৩১-৩৭. আবার কুয়াশা

আবার কুয়াশা জমতে শুরু করেছে, কনি জানালার দিক থেকে মুখ সরাল। তুমি নিরাপদে থাকবে তো?

দুশ্চিন্তা করো না, টেবিল থেকে চামড়ার কভারে বাঁধানো স্ক্রিপ্ট তুলে নিল জ্যান। ভিজিনি কী বলেছে, তা তো তোমাকে বলেছি। পল মরগ্যান আমার সাথে রিহার্সেল করবে। তাই কঠোর নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে।

আমি তোমার মতিগতি বুঝি না। কনি মাথা ঝাঁকাল। সারা বিকাল ধরে আমাকে বোঝালে, তুমি আর এসবের মধ্যে নেই…এখানে সুযোগ খুঁজতে গিয়ে কোনও লাভ নেই… ইত্যাদি। কিন্তু ভিজিনির ফোন পাওয়ার সাথে সাথে আবার গলে গেলে! এখনই ছুটে যাওয়ার দরকার কী? আগামীকাল সকাল পর্যন্ত ওকে অপেক্ষা করতে বললেই হতো!

তখনও আমরা রিহার্সেল চালিয়ে যাব। পার্স হাতে দরজার দিকে পা বাড়াল জ্যান। বুঝতে পারছ না? ছবির কার্যক্রম শিডিউল অনুযায়ী-ই এগোচ্ছে।

কনি দরজা খুলে বাইরে বেরোল, কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে চারদিক। চলো, তোমাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।

এটুকুই তো রাস্তা- জ্যান মদু হাসল। ধন্যবাদ, কনি, এজন্যেই তোমাকে এতো পছন্দ আমার।

গাড়িতে উঠে পড়ল জ্যান, ইঞ্জিন চালু করার শব্দ ভেসে এলো কনির কানে। সেই শব্দ ছাপিয়ে আরও জোরে চিৎকার করল সে, কথা দিচ্ছ কিন্তু, সাবধানে থাকবে।

তুমিও সাবধানে থেকো।

কনি মাথা নাড়ল। চিন্তা করো না, তুমি ফেরার আগ পর্যন্ত আমি দরজায় তালা দিয়ে রাখব। আর যদি কিছু ঘটে যায়…

কিছুই ঘটবে না। ব্রেক ছেড়ে দিয়ে গাড়িটাকে ড্রাইভওয়ে রাবর নামিয়ে নিল জ্যান। হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে কনিকে ঘরের ভেতর ঢুকতে দেখা গেল, বন্ধ হয়ে গেল দরজা। পাহাড়ি রাস্তা ধরে এগিয়ে চলল ও।

কুয়াশা আরও ঘন হয়ে আসছে। খুব সাবধানে গাড়ি চালাচ্ছে জ্যান, আশেপাশে অন্য কোনও যানবাহন দেখা যাচ্ছে না। পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দারা বোধহয় আজ রাতটা নিজেদের বাড়িতেই কাটিয়ে দেবে; পরিবারের সদস্যারা একসাথে আড্ডায় মেতে উঠবে, বাচ্চারা টেলিভিশনের সামনে হই-হুল্লোড় করবে। খোলা একটা গ্যারেজের সামনে দিয়ে যাবার সময় ভেতরে এক ভুঁড়িওয়ালা লোককে দেখতে পেল। ও। টি-শার্ট পরা লোকটা যান্ত্রিক করাত হাতে কাঠ কাটছে; পাশেই একটা বেঞ্চের ওপর বিয়ারের ক্যান রাখা, একটা ডালমেশিয়ান কুকুর নীচে বসে মালিককে কাজ করতে দেখছে। পেছনের আরেকটা বাড়ি থেকে জোরে গানের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

আমি তোমার মতিগতি বুঝি না। কনির কথাটা কানে বেজে উঠল।

এখানে বোঝার কী আছে? জ্যান ভয় পেয়েছিল,পাবারই কথা-একটা উন্মাদ বিড়াল খুন করে বেড়াচ্ছে, এমন কথা শুনলে কে না ভয় পায়? তবে সেটা গত রাতের কথা। এরপর থেকে কোনও দুর্ঘটনার কথা শোনা যায়নি, উল্টোপাল্টা কিছু হবে বলেও মনে হচ্ছে না। আর হ্যাঁ, ইদানিং আশেপাশে উন্মাদ লোকের অভাব নেই, সাবধানে থাকাটা জরুরী। তবে সাবধানতা অবলম্বন আর বাড়াবাড়ি উদ্বেগের মাঝে পার্থক্যটা বুঝতে হবে; বদ্ধ দরজার পেছনে নিজেকে লুকিয়ে রেখে জীবন কাটানো সম্ভব নয়।

এই সহজ কথাটাই কনি, রয় এবং ডা. ক্লেইবন বুঝতে পারছেন না। শনিবার রাতটা চারদেয়ালের ভেতর আবদ্ধ অবস্থায় পার করতে চায় না জ্যান। নিজের জীবনকে উপভোগ করার জন্য কী করতে হবে, তা ওর জানা আছে।

ভিজিনি লোভী হতে পারে, তবে বোকা নয়। সিনেমার কাজ পূর্ণোদ্যমে চলার খবর পেয়ে, সুর বদলেছে লোকটা। উন্মাদিনী ওর জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই জ্যানকে কুপ্রস্তাব দিয়ে নিজের পায়ে কুড়াল মারবে না সে। মরগ্যানের সাথে রিহার্সেলের জন্য ডাকার ঘটনাটা থেকে সহজেই বোঝা যায়, ব্যবসায়িক দিকটা ওর মাথায় আছে।

আর নিরাপত্তার বিষয়ে মিথ্যা বলেনি সে। স্টুডিওতে ঢোকার মুখে, দুজন লোককে গেটে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেল জ্যান। কমবয়স্ক গার্ড বেশ সতর্কতার সাথে ওর স্টিকার পরীক্ষা করে ভেতরে ঢুকতে ইশারা করল। গাড়ি পার্ক করার পর স্টেজ সেভেনের রাস্তা ধরে এগোনোর সময় চাক গ্ৰসিংগার-কে দেখতে পেল ও, কাঁধের হোলস্টারে রিভলভার গুঁজে রাখা।

জ্যান স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল; এবার আর বিপদের সম্ভাবনা নেই। আজ রাতে তো নয়ই, এমনকি আর কখনোই নয়। শুভ সময় আসন্ন…সবকিছুর জন্য এখন সে প্রস্তুত।

কুয়াশা ভেদ করে জ্যান দেখতে পেল, সাউন্ড স্টেজের বড়সড় দরজাগুলো বন্ধ। করে রাখা। পাশের ছোট্ট দরজাটার সামনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে স্যান্টো ভিজিনি।

একদম সময়মতো এসেছ, সে বলল। ভালো লক্ষণ, কী বল?

জান মাথা নাড়ল। আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল ভিজিনির সব কথায় সম্মতি জানাবে, তবে একটু সাবধানে। নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে সবকিছু। ভীত বিড়ালের মতো হওয়া চলবে না-বিড়ালের কথা ভুলে যাও, নিজেকে বোঝাল সে। ওসব চিন্তা করে আর লাভ নেই, সবকিছু ঠিকঠাক আছে এখন।

ভিজিনি একপাশে সরে গিয়ে স্টেজের দিকে ইঙ্গিত করল।

জ্যান প্রবেশ করার পর, বন্ধ করে দিল দরজাটা।

.

৩২.

ক্লেইবর্ন গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছেন।

পাহাড়ের ওপর কুয়াশা জমাট বেঁধে ভারী হয়ে আছে। অর্ধবৃত্তাকার ড্রাইভওয়েটার দিকে তাকালেন তিনি, সীমানার ওপারে কী আছে বোঝার কোনও উপায় নেই।

ক্লেইবন ঘড়ি দেখলেন, আটটা বেজে পাঁচ মিনিট। রয় অ্যামেস কোথায়? হাতল ঘুরিয়ে জানালা নামালেন তিনি। আরেকটা গাড়ি এগিয়ে আসার শব্দ কানে এল, কিন্তু নীচের রাস্তায় কিছু দেখা গেল না। কিছুক্ষণ পর তিনি খেয়াল করলেন, শীতে কাঁপতে শুরু করেছেন। বাধ্য হয়ে জানালাটা বন্ধ করে দিলেন আবার।

আঁধার আর স্যাঁতসেঁতে কুয়াশার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে পাতলা কাঁচের জানালা। তবে কুয়াশার আড়ালে কী লুকিয়ে আছে, সে দুশ্চিন্তাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। সেই দুশ্চিন্তা কুয়াশার চেয়ে শীতল, রাতের চেয়েও অন্ধকার। ছুরি হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে নরম্যান। ওর উপস্থিতি অনুভব করতে পারছেন তিনি। বুঝতে পারছেন, আশেপাশেই কোথাও অপেক্ষা করছে লোকটা।

কল্পনাশক্তি ক্ষতিকর নয়, কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রণহীন হতে দেয়া বড়ই ক্ষতিকর।

উপদেশ হিসেবে ভালো, তবে এর মানে কী? কল্পনা কাকে বলে, আর চিন্তাভাবনার সাথে তার পার্থক্য-ই বা কী? অনুভূতির মতোই একটা স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য কি এটা না?

তবে উত্তরটা তার জানা নেই। এতো বছর পরে এসেও তিনি সঠিকভাবে সবকিছু সংজ্ঞায়িত করতে পারবেন না-ইঙ্গিত, বিভ্রান্তি, ভ্রম।

কজিতো, আর্গো সামঃ আমি ভাবি, তাই আমি আছি। কিন্তু আমিটা আসলে কী? যুক্তি তর্ক দ্বারা পরিচালিত এক মানুষ? কিন্তু মানুষ তো আসলে যুক্তি সম্পন্ন প্রাণী নয়; অন্তত এতোদিনের অভিজ্ঞতা তাকে সেটাই শিখিয়েছে। মানুষ বেঁচে থাকে তার সহজাত প্রবৃত্তি আর অনুমানশক্তিকে কাজে লাগিয়ে, তিনি নিজেও এর ব্যতিক্রম নন।

নিজেকে সারানোর ক্ষমতা তার নেই, কারণ নিজেকে তিনি ঠিকমতো চেনেন না। চেতনাই মানুষের কাছে সব, তবে তা তো এক অস্থায়ী ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতি মাত্র; ঘুমের সময় আমরা তাকে হারিয়ে ফেলি, নেশাজাত দ্রব্য তার পরিবর্তন ঘটায়, আবেগের বশবর্তী হয়ে তার বিকৃতি সাধন করি, বিবেকের কাছে হার মেনে আত্মসমর্পণে বাধ্য হই। চেতনা আসলে পাতলা কাঁচের জানালাটার মতোই-বাইরের কুয়াশার বিরুদ্ধে যা দুর্বল প্রতিরক্ষা সৃষ্টি করে রাখতে পারে। তবে কুয়াশার চিরন্তন অস্তিত্বকে মুছে দিতে পারে না।

যুক্তি, তাত্ত্বিক আলাপ আপাতত ভুলে যাওয়া যাক। কুয়াশার আড়ালে লুকায়িত বাস্তবকে খুঁজতে হবে। ক্লেইবন দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, গতরাতের ঝাপসা কুয়াশার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা দৃশ্য তার মানসপটে ভেসে উঠল। গাছের নীচে জড়সড় হয়ে থাকা বিড়াল, ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ। জ্যানের কাছে। পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছিল নরম্যান, তার বদলে বিড়ালের শরীরে ঢুকিয়ে দিয়েছিল ধারালো অস্ত্র। কেন নয়? অন্ধকারে সব বিড়ালই ধূসর…

কাঁচের জানালায় ঠকঠক করে শব্দ হলো। তিনি ঘুরে তাকালেন, হাত সরে গিয়ে নীচু হয়ে থাকা একটা মুখের দেখা পেলেন।

শুনছেন? উঠে পড়ুন! বলল রয় অ্যামেস।

গাড়ির দরজা খুলে নেমে পড়লেন ক্লেইবন। আমি ঘুমিয়ে পড়িনি, বললেন তিনি। একই সাথে নিজেকে তার চিন্তার স্বার্থকতা বোঝালেন, চেতনাকে হারিয়ে ফেলা কতোই না সহজ। অ্যামেস গাড়ি চালিয়ে এখানে এসেছে, তিনি ঘুনাক্ষরেও টের পাননি। কুয়াশার আড়াল থেকে যে কেউ বেরিয়ে আসতে পারতো, এমনকি নরম্যান-ও–

এসব চিন্তাভাবনাকে জোর করে মাথা থেকে সরিয়ে দিলেন তিনি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করলেন, আটটা দশ। তুমি দেরী করে ফেলেছ।

সেজন্য দুঃখিত, অ্যামেস মুখ খুলল।

আজকের রাতটা কেমন যেন স্যাঁতসেঁতে; ক্লেইবর্ন সামনের দরজার দিকে এগোতে শুরু করলেন। ব্যাপার না। চলো ভেতরে যাই…অন্ততপক্ষে এক কাপ কফি তো খাওয়াবে ড্ৰিসকল।

অ্যামেস তাকে অনুসরণ করল। পাশে দাঁড়িয়ে কলিংবেল চাপতেই ভেতর থেকে সুমধুর রিনিঝিন শব্দ ভেসে এলো কানে।

কয়েক মুহূর্তের জন্য তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাটায় দাঁড়িয়ে রইল। আবার কলিংবেল চাপল অ্যামেস। রিনঝিন শব্দের প্রতিধ্বনি শোনা গেল আগের মতোই, কিন্তু কেউ সাড়া দিল না।

এসবের মানে কী? অ্যামেস বিরক্ত হলো। আপনার কী মনে হয়, আমাদেরকে ইচ্ছা করে দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে?

আমি সন্দিহান, ক্লেইবর্ন পর্দায় ঢাকা জানালার দিকে তাকালেন। ভেতরে বাতি জ্বলছে।

অ্যামেস মুঠ পাকিয়ে সজোরে ঘুষি মারল দরজায়। ধাক্কা খেয়ে নড়ে উঠল দরজাটা, ভেতরের দিকে খুলে গেল।

খোলাই ছিল, বলল সে। আসুন, ঢুকে পড়ি।

ভেতরে পা দিতেই সাদা রেলিং দেয়া প্যাঁচানো সিঁড়ি চোখে পড়ল। দোতলা বাড়িটা তাদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। হলঘরের প্রবেশমুখ আলোতে ঝলমল করছে।

রয় অ্যামেস মুখের কাছে দুহাত জড়ো করল, কেউ আছেন?

কোনও উত্তর নেই। তাই বলে নীরবতা বজায় নেই সেখানে; ডানপাশের দরজার ওপাশ থেকে মৃদু সুরে সঙ্গীতের আওয়াজ ভেসে আসছে।

আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছে না, ক্লেইবর্ন বললেন। টেলিভিশন দেখছে বোধহয়।

ভেতরে ঢুকে পড়ল দুজন। কার্পেটে মোড়ানো সিঁড়ি বেয়ে নীচের ডেনের দিকে এগোল। জায়গাটা একদম ফাঁকা, তবে ওয়াল স্ক্রিন চালু করা আছে। সেই সাথে ভেসে আসছে সিম্ফোনি অর্কেস্ট্রার সুমধুর সুর, দ্য পাইনস অফ রোম।

আমাদের আগে কেউ এসেছিল এখানে। কফি টেবিলের পাশে সাজানো চেয়ারগুলোর দিকে দেখালেন ক্লেইবর্ন। টেবিলটা ঘরের একদম মাঝখানে, তার ওপর কয়েকটা গ্লাস আর ছাইদানি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা।

যে-ই আসুক, সে আর এখানে নেই, কুয়াশায় ঢাকা কাঁচের দরজার ওপারে দেখার চেষ্টা করল অ্যামেস। ঘরের আরেক প্রান্তে ছোট্ট একটা দরজা দেখা যাচ্ছে। টয়লেটে আছে হয়তো।

নীচের হলঘর পেরিয়ে হাতের বামদিকে অবস্থিত বাথরুমের দরজা খোলা, সেখানেও কেউ নেই। উল্টোদিকের শোবার ঘরেরও একই অবস্থা।

অ্যামেস ভেতরে ঢুকে জাঁকালো সাজসজ্জা পর্যবেক্ষন করতে লাগল। আয়নাগুলো দেখেছেন? জায়গাটাকে খেলাঘর বলে মনে হচ্ছে।

ক্লেইবন মাথা নাড়লেন। ঘুরে তাকাতে যাবেন, এমন সময় অ্যামেস হলঘরের দিকে পা বাড়াল। ঘরের দূরবর্তী প্রান্তে আলো জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। ডাক্তারকে পাশে দেখতে পেয়ে থেমে গেল সে। নীচের রান্নাঘরের দিকে তাকাল দুজন।

অন্যন্য ঘরের মতো, রান্নাঘরটাও বিশালআকৃতির এবং অতিমাত্রায় সুসজ্জিত। মেঝে থেকে শুরু করে স্তম্ভগুলোতে দামী ওক কাঠের কারুকাজ দেখা যাচ্ছে। দেয়ালের তাক, কাপবোর্ড, কেবিনেট, সিঙ্ক, রেফ্রিজারেটর-সবখানে ওক নির্মিত প্যানেল। ঘরের মৃদু আলোকসজ্জাকে যেন শুষে নিচ্ছে খয়েরি কাঠ। ওদিকে ঘরের মাঝখানে অবস্থিত তাকে ঝুলানো ধারালো ছুরি আর চামচের সারি থেকে আলো তীব্র আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে।

চকচকে ধাতব সরঞ্জামের দিকে তাকিয়ে, স্টুডিও পপ ডিপার্টমেন্টের অস্ত্রসম্ভারের কথা মনে পড়ল ক্রেইবনের। তবে এখানকার ছুরিগুলো শুধুমাত্র সাজসজ্জার অংশ নয়, নকল নয় ওগুলোর নীচে অবস্থিত ওক কাঠের বিশাল ব্লকটাও।

সেকেলে ধাঁচের কসাইদের ব্লক এটা, একটা গরুর এক চতুর্থাংশ সহজেই আঁটানো যাবে। একপাশে ফেলে রাখা কাটারিটা সে কাজের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। অবশ্য কাজটা আগেই করে ফেলা হয়েছে।

কসাইয়ের ব্লকের ওপর রক্তাক্ত মাংসের তালটা আসলে মাটি ড্ৰিসকলের কাঁটা মাথা।

.

৩৩.

জ্যানকে স্টেজের আরেক প্রান্তে নিয়ে গেল স্যান্টো ভিজিনি, শাওয়ার স্টলের সেটের বাইরে একটা ক্যাম্পার ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা। দরজা খুলে ভেতরটা দেখাল সে।

তোমার ড্রেসিং রুম।

জ্যান ভেতরে উঁকি দিল। বড়সড় আয়না, কাউচ, আরাম কেদারা, ড্রেসিং টেবিল, কার্পেট বিছানো মেঝে-এতো কিছু দেখে উজ্বল হয়ে উঠল ওর মুখ।

ঝকঝকে পরিস্কার।

ভিজিনি মাথা নাড়ল। মেয়েটাকে সবকিছু গুছিয়ে দেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে। বুঝতে পারবে যে, যত্ন-আত্তির কোনও কমতি হচ্ছে না।

জ্যানের হাসি কিছুটা মলিন হয়ে এলো। মরগ্যান কোথায়?

পল যেকোনও মুহূর্তে এখানে এসে পড়বে। তুমি ততোক্ষণে পোশাক বদলে নিচ্ছ না কেন? আমি দেখে আসি, ও পৌঁছাল কি না।

পার্স আর চামড়ায় বাঁধানো স্ক্রিপ্ট হাতে ক্যাম্পারে প্রবেশ করল জ্যান। ভেতরে ঢুকেই দেখতে পেল, ড্রেসিং টেবিলের ওপর ফুলদানিতে তিনটা লাল গোলাপ রাখা।

ফুল!

পছন্দ করো না? ভিজিনি কাঁধ ঝাঁকাল। তারকাদের ড্রেসিং রুমে সবসময় তাজা ফুল থাকা উচিৎ।

জবাবের অপেক্ষা না করে নেমে গেল সে, স্টেজের দিকে পা বাড়াল। জানে যে, দরজাটা বন্ধ করে দেবে জ্যান।

সবকিছু পরিকল্পনামাফিক কাজ করছে। হ্যাঁ, এখন বাতিল হয়ে যাবে। উন্মাদিনী। কিন্তু তাতে কী? এখন ভিজিনির স্বপ্ন পূরণ হবার পথে। পরিচালকের কাজই তো তাই, স্বপ্নকে…কল্পনাকে সত্যিতে পরিণত করা। এখন পর্যন্ত সেই কল্পনাগুলোকে রূপালী পর্দায় বাস্তব করে তুলেছে ও। কিন্তু এখন…এখন হাতের কাছে পেয়েছে মৃত মেরি ক্রেনের চেহারা আর উষ্ণ জীবিত এক মেয়ের দেহ।

মানস চোখে ভিজিনি জ্যানকে দেখতে পেল, ড্রেসিং রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। ছোট ছোট স্কার্ট আর টপস মোহনীয় কোমর আর সুগঠিত দেহকে ঢাকতে পারেনি। স্কার্টটা আস্তে আস্তে উপরে উঠবে…দৃশ্যটা কল্পনা করার সাথে সাথে, নিজের তলপেটে ছড়িয়ে পড়া একটা উষ্ণতা টের পেল লোকটা। মামা মিয়া

পার্শ্ব দরজা খুলে, কুয়াশার দিকে তাকাল সে। নিশ্চিত হয়ে নিল যে গার্ড চলে গিয়েছে। আগেই বলে রেখেছিল লোকটাকে। আমরা রিহার্সেল করব, কেউ বিরক্ত না করলে ভালো হয়। সন্দেহ করেনি কেউ। কে সন্দেহ করবে ওকে? মামা-ও করত না।

স্যান্টো খুব ভালো ছেলে, সবসময় বলত সে। এখনও বলছে, ভিজিনি যেন পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছে কণ্ঠটা। কুয়াশার মাঝে যেন দেখতেও পাচ্ছে সেই চেহারাটা, দুম করে দরজা বন্ধ করে দিল ও। মহিলাকে আসতে দিবে না ও, কাউকেই দেবে না। ক্ষমতা এখন ওর হাতে।

ক্ষমতা।

ক্ষমতা ওকে উপহার দিয়েছে পিলগুলো। ওগুলো ওকে দিয়েছে নানা ধরনের কথা শোনার ক্ষমতা, দিয়েছে ওকে পরিষ্কার সব কিছু দেখার ক্ষমতা!

এই বিকাল থেকে আবার অ্যামিটাল পিলগুলো খাওয়া শুরু করেছে সে। কত গুলো তা মনেও করতে পারছে না। আসলে পরিকল্পনাটা বাদে আর কিছুই মনে। করতে পারছে না। সেই পরিকল্পনার প্রথম ধাপই ছিল জ্যানকে ফোন করা।

তারপর থেকে ঝড়ের গতিতে ঘটতে শুরু করল সব ঘটনা। সব কিছু ঠিক করে নেবার পর যখন জ্যান এসে উপস্থিত হলো, থেমে গেল গতি। কিন্তু কপাল ভালো, মেয়েটা কোনও কিছু সন্দেহ করেনি। ঘটনা এখন পুরোপুরি ওর নিয়ন্ত্রণে।

ভুল হলো, ঠিক পুরোপুরি না। পিলগুলো যেন ক্যামেরার উপরেও প্রভাব ফেলেছে। কুয়াশার মাঝে মামার চেহারা দেখতে পাচ্ছে, শুনতে পাচ্ছে তার কণ্ঠ।

সব পাগল। পাগলাটে পিল, পাগলাটে ক্যামেরা। কিন্তু মামা মিয়া, আমি পাগল না।

না, ভিজিনি উন্মাদ নয়। কেননা ওর হাতেই এখন সব ক্ষমতা। যেই ক্ষমতা ওর তলপেটকে উষ্ণ করে তুলেছে।

প্রস্তুতি শেষে, ড্রেসিং রুমের দিকে এগোল স্যান্টো ভিজিনি।

.

৩৪.

রয় আমেসকে গলা কাটা লাশের পাশে হাঁটু গেড়ে বসতে দেখলেন ক্লেইবর্ন।

ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটেছে-প্রথমে শরীর থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া রক্তাক্ত মাথা দেখে তাদের চোখ বিস্ফারিত হবার জোগাড়! তারপর আবার মুভুবিহীন ধড়ের দেখা পাওয়া। ক্লেইবর্ন পেশায় একজন চিকিৎসক মৃত লাশ তিনি আগেও দেখেছেন, পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন পেশাদারিত্বের সাথেই। কিন্তু রয় অ্যামেস নিজের প্রতিক্রিয়ায় অবাক! ভয় অথবা আতঙ্ক ওকে গ্রাস করতে পারেনি, শুধু কিছুটা দুর্বল অনুভব করছে। এমনকি কণ্ঠস্বরেও কোনও পরিবর্তন আসেনি, কথা বলছে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই।

তেমন রক্ত দেখতে পাচ্ছি না, সে বলল।

ক্রেইবন মাথা নাড়লেন। শরীরে কাটাছেঁড়ার চিহ্ন নেই। উঠে গিয়ে কাঠের ব্লকটার সামনে ঝুঁকে দাঁড়ালেন তিনি। রয় উল্টোদিকে ঘুরে তার কথায় মনোযোগ দিল।

মাথার পেছনে আর পাশে প্রচুর ক্ষত দেখতে পাচ্ছি। কাটারির ভারী হাতল দিয়ে পেছন থেকে আঘাত করেছে কেউ। মেঝেতে লুটিয়ে পড়ার আগেই মারা গিয়েছে ড্ৰিসকল। এরপর মাথা কেটে নেয়ার সময় ধমনী অথবা শিরা থেকে তেমন রক্তপাত হতে পারেনি।

ডাক্তারের কথাটা বুঝতে পারল রয়। হৃৎপিণ্ড থেমে গেলে, ক্ষতস্থান থেকে আর রক্ত ঝরতে পারে না। স্ক্রিপ্ট লেখার সময় এসব টুকটাক তথ্য সে ভালোভাবেই যাচাই করে নিয়েছিল। এই অংশটা গল্পের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশেষত্বের কারণেই নরম্যানকে কেউ সন্দেহ করতে পারেনি; পোশাকে রক্তের ছিটাফোঁটা না থাকায় সে নিজেও সম্ভবত নিজেকে সন্দেহ করেনি। খুন করতে গিয়ে হাতে রক্ত লেগে যায়, তবে তা শুধু মৃতদেহকে স্পর্শ করার কারণেই হয়ে থাকে। খুব সহজেই ধুয়ে ফেলা যায় সেটা।

নিজেকে বেসিনের দিকে এগিয়ে যেতে আবিস্কার করল সে। সাদা পোর্সিলেনের বেসিনটা এখন গোলাপি বর্ণ ধারণ করেছে। নীচের দিকে পানি গড়িয়ে যাওয়ার রাস্তাটা কালচে লাল হয়ে আছে। রক্ত…

কোনও সমস্যা? ক্লেইবর্ন পাশে এসে দাঁড়ালেন। হাত তুলে রক্ত জমাট বাঁধা জায়গাটার দিকে দেখাল রয়। ডাক্তার মাথা নাড়লেন, আর কিছু বুঝতে বাকি নেই। নরম্যান বহাল তবিয়তেই আছে, মাথা কেটে নিয়েছে ড্ৰিসকলের, আর এখন…

নিজেকে শান্ত করে মুখ খুলল রয়, এখানে আসার আগে জ্যানের অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে ওর সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম। সেজন্যেই আমার আসতে দেরী হয়েছে। ওখানে গিয়ে কনির সাথে দেখা হয়েছিল। ওর কাছে শুনলাম, ভিজিনির সাথে রিহার্সেল করতে আগেই বেরিয়ে গিয়েছে জ্যান।

স্টুডিওতে? রয়ের হাত চেপে ধরলেন ক্লেইবর্ন। কতক্ষন আগে?

আধ ঘন্টা হবে। এতক্ষণে পৌঁছে যাবার কথা। আপনার কী ধারণা নরম্যান–?

এই কথাটা আমাকে আগে বলোনি কেন? ক্লেইবর্ন ছুটে গেলেন দরজার দিকে। পুলিশে ফোন করো, এখানে আসতে বলে দাও। তারপর স্টুডিওতে ফোন করে, জ্যান আর ভিজিনির সাথে যোগাযোগ করতে বল নিরাপত্তা কর্মীদের। আমি পাঁচ মিনিটের ভেতর ওখানে পৌঁছে যাব।

দাঁড়ান…

কিন্তু হলঘরে ফিরে আসার আগেই, সামনে থেকে দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পেল রয়। সিম্ফোনি অর্কেস্ট্রার শব্দকে ছাপিয়ে বাড়ির বাইরে গাড়ির ইঞ্জিন চালু হবার শব্দ কানে এল।

তাড়াতাড়ি টেলিভিশন বন্ধ করে দিল ও। আশেপাশে তাকাতেই দরজার পাশে ঘরের কোনায় একটা টেলিফোন সেট চোখে পড়ল। দৌড়ে গিয়ে হাতে নেবার আগেই বাজতে শুরু করে দিল ফোনটা।

রয় রিসিভার তুলল। হ্যালো, অপরিচিত একটা পুরুষ কণ্ঠ শুনতে পেল। মিস্টার ড্ৰিসকল?

না তড়িঘড়ি করে উত্তর দিল রয়। ফোন রেখে দিন, প্লিজ। এখুনি পুলিশকে ফোন করতে হবে।

আপনি পুলিশের সাথেই কথা বলছেন।

কী?

 মিল্ট অ্যাংস্ট্রম, ফেয়ারভিলের কান্ট্রি শেরিফ। কার সাথে কথা বলছি আমি?

রয় নিজের পরিচয় দিল। তারপর আবার বলল, প্লিজ, ব্যাপারটা খুবই জরুরী। মিস্টার ড্রিসকল খুন হয়েছেন…

খুন হয়েছেন! কীভাবে?

আমি এখন কথা বলতে পারছি না…

তাহলে ভালো করে শুনুন। রয়ের জবাবের জন্য অপেক্ষা করলেন না। শেরিফ। আমি সারা সন্ধ্যা ক্লেইবর্নের খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা করেছি। ডা, স্টেইনার আমাকে ড্ৰিসকলের ফোন নম্বর দিয়ে বলেছেন, ক্লেইবনকে এখানে পাওয়া যেতে পারে। যাই হোক, ওনার কাছে একটা খবর পৌঁছে দিতে হবে। বলবেন, আমরা বো কেলার-কে খুঁজে পেয়েছি।

কাকে খুঁজে পেয়েছেন?

বো কেলার। সেই পথচারী, যাকে গত রবিবার ভ্যানে তুলে নিয়েছিলেন নান। ওর বর্ণনা অনুসারে, মহিলা নাকি লোহার রড দিয়ে তাকে মারতে এসেছিল। বেশ খানিকক্ষন ধস্তাধস্তির পর নানকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয় সে। আত্মরক্ষার জন্য মেরে ফেলে মহিলাকে, তারপর ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওখান থেকে পালিয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেয় বো। বিবেকের তাড়নায় কাল রাতে পুলিশের কাছে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দিতে আসে। নানকে খুন করার চিন্তাটা ওকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। তবে এই নান যে আসলে নান নয়, তা তার জানা ছিল না।

বুঝতে পারলাম না।

আজ বিকাল পর্যন্ত আমরাও কিছু বুঝতে পারছিলাম না। অবশেষে করোনার ডেন্টাল রেকর্ড মিলিয়ে লাশ সনাক্ত করার পর সবকিছু পরিষ্কার হয়েছে। ক্লেইনকে জানাবেন, তার ধারণা ভুল ছিল। গাড়িতে খুঁজে পাওয়া লাশটা কোনও অজ্ঞাত পথচারীর নয়, এমনকি কোনও নানের-ও নয়। নরম্যান বেটসের দেহ ওটা।

রয়ের মনে হলো, ফোনটা ওর হাত থেকে পিছলে পড়ে যাচ্ছে। সবকিছু কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে আসছে চোখের সামনে। নরম্যান মৃত, তার মানে ড্ৰিসকলকে খুন করেছে ভিজিনি।

আর লোকটা এখন জ্যানের সাথে আছে!

.

৩৫.

ভিজিনিকে দরজা খুলতে দেখে, জ্যান চিত্রনাট্য বন্ধ করল।

আমি তৈরি। বলল লোকটা।

উঠে দাঁড়াল জ্যান। পল এসে পড়েছে?

রাস্তায় আছে। ওকে ছাড়াই আমরা শুরু করতে পারি। চলার গতি বাড়িয়ে, দিল পরিচালক। আমি নরম্যানের অংশটা অভিনয় করব।

জ্যান লোকটার দিকে চিত্রনাট্যটা বাড়িয়ে দিল, কিন্তু মাথা নাড়ল ভিজিনি। দরকার নেই। শাওয়ারের দৃশ্যটা করব আজকে। ওখানে তোমার বা ওর, কারও কোনও ডায়লগ নেই।

প্রথমেই শাওয়ারের দৃশ্য?

হ্যাঁ, ওটাই তো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই না?

প্রমট কে করবে?

আমি তোমাকে বলে দিব কখন কী করতে হবে। দেতো হাসি হাসল ভিজিনি। তবে আগে তোমাকে কাপড় খুলে ফেলতে হবে।

দাঁড়াও, দাঁড়াও—

ক্যামেরা যখন চলবে, তখন তোমার আচরণ কল্পনা করতে সুবিধা হবে এতে। এখনও মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে যায়নি ওর।

ভুলে যাও, আমি তোমার সামনে কাপড় খুলছি না।

বেহুদা নাটক করো না তো, হাসিটা মিলিয়ে গিয়েছে। আমি আগেও অনেক ন্যাংটা মেয়ে দেখেছি। আর তুমিও এই প্রথম কোনও পুরুষের সামনে কাপড় খুলছ না।

তার সাথে রিহার্সেলের কী সম্পর্ক?

সব কিছুই সম্পর্কযুক্ত। আলোতে এসে দাঁড়াল ভিজিনি। লোকটার চোখের ছোট ছোট হয়ে আসা চোখের মণি পরিষ্কার দেখতে পেল জ্যান। পরিচালক ওর দিকে এগিয়ে এলে, নাকে এসে তার পারফিউমের গন্ধ লাগল। সেই সাথে আরেকটা মিষ্টি গন্ধ। লোকটা কিছু একটা খেয়ে এসেছে।

তুমি নারী, বলল ভিজিনি। আর আমি পুরুষ। তাই স্বাভাবিকভাবেই–

এক মুহূর্তের জন্য জ্যানের মনে হলো, হাসিটাকে আটকে রাখতে পারবে না ও। মনে মনে প্রশ্নটা করেই ফেলল সে, তোমার ডায়ালগগুলো কে লেখে? কিন্তু সেই মুহূর্তেই হাত বাড়িয়ে ওকে আঁকড়ে ধরল ভিজিনি, ঠোঁট দুটো ফাঁকা হয়ে আছে। জ্যান মাথা সরিয়ে নিল, লোকটাকে চুমু খেতে দিতে চায় না। কিন্তু সাথে সাথে বুঝতে পারল, পরিচালকের উদ্দেশ্য অন্য। তার হাত দুটো ওর পিঠে, ব্লাউজের ভাজগুলো আকরে ধরেছে। জ্যান বুঝতে পারল, কাপড় ছিঁড়ে গিয়েছে। ব্লাউজের। এরপর ব্রার উপর হাতের স্পর্শ অনুভব করল। এক মুহূর্ত পরেই ব্রাটা খুলে পরে গেল মাটিতে। চিৎকার করে লোকটার চোখে আঙুল দিয়ে খোঁচা দেবার প্রয়াস পেল ও। কিন্তু মাথা সরিয়ে, ওর হাত ধরে ফেলল লোকটা।

কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই ছেড়ে দিল হাতটা। নড়ার প্রয়াস পেল জ্যান, কিন্তু ভিজিনির ডান হাতের জোরালো এক থাপ্পড় খেয়ে টলে উঠল। এদিকে বা হাতটা দিয়ে আঁকড়ে ধরে ছিঁড়ে ফেলল ব্লাউজের সামনের দিকটা। শক্ত হাতে ভিজিনি খামচে ধরল জ্যানের বুক। এখনও সামলে উঠতে পারেনি, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দেখেছে-নোংরা হাতটা ওর বুকের উপর নড়াচড়া করছে। হঠাৎ জ্যানের হাতে ধরা পড়ল একটা ফুলদানী। ওটাকে আকরে ধরে লোকটার মাথার পাশে আঘাত হানল ও। গোলাপের লাল পাঁপড়িগুলো ঝরে পড়ল শাওয়ারে। ভিজিনির মাথার পাশেও দেখা গেল লালের সপর্শ। চিৎকার করে পিছিয়ে গেল সে।

দরজার দিকে দৌড়ে গেল মেয়েটা, নব আঁকড়ে ধরল। গতি না কমিয়েই খোলা দরজা দিয়ে বের হলো ও, পরমুহূর্তেই আছড়ে পড়ল মেঝেতে। ওখানে যে একটা সিঁড়ির ধাপ আছে, সেটা ভুলেই গিয়েছিল। তীব্র ব্যথার একটা ঝলক যেন ওর ডান পা থেকে উরু পর্যন্ত জ্বালিয়ে দিল! গোড়ালি মচকে গিয়েছে না ভেঙে, তা বুঝতে পারছে না।

তবে তাতে কিছু যায় আসে না, পালাতে হবে জ্যানকে। ফোঁপাতে ফোঁপাতে নিজেকে মেঝে থেকে টেনে তুলল ও। সামনে এগোবে, এমন সময় পিঠে কিছু একটার আঘাত খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। এবারের ব্যথাটা এতোটাই বেশি ছিল যে মনে হলো, জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। অনেক কষ্ট করে নিজেকে অজ্ঞান হবার হাত থেকে রক্ষা করল, কিন্তু ভিজিনির নোংরা হাত থেকে রক্ষা করতে পারল না।

শক্তিশালী হাত জোড়া ছিঁড়ে ফেলল জ্যানের স্কার্ট, এক মুহূর্তে পর তার প্যান্টি। এরপর ওর চুল ধরে মাথাটাকে পেছন দিকে টানল ভিজিনি। মেয়েটা বুঝতে পারল, ওকে ঠান্ডা শীতল মেঝেতে শুইয়ে দিয়েছে লোকটা। চোখ খুলে চেয়ে দেখল, ভিজিনির গাল বেয়ে রক্ত ঝরছে! কিন্তু তাই বলে মুখ থেকে হাসিটা অদৃশ্য হয়ে যায়নি। হলদে দাঁত, আর মুখের দুই কোনা দিয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকা লালা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। উঠে দাঁড়াও! আদেশ দিল সে।

পারছি না…আমার গোড়ালী…

হাসি একদম মলিন হলো না ভিজিনির, উল্টা আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে টেনে তুলল মেয়েটাকে। ব্যথায় গুঙিয়ে উঠল জ্যান। শব্দটা যেন আরও উত্তেজিত করে তুলল লোকটাকে। বেশ্যা! মেয়েটার হাতের মাংস আঁকড়ে ধরল সে। এগোও… নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করল জ্যান, কিন্তু ভিজিনি তা হতে দিলে তো! বাধ্য হয়ে এগোল জ্যান। অন্ধকার থেকে, আলোময় এলাকায় এসে উপস্থিত হলো ওর। সেটের আলো-বাথরুম আর শাওয়ারের সেট!

পর্দা দিয়ে ঢাকা স্টলের দিকে ওকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে ভিজিনি। টাইলের ওপরে আছড়ে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত।

ভেতরে যাও, আদেশ দিল সে। আমি তোমাকে ভেতরে চাই।

না। প্রতিবাদ জানাবার প্রয়াস পেল মেয়েটা। কিন্তু বুঝতে পারল, আহত পশুর মতো কুঁইকুই করছে কেবল। এটাই চাচ্ছিল ভিজিনি। শাওয়ারের স্টলে ঢোকার পর, আহত আর পরাজিত পশুর মতো আচরণ করা হবে ওর সাথে। অসহায় জ্যানকে ধর্ষণ করবে ভিজিনি!

অসহায়! নাহ, জ্যান অসহায় নয়! ফুসফুস ভরে বাতাস টেনে নিল মেয়েটা। দেহের সব শক্তি কাজে লাগিয়ে, মোচড় দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। হাত মুক্ত হওয়া মাত্র, ভিজিনির রক্তাক্ত মাথায় আঘাত হানা শুরু করল। গুঙিয়ে টলে উঠল ভিজিনি, নিজেকে সামলাবার জন্য আঁকড়ে ধরল ভারী পর্দাটা। বড় বড় করে শ্বাস নিতে শুরু করল সে, দীর্ঘ একট সেকেন্ড দাঁড়িয়ে রইল মূর্তির মতো।

পরমুহূর্তেই হাত দুটো বাড়িয়ে দিল সামনে। ভয়ে ঘুরে দাঁড়াল জ্যান, কিন্তু পালাতে পারল না। তার আগেই তীক্ষ্ণ নখগুলো কেটে বসল ওর কাঁধে। কিন্তু সাথে সাথেই আবার ছেড়ে দিল।

আবারও ঘুরল মেয়েটা, থমকে গেল সাথে সাথে। ভিজিনি এখনও শাওয়ারের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ব্যথায় বিকৃত হয়ে আছে মুখটা। মামা মিয়া

আস্তে আস্তে মিইয়ে এল ভিজিনির গলা, মুখ থুবড়ে সামনের দিকে পড়ে গেল লোকটা।

জ্যানের চোখে লোকটার দুই কাঁধের মাঝখান থেকে বের হতে থাকা রক্তের ধারা ধরা পড়ল। ভিজিনির দেহের সাথে সাথে যখন ভারী পর্দাটা ছিঁড়ে গেল, তখন স্টলে আশ্রয় নেয়া লোকটাকেও দেখতে পেল। হাতে ছোরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। লাফ দিয়ে সামনে এসে, জ্যানের গলায় ধরল ছুরিটা। চিৎকার করে উঠল ও। কিন্তু আওয়াজ ঢাকা পড়ল গুলির আওয়াজে।

শব্দ করে অ্যাডাম ক্লেইবর্নের হাত থেকে মেঝেতে আছড়ে পড়ল ছুরিটা!

.

৩৬.

ভয় পাচ্ছেন না ডা. স্টাইনার। ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই অবশ্য, ক্লেইবর্ন এখন একদম নিরীহ। লোকটার হাত থেকে গুলিটা বের করে নেয়া হয়েছে, ক্ষতটাও শুকাচ্ছে ভালোভাবে। কিন্তু ভবিষ্যতে আর কখনও কোনও অস্ত্র চালাবার সামর্থ্য হবে না তার, এমনকী ডান হাতটা দিয়ে কখনও একটা কলম পর্যন্ত ধরতে পারে নাকি সন্দেহ। অবশ্য এই ঘরটা থেকে কখনও বেরোতে পারবে বলেও মনে হচ্ছে না।

কোনও ট্রায়াল না হলেও, ঝামেলা কম হয়নি। অনেকগুলো কোর্ট অর্ডার আর শুনানির পর, স্টাইনার তাকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন।

ঘর, দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলেন স্টাইনার। চারপাশে তাকালেন তিনি। ঘর বলতে ছোট একটা কিউবিকল, কয়েকটা প্লাস্টিকের আসবাব, মেঝেতে আটকে রাখা একটা বিছানা আর একটা বৈদ্যুতিক বাতি। অন্তত পরিচিত তো জায়গাটা। অবশ্য সেটা ক্লেইবন বুঝতে পারবেন কিনা সন্দেহ।

মাঝে মাঝে অবশ্য মনে হয় লোকটা সব কিছু বুঝতে পারছে, তবে কখনও কিছু বলেন না তিনি। স্টাইনারকে চিনতে পারেন, তার সঙ্গও পছন্দ করেন। এই যেমন এখন, স্টাইনারকে দেখে হাসছেন ক্লেইবন। অবশ্য এই হাসিটা সবসময় তার মুখে লেগেই থাকে। হাসিটাকে একটা ব্যুহ হিসেবে ব্যবহার করেন তিনি, দুনিয়ার কাছ থেকে নিজের সব রহস্য আর গোপনীয়তা লুকিয়ে রাখেন।

স্টাইনার নড় করলেন, হ্যালো অ্যাডাম।

উত্তর পেলেন না। কেবল সেই হাসি আর নীরবতা! বিছানার পাশে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলেন স্টাইনার। বসার আগেই বুঝতে পারছেন যে লাভ হবে না কোনও। কিন্তু তাই বলে তো আর হাল ছেড়ে দেয়া যায় না। এইটুকু ক্লেইবর্নের প্রাপ্য।

যা হয়ে গেল তা নিয়ে কথা বলার সময় এসেছে। বললেন তিনি। কিন্তু ক্লেইবর্নের চেহারার কোনও পরিবর্তন হলো ন। তবে চোখের দৃষ্টিটা একটু পরিষ্কার হয়ে এল যেন। হয়তো এবার তিনি বুঝতে পারবেন। স্টাইনারকে ধীরে ধীরে কথা বলতে হবে। তাদের মাঝখানের সম্পর্কটা এখন আর দুই ডাক্তারের সম্পর্ক নেই, বরঞ্চ ডাক্তার আর রোগীর সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। তবে সত্যটা বলতেই হবে তাকে। আর সত্যটা হলোঃ দীর্ঘদিন নরম্যানের চিকিৎসা করার কারণে, নরম্যানের মাঝে নিজের ছায়া খুঁজে পেতে শুরু করেছিলেন ক্লেইবন। আস্তে আস্তে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন বেটসের মাঝে। দুজনেই মাতৃহীন, একা। নিজেদেরকে তারা এই হাসপাতালে আবদ্ধ বলে মনে করেন। হাসলেন। ক্লেইবন। এসব কথা আগের সেশনগুলোতে হয়েছে। এবার আরেকটু সামনে এগোতে চান।

আমার ধারনা, কিছুদিন যাবার পর তোমার মনে হচ্ছিল-ক্লেইবর্নের ভাগ্য, তার ভবিষ্যৎ এসব কিছু নির্ভর করছে নরম্যান বেটসের উপর। ওকে সুস্থ করা, সেটাকে নিয়ে একটা বই লেখা এসব করে তুমি তোমার জন্য এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারবে। মানসিক সুস্থতা নরম্যানকে মুক্তি দিবে, আর বইটা তোমাকে। এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু যখন নরম্যান পালিয়ে গেল, তখন সাথে নিয়ে গেল তোমার সব পরিকল্পনা। সে পালিয়ে গিয়েছে, তোমাকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য এখানে বন্দি রেখে!

নিশ্চয় তখন থেকে শুরু হয়েছিল সমস্যাটা। তোমার মনে হচ্ছিল, এখান থেকে পালাতে হলে তোমাকে নরম্যানের মতো হতে হবে। আমি জানি, তুমি ওকে ধরতে উদগ্রীব হয়ে ছিলে। কিন্তু অবচেতন মনে চাচ্ছিলে, ও যেন পালিয়ে যায়। তারপর যখন বেটসের পোড়া দেহটা দেখতে পেলে, তখন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল তোমার সব আশা। নিজের মনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে।

মাকে ছাড়া চলতে পারত না নরম্যান, তাই সে তার মায়ের রূপ নিয়েছিল। তুমি নরম্যানকে মরতে দিতে পারো না,তাই ওর রূপ নিলে তুমি। শুরু হলো। মাঝে মাঝে স্মৃতি হারিয়ে ফেলা। ক্লেইবর্ন মুখে মোনালিসার হাসি আর সেই সাথে স্ফিংসের নীরবতা। ভ্যানে যখন দেহটাকে দেখতে পেলে, তখনও তাই হয়েছিল। নরম্যানের রূপ ধরে তুমি চলে গিয়েছিলে ফেয়ারভিলে, খুন করেছিলে লুমিস দম্পতিকে। একটু বিরতি নিলেন স্টাইনার। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন আসার পর, তোমার গাড়ি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। লুমিসের দোকানের ক্যাশ রেজিস্টার থেকে চুরি হওয়া ডলারগুলো খুঁজে পেয়েছে ওরা। ঠিক ফ্লোর-বোর্ডের নিচে ছিল। মনে পড়ে?

ক্লেইবন চুপ করেই রইলেন, হাসিটা এখনও মিলিয়ে যায়নি। নোটগুলো তোমার গাড়িতে লুকিয়ে রাখার পর, জ্ঞান ফিরে পাও তুমি। এরপর দোকানে গিয়েছিলে। ভুল বললাম?

উত্তর এল না কোনও। চিত্রনাট্যটা তোমাকে বাধ্য করেছিল হলিউডে যেতে। ক্লেইবন হিসেবে তুমি চেয়েছিলে চলচ্চিত্রটা বানানো বন্ধ করতে। ইচ্ছা ছিল বুঝিয়ে শুনিয়ে কাজটা করা। কিন্তু নরম্যান হিসেবে, খুন করতেও আপত্তি ছিল না। তোমার।

হলিউডে থাকার সময়, নিজের উপর ভালোই নিয়ন্ত্রণ ছিল তোমার। তবে নরম্যানও ছিল তোমার সাথে। মেরি ক্রেনের মতো দেখতে জ্যান হার্পার, অকুস্থলের অনুকরণে বানানো সেট-এসব তার জন্য দায়ী। আমি ওখানকার অনেকের সাথেই কথা বলেছি-রয় অ্যামেস, জ্যান আর মেয়েটার অ্যাপার্টমেন্টে থাকা অন্য মেয়েটা, এদের সাথে। ওদের বলা কিছু কথা আমাকে পুরো ঘটনাটা বুঝতে সাহায্য করেছে। তবে কিছুটা আন্দাজও আছে। এই যেমন সুপারমার্কেটে তোমার নরম্যানকে দেখতে পাওয়া। হয়তো ভিজিনিকে দেখেতে পেয়েছিলে, হয়তো দৃষ্টিভ্রম ছিল। তবে ওই ঘটনার পর থেকে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রায় পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছিলে। প্রথমে জ্যানের সাথে ঝগড়া হলো, এরপর নরম্যান হয়ে হত্যা করলে বিড়ালটাকে।

তবে নরম্যানের সময় ফুরিয়ে আসছিল। সেই সাথে সব ধরনের অযৌক্তিক আচরণ করতে শুরু করেছিলে। চলচ্চিত্রটাকে বন্ধ করতেই হতো নরম্যানের। সেজন্য প্রজেক্টটার সাথে জড়িত সবাইকে খুন করতেও আপত্তি ছিল না তার।

টম পোস্টের সাথে ডিনার খাবার প্ল্যানটা ক্যান্সেল করেছিলে তুমি। আসলে তুমি না, করেছিল নরম্যান। এরপর ড্ৰিসকলের বাড়িতে গিয়ে সে তাকে খুন করে। যখন রয় অ্যামেস ওখানে গিয়ে পৌঁছায়, তখন ক্লেইবর্নকে সেখানে দেখতে পায়। কিন্তু আবার ভিজিনি আর জ্যানের কথা শোনার সাথে সাথে নরম্যান স্টুডিওতে ছুটে যায়। বাকিটা তো সবার জানা। অ্যামেস যদি পুলিশকে নিয়ে সময়মতো উপস্থিত না হতো তাহলে… চুপ করলেন স্টাইনার। ক্লেইবনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন, তিনি এখনও হাসছেন!

দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন স্টাইনার। পরে আবার কথা হবে। বলতে বলতেই বুঝতে পারলেন, আরও একবার কেন, হাজারবার কথা বলেও কোনও লাভ হবে না। ক্লেইবর্নের হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা নৃশংসতাকে স্পর্শই করতে পারেননি তিনি। হয়তো এই নৃশংসতার কোনও ওষুধ নেই, হয়তো…হয়তো এই সমস্যার কোনও সমাধান নেই। কিন্তু তাই বলে হাল ছাড়বেন না তিনি। যতক্ষণ শ্বাস আছে, চেষ্টা করে যাবেন।

দেখা হবে। বললেন তিনি।

তখনও হাসছেন ক্লেইবন।

.

৩৭.

ক্লেইবর্নের কানে স্টাইনারের বলা একটা শব্দও প্রবেশ করেনি। আর স্টাইনার চলে যাবার পর থেকে কেবল নিজের অন্তরাত্মার কথাই শুনছেন তিনি।

তিনি অ্যাডাম ক্লেইবন…অ্যাডাম…প্রথম মানব। ক্লেইবন…কাদা থেকে যার জন্ম।

ঈশ্বর তাকে নিজ হাতে বানিয়েছেন। ঈশ্বর সবাইকে বানিয়েছেন, এমনকী নরম্যান বেটসকেও!

আমরা সবাই তার সন্তান। আমি…নরম্যান…আমরা সবাই। একসময় ওকে আমিই দুনিয়ার হাত থেকে আগলে রেখেছিলাম। আমরা সবাই ভাই ভাই…এটা আমার না, ঈশ্বরের কথা! ঈশ্বরের সব কথা আমাদের মানতে হবে।

ঈশ্বর বলেছেন, প্রতিশোধ কেবল আমার জন্য। কেবল আমিই তা নেবার ক্ষমতা রাখি।

ক্লেইবর্ন মারা যেতে পারে, তবে নরম্যান বেঁচে থাকবে। ঈশ্বর তাকে রক্ষা করবেন।

কেননা সে অশুভর বিরুদ্ধে ঈশ্বরের অস্ত্র।

নরম্যান বেটস অমর…

.

পেশায় ডাক্তার, মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ জন গ্রহণ করেন সিরাজগঞ্জ শহরে। এরপর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ঢাকা। রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজ থেকে পাশ করার পর ভর্তি হন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারী হাসপাতালে কর্মরত আছেন।

লেখালেখি শুরু করেন শখের বশে। রহস্য পত্রিকায় তার অনূদিত বেশ কিছু ছোটগল্প

প্রকাশ পাবার পর, প্রথম অনূদিত বই হিসেবে প্রকাশিত হয় ট্রল মাউন্টেন।

তারপর একে একে প্রকাশ পায় স্টোরিজ, স্যান্ডস্টম, রামেসিসঃ সান

অফ লাইট,আর্টেমিস ফাউল এবং মৌলিক রচনা রাত এগারটা। সাইকো-২

তার সপ্তম অনুবাদগ্রন্থ।

টুল মাউতলা।

পাল অফ লাক।

আর্টেমিস ফাউল।

4 Comments
Collapse Comments

Nice book…

If the stories will on only one i like the book more

Awesome

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *