০১-৫. বিস্ময়যাত্রা

১. বিস্ময়যাত্রা

২০০১ সালের এক শুক্রবার সকাল। আপনি হয়তো বসে বসে ভাবছেন আজকের ছুটির দিনটা কীভাবে কাটাবেন। আপনার চিন্তার বিঘ্ন ঘটাতেই বেজে উঠল টেলিফোনটা। রিসিভার তুলেই ভরাট কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন। ফোনটা এসেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে। আপনাকে জানানো হলো আগামী তিনবছরের মধ্যে মহাখালীতে একটা ফ্লাইওভার বানাতে হবে। এর জন্য যে অর্থ প্রয়োজন তা আপনাকে দেওয়া হবে। আর কাজ শেষে পারিশ্রমিক হিসেবে পাবেন ৫০ লাখ টাকা। অভাবনীয় অফার। কিন্তু, আপনি তা সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করলেন। কারণ, আপনি কোন ইঞ্জিনিয়ার বা আর্কিটেক্ট নন। এমন কোন কাজ আপনি কখনোই করেননি। ভাবছেন, ক্রস কানেকশনে আপনার কাছে কল চলে এসেছে। কিন্তু, তা সত্যি নয়। আপনার অসম্মতি শুনে এবার আসল কথা জানানো হলো। আপনার মা সরকারের হেফাজতে আছেন। তিন বছরের মাঝে ফ্লাইওভার বানাতে না পারলে তাকে আর ফেরত পাবেন না। এবার কি আপনি রাজি?

এখন আপনার উত্তর হবে, এ কাজ করার জন্য আমি কী কী সুবিধা পাব? এই তো। খুব একটা কঠিন কাজ না। আপনি প্রথমে দেশসেরা আর্কিটেক্টের সাথে কন্ট্রাক্ট করলেন। তিনি মহাখালীর ম্যাপ নিয়ে ফ্লাইওভারের ডিজাইন বানিয়ে দিলেন। আর কীভাবে তৈরি করা হবে তা বুঝিয়ে দিলেন। এবার ছুটলেন ইঞ্জিনিয়ারের কাছে যিনি পরিচালনা করবেন। আর, যোগাযোগ করলেন কন্ট্রাক্টারদের সাথে যারা শ্রমিক সরবরাহ করবেন। এ ফ্লাইওভার বানানোর অনুমতিপত্র, বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করলেন রাজউকের সাহায্যে। মাস তিনেকের মধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেল। তিনবছর পর আপনি মহাখালীতে দেখতে পেলেন একটা চমৎকার ফ্লাইওভার।

নিশ্চয়ই এভাবে ফ্লাইওভারটা তৈরি হয়নি এ রূপক গল্পটাই এ বইয়ের সারমর্ম । আমাদের সবার, আমি আবার বলছি, সবার মাঝেই আছে অসাধারণ প্রতিভা। আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব। আমরা চাইলে করতে পারি না এমন কাজ খুবই অল্প। হয় আমাদের ইচ্ছে হয় না, ইচ্ছে হলে উদ্যোগ হয় না, উদ্যোগ হলে সময় নেই, এমন নানা অজুহাতে আমাদের প্রতিভা সুপ্তই থেকে যায়। এ বইয়ে আপনার সেই সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলে তা কাজে লাগানোর সর্বাধুনিক পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে। আপনাকে যা করতে হবে তা হলো এ বইয়ের অনুশীলনগুলো সাথে সাথে করে ফেলা। আর এগুলো পরবর্তীতে পড়ালেখা, ক্যারিয়ার বা জীবনের যে কোন ক্ষেত্রে, যাতে আপনি সফল হতে চান, তাতে কাজে লাগানো। আপনি নিজেই বিস্মিত হবেন নিজের ক্ষমতায়, আবিষ্কার করবেন নিজের অনন্যতা। তবে, আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে আর পরিশ্রম করতে হবে। এ বইটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বা বাসে চড়ে না পড়ে পড়ার টেবিলে রেখে পড়ন। সাথে রাখুন খাতা আর রঙিন কলম। পরবর্তী অধ্যায়ে আপনার জন্য আছে বিশেষ চমক। আপনি কি প্রস্তুত? তা হলে চলুন না আমার সাথে অন্য ভুবনে।

.

২. অন্য ভুবন

আপনি হয়তো অনেক জায়গায় শুনে থাকবেন মানুষের ব্রেন কম্পিউটারের চেয়ে শক্তিশালী। কিন্তু, বাস্তবে আপনি তা দেখতে পাচ্ছেন না। কম্পিউটার যে কোন কাজ সম্পন্ন করছে আপনার চেয়ে অনেক দ্রুতগতিতে। এ ছাড়া, কম্পিউটারে যে তথ্য ঢুকানো হয় তা সংরক্ষিত থাকে বহুদিন। কিন্তু, আপনি যা পড়েন তা কিছুদিন পরেই ভুলে যান। আর যদি মনে থাকে, তবুও সেটা পরীক্ষায় লিখতে বা ভাইভা বোর্ডে মনে করতে অনেক সময় লাগে। এক প্রশ্নের জায়গায় অন্য প্রশ্নের উত্তর মাথায় চলে আসে। তা হলে, কম্পিউটারের চেয়ে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব কোথায়? এবার আসুন এ কথা জেনে নেই।

আমি পাঁচ বছর ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়েছি। নিউরোলজী নিয়ে সামান্য পড়েই যা জেনেছি তা বিস্ময়কর। আমি দুয়েকটা সহজ উদাহরণ দিচ্ছি। এই যে এখন আপনি শ্বাস নিচ্ছেন, এর মাধ্যমে অক্সিজেন সমৃদ্ধ বাতাস পৌঁছে যাচ্ছে ফুসফুঁসে। এ বাতাসের অক্সিজেন ফুসফুঁসের সূক্ষ্মনালিকা ভেদ করে রক্তের লোহিত কণিকা বা RBC-তে মিশে যাচ্ছে । একইসাথে দেহের অতিরিক্ত কার্বনডাই অক্সাইড (CO2) RBC থেকে বাতাসের সাথে বের হয়ে আসছে। এখন এই (O2) সমৃদ্ধ RBC ফুসফুস থেকে চলে আসল হার্টে। এরপর হার্ট পাম্প করে রক্তের মাধ্যমে দেহের সমস্ত কোষের কাছে (O2) পৌঁছে দেয় সুষমভাবে। অর্থাৎ, যে সব কোষে বেশি দরকার সেখানে বেশি, যেখানে কম দরকার, সেখানে কম। এ কাজ করে ফিরে আসবার সময় দেহের প্রত্যেকটা কোষের বিপাকক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট কার্বনডাই অক্সাইড (CO2) কে রক্ত বহন করে নিয়ে চলে আসছে হার্টের ডান দিকে। আবার, পাম্পের মাধ্যমে তা ফুসফুঁসে গিয়ে রক্তের অতিরিক্ত (CO2) ছেড়ে দিয়ে আসে। এ ঘটনা আপনার জীবনভর চলতে থাকে। এই RBC কী পরিমাণ (O2) ধারণ করবে, দেহের কোন কোষে কতখানি (02) লাগবে তা নির্ণয় করে নানান রিসেপ্টর। এগুলোর প্রতিটা জবাবদিহি করে নিউরোরিসেপ্টরের কাছে। এদের সামান্য কোন গরমিল হলে সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে ব্রেনে খবর চলে যায়। তখন, ব্রেনের নির্দেশে শ্বাসপ্রশ্বাসের হার কমে যায় কিংবা বেড়ে যায় ।

এবার, আরেকটু সহজ উদাহরণ দিই। ধরুন, আপনি দুপুরের খাবার খেয়েছেন। আপনি খাবার মুখে দেওয়া মাত্রই লালা নিঃসরিত হলো। আপনার দাঁত দিয়ে চিবিয়ে খাবারগুলোকে লালা মিশিয়ে ঠেলে দিলেন পাকস্থলীতে। এবার সেখানে এসিড (HCl) এর মাধ্যমে খাবারগুলো আরেকটু ভাঙল। কিছুক্ষণ পর খাবার পৌঁছাল ক্ষুদ্রান্ত্রে বা Intestine-এ। এখানে এসে প্রতিটি খাবার নির্দিষ্ট এনজাইমের মাধ্যমে মৌলিক উপাদানে ভাঙল। অর্থাৎ আপনি যে খাবারই খান না কেন তা ভাগ হবে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, লিপিড, ভিটামিন আর মিনারেলে। অখাদ্য খেলে সেগুলো সোজা বের হয়ে যাবে, হজম হবে না। এই মৌলিক উপদানগুলোকে শোষণ করবার জন্য আছে নির্দিষ্ট রিসেপ্টর। এ খাবার এখন রিসেপ্টরের সাথে জোড়া বেঁধে পৌঁছে গেল রক্তে। এবার তাকে দু’ধাপে বিশুদ্ধ করে যকৃত বা লিভার আর কিডনী । তারপর বিশুদ্ধ খাবারকে দেহের প্রতিটা কোষে সুষম ভাবে বণ্টন করে দেয়া হয়। যেমন-ব্রেনে পাঠানো হয় গ্লুকোজ, মাংসপেশীতে প্রোটিন। আপনার দেহের প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত খাবার পরিণত হবে লিপিড বা চর্বিতে। আর তা জমা থাকবে আপনার দেহে পরবর্তীতে কাজে লাগবার জন্য। আর যা অপ্রয়োজনীয় তা বের হয়ে যাবে ঘাম আর মলমূত্র হিসেবে। খুব কি কঠিন লাগছে? তা হলে এবার বইটা রেখে আপনার ডান হাত দিয়ে চিমটি কাটুন বাম হাতে। টের পাচ্ছেন? কতক্ষণ লাগছে। আপনি স্পর্শ করার সাথে সাথেই Touch বা স্পর্শের অনুভূতি পৌঁছে যাচ্ছে ব্রেনে। চিমটি কাটলে যাচ্ছে pain Sensation. এবং এ অনুভূতি পৌঁছে গিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না। আপনার ব্রেন চিন্তা করছে কী করা যায়। যদি আপনি নিজে না হয়ে আপনার কোন বন্ধু চিমটি কাটত তা হলে, হয় আপনি হাত সরিয়ে নিতেন তাকেই চিমটি দিতেন। তা হলে, দেখতেই পাচ্ছেন সেকেন্ডের কয়েক ভগ্নাংশের মধ্যেই আপনি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, কী করবেন।

আপনার এই শ্বাসপ্রশ্বাস, দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, খাবারকে কাজে লাগানো এসমস্তই নিয়ন্ত্রণ করছে ব্রেন, নিখুঁতভাবে। এবং আপনার সক্রিয় সাহায্য ছাড়াই। কোন সমস্যা হলেই তা আপনাকে সতর্ক করছে নানাভাবে। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩ বিলিয়ন বিক্রিয়া শরীরের বিভিন্ন কোষে সংগঠিত হয়। এগুলোকে যদি নিয়ন্ত্রণ করতে বলেন তা হলে, পৃথিবীর সর্বাধুনিক সুপারকম্পিউটারগুলোর কয়েক হাজারটাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তারপরও তা নিখুঁত হবার সম্ভাবনা মাত্র ১ ভাগ। তা হলে যায় যায় দিনে প্রকাশিত পৃথিবীর সর্বাধুনিক সুপারকম্পিউটারের দাম যদি ৪০০০ কোটি টাকা হয় তা হলে আপনার ব্রেনের দাম কত!

আপনি কি অবাক হচ্ছেন? এতক্ষণ যে কাজের কথা বললাম তা তত্ত্বাবধানে ব্রেনের ২-৫ শতাংশ শক্তি খরচ হয়। বাকি ৯৫ ৯৮ শতাংশ বসে আছে আপনার নির্দেশের অপেক্ষায়। দেখুন, আপনার চারদিকে। মোবাইল ফোন, টিভি, রকেট, সাবমেরিন এগুলো কারা বানিয়েছেন? যাঁরা বানিয়েছেন তাঁরা আমার আর আপনার মতই মানুষ। তা হলে, তারা যা পারেন আমরা তা পারি না কেন?

আরে ভাই, এ জন্যই তো আমি বইটা লিখছি। আপনিও পারবেন। এ বইয়ের বিষয়বস্তু সেটাই। এ বইয়ের অনুশীলন আপনার মেধাকে করবে শাণিত। আপনার কনফিডেন্স হবে আকাশছোঁয়া। আপনি গর্বভরে বলতে পারবেন, কে বলছে আমি পারি না! আমি পারি, আমি পারব। আর তাই আসুন এবার সাফল্যের শিখরে যাবার মূলমন্ত্রগুলো ধাপে ধাপে শিখে নিন পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে।

.

৩. সাফল্যের কারণ

আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, অনেক শক্তিশালী আর ক্ষমতাসম্পন্ন একটা ব্রেনের মালিক আপনি। এবার তা হলে জেনে নিন আমাদের ব্রেন কীভাবে কাজ করে। আমাদের প্রত্যেকের মাথায় আছে ১০০০ বিলিয়ন নিউরন। তাদের প্রত্যেকে পরস্পরের সাথে প্রায় ১ হাজারটা সংযোগ ঘটাতে সক্ষম। আপনার সফলতা নির্ভর করে কোন নির্দিষ্ট কাজের জন্য আপনার কতগুলো কার্যকরী সংযোগ বর্তমান তার উপর। এ সংযোগ তৈরি হয় আপনি প্রথম কোন কাজ করবার সাথে সাথে। পরবর্তীতে যতবার সে কাজ করতে যাবেন, ততবারই প্রথম সংযোগ সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।

ধরুন, আপনি কোনদিন হিন্দি ছবি দেখেননি। একদিন আপনার বন্ধুর সাথে টিভি দেখতে গিয়ে এক অনন্যা সুন্দরী নায়িকাকে দেখতে পেলেন। আপনি বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মেয়েটার নাম কী?’ সে অবাক হয়ে বলল, ‘কী বলিস? তুই ঐশ্বরিয়াকে চিনিস না!’ তখন, আপনার দৃষ্টির মাধ্যমে ঐশ্বরিয়ার ছবি আপনার মেমোরীতে চলে গেল আর শ্রবণশক্তির মাধ্যমে জানলেন তার নাম ঐশ্বরিয়া। তা হলে ব্যাপারটা দাঁড়াল এই যে, আপনি যা দেখলেন আর শুনলেন সে তথ্য দু’টো জমা হলো আপনার মেমোরীতে । আপনার দুটো নিউরনের (দেখার ও শোনার) সাথে সংযোগ ঘটল তৃতীয় নিউরন বা মেমোরী নিউরনের সাথে। এবার, রাস্তার বিজ্ঞাপন হোর্ডিংয়ে আপনি তার, ছবি দেখার সাথে সাথেই আপনার ব্রেনের নিউরোকানেকশন সক্রিয় হয়ে গেল । ফলে, আপনার মনে পড়ল এ মেয়েটার নাম ঐশ্বরিয়া। তারপর, কোন একদিন দু’জন ছেলেকে গল্প করতে শুনলেন, ঐশ্বরিয়ার নতুন ছবিটা দেখেছিস? তার নাম শোনামাত্রই আপনার মাথায় তার ছবি চলে আসল। এভাবে নিউরোকানেকশন তৈরি ও সমৃদ্ধ হতে থাকে। এখন যতবেশি তথ্য আপনি যতভাবে সংগ্রহ করবেন আপনার নিউরোকানেকশন ততটা পূর্ণতা লাভ করবে। ধরুন, আপনি এবার বিভিন্ন পত্রিকা পড়ে জানলেন ঐশ্বরিয়ার হিট ছবিগুলোর নাম, তার পারিশ্রমিক, এফেয়ার ইত্যাদি নানান তথ্য। এখন যদি কেউ আপনাকে ঐশ্বরিয়া সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে আপনি তাকে অনেক তথ্য দিতে পারবেন। আমাদের জেনারেশনের ছেলেমেয়েদের মাথা এমন নানা হাবিজাবি তথ্যে পরিপূর্ণ। কিন্তু, সত্যিই কি তাই? এত চেষ্টা করে আপনি মাত্র ৩ ৪টা নিউরনের মাঝে ৩০ টার মত কানেকশন তৈরি করেছেন। যেখানে আপনার ব্রেনে (১০)১৪ টা সংযোগ সৃষ্টি সম্ভব ।

আমাদের এই অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন নিউরনগুলো সর্বদা কাজ করতে চায়। আপনার হাতেই আছে তার কন্ট্রোল । আপনাকে শুধু নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। আমাদের প্রত্যেকেই পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত। আমাদের নিউরন সেট আপ ছোটবেলাতেই হয়ে থাকে। ফলে দেখা যায়, যারা ভাল রেজাল্ট করছে তারা সবসময়ই ভাল করছে। আর, খারাপ ছাত্ররা করছে খারাপ। কিন্তু, এর ব্যতিক্রম ঘটানোই আমাদের মূল আলোচ্য বিষয়।

আমি ছোটবেলায় ক্লাসে ফার্স্ট হতাম। তারপর বাবার বদলি হবার পর নতুন স্কুলে এসে আমার রেজাল্ট ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। আমি অনেক চেষ্টা করেও দশের ভেতর ঢুকতে পারি না। আমার মনে হত আমার পক্ষে আর কোনদিন ভাল রেজাল্ট করা সম্ভব নয়। এসময় আমার মা আমাকে বললেন, এ বছর রেজাল্ট খারাপ হলে পরপর দু’বছর এ ক্লাসেই থাকতে হবে। এ কথা শুনেই আমার জেদ চেপে গেল। আমার বন্ধুদের ভাইয়া ডাকতে হবে আর জুনিয়র ছেলেদের সাথে পড়তে হবে এটা অসম্ভব। আমাকে ভাল রেজাল্ট করতেই হবে। সে বছর আমার তিন টার্মের ফলাফল ছিল ১০ম, ৫ম আর তৃতীয়। পরবর্তীতে SSC পরীক্ষায় আমার ক্লাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলাম।

আমি তখনও এ নিউরোকানেকশন সম্পর্কে জানতাম না। তবুও নিজের অজান্তেই আমার মাঝে তা তৈরি হয়েছিল। আমার পক্ষে সম্ভব ছিল আরও ভাল করবার, যদি আমি এ বইটা তখন পড়তাম। কারণ ভাল ফলাফল লাভের জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা আর তার বাস্তবায়ন। এখন তা হলে জেনে নিন এ বইটি কীভাবে পড়বেন।

সাধারণত চার ধরনের মানসিকতা নিয়ে মানুষ উন্নয়নমূলক বই পড়ে থাকেন।

১। একশ্রেণীর পাঠকরা এ কথা প্রমাণ করার জন্য পড়েন যে, এ বই পড়ে কোন লাভ হবে না। আগেও তারা এ জাতীয়/এ ধরনের বই পড়েছেন যা কোন কাজে লাগেনি।

২। আরেক শ্রেণীর পাঠক এ মনোভাব নিয়ে পড়েন যে, একবার পড়েই দেখি কী আছে? তারা শুধু বইটার পৃষ্ঠাগুলো উল্টে যান। অনুশীলনীগুলো বাদ দিয়ে পড়েন। বইয়ের কিছু মজার আইডিয়া পড়েন। এতে তাঁদের সামান্য মনোরঞ্জন হয়, তবে আখেরে কোন লাভ হয় না।

৩। অন্যশ্রেণীর পাঠকদের মনোভাব এই যে, কিছু অনুশীলনী চেষ্টা করে দেখা যাক। ফলে, তারা খুব সামান্যই উপকৃত হন।

৪। আর সর্বশেষ শ্রেণীর পাঠক বইটা পড়েন একে সত্যিকার অর্থেই কাজে লাগানোর জন্য। তারা বইয়ের মূল কনসেপ্টগুলো দাগিয়ে রাখেন। সবগুলো অনুশীলনী সম্পন্ন করেন এবং তার বাস্তব প্রয়োগ ঘটান। ফলে, তারাই লাভ করেন সাফল্য।

তা হলে, আপনিই ঠিক করুন, কীভাবে বইটা পড়বেন?

.

৪. কীভাবে কাজ করবেন

সাফল্যের মূল রহস্য হচ্ছে আপনি যে কাজে সফলতা চান তাতে আপনি কতগুলো নিউরোকানেকশন তৈরি করতে পারছেন তার উপর। তাই দরকার অনুসরণ। একজন সফল মানুষ যে পথে চলেছেন সে পথ যদি আপনিও অনুসরণ করেন তা হলেই আপনি সফল হবেন। কিন্তু, আপনি কোনও আদর্শ খুঁজে পাচ্ছেন না। আপনার রয়েছে আত্মবিশ্বাসের অভাব। আপনি সফল হতে পারবেন কিনা, তা জানেন না। তা হলে আপনার জন্য দুটি সত্যিকার উদাহরণ দিচ্ছি।

উদাহরণ-এক

১। তিনি জন্ম নিয়েছিলেন এক অশিক্ষিত পরিবারে।

২। তার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না।

৩। তাঁর কোন রোলমডেল ছিল না।

৪। তিনি তাঁর মাকে হারান ৯ বছর বয়সে।

৫। তিনি ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যর্থ হন ২২ বছর বয়সে।

৬। তিনি উকিল হতে ব্যর্থ হন ২৩ বছর বয়সে।

৭। তিনি স্ত্রীকে হারান ২৬ বছর বয়সে।

৮। কংগ্রেসের পক্ষে নির্বাচনে দাঁড়ান এবং পরাজিত হন ৩৭ বছর বয়সে।

৯। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে ব্যর্থ হন ৪৭ বছর বয়সে।

১০। সিনেটর পদে নির্বাচনে ব্যর্থ হন ৪৯ বছর বয়সে।

এতগুলো ব্যর্থতার পর ৫১ বছর বয়সে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেন এবং বাকিটা ইতিহাস। এখন পর্যন্ত তিনিই আমেরিকার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট। তিনি আব্রাহাম লিংকন। লাগাতার ব্যর্থতা, প্রিয়জনের মৃত্যু কিছুতেই তিনি বিচলিত হননি। প্রতিটি ব্যর্থতা থেকে শিক্ষালাভ করে তিনি নিজের কর্মপদ্ধতি বদলেছিলেন এবং সর্বশেষে সফলতা পেয়েছেন।

উদাহরণ-দুই
[Ref: Street Urchin To talkshow Host extraordinary]

১। তিনি ১৩ বছর বয়সী একজন অবিবাহিতা আমেরিকান নিগ্রো মহিলার গর্ভ হতে জন্মেছিলেন। ২। তিনি বড় হয়েছেন রাস্তায় ।

৩। মাত্র ১৩ বছর বয়সে একদল সন্ত্রাসীর হাতে ধর্ষিত হন, যার ফলে জন্ম দেন এক মৃত শিশুর ।

এ ভদ্রমহিলার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনি কতটা আশাবাদী? তার একমাত্র গুণ ছিল সুন্দর করে কথা বলা। আর এই একমাত্র সম্পদকে কাজে লাগিয়ে ৪৬ বছর বয়সে আমেরিকার সফলতম সেলিব্রিটির খেতাবে ভূষিত হন। বার্ষিক আয়ের হিসেবে আমেরিকার ধনীদের তালিকায় তিনি ২৭ তম। বিশ্বে ৯১। তাঁর নাম অপরাহ উইনফ্রে।

আপনার অবস্থা কি তার চেয়েও খারাপ! তা হলে তারা যদি সফল হতে পারেন আপনি কেন পারবেন না। সাধারণত, কোন কাজে ব্যর্থ হলে আপনি তিনভাবে রিঅ্যাক্ট (React) করেন।

১। নিজেকে আর অন্যদের দোষ দেন এবং কাজটা আর করেন না

ধরুন, একটা পরীক্ষায় আপনার রেজাল্ট খারাপ হলো। এ কারণে কিছু দোষ দিলেন টিচারের উপর । তিনি ঠিকমত খাতা দেখেন না। কিছু দোষ দিলেন বন্ধুদের, তারা আপনাকে সাহায্য করেনি। আর কিছু দোষ চাপালেন নিজের উপর । কারণ, আপনি ঠিকমত পড়েননি। ফলে, পরবর্তীতে পরীক্ষা দেবার উৎসাহ পেলেন না।

২। আপনি বারবার একইভাবে চেষ্টা করেন

পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্টের কারণে আপনি নিজেকেই দোষ দেন। একই পড়া একই পদ্ধতিতে আবার পড়েন। আগের চেয়ে ২ঘন্টা বেশি পড়েন। তবুও, পরীক্ষার নম্বরের তেমন হেরফের হয় না। এভাবে, ধীরে ধীরে চলে যান ডিপ্রেশনে। ফলে, এরপর রেজাল্ট আরও খারাপ হতে থাকে। কিন্তু, এবার আর চেষ্টাও করেন না। কারণ, আপনার মনে বিশ্বাস এসে গেছে যে, আপনাকে দিয়ে এর চেয়ে ভাল রেজাল্ট হবে না ।

৩। আপনি ভুল থেকে শিক্ষা নেন, নতুন নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করেন আর সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি মেনে চলেন এবং চেষ্টা করেন যতক্ষণ পর্যন্ত না সফল হচ্ছেন

এ তৃতীয় পদ্ধতিই হলো আপনার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। কারণ, সফল মানুষেরা প্রত্যেকেই এ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন এ কথা বলেছিলেন, ‘I hadnot failed, I had tried only a thousand ways that didnot work.’

আপনার ঘরে যে লাইট জ্বলছে তা আবিষ্কারের জন্য তিনি মাত্র ১০ হাজার বার চেষ্টা করেছিলেন। অবশেষে একটা গাছ থেকে সুতা বের করে তা দিয়ে বাল্ব বানিয়ে সফল হয়েছিলেন। এতেও যদি আপনি অনুপ্রাণিত না হন, তা হলে পড়ন এক বিখ্যাত অভিনেতার জীবনী

অতি দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম। আমেরিকার এক চার্চ স্কুলের সিঁড়িতে জন্ম নেবার সময় তাঁর মুখের ডানদিকের ফেসিয়াল নার্ভ ছিঁড়ে যায়। যার ফলে, আজীবন তাঁর কথা জড়িয়ে যায়। ডানদিক অবশ থাকার কারণে ছোটবেলায় তার মুখ থেকে সর্বদা লালা ঝরত। একজন মানুষ যার ডানদিক অবশ, যার কথা অস্পষ্ট, যদি অভিনেতা হতে চান তা হলে যা হবার কথা, তাই হয়েছিল।

সবাই তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করত। তবে, তিনি ছিলেন ভীষণ একগুয়ে। তিনি অনেকগুলো অভিনয়ের স্কুলে অডিশন দিতে যান, কিন্তু কোথাও সুযোগ পান না। এর পর তিনি অডিশন দিতে গিয়ে চেয়ারে বসে বললেন, ‘এ নাটকে আমাকে একটা পার্ট দিতেই হবে। না হলে আমি এ চেয়ার ছেড়ে উঠব না।’ ঘণ্টাখানেক বসে থাকার পর পরিচালক বিরক্ত হয়ে তাঁকে দু’মিনিটের একটা দৃশ্যে অভিনয়ের সুযোগ দিলেন। এটাই ছিল তাঁর প্রথম সাফল্য।

ধীরে ধীরে তিনি বড় হলেন। বিয়ে করলেন। কিন্তু অভিনয়ের নেশা তাঁকে ছাড়ে না। এদিকে তিনি অভিনয় ছাড়া আর কোনও কাজ করতেও আগ্রহী নন। তাঁর স্ত্রী তাঁকে বহুবার বোঝালেন একটা চাকরী করতে। কিন্তু, তিনি বলেছিলেন, আমি আমার স্বপ্নকে বেচতে পারব না। চাকরী করলে আমার বেঁচে থাকবার কোন মানেই থাকে না। তার অবস্থা এত করুণ হয়েছিল যে, ছোটবেলার সাথী কুকুরটাকে তিনি বিক্রি করে দেন মাত্র ৫০ ডলারে।

এ চরম দুঃসময়ে তিনি দৈবক্রমে রাস্তায় একটি বক্সিং ম্যাচ দেখতে দাঁড়িয়ে যান। সেই লড়াইটা হচ্ছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ আলী আর চাক ওয়েপনারের (Chuck wepner) মধ্যে। সবাই ভেবেছিল ওয়েপনার তিন রাউন্ডের বেশি টিকবেন না। কিন্তু, ওয়েপনার হার মানেননি। অর্থাৎ, ১৫ রাউন্ড পর্যন্ত তিনি লড়াই চালিয়ে গেছেন।

এ ম্যাচ থেকেই তাঁর মাথায় আইডিয়া আসে একটা মুভির। দ্রুত বাসায় গিয়ে টানা ৮৪ ঘণ্টা ধরে তিনি লিখে ফেললেন তাঁর ছবির স্ক্রিপ্ট। লেখা শেষ করেই তিনি বুঝতে পারলেন এ ছবি তার ভাগ্য বদলে দেবে।

কিন্তু, আবার শুরু হলো তাঁর ধৈর্যের পরীক্ষা। তিনি যার কাছেই যান, কেউই বক্সিং নিয়ে ছবি বানাতে উৎসাহী নন। অবশেষে একটি কোম্পানী তাঁর স্ক্রিপ্ট পছন্দ করে কপিরাইট হিসেবে ৭৫,০০০ ডলার দিতে চাইল । কিন্তু, তিনি শর্ত দিলেন ছবি মূল নায়কের চরিত্রে তাঁকে নিতে হবে। এ কথা শুনে ছবির পরিচালক ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। তিনি সরাসরিই বলেন যে, তুমি নায়ক হলে এ ছবি কেউ দেখতে আসবে না। পরিচালক স্ক্রিপ্টের দর বাড়াতে লাগলেন। একসময় ১ মিলিয়ন ডলার দাম উঠল । যদিও তিনি ও তার পরিবার না খেয়ে, না পরে আছেন, তবুও তিনি স্ক্রিপ্ট বেচলেন না।

এরপর, পরিচালক বিরক্ত হয়েই তাঁকে নায়ক বানালেন। কিন্তু, গল্পলেখা আর অভিনয় বাবদ সর্বমোট ৩৫,০০০ ডলার তাঁকে দেওয়া হলো। আর, যদি লাভ হয় তা হলে তাঁর পার্সেন্টেজ তিনি পাবেন। তিনি এতেই রাজী হয়ে গেলেন।

টাকা নিয়ে প্রথমেই গেলেন তার কুকুরটাকে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু, ক্রেতা ভদ্রলোক কুকুরটাকে বিক্রি করতে আগ্রহী নন। এবার তিনি দর বাড়ানো শুরু করলেন। ১০০ ডলার, ৫০০ ডলার…। কিন্তু, সে লোক বেচবেই না। আপনাদের আমি আগেই বলেছি তিনি হার মানতে মোটেই রাজী নন। অবশেষে ১৫,০০০ ডলার আর তাকে মুভিতে অভিনয়ের সুযোগ দিয়ে তিনি কুকুর নিয়ে বাসায় ফিরলেন। তাঁর নাম সিলভেস্টার স্ট্যালোন। তার এ ছবির নাম ‘রকি’।

‘রকি’ যখন বক্সঅফিসে আসল সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ল। ছবিটির নির্মাণ ব্যয় ছিল ১ মিলিয়ন ডলার। আর তা আয় করেছিল ১৭১ মিলিয়ন ডলার।

রকি’ মোট ১০টি বিভাগে অস্কার নমিনেশন পায়। (সেরা অভিনেতাসহ) আর অস্কার পেয়েছিল দুটি। শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্ৰেষ্ঠ ছবি বিভাগে। স্ট্যালোন এরপর একে একে First Blood, Rambo আর Rockey’র সিকুয়েলে অভিনয় করেন এবং ৮০ ৯০-এর দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পান।

তাই, কোন কাজ করবার সময় বাধা প্রাপ্ত হলে সর্বদা তাঁর অমর বাণী মনে রাখুন।

“when you are committed enough, there is always a way.” তাই, আপনিও তার মত আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলুন পরবর্তী অধ্যায়ে।

.

৫. বিশ্বাস

‘বিশ্বাস করুন, আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। আমি সামান্য পরিশ্রমেই ক্লান্তি বোধ করি। আমার বাসার সবাই জানে আমার ব্রেন ভাল না। আমি ছোটবেলা থেকেই এমন দেখে আসছি।’

আপনি কি জানেন, বিশ্বাস একটা মজার ব্যাপার। আপনাকে আমি যে নিউরোকানেকশনের কথা প্রথমে বলেছি সেটাই তৈরি করে বিশ্বাস। ধীরে ধীরে তা পূর্ণতা লাভ করে আর আপনার মাঝে জেঁকে বসে। ধরুন, ক্লাস ওয়ানে পড়বার সময় আপনি অংকে কম নম্বর পেয়েছেন। আপনার টিচার বললেন, তুমি তো অংকে ভাল না। আপনার প্রথম নিউরোকানেকশন তৈরি হলো। বাসায় রেজাল্ট দেখার পর বাবা বললেন, ধুর! তুই তো অংকে গোল্লা। আপনার এ কানেকশন সমৃদ্ধ হলো। মা বললেন, আমিও অংকে খুব একটা ভাল ছিলাম না। এ থেকে আপনার বিশ্বাস জন্মালো, আপনার পক্ষে অংকে ভাল করা সম্ভব নয়। কারণ, এটা আপনার জন্মসূত্রে পাওয়া। এরপর যখনই অংক করতে যান, আপনার মাঝে বিতৃষ্ণা আর ভয় কাজ করে। আপনি সহজ অংক ভুল করে বসেন। কঠিনগুলো এড়িয়ে যান। আরেকটু বড় হলে এমন বিষয় নিয়ে পড়েন যাতে অংক করতে না হয়। মজার ব্যাপার হলো, আপনার এ বিশ্বাস হাওয়া থেকে আসেনি। আপনার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সমাজই আপনার মাঝে এ বিশ্বাস তৈরি করে দিয়েছে। এর বাস্তব একটি ঘটনা আমি উল্লেখ করছি–

এডাম সিংগাপুরের একজন মাল্টিমিলিওনিয়ার। তিনি মাত্র ২৬ বছর বয়সে পৃথিবীর শীর্ষ দশ বক্তার মধ্যে চলে আসেন। আপনি যদি ভাবেন, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মত বক্তা আর কে আছে! বক্তৃতা দেওয়া এমন কী ব্যাপার! তা হলে শুনুন, এডাম তাঁর প্রতি ১ ঘণ্টার বক্তৃতায় পান ৫০ হাজার ডলার। তাঁর লেখা বই, I am gifted, So are you. থেকে আমি ঘটনাটা বলছি।

এডাম স্কুলে থাকতে অংকে খুবই খারাপ ছিলেন। তাঁর দৃঢ়বিশ্বাস ছিল এ জীবনে আর অংকে ভাল করা সম্ভব নয়। এমন সময়, তিনি স্কুল থেকে একটি Seif learning Tour’-এ যোগ দেন। সেখানে তাঁকে বলা হয়, আপনি চেষ্টা করলেই যে কোন বিশ্বাস ভাঙতে পারবেন এবং তৈরিও করতে পারবেন। তাই সবার উচিত, ক্ষতিকর বিশ্বাস মন থেকে মুছে ফেলা আর লাভজনক বিশ্বাস গড়ে তোলা।

এডাম ঠিক করলেন, আমি অংকে ভাল না এ বিশ্বাস ভাঙতেই হবে। তখন তিনি সবেমাত্র কলেজে ঢুকেছেন। প্রথম ক্লাস শুরুর আগেই অংক বই কিনে প্রথম চ্যাপ্টারটা বাসায় পড়ে প্রতি নিয়মের একটা করে অংক করেছেন। নতুন

জায়গায়, অপরিচিত পরিবেশে তাঁর অংক ক্লাস শুরু হলো। কিছুক্ষণ পরেই, সবার মনোযোগ নানানদিকে চলে গেল । কিন্তু, এডাম মনোযোগী ছিলেন। ক্লাস শেষ হতে ১৫ মিনিট বাকি। এমন সময় সার বললেন, ‘এতক্ষণ তোমাদের যে নিয়মটা শেখালাম তার একটা অংক বোর্ডে লিখে দিয়েছি। কে করতে পারবে হাত তোল।’ অংকগুলো আগে করা থাকায় এডাম আরও ভাল বুঝতে পারছিলেন আর তাই দেখা গেল ক্লাসে মাত্র একটা ছেলে হাত তুলেছে। তারপর, বোর্ডে গিয়ে অংকটা করার সাথে সাথে পুরো ক্লাসে হাততালি। সবাই বিস্মিত। প্রথম দিনই তার নাম হয়ে গেল Math genius. এ হাততালি আর বন্ধুদের মুগ্ধদৃষ্টি পাওয়ার জন্য তিনি প্রত্যেক ক্লাসের আগেই অংক করে ফেলতেন আর ক্লাসে নিয়মিত বোর্ডে অংক করতেন। তাঁর টিচাররাও তাঁর পারফর্মেন্সে বিস্মিত হয়ে বলে ফেললেন, তুমি আসলেই একজন Math genius। এখন যত কঠিন অংকই হোক বন্ধুরা এডামের কাছে চলে আসে। কারণ, এডাম তা পারবেই।

তা হলে, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আপনি যা বিশ্বাস করেন তা একটা কাল্পনিক ব্যাপার। আপনার কল্পনাকে যদি বদলাতে পারেন তা হলে আপনিও হয়ে যেতে পারবেন একজন রোলমডেল।

এখন তা হলে একটা খাতা নিয়ে বসুন। খাতাতে স্কেল দিয়ে সমান দূরত্বে তিনটি দাগ দিয়ে চারভাগ করুন। তারপর নীচের মত একটা চার্ট বানান। আপনার যত ক্ষতিকর বিশ্বাস আছে তা লিখুন আর তা কেন সত্যি নয় এবং আপনার নতুন বিশ্বাস লিখুন । নীচে একটি মাত্র উদাহরণ দেওয়া হলো।

আমার ক্ষতিকর বিশ্বাসএ বিশ্বাস মিথ্যা কারণএটা তৈরি হয়েছে কারণআমার নতুন বিশ্বাস
১। আমার স্মৃতিশক্তি খারাপ১। আমি নতুন ২০ টা হিন্দি গানের প্রথম লাইন মনে রাখতে পারি ২। আমি ক্রিকেটের স্কোরকার্ড মুখস্থ বলতে পারি মাত্র একবার দেখেই।১। আমি সঠিক পদ্ধতিতে পড়ি না ২। আমি পড়ার সময় নানা জিনিস চিন্তা করি।(ক) আমার স্মৃতিশক্তি অসাধারণ।

এবার আরেকটা চার্ট করুন:

আমার ক্ষতিকর বিশ্বাস এর প্রভাব
১। আমার স্মৃতিশক্তি খারাপ।(১) আমি পড়া মনে রাখতে পারি না। তাই বাজে রেজাল্ট করি।
 (২) বাসায় সবাই আমাকে করুণা করে।
 ৩) বন্ধুরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে।

এখন আরেকটি চার্ট করুন:

আমার নতুন বিশ্বাস উদাহরণ
১। আমার স্মৃতিশক্তি ভাল।(১) আমার অনেক বন্ধুর মোবাইল নম্বর আমার মুখস্থ আছে।
 (২) আমার বাসায় টিভিতে কত নম্বরে কোন চ্যানেল আছে তা আমার মুখস্থ।

একজন সফলছাত্রের ৫ টি বিশ্বাস

১। যদি কিছু বদলাতে হয় প্রথমে নিজেকে বদলাতে হবে।

 ২। ব্যর্থতা বলে কোন কথা নেই। বাজে রেজাল্ট মানে পরবর্তীতে ভুল না করার জন্য শিক্ষা।

৩। যদি অন্যেরা পারে, তা হলে আমিও পারব।

৪। পড়ালেখা হলো একটা চ্যালেঞ্জ এবং আমি তা জিতব।

৫। পরিবর্তনের সাহসই আমার মূল শক্তি। আমি সবসময় নতুনকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকব।

তাই, আপনিও এতে বিশ্বাস রাখুন। কারণ, আমার এ বই আপনার হাতে আসার পর হয়তো আরও নতুন পদ্ধতিতে পড়ার নিয়ম আবিষ্কার হয়ে যাবে। এরমধ্যে যেটা আপনার জন্যে সবচেয়ে কার্যকর তা গ্রহণ করবার শক্তি রাখুন। এবার আমি জানতে চাই, আপনি কি সত্যিই সফলতা চান?

Leave a Reply to মীর রাজেশ Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *