৩. প্যাপিরাসের ঝোঁপ

প্যাপিরাসের ঝোঁপের নিকটবর্তী নদীর পাললিক ভূমিতে হিকা একটা অনুশীলন ক্যাম্প তৈরি করেছে। টাইটা মন্দির থেকে যখন নেমে এল তখন মেঘহীন আকাশের শূন্যে অ্যাপেপির দুই ব্যাটেলিয়ান সৈন্য অস্ত্র নিয়ে অনুশীলন করছিল, আর সকালের সূর্য অকৃপণ আলো বিলোচ্ছিল। পুরোপুরি অস্ত্রে সজ্জিত ২০০ লোক ঝোঁপের মধ্য দিয়ে পর্যায়ক্রমে দৌড়াচ্ছিল, আর অপরদিকে কাঁদার মধ্য কোমর পর্যন্ত ডুবিয়ে রথ বাহিনী জটিল কৌশল রপ্ত করছিল। চারটি সারি সম্মুখে একটি কলাম তৈরি করে পাশাপাশি থেকে পাখির পাখার মত খুলে ছড়িয়ে পড়ছে। চলন্ত চাকাগুলোর পিছনে ধুলো উড়ছে, বর্শার অগ্রভাগ সূর্যালোক প্রতিফলিত করছে এবং নানা রঙের পতাকা বাতাসে উড়ছিল।

টাইটা যখন দেখার জন্য পিপার কাছে এক মুহূর্ত থামল যখন পঞ্চাশ জনের একটা ধনুকধারী দল ১০০ কিউবিট দূরে লক্ষ্য স্থির করছে, প্রত্যেকে পাঁচটা করে দ্রুত তীর ছুঁড়ল। তারপর তারা খড় দিয়ে মানুষের মত তৈরি লক্ষ্য বস্তুর দিকে দৌড়ে গেল। পুনরায় তীর সংযোগ করল এবং ২০০ কিউবিট দূরের লক্ষ্যবস্তুর উদ্দেশ্য আবার তীর ছুঁড়ল। কেউ তীর ছোঁড়ার সময় পিছিয়ে পড়লে অথবা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে তবে তার উপর নির্দেশকের কস্তনী খুব ভারি হয়ে পড়ছিল। চামড়ার চাবুকের অগ্রভাগে বসানো ব্রোঞ্জের গজাল তাজা রক্তের দাগ রেখে যেত যখন লিনেনের জামার উপর তা দিয়ে আঘাত করা হতো।

কোন বাধা ছাড়াই টাইটা হেঁটে চলল। সে যখন এক জোড়া বর্শাধারী, যারা যুদ্ধের ন্যায় চিৎকার দিয়ে অনুশীলন করছিল তাদের অতিক্রম করল তখন তারা লড়াই থামাল ও চুপ হয়ে গেল। তারা তার দিকে তাকিয়ে রইল। তাদের নিকট তার একটা ভয়ানক সম্মান আছে। সে তাদের অতিক্রম করার পরই কেবল তারা আবার অনুশীলনে ব্যস্ত হল।

মাঠের অন্যপ্রান্তে ঝোঁপের পাশে ছোট সবুজ ঘাসের উপর একমাত্র রথ দাগ দেওয়া ও লক্ষ্য বস্তুর মধ্যে দিয়ে দৌড়াচ্ছিল। এটা একটা স্কাউট রথ, শোক দেওয়া চাকা ও বাঁশের দেহ, খুব দ্রুত ও দুজন লোককে নিতে ও বাধা পেরিয়ে যাওয়ার মত হালকা। দুটি চমৎকার পিঙ্গল বর্ণের ঘোটকি তা টানছে যেগুলো অ্যাপেপির ব্যক্তিগত ঘোড়াশাল থেকে নেওয়া। যখন তারা দাগ দেয়া স্থানগুলো দিয়ে ঘুরছিল তখন তাদের পিছনের হালকা রথটা লাফিয়ে ও কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে চলল। ওগুলোর ক্ষুর ঘাসের চাপড়ার ছোট খন্ড তুলে চমৎকার দৃশ্যের জরুরি করল।

লর্ড টর্ক ওটা চালাচ্ছিল, হাতের কব্জিতে লাগাম পেঁচিয়ে সে সামনে ঝুঁকে ছিল। তার দাঁড়ি বাতাসে উড়ছিল, তার গোঁফ এবং রঙিন সুতা বাতাসে তার কাঁধের উপর দিয়ে পিছনে উড়ে গেল যখন সে বন্য চিৎকারে তার ঘোড়াগুলোকে উদ্বুদ্ধ করল। টাইটা তার দক্ষতা স্বীকার করল। এমনকি এরকম গতিতেও ঘোড়া দুটোকে সে তার পুরো নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। দাগের ভেতরে নির্দিষ্ট লাইনে চলছে, ধনুকটা সে তার পাশে পাদানির উপর রেখেছে যাতে লক্ষ্যবস্তুর উপর সহজে আঘাত করতে পারে যখন তা অতিক্রম করবে।

রথটা পুরো গতিতে আসছে দেখে টাইটা তার লাঠির উপর ঝুঁকে পড়ল। স্লিম সোজা অবয়ব ও রাজকীয় ভাব-কোন ভুল হতে পারে না। মিনটাকা লাল রঙের একটা ভাঁজ করা স্কার্ট পড়েছে ফলে তার হাঁটু বেরিয়ে রয়েছে। তার স্যান্ডেলের আড়াআড়ি ফিতা পায়ের অনেক উপর পর্যন্ত বাঁধা। সে তার বাম কব্জিতে একটা চামড়ার বন্ধনী পরে আছে এবং একটা শক্ত চামড়ার বর্ম তার বুকে পরা। এটা তার বুককে ধনুকের অগ্রভাগের ধাক্কা থেকে রক্ষা করবে যখন সে তার লক্ষ্য বস্তুর দিকে তীর ছুঁড়বে।

মিনটাকা টাইটাকে চিনতে পারল, অভিবাদন জানাল ও তার মাথার উপর তুলে ধনুকটা নাড়ল। তার কালো চুল এক সুন্দর জাল দিয়ে ঢাকা ছিল যা রথের প্রতিটি ঝাঁকুনিতে লাফাচ্ছিল। সে কোন প্রসাধন নেয় নি কিন্তু বাতাসে ও তেষ্টায় তার গাল রুক্ষ হয়ে গিয়েছে এবং তার চোখের মনি জ্বলজ্বল করছে। টাইটা কল্পনাও করতে পারে না হেজারেট কোন যুদ্ধ রথে বর্শা-বাহক হতে পারে কিন্তু স্ত্রীলোকের প্রতি হিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন।

হাথোর তোমার উপর সন্তুষ্ট থাকুক, ম্যাগোস! সে হাসল যখন টর্ক তার সামনে রথটা থামাল। সে জানত মিনটাকা তার প্রতিপালক হিসেবে হিক দ্বৈত দেবীদের পরিবর্তে ভদ্র দেবীকে গ্রহণ করেছে।

হুরাস চিরদিন তোমাকে ভালোবাসুক, রাজকুমারী মিনটাকা। টাইটা তার আশীর্বাদ ফিরিয়ে দিল। এটা স্নেহের প্রকাশ যা দ্বারা সে তার রাজ পদবী স্বীকার করল যেখানে সে তার পিতাকে রাজা হিসেবে স্বীকার করে না।

সে ধুলোর মেঘে লাফ দিয়ে নামল এবং দৌড়ে তাকে জড়িয়ে ধরতে গেল। পৌঁছে সে তার গলা জড়িয়ে ধরল ফলে তার বর্মের শক্ত কিনারা তার পাঁজরের গভীরে আঘাত করল। সে বুঝল সে ব্যথা পাচ্ছে এবং পিছনে সরল। আমি এইমাত্র পাঁচটা মাথা সই করেছি। গর্বের সাথে মিনটাকা বলল।

তোমার যুদ্ধের দক্ষতা শুধুমাত্র তোমার সৌন্দর্য দ্বারাই ছাড়িয়ে গেছে। সে হাসল। তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না, সে বাজি ধরল। তুমি ভাবছ যে আমি একটা মেয়ে তাই আমি ধনুক ছুঁড়তে পারি না। সে তার অস্বীকারের জন্য অপেক্ষা করল না। রথের কাছে দৌড়ে গেল এবং পাদানিতে লাফিয়ে উঠল। চালাও, লর্ড টর্ক, সে আদেশ করল। আরেকটি প্রদক্ষিণ। তোমার সর্বোচ্চ গতিতে।

টক লাগাম টানল এবং এতো দক্ষভাবে রথটা ঘুরাল যে ভেতরের চাকাটা স্থির রইল। তারপর যখন সে সারিতে দাঁড়াল, সে চেঁচিয়ে উঠল, হা! হা! এবং তার গতি তুলে কার্য সম্পাদনে চলে গেল।

প্রতিটি লক্ষ্য খাট লাঠির অগ্রভাগে বসানো, ধনুকধারী চোখ বরাবর সামনে বসানো। সেগুলো মানুষের মাথার আকৃতি দেওয়া, প্রতিটি কাঠের শক্ত টুকরোর তৈরি। ওগুলোর জাতীয়তায় কোন ভুল নেই। প্রতিটি ডামি মিশরীয় যোদ্ধার মাথার আকৃতি দেওয়া, হেলমেট ও রেজিমেন্টের পদবী পরিহিত এবং মানুষ খেকো রাক্ষসদের ন্যায় ভূতুড়ে আকৃতি দেয়া। আমাদের বিষয়ে চিত্রকরের একটু সন্দেহ রয়েছে, টাইটা মুখ বাঁকিয়ে বলল। মিনটাকা ড্যাশবোর্ডে রাখা খাপ থেকে একটা তীর তুলে নিল ও সংযোজন করল। সে তার লক্ষ স্থির করল, উজ্জ্বল হলুদ পালকের পুচ্ছ তার কুঞ্চিত ঠোঁট স্পর্শ করে যেন চুমু খেল। টর্ক রথটা প্রথম লক্ষ্য বরাবর আনল, একটা সঠিক শট তাকে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করল কিন্তু ভূমি উঁচু নিচু ছিল। যদিও তার হাঁটু বেঁকে আছে তবুও গাড়ির গতির সাথে সে দুলছিল।

লক্ষ্যবস্তু নিকটবর্তী হতেই মিনটাকা তীরটি ছেড়ে দিল, এবং সেই সাথে টাইটা অনুভব করল যে ফলাফল দেখতে সে তার নিঃশ্বাস বন্ধ করে আছে। তার উদ্বিগ্ন হবার কোন কারণ নেই কেননা সে হালকা ধনুকটা পূর্ণ দক্ষতার সাথে পরিচালনা করছে। ডামির বা চোখ দিয়ে তীরটা ঢুকে গেল এবং সেখানে গেঁথে রইল। হলুদ পুচ্ছ সূর্যের আলোতে উজ্জ্বল হল।

অসাধারণ! সে হাততালি দিল এবং আনন্দে হাসল। রথটা দৌড়ে আরো দুবার তীর নিক্ষেপ করল। একটা তীর কপালের গভীরে ঢুকে গেল, পরেরটা ঢুকল লক্ষ্য বস্তুর মুখে। এটা কোন অভিজ্ঞ রথীর জন্যও চমৎকার শট, একটি বালিকার কথা তো বাদই।

টর্ক দূর দাগ বরাবর রথ ঘুরাল এবং ফিরে এল। ঘোড়াগুলোর কান পিছনে হেলে আছে ও কেশর উড়ছিল। মিনটাকা আবার শট করল, ডামির বড় নাকের ঠিক আগায় আরেকটি ক্ষত তৈরি হল।

হুরাসের নামে! টাইটা অবাক হয়ে বলল।

সে জ্বীনের ন্যায় শট করছে!

দ্রুতই শেষ লক্ষ্য এল এবং মিনটাকা চমৎকার ব্যালান্স করল, গাল ঝলকে উঠল এবং যখন সে মনোযোগে ঠোঁট কামড়াল তখন তার সাদা দাঁত ঝলক দিয়ে উঠল। সে তীরটা ছুঁড়ল এবং এক হাত দূর দিয়ে মাথাটা লক্ষ্য ভ্রষ্ট হল।

টর্ক, কদাকার গেঁয়ো ভূত! যখন আমি তীরটা ছুঁড়ছিলাম তখন তুমি সরাসরি গর্তের দিকে রথ চালিয়েছে। সে চিৎকার করে বলল।

রথ থেকে সে লাফিয়ে নামল যদিও তখনও ওটা চলছিল এবং রাগত দৃষ্টিতে টর্কের দিকে তাকাল, তুমি আমাকে ম্যাগোসের চোখে বোকা বানাতে ওটা করেছে।

মহা মাননীয়া, আমি আমার অদক্ষতার জন্যে লজ্জিত। তার রাগী চেহারা দেখে টর্ক একটি ছোট বালকের ন্যায় হতভম্ব হয়ে গেল। টাইটা দেখল তার অনুভূতি তার তার জন্যে অতিশয় আকুল, যেমনটা টাইটা সন্দেহ করেছিল।

তোমাকে ক্ষমা করা হবে না। আমাকে আর চালনা করার সুযোগ তোমাকে দেবো না। কখনোই না।

টাইটা তাকে এরকম মেজাজে পূর্বে দেখেনি এবং যা একটু আগের তার তীর ছোঁড়ার প্রদর্শনীর সাথে মিলে, মিনটাকার সম্পর্কে তার ধারণা আরো উঁচু হল। যে কোন মানুষের জন্যে সে সত্যিই উপযুক্ত স্ত্রী, এমনকি ট্যামোস বংশদ্ভূত কোন ফারাও-এর জন্যেও। টাইটা সিদ্ধান্ত নিল, কিন্তু নিজের মধ্যে লঘুতার কোন চিহ্ন

দেখাতে সে সতর্ক ছিল। নইলে মিনটাকা নিজের ক্রোধটা তার দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে। তার চিন্তার দরকার ছিল না, কারণ সে তার দিকে ঘুরল এবং তার মুখে আবার হাসি ফুটল।

পাঁচটার মধ্যে চারটা, যুদ্ধের ময়দানে একজন যোদ্ধার জন্যে যথেষ্ট, মহামাননীয়া, টাইটা তাকে আশ্বস্ত করল। এবং ওটা একটা বেইমান গর্ত ছিল যা তোমাকে আঘাত করেছে।

তোমার নিশ্চয়ই তৃষ্ণা পেয়েছে, টাইটা? আমি জানি, আমার পেয়েছে। সে সহজাতভাবে তার হাতটা টেনে নিল এবং যেখানে তার দাসীরা নদীর পাড়ে তার জন্য পশমের চট বিছিয়েছে সেখানে তাকে নিয়ে গেল এবং মিষ্টি মাংসের বড় পাত্র ও শরবতের জগ পরিবেশন করল।

তোমাকে আমার অনেক কিছু জিজ্ঞেস করার আছে, টাইটা। পাশে একটা ভেড়ার চামড়ার গালিচা বিছাতে বিছাতে সে তাকে বলল। বুবাসতি ছাড়ার পর তোমাকে আর আমি দেখি নি।

তোমার ভাই, খিয়ান কেমন আছে? সে তাকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল।

যেমন তার থাকার কথা তেমনই আছে, সে হাসল। যদিও আগের চেয়ে দুষ্টুমিটা বাড়েনি। আমার পিতা আদেশ দিয়েছেন যখনই সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে তখনই সে এখানে আমাদের সাথে যোগ দিবে। তিনি চান শান্তি চুক্তির সময় তার পুরো পরিবার তার সাথে থাকুক।

আরো কিছুক্ষণ তারা তুচ্ছ সব বিষয়ে কথা বলল, কিন্তু মিনটাকাকে অন্যমনস্ক মনে হল। এদিকে টাইটা মেয়েটির মনের মধ্যে থাকা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা উপস্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে। হঠাৎ মিনটাকা টর্কের দিকে ঘুরে তাকে অবাক করল, যে তার পিছনে চাপা ও লজ্জিত ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল।

আপনি এখন আমাদের ত্যাগ করতে পারেন, আমার লর্ড, সে তাকে নম্রভাবে বলল।

আপনি কি আবার আমার সাথে আগামীকাল সকালে রথে চড়বেন, রাজকুমারী? টর্ক প্রায় অনুরোধের সুরে বলল।

কাল সম্ভবত আমি অন্য কোন কাজে ব্যস্ত থাকবো।

তাহলে পরশু? এমনকি মনে হল তার গোঁফও করুণায় ঝুঁকে পড়ল। যাবার আগে আমার ধনুক ও তীরের খাপটা আমাকে দিয়ে যাবেন। সে তার প্রশ্ন এড়িয়ে তাকে আদেশ করল। টর্ক সেগুলো একজন ভৃত্যের ন্যায় তার নিকট বয়ে আনল এবং তার হাতের কাছে ওগুলো রাখল।

বিদায়, আমার লর্ড। সে টাইটার দিকে ঘুরল। টর্ক আরো কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে রইল। তারপর তার রথ নিয়ে চলে গেল।

যখন রথ চালিয়ে সে চলে গেল, টাইটা বিড়বিড় করে জিজ্ঞেস করল, কতদিন ধরে টর্ক তোমাকে ভালোবাসে?

তাকে অবাক দেখাল, তারপর মজা পেয়ে হাসতে লাগল। টর্ক আমাকে ভালোবাসে? ওটা হাস্যকর! গিজার পিরামিডের মতই টর্ক প্রবীণ, তার বয়স প্রায় ৩০ বছর এবং তার তিনজন পত্নী রয়েছে এবং একমাত্র হাথোরই জানে তার কত জন উপপত্নী আছে!

চমৎকারভাবে সাজানো খাপ থেকে টাইটা তার একটা তীর নিল এবং ওটা পরীক্ষা করল। পালকগুলো ছিল নীল ও হলুদ রঙের এবং সে অগ্রভাগে লাগানো ছোট অংকিত স্মারকটা স্পর্শ করল।

শিকারী নক্ষত্রপুঞ্জের তিনটি তারকা। সে নির্দেশ করল, তাদের মধ্যে মিনটাকা হচ্ছে সবচাইতে উজ্জ্বল।

নীল ও হলুদ আমার প্রিয় রং, সে সম্মতি সূচক মাথা নাড়ল। আমার সব তীর আমার জন্যে গ্রিপ্পা বানিয়েছে। সে অ্যাভারিসের সবচাইতে ভালো তীর প্রস্তুত কারক। প্রতিটি তীর যা সে বানায় তা পুরোপুরি সোজা ও সুষম গতিতে উড়ে। তার সজ্জা ও স্মারকগুলো এক শিল্প। দেখো সে কিভাবে খোদাই করেছে ও আমার তারা এঁকেছে। টাইটা তার আঙুলের মধ্যে তীরটা ঘুরাল এবং খাপের মধ্যে ওটা ফিরিয়ে দেয়ার পূর্বে তীরটার প্রশংসা করল।

টর্কের তীরের স্মারক কি? সে হালকাভাবে জিজ্ঞেস করল।

সে বিরক্তির একটা ভাব করল। আমি জানি না। কারণ আমি ওকে সম্ভবত কোন বন্য শূকর বা একটা ষাঁড় মনে করি। আজকের মত ও সামনের সব দিনের জন্যে টর্ক আমার জন্য যথেষ্ট। সে টাইটাকে বেলের শরবত দিল, আমি জানি তুমি মধু কতটা পছন্দ কর। সুন্দরভাবে সে বিষয়টা পরিবর্তন করল এবং টাইটা তার পরবর্তী পছন্দের বিষয়টার অপেক্ষায় রইল। এখন, আমার তোমার সাথে আমার কিছু নাজুক বিষয়ে কথা বলার আছে। সে লাজুক ভাবে বলল। তারা যে ঘাসের উপর বসে আছে সেখান থেকে সে একটা বন্য ফুল তুলে নিল এবং একটি মালা বানাতে শুরু করল। তার দিকে সে তাকাল না, কিন্তু তার গাল দুটো যা ইতোমধ্যে পরিশ্রমের চিহ্নগুলো হারিয়ে ফেলেছে আরো একবার গোলাপি হল।

ফারাও নেফার সেটির বয়স ১৪ বছর ৫ মাস। তোমার চেয়ে প্রায় এক বছরের বড়। সে আইবেক্স-এর চিহ্ন নিয়ে জন্মেছে যা তোমার বিড়াল চিহ্নের সাথে সুন্দর মিলে যায়। টাইটা তাকে পরিমাপ করল, আর সে তার দিকে অবাক হয়ে তাকাল। তুমি কিভাবে জানলে আমি তোমাকে কি জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছি? তারপর সে তার হাত তালি দিল। অবশ্যই তুমি জান। কেননা তুমি হচেছা ম্যাগোস।

ফারাও-এর পক্ষ থেকে তোমাকে আমি একটা সংবাদ দিতে এসেছি, টাইটা তাকে বলল।

সাথে সাথে তার পূর্ণ মনোযোগ তার উপর নিবদ্ধ হল। একটা সংবাদ? সে কি জানে আমি কে?

সে খুব ভালো করেই তা জানে। টাইটা শরবতে চুমুক দিল। আরো একটু মধু দরকার। সে কিছু মধূ বোলে ঢালল এবং নাড়ল।

আমাকে নিয়ে মজা করো না, ওয়ারলক। সে তার দিকে কটমট করে তাকাল। এখনি আমাকে আমার সংবাদটা দাও।

ফারাও তোমাকে ও তোমার সহচরদের কাল ভোরে ঝোঁপের মাঝে হাঁস শিকারে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং তারপর লিটল ডোভ দ্বীপে সকালের নাস্তায়।

*

ভোরের আলোটা ছিল কামারশালার কয়লার ভেতর থেকে বের করে আনা দগ্ধ তলোয়ারের ফলার ন্যায় রাঙা। আর এর নিচে প্যাপিরাসের অগ্রভাগ শক্ত কালো নকশার ন্যায় সৃষ্টি করেছে। এই সময়ে, সূর্য ওঠার পূর্বে তাদের নিচু করার জন্য কোন বাতাসের প্রবাহ ছিল না কিংবা তাদের স্থবিরতা ভাঙার কোন শব্দ।

কটা ছোট উপহ্রদের বিপরীত পাড়ে দুটি শিকারী ছোট নৌকা নোঙ্গর করা ছিল, যা খোলা পানিতে ঘেরা জলজ উদ্ভিদে আটকে ছিল। ৫০ কিউবিটের কম দূরত্বে তারা ছিল। রাজ শিকারীরা প্যাপিরাসের লম্বা কান্ড বাঁকিয়ে শিকারীদের উপর ছাদ তৈরি করে দিয়েছে।

হ্রদের উপরিভাগ স্থির ও শান্ত ছিল। আকাশ মসৃণ ব্রোঞ্জের আয়নার মতো প্রতিফলন করছিল। আর তাই নেফারের জন্য অন্য নৌকায় থাকা মিনটাকার মাধুর্যপূর্ণ অবয়ব চেনাটা যথেষ্ট ছিল। তার কোলের উপর আড়াআড়িভাবে ধনুকটা রাখা এবং দেবী হাথোর মূর্তির ন্যায় সে স্থির হয়ে বসে আছে।

এই সকালে তাদের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতকে সে তার মনে দীর্ঘস্থায়ী করার চিন্তা করল। তখনো অন্ধকার ছিল, সকালের ক্ষীণ আভা তারাটার সৌন্দর্য পুরোপুরি মলিন করার মত ছিল না, যেগুলো ধরনীর উপর ঝুলে ছিল। প্রতিটি তারা এতো স্পষ্ট ও উজ্জ্বল ছিল যে মনে হল সে ধরতে পারবে এবং পাকা ডুমুরের মতো গাছ থেকে পেরে আনতে পারবে। মিনটাকা মন্দিরের পথ দিয়ে নেমে এল, মশাল বাহকেরা তার পথ আলোকিত করল এবং দাসীরা কাছ থেকে তাকে অনুসরণ করল। নদীর ঠাণ্ডা বাতাস থেকে রক্ষা পেতে সে একটা পশমি হুড মাথার উপর পরিধান করেছে। ফলে অন্ধকারে যে কোনদিকে তাকানোর সুবিধেটা সে পাচ্ছে।

ফারাও হাজার বছর বেঁচে থাকুক।

এই শব্দগুলোই সে তাকে প্রথম বলতে শুনল। যে কোন বাদ্যযন্ত্রের চেয়ে তার কণ্ঠস্বর মিষ্টি। এটা যেন ভূতুড়ে আঙুল তার ঘাড়ের পিছনে আঘাত করেছে। নিজের কণ্ঠস্বর তার খুঁজে পেতে কিছু সময় লাগল। হাথোর আপনাকে ভালোবাসুন। সে কিভাবে তাকে অভিবাদন জানাবে সে ব্যাপারে টাইটার সাথে আলোচনা করেছে এবং যতোক্ষণ না তা আয়ত্ত হয়েছিল ততোক্ষণ সে তা মহড়া দিয়েছে। যখন সে তার হুডের শূন্যে হাসল তার দাঁতের ঝলকানি সে দেখল তখন। সে আরো কিছু যোগ করার সাহস পেল যা টাইটা তাকে পরামর্শ দেয়নি। এটি তার কাছে উদ্দীপনার ঝলক হিসেবে এল। সে আকাশের উজ্জ্বল তারার দিকে নির্দেশ করল। দেখুন! ঐ যে আপনার নিজের তারা। সে শিকারী নক্ষত্রপুঞ্জ দেখার জন্য মাথা তুলল। তারার আলো তার চেহারায় পড়ল ফলে সে এখানে আসার পর এই প্রথম বারের জন্যে তার চেহারাটা দেখল। তীক্ষ্মভাবে সে তার দম ধরল। নিজের অভিব্যক্তিটা সে শান্ত রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার মনে হল এর চাইতে আকর্ষণীয় কোন কিছুই সে আর কোনদিন দেখেনি। প্রভু আপনার জন্য ওটা বিশেষভাবে ওখানে বসিয়েছেন। প্রশংসার বাক্য তার মুখে চলে এল।

সঙ্গে সঙ্গেই তার চেহারা আলোকিত হল এবং তাকে আরো বেশি সুন্দর দেখাল। ফারাও যেমন রমনী মোহন তেমনি সৌজন্যময়ী। সে ছোট একটু তিরস্কারমূলক অভিবাদন জানাল। তারপর সে অপেক্ষারত নৌকায় উঠল। যখন রাজ শিকারীরা বৈঠা বেয়ে তাকে ঝোঁপের ভিতরে নিয়ে গেল তখন পর্যন্ত সে পিছু ফিরে তাকাল না। এখন সে নিজে নিজেই তার কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করল যেন ওগুলো কোন প্রার্থনাঃ ফারাও যেমন রমনী মোহন তেমনি সৌজন্যময়ী।

ঝোঁপের মধ্যে থেকে একটা বক গম্ভীর শব্দে বের হল। এটি একটা সংকেত। হঠাৎ বাতাস পাখির কলতানে মুখর হয়ে উঠল। তারা কেন পানিতে এসেছে নেফার প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। সে নৌকায় বসা সুকুমার অবয়ব থেকে তার দৃষ্টি পানিতে সরাল ও নিক্ষিপ্ত লাঠির দিকে তাকাল। সে ধনুকের পরিবর্তে লাঠি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ সে নিশ্চিত যে ভারি অস্ত্র ব্যবহার করার মত তার শক্তি বা দক্ষতা কোনটাই নেই। এটা তাকে একটা আলাদা সুবিধা দিবে। একটা তীরের চাইতে দক্ষভাবে নিক্ষিপ্ত ঘূর্ণনরত একটা লাঠি বেশি প্রশস্ত করে ছুটতে পারে। এটার গদার মতই ভারি ও ওজন। একটা ভোতা তীরের চাইতে ডালে বসা একটা পাখিকে সহজে নিচে ফেলতে পারবে। আবার একটা তীর জলজ পাখির ঘন পুচ্ছ দ্বারা সরে যেতে পারে। নেফার তার শিকারী দক্ষতা দিয়ে মিনটাকাকে প্রভাবিত করতে সংকল্পবদ্ধ ছিল।

ভোরে হাসদের প্রথম ঝকটা উড়ে নিচে নেমে এল। ওগুলো ছিল চকচকে কালো ও সাদা এবং প্রতিটির চুর অগ্রভাগে আলাদা আলাদাভাবে গাঁট রয়েছে। ঝকের প্রথম পাখিটা ভয় পেয়ে সরে গেল এবং অন্যদেরও আয়ত্তের বাইরে নিয়ে গেল। সেই সময়ে বিশ্বাসঘাতক হাঁসটা মনমোহন রূপে ডাকতে লাগল। ওগুলো ছিল আটক ও বশীভূত পাখি যা শিকারীরা হ্রদের ভোলা পানিতে ছেড়েছিল। একটা সুতা দিয়ে ওগুলোর পাখ ও পা নিম্নদেশের কাদার মধ্যে একটা পাথরের সাথে বাঁধা ছিল।

বন্য হাঁসগুলো প্রশস্ত বৃত্তাকারে ফিরে এল। তারপর একে একে পানিতে নামতে লাগল এবং ঘাতক পাখিগুলোর দিকে খোলা পানিতে সারিবদ্ধ হয়ে আসতে লাগল। তারা তাদের পাখা প্রসারিত করে ভাসতে লাগল, দ্রুত উচ্চতা হারিয়ে সোজা নেফারের নৌকার উপর দিয়ে অতিক্রম করল। ফারাও মুহূর্তটা পরিচ্ছন্নভাবে পরিমাপ করল এবং লাঠি নিয়ে উঠে দাঁড়াল ও নিক্ষেপ করার জন্যে প্রস্তুত হল। সে অগ্রবর্তী পাখিটার ঊর্ধ্বমুখে প্রসারিত হওয়ার অপেক্ষায় ছিল এবং তারপর উড়তে দিল। লাঠিটাকে পাশাপাশি ডিগবাজি খাইয়ে উপরে পাঠাল। এদিকে হাঁসটা মিসাইলটি আসতে দেখল এবং ওটাকে এড়ানোর জন্যে একটা পাখা ফেলে দিল। মুহূর্তের জন্য ওটার মনে হল সে হয়তো সফল কিন্তু তারপর একটা ধুপ করে শব্দ হল। পালকের একটা বিস্ফোরণ এবং হাঁসটা অনিয়ন্ত্রিত ডিগবাজি দিয়ে পড়তে লাগল একটা ভাঙ্গা ডানা টেনে টেনে। বেশ পানি ছিটিয়ে পাখিটা পানিতে পড়ল কিন্তু প্রায় সাথে সাথে নিজেকে সামলে নিল ও পানিতে ডুব দিল।

দ্রুত! ওটার পিছু যাও। নেফার চিৎকার করে বলল। চারটা দাস বালক পানির মধ্যে ধার ঘেঁষে ঝুলে ছিল, শুধু তাদের মাথা দেখা গেল। তারা নৌকার কিনারা অবশ আঙ্গুল দিয়ে ধরেছিল। ইতোমধ্যে ঠাণ্ডায় তারা দাঁতে দাঁতে চেপে ঠকঠক করছিল।

দুজন পতিত পাখিটা ধরতে সাঁতরে গেল কিন্তু নেফার জানত কোন লাভ হবে না। কোন আঘাত ছাড়া শুধু ভাঙ্গা ডানা নিয়ে হাঁসটা ডুব দিয়ে সাঁতরে চলে যাবে। পাখি হারিয়ে গেল, সে তিক্তভাবে ভাবল। এদিকে দ্বিতীয়বার লাঠি ছোঁড়ার পূর্বে সে দেখল হাঁসের ঝাঁকটা হ্রদের কোণাকুনি মিনটাকার নৌকার দিকে উড়ে আসছে। ঝকটা এখন নিচু হচ্ছে। যাইহোক, তারা খুব দ্রুত যাচ্ছিল। তাদের ফলার মত ডানাগুলো বাতাসে শিষ দিল।

অন্য নৌকার শিকারীকে নেফার গণনাই করে নি। ঐ উচ্চতায় ও গতিতে কারো পক্ষে লক্ষ্য স্থির করা কঠিন তবে একজন দক্ষ ধনুকধারী ছাড়া। খুব দ্রুত ক্রমান্বয়ে দুইটা তীর বিস্তৃত হওয়া হাঁসগুলোর উদ্দেশ্যে উঠে গেল। দুটি আঘাতের আওয়াজ হ্রদের চারদিকে পরিষ্কারভাবে বয়ে গেল। দুটি পাখি অদ্ভুত নির্জীবভাবে পতিত হচ্ছিল। ডানাগুলো ঢিলা ও মাথাটা অসহায়ভাবে তারা নড়াচড়া করছিল। তীর পাখি দুটোকে নিশ্চিত বধ করেছে। ওগুলো টুপ করে পানিতে পড়ল ও স্থিরভাবে সেখানেই ভেসে রইল। সাঁতারুরা সহজেই ওগুলো তুলে নিল ও মিনটাকার নৌকার দিকে সাঁতরে ফিরে এল। তাদের দাঁতে শিকার ধরা ছিল।

দুইটি সৌভাগ্যজনক তীর, নেফার তার মতামত দিল। নৌকার অগ্রভাগে বসে টাইটা তার সাথে যোগ করল কোন হাসি না দিয়ে, দুইটি অভাগা হাঁস।

এখন আকাশ পাখিতে পূণ। সূর্যের প্রথম রশ্মি পানিতে পড়তেই সেগুলো কালো মেঘের মধ্যে উঠল। ঝকটা এতো ঘন ছিল যে দূর থেকে ওটাকে মনে হচ্ছিল যেন জলজ উদ্ভিদের চাঁদোয়া ধিক ধিক করে জ্বলছে ও কালো ধোঁয়ার মেঘ সৃষ্টি করছে। নেফার বিশটি হালকা জাহাজ ও সমপরিমাণ নৌকাকে হাহোর মন্দিরের তিন মাইল পর্যন্ত খোলা পানি পর্যবেক্ষণ করতে এবং যে কোন জলজ পাখিকে ধরতে আদেশ দিয়েছে। শুধুমাত্র বার রকমের হাঁস ও রাজ হাঁসই নয় আইবিস, বক এবং সারসও উড়ছিল। প্রতিটি পর্যায়ে মাথার অনেক উপর থেকে আন্দোলনরত প্যাপিরাসে অগ্রভাগ পর্যন্ত তারা কালো দলে ঘুরছে অথবা ভি আকৃতিতে নিচের দিকে ডানা ঝাঁপটিয়ে দ্রুত নামছে। তারা চিৎকার ও চেঁচামিচি, ডাকাডাকি ও আর্তনাদ করছিল।

যখন মিনটাকার দাসী মেয়েরা তাকে আরো ভালো করার জন্য উৎসাহ দিল, বেসুরে ধ্বনিগুলোও মিষ্টি হাসি ও মেয়েলি উল্লাস মনে হল।

কাজটির জন্য তার হালকা ধনুকটা মানানসই হয়েছে। কোন শক্তি নষ্ট না করেই এটা দ্রুত নিশানা লাগতে উপযুক্ত। প্রথাগত ভোতা আগওয়ালা তীর সে ব্যবহার করছে না। কিন্তু তার পরিবর্তে সে গ্রিপ্পার বিখ্যাত তীর যা তার জন্যে তৈরি করা হয়েছে সেগুলো ব্যবহার করছে। সূঁচের অংশ ঘনপালকের ভিতর দিয়ে চলে যায় এবং সরাসরি হাড়ে আঘাত করে। কোন কথা না বলেই সে বুঝেছে নেফার শিকারের প্রতিযোগিতা করতে ইচ্ছুক এবং সে প্রমাণ করেছে যে তার শিকারী প্রবণতা তার মতই হিংস্র। তার প্রথম ব্যর্থতা ও ধনুকের উপর মিনটাকার অপ্রত্যাশিত দক্ষতায় নেফারের নাভিশ্বাস উঠে গেল। নিজের কাজে মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে অন্য নৌকায় কি হচ্ছে তার দিকেই তার মনোযোগ বেশি। সবসময় সে ওদিকে এমনভাবে তাকাল যেন আকাশ থেকে মৃত পাখিগুলো পড়ছে। এটা তাকে আরো হতম্ভ করল। বাছ-বিচারের জ্ঞান যেন তাকে ছেড়ে চলে গেছে এবং সে লাঠি খুব তাড়াতাড়ি অথবা দেরিতে ছুঁড়তে লাগল। সান্ত্বনা পাওয়ার চেষ্টায় সে টানটান হল ও তার বাহু ঝাঁকাতে লাগল পুরো শরীরের পরিবর্তে। তার ডান হাত দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ল। অতি সাধারণভাবেই যে তার নিক্ষিপ্ত বাহুর চাপ কমাল এবং তার কনুই বাঁকাল, ফলে প্রায় কব্জি মচকেই গেল।

সাধারণত যে দশটা নিক্ষেপের মধ্যে ছয়টা লাগাতে পারত কিন্তু এখন অর্ধেকের বেশি ভুল হচ্ছে। তার হতাশা বাড়ল। সে যে পাখিগুলোকে নিচে নামিয়ে আনল তার বেশিরভাগ শুধু চমকে গেছে অথবা কুঁচকে গেছে এবং পানির নিচে ডুব দিয়ে এবং পুরো প্যাপিরাসের ঝোঁপের মধ্যে সাঁতরে গিয়ে, শিকড় ও কাণ্ডের নিচে থেকে তার দাস বালকগুলোকে এড়িয়ে গেল। অপর নৌকার উপর মৃত পাখির স্তূপে পাখির সংখ্যা করুণভাবে বাড়তে লাগল। বিপরীতে অন্য নৌকা হতে খুশি চিৎকার প্রায় অবিরামভাবে চলতে লাগল।

উন্মাদনায় নেফার তার বাঁকানো লাঠি বাদ দিল এবং ভারি যুদ্ধের ধনুক তুলে নিল, কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। তার ডান হাত প্রায় পুরোপুরি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ধুন টানাটা ছিল কষ্টের এবং সে দ্রুতগামী পাখির পিছনে ও ধীরগতির পাখির সামনে নিক্ষেপ করল। টাইটা তাকে ফাঁদের মধ্যে সবচেয়ে গভীরভাবে নাকানিচুবানি খেতে দেখল যা সে নিজেই নিজের জন্য পেতেছে। একটু উপহাস তার প্রকৃত কোন ক্ষতি করবে না। সে নিজে নিজে বলল।

কয়েকটা কথায় সে নেফারের ভুলটা শুধরে দিতে পারত: প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে টাইটা মান সম্মত কয়টা বই লিখেছিল, আল শুধু তা রথ চালনা ও কৌশলের উপরই নয় ধনুক বিদ্যার উপরও। আরো একবার বালকটির জন্য তার হৃদয় সহানুভূতিতে পূর্ণ হল এবং সে গোপনে হাসল যখন সে দেখল নেফার আবারো ভুল নিশানা করল এবং মিনটাকা একই ঝাঁক থেকে দুটি পাখি নামিয়ে আনল যখন তারা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল।

যা হোক, তার রাজার প্রতি তার করুণা হল যখন মিনটাকার একজন দাস হ্রদ সাঁতরে এল ও নেফারের নৌকার পাশে ঝুলে রইল। মহান রাজকুমারী মিনটাকা আশা করছেন যে মহান ফারাও নিশ্চয়ই জেসমিন সুভাসিত দিন ও তারা ভরা রাতে নাইটিংগেলের গান উপভোগ করেছেন। যাইহোক তার নৌকা তার থলের ভারে প্রায় ডুবতে শুরু করেছে এবং তার ক্ষিধে পেয়েছে, যার অর্থ আজ এই পর্যন্ত থাকুক।

একটা অসময়ের বুদ্ধি বিলাস! টাইটা ভাবল, যেহেতু নেফার এই ধৃষ্টতায় ভয়ংকরভাবে ভ্রুকুটি করে তাকাল।

তুমি যেসব শিম্পাঞ্জি ও রাগী কুকুর প্রভুর পূজারী তাদের ধন্যবাদ দিতে পার দাস যে আমি একজন সকরুণ ব্যক্তি। নইলে আমি তোমার কুৎসিত মাথাটাকে কুচিকুচি করতাম এবং ঐ ঠাট্টার উত্তর হিসেবে তোমার মালকিনের কাছে তা ফেরত পাঠাতাম।

এখন টাইটা কোমলভাবে বিষয়টা হস্তক্ষেপ করল:

ফারাও তার অচিন্তার জন্য ক্ষমা প্রার্থী; কিন্তু সে খেলাটা এতো উপভোগ করছিল যে সময়ের কথা ভুলেই গিয়েছিল। দয়া করে তোমার মালকিনকে বলো আমরা খুব শীঘ্রই নাস্তার জন্যে যাব।

নেফার ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল কিন্তু তার ধনুক উঠিয়ে নিল এবং টাইটার সিদ্ধান্ত বাতিলের কোন প্রয়াস দেখাল না। দুটি ছোট নৌকা তীরের দিকে বেয়ে চলল কাছাকাছি হয়ে যাতে পাটাতনে রাখা হাঁসের স্তূপ সহজেই তুলনা করা যায়। কোন নৌকার লোকেরাই কোন কথা বলল না। কিন্তু সবাই আজ সকালের শিকারের ফলাফল সম্পর্কে সচেতন।

মহামান্য, মিনটাকা নেফারকে ডাকল, আমি অবশ্যই আপনাকে অন্যরকম একটা সকালের জন্য ধন্যবাদ দেব। আমার মনে নেই কবে নিজেকে নিজে এতো উপভোগ করেছি। তার কণ্ঠ সুরেলা এবং তার হাসি দেবদূত প্রতিম।

আপনি খুব দয়ালু ও ক্ষমাশীল। কোন হাসি না দিয়ে নেফার তা খারিজ করার একটা রাজকীয় ভাব দেখাল। আমি ভেবেছিলাম এটা বরং একটা খারাপ খেলা।

সে তার দিক থেকে অর্ধেক ঘুরল ও বিষণ্ণভাবে জলজ উদ্ভিদ ও পানির দিকে তাকিয়ে রইল। মিনটাকা এই শীতল আচরণে ন্যূনতম বিতৃষ্ণা দেখাল না, কিন্তু তার দাসী মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল, চলো ফারাওকে আমরা দি মানকি ও দি ডানকি–এর কিছু লাইন শুনাই। তার একজন দাসী তাকে বীণা দিল এবং অনিয়তভাবে বাজাতে লাগল। তারপর বাচ্চাদের গানের প্রথম লাইটা গাইতে শুরু করল। দাসীরা কোরাসে যোগ দিল, যা কর্কশ জম্ভ ও অনিয়ন্ত্রিত হাস্য কণার যোগ করল।

নেফার অবাক বিস্ময়ে ঠোঁট মিলালো কিন্তু সে একটা শীতল ভাব গাম্ভীর্যতা ধারণ করল যেখান থেকে সে ফিরে আসতে পারল না। টাইটা দেখতে পেল সে আনন্দে যোগ দিতে চাইছে কিন্তু আরো একবার সে নিজেই নিজের ফাঁদে আটকে গেল।

প্রথম ভালোবাসা এ রকমই অশমিত আনন্দ। টাইটা নিদারুন নির্মমতার সাথে ভাবল এবং অন্য নৌকার মেয়েগুলোর আনন্দ দিতে সে তৎক্ষণাৎ বানর গাধাকে যা বলল তার একটা নতুন অর্থ রচনা করল যা পূর্বের অন্য যেকোন অর্থের চেয়ে হাস্যকর। তারা নতুন করে ডেকে উঠল ও আনন্দে হাততালি দিল।

নেফার নিজেকে আরো একা অনুভব করল ও অবচেতন ভাবে মুখটা গোমড়া করল। তীরে নামতে নামতেও তারা গান গাইছিল। তীরটা খাড়া হয়ে উঠে গেছে এবং নিচে কালো ও আঠালো কাদা। মাঝিরা হাঁটু পর্যন্ত পিচ্ছিল কাঁদায় লাফিয়ে নামল এবং দাসরা প্রথম নৌকাটা সোজা করে ধরল যেন রাজকন্যা ও তার বান্ধবীরা সহজে ফাঁকা স্থানটা পার হয়ে তীরের চূড়ার শক্ত মাটিতে আসতে পারে। তারা নিরাপদে তীরে নামতেই রাজ নৌকা এল ও দাসরা নেফারকে উঁচু তীরে মিনটাকার সাথে যোগ দিতে পার করে দেয়ার জন্য তৈরি হল। কিন্তু সে রাজকীয়ভাবে তাদের একপাশে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত করল। এক সকালের জন্য সে যথেষ্ট উপহাস ও ঠাট্টা সহ্য করেছে এবং সে তার বাকি সম্মান ঊর্ধ্ব নগ্ন ভেজা দাসদের উপর ঝুলে আরো নিচু করতে নারাজ। সে অজান্তেই আড় কাঠের উপর ভারসাম্য রক্ষা করল এবং সকলে তা সম্মান সহকারে দেখল কারণ সে একজন অতি চমৎকার অবয়ব। মিনটাকা তার আবেগ দেখাতে চায়নি। কিন্তু সে ভাবল সে হল তার দেখা সবচাইতে সুন্দর সৃষ্টি, স্লিম ও নরম এবং মসৃণ চুল সহকারে কিশোর দেহ যা মাত্র পৌরুষের শক্ত দেহ রেখা রূপ নিতে শুরু করেছে। এমনকি তার উদ্ধত, বিরূপ অভিব্যক্তিও তাকে বিমুগ্ধ করেছে।

দুই নৌকার মাঝের পথ নেফার অতিক্রম করল এবং একটা তরুণ সিংহের ন্যায় অ্যাকাসিয়া গাছের শাখা থেকে নামার ন্যায় ভূমিতে নামল। সে মাধুর্যমন্ডিত ভাবে উঁচু তীরে পদার্পন করল যেখানে মিনটাকা দাঁড়িয়ে ছিল তার প্রায় এক হাতের মধ্যে। সে সেখানে থামল এবং জানত সবার চোখ এখন তার উপর। তখন তীরটা হঠাৎ নিচে ভেঙে পড়ল। ভঙ্গুর একখণ্ড শুকনো কাদা যার উপর সে দাঁড়িয়ে ছিল তা তার পায়ের নিচে ভেঙে গেল। শেষ মুহূর্তে সে তার বাহু প্রসারিত করল, তার ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করল তারপর ঝোঁপের মধ্যে নিচে পড়ে গেল।

সবাই ভয়ে নিচে তার দিকে তাকাল। মিশরের রাজা কোমর পর্যন্ত ডোবানো নীলের আঠালো কালো কাদার মধ্যে হতভম্ব অভিব্যক্তি নিয়ে বসে আছে যা দেখে তারা আতংকিত হল। দীর্ঘক্ষণ কেউ নড়ল না কিংবা কথা বলল না। তারপর মিনটাকা হেসে উঠল। মিনটাকা এমনটা করতে চায় নি কিন্তু বিষয়টা তার নিজেকে নিয়ন্ত্র করার মতো ছিল না। এটা ছিল আনন্দপূর্ণ ছোঁয়াচে হাসি যে তার বান্ধবীদের কেউ নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। তারা হাসিতে ফেটে পড়ল যা শিকারী ও মাঝিদের মধ্যেও সংক্রমিত হল। এমনকি টাইটাও যোগ দিল, বাঁধাহীন অট্টহাসিতে।

এক মুহূর্তের জন্য মনে হল নেফার কান্নায় ভেঙে পড়বে কিন্তু তারপর তার রাগ যা অনেকক্ষণ আটকে ছিল তা ফেটে পড়ল। সে একমুঠো কালো কাঁদা নিয়ে হাস্যরত রাজকন্যার দিকে ছুঁড়ে মারল। তার অবমাননা তাকে শক্তি দিল এবং তার বাহু উন্নতি করল যখন মিনটাকা আনন্দে এতোটাই বিভোর ছিল যে না সে মাথা নিচু করতে পারল না পাশ কাটাতে পারল এবং কাঁদা তার পুরো চেহারায় আঘাত করল। তার হাসি থেমে গেল এবং চলন্ত কালো মুখোশের মধ্য দিয়ে সে নেফারের দিকে বড় বড় চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইল।

এবার নেফারের হাসির পালা। ঝোঁপের মধ্যে বসে সে মাথাটা পিছনে হেলে তিরস্কার ভরা হাসি দিয়ে তার হতাশা ও অবমাননা দূর করল। আর ফারাও হাসতেই পুরো দুনিয়া তার সাথে যোগ দিল। দাসরা, মাঝিরা ও শিকারীরা তাদের আনন্দের চিৎকার দ্বিগুণ করে দিল।

মিনটাকা দ্রুত তার ধাক্কা সামলে উঠল এবং তারপর কোন সতর্কবাণী ছাড়াই সে তীরে আক্রমণ করার জন্য নেমে পড়ল। সে তার সমস্ত ওজন নিয়ে নেফারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। নেফার এতোটাই বিস্মিত হল যে তার মাথার উপর পুরোপুরি বসে থাকা মিনটাকাকে নিচে নেওয়ার পূর্বে সে ঠিকমত দম নিতে পারল না।

সে পানির উপর নাকানিচুবানি খেল, কাদাময় তলদেশে কিছু ধরার চেষ্টা করল কিন্তু তার ওজন তাকে পরাজিত করল। দুই হাত দিয়ে সে তার গলা চেপে আছে। তাকে সে ছুঁড়ে ফেলার চেষ্টা করল। কিন্তু সে ছিল কাঁদায় ঢাকা বাইন মাছের ন্যায় ক্ষিপ্র ও পিচ্ছিল। খুব কষ্টে সে তাকে সরাল ঠিক ততোটুকু সময়ের জন্য যে সে শুধু তার মাথাটা বের করল এবং দ্রুত দম নিল এবং তারপরই সে আবার তাকে পানির নিচে নিয়ে গেল। সে কোনভাবে তার উপরে উঠল কিন্তু তাকে ধরে রাখা খুব কষ্টের হল। সে নড়াচড়া করল এবং অবাক করা শক্তিতে লাথি মারল। তার কাপড় তার কোমর পর্যন্ত উঠে গেল এবং তার পা ছিল নগ্ন ও কোমল। সে তার একটি পা তার সাথে আটকালো এবং ঝুলে রইল। এখন তারা মুখোমুখি এবং পিচ্ছিল কাদার মধ্যে দিয়েও সে তার দেহের উষ্ণতা অনুভব করছিল।

দুজনার ময়লা চেহারার ফারাক মাত্র ইঞ্চি পরিমাণ। তার চুল তার চোখের উপর ঝুলে আছে এবং সে হতভম্ব হয়ে গেল এ বুঝে যে সে কাঁদায় ঢেকেও তার দিকে দাঁত বের করে হাসছে। সেও দাঁত বের করে হাসল এবং তারপর উভয়েই জোরে হেসে উঠল। কিন্তু কেউই হারতে রাজি নয় এবং তারা যুদ্ধ করতেই থাকল।

তার বুক নগ্ন হয়েছিল এবং তার কামিজ এতোটাই ভেজা ও পিন পাতলা ছিল যে ওটার অস্তিত্ব পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছিল না। তার নগ্ন পা এখনো তার সাথে আটকে রয়েছে। তাদের শক্ত থাবা থেকে নিজেকে চাপ দিয়ে মুক্ত করার জন্য সে তার একটি হাত নিচে নামিয়ে আনল। অনিচ্ছুকভাবেই তার ডান হাত একটা শক্ত গোলাকার নিতম্বের উপর চলে এল যা বেশ জোরে নড়াচড়া করছিল।

সে একটা অদ্ভুত ও আনন্দময় অনুভূতিতে সচেতন হল এবং তার মনে হল তা তার সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ছে এবং নিজেকে দমিত করার অত্যাবশকয়ীতা বেরিয়ে এল। সে তাকে ধরে রাখতে তৃপ্ত হল এবং তাকে তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে দিল। সে এই নতুন ও অসাধারণ অনুভূতি উপভোগ করছিল।

হঠাৎই মিনটাকার হাসি থেমে গেল এবং সে বিষয়টা বুঝতে পারল। উভয় দেহের নিমাংশের একটা প্রলব্ধতা বাড়তে লাগল যা মাত্র কিছু সময় পূর্বেও ছিল না। যখনই সে বুঝতে পারল এটা কি তখন হঠাৎ তার মনে পড়ল সব। নুরিয়ান দাসিটি তাকে যা বলেছিল: একবার যখন আপনি রাগত অবস্থায় এক চোখা প্রভুকে দেখবেন তারপর আপনি আর কোন প্রার্থনা হায়োরের কাছে করে নষ্ট করবেন না। নিজেকে পিছনে ঠেলে মিনটাকা নেফারের বন্ধন থেকে বেরিয়ে গেল এবং কাঁদার উপর বসে আতঙ্কিত দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল। নেফার বসার চেষ্টা করল এবং হতবুদ্ধি হয়ে তার দিকে ঘুরল। উভয়েই হাঁপাচ্ছিল যেন তারা কোন পরিশ্রান্তিকর প্রতিযোগিতায় দৌড়িয়েছে।

অট্টহাসি ও হাসির আওয়াজ উঁচু তীর থেকে ধীরে ধীরে থেমে গেল যখন তারা বুঝল অস্বাভাবিক কোন একটা কিছু হয়েছে এবং নিরবতা অসহনীয় হয়ে উঠল। টাইটা তখন কোমল স্বরে বলল:

মহামান্য, যদি আরো কিছুক্ষণ সাঁতার কাটেন তবে নিজেকে আপনি যে কোন চলমান কুমিরকে সুন্দর একটা সকালের ভোজ হিসেবে উপহার দিবেন।

নেফার লাফ দিয়ে যেখানে মিনটাকা আছে সে স্থানে গেল। সে মিনটাকাকে এমন আলতোভাবে দাঁড় করালো যেন সে সবচাইতে নাজুক হারিয়ান কাঁচ দিয়ে সে তৈরি। আঠালো কাঁদায় ও নীলের পানিতে মেখে তার কাঁদা মাখা চুল একাকার, তার মুখ ও কাঁধের উপর তা ঝুলছে। তার সখীরা রাজকন্যাকে দূরে একটা পরিষ্কার, জলজ উদ্ভিদে ঘেরা পুকুরে নিয়ে গেল। যখন সে আবার দৃষ্টি গোচর হল তখন সে তার শরীর থেকে আঠালো কাদার শেষ চিহ্নটি পর্যন্ত ধুয়ে ফেলেছে।

সখীরা তার পোশাকে একটা পরিবর্তন এনেছে। তাই মিনটাকাকে পরিষ্কার শুকনো সিল্ক ও মুক্তায় কারুকার্য খচিত পোশাকে আরো দূতিময় দেখাচ্ছে। বাহুতে সে স্বর্ণের বাজু এবং গলায় আফরোজা ও রঙিন কাঁচের একটা নেকলেস পরিধান করেছে। যদিও তার চুল ভেজা কিন্তু তা আঁচড়ানো ও পরিপাটি করে সাজানো। নেফার তার সাথে দেখা করার জন্য তাড়াহুড়ো করল এবং তাকে বিশাল স্কিগেলিয়া গাছে প্রসারিত শাখা-প্রশাখার ছায়ার নিচে নিয়ে গেল, যেখানে নাস্তার আয়োজন করা হয়েছে। প্রথমে নতুন জুটি ইতস্তত বোধ করল ও লজ্জা পেল। এখনো তারা। সেই বিশেষ মুহূর্তের অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। কিন্তু শীঘ্রই তাদের স্বাভাবিক। উঁচু শক্তি তাদেরকে জোরালো করল এবং তারা ঠাট্টা ও আলাপচারিতায় যোগ দিল। যদিও তাদের চোখাচোখি হচ্ছিল এবং প্রায় প্রতিটি শব্দ তারা তৃতীয় জনের উদ্দেশ্যে উচ্চারণ করল।

মিনটাকা ধাঁধা পছন্দ করে এবং সে তাকে একটা বিনিময়ের দ্বন্দ্ব যুদ্ধে আহ্বান করল। সে হিকস্ ভাষায় তা বলতে লাগল যা নেফারের জন্য আরো কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। আমার একটা চোখ ও একটা তীক্ষ্ণ নাক আছে। আমি আমার শিকারকে বারবার বিদ্ধ করি কিন্তু কোন রক্ত বের হয় না। আমি কে?

এটা তো খুবই সহজ, নেফার বিজেতার হাসি দিল। তুমি একটা সেলাইয়ের সঁচ। এবং মিনটাকা আত্মসমর্পণে হাত উপরে তুলল।

পুরস্কার দাও, দাসীরা চিৎকার করে উঠল। ফারাও ঠিক, পুরস্কার দাও।

একটা গান, নেফার দাবি করল। কিন্তু বানরেরটা নয়। একদিনের জন্য ওটা অনেক হয়েছে।

আমি আপনাকে নীলের গানটা শুনাবো। সে রাজি হল এবং যখন সে গানটা শেষ করল। নেফার আরো একটা শুনতে চাইল। শুধুমাত্র যদি আমাকে আপনি সাহায্য করেন তবেই, মহামান্য।

তার কণ্ঠ মোটাসোটা সাধারণ মানের। কিন্তু যখনই সে ভুল করছিল সে তার ভুল ঠিক করে দিল ও ফলে তার কণ্ঠ আগের চাইতে অনেক ভালো শুনাল।

নেফার তার বাও খেলার কোর্ট ও পাথর এনেছিল। টাইটা এটা তাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে এবং সে দক্ষ হয়ে উঠেছে। গান গাইতে গাইতে যখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ল তখন মিনটাকাকে সে তা খেলার আমন্ত্রণ জানাল।

আমার সাথে আপনাকে ধৈর্যশীল হতে হবে। কেননা আমি অনভিজ্ঞ। সে তাকে সতর্ক করল যখন সে বোর্ড সাজাচ্ছিল। বাও-একটা মিশরীয় খেলা এবং এবার সে আত্মবিশ্বাসের সাথে আশা করল যে তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে।

এটাকে ভয় পেয়ো না, নেফার তাকে উৎসাহ দিল। আমি তোমাকে শিখিয়ে দেবো।

টাইটা মুচকি হাসল কারণ সে এবং মিনটাকা যখন বুবাসতিতে তার ভাইকে চিকিৎসা করেছিল তখন কয়েক ঘণ্টা তারা দুজন রাজপ্রাসাদে তা খেলেছিল। আঠারো চালের মধ্যেই তার লাল গুটিগুলো পশ্চিমের দুর্গ দখল করে নেয় ও তার মধ্যের অংশকে তা হুমকি দিচ্ছিল।

আমি কি ঠিক কাজটি করেছি? সে মিষ্টি করে জিজ্ঞেস করল।

নদীর তীর থেকে আসা আওয়াজে নেফার রক্ষা পেল এবং একটা জাহাজ দেখার জন্য চোখ তুলল যা রাজ-প্রতিভূর পতাকাধারী ছিল এবং প্রণালি দিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসছে। কি দুর্ভাগ্য, ঠিক যখন খেলাটা জমে উঠেছে, সে ক্ষিপ্র গতিতে বোর্ড গোছাতে শুরু করল।

আমরা কি তাদের থেকে লুকাতে পারি না? মিনটাকা জানতে চাইল কিন্তু নেফার মাথা নেড়ে না জানাল। তারা ইতোমধ্যে আমাদের দেখে ফেলেছে। সে এই দর্শনটা পুরো সকাল জুড়েই আশা করছিল। আগে অথবা পরে রাজপ্রতিভূ অবশ্যই এই অবৈধ প্রমোদ ভ্রমণ সম্পর্কে শুনবে ও আসমরকে তার অযাচিত দায়িত্ব নিতে পাঠাবে।

তারা তীরে যেখানে বসেছিল তার নিচে জাহাজটা ভিড়ল এবং আসমর লাফিয়ে তীরে নামল। সে দৌড়ে পিকনিক পার্টির নিকট এল। আপনার অনুপস্থিতে রাজপ্রতিভূ খুবই অসম্ভষ্ট। তিনি এই মুহূর্তে আপনাকে মন্দিরে ফিরে যেতে বলেছেন, যেখানে রাজ-বিষয়াদি আপনার অপেক্ষায় আছে।

এবং আমি, লর্ড আসমর, আপনার অশোভন ব্যবহারে অসন্তুষ্ট, নেফার তার নিচু মর্যাদা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করল। আমি কোন সহিস বা ঘরের দাস নই যে ঐভাবে আমাকে সম্বোধন করবেন এবং আপনি রাজকুমারী মিনটাকার প্রতি কোন সম্মান দেখাচ্ছেন না। কিন্তু কোন যুক্তি নেই যে সে একজন শিশুর মত বিবেচিত হচ্ছে।

সে এখনো এই অবস্থায় সুন্দর ও আন্তরিকভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করল এবং মিনটাকাকে তার সাথে নৌকায় ফিরে যেতে আমন্ত্রণ জানাল, যখন তার সখীরা অন্য তরীতে গেল। টাইটা কৌশলে জাহাজের অগ্রভাগে রয়ে গেল কারণ এটাই ছিল তাদের একান্তে কথা বলার একমাত্র সুযোগ। তার কাছ থেকে কি আশা করে তা সম্পূর্ণ নেফার জানত না তবুও সে চমকে উঠল যখন কোন সূক্ষ্মতম বিরক্তি ছাড়াই সে দুই পক্ষের শান্তি চুক্তির সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনায় প্রবেশ করল। শীঘ্রই সে তার রাজনৈতিক ধীশক্তি ও শক্তিশালী ধারণা দিয়ে তার মনে দাগ কাটল। শুধুমাত্র আমরা, নারীরা যদি এই বিশ্ব পরিচালনার অনুমতি পেতাম তবে প্রথমত এখানে কোন অসভ্য যুদ্ধ থাকত না। সে উপসংহার টানল কিন্তু নেফার বিনা প্রতিবাদে তা মেনে নিল না। মন্দিরে ফেরার সারাটা পথ তারা অবিরত তর্ক করল। নেফারের কাছে যাত্রাটা খুব সংক্ষিপ্ত মনে হল এবং যখন তারা ভূমিতে নামল সে তার হাত ধরে বলল, আমি আবার তোমাকে দেখতে চাই।

আমিও তা চাই। সে তার হাত না সরিয়ে উত্তর দিল।

শীঘ্রই, সে জোর দিল।

খুব শীঘ্রই, সে মুচকি হাসল এবং আলতো করে হাত ফিরিয়ে নিল। তারপর যখন সে তাকে মন্দিরের দিকে চলে যেতে দেখল নেফার তখন এক অদ্ভুত বিচ্ছেদ অনুভূতি অনুভব করল।

*

আমার লর্ড, আপনি আমন-রা ধাঁধার ভবিষ্যৎ কথনে ছিলেন। আপনি জানেন প্রভুরা আমার প্রতি যে গুরুভার অর্পণ করেছেন আমি কখনো তাদের সে ইচ্ছা তাচ্ছিল্য করতে পারি না। তাই আপনার সুবিধা-অসুবিধা দেখা আমার দায়িত্ব। সর্বোপরি যা ঝুঁকিহীন কাজ একমাত্র সেগুলোতেই আমি বালকটিকে উদ্বুদ্ধ করতে পারি।

নাজা খুব সহজে শান্ত হওয়ার নয়। নেফার আসমরকে ফাঁকি দিয়েছে এবং সারাটা সকাল হিকস্ রাজকন্যার সাথে ঝোঁপের মধ্যে কাটিয়েছে বলে সে এখনো রেগে আছে।

আমি কিভাবে বিশ্বাস করি যে আপনি নেফারকে সাহায্য করছেন না? অধিকিন্তু, এ নির্বুদ্ধিতাকে আপনি উসকে দিয়েছেন।

আমার লর্ড, রাজপ্রতিভূ, আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে এটা আমাদের সাহসী উদ্যোগে কতটা গুরুত্বপূর্ণ যে আমি তরুণ ফারাও-এর পূর্ণ বিশ্বাস বজায় রাখছি। যদি আমি আপনার আদেশ ও দায়িত্বকে তাচ্ছিল্য করি তাহলে তা বালকটাকে বিশ্বাস করাবে যে আমি এখানে তার লোক। যা আমার উপর ধাঁধা কর্তৃক যে কঠিন দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তা সম্পাদন করতে সহজ হবে।

কৌশলে টাইটা রাজ-প্রতিভূর প্রতিটি অভিযোগ সরিয়ে দিল এবং এক সময় সে চেঁচানো বন্ধ করল। শুধু তিক্তভাবে কেবল বিড়বিড় করে ক্ষোভ প্রকাশ করল। এটা আবার যেন না হয়, ম্যাগোস। অবশ্যই আমি আপনার আনুগত্য বিশ্বাস করি। প্রভুদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া আপনার জন্যে বোকামি হবে। ভবিষ্যতে যখনই নেফার তার কক্ষ ত্যাগ করবে অবশ্যই আসমর ও তার বাহিনী তার সাথে থাকবে। সে হারিয়ে যাবে সে ঝুঁকি আমি নিতে পারি না।

আমার লর্ড, রাখাল রাজার সাথে মধ্যস্থতার কি খবর? এমন কি কিছু আছে যাতে আমি আপনাকে এ বিষয়ে সফল হতে সাহায্য করতে পারি? টাইটা সুকৌশলে শিকারী কুকুরটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিল এবং নাজা তা অনুসরণ করল।

অ্যাপেপি অসুস্থ। আজ সকালে এমন কাশি কাশল যে রক্ত চলে এল এবং তাকে আলোচনা সভা ত্যাগ করতে হল। যদিও সে নিজে হাজির হতে পারবে না, তবুও তার পক্ষ থেকে সে কাউকে আলোচনার জন্যে পাঠায় নি; এমনকি লর্ড টর্ককেও না যে কিনা তার বিশ্বস্ত। একমাত্র প্রভুই জানে ঐ বিশাল ভালুকটা আবার আলোচনায় আসতে কত সময় ব্যয় করে। আমরা কয়েক দিন এমনকি সপ্তাহ খানেক নষ্ট করতে বাধ্য হতে পারি।

অ্যাপেপির অসুখটা কি? টাইটা জিজ্ঞেস করল।

আমি জানি না, নাজা এমনভাবে বলল যেন তার মাথায় একটা ধারণা এল।

কেন আমি এটা আগে ভাবি নি? আপনি তো চাইলে আপনার দক্ষতা দিয়ে তাকে তার যে কোন অসুখ থেকে সুস্থ করতে পারেন। এখনি তার কাছে যান, ম্যাগোস এবং আপনার সর্বোত্তম চেষ্টা করুন।

.

রাজার বাসস্থানের কাছাকাছি আসতেই টাইটা উঠানের ওপাশ থেকে অ্যাপেপির কথা শুনল।

ফাঁদে পড়া কালো-কেশর সিংহের ন্যায় তার কণ্ঠ শোনাল এবং হুংকারটা জোরালো হল যখন টাইটা ঘরে প্রবেশ করল। দরজার চৌকাঠ অতিক্রম করার সময় সে তিনজন অশিরিশের যাজকের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে প্রায় যাচ্ছিল যারা রাজার উপস্থিতে ভয় পেয়েছে এবং ভারি ব্রোঞ্জের বোলসহ চৌকাঠের কাছে আছড়ে পড়ল। হিকস্ রাজা কর্তৃক ওটা ঘরের ওপাশ থেকে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। সে নরম চামড়ার স্তূপের উপরে নগ্ন অবস্থায় বসে আছে এবং বিছানার চাদরগুলো কক্ষের মাঝখানে জট পাকানো।

আপনি এতোক্ষণ কোথায় ছিলেন, ওয়ারলক? টাইটাকে দেখেই সে গর্জে উঠল। আমি ভোরের পূর্বে টর্ককে আপনাকে খুঁজতে পাঠিয়ে ছিলাম। এখন কেন এই পড়ন্ত বেলার মধ্যক্ষণে আপনি আমাকে ঐসব নারকীয় যাজকদের কটু বিষ ও গরম আংটা থেকে রক্ষা করতে এলেন?

আমি টর্ককে দেখি নি। টাইটা ব্যাখ্যা করল। কিন্তু যখনই লর্ড নাজা আমাকে বললেন যে আপনি অসুস্থ আমি সাথে সাথে তখন চলে এসেছি।

অসুস্থ? আমি শুধু অসুস্থ নই, ওয়ারলক। আমি প্রায় মৃত্যুযাত্রী।

আগে আমাকে দেখতে দিন। দেখি আপনাকে রক্ষা করতে কি করতে পারি।

অ্যাপেপি তার লোমশ পেটের উপর ভর করে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল এবং টাইটা তার পিঠের উপর লাল রঙের ভূতুড়ে ফোলা দেখতে পেল। যা রাজার দুহাতের মুঠির প্রায় সমান। আঙুলের ডগা দিয়ে হালকাভাবে তা স্পর্শ করতেই অ্যাপেপি ঝাঁকিয়ে উঠল এবং থেমে গেল। আস্তে টাইটা, আপনি দেখছি একত্রিক মিশরের যাজকদের মতই জঘন্য।

কিভাবে তা হল? টাইটা পিছিয়ে গেল। আপনার লক্ষণ কি ছিল?

এটা শুরু হয়েছিল আমার বুকে একটা তিক্ত ব্যথা নিয়ে। অ্যাপেপি স্থানটা স্পর্শ করল। তারপর আমি কাশতে শুরু করি এবং ব্যথাটা তীক্ষ্ণ হতে থাকে। অনুভব করলাম এখানে কিছু নড়ছে এবং তারপর ব্যথাটা আমার পিঠে চলে যায় এবং তারপর সেখানে এই পিন্ড তৈরি হয়। সে তার কাঁধের উপর দিয়ে হাত নিয়ে ফোলাটা স্পর্শ করল এবং গোঙিয়ে উঠল।

বেশি এগুবার পূর্বে টাইটা রেড সী-পেন, ঘুমের ফুলের রসের এক চুমুক তাকে দিল। এটি এমন এক ওষুধ যা একটা বাচ্চা হাতিকে পর্যন্ত কাবু করে দেয়। যদিও অ্যাপেপির চোখ বন্ধ হল এবং তার কণ্ঠ অস্পষ্ট হয়ে গেল তবুও তখনো সে মানসিকভাবে জাগ্রত ছিল। টাইটা আরেকবার ফোলাটা ভালোভাবে পরীক্ষা করল এবং হাত দিতেই রাজা ঝাঁকিয়ে উঠল কিন্তু কোন বাধা দিল না।

কোন একটা নতুন কিছু আপনার মাংসের গভীরে প্রবেশ করেছে, আমার লর্ড। অবশেষে টাইটা বিবৃত করল। এটা আমার কাছে কোন বিস্ময় নয়, ওয়ারলক। শয়তান মানুষেরা, যাদের বেশিরভাগ মিশরীয়, আমি আমার দুধ মাকে শেষবার ছাড়ার পর থেকেই তারা আমার শরীরে অস্বাভাবিক বস্তু ঢুকিয়ে যাচ্ছে।

আমার ধারণা এটা কোন তীরের মাথা অথবা ফলা, কিন্তু আমি তা প্রবেশের কোন ক্ষত দেখতে পাচ্ছি না। টাইটা গভীরভাবে বলল।

ভালোভাবে দেখুন। ওগুলো ঢেকে গেছে।

রাজার লোমশ বিশাল দেহটা যুদ্ধের পুরানো অসংখ্য গভীর দাগে পূর্ণ। আমি এখন এটি কাটতে যাচ্ছি। টাইটা তাকে সতর্ক করল।

অ্যাপেপি কর্কশ কণ্ঠে বলল, তা-ই করুন, ওয়ারলক এবং আমার বিষয়ে চিন্তা করাটা বাদ দিন।

যখন টাইটা তার ঝোলা থেকে ছোট ব্রোঞ্জের ছুঁরি বেছে নিল, তখন অ্যাপেপি মেঝে থেকে তার ভারি চামড়ার বেল্টটা তুলে নিল ও দুই ভাঁজ করল। সে ওটা দুপাটি দাঁতের মাঝে কামড়ে ধরল ও নিজেকে প্রস্তুত করল।

এদিকে এসো, টাইটা দরজায় দাঁড়ানো রক্ষীদের ডাকল। এসো এবং রাজাকে ধর।

দূর হও, নির্বোধ! অ্যাপেপি আদেশ প্রত্যাহার করল। আমাকে এখানে ধরে রাখতে কোন মানুষের প্রয়োজন নেই।

টাইটা দাঁড়িয়ে কাটার কৌণিক দূরত্ব ও গভীরতা হিসেব করল, তারপর দ্রুত স্থানটায় ছুরি চালালো। অ্যাপেপির শক্ত করে চেপে রাখা দাঁতের মাঝ দিয়ে একটা চাপা আর্তনাদ বের হল কিন্তু সে নড়ল না। টাইটা পিছু সরে দাঁড়াল কারণ কালো রক্ত ও হলুদ পুঁজ ক্ষত থেকে ঝড়ে পড়ছিল। ময়লার দুর্গন্ধে কক্ষটা ভরে গেল। টাইটা ঘুরিটা একপাশে সরিয়ে রাখল এবং একটা আঙুল ক্ষতের ভেতর প্রবেশ করাল। ক্ষতটার চারপাশে রক্তের বুদবুদ সৃষ্টি হল এবং সেইসাথে ক্ষতের তলদেশে সে শক্ত ও তীক্ষ্ণ কিছু একটা বস্তু অনুভব করল। সে একটি আইভরি শূন তুলে নিয়ে খোলা মুখ দিয়ে গভীরে তা প্রবেশ করাল ও ঘোরাতে লাগল যততক্ষণ না সে তার অগ্রভাগে শক্ত কিছু অনুভব করল। অ্যাপেপি কেকানো থামিয়ে দিল এবং নড়াচড়া না করেই শুয়ে রইল। সে তার নাক দিয়ে শূকরের ন্যায় আওয়াজ তুলে দম নিচ্ছিল। তৃতীয়বারের চেষ্টায় টাইটা সূনের দাঁতের মধ্যে বস্তুটাকে আটকাতে পারল। যতোক্ষণ না সে বুঝল যে ওটা ঢিলা হতে শুরু করেছে এবং উপরের দিকে উঠে আসছে ততক্ষণ সে ওটা টানতে লাগল। অবশেষে বস্তুটা বেরিয়ে এল, অরো বেশি পুঁজ ও কাকড় নিয়ে। টাইটা জিনিসটা উঁচিয়ে ধরল যাতে জানালা দিয়ে আসা আলো জিনিসটা উপর পড়তে পারে।

একটা তীরের মাথা, সে ঘোষণা করল এবং দীর্ঘ দিন ধরে জিনিসটা এখানে ছিল। আমি অবাক হচ্ছি যে আরো আগে কেন এটি তার মর্মান্তিক আঘাত হানে নি।

অ্যাপেপি বেল্টের উপর থুথু ফেলল এবং উঠে বসল ও দুর্বল হাসি দিল।

সেথের কসম, আমি ঐ সুশ্রী ছোট ঝকঝকে বস্তুটাকে চিনি। আপনাদের একটা গুন্ডা দশ বছর আগে আবনাবে আমাকে তা মেরেছিল। সেই সময় আমার শল্যবিদ বলেছিল এটা আমার হৃদপিন্ডের এতো কাছে যে তারা এটার কাছে পৌঁছতে পারছে না। তাই ওখানেই তারা তা রেখে দেয় এবং তখন থেকেই আমি ওটা আমার ভেতরে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। সে টাইটার রক্তমাখা আঙ্গুল থেকে ত্রিভুজ আকৃতির যুঁড়িটা নিল এবং অহংকার পূর্ণ উজ্জ্বল দৃষ্টি নিয়ে সে বস্তুটার দিকে তাকিয়ে রইল। একজন প্রথম সন্তান জন্ম দেওয়া মায়ের মতই আমি প্রশান্তি অনুভব করছি। আমি একটাকে স্বর্ণের চেইনে লটকিয়ে আমার গলায় ঝুলিয়ে রাখব। আপনি এর উপর একটা মন্ত্র পড়তে পারেন, যা সকল মারণাস্ত্রকে দূরে রাখবে। কি বলেন, ওয়ারলক?

আমি নিশ্চিত তা খুবই ফলপ্রসূ হবে, আমার লর্ড। টাইটা বোল থেকে তার তৈরি গরম মদ ও মধু দিয়ে নিজের মুখটা পূর্ণ করে নিল। তারপর একটা তামার ফাপা নল ক্ষতের গভীরে ঢুকিয়ে পুঁজ ও রক্ত বের করে আনতে তা ব্যবহার করল। সুস্বাদু মদের কি অপচয়। অ্যাপেপি ফোঁড়ন কাটল। সে দুই হাতে বোলটা তুলে বাকি পানীয়টুকুর শেষ ফোঁটা পর্যন্ত নিজের ভেতর চালান করে দিল। তারপর একটা সেঁকুর তুলল।

এখন আপনার সেবার পুরস্কার হিসেবে, আমার কাছে আপনার জন্য মজাদার একটা গল্প আছে, ওয়ারলক। আমাদের শেষ কথা যা বুবাসতির ভবনের চূড়ায় হয়েছিল সে প্রসঙ্গে।

আমি পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে আপনার প্রতিটি কথা শুনছি। টাইটা তার দিকে ঝুঁকে লিলেন কাপড় দিয়ে ক্ষতটা ব্যান্ডেজ করতে লাগল এবং বিড়বিড় করে ক্ষত বাধার মন্ত্র পড়ল যেমনটা সে সবসময় করে থাকে।

আমি আপনাকে সেথের নামে বাঁধলাম। আমি লালমুখো শয়তানের নামে এটি বন্ধ করলাম।

অ্যাপেপি খেঁকিয়ে উঠে বাঁধা দিল, টর্ক এক লাখ স্বর্ণ মিনটাকার জন্যে যৌতুক হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে।

কথাটা শুনে টাইটার হাত থেমে গেল। সে অ্যাপেপির গোল ভারি বুকের অর্ধেকটা ব্যান্ডেজ করে দাঁড়িয়ে রইল।

আপনি কি জবাব দিলেন, মহামান্য?

সে এতোটাই হতাশা ছিল যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার আগেই মুখ ফসকে রাজ পদবীটা বেরিয়ে গেল। এটি একটি বিপদজনক ও অদেখা উন্নতি।

আমি তাকে বলেছি যৌতুক হবে পাঁচ লাখ। অ্যাপেপি দাঁত বের করে হাসল। সে আমার মেয়ের জন্য এতোটাই পাগল যে সে অন্ধ হয়ে গেছে। তার লুণ্ঠন করা মাল ছাড়াও আমার থেকে বছর ধরে যে চুরি করেছে সব মিলিয়েও এমনকি সে কখনো পাঁচ লাখ খুঁজে বের করতে পারবে না। সে আবার সেঁকুর তুলল। চিন্তা করবেন না, ওয়ারলক। মিনটাকা এতো মূল্যবান যে টর্কের কাছে নষ্ট হওয়ার মত নয়। এমনকি আপনার ছোট ফারাওকে আমার দখলে নিতে তাকে আমি ব্যবহার করার পরও নয়।

সে উঠে দাঁড়াল এবং তার ভারি মাংসল বাহুটা উঠাল। ওটার নিচ দিয়ে উঁকি মেরে সে তার পিছনে বাঁধা ব্যান্ডেজ দেখার চেষ্টা করল যেমন করে একটি পোষা বৃদ্ধ মোরগ তার মাথা ডানার নিচে নিয়ে দেখে। আমার সময় হওয়ার আগেই আপনি দেখছি আমাকে মমি বানিয়ে দিয়েছেন। সে হাসল। কিন্তু বলতে হচ্ছে এটা একটা নিখুঁত কাজ। যান এবং আপনার রাজ প্রতিভূকে বলেন যে আমি তার

সুগন্ধির আরেক ঝলক সুবাস গ্রহণ করতে প্রস্তুত এবং আমি তার সাথে এক ঘন্টার মধ্যে আলোচনা সভায় সাক্ষাৎ করব।

*

টাইটার সফলতায় ও অ্যাপেপির সংবাদে নাজা শান্ত হল। টাইটার অবাধ্যতার জন্যে তার প্রতি তার যে ধারণা হয়েছিল তা মুছে গেল। আমি বৃদ্ধ বদমাস অ্যাপেপিকে এবার একেবারে নাগালে পেয়েছি। নাজা আত্মতৃপ্তি নিয়ে তাকিয়ে রইল। সে যা ধারণা করেছে তার চেয়ে বেশি ছাড় অ্যাপেপি দিতে যাচ্ছে, কারণ আমি খুব রাগ করেছিলাম যখন সে আলোচনা সভা ভেঙে দিল ও তার কক্ষে চলে গেল। তার এতো আনন্দ লাগছিল যে সে একবার বসল, একবার শুয়ে পড়ল। তারপর সে লাফ দিয়ে উঠল এবং পাথরের মেঝেতে পায়চারী করতে লাগল। তার অবস্থা কেমন, ম্যাগোস? আপনি কি তাকে এমন কিছু দিয়েছেন যা তার মনকে মেঘাচ্ছন্ন করে রাখবে?

আমি তার অন্ননালী দিয়ে ওষুধ পাঠিয়েছি যা একটা পুরুষ মহিষকে পর্যন্ত অচেতন করে দিতে পারে। টাইটা তাকে নিশ্চিত করল। তারপর নাজা তার প্রসাধনের নিকট গেল এবং সবুজ কাঁচের তৈরি শিশির মধ্য থেকে তার হাতে সুগন্ধি ঢালল ও তার ঘাড়ের পিছনে লাগাল। ঠিক আছে, আমি পুরো সুবিধা গ্রহণ করব। সে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে কাঁধের উপর দিয়ে পিছনে তাকাল। আমার সাথে আসুন, সে আদেশ করল। অ্যাপেপির সাথে কাজ শেষ করার পূর্বে আমি আপনার শক্তি ব্যবহার করতে পারি।

অ্যাপেপিকে চুক্তিতে বাধা সহজ কাজ হল না যেমনটা নাজা আশা করেছিল। তার মাঝে তার ক্ষত কিংবা ওষুধের কোন খারাপ প্রভাব দেখা গেল না। সে এখনো জোরে কথা বলছে, চিৎকার করছে এবং শক্ত মুঠি দিয়ে টেবিলের উপর জোরে জোরে আঘাত করছে। পাহারাদার যখন মন্দিরের দেয়ালের উপর উঠে মধ্যরাতের ঘণ্টা বাজাল তারও অনেক পর পর্যন্ত আলোচনা চলল। নাজা যা প্রস্তাব করল তা তার কাছে যথেষ্ট মনে হল না এবং কোন আপোস হল না। শেষ পর্যন্ত টাইটাও তার আপোসহীনতায় বিরক্ত হয়ে গেল। নাজা সভা ভেঙ্গে দিল এবং উঠানে মোরগের ডাকের সময় বিছানায় গেল।

পরের দিন দুপুরে যখন তারা আবার সাক্ষাতে মিলিত হল তখন অ্যাপেপি আর কোন যুক্তি মানল না এবং যাও কিছু হল তা হল ঝঞ্জাটপূর্ণ মধ্যস্থতা। টাইটা তাকে শান্ত করার সর্বোত্তম চেষ্টা করল কিন্তু অ্যাপেপি খুব ধীরে নিজেকে সংযত করল। এভাবে তাই একমাত্র পঞ্চম দিনে অনুলেখকগণ চুক্তিপত্র লেখা শুরু করতে পারলেন। মাটির টেবিলের উপর রাজ হস্তাক্ষর ও হাইয়ারোগ্লিফিক অক্ষরে তারা তা লিপিবদ্ধ করল। মিশরীয় ও হিকস্ উভয় ভাষাতেই তা লিখা হল। গভীর রাত পর্যন্ত তারা কাজ করল।

এ সময় পর্যন্ত নাজা ফারাও নেফার সেটিকে গোপন কক্ষটি থেকে দূরে রাখল। তাকে সে তুচ্ছ কাজে ব্যস্ত রাখল; যেমন শিক্ষকের কাছে পড়া, অস্ত্র চালনা অনুশীলন করা, অ্যাম্বাসডরদের সাথে সাক্ষাৎ, ব্যবসায়ী ও যাজকদের সাথে প্রতিনিধিত্ব করা ও যাদের দয়া ও দানের প্রয়োজন তাদের সাক্ষাৎ দান প্রভৃতি। শেষদিকে নেফার এসব এক ঘেয়েমি কাজের এতোটাই প্রতিবাদ করল যে নাজা বাধ্য হয়ে তাকে অ্যাপেপির ছোট ছেলের সাথে বাজ ধরতে ও শিকারে পাঠাল। কিন্তু এসব এ তেমন জমল না এবং প্রথম দিন অনেকটা বিতৃষ্ণা নিয়ে শেষ হল। দ্বিতীয় দিনে টাইটার পরামর্শে রাজকুমারী মিনটাকা দুই দলের মধ্যে শান্তি স্থাপনকারী হিসেবে বাজ শিকারী দলে যোগ দিল। এমনকি তার বড় ভাইয়েরাও তাকে সম্মান দেখাল ও তার অনুগত থাকল। যেখানে অন্য সময় হলে তারা নিশ্চিত তাদের অস্ত্র বের করে মিশরীয় দলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ত। একইভাবে, মিনটাকা যখন তার শিকারী রথে তার পাশে চড়ছিল নেফারের যুদ্ধের প্রবণতাও দমিত রইল। সে তার অভদ্র ভাইদের আক্রমণাত্মক, দাম্ভিক ব্যবহারের কথা তাকে জানাল এবং তার বুদ্ধি ও বিদ্যা উপভোগ করল। তবে শারীরিক ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে কিছু বলল না। যখন তারা পলায়নরত হরিণ দলের পিছনে ছুটতে গিয়ে খারাপ রাস্তা লাফ দিয়ে পার হচ্ছিল তখন রথের বন্ধ ককপিটের মধ্যে তারা একজন আরেকজনের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। এসময় মিনটাকা তাকে আকড়ে ধরে নিজের ভারসাম্য রক্ষা করল।

প্রথম দিনের প্রমোদ ভ্রমণ শেষে নেফার মন্দিরে ফিরে টাইটাকে ডেকে পাঠাল। দিনের সব ঘটনা তাকে বলল কিন্তু তাকে খেয়ালী ও অমনোযোগী মনে হল। এমনকি যখন টাইটা তাকে তার প্রিয় বাজ শিকারের কথা জিজ্ঞেস করল তখনও নেফার কোন বিশেষ উৎসাহ দেখাল না। যতোক্ষণ না সে কল্পনার ঘোরে হঠাৎ বলে উঠল, এটা কি তোমাকে অবাক করে না টাইটা যে মেয়েরা কত নরম ও উষ্ণ হয়!

ষষ্ঠ দিনের সকালে অনুলেখকরা তাদের কাজ শেষ করল এবং পঞ্চাশটি চুক্তিপত্র চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত করল। তখন নাজা মূল কাজে অংশ নিতে ফারাওকে ডেকে পাঠাল। একইভাবে অ্যাপেপির সব সন্তানেরা, মিনটাকাসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবে।

আরো একবার মন্দিরের উঠান রাজকীয় ও গণ্যমান্যদের উজ্জ্বল সমাবেশে পূর্ণ হল। যখন উচ্চকণ্ঠে রাজ ঘোষক চুক্তির লেখা পড়তে শুরু করল, সঙ্গে সঙ্গে নেফারের মনোযোগ যা লেখা হয়েছে তার প্রতি আকৃষ্ট হল। সে ও মিনটাকা যে দিনগুলো একসাথে কাটিয়েছে তখন এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। যখনই তাদের মনে হল তারা কোন ভুল ধরছে অথবা ঘোষক কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে গেছে তখন তারা অর্থ পূর্ণ দৃষ্টি বিনিময় করলো। যাইহোক, এগুলো কমই ছিল এবং নেফার নিশ্চিত যে সে টাইটার ছায়াময় প্রভাব এই বিশাল দলিলের অনেক জায়গায় জুড়ে রয়েছে। অবশেষে সীল মোহর করার সময় এল। বাদ্যের এক সিরিজ ঝংকারের সাথে নেফার নিজের স্মারক চিহ্ন ভেজা মাটিতে ছাপ দিল এবং অ্যাপেপিও তাই করল। নেফর এর এটা দেখে রাগ হল যে হিকস্ রাজা পবিত্র স্মারক গ্রহণ করার সাথে সাথে ফারাও-এর বিশেষ অধিকারও দখল করেছে।

যখন নাজা তার ভারি প্রসাধনে ঢাকা অস্পষ্ট অভিব্যক্তি নিয়ে এসব দেখছিল তখন দুই রাজ্যের যুগ্ম শাসক কোলাকুলি করছিল। অ্যাপেপি তার ভালুকের ন্যায় বিশাল দেহের আলিঙ্গণে নেফারের চিকন দেহটা প্রায় ভাজ করে ফেলল এবং সমাবেশে উপস্থিত ব্যক্তিরা জোরে চিৎকার দিল। অসাধারণ! অসাধারণ!

পুরুষেরা তাদের অস্ত্র ঢালের সাথে আঘাত করে কিংবা বর্শার গাঁট দিয়ে পাথরের পতাকায় আঘাত করে ঝনঝন শব্দ তুলল। দুম দুম্। নেফার নিজেকে অ্যাপেপির শক্তিশালী দেহের দুর্গন্ধের মধ্যে খুঁজে পেল। হিকস্‌রা এখনো মিশরীয়দের ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি রপ্ত করতে পারে নি। আস্তে করে সে নিজেকে তার যুগ্ম ফারাও-এর বাহু থেকে সরিয়ে আনল। কিন্তু অ্যাপেপি তার দিকে পিতৃব্য সুলভ ভঙ্গিতে চেয়ে রইল এবং তার একটা লোমশ হাত তার কাঁধে রাখল। তারপর সে উঠানে জড়ো হওয়া জনগণের দিকে ঘুরল, এই মহান ভূমির নাগরিকরা, যা আবার একত্রিত হল, আমি আপনাদের কাছে আমার দায়িত্ব ও দেশপ্রেমের ওয়াদা করছি। এর প্রমাণ হিসেবে, আমি আমার মেয়ে রাজকন্যা মিনটাকাকে ফারাও নেফার সেটির সাথে বিবাহের প্রস্তাব দিচ্ছি যে কিনা আমার সাথে এই মিশরের যুগ্ম ফারাও। ফারাও নেফার সেটি, যে আমার সাথে উচ্চ ও নিম্ন রাজ্যের দ্বৈত মুকুটের ভাগিদার এবং যে আমার পুত্র হবে এবং তার সন্তানেরা আমার নাতি হবে।

সমাবেশ যখন এই বিস্ময়কর ঘোষণা শুনল তখন আঙ্গিনায় পিন পতন নিরবতা নেমে এল। তারপর তারা বাদ্য বাজনা বাজিয়ে আরো দ্বিগুণ চিৎকারে ফেঁটে পড়ল, অর্থাৎ তারা এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। ফারাও নেফার সেটির চেহারায় এমন এক অভিব্যক্তি ছিল যা যে কোন মূর্খ ব্যক্তিও বোকার হাসি বলে বর্ণনা করবে। সে মিনটাকার দিকে চেয়েছিল। এদিকে মিনটাকা বিস্ময়ে জমে গিয়েছিল, এক হাতে মুখ ঢেকে নিজেকে চিৎকার দেওয়া থেকে বিরত রাখল এবং যখন সে তার পিতার দিকে চাইল তখন বিস্ময়ে তার চোখ বড় হয়ে গেল।

ধীরে ধীরে একটা গাঢ় আভা তার চেহারায় ছড়িয়ে গেল এবং লাজুকভাবে সে নেফারকে দেখতে চোখ তুলল। তারা দুজন একে অপরের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকল যেন উঠানের ভিড়ে আর কেউ নেই। টাইটা ফারাও-এর সিংহাসনের সামনে থেকে এসব দেখছিল। সে বুঝল অ্যাপেপির ঘোষণার সময়টা একেবারে সঠিক। এখন এমন কোন রাস্তা নেই যেখানে নাজা, টর্ক অথবা অন্য কেউ এই বিয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। টাইটা নাজার সিংহাসনের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিল। প্রসাধনের নিচে রাজ-প্রতিভূ স্পষ্টত গভীর আতংকিত হলো, বিশেষ করে তার নিজের পরিণামের কথা ভেবে। যদি নেফার রাজকন্যাকে বিয়ে করে তবে সে নাজার আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে। সে দেখল দ্বৈত মুকুট তার হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে। নাজা বুঝতে পারল টাইটার চোখ তার উপর, কারণ সে

তার দিকে তাকিয়ে আছে। এক মুহূর্তের জন্য টাইটা তার আত্মার গভীরে তাকাল, যেন সে একটা শুকনো কুয়ার ভিতরে তাকাল যা জীবন্ত কোবরায় পূর্ণ যার ভিত্তিতে রাজ-প্রতিভূর নাম দেওয়া। তখন নাজা তার হিংস্র হলুদ চোখগুলো লুকিয়ে ফেলল, শীতলভাবে হাসল এবং সম্মতিতে মাথা নাড়ল। কিন্তু টাইটা জানে সে কি তীব্র ঈর্ষায় জ্বলছে।

যাই হোক, ওই ভাবনাগুলো এতো দ্রুত ও জটিল ছিল যে সে ওগুলো ধরতে পারল না।

টাইটা তার মাথা ঘুরাল ও বিপরীত দিকের হিকস্ সৈন্যদের ভীড়ে লর্ড টর্কের মহাকায় দেহ খুঁজে বের করল। রাজ-প্রতিভূর বিপরীতে, টর্ক তার অনুভূতি ঢাকার কোন চেষ্টা করছে না। সে ছিল ক্রোধান্বিত। তার দাড়ি মনে হল খাড়া হয়ে গেল এবং তার চেহারা কালো রক্তে ফুলে উঠল। সে তার মুখ খুলল যেন অবজ্ঞায় অথবা প্রতিবাদে চিৎকার করবে। কিন্তু নিজেকে সে সামলে নিল এবং তলোয়ারের গাঁটে তার এক হাত রাখল। মুঠির চাপে তার আঙুলের গাঁট সাদা হয়ে গেল এবং তৎক্ষণাৎ টাইটার মনে হল সে বোধহয় তার ফলা বের করবে এবং উঠান পার হয়ে নেফারের চিকন দেহে তা ঢুকিয়ে দেবে। অনেক কষ্টে সে তারা নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনল। নিজেকে সে স্বাভাবিক করল। তারপর এক ঝটকায় ঘুরে উঠান থেকে বেরিয়ে গেল। উত্তেজনা এমন ছিল যে প্রায় কেউ বুঝল না যে সে চলে গেল। শুধুমাত্র অ্যাপেপি নৈরাশ্যবাদী হাসি দিয়ে তাকে দেখল।

যখন টর্ক হাথোর পিলারের মধ্যদিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল, অ্যাপেপি নেফারের কাঁধ থেকে তার হাত সরাল এবং নাজার সিংহাসনের নিকট নিয়ে গেল। সে আলতোভাবে রাজ-প্রতিভূকে তার কুশন থেকে উঠালো এবং তাকে আরো বেশি শক্তিতে জড়িয়ে ধরল যেভাবে সে ফারাওকে ধরেছিলেন। তার ঠোঁটগুলো নাজার কানের কাছে নিয়ে ফিসূফিস্ করে নরমভাবে বলল, এখন আর কোন মিশরীয় ষড়যন্ত্র নয়, আমার মিষ্টি সৌরভের ফুল, নইলে আমি ওগুলোকে তোমার রাজ্যের উপরে যতোদূর আমার হাত যায় তততদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে দেব। সে নাজাকে তার আসনে আবার বসিয়ে দিল, তারপর তার জন্য তার পাশে রাখা আসন গ্রহণ করল। নাজা পিছিয়ে গেল এবং একটা সুগন্ধি মাখা লিলেন কাপড় তার নাকে ধরে রাখল। যখন সে তার বুদ্ধি একত্রিত করল তখন উঠানে হাততালির পর হাততালি চলতে লাগল। একসময় যখন তা থামল, তখন অ্যাপেপি তার বিশাল থাবা তার সিংহাসনের বাহুতে জোরে আঘাত করল তাদেরকে নতুন করে উৎসাহ দেওয়ার জন্য এবং আনন্দ ধ্বনি পুনরায় শুরু হল। সে নিজেকে পুরোপুরি উপভোগ করছিল এবং সে তাদের ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে গেল।

মাথায় নিম্ন মিশরের লাল মুকুট নিয়ে সেই ছিল প্রধান ব্যক্তিত্ব। তার পাশে নেফার, লম্বা সাদা মুকুটের ক্ষমতা নিয়েও একজন কিশোরের মতো অনভিজ্ঞ দেখাল। অবশেষে শেষ হাততালির পর নাজা উঠে দাঁড়াল ও দুই বাহু উপরে তুলল। একটা মাধুর্যপূর্ণ নীরবতা তখন নেমে এল।

পবিত্র কুমারীকে সামনে আসতে দিন। বেদির পূর্বাংশের বাঁকানো পর্দার আড়াল থেকে তার সহযোগী যাজকরা মিছিল করে বেরিয়ে এল, মন্দিরের প্রধান যাজিকা দ্বৈত সিংহাসনের দিকে আগ বাড়ল। তার সামনে, দুজন যাজিকা দ্বৈত রাজ্যের মুকুট বহন করছে। যখন মন্দিরের গায়করা দেবীর প্রশংসায় গান গাইল তখন একজন সম্মানীয় বৃদ্ধ মহিলা যুগ্ম শাসকদের মাথা থেকে একক মুকুট সরিয়ে ফেলল এবং সেখানে দ্বৈত মুকুট বসিয়ে দিল যা মিশরের দুই রাজ্য একত্রিত হওয়ার গুরুত্ব বহন করে। তারপর সে নতুন ভূমিকে আশীর্বাদ করল এবং মন্দিরের ভেতর ফিরে গেল। সিদ্ধান্তহীনতার একটা ছোট বিরতি হল কারণ বিশাল মিশরের ইতিহাসে এটাই প্রথমবারের পুনঃমিলনের অনুষ্ঠান হচ্ছে এবং কি করতে হবে তার সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম প্রতিষ্ঠিত ছিল না।

সুকৌশলে নাজা ঐ সুযোগটাকে কাজে লাগাল। আরো একবার সে উঠল ও অ্যাপেপির সামনে দাঁড়াল। এই শুভ ও আনন্দঘন দিনে, আমরা শুধুমাত্র দুই রাজ্যের মিলনই নয় ফারাও নেফার সেটি ও রাজকুমারী মিনটাকার বিয়ের ঘোষণাটাও উপভোগ করছি। তাই এটাও সকলে জানুক যে বিয়েটা অনুষ্ঠিত হবে। এই মন্দিরে। আর তা হবে সেই দিন যেদিন ফারাও নেফার সেটি তার দায়িত্ব বুঝে নিবে এবং তার অধিকার অনুসমর্থন করার জন্য একটা শর্ত পূরণ করবে এবং তাকে রক্ষা ও উপদেশ দেয়ার জন্য কোন রাজ প্রতিভূ ছাড়াই রাজ্য চালাতে পারবে।

অ্যাপেপি ভ্রূকুটি করল এবং নেফার হতাশার ছোট একটু অঙ্গভঙ্গি করল কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। পুরোপুরি জনগণের সামনে তা ঘোষণা করা হয়ে গেছে এবং রাজ প্রতিভূ হিসেবে নাজা দুই রাজ্যের ক্ষমতা নিয়ে কথা বলল। যার অর্থ যতোদিন না নেফার তার গডবার্ড ধরছে অথবা তার সিংহাসনের দাবি জোরালো করতে যুদ্ধের ময়দানে সফল হচ্ছে ততোদিন তাকে অপেক্ষা করতে হবে, নাজা খুব সহজেই বিয়েটা কয়েক বছরের জন্য পিছিয়ে দিল।

এটা একটা দক্ষ চাল, টাইটা তিক্তভাবে ভাবল। কিন্তু সে এর পিছনে তার রাজনৈতিক বুদ্ধির প্রশংসা করল। নাজা তার দ্রুত চিন্তা ও সময়মত হস্তক্ষেপ করে তার বিপদকে বিবর্তিত করেছে। যখন তার প্রতিপক্ষ স্বাভাবিক হল, সে আবার বলে চলল, সমান আনন্দে আমি ফারাও অ্যাপেপি ও ফারাও নেফার সেটিকে রাজকন্যা হেজারেট ও মেরিকারার সাথে আমার বিয়ে উপভোগ করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এই বিয়ে আজ থেকে দশ দিন পর অনুষ্ঠিত হবে। আইসিসের আরোহণ অনুষ্ঠানের প্রথম দিন থেবস শহরের আইসিস মন্দিরে হবে।

অর্থাৎ দশদিনের মধ্যে লর্ড নাজা ট্যামোস রাজ পরিবারের একজন সদস্য হয়ে যাবে এবং ফারাও নেফার সেটির অনুক্রমের বিপক্ষে দাঁড়াবে। টাইটা কঠোর মুখে ভাবল। এখন আমরা জানি, সব সন্দেহ পেরিয়ে কে সেই বার বার-আম-মাসারার পর্বতে বাজ পাখির বাসায় কোবরা রূপে ছিল।

*

হাথোর মন্দিরে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে, অ্যাপেপি অ্যাভারিস এবং নেফার সেটি থেব এ বসবাস করবে। প্রত্যেকে তাদের পূর্বের রাজ্যই শাসন করবে তবে নিয়ম কানুনে একটু পরিবর্তন এল। প্রতিবছর দুবার নীলের বন্যার শুরুতে ও শেষে মেমফিসে দুই রাজা মিলিত হবেন যেখানে দুই রাজ্যের সকল বিষয়ে আলোচনা করা হবে, নতুন আইন প্রণয়ন ও নৈতিক দাবি দাওয়া বিবেচনা করা হবে। যাই হোক, দুই রাজা বিদায় নেয়ার পূর্বে এবং নিজেদের রাজধানীতে ফিরে যাবার পূর্বে, অ্যাপেপি নেফার সেটির সাথে নদীর উজানে থেব যাবে। সেখানে তারা লর্ড নাজার দ্বৈত বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবে।

মন্দিরের নিচে জাহাজঘাট থেকে দুদলের মালামাল জাহাজে তোলাটা ছিল একটা হৈ চৈ অবস্থা, যা সকালের বেশিরভাগ সময়টা জুড়ে ছিল। এদিকে সুযোগ বুঝে টাইটা মাঝি ও ডকইয়ার্ডের মালিক, দাস ও গুরত্বপূর্ণ যাত্রীদের সাথে মিশে গেল। এমনকি সেও তীরে স্তূপ দেওয়া বাক্স-পেটারা ও মালপত্র যেগুলো ছোট নৌকা ও পালতোলা একতলা নৌকা সমূহে তোলার অপেক্ষায় ছিল দেখে অবাক হল। নদীর উজানে খারাপ রাস্তায় না গিয়ে থেব ও অ্যাভারিস উভয় দলের সৈন্যরা তাদের রথ ভেঙে ফেলছে এবং ওগুলোকে বোঝাই করছে এবং ঘোড়াগুলোকে বড় নৌকায় তুলছিল। যা নদীর তীরে বড় একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করল।

একবারের জন্যেও টাইটা তার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল না। সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত ছিল। এসবের মধ্যেও কোন কোন লোক তাদের কাজ থেকে চোখ তুলতেই তাকে চিনতে পারছিল এবং তার আশীর্বাদ চাইল কিংবা কোন মহিলা তার অসুস্থ বাচ্চাকে চিকিৎসার জন্যে নিয়ে এল। যাই হোক, সে নদীর তীরে নিজের মত করে ধীরে ধীরে কাজ করতে পারল এবং একসময় সে লর্ড টর্কের সৈন্য বাহিনীর রথ ও মালপত্র খুঁজে পেল। তাদের নির্দিষ্ট সবুজ ও লাল পতাকা দ্বারা সে তাদের চিনল এবং এগিয়ে যেতেই সে তার লোকদের মাঝে টর্কের নির্ভুল অবয়বকে আলাদা করল। টর্ক তার মালামাল ও অস্ত্রের একটা স্তূপের ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে। বর্শা-বাহকের উদ্দেশ্যে কটু কথা বলছিল: বুদ্ধিহীন বেকুব, কিভাবে তুমি আমার ঝোলা প্যাক করলে? আমার প্রিয় ধনুক ওখানে অরক্ষিত অবস্থায় আছে! কোন গেঁয়ো ভূত তো ওটার উপর দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে দেবে। গত দিনের ঘটনায় তার মেজাজটা এখনও ঠিক হয়নি এবং সে জাহাজ ঘাটের দিকে আওয়াজ তুলে চলে গেল। তার পথে কোন দুর্ভাগা, যে তার পথে দাঁড়িয়ে ছিল তাকে রথের চাবুক দিয়ে মেরে সরাল। টাইটা দেখল সে তার বাহিনীর অন্য একজনের সাথে কথা বলতে থামল, তারপর মন্দিরের রাস্তা ধরল।

সে অদৃশ্য হতেই টাইটা বর্শা বাহকের নিকট এগিয়ে গেল। সৈন্যটি তার যুদ্ধের পোশাক ও স্যান্ডেল খুলে রাখল এবং যখন সে ঝুঁকে টর্কের মালামালের একটা সিন্দুক অপেক্ষারত মালবাহী নৌকার দিকে টেনে নিয়ে এগোল, টাইটা তার নগ্ন পিঠে আলাদা গোল দাদের দাগটা দেখতে পেল। নৌকার ডেকে দাঁড়ানো একজন মাঝির কাছে বর্শা বাহক সিন্দুকটি দিয়ে ফিরে এল। এই প্রথম সে টাইটাকে কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল এবং মুষ্টিবদ্ধ হাত বুক স্পর্শ করে তাকে সম্মানের সাথে স্যালুট করল।

এদিকে এসো, যোদ্ধা। টাইটা তাকে কাছে ডাকল। কতদিন ধরে তোমার পিঠে এই চুলকানি?

ইচ্ছে করেই লোকটি তার একটি হাত তার দুই পাখনার মধ্য দিয়ে ঘুড়িয়ে উঠাল এবং নিজেকে এতো জোরে আঁচড় কাটল যে সে রক্ত বের করে ফেলল। যখন আমরা আবনাব দখল করেছি তখন থেকে অভিশপ্ত জিনিসটা আমাকে জ্বালাচ্ছে। আমার মনে হয় কোন মিশরীয় বেশ্যা মহিলার উপহার এটা। সে দোষে অনুতপ্ত হল। টাইটা বুঝল শহরটি দখলের সময় সে যাকে ধর্ষণ করেছে সেই মহিলার কথা সে বলছে। ক্ষমা করুন, ওয়ারলক। আমরা এখন মিত্র এবং একই দেশের লোক।

তাই আমি তোমার অসুখ সারাব, যোদ্ধা। মন্দিরে যাও, বাবুর্চির কাছে শূকরের চর্বি চাও এবং তা আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তোমাকে একটা মালিশ তৈরি করে দেব। টাইটা টর্কের লাগেজ ও যন্ত্রপাতির উপর বসে পড়ল এবং বর্শা বাহক দ্রুত সৈকতের দিকে চলে গেল। লাগেজের মধ্যে তিনটি ধনুক ছিল। টর্ক তার অভিযোগে অযাচিত ছিল কারণ প্রতিটি ধনুক ছিল সুরক্ষিত ও সতর্কভাবে তা চামড়ার ঢাকনার মধ্যে ঢুকানো। টাইটার একটি কাঠের সিন্দুকের উপর বসল। ভাগ্যই বলতে হবে কারণ সে দেখল সিন্দুকের উপর গ্রিপ্পা, অ্যাভারিসের তীর প্রস্তুত কারক যে উচ্চ পদস্থ হিকস্ অফিসারদের জন্য তীর বানায় তার সীলমোহর দেওয়া। টাইটার মনে পড়ল সে গ্রিপ্পার কাজ নিয়ে মিনটাকার সাথে কথা বলেছে। সে তার ছুঁরি বের করে ঢাকনা বেঁধে রাখা রশিটি কাটল এবং ওটা উঠাল। শুকনো খড়ের একটা স্তর তীরগুলো রক্ষা করছে এবং এর নিচে সেগুলো পর্যায়ক্রমে সজ্জিত, মাথাটা পাথরের চকচকে এবং পিছন লাল ও সবুজ পালকে সজ্জিত। টাইটা একটা নিল ও তার আঙুলের মধ্যে ঘুরাল।

খোদাই করা স্বাক্ষর তার চোখে পড়ল। সিংহের শৈলীবদ্ধ মাথা সাথে এটার দাঁত বের করা চোয়ালের মধ্যে ঞ বর্ণ আঁকা। তীরটা তার ফারাও-এর হত্যা দৃশ্যের সময় পাওয়া খাপের মধ্যে রাখা তীরের মতই। এটি দেশদ্রোহী ও ষড়যন্ত্রের শেষ বন্ধন, নাজা ও টক এই রক্তাক্ত ষড়যন্ত্রের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত যার পুরো অস্তিত্ব এখন পর্যন্ত একমাত্র সে-ই অনুমান করতে পেরেছে।

টাইটা দোষী তীরটা তার পোশাকের ভাজে ঢুকিয়ে নিল. এবং সিন্দুকের ঢাকনা বন্ধ করে দিল। দক্ষতার সাথে রশিটি বাঁধল এবং বর্শা-বাহকের ফিরে আসার অপেক্ষায় রইল।

বৃদ্ধ সৈন্য টাইটার চিকিৎসার জন্য স্পষ্টত কৃতজ্ঞ হল, তারপর আরো একটু সাহায্য করার অনুরোধ করল। আমার এক বন্ধুর মিশরীয় পক্স হয়েছে, ম্যাগোস। এটা নিয়ে তার কি করা উচিত? এটা টাইটাকে সবসময়ই অবাক করে যে হিকা এটাকে মিশরীয় পক্স বলে ভাবে এবং মিশরীয়রাও অপবাদটা ফিরিয়ে দেয়। মনে। হয় যেন কোন মানুষ নিজে কখনই রোগটার সাথে যোগাযোগ করে না কিন্তু সর্বদা একজন বন্ধু থাকে যে এই রোগে আক্রান্ত থাকে।

*

লর্ড নাজার সাথে দুই ট্যামোস রাজকন্যার বিয়ে ও ভোজটা ছিল সর্বকালের সবচাইতে ব্যয় বহুল আয়োজন। টাইটার মনে হল যেন এটা ফারাও ট্যামোস বা তার পিতা ফারাও ম্যামোস যারা রা-এর স্বর্গীয় পুত্র তাদের দীপ্তিকেও ছাড়িয়ে গেল।

থেবসের সাধারণ মানুষের জন্য লর্ড নাজা ৫০০ খ্ৰীড় জবাই করল। দুই জাহাজ ভর্তি শস্য-তরকারী সরকারি শস্যভান্ডার থেকে দিল এবং পাঁচ হাজার বড় মাটির পাত্রের উৎকৃষ্ট বিয়ার সে দিল। ভোজ সভা এক সপ্তাহ চলল কিন্তু খাবার পরিমাণে এতো বেশি ছিল যে এমনকি এক মাসের ক্ষুধার্ত থেবস-ও এতো কম সময়ে এতো খাবার শেষ করতে পারবে না। শস্য ও মাংসের অবশিষ্ট অংশ তারা সংরক্ষণের জন্যে ধোয়ায় শুকাল। পরবর্তী মাস জুড়ে তা শহরবাসীকে খাওয়ানো হল। যাহোক, বিয়ার হল অন্য আরেকটা বিষয়: প্রথম সপ্তাহ জুড়ে তারা তা পান। করল।

বিয়েটা দুই ফারাও, ৬শ যাজক আর ৪ হাজার আমন্ত্রিত অতিথির সামনে আইসিসের মন্দিরে অনুষ্ঠিত হল। যখন তারা মন্দিরে প্রবেশ করল প্রত্যেক অতিথিকে সে তাকে স্মরণ করার মতো খোদাই করা গয়না, আইভরি পান্না, প্রবাল ও আরো অনেক মূল্যবান রত্ন পাথর উপহার দিল যার প্রতিটির মধ্যে বর ও কনের নামের মাঝে অতিথির নাম খোদাই করা ছিল।

কনেরা তাদের বরের সাথে দেখা করতে একটা রাজ রথ যা পবিত্র সাদা কুঁজো পিঠের বঁড় কর্তৃক নগ্ন নুবিয়ান কোচোয়ান দ্বারা চালানো হয়। পুরো রাস্তা তাল পাতা ও ফুল দিয়ে সাজানো হয় এবং একটা রথ সামনে থেকে রুপা ও কপারের মুদ্রা রাস্তার দুইপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো উন্মত্ত লোকজনের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছিল। তাদের উৎসাহ লর্ড নাজার দানের বিয়ার দিয়ে একটুও দমিত হয় নি।

মেয়ে দুটো জালের ন্যায় মেঘলা-সাদা রঙের লিলেনের দামী পোষাকে সজ্জিত এবং ছোট মেরিকারা তার পোশাক, যা তার দেহে জড়িয়ে ছিল ও নিজের গহনার ভারে প্রায় নুইয়ে পড়ছিল। তার অশ্রু সুরমা ও সাদা প্রসাধনের মধ্যে দিয়ে লম্বা রেখা কেটে নিচে নেমে গেছে। হেজারেট তার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে তাকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করছে।

যখন তারা মন্দিরে পৌঁছল তখন তারা দুই ফারাও-এর সাথে তাদের রাজকীয় কোচ থেকে নেমে মিলিত হল। নেফার মেরিকারাকে মন্দিরের মূল অংশে নিয়ে যেতে যেতে ফিসফিসিয়ে বলল, কেঁদোনা, ছোট্ট সোনা। কেউ তোমাকে আঘাত করতে যাচ্ছে না। ঘুমানোর পূর্বেই তুমি তোমার খেলার ঘরে ফিরে যাবে।

তার বোনদের বিয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে নেফার তার ছোট বোনকে মন্দিরের ভেতরে নেওয়ার দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু টাইটা তাকে বুঝিয়েছে। আমরা এটা ঘটতে প্রতিরোধ করতে পারি না যদিও তুমি জান কিভাবে আমরা চেষ্টা করেছি। নাজা সংকল্পবদ্ধ। তার এই ছোট জীবনে তুমি তাকে সান্ত্বনা দিতে সেখানে না থাকলে সেটা হবে নিষ্ঠুরতা। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নেফার রাজি হয়েছে।

তাদের পিছনে খুব কাছে থেকে অ্যাপেপি হেজারেটকে নিয়ে আসছে। সাদা পোশাক ও চকচকে অলংকারে তাকে একজন স্বর্গীয় পরীর মতো সুন্দর লাগছে। কয়েক মাস আগে প্রভুরা তার ভাগ্যে কি লিখেছেন সে ব্যাপারে সে জেনেছে এবং তার প্রার্থনা, হতাশা ও ভয় ধীরে ধীরে কৌতূহল ও নিশ্চুপ সমর্পণের রূপ নিয়েছে। লর্ড নাজা দেখতে অতি চমৎকার এবং তার সেবিকা, সমবয়সী মেয়েরা ও খেলার সাথীরা তার সাথে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। তার গুণ নিয়ে তারা অসীম আলোচনা করেছে এবং ফিক করে হেসে আরো নানান কথা বলেছে।

সম্ভবত এই আলোচনার ফলে হেজারেট সম্প্রতি গোপন প্রণয়ের স্বপ্নটা দেখল। একটা স্বপ্নে সে দেখেছে যে সে আর রাজ প্রতিভূ নদীর পাড়ের ঘাসের বাগান দিয়ে হাঁটছে। সে দৌড়ে আগে চলে গেল। যখন সে তার কাঁধের উপর দিয়ে পিছনে তাকাল দেখল রাজ প্রতিভূও তার পিছনে দৌড়ে আসছে কিন্তু তার কোমর পর্যন্ত সে মানুষ। আর তার নিচের অংশটা একটা ঘোড়ার ন্যায়, ঠিক নেফারের খোঁজা না করা ঘোড়াটা যেমন। স্টার গেজারের মতো। যখন সে কোন মাদী ঘোড়ার সাথে থাকে, সে প্রায়ই স্টার গেজারকে একই রকম অদ্ভুত অবস্থায় দেখেছে যেমনটা তখন রাজ-প্রতিভূকে দেখা যাচ্ছিল এবং তারপর থেকে সে সব সময় এই দৃশ্য দ্বারা নিজে আন্দোলিত হতো। যাহোক, ঠিক যখন রাজপ্রতিভূ তার কাছাকাছি চলে আসে এবং একটা অলংকারপূর্ণ হাতে তাকে ধরতে পৌঁছে যায় তখন স্বপ্নটা হঠাৎ করে শেষ হয়ে যায় এবং সে নিজেকে তার গালিচার উপর সম্পূর্ণ ঋজুভাবে বসা অবস্থায় খুঁজে পায়। কি করছিল তা না বুঝেই সে তার নিজের নিমাংশ স্পর্শ করে। তার আঙ্গুল ভিজে যায় ও পিচ্ছিল হয়ে যায়। সে এতোটাই বিস্মিত হয়ে পড়ে যে তারপর সে আর ঘুমাতে পারেনি এবং স্বপ্নটা যেখানে শেষ হল সেখান থেকে আর শুরু করতে পারেনি। যদিও সে তা করার অনেক চেষ্টা। করে। সে এই উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতার ফল জানতে চায়। পরের দিন সকালে সে অস্থির ও বিরক্তি অনুভব করে এবং তার চারপাশে যারাই থাকল তাদের উপর সে খারাপ মেজাজি আচরণ করল। তখন থেকে ম্যারনের প্রতি তার বালিকা সুলভ আচরণটা কমতে থাকে। সে তার সাথে কদাচিৎ সাক্ষাৎ করল। এই দিনগুলো থেকে যখন তার দাদা নাজার হাতে মৃত্যুবরণ করল তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে এবং পরিবারটার উপর দুর্গতি নেমে এসেছে, তখন সে বুঝতে পেরেছে যে সে একজন নিঃসম্বল বালক। সে এখন একজন সাধারণ সৈনিক, সুদৃষ্টি ও সম্ভাবনা ছাড়া। নাজার সামাজিক মর্যাদা প্রায় তার সমকক্ষ এবং তার সম্পদ তার চাইতে অনেক বেশি।

সে এখন এটা গম্ভীর ও নিষ্পাপ ভাব ধারণ করল যখন অ্যাপেপি তাকে মন্দিরের বড় সাজানো গ্যালারি দিয়ে প্রধান অংশে নিয়ে গেল। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য লর্ড নাজা সেখানে অপেক্ষা করছিল এবং যদিও সে সুন্দর পোশাক ও চমৎকার ইউনিফর্ম, সভাসদ ও অফিসারদের দ্বারা ঘেরা ছিল তবুও হেজারেট একমাত্র তার দিকেই তাকাল। প্রভু অশিরিশকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য সে অসট্রিচ পাখির বড় পালকের পাগড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আসমর ও লর্ড টর্ক যারা তার পাশে দাঁড়ানো তাদের সে ছাড়িয়ে গেল। হেজারেট তার কাছাকাছি আসতেই তার সুগন্ধি সম্পর্কে সচেতন হল। ইনডা থেকে দূর কোন দেশের ফুলের নির্যাসের মিশ্রণ এবং মূল্যবান মোমের মত পদার্থও থেকে তৈরি যা গভীর সমুদ্র দেবতাদের একটার দান যা শুধুমাত্র সমুদ্র তীরে পাওয়া যায়। ঘ্রাণটা তাকে আন্দোলিত করল এবং সে কোন ইতস্তত ছাড়াই হাতটা ধরল যা নাজা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং ঐ মনোমুগ্ধকর হলুদ চোখের দিকে সে তাকাল।

যখন নাজা মেরিকার দিকে আরেক হাত বাড়াল সে জোরে চিৎকার দিল এবং নেফার তখন তাকে শান্ত করতে আশ্বস্ত করল। সে দীর্ঘ অনুষ্ঠানের পুরোটা জুড়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকল।

অবশেষে যখন লর্ড নাজা নীলের পানি পূর্ণ পাত্রটি অনুষ্ঠানের শেষ আনুষ্ঠানিকতা স্বরূপ ভাঙল, জনগণ বিস্ময়ে বিহ্বলিত হল। মহান নীলের পানি যার তীরে মন্দিরটি অবস্থিত তা খুব সুন্দর নীল বর্ণ ধারণ করল। প্রথম বাঁক ঘিরে নাজা নদীর এপার থেকে ওপার পর্যন্ত একসারি নৌকা রেখেছে এবং মন্দিরের ছাদ থেকে সঙ্কেত পেয়ে তারা রঙের পাত্রগুলো পানিতে ফেলতে লাগল। প্রভাবটা ছিল শ্বাসরুদ্ধকর কারণ নীল হল ট্যামোস বংশধরের রঙ। নাজা তার ফারাওদের সাথে নতুন সম্পর্কের জানান দিল।

ছাদের পূর্ব দিকের দেয়াল থেকে টাইটা নদীর রঙ বদলে যেতে দেখল যা আসন্ন বিপদের পূর্বাভাসে কাঁপছিল। মনে হল এক মুহূর্তের জন্যে মিশরের বিশাল আকাশে সূর্যটা কালো হয়ে গেল সেই সাথে যেন নীলের পানি রক্তাভ বর্ণ রঙ ধারণ করল। কিন্তু উপরে তাকিয়ে সে দেখল সেখানে কোন মেঘ নেই। কিংবা সূর্যের রশ্মিকে বাধা দেওয়ার জন্য না ছিল কোন পাখির ঝাক এবং যখন সে আবার পানির দিকে নিচে তাকাল দেখল পানি আবার তার নীল রঙে ফিরে এসেছে।

নাজা এখন রাজ রক্তের ধারক এবং নেফার সেই সুরক্ষার মধ্যে। টাইটা প্রার্থনা করে উঠল, আমিই তার এখন একমাত্র ঢাল এবং আমি একা ও বৃদ্ধ। আমার শক্তি কি কোবরাটাকে বাচ্চা বাজপাখি থেকে দূরে সরাতে পারবে? স্বর্গীয় হুরাস, আমাকে আপনার শক্তি দিন। সব সময় আপনিই আমার বর্ম ও বর্শা হয়েছেন। আমাকে এখন ত্যাগ করবেন না, মহান প্রভু।

*

লর্ড নাজা ও তার নতুন দুজন স্ত্রী আকর্ষণীয় কক্ষে নেমে এল যার প্রাসাদের ফটকগুলোতে সিংহ পদবীর দুর্ধর্ষ সৈন্যরা প্রহারা দিচ্ছে। সেখানে তারা নেমে শুভযাত্রা সহকারে বাগানের মধ্যদিয়ে ভোজন কক্ষের দিকে এগোল। বেশিরভাগ অতিথিরা তাদের পূর্বেই চলে এসেছে এবং অশিরিশ মন্দিরের বাগানে উৎপন্ন আঙুরের মদ চেখে দেখছে। যখন বিয়ের দলটি প্রবেশ করল তখন হৈ চৈ–এ কানে তালা লাগার উপক্রম। নাজা দুই হাতে দুই নতুন কিশোরী স্ত্রীকে ধরে আছে। তিনজন নব দম্পতি ভিড়ের মধ্য দিয়ে আড়ম্বর শোভযাত্রা করল ও ভোজ সভার কোণে স্তূপ করা উপহারসমূহ সংক্ষেপে পরিদর্শন করল যেগুলো এরকম স্মরণীয় অনুষ্ঠানের সাথেই কেবল মানানসই। অ্যাপেপি স্বর্ণের পাতায় মোড়া একটা রথ পাঠিয়েছে। আর তা এতো সুন্দর যে এমন কি হলের কম আলোতেও এর দিকে সরাসরি তাকানো কঠিন ছিল। ব্যবলিয়ন থেকে রাজা সারগন একশ দাস পাঠিয়েছেন, প্রত্যেকে তারা একটি করে চন্দন কাঠের সিন্দুক বহন করছে যাদের প্রতিটি গহনা, মূল্যবান পাথর অথবা স্বর্ণের পাত্রে পূর্ণ। তারা রাজ-প্রতিভূর সামনে হাঁটুগেড়ে বসে তা গ্রহণ করতে প্রার্থনা জানাল। নাজা গ্রহণের চিহ্ন স্বরূপ তা প্রতিটি স্পর্শ করল। ফারাও নেফার সেটি লর্ড টাইটার পরামর্শে তার নতুন ভগ্নিপতিকে নদীর তীরের মূল্যবান ৫টা জমি দিল। অনুলেখকরা হিসেব করে দেখল যে এর দাম তিন লাখ খাঁটি স্বর্ণের মুদ্রার চেয়ে বেশি। রাজ-প্রতিভূ তার ফারাও-এর সমান ধনী হয়ে গেল।

বিবাহের তিন ব্যক্তি যখন বিয়ের মজলিসের প্রথমে আসন গ্রহণ করল, রাজ বাবুর্চি তাদের ও তাদের অতিথিদের সামনে খাবার খেল যা ৪০টি আলাদা রকমের খাবার এক হাজার দাস পরিবেশন করল। সেখানে ছিল হাতির গুঁড়, ব্যাঙের জিহ্বা ও নুবিয়ান পাহাড়ী ছাগলের হাড্ডি ছাড়া মাংস, বন্য ও আফ্রিকান শূকরের মাংস, গজলা হরিণ ও নুবিয়ান আইবেক্স, টিকটিকি ও অজগর, কুমির ও জলহস্তী, বঁড় ও ভেড়ার মাংস। নীলের সব ধরনের মাছ পরিবেশন করা হল। ভারদন্ড বিশিষ্ট কেট ফিশ যার দেহ হলুদ চর্বিতে পূর্ণ, তা থেকে শুরু করে মিঠা ও নোনা পানির মাছ পর্যন্ত সেখানে ছিল। উত্তরের সাগর থেকে টুনা, হাঙ্গর, গলদা চিংড়ি, বাগদা চিংড়ি এবং কাঁকড়া ডেল্টা থেকে দ্রুত একটা নৌবহর দ্বারা পাঠানো হয়েছে। বাতাসে উড়ে চলা পাখি, নীবর হাঁস সহ, তিন ধরনের রাজহাঁস, অসংখ্য হাঁস ও ভরত পাখি, তিতির ও কোয়েল রোস্ট করা, ছ্যাকা দেওয়া মদ অথবা বন্য মধু অথবা গুল্ম ও মশলা দিয়ে খাওয়া হল।

আগুন থেকে সুগন্ধি মিশ্রিত ধোয়া এবং রান্নার ঘ্রাণ ভিখারীদের দল এবং প্রাসাদের ফটকের সাধারণ মানুষ পেয়েছে এবং এমকি তারাও পেল যারা দূরে নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো অথবা মধ্য নদীতে নৌকায় ছিল, যারা ভোজ দেখতে কাছে এসেছে।

অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্য ছিল সঙ্গীত শিল্পী ও যাদুকর, কসরতবাজ ও পশু প্রশিক্ষকের দল। হৈ হুল্লোয় পাগল হয়ে একটা বড় বাদামী ভালুক তার শিকল ভেঙে পালিয়ে গেল। হিকস্‌দের একটা দল টর্কের নেতৃত্বে চিৎকার দিয়ে ওটার পিছু লাগল এবং নদীর তীরে ধাওয়া করে ছোট প্রাণীটাকে হত্যা করল।

রাজা অ্যাপেপি দুজন অ্যাশিরিয়ান মহিলা ব্যায়ামবিদের নমনীয়তা ও কসরতে খুব খুশি হলেন, তাই তাদের প্রত্যেককে সে তার দুই হাতে নিল ও বহন করল, লাথি মারল ও হৈ চৈ করল। নাচের মঞ্চ থেকে প্রসাদের ব্যক্তিগত কোয়ার্টারের দিকে যখন সে ফিরল সে টাইটার কাছে গোপন কথাটা বলল, তাদের একজন যে সুন্দর কোঁকড়া চুলওয়ালা ছিল ও আসলে একটা ছেলে। আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম যখন আবিষ্কার করল তার দুই পায়ের মাঝে গোপন অঙ্গটা আছে এবং আমি তা ধরতেই সে পালিয়ে যেতে চাইল। সে হাসিতে গর্জন করে উঠল, ভাগ্যক্রমে আমি তা হতে দেই নি কারণ দুজনের মধ্যে সে-ই ছিল মজার।

রাত নামতেই বেশিরভাগ অতিথি মাতাল হয়ে গেল অথবা খাবারে এতো ঠেসে গেল যে তারা খুব কমই দাঁড়াতে পারল, তখন লর্ড নাজা ও তার নব বধূরা চলে গেল। তারা ব্যক্তিগত কক্ষে প্রবেশ করার পর নাজা তার সেবিকাদের ডাকল যেন মেরিটাকাকে তার নিজের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। তার সাথে ভালো ব্যবহার করবে। সে তাদের সাবধান করল। বেচারি বাচ্চা মেয়ে নিজের পায়ের উপরই ঘুমিয়ে পড়েছে।

তারপর সে হেজারেটকে হাতে ধরে তার জমকালো কক্ষে নিয়ে গেল যেখান থেকে নদী দেখা যায়। নীলের কালো পানিতে সোনালি তারা যেন জ্বলছে।

কক্ষে প্রবেশ করতেই হেজারেটের ব্যক্তিগত দাসী তার বিয়ের পোশাক ও গহনা খোলার জন্য তাকে বাঁশের বেড়ার আড়ালে নিয়ে গেল।

ভেড়ার চামড়া দিয়ে বিয়ের বিছানাটা তৈরি যা চকচকে সাদা রঙের। লর্ড নাজা সতর্কতার সাথে তা পরীক্ষা করল এবং সে ওটার গুণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে বাইরের ছাদে গেল এবং নদীর ঠাণ্ডা বাতাস টেনে নিল। একজন দাস তাকে এক বোল মশলা দেওয়া মদ এনে দিল এবং সে তৃপ্তি সহকারে তা পান করল। এই প্রথম সে তার নিজেকে পুরো বিকেলটা উপভোগ করতে দিল। নাজা জানে বেঁচে থাকার একটা গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে শত্রুদের উপস্থিতিতে নিজের বুদ্ধি পরিষ্কার রাখা। সে লক্ষ্য করে দেখেছে যে অন্য সকল অতিথিরা পান করে নিজেদের অবস্থা বেসামাল করেছে। এমনকি টর্ক যার উপর সে অনেক বিশ্বাস ও ভরসা রাখে সেও তার পশুত্বের কাছে বশ মেনেছে। নাজা শেষ তাকে সুন্দর এক লাইবিয়ান দাসী মেয়ের ধরা বোল থেকে পান করতে দেখেছে। টর্ক পান শেষ করে তার মুখ মেয়েটার স্কার্ট দিয়ে মুছছিল। তারপর তাকে নিজের মাথার উপর তুলে ধাক্কা দিয়ে ঘাসের মাঠে ফেলে দিল এবং পিছন থেকে তার উপর চড়ে বসল। নাজার খুঁতখুঁতে স্বভাব এই দৃশ্য দেখে দুঃখ পেয়েছে।

সে পুনরায় কক্ষে প্রবেশ করতেই দুজন দাস দুলকি পায়ে ভেতরে এল। তারা গরম পানির একটা বড় কড়াই বহন করছিল, যার মধ্যে পদ্মফুলের পাপড়ি ভাসছে। নাজা মদের বোতলটা এক পাশে রাখল এবং গোসল করতে গেল। একজন দাস তার চুল শুকালো ও বেনুনি করে দিল এবং অন্য জন তার জন্যে একটা পরিষ্কার সাদা পোশাক নিয়ে এল। তারপর সে তাদেরকে বিদায় করে দিয়ে ফুল শয্যার বিছানায় ফিরল।

সে বিছানার উপর শুয়ে তার দীর্ঘ চমৎকার দেহটা বিছিয়ে দিল এবং সোনালি কাজের আইভরি বালিশে নিজের বিনুনি করা মাথাকে বিশ্রামে দিল।

কক্ষের অন্য কোণ থেকে কাপড়ের খসখস ও নারীসুলভ ফিসফিসানি শোনা গেল। সে একবার হেজারেটের হাসি চিনতে পারল এবং শব্দটা তাকে জাগিয়ে দিল। সে কুনুইতে ভর দিয়ে বাঁশের বেড়ার দিকে তাকাল। দূরত্ব এতোটুকু যে সে তার বিবর্ণ কোমল ত্বক দেখতে পেল।

ক্ষমতা ও রাজনৈতিক উচ্চাকাংখাই এই বিয়ের মূল কারণ, কিন্তু ওগুলোই একমাত্র কারণ নয়। যদিও স্বভাব সিদ্ধভাবে সবসময়ই সে একজন যোদ্ধা ও অভিযাত্রী তবুও নাজার মাঝে একটা কামুক স্বভাব বিদ্যমান। বছর জুড়ে সে হেজারেটকে চুপি চুপি দেখেছে এবং প্রত্যেক অবস্থায় তার নারীত্বের প্রতি ও তার মনের প্রতি তার আকর্ষণ বেড়েছে। তার শিশুকাল থেকে লাজুক কিশোরীত্বে উপনিত হওয়া পর্যন্ত এবং তারপর সেই সময় যখন নারীত্বের পূর্ণতায় তার শরীর নাজুক ও মাধুর্যময়ী হয়ে উঠল, তার শরীরের গন্ধ পরিবর্তন হয়ে গেল, অতঃপর যখনই সে তার খুব কাছে আসত তখন সে নারীত্বের অন্যরকম ক্ষীণ গন্ধ তাকে পাগল করে তুলত।

একবার যখন বাজ ধরতে সবাই বেরিয়েছিল তখন নাজা হেজারেটের কাছাকাছি এসেছিল এবং সে ও তার দুই বান্ধবী তার কটি বন্ধনী সাজানোর জন্য পদ্ম ফুল তুলছিল। সে যখন তীরে দাঁড়িয়েছিল তখন সে তার দিকে তাকিয়ে ছিল এবং তার ভেজা স্কার্ট তার পায়ের সাথে লেপ্টে ছিল ফলে সুন্দর লিনেনের ভেতর দিয়ে তার ত্বক দ্যুতি ছড়াচ্ছিল। তার চুল তার গালের উপর এলোমেলো হয়ে একটা নিষ্পাপ অভিব্যক্তি তৈরি করেছিল যা কম কামনা উদ্রেককারী ছিল না। যদিও তার অভিব্যক্তি গম্ভীর ও বিনয়ী ছিল, তার বাঁকা চোখে ছিল লাজুকতা, তবুও তার মধ্যে কামুক একটা ভাব ছিল যা তাকে বিমুগ্ধ করেছিল। কিন্তু তা ছিল এক মুহূর্তের জন্যে, সে তার বান্ধবীদের না ডেকে তীরে উঠে প্রাসাদের উদ্দেশ্যে ঘাসের মাঠ দিয়ে দৌড়ে চলে যায়। তার ভেজা দীর্ঘ পাগুলো তখন ঝিলিক দিচ্ছিল, তার গোলাকার নিতম্ব আন্দোলিত হচ্ছিল এবং লিনেনের স্কার্টের নিচে আকৃতি পরিবর্তিত হচ্ছিল। হঠাৎ করে তখন তার নিঃশ্বাস ছোট হয়ে আসে ও দ্রুত হল।

আর এখন স্মৃতিচারণের সময় তার কোমরের পেশীও আন্দোলিত ও দ্রুত হল। বেড়ার আড়াল থেকে তার বেরিয়ে আসার অপেক্ষা সে রয়েছে। কিন্তু উল্টো সে আবার চাইল সময়টা দেরি হোক যাতে সে পুরোপুরি বুঝতে পারে। অবশেষে তা ঘটল। দুজন দাসী তাকে বাইরে নিয়ে এল তারপর তাকে মেঝের মাঝখানে একা দাঁড় করিয়ে রেখে দ্রুত কেটে পড়ল।

তার রাতের পোশাক গলা থেকে গোড়ালি পর্যন্ত তার ছড়ানো। যা পূর্বের কোন ভূমি থেকে আনা, অপ্রতুল ও মূল্যবান একটা সিল্ক, ক্রিম রঙ এবং এতো সুন্দর যে মনে হল এটা তার চারপাশে নদীর কুয়াশার মতো ভাসছে। তার নেওয়া প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাসে যেন নড়ছে। তার পিছনের কোনায় তিন পাওয়ালা এক টুলের উপর একটা তেলের প্রদীপ ছিল এবং নরম আলোটা তার সিল্কের ভেতর দিয়ে আরো উজ্জ্বল দেখাল। তার বাঁকানো কোমর ও কাঁধ শৈল্পিক দৃশ্য ধারণ করল, তাই ওগুলো পালিশ করা আইভরির মতো নরমভাবে দূতি ছড়াচ্ছে। তার পা খালি ও হাতে মেহেদি আঁকা। তার চেহারা থেকে প্রসাধন ধুয়ে ফেলা হয়েছে তাই তার তরুণ রক্ত তার নিখুঁত ত্বকের নিচে নাজুকভাবে তার গালকে রাঙা করে রেখেছে। এবং তার ঠোঁট কাঁপছিল যেন সে এখনই কেঁদে ফেলবে। সে তার মাথা বালিকা সুলভ অনুনয়ের ভঙ্গিতে ঝুলিয়ে রাখল এবং নিচের পাপড়ি উঁচিয়ে সে তার দিকে চোখ তুলে তাকাল। তার চোখ সবুজ এবং ওগুলোর মধ্যে সে একটা দুষ্টুমির ঝলক দেখতে পেল। তার রক্ত আবার কেঁপে উঠল যেন সে তার সাথে ষড়যন্ত্র করছে।

ঘুরে দাঁড়াও, সে কোমলভাবে বলল কিন্তু তার কণ্ঠ এমন শুকনো যেন কোন সবুজ খেজুর গাছ থেকে কেউ তার রস শুষে নিয়েছে। সে তার কথায় সায় দিল, কিন্তু একটা স্বপ্নের মতো ধীর গতিতে সে তার কটি ঘুরালো এবং তখন সিল্কের মধ্য দিয়ে আলতোভাবে তার পেট ঝলকে উঠল। তার নিতম্ব দুলে উঠল, গোল ও অসট্রিচের ডিমের মতো তা সুন্দর এবং তার জ্বলজ্বলে লম্বা চুলও সে সাথে ঢেউ দুলাল।

তুমি সুন্দর, নাজা বলল। তার ঠোঁটের কোণায় হাসি দেখা দিল এবং জিভের ডগা দিয়ে সে ওগুলোকে ভেজাল যা ছিল বিড়ালের বাচ্চার জিভের ন্যায় গোলাপি। আমি খুশি যে আমার লর্ড রাজ-প্রতিভূ আমাকে তা মনে করেন।

নাজা বিছানা থেকে উঠে তার কাছে গেল। সে তার হাতটা নিজের হাতের উপর নিল যা ছিল উষ্ণ ও নরম। সে তাকে টেনে বিছানায় নিয়ে গেল এবং সেও কোন ইতস্তত ছাড়াই তাকে অনুসরণ করল। নববধূ সাদা ভেড়ার চামড়ার উপর হাঁটু গেড়ে বসল এবং তার মাথা ঝুলিয়ে দিল যাতে তার চুল তার মুখের উপর এসে পড়ে। নাজা তখন তার সামনে দাঁড়াল এবং সামনে ঝুঁকল যততক্ষণ না তার ঠোঁট তা স্পর্শ করল। সে তার দেহের গন্ধ পেল। সে তার চুল ধরল এবং কালো পর্দার ভেতর দিয়ে তার দিকে তাকাল। তারপর সে তার লম্বা চুলগুলোকে ভাগ করে দিল এবং এক হাতে তার চিবুক ধরে তাকে তার দিকে ফেরাল।

আপনার চোখগুলো ইকোনার মতো। হেজারেট ফিসফিসিয়ে বলল। ইকোনা ছিল নাজার পোষা সিংহের নাম। পশুটা সব সময় তাকে ভীত ও মুগ্ধ করত। এখন তার সে রকম অনুভূতি হচ্ছে কারণ লোকটিকে একটা বড় বিড়ালের মতো চকচকে ও নরম মনে হচ্ছে; তার চোখ হলুদ ও অপ্রশম্য। সহজাত নারী প্রবৃত্তিতে সে ওগুলোর মধ্যে নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা বুঝল যা তার আবেগে সাড়া জাগাল যা সে আগে কখনো অনুধাবন করেনি। আপনিও সুন্দর। সে ফিসফিস করে বলল এবং এটা সত্য। এই মুহূর্তে সে বুঝল যে সে-ই তার দেখা সবচাইতে সুন্দর সৃষ্টি।

সে তার নববধূকে চুমু খেল এবং তা তাতে অন্যরকম এক শিহরণ জাগালো। এর স্বাদটা তার কাছে মনে হল কোন পাকা ফলের মতোই সুস্বাদু যার স্বাদ এর আগে সে কখনও নেয় নি। স্বভাবিক নিয়মে সেও তা গ্রহণ করতে তার মুখটা প্রশস্ত করল। সাথে সাথে নাজার জিহ্বাটা তার মুখের ভেতর সাপের ন্যায় নড়াচড়া করতে লাগল, যেন সব কিছু শুষে নিতে চাইছে; সে এতে কোন বাধা দিল না। সে সমর্পণে তার চোখ বুঝল এবং প্রাণ ভরে তা উপভোগ করতে লাগল। সাড়া পেয়ে নাজাও তার পিছনে হাত নিয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে আরো কাছে টেনে নিল এবং আরো জোরে তার ওষ্ঠ পিষে ফেলতে চাইল। সে তার চুম্বনের আবিসে নিজেকে এতো হারিয়ে ফেলল যে যখন নাজা তার স্তনে হাত রাখল তখন সে অপ্রস্তুত হয়ে গেল। চোখ খুলে সে তা দেখল এবং হাঁফাতে লাগল। সে তাকে দূরে ঠেলে দিতে চাইল কিন্তু নাজা তাকে শক্ত করে ধরে ছিল। তারপর ধীরে ধীরে সে তার দেহের উপর নাজার শক্ত চাপ অনুভব করল যা তাকে ভীত করে তুলল। নাজা তার স্তনের বোঁটায় হালকা একটা চুম্বন দিল, সাথে সাথে তা তার শরীরে অন্যরকম একটা শিহরণ জাগাল। নাজা তখন তার হাতটা সরিয়ে নিতেই সে একটু হতাশ বোধ করল। তারপর নাজা তাকে টেনে ভেড়ার চামড়ার উপর তুলে আনল এবং তার স্তনদ্বয় তার মুখ বরাবর আনল।

মুহূর্তের মধ্যে সে তার রেশমি গাউনটা এক টানে খুলে মেঝের উপর ছুঁড়ে ফেলে দিল। তারপর তার স্তনের বোঁটা মুখের ভেতর নিয়ে অবিরত তা চুষতে লাগল, আবেগে সে তখন জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে। একই সময়ে নাজা তার একটি হাত তার নব বধূর নিমাংশের উরু সন্ধিস্থ কোমল গোপন অঙ্গের নরম চুলের উপর নিয়ে তা মন্থন করতে লাগল।

হেজারেট যেন বাঁধা দেবার ক্ষমতাটা হারিয়ে ফেলেছে। বরং সে নিজেকে সমর্পণ করতে বাধ্য হল। তার দাস বালিকা তাকে যা শুনিয়েছিল এখন দেখা যাচ্ছে তা আরো নির্মম। বরং তার হাতটা দ্রুত, শক্ত এবং কর্মঠ। মনে হচ্ছে নাজা যেন তার দেহের বিষয়ে তার নিজের চাইতেও আরো বেশি জ্ঞাত। তা নিয়ে সে এক দক্ষ খেলায় মেতে উঠলো যা তাকে গভীর থেকে আরো গভীরে, দ্রুত থেকে আরো দ্রুত কোন মাতাল সাগরের অতলে নিয়ে যেতে থাকল।

তখনই সে তল খুঁজে পেল যখন হঠাৎ চোখ খুলে সে অনুভব করল যে তার দেহটা বিবস্ত্র, গাউনটা উধাও এবং সে তার নগ্ন দেহটা নিয়ে খেলা করছে। তার সে স্বপ্নের কথাটা মনে পড়ে গেল যেখানে নাজার দেহের নিমাংশটা ছিল স্টার গেজারের মতো। ভয়ে ভয়ে সে তার দিকে তাকালো, কিন্তু স্বপ্নের কোন মিল সে খুঁজে পেল না। তার ভয়টা উধাও হয়ে গেল এবং আবোরো সে তার কাছে নিজেকে সমর্পণ করল। তারপরই সে তার নিমাংশে একটা তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভব করল, যেন তরল কিছুর ক্ষরণ ঘটছে কিন্তু সাথে সাথে একটু অস্বস্তিকর অথচ ভালো লাগা এক অনুভূতি তাকে গ্রাস করল। এর একটু পর সে তার উপর থাকা নাজার একটা উল্লাস ধ্বনি শুনল। যা তার দেহের ভেতর কাঁপুনি জাগাল এবং সহ্যহীন একটা আনন্দের সাথে সাথে সেও শিৎকার দিয়ে উঠল।

এক রাতে পরপর দুবার একই অদ্ভুত আনন্দে সে কাঁদল।

যখন ঊষা তার গোলাপি ও রূপালি আলো নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করল সে তখনো তার বাহুতে শুয়েছিল। তার মনে হল যেন সব জীবনী শক্তি তার ভেতর থেকে শুষে নেওয়া হয়েছে, যেন তার হাড়গুলো নদীর কাদার মতো নরম হয়ে গিয়েছে এবং তল পেটের গভীরে সে স্বল্প ব্যথা অনুভব করল।

নাজা হঠাৎ তার বাহু থেকে পিছলে বের হতে উদ্যত হল এবং তার শুধুমাত্র প্রতিবাদ করার শক্তি ছিল, যাবেন না, ওহ! দয়া করে যাবেন না, আমার লর্ড, আমার সুন্দর লর্ড।

বেশি সময়ের জন্যে নয়। সে ফিসফিস্ করে বলল এবং আলতোভাবে তার নিচ থেকে ভেড়ার চামড়াটা বের করে নিল। সে সাদা পর্দার উপর দাগ দেখল, রক্ত গোলাপের পাপড়ির ন্যায় উজ্জ্বল। সে শুধুমাত্র অল্প ব্যথা অনুভব করেছিল। নাজা চাদরটা ছাদে নিয়ে গেল এবং হেজারেট তাকে দরজার মধ্য দিয়ে দেখল। যখন সে তা পাঁচিলের উপর ঝুলিয়ে দিল তখন অনেক নিচ থেকে ক্ষীণ আওয়াজ ভেসে এল। নিচে অপেক্ষামান নাগরিকরা তার কুমারীত্বের প্রদর্শনী দেখল। সে এই কৃষক পালের অনুমোদনের ব্যাপারে কোন চিন্তা করে না। কিন্তু সে তার নতুন স্বামীর নগ্ন পিঠ দেখল এবং অনুভব করল তার বুক ও ব্যথাতুর গর্বে তার প্রতি ভালোবাসায় স্ফীত হয়ে উঠল। যখন সে তার কাছে ফিরে এল সে দুই হাতে তাকে জড়িয়ে ধরল।

আপনি চমৎকার, সে ফিসফিস করে বলল এবং তার বাহুতে ঘুমিয়ে পড়ল। অনেক পরে সে জেগে উঠল এবং দেখল যে তার পুরো দেহ আনন্দের অনুভূতিতে ভরে গেছে যা সে পূর্বে কখনো পায় নি। প্রথমে সে তার আনন্দের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারল না। তারপর সে শক্ত পুরুষোচিত উষ্ণতা তার বাহুতে অনুভব করল।

চোখ খুলতেই সে দেখল নাজা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে, উত্তরে সে কোমলভাবে হাসল। তুমি আমার দীপ্যমান একজন রাণী হবে। সে নরমসুরে বলল। সে প্রকৃতই বলেছে। রাতের বেলায় সে তার মাঝে কিছু গুণ আবিষ্কার করেছে যা সে আগেই সন্দেহ করেছিল। সে তার মাঝে একজনকে অনুভব করেছে যার আশা ও প্রবৃত্তি তার সাথে পুরোপুরি মানানসই।

এবং এই মিশরের জন্য আপনি কি চমৎকার ফারাও হবেন? সে তাকে হাসিটা ফিরিয়ে দিল ও কামুকভাবে টেনে নিল। তখন সে নরম করে হাসল। উঠে তার গাল স্পর্শ করল। কিন্তু সেটা কখনই হবে না।

সে হঠাৎ হাসি থামিয়ে দিল এবং নরম সুরে গম্ভীরভাবে জিজ্ঞেস করল এটা হতে পারে?

একটাই বস্তু আছে আমাদের পথে, সে উত্তর দিল। তার আর বেশি কিছু বলতে হল না, কারণ সে তার চোখে একটা লাজুক অর্জন প্রিয় অভিব্যক্তি ফুটতে দেখল। সে পুরোপুরি তার সাথে যেতে প্রস্তুত।

আপনি ছুরি এবং আমি হব খাপ। আপনি আমাকে যা করতেন বলবেন তাই হবে আমার ভবিতব্য, আমি আপনাকে বিফল হতে দেব না, আমার সুন্দর লর্ড।

নাজা তার ঠোঁটের উপর তার একটা আঙুল রাখল যা তার চুমুতে উষ্ণ ও স্ফীত হয়ে আছে। আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের মধ্যে কিছু কথা হওয়ার প্রয়োজন কারণ আমাদের হৃদয় একইভাবে স্পন্দিত হচ্ছে।

*

বিয়ের পরও রাজা অ্যাপেপির সফর সঙ্গীরা আরো একমাস থেবস্-এ অবস্থান করল। তারা ফারাও নেফার সেটি ও তার রাজ-প্রতিভূর মেহমান ছিল এবং রাজকীয়ভাবে অতিথিরূপে সমাদৃত হয়েছে। এই দেরির বিষয়েও টাইটা উৎসাহ যুগিয়েছে। কেননা সে নিশ্চিত জানে যে যতোক্ষণ অ্যাপেপি ও তার মেয়ে থেবসে থাকবে ততোক্ষণ নাজা নেফারের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেবে না।

রাজ অতিথিরা শিকার করে, অথবা নদীর দুই তীরের মন্দিরগুলোকে দর্শন করে অথবা উত্তর ও দক্ষিণ রাজ্যের সৈন্যদের মধ্যে খেলার আয়োজন করে তাদের সময় কাটাল। রথের দৌড় প্রতিযোগিতা, তীর ছোঁড়ার প্রতিযোগিতা এবং পায়ে দৌড় প্রতিযোগিতা, এমনকি সাঁতার প্রতিযোগিতাতেও তারা অংশ নিল; যেখানে বাছাই করা সাঁতারুরা হুরাসের স্বর্ণের মূর্তির পুরস্কারের জন্যে নীলের পুরো প্রস্থটা সাঁতরালো।

মরুতে তারা গজলা হরিণ ও ওরিক্স শিকার করল। ছুটন্ত রথ থেকে অথবা মহান বাস্টার্ড-এর জন্য দ্রুত সেকার দিয়ে তারা বাজ শিকার করল। প্রাসাদের খাঁচায় কোন রাজ বাজপাখি ছিল না। কারণ নেফারের পিতার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের সময় সবগুলোকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। অতিথিরা নদীর পাড়ে গিয়ে বক ও হাঁস শিকার করল এবং অগভীর জলাশয় থেকে বড় ক্যাট ফিশ বর্শা দিয়ে বধ করল। তারা নদীর ঘোড়া, বৃহৎ জলহস্তীকে নেফারের যুদ্ধ জাহাজ যার নাম আই অফ হুরাস থেকে নেফারকে সাথে নিয়ে শিকার করল। রাজ কুমারী মিনটাকা তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল এবং উত্তেজনায় চিৎকার করছিল যখন বৃহৎ জম্ভগুলো পানির উপরে উঠে এল। ওগুলোর পিঠে বর্শা মারা হলে তাদের রক্তে পানি গোলাপি বর্ণ ধারণ করল।

এ দিনগুলোতে মিনটাকা প্রায়ই নেফারের পক্ষ নিল। সে তার রথে ভ্রমণ করত যখন তারা শিকারে যেত এবং তাকে বর্শা এগিয়ে দিত যখন তারা কোন ঘাস খাওয়ারত ওরিক্সের পাশা দিয়ে যেত। মরুভূমিতে শিকারী পিকনিকে, সে তার পাশে থাকত এবং তার জন্য অল্প পরিমাণ মজার জিনিস প্রস্তুত করত। সে তার জন্য সব চাইতে মিষ্টি আঙ্গুর বাছাই করত এবং তার লম্বা ক্রমাগত সরু হয়ে যাওয়া আঙ্গুল দিয়ে খোসা ছাড়িয়ে তা তার মুখে ঢুকিয়ে দিত।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রাসাদে ভোজসভা হত এবং সে সেখানেও তার বাম পাশে বসত একজন মহিলার জন্য ঐতিহ্যগত স্থান যাতে সে তার পুরুষের তলোয়ারের হাত কখনো বন্ধ না করে। সে তার দুষ্ট বুদ্ধি দিয়ে তাকে হাসাত এবং সে একজন চমৎকার নকলবিদও বটে! সে হেজারেটকে নিখুঁতভাবে অনুকরণ করে, বোকার মতো হেসে ও চোখ ঘুরিয়ে, আমার স্বামী, মিশরের রাজ-প্রতিভূ অশুভ লক্ষণ সূচক কণ্ঠে বলে যা এখন প্রায়ই হেজারেট বলে। যদিও তারা চেষ্টা করল তবুও কখনো তারা পুরোপুরি একলা হতে পারল না। নাজা ও অ্যাপেপি এটা দেখল। এক পর্যায়ে নেফার টাইটার সাহায্যের আবেদন করল, এমনকি সেও তাদের গোপন সাক্ষাতের কোন ব্যবস্থা করতে পারল না। এটা নেফারের ক্ষেত্রে কখনোই হয় নি যে টাইটাকে তা করার জন্য জোর করে অথবা সে তাদেরকে অন্যদের মত নির্দোষ রাখল। অনেক আগে টাইটা ট্যানোস ও তার প্রিয়তমা লসট্রিসের জন্য একটা গোপন সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছিল এবং ফলাফল এখনো বছর জুরে বস্ত্রের মতো প্রতিধ্বনিত হয়। যখন নেফার ও মিনটাকা বাও খেলে তখন সবসময় এক দাস বালিকা উপস্থিত থাকে কিংবা তখন সভাসদগণ ও লর্ড আসমর ধারে কাছেই ঘুর ঘুর করতে থাকে। নেফার তার শিক্ষা ভালোভাবেই পেয়েছে এবং বোর্ডে মিনটাকার দক্ষতাকে ছোট করে আর দেখে না। সে তার বিপক্ষে এমনভাবে খেলে যেন সে টাইটার বিপক্ষে খেলছে। সে তার শক্তি সম্পর্কে জেনেছে এবং তার কিছু দুর্বলতা চিহ্নিত করেছে। সে তার নিজের দুর্গ সবসময় অতিরিক্তি সুরক্ষিত রাখে এবং যদি সে তার ঐ বৃত্তে চাপ সৃষ্টি করে তবে সে তাকে তার সানু দেশে মাঝে মাঝে একটা প্রবেশ দিয়ে দেয়। দুই বার সে এই কৌশল অবলম্বন করল এবং তার প্রতিরক্ষা ভেঙে দিল। কিন্তু তৃতীয় বার তার কৌশল বুঝতে সে অনেক দেরি করে ফেলল এবং ফাঁদে আটকে গেল। যখন সে তার পশ্চিমের দুর্গ উন্মুক্ত করল সে দ্রুত তার পদাতিক সৈন্য খালি স্থান দিয়ে প্রবেশ করাল এবং খুব মধুরভাবে হাসল যখন সে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হল। সে তাকে প্রায় কিন্তু পুরোপুরি নয়, ক্ষমা করে দিল। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সর্বকালের সবচাইতে গভীর প্রতিযোগিতা হল এবং শেষটা হল মহান অনুপাত যে এমননি টাইটাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা তা দেখে ব্যয় করল এবং মাঝে মাঝে সম্মতিতে মাথা নাড়ল অথবা তার পুরানো অন্তর্নিহিত হাসি হাসল।

তাদের ভালোবাসা এতোটাই দৃশ্যত ছিল যে তা তাদের চারপাশে একটা প্রভাব ছড়িয়ে দিল। এবং যখনই তারা একত্রিত হতো তারা মুচকি হাসত ও অনেক আনন্দ করত। যখন নেফারের রথ থেবসের রাস্তা দিয়ে চলত সে মিনটাকাকে পাদানিতে তার বর্শা বাহক হিসেবে নিত, তার কালো চুল বাতাসে ব্যানারের ন্যায় উড়ত। সতী স্ত্রীরা তাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতো এবং পুরুষেরা তাদের দিকে চেয়ে হাসত ও শুভ কামনা জানাতো। এমন কি নাজাও তাদের দেখে সদয়ভাবে হাসত, কিন্তু কেউ জানতো না এর আড়ালে সে কি ভয়ংকর নীল নক্সা আঁটছে।

শিকারী দলে, বনের পিকনিকে ও প্রাসাদের ভোজে একমাত্র টর্ক ছিল গম্ভীর লোক।

একত্রে তাদের সময় দ্রুত কাটতে লাগল।

সব সময়ই আমাদের পাশে শুধু মানুষ জনের ভীড়, নেফার বাও খেলার সময় তার কানের কাছে ফিস্ ফিস্ করে বলল। এক মুহূর্তের জন্য হলেও আমি তোমার সাথে একা সময় কাটাতে চাই। তোমার চলে যাবার আর মাত্র তিন দিন বাকি। তারপরই তুমি তোমার পিতার সাথে অ্যাভারিস ফিরে যাবে। তারপর মাস, এমন কি বছরও গড়াতে পারে তোমার সাথে আবার আমার সাক্ষাৎ হতে। অথচ তোমাকে বলার আমার এতোকিছু রয়েছে যা এতোগুলো চোখ ও কানের সামনে বলা সম্ভব নয় যেগুলো আমাদের উপর তাক করা তীরের ন্যায় লক্ষ্য স্থির করে আছে।

সে কেবল মাথা নাড়ল। তারপর মিনটাকা তার আরো কাছে এসে ফিসফিস্ করে মজাচ্ছলে বলল, মহামান্য, যদি আমি আপনার সাথে একা যাই তবে আপনি যে আমার সম্মান হানির কারণ হবেন না তার প্রমাণ কী?

আমি মহান হুরাসের কসম খেয়ে বলছি, অন্তত আমি বেঁচে থাকতে তোমার সম্মানে আঘাত হানে এমনটা কখনও হবে না, সে আন্তরিকভাবে বলে উঠল।

সে তার উদ্দেশ্যে তখন হেসে বলল, আমার ভাইয়েরা তা শুনে খুব বেশি খুশি হবে না। তোমার গলা কাটার জন্যে তাদের যে কোন কারণই যথেষ্ট। সে তার দিকে চেয়ে তার চমৎকার কালো চোখ টিপল। অথবা, গলা না পেলে তোমার দেহের অন্য যে কোন অংশও তাদের সন্তুষ্ট করবে।

পরদিনই তাদের সুযোগটা এল। একজন রাজ বাজ শিকারী ডাব্বা গ্রামের পাহাড় থেকে এসে রিপোর্ট করল যে একটা সিংহ পুবের বন থেকে বেড়িয়ে এসেছে এবং রাতের বেলা গবাদি পশু হত্যা করেছে। এটা বেড়ার ভেতরে লাফিয়ে পড়ে ও ভীত জম্ভগুলোর আটটাকে হত্যা করেছে। ভোর বেলা গ্রামবাসীরা মশাল জ্বালিয়ে, বাঁশি বাজিয়ে, ঢোল পিটিয়ে এবং বন্যভাবে চিৎকার করে ওটাকে তাড়ায়।

এটা কখন ঘেটেছে? নাজা প্রশ্ন করল। তিন রাত আগে, মহানুভব। লোকটি সিংহাসনের কাছে গভীর শ্রদ্ধার মাথা নত করে মাটিতে বসল। উজান থেকে আমি যতো তাড়াতাড়ি পেরেছি এসেছি কিন্তু স্রোত খুব শক্তিশালী এবং বাতাসও অনুকূল ছিল। পশুটার কি হয়েছে? রাজা অ্যাপেপি ব্যাকুলভাবে বাধা দিল।

এটা পাহাড়ে ফিরে গেছে কিন্তু আমি আমার সবচাইতে দক্ষ দুজন নুবিয়ান চিহ্ন বিদকে ওটাকে অনুসরণ করতে পাঠিয়েছি।

কেউ কি জন্তুটাকে দেখেছে? কতো বড় এটা? সিংহ নাকি সিংহী?

গ্রামবাসীরা বলে যে এটা একটা বড় পুরুষ সিংহ, পূর্ণ কেশ সহ, মোটা ও কালো।

গত ৬০ বছর ধরে নদী বরাবর ভূমিতে সিংহের কথা শোনা যায় নি। একদা সিংহ শিকার ছিল রাজকীয় খেলা এবং তারা পূর্ববর্তী ফারাওদের নির্মম শিকার হয়েছে কারণ হিসেবে তারা যে শুধু কৃষকের মজুদ খাদ্যই নষ্ট করত তা নয়, রাজশিকারে তারা সবচাইতে অপ্রতুল পুরস্কার ছিল।

হিকস্‌ম যুদ্ধের দীর্ঘ, তিক্ত সময়ে দুই রাজ্যের ফারাওরা ব্যস্ত ছিল এবং তখন কদাচিৎ সিংহ শিকার করা হয়েছে। সেই সাথে যুদ্ধের ময়দানে মানুষের মৃত দেহ তখন সিংহদের খাদ্য যুগিয়েছে। গত কয়েক দশকে তারা বিস্তৃত হয়েছে এবং তাদের সংখ্যাও নিশ্চিত অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেই সাথে তাদের শক্তিও।

আমি এখনই নৌকায় রথ তুলতে বলবো। অ্যাপেপি সিদ্ধান্ত নিল। নদীর সহযোগে কাল ভোরে আমরা ডাব্বা পৌঁছে যাব। সে তার তলোয়ার বের করে পুনরায় সজোরে খাপে ভরল। সেথের নামে আমি এই বৃদ্ধ কালো কেশরের সাথে একটা সুযোগ নিতে চাই। যখন থেকে আমি মিশরীয়দের হত্যা করা ছেড়ে দিয়েছি তখন থেকেই আমি প্রকৃত খেলার জন্যে ক্ষুধার্ত হয়ে আছি।

নাজা তার দিকে কুটি করে তাকাল, মহামান্য, আগামী পরশু আপনার অ্যাভারিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার কথা।

আপনি ঠিক বলেছেন, রাজ-প্রতিভূ। যাই হোক। বেশির ভাগ মালপত্র ইতোমধ্যে তোলা হয়ে গেছে এবং নৌযান ছাড়ার জন্যে প্রস্তুত, অধিকন্তু ডাব্বা আমার যাত্রা পথেই পরবে। আমি একদিন বা দুদিন শিকারের চেষ্টা করব।

নাজা ইতস্তত করল। শিকারের প্রতি তার খুব একটা আসক্তি ছিল না। রাজ্যের অসংখ্য কাজ যা তার জন্যে জমে আছে, তা রেখে যেতে তার ইচ্ছে নেই। সে সামনে অ্যাপেপির গমনের দিকে তাকাল; থেবসে তার অমার্জিত, অশোভন উপস্থিতি বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে। তার আরো একটি পরিকল্পনা এগিয়ে আছে যা অ্যাপেপি একবার থেবস্ ত্যাগ করলেই কেবল এগুনো যাবে। এখনো সে হিক ফারাওকে উচ্চ রাজ্যে একা শিকার করতে দিতে পারে না। দক্ষিণের রাজ্যে অ্যাপেপিকে এমনভাবে ব্যবহার করতে দেয়াটা শুধু অভদ্রতাই হবে না অরাজনৈতিকও হবে। সবাই বুঝবে যে এখানেও তার একই ক্ষমতা আছে।

মহামান্য, নাজা পুরোপুরি খারিজ করার পূর্বেই নেফার কথা বলল, আমরা অনেক আনন্দ নিয়েই শিকারে যোগ দেবো। সে একটা চমৎকার খেলার সুযোগ দেখল কারণ সে কখনো তার রথ দ্বারা কোন সিংহকে তাড়া করার সুযোগ পায় নি এবং নিজের সাহসও যাচাই করতে পারেনি। তবে তার চাইতে একশগুণ গুরুত্বপূর্ণ হল শিকার হয়তোবা মিনটাকার দুঃখের বিদায় দেরি করিয়ে দেবে। এ আনন্দের উপলক্ষ্য হয়তো তাদের একটা সুযোগ দিবে যা এতোদিন তারা পায় নি অন্তত একাকী কিছু মুহূর্ত কটাতে পারলেও পারতে পারে তারা। নাজা তাকে প্রতিরোধ করার পূর্বেই নেফার শিকারীর দিকে ঘুরল যে এখনো কাল টাইলসের মেঝেতে চেপে পড়ে আছে। খুব ভালো, আমার প্রিয় অনুসারীরা, রাজ-সরকার তোমাকে তোমার কষ্টের জন্যে একটা স্বর্ণের আংটি দেবে। আমাদের যানের সবচাইতে দ্রুতটায় করে এক্ষণি ডাব্বায় ফিরে যাও। আমাদের আগমনের প্রস্তুতি গ্রহণ করো। আমরা পূর্ণ শৃংখলভাবে এ পশুর পিছনে ছুটব।

নেফারের একমাত্র অনুতাপ হল তার প্রথম সিংহ শিকারের সময় তাকে পরামর্শ ও উপদেশ দেওয়ার জন্যে তার সাথে টাইটা থাকবে না। বৃদ্ধ লোকটি তার আরেক নির্দিষ্ট সময়ের ও রহস্যজনক আগমনের জন্য বনে অদৃশ্য হয়ে গেছে এবং কেউ জানে না সে কবে ফিরবে।

*

পরদিন খুব সকালে শিকারী দল ডাব্বা গ্রামের নদীর তীরে নামল। ছোট নৌকা ও জাহাজ থেকে সব ঘোড়াসহ বিশটি রথ নামানো হল। এসব কর্ম যজ্ঞের মধ্যে বর্শা বাহক তাদের বর্শার ফলা ধার দিচ্ছিল, শিকারী তীরে ধনুক ঠিক করছিল এবং তীরগুলোর ভারসাম্যতা ও ঋজুতা পরখ করছিল। যখন ঘোড়াগুলোকে পানি ও খাবার খাওয়ানো হচ্ছিল তখন শিকারীরা খুব মজার নাস্তা করল যা গ্রামবাসীরা তাদের পরিবেশন করল।

সব কিছুতে একটা উৎসব ভাব বিরাজ করছিল এবং অ্যাপেপি ঐ শিকারীকে ডেকে পাঠাল যে পাহাড় থেকে রিপোর্ট করার জন্যে ফিরেছে। এটা একটা খুব বড় সিংহ। নদীর পূর্বে আমার দেখা দেখা সবচাইতে বড়, লোকটি তাদের জানাল, যা তাদের উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দিল।

তুমি কি আসলেই ওটাকে দেখেছ? নেফার জানতে চাইল, কিংবা তার কোন চিহ্ন দেখেছ?

আমি তাকে স্পষ্ট দেখেছি কিন্তু একটু দূর থেকে। সিংহটা একটা ঘোড়ার সমান লম্বা এবং তার চলাফেরায় একটা রাজকীয় ভাব আছে। তার কেশর শস্য গাছের খড় বাতাসে যেমন করে দোলে সে ভাবে দোলে।

সেথের কসম, এই লোকটি একজন কবি, নাজা বিদ্রূপ করল। আসল কথা বল ও সুন্দর শব্দগুলো বাদ দাও, বদমাশ।

শিকারী লোকটি তার আনুগত্যতা দেখাতে মুষ্ঠি বন্ধ করে তার হৃদপিণ্ড স্পর্শ করল এবং দমিত স্বরে তার রিপোর্ট করে চলল। গতকাল সে একটা কাঠের ওয়াদির উপর শুয়েছিল, এখান থেকে দুই ক্রোশ দূরে। কিন্তু রাত নামার সাথে সাথে সে শিকারের খুঁজে তা ছেড়ে চলে যায়। চার দিন আগে শেষ বার সে খেয়েছে এবং সে ক্ষুধার্ত ছিল। রাতের বেলা সে একটা রিক্সা শিকার করতে চেয়েছিল কিন্তু ওটা তাকে লাথি মারে ও দৌড়ে মুক্ত হয়ে যায়।

আজ তাকে তুমি কোথায় পাবে বলে আশা করছো? নেফার তাকে নাজার চাইতে দয়ালু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল। যদি সে শিকার করে তবে সে তৃষ্ণার্ত হবে সেই সাথে ক্ষুধার্তও। আর কোথায় সে পান করবে?

শিকারী লোকটি তার দিকে সম্মানের সাথে তাকাল, শুধু তার রাজকীয় বৈশিষ্ট্যের জন্যই নয় বরং বনের জ্ঞানের জন্যও যা সে প্রদর্শন করল। ওরিক্সে শিকার করা চেষ্টার পর, সে পাথুরে ভূমিতে চলে যায় যেখানে আমরা তার চিহ্ন খুঁজে বের করতে পারি নি। অ্যাপোপি রাগের একটা ভাব করল এবং শিকারী লোকটি তখন দ্রুত বলল, কিন্তু আমি আশা করি আজ সকালে সে কোন ঘোট মরুদ্যানে জলপান করবে। একটা গোপন জায়গা যা বেদুঈনরা ছাড়া অন্য কেউ কমই চেনে।

কতক্ষণ লাগবে সে স্থানে পৌঁছতে? নেফার জিজ্ঞেস করল। লোকটি তার বাহুটা এক বৃত্তের মতো করে ঝাড়ল, যা তিন ঘণ্টা সময় নির্দেশ করল।

তাহলে তো আমাদের নষ্ট করার মতো অল্প সময়ই আছে, নেফার তার দিকে চেয়ে হাসল এবং রথ বাহিনীর অধিনায়কের উদ্দেশ্যে চিৎকার করার জন্য ঘুরল। আর কত দেরি, সৈনিক?

সব কিছু প্রস্তুত, মহামান্য।

চলো সবাই, নেফার আদেশ দিল এবং যখন শিকারীরা অপেক্ষারত রথের উদ্দেশ্যে পা বাড়াল তখন হর্ণ বেজে উঠল। মিনটাকা নেফারের পাশে হাঁটতে লাগল। এরকম অনানুষ্ঠানিক কাজে সকল রাজকীয় গাম্ভীর্যতা ভুলে যাওয়া হয় এবং কেননা সবাই তারা একটা উত্তেজক প্রমোদ ভ্রমণে বের হয়েছে। তবে লর্ড টর্ক এ ভ্রমের মধ্যে ছিল না। সে তার রথে লাফিয়ে উঠে লাগাম ধরে রাজা অ্যাপেপিকে বলল, মহামান্য রাজকন্যাকে একজন অনভিজ্ঞ বালকের সাথে যেতে দেওয়া জ্ঞানীর কাজ নয়। এটা গজলা হরিণ নয়। আমরা এখন সিংহ শিকারে যাচ্ছি।

নেফার থামল ও রাগত দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে রইল। মিনটাকা তার নগ্ন বাহুতে একটা ছোট হাত রাখল তাকে উদ্বুদ্ধ করো না। সে একজন ভয়ংকর মেজাজের জঘন্য যোদ্ধা এবং যদি তুমি তাকে চ্যালেঞ্জ করো তবে তোমার মর্যাদা তোমাকে রক্ষা করবে না।

নেফার রাগত ভাবে তার কাঁধ নাচাল, আমার সম্মান আমাকে এরকম অবমাননা এড়িয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় না।

দয়া করো, আমার প্রিয়, আমার জন্যে, এটা বাদ দাও। এই প্রথম সে এরকম প্রিয় শব্দ ব্যবহার করল। সে এটা ইচ্ছে করেই করেছে, জানত এটার প্রভাব অবশ্যই তার উপর পরবে! সে ইতোমধ্যে তার নারীসুলভ স্নেহ দিয়ে নেফারের উদ্বায়ী মন ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখছে যা তার বয়স ও অভিজ্ঞতার বাইরে। তৎক্ষণাৎ নেফার টর্ককে ও তার সম্মানের তিরস্কার ভুলে গেল। তুমি আমাকে কি বললে? নেফার শুকনো কণ্ঠে প্রশ্ন করল।

তুমি নিশ্চয় বধির নও, আমার প্রিয়! সে তার চোখ পিটপিট করে আবার বলল। তুমি স্পষ্টই তা শুনেছ। এবং সে তার দিকে চেয়ে হাসল।

অ্যাপেপি নীরবতার মধ্যে চিৎকার করে বলল। চিন্তা করো না টর্ক। আমি আমার মেয়েকে ফারাও এর যত্নে পাঠাচ্ছি। সে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে। সে একটা ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দিয়ে লাগাম ঝাঁকি দিল। তার দল সামনে লাফিয়ে এগিয়ে যেতেই সে আবার চিৎকার করে বলল, আমরা সকালের অর্ধেকটা এখানে নষ্ট করেছি। শিকারীরা, দ্রুত ঘোড়া চালাও।

নেফার অ্যাপেপির পিছনে রথ চালাচ্ছে, ঠিক টর্ক বাহিনীর নাকের ডগা দিয়ে। তাদের অতিক্রম করার সময় সে টর্কের দিকে শীতল স্থির দৃষ্টিতে তাকাল এবং তাকে বলল, তুমি অক্ষম। স্থিরতা নিশ্চয়তা দেয় যে এখনই এর শেষ নয়। আমরা পরে এই ব্যাপারে আরো কথা বলব, লর্ড টর্ক।

আমার ভয় হচ্ছে সে এখন তোমার নতুন শত্ৰু, নেফার, মিনটাকা বিড়বিড় করল। শয়তানিতে টর্কের একটা সম্মান আছে এবং তার চাইতে বেশি বদমেজাজের জন্য সে খ্যাত।

শিকারী সারিটা পাথুরে পাড়ারের নিকটবর্তী হতেই রাজ শিকারী তার টাটু ঘোড়ায় দুই পা ঝুলিয়ে বসে তাদের পথ দেখাতে লাগল। ঘোড়াগুলোকে আরাম দিতে তারা দুলকি পায়ে চলল, প্রতিটি ঢালু পদক্ষেপের পর তাদের জোরে দম নিতে দিল। এক ঘণ্টার মধ্যে তার নুবিয়ান শিকারীদের একটা দলকে পাহাড়ের চূড়ায় তাদের জন্য অপেক্ষা করতে দেখল এবং শিকারী লোকটির কাছে রিপোর্ট করতে তাদের একজন দৌড়ে নেমে গেল। তারা একে অপরের সাথে আন্তরিকভাবে কথা বলল। তারপর শিকারীটি হেলে দুলে রাজদলের কাছে সর্ব শেষ তথ্য জানাতে ফিরল। নুবিয়ানরা পাহাড়গুলোকে চিহ্নিত করেছে, তবে বন্য প্রাণীটার চিহ্ন না দেখে। তারা নিশ্চিত যে জন্তুটা জলাশয়ে পানি পান করবে কিন্তু তাকে বিরক্ত না করে তারা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

আমাদেরকে পানির কাছে নিয়ে যাও। অ্যাপেপি আদেশ করল এবং তারা চলতে লাগল।

দুপুরের আগেই তারা একটা নিচু উপত্যকায় নেমে এল। তারা নদী থেকে বেশি দূরে ছিল না কিন্তু মনে হচ্ছে যেন গভীর মরুতে রয়েছে, পানি নেই ও একেবারে নির্জন। শিকারীটি দুলকি পায়ে অ্যাপেপির রথের পাশে এসে বলল, এই উপত্যকার মাথায় জলাশয়। পশুটি সম্ভবত কাছে কোথাও শুয়ে থাকবে?

স্বাভাবিকভাবেই অ্যাপেপি, পুরানো যোদ্ধা, নেতৃত্ব গ্রহণ করল এবং নেফার তা করার দেরি করল না। আমরা তিনটি দলে বিভক্ত হবো এবং মরুদ্যানটাকে ঘিরে ফেলব। যদি সব কিছু ঠিক থাকে তবে আমরা তাকে ঘেরা অবস্থায় পাব। আমার লর্ড রাজপ্রতিভূ আপনি কি বা দিকের অংশটার নেতৃত্ব নেবেন। ফারাও নেফার সেটি মধ্যের অংশ নেবে। আর আমি ডান দিকটা দেখব। সে তার ভারি যুদ্ধের ধনুকটা মাথার উপর তুলল, যে প্রথম রক্ত ঝরাতে পারবে সেই পুরষ্কার পাবে।

তারা সবাই দক্ষ রথী ছিল এবং দ্রুতই যে যার অবস্থান নিল, তদারকি ছাড়াই। জলাশয়কে ঘিরে তারা বিশাল জাল বিস্তার করল। নেফারের কাঁধের উপর তার। ধনুক ধরা এবং লাগামটা কব্জি থেকে খোলা, নিশানা লাগানোর জন্য ওগুলো ফেলে তৎক্ষনাৎ দুই হাত মুক্ত করার জন্যে প্রস্তুত। মিনটাকা তার খুব কাছাকাছি। সে লম্বা। বর্শা ধরে তাকে দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা এই অস্ত্রগুলোর নিখুঁত বদল পাঠ করেছে এবং নেফার তার উপর ভরসা করতে পারে, জানে যে সঠিক মুহূর্তেই সে বর্শাটা তার হাতে দিতে পারবে।

তারা মরুদ্যানের দিকে প্রায় হাঁটার গতিতে এগোতে লাগল, ধীরে ধীরে কাছাকাছি যাচ্ছে। ঘোড়াগুলোও যেন তাদের চালকের দুশ্চিন্তাটা বুঝতে পেরেছে এবং সম্ভবত তারা সিংহের গন্ধ পেয়েছে।

তারা তাদের মাথা উপরে তুলে দৃষ্টি ঘুরাতে লাগল এবং নাক দিয়ে বাতাস ছাড়ল ও ত্রস্ত পা ফেলছিল।

রথের সারি জলাশয়কে ঘিরে থাক গুল্ম ও ঘাসের একটু নিচু জমির কাছাকাছি ধীরে এগিয়ে গেল। যখন পুরোটা ঘের দেয়া শেষ হল অ্যাপেপি মাথার উপর হাত উঠিয়ে থামার নির্দেশ দিল। রাজ শিকারী ঘোড়া থেকে নেমে পায়ে হেঁটে সামনে গেল, তার পনিকে সামনে বাড়াল। সে সর্তকভাবে অল্প বাদামী রঙের স্থানটার দিকে এগোলো।

যদি সিংহটা এখানে থাকত, নিশ্চিত ভাবে আমরা এতো বৃহৎ জম্বুটাকে দেখতে পেতাম, মিনটাকার কণ্ঠ কাপল এবং নেফার তাকে তার এই ভয়ের ক্ষুদ্র প্রকাশের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।

একটা সিংহ নিজেকে সমতল করতে পারে যতোক্ষণ না এটা ভূমির অংশ হয়ে যায় এবং তুমি এর উপস্থিতি টের না পেয়ে এটাকে স্পর্শ করার মত কাছাকাছি চলে যেতে পার। যে তাকে বলল।

শিকারী লোকটি প্রতিবারে কয়েক কদম এগিয়ে যাচ্ছে। শব্দ শোনার জন্য থামছে ও তাঁর পথের প্রতিটি ঝোঁপ ও ঘাসের স্কুপে খুঁজে দেখছে। গুল্মের একটা কিনারে সে থামল এবং এক মুঠো ছোট পাথর নিল এবং প্রতিটি সম্ভাব্য লুকানো স্থানে হাত নিচু করে কৌশলে পাথর ছুঁড়তে শুরু করল।

সে কি করছে? মিনটাকা ফিসফিস্ করে জিজ্ঞেস করল।

সিংহ ধাওয়া করার পূর্বে গর্জন করবে। সে ওটাকে দিয়ে তা করানোর চেষ্টা করছে এবং এভাবে সে প্রাণীটাকে বাইরে বের করে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে।

সুসান নিরবতা; আওয়াজ বলতে শুধুমাত্র নুড়িপতনের আওয়াজ, ঘোড়ার নাকের আওয়াজ ও তাদের খুড়ের অস্থির দাপাদাপির শব্দ। প্রত্যেক শিকারী একটা করে তীর তাক করে আছে এবং তৎক্ষণাৎ আক্রমণের জন্য প্রস্তুত। হঠাৎ ঘাসের মধ্যে একটা আওয়াজ হল। প্রতিটি ধনু সাথে সাথে উপরে উঠে গেল এবং বর্শা বাহকরা তাদের অস্ত্র প্রস্তুত করল। কিন্তু সবাই শান্ত হল এবং তাদের অপ্রস্তুত দেখাল যখন সবাই দেখল একটা বাদামি রঙের মুগুড়ে মাথার সারস বাতাসে উড়াল দিল এবং নদীর দিকে ডানা ঝাঁপটিয়ে চলে গেল।

শিকারী তার স্নায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করতে কিছু সময় নিল, তারপর তার কাজ আবার শুরু করল, প্রতিবার এক কদম করে। গহ্বরের আরো গভীরে গেল যততক্ষণ না সে খোলা মুখে পৌঁছল।

প্রতিবারে ঈষৎ লোনা পানি মন্থর গতিতে উঠে আসছে এবং পাথুরে ভূমির একটা অগভীর বেসিন ভরছে যা কোন বিশাল শিকারী জন্তুর তৃষ্ণা মেটানোর জন্যে নগন্য। শিকারী লোকটি বেসিনের কিনারায় চিহ্ন পরীক্ষা করতে এক হাঁটুতে ভর দিয়ে নিচে নামল। তারপর তার মাথা নাড়ল এবং উঠে দাঁড়াল। গুল্মের মধ্য দিয়ে সে আরো দ্রুত ফিরে এল এবং অবশেষে ট্যাটু ঘোড়ার উপর চড়ে হেলে দুলে অ্যাপেপির রথের কাছে ফিরে এল। অন্য শিকারীরা মাথা বাকাল তার কথা শোনার জন্যে। কিন্তু শিকারী ছিল বিষণ্ণ। মহামান্য, আমি আমার হিসেবে ভুল করেছি। সে অ্যাপেপিকে বলল। সিংহটা এই পথে আসে নি।

তাহলে, এখন কি করা? অ্যাপেপি তার হতাশা ও বিরক্তি গোপনের কোন চেষ্টা করল না।

জটাকে খুঁজে দেখার আরো উপযুক্ত স্থান কিন্তু রয়েছে। যেখানে তাকে আমরা শেষ দেখেছি, সে হয়তো উপত্যকা পেরিয়ে গেছে অথবা সে এখান থেকে কাছে কোথাও শুয়ে আছে এবং পানের জন্যে আধার নামার অপেক্ষায় আছে। আরো নিচ পর্যন্ত জলাশয় বিস্তৃত। সে পিছনে পাথুরে খাজের দিকে নির্দেশ করল।

আর কোথায়? অ্যাপেপি জানতে চাইল।

পরবর্তী উপত্যকায় অন্য একটা জলাধার আছে, কিন্তু সেখানে বেদুঈনদের ক্যাম্প। তারা হয়তো জন্তুটাকে ভয় দেখিয়েছে। পশ্চিমে ঐ পাহাড়ের নিচে আরো একটা ছোট জলাশয় আছে। সে দিগন্তের উপর লাল নিচু একসারি চূড়ার দিকে নির্দেশ করল। সিংহটি ঐ স্থানগুলোর যে কোন একটায় থাকতে পারে অথবা নাও থাকতে পারে, লোকটি স্বীকার করল। সে সমতলের ধারে যেখানে অনেক পানি আছে সেখানে ফিরেও আসতে পারে। সম্ভবত বাছুর ও ছাগলের গন্ধ তাকে টেনে এনেছে এবং সে তৃষ্ণার্ত।

ওটা কোথায় লুকিয়ে আছে সে ব্যাপারে তোমার নূন্যতম ধারণা নেই, আছে কি? লর্ড নাজা জানতে চাইল। আমাদের উচিত শিকার বাদ দেওয়া এবং নৌকায় ফিরে যাওয়া।

না! নেফার বেঁকে বসল। আমরা মাত্র শুরু করেছি। আমরা এতো জলদি কিভাবে হাল ছাড়তে পারি?

বালকটি ঠিক বলেছে, অ্যাপেপি সম্মতি জানাল। আমরা অবশ্যই চালিয়ে যাব, তার লুকানোর অনেক স্থান রয়েছে। সে একটু থামল, তারপর একটা সিদ্ধান্ত নিল। আমরা ভাগ হয়ে এগিয়ে যাব এবং আলাদা করে প্রতিটি এলাকা খুঁজবো। সে আড়াআড়ি ভাবে নাজার দিকে তাকাল। আমার লর্ড রাজ-প্রতিভূ, আপনি আপনার বাহিনী বেদুঈন ক্যাম্পের দিকে নিয়ে যান। যদি তারা শিকারটা দেখে থাকে তবে তা আপনাকে বলবে। আমি পাহাড়ের নিচের জলাশয়ের ধারটায় খুজব। সে টর্কের দিকে ঘুরল। উপত্যকায় তিনটি রথ নিয়ে যাও। একজন শিকারী চিহ্ন খোঁজার জন্যে তোমার সাথে যাবে। তারপর আসমরকে সে বলল, তিনটি রথ নাও এবং ডাব্বার পিছন দিকে যাও, হয়তো সে যেখানে হত্যা করেছে সেখানে ফিরে এসেছে। তারপর সে নেফারের দিকে তাকাল, ফারাও, আপনি বিপরীত দিকে, উত্তরে ত্যাকমিনের দিকে যান।

নেফার বুঝল তাকে লুকানোর সবচাইতে কম সম্ভাব্য স্থানটি দেয়া হচ্ছে, কিন্তু তার কোন অভিযোগ নেই। নতুন এই পরিকল্পনার অর্থ হল এই প্রথম বারের মতো সে আর মিনটাকা তাদের অভিভাবকদের ছাড়া একা হচ্ছে। নাজা, আসমর ও টর্ক কে আলাদা আলাদা দিকে পাঠানো হচ্ছে। সে কারো আপত্তির অপেক্ষায় রইল, কিন্তু তারা সবাই শিকারে এতোটাই মগ্ন ছিল যে কেউ এই বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করল বলে মনে হল না, শুধু মাত্র নাজা ব্যতীত।

সে কঠোরভাবে নেফারের দিকে চেয়ে রইল। সম্ভবত, সে অ্যাপেপির আদেশ বরখেলাপ করার দুর্গতিটা পরিমাপ করছে কিন্তু শেষে সে বুঝল যে এটা হবে বোকামী ও উপসংহার টানল এই ভেবে যে নেফার মরুভূমিতে ততটাই ঠিকভাবে রক্ষিত থাকবে যতোটা সে আসমরের দ্বারা থাকতো। তার পালিয়ে যাওয়ার কোন স্থান সেখানে নেই এবং যদি সে মিনটাকাকে তার সাথে নিয়ে যায় তবে দুই হাজার সেনাবাহিনী মৌমাছির ঝাঁকের ন্যায় তার পিছু তাড়া করবে।

নাজার তার দিক থেকে চোখ সরাল যখন অ্যাপেপি চূড়ান্ত আদেশ দেয়ার জন্য গেল। অবশেষে ভেড়ার শিং এর বাঁশি বেজে উঠল এবং দূর-দূরান্ত ও উপত্যকায় তা প্রতিধ্বনিত হল। পাঁচটি সারি উপত্যকা থেকে বের হল। সমতল ভূমিতে গিয়ে তাদের বাহিনী ভাগ হল এবং নির্ধারিত দিকে ছুটল।

অবশেষে যখন অন্য দলগুলো পাহাড়ে অদৃশ্য হয়ে গেল, মিনটাকা নেফারের আরো কাছাকাছি এল ও বিড়বিড় করে বলল, অবশেষে হাথোর আমাদের দয়া দেখিয়েছেন।

আমি বিশ্বাস করি এটা হুরাস যিনি আমাদের তার দয়া দেখিয়েছেন। নেফার তার দিকে দাঁত বের করে হাসল। তবে যার কাছ থেকেই এ দয়া আসুক না কেন আমি তা গ্রহণ করবো।

নেফারের দলে কর্নেল হিল্টোর নেতৃত্বে আরো দুটি রথ ছিল, বৃদ্ধ সৈনিক যে তাকে খুঁজে পেয়েছিল যখন তারা মিশর থেকে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিল।

সে নেফারের পিতার অধীনে কাজ করত এবং মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত ছিল। নেফার জানত কোন সংকোচ ছাড়াই সে তার উপর নির্ভর করতে পারে।

নেফার রথ দ্রুত চালাল, দিনের বাকি সময়টা সে কাজে লাগাতে চাইল এবং ঘোড়ায় চড়ার এক ঘণ্টার মধ্যে তাদের নিচে বিশাল বৃক্ষ শোভিত নদী সমতল উন্মুক্ত হল। সে এর প্রশংসায় কয়েক মুহূর্ত থামল। আকর্ষণীয় সবুজ গাছপালা যা একে ঘিরে ছিল সব মিলিয়ে নদীটিকে লাগছিল যেন পান্নার একটা স্তূপ।

এটা কি সুন্দর, নেফার, মিনটাকা প্রায় স্বপ্নীল কণ্ঠে বলল। এমনকি যখন আমরা বিবাহিত থাকবো তখনও আমরা সব সময় মনে রাখবো যে এই ভূমি আমারা অর্জন করেছি এবং আমরা এটাকে অধিকার করি নি।

মাঝে মাঝে সে ভুলে যায় যে সে অ্যাভারিসে জন্মেছে এবং তার মত এই ভূমির উপর তার অধিকার আছে। তার হৃদয় গর্বে ভরে উঠল যে সে এটাকে তার মতই ভালোবাসে এবং একই রকম দেশের প্রতি দায়িত্ব অনুভব করে।

আমি কখনোই এটা ভুলব না যে আমার পাশে তুমি ছিলে। সে তার দিকে মুখ তুলে তাকাল এবং তার ঠোঁট হালকা একটু ফাঁক করা ছিল। সে তার নিঃশ্বাসে মিষ্টি গন্ধ পেল এবং তার মধ্যে প্রায় অপ্রতিরোধ্য এক অনুভূতির জন্ম হল। তখন হঠাৎ সে অনুভব করল হিল্টো ও অন্য লোকগুলো তাদের দিকে চেয়ে আছে এবং চোখের কোণা দিয়ে চেয়ে দেখল তাদের একজন সমঝদারের ন্যায় হাসছে। সে পিছু সরে শীতল দৃষ্টিতে হিল্টোর দিকে তাকাল। যখন তারা বাকি শিকারী দলকে ছেড়ে এসেছে তখন থেকে সে তার পরবর্তী আদেশের অপেক্ষায় ছিল। কর্নেল, যদি সিংহটা এখানে থাকে তবে এটা সম্ভবত আমাদের নিচে পাহাড়ের খাজের কোথাও শুয়ে থাকবে। সে তার হাত দিয়ে দ্রুত একটা এলাকা দেখাল। আমি সারি ধরে এক সাথে এগিয়ে যেতে চাই। বাম পাশটা সমতলের কিনার পর্যন্ত হবে এবং ডান পাশটা পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত। আমরা উত্তর দিকে যাব। সে একটা প্রশস্ত ভঙ্গি করল কিন্তু হিল্টোকে সন্দিগ্ধ মনে হল। সে তার গালের বিশাল কাটা দাগটা চুলকাতে লাগল।

এটা একটা বিশাল এলাকা, মহামান্য। নিচের উপত্যকা প্রায় অর্ধক্রোশ হবে। মাঝে মাঝে আমরা একজন আরেক জনের চোখের আড়াল হয়ে যাবো।

নেফার দেখল যে তার দল খুব ঘন আকারে ছড়িয়ে পড়া তার মিলিটারি স্বভাবের বিপক্ষে যাচ্ছে এবং সে তাকে দ্রুত প্রশমিত করতে বলল, যদি আমরা আলাদা হয়ে যাই তবে আমরা আমাদের সামনের তৃতীয় খাজে মিলিত হব, এখানে ঐ ছোট পাহাড়ের নিচে। এটা একা ভালো চিহ্ন। সে চার মাইল দূরে একটা আলাদা ধরনের পাথরের স্তূপের দিকে নির্দেশ করল। যদি আমাদের কেউ মিলন স্থলে আসতে দেরি করে তবে অন্যরা তার জন্য অপেক্ষা করবো যতোক্ষণ না সূর্য ঐ কোনায় যায়। তারপর তাকে খুঁজতে সবাই যাবো।

তারা তাকে ও মিনটাকাকে খুঁজতে বের হওয়ার পূর্বে সে নিজেদের জন্যে কয়েক ঘণ্টা বেশি সময় নিল। হিল্টো এখনো ইতস্তত করছে, আমি মহানুভবের ক্ষমা চাই, কিন্তু লর্ড নাজা আমাকে কঠোরভাবে দায়িত্ব দিয়েছে।

নেফার তীক্ষ্ণ কণ্ঠে ও ঠাণ্ডা অভিব্যক্তি নিয়ে বলল, আপনি আপনার ফারাও। আমার সাথে তর্ক করতে চান?

কখনোই না, মহামান্য! হিল্টো অভিযোগে ধাক্কা খেল।

তাহলে আপনার দায়িত্ব পালন করুন, সঙ্গী। হিল্টো গভীর শ্রদ্ধা সহকারে সালাম জানাল এবং দ্রুত নিজের রথের কাছে ফিরে গেল। যখন সে ছুটল তার লোকদের চেঁচিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিল। দলটা খুঁজে চলে গেলে মিনটাকা নেফারকে কনুই দিয়ে আলতোভাবে গুতো মারল ও মিষ্টি একটা হাসি দিল।

আপনার দায়িত্ব পালন করুন, সঙ্গী। সে তার উদ্ধত কণ্ঠ নকল করল ও জোরে হেসে উঠল। দয়া করে কখনো আমার দিকে ওভাবে তাকাবেন না অথবা ঐ কণ্ঠ ব্যবহার করবেন না, মহামান্য। আমি নিশ্চিত যে ভয়ে আমি মরে যাব।

আমাদের হাতে খুব অল্প সময় আছে, সে উত্তরে বলল। আমাদের তা সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে এবং একটা জয়গা খুঁজে বের করতে হবে যেখানে আমরা একা হবো।

সে রথটাকে আকাশ সীমার ওপাশে পুনরায় নিয়ে গেল যাতে তাদেরকে উপত্যকা থেকে আর দেখা না যায় অথবা নিচের খাজের রথ থেকে। যখন তারা হেলে দুলে সামনে এগোলো তারা উভয়েই গলা টেনে ব্যাকুলভাবে সামনে দেখছিল।

দেখ, ঐ খানে, মিনটাকা ডান দিকে দেখল। কণ্টক বৃক্ষের একটা ছোট ঝোঁপ যা প্রায় ঢাকা, শুধু বিবর্ণ সবুজ আগা বেরিয়ে আছে। নেফার ওটার দিকে ঘুরল এবং তারা একটা গভীর সংকীর্ণ উপত্যকা পেল যা হাজার বছর আগে বাতাস ও জলবায়ু এবং অস্বাভাবিক বজ্র ঝড় দিয়ে তৈরি হয়েছে পাহাড়ের পাশে। সেখানে নিশ্চয়ই ভূগর্ভস্থ পানি আছে ফলে কাটা গাছগুলো জন্মেছে। তাদের দেহ এই গরমে দুপুরে ছায়া ও গোপনীয়তা প্রত্যাশা করে। নেফার তীর ধরে ছায়ার মধ্যে প্রবেশ করল। যখনই তারা থামল মিনটাকা লাফ দিয়ে পাদানি থেকে নামল।

হারনেস খুলে দাও এবং ঘোড়াগুলো বিশ্রাম দাও, সে পরামর্শ দিল।

নেফার ইতস্তত করল এবং তারপর সম্মতি সূচক মাথা নাড়ল। এটা তার প্রশিক্ষণের বাইরে। নির্জন ও অপরিচিত স্থানে এখন যেমন, সে অবস্থায় তাকে অবশ্যই তার যান হঠাৎ কোন সংকেত বা বহির্গমনের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। সে লাফ দিয়ে নামল ও পানির থলে থেকে ঘোড়াগুলোকে পানি খাওয়াতে গেল। মিনটাকা তাকে সাহায্য করতে এল। তারা নিরবে পাশাপাশি কাজ করল।

এখন সেই সময় যা তারা দুজনেই চেয়েছিল তা অবশেষে এল, তারা লজ্জা পেল ও সব কথা আটকে গেল। হঠাৎ তারা একসাথে একে অপরের দিকে ঘুরল এবং একসঙ্গে কথা বলল।

নেফার বলল, আমি তোমাকে বলতে চাই।

মিনটাকা বলল, আমার মনে হয় আমাদের উচিত, তারা থেমে গেল এবং ছায়ার খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে লাজুকভাবে হাসল। মিনটাকা লজ্জায় লাল হয়ে গেল এবং নিচে পায়ের দিয়ে চেয়ে রইল এবং নেফার তার ঘোড়ার মাথায় স্পর্শ করল।

তুমি কী বলতে চেয়েছিলে?

কিছু না। তেমন জরুরি কিছু না। নেফার তার মাথা নাড়ল এবং দেখল সে লজ্জা পাচ্ছে। সে তার গালে ফুটে উঠা ঐ রঙ দেখতে পছন্দ করে। সে এখনো তার দিকে তাকাচ্ছে না। এবং সে যখন কথা বলল তখন তার কণ্ঠ এতো নরম হলো যে প্রায় শোনাই গেল না।

তুমি কী বলতে যাচ্ছিলে?

যখন আমি ভাবি আর কিছু দিন পর তুমি চলে যাবে আমার এমন লাগে যেন মনে হয় আমার ডান হাতটা কেটে ফেলা হয়েছে এবং আমি মরতে চাই।

ওহ, নেফার, সে তার দিকে তাকাল এবং তার চোখগুলো বড় ও প্রথম ভালোবাসার কষ্ট ও আনন্দে পূর্ণ। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি একান্তভাবে তোমাকেই ভালোবাসি।

সাথে সাথে তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরল এবং চুমু খাবার সময় তাদের দুজনের দাঁতে দাঁত লেগে গেল। নেফারের নিচের ঠোঁট কেটে গেল এবং এক ফোঁটা রক্ত বের হল। তাই তাদের চুমুটা হলো লবণাক্ত। তাদের আলিঙ্গনটাও হলো আনাড়ি ও উদ্ভ্রান্তের ন্যায় যা তাদের মধ্যে একটা বন্য ও অস্বাভাবিক অনুভূতির জন্ম দিল। তারা জড়িয়ে ধরে রইল। যদিও মিনটাকা নেফারের দেহের মধ্যে প্রায় মিশে গেছে তবুও সে তাকে আরো জোরে চেপে ধরল। সে তার ভারি কোঁকড়ানো ধুলো-মাখা চুল আবেগে মুষ্ঠিবদ্ধ করে ধরল এবং বলে উঠল, ওহ্! ওহ্! কিন্তু তার কষ্ঠ ভারি হয়ে এল।

আমিও তোমাকে হারাতে চাই না, নেফার চুমু থামিয়ে মূর্খ তুলে বলল। আমি কখনোই তোমাকে হারাতে চাই না। আমি কোনো দিন তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই না, সে আবার তাকে জড়িয়ে ধরল আরো দৃঢ় ভাবে। তারা দেহ ও মনের নতুন একটা জগতে প্রবেশ করল। তারা দুজন এমন একটা রথে চড়ে বসল যা তাদের নিয়ন্ত্রর বাইরের ভালোবাসা ও আশার ঘোড়া দ্বারা টানা হচ্ছিল।

জড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই তারা ওয়াদির নরম মাটির উপর বসে পড়ল এবং অনুভূতির আরেক জগতে প্রবেশ করতে লাগল। একে ওপরকে এমন করে জড়িয়ে ধরল যেন কোন শত্রুকে তারা পাকড়াও করেছে। তাদের চোখে বন্যতা স্পষ্ট এবং তাদের নিঃশ্বাস দ্রুততর হলো। মুহূর্তের মধ্যে নেফারের হাতের কারুকার্যে মিনটাকার স্কার্টের কাপড় প্যাপিরাসের কাগজের ন্যায় একে একে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়তে ছিঁড়তে প্রায় উন্মুক্ত হয়ে এল। মিনটাকা সব বুঝতে পারছিল কিন্তু যেন বাঁধা দেবার ক্ষমতা সে হারিয়ে ফেলেছে। এমনকি এ ঘটনাটা কোথায় ঘটতে যাচ্ছে সে জ্ঞানটুকুও তারা হারিয়ে ফেলেছে। নেফার শুধু চাচ্ছিল তার নগ্ন পেটের স্পর্শ পেতে। এটাই যেন এ মুহূর্তে তার জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া। সে এক ঝটকায় তার নিজের অ্যাপ্রণটা খুলে ফেলল। দুটি তরুণ যুবার কোমল দেহের স্পর্শ এক অন্য অনুভূতির জন্ম দিল। তারপর কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই হঠাৎ তার উপর নেফার চড়ে বসল, যেন সে কোন রথে চেপে ছন্দিল আনন্দে কোন অজানায় দুলছে।

সাথে সাথে মিনটাকা অনুভব করল তার নরীত্বের কৌমার্যটা এই মাত্র কেউ হরণ করতে চলেছে। এক পরম অভিজ্ঞতা যা অপ্রতিরোধ্য তৃষ্ণাকে নিবারণ করতে চলেছে, যা তার নরম গোপন অঙ্গের উদ্দেশ্যে হাতছানি দিচ্ছে।

কিন্তু হঠাৎ করে তার কাছে বাস্তবতা ফিরে এল। এক ঝটকায় সে তাকে দূরে ঠেলে দিল ও তার কাছ থেকে তার মুখ সরাল এবং জোরে চিৎকার করে উঠল, না। নেফার! তুমি ওয়াদা করেছিলে! হুরাসের আঘাত প্রাপ্ত চোখের নামে তুমি ওয়াদা করেছিলে।

সে তার উপর থেকে লাফ দিয়ে সরে গেল, গুটিয়ে গেল যেভাবে রথের ঘোড়া চাবুকের আঘাত থেমে যায়। সে তার দিকে নিষ্পলক ও ভয়ার্ত চোখ নিয়ে চেয়ে রইল। তার কণ্ঠটা কর্কশ ও হাঁপানো যেন সে অনেক পথ দ্রুত দৌড়ে এসেছে।

মিনটাকা, আমার ভালোবাসা, আমার প্রিয়তমা! আমি জানি না আমার কী হয়েছিল। এটা ছিল একটা পাগলামি। ইচ্ছে করে আমি এমনটা করি নি। সে একটা হতাশার ভাব করল। আমি বরং মরে যাব তবুও আমার শপথ ভাঙ্গবো না এবং তোমার অসম্মান করবো না।

মিনটাকার নিঃশ্বাস এতো পরিশ্রান্ত ছিল যে, সে তাকে তৎক্ষণাৎ কোন উত্তর দিতে পারল না। সে তার নগ্ন দেহ থেকে চোখটা সরিয়ে নিল। তখন নেফার আরো অনুনয়ের স্বরে বলল, দয়া করে আমাকে ঘৃণা করো না। আমি জানি না কি ঘটছিল।

আমি তোমাকে ঘৃণা করি না নেফার। আমি কখনোই তোমাকে ঘৃণা করতে পারি না। তার হতাশা সহ্য করার মতো নয়। তার ইচ্ছে করছে নিজেকে নেফারের বাহুতে নিক্ষেপ করতে ও তাকে সান্ত্বনা দিতে। কিন্তু সে জানে তা কতো বিপদজনক হতে পারে। সে রথের চাকা ধরে নিজেকে দাঁড় করাল। তুমি যতোটুকু দোষী আমিও ততটুকু দোষী, কথাটা বলে সে তার দুই হাত দিয়ে মুখের উপর থেকে চুল পিছনে সরাতে চাইল।

নেফার অপরাধীর মতো দাঁড়াল। তার দিকে এক পা এগিয়ে গেল কিন্তু যখন সে পিছিয়ে গেল সেও সাথে সাথে থেমে গেল। আমি তোমার স্কার্ট ছিঁড়ে ফেলেছি। সে বলল, আমি তা করতে চাই নি।

মিনটাকা তার নিজের দিকে তাকাল এবং দেখল কিভাবে সে অশ্লীল ভাবে উন্মুক্ত হয়ে আছে। সে প্রায় তার মতই নগ্ন। দ্রুত সে ছেঁড়া টুকরোগুলো একত্রিত করল ও হেঁটে তার থেকে দূরে গেল।

তোমারও পোশাক পড়ে নেওয়া উচিত; সে আস্তে করে নেফারকে বলল এবং তার নিচের দিকে তাকাল। তাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল এবং সে অনুভব করল তার বাসনা আবার জাগছে। জোড় করে সে অন্যদিকে তাকাল। তারপর দ্রুত নিচে ঝুঁকে ফেলে দেওয়া স্কার্টটা এক সঙ্গে করল এবং ওটা তার কোমরে বাঁধল।

তারপর তারা দোষীর মতো দাঁড়িয়ে রইল এবং একটা বিরক্তিকর নীরবতা নেমে এল। মিনটাকা ব্যাকুলভাবে এ ভয়ংকর মুহূর্ত থেকে মনোযোগ সরানোর জন্যে কোন ভাষা খুঁজল। তার নিজের দেহে তাকে সাহায্য করতে এল। সে অনুভব করল তার মূত্রথলি পূর্ণ হয়ে গেছে এবং চাপ দিচ্ছে। আমাকে যেতে হবে!

না, সে অনুনয় করল। আমি এটা করতে চাই নি, এমনটা আর কখনো হবে না। আমার সাথে থাকো। আমাকে ছেড়ে যেও না।

মিনটাকা বিচলিতভাবে হেসে উঠল, না, তুমি বোঝনি। আমি শুধু কিছুক্ষণের জন্য যাব। সে তার ছোট স্কার্ট ধরা হাত দিয়ে একটা নির্ভুল সংকেত দেখাল, বেশিক্ষণ দেরি হবে না।

তার হাফ ছাড়াটাও প্রায় করুণ ছিল। ওহ, আমি বুঝেছি। আমি ততোক্ষণে রথ প্রস্তুত করছি। সে ঘোড়াগুলোর দিকে ঘুরল। মিনটাকা তাকে ছেড়ে ঘন কাঁটা ঝোঁপটার দিকে এগিয়ে গেল।

*

সিংহটা যেখানে শুয়েছিল সেখান থেকে ওটা মিনটাকাকে গাছটার দিকে আসতে দেখল। সে তার মাথা তার কান সমতল করল এবং পাথুরে মাটিতে নিজের দেহটা জোড়ে ঘষল।

পশুটা ছিল বৃদ্ধ, বেচারা তার জীবনের সুবর্ণ সময় অতিক্রম করে এখন বার্ধক্যে। একদা তার ঘাড়ে ঘন ঝোঁপের মতো ধূসর কেশর ছিল। তার পিঠ একদা সুন্দর উজ্জ্বল ছিল, কিন্তু এখন তা বয়সের ভারে একটু নুয়ে পড়েছে। তার দাঁতগুলো জীর্ণ ও দাগ পড়া এবং একটা লম্বা তীক্ষ্ণ দাঁত মাটির কাছে ভেঙে পড়ে রয়েছে। যদিও এখনও সে একটা প্রাপ্ত বয়স্ক মহিষকে ধাক্কা দিয়ে ফেলার শক্তি রাখে এবং তার বিশাল থাবার এক ঝটকায় মেরে ফেলতে পারবে তবুও তার নখরগুলো শীর্ণ ও ভোতা, ফলে একটা দুর্বল শিকারকেও তার পক্ষে শক্ত করে ধরে রাখা কঠিন। গত রাতে সে একটা রিক্সকে পর্যন্ত ধরতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তার ক্ষিধে নিষ্প্রভ, জরুরি এক ব্যথা তার পেটের মধ্যে চিনচিন করছিল।

সে তার হলুদ চোখ দিয়ে মনুষ্য সৃষ্টিটাকে দেখল এবং তার উপরের ঠোঁট নীরবে উঠে গেল। সিংহ হিসেবে তার মা তাকে মরা মাংস খেতে শিখিয়েছে যা তারা যুদ্ধের ময়দান থেকে আহার করত। তার ওরকম স্বাভাবিক তিক্ততা ছিল না যা অধিকাংশ মাংসাশী প্রাণীর মানুষের মাংসের স্বাদের প্রতি থাকে। বছর জুড়ে সে হত্যা করেছে এবং এই মাংস খেয়েছে আর এখন এই সুযোগটা নিজে নিজে উপস্থিত হয়েছে। সে দেখল এই জীবটা স্বাভাবিক শিকারের মতই তার দিকে গুল্মের ভেতর দিয়ে এগিয়ে আসছে।

সিংহটা যেখানে শুয়ে আছে তার থেকে পঞ্চাশ কদম দূরে মিনটাকা থামল এবং চারপাশে তাকাল। শিকারী সিংহের স্বভাব হচ্ছে তার শিকারের দিকে সরাসরি না তাকানো। তাই সিংহটা তার মাথা মাটির সাথে মিশিয়ে রাখল এবং চোখ সরু করে রাখল। এটা আক্রমণ করার সময় নয় এবং ফলে তার লেজ অনমনীয় ও নিচু করা।

মিনটাকা একটা গাছের গুঁড়ির পিছনে গুটিসুটি মেরে বসল এবং তার মূত্রথলি খালি করল। মূত্রের তীক্ষ্ণ গন্ধটা সিংহের নাকে পৌঁছতেই ওটা নাক কুঁচকে গভীর দাগের সৃষ্টি করল। এটা তার আকর্ষণ আরো বাড়িয়ে দিল। মিনটাকা আবার দাঁড়াল এবং তার ছেঁড়া স্কার্ট তার উরুর চারদিকে ঠিক-ঠাক করে পড়ে নিল। সে ঘুরে সিংহটা থেকে বিপরীতে যেখানে নেফার অপেক্ষা করছিল, সেদিকে ফিরতে লাগল।

সিংহটি এবার তার লেজ আগে পিছে নাড়াল, ধাওয়া কারার পূর্বাভাস। সে তার মাথা তুলল এবং কালো পুচ্ছ লেজ দিয়ে তার দেহে আঘাত করল।

লেজের একটানা শাঁই শাঁই ও ধুপধুপ আওয়াজ মিনটাকার কানে আসতেই সে থামল এবং পিছনে তাকাল, হতভম্ব হয়ে গেল। সে পশুটার হলুদ চোখের দিকে সরাসরি তাকাল। সে চিৎকার করে উঠল, এতো তীক্ষ্ণ আওয়াজ যা নেফারের হৃদয়ে আঘাত করল। নেফার এক ঝটকায় ঘুরে গেল এবং মুহূর্তের মধ্যে সে বালিকাটি এবং গুটিসুটি মারা পশুটার মুখোমুখি দাঁড়াল।

দৌড় দিও না, সে চিৎকার করে বলল। সে জানে যদি মিনটাকা দৌড় দেয় তবে বিড়ালের মতো সিংহটাও তাকে ধাওয়া করবে। আমি আসছি।

সে ড্যাশবোর্ডের তাক থেকে তার ধনুকটা এবং তীরের খাপটা টেনে নিল এবং দৌড়ে তার কাছে গেল। দৌড়ানো অবস্থাতেই সে একটা তীর তাক করল।

দৌড় দিও না! সে উন্মাদের মতো আবার বলল। আর তখনই সিংহটা গর্জন করে উঠল। আওয়াজটা এতো ভয়ংকর ছিল যে তা মিনটাকার হাড় পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিল এবং তার পায়ের নিচের মাটি কেঁপে উঠল। মিনটাকা তার চেপে বসা ভয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। সে ঘুরে অন্ধের ন্যায় নেফারের দিকে দৌড় দিল। প্রতি পদক্ষেপে সে ফোঁপাচ্ছিল।

তৎক্ষণাৎ সিংহটির কেশর তার মাথার চার পাশে কালো রেখার মত দাঁড়িয়ে গেল এবং সে নিজেকে শিকারের জন্য প্রস্তুত করল। সোজাসুজি তার পিছনে সরু গাছপালার মধ্য দিয়ে ওটা লাফিয়ে এগিয়ে এল। মিনটাকা এমনভাবে নেফারের দিকে তাকাল যেন সে এখাননা মাটির গভীরে গেঁথে আছে।

নেফার মরার মতো থেমে রইল এবং দুই হাত মুক্ত করার জন্য তীরের খাপ ফেলে দিল এবং ধনুকটা উপরে তুলল। সে তীরটা তার ঠোঁট বরাবর ধরল এবং তার বাহু ভারি বুকের উপর রাখল। যদিও দূরত্ব কম ছিল, তবুও এটা একটা কঠিন কাজ ছিল। পশুটা একটু কোনাকুনি হয়ে আসছিল, তাই কাজটা ছিল জটিল এবং মিনটাকা সরাসরি তীর ছোঁড়ার পথে ছিল। তার চাইতেও বড় কথা হচ্ছে সিংহের আঘাত থেকে মিনটাকাকে সে রক্ষা করতে পারছে না।

তাকে অবশ্যই পশুটাকে বধ করতে তীরের মাথাটা ওটার নাজুক কোন অঙ্গে প্রবেশ করাতে হবে এবং তাকে সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এদিকে নিখুঁত হিসেব করারও যথেষ্ট সময় নেই। সিংহটা প্রায় তার উপর চলে এসেছে।

পশুটা প্রতি লাফে ঘোঁত ঘেত শব্দ করে আসছিল, কাঁদার পিন্ড ও কুঁড়ি পাথর ছিটিয়ে এগিয়ে আসছে। তার হলুদ চোখগুলো ছিল ভয়ংকর। তীর ছোঁড়ার জন্যে মাত্র এক হাত জায়গা নেফার পেল। তারপর সে যথাসম্ভব চিৎকার করে বলল, নিচু হও, মিনটাকা! আমাকে তীর ছুঁড়তে একটু জায়গা দাও।

সপ্তাহ জুড়ে তারা এক সাথে শিকার করছে, তারা নিজেদের মধ্যে একটা সঙ্গতি গড়ে তুলেছিল এবং সে তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে শিখেছে। তাই এমনকি ভয়ে এই আত্মহারা অবস্থায়ও সে তার কথা ধরতে পারল। সে প্রায় ছুটন্ত অবস্থাতেই দৌড় থামিয়ে সিংহের থাবার নিচে পাথুরে ভূমিতে শুয়ে পরতে একটুও ইতস্তত করল না।

ঠিক তখন যখনই সে নিচু হল, নেফার তীরটা ছুঁড়ল। তীরটি ধনুকের আংটা থেকে ছুটে গেল। নেফারের ভয়ার্ত চোখে মনে হল এটা খুব ধীরে তাদের মধ্যের ফাঁকা স্থানটা পার হল। মিটাকা যেখানে পড়ে আছে সে স্থানটা তীর পার হল। ইতোমধ্যে ওটা নিচু হতে শুরু করেছে, মনে হচ্ছে ক্ষুদ্র কোন বস্তু ওটা ও অকার্যকরী কিছু, অন্তত এ রকম একটা বিশাল প্রাণীর বিরুদ্ধে।

তারপর এটা নিঃশব্দে আঘাত করল। নেফারের একবার মনে হলো বুঝি পাতলা তীরের ফলাটাকে ঘোঁত ঘোত করা দৌড়ানো প্রাণীটা হাত দিয়ে খাবলে ধরবে এবং অবজ্ঞা নিয়ে পাশে সরিয়ে ফেলে দিবে।

ঠিক যখন সিংহটার খোলা মুখ ও তার উঁচু নিচু লম্বা সরু দাঁতগুলো দেখা গেল তখন তীরের পাতলা ফলাটা তার বুকের ঘনকালো পশমের মধ্যে হারিয়ে গেল। আঘাতের কোন শব্দ হল না। কিন্তু সরু সোজা তীরের ফলাটা নিশ্চিত ওটার ভেতর ঢুকে গেছে। শুধু এক হাত পরিমাণ ফলা ও গোড়ার উজ্জ্বল পালকগুলো বাইরে বেরিয়ে রইল।

নেফার ভাবল তীরটা পশুর হৃদপিন্ডে আঘাত লেগেছে। কেননা বিশাল আলোড়ন তুলে সিংহটা অনেক উঁচুতে লাফ দিল এবং তার ঘোঁত ঘোঁত একটা অবিরাম গর্জনে পরিণত হয়েছে। তার মাথার উপরের কাটা গাছের শাখায় একটা শুকনো পাতার আলোড়ন সে সৃষ্টি করল। তারপর পশুটা বৃত্তাকারে ঘুরতে লাগল ও নিজের বুকে খাবলা মারতে মারতে তীরের ফলার বাইরের অংশটুকু চিবিয়ে টুকরো টুকরো করল। মিনটাকা অনেকটা প্রায় তার উড়ন্ত বাঁকা থাবার নিচে পড়ে আছে। ওটা থেকে দূরে সরো। নেফার ভয়ে চিৎকার দিল, দৌড় দাও।

নেফার নিচু হয়ে পায়ের কাছে রাখা খাপ থেকে আরেকটা তীর তুলে নিল এবং সামনে দৌড়ে গেল। কাছাকাছি গিয়ে সে তীরটা ছুঁড়ল। মিনটাকা লাফ দিয়ে উঠল। সে বুঝতে পেরেছে নিরাপত্তার জন্যে তার দিকে দৌড়ে গিয়ে তার লক্ষ্যে বাধা দেওয়া ঠিক হবে না। তাই সে নিকটস্থ কাঁটা গাছের গুঁড়ির পিছনে সরে গেল। আহত সিংহটার মনোযোগ তার দিকে ফেরাতে এটুকুই যথেষ্ট ছিল। এখন ক্ষুধার চাইতে ব্যথায় ও রাগে সে তার দিকে তেড়ে এল। মিনটাকা যে গাছের পিছনে গুটিয়ে ছিল সেটা থেকে পশুটার বাঁকানো হলুদ নখগুলো এক খাবলা ভিজা বাকল থাবা মেরে তুলে ফেলল।

এসো! আমি এখানে! আমার কাছে চলে এসো! নেফার জোরে চেঁচিয়ে উঠল। সিংহটার মনোযোগ মিনটাকার দিক থেকে সরাতে চেষ্টা করল।

সিংহটি তার বিশাল, ঝাকড়া কেশর মাথাটা তার দিকে ঘোরাল। সাথে সাথে নেফার আরেকটা তীর তাক করে দ্রুত তীরটা ছুঁড়ল। তার বাহু কাঁপছিল এবং তার লক্ষ্য ছিল দ্রুত ও বন্য। তীরটা এবার পশুটির পেটে বিধল। ব্যথায় সে কাশি দিয়ে উঠল। ওটা মিনটাকাকে ছেড়ে এবার নেফারের উদ্দেশ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ল।

যদিও পশুটা মারাত্মকভাবে আহত এবং ইতোমধ্যে তার শক্তি ধীর হয়ে আসছে তবুও এই সুবর্ণ সুযোগ নেফারের এড়িয়ে যাওয়ার কোন পথ ছিল না। সে তার শেষ তীর ছুঁড়ে ফেলেছে এবং খাপটা মাটিতে তার নাগালের বাইরে পড়ে আছে। সে হাত নামাল এবং বেল্টের খাপ থেকে তার ছুরি বের করে আনল।

এ হিংস্র পশুটার বিপরীতে যা একটা অতি হালকা অস্ত্র। পাতলা ব্রোঞ্জের ফলটা তার হৃদপিন্ড পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্যে যথেষ্ট লম্বা নয়, কিন্তু সে বাজ শিকারীদের এ রকম ভয়ংকর অবস্থা থেকে বাঁচার গল্প বলতে শুনেছে। যখন সিংহটা মৃত্যু লাফ দিল, নেফার পিছনে পড়ে গেল। এমনকি পশুটার ওজন ও আক্রমণ এড়িয়ে যেতে চাইল না। সে পশুটার দুই থাবার সামনে পড়ে গেল এবং সিংহটা তার চোয়াল পুরোপুরি খুলে ভয়ংকর উঁচু লম্বা সরু দাঁত দিয়ে নেফারের খুলি কামড় দিতে মাথা নামাল। জন্তুটার নিঃশ্বাস এতোটাই দুর্গন্ধযুক্ত, পচা মাংসের ন্যায় যে নেফার অনুভব করল তার গলার মধ্যে গরম বমি উঠে এসেছে। তবে সে ঠিক সময়ের অপেক্ষা করল এবং তার ডান হাতে ছুরিটা ধরে খোলা চোয়াল দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে আড়াআড়ি করে ধরে রইল। সহজাত স্বভাবে সিংহটা কামড় দিল।

নেফার তার মুঠিতে শক্ত করে চাকুটা ধরে আছে। ফলাটা উপরের দিকে ধরা এবং যখন সিংহ চোয়াল বন্ধ করল ব্রোঞ্জের ফলাটা সরাসরি তার মুখের তালুতে ঢুকে গেল। তার কব্জির হাড়ে দাঁত বসে যাওয়ার আগেই নেফার টান দিয়ে হাত বের করে আনল। সিংহের দুচোয়ালের মাঝে চাকু থাকায় মুখটা হা হয়ে রইল এবং তার কামড় নিচে নামাতে পারল না।

এবার পশুটা তার সামনের থাবা উঁচিয়ে তার দিকে তেড়ে আসছিল, নখগুলো পুরোপুরি বর্ধিত। তার বিশাল দেহের নিচে নেফার নড়াচড়া করতে লাগল। কিছু থাবা এড়িয়ে গেল কিন্তু তার কাপড় ছিঁড়ে গেল এবং নখের একটা আঁচড় তার মাংসের মধ্যে দেবে গেছে তা সে অনুভব করল। সে জানে আর বেশিক্ষণ সে তা ধরে রাখতে পারবে না। অনিচ্ছাসত্ত্বেও সে সিংহের নিচে থেকে চিৎকার দিল, ছেড়ে দে আমাকে, বিকট নোংরা জানোয়ার! আমাকে ছাড়!

সিংহটা এখনো গর্জন করছে এবং তার তালু থেকে রক্ত লাল মেঘের মতো বের হচ্ছে সেই সাথে দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস ও গরম লালা নেফারের মুখের উপর এসে পড়ছে।

তার চিৎকার মিনটাকার কানে গেল এবং যখন সে কাঁটা গাছের পিছন থেকে উঁকি মারল দেখল সিংহের দেহের নিচে পুরোপুরি রক্তে ঢাকা অবয়ে নেফার পড়ে রয়েছে। তাকে মেরে ফেলা হচ্ছে এবং সাথে সাথে সে তার ভয় ভুলে গেল।

নেফারের ধনুক তার দেহের নিচে আটকে ছিল এবং এটা ছাড়াও ভরা তীরের খাপটা তার এখন দরকার। সে গাছের পিছন থেকে লাফ দিয়ে বের হয়ে রথের দিকে দৌড় দিল। চিৎকার ও গর্জন তার পিছনে চলতেই থাকল এবং সে দৌড়াল যততক্ষণ না মনে হল তার হৃদপিন্ড ফেটে যাবে।

তার সামনে ঘোড়াগুলো পশুটার গন্ধ ও গর্জনে ভয় পেয়ে গেছে। তারা ডাকাডাকি করছিল। মাথা নাড়ছে এবং রশিতে লাথি মারছে। তারা হয়তো অনেক আগেই দৌড়ে পালাত কিন্তু নেফার এক পাশের চাকায় গতিরোধ দিয়ে রেখেছিল ফলে তারা শুধুমাত্র আটসাট হয়ে ডান দিকে বৃত্তাকারে ঘুরছিল। মিনটাকা তাদের উড়ন্ত খুরের নিচে দৌড়ে গেল এবং লাফ দিয়ে পাদানিতে উঠল। সে খোলা লাগামটা হাতে নিল ও চিৎকার করে বলল, সেখানে যা, স্টার গেজার! হ্যামার শক্ত করে ধর।

পূর্বের অনেক প্রমোদ ভ্রমণে নেফার তাকে গাড়ি চালাতে শিখিয়েছে তাই ঘোড়াগুলো তার কণ্ঠ চেনে এবং রশিতে তার স্পর্শ চিনতে পারল। দ্রুত সে তাদের নিয়ন্ত্রণ নিল কিন্তু তার মনে হয় অনেক সময় চলে গেছে। কারণ সে নেফারের চিৎকার ও পশুটার কান ফাটানো গর্জন শুনতে পেল। সে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে একপাশে ঝুঁকে গতি রোধকটা খুলে দিল। সে তাদের বাঁ দিকে ঘুরাল তারপর সোজা সিংহ ও তার শিকারের দিকে তা চালাল।

হ্যামার সমস্যা করল কিন্তু স্টার গেজার ভালোভাবেই চলল। তাই সে টান দিয়ে চাবুকটা নিল যা নেফার কখনো তাদের উপর ব্যবহার করে নি এবং হ্যামারের চকচকে পেটে আঘাত করল যা বৃদ্ধাঙ্গুলের সমান পুরো একটা দাগ পশুটার দেহে সৃষ্টি করল।

হ্যা! সে চেঁচালো, এগিয়ে চল, হ্যামার!

হতভম্ব হ্যামার সামনে বাড়ল এবং সিংহটার দিকে এগিয়ে গেল। পশুটার পুরো মনোযোগ ছিল চিৎকাররত দুর্বল শিকারের দিকে যা তার সামনের থাবার নিচে ছিল এবং সে উপরে উঠে আসা রথের দিকে তাকাচ্ছিল না যা তার উপর নেমে আসছিল।

মিনটাকা চাবুক ফেলে দিল এবং তার পরিবর্তে তাক থেকে লম্বা বর্শাটা টেনে নিল। শিকারের সময় সে এটা নেফারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বহন করেছে এবং এখনও এটাকে তার ডান হাতে শক্ত ও পরিচিত মনে হল। বাঁ হাতে ছুটন্ত ঘোড়ার দলটাকে নিয়ন্ত্রণ করে সে একপাশে অনেকখানি ঝুঁকে এল এবং বর্শাটা উপরে তুলল। তারা গুটিসুটি মারা সিংহটাকে অতিক্রম করল, তার মাথা নিচু করা ছিল এবং ঘারের পিছন দিক ছিল পুরোপুরি উন্মুক্ত। কালো কেশরের ঝোঁপের নিচে মেরুদণ্ড ও খুলির সংযোগ স্থলটা ঢাকা ছিল কিন্তু সে স্থানটি অনুমান করল এবং তার ভয় ও নেফারের জন্যে তার যে ভালোবাসা সে শক্তি দিয়ে সে সজোরে আঘাত হানল ঐ বরাবর।

তাকে অবাক করে দিয়ে ফলাটা সহজেই পিছলে দৃঢ় ভাবে জন্তুটার ঘাড়ের পিছনে পুরো গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে ঢুকে গেল। সে তার হাতে হালকা টিপ টিপ অনুভব করল যখন বর্শাটা মেরুদন্ডের মাঝ জোড়া দিয়ে ঢুকে গেল এবং সেই সাথে আরো কতগুলো সংযোগস্থল অতিক্রম করল।

যখন রথটা ছুটে ওটাকে অতিক্রম করল, বর্শার বাট তখন তার মুঠো থেকে চলে গেছে। সিংহটা নেফারের উপর সাথে সাথে একটা জড় ভূপের ন্যায় ঢিলা হয়ে পড়ে গেল। সে আর নড়ল না, তৎক্ষণাৎ মারা গেছে।

ঘোড়াগুলোকে থামাকে তার আরো পঞ্চাশ কিউবিট যেতে হল, চাকাগুলোকে ঘুরাল এবং যেখানে নেফার বিশাল মৃত দেহটার নিচে পড়ে আছে সেখানে তাদের নিয়ে এল। পাদানি থেকে লাফ দিয়ে নামার আগে বুদ্ধি করে সে গতিরোধকটা ফেলে দিল চাকার উপর।

স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে নেফার মারাত্মকভাবে আহত। রক্তের আবরণের ভেতরে সে ভেবেছিল নেফার মৃত। সে তার পাশে হাঁটু ভর দিয়ে বসল। নেফার, কথা বল। আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?

তাকে স্বস্তি দিয়ে সে তার মাথা তার দিকে ঘুরাল এবং চোখ খুলে তাকে দেখল।

তুমি ফিরে এসেছে, সে দম নিল। অসাধারণ, মিনটাকা অসাধারণ।

আমি তোমাকে এ থেকে মুক্ত করছি।

সে দেখতে পেল সে মৃত পশুটার অত্যাধিক ওজন তার ফুসফুসের বারটা বাজিয়ে দিচ্ছে। সে লাফ দিয়ে দাঁড়াল এবং পশুটার মাথা ধরে জোরে টান দিল। লেজ ধরে, নেফার যন্ত্রণায় ফিসফিসিয়ে বলল।লেজে ধরে ওটাকে ঘুরাও।

সে দ্রুত তার কথা মতো কাজ করল এবং লম্বা শক্ত লেজটা ধরে তার সব শক্তি দিয়ে টান দিল। ধীরে ধীরে বিশাল দেহটা দুলতে শুরু করল। একসময় পুরো মৃত দেহটা সরে গেল এবং সে মুক্ত হল।

মিনটাকা হাঁটুগেড়ে তার পাশে বসল ও তাকে বসতে সাহায্য করল। কিন্তু নেফার মাতালের ন্যায় দুলতে লাগল এবং তার সাহায্য চাইল।

হাথোর, আমাকে সাহায্য কর, প্রার্থনা করল মিনটাকা।

তুমি মারাত্মক আঘাত পেয়েছ। অনেক রক্ত গিয়েছে।

এর পুরোটা আমার না, সে বোকার মতো বলল। কিন্তু তার ডান উরুতে লাল পালকের মত হালকা লাল ঝর্ণা দেখা গেল যেখানে প্রাণীটা তার নখগুলো দিয়ে খামচে দিয়েছে।

টাইটা তাকে অনেকদিন ধরে আন্তরিকভাবে কীভাবে যুদ্ধের ক্ষত চিকিৎসা করতে হয় তা শিখিয়েছে এবং সে বুঝতে পারছে এখনি রক্ত ঝরা না থামলে তা আরো ক্ষতির কারণ হতে পারে। সে তার বৃদ্ধাঙ্গুল কাটা মাংসের উপর চেপে ধরল যতক্ষণ না রক্তের প্রবাহ জমে বন্ধ হল।

পানির মশকটা নিয়ে এসো, নেফার তাকে তাড়া দিল। মিনটাকা রথের দিকে দৌড়ে গেল এবং তাকে পাত্রটা এনে দিল। যখন সে পান করছিল সে ওটা তার মুখের ওপর ধরে রইল। তারপর তার মুখ থেকে রক্ত ও ময়লা ধুয়ে দিল কোমল হাতে। চেহারায় কোন ক্ষত নেই দেখে সে স্বস্তি পেল। যাহোক যখন সে তার অন্য ক্ষতগুলো দেখল যা নেফারের পক্ষে তার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা কঠিন হল এবং ওগুলো মারাত্মক ছিল।

আমার শয্যাটা রথে, তার কণ্ঠ আগের চেয়ে দুর্বল শোনাল। যখন সে ওটা তার কাছে গিয়ে এল সে বান্ডিলটা খুলতে বলল তাকে। যেন সে তার গৃহকত্রীর দায়িত্ব পেল।

মিনটাকা একটা সূঁচ ও সিল্কের সুতা তুলে নিল। নেফার তাকে দেখিয়ে দিল কীভাবে বাঁধতে হবে। এই একটা কাজ যা সহজেই সে করতে পারল এবং সে তা করতে ইতস্তত করল না। তার হাতের কব্জি পর্যন্ত রক্তে মেখে গেল। আঙ্গুল দিয়ে সে তার ভোলা ধমনীর চারপাশে সুতা ঢুকিয়ে দিল। তারপর তার মাংসের মধ্যে ভিতরে অংশটা বন্ধ করে দিল। তার নির্দেশে সে তার ছিন্ন বস্ত্র থেকে এক টুকরো কাপড় ছিঁড়ল তার ক্ষত বাঁধতে। এটা ছিল রুক্ষ প্রাথমিক অস্ত্রপ্রচার। কিন্তু রক্তের ধারা বন্ধের জন্যে যথেষ্ট।

এটুকুই আমরা করতে পারি। আমি তোমাকে রথের নিকট নিয়ে যেতে সাহায্য করবো। তারপর দ্রুত মূল দলের কাছে ফিরে যাবো। সেখানে একজন শল্যবিদ বাকিটা করবে। ওহ্! যদি টাইটা এখন এখানে থাকতো।

সে স্টার গেজারের মাথার দিকে গেল এবং যেখানে সে শুয়েছিল সেখানে তাদের নিয়ে এল। নেফার এক কনুইতে ভর দিয়ে দীর্ঘক্ষণ তার পাশে পড়ে থাকা সিংহটার মৃত দেহের দিকে তাকিয়ে রইল।

আমার প্রথম শিকার করা সিংহ, সে অনুতপ্তভাবে ফিসফিস করল। যদি আমরা এর চামড়া না ছাড়াই তাহলে কোন পুরষ্কার পাব না। এর চুল পিছলে যাবে ও পড়ে যাবে।

আবেগের ভার ও বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় মিনটাকা তার মেজাজ ঠিক রাখতে পারল না। এটা হচ্ছে কোন লোকের বোকামির সবচাইতে অসভ্য কিছু যা আমি এ পর্যন্ত শুনেছি। তুমি তোমার জীবনকে একটা দুর্গন্ধময় চামড়ার জন্যে বিপদে ফেলবে?

রাগতভাবে সে তাকে দাঁড়াতে সাহায্য করতে এল। যা করতে তাদের দুজনেরই অনেক কষ্ট হল। যখন সে রথের দিকে খুড়িয়ে চলল সে তার সব ভর নিয়ে তার উপর বাঁকা হয়ে রইল এবং পাদানির উপর দুর্বলভাবে বসে পড়ল ধপাস করে।

মিনটাকা তারা বিছানার ঝোলা থেকে ভেড়ার চামড়া ব্যবহার করল, যাতে সে একটু আরাম পায়। তারপর সে রথে চড়ল এবং তার উপর দিয়ে লাগাম হাতে নিয়ে দাঁড়াল। কোন দিকে? সে জিজ্ঞেস করল।

দলের বাকিরা এখন উপত্যকার অনেক দূরে চলে গেছে এবং তাদের ধরতে আমাদের খুব দ্রুত চলতে হবে। তারা ভুল দিকেও যাচ্ছে। নেফার তাকে বলল, অন্য শিকারীরা শুরুতে ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের না পেয়ে আমরা সারাদিন তাদের খুঁজতে পারি।

আমরা ডাব্বায় যেখানে জাহাজটা আছে সেখানে ফিরতে পারি। জাহাজে একজন শল্যবিদ রয়েছে। সে শুধু একটা সম্ভাব্য উপসংহার টানল এবং সম্মতি সূচক মাথা নাড়াল। সে ঘোড়াগুলোকে হাঁটার তাগিদ দিল এবং তারা বন ছেড়ে উঁচু ভূমিতে উঠে এল, তারপর আবার দক্ষিণে রওনা দিল। ডাব্বায় পৌঁছতে তিন ঘণ্টা বা তার বেশি লাগবে, মিনটাকা বলল।

যদি আমরা নদীর বাঁক কেটে যাই। নেফার উত্তর দিল। আমরা চার ক্রোশ দূরত্ব কমাতে পারি।

মিনটাকা ইতস্তত করল এবং পূর্ব দিকে তাকাল, যা তাকে পাড়ি দিতে সে বলছে। আমি রাস্তা হারিয়ে ফেলতে পারি। সে ভয়ে বিড়বিড় করে বলল।

আমি তোমাকে রাস্তা দেখাবো। সে উত্তর দিল। নির্দেশনায় আত্মবিশ্বাসী, টাইটা তাকে মরুতে চলতে শিখিয়েছি। এটা আমার সর্বোত্তম সুযোগ।

সে রথটাকে বাঁ দিকে ঘুরাল। যখন তারা শক্ত ও একটু সুস্থ হল তারা দুজনে …কঠিন ভাঙ্গা পথে রথ চলার গতি উপভোগ করল। তারা উঁচু-নিচু ও পিচ্ছিল পথে চলছিল। কিন্তু এখনও যখন ঘোড়াগুলো হাঁটা বা দুলকি চালে চলছিল তখন পাথর বা উঁচু স্থানের সাথে ধাক্কায় কিংবা গর্তে পতনে নেফারে ছিন্ন দেহ প্রতিবাদ করে উঠছিল।

সে ব্যথায় কুঁচকে গেল ও ঘেমে উঠল। কিন্তু তার এসব সে তার কাছ থেকে লুকাতে চেষ্টা করল। প্রায় ঘণ্টা চলে গেল। তার ক্ষতগুলো শক্ত হয়ে উঠল এবং ব্যথা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছল। একটা খারাপ ধাক্কায় সে জোরে চিৎকার করে উঠে অজ্ঞান হয়ে গেল।

সাথে সাথে মিনটাকা লাগাম টেনে ঘোড়া থামাল এবং তাকে জাগানোর চেষ্টা করল। সে একটুকরো কাপড় পানিতে ভিজিয়ে কয়েক ফোঁটা তার ঠোঁটের মধ্য দিয়ে ভিজিয়ে দিল। তারপর সে তার বিবর্ণ ঘামে ভেজা চেহারা মুছে দিল। কিন্তু যখন সে তার ক্ষতগুলো পুনরায় ব্যান্ডেজ করতে গেল সে দেখল তার উরুর ক্ষত থেকে আবার রক্ত ঝরা শুরু হয়েছে। সে তা বন্ধ করতে কাজ করল। কিন্তু শুধু রক্তের ধারা কমাতে সফল হল। তুমি ঠিক হয়ে যাবে, আমার প্রিয়। সে তাকে। বলল, এমন আত্মবিশ্বাসের সাথে যা সে অনুভব করল না। সে তাকে কোমলভাবে জড়িয়ে ধরল, তার ধুলো ও রক্তে ঢাকা মাথায় চুমু দিল এং পুনরায় লাগাম ধরল।

এক ঘণ্টা পরে সে শেষ পানিটুকু নেফার ও ঘোড়াগুলোকে দিল কিন্তু নিজে পান করল না। তারপর সে রথের ড্যাশবোর্ডের যতো উঁচুতে পারল দাঁড়াল এবং কাঁকড় বিছানো ও কোমল শিলায় পাহাড়টা দেখল যা তাপের মরীচিকায় নাচছিল ও দুলছিল। সে জানত সে হারিয়ে গেছে। আমি অনেক পূর্ব দিকে সরে এসেছি! সে বিস্মিত হল, সূর্যের দিকে তাকাল ও তার অবস্থান পরিমাপের চেষ্টা করল। তার পায়ের কাছে নেফার তখন নড়ে উঠল এবং গোঙিয়ে উঠল এবং সে একটা সাহসী নির্ভীক চেহারা নিয়ে নিচে তাকাল ও হাসল। এখন খুব বেশি দূরে নয়। আমার হৃদয়। আমাদের উচিত পরের চূড়ার পর নদীটা দেখা।

সে আবার ভেড়ার চামড়াটা তার মাথার নিচে দিল। তারপর দাঁড়াল ও লাগামগুলো এক সাথে করল এবং নিজেকে দৃঢ় করল। হঠাৎ বুঝল সে কত নিঃশেষিত ছিল। তার দেহের প্রতিটি মাংস পেশীতে ব্যথা এবং তার চোখ ব্যথা করছে ও সূর্যের আলো ও ধুলায় তা লাল হয়ে আছে। সে নিজেকে চলতে বাধ্য করল এবং দলটি সামনে এগোলো।

শীঘ্রই ঘোড়াগুলো হতাশার ভাব দেখাল। তাদের ঘামা বন্ধ হয়ে গেছে এবং ঘাম শুকিয়ে লবণের ধারা তাদের পিঠে সাদা হয়ে আছে। সে তাদের ধীরে হাঁটার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে চাইল কিন্তু তারা সাড়া দিল না। হাই! সে নিচে নামল, ঘোড়াগুলোর মাথা ধরল এবং তাদের পথ দেখাল। এখন সে নিজেও টলমল করে হাঁটছে। কিন্তু অবশেষে সে বালুময় উপত্যকার তলদেশে রথের দাগ দেখতে পেল এবং সাথে সাথে তার মধ্যে গতি সঞ্চারিত হল।

তার পশ্চিমে চলছে, সে ফিসফিসিয়ে বলল। ঠোঁটগুলো তার ফুলতে ও দাগ পড়তে শুরু করেছে। তারা আমাদেরকে নদীর কাছে নিয়ে যাবে। সে চাকার দাগ ধরে কিছু সময় চলল যততক্ষণ না যে দ্বিধায় পড়ে থামল যখন সে তার সামনে নিজের পায়ের দাগ দেখল। তার কিছু সময় লাগল বুঝতে যে সে বৃত্তের মধ্যে ঘুর পাক খাচ্ছে ও নিজের চাকার দাগ অনুসরণ করছে।

অবশেষে তাকে হতাশা পেয়ে বসল। সে হাঁটু ভাঁজ করে বসে পড়ল এবং ফিসফিস করে নেফারকে বলল যে কিনা তখনো অচেতন হয়ে শুয়েছিল, আমি দুঃখিত আমার প্রিয়, আমি তোমাকে বিফল করে দিলাম। সে তার চেহারা থেকে তার জটপাকানো চুলগুলো সরাল। তারপর সে পূর্বের নিচু পাহাড়ের চূড়ার দিকে তাকাল এবং চোখ পিট পিট করল। তার দৃষ্টি পরিষ্কার করার জন্য সে তার মাথা ঝকাল। তার জ্বলন্ত চোখগুলো বিশ্রাম দিতে অন্যত্র তাকাল। তারপর পিছনে তাকাল। সে তার জীবনীশক্তি আবার বাড়তে অনুভব করল কিন্তু সে নিশ্চিত নয় যা দেখেছে তা তার ভ্রম না বাস্তব।

তাদের উপরে পাহাড়ের চূড়ায়, আকাশ সীমায় একটা কৃশ অবয়ব দাঁড়িয়ে আছে। তার দীর্ঘ লাঠির উপর সে বেঁকে আছে। তার রূপালি চুল মেঘের মতো জ্বলছে এবং হালকা মরুর গরম বাতাস তার দীর্ঘ বকের মতো সরু পায়ে থাকা তার স্কার্টটা পতপত করে উড়াচ্ছে। সে তাদের দেখতে নিচের দিকে চেয়ে আছে।

ওহ্ হাহোর এবং অন্য সব দেবীরা, এটা তা হতে পারে না। সে ফিসফিসিয়ে বলল। তার পাশে নেফার তখন চোখ খুলল। টাইটা আমাদের কাছাকাছি, সে বিড়বিড় করল। আমি তাকে কাছাকাছি অনুভব করছি।

হ্যাঁ, টাইটা এখানে, তার কণ্ঠ ক্ষীণ এবং সে তার নিজের কণ্ঠে বিস্ময় অনুভব করল। কিন্তু সে কিভাবে জানে আমাদের কোথায় খুঁজতে হবে?

সে জানে, টাইটা সব জানে, নেফার উত্তর দিল, বলেই চোখ বন্ধ করল এবং পুনরায় অচেতন অবস্থায় ফিরে গেল।

রুক্ষ খাজ দিয়ে বৃদ্ধ লোকটি তাদের দিকে আসতে শুরু করেছে এবং মিনটাকা নিজেকে ধাক্কা দিয়ে দাঁড় করাল এবং তার সাথে সাক্ষাত করতে খুঁড়িয়ে এগিয়ে গেল। দ্রুতই তার বিষণ্ণতা চলে গেল এবং সে হাত নাড়ল ও তাকে অভিবাদন জানিয়ে চিৎকার করল, খুশিতে তার প্রায় উন্মাদ হবার অবস্থা।

*

টাইটা পাহাড়ের ঢাল ও নদী ধরে ডাব্বা গ্রামের দিকে চলল। ঘোড়াগুলো তার সংস্পর্শে সহজভাবে চলছে যা জখমী বালকটিকে পাদানির উপর আরাম দিল। তার গভীর সহজাত তাড়নার কারণেই নেফারের কি ওষুধ ও চিকিৎসা দরকার তা টাইটা তার সাথে করে এনেছিল। ক্ষতগুলো পুনরায় পরিষ্কার করার পর সে ঘোড়াগুলোকে কাছের একটা গোপন জলাশয়ে নিয়ে গেল যেখানকার তিতা পানি তাদের সতেজতা এনে দিল। সে মিনটাকাকে পাদানিতে নিয়ে ঘোড়ার মাথা নির্ভুলভাবে ডাব্বা ও নদীর দিকে ঘুরাল।

তার পাশে থাকা মিনটাকা প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে তাকে অনুরোধ করল তাকে খুলে বলতে যে সে কিভাবে জানল যে তাকে তাদের দরকার এবং কোথায় তাদের খুঁজতে হবে। টাইটা তখন শুধু কোমলভাবে হেসেছে এবং ঘোড়াগুলোকে বলেছে, ধীরে এখন, হ্যামার! ধীরে, স্টার গেজড়।

মেঝের উপর নেফার লাল সেফেনের ন্যায় গভীর ঘুমে অচেতন, তবে তার ক্ষতগুলোর রক্তের ধারা এখন বন্ধ ও তা পরিষ্কার করা হয়েছে এবং লিনেন ব্যান্ডেজ দিয়ে তা বাঁধা। একটা লাল ও রাগান্বিত সূর্য নীলের উপর বিবর্ণ হয়ে ডুবে যাচ্ছে অনেকটা নিভে যাওয়া আগুনের কুন্ডলীর ন্যায় তা দেখাচ্ছে। নদীতে নৌকাগুলো নোঙ্গর করা। ক্ষীণ আলোতে ওগুলোকে বাচ্চাদের খেলনার মতো লাগছে।

অ্যাপেপি এবং নাজা তাদের সাথে দেখা করতে ডাব্বা গ্রাম থেকে বের হলো। লর্ড নাজা খুব বিক্ষুব্ধ এবং অ্যাপেপি তার কন্যার উদ্দেশ্যে হুংকার দিল। তুমি কোথায় ছিলে, স্টুপিড মেয়ে? অর্ধেক সেনাবাহিনী তোমাকে খুঁজতে বেরিয়ে গেছে।

নাজার রাগ কমে গেল যখন সে নেফারকে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় রথের ককপিটের তলদেশে অচেতন হয়ে পড়ে থাকতে দেখল। যখন টাইটা ফারাও এর আঘাতের পরিমাণ তার কাছে ব্যাখ্যা করল তখন সে প্রায় রঙিন হয়ে উঠল।

অচেতন অবস্থায় নেফারকে তীরে রাখা একটা ছোট নৌকায় তোলা হলো এবং এক দল মাঝি আস্তে করে তা চালিয়ে দূরে রাখা বড় জাহাজে তাকে তুলল। যতো দ্রুত সম্ভব এখনি আমি ফারাওকে থেব নিয়ে যেতে চাই। টাইটা নাজাকে বলল। এমনকি যদি রাতে ভ্রমণ করতে হয় তাও। ক্ষতগুলোতে পচন ধরার খুব সম্ভাবনা রয়েছে। আর এটা ঘটে তখনই যখন কোন বড় বিড়াল দ্বারা কেউ আঘাত প্রাপ্ত হয়। এটা এমন প্রায় যেন তাদের দাঁত ও নখ কোন মারাত্মক বিষ ঢুকিয়ে দেয়।

আপনি জাহাজ এখনই ছাড়ার নির্দেশ দিতে পারেন। নাজা সাথীদের সামনে কথাটা বলল। কিন্তু তারপর সে টাইটার বাহু ধরে তাকে নদী তীরের একটু দূরে নিয়ে গেল যেখানে তাদের কথা কেউ শুনবে না। মনে রেখো ম্যাগোস, প্রভুরা আপনাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। স্পষ্টত আমি এই অস্বাভাবিক ঘটনায় তাদের স্বর্গীয় হস্তক্ষেপ উপলব্ধি করছি। যদি ফারাও তার জখম থেকে মারা যায় তবে দুরাজ্যের কোন ব্যক্তি এটাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করবে না। সে আর কিছু বলল না, কিন্তু টাইটার দিকে তার ঐ হলুদ তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে এক দৃষ্টে চেয়ে রইল।

প্রভুর ইচ্ছে সকলের সামনের প্রকাশ পাবে। টাইটা নীরবে সম্মতি জানাল কিন্তু রহস্যজনক ভাবে।

নাজা তার উত্তরে তাই পেল যা সে শুনতে চেয়েছিল। আমরা সম্মত, টাইটা। আমি আপনাকে বিশ্বাস করি। শান্তিতে চলে যান। অ্যাপেপির একটা গতি হওয়ার পর আপনাকে আমি থেবস্-এর পথে অনুসরণ করব।

তার শেষ কথাটা টাইটার অস্বাভাবিক লাগল। কিন্তু সে এতো অমনোযোগী ছিল যে সে এটা বিবেচনা করতে পারল না। নাজা একটা রহস্যজনক হাসি হেসে বলে গেল, কে জানে? আমাদের হয়তো একজন আরেকজনকে দেবার মত গুরুত্বপূর্ণ খবর তখন থাকবে যখন আমাদের আবার দেখা হবে।

যখন টাইটা দ্রুত জাহাজে ফিরে ডেকের ঘোট কেবিনে গেল যেখানে নেফার শুয়ে আছে সে দেখল মিনটাকা তার পাশে বসে কাঁদছে।

এসব কি। আমার প্রিয়তমা? সে তাকে কোমল স্বরে জিজ্ঞেস করল। তুমি সিংহীর মতই সাহসী। গার্ড যযাদ্ধার মতো যুদ্ধ করেছ। আর সেই তুমি এখন কিভাবে এতো হতাশায় ভেঙে পড়ছো?

পিতা আমাকে সকালেই অ্যাভারিস ফিরিয়ে নেবে। কিন্তু আমার নেফারের সাথে থাকা উচিত। আমি তার বাগদত্তা, আমাকে তার দরকার। আমাদের একজনকে আরেক জনের দরকার। সে করুণভাবে তার দিকে চোখ তুলে তাকাল এবং টাইটা দেখতে পেল সে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত।

সে তার হাত ধরল। ওহ, ম্যাগোস! তুমি কি আমার পিতার কাছে যাবে এবং তাকে বলবে কি যে আমাকে থেবসে তোমাকে সাহায্য করার জন্য ও নেফারের যত্নে নিতে যাওয়া দরকার? আমার পিতা তোমার কথা শুনবে।

কিন্তু অ্যাপেপি হাসিতে খেঁকিয়ে উঠল যখন টাইটা তাকে মানাতে চাইল। আমার ছানাকে নাজার খোয়ারে রাখব? সে অবাক হয়ে মাথা নাড়ল। আমি নাজাকে ততোটাই বিশ্বাস করি যেমনটা একটা বিচ্ছুকে করি। কে জানে সে কি চাল চালার চেষ্টা করবে যদি তাকে আমি দর কষাকষির ঐ বস্তুটা হাতে তুলে দেই? ঐ ছোট ছানা নেফারের জন্য সে তার থাবা উঠাবে ততোটাই দ্রুত যতোটা দ্রুত একটা বাজ একটা বাস্টার্ডের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, যদি না ইতোমধ্যে সে ঐ রাস্তায় না গিয়ে থাকে। সে আবার হাসল। আমি তার কুমারিত্বকে অপবিত্র করতে চাই না। না, ওয়ারলক, মিনটাকা তার বিয়ের দিন পর্যন্ত আমার ডানার নিচে অ্যাভারিস থাকবে এবং তোমার কোন মন্ত্র ঐ ব্যাপারে আমার মন পরিবর্তন করাতে পারবে না। বিষণ্ণভাবে মিনটাকা নেফারের কাছ থেকে তার বিদায় নিতে গেল। তার জ্ঞান একটু ফিরেছে। রক্তক্ষরণ ও ওষুধের প্রভাবে সে দুর্বল। কিন্তু সে যখন তাকে চুমু খেল তখন সে চোখ খুলল। সে শান্তভাবে কথা বলল, তার ভালোবাসার ওয়াদা করল এবং সে তার চোখ দেখল যখন সে কথা বলল। তাকে ছেড়ে ওঠার আগে সে তার গলার স্বর্ণের লকেটটা হাতে নিল। এর মধ্যে আমার একগোছা চুল আছে, যা আমার আত্মা এবং এটা আমি তোমাকে দিলাম। সে লকেটটা তার হাতের মধ্যে রাখল এবং দৃঢ়ভাবে নেফার ওটা মুঠো বদ্ধ করল।

অতঃপর মিনটাকা নদীর তীরে একা দাঁড়িয়ে রইল যখন দ্রুতগামী তরী নেফার ও টাইটাকে নিয়ে স্রোতে ভাসল। একদিকে বিশ জন করে মাঝি গলুই এর নিচে সাদা ফেনা তুলে জাহাজটা নদীর উজানে থেবৃস এর উদ্দেশ্যে চালাল। মিনটাকা জাহাজের পশ্চাৎভাগে দাঁড়ানো টাইটার লম্বা ছায়ামূর্তির উদ্দেশ্যে হাত নাড়ল না, কিন্তু নিঃসঙ্গভাবে তার দিকে চেয়ে রইল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *