০৩. চিত্রকর হুমায়ূন আহমেদ

চিত্রকর হুমায়ূন আহমেদ

এনটিভি’র সাউন্ডভিউ স্টুডিও গেস্টহাউস থেকে জ্যামাইকার সাটফিন ব্লুবার্ড বাসায় ওঠার কিছুদিন পরই হুমায়ূন আহমেদ ছবি আঁকা শুরু করলেন বাড়ির ‘এটিক’এ। তার ভাষায় এই ছবি আঁকার নাম—‘রঙ তুলি খেলা’। এ খেলায় ছেলে নিষাদ তাঁর সাথী।

এরমধ্যেই ‘নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ’ শিরোনামে তিনি খবরের কাগজে কলাম লেখা শুরু করেছেন। এই কলামের লেখা শুরু করেছেন এয়ারপোর্ট নামার পর থেকেই। যেদিন প্রথম লেখা শেষ করলেন, এখানে সকলের সে কী আনন্দ। ২৫ সেপ্টেম্বর প্রথম কেমোথেরাপি দেওয়ার আগে যেদিন মেমোরিয়াল হাসপাতালে  আমরা তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যাই সেদিন স্যার হাসপাতালের উল্টোদিকে বার্নস এন্ড নভেলে অনেক সময় কাটিয়েছেন। সায়েন্স ফিকশন, জোকস আর সদ্য বের হওয়ার নতুন কয়েকটি বই পছন্দ করলেন। বই নিলেন। বার্নস এন্ড নভেলের দোতলায় উঠতে অনেকগুলো পেইন্টিং সারি সারি ঝুলানো। বললেন, ছবি আঁকার সরঞ্জাম সাথে নিয়ে এসেছেন। আরও কিছু লাগবে। আমি সঙ্গে সঙ্গে পার্লসের কথা বললাম। সেদিন বাসায় ফিরেই রংতুলি আর আঁকার কাগজ নিয়ে বিশাল আয়োজন।

জ্যামাইকার দোতলা বাড়ির উপরে একটি ছোট রুম রয়েছে সেখানেই বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছেন হুমায়ূন আহমেদ। এটিকের এ ঘর নিয়ে স্যার লিখেছেন, আমেরিকান ইন্ডিপেনডেন্ট বাড়িতে ‘এটিক’ নামের একটা ছাদঘর থাকে। এই ঘরটা হয় খুবই সুন্দর। অনেকখানি সময় আমি এখানে একা কাটাই। লেখালেখি করি না। ছবি আঁকি। জলরং ছবি।

এরই মধ্যে হুমায়ূন আহমেদ আরও বেশ কয়েকটি ছবি আঁকলেন। নিষাদও বাবার সাথে পাল্লা দিয়ে ছবি আঁকছে। এছাড়া নতুন ছড়া এ্যাঙ্গা-ব্যাঙ্গা নিয়েও চলে পিতা-পুত্রের খেলা। ডিসেম্বর মাস। প্রচুর বরফ পড়ছে নিউইয়র্কে। বাইরে বেরুবার উপায় নেই। একদিন আমি আর রুমা গেলাম স্যারের বাসায়। স্যার তাঁর ছবি ফ্রেমিং করার কথা বললেন। আমি বললাম, ২০০৯ সালে আমাদের মেয়ে বহতা সাহার আর্ট এক্সিবিশনের সব কাজ রুমে করেছিল আমাদের বন্ধু শিল্পী আবুল ফজলকে সাথে নিয়ে। আবুল ফজল ফিলাডেলফিয়ায় বাংলাদেশ আমেরিকান আর্ট গ্যালারি করেছেন। ফ্রেমিংয়ের ওয়ার্কশপ করেছেন। স্যার শুনে মহাখুশি। বললেন, এক্ষুনি ফোন করো। সঙ্গে সঙ্গে রুম আবুল ফজলকে ফোন করলো। ফজল জানালেন, ছবির সাইজ অনুযায়ী ফ্রেমিংয়ের জন্য প্রতি ছবিতে ২০০ থেকে ৩০০ ডলার খর পড়বে। খরচের হিসেব শুনে স্যারের মুখ শুকিয়ে গেলো। তাঁর মন ভালো করার জন্য আমি বললাম, আমাদের আর এক বন্ধু আছে সাইন মিডিয়ার মুস্তফা আরশাদ ভাই। সে নিশ্চয়ই একটা পথ দেখাতে পারে। এরপর রুমার সাথে স্যারের এ বিষয়ে অনেক কথা হয়।

অক্টোবর ২০১১। একদিন স্যার বললেন, বিশ্বজিত আমার ছবির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করো। বহতার এক্সিবিশনের কথা আমরা আগেই বলেছি। তার আঁকা ২৫টি ছবি ফ্রেমিং করা আছে। তাও বললাম। স্যার তখন বহতার সাথে তার আঁকা ছবির এক্সিবিশন আয়োজন করতে বললেন। রুমা বললো, না আপনার একক প্রদর্শনী হবে। যদি প্রদর্শনীর জন্য ছবি আঁকা হয়ে যায় তাহলে আপনার জন্মদিন উপলক্ষেই আমরা আয়োজন করতে পারি। সেদিন অনেক কথা হলো ছবি নিয়ে। তখনও ‘অন্যদিন’-এর প্রধান সম্পাদক মাসুম রহমান নিউইয়র্কে পৌঁছাননি। হুমায়ূন আহমেদের উপস্থিতিতে নিউইয়র্কে তার জন্মদিন হবে। অনুষ্ঠানে কী হবে, কে কে থাকবে, স্যারের জন্মদিন উপলক্ষে জ্যাকসন হাইটসের মুক্তধারা অফিস কীভাবে সাজানো হবে- এ সব নিয়ে তখন মহা আয়োজন। তারপর মহাধুমধামে উদযাপিত হলো জন্মদিন। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অন্যপ্রকাশের প্রকাশিত ‘রঙ পেন্সিল’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হলো। এরপর আবারও একদিন স্যার তাঁর ছবির প্রদর্শনীর কথা বললেন। আমি বললাম, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে করা যেতে পারে। এরমধ্যে মাসুম রহমান নিউইয়র্কে এলেন। ইতঃমধ্যে ৬টি কেমোথেরাপির পর স্যারের হাতের চামড়াগুলো উঠে যেতে শুরু করেছে। তখন বেশ কিছুদিন। লেখালেখি আর ছবি আঁকতে তাঁর বেশ কষ্ট হচ্ছিলো। ১৬ ডিসেম্বর প্রদর্শনীর আয়োজন করা হলো না। আমি আবার বললাম, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে জুইস সেন্টারে স্যারের প্রথম ও একক চিত্র প্রদর্শনী হবে। একদিন হুমায়ূন আহমেদ স্যার রাতে তাঁর জ্যামাইকার বাসায় খেতে ডাকলেন। সেদিন শনিবার, মুক্তধারা থেকে বের হতে দেরি হওয়ায় রাত ৯টা বেজে গেলো। জ্যামাইকা পৌঁছুতে। স্যারের বাসায় গিয়ে নানা গল্প। ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হলো। আসার সময় রুমা স্যারকে বলে দুটি ছবি নিয়ে এলো। এরপর রুমাকে দেখি কদিন খুবই ব্যস্ত। কখনও উডসাইডে মুস্তফা আরশাদের সাইন মিডিয়াতে। আবার কখনও শিল্পী আবুল ফজলের সাথে দেখা করতে ফিলাডেলফিয়ার চায়না টাউন। শেষে স্যারের কাছ থেকে আনা দুটো ছবি ফ্রেমিং করে একদিন রুমা চলে গেলো জ্যামাইকার বাসায়। পড়ন্ত বিকেল। স্যার তখন ঘুমুচ্ছিলেন। শাওন আনন্দে স্যারের ঘুম ভাঙালেন। রুমার ভাষায় হুমায়ূন আহমেদ দুচোখ কচলাতে কচলাতে লিভিং রুমে এসে ফ্রেমিং করা ছবি দুটো দেখে অবাক। ফ্রেমিং কম্বিনেশনের পর নিজেই যেন নিজের আঁকা ছবিগুলো চিনতে পারছিলেন না। স্যার যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেলেন তাঁর ছবি আঁকায়। এরপর এক এক সময় তিনি এক একটা ছবি আঁকলেন। রুমা সেই ছবিগুলো নিয়ে বিভিন্ন ফ্রেমিং ম্যাটিং দোকানে যায়, ফ্রেম কেনে, ম্যাটিং করে। ছবির সাথে মিলিয়ে ম্যাট আর ফ্রেমিং করতে কালার ম্যাচিং করতে হয়। আমাদের বাড়ির বেসমেন্টর একটা অংশ জুড়ে তখন শুধু ছবি আর ফ্রেম। এভাবে চিত্রকর হুমায়ূন আহমেদের সাথে রুমার যেন একটা নতুন সম্পর্ক তৈরি হলো। রুমা একেক দিন খাবার টেবিলে এসে স্যারের ছবি নিয়ে অনেক কথা বলে, অনেক গল্প করে। হুমায়ূন আহমেদের কোনো ছবি পছন্দ হলে রুমা বলতো, এই ছবিটা আমাকে দিন। তিনি বলতেন, একটা কেন তুমি সব নিয়ে যাও। রুমা ছবি আঁকা হলেই সে ছবি নিয়ে আসতো। এরমধ্যে আমি জানুয়ারির শেষ। দিকে তিন সপ্তাহের জন্য দেশে গেলাম। যাওয়ার আগে স্যারের সাথে দেখা করে যাই। ফিরে এসেও এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি চলে যাই স্যারের জ্যামাইকার বাসায়। আমার সাথে আলমগীর রহমানের পাঠানো দেশি কই মাছ, মাংস এবং সদ্য বের হওয়া ‘ইক্কা বিক্কা’ ছড়ার বই। দেশের, মানুষের, খাবারের বইমেলার নানান গল্প শেষে স্যার আমাকে নিয়ে গেলেন আর একটি কক্ষে। সেখানে সাজানো স্যারের আঁকা অনেক ছবি। কিছু ফ্রেমিং করা, কিছু ফ্রেমিং ছাড়া। আমি একটু গম্ভীর হয়ে বললাম, তাহলে এবার আপনার ছবির প্রদর্শনী হচ্ছে।

এরমধ্যে নিউইয়র্কের বইমেলা নিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন হয়েছিলো। সেখানে ড. আনিসুজ্জামান, কবি রফিক আজাদ, ড. গোলাম মুরশিদ, ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, ড. পূরবী বসু ও ইকবাল হাসানও ছিলেন। প্রায়দিনই সকালে জ্যোতিদা পূরবীদির সাথে তাদের শান্তিনগরের বাসায় দেখা করতাম। কথা হতো বইমেলা নিয়ে, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে। আমি ঢাকায় যাওয়ার অনেক আগেই কথাসাহিত্যিক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, পূরবী বসু বাংলাদেশে এসেছেন। তাদের কাছেই জানলাম কানাডা প্রবাসী কবি ইকবাল হাসানও এখন ঢাকায়। ইকবাল হাসানের সাথেও অনেকদিন পর কথা হলো। এদিকে দেশ থেকে নিউইয়র্কে ফিরে দেখি রুমা তখন খুব ব্যস্ত। ছেলেমেয়েরাও অভিযোগ করা শুরু করেছে তার মায়ের বিরুদ্ধে। রুমার মাকে অনুরোধ করলে তিনি এসে আমাদের বাসায় থাকতেন। এরই মধ্যে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের সামনে আন্ত র্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি।

২০ ফেব্রুয়ারি ২০১২। কেমোথেরাপি শেষ করে হুমায়ূন আহমেদ বেলভ্যু হাসপাতাল থেকে জ্যামাইকার বাসায় যাবেন। সকালে হাসপাতালে গেলাম। কিন্তু কেমোথেরাপি শেষ হতে হতে বিকেল হয়ে যেতে পারে। তাই আমি আর থাকলাম না। চলে এলাম একুশের অনুষ্ঠানে। বিকেল ৬টা থেকে শুরু হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান। রুমা হাসপাতাল থেকে স্যারকে বাসায় নিয়ে গেল। রাত ১২.০১ মিনিটে শহীদ দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে এলেন সংসদ সদস্যা এবং মেহের আফরোজ শাওনের মা মিসেস তহুরা আলী। এলেন কবিদম্পতি ইকবাল হাসান ও স্থপতি শিখা আহমাদ। এর আগের দিনই তাঁরা স্যারকে দেখতে বেলভ্যু হাসপাতালে গিয়েছিলেন। একুশের অনুষ্ঠানের দুসপ্তাহের মধ্যে আমি আবারও দুসপ্তাহের জন্য ঢাকা ও কলকাতায় যাই। তবে টিকেটটি এমনভাবে করা হয়েছিলো যাতে হুমায়ূন আহমেদের কেমোথেরাপি দেওয়ার দিন ফিরে আসতে পারি। যথারীতি এয়ারপোর্টে যাওয়ার আগে হুমায়ূন আহমেদের বাসায় গেলাম আমি আর রুমা। আমাকে দেখে বললেন, নিশ্চয়ই কিছু একটা বলবে? বললাম, দুসপ্তাহের জন্য দেশে যাচ্ছি। নিউইয়র্কের বইমেলার জন্যই আসলে যাওয়া। এ বছরই প্রথম স্টেপমিডিয়া ঢাকায় উৎসবের দায়িত্ব নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম পরিচালক মুস্তফা জাহিদ খান বললেন আমাদের আহ্বায়ক নিনি ওয়াহেদকে। অনুরোধ জানিয়েছেন আমাকে আবার ঢাকায় পাঠাতে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে গেলাম ঢাকায়। ফিরে এলাম দুসপ্তাহের মধ্যে। কিন্তু এবার আর আসা হলো না কেমোথেরাপির আগে। এবারই প্রথম স্যারের কেমো নেওয়ার দিন আমি উপস্থিত ছিলাম না। যদিও রুমা আমার অনুপস্থিতি স্যারকে বুঝতে দেয়নি। এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় গিয়ে স্নান করেই সরাসরি হাসপাতালে এলাম। অনন্যার মনিরুল হকের পাঠানো একটা খাম এবং অন্যান্য পাবলিশার্স থেকে পাঠানো হুমায়ূন আহমেদে জিনিসগুলো পৌঁছে দিয়ে বাসায় এলাম। সেদিন রাত ১০টা পর্যন্ত আমরা বেলভ্য ছিলাম। স্যার বারবারই বলছিলেন, তুমি টায়ার্ড, বাসায় যাও। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ নামের চুম্বকের আকর্ষণ যেন সব টায়ার্ডনেস কেটে যায়। একদিন দেখি রুমা জ্যোতিদার সাথে আমাদের বাসার খাবারের টেবিলে স্যারের ছবি নিয়ে আলোচনা করছে। রুমা বললো, হুমায়ূন আহমেদের ছবিগুলো বিক্রি করা হবে। বিক্রয়লব্ধ অর্থ কীভাবে ভাগ হবে, চিত্রকর আর এজেন্ট কতো শতাংশ পাবেন এ সব নিয়েও কথা হলো। স্যার তাঁর কোনো ছবি ৫০০ ডলার আবার কোনো ছবির দাম ১,০০০ ডলারের কথা বলেছিলেন। খাবার টেবিলে এ নিয়ে অনেক কথা হলো। আমার এ ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই। আমি মহাখুশি এই ভেবে যে, স্যারের জীবনের প্রথম চিত্র প্রদর্শনী নিউইয়র্কে হচ্ছে আর তার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে মুক্তধারা। এ নিয়ে স্যার তাঁর নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ’ গ্রন্থে ‘সংসার’ নামে এক পরিচ্ছেদে লেখেন, লেখালেখি করি না। ছবি আঁকি। জলরং ছবি। ছবি মোটেই ভালো হচ্ছে না। রঙে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। শুধু অন্যদিন এর মাজহার বলছে, অসাধারণ! আপনার আঁকা ছবি বিক্রি করে আমরা চিকিৎসার খরচ তুলে ফেলতে পারবো। ইনশাল্লাহ।

আমরা পরপর চারদিন বেলভ্যু হাসপাতালে গেলাম। ডাক্তার জর্জ মিলার সার্জারির আগে সকল প্রয়োজনীয় পরীক্ষা সম্পন্ন করতে বলেছেন তার সহকারী জ্যোতি নারাংকে। অসাধারণ সহযোগী মনোভাবসম্পন্ন এই ভারতীয় ডাক্তারটি কতভাবে যে সহযোগিতা করেছেন, তা না বললেই নয়। সিটি হাসপাতালগুলোতে এপয়েন্টমেন্ট পেতে যে সব সমস্যা হয় তার সবকিছু নিজেই সমাধান করেছেন। দেশ থেকে এসেই যাতে হুমায়ূন আহমেদ সার্জারি করাতে পারেন, কোনো টেস্ট বাকি না থাকে। তাই যাওয়ার আগে পরপর চার বার বেলভ্যু হাসপাতালে যেতে হয় আমাদের। কখনো রুমা, আমি, মেহের আফরোজ শাওন ও হুমায়ূন আহমেদ। কখনো ফানসু মন্ডল, আমি, মেহের আফরোজ শাওন এবং হুমায়ূন আহমেদ। প্রায় সব কাজই শেষ। দেশে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। এরই মধ্যে দায়িত্ব পড়ে মেহের আফরোজ শাওনের হুমায়ূন আহমেদের আঁকা চিত্রকর্মগুলোর ছবি তোলার। এরমধ্যে জ্যামাইকার বাড়ি বিক্রি হয়ে যাওয়ার ফলে নতুন বাসাও দেখতে হচ্ছে। এমনি সময় ড. ইউনূসের সাথে প্রখ্যাত আলোকচিত্রী। নাসির আলী মামুন আমেরিকায় এলেন। নাসির আলী মামুন এখানে অনেকদিন থেকেছেন। মুক্তধারার সাথেও তার গভীর সম্পর্ক। একদি হুমায়ূন আহমেদকে নাসির আলী মামুনের কথা বললাম। বললাম, মামুনভাই নিউইয়র্কে এসেছেন, আপনার সাথে দেখা করতে চান। স্যার বললেন, নিয়ে এসো। রুমা নিয়ে গেলো নাসির আলী মামুনকে স্যারের ওজোন পার্কের বাসায়। মামুনভাই হুমায়ূন আহমেদের অনেক ছবি তুললেন। মামুনভাই স্যারের চিত্রকর্মগুলোরও ছবি তুললেন। স্যারের আঁকা ছবিগুলোর মধ্যে বন্ধুবান্ধব এবং বাংলাদেশ মিশন ও কনস্যুলেটকে দেওয়ার পর ২১টি ছবি প্রদর্শনীর জন্য নামকরণ করা হলো। নামগুলো এমন: ১. এমন দিনে তারে বলা যায়, ২. কত না দিন রাতি কেউ ছিল আমার খেলার সাথী, ৩. আহা তারা কি সুখেই না আছে, ৪. জলে কার ছায় গো? কার ছায়া জলে?, ৫. বাড়ি ফেরা, ৬. পুরানো সেই দিনের কথা, ৭. কে ঐ শুনালো মোরে আজানের ধ্বনি, ৮. দিনের শেষে, ৯. মেঘের খেলা দেখে কত খেলা পড়ে মনে, ১০. ফাগুণেরও নবীন আনন্দে, ১১. বৃক্ষের তন্দ্রা, ১২. যদিও সন্ধ্যা নামিছে মন্দ মন্থরে, ১৩. ঝড় ঝড় মুখর বাদর দিনে, ১৪. বনবালা, ১৫. আমেরিকার বসন্ত, ১৬. সুন্দরবন, ১৭. সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে (বৃক্ষ গীতি), ১৮. কৃষ্ণচূড়ার কান্না, ১৯. মেঘবালিকা, ২০. মধ্য দুপুর, ২১. পুস্প কথা। মহাধুমধামে চিত্রকর হুমায়ূন আহমেদ তাঁর সকল ছবির নামকরণ করলেন দেশে যাওয়ার আগের দিন। নামকরণ করতে গিয়ে বললেন, বাংলাদেশের চিত্রকরদের ছবিতেই দেখা যায় ইংরেজি নামকরণ। আমি বাংলাতেই নাম রাখলাম। ছবি আঁকা নিয়ে বলেন, আমি আঁকা আঁকি খেলা করছি। তবে ছবি আঁকার শুরু কবে থেকে জানতে চাইলে অবশ্য বলেন, পরিবারিক সূত্রেই পাওয়া। মেট্রিক পরীক্ষা দেওয়ার পরও কিছু সময় ছবি আঁকতেন। জ্যামাইকার বাড়ি থেকে লেখক ওজোনপার্কের নতুন বাড়িতে স্থানান্তরিত হলেন। অনেক খোলামেলা এবং বড় পরিসরের ডুপ্লেক্স বাড়িটিতে লেখকপত্নী লেখকের জন্য লেখার ও আঁকার একটি ঘর রেখেছেন। তবে যেভাবে লেখক পুত্র নিষাদ হুমায়ূন বাবার মতো ছবি আঁকায় ডুবে আছে, তার জন্য আর একটি ঘর লাগবে বললে রসিকতায় হাসির রোল উঠলো দেশে যাওয়ার আগের দিন মধ্যরাতে লেখকের ওজোন পার্কের বাড়িতে। সেদিনই স্যার রুমাকে ২১টি ছবি দিয়ে গেলেন। ছবিগুলো আঁকা শেষ এবং রুমা প্রায় সব কটিরই ফ্রেমিং করে ফেলেছে। আমি নিশ্চিত হই বইমেলায় হুমায়ূন আহমেদের চিত্রপ্রদর্শনী হচ্ছে। পত্র-পত্রিকায় মার্চ মাস থেকেই হুমায়ূন আহমেদের অনুমতি নিয়ে ছবি প্রদর্শনীর ঘোষণা দেওয়া হয়ে গেছে। নিউইয়র্ক বইমেলার অন্যতম উদ্যোক্তা ওবায়দুল্লাহ মামুন দায়িত্ব নিলেন প্রদর্শনীর বিষয়টা। রুমার দায়িত্ব ছবিগুলো সব ফ্রেমিং শেষ করে ওবায়দুল্লা মামুনকে মেলার স্থলে পৌঁছানো। এ ব্যাপারে বইমেলার কয়েকটি সভায়ও গুরুত্বসহকারে চিত্র প্রদর্শনীর বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ছবিগুলো কোথায় ঝুলানো হবে এবং সেগুলো ম্যানহাটানে ওবায়দুল্লা মামুনের বাসা থেকে কখন আনা হবে। বড় ভ্যান গাড়ি লাগবে। নানা বিষয়ে নানা কথা। যেহেতু রুমা সাহা এবং ওবায়দুল্লা মামুন রয়েছেন সে দায়িত্বে আমরা মোটামুটি নিশ্চিন্ত ছিলাম প্রদর্শনীর অন্যান্য বিষয় নিয়ে। হুমায়ূন আহমেদ দেশে যাওয়ার আগেই ৫ মে ২০১২ ই-মেইলে ক্যাটালগ’ এ ছবির নামকরণগুলো এবং টাইটেলে কী লেখা হবে তা পাঠানো হয় অন্যপ্রকাশের মাজহারুল ইসলামকে। হুমায়ূন আহমেদ দেশে পৌঁছালেন। অন্যপ্রকাশ ক্যাটালগ তৈরি করে দিলো এবং তা হুমায়ূন আহমেদ আসার সময় ৩ জুন ২০১২ এক কার্টুন ক্যাটালগ নিয়ে এলেন। সেগুলো তাঁর জ্যামাইকার বাড়িতে রাখা হলো। আমাকে দেখার জন্য দিলেন ১টি। দেখলাম, খুবই সুন্দর ক্যাটালগ। যেমন- নাসির আলী মামুনের ছবি, তেমনি অন্যপ্রকাশের প্রডাকশন। ৪ জুন আমরা গেলাম বেলভ্যু হাসপাতালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আমরা ফিরলাম। আবার ৫ জুন গেলাম বেলভ্যু হাসপাতালের এনেসথেসিয়া বিভাগে। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ। ঠান্ডা বা ভাইরাস কোনো কিছুই স্যারকে আক্রমণ করেনি।

১২ জুন সার্জারি। রুমা গাড়ি চালাচ্ছিল। হুমায়ূন আহমেদ সামনের সিটে। আমি আর মেহের আফরোজ শাওন মাঝখানে পর পর দুটো সিটে। গাড়িতে ওঠার পর হুমায়ূন আহমেদের মেজাজ ভালো থাকলে সবসময় জোকস দিয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখেন। এদিনও জো বলছিলেন। ইউনিভার্সিটির সামনে ল্যাংটা ফকিরের জোকস। গার্ডিয়া এয়ারপোর্টের সামনে দিয়ে গাড়ি যখন জ্যামাইকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছে তখন শাওন বললেন, বিশ্বজিতদা চিত্র প্রদর্শনী নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ কথা বলবেন। সময় থাকলে আজই বলতে পারেন। সাধারণত হুমায়ূন আহমেদকে যেদিন হাসপাতালে নিয়ে যেতাম বা দিয়ে যাবার সময় আমি কখনও বাড়িতে বসতাম না, কিন্তু আজ যেতেই হলো উপরে। শাওন কথা শুরু করলেন চিত্র প্রদর্শনী নিয়ে। এরপর হুমায়ূন আহমেদ বললেন, বিশ্বজিত, আমার ছবিগুলো বিক্রি করতে চাই না। সন্তানের মতো। ছবিগুলো এঁকেছি। সন্তানকে কেউ কি কখনো বিক্রি করে? ছবিগুলোর শুধু প্রদর্শনী হবে। সারাপৃথিবীর বাঙালি দেখুক, এটাই আমার ইচ্ছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, আপনি যা বলবেন তাই হবে। আমি আরো বললাম, আমি তো ক্যাটালগে দেখেছি, সেখানে লেখা রয়েছে ছবিগুলো শুধু প্রদর্শনীর জন্য। তখনি আমি বুঝতে পেরেছি আপনি চান না ছবি বিক্রি করতে। ঠিক হলো, নিষাদ তার বাবার আঁকা ছবির প্রথম চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবে। আর যা যা সবই পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী পালন করা হবে বইমেলায়। চিত্র প্রদর্শনী ছাড়াও হুমায়ূন আহমেদের সংবর্ধনা, ‘শতবর্ষের বাংলা গান’- সব বিষয় নিয়েই কথা হলো। এদিকে আমরা সবাই ব্যস্ত ১২ জুন স্যারের সার্জারি নিয়ে। সার্জারির আগে ৯ জুন স্যারকে আমরা আমাদের জ্যাকসন হাইটসের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেছি। হুমায়ূন আহমেদ ৯ জুন আমাদের জ্যাকসন হাইটসের বাসায় এলেন। ১২ জুন সার্জারিও হয়ে গেল ভালোভাবে। ১৯ জুন স্যার বাসায় ফিরলেন। এ পর্যন্ত সবই ঠিকঠাক। ২০ তারিখ থেকেই শুরু বিপত্তি। প্রথমে চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়া। জ্যামাইকা হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে পুনরায় বেলভ্যু হাসপাতালে স্থানান্তর। ক্রমান্বয়ে তাঁর চিকিৎসার অবনতি। ২৬ জুন রাত হুমায়ূন আহমেদকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়া এবং মেহের আফরোজ শাওনের সাথে ফোনে উত্তপ্ত বাক্যালাপ। তার সাথে সৃষ্টি হলো আমার দূরত্ব। ২৯ জুন যখন বইমেলার উদ্বোধন হয় তখন বেল্যুতে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বাংলা সাহিত্যের জীবিত কিংবদন্তী হুমায়ূন আহমেদ। এত কিছুর পরও যথারীতি তার চিত্র প্রদর্শনী যাতে নিষাদ উদ্বোধন করতে পারে তার দায়িত্ব দেয়া হয় বইমেলার পক্ষ থেকে ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে। বইমেলা উদ্বোধনের দুঘণ্টা আগে আমি যখন জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে ফোন করে বুঝতে পারি নিষাদ আসছে না। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ছাড়াই অনুষ্ঠিত হলো হুমায়ূন আহমেদ-এর প্রথম চিত্র প্রদর্শনী। আগের দিন অন্যপ্রকাশের মাজহারুল ইসলাম ফোন করেছিলেন বইমেলায় তাঁদের জন্য স্টল রাখতে। এ বছর বইমেলার আমন্ত্রণে অন্যপ্রকাশের কমল ও তাঁর পরিবারের ভিসা হয়েছে। তারা অবশ্য বইমেলায় এসে পৌঁছাননি। এর আগের বছর মাজহারুল ইসলামের স্ত্রী ও সন্তানদেরও ভিসা হয় মুক্তধারার আমন্ত্রণে। যাহোক মাজহারুল ইসলামের ফোন অনুয়ায়ী তাদের জন্য স্টলও রাখা হয়েছিল। মাজহারুল ইসলামকে তখন আমি অনুরোধ করেছিলাম অন্যপ্রকাশের বই পাঠাবার সময় হুমায়ূন আহমেদের চিত্র প্রদর্শনীর ক্যাটালগগুলো পাঠানোর জন্য। মেলা শুরুর দিন মাজহারুল ইসলাম বা অন্যপ্রকাশ কেউ-ই বইমেলায় আসেনি। তারা জানানওনি যে আসতে পারবেন না। এভাবেই তৈরি করা ক্যাটালগ ছাড়াই দর্শকের ভালোবাসায় হুমায়ূন আহমেদের ২০টি ছবির চিত্র প্রদর্শনী হয়ে গেল নিউইয়র্কে। প্রদর্শনীর পরও ছবিগুলো আমাদের কাছে রয়ে গেছে। যেদিন আমরা নিউইয়র্কে হুমায়ূন আহমেদের স্মরণ সভা করেছি তার আগের দিন আমরা যোগাযোগ করেছি মেহের আফরোজ শাওন এবং ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের সাথে। শাওনকে ফোনে পাইনি। জাফর ভাই বলেছেন ছবিগুলো এখন আমাদের কাছে। রেখে দিতে। পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ছবিগুলো যত্ন করে রাখতে বলেছেন। এছাড়া আর যেসব ছবি হুমায়ূন আহমেদ ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্নজনকে দিয়ে গেছেন সম্ভব হলে সেগুলোও স্ক্যান করে রাখার জন্য বলেছেন। আমার জানামতে হুমায়ূন আহমেদের আঁকা আমেরিকায় বাংলাদেশ মিশন ও কনস্যুলেটে রয়েছে দুটো ছবি। আর কয়েকজন বন্ধুকে উপহার দিয়ে গেছেন কয়েকটি। ঢাকাতে দখিন হাওয়া’তে দেশে আসার আগে আঁকা জল রঙের বেশ কয়েকটি ছবি রয়েছে। যা হুমায়ূন আহমেদ এবং নাসির আলী মামুনও আমাকে বলেছেন। সার্জারির আগে দেশে যে তিন সপ্তাহের জন্য গিয়েছেন নুহাশ পল্লীতে সেখানেও হুমায়ূন আহমেদ অনেক ছবি এঁকেছেন। তিনি বলেছিলেন সে ছবিগুলো থেকেও ১০টি ছবি নিউইয়র্কের প্রদর্শনীর জন্য আনবেন। আনা হয়নি। সে ছবিগুলোও আছে এখন ঢাকাতে। সেদিন আমরা ঘুমিয়ে পড়েছি। হঠাৎ রাত ১টায় একটা ফোন এলো। মেহের আফরোজ শাওনের মোবাইল ফোন থেকে। গলা বুঝতে পারিনি। বললাম কে বলছেন? বললেন, আমি শাওনের মা। শাওনের ইচ্ছে আগামীকাল যাবার সময় হুমায়ূনের ছবিগুলো নিয়ে যাবে। তুমি জানো তো আমরা চলে যাবো। আসার সময় ছবিগুলো নিয়ে আসবে। আমি বললাম, কাল সকালে কথা হবে। সকালে আমি ফোন করেছি। সেঁজুতী ফোন ধরেছিল দুবার। পাইনি মেহের আফরোজ শাওনের মা’কে। এরপর তিনি ফোন ব্যাক করলেন। বললাম, ছবিগুলো প্রদর্শনীর পর লং আইল্যান্ডে আমাদের বন্ধুর বাসায় আছে। আমরা বইমেলার পর লাস ভেগাসে বঙ্গ সম্মেলনে যাবার ফলে ওখানে রেখে গেছি। বললাম আমরা যত্ন করে রাখবো এবং ঢাকায় পাঠিয়ে দেবো। এরপর এ ছবির জন্য মেহের আফরোজ শাওন নানা জনকে বলেছেন। আমাকে একটা ই-মেইল পাঠিয়েছেন। গত ডিসেম্বর ২০১২-তে আমি ঢাকায় গিয়েছি। হঠাৎ একদিন আমার ফোনে মেহের আফরোজ শাওন ফোন করলেন। বললেন অনেক কষ্ট করে আমার ফোন নম্বর সংগ্রহ করে ফোন করলেন। হুমায়ূন আহমেদের ছবিগুলো যাতে ফানসু মন্ডলের কাছে দিয়ে দিই। তিনি ছবিগুলো তার শাশুড়ির (হুমায়ূন আহমেদের মা) কাছে পাঠিয়ে দেবেন। তিনি যাকে যাকে ছবিগুলো দেবার মনে করবেন দেবেন। এরপর দিনই সচিবালয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরের সাথে দেখা। তিনিও বললেন, বিশ্বজিত অন্যপ্রকাশের মাজহার ফোন করে বলেছে তোমাকে হুমায়ূন আহমেদের ছবিগুলো দেওয়ার জন্য। গত ৫ বছর ধরে ঢাকায় আমি একই ফোন নম্বর ব্যবহার করে আসছি। একবছর আগেও এই নম্বরে মেহের আফরোজ শাওন, মাজহারুল ইসলাম বা অন্যপ্রকাশের অনেকেই ফোন করেছেন। বুঝলাম, ফোন নম্বরটি আর তাদের সংরক্ষণে নেই। মেহের আফরোজ শাওনের চিঠি পাওয়ার পর আমরা যোগাযোগ করেছি ড. জাফর ইকবালের সাথে। তিনি বলেছেন ছবিগুলো তাঁর মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিতে। তাই আমরা হুমায়ূন আহমেদের ছবিগুলো তাঁর মা আয়েশা ফয়েজের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

.

পাদটীকা

হুমায়ূন আহমেদ ছবি এঁকেছেন মনের আনন্দে। আমেরিকা বইমেলায় তাঁর জীবনের প্রথম চিত্র প্রদর্শনী হয়ে গেল। হুমায়ূন আহমেদের ইচ্ছে ছিল তাঁর পুত্র ‘বিশিষ্ট চিত্র সমালোচক নিষাদ’ উদ্বোধন করবে তার বাবার প্রথম প্রদর্শনী। তাও হলো না। তখন তিনি মৃত্যুর সাথে বেলভ্যুতে যুদ্ধ করছিলেন। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের প্রদর্শনী পরম মমতায় করা হলো উত্তর আমেরিকা বইমেলায়। চিত্রকর হুমায়ূন আহমেদের একটি ছবি এঁকেছে আমার কন্যা বহতা সাহা, যে তার চলচ্চিত্র ‘চন্দ্রকথা’য় ৬ বছর বয়সের ‘যইতরী’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলো। ‘চন্দ্রকথা’র যইতরী এখন ১৮-তে পড়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *