০৬-১০. আপনি কি সত্যিই সফলতা চান?

৬. আপনি কি সত্যিই সফলতা চান?

পড়ার কৌশলগুলো আয়ত্ত করবার আগে আপনাকে জানতে হবে, আপনি সত্যিই সফলতা চান কিনা? আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, কে না সফলতা চায়! সব্বাই চায় সফল হতে।

দুঃখের বিষয় হলো, ৯৫ ভাগ লোকেরই সফল হতে চাওয়াটা শুধু চাওয়াতেই সীমাবদ্ধ। তাঁরা চান মাঝে মাঝে পড়ালেখা করব, টিভি-সিনেমা দেখব, আড্ডা দেব, গান শুনব, গল্পের বই পড়ব। তারপর যদি A+ না পাই তা হলে কী আর করা! জীবনটাকে তো উপভোগ করতে হবে।

আর, বাকি ৫ ভাগ চিন্তা করেন, আমাকে A+ পেতেই হবে আর তার জন্য যা দরকার, আমি তাই করব। যদি প্রয়োজন পড়ে, তা হলে টিভি দেখব না, আড্ডা দেব না, খেলব না। দিনে যদি ১০ ঘণ্টা পড়তে হয় পড়ব। যদি নতুন নিয়মে পড়তে হয় পড়ব। তারপর সময় থাকলে বিনোদনের কাজে লাগানো যেতে পারে।

আপনার কী ধারণা? কোন ছেলেটা A+ পাবে? বেশিরভাগ ছাত্রই জীবনে সফল হতে চান কিন্তু, তাঁরা ভাবেন সফলতা এমনি এমনিই আসে। তাদের সবার অভিযোগগুলো মোটামুটি একইরকমের। বাসায় পড়ার পরিবেশ নেই। টিচার ভাল না, প্রশ্ন কঠিন, আমার মেমোরী খারাপ ইত্যাদি। আপনারও যদি এমন অজুহাত দেবার প্রবণতা থাকে তা হলে এখনই তা ত্যাগ করুন। কারণ এ বই পড়েও আপনি বলবেন এ বই আমার জন্য নয়। এটা জিনিয়াসদের জন্য।

তাই, এখন থেকে নিজের সমস্ত দায়িত্ব নিজে নিন। আপনি নিজেকে বলুন, আমার বাজে ফলাফলের জন্য আমিই দায়ী। রেজাল্ট ভাল হলে সেটা আমারই কষ্টের ফল। আমি যে রেজাল্টই করি না কেন এর চেয়ে ভাল বা খারাপ আমি করতে পারি ।

আমি সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি অস্বীকার করছি না। তবে, তিনিই বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না কোন জাতি নিজের ভাগ্য বদলের চেষ্টা করে, আমি তাদের ভাগ্য বদল করি না। তাই, নিজের কাজের দায়িত্ব নিজে নিন। বিশ্বাস করুন, আপনার ভাগ্য আল্লাহ আপনারই হাতে দিয়েছেন। আপনি উদ্যোগ না নিলে তিনি কখনোই সাহায্য করবেন না।

সফল হবার জন্য বর্তমানে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু, এতে নিজের উপর তৈরি হয় প্রচুর স্ট্রেস। ধরুন, একটা পরীক্ষায় সজীব আপনার চেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে। আগামী পরীক্ষায় তাকে হারাতেই হবে। এবারের পরীক্ষায় আপনি সজীবের চেয়ে বেশি পেয়েছেন। কিন্তু, এবার আপনার চেয়ে বেশি পেয়েছে কাওসার। এভাবে, লড়াই করলে দেখতে পাবেন, আপনি খুবই নগণ্য একজন। আপনি যত ভাল ফলাফলই করুন, কেউ না কেউ কোনভাবে আপনার চেয়ে এগিয়ে থাকবে। আপনার একার পক্ষে সবাইকে হারানো অসম্ভব। হয়তো আপনি ক্লাসের ফার্স্টবয়, তবে, অন্য স্কুলের ফার্স্টবয় হয়তো আপনার চেয়ে বেশি জানে। অন্যদিকে, হয়তো আপনি সাইন্সের ছাত্র। তা হলে, কমার্সের যে কোন সাধারণ ছাত্র তার সাবজেক্টে আপনার চেয়ে বেশি জানে। তা হলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে কী করবেন?

ফাদার বেঞ্জামিন ডি কস্টা নটরডেম কলেজের প্রিন্সিপাল। তিনি খুবই সাধারণ পোশাক পরতেন। তাঁর কথাবার্তায় ছিল আঞ্চলিকতার টান। কিন্তু, যখন তিনি বক্তৃতা দেন তা সবার হৃদয় স্পর্শ করে যায়। অনেক শুদ্ধভাষায় কথার ফুলঝুরি ফোঁটানো বক্তৃতাও তাঁর সরল গ্রাম্যভাষায় বক্তৃতার কাছে ম্লান হয়ে যায়। আমাদের HSC প্রথম বর্ষের ফলাফল বের হবার পর ছাত্র, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মিটিং হয়। কীভাবে পড়ার মান আরও বাড়ানো যায় তা জানতে অভিভাবকদের পরামর্শ চাওয়া হয় । একজন অভিভাবক বলেন, ছাত্রদের রিপোর্ট কার্ডে যদি তাদের প্রাপ্ত নম্বরের পাশে শ্রেণীর সর্বোচ্চ নম্বর লিখে দেওয়া হয় তা হলে খুব ভাল হয়। এরপর ফাদার বেঞ্জামিন উপরোক্ত কথাগুলো বলেছিলেন। এরপর তিনি আরও বলেন, জীবনে সফল হতে হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে শুধুমাত্র নিজের সাথে, নিজের অতীতের সাথে। ধরুন, ফার্স্ট টার্মে আপনি গড়ে ৭০% নম্বর পেয়েছেন। সেকেন্ড টার্মে আপনাকে এর চেয়ে ভাল করতে হবে। কখনোই অন্য কারও সাথে তুলনা করবেন না। কারণ, তা হলে আপনার মধ্যে জন্ম নেবে হতাশা, ঈর্ষা, ক্ষোভ। সবসময় লড়াই করুন নিজের সাথে।

হযরত মুহাম্মদ (সা:) এ সম্পর্কে বলেন, সে ব্যক্তি হতভাগ্য যার আজকের দিনটি গতকালের চেয়ে ভাল যায়নি।

তাই প্রতিদিন নিজের পারফর্মেন্স বাড়ানোর চেষ্টা করুন। নিজের সাথে লড়াইয়ের মজা হলো, নিজেকে হারানোতে বা নিজের কাছে হারতে লজ্জার কিছু নেই।

.

৭. ভাল রেজাল্টের রহস্য

ভাল ছাত্র সাধারণ ছাত্র-একই ব্রেন: ভিন্ন পদ্ধতি আগের অধ্যায়গুলো পড়াতে আপনি বুঝতে পারছেন যে, আপনার সাথে একজন জিনিয়াস ছাত্রের তেমন কোন তফাৎ নেই। আপনারও আছে সমান প্রতিভা। তা হলে, আপনি ভাল করতে পারছেন না কেন? আপনি হয়তো দেখেছেন, মেধাবী ছাত্ররা খুব দ্রুত পড়া বুঝতে পারে। কোন কঠিন অংক সহজেই সমাধান করে ফেলে। এর কারণ কী? আচ্ছা, তা হলে আপনি আমাকে বলুন তো, পরীক্ষার ঠিক কতদিন আগে আপনি পড়া শুরু করেন? আপনি কোন পদ্ধতিতে পড়েন? আপনি কয় ধাপে পড়া তৈরি করেন?

এই তিনটা প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন ছাত্রের বিভিন্নরকম হবে। তবে, তাঁদের অধিকাংশই পরীক্ষার ১ মাস থেকে ১ দিন আগে পড়া শুরু করেন। তাঁদের পদ্ধতি হলো ঝাড়া মুখস্থ করা। আর, তারা এক ধাপে বা তিন ধাপে পড়া তৈরি করেন। যেমন–

১. কিছু ছাত্র দুই ধাপে পড়েন (৫০%)

ক. তারা পাঠ্যবই বা নোটবই পড়েন

খ. পরীক্ষা দিতে চলে যান।

এঁদের রেজাল্ট হয় পাসফেলের মার্জিন বরাবর।

২. তিন ধাপে পড়েন (৩৫%)

ক. এঁরা পাঠ্যবই আর নোট বই পড়েন।

খ. কিছু প্রশ্ন মুখস্থ করেন।

গ. পরীক্ষা দিতে যান।

তারা C বা D গ্রেড পান ।

৩. চার ধাপে পড়েন (১২%)

ক. এঁরা পাঠ্যবই আর নোট বই পড়েন।

খ. পড়া মুখস্থ করেন।

গ. বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর বাসায় লিখে প্র্যাকটিস করেন।

ঘ. পরীক্ষা দিতে যান।

এঁরা B গ্রেড স্টুডেন্ট। খুব সিরিয়াস হলে তাঁরা A পেয়ে যান। তা হলে, নিশ্চয়ই আপনার জানতে ইচ্ছে করছে বাকি ৩% ছেলে যারা নিশ্চিতভাবেই A+ পান তারা কীভাবে পড়েন?

এর জন্য দরকার ৯টি ধাপ এবং প্রতিটি পরীক্ষার কমপক্ষে তিনমাস আগে পড়া শুরু করা। এবং ক্লাসের প্রথমদিন থেকেই পড়া শুরু করা। এখন তা হলে আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি এ ৯টি ধাপ কী কী–

ধাপ: ১-খুবই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য তৈরি করা

বেশিরভাগ ছাত্রই মনে করেন, পড়া শুরু করে দিলেই হলো। পড়া চলতে থাকবে। এতে দেখা যায়, কিছুদিন কিংবা কয়েকঘণ্টা পড়েই পড়ার কোন উৎসাহ থাকে না। এর কারণ হলো লক্ষ্যহীনতা। কাজেই, প্রথমেই আপনাকে লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট করতে হবে।

আবার অনেকেই ভাবেন, ধীরে ধীরে উন্নতি করব । সামনের পরীক্ষায় ৭০, তারপরে ৮০ এভাবে বাড়াতে হবে। খুবই বাজে ধারণা। কারণ তা হলে একটা পরীক্ষায় খারাপ করলেই হতাশা চলে আসবে। ধরুন, আপনি অংকে ৬০ পাবার লক্ষ্য নিয়ে পড়া শুরু করলেন। তা হলে, আপনি কীভাবে পড়বেন? আমি বলি? আপনি সোজা অংকগুলো করবেন পরীক্ষায় ৫টা চ্যাপ্টার থাকলে ২টা চ্যাপ্টার আপনি বাদ দেবেন। ফলে, দেখা যায় পরীক্ষায় সেই দুটো চ্যাপ্টারের প্রশ্ন আসলে চোখে অন্ধকার দেখেন। আর, লক্ষ্য যদি কম থাকে, তা হলে আপনার অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন ব্রেন অলস বসে থাকে। তাই, আপনি ৫০-এর বেশি পাবেন না। এদিকে যদি আপনার লক্ষ্য থাকে ১০০ নম্বর পাওয়া, তা হলে আপনার ব্রেন থাকবে সজাগ ও সজীব। সে তার সমস্ত ক্ষমতা ব্যয় করবে পড়ালেখার পেছনে। কোন তথ্যই সে ছেড়ে দিতে চাইবে না । একটা বাস্তব উদাহরণ দিই। এখনই আপনার লক্ষ্য ঠিক করুন, এ বইয়ের তথ্যগুলোকে আমি সম্পূর্ণ, মানে ১০০ ভাগ মনে রাখব। এখন দেখুন, এ লাইনটা আপনি পড়ার সময় আপনার মনোযোগ কতটা বেড়ে গেছে। লক্ষ্য ঠিক করুন যে, জরুরী তথ্যগুলোকে আপনি লাল কালি দিয়ে দাগ দিয়ে রাখবেন। কোন প্রয়োজনীয় তথ্য যেন না দাগানো অবস্থায় না থাকে। লক্ষ্য কীভাবে ঠিক করবেন তা নিয়ে সম্পূর্ণ একটা অধ্যায় আছে। তা পড়বার আগে জেনে নিন দ্বিতীয় ধাপটি।

ধাপ: ২-পরিকল্পনা

আপনার লক্ষ্য চমৎকার হতে পারে, তবে তা বাস্তবায়নের জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা। এ বিষয়ে জানতে পারবেন পরিকল্পনা অধ্যায়ে।

ধাপ: ৩-সবসময় সক্রিয়তা

প্রত্যেকেই লক্ষ্য আর পরিকল্পনা করতে পারেন। কিন্তু, তা বাস্তবায়নে দরকার সক্রিয়তা। আমি আগে গাদাগাদা কাগজ নষ্ট করেছি কী পড়ব, কখন, কীভাবে পড়ব, এসব লিখে। কিন্তু, কোনটাই মেনে চলতে পারিনি। তাই, সক্রিয়ভাবে পড়ালেখার উপায় জানতে হবে। এর বর্ণনা আছে মোটিভেশন অধ্যায়ে ।

ধাপ: ৪-পাওয়ার রিডিং

বর্তমানে উন্নতবিশ্বের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে Power Reading-কে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে মূল তথ্যগুলোকে আলাদা করে ফেলা হয়। Power Reading অধ্যায়ে এ সম্বন্ধে জানতে পারবেন ।

ধাপ: ৫-Super Memory

আপনারা যারা ভেবে থাকেন, মুখস্থ করা বাজে জিনিস তাঁদের জন্যই রয়েছে Super Memory-র নিয়মকানুন। আপনার যা মনে রাখতে হবে তাকে নানাভাবে সাজিয়ে সমস্ত ইন্দ্রিয়ের ব্যবহারের পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে Super Memory অধ্যায়ে।

ধাপ: ৬-Mind Mapping ®

Mind Mapping (R) এর আবিষ্কর্তা Tony Buzan. তার এ আবিষ্কার পড়ালেখায় বিপ্লব সাধন করেছে। অনেক বিদেশী বইয়ে চ্যাপ্টারের শেষে লেখা থাকে উপদেশ হিসেবে Mind Map (R) তৈরি করার। এর মাধ্যমে প্রায় ১০ পৃষ্ঠার তথ্যকে ১ পৃষ্ঠায় নিয়ে আসা সম্ভব। আর তা মনে রাখাও সম্ভব। মনে রাখার ক্ষমতার উপর Tony Buzan একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন প্রতিবছর। গতবছরের প্রতিযোগিতার একটা বিষয় ছিল প্রত্যেক প্রতিযোগীকে দুমিনিট একটা হলরুমে দেখতে দেয়া হয়। সেখানে ২৫০টি ভিন্ন আইটেম সাজানো আছে। দু’মিনিট পর তাকে ১৫ মিনিট সময় দেয়া হয় Mind Map (R) বানানোর। গত বছরের বিজয়ী ২৪১টি আইটেমের নাম সঠিক লিখতে পেরেছেন। এ বিচিত্র মনে রাখার পদ্ধতি আমি নিজে ব্যবহার করেও অবাক হয়েছি। কারণ, এটা তৈরি করলে কোন তথ্য ভুলে যাওয়াই কঠিন। আর রিভিশন দেয়া এতটাই সহজ হয় যে, পরীক্ষার আগের রাতে আপনি মনের সুখে মাসুদ রানা পড়তে পারবেন। Mind Mapping (R) শিখতে হলে অবশ্যই আগের দু’টো ধাপ জানতে হবে। এর বর্ণনা আছে Mind Mapping (R) অধ্যায়ে।

ধাপ: ৭ মেমোরীকে কাজে লাগানো

ধাপ: ৮ পরীক্ষার প্রস্তুতি

ধাপ: ৯ পরীক্ষা দেয়ার পদ্ধতি

আপনাকে ভাল ফলাফল নিশ্চিত করতে হলে এ ৯টি ধাপ অনুশীলন করতে হবে। এখন তা হলে আপনাকে জানাচ্ছি বিশ্বব্যাপী রিসার্চের মাধ্যমে প্রাপ্ত, পড়ালেখার বাধা হিসেবে চিহ্নিত প্রধান ১৫টি কারণ–

১. দুর্বল স্মৃতিশক্তি

২. সিদ্ধান্তহীনতা

৩. অলসতা

৪. টিভি, কম্পিউটার, খেলাধুলা ও গানে আসক্তি

৫. ক্লাসের পড়া বুঝতে না পারা

৬. সহজেই মনোযোগ হারিয়ে ফেলা

৭. ক্লাসে দিবাস্বপ্ন দেখা

৮. পরীক্ষাভীতি

৯. সহজ জিনিস ভুল করা

১০. বাবা-মা কর্তৃক অতিরিক্ত চাপ প্রদান ও বিশাল আশা

১১. পড়ার তুলনায় সময় কম

১২. উৎসাহের অভাব

১৩. সহজেই হাল ছেড়ে দেয়া

১৪. বিরক্তিকর শিক্ষক

১৫. বিরক্তিকর বিষয়।

এর মাঝে অনেকগুলো আপনার মাঝেও আছে, তাই না? এখন আপনি যত সামনের দিকে পড়বেন, আপনার যে সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাচ্ছে তাতে ক্রসচিহ্ন দেবেন। এ বই পড়া শেষে ১৫ টাতেই যেন ক্রস দিতে পারেন সেই কামনা করছি।

ভাল রেজাল্টের পেছনে বাবা-মার ভূমিকা

২০০৬ সালের S.S.C. রেজাল্টের পর জি.পি.এ. ৫ পাওয়া একজন মেয়ে বলেছিল, এবার যদি আমার মা আমার সাথে পরীক্ষা দিত, তা হলে সেও জি.পি.এ-৫ পেত। কারণ, আমাকে পড়ানোর আগে মা সব পড়ে, ফেলত। আমার মতে এতটা না হলেও বাবা অথবা মা কোন একজনের গাইড করাটা জরুরী। একজন মা-ই হতে পারেন আদর্শ গাইড। আমার নিজেদের পরিবারের কথা বলি। আমরা চার বোন, দুভাই। আমি সবার ছোট। আমার বড়বোন আমার চেয়ে মাত্র ৮ বছরের বড়। এই ৬ সন্তানকে মা একসাথে পড়াতেন। প্রতিদিন ভোরবেলায় নামাজ পড়ে ১ ঘণ্টা পড়তাম। দুপুরে বাসায় এসে ১ ঘণ্টা ঘুমের পর আবার ১ ঘণ্টা। বিকেলে ঘণ্টাখানেক বাইরে খেলাধুলা করে মাগরিবের আজানের পর ২ ঘণ্টা পড়ে একঘণ্টা ব্রেক পেতাম। খাওয়াদাওয়া করে ঘুমানোর আগে স্কুলের হোমওয়ার্ক করতে হত। যখন অন্যান্য আন্টিরা সন্ধ্যায় হাঁটতে যেতেন, ক্লাবে বা কারও বাসায় ঘুরতে যেতেন, আমার মা যেতেন না। সপ্তাহে একটা ধারাবাহিক নাটক দেখতে পেতাম। আর শুক্রবারে কার্টুন দেখতাম। সবসময় ভাবতাম, কবে বড় হব! আমরা কোথাও পড়তে গেলে সেখানে ফোন করে খবর নিতেন। কী কী পড়ানো হলো সেগুলো বাসায় এসে বলতে হত। সাধারণত নভেম্বরের মাঝামাঝি ক্লাসের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে যেত। কিছুদিন আমরা বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেতাম। তারপর, ডিসেম্বরের ৫-৬ তারিখ থেকেই পরবর্তী ক্লাসের পড়া শুরু করে দিতাম। ফলে, ক্লাস শুরু হবার আগেই প্রথম সাময়িক পরীক্ষার অধিকাংশ পড়াই শেষ হয়ে যেত। তাই, স্কুলের সবাই আমাদের ভাইবোনদের মেধা দেখে অবাক হয়ে যেত। এটা আমাদের সব ভাইবোনদের উপর চাপ সৃষ্টি করে ভাল রেজাল্ট করার। আমার বড় দু’বোন ডাবল স্ট্যান্ড করে S.S.C ও H.S.C. তে। তারা দু’জনেই ডাক্তার। সেজো আপু (BUET) বুয়েট থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ছোট আপু ঢাকা ভার্সিটি থেকে ফিশারিজে মাস্টার্স। আর আমরা দু’ভাই ডাক্তার।

এখন আমরা বুঝতে পারি যে, ছোটবেলার সেই কড়া শাসন না থাকলে হয়তো আমরাও আমাদের অনেক বন্ধুর মত ড্রাগ এডিক্টেড হয়ে পড়তাম। আমার মার এই আত্মত্যাগ, কঠোর শাসন আর বাবার সাপোর্টে আমরা আজ প্রতিষ্ঠিত। একজন মা’কেই বুঝতে হবে সন্তানদের কখন আর কতটুকু ছাড় দিতে হবে। আর কখন তাকে সাপোর্ট দিতে হবে।

এখন তা হলে চলুন পরবর্তী অধ্যায়ে।

.

৮. আপনার অনন্য ব্রেন

আমার অনেক সৌভাগ্য যে, আমি এমন কিছু ছাত্রের সাথে পড়েছি যারা সত্যিকারের জিনিয়াস। কোন একটা জটিল বিষয় তারা মাত্র একবার পড়েই এত সুন্দর ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম যে, যে কেউই অবাক হয়ে যাবে। কিন্তু, তাদের এরকম জিনিয়াস হওয়াটাও হুট করে হয়নি। তারা তাদের ব্রেনকে সঠিক পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বর্তমান অবস্থায় এসেছে। আপনার পক্ষেও এটা করা সম্ভব। আর, এ সত্য প্রমাণ করেছিলেন আমেরিকার এরন স্টার্ন।

তিনি বিশ্বাস করতেন, যদি সঠিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তা হলে ব্রেনের ক্ষমতাও বাড়ানো সম্ভব। এ জন্য তিনি বাছাই করেন তাঁর নিজের সদ্যোজাত মেয়ে এডিথকে। তিনি ঠিক করেন, মেয়ের সাথে তিনি কোন শিশুসুলভ ব্যবহার করবেন না। যত জটিল তথ্যই হোক তিনি মেয়ের সাথে তা শেয়ার করবেন। তিনি এডিথের জন্মের পর থেকেই তার রুমে ক্লাসিকাল মিউজিক বাজাতেন। প্রতিদিন একটা নতুন শব্দ ছবির মাধ্যমে শেখাতেন। এডিথ বুঝতে পারছে কি না তা না জেনেই। মাত্র তিন মাস বয়সেই এডিথ শব্দ আর ছবিগুলো শনাক্ত করতে পারল । এক বছর বয়সেই সে পুরো বাক্যগঠন করে কথা বলতে শিখল। ৫ বছর বয়সে তার এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা পড়া শেষ হয়। ৬ বছর বয়সে এডিথ দিনে ৬টা করে বই পড়ত আর সকালে পড়ত নিউ ইয়র্ক টাইমস! ১২ বছর বয়সেই সে কলেজে ভর্তি হয় এবং মাত্র ১৫ বছর বয়সে মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে নিযুক্ত হয়েছিল উচ্চতর গণিতের শিক্ষক। এটাই তখনকার (১৯৬৭ সালে) সর্বকনিষ্ঠ ভার্সিটি শিক্ষক হবার রেকর্ড।

তবে, আপনার বয়স বেশি হলেও চিন্তার কিছু নেই। আপনার ব্রেনের ক্ষমতা আপনি বাড়াতে পারবেন যে কোন বয়সেই। এখন তা হলে আপনাকে একটা প্রশ্ন করি। যখন কোন কিছু পড়ে আপনার বুঝতে সমস্যা হয় তখন আপনি কী করেন?

আপনার উত্তর যদি হয়, আমি না বোঝা পর্যন্ত বারবার চেষ্টা করি তা হলে ঠিক আছে। কিন্তু, যদি চেষ্টা না করেই হাল ছেড়ে দেন তা হলে খুবই খারাপ ব্যাপার। কারণ, আমার নিজেরই এ ব্যাপারে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। আমি আগে যখন পড়তাম তখন যে চ্যাপ্টার আমার একটু কঠিন লাগত, তা এড়িয়ে যেতাম। যেগুলো পড়তে ভাল লাগত সেগুলো বারবার পড়তাম। ফলে দেখা গেল, প্রতি পরীক্ষাতেই দু’একটা প্রশ্ন আমাকে ছেড়ে আসতে হচ্ছে। ফলে, রেজাল্ট খারাপ হতে লাগল। বেশ কিছুদিন আমি ডিপ্রেশনে ভুগি। তারপর, ‘সঠিক নিয়মে লেখাপড়া’ বইয়ের একটা কথা টনিকের মত কাজ করে। তা হলো, আপনি নতুন ক্লাসে যা পড়বেন তা যদি সবই বুঝে ফেলেন মাত্র একবারেই, তা হলে তা পড়ার কী দরকার। আপনাকে নতুন তথ্য জানতে হলে প্রথমেই কনফিউড় হতে হবে। কারণ, এটা নির্ধারণ করে যে, নতুন তথ্যটা আপনার ব্রেনের বর্তমান ক্ষমতার ঊর্ধ্বে । এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখুন। এটাকে বোঝার জন্য আপনাকে এখন পরিশ্রম করতে হবে। ক্লাসে লেকচার শুনবেন। পাঠ্যবই পড়বেন। পত্রিকা, লাইব্রেরী, বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক যার কাছ থেকে এ সম্বন্ধে জানতে পারবেন, তাকেই প্রশ্ন করুন। আবার পাঠ্যবই পড়ন। এখন দেখবেন, আপনার কাছে বিষয়টা সহজ হয়ে গেছে। মজার ব্যাপার হলো, মানুষের স্বভাবই হলো পালানো। কোন সমস্যা দেখলেই প্রথমে প্রত্যেক মানুষের মাথায় আসে কীভাবে সেটা এড়ানো যায়। একটা উদাহরণ দিই। ক্লাসে হঠাৎ আপনাকে একটা প্রশ্ন করা হলো। আপনি দাঁড়িয়ে যে উত্তর দেবেন তার শতকরা ৯০ ভাগ সম্ভাবনা হলো, উত্তরটা হবে, জানি না। এটা খুবই খারাপ। কারণ, আপনি আপনার ব্রেনকে কোন সুযোগই দিলেন না । আপনি যদি উত্তর নাও জানেন, তবু বলতে পারেন, চেষ্টা করে দেখি বা সারকে প্রশ্নটা আবার জিজ্ঞেস করুন।

এতে আপনার ব্রেন চিন্তা করবার সুযোগ পায়। দ্বিতীয়বার, প্রশ্নটা শোনার পর হয়তো আপনি দেখবেন, খুবই সোজা প্রশ্ন। আপনি অমনোযোগী থাকায় ধরতে পারেননি। তাই, জানি না-কে পরিহার করুন। তবে, ইন্টারভিউ বোর্ডে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, যার উত্তর আপনি কস্মিনকালেও শোনেননি, এমন প্রশ্নের উত্তরে জানি না বলতে পারেন।

তা হলে চলুন জেনে নেয়া যাক ব্রেনকে শক্তিশালী ও কর্মক্ষম করার ৬টি পদ্ধতি:

১. নিয়মিত মিউজিক শুনুন। মিউজিক আপনার নিউরোনের সক্রিয়তা বাড়ায়। তবে, সারাদিন-রাত হাই ভলুমে শুনবেন না। দিনে ১৫-৩০ মিনিট নির্দিষ্ট করে শুনুন।

২. ক্লাসে প্রচুর প্রশ্ন করুন আর উত্তর দেবার চেষ্টা করুন।

৩. প্রতিদিনই নতুন নতুন বিষয়ে কিছুটা হলেও পড়ুন।

৪. পাঠ্যবইয়ের বাইরে নানা বিষয়ের জ্ঞান রাখুন। পত্রিকা, গল্পের বই বা কারেন্ট এফেয়ার্স পড়ন।

৫. কখনোই কঠিন চ্যাপ্টার এড়িয়ে যাবেন না। কঠিন চ্যাপ্টারগুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখুন।

৬. মনে রাখুন, ভাল জানতে হলে আপনাকে প্রথমে কনফিউড হতে হবে এবং প্রচুর ভুল করতে হবে। তাই, মূল পরীক্ষার আগে যত ভুল করার করে নিন।

ব্রেনকে নিষ্ক্রিয় করার ৬টি পদ্ধতি

১. কঠিন বিষয়গুলো কখনোই পড়বেন না।

২. কোন বিষয় না বুঝলেও ক্লাসে কোন প্রশ্ন করবেন না।

৩. আপনাকে যাই জিজ্ঞেস করা হোক, উত্তরে বলবেন জানি না।

৪. সোজা জিনিসগুলো বার বার পড়ন।

৫. পরীক্ষায় বন্ধুদের খাতা দেখে লিখুন।

৬. কখনোই পড়ালেখা সম্বন্ধে আলোচনা করবেন না।

তাই, এখন আপনাকেই বেছে নিতে হবে কী করবেন । আমাদের ব্রেনের মূল অংশ হলো সেরিব্রাম। একে ডান ও বাম এ দু’ভাগে ভাগ করা যায়, যা কর্পাস ক্যালোসাম নামের একটা অংশ দ্বারা পরস্পরের সাথে যুক্ত । আমাদের ব্রেনের এই দু’দিক ভিন্নধর্মী কাজ করে। যেমন-আপনার ব্রেনের বাম অংশ যুক্তি, অংক, জাগতিক চিন্তা, ভাষা, তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে। অন্যদিকে ব্রেনের ডান অংশ মজার জিনিসগুলো যেমন-দিবাস্বপ্ন, সুর, কল্পনা, রং, অনুভব ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে। এখন দেখা যায় যে, আমাদের স্কুল, কলেজ বা ভার্সিটিতে যা কিছু পড়ানো হয় তার ৯০ শতাংশ ব্রেনের বাম দিকের সাথে সম্পর্কিত। বাংলা থেকে শুরু করে অংক, হিসাব বিজ্ঞান, ইতিহাস এর সবকটাতেই প্রয়োজন তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, মনে রাখা, অংক করা আর যুক্তিবিদ্যা। ফলে, আপনার বিদ্যালয়ের ৯০ ভাগ সময় বাম ব্রেনের কাজ থাকে। এদিকে আপনার ডান ব্রেন পড়ে থাকে অকেজো। সে কোন কাজ হাতে না পেয়ে আপনার মনোযোগকে নষ্ট করে। তাই, অনেক মনোযোগ নিয়ে ক্লাস শুরু করার পর ক্লাস শেষে দেখবেন আপনার খাতায় শুধুমাত্র কিছু ফুল, পাখি, মানুষের ছবি আঁকা। এতে আপনার কোন দোষ নেই। আপনার ব্রেনের ডান দিক আপনার মনোযোগ চায়। তা হলে, একটু ভেবে দেখুন, আপনার ব্রেনের দুই অংশকে যদি একসাথে কাজে লাগানো যায় তা হলে কেমন হয়?

তা হলে কেমন হয়! শুনুন তিনজন জিনিয়াসের কথা। পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জিনিয়াস আখ্যা পেয়েছেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। তিনি একাধারে বিজ্ঞানী, গণিতবিদ, আর্কিটেক্ট ও চিত্রশিল্পী ছিলেন। তাঁর মোনালিসা ছবির জন্যই তিনি আজীবন অমর থাকবেন। আপনি কি জানেন, একটা ছবি আঁকার আগে তিনি কী করতেন?

তিনি তাঁর নোট বইয়ে প্রথমে অংক করতেন। তাঁর ক্যানভাসে কী কী রং কী কী অনুপাতে মেশানো হবে সব অংক করে বের করতেন। তারপর ব্যবহার করতেন জ্যামিতি। ছবির কোন্ অংশ কীভাবে আঁকবেন সবকিছু জ্যামিতির সূত্র ব্যবহার করে বের করতেন। এরপর, অর্থাৎ ব্রেনের বাম অংশের কাজ সম্পূর্ণ করে তিনি ব্রেনের ডান অংশের কাজ অর্থাৎ ছবি আঁকা শুরু করতেন। তাই, তাঁর ছবি নিখুঁত আর অতুলনীয়।

এবার আসি আইনস্টাইনের কথায়। বাজে ছাত্র বলে তাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। কারণ, তিনি তখন শুধু ব্রেনের ডান দিক ব্যবহার করতেন। যার ফলে, অল্প বয়সেই ভাল ভায়োলিন বাদক হিসেবে নাম করেন। যখন ব্রেনের বাম অংশকে কাজে লাগানো শুরু করেন, তখনই বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি পান। তাঁর শখ ছিল দিবাস্বপ্ন দেখা। এমনই একদিন তিনি স্বপ্ন দেখেন, সূর্য থেকে এক আলোকরশ্মিতে চড়ে মহাকাশ ভ্রমণ করে তিনি আবার সূর্যে ফিরে এসেছেন। এ স্বপ্নই তাঁকে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে যে, যদি আলোকরশ্মি বাকানো পথে চলে তা হলেই কেবলমাত্র একই বিন্দুতে যাত্রা শুরু আর শেষ করা সম্ভব। আলোর কক্ষপথে যদি বিচ্যুতি ঘটে তা হলে স্থান বা সময়েরও বিচ্যুতি ঘটা সম্ভব। তাঁর এ স্বপ্ন প্রমাণ করার জন্য দিনরাত অংক করেন। আর কয়েক বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রমাণ করেন, থিওরী অভ রিলেটিভিটি।

এবার, তা হলে বলি, আমাদের গর্ব ড. মুহম্মদ ইউনুসের কথা। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়বেন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি কাজ শুরু করেন। এরপর ডান ব্রেনের আইডিয়ায় জন্ম দেন Microcredit বা ক্ষুদ্রঋণের। আর বাম ব্রেনের সাহায্যে তার বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশের গ্রাম থেকে গ্রামে। বাংলাদেশ যদিও দারিদ্রমুক্ত হয়নি, তবুও ড. ইউনুসের এই আইডিয়া বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সর্বোচ্চ সম্মান নোবেল প্রাইজ’ এনে দিয়েছে।

তাই, আপনিও যদি ব্রেনের দু’অংশকে কাজে লাগাতে পারেন, দেশ একদিন আপনাকে নিয়েও গর্ব করবে। তা হলে আসুন জেনে নিই, আপনি ব্রেনের কোন্ অংশ বেশি ব্যবহার করেন।

পৃথিবীর সর্বত্রই ছাত্ররা দু’ভাগে বিভক্ত। তাঁদের অধিকাংশই ব্রেনের ডান দিক বেশি ব্যবহার করেন। আর স্বল্প সংখ্যক ছাত্রের রয়েছে বাম দিকের প্রাধান্য। যারা বাম দিক বেশি ব্যবহার করেন তাদের বৈশিষ্ট্য–

১. তারা খুবই গোছানো স্বভাবের। তাঁদের চুল পরিপাটি করে আঁচড়ানো, শার্টপ্যান্ট বা জামা ইস্ত্রি করা।

২. তাঁদের পেন্সিলবক্স থাকে, আর তাতে সর্বদাই প্রয়োজনীয় পেন্সিল, কলম, রাবার সাজানো থাকে।

৩. তাদের বাসার টেবিল থাকে ঝকঝকে। বইপত্র গোছানো। এমনকী কোন বন্ধুও যদি তাঁদের জিনিসপত্রে হাত দেয় তারা খুবই বিরক্ত হন এবং টেনশন করেন যে, ঠিকঠাক রাখবেন কিনা।

৪. তারা পাযল গেম, IQ টেস্টে বেশ ভাল। তারা বাবা মায়ের আদর্শ সন্তান।

৫. তাদের মূল সমস্যা তাঁরা অসামাজিক। তাদের বন্ধু খুবই অল্প। সামাজিক যে কোন অনুষ্ঠানেই তারা বিব্রত বোধ করেন। নতুন লোকজনের সাথে মেশা বা নতুন কিছু সৃষ্টি করতে তারা অপারগ।

ডান দিকপ্রধান ছাত্ররা এর বিপরীত। তাঁদের বৈশিষ্ট্য–

১. তাঁদের চুল, জামাকাপড় সব এলোমেলো ।

২. ক্লাসে তাঁদের প্রধান কাজ দুষ্টামী করা নয়তো দিবাস্বপ্ন দেখা।

৩, তাঁদের ঘরদোর অগোছালো। তাদের বইপত্র, কলম নানা জায়গায় ছড়ানো অবস্থায় থাকে।

৪. তাদের থাকে প্রবল অংক ভীতি।

৫. তারা খেলাধূলা, ছবি আঁকা, গানবাজনায় বেশ ভাল। লোকজনের সাথে মেলামেশা আর নতুন বন্ধু তৈরিতে এঁরা ওস্তাদ।

তা হলে বুঝতে পারছেন, আপনি কোন্ ক্যাটাগরীতে পড়েন। আপনি হয়তো জানতে চাচ্ছেন, কোনটা বেশি ভাল । আমি বলব, দু’টোই জীবনে প্রয়োজন। আপনি ভাল ছাত্র বলে ছবি আঁকতে, গান গাইতে বা বন্ধু বানাতে পারবেন না, এ কেমন কথা! আবার আপনি ভাল ক্রিকেটার বলে পরীক্ষায় A+ পাবেন না, এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। আর তাই উন্নত বিশ্বের পড়ালেখার পদ্ধতিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। আপনার ব্রেনের দু’অংশকে কাজে লাগিয়ে আপনি যেমন পড়ালেখাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন, তেমনি অংক বা ফিজিক্সের জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারেন ক্রিকেট খেলায়।

আগামী তিনটি অধ্যায়ে, উন্নতবিশ্বের এ নতুন শিক্ষাপদ্ধতির আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি সত্যিই চান পড়ালেখাকে আকর্ষণীয় আর আনন্দময় করতে, তা হলে চলুন আমার সাথে আগামী অধ্যায়ে।

.

৯. POWER READING FOR INFORMATION

আপনি যে ক্লাসে, যে বিষয়েই পড়ন না কেন, প্রথমেই আপনাকে পাঠ্যবইগুলো পড়তে হবে। অনেকেই শুধু নোট বই পড়েন। এর ফলাফল মারাত্মক। কারণ, এখন আপনি ভাল নম্বর পেয়ে পাস করলেও কর্মজীবনে পড়বেন নানা সমস্যায় । কারণ, আপনার মাঝে থাকবে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব। সব বিষয়েই ভাসা-ভাসা জ্ঞান থাকায় কর্মজীবনে সাফল্য পাবেন না। এখন, আপনি বলতে পারেন, পাঠ্যবই পড়তে প্রচুর সময় লাগে। আর এত পড়া পরীক্ষার আগে রিভিশন দেওয়া সম্ভব না। এ বিষয়ে আপনার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। তাই, আপনাকে এখন জানাতে চাই কীভাবে আপনি আপনার পড়ার সময় ৮০ ভাগ কমিয়ে ফেলবেন আর মনে রাখতে পারবেন। আগের চেয়ে ৪ গুণ বেশি তথ্য!

এ জন্য আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে যে, পাঠ্যবইয়ে অপ্রয়োজনীয় শব্দের সংখ্যাই বেশি এবং তা শতকরা ৮০ ভাগ জায়গা দখল করে থাকে। প্রয়োজনীয় শব্দ দখল করে ২০ ভাগ জায়গা। তাই সেই ২০ ভাগ তথ্য যদি আপনি মনে রাখতে পারেন তা হলে বাকি ৮০ ভাগ পড়ার কোন দরকার নেই। এ ৮০ ভাগ শব্দের কাজ হলো, আপনাকে যে তথ্যগুলো জানানো প্রয়োজন তাদের মাঝে সংযোগ সাধন করা। আপনি যখন প্রথমবার কোনকিছু পড়েন তখন এ শব্দগুলো আপনাকে কোন তথ্য বুঝতে সাহায্য করে। কিন্তু, দ্বিতীয়বার বা রিভিশনের সময় এগুলো হলো শুধুই জঞ্জাল। তাই, বাকি ২০ ভাগ শব্দ, যা আপনাকে প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিচ্ছে তাদের আমরা নাম দিতে পারি Key word. এটা অনেকটা জাল দিয়ে মাছ ধরার মত। এক্ষেত্রে পুকুরের পানি আপনার খাবার কাজে লাগছে না। আপনার লক্ষ্য মাছ খাওয়া। এখন, Power Reading, বা জালের মাধ্যমে আপনি মাছ, মানে তথ্য তুলে আনলেন। তারপর, মাছ নিশ্চয়ই আপনি কাঁচা খাবেন না। তাতে মশলা মিশিয়ে রান্না করবেন। এ ধাপটার নাম Mind Mapping. ® একটা চ্যাপ্টারকে নদী বা পুকুর ধরা হলে তার মাছগুলো তুলে সাজিয়ে ফেললে আপনাকে বারবার জাল ফেলতে হবে না। আমি জানি, আপনি এখনও আমার কথাগুলো ঠিকমত বুঝতে পারেননি। তা হলে, নীচের প্যাসেজটা পড়ুন

‘বেশ কিছুদিন যাবৎ বিজ্ঞানীদের গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে যে, মানুষের ব্রেনকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। আর, তা হলো বাম ব্রেন আর ডান ব্রেন। এ গবেষণায় আরও জানা যায়, ব্রেনের ডান অংশ নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের বাম দিক আর বাম অংশ নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের ডান দিক। এটা জানার জন্য বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন। আর, এর ফলে তারা দেখতে পান, যদি ব্রেনের ডান দিক নষ্ট হয়, তা হলে শরীরের বাম দিক অকেজো হবে, আর ব্রেনের বাম দিক নষ্ট হলে শরীরের ডানদিক অকেজো হয়ে পড়ে। তা হলে, এ সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, ব্রেনের যেদিক নষ্ট হবে, শরীরে তার উল্টোদিক নিঃসাড় হয়ে যাবে।’

এই প্যাসেজটা পড়ে আপনি নির্দিষ্ট সংখ্যক তথ্য পাচ্ছেন।

এবার, নীচের প্যাসেজটা পড়ন।

‘মানুষের ব্রেনের দু’টি ভাগ-ডান আর বাম। ডান ব্রেন নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের বাম অংশ। বাম ব্রেন শরীরের ডান অংশ। ব্রেনের ডান দিক নষ্ট, শরীরের বামদিক অকেজো। ব্রেনের বামদিক নষ্ট শরীরের ডানদিক অকেজো। ব্রেনের যে অংশ নষ্ট, শরীরের বিপরীত দিক নিঃসাড়।’

দেখুন, এ কয়টি শব্দ পড়লেই কি সবগুলো তথ্য পড়া হয়ে যাচ্ছে না? এ শব্দগুলোই Key word. এবার, বাকি শব্দগুলো পড়ে দেখুন–

‘বেশ কিছুদিন যাবৎ বিজ্ঞানীদের গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে। ভাগ করা যায়। ব্রেন/ব্রেন/এ গবেষণায় আরও জানা যায়/করে/নিয়ন্ত্রণ করে/এটা জানার জন্য বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করেন/আর তারা এর ফলে দেখতে পান যে/যদি হয়/হয়।/ব্রেনের/হলে/ হয়ে পড়ে/ তা হলে এ সিদ্ধান্তে আসা যায়/হবে/তার/হবে।

দেখুন, এই এতগুলো শব্দ থেকে আপনি কী জানতে পারছেন? এ শব্দগুলো আপনাকে প্রথমবার পড়তে সাহায্য করে। এরপর এদের কোন প্রয়োজন নেই। যে কোন পাঠ্যবইয়ের ৮০ ভাগ অংশ এরা দখল করে রাখে। আপনার কাজ হলো, বাকি ২০ ভাগ অংশকে আলাদা করে ফেলা এবং তাদের সাজিয়ে নোট বানানো। তার বর্ণনা আছে Mind Map ® অধ্যায়ে । Key Word কোন প্যাসেজের সারাংশ বা সারমর্ম নয়। কারণ, সারাংশে মূলভাবকে লেখা হয়। এতে অনেক তথ্য বাদ পড়ে যায় । Power Reading-এ কোন তথ্যই বাদ পড়ে না । Power Reading-এর আরেকটি অংশ হলো দ্রুত পড়া।

এটা এমন এক পদ্ধতি যাতে আপনার পড়া শুধু দ্রুত হবে তাই নয়, সেই সাথে বাড়বে আপনার মনোযোগ আর বিশ্লেষণক্ষমতা। আপনি যদি অমনোযোগিতা আর বুঝতে না পারার সমস্যায় ভোগেন তা হলে জেনে রাখুন, এর মূল কারণ হলো ধীরে পড়া। আপনি আপনার ক্ষমতার চেয়ে অনেক ধীরে পড়েন। একটু চেষ্টা করলেই আপনি আপনার পড়ার গতি বাড়াতে পারবেন প্রায় তিনগুণ। তা হলে, আপনি অনেক সময় পাবেন আড্ডা দেবার বা নোট বানাবার।

অনেকেই ভাবেন, ধীরে ধীরে না পড়লে মনোযোগ আসে না। আর ঠিকমত বোঝাও যায় না। কিন্তু, সত্য হলো এই যে, এটাই তাদের অমনোযোগিতা আর না বোঝার প্রধান কারণ। পড়ার গতি যতই বাড়াবেন, আপনার মনোযোগ তত বাড়বে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখিয়েছেন যে, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ মিনিটে ২০,০০০ শব্দ পড়তে সক্ষম। কিন্তু, বেশিরভাগ মানুষই পড়েন মিনিটে ১০০-২০০ শব্দ। তারমানে, আপনি আপনার ক্ষমতার মাত্র ১% ব্যবহার করছেন। একটা উদাহরণ দিই। ধরুন, কোন। কোম্পানিতে ১০০ জন শ্রমিক আছে। কিন্তু কাজ আছে মাত্র ১ জনের। তা হলে, বাকি ৯৯ জন কী করবে? তারা প্রথমে আড্ডা দেবে, তারপর ইউনিয়ন বানাবে, একসময় কোম্পানী বন্ধ করে দেবে। ধীরে ধীরে পড়লে ঠিক এ সমস্যাটাই হয়। আপনার ১৯৯ মিলিয়ন নিউরন কাজ খুঁজে পায় না। তাই, তারা অন্য চিন্তার দিকে ধাবিত হয়। ফলে আপনার মনোযোগ থাকে না ।

আমি আগে মিনিটে ১০০-১৫০টি শব্দ পড়তাম। মাত্র তিনমাস চেষ্টা করে মিনিটে ৭০০-৮০০ শব্দ পড়তে পারছি। আমি জানি যে, আপনি চেষ্টা করলে অবশ্যই আমার চেয়ে বেশি শব্দ পড়তে পারবেন। এই দ্রুত পড়বার সুবিধা কী, সেটার আরেকটা উদাহরণ দিই ।

মনে করুন, আপনাকে একটা ঝকঝকে নতুন BMW গাড়ি চালাতে দেওয়া হলো। গাড়িটা সর্বোচ্চ ২৫০ কিমি স্পীড তুলতে পারে। এখন যদি ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে ফাঁকা রাস্তায় আপনি মাত্র ২৫ কিমি বেগে চালান তা হলে আপনার মনোযোগ কেমন থাকবে? এবার, চিন্তা করুন, আপনি এক্সেলারেটরে চাপ দিয়ে স্পীড ২০০ কিমিতে তুলে ফেলেছেন। এবার অনুভব করুন আপনার কী কী পরিবর্তন হচ্ছে। আপনি খুবই সজীব ও সতেজ হয়ে উঠেছেন, আপনার চোখ প্রশস্ত, আপনি গভীরভাবে শ্বাস নিচ্ছেন। আপনার সবগুলো ইন্দ্রিয় যে কোন অবস্থার জন্য প্রস্তুত। এখন, অন্য কোনদিকেই আপনার মনোযোগ চলে যাওয়ার চান্স নেই। আপনি যখন খুবই দ্রুতগতিতে পড়বেন ঠিক এ ঘটনাটিই ঘটে। আপনি সজীব ও সজাগ অবস্থায় থাকবেন। আপনার বোঝার ক্ষমতাও বেড়ে যাবে বহুগুণ।

এখন, নিশ্চয়ই আপনার জানতে ইচ্ছে করছে, এটা কীভাবে সম্ভব? বলছি। তার আগে আপনি বলুন তো আপনার চোখ কীভাবে পড়ে? আপনার উত্তর হয়তো হবে, বাম থেকে ডানে বা ডান থেকে বামে এক লাইন বরাবর পড়ে। আসলে ঘটনা তা নয়। আমাদের চোখ কম্পিউটারের কি বোর্ডের বর্ণমালার বিন্যাসের মত পৃষ্ঠার উপর এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। যখন কোন কিছু মনোযোগ দিয়ে পড়েন তখন এটা শব্দের ওপর থেমে থেমে পড়ে। যতবার থামছেন ততবার 14 সেকেন্ড নষ্ট হচ্ছে। সাধারণ মানের পাঠক বা ছাত্ররা একটা একটা করে শব্দ পড়েন, ফলে, প্রতিটা শব্দ পড়তে যাদি 1/2 সেকেন্ড সময় লাগে তা হলে মিনিটে ১২০টা শব্দ পড়া হয়। এটা গড়পড়তার চেয়েও কম। Power Reading-এর মূল লক্ষ্য হলো আপনার চোখের পলক ফেলবার আগেই একসাথে অনেকগুলো করে শব্দ পড়ে ফেলা। আপনি যদি একসাথে ২-৩টি শব্দ পড়েন তা হলে স্পীড হবে ২০০-৩৬০ মিনিট। এটা মাঝামাঝি স্পীড । এক সপ্তাহ চেষ্টা করলেই আপনি এ স্পীডে পড়তে পারবেন। কিন্তু, আপনার লক্ষ্য হবে একসাথে ৫-৭ টি শব্দ পড়া। তা হলে ৬০০-৮৪০টি শব্দ আপনি পড়তে পারবেন প্রতিমিনিটে। তা হলে, এখন একটা স্টপওয়াচ নিন। এ বইয়ের যে কোন অধ্যায় পড়ে ফেলুন। একমিনিটে কতগুলো শব্দ পড়লেন তা গুনে দেখে নিন আপনার বর্তমান স্পীড । এখন যদি আপনার স্পীড অনেক কম হয় তা হলে জেনে নিন এর পেছনের কারণগুলো

(১) শব্দ করে পড়া

অনেকেই ছোটবেলার এ অভ্যাস ছাড়তে পারেন না। আপনার গলার গতি কখনও চোখের ধারে কাছে নয়। আপনি যেখানে ১ সেকেন্ডে দেখতে পারছেন ২০ টি শব্দ, সেখানে পড়ছেন ১ টি শব্দ। ফলে, যেটা মুখে উচ্চারণ করবেন, সেটা দেখে চোখ পরবর্তী কয়েকটা শব্দ ঘুরে দ্বিতীয় শব্দে আসে। ফলে, মনোযোগ হয় পথভ্রষ্ট। আপনি যদি কবিতা আবৃত্তি করেন বা নাটকে অভিনয় করেন, তা হলে এ পদ্ধতিতে সংলাপ মুখস্থ করতে পারেন। কিন্তু, পড়ালেখার জন্য এটা কোন পদ্ধতি নয়। অবশ্য বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এভাবে পড়তে পারে। তাদের জন্য এ পদ্ধতি ভাল। কিন্তু, এ পদ্ধতি আপনার পড়ার গতিকে খুবই কমিয়ে দেয়।

(২) ঠোঁট নাড়ানো

আপনার কি পড়ার সময় ঠোঁট নড়ে? এটাও আপনার গতি কমিয়ে দেয়।

(৩) মনে মনে পড়া অনেকেই ঠোঁট কিংবা জিভ নাড়ান না, তবে পড়ার সময় তাঁদের মনে মনে আরেকজন পাঠ করে। এই ভেতরের কণ্ঠস্বর আপনাকে অনেক ধীর করে ফেলে, আপনার সময় নষ্ট করে।

(8) বারবার পড়া এটা সবচে কমন সমস্যা। অনেকেই দু’লাইন পড়ে আবার প্রথম থেকে শুরু করেন। তাদের পড়ার গতি মিনিটে ৫০-১০০। এর মূল কারণ হলো আত্মবিশ্বাসের অভাব। নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। আপনার এ স্বভাব ঝরে যাবে অচিরেই।

(৫) শব্দ ধরে পড়া আগেই বলেছি, প্রতিটা শব্দ আলাদা আলাদা করে পড়লে মিনিটে ১২০টার বেশি শব্দ পড়া সম্ভব নয়।

(৬) কম শব্দ দেখা আমাদের প্রত্যেকেরই ক্ষমতা আছে একসাথে ৫-৭টা শব্দ দেখার। কিন্তু, আমরা তা করি না। বেশি শব্দ না দেখলে আপনার পড়ার গতি বাড়বে না।

এবার তা হলে পড়ার স্পীড বাড়ানোর কিছু অনুশীলন দেওয়া হলো–

(১) একটা কলম, পেন্সিল বা মার্কারকে পেসার (Pacer)

হিসেবে নিন । আপনি দেখবেন, বই পড়তে গেলে আপনার চোখ মাঝে মাঝে দু’তিন লাইন নীচের কিছু শব্দ দেখে আবার পড়ার লাইনে চলে আসে। তাই, চোখের এই ইতস্তত ভ্রমণ বন্ধ করতে হাতে কলম নিন! এটা আপনার লক্ষ আর মনোযোগ বৃদ্ধি করবে। এ কলমকে লাইনের উপর আপনার বর্তমান গতির চেয়ে অনেক দ্রুতগতিতে সরাবেন। এখনই একটা কলম নিয়ে এ প্যারাটা আবার পড়ন। দেখুন, আপনার গতি আর মনোযোগ কতখানি বেড়ে গেছে।

(২) Key Word বের করা

প্রথমেই মাথায় রাখুন যে, প্রতিটা প্যারা একটা Key Idea নির্দেশ করে আর তার ব্যাখ্যা করে কিছু Key word. প্রথমবার পড়বার সময় Key Word-গুলোকে খুঁজুন। দ্বিতীয়বার পড়ার সময় সেগুলো দাগ দিয়ে আলাদা করে ফেলুন। এই আইডিয়া নিয়ে পড়লে আপনার মনোযোগ অনেক বেড়ে যাবে।

(৩) একসাথে ৫-৭টা শব্দ পড়ার চেষ্টা করুন

নীচে দুটি কলাম আছে। প্রথমে বাম দিকেরটা পড়ন। আপনার চোখকে মাঝখানের শব্দের উপর রাখুন। এবার চোখ না নাড়িয়েই প্রথমে বামে, পরে ডানের শব্দটা পড়ন। এবার কলামের মাঝ বরাবর নীচের দিকে নামুন এবং চোখ মাঝ বরাবর রেখেই প্রথমে বাম, পরে ডানের শব্দ পড়ন। এবার, ডান দিকের কলামে যান। আপনার কলম মাঝখানের শব্দের নীচে রাখুন এবং একই ভাবে বাম ও ডানের শব্দ পড়ে নীচের লাইনে যান। খেয়াল রাখবেন যেন আপনার চোখ প্যারার মাঝ বরাবর নীচে নামে।

A B Cএখন  আপনি  জানেন কীভাবে  পড়তে  হবে তাই  আপনি  আগের চেয়ে  দ্রুত  পড়তে পারছেন।  আরও  দ্রুত পড়তে  শিখবেন শীঘ্রিই।
N V D
K B L
N E K
P Q R
S Z M

এবার ডানদিকের কলামের মাঝ বরাবর যে দাগ টানা আছে তা ধরে প্রথমে বামে পড়ে, তারপর ডানে পড়ে নীচের লাইনে যান।

ক খ গ চ জ প ব ভ ম র চ ছ ল ন ঝ অ ক ত দ ন ধ স শ হ র ব গ ঙ থ দ ক খ গ চ গ প ব ঙ ম ল গ ব প ফ ব ভ ম য র ল স শ হ ত থ দ ধ   ঙ ঝ ফঅনেকেই ভাবেন ধীরে ধীরে না পড়লে মনোযোগ আসে না। আর ঠিকমত বোঝাও যায় না। কিন্তু, সত্য হলো এই যে এটাই তাদের না বোঝার প্রধান কারণ। পড়ার গতি যতই বাড়াবেন, আপনার মনোযোগ ততই বাড়বে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখিয়েছেন যে, একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ মিনিটে ২০,০০০ শব্দ পড়তে সক্ষম, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই পড়েন ১০০-২০০ শব্দ। তার মানে, আপনি আপনার ক্ষমতার মাত্র ১% ব্যবহার করছেন। একটা উদাহরণ দিই। ধরুন, কোন কোম্পানীতে ১০০ জন শ্রমিক আছে। কিন্তু, কাজ আছে মাত্র ১জনের। তা হলে, বাকি ৯৯ জন কী করবে? তারা প্রথমে আড্ডা দেবে তারপর ইউনিয়ন বানাবো, একসময় কোম্পানী বন্ধ করে দেবে। ধীরে পড়লে এসমস্যাই হয়।

এখন, প্রায় সব বইয়েই দু’টি কলামে লেখা হয়। এটা করা হয়েছে দ্রুত পড়ার জন্যই। এভাবে পড়তে পারলে আপনার পড়ার গতি অনেক, অনেক বেড়ে যাবে।

(৪) দ্রুতগতির গান বা মিউজিক শোনা অভ্যাস করুন

পড়ার আধঘণ্টা আগে দ্রুতগতির গান বা মিউজিক শুনুন। একেবারে শব্দহীন পরিবেশে পড়া ভাল হয়, এটা ঠিক না। কারণ দেখবেন, আপনার ভেতর তখন আরেকজন মনে মনে কথা বলতে থাকে। সেটা যদি এড়াতে চান তা হলে দ্রুতলয়ে মিউজিক খুবই কম ভলিউমে লাগিয়ে পড়তে পারেন। এতে পড়ার সমস্যা হলে মিউজিক বন্ধ রেখেই পড়ন।

(৫) প্রত্যেক চ্যাপ্টার পেছন থেকে পড়া অভ্যাস করুন

অনেক ছাত্রই কোন চ্যাপ্টার পড়বার আগে প্রশ্ন দেখতে চান না। বেশিরভাগ পাঠ্যবইয়ের অধ্যায়ের শেষে সে অধ্যায়ের প্রশ্ন দেওয়া থাকে। যদি প্রশ্ন না থাকে তা হলে নোট বই বা টেস্ট পেপার অথবা বিগত বছরের প্রশ্ন যোগাড় করুন। চ্যাপ্টারের নামটা দেখে প্রথমেই এর প্রশ্নগুলো দেখে নিন। তা হলে, আপনার ব্রেন বুঝতে পারবে কোন অংশগুলো গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে ভাল হয়, প্রথমে একটা সাদা কাগজে একটা চ্যাপ্টারের সম্ভাব্য প্রশ্নগুলো লিখে ফেললে। তারপর, পড়া শুরু করুন। লক্ষ রাখুন, সবকটা প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা হচ্ছে কিনা। এতে কী লাভ হবে তা আপনি এখন একটা চ্যাপ্টার পড়েই দেখুন। আপনার মনোযোগ, আর বোঝার ক্ষমতা দুটোই অনেক বেড়ে যাবে। একটা প্যারা আপনি যতটা অবহেলায় পড়তেন, প্রশ্ন জানা থাকায় আপনি সে প্যারাটাই পড়বেন অনেক মনোযোগ দিয়ে। ফলে, আপনার পড়ার মান ও মনে রাখার ক্ষমতাও বাড়বে।

(৬) নিজের উপর বল প্রয়োগ করুন

আপনি কি জানেন, দৌড়বিদরা কীভাবে ট্রেনিং করেন? ট্রেনিং সেশনে তাদের পায়ে ভারী ওজন বেঁধে দেওয়া হয়। এতে তারা যতই অস্বস্তি বোধ করুন না কেন, তাদের মাংসপেশী অনেক সবল হয়। ফলে, যখন ওজন খুলে দৌড়াতে বলা হয়, তাদের স্পীড তখন বেড়ে যায় বহুগুণ। আপনাকেও এ অভ্যাস করতে হবে। Power Reading-এ প্রত্যেকবার আগের চেয়ে দ্রুত পড়ার উপর চাপ দিন। প্রথমে খুব অস্বস্তি হবে। মনে হবে, কিছুই বুঝতে পারছেন না। আমার নিজেরও এ সমস্যা হচ্ছিল। প্রথম দু’সপ্তাহ কী পড়ছি না পড়ছি কিছু বুঝিনি। তবুও আমি স্পীড বাড়িয়ে গেছি। একসময় দেখলাম, সবকিছু বুঝতে পারছি। মোটামুটি, একমাস সময় লাগে এতে অভ্যস্ত হতে। তারপর, আপনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন। কারণ, এটা অদ্ভুত আনন্দের সৃষ্টি করে। আপনি যখন মিনিটে ৭০০-৮০০ শব্দ পড়ে ফেলবেন, আর তা মনেও রাখতে পারবেন, তখন আপনার খুবই আনন্দ হবে। তবে, অবশ্যই এটা প্র্যাকটিসের ব্যাপার। আমার ১ মাস লাগলেও আপনি হয়তো আরও দ্রুত পারবেন। এ অধ্যায়ের অনুশীলনগুলো করে চলে আসুন সুপার মেমোরীতে।

(৭) কল্পনাশক্তির যথাযথ ব্যবহার করুন

আমাদের ব্রেনকে যথাযথ স্টিমুলেশন দেওয়া হলে তা কল্পনা ও বাস্তবের মাঝে পার্থক্য বুঝতে পারে না। আমরা যখন কল্পনা করি তখন বাস্তবের মতই নিউরোকানেকশন তৈরি হয়। বিশ্বাস হচ্ছে না! তা হলে এখনই একটা পরীক্ষা করে দেখুন। নীচের প্যারাটি পড়ে তা কল্পনা করুন।

আপনার বাসায় একটা ফ্রিজ আছে। ফ্রিজ থেকে একটা কাঁচা লেবু বের করুন। অনুভব করুন লেবুটা কেমন ঠাণ্ডা, দেখুন এর হালকা সবুজ রং। এবার লেবুটা টেবিলে একটা প্লেটের উপর রেখে ধারাল ছুরি দিয়ে কাটুন। দেখুন, কাটার সময় লেবুটা থেকে রস ছিটকে বেরুচ্ছে। আপনার হাতের আঙুল ঠাণ্ডা লেবুর রসে ভিজে গেছে। এবার কাটা টুকরোটা আপনার মুখে ঢুকিয়ে চিবুতে থাকুন। জিভ দিয়ে স্বাদ নিন। কতটা টক!

আপনি যদি ঠিকমত কল্পনা করে থাকেন, তা হলে এতক্ষণে আপনার মুখে লালার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। আর লেবু চিবানোর সময় আপনার মুখ কুঁচকে গেছে। কিন্তু দেখুন, বাস্তবে এ লেবুটার কোন অস্তিত্বই নেই।

রাশিয়ার জিমন্যাস্টিক সাফল্য

অনেক বছর ধরে জিমন্যাস্টিকে রাশিয়ার একাধিপত্য ছিল। আমেরিকানরা তাদের সমান কিংবা বেশি পরিশ্রম করেও তাদের চেয়ে ভাল ফলাফল করতে পারছিল না। এরপর, তারা গোয়েন্দা নিয়োগ করে। যার ফলে জানা যায় যে, রাশিয়ানরা জিমন্যাস্টদের জন্য স্পোর্ট সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করেন। তারা প্রত্যেক খেলোয়াড়কে প্র্যাকটিসের পাশাপাশি দু’ঘণ্টা করে প্রতিদিন কাল্পনিক প্র্যাকটিস করান। কল্পনায় তারা নিখুঁত ডাইভিং, ব্যালান্স রাখা প্র্যাকটিস করেন। তাঁদের এই কল্পনার অনুশীলনই নিখুঁত ফলাফল লাভে সাহায্য করে।

Voodoo

ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের মানুষরা Voodoo আর ব্ল্যাক ম্যাজিকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, কোন অন্যায় করলে বা যাদুকরদের বিরুদ্ধে কোন কাজ করলে যাদুকররা এমন অভিশাপ দেন যে, আগামী নতুন চাঁদের আগেই তুমি মারা যাবে।’ এ অভিশাপ শোনার পর তাদের বিশাল সাইকোলজিক্যাল পরিবর্তন ঘটে ।. অমাবস্যা যতই এগিয়ে আসতে থাকে, তারা ততই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে, দেখা যায়, তারা সত্যি সত্যিই মারা যায়। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, এসব লোকদের কোনও শারীরিক সমস্যা ছিল না। শুধুমাত্র বিশ্বাসের প্রবল শক্তিই তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা

এ পরীক্ষাটি করা হয় আমেরিকার একটি ভার্সিটিতে। বাস্কেটবল খেলার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই এমন ২৪ জন সমবয়সী ছেলেকে বাছাই করা হয়। তাদের সবাইকে ১ সপ্তাহ একসাথে বাস্কেটবল ট্রেনিং দেয়া হয়। এরপর তাদেরকে সমান তিনটি দলে ভাগ করা হয়। প্রথম দল ২য় সপ্তাহে ট্রেনিং করে বাস্কেট বা স্কোর করার। দ্বিতীয় দল ২য় সপ্তাহে ট্রেনিং করে একজন সাইকিয়াট্রিস্টের অধীনে। তারা দিনে দু’ঘণ্টা করে মানসিক অনুশীলন করে বাস্কেট করার । আর তৃতীয় দলকে খেলা বা মানসিক অনুশীলন কোনটাই করতে দেয়া হয়নি।

দু’সপ্তাহ পর এ তিনটি দলের পারফর্মেন্স দেখা হয়। দেখা গেল, তৃতীয় দলের পারফর্মেন্স আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে । আর, প্রথম ও দ্বিতীয় দলের পারফর্মেন্স সমপরিমাণ অর্থাৎ ৫০% ইমপ্রুভড হয়েছিল ।

বিখ্যাত গলফার টাইগার উডস তাঁর প্রতিটা শট মারার আগে কল্পনা করে নেন কতটা জোরে মারলে বল গর্তে পড়বে। ফলে, তিনি নিখুঁত স্কোর করেন।

তাই, আপনি যদি সঠিকভাবে কল্পনাকে ব্যবহার করতে পারেন তা হলে আপনিও লাভ করবেন এমন সাফল্য। পরবর্তী অধ্যায়ে কল্পনাকেও ব্যবহারের উপায় বলা হয়েছে। আসুন তা জেনে নেই।

১০. Super Memory

আমার দেখা বেশিরভাগ ভাল বা খারাপ ছাত্রের মূল সমস্যা হলো মনে না থাকা। যত ভালভাবেই পড়া হোক না কেন, মনে থাকে না। কেউ একটা তথ্য দু’দিন, কেউ হয়তো দু’মাস মনে রাখতে পারেন। কিন্তু, তারপর ভুলে যান। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রচুর পড়বার পরে পরীক্ষার হলে গিয়ে কিছুই মনে পড়ছে না। হয়তো, এ প্রশ্নটাই আপনি সবচেয়ে ভাল মুখস্থ করেছিলেন, হয়তো, এ অংকটাই আপনি বাসায় তিনবার করে এসেছেন, কিন্তু কোন লাইনে সূত্র বসালে অংকটা মিলবে তা বের করতে পারছেন না। স্মৃতিশক্তির এমন বিড়ম্বনা এত বেশি যে, প্রায় সবাই ভাবেন এটা ঈশ্বরপ্রদত্ত। কিন্তু, ভুল কথা । দেখুন, আপনিই হয়তো আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা একেবারে নিখুঁতভাবে মনে রাখতে পারছেন। কিন্তু, আজকে সকালে কী দিয়ে নাস্তা করেছেন, মনে করতে পারছেন না। কোন কিছু মনে থাকার পেছনে অনেকগুলো কারণ কাজ করে যা আমি পরে ব্যাখ্যা করব । তবে, প্রথমে জেনে নিন, মনে রাখা জরুরী কেন? আপনি যে বিষয়ের ছাত্রই হোন না কেন, কিছু তথ্য আপনাকে মনে রাখতেই হবে। অংক, বাংলা, বিজ্ঞান বিষয় যাই হোক, আপনাকে কিছু তথ্য মনে রাখতেই হবে।

বিখ্যাত স্মৃতিশক্তি বিশেষজ্ঞ হ্যারি লোরেন (Harry Lorayne) বলেছেন, ভাল মেমোরী, খারাপ মেমোরী বলে কিছু নেই। মেমোরী দু’ধরনের-ট্রেইন্ড আর আনট্রেইন্ড । কোন কিছু মনে রাখতে হলে আপনাকে মনে রাখার কৌশলগুলো জানতে হবে এবং সেগুলোকে ব্যবহার করা শিখতে হবে। যে কোন তথ্যকে মনে রাখার তিনটি ধাপ আছে–

১। তথ্য সংগ্রহ

২। তথ্য সাজানো বা জমা করা

৩। তথ্যকে কাজে লাগানো ।

তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষমতা মোটামুটি সবারই সমান। আপনি আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনাই ব্রেনে সংরক্ষণ করে রাখছেন। কিন্তু, তা মনে করতে হলে দরকার তথ্যগুলোকে সাজিয়ে সংরক্ষণ করা। ধরুন, আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লাইব্রেরীতে গিয়েছেন একটা বই খুঁজতে। দেখবেন, লাইব্রেরীতে ঢোকার মুখেই বইয়ের ক্যাটালগ আছে। প্রথমে বিষয়ের উপর, তারপর লেখকের নাম, তারপর বইয়ের নাম অনুসারে সাজানো আছে। তাই, আপনি অতি সহজেই বইটা বের করে ফেলতে পারছেন। কিন্তু, যদি এমন হতো যে, লাইব্রেরীটাতে গুদামঘরের মত সবগুলো বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা, তা হলে আপনার কাঙ্ক্ষিত বই খুঁজে বের করতে কতক্ষণ লাগবে? আপনার ব্রেন এমনই এক সমৃদ্ধ লাইব্রেরী। এতে শুধু তথ্য নয়, ভিডিও, গানবাজনা সবই সংরক্ষিত আছে। এখন যদি আপনি তাদের অগোছালোভাবে সাজিয়ে রাখেন, তা হলে তা আপনার কোন কাজে আসবে না।

মেমোরী হচ্ছে বিভিন্ন তথ্যের মাঝে সংযোগ। আপনাকে নতুন কোন তথ্য মনে রাখতে হলে পুরানো তথ্যের সাথে তাকে যোগ করুন। তা হলেই মনে রাখাটা সহজ হবে। ধরুন, এমন একজনের সাথে আপনার আলাপ হলো যার নাম হানিফ। আপনি জানেন, হানিফ সংকেত জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির উপস্থাপক। এখন, আপনি তার সাথে এ লোকটার তুলনা করুন। ইনি কি হানিফ সংকেতের মত সুন্দর করে কথা বলতে পারেন? তার সাথে হানিফ সংকেতের মিল আর অমিল কোথায়? দেখবেন, পরবর্তীতে এ লোকের সাথে দেখা হলেই আপনি মনে করতে পারবেন তাঁর নাম হানিফ।

আপনি হয়তো ফটোগ্রাফিক মেমোরীর কথা শুনেছেন। Hypernesia (ফটোগ্রাফিক মেমোরী) বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, যারা এ ক্ষমতার অধিকারী তাঁরা কতগুলো বিশেষ নিয়ম পালন করে নিজেদের মাঝে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করেন যে, তখন তাঁরা যাই দেখেন, তাই মনে রাখতে পারেন। আর আপনি যদি কোন কিছুকে অভ্যাসে পরিণত করেন তা হলে তা নিজে নিজেই হতে থাকে। যেমন-কসাইকে দেখুন, মাংস টুকরো করার সময় কত দ্রুত কাজ করেন। সেকেন্ডের ভগ্নাংশের এদিক সেদিক হলেই তাঁর হাত ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে যাবে। কিন্তু, অভ্যাস তাঁদের এতটা নিশ্চিত করেছে। এ মেমোরীতে প্রিন্সিপালের ৭টা নিয়ম আছে। আপনি যদি ঠিকমত চর্চা করেন হয়তো একদিন আপনিও হয়ে উঠবেন ফটোগ্রাফিক মেমোরীর অধিকারী। তা হলে চলুন, প্রথম নিয়মটা জেনে নেই–

১. Visualization বা দেখা

দেখা হলো মনে রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। আমাদের মন চিন্তা করে ছবি আর শব্দের মাধ্যমে। তবে, ছবির ক্ষমতা মনে রাখার ক্ষেত্রে অনেক বেশি শক্তিশালী। প্রমাণ চান? তা হলে, যে কোন পাঠ্যবই খুলে দু’ঘণ্টা পড়ন। কোন রিপিট করবেন না । এবার, দু’ঘণ্টা আপনার প্রিয় নায়কের একটা ছবি দেখুন। এবার কী পড়লেন তা মনে করুন। আর কী দেখলেন তা মনে করুন । পার্থক্যটা হবে পাহাড় প্রমাণ। আপনার পাঠ্যবইয়ের দু’তিন লাইনের আবছা আবছা স্মৃতি মনে আসছে আর ছবির কাহিনি আপনি বলতে পারছেন সবটাই। যদি গল্পের বই পড়েন, তা হলে আপনি কল্পনা করেন দেখে কিছু ঘটনা মনে করতে পারবেন। কিন্তু লাইন বাই লাইন বলতে পারবেন না। তাই, Visualization সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

২। Association বা পারস্পরিক সম্পর্ক

যে কোন তথ্য মনে রাখবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো, সম্পর্ক স্থাপন করা। নিজের আগে থেকে জানা তথ্যের সাথে নতুন তথ্যের মিল আর অমিল লক্ষ করলেই মনে রাখা সহজ হয়। যেমন: পদার্থবিদ্যার কৌণিক গতিসূত্র বুঝতে হলে প্রথমে জানতে হবে সাধারণ গতিসূত্র এবং অবশ্যই গতি বলতে কী বোঝায়? সাধারণ গতিসূত্র জানা থাকলে, তার সাথে কৌণিক কী পরিবর্তন ঘটে, তা জানলেই কৌণিক গতিসূত্র মনে রাখা সহজ হয়।

৩। কোন ঘটনাকে অসাধারণভাবে উপস্থাপন করা

আমি যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করি, শেষ জন্মদিনে কী খেয়েছিলেন, বলতে পারবেন? যদি গত একমাসের ভেতর আপনার জন্মদিন থাকে, তা হলে হয়তো পারবেন। এবার, মনে করুন, গত জন্মদিনে আপনার চোখ বেঁধে বন্ধুরা একটা জিনিস খেতে বলল। খুব খুশি হয়ে মুখে দিতেই আঁতকে উঠলেন। কারণ, সেটা ছিল একটা জ্যান্ত তেলাপোকা। এবার কি আপনি ভুলতে পারবেন? যদি, আরও ৫০ বছর পার হয়ে যায়, তবুও এ ঘটনা মনে থাকবে। তাই, কোন ঘটনা মনে রাখতে হলে অসাধারণ কিছু তৈরি করতে হবে ।

৪। কল্পনা

কল্পনা আমাদের মনে রাখার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কোন তথ্য মনে রাখার জন্য আপনার কল্পনা আর সব কটা ইন্দ্রিয়ের সাহায্য নিন। ধরুন, আপনার মনে রাখতে হবে, কলা। তা হলে কল্পনা করুন, একটা কলা। দেখুন, এটা কি সবুজ না হলুদ? এর আকৃতি, গন্ধ অনুভব করুন। এবার স্পর্শ করুন। এর খোসা ছিলে খেয়ে ফেলুন। দেখুন, এটা কি মিষ্টি, ভেজা না স্যাঁতসেঁতে? ব্যবহার করুন আবেগকে। কলা খেয়ে আপনার মনে আনন্দ হচ্ছে। আপনার পঞ্চইন্দ্রিয়-দেখা, শোনা, স্পর্শ, ঘ্রাণ, স্বাদ, আপনার সব আবেগ, রাগ, ঘৃণা, হতাশা, আনন্দ সবকিছুকে ব্যবহার করুন তথ্য মনে রাখার জন্য। কারণ, আপনি যত বেশি দিক থেকে তথ্যকে মনে রাখতে চেষ্টা করবেন, ততই আপনার নিউরোকানেকশন সবল হতে থাকবে। ফলে, আপনার স্মৃতি হয়ে যাবে ফটোগ্রাফিক।

৫। রং

আপনার কল্পনায় আর নোটে বিভিন্ন রংয়ের ব্যবহার আপনার স্মৃতিশক্তিকে ৫০ গুণ বাড়িয়ে দেয়।

৬। ছন্দ

মনে রাখবার আরেকটা ভাল মাধ্যম হলো ছন্দ। একটু ভেবে দেখুন, কোন চেষ্টা ছাড়াই, নতুন গানের দু’চার লাইন আপনি মনে রাখতে পারেন। ছোটবেলায় শেখা অনেক ছড়া আজও আপনি মনে রেখেছেন। তাই ছন্দ ব্যবহার করুন এবং নিজেই উদ্ভাবন করুন।

৭। সমন্বয় সাধন

সম্পূর্ণতার ধারণা আপনার মনে রাখার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় । একটা চ্যাপ্টারের সম্পূর্ণ ধারণাকে একীভূত করে নোট তৈরি করলে সেটা আপনার জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে। আজকাল অনেকেই একটা চ্যাপ্টারের দু’তিনটা প্রশ্ন পড়েই পরবর্তী চ্যাপ্টারে চলে যান। এতে যে ভাসা-ভাসা জ্ঞান লাভ হয় তার পরিণতি ভয়ঙ্কর। আমি নিজেও এভাবে পড়তাম। তাই, ভাল নম্বর পেলেও মনের ভেতর খচখচ করত যে, কিছুই তো শিখতে পারলাম না। তাই, নিজের বিবেকের কাছে মুক্ত থাকতে হলে সমন্বিত ধারণা নিয়ে পড়তে হবে।

এ সাতটি পদ্ধতিকে একীভূত করে পড়া কীভাবে সম্ভব তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে Mind Mapping অধ্যায়ে। এখন দেখুন, এর কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবহার।

লিংক পদ্ধতি

এ পদ্ধতিতে কিছু নির্দিষ্ট শব্দ বা Main points-গুলোকে মনে রাখা সহজ হয়। এর মাধ্যমে আপনার কল্পনা ব্যবহার করে Key word-গুলো মনে রাখা হয়। এতে আছে দুটো স্টেপ-দেখা আর সম্পর্ক স্থাপন।

১। দেখা

যে তথ্য আপনি মনে রাখতে চান তার একটা ছবি কল্পনার চোখে দেখুন। যেমন, কলম শব্দটা মনে রাখতে হলে কল্পনা করুন একটা কলম। এবার দেখুন, এটা কোন কোম্পানীর, বল পয়েন্ট না জেল, লেখা কি মসৃণ না খসখসে ইত্যাদি। যদি ১০টা শব্দ মনে রাখতে হয় তাদের আলাদা আলাদাভাবে মনে করুন।

২। সম্পর্ক স্থাপন

এবার আপনাকে এ দশটা শব্দের মাধ্যমে একটা গল্প বানাতে হবে। মনে করুন, আপনি একজন ফিল্ম ডাইরেক্টর। আপনার এখন ছবি বানাতে হবে। গানের সুর বা ছন্দে অথবা ঘটনায় আপনার কল্পনার মুভি বানিয়ে ফেলুন।

উদাহরণ

ধরুন, বাজার থেকে আপনাকে নীচের ১২ টা জিনিস আনতে হবে।

১. ডিম৫. চা পাতা৯. আলু
২. গরুর মাংস৬.টমেটো১০. কলম
৩. তোয়ালে৭. সাবান১১. খাতা
৪. গুড়ো দুধ৮. টুথব্রাশ।১২. চিনি

এবার, প্রথম ধাপ। প্রতিটা জিনিসকে আলাদা আলাদা ভাবে কল্পনা করুন। আপনার সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করুন। এবার, আপনি আমার গল্পটা কল্পনা করুন।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই আয়নাতে দেখতে পেলেন আপনি হয়ে গেছেন জেমস বন্ড । আপনি এখন অবস্থান করছেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। ঝকঝকে নতুন টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মেজে, সুগন্ধি সাবান দিয়ে গোসল করে, ভোয়ালে জড়িয়ে আরাম করে হেলান দিলেন সোফায়। এবার, রুম সার্ভিসকে ফোন করে বললেন নাস্তা দিতে। এর ফাঁকে জরুরী একটা চিঠি লিখতে হবে । হোটেলের খাতায় কলম দিয়ে দ্রুত লিখে ফেললেন। এবার, পোশাক পরে রেডি হতেই বেয়ারা খাবার নিয়ে আসল। আপনার ঘর ভরে গেছে গরুর মাংসের গন্ধে। প্লেটের উপর সুন্দর করে সাজানো আছে স্লাইস করা ডিম, আলুভাজা আর টমেটোর সালাদ। খাওয়া শেষ করে চা তৈরি করলেন টি ব্যাগ, গুড়ো দুধ আর চিনি দিয়ে। এবার চা খেয়েই বেরিয়ে পড়লেন নতুন অ্যাডভেঞ্চারে।

এবার বইটা বন্ধ করুন। বলুন তো, বাজারের লিস্টে কী কী আছে? কিছু বাদ পড়ছে কি?

হ্যামিল্টনের পদ্ধতি

বিখ্যাত শিক্ষাবিদ ডন হ্যাঁমিল্টন (Dawn Hamilton) কোন বিষয় দীর্ঘদিন মনে রাখার জন্য সাতটি ধাপে পড়তে বলেছেন। সেগুলো হলো:

(১) Break the information into small segments. অর্থাৎ পড়ার বিষয়গুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ফেলুন।

(২) Attach meaning to information. প্রতিটি তথ্যকে বোঝার চেষ্টা করুন।

(৩) Make it interesting. তথ্যগুলোকে আকর্ষণীয়ভাবে সাজান।

(8) Use imagination. কল্পনা করুন।

(৫) Actively engage brain. অর্থাৎ পড়ন, লিখুন, নোট তৈরি করুন।

(৬) Reinforcement via repeatation. বার বার পড়ে তথ্যগুলোকে স্মৃতিতে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করুন।

(৭) Be relaxed. শান্তভাবে পড়ন।

Abstract word কল্পনা

এমন কিছু শব্দ আছে যেগুলো কল্পনা করা অসম্ভব। ঘটনা তৈরি করাও প্রায় অসম্ভব। এসব ক্ষেত্রে যা করতে হবে, তা হলো, এ শব্দের সাথে মিল আছে এমন শব্দ বের করা। ধরুন, Chlorine শব্দটা আপনি চিন্তা করতে পারছেন না। এখন Crawling শব্দটা আপনি জানেন। এর মানে হামাগুড়ি দেওয়া। ভাবুন, একটা শিশু হামাগুড়ি দিচ্ছে। এখন যদি আপনি Crawling মনে রাখেন তা হলে Chlorine মনে রাখতে পারবেন। সুতরাং, আপনাকে কোন শব্দ মনে রাখতে হলে Key word বের করে সেগুলো দিয়ে একটা গল্প বানাতে হবে। কোন কিছুর বৈশিষ্ট্য মনে রাখার জন্য এ পদ্ধতি কার্যকর। এ ছাড়াও আপনি বৈশিষ্ট্যের প্রথম অক্ষরগুলো দিয়ে কবিতা বানিয়েও মনে রাখতে পারেন। তবে, বিশাল বিশাল চ্যাপ্টার মনে রাখতে হলে এ পদ্ধতি কার্যকর নয়। এর জন্য দরকার Mind Map®, আপনি যদি কোন চ্যাপ্টার থেকে Mind Map বানাতে পারেন তা হলে আপনার রিভিশন দেবার সময় আর Quality এতটাই চমৎকার হবে যে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। আর, পড়ালেখাটাও হবে একটা ছবি আঁকার মতই আনন্দময়। তা হলে, আর দেরি না করে চলুন শিখে নেই Mind Mapping®.

Leave a Reply to মীর রাজেশ Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *