৪. টলারেন্স নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা

টলারেন্স নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা

রুটে দুইটা বাস ছিল, একটা হচ্ছে বিআরটিসি আরেকটা হচ্ছে ৪ নাম্বার। সন্ধ্যা বেলায় যখন ক্লাস শেষ হতো বাস গুলায় অনেক ভীড় থাকত। প্রতিদিনই বাস কাউন্টারগুলোয় মজার কিছু ঘটতোই।

মজার বলতে ঝগড়া বাঁধা। দুটাকা বেশি নেয়া থেকে শুরু করে কে কোথায় বসলো কার কোথায় ধাক্কা লাগলো আর কে বের হতে পারছে না এসব, এ ধরনের ঝগড়া সবসময়ই হতো।

তখন মনে হতো বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে টলারেন্স বা সহ্য ক্ষমতার মাত্রাটা বোধহয় কম। কিছু হলেই আমরা রেগে মেগে আগুন হয়ে যাই। একটুতেই বিরক্ত বা হতাশ হয়ে যাই।

তো আমি একটা ছোট্ট কাজ করতাম। আমার সাথে যদি কারও ধাক্কা লাগতও, সে রক্তচক্ষু করে তাকানোর আগেই আমি তাকে ছোট্ট করে একটা সালাম দিতাম। বলতাম, আসোলামু আলাইকুম ভাইয়া, I am really really sorry। Thats it। সালাম দিলেই অর্ধেক শান্ত হয়ে যায়। আর স্যরি বললে পুরোপুরি ঠাণ্ডা।

আমার মনে হয় যে হ্যাঁ, বাংলাদেশের মানুষের টলারেন্স মাত্রা কম, কিন্তু এই ছোটখাটো প্র্যাকটিস যদি আমার ধরে রাখতে পারি, আশপাশের মানুষের টলারেন্স একটু হলেও বাড়বে, এবং তোমাকে দেখে আরো কয়েকটা মানুষ হয়তো শিখবে এবং জিনিসটিা Ripple Effect এর মত চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে।

তাহ এরপর গায়ে ধাক্কা লাগলে একজন আরেক জনের দিকে রক্তচক্ষু দিয়ে না তাকিয়ে একজন আরেকজনকে স্যরি বলবে। আমার মনে হয় এমন একটা পৃথিবীর আশা আমরা করতেই পারি।

.

চ্যাটিং করা থেকে যদি দারুণ কিছু হয়, চ্যাটিং করা ভালো!

চৌধুরী অ্যান্ড হোসাইন এর ইংরেজি ব্যাকরণের বই পড়েনি বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজে আজকাল এমন অমাবস্যার চাঁদ নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের পাঠ্যক্রমের অত্যাবশ্যকীয় পাঠ্যপুস্তক এটি। প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে ভর্তিপরীক্ষা পর্যন্ত বিভিন্ন রংয়ের কভারের ভিতরে থাকা একই কথাগুলো আমরা বারবার পড়ে যাই, পরীক্ষা দেই এবং যথাসময়ে ভুলেও যাই।

অবাক করার মতো হলেও এটা কিন্তু সত্যি যে, সুদীর্ঘ বারো বছর ধরে ইংরেজি পড়ে আসার পরও ইংরেজিটা আমাদের কাছে এখনও একটা আতংক হিসেবেই বিরাজ করে। আমাদের মধ্যে এখনও এমন অনেকে আছে যাদেরকে ইংরেজিতে কোনও কথা বলতে বললে রীতিমতো ভয় পেয়ে, লেজ তুলে উল্টোদিকে দৌড়ে পালাবে।

কিন্তু কেন?

কারণ, ইংরেজি একটা ভাষা। আমরা দীর্ঘ বারো বছর ধরে শুধু এর ব্যাকরণই পড়ে এসেছি। আর কোনো ভাষা শেখার ক্ষেত্রে কথ্যরূপে ব্যাকরণ তেমন একটা ভূমিকা রাখে না। তাই, আমাদের ইংরেজি বলতে গেলে এমন পরিস্থতির সম্মুখীন হতে হয়।

এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায়ই বা কি?

ইংরেজি শেখার জন্য আমরা অনেকের কাছ থেকেই ইংরেজি মুভি দেখা, খবরের কাগজ/ ম্যাগাজিন পড়া, বই পড়া কিংবা আয়নার সামনে বা বন্ধুদের সাথে চর্চা করার মতো বিচিত্র সব পরামর্শ নিয়মিত পেয়ে থাকি।

কিন্তু, বই বা খবরের কাগজ পড়া কিংবা মুভি দেখার মতো কাজগুলো ক্ষেত্রবিশেষে করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বন্ধুদের সাথে চর্চা করার বিষয়ে আমরা তেমন একটা আগ্রহী নই। কারণ, বন্ধুদের সাথে চর্চা করতে গেলে তিরস্কার আর কটুক্তির আশংকায় আমরা এক পা এগিয়ে আবার দুপা পিছিয়ে যাই। অথচ, কোনও ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে সে ভাষাতে কথা বলার চর্চা করাটা খুবই জরুরী।

আজ তোমাদেরকে একটা মজার আইডিয়া দিতে চাই যেটা কি না তোমাদের ইংরেজিসহ যে কোনও ভাষায় দক্ষ হয়ে উঠতে অনেক সাহায্য করবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অশেষ কৃপায় সামনাসামনি বসে আড্ডা দেওয়ার প্রথা বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়! এখন, সাতসমুদ্র-তেরো নদীর ওপারের বন্ধুদের সাথেও ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারের গ্রুপে বসে আরামে আড্ডা দেয়া যায়।

আমরা সবাই কিন্তু রোজই সারাদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা নতুন কাজের পরিকল্পনা বা ক্ষেত্রবিশেষে অনেকের সমালোচনার ঝুড়ি নিয়েও গ্রুপে চ্যাট করতে বসে যাই।

আইডিয়াটা খুবই সোজা। নতুন একটা চ্যাটিং গ্রুপ খুলে ফেলো। একই কাজ, একই গ্রুপ তবে এবার শুধু ভাষাটা বদলে গিয়ে ইংরেজি হয়ে যাবে।

আর কয়েকটা শর্ত অনুসরন করো :

১. যাই লেখা হোক না কেন সেটা যেন ইংরেজিতে হয়

চ্যাটিং গ্রুপে নতুন ভ্রমনের পরিকল্পনা বা সারাদিনের বিবরণ কিংবা কারও সমালোচনা যাই লেখা হোক না কেন সম্পূর্ণ ইংরেজিতে লিখতে হবে।

২. বাক্যের শুরুর শব্দ লেখা হোক ক্যাপিটাল বা বড় হাতের আদ্যক্ষরে

আমরা অনেকেই ইনবক্সে ছোট হাতের আদ্যক্ষরে লেখা শব্দ দিয়ে বাক্য। লিখি। এ অভ্যাসটা বর্জনীয়।

৩. বানানে সতর্কতা অবলম্বন করাটা জরুরী

লেখার সময় সর্বদা শুদ্ধ বানানে লিখতে হবে। এতে করে শুদ্ধভাবে লেখার দক্ষতা বাড়বে।

৪. শব্দ সম্পূর্ণ লেখাটা বাধ্যতামূলক

অনেকে চ্যাটিং এ ইংরেজি শব্দ ছোট করে লিখতে লিখতে ওই, আসল চেহারা আর বানানটাই ভুলে বসে আছে। ফলাফল স্বরূপ, ইংরে পরীক্ষার খাতায়ও সংক্ষিপ্ত বানানে ভুল শব্দ লিখে আসে। G al : Phone at forcat phn, Thanks at forc3 tnx, Hello at লিখে hlw, Welcome এর পরিবর্তে wlcm ইত্যাদি।

৫. শব্দের বানানে সংখ্যা নয়

অনেকে Right, Fight, Night, Sight এ শব্দগুলোকে যথাক্রমে r8, f8, n8, s8 লেখে। এটা বর্জন করতে হবে।

৬. Vowel এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

অনেকেই সংক্ষেপে ইংরেজি লিখতে গিয়ে ইংরেজি ভাষায় কার নামে পরিচিত Vowel শব্দটিকে রীতিমতো অস্তিত্বের সংকটে ফেলে দিয়েছে। Good at frict gd, wait at frict wt, Thank you 99 91669 Tnq লেখে। এটা বর্জন করতে হবে। প্রতিটা শব্দে a, e, i, 0, ॥ বা। পাঁচটি vowel এর সঠিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

৭. এক অক্ষরে শব্দের প্রকাশকে না বলতে হবে

ইংরেজি Are, See, You ইত্যাদি শব্দের উচ্চারণ এক একটি ইংরেজি বর্ণের অনুরূপ! অনেকে তাই লিখতে গিয়েও পূর্ণ শব্দের পরিবর্তে r, c, u লিখে ফেলে। এটা পরিবর্তন করতে হবে।

এ শর্তগুলো মেনে মাস খানেক গ্রুপে চ্যাটিং করার পর নিজেই নিজের পরিবর্তনটা দেখতে পাবে।

তাহলে, আর দেরি না করে আজই তোমার সব প্রিয় বন্ধুদেরকে নিয়ে একটি মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটিং গ্রুপ খুলে ইংরেজিতে কথোপকথন শুরু করো। শুধু ইংরেজি নয় শুদ্ধ বাংলা বলা ও লেখার দক্ষতা বাড়াতেও এ প্রক্রিয়া অনুসরণ বেশ ফলপ্রসূ!

.

রাজার অসুখ আর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন

এক রাজার গল্প বলি। রাজার বিশাল রাজ্য, বিশাল রাজপ্রাসাদ। সেখানে তিনি মহানন্দে খানাপিনা করেন আর সুখে থাকেন। জীবনে সুখের কোন শেষ নেই! এমন একটা অবস্থায় হুট করে রাজার এক অসুখ হলো। এত সুখ মনে হয় তাঁর কপালে সইলো না, তাই এমন এক অদ্ভুত রোগ হলো যে সে রোগের দাওয়াই দিতে পারলো না রাজার যত জ্ঞানীগুণী বৈদ্য, রাজার অবস্থা দিনের পর দিন খারাপের দিকে যেতে থাকলো।

রাজার রোগটা বড়ই আজব। তিনি চোখে দেখেন না। না, তার মানে এই না যে তিনি অন্ধ। তাঁর সমস্যাটা হলো যে তিনি হুট করেই চোখে ঠিকমতো দেখতে পারছেন না। বিষয়টা এত অদ্ভুত, বলার মতো না। রাজা তাঁর নিয়মমত একদিন ঘুমোতে গেলেন তাঁর চার রাণীকে নিয়ে, ঘুম থেকে উঠে দেখলেন যে তিনি চোখে ঠিকমতো আর দেখতে পারছেন না।

রাজ্যময় হৈচৈ পড়ে গেল, রাজার কী হলো কী হলো রব। হাজারো বৈদ্য বৃথা গেল, অনেকে আবার শূলেও চড়লো দাওয়াই না বের করতে পেরে। অবশেষে রাজা পেলেন এক বৃদ্ধ সাধুর দেখা। এই সাধু নাকি পৃথিবীর যাবতীয় রোগের উপশম করতে পারেন। সব শুনে তো রাজা বড় খুশি, এবার বুঝি তাঁর চোখটা বেঁচেই গেল! তিনি খোঁজ লাগাতে বললেন, যেখান থেকে পারে, সাধুকে যেন প্রাসাদে তুলে নিয়ে আসে! সাধু এলেন। রাজাকে একনজর দেখলেন। দেখেই বলে বসলেন, এ রাজার চোখে বিচিত্র এক রোগ আছে। এ রোগের দাওয়াই একটাই! সবাই হাঁ হাঁ করে উঠলো, বললো, কি দাওয়াই, সাধুমশাই? বলুন না একটিবার?

সাধু বলে দিলেন সেই মহৌষধ। আসলে, সেটাকে ওষুধ না বলে বরং বলা উচিত কৌশল। তিনি রাজাকে বললেন বেশি বেশি করে লাল রং দেখতে। রাজা যতো লাল দেখবেন, তার চোখ ততো পরিষ্কার হবে। সে যুগে তো আর ফটোশপের বায়না নেই, প্রযুক্তির ছোঁয়া আসে নি সেখানে। রাজামশাই ঘোষণা দিলেন, এখন থেকে তাঁর চারপাশের সবকিছু যেন লাল রং করে দেয়া হয়। দেয়াল লাল, প্রাসাদ লাল, রাণীর প্রসাধণী লাল, বাঈজির নাচের জামা লাল, প্রহরীর শিরস্ত্রাণ লাল- সবকিছু যেন লালে লাল হয়ে গেল! রাজামশাই দিব্যি খুশি। একগাদা লালের মাঝে বসে তিনি আবার আগের মত ঝকঝকে দেখতে পান সবাইকে।

একদিন সাধুর খুব শখ হলো, রাজামশাই কেমন আছেন, সেটা দেখার। তিনি হাজির হলের প্রাসাদে। প্রহরীসহ সবাই তাঁকে চিনে গেছে এতোদিনে, হাজার হোক রাজার অসুখ সারানোর বদ্যি পুরো দেশে আর একজনও তো নেই! প্রহরীরা তাঁকে ভেতরে নিয়ে গেল বটে, তবে আসার আগে তাকে লাল রং দিয়ে গোসলই করে দেয়া হলো! এটা সাধুর ঠিক পছন্দ হলো না।

রাজার মহাসভা। সবাই উপস্থিত। রাজা তো সাধুকে দেখে মহাখুশি, বললেন আসুন আসুন সাধুবাবা, আপনার দিব্যিতেই আমি চোখ ফিরে পেয়েছি, বলুন আপনি কী চান!

সাধু কিছুই বললেন না। একটু পর উঠে রাজার কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বললেন, পুরো দেশটাকে লাল রং করে ফেলার থেকে আপনি নিজেই একটা লাল কাঁচের চশমা পরে নিলে কি হতো না? নিজের জন্যে পুরো দেশকে লাল করে দেয়ার কী দরকার ছিল, রাজামশাই?

রাজার কাছে সে প্রশ্নের উত্তর আর ছিল না।

গল্পটা এখানেই শেষ। এই গল্পের একটা মোরাল আছে। মোরালটা হলো, নিজের দৃষ্টিভঙ্গির জন্যে অন্যকে পাল্টাতে না বলে, নিজের দৃষ্টিভঙ্গিটাই পালটে ফেললেই পৃথিবীটা আরো সুন্দর হয়ে যায়।

গল্পটাকে রূপক ধরা যাক। বাস্তব জীবনে, নিজের সিদ্ধান্ত, নিজের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যের উপরে চাপানোর দোষে দুষ্ট কিন্তু অনেকেই। এখানে খুব সোজা। বাংলায় বলতে গেলে, অন্যের কোনকিছুকে জাজ করা বা সেটা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার থেকে দৃষ্টিভঙ্গিটা পাল্টিয়ে ফেললেই অনেক ভালো হয় না?

সম্প্রতি দেখলাম একটা ভিডিও আলোড়নে এসেছে, সেখানে বেশ মোটা দাগে ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে, সেটা আবার অনেকে সাপোর্টও করছে! এখানেও সেই দৃষ্টিভঙ্গিরই সমস্যা। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিটা পাল্টে দিতে পারলে দেশ এবং পৃথিবী আরো অনেক বেশি ভালো হয়ে যাবে। নিষ্কলঙ্ক সেই পৃথিবীর প্রত্যাশাই করি আমরা, প্রতিনিয়ত।

.

আমার প্রথম পাবলিক পরীক্ষা আর ডোপামিন ইফেক্টের গল্প

আমার তখন এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। জীবনের প্রথম বড়সড় পাবলিক পরীক্ষা। মনের মধ্যে স্বভাবতই অনেক টেনশন, কী হবে না হবে কিছুই বুঝতে পারছি না। পরীক্ষা খারাপ হবে কি না সেটা আবার আরেক টেনশন। মোটামুটি বাজে অবস্থা।

এর উপরে আরো দুই ধরণের মানুষের জ্বালাতনে মরে যাই যাই অবস্থা। যে। আত্মীয়দের কস্মিনকালেও আশেপাশে দেখি নি আমিসহ আমাদের বাসার কেউ, সেই মানুষগুলো সমানে ফোন দিয়ে পরীক্ষার খোঁজখবর নিচ্ছে, কথাবার্তা বলছে। চরম বিরক্তিকর বিষয়। তার উপরে আমার কিছু ন্যাকা বন্ধু প্রায়ই ফোন দিয়ে বলছে দোস্ত আমি কিছু পারি না, ফেইল করবো, কী যে হবে! অথচ আমি নিশ্চিত সে এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস চোখ বন্ধ করে পেয়ে যাবে। বিশ্রি অবস্থা।

যাহোক, প্রথম পরীক্ষার দিন। আমার সাথে আমার প্রথম পরীক্ষায় এসেছেন আমার মা। তাঁর সাথে আমার কথোপকথন

মাঃ আয়মান, বাবা পেন্সিল নিয়েছিস?

আমিঃ ক্ষীণ কণ্ঠে* হ্যাঁ, মা।

মাঃ আয়মান, বাবা ইরেজার নিয়েছিস?

আমিঃ *আরো ক্ষীণ কণ্ঠে* হ্যাঁ, মা।

মাঃ আয়মান, বাবা পেন্সিল শার্প করে নিয়েছিস তো?

আমিঃ *শোনা যায় না এমন গলায়* হ্যাঁ, মা।

এবার মা ব্রহ্মাস্ত্র ছাড়লেন। বলে বসলেন, বাবা পেন্সিল বেশি শার্প করিসনি তো?

আমি মোটামুটি যারপরনাই হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিলাম। আর কিছুই বললাম না। মা এবার শুরু করলেন তাঁর ভোঁতা পেন্সিলের কারসাজি। তিনি বললেন, বাবা ও এম আর শিটের জন্যে তুই ভোঁতা পেন্সিল নিয়ে যা। দ্রুত গোলল্টা ভরাট করতে পারবি। আমি চিন্তা করে দেখলাম, ভালোই তো আইডিয়া! যেই বলা সেই কাজ। মা শুরু করে দিলেন তাঁর কাজ। শব এ বরাতে যেমন রুটি আর হালুয়া বানায়, সেই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে মুহূর্তেই আমার দুটো পেন্সিল ভোঁতা হয়ে গেল।

এখানেই শেষ না গল্পের। পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখি, ও এম আর শিটে পেন্সিল দিয়ে ভরাট করা যায় না, শুধুমাত্র বলপয়েন্ট পেন লাগে। মনে হলো, আম্মুর ভোঁতা করা পেন্সিলগুলো যেন আমার দিকে তাকিয়ে হাহা করে হাসছে, আর বিদ্রূপ করছে আমার মন্দ ভাগ্যকে!

যাহোক, পরেরদিন পরীক্ষা দিতে গিয়েছি। হলের কাছাকাছি গিয়ে দেখলাম আমার এক পরিচিত বন্ধু ওদের গাড়ি থেকে নামছে। ওদের আবার বিশাল নোয়াহ মাইক্রো, ভাবটাই আলাদা! আমি ওকে দেখেই স্বভাবস্বরুপ চিৎকার করে ডাক দিয়ে একটা দৌড় দিলাম। মাঝপথে গিয়ে খেয়াল করলাম, বন্ধুর মুখ থমথমে। বুঝলাম কোন একটা সমস্যা হয়েছে। ওদিকে আর না গিয়ে দেখতে থাকলাম কী হয়। যা দেখলাম সেটা অতীব আশ্চর্য।

মাইক্রো থেকে এক এক করে ছেলেটার মা, বাবা, নানা, নানী, দাদী, চাচা এবং সম্পূর্ণ অচেনা একটা মানুষ নামলেন। আর কিছু সময় পরে দেখলাম সদ্যজাত একটা বাচ্চাও বের হলো গাড়ি থেকে, সাথে তার বিরক্ত মা। সবমিলিয়ে বিশাল অবস্থা। আমি বুঝলাম, বন্ধুর হতাশার কারণটা কি! এই ঘটনার পর থেকে আমি কোন পরীক্ষায় আর বাবা-মা বা আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে যাই না। একাই চলে যাই। অনেক শান্তি, আসলেই!

পরীক্ষার কথাই যখন আসলো, তখন পরীক্ষার একটা অসাধারণ টেকনিকের কথাই শোনাই তোমাদেরকে। তোমরা যখন হাসো, তখন তোমাদের একটা হরমোন কাজ করে। হরমোনের নাম হচ্ছে ডোপামিন। তো এই ডোপামিন যখন কাজ করতে শুরু করে, তখনই তুমি হাসো। তোমার এই হাসিটা কিন্তু হয়ে উঠতে পারে অন্যের নার্ভাসনেসের কারণ!

ধরো তোমার বন্ধু যদি তোমাকে এসে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে, দোস্ত, পড়া কদুর? সে তোমার কাছ থেকে আশা করবে একটা নেতিবাচক উত্তর, যে তুমি বলবে কিছু পড়ো নাই, তাতে তাঁর একটা মানসিক প্রশান্তি আসবে। তুমি যদি তাকে উলটো হেসে বলো, যে দোস্ত সব পড়েছি, সব পারি- তাহলে কিন্তু সে নার্ভাস হয়ে যাবে! সে যদি তোমার প্রতিদ্বন্দী হয়, তার উপরে এই কৌশল প্রয়োগ করতেই পারো, তাই নয় কি?

পরীক্ষার বিষয়টা খুব মজাদার ছিল একটা সময়ে, এখন কেমন যান্ত্রিক হয়ে গেছে সবকিছু। আমার এখনো মনে পড়ে, একটা সময় পরীক্ষা হতে উৎসবের মতো। সেই দিনগুলোকে খুব মিস করি এখন, বড় হয়ে গিয়েছি বলেই মনে হয়!

.

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন গড়ে তোলো এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রম দিয়ে

পড়ালেখা শেষ করার পরপরই চাকুরির চিন্তা। আর এই চাকুরি পেতে গেলে কিছু বিষয়ে পারদর্শী হতে হয়। আমি দেখেছি, এই প্রজনেস অনেকেই পড়ালেখার পাট চুকানোর পরে চাকুরির সন্ধানে গেলে চরম হতাশাজনক একটা চক্রে পড়ে যায়। চক্রের নাম এক্সপেরিয়েন্স চক্র।

এই চক্রের শুরুটা হয় প্রথম জব এপ্লিকেশনের সময়ে। জবদাতা প্রতিষ্ঠান সবার আগে অভিজ্ঞতা বা এক্সপেরিয়েন্স খোঁজে। কিন্তু সদ্য পড়ালেখা শেষ করা ছেলেটি কী করে বা কোথা থেকে পাবে এত এক্সপেরিয়েন্স? এই প্রশ্নটা থেকেই যায়, আর ঠিক সেই কারণেই চাকরি আর মেলে না।

চক্রের শুরু কিন্তু হয়ে গেছে। ছেলেটিকে চাকরি পেতে হলে তার দরকার হবে এক্সপেরিয়েন্সের, কিন্তু এক্সপেরিয়েন্স পেতে হলে তো তাকে চাকরি পেতে হবে সবার আগে! এ যেন সেই গল্পের ডিম আগে না মুরগি আগে এর মত অবস্থা! অনেকেই এই চক্রের ঘুরপ্যাঁচে আটকে যায়, সহজে আর বের হতে পারেই না!

এমন একটা চক্র থেকে বের হতে চাইলে কী করা দরকার? কীভাবে মেলে মুক্তি? প্রশ্নটা রয়েই যায়। আর এই প্রশ্নের উত্তর হলো ক্লাব, ফোরাম আর অর্গানাইজেশন। পড়ালেখা করার সময় তুমি যদি শুধু পড়ালেখাই করো, অন্যান্য কোনকিছুতে চোখ না দিয়ে, তাহলে দিনশেষে ওই আধা পৃষ্ঠার সিভি আর অভিজ্ঞতার অভাব নিয়েই বসে থাকতে হবে, কারণ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এগুলোর পাশাপাশি ক্লাবগুলোর গুরুত্ব অনেক।

হয়তো তোমার মনে হতে পারে, ক্লাবে গেলে তো শুধু শুধু সময় নষ্ট, সেখানে গিয়ে শেখার আবার কী আছে? মজার ব্যাপার হলো, ক্লাব বা ফোরাম কিংবা কোন সংস্থা থেকে তুমি যতো কিছু শিখতে পারবে, পাঠ্যবইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে তার সিকিভাগ শিখবে কি না, সন্দেহ!

ক্লাব বা কোন অর্গানাইজেশন সবার আগে তোমাকে যেটা শেখাবে সেটা হলো দায়িত্ববোধ। তোমাকে একটা কাজ দেয়া হলে কতোটুকু দায়িত্বের সাথে সেটা করছো তুমি, তার উপর নির্ভর করে তোমার কতোটুকু অভিজ্ঞতা হলো। আবার একসাথে একটা টিমে কাজ করার যে টিমওয়ার্ক, যেকোন জব ইন্টারভিউতে এই দক্ষতাটা খুবই দরকারি। এর পাশাপাশি সৃজনশীলতা, বুদ্ধির ব্যবহার থেকে শুরু করে আরো হাজারো কাজ শিখে নিতে পারো তুমি এগুলো থেকে। পড়ালেখাময় বোরিং জীবনে এইটুকুও যদি না করো, অভিজ্ঞতা আসবে কোত্থেকে?

হ্যাঁ, এটা সত্যি যে তুমি যখনই কোন ক্লাব বা ফোরামে থাকবে, সেখান থেকে তুমি কোন টাকা পাবে না। সেটা কিন্তু মোটেও মুখ্য বিষয় না! এই ক্লাব বা সংস্থার যখন তুমি যাবে, সেখানে তুমি যে স্কিলগুলো পাবে, সেগুলো কিন্তু অন্তত টাকা দিয়ে কেনা যায় না, সেগুলোকে অর্জন করতে হয় নিজের শ্রম দিয়ে। এই লেখাটায় আমি এরকম ৫টি স্কিলের কথা বলবো।

১. অর্গানাইজিং স্কিল :

তুমি একটা ক্লাবে যখন কাজ করবে, তখন সেখানে তোমাকে হরেক রকম ইভেন্ট নামাতে হবে, ভিন্ন ভিন্ন ইভেন্টের জন্যে ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতে হবে। বেশ খাটাখাটুনি হবে তাতে, আর সাথে তোমার অভিজ্ঞতার ঝুলি বাড়তে থাকবে। তুমি কাজ করে একটা ইভেন্ট নামিয়ে ফেলছো, সেটা সফল হচ্ছে, ভাবতেই অসাধারণ লাগছে না? এই অর্গানাজিং স্কিলটা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই বানিয়ে ফেলা, এর থেকে ভালো সুযোগ আর নেই।

২. টিমওয়ার্কিং স্কিল :

তুমি এর আগে হয়তো অনেক কম্পিটিশন জিতেছে, অনেক কাজ করেছে, কিন্তু সেগুলো একা একাই। সবাই মিলে একটা কাজ সফলভাবে করে ফেলার যে একটা ভালো লাগা, সেটা তুমি বুঝতে পারবে কোন ক্লাব বা ফোরামে কাজ করলে। একটা টিমে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা এতো বেশি কাজে লাগবে চাকুরি জীবনে, তোমার কোন ধারণাই নেই! কারণ একটা অফিসে টিমওয়ার্ক ছাড়া কোন কাজ কি চলে?

৩. নেটওয়ার্কিং স্কিল :

একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন ক্লাবে নিয়মিত হলে যে বিষয়টা হয়, প্রচুর মানুষের সাথে খাতির জমে, অনেকের সাথে পরিচয় হয়। এতে নেটওয়ার্কিংটা অনেক বেশি দৃঢ় হয়। এদের মধ্যেই কেউ হয়তো জীবনে অনেক সফল হয়ে বিশাল কিছু করে ফেলবে, আর তুমি হয়তো কোন এক জব ইন্টারভিউতে তাকেই পাবে ইন্টারভিউ বোর্ডের ওপাশে! তাতে আর যাই হোক, তুমি নির্ভয়ে, টেনশন ছাড়াই ইন্টারভিউ দিয়ে আসতে পারছে তাই নয় কি?

৪. লীডারশিপ স্কিল :

বলা হয়, কোন একটা চাকুরিতে উপরে ওঠার সিঁড়ি হচ্ছে নিজের লীডারশিপ স্কিল দেখানো। তোমার অফিসের বস যদি তোমার মধ্যে দায়িত্বশীলতা আর এই লীডারশিপটা দেখতে পারে, তোমার প্রমোশন ঠেকায় কে? আর এই স্কিলটা অর্জন করতে পারবে ক্লাবের মধ্য দিয়েই। একটা ক্লাবের হয়ে তোমাকে ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতে হতে পারে। এই কাজগুলো করতে গিয়ে যদি তুমি শিখে নিতে পারো নেতৃত্ববোধের এই স্কিল, তাহলেই কেল্লাফতে!

৫. কর্পোরেট স্কিল :

আমার চোখে এই স্কিলটা খুব বেশি দরকারি কোন অফিসে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে। বর্তমান যুগ হয়ে যাচ্ছে কর্পোরেট যুগ, সবাই মূলত এই কর্পোরেট স্কিলগুলো দেখে যখন কোন চাকুরি দিতে হয় বা প্রোমোশন দিতে হয়। আর এই কর্পোরেট গ্রুপিংটা হয় কোন অর্গানাইজেশনে কাজ করলে। এই গ্রুপিংটা জীবনের বাদবাকি কর্পোরেট অফিসে সবসময় কাজে দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটাকে বলা যায় জীবনের শ্রেষ্ঠ চার বছর। এই চার বছরে তুমি যদি সারাদিন পড়ালেখা করেই কাটিয়ে দাও, তাহলে কী লাভ? বরং, ক্লাব বা অরগানাইজেশন কিংবা যেকোন ফোরামের হয়ে কাজ করতে থাকলে তুমি কাজ শিখবে, পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আনন্দটাও পেয়ে যাবে!

.

Sunk Cost-কে না বলো, সাফল্যের পথে এগিয়ে চলো!

আমি যখন অনেক ছোট ছিলাম, তখন আমার খুব প্রিয় একটা কাজ ছিল হরলিক্সের বয়ম থেকে হরলিক্স চুরি করে খাওয়া। খুব মজা লাগতো খাবারটা, আর আম্মু খালি খালি হরলিক্স খেতে দিতেন না। তো একদিন হলো কি, গোপনে হরলিক্স চুরি করতে গিয়ে আম্মুর কাছে ধরা খেয়ে গেলাম। আম্মু বেশ ক্ষেপে গেলেন।

না, ক্ষেপে গিয়ে আম্মু অনেকগুলো ঝাড়ি দেন নি। তিনি যেটা করলেন, সেটা আরো আশ্চর্য। তিনি পুরো বয়মটা আমার সামনে এনে বললেন, খা এবার। পুরো বয়মটা আমার সামনে শেষ করবি তুই। রাগের মাথায় তিনি যেটা করলেন, এটার একটা নাম আছে। তার আগে আরেকটা কাহিনী বলি। এটা আমার ভাইয়ের ছোটবেলার গল্প।

আমার ছোটভাই, সাদমান যখন ছোট ছিল, তখন ওর কোকাকোলা খুব প্রিয় ছিল। তো একদিন হলো কি, বাসায় কোকের বোতলে অল্প একটু কোক ছিল। আমরা দুই ভাই দুটো গ্লাসে ভাগ করে নিলাম কোকাকোলা। আমার গ্লাসে ওর থেকে সামান্য একটু বেশি ছিল, সেটা দেখে হুট করেই ও খুব রেগে গেল, বললো তুমিই সব কোক খাও, যাও! বলে সে তার গ্লাসের কোকটাও আমার গ্লাসে ঢেলে দিয়ে চলে গেল। আমার লাভই হলো আখেরে, বেশি কোক পেয়ে গেলাম!

এই দুটো গল্পের মধ্যে একটা মিল আছে। মিলটা হলো, আমার মা এবং সাদমান- দুজনেই Sunk Cost করেছে। এর বাংলা করলে সম্ভবত ডুবে যাওয়া খরচ হবে। এটার মানে হচ্ছে যে খরচটা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে, এবং যার রিটার্ন পাবার কোন সম্ভাবনাই আর নেই।

ধরো, তুমি ব্যুফে খেতে গিয়েছে। সেখানে ৪০০ টাকা দিয়েছে। এখন যেহেতু সেখানে টাকা দিয়েছে, সেই টাকা ফেরত পাবার কোন সম্ভাবনা নেই, সেহেতু ওই টাকাটা তোমার Sunk Cost. এখন বিষয় হলো দিয়েছে, সেজন্যে তুমি পেটপুরে সাধ্যের বাইরে খাবে, খেয়ে শরীরের ক্ষতি করবে, বিষয়টা এমন হলে কী চলে? চলে না।

Sunk cost এর থিওরিটাই এরকম। তুমি কোনকিছুতে অনেক বেকি পরিশ্রম করছো, নিজের শ্রমের অনেকটা দিচ্ছে সেখানে। যা দিয়েছে। সেটা কিন্তু অলরেডি সেই ডুবে যাওয়া খরচ, সেটা আর ফিরে আসবে না। কিন্তু এতে যদি তুমি কোন লাভ খুঁজে না পাও, তাহলে আর সেই পরিশ্রমের জন্যে থেকে যাবার কোন দরকার নেই!

প্রথম গল্পে আমি যে চুরি করে আম্মুর হরলিক্স খেতাম, এটা আমার আম্মুর জন্যে Sunk Cost। কিন্তু আম্মু সেই খরচের কারণে রাগ করে যে আমাকে পুরো বয়মটাই দিয়ে দিলো, তাতে কি লাভ হলো কোন? হলো না। আখেরে সেই খরচটাই বেড়ে গেলো আবার।

দ্বিতীয় গল্পে সাদমানও একই ভুল করে বসলো। এখানে আমার যে সামান্য একটু কোক বেশি ছিল, সেটাই ছিল ওর ডুবে যাওয়া খরচ। এই খরচটুকুর জন্যে ছেলেটা তার পুরো কোকই আমাকে রাগ করে দিয়ে দিলো। এতে লাভটা কার হলো? আমার নিজেরই। সাদমানের এই সিদ্ধান্তটা তাই ভুল ছিলো, বলতেই হয়।

এতকিছু বলার একটাই উদ্দেশ্য, Sunk Cost কে নিয়ে যাতে আমরা না ভাবি। অনেককেই আমি দেখেছি, একই চাকরিতে বা অর্গানাইজেশনে পড়ে আছে শুধুমাত্র কয়েক বছর ধরে সে সেখানে আছে, এই কারণে। এই অনেকদিন ধরে থাকাটাও এক ধরণের Sunk Cost, আর এই খরচের জন্যেই অনেকের আটকে যায় ভবিষ্যৎ!

ডুবে যাওয়া এই যে খরচ, একে আসলে খুব বেশি পাত্তা দেবার কিছু নেই। এমন খরচ থাকবেই, আর তাই এই খরচকে এক পাশে রেখে নিজের যেটা ভালো, সেইদিকে লক্ষ্য রাখলে তবেই না সাফল্য আসবে!

.

ইন্টারভিউয়ের কথকতা

বেশ কিছুদিন আইবিএর জন্যে একটা কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করার কারণে অনেকগুলো মক ইন্টারভিউ বা ছায়া ইন্টারভিউ নেবার সৌভাগ্য হয়েছিল। এরপরে তো টেন মিনিট স্কুল, সেখানকার ইন্টার্ন এবং অন্যান্যদের ইন্টারভিউ নিতে নিতে পুরো বিষয়টা নিয়ে এক ধরণের আইডিয়া হয়ে গেছে। আমার এই লেখার উদ্দেশ্য অবশ্য কীভাবে ইন্টারভিউ নিতে হয় সেটি নিয়ে নয়, আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পাঠকদের ইন্টারভিউ বোর্ডে কীভাবে সহজভাবে সুন্দর ভাষায় কথা বলা যায় তা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করা :

১. নিজেকে জানো

প্রায় সব ইন্টারভিউ বোর্ডেই এই প্রশ্নটা সাধারণ থাকে- Introduce Yourself. মজার ব্যাপার হলো অতি কমন এই প্রশ্নে অনেকেই ঘাবড়ে যায়, নিজেকে ঠিক কীভাবে প্রকাশ করবে সেটাই বুঝে উঠতে পারে না। ফলাফলে তাঁদের ইন্টারভিউটা ওই শুরুতেই শেষ হয়ে যায়। মূলত একটা ইন্টারভিউয়ের শুরুর এক মিনিট বা তারচেয়েও একটু কম সময় পাবে তুমি। এই সময়ে নিজেকে যতটুকু ফুটিয়ে তোলা যায়, এ সময়ে নিজেকে যেভাবে দেখাতে পারো তুমি, বোডের ওপাশের মানুষটি ততোটাই ইমপ্রেসড হবেন।

নিজেকে নিয়ে বলার ক্ষেত্রে যদি তুমি এভাবে শুরু করো, যে তোমার নাম অমুক, তোমার বাবার নাম তমুক, তুমি ওই স্কুল ওই কলেজে পড়েছো, তোমরা কয় ভাই বোন- তাহলে কিন্তু সেটা আর নিজের পরিচয় না, পরিবারের পরিচয় হয়ে গেল! এবার হয়তো তোমার মনে খটকা লাগছে, তাহলে কী বলবো? কীভাবে পরিচয় হবে আমার?

তুমি তোমার নিজের বিষয়গুলো বলবে। তোমার শখ কী, কীসে কীসে পারদর্শী তুমি, প্রফেশনাল স্কিল কী কী আছে তোমার, কো কারিকুলার কোন কাজগুলোতে তুমি সেরা, তোমার স্বপ্ন কী- এসব নিয়ে বলতে পারো। পাশাপাশি যদি একটু নিজের টার্গেটটা ফোকাস করে সেটা নিয়েও বলতে পারো, তাহলে তো সোনায় সোহাগা!

২. সম্মান দেখাও, কিন্তু মাটিতে মিশে যেও না

ভাইভা নিতে গিয়ে আমি প্রায়ই খুব ইন্টারেস্টিং কিছু মানুষকে দেখেছি। এদেরই একজন একদিন এসে বললো, ভাইয়া কাল আমার মক ভাইভা, একটু সাজেশন দেন কীভাবে কী করবো। আমি তো স্বভাবতই বলে দিলাম যে সোজা হয়ে সুন্দর করে কথা বলবা, স্মার্টলি থাকবা। পরদিন।

সেই ছেলেকে ডাকা হলো। ছেলে দেখি একেবারে ঠায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বসতে বললাম, সে বসে না! প্রশ্ন করলাম আমরা তিনজন, সে সব প্রশ্নের উত্তর একদিনে তাকিয়ে দিলো, এক চুল পর্যন্ত নড়লো না! বিষয়টা অদ্ভুত, আমি তাই তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম কেন সে এইরকম করছে। সে মাথাটা একেবারে উটপাখির মতো নিচু করে ফেলে একটা উত্তর দিলো।

উত্তরটা আরো উদ্ভট। তার ভাষ্য, এতে সে সম্মান দেখিয়েছে মাননীয় ইন্টারভিউয়ারদেরকে!

আরেকজনকে পেলাম, সে আবার আমার পাবলিক স্পিকিং শুনে বেশ অনুপ্রাণিত হয়েছে। সে ইন্টারভিউ বোর্ডে আসলো, এবং তারপরে দেখা গেল যে আমার প্রিয় ছাত্র হাত পা নাড়িয়ে বিচিত্রভাবে উত্তর দিচ্ছে। প্রশ্ন করলাম, তোমার স্বপ্ন কী? সে উত্তর দিলো, চমকার প্রশ্ন করেছেন স্যার, এর উত্তর রেডি আছে আমার কাছে!

এভাবে যদি কেউ ইন্টারভিউ দেয়, তাহলে বুঝতেই পারছো, ফলাফল কী হতে পারে! খেয়াল করে দেখবে, এরকম ছোট ছোট ভুলের কারণেই কিন্তু তোমার চাকরি বা অ্যাডমিশন রসাতলে চলে যেতে পারে, হতাশ হয়ে যেতে পারো তুমি!

৩. বডি ল্যাংগুয়েজকে কাজে লাগাও

একটা ইন্টারভিউ বোর্ড তোমাকে কথাবার্তা ছাড়াও, বাহ্যিক অবয়ব বুঝে জাজ করে ফেলতে ঠিক কতোটুকু সময় লাগে জানো? ৭ সেকেন্ড। হ্যাঁ, তমি কোন কথা বলার আগেই, রুমে ঢুকে চেয়ারে বসা পর্যন্ত যে সময়টা যায়, সেখানেই তোমার অনেক কিছুই বুঝে নিতে পারে বোডেব্র মানুষেরা। ঠিক এই কারণেই দুটো জিনিস খুব দরকার ইন্টারভিউতে গেলে। একটা হচ্ছে ঠিকঠাক গেটআপে যাওয়া। ধরো, ইন্টারভিউতে যদি তুমি নোংরা একটা শার্ট পরে যাও, সেটা যদি ইস্ত্রি না করা থাকে, জুতার বদলে যদি স্যান্ডেল পরে যাও–এগুলো অবশ্যই চোখে পড়বে বোড়ের মানুষদের। তারা খুব সুক্ষভাবে তোমাকে জাজ করে বসবে, আর সেখানে তোমার কিছুই করার থাকবে না!

আরেকটা বিষয় হচ্ছে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ। তুমি কীভাবে দাঁড়িয়ে কথা বলছো, কীভাবে হাটছো, প্রশ্নের উত্তর দেবার সময় তোমার ভাবভঙ্গি কেমন কিংবা প্রশ্নগুলো তুমি হাত পা নাড়িয়ে দিচ্ছো, আত্মবিশ্বাসের সাথে দিচ্ছে কি না এসবই কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ডে দেখা হয়। আর ঠিক এজন্যেই বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এত দরকারি একটা বিষয়!

ইন্টারভিউ বোর্ড খুবই অদ্ভুত একটা জায়গা। তুমি নিজের মতো করে সব প্রশ্নের উত্তর দিলে তোমাকে রোখার সাধ্যি নেই কারো। কিন্তু এই যে, আজকের লেখাটার মত কমন কিছু বিষয় খেয়াল রাখতেই হবে। তবেই না তুমি পারবে সেরা একটা ইন্টারভিউ দিতে!

.

এখনই লিখে ফেলো তোমার সিভি!

আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটা সমস্যা খুব প্রকট। এই সমস্যাটা অনেকদিন থেকেই হয়ে আসছে, আর এর কোন প্রতিকারও দেখি নি। এখনো। সমস্যাটা হলো, আমাদের প্রজন্ম মনে করে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে সিভি লেখার কোন দরকার নেই, পড়ালেখার পাট চুকিয়ে, চাকুরির সন্ধান করার সময়ে সিভি লিখলেই তো চলে!

এই ধারণাটা যে কতোটা ভুল, সেটা একটা গল্প দিয়ে বলা যায়।

গল্পটা এমন, ধরা যাক রাশিক আলম নামের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে নিয়ে এই গল্প। ছেলেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, তার বিষয়টা নিয়ে বেশ একটা গর্ববোধ কাজ করে। আশেপাশের কিছু বন্ধুদের যখন যে দেখে ক্লাবিং করে বেড়াতে, কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করতে, সে তখন ভাবে-কী দরকার? পড়ালেখা শেষ করেই এসব করা যাবে খন! রাশিকের বন্ধুবান্ধবরা সিভি বানিয়ে ফেলে, আর সে তার ওই ধারণায় পড়ে থাকে–সিভি থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজকর্ম সে করে ফেলবে পড়ালেখা শেষ করে। এক্সট্রা কারিকুলার কোনকিছুতেও সে নেই, সে শুধু নাকমুখ গুঁজে পড়ালেখা করে, ওইটুকুই।

যাহোক, একটা সময়ে পড়ালেখা শেষ হয় তার। সে শুরু করে চাকরি খোঁজা, সিভি বানানোর কাজটাও শুরু করে ফেলে সে। সিভি বানাতে গিয়ে সে অবাক হয়ে আবিষ্কার করে, তার সিভিটা আসলে আধা পৃষ্ঠাতেই আটকা পড়ে গেছে। সে চেষ্টা করে ফন্ট সাইজ বাড়িয়ে একটু বড় করতে, তাতে হয়তো টেনেটুনে এক পৃষ্ঠার একটা সিভি হয়, কিন্তু সেটা মোটেও খুব ভালো কিছু হয় না।

রাশিক একটা সময়ে গিয়ে খেয়াল করে, যে সব সিভিতেই এচিভমেন্ট, এক্সটা কারিকুলার এক্টিভিটিজ আর জব এক্সপেরিয়েন্সের কথা লেখা আছে। কিন্তু সে তো এগুলোর কোনটাই করে নি! তাহলে তার সিভি কী করে ভালো হবে? ১২৪

সত্যি বলতে কী, তার সিভি এখন আর ভালো করার কোন সুযোগ নেই। তবে, এই লেখাটা যারা পড়ছো, তোমাদের খুব ভালোভাবেই এই সুযোগটা রয়েছে, আর সেটা হেলায় হারানো মোটেও উচিত না। একটা কাজ এখানে করা খুব কার্যকর হবে।

তুমি যদি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া হয়ে থাকো, তাহলে প্রথম বর্ষেই সিভি বানিয়ে প্রতি সেমিস্টারে নতুন করে সিভিটাকে আপডেট করতে থাকো। যদি এক সেমিস্টারে সিভিতে নতুন কিছুই যোগ না হয়, তাহলে সেটা তোমার জন্যে একটা অশনি সংকেত, যে ওই সেমিস্টারে তুমি করার মতো কিছুই করো নাই! নিজের সিভির দিকে তাকালেই বুঝে ফেলতে পারবে পুরো সেমিস্টারে তুমি কী কী করেছো আসলে!

সিভি লেখার সময় খুব কমন কিছু ভুল করে এই প্রজন্ম, সেগুলো নিয়েও একটু বলা দরকার :

১. প্রথম ভুল

সিভিতে যে ছবিটা দাও তোমরা, তাতে দুই ধরণের ভুল থাকে। প্রথমত, সিভি হতে হয় ফরমাল ছবির। এখন তুমি যদি সিভির ছবিতে নিজের গোয়ালঘরের পাশে সানগ্লাস পরা ছবিটা দাও, সেক্ষেত্রে সেটা তো আর নেয়া যাবে না! আরেকটা সমস্যা হচ্ছে পুরনো ছবি দেয়া। হ্যাঁ, এটা হতে পারে যে তোমার সম্প্রতি কোন পুরনো ছবি দেয়া হয় নাই। তার মানে কিন্তু এটা না যে তুমি এমন একটা ছবি দিবা যেটা দেখে তোমার সাথে মিলের চেয়ে অমিল বেশি পাওয়া যাবে! তাই ছবি দিতে হবে ফর্মাল, ছবি হতে হবে সাম্প্রতিক, যেখানে তোমাকে চেনা যাবে।

২. দ্বিতীয় ভুল

এখনো অনেক সিভিতে মেইল এড্রেসে দেখা যায় [email protected] কিংবা [email protected] এরকম ছেলেখেলার মতো করে যদি সিভি দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে ওই সিভিটা সিলেক্ট হবার সম্ভাবনা যে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর, সেটা তো বুঝতেই পারছো! ইমেইল আইডিতে যাবে নিজের নাম। সেখানে এসব উদ্ভট নাম দিলে আসলেই সম্ভাবনাটা আর থাকে না। ঠিক এই কারণেই ইমেইল আইডির নামটা ঠিকঠাক উপায়ে লিখতে হয়। কঠিন কোন কাজ তো আর না, নিজের ইমেইল আইডিতে নিজের নামটাই লিখে দিলে সমস্যা হবার তো কথা না!

৩. তৃতীয় ভুল

সিভিতে তুমি একাডেমিক ক্যারিয়ার যখন দেবে, তখন সেটা অবশ্যই হতে হবে সাম্প্রতিক থেকে পুরনো। শুরুতেই যদি এসএসসি দিয়ে রাখো, সেটা তাহলে আর সিভির ফরম্যাট হলো না। এই বিষয়টা তোমাদের কাছে হয়তো নতুন, কিন্তু শেখার জন্যে মহা দরকারি। একাডেমিক ক্যারিয়ারের শুরুতেই থাকবে তুমি এখন কীসে পড়ছো, সেটা। তারপরে তার আগের একাডেমিক ডিগ্রি, তারপরে তারও আগেরটা। এভাবেই উলটো করে চলবে সিভির একাডেমিক সিরিয়াল।

তাহলে আর দেরি কেন? নিজের একটা সুখী আর সুন্দর ক্যারিয়ার গড়তে এখনই বসে যাও সিভি বানাতে! ভালো একটা সিভিকে না করার সাধ্যি আছে কার?

.

ফেসবুকের সঠিক ব্যবহার করে হয়ে ওঠো আদর্শ নাগরিক!

ফেসবুক ব্যবহার করে না, বাঙ্গালি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই সংখ্যাটা দিনকে দিন এত অস্বাভাবিক হারে কমে আসছে যে কিছুদিন পর হয়তো আঙ্গুলের কর গুনে বলে দেয়া যাবে ফেসবুকে এখনো কোন তরুণ আসক্ত হয় নি! ফেসবুক অনেকদিন ধরেই আর নিছক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়, একে এখন বলা চলে ভার্চুয়াল একটা জগত, নীল সে জগতে বাস করছে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। এই ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাকে কেবলমাত্র বিনোদনের কাজে না লাগিয়ে একটু চেষ্টা করলেই কিন্তু আমরা ফেসবুককে বানিয়ে ফেলতে পারি কার্যকর একটা জায়গা, যেখান থেকে সহায়তা পাওয়া যাবে চাইলেই! আজ বলবো এরকম কিছু উদ্যোগের কথা।

১. ফেসবুক সাংবাদিকতা

ফেসবুকের সাংবাদিক হবার সবথেকে ভালো বিষয়টা হচ্ছে যে তোমাকে কোন সাংবাদিকতায় ডিগ্রি নিতে হয় না। তোমার স্ট্যাটাস বারই হচ্ছে তোমার সংবাদ, ফেসবুকের নিউজ ফীড হলো সেই সংবাদপত্র। চারপাশে কিন্তু প্রচুর অসঙ্গতি দেখো তুমি। দেখারই কথা। হয়তো এগুলো দেখে হতাশ হয়ে চলে যাও তুমি। কিন্তু চাইলেই তুমি এর প্রতিবাদ করতে পারো, চাইতেই পারো একটা সুন্দর পৃথিবীর। যেটা করতে হবে, সেটা হলো এই ফেসবুককে কাজে লাগিয়ে শুরু করে দাও প্রতিবাদ!

তোমার এলাকায় ডাস্টবিন নেই, সেটা লিখে শেয়ার করে সবাইকে, সবার প্রতিবাদে একসময় ডাস্টবিন আসবেই! ইভ টিজারদের বড় উৎপাত? ছবি আর ভিডিও করে শেয়ার করে দাও, পুলিশকে জানাও। ইভ টিজিং বন্ধ হতে বাধ্য হবে! ফেসবুককে এভাবে কাজে লাগালে জীবন হবে আরো সুন্দর।

২. রক্তদান হোক আরো সহজ

প্রায়ই রক্ত দেবার জন্যে বিভিন্ন রক্তদাতা সংগঠন থেকে পোস্ট আসে। এই পোস্টগুলোয় কেউ সাড়া দিতে দিতে হয়তো রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়! তুমি যদি নিজের ফেসবুকের ছোট্ট যে বায়ো অংশটা আছে, সেখানে তোমার পরিচয়ের পাশাপাশি নিজের রক্তের গ্রুপটাও দিয়ে দাও, তাহলে কিন্তু সবার জন্যেই অনেক সহজ হবে পুরো বিষয়টা! ভেবে দেখো, তোমার একটা বায়োতে ছোট্ট করে গ্রুপ লেখার কারণে হয়তো তুমি রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচাতে পারছো!

৩. সামাজিক ইস্যুতে ফেসবুক

ফেসবুককে এখন বলা যায় মানুষের মত প্রকাশের সবথেকে কার্যকর উপায়গুলোর একটা। ফেসবুকে যেভাবে তুমি সমাজের নানা বিষয় নিয়ে বলতে পারো, সামনাসামনিও হয়তো তেমনটা হয় না। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে কিন্তু গণসচেতনতা গড়ে তুলতেই পারো তুমি। শাহবাগ চত্বরের সেই আন্দোলনের শুরুটাও কিন্তু ছিল একটা ফেসবুক পোস্ট থেকেই। আর তাই উদ্ভট অপ্রয়োজনীয় ইভেন্ট না খুলে দরকারি ইভেন্টের মাধ্যমে তুমিও গণজাগরনের শুরুটা করতে পারো!

৪. ফেসবুক শপকে কাজে লাগাও

খেয়াল করেছে হয়তো, ফেসবুকে শপ নামে একটা চমৎকার অপশন রয়েছে। এই শপকে ব্যবহার করে কিন্তু অনলাইনে শপিং করতে পারো তুমি, কিছু বিক্রি করতে চাইলে ফেসবুকও কিন্তু দারুণ একটা মাধ্যম! ধরো তোমার একটা জার্সির দোকান আছে। তুমি যদি ফেসবুকে এই জার্সিগুলোকে শপে রাখো, তাহলে নির্দ্বিধায় তোমার দোকানের বিক্রি বাড়বে, জনপ্রিয়তাও বেড়ে যাবে!

৫. গ্রুপ চ্যাটকে বানিয়ে ফেলো শেখার মাধ্যম

আমরা সবাই কোন না কোন ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপ চ্যাটে আছি। হোক সেটা বন্ধুদের গ্রুপ চ্যাট, হোক সেটা ডিপার্টমেন্টের কোন ক্লাবের গ্রুপ চ্যাট, কিংবা ছোটবেলার বন্ধুদের গ্রুপ চ্যাট। সেখানে আমরা সারাদিনই বিভিন্ন বিচিত্র বিষয় নিয়ে বকবক করতেই থাকি। এই গ্রুপ চ্যাটটাকে কিন্তু কোনকিছু শেখার জন্যে দারুণ কাজে লাগানো যায়!

ধরো তুমি ইংরেজি শিখতে চাও। এই গ্রুপ চ্যাটে যদি বন্ধুদের সাথে ইংরেজিতে কথা বলতে থাকো, তাহলে তাঁদের যেমন ইংরেজির প্র্যাকটিস হবে, তুমিও কিন্তু এই বিদেশী ভাষাটায় পারদর্শী হয়ে উঠবে! এছাড়া আরেকটা উপকার আছে এখানে। ধরো তোমার ইংরেজি দুর্বল। এমনিতে এই ভাষা প্র্যাকটিস করতে তাই লজ্জা লাগবে তোমাদের। কিন্তু বন্ধুদের মধ্যেই যদি কথা বলল, তাহলে আর লজ্জা কিসের?

ফেসবুক এখন আর কেবল বিনোদনের জায়গা নয়। আর এই ভার্চুয়াল জগতকে নিয়ে কাজ করে আদর্শ নাগরিক হতে পারলে অসাধারণ লাগবে না তোমার?

.

সময় নষ্টের মূলে যে ৮টি কারণ

আমাদের জীবনে সময় খুবই মূল্যবান। বিশেষত, ব্যস্ততার এই গল্প নষ্ট করার কোন মানেই হয় না। তবুও প্রতিনিয়ত সময়ের একটা অew হয়। আমরা এমন কিছু কাজে আমাদের মূল্যবান সময় দেই যোগ আদতে কোন কাজেই আসে না! এই সময় নষ্ট করার জন্যে বলা যায় সে ৮টা কাজ বেশি দায়ী। মজার ব্যাপার হলো, এগুলোর অনেকগুলোই আমরা প্রতিনিয়ত করে আসছি, এবং তাতে কোন সমস্যাও নেই। সমস্যা তখনই যখন দরকারি কাজ ফেলে আমরা এসবের পেছনে সময় নষ্ট করে যাই।

১. ড্রাগস

এটাকে শুধু সময় নষ্টকারী কাজ বলা যায় না। এটা একইসাথে জীবন ধ্বংসকারীও বটে। আমি গত এক বছরে বাংলাদেশের প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ঘুরে এসেছি, শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি, এবং এতে একটা ভয়ংকর সত্যির দেখা মিলেছে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচুর শিক্ষার্থী এই ডাগস এর নেশায় আসক্ত হচ্ছে দিনকে দিন।

হতাশা, ডিপ্রেশনসহ নানা কারণে যেখানে নতুন কোন কাজ করে মনটাকে চাঙ্গা রাখা যেতো, সেখানে এই শিক্ষার্থীরা বেছে নিচ্ছে ডাগসের অন্ধকার রাস্তা। আর এর ফলাফল হচ্ছে ভয়াবহ। নিজের ক্যারিয়ার তো বটেই, জীবন নিয়ে টানাটানি পড়ে যায় অনেক সময় এই ডাগসের কারণে।

তোমরা যারা এই লেখাটা পড়ছো, তোমাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, চেষ্টা করো ডাগস থেকে যতদূর সম্ভব দূরে থাকার। আর তোমার কাছের মানুষগুলোকে, তোমার বন্ধুদের এই ভয়াল ডাগসের ছোবল থেকে দুরে রাখার চেষ্টাটাও চালিয়ে যাও। ডাগস মুক্ত তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশকে নতুন ভোর এনে দেবে, এই স্বপ্নটা কিন্তু সবারই!

২. টিভি

না, টিভি দেখাকে মোটেও আমি ড্রগসের সাথে তুলনা করছি না। আমাদের জীবনে বিনোদনের দরকার আছে, আর টিভি একটা সুস্থ বিনোদন মাধ্যম, তাই টিভি থেকে বিনোদন নেবার পাশাপাশি শেখাও যায় অনেক কিছু।

সমস্যাটা হয় তখনই, যখন এই টিভি দেখাটা হয়ে পড়ে নিয়ন্ত্রণহীন। ফানি বাংলা নাটক দেখে দিন পার করে দেয়া, কিংবা নুডলস দিয়ে মুরগির রোস্ট বানানোর অনুষ্ঠানের পেছনে বড় একটা সময় লাগালে সেটা হতে পারে তোমার ক্যারিয়ারের জন্যে ক্ষতিকর।

টিভি দেখা নিয়ে কোন সমস্যা নেই, কিন্তু সেটাকেও রাখতে হবে কন্ট্রোলে। ছোটবেলায় মনে আছে? আব্বু আম্মু বলতো যে দুই ঘন্টা পড়লে আধা ঘন্টা টিভি দেখতে দেয়া হবে? সেটাও দিনে একবার মাত্র? এই অভ্যাসটা ধরে রাখার চেষ্টা করো। তাহলেই সময় নষ্ট আর হবে না।

৩. গসিপ

দোস্ত, জানিস? ওই মেয়েটার না এক মাসেই ব্রেক আপ হয়ে গেছে!

এই শোন, আবুলের ভাই হাবুল কিন্তু তোর ক্রাশের সাথে লাইন মারে!

সেদিন তোর গার্লফ্রেন্ডকে দেখলাম আরেকজনের সাথে রিক্সায়, কাহিনী কী? নিজের প্রেমিকাকে সামলাতে পারিস না?

এই কথাগুলো বলতে অনেকেই অনেক মজা পায়। গসিপ করা, কুকথা কানকথা ছড়ানো, এসব করতে অনেকেরই বেশ ভালো লাগে। সমস্যা হলো যে, এই আবুলের ভাই হাবুলের খোঁজ নিতে যে সময়টা নষ্ট হলো, এই সময়টা পড়াশোনায় বা কোন রিসার্চে দিলে অনেক কাজে লাগতো। কিন্তু, অকারণে এসব গসিপে সময় নষ্টের কারণে সেটা আর হলো কই?

বিষয়টা হলো যে, এসব গসিপ করে আদতে তোমার নিজের কোন লাভ হয় না। বরং অনেকের বিশ্বাসভঙ্গের কারণ হও তুমি, নষ্ট হয় তোমার সময়। তাই আজ থেকেই প্রতিজ্ঞা করো, এসব গসিপের কথা ছুঁড়ে ফেলে দেবে তুমি। এই সময়টা লাগাবে নিজের উপকারে, অন্যের অপকার খুঁজে নয়!

৪. ফেসবুক

এখানে তোমার একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ফেসবুক এমন একটা জায়গা, যেখানে তুমি চাইলে সারাদিন কাটিয়ে দিতে পারো অন্যের প্রোফাইলে লাইক শেয়ার কমেন্ট করে বা কারো সাথে চ্যাটিং করে। আবার এখানেই তুমি এরকম কার্যকর কোন লেখা পড়তে পারো, চাইলেই বিভিন্ন দরকারি ইভেন্টে মানুষের কাজে আসতে পারো।

এজন্যে ফেসবুকের পেছনে যেটুকু সময় তুমি দাও, চেষ্টা করবে সেটি যেন তোমার কাজে লাগে। এঞ্জেল তামান্নাকে হাই দিয়ে চ্যাট শুরু করে সময় নষ্ট না করে, ফেসবুককে কাজে লাগাও। তাহলেই দেখবে তোমার সময় আর নষ্ট হচ্ছে না।

৫. ইউটিউব

কিন্তু ইউটিউবে তো টেন মিনিট স্কুলের ভিডিও দেখি, সেটাও কী সময় নষ্টের কারণ?

এমন প্রশ্ন যদি মাথায় চলে আসে, তাহলে এটা জেনে রাখো, যে ফেসবুকের মতো ইউটিউবও এমন একটা জায়গা, যেখানে তুমি রাতদিন কাটিয়ে দিতে পারো ফানি ক্যাট ভিডিও বা ট্রেন্ডিং ভিডিওগুলো দেখে। আবার, এখানেই তুমি চাইলে বিশ্বের যেকোন বিষয় নিয়ে ক্লাস দেখতে পারো, শিখে নিতে পারো অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের খুঁটিনাটি।

তাই ইউটিউবকে আমি বলবো না সময় নষ্টের কাজ, কিন্তু অযথা র‍্যান্ডম ভিডিও, যেগুলো তোমার কোন কাজেই আসছে না- এমন ভিডিও দেখে সময় নষ্ট করো না। সেসব ভিডিওই দেখো, যেগুলো তোমার কাজে দেবে। হ্যাঁ, বিনোদনের ভিডিওর দরকার আছে। কিন্তু তোমার মূল্যবান সময়ের সবটাই ফানি ভিডিওর পেছনে ব্যয় করো না।

৬. আড্ডাবাজি

বন্ধু ছাড়া জীবন অচল, বন্ধুদের সাথে বসে চিল না করলে ভালোই লাগে না- এরকম মনে হয় অনেকেরই। সত্যি কথা বলতে কি, বন্ধুদের সাথে ঘোরাফেরায় যে বিনোদনটা হয়, সেটা অনেক কাজে দেয়। কিন্তু এই আড্ডাবাজি যদি তোমার দিনের সিংহভাগ সময় নিয়ে নেয়, তাহলে সেটা হবে সময় নষ্টকারী কাজগুলোর অন্যতম।

বন্ধুদের সময় দিতে হবে, সেটা তোমার জন্যে দরকারি। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবেই, যে দিনের কাজগুলোও যেন ঠিকভাবে হয়, আড্ডা মারা বা চিল করতে গিয়ে যেন তোমার দরকারি কাজগুলো পড়ে না থাকে।

৭. গেমস

কম্পিউটার গেমস বলল, বা মোবাইল গেমস- এগুলো যদি তোমার নেশায় পরিণত হয়, এগুলোর কারণে যদি তোমার দৈনন্দিন কাজ আটকে যায়, তাহলে এগুলোকে অবশ্যই সময় নষ্ট করে এমন কাজের লিস্টে রাখা দরকার। হ্যাঁ, গেমস খেললে অনেকসময় মাথা পরিষ্কার হয়, তোমার কাজকর্মে দ্রুতো আসে। কিন্তু এই গেমসই যদি তোমার জীবনে নেশার আরেক নাম হয়ে পড়ে, তাহলে এগুলো খেলা কমিয়ে দেয়া উচিৎ।

৮. টিভি সিরিজ

টিভি সিরিজ দেখা বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে খুব বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। গেম অফ থ্রোনস, ব্রেকিং ব্যাড, পার্সন অফ ইন্টারেস্ট- বাহারি নামের চমৎকার এই সিরিজগুলো একবার শুরু করলে আর শেষ করতে ইচ্ছা করে না। এক একটা এপিসোডের পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেগুলো নিয়ে দীর্ঘ আলাপ আলোচনা তো আছেই!

টিভি সিরিজ আমারও খারাপ লাগে না, সময় পেলে, একটু বিনোদনের দরকার হলে আমিও চোখ বুলাই টিভি সিরিজে। বুদ্ধি প্রখর হয়, মনের শান্তিও আসে। কিন্তু ওই যে, সময় পেলে, হাতে কাজ না থাকলে তখনই। সব কাজ ফেলে যদি টানা টিভি সিরিজ দেখতে বসে যাও, আর তার রেশ যদি সারাদিন থাকে, তাহলে টিভি সিরিজ দেখা কমিয়ে ফেলা উচিৎ তোমার। মনে রাখবে, আগে দরকারি কাজ, তারপরে বিনোদন। এর উল্টোটা যেন না হয়!

আমার এই লেখাটার উদ্দেশ্য কিন্তু মোটেও তোমাদের আদর্শ অভিভাবক হয়ে জ্ঞানী জ্ঞানী কথা শোনানো নয়! তরুণ প্রজন্মের একজন হিসেবে আমি জানি, আমাদের জীবনে বিনোদনের কতোটা দরকার। আমার কথা একটাই, আর সেটা হলো তুমি বিনোদন নাও, কিন্তু সেটা যেন মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়। পড়ালেখা ও দৈনন্দিন দরকারি কাজের সাথে মিলে মিশে যদি বিনোদনও নিয়ে নিতে পারো, তবেই না তুমি সুখী সফল মানুষ হবে! .

.

সময় ব্যবস্থাপনার ৫টি কার্যকর কৌশল

ডিজিটাল এই যুগে আমাদের মধ্যে যে সমস্যাটা দেখা যায়, সেটা হলো যে আমরা ফেসবুক-ইউটিউব-স্ন্যাপচ্যাট এবং এরকম সব সাইটের ভীড়ে কাজের সময়টা ঠিক করে উঠতে পারি না। একবার ভেবে দেখো তো, ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকের নিউজ ফীডে যে সময়টা নষ্ট হয়, সেটা অন্য কাজে লাগালে কিন্তু বিশাল কোন কিছু হয়ে যেতে পারতো!

ডিজিটাল যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলাটা দরকার, যেহেতু যুগটাই এমন। কিন্তু সেজন্যে নিজের ক্রিয়েটিভিটি খোয়ালে তো আর চলবে না! আর ঠিক এই কারণটার জন্যেই শিখে নিতে হবে কিছু টাইম ম্যানেজমেন্ট বা সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল। না, এগুলো খুব কঠিন নয়, বরং প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এটা এখন সহজ থেকে সহজতর কাজগুলোর একটা! আজ বলবো এরকমই ৫টি কৌশলের কথা, যেগুলো কাজে লাগালে কার্যকরী ডিজিটাল লাইফ চালাতে পারবো আমরা সবাই।

১. মেসেঞ্জারের নোটিফিকেশন অফ রাখা

বন্ধুবান্ধবের তো কমতি নেই আমাদের। আর যতো বেশি বন্ধু, ততো বেশি নোটিফিকেশন। মেসেঞ্জারে রাতভর চ্যাট, আর তার ফাঁকে ফাঁকে একটু আধটু কাজ, যেগুলোকে নামমাত্রই ধরা যায়। মেসেঞ্জারের গ্রপগুলোয় তো সবসময় কেউ না কেউ কথা বলতেই থাকে!

এতে যেটা হয়, দরকারি কোন কাজ করার সময় ব্যাপক একটা বাধার সৃষ্টি করে এই মেসেঞ্জারের কথাগুলো। ধরো তোমার সামনে পরীক্ষা, তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা করছো। হুট করে চোখ পড়লো কোন এক বন্ধুর মেসেজে, তুমি গল্প শুরু করলে। গোল্লায় গেল পরীক্ষা, এক ঘন্টা পর তুমি নিজেকে ওই মেসেঞ্জারেই আবিষ্কার করবে!

এইজন্যে খুব কাজের একটা উপায় হচ্ছে নোটিফিকেশন অফ করে রাখা। দরকারি কেউ হলে সে মেসেজ দিয়ে চলে যাবে, সেটা তুমি পরে ফাঁকা সময় দেখে নিতেই পারো। কিন্তু অযথা কাজের সময় যাতে মনোযোগ না চলে যায়, সেজন্যে নোটিফিকেশন অফ রাখা হচ্ছে সেরা সিদ্ধান্ত।

২. দিন শুরু করার আগে দিনের কাজের একটা লিস্ট বানাও

প্রতিদিনে হরেক রকম কাজ থাকে আমাদের। কীভাবে শুরু করবো, কোনটা আগে করবো, কী কী কাজ করবো সবকিছু কিন্তু মনে থাকে না আমাদের। এগুলো মনে না থাকার কারণে হুট করে রাতের বেলায় মনে হয়, আরে! সকালে তো ওই কাজটা করার কথা ছিল!

এই সমস্যার একটা চমৎকার সমাধান আছে, যেটা একই সাথে ডিজিটাল সময় ব্যবস্থাপনার কাজেও লাগে। তুমি যদি কম্পিউটারে বেশি থাকো, তাহলে সেখান থেকে স্টিকি নোটে লিখে রাখতে পারো দিনের কাজগুলো কি কি। আবার তুমি যদি বেশি ব্যস্ত থাকো মোবাইল ফোনে, সেখানেও টু-ডু লিস্টে দিনের সবগুলো কাজ আগের দিন রাতেই কিন্তু লিখে রাখতে পারো তুমি!

৩. মোবাইলের ওয়ালপেপার হতে পারে কাজের লিস্ট

আচ্ছা, তোমার মোবাইলে সবথেকে বেশি কোন জিনিসটা দেখো তুমি? মেসেঞ্জার, ইউটিউব বা গেমসের নাম মাথায় আসলেও, এর উত্তর হচ্ছে ওয়ালপেপার। ফোন অন করলেই ওয়ালপেপারের রাজত্ব শুরু! তো এই ওয়ালপেপারকে মহা কাজে লাগানো যায় তোমার সময় বাঁচাতে। কীভাবে? নিজের দিনের কাজগুলো, বিভিন্ন টিপস আর ট্রিকসগুলো লিখে রাখতে পারি আমরা ওয়ালপেপার হিসেবে। তাতে যেটা হবে, তুমি ফোন খোলামাত্রই চোখে পড়বে দরকারি কাজগুলো, আর তাই সেগুলো শেষ করতে উদগ্রীব হবে তুমিও!

৪. ক্যালেন্ডারকে সহায়ক বানাও

নিজের কাজের হিসাব রাখার জন্যে ক্যালেন্ডার অসাধারণ কাজের একটা জিনিস। একবার ভাবো তো, তুমি কোন একজনের সাথে একটা মিটিং সেট করে রেখেছো দুই সপ্তাহ পরে। তোমাদের কথা হয়েছে, কিন্তু এই দুই সপ্তাহে যে তুমি মিটিংটা পুরোপুরি ভুলে যাবে, সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। এজন্যেই আছে ক্যালেন্ডার।

তোমার সব প্ল্যান, সব আইডিয়া রেখে দিতে পারো ওই ক্যালেন্ডারেই। সেখান থেকে দৈনিক একবার করে যদি চেক করো, তাহলে দেখবে সবকিছু সুন্দর করে সাজানো আছে সেখানেই। বাকি কাজ একেবারেই তোমার!

৫. প্রোডাক্টিভিটি অ্যাপের প্রোডাক্টিভ ব্যবহার

প্রোডাক্টিভিট অ্যাপগুলো সবথেকে ভালো ব্যবহার করা যায় টাইম ম্যানেজমেন্টে। আমার পছন্দের একটা অ্যাপ হচ্ছে Wunderlist. এছাড়া গুগল ক্যালেন্ডারও অনেক কাজে লাগে এই ক্ষেত্রে।

প্রশ্ন আসতে পারে, এই অ্যাপগুলো দিয়ে কী হবে? উত্তরও রয়েছে, এই অ্যাপগুলো তোমাকে তোমার বিভিন্ন কাজ বা টাস্কের হিসাব রাখতে আর আপডেট দিতে সাহায্য করে। একটা ডিটেইলড প্ল্যান রাখতে ও বানাতে এই অ্যাপগুলোর জুড়ি নেই!

প্রযুক্তির এই বিশ্ব দিনকে দিন দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে। এই বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে তোমাকে অবশ্যই টাইম ম্যানেজমেন্ট করে চলতে হবে, আর সেজন্যেই এই টিপসগুলো দেয়া!

.

সমালোচনা

এমন একটা কাজ আছে, যেটা আমরা সবাই পারি, সবাই করি, সেটা যে কারো জন্যে ক্ষতিকর হয়ে যেতে পারে সেটা জানি, জেনেও করি। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছো। কাজটার নাম সমালোচনা। এ এক অদ্ভুত বিষয়। এক সমালোচনা করে কারো উদ্যম বাড়িয়ে তাঁর উদ্দীপনাকে আকাশছোঁয়া করা যায়, আবার সেই সমালোচনাই পারে কাউকে চরম হতাশ করে তুলতে।

অবাক হচ্ছো? ভাবছো, সমালোচনা আবার উদ্যম বাড়ায় কী করে? অবশ্যই বাড়াতে পারে, কিন্তু সেজন্যে সমালোচনার ধরণটা হওয়া দরকার। অন্যরকম। তোমার কোন একটা কাজ, তুমি খুব দরদ দিয়ে করেছে। সেখানকার খুঁটিনাটি ভুলগুলো কারো চোখে পড়তেই পারে, আর সেগুলো তোমাকে বুঝিয়ে সমালোচনা করলে অবশ্যই পরের কাজটা আরো ভালো করার জন্যে একরকম জেদ চেপে যাবে তোমার মধ্যে! সমালোচনা দুই ধরণের

১. গঠনমূলক সমালোচনা বা Constructive Criticism

২. ধ্বংসাত্বক সমালোচনা বা Destructive Criticism

গঠনমূলক সমালোচনার কথাতেই আসা যাক। মনে করো তুমি একটা ভিডিও বানালে। খুব আগ্রহ করে বানিয়েছো ভিডিওটা, মজার মজার অনেক কনটেন্ট সেখানে। তোমার প্রথম ভিডিও, তুমি খুব উত্তেজিত মানুষের রিএকশন নিয়ে। ভেতরে ভেতরে হয়তো একটু টেনশনেও আছো, কী হয় কী হয় টাইপ অবস্থা।

এরকম সময়ে তোমার কোন পরিচিত মানুষ কমেন্ট করলো, যে ভিডিও বেশ ভালো লেগেছে, তবে শেষের দিকের কনটেন্টের সাউন্ড মিক্সিং ভালো করা দরকার ছিল। তুমি কিন্তু এই একটা কমেন্ট খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করবে। এবং একটু পর আবিষ্কার করবে, সে তো ঠিক বলেছে! এই আবিষ্কারের পর তুমি শুরু করবে ভাবা, কীভাবে এগোলে পরের ভিডিওটা আরো ভালো হবে, কোন পথে এগোতে হবে। তুমি পাবে উদ্দীপনা। সাথে ওই মানুষটির সাথে সম্পর্ক ভালো হবে তোমার, পরের ভিডিওতেও অপেক্ষা করবে তার আরেকটা সমালোচনার।

এই যে এই সমালোচনার অংশটা? এটাই বলতে গেলে গঠনমূলক সমালোচনা। এই সমালোচনা করতে হলে কাজটা পুরোপুরি দেখতে হয়। তারপরে নিজের মাথা খাঁটিয়ে সমালোচনা করতে হয়। স্বভাবতই, গঠনমূলক সমালোচকদের সংখ্যা তাই খুব বেশি না।

ধ্বংসাত্বক সমালোচকের ব্যাপারটা আবার পুরোপুরি উল্টো। এই মহামানবদের বিন্দুমাত্র মাথা খাটাতে হয় না, তেনারা একাই একশো। তাঁদের কিছু আলাদা শব্দচয়ন আছে, সেগুলোর কোন কোনটিকে গালি বললেও ভুল হবে না। এই মানুষগুলো হয়তো কাজটা পুরোপুরি দেখেও না, নাম দেখেই উটকো একটা কথা বলে রেখে দেয়।

ভিডিওর গল্পে ফিরে যাই। তোমার অনেক সাধনার ভিডিওতে যদি কেউ সুন্দর করে দুই তিন বণের কিছু গালি দিয়ে বলে যে যাচ্ছেতাই ভিডিও হয়েছে, তুমি অনেক জঘন্য ভিডিও বানাও- তাহলে দুইটা বিষয় হবে। ওই সমালোচকদের তো মানুষ খারাপ ভাববেই, তাতে তাঁদের যায় আসার কথা না খুব একটা। কিন্তু তোমার উদ্দীপনায় বড় একটা বাঁধ পড়বে। মনে হবে, আসলেই মনে হয় আমি ভিডিও বানাতে পারি না, কী হবে আমার? হয়তো তুমি আর কখনোই ভিডিও বানাবে না, সে আগ্রহ হারিয়েছে কবেই!

এই যে এই সামান্য কিছু ধ্বংসাত্বক কথা- এগুলো বলে নিজের অজান্তেই Negativity ছড়িয়ে যাচ্ছে সবখানে, সব জায়গায়। এসব থেকে বের হতে হবে। কারণ এই কথাগুলোই হতে পারে কোন একজনের জন্যে হতাশার মূল! একটা বিষয় সত্যি, যে গঠনমূলক সমালোচনা করতে মাথাটা খাটাতে হয়। একটু বুদ্ধিমান হবার প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে ধ্বংসাত্বক সমালোচনা করা মানুষগুলোর মাথা তো খাটাতে হয়ই না, তারা আদতে কতোটা বুদ্ধি রাখে, এই নিয়ে প্রশ্নটা থেকেই যায়!

এখন তুমিই বলো, গঠনমূলক সমালোচনা করে বুদ্ধিমানের দলে নিজেকে রাখবে, নাকি ভীড়বে নির্বোধ সমালোচকদের মধ্যে? ১৩৮

.

নিজেকে জানা, Elevator Pitch এবং আমাদের অবস্থান!

আমাদের জন্মের পর থেকে এখনও পর্যন্ত আমরা কিন্তু নিজেদেরকে নিয়েই আছি। অথচ, যদি কখনও কেউ আমাদেরকে নিজেকে বর্ণনা করে এমন তিনটা শব্দ জিজ্ঞেস করে তাহলে আমাদের ঘাম বেরিয়ে যায়। একটা ঘটনা কল্পনা করা যাক।

ভাবো তো, একবার লিফটে তোমার সাথে বিল গেটস উঠলেন!
বিল গেটসের গন্তব্য ভবনের দশম তলায়; আর তোমার কাজ তৃতীয় তলায়, বিল গেটসকে লিফটে রেখে সম্মান ও ভদ্রতার খাতিরে হলেও তোমার থেকে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

তুমি আর বিল গেটস; মাঝখানে হাতে মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময়। পুরো ব্যাপারটা তোমার হাতে! তুমি এ সংক্ষিপ্ত সময়টাকে কেবলমাত্র বিল গেটসের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে কিংবা একটা সেলফি তুলেই শেষ করে ফেলতে পারো। এতে তোমার বা বিল গেটসের কারও কি কোনও লাভ হলো? বড়জোর, তুমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু লাইক/কমেন্ট পাবে।

অথচ, এই ৩০ সেকেন্ডে একটু কৌশল অবলম্বন করলেই হয়তো তুমি বিল গেটসের সাথে কাজ করার মতো বিশাল একটা সুযোগও পেয়ে যেতে পারতে। এই কৌশলের নামই Elevator Pitch.

নামটা Elevator Pitch বলে ব্যাপারটা যে কেবল লিফটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা কিন্তু নয়। এটা অন্য যে কোনও জায়গায় স্বল্প সময়ে যেকোনও ব্যক্তির সামনে নিজেকে সংক্ষেপে তুলে ধরার প্রক্রিয়া। লিফটে সাধারণত আমরা খুব কম সময়ের জন্য অবস্থান করি। সে ধারণা থেকেই মূলত এ ধরণের নামকরণ।

অর্থাৎ, কখনও যদি লিফটে বা অন্য কোথাও এমন গুরুত্বপূর্ণ কারও সাথে দেখা হয়ে যায় যে কিনা তোমার কোনও উপকারে আসতে পারেন কিংবা তুমি তার সাথে কাজ করতে বেশ আগ্রহী সেক্ষেত্রে তার সামনে নিজেকে স্বল্প সময়ে যে অল্প কথায় উপস্থাপন করবে সেই ছোট্ট বক্তব্যের নামই Elevator Pitch.

এখন, প্রশ্ন হলো এই Elevator Pitch তৈরির উপায়গুলো কি কি?

১. খুঁজে বের করো তিনটি শব্দ

নিজেকে জানো। তোমাকে বর্ণনা করে করে এমন শব্দগুলোকে খোঁজার চেষ্টা করো। সেখান থেকে সবচেয়ে উপযুক্ত এবং যেগুলো তোমাকে অন্য সবার থেকে আলাদা হিসেবে উপস্থাপন করে সেরকম তিনটা শব্দ বেছে নাও। যেমন : শিক্ষক, বক্তা, উদ্দ্যোক্তা এ তিনটি শব্দ আমাকে বর্ণনা করে।

২. কিছুটা বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করো

ছোট করে লিখে ফেলো, ঐ শব্দগুলো কীভাবে তোমাকে বর্ণনা করে তা নিয়ে। ৩০ সেকেন্ডের জন্য এক পৃষ্ঠাই যথেষ্ট।

আমার ক্ষেত্রে আমি একজন শিক্ষক। আমি অনলাইনে পড়াই। আমি একজন বক্তা হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কথা বলি, বক্তব্য দেই। টেন মিনিট স্কুল আমার নিজের একটি উদ্দ্যোগ।

৩. নিয়মিত অনুশীলন করো

প্রতিদিন আয়নার সামনে বারবার অনুশীলন করো। বন্ধুদের সাথেও অনুশীলন করা যেতে পারে। তাহলে, জড়তা কেটে যাবে। অডিও বা ভিডিও রেকর্ডও করা যেতে পারে যাতে করে কণ্ঠের অবস্থা আর বলার ভঙ্গিমা সম্পর্কিত ধারণা পাওয়া যায়।

আমাদের সবার ক্ষেত্রেই এই Elevator Pitch যত দ্রুত সম্ভব তৈরি করে ফেলাটা খুব জরুরি। তা না হলে, যদি কখনও এমন কোনও বিখ্যাত কেউ বা তোমার খুব প্রিয় কোনও মানুষ কিংবা এমন কারও সামনে তোমাকে পড়তে হয়, যার সাথে দেখা করতে অনেকদিন ধরেই তুমি খুব আগ্রহী ছিলে, যাকে বলার জন্য হয়তো অনেক কথাও তোমার তৈরি ছিলো কিংবা যে হয়তো তোমার খুব বড় কোনও কাজে আসতে পারেন কিন্তু শুধুমাত্র ওই বিশ-ত্রিশ সেকেন্ড সময়টুকুর যথাযথ প্রয়োগ না করতে পারার কারণে তোমার কথাগুলো তাকে বলা হয়ে উঠবে না।

এমনটা আমাদের সবার সাথে ইতিপূর্বে ঘটেছে, এখনও ঘটছে। আর, Elevator Pitch তৈরি না থাকলে ভবিষ্যতেও ঘটবে। যেটা, আশা করি আমাদের কারও কাম্য নয়! আর তাই এক্ষেত্রে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমাদের সবাইকে নিজেদের গন্ডির ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে উপস্থাপন করতে শিখতে হবে।

অন্যথায়, এ নেটওয়ার্কিং এর যুগে কেবলমাত্র নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরতে না পারার কারণে অনেক সময় ক্ষেত্রবিশেষে নিজের সর্বোচ্চ টুকু দেওয়ার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়ে যেতে পারো।

“Never Stop Learning”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *