হুইসেল বাজানো থেকে শুরু করে শোয়েবদের চারজনের হাত বাঁধা পর্যন্ত পুরো ব্যাপারটা এমনভাবে ঘটে গেলো যে, ওদের বিশ্বাসই হচ্ছিলো না ওরা শেষ পর্যন্ত জামাতীদের হাতে ধরা পড়েছে। ওদের চমক ভাঙলো যখন ওরা এক ঘন্টা পর নিজেদের আবিষ্কার করলো মাটির নিচের এক পাকা ঘরে।
দূর থেকে যেগুলো খড়ের আর বেড়ার ঘর মনে হয়েছিলো তার ভেতর যে দুটো পাকা ঘর রয়েছে দূর থেকে বোঝার উপায় নেই। ঘরের চালটাই শুধু খড়ের। মেঝে আর দেয়াল নিরেট ইট পাথরের। কর্কশ গলায় এক লোক হামার সাথ চলো, বলে ওদের ধাক্কা মেরে ঠেলে দিলো পাকা ঘরের ভেতর নিচে নামার সিঁড়ি থেকে। ভাগ্যিস ধাক্কাটা বেশি জোরে ছিলো না, তাই ওরা হুমড়ি খেতে খেতে বেঁচে গেছে।
অল্প দূরে কে যেন আসরের নামাজের আজান দিলো। আজান শেষ হওয়ার পর চারদিকে কোনও শব্দ নেই। যে ঘরটায় ওদের রাখা হয়েছিলো সেটার ছাদ ঘেষে দু দিকের দেয়ালে দুটো বড় ভেন্টিলেটার। ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার রাস্তা একটাই–যেখান দিয়ে ওদের ঢোকানো হয়েছে। দরজাটা লোহার পাতের। ওদের ভেতরে ঠেলে কর্কশ ভাষী লোকটা বিকট শব্দে দরজা বন্ধ করে চলে যাওয়ার পাঁচ মিনিট পর মুখ খুললো শোয়েব হারামজাদা মাহবুবটা যে জামাতীদের লোক কল্পনাও করতে পারিনি।
সুমন বললো, তুমি কেন, কারও পক্ষে ধারণা করা সম্ভব ছিলো না।
ঝন্টু বললো, বইয়ে পড়েছিলাম চট্টগ্রামের জঙ্গলে বুনো হাতি ধরার জন্য পোষা হাতি ব্যবহার করে। জামাতীরা আমাদের ধরার জন্য একই ফন্দি করেছে।
সবার ভেতর বেশি ঘাবড়ে গিয়েছিলো রবি। ভাঙা গলায় বললো, আমাদের ওরা আটকে রেখে কী করবে শোয়েব ভাই?
শোয়েব শুকনো গলায় বললো, আমাকে যে ওরা জানে মেরে ফেলবে, এতে কোনও সন্দেহ নেই।
ওরা যে কাগজগুলো চাইছে ওগুলো দিয়ে দাও না? রবির গলা শুনে মনে হলো ও কেঁদে ফেলবে।
সুমন ম্লান হেসে বললো, তোর কি ধারণা? কাগজ পেলে ওরা শোয়েব ভাইকে ছেড়ে দেবে?
কেন ছাড়বে না?
শোয়েব ভাই ওদের সম্পর্কে এমন সব কথা জেনেছেন যা ওদের পছন্দ নয়।
কাউকে পছন্দ না হলেই মেরে ফেলবে?
ওরা এর চেয়েও তুচ্ছ কারণে মানুষ মারতে পারে।
শোয়েব বললো, একাত্তরে ওরা অকারণেও অনেক বাঙালিকে হত্যা করেছিলো।
তোমাকে মেরে ফেললে আমাদের কী হবে?
ওদের তিন জনের জন্য শোয়েবের খুবই খারাপ লাগছিলো। কিন্তু করারও কিছু ছিলো না। অসহায় গলায় বললো, আমি তোমাদের জন্য খুবই দুঃখিত রবি। আমার জন্যেই তোমাদের এত কষ্ট আর দুর্ভোগ। আমার প্রাণ দিয়েও যদি তোমাদের বাঁচাতে পারি তাই করবো।
ঝন্টু মৃদু ধমকের গলায় রবিকে বললো, তুই মেয়েদের মতো প্যান প্যান শুরু করলি কেন? আমাদের যেভাবেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে।
কিভাবে পালাবি? গলায় ঝাঁঝ মিশিয়ে রবি বললো, বাইরে দেখিসনি স্টেনগান কাঁধে ঝুলিয়ে কিভাবে সবাই পাহারা দিচ্ছে।
রাত হোক একটা উপায় ঠিকই বের করে ফেলবো।
রাত হওয়ার আগেই আমাদের গুলি করে মেরে ফেলবে।
সুমন মাথা নাড়লো–তুই একটু বেশি বেশি ভাবছিস রবি। শোয়েব ভাইকে জেরা না করে ওরা কিছু করবে না।
ওপরে ভেন্টিলেটার দিয়ে শোয়েব বাইরে তাকিয়ে দেখলো দিনের আলো ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসছে। একটু পরেই সন্ধ্যা নামবে। তারপর রাত। কে জানে এই রাতই ওর জীবনের শেষ রাত কি না।
শোয়েবের বাড়ির কথা মনে হলো। ঢাকায় ওর বাবা মা দুই ভাই আর এক বোন থাকে, বোন সবার বড়। ভাইদের ভেতর সবার বড় শোয়েব। ছোট ভাইটা মাত্র ক্লাস ফাইভে পড়ে। ওর বড়টা এবার এইচ,এস,সি দেবে। যতবার বাড়ি যায় মা বার বার বলেন, চট্টগ্রামের যেসব খবর কদিন পর পর কাগজে বেরোয় পড়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে। যায়। তুই বাবা পলিটিক্সের ধারে কাছেও ঘেঁষবি না। রোজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে আমি আল্লার কাছে তোর জন্য দোয়া করি। শোয়েব ভাবলো ঠিক এই মুহূর্তে মা আসরের নামাজ শেষ করে জায়নামাজে বসে ওর জন্য আল্লার কাছে দোয়া করছেন। বাবা মা দুজনই শোয়েবের মুখ চেয়ে দিন গোনেন। কবে ও পাশ করে বেরিয়ে চাকরিতে ঢুকে সংসারের হাল ধরবে। বাবার চাকরির হিসেব করা টাকায় সংসার চালাতে গিয়ে মা হিমশিম খান।
শোয়েবের মুখের দিকে তাকিয়ে সুমনের মনে হলো ও বাড়ির কথা ভাবছে। আস্তে আস্তে বললো, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো শোয়েব ভাই?
কী কথা?
বাড়িতে তোমার কে কে আছেন?
সবাই আছে।
তোমার বাড়ির কথা বলো না। সুমনের মনে হলো শোয়েবকে চুপচাপ ভাবতে দিলে ও আরও ভেঙে পড়বে।
সুমনের কথা শুনে শোয়েবের মনে হলো ও ছেলে তিনটিকে যতটা ছোট ভেবেছে আসলে ওরা তত ছোট নয়। বিশেষ করে সুমন আর ঝন্টু খুবই বুদ্ধিমান ছেলে। শোয়েব ওর বাড়ির কথা সুমনদের বললো, ঢাকায় থাকতে ওর একটা পাহাড়ি ময়না ছিলো। ওকে কেউ বিরক্ত করলে রেগে গিয়ে তুই রাজাকার বলতো। একবার ওদের দূর সম্পর্কের এক মামাকে তুই রাজাকার বলাতে এক কেলেঙ্কারি কাণ্ড। আত্মীয়টি আসলেই রাজাকার ছিলো। তাই রেগেমেগে একাকার।
বাইরের আকাশ অন্ধকার হওয়ার আগেই ঘরের ভেতরটা অন্ধকারে ছেয়ে গেলো। ঝন্টু বললো, প্রায় তিন ঘন্টা হতে চললো, এখনও কারও সাড়া শব্দ শুনছি না। আমাদের কথা ওদের বড় কর্তাকে জানাতে ভুলে যায়নি তো!
শোয়েব ম্লান হেসে বললো, যতই ভুলেই যাক কথাটা বড় কর্তার কানে তোলার মতো আরও কেউ নিশ্চয় আছে। আমার মনে হয়–
শোয়েবের কথা শেষ না হতেই লোহার দরজায় ঝমঝম আওয়াজ হলো। রবির চেহারা কাগজের মতো ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। ওর মনে হলো এখনই যমদূতের মতো একটা লোক এসে ওদের ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেবে। ঝন্টু আর সুমন রবির মতো ভয় না পেলেও ওদের হার্টবিট বেড়ে গেলো। শোয়েবের মনে হলো ওকে জেরা করার জন্য নিতে এসেছে।
যে লোকটা ওদের ধাক্কা মেরে এ ঘরে ঠেলে দিয়েছিলো–থুতনিতে ছাগুলে দাঁড়ি আর গালে মস্ত আঁবওয়ালা সেই লোকটাই টর্চ জ্বালিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। শেষ সিঁড়ির পাশে দেয়ালে সুইচ টিপে লাইট জ্বালালো। খুবই কম পাওয়ারের বাল্ব, তবু আলো দেখে ওরা কিছুটা স্বস্তি পেলো। লোকটা আগের মতো কর্কশ গলায় শোয়েবকে বললো, এই যে, বড় শয়তান, হামার সাথ চলো। বড় হুজুর এত্তেলা করেছেন।
লোকটার কথা শুনেই মনে হয় বিহারী। জেনেভা ক্যাম্পের বিহারী চট্টগ্রামে এলো কি। করে ভেবে একটু অবাক হলো সুমন। এদের ঘাঁটিতে আসার পর যতজনের কথা শুনেছে কাউকেই চট্টগ্রামের বাসিন্দা মনে হয়নি।
মাহবুব বলেছিলো ওর বাড়ি কক্সবাজার কিন্তু ওর কথার কোনও আঞ্চলিক টান ছিলো না।
লোকটার কথা শুনে শোয়েব উঠে দাঁড়িয়েছিলো। সুমন বললো, ও একা যাবে না। আমরাও সঙ্গে যাবো। নেহী! চিৎকার করে বললো ছাগুলে দাড়ি। তুমহাদের যা বুলবে সেইটাই করতে হবে। যেয়াদা বোলবে না।
এগিয়ে এসে শোয়েবের কনুই ধরলো লোকটা। ওর গা থেকে যে বিটকেল দুর্গন্ধ বেরুচ্ছিলো–শোয়েবের মনে হলো দুপুরে যা খেয়েছে সব বমি হয়ে যাবে।
শোয়েবকে ধরে নিয়ে চলে গেলোলোকটা। রবি এতক্ষণ কিছু বলেনি, দেয়ালে হেলান দিয়ে চুপচাপ বসেছিলো। বাইরে থেকে লোহার দরজা বন্ধ করার শব্দ হতেই ও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
ঝন্টু উদ্বিগ্ন গলায় জানতে চাইলো–কী হলো রবি, কাঁদছিস কেন?
কান্নাভেজা গলায় রবি বললো, শোয়েব ভাইকে ওরা মেরে ফেলবে।
সুমন মাথা নাড়লো–না, এখন মারবে না। ওর কাছ থেকে সব কথা আদায় করে তবে মারবে।
শোয়েব ভাই যদি কিছু বলতে না চায়?
বলতে বাধ্য করবে। টর্চার করবে। তবে জানে মারবে না। মারলে তো সব শেষ। এত সহজে শোয়েব ভাইকে ওরা মারবে না।
শোয়েব ভাইর জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে।
রবিকে সান্ত্বনা দিয়ে ঝন্টু বললো, খারাপ তো আমাদের সবারই লাগছে। কান্নাকাটি না করে এখান থেকে পালাবো কিভাবে তাই ভেবে বের কর।
সুমন বললো, রাজা এখন কী করছে কে জানে। ও যদি জানতো আমরা কোথায়–
রাজাকেও ওরা নিশ্চয় কোথাও আটকে রেখেছে।
.
সুমন যখন রাজার কথা ভাবছিলো ও তখন কক্সবাজারের ডিসির অফিসে। দুপুরে রাজার টেলিফোন পেয়ে সুমনের বাবা হন্তদন্ত হয়ে চট্টগ্রাম থেকে ছুটে এসেছেন কক্সবাজার। ফোনে রাজা শুধু ওঁকে এটুকু বলেছিলো সুমনরা হারিয়ে গেছে। কাল রাত থেকে ওদের কোন খবর নেই। শুনেই সুমনের বাবা বলেছেন, তুমি ডিসি সাহেবের অফিসে অপেক্ষা করো। আমি সন্ধ্যার আগেই কক্সবাজার আসছি।
কক্সবাজারের ডিসি সুমনের বাবার ছেলেবেলার বন্ধু। দুজন একটানা দশ বছর একই স্কুলে পড়েছেন। রাজার সঙ্গে কথা শেষ করেই তিনি ডিসিকে ফোন করে বললেন, হাবিব, আমার ছেলে সুমন কক্সবাজার থেকে হারিয়ে গেছে। সঙ্গে ওর দুই বন্ধুও রয়েছে। পুলিশকে খবর দে। আমি এখনই রওনা হচ্ছি।
পর্যটন কর্পোরেশনের একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে সোজা তিনি ডিসির অফিসে এসেছেন। রাজাকে বললেন, ডিসি সাহেবকে সব খুলে বলো কী হয়েছিলো।
শোয়েবের লিফট নেয়ার ঘটনা থেকে শুরু করে ওদের পেছনে লোক লাগা, গাড়ি খারাপ হওয়া, শোয়েবের গোপন কাগজ গাড়িতে লুকিয়ে রাখা, রাতে সৈয়দ বাড়িতে আশ্রয় নেয়া এক এক করে সব বললে রাজা।
ফজলুল করিমের হোভায় করে ও যখন কক্সবাজারের বিক্ৰম কার সেন্টারের গ্যারেজে এসে পৌঁছেছে রাত তখন প্রায় এগারোটা। গ্যারাজের মালিক, আধবুড়ো নববিক্রম বড়ুয়া রাতে গ্যারেজে থাকেন। ওকে মেকানিক দেয়ার কথা বলে কোনও লাভ হলো না। তাঁর দুজন মেকানিকই সন্ধ্যেবেলা ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি গেছে। ফিরবে পরশু। বড়ুয়া বললেন, রাজা যখন সৈয়দ বাড়ির মেহমান তিনি একটা জিপ ওকে দিতে পারেন। জিপের পেছনে বেঁধে রাজা যদি ওদের গাড়ি বড়ুয়ার গ্যারেজে আনতে পারে তিনি দেখে দেবেন, তবে সকালের আগে নয়।
বড়ুয়ার জিপ নিয়ে রাজা ফজলুল করিমের হোভার পেছন পেছন যখন ওদের গাড়ির কাছে এসেছে, তখন ফজলুল করিম বললো, গাড়ি নিয়ে রাজা একা কক্সবাজার যেতে। পারবে কি না। রাজা বলেছে পারবে। এরপর ফজলুল করিম হোন্ডা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। রাজা বড়ুয়ার জিপের পেছনে ওদের গাড়ি বেঁধে রাত সাড়ে বারোটায় কক্সবাজার এসে পৌঁছায়। বড়ুয়ার গ্যারেজেই ও রাত কাটায়। সকালে বড়ুয়া ওকে বললেন, সৈয়দরা চায় না তোমার গাড়িটা আমি মেরামত করে দিই। বলেছে রাজাকে কায়দা করে যেন ওদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে রাজা বুঝে ফেলেছে সুমনরা বিপদে পড়েছে। ও তখন ফকির সেজে বাসে করে গিয়ে ওদের বাড়ি থেকে ঘুরে এসেছে। বাড়ির এক কাজের লোকের কাছে শুনেছে রাতে যে মেহমানরা এসেছিলো ওরা নাকি ডাকাতদের দলের লোক।
পরিচয় জানাজানি হওয়াতে রাত থাকতেই পালিয়ে গেছে। এরপর রাজা কক্সবাজার এসেই সুমনের বাবাকে ফোন করেছে।
সব শুনে ডিসি বললেন, ছেলেরা যাদের ভয়ে পালাচ্ছিলো না জেনে রাতে তাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলো। হয়তো কোনওভাবে জেনে পালিয়েছে, নয়তো ওদের কোথাও লুকিয়ে রেখে রটিয়ে দিয়েছে ওরা পালিয়েছে।
সুমনের বাবা জানতে চাইলেন, পুলিশ কী করছে। ডিসি বললেন, পুলিশকে আমি বিশেষভাবে টেকনাফের রাস্তার দিকে নজর রাখতে বলেছি। যদি কোনওভাবে বর্ডারের ওপারে পাচার করে দেয় আমাদের খুবই অসুবিধে হবে।
ডিসির আশঙ্কার কথা শুনে সুমনের বাবা মুষড়ে পড়লেন। স্কুল জীবনের বন্ধুর হাত ধরে বিচলিত গলায় বললেন, হাবিব তোরা তো জানিস জামাতীদের ঘাঁটি কোথায়। তোদের যত ইনফর্মার আছে ওদের কাজে লাগা। টাকা যা লাগে আমি দেবো। আমার ছেলেদের যেভাবে পারিস ওদের খপ্পর থেকে উদ্ধার করে দে।
বন্ধুকে আশ্বস্ত করে ডিসি বললেন, তুই এত ঘাবড়াচ্ছিস কেন? তোর ছেলে তো আমার ছেলেরই মতো। ইনফর্মারদের আমি যে সব জায়গায় পাঠানো দরকার অলরেডি পাঠিয়ে দিয়েছি। ছেলেরা যে জামাতীদের খপ্পরেই পড়েছে–নিশ্চিত হতে পারছি না তো। এমনও তো হতে পারে ওরা কোথাও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে।
দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে সুমনের বাবা বললেন, ওদের হাতে না পড়লেই রক্ষা। কাগজে তো প্রায়ই দেখি কোথাও না কোথাও ওদের হাতে ছাত্ররা খুন হচ্ছে।
শোন সেলিম, কক্সবাজারে ওদের যে টপ লিডার–আমি তার সঙ্গেও কথা বলবো। সিধে আঙুলে ঘি না উঠলে আমরা আঙুল বাঁকাতে জানি। তোর ছেলেরা ওদের খপ্পরে পড়লেও ওদের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।
সুমনের বাবা ব্যকুল হয়ে বললেন তুই এক্ষুণি ওদের লিডারের সঙ্গে কথা বল। দরকার হলে আমিও কথা বলবো। আমার ছেলেরা তো ওদের কোনও ক্ষতি করেনি। ওরা শোয়েবকে রেখে আমার ছেলেদের ফিরিয়ে দিক। দরকার হলে আমি ওদের পার্টিকে মোটা টাকা ডোনেশন দেবো।
কক্সবাজারের ডিসি হাবিবুল বাশার একটু গম্ভীর হয়ে বললেন, সেলিম, তোর ছেলের জন্য তুই যতটা উতলা হচ্ছিস শোয়েবের বাবা মা জানলে তোর চেয়ে কম হবেন না। আমি কখনও শোয়েবকে বাদ দিয়ে তোর ছেলেদের ফিরিয়ে দেয়ার কথা ওদের বলতে পারবো না। যখন জেনেছি চারটা ছেলে বিপদে পড়েছে ওদের চারজনকেই উদ্ধার করা আমাদের কর্তব্য। একটু থেমে ডিসি আবার বললেন, তোর অনেক টাকা আছে জানি। ওদের যে টাকা আছে সে টাকায় হাজারটা সেলিম চৌধুরীকে ওরা কিনতে পারে। তুই ওদের ক টাকা ডোনেশন দিবি?
সুমনের বাবা হতাশ হয়ে বললেন, আমার আসলে মাথা ঠিক নেই। কান্ডজ্ঞান সব হারিয়ে ফেলেছি। তুই ঠিকই বলেছিস। নিজের ছেলের জীবন বাঁচানোর জন্য অন্যকে বিপদে ঠেলে দেয়া খুবই স্বার্থপরতা শুধু স্বার্থপরতা নয়, অমানবিক কাজ।
ডিসি কোনও কথা না বলে টেলিফোনের রিসিভার তুললেন, ওর পিএকে বললেন, ইউনুস মওলানা বাড়িতে না পার্টি অফিসে আছে খবর নিয়ে আমাকে জানাও।
মিনিট পনেরো পরে পি এ টেলিফোন করে ডিসিকে জানালেন, মওলানা ইউনুস গত পরশু জেদ্দা গেছেন, ঢাকায় ওদের পার্টির কী এক মিটিঙ আছে। অন্য নেতারাও সব ঢাকায়।
সুমনের বাবা ভাঙা গলায় জানতে চাইলেন–এবার কী হবে সেলিম?
ব্যাপারটা তুই আমার হাতে ছেড়ে দে। এই বলে ডিসি নিজেই একের পর এক টেলিফোনের ডায়াল ঘোরাতে লাগলেন।
.
৮.
কর্কশভাষী বিহারীটা শোয়েবকে এনে হাজির করলো পাশের পাকা বাড়ির একটা কামরায়। চারপাশে তাকিয়ে শোয়েবের মনে হলো কক্সবাজারের জঙ্গলে এ ধরনের ঘর খুবই বেমানান। বড় একটা দামী সেক্রেটারিয়েট টেবিল, ওপরটা কালো কাঁচে ঢাকা। ওপাশে রিভলভিং চেয়ারে মাঝবয়সী যে লোকটা বসে আছে ওর গোঁফ দেখে মনে হচ্ছে। আর্মির কোনও হোমরা চোমরা অফিসার হবে, মুখে বসন্তের দাগ, পরনে পাকিস্তানীদের মতো সালোয়ার কোর্তা। বা পাশে সাদা কালো দাঁড়িওয়ালা এক লোক, পরনে আলখাল্লার বদলে থ্রি পিস স্যুট।
ঘরের এক পাশে নরম চামড়ার দামী সোফা। দেয়াল ঘেঁষে রাখা স্টিলের কেবিনেটের ওপর একটা ইলেক্ট্রনিক্স গেজেট, দেখতে অনেকটা সিডি প্লেয়ারের মতো, তবে আকারে অনেক বড়। এক পাশের দেয়ালে কাবা শরিফের ছবিওয়ালা ভেলভেটের বিরাট কার্পেট নকশাকরা কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো।
গোঁফওয়ালা আর্মি অফিসার টাইপের লোকটা খসখসে গলায় শোয়েবকে উর্দুতে বললো, বায়ঠো।
কথা শুনেই শোয়েব বুঝলো লোকটা পাকিস্তানী। ওর হাত তখনও পিছমোড়া করে বাঁধা। হাত বাঁধা অবস্থায় হাতলওয়ালা চেয়ারে বসতে অসুবিধে হবে ভেবে শোয়েব দাঁড়িয়ে রইলো। পাকিস্তানীটার পাশে বসা সাদাকালো দাড়িওয়ালা লোকটা বিহারীটাকে বললো, এর হাত খুলে তুমি বাইরে গিয়ে দাঁড়াও।
জী সরকার। বলে দ্রুত হাতে শোয়েবের বাঁধন খুলে বিহারীটা ঘরে থেকে বেরিয়ে গেলো।
গলাটা যতদূর সম্ভব মোলায়েম করে পাকিস্তানীটা বললো; আব বায়ঠো।
শোয়েব গদি মোড়া চেয়ারে বসার পর আগের মত নরম গলায় লোকটা বললো, কফি পিয়োগি?
গলা যতই নরম করার চেষ্টা করুক না কেন, লোকটার চেহারায় এমন এক ধরনের নিষ্ঠুরতা ছিলো, মনে হয় ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ খুন করতে পারবে। সে তুলনায় সাদা কালো দাড়িকে মনে হচ্ছিলো ধূর্ত আর মতলববাজ টাইপের। কফি খাওয়াটা উচিৎ হবে কি হবে না এ নিয়ে মনস্থির করতে পারছিলো না। লোকটা আবার আগের মতো নরম করে বললো, বেটা, কফি পিয়োগি?
শোয়েব কোনও কথা না বলে মাথা নেড়ে সায় জানালো।
পাকিস্তানীটা কলিং বেল টিপে এক উর্দিপরা বেয়ারাকে তিন কাপ কফি আনতে বললো। খাস পাকিস্তানী উর্দুতে শোয়েবকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কি উর্দু কথা বোঝো?
কিছুটা বুঝি।
নিশ্চয় হিন্দি ভালো বোঝে। তোমাদের বয়সী ছেলেরা তো খুব জিটিভি দেখে। বলে একটু হাসলো পাকিস্তানী।
শোয়েব বাংলায় বললো, উর্দুর চেয়ে হিন্দি বাঙালিদের জন্য বোঝা সহজ।
বাড়িতে তোমার কে কে আছে।
বাবা, মা, দুই ভাই, এক বোন।
তুমি কি সবার বড়?
ভাইদের ভেতর আমি বড়। সবার বড় বোন।
তোমার বোন কি করে?
কিছু করে না। অনার্স পাশ করে ঘরে বসে আছে।
বোনকে নিশ্চয় তুমি বেশি ভালোবাসো।
ভাই বোন বাবা মা সবাইকে ভালোবাসি।
তুমি খুব ভালো ছেলে।
শোয়েব কোনও কথা বললো না বেয়ারা এসে তিন কাপ কফি আর দামী ক্রিম ক্র্যাকার বিস্কিট দিয়ে গেলো। শোয়েব বললো, আমার সঙ্গীদের রেখে কফি খেতে আমার খুব খারাপ লাগছে।
মাথা নেড়ে সায় জানালো পাকিস্তানী। বেয়ারাকে বললো, এই সাহেবের সঙ্গে যারা এসেছে তাদের কফি আর নাশতা দাও।
শোয়েব কফির কাপে চুমুক দিলো। সারা দিনের ক্লান্ত বিধ্বস্ত শরীরে কফি খেতে খুব ভালো লাগলো ওর। কফির সঙ্গে চারটা বিস্কিটও খেলো। এখনও ও বুঝতে পারছে না আলোচনা কোন দিকে গড়াচ্ছে। গোঁফওয়ালা যদি পাকিস্তানী হয় কালোসাদা দাড়ি নিশ্চয় জামাতী। মাহবুব যখন ওদের এখানে এসেছে ওরা নিশ্চয় শোয়েবের পরিচয় জানে। কাগজের ব্যাপার নিয়ে জেরা করার জন্য এত ভনিতা করছে কেন ও বুঝতে পারছিলো না। মনে মনে ঠিক করলো সেও সহযোগিতার ভান করে ওদের মতলব বোঝার চেষ্টা করবে।
কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে পাকিস্তানী সিগারেট ধরিয়ে শোয়েবের দিকে প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিলো।
ধন্যবাদ, আমি স্মোক করি না।
তুমি আসলেই ভালো ছেলে।
ধন্যবাদ।
একগাল ধোঁয়া ছেড়ে চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে পাকিস্তানী বললো, তোমাকে যেভাবে ধরে এনেছে এর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
আমরা কিন্তু এখনও জানি না আমাদের এখানে কেন আনা হয়েছে।
তুমি আমাদের কিছু দরকারী কাগজ চুরি করেছে। এতক্ষণ পর কথা বললো সাদাকালো দাড়িওয়ালা লোকটা। পাকিস্তানীর মতোই নিচু মোলায়েম গলায় বললো, কাগজগুলো আমাদের দরকার।
কাগজ আমার সঙ্গে নেই।
জানি। কোথায় আছে বলে দাও। আমাদের লোক গিয়ে নিয়ে আসবে।
কয়েক মুহূর্ত ভেবে শোয়েব বললো, ওগুলো আমি ইকবাল স্যারের বাসায় রেখেছি।
তুমি ওঁকে একটা চিঠি লিখে দাও। আমি এখনই লোক পাঠাচ্ছি।
লোক পাঠালে হবে না। আমাকে যেতে হবে। ইকবাল স্যারকে বলেছি আমি ছাড়া কাউকে যেন ওগুলো না দেন।
অনুত্তেজিত গলায় সাদাকালো দাড়ি বললো, তুমি এমনভাবে চিঠি লেখো যাতে তিনি ওগুলো দিতে বাধ্য হন।
আমি কি লিখবো আমরা বিপদে পড়েছি। কাগজগুলো না পাঠালো আমাকে খুন করা হবে।
তা কেন লিখবে? আমি যা বলবো তাই লিখবে। এই বলে লোকটা পাকিস্তানীর দিকে তাকালো জনাব, মেহেরবাণী করে টুকরো কাগজ আর কলম দিন।
মৃদু হেসে পাকিস্তানী ওর টেবিলের ড্রয়ার থেকে কাগজ আর বলপেন বের করে দিলো। সাদাকালো দাড়ি কাগজের টুকরোটা শোয়েবের দিকে এগিয়ে দিলো লেখো। বলে লোকটা কয়েক মিনিট ভাবলো। তারপর বললো, স্যারকে ডাকার সময় কি তাদের নাম উচ্চারণ করো?
না শুধু স্যার বলি।
ঠিক আছে, লেখো। স্যার, আপনাকে আমি যে কাগজগুলো দিয়েছিলাম ওগুলো ঢাকার সাংবাদিকরা চাইছেন। আমি জরুরী কাজে কক্সবাজারে আটকে যাওয়ায় আমার ভাইকে পাঠাচ্ছি। ও খুবই বিশ্বস্ত ছেলে, এখানে নির্মূল কমিটি করে। কাগজগুলো আজ রাতে পেলেই ভালো হত। সাংবাদিকদের যে দলটা আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কক্সবাজার এসেছিলো তাদের অনেকেই থেকে গেছে। জনকণ্ঠ ওটা প্রথম পাতায় ছাপাতে চায়। এই সুযোগ আমাদের হারানো ঠিক হবে না। জনকণ্ঠের রিপোর্টার কাল চলে যাবে। আপনি যদি পত্রবাহকের হাতে কাগজগুলো পাঠিয়ে দেন খুব ভালো হয়। মনে হয় জামাতকে শেষ করতে আর বেশি সময় লাগবে না। ইতি শোয়েব।
ধীরে ধীরে ডিক্টেশন দিচ্ছিলো সাদাকালো দাড়ি। ওর কথা মতো লিখতে গিয়ে রাগে সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছিলো শোয়েবের। তবু চুপচাপ ওদের হুকুম তামিল করছিলো হাতে কিছু সময় পাওয়া যাবে বলে।
শোয়েবের লেখা শেষ হওয়ার পর দাড়িওয়ালা ওটা ভালো মতো পড়ে দেখলো। কে জানে কোথাও কোনও চালাকি করেছে কি না? এই ইবলিশগুলো পারে না এমন কাজ আল্লার দুনিয়াতে নেই। কী রকম শয়তানী করে ওদের ছাত্র সংগঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মীর ঘর থেকে গোপন কাগজগুলো চুরি করেছে কথাটা ভাবতে গিয়ে কক্সবাজারের আমীর মওলানা রুহুল আমীন বার বার অবাক হয়েছে। খবরটা ঢাকা পর্যন্ত চলে গেছে। যে কোনও মূল্যে কাগজগুলো উদ্ধার করতে হবে। কাগজগুলো উদ্ধার না করা পর্যন্ত শয়তানটাকে কিছু করা যাবে না। চিঠি পড়ে সাদাকালো দাড়ি রুহুল আমিন ওদের পাকিস্তানী বন্ধু আসলাম গুলের দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসলো–জনাব ঠিকই বলেছেন। এই ছেলেটা আসলেই ভালো। মনে হয় খারাপ লোকদের সঙ্গে থেকে একটু অন্যরকম হয়ে গেছে। আমাদের মদদ পেলে জরুরি তরক্কী করবে। এই বলে চিঠি হাতে নিয়ে ও ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
আসলাম গুল মৃদু হেসে বললো, বেটা শোয়েব, আমি তোমার বাড়ির সব খবর জানি। তোমার আব্বা তো আগামী বছর চাকরি থেকে রিটায়ার করবেন।
শোয়েব মাথা নেড়ে সায় জানালো।
তুমি যদি ঠিক ঠিক মতো পাশ করে না বের হও ভাবতে পারো কী হবে?
আমি ভালোভাবেই পাশ করবো।
আমি জানি তুমি লেখাপড়ায়ও ভালো। তবে বহু ফার্স্ট ক্লাস এখনও চাকরি পায়নি, ঠিক কি না বলো।
এবারও শোয়েবকে সায় জানাতে হলো। পাশ করে বেরুলেই যে চাকরি পাবে এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই।
বিশেষ করে ওর জন্য কোথাও চাকরির সুপারিশ করতে পারে এমন মামা চাচা তিন কূলেও নেই।
আসলাম গুল এতক্ষণ সূতো ছেড়ে ছেড়ে মাছ খেলানোর মতো করে শোয়েবকে খেলাচ্ছিলো। ওর প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করার জন্য বললো, আমি কিন্তু তোমাকে এখনই একটা চাকরি দিতে পারি।
কী চাকরি?
তুমি অনুমান করো।
আমাকে কি জামাত করতে হবে?
আরে না, তুমি কেন জামাত করবে? তোমাকে জামাতের লোকেরা বিশ্বাসই বা করবে কেন? তুমি বরং জামাতের বিরুদ্ধে কাজ করবে।
আসলাম গুলের কথা শুনে শোয়েব খুবই অবাক হলো। ও ধরেই নিয়েছিলো পাকিস্তানীটা জামাতের লোক। বিভ্রান্ত গলায় বললো, আমি আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারছি না। আপনি আসলে কে?
আমি কে সেটা নিশ্চয় জানবে তুমি। আগে বলো তোমার চাকরির দরকার আছে কি না।
পড়াশোনার ক্ষতি করে বাবা মা আমাকে চাকরি করার অনুমতি দেবেন না।
পড়াশোনা করছো তো ভালো চাকরি পাওয়ার জন্য। তুমি অনার্স পাশ করেছে। যদি এই যোগ্যতা নিয়ে এম এ পাশের চেয়ে ভালো চাকরি করতে পারে সেটা ছাড়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে শোয়েব বললো, আমাকে একটু ভাবতে হবে। বাবার সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
তোমার বাবা আপত্তি করবেন না।
আপনি কিভাবে জানেন বাবা আপত্তি করবেন না?
তোমার বাড়ির খবর তোমার চেয়ে বেশি আমি জানি।
মানে?
তুমি কি জানো তিন দিন আগে তোমার বোন সায়মার জন্য ভালো একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে?
অবাক হয়ে শোয়েব বললো, না জানি না।
ছেলেটা ডাক্তার। আমেরিকায় যাবার একটা সুযোগ পেয়েছে। এমনিতে কোনও যৌতুক নেবে না। আমেরিকা যাওয়ার জন্য ওকে এক লাখ টাকা দিতে হবে।
টাকা দিয়ে বোনের বিয়ে দেবো না।
শোয়েব বেটা, ইমোশনাল হচ্ছে কেন? তোমার বোনের গায়ের রং কালো। দেখতেও খুব সুন্দর নয়। তোমরা ভাইরা হয়েছে মার মতো, বোনটা হয়েছে বাবার মতো। এই বোনের জন্য এর চেয়ে ভালো ছেলে পাবে না। তোমার বাবা মা দুজনই ছেলে দেখে মুগ্ধ। আসলে ছেলেটা তোমার বোনের প্রেমে পড়েছে। নইলে অনেক সুন্দর মেয়ে ও বিয়ে করতে পারতো।
বড় বোন কার সঙ্গে প্রেম করে শোয়েব সেসব কথা জানে না। পাকিস্তানীটা যে ওদের হাড়ির খবর পর্যন্ত জানে এতে কোনও সন্দেহ নেই। বোন যদি ছেলেটাকে পছন্দ। করে ওদের বিয়ে হলে নিশ্চয় খুব ভালো হবে। কিন্তু এক লাখ কেন পঞ্চাশ হাজার টাকা যোগাড় করাও ওর বাবার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রাইভেট ফার্মে চাকরি টিকিয়ে রাখাই কঠিন। গত বছর বাবাদের কোম্পানির পুরোনো মালিক মারা যাওয়ার পর তার ছেলে নতুন এমডি হয়েছে। পয়লা মাসেই দশজনকে ছাঁটাই করেছে। বাবার চাকরি অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। তিনি অফিস থেকে এখন এক মাসের বেতন অগ্রিম চাইতেও সাহস পান না।
কোত্থেকে বোনের বিয়ের টাকা জোগাড় করবেন?
আসলাম গুল মোলায়েম গলায় বললো, বেটা শোয়েব, তুমি কী ভাবছো আমি বুঝতে পারছি। তোমাকে আমরা এমন কাজ দেবো যে লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকেই তুমি তা করতে পারবে। পাশ না করা পর্যন্ত পার্ট টাইম। পাশ করে বেরুলে ফুল টাইম।
সঙ্গে সঙ্গে শোয়েব ভুলে গেলো ও কোথায় আছে, কার সঙ্গে কথা বলছে। গত এক বছর ধরে ও চেষ্টা করছে একটা টিউশনি জোগাড়ের জন্য, পারেনি। কখনও বাবার টাকা পাঠাতে দু চার দিন দেরি হলে চোখে ও অন্ধকার দেখে।
ব্যগ্র গলায় বললো, আমি চাকরি করবো। বলুন, কী করতে হবে আমাকে।
তুমি তো ছাত্র ফ্রন্ট করো, তাই না?
হ্যাঁ। শোয়েব বুঝতে পারলো না চাকরির সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়নের কী সম্পর্ক।
ছাত্র ইউনিয়নের অনেক ছেলে ছাত্রলীগে জয়েন করেছে তাই না?
হ্যাঁ করেছে।
তুমি করছো না কেন?
বারে খামখা কেন ছাত্রলীগ করবো। কলেজ থেকেই আমি ছাত্র ফ্রন্ট করি। ক্যাম্পাসে আমার বন্ধুরাও সবাই ছাত্র ফ্রন্ট করে।
আমি জানি। তোমরা সবাই মিলে ছাত্রলীগে জয়েন করো।
বিনা কারণে কেন ছাত্রলীগ করতে যাবো? গত মাসেই মেডিক্যালে লীগের সঙ্গে আমাদের মারামারি হয়েছে।
জানি। তুমি ছাত্রলীগে জয়েন করবে তোমার বন্ধুদের নিয়ে–এটা হচ্ছে তোমার চাকরির একটা শর্ত।
আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না। অবাক হয়ে শোয়েব বললো, আপনি কি ছাত্র লীগ করার জন্য আমাকে চাকরি দেবেন?
ঠিক ধরেছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বুঝি এখন টাকা দিয়ে কর্মী কিনছে?
আমি আওয়ামী লীগের কোনও নেতা নই। একজন ওয়েল উইশার বলতে পারো।
আপনি আসলে কী চান?
দেখো বেটা, আওয়ামী লীগ দল হিসেবে খুবই বড় এতে কোনও সন্দেহ নেই। তোমাদের আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতবে বলে আমরা মনে করি। তবে দুঃখের কথা হচ্ছে এই দলের বেশির ভাগ নেতা ভারতের দালাল। ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশকে তারা ভারতের কাছে বিক্রি করে দেবে।
আসলাম গুলের কথার কোনও খেই ধরতে পারছিলো না শোয়েব। কখনও ওকে মনে হচ্ছে জামাতের লোক, কখনও মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগের, এখন মনে হচ্ছে বিএনপির। বললো, বিএনপির লোকেরা আওয়ামী লীগকে ভারতের দালাল বলে।
না, শুধু বিএনপি বলে না, সাধারণ পাবলিকও বলে।
পাবলিক যদি বিশ্বাস করবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ইন্ডিয়ার কাছে বাংলাদেশকে বিক্রি করে দেবে, তারপরও কি আওয়ামী লীগ ইলেকশনে জিতবে?
জিতবে। কারণ বিএনপির ভেতরও অনেক ইন্ডিয়ান এজেন্ট আছে। আর্মিতেও আছে। অরাও চায় ইলেকশনে এবার আওয়ামী লীগ জিতুক।
আপনি কী চান সেটাই তো বলছেন না।
আমিও চাই ইলেকশনে আওয়ামী লীগ জিতুক।তবে জিতে যেন বাংলাদেশকে ইন্ডিয়ার হাতে তুলে দিতে না পারে সেটা আমাদের দেখতে হবে।
আমার কাজটা কি হবে?
তুমি যদি রাজনীতিটা একটু বোঝার চেষ্টা করো কাজটা তোমার জন্য সহজ হয়ে যাবে। তোমরা এখন কোথাকার এক জাহানারা ইমামের কথায় জামাতের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেদের শক্তি ক্ষয় করছে। ক্ষমতায় যদি যেতে চাও আক্রমণের লক্ষ্য হবে যে দল ক্ষমতায় আছে তারা, জামাত কখনও আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়া আটকাতে পারে না, পারে শুধু বিএনপি। বিএনপি ক্ষমতায় এসে যে সব দুর্নীতি করছে মানুষ যদি তা জানে তাহলে বিএনপিকে ওরা আগামী বার ভোট দেবে না। ছাত্রদলের কথাই ধরো। তোমরা মারামারি করছে শিবিরের সঙ্গে। ওদিকে বিএনপি একটার পর একটা কলেজ দখল করে ফেলছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি দেখে মনে হয় ওরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনীতি : করছে না, ইন্ডিয়াকে খুশি করার জন্য যখন যা করা দরকার করছে।
আমার কাজ কী হবে? নির্দিষ্টভাবে জানতে চাইলো শোয়েব।
শুধু তোমার নয়, তোমাদের সবার কাজ হবে আওয়ামী লীগ যে ভারতের দালাল। নয়, সত্যিকারের একটা দেশপ্রেমিকদের দল এটা প্রমাণ করা। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ইন্ডিয়াকে পছন্দ করে না। ইন্ডিয়া ফারাক্কার পানি বন্ধ করে দিয়েছে। গোটা উত্তরবঙ্গ বিরান মরুভূমি হয়ে গেছে। ইন্ডিয়ার জন্য এখানে কোনও ইন্ডাস্ট্রি হতে পারছে না। যে বাংলার জন্য তোমরা জীবন দিয়েছে সেই তোমরা সারাদিন টেলিভিশনে হিন্দি প্রোগ্রাম দেখো। বাঙালি জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে যদি তোমরা ইন্ডিয়ার খপ্পর থেকে বেরুতে না পারো।
শোয়েব গম্ভীর হয়ে বললো, ইন্ডিয়ার দালালি না করা এক জিনিস আর ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ইন্ডিয়াকে গালি দেয়া আরেক জিনিস।
গালি দিতে কে বলছে তোমাকে? তোমরা বলো তিরিশ লাখ মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য শহীদ হয়েছে, নিশ্চয় তারা, ইন্ডিয়ার সঙ্গে পঁচিশ বছরের গোলামি চুক্তি চায়নি।
ইন্ডিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের পঁচিশ বছরের একটা চুক্তি হয়েছিলো এটা শোয়েব জানে। অনেকে এটাকে গোলামি চুক্তি বলে কিন্তু ও নিজেও জানে না চুক্তিতে কী আছে।
আসলাম গুলের কথাগুলো খুব নির্মম শোনালেও–যুক্তি যে আছে এটা শোয়েব অস্বীকার করতে পারলো না।
শোয়েবের চেহারা দেখে আসলাম গুল বুঝলো ওষুধ ধরেছে। বললো, বাংলাদেশ একটা রাষ্ট্র হিসেবে ছোট হতে পারে, কিন্তু ভুলে যেও না বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে। বাঙালি মুসলমানদের মতো সাহসী যোদ্ধা জাতি পৃথিবীতে খুব কমই আছে। এই জাতিকে নেতৃত্ব দেয়া খালেদা জিয়ার বিএনপির মতো দলের পক্ষে সম্ভব নয়। জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকলে না হয় কথা ছিলো। দেশের অবস্থা এখন এমনই দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে হবে। এটা শুধু মনে চাইলে হবে না, এর জন্য কাজ করতে হবে, সঠিক কৌশল বের করতে হবে।
কৌশলটা কী?
যুদ্ধের একটা সাধারণ নিয়ম হচ্ছে এক গুলিতে তুমি একজনকেই মারতে পারো। যদি ভাবো এক গুলিতে তুমি তিনজনকে মারবে তাহলে দেখা যাবে একজনকেও তুমি মারতে পারোনি। ক্ষমতায় যেতে হলে শুধু বিএনপিকে টার্গেট করো। বিএনপির বিরুদ্ধে যারা লড়তে চায় তাদের একাট্টা করো। দেখবে আগামী নির্বাচনে বিএনপির নাম নিশানা থাকবে না।
আসলাম গুলের প্রস্তাব না মানার কোনও কারণ খুঁজে পেলো না শোয়েব। ওকে যদি বলতো টাকা দেবো জামাত করো, কিংবা বিএনপিতে জয়েন করো, তাহলে সেটা মানা ওর পক্ষে সম্ভব ছিলো না। আওয়ামী লীগের যত দোষই থাক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবচেয়ে বড় দল আওয়ামীলীগই। যতই ছাত্র ইউনিয়ন করুক ওদের দল সিপিবি কোনও দিন ক্ষমতায় যেতে পারবে না।
শোয়েবকে কিছুক্ষণ ভাববার সুযোগ দিয়ে আসলাম গুল বললো, তাহলে এই কথাই থাকলো। তুমি আর তোমার বন্ধুরা ছাত্র লীগে জয়েন করছে।
শোয়েবের মুখে হাসি ফুটলো। বললো, করবো।
তাহলে সামনের মাসে আমি তোমার বাবাকে এক লাখ টাকার বন্দোবস্ত করে দেবো। তবে তুমি ছাত্র যতদিন আছো মাসে দুহাজারের বেশি পাবে না।
বলে কী, দু হাজারের বেশি পাবে না। মাসে এক হাজার টাকা পেলেই শোয়েব বর্তে যায়। দুহাজার পেলে তো কথাই নেই। বললো, শুধু ছাত্র লীগে জয়েন করলে চলবে, না আর কিছু করতে হবে?
কিছু কিছু প্রোগ্রাম নিতে হবে। তবে তার জন্য ফান্ডের কোনও অভাব হবে না। সবার আগে আওয়ামী লীগের শরীর থেকে ইন্ডিয়ার দালালির গন্ধটুকু ভালো মতো মুছে ফেলতে হবে। এই বলে আসলাম বেগ উঠে দাঁড়ালো–রহমত তোমাকে তোমাদের ঘরে পৌঁছে দেবে। তিন দিন তোমাকে আমাদের মেহমান হয়ে থাকতে হবে।
শোয়েব যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে বললো, আমার সঙ্গে যে তিনটা ছেলেকে ধরে আনা হয়েছে ওদের কী হবে?
আজ রাত হয়ে গেছে। কাল ওরা যেখানে যেতে চায় সেখানে পৌঁছে দেয়া হবে। তোমার চাকরির ব্যাপারটা আশা করি গোপন থাকবে। এই বলে, আসলাম গুল কলিং বেল টিপতেই বিহারী রহমত ঘরে ঢুকে বললো, হুকুম কিজিয়ে মালিক।
সাবকো আপনা কামরা দেখাও।
চলিয়ে জনাব। অত্যন্ত বিনীত গলায় কথাটা বলার চেষ্টা করলো কর্কশভাষী বিহারীটা।
.
৯.
আসলাম গুলের সঙ্গে কথা বলে শোয়েব এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলো যে ওকে আর দড়ি দিয়ে বাঁধা হবে না। বদমাশ বিহারীটা এত শক্ত করে বেঁধেছিলো যে তখনও ব্যথা যায়নি। ভেবেছিলো মাটির নিচে আগে যে ঘরে এনে রেখেছিলো সেখানেই বুঝি ঢোকাবে। শোয়েবকে অবাক করে দিয়ে বিহারীটা ওকে এমন এক ঘরে এনে ঢোকালো দেখে মনে হলো কোনও অভিজাত হোটেলের কামরা। বেশ বড় ঘর, দুদিকের দেয়াল ঘেঁষে দুটো ডবল খাট, বড় ওয়ার্ডরোব, ড্রেসিং টেবিল, রাইটিং টেবিল, চারটা গদি মোড়া নরম চেয়ার–আরামের সব উপরকণ পরিপাটি করে সাজানো। ঘরের সঙ্গে লাগোয়া বাথরুমের দরজা খোলা ছিলো। শোয়েবের চোখে পড়লো বাথরুমে বেদিং টাবও আছে। কক্সবাজারের জঙ্গলের ভেতর এমন রাজসিক আয়োজন দেখে শোয়েবের বার বার মনে হচ্ছিলো ও বুঝি স্বপ্ন দেখছে।
বিহারীটা ওকে ঘর দেখিয়ে বললো, কামরা পসন্দ হুয়া?
মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে গম্ভীর গলায় শোয়েব বললো, আমার সঙ্গে যারা ছিলো তারা কোথায়?
আপ বায়ঠিয়ে। উনলোগকো অভি লাতা হুঁ। এই বলে বিহারী ঘরের দরজা টেনে দিয়ে চলে গেলো। শোয়েব দরজার নব ঘুরিয়ে দেখলো ওটা খোলাই আছে। তার মানে ওরা ধরে নিয়েছে এখন থেকে শোয়েব ওদের একজন। নরম বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ও আসলাম গুলের সঙ্গে পুরো আলোচনাটা প্রথম থেকে মনে করার চেষ্টা করলো। ঘন্টা খানেক আগে যেখানে আশঙ্কা করছিলো ওরা ওকে কত নৃশংসভাবে খুন করতে পারে, একঘন্টা পর ওদের রাজকীয় আতিথেয়তায় ওর বিচার বুদ্ধি সব গুলিয়ে গেলো। আসলাম গুলের সঙ্গে বৈঠকের কথা ভাবতে গিয়ে ওর মনে পড়লো এতক্ষণ কথা বলার পরও লোকটার নাম জানা হয়নি। পাকিস্তানী হয়ে ও হঠাৎ এত বাংলাদেশ দরদী কেন হলো তাও জানা যায়নি। জিজ্ঞেস করা উচিৎ ছিলো একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী যে তিরিশ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে সে সম্পর্কে ওর বক্তব্য কী।
মিনিট পনেরো পর দরজা খোলার শব্দ হলো। শোয়েবকে এমন রাজকীয় বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে সুমন, ঝন্টু আর রবির চোখগুলো মার্বেলের মতো গোল হয়ে গেলো, চোয়াল ঝুলে গেলো, বিষ্ময়ের ধাক্কায় কিছুক্ষণের জন্য সবাই হতবাক হয়ে গেলো।
বিহারীটা সুমনদের ঘরে রেখে দরজা টেনে বন্ধ করে চলে গেছে। বিছানার শোয়া থেকে উঠে বসলো শোয়েব। মৃদু হেসে বললো, কী হলো, খুব অবাক লাগছে তাই না?
সুমন নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, মনে হচ্ছে আলাউদ্দিনের প্রদীপ হাতে পেয়েছো শোয়েব ভাই।
অনেকটা তাই। তোমাদের মতো আমারও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। মৃদু হেসে জবাব দিলো শোয়েব।
ঝন্টু অধীর আগ্রহে জানতে চাইলো–কী হয়েছে সব খুলে বলল।
বলছি। আগে বস তো।
সুমনদের সোফায় বসিয়ে শোয়েব দরজা খুলে গলা বাড়িয়ে ডাকলো–রহমত।
প্রথম ডাকে কোনও সাড়া শব্দ পাওয়া গেলো না। করিডোরে অন্য কোনও লোক নেই, সবগুলো ঘরের দরজা বন্ধ। গলাটা এক ধাপ উঁচু করে শোয়েব আবার ডাকলো–রহমত।
এবার দূর থেকে বিহারীর গলা শোনা গেলো আয়া সরকার।
একটু পরে, কোত্থেকে হন্তদন্ত হয়ে এসে রহমত বললো, ফরমাইয়ে সরকার।
শোয়েব সামান্য কর্তৃত্ব মেশানো গলায় বললো, চার কাপ কফি দিতে পারবে?
জরুর সরকার। বলে ও ব্যস্ত পায়ে চলে গেলো।
এসব কী হচ্ছে শোয়েব ভাই? আল্লার কসম, আমাদের আর সাসপেন্সে রেখো না।
শোয়েব আসলে ভাবছিলো আসলাম গুলের সঙ্গে চাকরির ব্যাপারে যে কথা হয়েছে সেটা এদের বলা ঠিক হবে কি না। রাজনীতির এত মারপ্যাঁচ বোঝার বয়স এদের কারোই হয়নি। ঠিক করলো চাকরির প্রসঙ্গটি আপাতত গোপন রাখবে। আসলাম গুলও বলেছে চাকরির কথা কাউকে না বলতে।
সোফায় বসে শোয়েব চাকরির প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে ইকবাল স্যারকে চিঠি লিখে কিভাবে ওদের সহানুভূতি আদায় করেছে সেটুকু পুরোটাই বললো।
সব শুনে সুমন বললো, ইকবাল স্যারের কাছ থেকে তোমার কাগজ ওরা কিভাবে পাবে? তুমি তো নিয়ে এসেছে।
জানি পাবে না। তবু কয়েকটা ঘন্টা তো হাতে পাচ্ছি।
ভোর হওয়ার আগেই ওরা জানতে পারবে তুমি সত্যি কথা বলোনি।
ইকবাল স্যারও তো মিথ্যে বলতে পারেন।
তুমি কী এটা ওদের বোঝাতে পারবে?
মনে হয় পারবো।
তবু কাগজ না পাওয়া পর্যন্ত ওরা তোমাকে ছাড়বে না।
তা ছাড়বে না। তবে ওদের কাছ থেকে কথা আদায় করে নিয়েছি–তোমাদের ওরা কাল সকালে ছেড়ে দেবে। যেখানে যেতে চাও পৌঁছে দেবে।
রবি একটু বিরক্ত হয়ে বললো, সামান্য কটা কাগজের জন্য তুমি কেন নিজের ওপর এত বড় ঝুঁকি নিচ্ছো শোয়েব ভাই। ওগুলো দিয়ে দাও না শোয়েব ভাই।
যতক্ষণ না দিচ্ছি ততক্ষণই ওরা আমাকে পাত্তা দেবে। কাগজ হাতে পেলে ওদের প্রথম কাজ হবে আমাকে মেরে ফেলা। আমি কাগজ খুঁজে বের করার জন্য সময় নেবো।
তাতে লাভ কী হচ্ছে? জানতে চাইলো ঝন্টু–তুমি কি মনে করো ততদিন এসব কাগজের কথা কোথাও ফাস করতে পারবে?
তা হয়তো পারবো না। তবে ততদিন বেঁচে থাকবো–এটাই বা কম কী।
একটা বড় ট্রেতে রহমত কফি, বিস্কিট আর পাপড় ভাজা এনে ওদের সামনের সেন্টার টেবিলে রাখলো। রবি আহ্লাদী গলায় বললো, থ্যাঙ্ক ইউ রহমত ভাই, বহুৎ শুকরিয়া।
রহমত হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। রবি বললো, কাল যখন ওরা কাগজ পাবে না মনে হয় আমাদেরও যেতে দেবে না।
না দিক দড়ি দিয়ে যখন আমাদের বেঁধে রাখেনি তখন পালাতে আর কী লাগে। বললো ঝন্টু।
শোয়েব নিজেও খুব সিরিয়াসলি ভাবছিলো, কাগজ না পেয়ে রুহুল আমীনের লোক ফিরে আসবে তখন ও কী জবাব দেবে? কাগজ নিয়ে যদি ওদের ঘোরায় তাহলে আসলাম গুলও ওকে চাকরির নামে ঘোরাবে। মনে মনে ঠিক করলো। কাগজগুলো কোনও অবস্থায় ওদের দেবে না। আসলাম গুল চাকরি না দিলে নিজের কষ্টের পরিমাণ একটু বেশি হবে। তাই বলে যারা দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করছে তাদের ষড়যন্ত্রের কথা জেনেও মুখ বুজে থাকবে–এটা কখনও হতে পারে না।
কক্সবাজারের ডিসি হাবিবুল বাশার একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। গত বছর ওকে যখন কক্সবাজারে বদলি করা হয় তখনই ঠিক করেছেন সুযোগ পেলেই জামাতীদের ঘাঁটিতে হামলা করবেন। নতুন এসপি যিনি এসেছেন তিনিও একজন মুক্তিযোদ্ধা তাঁর কাছেই খবর পেয়েছেন বার্মা থেকে যেসব রোহিঙ্গা মুসলমান কক্সবাজার এসে আশ্রয় নিয়েছে জামাতীরা ওদের সাহায্য করার নাম করে পাকিস্তান আর সৌদি আরব থেকে অনেক টাকা আর অস্ত্র এনেছে। এসপি নওশের আলীকে তিনি বলেছেন জামাতের নেতাদের ওপর কড়া নজর রাখতে।
সুমনের বাবা তার ছেলেবেলার বন্ধু। ওর ছেলেকে উদ্ধার করার জন্য জামাতীদের কয়েকটা ঘাটি যদি রেইড করা যায়–এ নিয়ে সন্ধ্যের পরই তিনি এসপির সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। রাত নটা নাগাদ ওঁদের ইনফর্মার খবর আনলো শহর থেকে তিন মাইল দূরে জামাতীদের একটা শক্ত ঘাঁটি আছে। সুমনদের সেখানেই আটকে রাখা হয়েছে। পাশের গ্রামের লোকেরা দেখেছে ওদের সঙ্গে আরেকটা ছেলে ছিলো, যাকে প্রায়ই এ তল্লাটে দেখা যায়। ইনফর্মারের কথা শুনে মনে হলো সেখানে বন্দুক রাইফেল, মেশিনগান ছাড়াও রকেট লাঞ্চার আছে।
এসপি নওশের আলী কথা বললেন বিডিআরের এরিয়া কমান্ডারের সঙ্গে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিডিআর কমান্ডারও খুব উত্যক্ত ছিলেন। বললেন, তিনিও ফোর্স পাঠাবেন।
মাঝ রাতে পুলিশ আর বিডিআররা আসলাম গুল আর রুহুল আমীনদের ঘিরে ফেললো। শোয়েবরা তখন পোলাও, রোস্ট আর রেজালা দিয়ে নৈশভোজ সেরে গভীর ঘুমে অচেতন। ডিসি আর এসপি মিলে ঠিক করেছেন হামলা চালাবেন গেরিলা কায়দায়। পঁয়তাল্লিশের কাছাকাছি বয়স হলেও দুজনেই সেই রাতে একাত্তরের দিনগুলোয় ফিরে গিয়েছিলেন। দুজনেই অনুভব করছিলেন সেই একই রকম উদ্দীপনা। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ খবর পেয়েছে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা বিভাগ আইএস আইর লোকজনও নাকি গোপনে রোহিঙ্গাদের ভেতর কাজ করছে। শোয়েব বুঝতে পারেনি আসলাম গুল যে আই এস আইর একজন বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ। আইএসআইর রাজনৈতিক ডেস্কে কাজ করে পাকিস্তানে আর্মির রিটায়ার্ড মেজর আসলাম গুল। একাত্তরে নিজ হাতে কত বাঙালিকে যে সে নিজে মেরেছে এখনও বন্ধু মহলে জাক করে বলে বেড়ায়।
দু বছর ধরে কোন এক জাহানারা ইমাম জামাতের বিরুদ্ধে সবাইকে নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছে। ইসলামাবাদে আসলাম গুলের অফিস সব খবরই রাখে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বামপন্থী দলগুলোও জাহানারা ইমামের পেছনে গিয়ে জুটেছে।
প্ল্যানটা অতি যতের সঙ্গে বানিয়েছিলো আসলাম গুল। সবার আগে আওয়ামী লীগকে জাহানারা ইমামদের খপ্পর থেকে বের করে আনতে হবে। এমন একটা অবস্থা তৈরি করতে হবে আওয়ামী লীগ যেন জামাতের বিরুদ্ধে না গিয়ে ওদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে। আওয়ামী লীগের নেতাদের বোঝাতে হবে একমাত্র এই কৌশলেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার আগে কি একাত্তরের খুনীদের বিচার সম্ভনাকি যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তাদের বিচার সম্ভব।
শোয়েবকে যখন থেকে জামাতীরা টার্গেট করেছে তখনই ওর সম্পর্কে সব খোঁজ খবর নিয়েছে আসলাম গুল। ওর লক্ষ্য হচ্ছে একটু অভাবী পরিবারের উচ্চাকাঙ্খী ছেলেরা। শোয়েবদের পরিবারের পুরো অবস্থা জেনে ঠিক করেছে এই ছেলেকে দলে টানতে হবে। সারা দেশে শোয়েবের মতো অন্ততপক্ষে শ পাঁচেক ছেলে দরকার আসলাম গুলের। শোয়েবের কাছে কী গোপন কাগজ আছে এ নিয়ে ওর মাথা ব্যথা নেই। জামাতের নেতা রুহুল আমীনকে বলে দিয়েছে কাগজ পাক নাই পাক শোয়েবকে যেন কিছু না বলে। এই ছেলেকে হাতে রাখার জন্য বাকি তিনটাকে ছেড়ে দিতে বলেছে আসলাম গুল। রুহুল আমীন অবশ্য প্রথমে আপত্তি করেছিলো। আসলাম গুল পাত্তা দেয়নি। দুদিন পর এই জায়গাটা এমনিতেই ছেড়ে দিতে হচ্ছে। জানাজানি হলে অসুবিধে নেই। আসলাম গুল এখানে এসেই ঠিক করেছে ওদের ঘাঁটি পুব দিকে পাহাড়ের ওপাশে আরও দুর্গম এলাকায় সরিয়ে নিতে হবে। গত সাত দিন ধরে অস্ত্রপাতি সব সেই ঘাঁটিতে গোপনে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কালকের মধ্যে কাগজপত্রও সব চলে যাবে। শোয়েবকে পটাতে পেরে সেই রাতে আসলাম গুলও নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিলো।
.
ডিসি হাবিবুল বাশার আর এসপি নওশের আলী কক্সবাজারে জামাতীদের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটিতে হামলা করতে এসে যে ধরনের প্রতিরোধের আশঙ্কা করেছিলেন সে রকম কিছুই হলো না। ওরা প্রথমে গেরিলা কায়দায় অতর্কিতে আক্রমণ করে পাহারাদারদের কাবু করে ফেলেছিলেন। শুধু শেষ পাহারাদারটা টের পাওয়াতে ঝামেলা বেঁধেছিলো। লোকটা জেগেই ছিলো। দূরে অন্ধকারে কয়েকটা কালো ছায়াকে সন্দেহজনকভাবে ছুটোছুটি করতে দেখে ও কটকট করে মেশিনগান চালিয়েছে। তিরিশ রাউন্ড গুলি হওয়ার পর ও পেছন থেকে নওশের আলীর পিস্তলের গুলি খেয়ে পড়ে গেলো।
পাহারাদারদের কাবু করে এসপি হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিলেন, সারা এলাকা পুলিশ আর বিডিআর ঘিরে ফেলেছে। ভেতরে যারা আছো মাথার ওপর দুই হাত তুলে বেরিয়ে এসো। নইলে সবাই বেঘোরে মারা পড়বে।
নওশের আলী ভেবেছিলেন তাঁর কথার মাঝখানেই বুঝি চারদিক থেকে মেশিনগানের গুলি ছুটে আসবে। বেশ কয়েকবার ঘোষণাটার পুনরাবৃত্তি করার পরও কোথাও থেকে মেশিন গান বা রাইফেল দূরে থাক পিস্তলের গুলির শব্দ পর্যন্ত হলো না। শেষে ভাবলেন শত্রুপক্ষ হয়তো চাইছে তারা ভেতরে যান। ঘুট ঘুঁটে অন্ধকারে ঘরের ভেতর থেকে গুলি ছুঁড়ে ওরা নিজেদের অবস্থান জানাতে চায় না। এসপি ঠিক করলেন ভোর হওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবেন।
অপেক্ষা করার অবশ্য কোনও প্রয়োজন ছিলো না। মেশিনগানের গুলির শব্দ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া আর মাইকের ঘোষণাই আসলাম গুলদের বুঝিয়ে দিয়েছিলো ওরা যে বেকায়দায় পড়েছে। এরকম সম্ভাবনার কথা মনে রেখেই এই ঘাঁটি বানানো হয়েছিলো। পালাবার জন্য মাটির নিচে সুড়ঙ্গ কাটা হয়েছে পুব দিকে। মাইকের প্রথম ঘোষণার সঙ্গেই আসালাম গুল ওর সঙ্গীদের নিয়ে সুড়ঙ্গ পথে কেটে পড়েছে। শোয়েবরা আলাদা বাড়িতে ছিলো বলে বেঁচে গিয়েছিলো।
মেশিনগানের গুলির শব্দে শোয়েবদেরও ঘুম ভেঙেছে। মাইকের ঘোষণা শোনামাত্র রবি লাফিয়ে উঠে–আমাদের রেসকিউ টিম এসে গেছে, বলে বাইরে ছুটে যাচ্ছিলো।
সঙ্গে সঙ্গে শোয়েব ওকে থামিয়েছে–তুমি ক্ষেপেছো নাকি রবি? এক্ষুণি গোলাগুলি শুরু হবে। চুপচাপ ঘরে বসে অপেক্ষা করো। এই বলে ও ঘরের দরজা বন্ধ করে রিডিং টেবিলটা সরিয়ে এনে দরজার গায়ে লাগিয়ে রাখলো। যাতে সহজে ধাক্কা দিয়ে কেউ যেন খুলতে না পারে।
পর পর কয়েকবার মাইকে ঘোষণা হওয়ার পরও যখন এদিক থেকে সাড়া শব্দ হলো তখন সুমন বললো, মনে হয় এরা সবাই ভেগেছে।
আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে শোয়েব দরজা খুললো। বেশ কয়েকবার রহমত, রহমত, বলে ডাকলো। রহমতরা ততক্ষণে সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে পুবের পাহাড়ের দিকে ছুটছিলো। পাহাড়ের ওপাশে গেলেই ওরা নিরাপদ।
রহমত বা অন্য কারও সাড়া শব্দ না পেয়ে শোয়েব করিডোর আর ঘরের সব আলো জ্বেলে দিলো। তাড়াহুড়ো করে যাওয়ার সময় রহমতরা জেনারেটর বন্ধ করার সুযোগ পায়নি।
বাইরে থেকে এসপি নওশের আলী আর ডিসি হাবিবুল বাশার দুজনই অবাক হয়ে দেখলেন ছড়ানো ছিটানো অনেকগুলো বাড়ির একটাতে একে একে আলো জ্বলছে। ভাবলেন নিজেদের অবস্থান জানাবার জন্য শত্রুপক্ষ নিশ্চয় বোকার মতো এমন কাঁচা কাজ করবে না। তবে কি শোয়েবরা আলো জ্বেলে সংকেত পাঠাচ্ছে? ভাবতে গিয়ে ওঁরা মনে মনে প্রমাদ গুণলেন। শত্রুপক্ষ টের পেলে শোয়েবদের আস্ত রাখবে না।
মিনিট দশেক অপেক্ষা করে শোয়েবরা বুঝে ফেললো এখানকার সবাই পালিয়েছে। তারপর মাথার ওপর হাত তুলে ফ্রেন্ডস, ফ্রেন্ডস, বলে বেরিয়ে এলো।
ডিসি হাবিবুল বাশার ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলেন, সুমন কে?
সুমন এগিয়ে যেতেই তিনি ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমি তোমার বাশার চাচা। তোমার বাবা অস্থির হয়ে পড়েছেন তোমাদের সবার জন্য।
বাবা কোথায়? জানতে চাইলো সুমন।
কক্সবাজারে, আমার বাসায়। আসতে চেয়েছিলো, বারণ করেছি। আমরা তো ভেবেছিলাম জামাতীদের সঙ্গে একাত্তরের মতো একটা যুদ্ধ হবে। ওরা এভাবে পালাবে। ভাবিনি।
শোয়েব বললো, শুধু জামাতী নয়। পাকিস্তানীও আছে ওদের সঙ্গে।
ডিসি হেসে বললেন, কক্সবাজার গিয়ে সব শুনবো। এখন গাড়িতে ওঠো। ওপাশে আমার জিপ আছে।
এসপি এসে শোয়েবের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বললেন সুমনদের গাড়িতে রাখা আপনার কাগজগুলো পেয়েছি। দারুণ কাজ করেছেন।
এরই জন্য বেচারার জানটা যেতে বসেছিলো। এই বলে ডিসি হাবিবুল বাশার ছেলেদের তাড়া লাগালেন, আমাদের আর দেরি করা চলবে না। বাকি কাজ পুলিশ করবে। চলল, আমরা কক্সবাজারে গিয়ে সানরাইজটা বীচে বসে দেখি।
সুমনরা সবাই ডিসির জিপের পেছনে উঠে বসলো। এসপি বললেন আপনারা যান, এদের ঘাটিটা ভালো করে সার্চ করতে হবে। দেখি কোনও সূত্রটুত্র ফেলে রেখে গেছে কি না।
ডিসির জিপ কক্সবাজারের পথে রওনা দিলো। সুমন বললো, আমাদের কক্সবাজার পৌঁছানোর কথা ছিলো কাল সন্ধ্যায়, মাত্র তেত্রিশ ঘণ্টা দেরি হয়েছে, অথচ মনে হচ্ছে এর ভেতর তেত্রিশ দিন কেটে গেছে।
হাবিবুল বাশার মৃদু হেসে বললেন, মনে হচ্ছে দারুণ একটা অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা হয়েছে তোমাদের?
রবি বললো, এ্যাডভেঞ্চারই বটে। অল্পের জন্য পৈত্রিক প্রাণটা খোয়াতে হয়নি
ঝন্টু বললো, আসলেই এ্যাডভেঞ্চার। ভেবে দেখ প্রতিটা মুহূর্তে আমরা কিভাবে মৃত্যুর তাড়া খেয়ে ছুটছিলাম।
হাবিবুল বাশার মৃদু হেসে বললেন, কক্সবাজার চলো, তোমাদের সব কষ্ট পুষিয়ে দেবো।
কিভাবে আঙ্কল? জানতে চাইলে সুমন।
তোমরা আসছো শুনে আমার দুই মেয়ে মিনি আর নিনি চমৎকার একটা হলিডে প্ল্যান তৈরি করে রেখেছে। না, এর বেশি বলতে পারবো না। তাহলে ওরা আর আমার সঙ্গে কথাই বলবে না।
ওঁর কথা শুনে সুমন, ঝন্টু আর রবি এক সঙ্গে হেসে উঠলো।
Leave a Reply