• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

৩০. দিল্লীতে দূরত্ব কোন সমস্যাই নয়

লাইব্রেরি » সমরেশ মজুমদার » সমরেশ মজুমদারের উপন্যাস সমগ্র » সাতকাহন (২য় পর্ব) - উপন্যাস - সমরেশ মজুমদার » ৩০. দিল্লীতে দূরত্ব কোন সমস্যাই নয়

দিল্লীতে দূরত্ব কোন সমস্যাই নয়। নিজস্ব গাড়ি থাকলে তো কথাই নেই। পিত্ৰালয় থেকে অলোক নিজের ফ্ল্যাটে পৌঁছাতে বেশী সময় নেয় না। রোজ বিকেলে দীপাবলীকে অফিস থেকে তুলে একবার পিত্রালয়ে যায়। ফিরে আসে যখন তখন সন্ধ্যা গড়িয়েছে। প্রথম প্রথম পরিষ্কার হয়ে স্বামীর জন্যে অপেক্ষা করত দীপাবলী। কিন্তু ফিরে এসে অলোক। জানাতে সে ওবাড়ি থেকে চা খেয়ে এসেছে। বাথরুমে ঢুকে যাওয়ার সময় তাকে দেখে মনে হত একটুও খারাপ লাগছে।

একা বসে চা খাওয়া দীপাবলীর নতুন ব্যাপার নয়। কিন্তু বিয়ের পর সে ঠিক করেছিল এতদিন জীবনটা যেভাবে কাটিয়েছে ঠিক তার উল্টোটা করবে। অথচ এমনই গোলমেলে ব্যাপার কিছুতেই সেই নিয়মের বাইরে আসতে পারছে না। প্রথম প্রথম রাগ করে সে চা খেতো না। অলোক জিজ্ঞাসা করলে বলত ভাল লাগছে না। তার মনে হত এটুকু বললে অলোক বুঝতে পারবে। তাকে অনুনয় করবে। বাঙালির ছেলের এক বিকেলে দ্বিতীয় কাপ চা খেতে সাধারণত আপত্তি হবার কথা নয়। অলোক এসব কিছুই করেনি। ভাল না লাগাটাকেই বিশ্বাস করেছে। কয়েকটা দিক বাদে মেনে নিল দীপাবলী। অলোক তাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে চলে যেতেই ফ্ল্যাটে ঢুকে গ্যাসে জল বসিয়ে দিতে দ্বিধা করত না। স্নান সেরে চা বানিয়ে একা ব্যালকনিতে বসে চুমুক দিতে দিতে যে খারাপ লাগা তা সহ্য হয়ে যেতে সময় লাগল না বেশী।

সকালে, সকাল হবার আগেই ঘুম ভেঙে যায় দীপাবলীর। অলোক তখন মড়ার মত পড়ে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে চা বসিয়ে বাবুর ঘুম ভাঙাতে হয়। সেই সময় একসঙ্গে বসে চা খাওয়ার সময় খবরের কাগজ আসে। তৎক্ষণাৎ তাতে ডুব যায় অলোক। একবার কাগজ মুখে দিলে বাক্য লোপ পেয়ে যায়। প্রথম প্রথম কথা বলার চেষ্টা করে বিরক্ত হয়েছে। দীপাবলী চা শেষ করে রান্নাঘরে ঢোকে। ভাত ডাল নয়, ব্রেকফার্স্ট। সেটা তৈরী করে ফ্ল্যাটটাকে গোছানো। যে কাজের মেয়েটি সকালে আসে তাকে তাড়া দিয়ে কাজ করাতে বাকি সময়টুকু যায়। এর মধ্যে বাথরুমের কাজ সেরে বেরিয়ে আসে অলোক। ব্রেকফার্স্ট খেয়ে দুজনে তৈরী হয়ে কাজের লোককে বিদায় করে দরজায় তালা দিয়ে নিচে নেমে গাড়িতে চাপে। এবার সারাদিন অফিস। ঠিক সময়ে অলোক তাকে তোলে অফিসের সামনে থেকে। কোন কোনদিন বাড়ি ফেরার পথে বাজার করে আনা। পিত্রালয় থেকে ফিরে রোজই সাজুগুজু করে স্ত্রীকে নিয়ে বেরোয় অলোক। ইদানীং একটু সন্দেহ হচ্ছে দীপাবলীর। এই বেরুনোটার পেছনে পরিকল্পনা আছে। কারণ কোন মানুষের প্রতি রাত্রে নেমন্তন্ন থাকতে পারে না অথচ অলোকের থাকে। সপ্তাহে ছটা দিন হয় এর বাড়ি নয় ওর। সেখানে যারা জড়ো হয় তারা মোটামুটি কমন। কিছুক্ষণ প্রায় একই কথার পর মদ্যপান এবং ডিনার। ডিনারটি বুফে। নিজের পছন্দমত প্লেটে তুলে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাওয়ার সময় গল্প করতে মোটেই ভাল লাগে না দীপাবলীর। মদ্যপানে কেউ না কেউ প্রতিদিন মাত্রা ছাড়ায়। তখন তাকে নিয়ে রসিকতা। অলোকের গর্ব আছে এব্যাপারে। সে নাকি কখনও মাতাল হবার মত মদ খায় না। অথচ মাঝে মাঝেই ফেরার সময় গাড়ির গতি দেখে শিউরে ওঠে দীপাবলী। বললে অলোক হাসে। নিজের ক্ষমতা নিয়ে গর্ব করে। কোথায়। যেন পড়েছিল দীপাবলী, মাতালরা কখনই স্বীকার করে না তারা সংবিতে নেই। রবিবার দিনটা একটু আলাদা। দীপাবলীর সেই দিনটাকেই ভাল লাগছিল। সকালে ব্রেকফার্স্ট খেয়ে অলোকের পিত্রালয়ে চলে যেতে হত। সারাটা দিন সেখানে কাটিয়ে রাত্রের খাওয়া খেয়ে বাড়ি ফেরা। ওই একটা দিন অলোক মদ খেতো না।

পিত্রালয়ে পৌঁছে দুপুরের খাওয়া পর্যন্ত অলোকের গলা পাওয়া যেত। তারপর সে বেরিয়ে যেত আড্ডা মারতে। ফিরত রাতের খাওয়ার আগে। সারাটা দিন শাশুড়ি এবং জায়ের সঙ্গে সময় কাটানো। নানান কথা শোেনা। প্রতিটি সংসারের নিজস্ব কিছু সমস্যা থাকে। বাইরে থেকে দেখলে সেসব সমস্যা আঁচ করা যায় না।

ছোটছেলেকে বিয়ের পর আলাদা সংসার করার অনুমতি দিতে চাননি পরশেচন্দ্র। স্ত্রীর জেদে রাজী হয়েছিলেন। স্ত্রী তাঁকে বুঝিয়েছিলেন এতে সম্পর্ক ভাল থাকবে। এবং আছে। বড় ছেলে এখনও বাপ-মায়ের অনুরক্ত। কিন্তু তার স্ত্রীর সঙ্গে পরেশগিন্নী প্রায়ই দ্বিমত হচ্ছেন। খুঁটিনাটি যে-কোন কারণেই এই মতভেদটা ফুটে উঠছে। আর এ ব্যাপারে ছেলে কোন ভূমিকা নিচ্ছে না এমন অভিযোগ আছে পরেশগিন্নীর।

বিয়ের পর প্রথম কিছুটা দিন যে-কোন নতুন বউ নতুনই থাকে। তখন তার সঙ্গে একটু দূরত্ব রেখে কথা বলা, তিক্ততা এড়িয়ে চলা। কিন্তু কয়েকটা দিন কাটলেই কখন সবার অজান্তে সে নিজের হয়ে যায়, একসঙ্গে না থাকলেও। দীপাবলী এখন সেই জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। শাশুড়ি তাকে একা পেলেই বলেন যদ্দিন ছেলের বিয়ে দেননি তদ্দিন তিনি ভাল ছিলেন। সব কিছুই তাঁর মনের মত চলত। বউ-এর দোষ তিনি দিচ্ছেন না। অন্যের সংসারে যে বড় হয়েছে তার রুচি ধ্যান-ধারণা তো আলাদা হবেই। তবে কিনা নতুন সংসারে এলে কিছুটা মানিয়ে নিতে হয়। বড় বউ আজ পর্যন্ত সেটা শিখল না। তার মেয়ে। বড় হয়েছে কিন্তু মেজাজের পরিবর্তন হয়নি। এইজন্যেই তিনি ছোট ছেলেকে বিয়ের পর আলাদা ফ্ল্যাট নিতে বলেছেন। নিজের বক্তব্য প্রমাণ করতে প্রতি রবিবারে তিনি প্রচুর উদাহরণ দেখান দীপাবলীকে। অথচ এই বলাটা হয় আড়ালে আবডালে। বড় বউ সামনে থাকলে প্ৰসঙ্গ তোলেনই না ভদ্রমহিলা।

বড় বউ সময় নিল একটু বেশী। শেষ পর্যন্ত সে-ও মুখ খুলল। শকুন্তলা এক রবিবারে খাওয়াদাওয়ার পর দীপাবলীকে একা পেয়ে বলেই ফেলল, তোমার ভাই খুব ভাল লাক। বিয়ের পর আলাদা ফ্ল্যাট নিয়ে আছ।

দীপাবলী অভিমান বা ঈর্ষা কোন পর্যায়ে বক্তব্যটাকে ফেলবে বুঝতে পারল না। সে শুধু বলল, আলাদা থাকারও কিছু অসুবিধে আছে।

শকুন্তলা চুপ করে গিয়েছিল। কিন্তু ভঙ্গীতে না মেনে নেওয়া ছিল। পরে আর একদিন সে মুখ খুলেছিল, তুমি তো বলবেই ভাই। তোমার আর কি! একসঙ্গে স্টে করতে হলে বুঝতে পারতে মুশকিলটা কী! যতই করি আমি মাদার ইন ল-এর কাছে ফরেনার।

এই রবিবারে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ দীপাবলী জিজ্ঞাসা করল, তুমি রব্বিার দিনটায় হঠাৎ এমন সাত্ত্বিক হয়ে থাকো কেন?

চমকে তাকান অলোক, মানে?

এই একটা দিন মদ খাও না দেখছি।

ও। রাস্তায় চোখ রাখল অলোক, মদে তোমার অ্যালার্জি আছে?

আমার যা আছে তা থাক না।

না-না, আমাকে বুঝতে দাও। যদূর মনে পড়ে তুমি আমাকে কখনও মাতাল হতে দ্যাখেনি। মদ খেয়ে উল্টোপাল্টা কিছু করিনি।

তাহলে মদ খাও কেন?

মানে? হতভম্ব অলোক।

মদ খাবে অথচ মাতাল হবে না, এ যেন জলে নামব অথচ বেণী ভেজাব না।

আমি মাতাল হলে তুমি খুশী হতে?

মাথা খারাপ? তাহলে গাড়ি চালিয়ে আমাকে বাড়িতে পৌঁছাতে কে? দীপাবলী শব্দ করে হেসে উঠল। আর এটুকুতেই সে বুঝে গেল অলোকের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। ওর। একটাই অসুবিধে, ব্যঙ্গ সহ্য করতে পারে না মোটেই। আর মেজাজ খারাপ হলেই ও খুব বেশী চুপ মেরে যায়। বাড়িতে ঢুকে এমন ভঙ্গী করে যেন রাজ্যের কাজ ওর জন্যে জমে আছে, কথা বলার সময় নেই। যতক্ষণ ওই মেজাজ থাকছে ততক্ষণ এড়িয়ে যাবে সে, দীপাবলীকে। এমন কি বিছানায় শুয়েও নিজেকে গুটিয়ে রাখবে। আর যতক্ষণ এই। ব্যাপারটাকে গুরুত্ব না দিয়ে দীপাবলী অন্য প্রসঙ্গে কথা শুরু করছে ততক্ষণ ও স্বাভাবিক হবে না। প্রথম দিকে একটু ভুল হয়ে যেত। কেন রাগ করেছে এই নিয়ে প্রশ্ন করত বারংবার আর তাতে জব্বর চটে যেত অলোক। শেষে একদিন অন্য সময় ভাল পরিস্থিতিতে বলেই ফেলেছিল, আমার যখন খুব মেজাজ খারাপ হয়ে যায় তখন সেই ব্যাপারে বারংবার কোন প্রশ্ন করবে না।

কেন আমার জানতে ইচ্ছে করে না বুঝি?

পরে জেনো। অন্য সময়ে। কারণ তখন ওব্যাপারে প্রশ্ন শুনলে মনে জ্বলুনি ধরে। উল্টোপাল্টা বলে ফেলতে পারি। আই অ্যাম সরি কিন্তু তখন চুপ করে থাকলে আমাকেই সাহায্য করবে?

জানলাম। কিন্তু আরও কিছু জানা দরকার মশাই।

বলে ফ্যালো।

আর কিসে তোমার জ্বলুনি ধরে?

আর একটাই ব্যাপারে। হয়তো কোন খাবার খেতে আমার ভাল লাগছে না। খুব অপছন্দের হয়েছে। আমি পুরো খাবারটাই স্কিপ করলাম। তখন আমাকে সেটা করতে দেবে। খামোকা খাও খাও বলে আমায় ইরিটেট করবে না।

অর্থাৎ একবার যা নিয়ে তুমি গোঁ ধরবে তা থেকে তোমাকে নড়ানো চলবে না। এটা কি ঠিক হবে? স্পষ্ট চোখে তাকিয়েছিল দীপাবলী।

মাথা নেড়েছিল অলোক, ব্যাপারটাকে বাঁকা চোখে দেখা না। আমি তো তোমাকে কোন অসম্মান করছি না। আমি সেই সময় আমার মত থাকতে চাই। বাল্যকাল থেকে এটা প্রায় অভ্যেসেই এসে গিয়েছে। মা জানতেন বলে চুপ করে থাকতেন।

মা ছেলের স্বভাবের কথা ভাল করে জানবেই। বিয়ের পর সেগুলো বউকে জানানো স্বামীর কর্তব্য। দেখো, আমি চুপ করে থাকব, তোমাকে ইরিটেট করবো না।

হ্যাঁ, একথা মানবেই দীপাবলী, অলোক মানুষ হিসেবে খারাপ নয়। খারাপ হলে বিয়ের আগেই কিছুটা সে বুঝতে পারত। আবার পৃথিবীর কোন মানুষই একেবারে সাদা হতে পারে। না। আর কালোর ছিটে বলে দ্বিতীয়জন যা মনে করে সেটা আবার তার কাছে কালো নাও মনে হতে পারে। সে নিজে কতখানি ভাল কতখানি খারাপ তার হদিশ আজ পর্যন্ত জানা হল না। নিজেরটা হয়তো কেউই বুঝতে পারে না।

অলোকের খারাপগুলো, কিংবা বলা যায় যেগুলো দীপাবলীর খারাপ লাগে সেগুলো নিয়েই অলোক। যেমন ওই মেজাজের ব্যাপারটা, সীমিত মদ্যপান এবং পিত্রালয়ে গিয়ে নিজের সব কিছু লুকিয়ে রাখা। প্রথমটা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় আছে, দ্বিতীয়টা সম্পর্কে চোখ বন্ধ করে থাকা যায় কিন্তু তৃতীয়টা নিয়ে যে খারাপ লাগা তৈরী হয় তা ঝেড়ে ফেলতে পারে না দীপাবলী। একজন শিক্ষিত ভদ্ৰমানুষ কেন বাবা-মায়ের কাছে গিয়ে নিজের মুখ মুখোসের আড়ালে লুকিয়ে রাখবে? ওঁদের কোন কথার প্রতিবাদ করে না অলোক। এ ব্যাপারে ওর যুক্তি, যেহেতু আমি ওখানে বাস করছি না তাই কথা বাড়িয়ে ওঁদের মনে অশান্তি এনে লাভ কি? মদ খাবো কিন্তু মাতাল হব না, কেউ দেখে আমায় বুঝতে পারবে না এই মানসিকতা তৈরী হয়েছে ওই ব্যাপারটা মা বাবার কাছে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা থেকে। বিয়ের আগে কদাচিৎ পান করত অলোক এমন নয়। এই জীবনটা এবং বন্ধুবান্ধব হুট করে এসে জোটেনি। যেহেতু তারা আগেও ছিল তাই খাওয়া-দাওয়াও ছিল। খাওয়ার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সে এত অল্প গলায় ঢালত যে মাতৃদেবীর পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না পুত্রের। কাণ্ডকারখানা। দীপাবলীর ধারণা এই কারণে এখন রবিবারে নির্জলা থাকে অলোক। এটাকে হিপোক্রেসি বলা যায় কিনা তা নিয়ে বিতর্ক উঠতে পারে কিন্তু ব্যাপারটা যে তার কাছে খুব খারাপ লাগে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

এইটুকু ছাড়া অলোক খুবই ভাল মানুষ। ও যখন প্রেম করে তা মন বা শরীর যা নিয়েই হোক তখন অত্যন্ত যত্নবান হয়। আজ পর্যন্ত কখনই তাকে অফিস ছুটির পর পাঁচ মিনিটের বেশী দাঁড় করিয়ে রাখেনি। দীপাবলী না চাইতেই এমন অনেক কিছু কিনে দিয়েছে যা পেতে মোটই খারাপ লাগার কথা নয়। সকালবেলায় কাগজ পড়ায় মগ্ন হওয়া বা সন্ধ্যে বেলায় তাকে একা চা খেতে বাধ্য করাকে বড় করে না দেখলে অলোক কিছু সহজ হয়ে যায়। দাম্পত্য জীবনের শান্তির সব চেয়ে বড় পথ হল মানিয়ে চলা। চুলচেরা বিচার না করে একটু এড়িয়ে গেলে অনেক সমস্যা আর মাথা তুলতে পারে না। একা থাকার সময়ে এসবের প্রয়োজন হয়নি। এখন হচ্ছে। তখন ছিল স্বাধীন জীবন। কোন দায়, কোন চাপ ছিল না। এখন সংসার এবং সম্পৰ্ক নামক দুই পার্থিব অপার্থিব দায় বহন করতে হবে। দায় তো বটেই। যখনই কিছু নির্মাণ করা হয় তখনই দায় এসে যায়। কিন্তু মানিয়ে নেয়া হয়। মেনে নেওয়ার পর্যায়ে চলে যায় তখনই বিপত্তি ঘটে। যারা মেনে নিয়ে নিপ থাকে তাদের সংখ্যাই এদেশে বেশী। যারা মানাতে মানাতেও মেনে নিতে পারে না, সব সময় আত্মমর্যাদার পোকা কুরে কুরে খায় তারাই দিশেহারা হয়। মানিয়ে নেওয়া কারো কাছে অনন্ত কারো কাছে বারের মত। টানতে টানতে ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনায় এলেই যত গোলমাল।

এদিন সকালে ঘুম ভাঙার পরেও দীপাবলী বিছানা ছাড়ল না। যদিও এইসময় বিছানায় পড়ে থাকা রীতিমত কষ্টকর তবু পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে রইল। অলোক ঘুমোচ্ছ। ওর ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। কোন মানুষ ঘুমালে খুব অসহায় দেখায়, কাউকে বীভৎস। যেহেতু ওইসময়ে তার কিছু করার থাকে না তাই অন্য চেহারাটা বেরিয়ে আসে। খোলস ছেড়ে। ঘুমন্ত শিশুর মুখ দেখতে যে আরাম তা কখনই জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাওয়া ঘুমন্ত মানুষের মুখ দেখে পাওয়া যাবে না। অলোকের মুখ এই মুহূর্তে খুব দৃষ্টিনন্দন নয়। দীপাবলী পাশ ফিরে শুলো।

বেলা গড়াচ্ছে। জানলায় রোদ। দীপাবলী উঠল না। অস্বস্তি বাড়ছিল। এবং সেইসঙ্গে উত্তাপ। লোকটা কি নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছ! নটা বাজতে আর ঘণ্টা দুয়েক। তার মধ্যে বেরিয়ে যেতে হবে সব কাজ সেরে অথচ—। এইসময় বেল বাজল। দুবার। এবং অলোকের ঘুম ভাঙ্গল। অস্পষ্ট গলায় বলল, কটা বাজে?

দীপাবলী জবাব দিল না। ঘড়ি আছে পাশের দেওয়ালে। যে প্রশ্ন করছে সে ঘাড় ঘুরিয়েই তা স্বচ্ছন্দে দেখতে পারে। এইসময় তৃতীয় বার বেল বাজল। দীপাবলী বুঝতে পারছে কাজের লোক এসেছে। এবার উঠে বসল অলোক, এই দীপা, ঘুমোচ্ছ?

হুম। চোখ বন্ধ দীপাবলী ঠোঁট টিপে শব্দ করল।

কি হল তোমার? আরে ব্বাস, সাতটা বেজে গিয়েছে? কি হল কি তোমার?

ঘুমোচ্ছি। বলামাত্র সে বুঝতে পারল অলোক লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে। আর পারা যাচ্ছিল না। তবু জোর করে নিজের ইচ্ছেটাকে দমন করল সে। দরজা খুলে দিয়ে ফিরে এল অলোক। ওর গলায় প্রচণ্ড বিস্ময়, তুমি এখনও ঘুমোচ্ছ? চা হবে কখন?

আজ তুমি চা কর! দীপাবলী চোখ বন্ধ রাখল।

আমি? চা? হঠাৎ? এগিয়ে এল অলোক, তোমার শরীর কী অসুস্থ?

না। একটু আরাম করতে ইচ্ছে করছে। দীপাবলী আদুরে গলায় বলতে চেষ্টা করল।

আরাম? আমি চা করব আর তুমি আরাম করবে?

রোজ তো আমি চা করি আর তুমি আরাম কর।

অলোক কোন কথা বলল না। পায়ের শব্দে বোঝা গেল সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। তারপর ওর গলা পাওয়া গেল। কাজের লোককে গ্যাস ধরিয়ে দিতে বলছে। এইটে একটা অদ্ভুত ব্যাপার। বে পুব মানুষ সারা পৃথিবীর সব সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামায় সে নিজের বাড়ির গ্যাস ধরাতে পারে না।

এবাড়িতে বাথরুম আছে দুটো। একটা ঘরের লাগোয়া। রোজ ঘুম থেকে উঠে অলোক ওইটে ব্যবহার করে। আজ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বোধ হয় ওর সব এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। দীপাবলী চট করে বাথরুমে ঢুকে পড়ল।

পরিষ্কার হয়ে সে যখন আবার বিছানায় ফিরে এল তখন কাজের লোকটি খবরের কাগজ দিয়ে গেছে সেটা খুলে চোখ রাখল সে। অক্ষরগুলো সামনে আছে বটে কিন্তু মন থাকছে না পড়ায়। এইসময় চা নিয়ে ঢুকল অলোক। বিছানার পাশে রেখে বলল, এই নাও চা, আরাম করা হল?

দীপাবলী জবাব না দিয়ে কাগজ পড়তে পড়তেই চায়ের কাপ তুলে নিল। ততক্ষণ নিজেরটাতে চুমুক দিয়ে ঠোঁটে শব্দ করেছে অলোক, ইস! বেশী চিনি দিয়েছি। জীবনে প্রথম চা করলাম তো! কাগজটা দাও।

দীপাবলী বলল, প্রথমবারে ভাল হবে এমন কথা নেই। সবারই সময় লাগে।

খাওয়া যাচ্ছে না, কাগজটা দাও!

আমি পড়ছি দেখতে পাচ্ছ তো! তুমি যখন কাগজ পড় তখন কেউ চাইলে কিরকম লাগে তোমার?

উফ্‌! তুমি এইসময় রোজ কাগজ পড়? গাড়িতে বসেই তো দ্যাখো!

বললাম না, একটু আরাম করছি।

হঠাৎ?

বাঃ, তুমি যে আরাম রোজ কর তার স্বাদ কেমন একদিন আমি তা চোখে দেখব না? আমি তোমার অর্ধাঙ্গিনী না?

বুঝলাম। ঘড়ি দেখেছ?

হ্যাঁ, নটায় বেরুবো।

আরে, ব্রেকফার্স্ট করবে কখন?

এমন কিছু প্রব্লেম নেই। ডিম ফাটিয়ে পোচ করে নাও টোস্টারে রুটি খুঁজে দাও আর দুধে কনফ্লেক্স ছেড়ে টেবিলে রাখ। বেশী সময় লাগবে না।

এসব আমি করব?

আমি তো রোজ করি।

অলোক কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর গম্ভীর মুখে চেয়ার টেনে বসে পড়ল। দীপাবলী জিজ্ঞাসা করল, কি হল? এসব করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ঠিক আছে করো না।

কিন্তু, তুমি করছ তো?

ভেবে দেখি।

আজ হঠাৎ তোমার মাথায় এসবের পোকা ঢুকল কেন?

পোকাগুলো খুব অনেস্ট কিন্তু!

আই সি। এরপর নিশ্চয়ই নারী স্বাধীনতার কথা তুলবে। আমিও চাকরি করি তুমিও কর, আমি সংসারের কাজ করব তুমি করবে না-এরকম চলবে না, বলবে তো?

আমি কিছু না বলতেই তো তুমি দিব্যি বলে যাচ্ছ।

দ্যাখো দীপা, এটা একটা অভভ্যস। চিরকাল মেয়েরাই হেশেলের ভারটা নিয়েছে। আমাকে যদি প্রশ্ন কর তাহলে বলব, এক আধদিন শখ করে এসব করতে পারি কিন্তু রোজ। করা সম্ভব নয়। আমার অভ্যেসই নেই।

অনেকের অনেক বদ অভ্যেস থাকে, থাকে বলেই সেটাকে লালন করতে হবে?

বদ না ভাল না মাঝামাঝি এ বিচার কে করবে? আমরা চিরকাল শার্টপ্যান্ট অথবা ধুতি। পরছি, তোমরা শাড়ি অথবা শালোয়ার। কেন? অভ্যেসে তো? তোমরাও তো পাঞ্জাবি ধুতি শার্ট প্যান্ট পরতে পারো। পরছ না কেন?

বাঙালি মেয়েরা শার্টপ্যান্ট পরতে শুরু করেছে। ধুতি পরলে হাস্যকর লাগবে বলে পরে না। ব্যাপারটা অস্বস্তিকরও।

ছেলেরা পরলে সুন্দর আর মেয়েরা পরলে হাস্যকর—এ কেমন উক্তি যখন ছেলে এবং মেয়ে সমান অধিকারের জন্যে লড়ছে?

বোকার মতো কথা বল না! শরীরের গঠন অনুযায়ী পোশক। একজন পাঠানের পোশক পরে তুমি যদি ঘুরে বেড়াও তাহলে অস্বস্তিকর লাগবে না?

লাগবে কারণ আমাদের চোখ দেখতে অভ্যস্ত নয় বলে। আমার চেহারা এবং উচ্চতার কোন পাঠান কি নেই? নিশ্চয়ই আছে।

আমরা পশ্চিমবাংলা থেকে বেরিয়ে দিল্লীতে আছি। তাও আমাকে একটা সকাল আরাম করতে দিতে তোমার অস্বস্তি হচ্ছে। যদি নিউয়র্কে থাকতাম? সেখানে গিয়ে বাঙালি মেয়ে প্যান্টসার্ট পরতে বাধ্য হয়, স্বামী রান্না করেন স্ত্রীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে, ভ্যাকুয়াম ক্লিনারে ঘর পরিষ্কর করেন। তুমি কি সেখানে থাকলে আপত্তি করতে পারতে? তোমাকেও করতে হত।

যে দেশে যা নিয়ম তা মানতাম।

নিয়ম তো নিজের সুবিধে মত করে নিলে চলবে না। যাক গে, কথা বলে কোন লাভ নেই। আমি আজ সংসারের কোন কাজ করব না। নির্ভেজাল আরামে কাটাবো সকালটা। খবরের কাগজে মন দিল দীপাবলী।

চা খাওয়া হয়ে গেলে নিজের কাপপ্লেট তুলে বেরিয়ে গেল অলোক। এতক্ষণ যা ছিল মজা করা তা যে ক্রমশ চেহারা পাল্টাচ্ছে বুঝতে পারছিল দীপাবলী। এখন উঠে গিয়ে কাজকর্ম শুরু করে দিলে পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কিন্তু, না আজ নয়, কেমন একটা জেদে আক্রান্ত হল সে।

এবার কাগজে মন বসে গেল। হঠাৎ কলকাতার একটা খবরে নজর পড়ায় সে নড়েচড়ে। বসল। দিল্লীর কাগজে নিয়মিত কলকাতার খবর ছাপা হয় না। আজ প্রথম পাতায় ডান। দিকে ছাপা হয়েছে। পশ্চিমবাংলায় বিপ্লবের ডাক দেওয়া হয়েছে। ক্যুনিস্ট দলের একটি শাখা সংবিধানকে বর্জন করে আগ্নেয়াস্ত্রের ওপর নির্ভর করে দেশের রাজনৈতিক চেহারার পরিবর্তন করতে চায়। ইতিমধ্যে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে যদিও সরকার থেকে এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী উগ্ৰপন্থীদের দ্বারা সংগঠিত বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দীপাবলী চিৎকার করে অলোককে ডাকল এই শুনছে, তাড়াতাড়ি এসো।

বাথরুমে দাড়ি কামাচ্ছিল অলোক। একটু থমকে দাঁড়াল। তারপর গম্ভীর মুখে শোওয়ার ঘরের দরজায় এসে দাঁড়াল। তার মুখে সাবান লাগানো থাকায় অবশ্য অন্যরকম। দেখাচ্ছিল। অলোক এসেছে দেখেই দীপাবলী খবরের কাগজে আঙ্গুল রেখে উত্তেজিত গলায় বলল, এই খবরটা পড়!

আমার সময় নেই।

আঃ, এক মিনিট লাগবে। এগিয়ে দিল কাগজটা সে।

অলোক দায়সারা গোছের ভঙ্গী করে কাগজ নিল। পড়তে পড়তে তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল একটি শব্দ, সর্বনাশ।

সর্বনাশ মানে?

দেশ এবার গোল্লায় যাবে।

গোল্লায় যাবে?

নয়তো কি? এ দেশের মানুষের অভাব আছে। তাদের হাতে অস্ত্ৰ ধরিয়ে দিলে আর দেখতে হবে না। যদুবংশ ধ্বংস হতে যেটুকু সময়?

তুমি বলছ যেভাবে দেশ এখন চলছে ঠিক চলছে?

কাগজটা রেখে দিল অলোক, না চললে তুমি আই আর এস হতে পারতে না। অলোক আর দাঁড়াল না।

রাগ হয়ে গেল কিন্তু কোনরকমে নিজেকে সামলে নিল দীপাবলী নিয়ে হেসে ফেলল। তারপর কাগজটাকে তুলে নিল। না, এ ব্যাপারে আর কোন বিশদ খবর নেই। মনের মধ্যে অস্বস্তি, কলকাতায় একবার গেলে ভাল লাগত।

দুজন মানুষ একই ফ্ল্যাটে তৈরী হয়ে নিল। পাশাপাশি হাঁটতে হয়েছে, টুকটাক কথাও, কিন্তু একটা চাপা দূরত্ব থেকেই গিয়েছে। দরজায় তালা দিয়ে দুজনে নিচে নামল। গাড়ি বের করল অলোক, পাশের দরজা খুলে দিল যেমন রোজ দেয়। দীপাবলী শান্তমুখে বসল। গম্ভীর অলোক ইঞ্জন চালু করে ফার্স্ট গিয়ার দিল। গাড়ি বড় রাস্তায় পড়া পর্যন্ত কেউ কোন কথা বলল না। এবং অকস্মতই অলোকের মুখ থেকে বেরিয়ে এল, আশ্চর্য!

দীপাবলী মাথা নাড়ল, ঠিকই!

অলোক ফিরে তাকাল, দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হবে।

আমাকেও। তবু তোমাদের ওখানে লাঞ্চে নানারকম খাবার পাওয়া যায় কিন্তু আমাদের ওখানে চা সিঙ্গাড়া আর ধোসা। দীপাবলী হাসল।

অলোক ঠোঁট মোচড়ালো। দীপাবলী বাঁ দিকে তাকাল এইসব রাস্তার দুপাশ এখনও শূন্য। মাঝে মাঝে ইটের ভূপ, বাড়িঘর এখনও তৈরি হয়নি। রাস্তাটা বাঁক নিতে হঠাৎ একটা পাঞ্জাবি আটপৌরে দোকান চোখে পড়ল। একটা গাছের নিচে ছাউনি ফেলে দোকান তৈরি হয়েছে। উনুন জ্বলছে। শহরের মাঝখানে এমন দোকানকে ধাবা বলা যাবে না। দীপাবলী বলল, বাঁ দিকে গাড়িটা দাঁড় করাবে?

কেন? ঘেঁকিয়ে উঠল অলোক।

বলছি, দাঁড় করাও না।

গাড়িটা দাঁড়াল। সঙ্গে সঙ্গে একটা ছোকরা ছুটে এল দোকান থেকে, বলিয়ে মেমসাব, মাটন চিকেন ফিস আউর তরি রোটি, সব কুছ মিলেগা।

অলোক বিরক্তি দেখাল, এখানে খাবে নাকি?

খাওয়াই যাক না। মুখ বদলানো হবে।

এগুলো হজম করতে পারবে?

দেখাই যাক না। অবশ্য তুমি না খেলে আমার খাওয়া হবে না।

কেন? আমার সঙ্গে তোমার খাওয়ার কি সম্পর্ক?

বাঃ, এই খাওয়াটা পেতে তোমাকে বা আমাকে তো পরিশ্রম করতে হচ্ছে না। অতএব এই নিয়ে কোন টেনশন থাকার কথা নয়।

কাঁধ ঝাঁকাল অলোক। তারপর ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করল, চিকেন উকেন ছোড় দেও, সবজি ক্যায়া হ্যায় বাতাও।

পালং পনির।

বা, দো রোটি আউর পালং পনির।

হুকুমটা শোনামাত্র ছেলেটাচলে গেল দীপাবলী হেসে ফেলল। অলোক জিজ্ঞাসা করল, হসির কি হল?

দ্যাখো, এখানেও তুমি তোমার মতামত আমার ওপর ইম্পোজ করলে। আমাকে জিজ্ঞাসা করলে না পালং পনির খাবো কি না। কিন্তু আমি মেনে নিলাম!

 

মথুরা রোডের আয়কর ভবন একটি বিচিত্র জগৎ। যদিও এখন পর্যন্ত দীপাবলী রয়েছে। ও এস ডি হিসাবে, যার সঙ্গে আয়কর দাতাদের সরাসরি কোন যোগাযোগ নেই। অফিস পাড়ায় ঢুকলে একটা জিনিস চোখে পড়ে। শয়ে শয়ে লোক ছুটছে ঠিক সময়ে পৌঁছাতে। সাইকেল স্কুটার আর গাড়ির মিছিল দেখলে মনে হয় কারো হাতে নষ্ট করার মত সময় নেই।

এ জি অডিট যে সমস্ত অ্যাসেসমেন্ট সম্পর্কে আপত্তি করেছে তার একটা কপি হেড কোয়ার্টার্সে আছে। দীপাবলীর কাজ সেই সমস্ত আপত্তি সম্পর্কে নির্দিষ্ট আয়কর অফিসার কি সিদ্ধান্ত নিলেন সেটা খোঁজ করা। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট অফিসার আপত্তি মেনে নিয়ে নতুন করে অ্যাসেসমেন্ট করেন। যদি সেটা করার সময় পেরিয়ে যায় তাহলে ওপরতলার অনুমতি নিতে হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে এ ডি অডিটের রিপোর্টের সঙ্গে আয়কর অফিসার একমত হন না। তখন সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্ব পড়ে দীপাবলীর উপরে। সে তার মতামত ওপরওয়ালাকে পাঠিয়ে দেয়। তিনি তা বিচার করে সিদ্ধান্ত নেন। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত দীপাবলীর ভূমিকা অনেকটা খবরদারি করা। বেশীর ভাগ সময়েই কিছু করার থাকে না। চুপচাপ চেয়ারে বসে সময় কাটানো। দুজন বাঙালি অফিসার আছেন এখানে। তাঁদের একজন প্রায়ই আসেন খেজুরে আলাপ করতে। এছাড়া অন্যান্য অফিসাররা দেখা হলে হ্যালো বলে হেসে যান। দীপাবলীর পিওন বা ক্লার্ক ঠিক নিজস্ব নয়। অন্য অফিসারদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের হুকুম দেওয়া হয়েছে তাকে সাহায্য করতে। দুদিনেই বোঝা গেল তারা নিজেদের জায়গায় কাজ করতে বেশী আগ্রহী। নিতান্ত দায়ে পড়ে আসছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে প্রথম থেকেই অপ্ৰিয়ভাজন হতে হবে বলে চুপ করে ছিল। দিন দশেক বাদে দায়িত্ব বাড়ল। সি ওয়ার্ডের আয়কর অফিসার হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে ওঁর জায়গায় কাজ করতে বলা হল।

সি ওয়ার্ডে মোটামুটি মাঝারি আয়ের অ্যাসেসিদের ফাইল আছে। ব্যবসাদার থেকে সম্পত্তি মারফত রোজগার, সবরকম মানুষ মিলিয়ে মিশিয়ে। দীপাবলী প্রথম দিন চেয়ারে বসেই ওই ওয়ার্ডের সমস্ত কর্মীদের ডেকে পাঠাল। তিনজন পেশকার একজন ইন্সপেক্টর, একজন স্টেনো এবং পিওন এসে দাঁড়াল। দুজন পেশকারের বয়স পঞ্চাশের ওপাশে। সবাই হিন্দীভাষী। দীপাবলী কোন ভণিতা না করে বলল, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে আমি সবে ডিপার্টমেন্টে জয়েন করেছি। তাই আমার অভিজ্ঞতা খুব অল্প। থিওরি এবং প্র্যাকটিসের মধ্যে পার্থক্য থাকবেই। তাই সবসময় আপনাদের সহযোগিতা চাই।

প্রবীণ পেশকার পান চিবোতে চিবোতে বলল, কিছু ভাববেন না। আমি সমস্ত অ্যাসেসমেন্ট করে আপনার কাছে পাঠিয়ে দেব আপনি শুধু সই করে দেবেন।

দীপাবলীর চোয়াল শক্ত হল। সে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করল, আপনার নামটা কি?

Category: সাতকাহন (২য় পর্ব) - উপন্যাস - সমরেশ মজুমদার
পূর্ববর্তী:
« ২৯. নতুন ফ্ল্যাটে
পরবর্তী:
৩১. সরকারি চাকরিতে »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑