১৩. শিব-সতীর বিবাহ ও দক্ষযজ্ঞ

শিব-সতীর বিবাহ ও দক্ষযজ্ঞ

ব্রহ্মার পুত্র দক্ষ প্রজাপতি, সেই দক্ষের অসংখ্য কন্যা। তাদের মধ্যে সতী একজন। রূপে গুণে অতুলনীয়া। ব্রহ্মা চিন্তা করলেন–শিবের সঙ্গে তার বিয়ে দেবেন। ব্রহ্মা দক্ষকে বললেন–তার মনের কথা।

দক্ষ বললেন, হে পিতা, আপনি যখন বলছেন, তাহলে কোনো চিন্তা নেই। কিন্তু পাত্রের গুণ, কুল, বিদ্যা, রূপ এসব তো দেখতে হবে? বিশেষ করে দাতা কি গ্রহীতার চরিত্র না দেখে কন্যা সমর্পণ করা যায় না। আপনি শঙ্করের পরিচয় আমার কাছে বলুন।

ব্রহ্মা বললেন, তিনি পঞ্চানন আবার তার সহস্র রূপ। সাধারণত ত্রিনেত্র। কখন কখন শত সহস্রও হয়। শশধরের মতো তার বর্ণ। কখনও নীলবর্ণ আবার কখনও কমলবর্ণও হয়, কখন কি যে ভাবেন বোঝা যায় না, তাঁর বিদ্যা জানতে এমন কেউ নেই সে তা জানতে পারে। চারিবেদ তার সীমা দিতে পারে না। তার গোত্রের কোনো ঠিক নেই। সবার ঈশ্বর তিনি, তিনি সিদ্ধিদাতা, মুক্তিদাতা, তিনি সৃষ্টি করেন আবার তিনি অন্তিম সংহার করেন। দিবানিশি শ্মশানে ঘোরেন।

শিবের চরিত্রের কিছু বললাম। আমি মনে করি সতীর উপযুক্ত হবেন।

ব্রহ্মার মুখে পাত্রের এমন পরিচয় পেয়ে দক্ষ বিস্মিত হয়ে বললেন–শিবের মধ্যে বর হবার কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। সতীর রূপের তুলনা হয় না। সব ক্রিয়াকাণ্ডের বাইরে শিব। তার হাতে কন্যা দান করা অসম্ভব। আমার কন্যা কখনই শ্মশানবাসী হতে পারবে না।

আমি রাজা আর আমার জামাই ভিখারী?

দক্ষের কথায় ব্রহ্মা দুঃখিত হয়ে বললেন, সকল জীবের পরম ঈশ্বর শিব, সকল দেবতার থেকে তিনি প্রবীণ, তিনি নির্গুণ হয়েও সগুণ, তার সমান পাত্র জগতে দ্বিতীয় কেউ নেই।

ব্রহ্মার মুখে এমন কথা শুনে দক্ষ বললেন–হে পিতা, আমি আমার সতীকে আপনার হাতেই তুলে দিলাম। তারপর আপনি আপনার ইচ্ছামতো যার হাতে তোক তুলে দিন।

এই কথা বলে দক্ষ সতীকে এনে ব্রহ্মার হাতে তুলে দিলেন। ব্রহ্মা সতীকে নিয়ে হিমালয়ে চলে গেলেন। তারপর তিনি সকল দেবতাদের স্মরণ করতে সবাই উপস্থিত হলেন সেখানে। তারপর গন্ধর্ব, চারণ, সিদ্ধগণ ও সপ্তর্ষিকেও স্মরণ করে আনা হল। সপ্তর্ষি বেদমন্ত্র উচ্চারণ করলেন। ব্রহ্মা শিবের হাতে সতীকে সম্প্রদান করলেন। নৃত্য গীতে সবাই আনন্দ উপভোগ করলেন। দেবতারা শিব-সতীর মাথায় পুষ্পবৃষ্টি করলেন।

সকলকে প্রস্থান করিয়ে ব্রহ্মা আপন পুরীতে চলে গেলেন। দেবতারাও চলে গেলেন। শিবকে পতিরূপে পেয়ে সতীর খুব আনন্দ। একসময় ব্রহ্মা বিষ্ণু সহ সকল দেবতাগণ শিব-সতাঁকে দর্শনের জন্য গেলেন। দক্ষও গেলেন কন্যা-জামাতাকে দেখতে। সতী সবাইকে দেখে আনন্দিত হলেন এবং সবাইকে সমান সম্মান দিলেন।

সবাই খুশি, কিন্তু দক্ষ অপমানিত বোধ করলেন। তিনি শিবের শ্বশুর আর তাকেও কিনা সমান সম্মান।

দেবী সতী, পরমাত্মা স্বরূপিণী হন, তার দৃষ্টি সবার প্রতি সমান, দক্ষ শিবের তত্ত্ব না জেনে কন্যা জামাতা জ্ঞান করলেন। তাই অপমানিত বোধ করে চলে গেলেন।

একদিন দক্ষ এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করলেন, সেখানে সকল দেবতা এসে হাজির হলেন, কেবল শিব ও সতীকে তিনি ডাকলেন না।

মহাযজ্ঞের ধূম আকাশে উঠল, সতী বললেন, কে এই যজ্ঞ করছেন। শিবহীন যজ্ঞ হয়ে কেমন করে, আমার পিতা বড়ই মূর্খ।

শিব বললেন, সকল দেবতা যজ্ঞস্থলে উপস্থিত, তাঁরা যজ্ঞাংশ ভক্ষণ করবেন, তাতেই আমি মুগ্ধ।

দেবী বললেন, পিতা-মাতার চরণ দর্শন করতে আমি পিতৃগৃহে যাব। তুমি অনুমতি দাও। বাবা কেন শিবহীন যজ্ঞ করেছেন আমি জানবো।

শিব বললেন, সতী বিনা নিমন্ত্রণে যাওয়া উচিত নয়। আমাদের আমন্ত্রণ নেই। না যাওয়াই ভালো।

দেবী বললেন, মেয়ে বাপের বাড়ি যাবে সেখানে আমন্ত্রণের কি প্রয়োজন?

সতীর উৎসাহ দেখে শিব বললেন, দেবী আমার আদেশ উপেক্ষা কোরো না। বিনা নিমন্ত্রণে গেলে অপমানিত হতে হবে।

শিবের আপত্তি দেখে সতী খুব রেগে গিয়ে বললেন, আমি কেন যাব না? দেখে নাও আমি কে?

এই কথা বলে দেবী দশমহাবিদ্যা রূপ দেখালেন শিবকে। কালী, তারা, ষোড়শী ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্থা, ধূমাবতী, গলামুখী, মাতঙ্গী ও বগলা।

শিব এই রূপ দেখে ভয় পেয়ে গেলেন। তার পর দেবী তার নিজরূপে ফিরে আসলে শিব বললেন,– আমি তোমাকে চিনতে পারিনি। তুমি যজ্ঞে যাও তবে তাড়াতাড়ি ফিরে এস।

দেবী গেলেন, ব্রহ্মাদি দেবতাগণ সবাই তার চরণ বন্দনা করলেন। কিন্তু দক্ষ অনাহুত সতীকে দেখে রাগে বলতে লাগলেন–শ্মশানবাসী শিবের ভার্য্যা এখানে এসেছে। যজ্ঞস্থল অপবিত্র হল। বিনা নিমন্ত্রণে এল, এর কি কোনো লজ্জা নেই?

দক্ষের এমন কথা শুনে ব্রহ্মা বললেন, তিষ্ঠ পাপিষ্ঠ দক্ষ, শিবের ঘরণী সতীকে তুমি চিনতে পারনি।

দেবী জগৎ-জননী আদ্যাশক্তি, এঁর থেকেই সৃষ্টি ত্রিভুবন। আর শিবকে চিনবে কেমন করে আমিও চিনতে পারিনি তাঁকে।

দধীচি বললেন, হে দক্ষ, ব্রহ্মা তোমার পিতা, তুমি পিতার কথা লঙ্ঘন করো না। তাতে ধর্মাবৃদ্ধি পাবে। শিব রেগে গেলে তোমার যজ্ঞ ধ্বংস হবে।

তাদের কথা শুনে দক্ষ বললেন, যে শ্মশানেমশানে ঘোরে, তাকে হবি দান করতে পারবো না, শিব রেগে গেলে কি ক্ষতি করবে আমার? আমার আজ্ঞাবহ দেবতাদের আমি হবি দান করব।

দধীচি মুনি রেগে আবার বললেন–ব্রহ্মা, বিষ্ণু আর সকল দেবতাগণ এরা যতই থাকুক শিব রেগে গেলে এই যজ্ঞ কেউ রক্ষা করতে পারবে না। তার থেকেই সৃষ্টি আর শেষ, যেজন শিব নিন্দা করবে তার জীবন সুখকর হবে না। হে দক্ষ, তুমি রুদ্রের উপর হিংসা করলে, তোমার মঙ্গল হবে না।

তারপর ব্রহ্মাও অনেক বোঝালেন দক্ষকে, কিন্তু দক্ষ রেগে শিব নিন্দা করতে ছাড়লেন না। বললেন, শিবের চরিত্র আমার জানা আছে, শ্মশানে-মশানে থাকে, ভাঙ ধূতরা খায়, লজ্জাহীন উলঙ্গ, গায়ে তেল নেই, ছাই মাখে, কোন বেশভূষা নেই, মাথা জটা আর তার অনুচররা সকলেই ভূত প্রেতের দল।

দক্ষের মুখে এমন শিবের নিন্দা শুনে উপস্থিত সকল দেবতাগণ দুঃখিত হয়ে কানে আঙ্গুল দিলেন।

সতী নিজের কানে পতি নিন্দা শুনে মহারুষ্ট হলেন, তিনি পিতাকে বললেন, আজ পর্যন্ত কেউ শিবের নিন্দা করেনি। তুমি তাই করলে। তুমি যেহেতু মহেশ্বরের বদনাম করলে, তাই তোমার কুল নষ্ট

এইভাবে দক্ষকে ভর্ৎসনা করলেন সতী এবং নিজের প্রাণবায়ু রোধ করে যজ্ঞস্থলে মৃত্যুবরণ করেন।

শিব অন্তর্যামী তাই তিনি কৈলাসে থেকেও সতীর দেহত্যাগের কথা জানতে পারলেন। তিনি মহাক্রুদ্ধ হলেন, তার চোখ দিয়ে আগুন বেরোতে লাগল। শঙ্করের গাত্ররোম থেকে অতি ভয়ঙ্কর এক মহাবীরের সৃষ্টি হল। তার হাজার হাজার হাত, হাজার হাজার চোখ, হাতে শূল, গদা, চক্র বজ্র, দগর করে আছে, সিংহের মতই তার বিক্রম।

শিবরোম জাত সেই বীর শিবকে বললেন, হে মহেশ্বর, আমাকে সৃষ্টি করলেন কেন? আমাকে কি করতে হবে।

শিব বললেন, যেহেতু তোমার জন্ম আমার ক্রোধ থেকে, তাই তোমার নাম বীরভদ্র। তুমি তাড়াতাড়ি দক্ষের যজ্ঞাগারে যাও, ধ্বংস করে এস যজ্ঞ। তোমার সাহায্যের জন্য যাকে খুশি সৃষ্টি করে নেবে।

রুদ্রের কৃপায় বীরভদ্র নিজের মনে ক্রোধের সৃষ্টি করে দেবী ভদ্রকালীকে সৃজন করলেন।

মহেশ্বর তখন দুজনকেই আশীর্বাদ করলেন।

তারা সঙ্গে নিলেন অসংখ্য প্রমথগণকে। তারপর তারা যজ্ঞাগারে উপস্থিত হল। হরিদ্বারের কাছে। কখল নামে এক স্থানে দক্ষের যজ্ঞস্থল, সেই যজ্ঞাগারের উত্তরদ্বারে দাঁড়াল বীরভদ্র আর দক্ষিণদ্বারে দাঁড়াল ভদ্রকালী।

তাদের দেখে দেবতারা বুঝতে পারেন, যজ্ঞস্থল এক্ষুনি ধ্বংস হবে। প্রমুখ ধর্মরাজ ও বীরভদ্রের মধ্যে যুদ্ধ বাধল। ধর্মরাজকে পরাস্ত করে বীরভদ্র ঢুকলেন যজ্ঞাগারে। সকল দেবতাগণ তাকে বাধা, দেওয়ার চেষ্টা করেন। ভয়ঙ্কর যুদ্ধ বাধল, আহত হয়ে দেবতারা পিছু হঠতে বাধ্য হলেন। প্রমথগণ যেখানে যজ্ঞযুদ্ধে গচ্ছিত হচ্ছিল সেখানে গিয়ে উপদ্রব শুরু করল। তখন সেই যজ্ঞের পুরোহিতগণ ভয়ে পালাল এবং তারা নারায়ণের শরণাপন্ন হলেন।

নারায়ণ যুদ্ধ করে বসেছিলেন, পরে তিনি উঠলেন অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে মারলেন বীরভদ্রের উপর। বীরভদ্রের গায়ে লেগে সব অস্ত্র মাটিতে পড়ে গেল। বহুক্ষণ যুদ্ধ করলেন নারায়ণ, যত অস্ত্র মারেন, শিবের প্রসাদে সব অস্ত্রই ব্যর্থ করে দেন বীরভদ্র। বীরভদ্রকে দমন করতে না পেরে হরি নাক দিয়ে বীরভদ্রকে ধারণ করে ভূমির উপর ফেলে বাহু আর উরুর দ্বারা শোষণ করতে লাগলেন। তার ফলে বীরভদ্র রক্তবমি করল। সেই রক্তের সনে একটি চক্র বের হল। শ্রীহরি সেই চক্রটি নিয়ে বীরভদ্রকে ছেড়ে দিলেন।

এমন সময় মহেশ্বর ক্রোধান্বিত হয়ে যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হলেন। বীরভদ্র তাকে দেখে তার শরণ নিলেন। বীরভদ্রের রক্তমাখা শরীর দেখে মহাদেব ক্রুদ্ধ হন। তিনি নিজে যজ্ঞের মধ্যস্থলে গিয়ে সব লন্ডভন্ড করে দিলেন। রুদ্রের সেই ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখে ভগবান শ্রীহরি ভয় পেয়ে সেই স্থান ছেড়ে কুজাম্রকাননে আশ্রয় নেন। দেবতারা ভয়ে, যেদিকে পারলেন চলে গেলেন।

এইসব দৃশ্য দেখে প্রজাপতি দক্ষ ভাবলেন। শিবকে অপমান করার জন্যই এইসব হল। অপমানিত হয়ে সকল নিমন্ত্রিতগণ চলে গেলেন। পুণ্যের জন্য যজ্ঞ করেছিলাম, পেলাম যা পাবার ছিল।

শিবের অনুচরেরা মহর্ষিগণকে মারতে লাগলেন, তখন মহর্ষিগণ বীরভদ্রের স্তব করলেন। তবুও বীরভদ্র শান্ত হল না। তিনি দক্ষের মাথায় আঘাত করলো এবং সঙ্গে সঙ্গে দক্ষের মাথা ছিন্ন হয়ে গেল।

যারা যজ্ঞ করলেন তারাই মারা গেলেন। তাই সকলেই ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। দ্বারের কাছে ভদ্রকালী ও প্রমথেরা ছিল। যারা পালাতে চেষ্টা করছিল তাদেরকে তারা বধ করেছিল। তখন উপায় না দেখে দেবতাগণ পাখির রূপ ধরে যজ্ঞস্থল ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। ব্রহ্মা মুক্ত রূপ ধরে পালাবার চেষ্টা করলে শিব তাঁকে ধরে ফেলেন। কোন উপায় না দেখে ব্রহ্মা রুদ্রের স্তব-স্তুতি করলেন। শিব তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মাকে বললেন, বল কি চাই?

ব্রহ্মা বললেন, দক্ষকে বাঁচিয়ে দিন এবং যাঁরা যাঁরা এই যুদ্ধে মারা গেছেন তাঁদের প্রত্যেকের প্রাণ দান করুন।

মহেশ্বর বললেন, এখানে যজ্ঞে যে পশুকে বলি প্রদত্ত করা হয়েছে, সেই পশুর মাথা দক্ষের কাঁধে যুক্ত করে দিলে সে বেঁচে উঠবে, আর হে ব্রহ্মা, তোমার কমণ্ডলুর জল সবার গায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলে সবাই প্রাণ ফিরে পাবে।

শিবের কথা তো ব্রহ্মা ছাগলের মস্তক দক্ষের কাঁধে যোগ করলেন। তারপর তিনি কমণ্ডুলর জল ছড়িয়ে দিলেন চারদিকে, সকলেই বেঁচে উঠলেন। দক্ষ তখন শিবকে বললেন, এই যজ্ঞে আপনাকে নিমন্ত্রণ না করার ফল আমি পেলাম। এই কথা বলে দক্ষ অর্কত্রের সঙ্গে শিবকে হবি দান করলেন।

সকল দেবতারা শিবের স্তব-স্তুতি করলেন, রুদ্রদেব বীরভদ্রকে সংবরণ করলেন।

দক্ষের যজ্ঞস্থল থেকে একে একে সবাই চলে গেলেন, থাকলেন কেবল মহেশ্বর। তিনি দেখলেন প্রাণহীন সতীর দেহ, ছুটে গিয়ে নিজের কোলে তুলে নিলেন সতীর দেহ এবং বিলাপ করলেন। যিনি সৃষ্টি-স্থিতি প্রলয়ের দেবতা, তিনি এক শোকাহত বহুগণ বিনাশ করার পর তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরতে তিনি উচ্চস্বরে কাঁদতে থাকেন। সতীকে অনেক করে ডাকতে থাকেন, উত্তর না পেয়ে তিনি অভিমান করেন। পাগলের মতো হয়ে গিয়ে তিনি সতীর দেহ কাঁধে তুলে নিয়ে চলতে লাগলেন পাহাড়, বন, জঙ্গল, মরু, নদ-নদী, নানা দেশ ছুটতে থাকলেন, কখনো নাচছেন, কখনো কাঁদছেন, তার পদভারে ভূতল কাঁদতে লাগল। তার তিনটি চোখের জলের ধারা দিয়ে সৃষ্টি এক সরোবর। যার নাম নেত্র সরোবর।

এক বছর পূর্ণ হল তবুও শিবের পাগলামি কাটল না। বুঝি সৃষ্টি নাশ হয়ে যাবে। সকলের ভয় কে এই ভয়ঙ্কর রুদ্রকে সামলাবে? সকলেই শ্রীহরিকে স্মরণ করলেন, বললেন, যতক্ষণ সতীর দেহ শিবের কাঁধে থাকবে, ততক্ষণ তিনি শান্ত হবেন না। আমি যাচ্ছি সতীর দেহকে বিনষ্ট করবার জন্য।

এই কথাগুলি বলে শ্রীহরি তাঁর সুদর্শন চক্র শিবের পেছনে পেছনে যেতে লাগলেন। ফলে সতীর অঙ্গ কেটে কেটে পড়তে লাগল সব স্থানে। শিব এর কিছুই জানতে পারলেন না, কারণ তিনি তো তখন পাগলের মতো। সতীর সেই খণ্ডিত অংশগুলি যেখানে পড়ল, সেখানে এক-একটি করে মহাতীর্থ গড়ে উঠল। এভাবে একান্ন পীঠস্থান হল।

শিব দেবীর বাকী অংশ খণ্ডিত করেছিলেন। তার অস্থির মালা করে নিজের গলায় পরে নিলেন, এবং তার ভস্ম নিজের গায়ে মাখলেন।

পরমাত্মা শিব সতীর বিরহে সবকিছু ভুলে গেলেন। ব্রহ্মাদি সকল দেবতারা তার কাছে গেলেন।

শ্রীহরি শিবকে বোঝালেন তারপরে বললেন–হে দেব, তোমার সতী হিমালয়ের ঘরে জন্মাবে। পুনরায় তোমার প্রাণপ্রিয়া হবে। হরির কথায় শিব শান্ত হলেন। দেবতারা স্বর্গে ফিরে গেলেন। শিব কৈলাসে গেলেন।