০৭. শুচিত্মানের কাহিনি

শুচিত্মানের কাহিনি

শিবভক্ত মহাযোগী কদম ঋষি, তার একমাত্র পুত্র নাম শুচিত্মান। বন্ধুদের সঙ্গে স্নান করতে গেল নদীতে। সকলেই সাঁতার জানে, জল ছোঁড়াছুড়ি, নানান ভঙ্গিতে সাঁতার কাটা ডুব সাঁতার চিৎ সাঁতার কোন কিছু কারুরই জানা নেই। একসময় বন্ধুরা শুচিত্মানকে ধাওয়া করল, সে মাঝনদীতে চলে গেল। মাঝনদীতে এক শুশুক তাকে আক্রমণ করল। শুচিম্মান ডুবে গেল। বন্ধুরা ভাবল সে মারা গেছে।

সকলের মন খারাপ, দুঃখে তারা ফিরে গিয়ে কর্দম ঋষিকে সব জানাল।

তাদের কথা শুনে ঋষি কর্ম বললেন– শুচিত্মান তো ভালো সাঁতারু, তার তো ডুবে যাওয়ার কথা নয়। তিনি যোগাসনে বসলেন, কি হয়েছে জানতে স্পষ্ট দেখতে পেলেন শুশুক তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে জলের তলায়। এমন সময় জলদেবী এসে শুশুকের কাছ থেকে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে সাগরের কাছে রেখে দিলেন। সাগর নিয়ে যাচ্ছে শুচিত্মানকে। শিব এসে জিজ্ঞাসা করলেন তাকে– একে তুমি কোথায় নিয়ে যাবে?

সাগর অবাক হলো, উত্তরে বলল– আমি এর পরিচয় জানি না। জলদেবী আমায় দিলেন।

শিব বললেন– এই ছেলেটি আমার একজন পরমভক্ত কদম ঋষির ছেলে। আমাকে দাও।

এই কথা শোনামাত্র শিবের আদেশ পালন তো করতেই হবে। শুচিত্মানকে জিজ্ঞাসা করে তারপর সেই শুশুককে ধরলেন, একটা জালে বেঁধে নিলেন সেই শুশুকটিকে। তারপর চললেন কর্দম ঋষির কাছে।

ঋষি ছেলেকে দেখে খুব খুশি হলেন, আর সামনে দেখলেন শুশুক, ঋষির ধ্যান ভাঙলে সমুদ্র তাকে করেছে ওকে ক্ষমা করে দিন।

ঋষি বললেন–আমার কোন কিছু অজানা নেই। এই বলে ছেড়ে দিলেন তাকে। এদিকে শুচিত্মানের গা দিয়ে জল ঝরছে, দেহটায় নীল শেওলা জমেছে।

বহুকাল পরে প্রায় হাজার বছরের পর যোগাসনে কদম ঋষি বসলেন, এতটা সময় পার হয়ে গেছে। বুঝতেই পারেননি। শুচিত্মান আর বালক নেই।

এখন শুচিম্মান তপস্যা করতে চায়, সেইজন্য বাবার কাছে অনুমতি চাইল। পুত্রের কথায় ঋষি কদম সঙ্গে সঙ্গে রাজী হলেন।

শুচিম্মান পিতাকে প্রণাম করে বারাণসীতে শিবের আরাধনা করতে চলে গেল।

কঠোর তপস্যার পর মহাদেব দেখা দিয়ে বর দিতে চাইলেন, শুচিম্মান বলল– আমি জল আর জলজন্তুদের উপর আধিপত্য করব এই বর দিন।

শিব তথাস্তু বলে চলে গেলেন। তার শুচিত্মান জলের অধীশ্বর হলেন।