইমেইল পাই ওর কাছ থেকে। আরো টাকা দাবি করে সে।”

“এবারও দিয়েছিলেন টাকাটা?”

“হ্যাঁ, দুই সপ্তাহ আগে।”

ওর মুখ দেখে মনে হল না মিথ্যা কথা বলছে। কিন্তু ক্যালি ফ্রেইগ/জেসিকা রেনয় যদি তাকে ব্ল্যাকমেইল করেই থাকে তাহলে সেটা তো মেয়েটাকে খুন করার পেছনে এক নম্বর কারন হিসেবেই বিবেচিত হবে।

“আমি জানি আপনি ভাবছেন, মেয়েটাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার কথাটাই আমি চিন্তা করব। কারণ আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় হুমকি হল সে। আর সত্যি কথা বলতে চিন্তাটা যে আমার মাথায় একদমই উঁকি দেয়নি তা নয়। কিন্তু ছয় বছর আগে সে যখন টাকাটা নিয়ে গায়েব হয়ে গেল তখন আমি ভাবতেই পারিনি সে আবার আমার কাছে টাকা চাইবে। ততদিনে আমি প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছি, তাই ভিডিওটা ছড়িয়ে গেলেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া আমার জন্যে কষ্টকর হতো না।”

“আচ্ছা, ধরে নিলাম সত্যি কথাই বলছেন, কিন্তু ঐ রাতের ঘটনাটার কি ব্যাখ্যা দেবেন আপনি? আমাকে শুরু থেকে খুলে বলবেন কি? হোয়াইট হাউজ থেকে ঐ গাড়িটা নিয়ে কিভাবে বের হলেন সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে?”

“আহ্! প্রায় তিন বছর পরে নিজে ড্রাইভ করেছিলাম সে রাতে,” হেসে উত্তর দিল সে।

কোন প্রতিক্রিয়া দেখালাম না। আমি একজন সম্ভাব্য খুনির সামনে বসে আছি। আর সে গাড়ি চালিয়ে মজা পাক না পাক তাতে আমার কিছু আসে যায় না।

“আমার লোকদের বলেছিলাম আমি নিজে একবার ড্রাইভ করতে বের হতে চাই। কিন্তু এটার কোন অফিশিয়াল রেকর্ড থাকবে না। রেড, যে তোমাকে টেসার দিয়ে অজ্ঞান করে দিয়েছিল, সে-ই সবকিছুর বন্দোবস্ত করে। কিন্তু তার শর্ত ছিল, সে-ও আমার সাথে আসবে। লুকিয়ে আমাকে বের করে গাড়িতে তুলে দেয় সে। কিন্তু পাঁচ মাইল যাওয়ার পর আমি গাড়ি থামিয়ে তাকে নেমে যেতে বলি। সিক্রেট সার্ভিসের অন্য কেউ হলে হয়ত আমাকে একা ছেড়ে দিত না কিন্তু রেড আর আমি একে অন্যকে কলেজের সময় থেকে চিনি। একসাথে ফুটবলও খেলেছি আমরা। ভাইয়ের মতনই দেখি আমি ওকে। কিছু না বলে নেমে গিয়েছিল সে। আমি তাকে কথা দিয়েছিলাম, এক ঘন্টা পরই ওকে পিক করব। তারপরই টাকাটা নিয়ে জেসিকার বাসায় যাই। আমি জানতামও না ও নিজের নাম বদলে ক্যালি ফ্রেইগ রেখেছে এখন।

“আমি ওকে টাকাটা দিয়ে দেই। এবার বিশ লাখ চেয়েছিল সে। টাকাটা নেয়ার পর সে আমাকে চুমু খাওয়ার জন্যে এগিয়ে আসে কিন্তু আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই, আর তখনই চিৎকার করে ওঠে ও। মুখটা চেপে ধরে চুপ করতে বলি ওকে, এরপরই সেখান থেকে বের হয়ে যাই।”

“আপনার ফোনটা?”

“আমি ভেবেছিলাম এবার টাকা লেনদেন করার সময় গোপনে পুরো কথোপকথনটা রেকর্ড করে রাখব। কিন্তু জেসিকা অনেক চালাক মেয়ে, ও ধরে ফেলেছিল ব্যাপারটা। ফোনটাও রেখে দিয়েছিল ও।”

“তো, আপনি বলতে চাচ্ছেন এরপর আপনি চলে গেলেন আর অন্য কেউ এসে ওকে গলা টিপে মেরে রেখে গেছে?”

“হ্যাঁ। কাজটা যে-ই করে থাকুক, সাথে করে বিশ লাখ ডলারও নিয়ে গেছে।”

*

তিনটা পঞ্চাশের সময় প্রেসিডেন্ট আমাকে আমার বাসা থেকে পাঁচ ব্লক দূরে নামিয়ে দিলেন।

“তো, আপনি খুন না করলে কে খুন করল মেয়েটাকে?” দরজা খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করলাম।

মাথাটা এদিক ওদিক নাড়লেন কেবল তিনি। এই প্রশ্নটার উত্তর নেই তার কাছেও।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *