১. দে তর বাপরে একটা ট্যাহা

একজন আলি কেনানের উত্থান-পতন – উপন্যাস – আহমদ ছফা
উৎসর্গ – শ্ৰী চিত্তরঞ্জন সাহা

দে তর বাপরে একটা ট্যাহা।

ভিখিরিরা সাধারণতঃ ভিক্ষাদাতাকেই বাবা বলে ডাকে। আলি কেনান দাবী করে বসলো সম্পূর্ণ উল্টো। অর্থাৎ সে ভিক্ষাদাতার বাবা এবং একটা টাকা তাকে এখখুনি দিয়ে দিতে হবে। একেবারে যাকে বলে কড়া নির্দেশ। এই চাওয়ার মধ্যে রীতিমতো একটা চমক আছে।

লোকটা সদ্য ঘাটের লঞ্চ থেকে এই বুঝি নেমেছে। পরণে ময়লা পাজামা পাঞ্জাবি। দোহারা চেহারার ফুলো ফুলো মুখের মানুষটি। আলি কেনানের মুখ থেকে সদ্য নির্গত বন্দুকের গুলির মতো শব্দ কটি শুনে কেমন জানি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। গোল গোল সরল চোখ দুটি পাকিয়ে তাকায়। আলি কেনান ইত্যবসরে ভাটার মতো জ্বলজ্বলে চোখ দুটো লোকটার চোখের ওপর স্থাপন করে আরো জোরের সাথে উচ্চারণ করে, কইলামনা তর বাপরে একটা ট্যাহা দিয়া দে।

লোকটা বোধহয় সারারাত লঞ্চে ঘুমোতে পারেনি। চোখেমুখে একটা অসহায় অসহায় ভাব। অথবা এমনও হতে পারে কোর্টে তার মামলা আছে। যাহোক লোকটি দ্বিরুক্তি না করে ডান হাতের প্রায় ছিঁড়ে যাওয়া ব্যাগটা বাঁহাতে চালান করে পকেট থেকে একখানা এক টাকার মলিন বিবর্ণ নোট বের করে আলি কেনানের হাতে দিয়ে ফুটপাথ ধরে হেঁটে চলে যায়। আলি কেনানের জীবনের এই প্রথম ভিক্ষাবৃত্তি। তাতে আশানুরূপ সফল হওয়ায় শরীরের মনে একটা তড়িৎ প্রবাহ খেলে গেলো। শুধুমাত্র একটা ধমকের জোরে পরের পকেট থেকে টাকা বের করে আনা যায়, আলি কেনানের জীবনে এটা একটা অভিনব ঘটনা। সেদিন থেকেই তার জীবনে নতুন একটা অধ্যায়ের সূত্রপাত্র হলো।

আলি কেনান গত দুদিন ধরে কিছু খায়নি। শহরের কলের পানি ছাড়া ভাগ্যে তার অন্য কোনো বস্তু জোটেনি। গত তিনমাস থেকে চম্পানগর লেনের একটি হোটেলে সে সকালের নাস্তা এবং দুবেলার খাবার খেয়ে আসছিলো। প্রথম দুমাস সে নগদ পয়সা দিয়ে খেয়েছে। সেই সুবাদে হোটেল মালিকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিলো। হোটেল মালিক মানুষটি ভালো। দিলে তার রহম আছে। আলি কেনানকে পুরো একটা মাস বাকিতে নাস্তা এবং খাবার সরবরাহ করেছে। কিন্তু পুরো এক মাস পার হওয়ার পরও যখন আলি কেনান একটা পয়সা উসুল করতে পারলো না, হোটেল মালিক জানিয়ে দিলো, সে গত একমাসের টাকা আল্লার ওয়াস্তে লিল্লাহ দিয়েছে বলে ধরে নেবে। কিন্তু আরেকটা বেলাও তাকে খাওয়াবার ক্ষমতা হোটেল মালিকের নেই।

বিপদ কখনও একা আসে না। আলি কেনান ঘুমোতে চম্পানগর লেনেরই একটি মেসে। সেই মেসে বোর্ডারের সংখ্যা ছিলো দশ বারো জন। তাদের কেউ প্রেসের কম্পোজিটর, কেউ কাটা কাপড়ের ব্যবসায়ী, ফেরিঅলা, দোকান কর্মচারী এমন কি একজন ঠেলাগাড়ীর চালকও ওই মেসের সম্মানিত সদস্য ছিলো।

এই সমস্ত মানুষের প্রতি আলি কেনানের সীমাহীন অবজ্ঞা। কপালের ফের, তাকে এই সব মানুষের সাথেই দিন কাটাতে হচ্ছে। মেসের একত্রিশ টাকা আট আনা ভাড়া সে প্রথম দু মাস নিয়মিতই পরিশোধ করেছে। কিন্তু তৃতীয় মাসে তার অবস্থা ভয়ঙ্কর শোচনীয় হয়ে দাঁড়ালো। পয়সার অভাবে মুখের দাড়িটা কাটাতে পারে, জামাকাপড় পরিষ্কার করতে পারে না। তার চেহারাটাও বন মানুষের মতো হয়ে গেলো। মেসে সদস্যরা প্রতিদিন টাকা দাবি করে, সে দিতে পারে না। একটা বাজে অবস্থার মধ্যে পড়ে গেলো সে। একদিন ঠ্যালাঅলাটি বিরক্ত হয়ে বললো, কি মিয়া বাই অমন হাতির পারা গতর লইয়া বইয়া বইয়া দিন কাটান। আপনের শরমও করে না। লন আগামীকাল থেইক্যা আমার লগে গাড়ি ঠেলবেন। একতিরিশ ট্যাহা আট আনা ভাড়া আমি দিমু।

কথাটা শুনে আলি কেনানের পায়ের তলা থেকে ব্ৰহ্মতালু পর্যন্ত জ্বলে উঠেছিলো। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে মেসের অন্য সকলের সামনেই ঠ্যালাঅলাকে একটা চড় দিয়ে বসে। তার ফল আলি কেনানের জন্য ভালো হয়নি। তাকে তো উল্টো মার খেতেই হয়েছে, তদুপরি বিছানা বালিশ বেঁধে নিয়ে সে রাতেই মেস ত্যাগ করতে হয়েছে। শহরে তার যাওয়ার মতো কোনো জায়গা ছিলো না। দু দুটো রাত বাধ্য হয়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘুমোতে হয়েছে। বাঘের মতো মশার কামড় খেয়ে আলি কেনান তার সহ্য শক্তির শেষ সীমায় এসে পৌঁছেছিলো। শরীর নড়াচড়া করার বিশেষ শক্তি ছিলো না। পুরো দুটো দিন পার্কে বসে গালে হাত রেখে আপন দুর্ভাগ্যকে ধিক্কার দিতে হয়েছে। একি জীবন হয়েছে আলি কেনানের! দুদিন পেটে দানাপানি পড়েনি। তৃতীয় দিনে অন্য কোনো উপায়ান্তর না দেখে প্রথমেই যে মানুষটার সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো, তার কাছেই একটা টাকা দাবি করে বসলো।

তখন চলছিলো উনিশ শো উনসত্ত্বর সাল। আধঘণ্টা মুখে ফেনা তুলে চীৎকার করে একটা সিকি পাওয়া গেলে ভিখিরি মনে করতো আকাশের চাঁদ পাওয়া গেছে। অথচ আলি কেনান মাত্র একটা ধমকের জোরে একজন অচেনা অজানা মানুষের পকেট থেকে আস্ত একটা টাকা বের করে আনতে পারলো, তার জীবনের যাবতীয় দুর্ভাগ্যের মধ্যেও এটা একটা সান্ত্বনার বিষয় বটে। কি একখানা সুন্দর জীবন ছিলো আলি কেনানের। বর্তমান অবস্থার সঙ্গে সে যখন অতীতের তুলনা করে, আলি কেনান ভাবে বাবা আদমের মতো তাকেও স্বর্গ থেকে এই কষ্টের দুনিয়ায় ছুঁড়ে দেয়া হয়েছে।

আলি কেনান থাকতো আলিশান বাড়িতে। সে ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর সাহেবের একেবারে খাস পিয়ন। নামে পিয়ন বটে, কিন্তু দাপট ছিলো ভীষণ। গোটা গভর্নর হাউসে মাননীয় গভর্নরের পরে আলি কেনান ছিলো সবচাইতে শক্তিশালী মানুষ। তার কাছ থেকে ছাড়পত্র না পেলে কারো পক্ষে গভর্ণর সাহেবের কাছে পৌঁছার অন্য কোনো পথ ছিলো না। আলি কেনানের নাম সেই সময়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠির বিভিন্ন মহলে রীতিমতো জল্পনা-কল্পনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। আলি কেনান সুন্দর চেহারার মানুষ ছিলো না। গলার আওয়াজটিও ছিলো ভীষণ কর্কশ। তার চেহারা সুরত কথাবার্তায় কোনো লালিত্য, কোনো কোমলতার লেশ পর্যন্ত ছিলো না। তাকে ডাকাতের মতো দেখাতো। সাধারণতঃ সে হাসতো না। হাসতে দেখলে মনে হতো ভেতর থেকে ঠেলে ঠেলে ইতরতা প্রকাশ পাচ্ছে। আলি কেনানের মতো এমন একজন মানুষ কোন্ বিশেষ গুণে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণরের এমন পেয়ারা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো, তা একটা রহস্য হয়ে উঠেছিলো। কেউ কেউ তাকে নব্য রাশপুটিন বলে মনে করতো।

আলি কেনান সম্পর্কে নানাজনে নানা কথা বলতেন। তার মধ্যে যে গল্পটি সর্বাধিক পরিচিত লাভ করেছিলো সেটি এ রকম :

একবার গভর্ণর সাহেব ভোলা শহরে মিটিং করতে গিয়েছিলেন। মফস্বলের ছোট্টো মহকুমা শহর। লঞ্চ পাড়ে ভেড়ানোর মতো কোনো জেটি ছিলো না। লঞ্চকে নদীর একরকম মাঝখানে থামতে হতো। যাত্রীরা নৌকোয় করে ডাঙ্গায় উঠতো। মহকুমা প্রশাসন গভর্ণর সাহেবের মতো মানুষের জন্যে কূলে নামার কোনো দ্র ব্যবস্থা করতে পারলো না। তাই লঞ্চ থেকে গভর্নর সাহেবকেও একটি বড়ো সরো নৌকোয় উঠে যেতে হলো। তিনি একা ছিলেন না, তার সঙ্গে ভোলা থেকে নির্বাচিত মাননীয় গণপরিষদ সদস্যও ছিলেন। সদস্য সাহেব রোদ চড়া থাকায় গভর্ণর সাহেবের মাথার ওপর ছাতা মেলে ধরেছিলেন।

সেটা এক অদ্ভুত পরিস্থিতির কাল। রাজনৈতিকভাবে গভর্নর সাহেবের দিনকাল খুব সুবিধের যাচ্ছিলো না। সর্বত্র সরকার বিরোধী আন্দোলন বেশ জোরালো হয়ে উঠেছিলো। এই ভোলা শহরেও তাঁকে বাধা দেয়ার জন্য এতো মানুষ সমবেত হতে পারে, সে কথা আগাম চিন্তা করলে তিনি একটু প্রস্তুতি গ্রহণ করেই আসতেন। তিনি তো লঞ্চ থেকে নেমে তীরের দিকে যাবেন। তীরে তাকে বাধা দেয়ার জন্য এতো জনতা সমবেত হয়েছে, মানুষের সেই জমায়েত দেখে মহকুমা শহরের অল্পস্বল্প পুলিশের ভয়ে জড়োসড়ো অবস্থা। তারা জনগণের আক্রমণ থেকে গভর্ণর সাহেবকে উদ্ধার করার বদলে নিজেরা কিভাবে পালিয়ে আত্মরক্ষা করবে, সে প্রচেষ্টায় ব্যস্ত ছিলো। ওদিকে গভর্ণর সাহেব নৌকায় উঠে বসেছেন। ডাঙ্গার মানুষ বাঁশ, কাঠ, ইট পাটকেল যা হাতের কাছে পাচ্ছে গভর্ণর সাহেবের নৌকোয় দিকে ছুঁড়ে মারছে। ভোলাতে গভর্ণর সাহেবের নিজের দলের মানুষ কম ছিলো না। ওই প্রাণ বাঁচানোর দায়ে তাদেরও নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে মজা দেখতে হচ্ছিলো। মহকুমা হাকিমের করবার কিছু ছিলো না। তিনি গুলি করার নির্দেশ দিতে পারতেন। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাই ছিলো বেশি।

গভর্ণর সাহেবতো নৌকায় উঠেছেন। ডাঙ্গা থেকে অবিরাম ইট পাটকেল ছুটে আসছে। লঞ্চে ফেরত যাবেন সে উপায়ও নেই। মাঝি মাল্লারাও সবাই জখম হয়ে গেছে। এক পর্যায়ে কপালে একটা ভাঙ্গা ইট লেগে তিনি নিজে জখম হয়ে গেলেন। কারো কারো মতে তিনি নদীতে মাথাঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। গণ পরিষদের সদস্য সাহেব ভোলার মানুষ, গাঙ তার কাছে পান্তা ভাত। ছাতাটা ফেলে দিয়ে মাত্র একটা ডুব দিয়ে মাথা বাঁচাতে তাঁর কোনো কষ্টই হয়নি। সেইদিনই গভর্ণর সাহেবের সলিল সমাধি ঘটে যেতে পারতো।

আলি কেনানরা তিন ভাই মাছ ধরা ডিঙি নৌকায় চড়ে ঘরে ফিরছিলো। গভর্ণর সাহেবের এতবড় বিপর্যয় দেখে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ডিঙিতে উঠিয়ে নেয়। তারপর জনতার ইট পাটকেল অগ্রাহ্য করে তড়িৎ গতিতে নৌকা চালিয়ে গভর্ণর সাহেবকে কোলে করে ডাঙ্গায় নামায় এবং পুলিশ বেষ্টনির ভেতর নিয়ে আসে। গভর্ণর সাহেব ফেরার সময় আলি কেনানকে সঙ্গে করে ঢাকা নিয়ে আসেন। ঢাকায় এসে ভোলার সমস্ত পুলিশ অফিসারদের বরখাস্ত এবং মহকুমা হাকিমের বদলির নির্দেশ দিয়ে বসেন। আর আলি কেনানকে খাস পিয়ন হিসেবে গভর্নর হাউসে পাকাঁপোক্তভাবে বহাল করেন।

সেই থেকে আলি কেনান গভর্ণর সাহেবের প্রিয় সখা পিয়ন যাই বলা হোক না কেনো, সবচাইতে সর্বশক্তিমান ব্যক্তির দ্বিতীয় সত্তা হিসেবে ষোলকলায় বাড়তে থাকে। গভর্ণর সাহেব মফস্বলে সফরে যাওয়ার সময় তার বাক্স পেটরা গুছিয়ে দিতো আলি কেনান। পানের সঙ্গে জর্দা এবং জয়পুরি মশলা ঠিকমতো নেয়া হয়েছে কিনা সে হিসেব রাখতো। গভর্ণর হাউজে বেয়ারা, খানসামা, আরদালির অন্ত ছিলো না। কিন্তু আলি কেনানের পজিশন ছিলো আলাদা। তার ডাকে সবাই বলির পাঠার মতো থর থর করে কাঁপতো। সে গভর্ণর সাহেবের খাওয়ার সময় ঠায় দাঁড়িয়ে সাহেবের খাওয়া দেখতো। গভর্ণর সাহেব অভুক্ত খাদ্য দ্রব্য আলি কেনানকে খেতে দিতেন।

আলি কেনান গভর্ণর সাহেব ঘুমোলে তাঁর ব্যক্তিগত টেলিফোন কলগুলো রিসিভ করতো। কোনো কারণে সাহেবের মন খারাপ থাকলে বা মেজাজ খিঁচড়ে গেলে টেলিফোনের অত্যাচার থেকে তার নির্জনতা রক্ষা করাও তার একটা দায়িত্ব ছিলো। গভর্ণর সাহেবের হামসায়াদের মধ্যে কেউ কেউ আলি কেনানকে বিশেষ পছন্দ করতো না। গভর্ণর সাহেবের একটি বাঁকা বাঁশের লাঠি ছিলো। সেটিকেও ঘনিষ্ঠদের অনেকে মনে করতেন একেবারে বেমানান। লাঠিটির কোনো ছিরিছাঁদ ছিলো না। অনেক সময় ভিখিরিরাও এ ধরনের লাঠি ব্যবহার করে। বন্ধু বান্ধবেরা মনে করতেন গভর্ণর সাহেবের লাঠিটি অধিক সুন্দর এবং সুগঠিত হওয়া উচিত। সোনারুপোর কারুকার্যমণ্ডিত চন্দন কাঠের লাঠি হলেই গভর্ণর সাহেবের জন্য মানানসই হয়। এরকম একটি লাঠি সগ্রহ করে দেয়ার অঢেল মানুষ ছিলো। গভর্ণর সাহেব ইচ্ছে করলেই এরকম একটা লাঠি আপনি এসে হাজির হতো। কিন্তু তাঁকে সে ইচ্ছে কখনো প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। দু একজন অন্তরঙ্গ বন্ধু, অবসর মুহূর্তে এদিকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি তাদের ধন্যবাদ দিয়ে একটি গল্প শুনিয়ে দিয়েছেন। গল্প নয় আসলে সত্য ঘটনা। গভর্ণর সাহেবের ওকালতি জীবনের মাঝামাঝি সময়ে এই বাঁশের লাঠির গুণে একবার বিষধর সাপের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। লাঠিটিকে যেমন তেমনি আলি কেনানকেও মানুষ গভর্ণর সাহেবের অবিচ্ছিন্ন অঙ্গ হিসেবে মেনে নিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলো। আলি কেনান যতো কর্কশ এবং রুঢ় ভাষী হোক না কেনো তার বিষয়ে ইজ্জত সম্মান মান অপমানের প্রশ্ন উত্থাপনের কোনো প্রশ্নই হয় না।

ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি, কেবিনেটের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ আমলা, দলের নেতা, উপনেতা সকলের সঙ্গেই সে তেজের সঙ্গে তার ভোলার আঞ্চলিক ভাষাটিতেই সওয়াল জওয়াব করতো। তার ঔদ্ধত্য কতোদূর বেড়ে গিয়েছিলো- সে সম্পর্কেও একটা কাহিনী সর্বস্তরে পরিচিতি লাভ করেছিলো। নানা জিভের ঘষায় মূল কাহিনীটায় নানা রঙ লেগেছিলো। তবে আসলে যা ঘটেছিলো তার হুবহু বয়ান এরবম :

একবার হোম মিনিস্টার ওয়াজির হোসেন গভর্ণর সাহেবকে টেলিফোন করেছিলেন । তিনি তখন খাস কামরায় আরাম করছিলেন। আলি কেনান টেলিফোন ধরে জিজ্ঞেস করলো,

হ্যালো কেডা কইতাছেন? মন্ত্রী সাহেব মনে মনে বিরক্ত হলেন। তবু বিলক্ষণ জানতেন যে রাজদ্বারে যেতে হলে দ্বারীর লাঞ্ছনা শিরোধার্য করতে হয়। আলি কেনান বললো,

সাব কি কইবার চান কন? হোম মিনিস্টার সম্ভ্রান্ত বংশের সন্তান এবং নরম জবানের মানুষ। তিনি কণ্ঠস্বরে একটু গুরুত্ব আরোপ করে বললেন,

আমি হোম মিনিস্টার ওয়াজির হোসেন। বড়ো সাহেবের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। তুমি লাইনটা একটু দেবে? আলি কেনান দাপটের সঙ্গে জবাব দেয়,

না সাব অহন কতা অনবনা। সাব তিনঘণ্টা মিটিঙ কইরা হয়রান অইয়া অহন একটু আরাম করবার লাগছেন। কতা অইবনা। পরে টেলিফোন করেন।

হোম মিনিস্টার ফের অনুরোধ করেন,

দেখো না বাবা আলি কেনান, কথা বলাটা আমার বড়ো প্রয়োজন।

আপনের প্রয়োজন সাব আপনের লগে। আমি কি করবার পারি । সাব বিরক্ত না করবার কইছেন । হোম মিনিস্টার শেষ পর্যন্ত মরিয়া হয়ে বললেন,

বাবা আলি কেন তুমি একবার চেষ্টা করে দেখো না ।

এবার আলি কেনান চূড়ান্ত ক্ষেপে উঠলো,

সাব মিনিস্টার অইছেন আপনে, কিন্তু কুনু বিবেচনা আপনের নাই। আমি আপনের কতা রাখুম কেরে আপনে কি আমার কতা রাখছেন। চাকরিডা দিছেন আমার ভাগিনারে? যান সাবের লগে কতা অইবনা। যা পারেন, করেন গিয়া।

ওয়াজির হোসেন সাহেব আলি কেনানের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ ব্যবহার সম্পর্কে রীতিমতো লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। গভর্ণর সাহেব কোনো আমলই দেননি। তিনি ওয়াজির হোসেন সাহেবকে ডেকে বলেছিলেন, ওয়াজির হোসেন সাহেব আপনি আলি কেনানের কথায় কান দেবেন না। সে যে কখন কি বলে আর করে তার কি ঠিক আছে? বেটা একনম্বরের পাগল। ওয়াজির হোসেন সাহেব গভর্ণর সাহেবের কথায় তুষ্ট না হয়ে বলতে যাচ্ছিলেন,

স্যার এভাবে যদি একজন পিয়ন অপমান করে, তবে…

গভর্ণর সাহেব লালচোখ মেলে তাকিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, তবে কি মন্ত্রীগিরি ছেড়ে দেবেন? তারপর কিন্তু ওয়াজির হোসেন সাহেব আর কিছু বলেননি। গভর্ণর সাহেবের ভাষায় আলি কেনান ছিলো পাগল, তবে খুব হিসেবের পাগল। মন্ত্রী সেক্রেটারীদের ওপর প্রভাব খাঁটিয়ে অনেক আত্মীয় স্বজনকে সরকারি চাকরিতে ঢুকিয়ে নিয়েছে। তার আত্মীয় পরিজনদের মধ্যে লেখাপড়া জানা যোগ্য কেউ ছিলো না। তাই একান্ত ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কাউকে পিয়ন, দারোয়ান আরদালির ওপরে বসাতে পারেনি। কেবল ফুফাতো বোনের ছেলেটি আই এ পরীক্ষায় ফেল করেছিলো। আলি কেনানের রক্ত সম্পর্কিতদের মধ্যে এই ভাগ্নেটিই ছিলো সবচাইতে উচ্চ শিক্ষিত। ভালোমতো উপরি পাওনা আছে এরকম একটা কেরানির চাকুরীর ব্যবস্থা করবে এটাই ছিলো তার আকাঙ্খ। মিনিস্টার ওয়াজির হোসেনের দপ্তরে এরকম একটা চাকুরী খালিও ছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিনিস্টার গাদ্দারি করায় ভাগ্নেটির চাকুরী হলো না। এটা আলি কেনানের একটা বিরাট পরাজয়ও বটে। তার শোধ নিতে আলি কেনান ভুলেনি।

আলি কেনানেরা ছিলো সাত ভাই। ভাইদের মধ্যে একমাত্র সেই সামান্য লেখাপড়া করেছিলো। অন্য ভাইরা চাষ করতো। ধান ফলাতে পাট ফলাতো। আলি কেনান গভর্ণর হাউজে বহাল হওয়ার আগেও তাদের সাত সাতটি হাল ছিলো। গোটা গ্রামের মধ্যে আলি কেনানের পরিবারটা ছিলো সবচাইতে সম্পন্ন এবং পরাক্রমশালী। তাদের হালের বলদগুলো ছিলো মোটা এবং তাজা। লোকে দূর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতো। চর অঞ্চলে তাদের নিবাস। সেখানে খুন জখম দাঙ্গা হাঙ্গামা এসব নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। জরু এবং জমির মধ্যে মানুষ জরুর চাইতে জমিকে অধিক মূল্য দিতো সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। যার লাঠির জোর বেশি, চরের জমি তার দখলে থাকবে এটা দীর্ঘদিনের অলিখিত কানুন। আলি কেনানেরা ছিলো সাত ভাই। চাচাতো জ্যাঠাতো মিলিয়ে একডাকে পঞ্চাশজনের মতো জোয়ান মরদ তারা বের করে আনতে পারতো। যেদিকে যেতো সবকিছু কেটে চিরে ফাঁক করে ফেলতো। নিজেদের গ্রামে নয় শুধু আশেপাশের গ্রামের মানুষও তাদের চর অঞ্চলের ত্রাস মনে করতো। আলি কেনানেরা সাম্প্রতিক দাঙ্গায় দুজন মানুষকে কুপিয়ে খুন করেছে। কিন্তু সাক্ষী প্রমাণের অভাবে দারোগাকে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করতে হয়েছে।

আলি কেনানের চাকুরী প্রাপ্তির সুযোগে তার আত্মীয় স্বজনের প্রতাপ গ্রামে হাজার গুণ বেড়ে গেলো। কারো টু শব্দটি করার যো রইলো না। আলি কেনান ভূমি রাজস্ব মন্ত্রীকে ধরে বিলকে বিল সরকারী খাস জমির বন্দোবস্ত নিয়ে ফেললো। আগেও তারা জোরে জবরে এসব জমি ভোগ দখল করতো। তবে কাজটি অতো সোজা ছিলো না। দাঙ্গা হাঙ্গামা করে দখল নিতে হতো। খুন জখম এসব ছিলো অনিবার্য ব্যাপার। অপরকে খুন করতে গেলে মাঝে মাঝে নিজেরও খুন হওয়ার ঝুঁকি সইতে হতো। থানা পুলিশ করতে হতো। মাঝে মাঝে মামলা হাইকোর্ট অবধি গড়াতো।

সরকারি অনুমোদনের বলে কোনো বড় ধরনের ঝুঁকি গ্রহণ ছাড়া তারা বিশাল ভূসম্পত্তির অধিকারী হয়ে বসলো। তাদের বাধা দেয়ার মতো কোনো শক্তি ছিলো না। থানা পুলিশ মায় মহাকুমা হাকিম পর্যন্ত চোখ কান বুজে থাকতেন। গভর্ণর হাউজে আলি কেনানের প্রতিপত্তির কথা গ্রামে পঞ্চাশগুণ বেশি করে প্রচারিত হয়েছে। সত্যি সত্যি গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছিলো তার পরিবারের বিরাগ ভাজন হলে আলি কেনান লাট সাহেবকে বলে ফাঁসি পর্যন্ত দেয়ার ক্ষমতা রাখে। গ্রামের লোকের ছিলো জানের ভয়, আর আমলাদের চাকরির। আলি কেনানের বাবা পঁয়ষট্টি বছর বয়সে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হয়ে গেলো। চাচাতো জেঠাতো দুভাই মৌলিক গণতন্ত্রের সদস্য হয়ে বসলো। তখন তাদের আর পায় কে? গোটা ইউনিয়নের সালিশ বিচার সবকিছু করার অধিকার আলি কেনানের পরিবারের একচেটিয়া হয়ে গেলো। ঢাকার গভর্ণর হাউজের অনুকরণে ভোলা মহকুমার তামাপুকুর গ্রামে একটি ক্ষুদ্র ক্ষমতা কেন্দ্র তারা তৈরি করে ফেললো। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব যেমন ইসলামাবাদে বসে পূর্ব পাকিস্তানের শাসন কর্ম পরিচালনা করতেন। আলি কেনানও তেমনি ঢাকার গভর্ণর হাউজে বসে তামাকুপুর গ্রামের যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতো।

একবার আলি কেনানের বোনের সঙ্গে কি কারণে তার ভগ্নিপতির ঝগড়া বাধে। বলাবাহুল্য, তাদের সাত ভাইয়ের বোন ওই একটিই এবং সে সকলের ছোটো। ভাইয়েরা তাকে ভীষণ আদর করতো। পিতৃ পরিবারের উত্তরোত্তর শ্রী বৃদ্ধিতে বোনটির চোটপাট ভালোরকম বেড়ে গিয়েছিলো। একদিন কি কারণে জানা যায়নি ভগ্নিপতি একটা পীড়ি দিয়ে আঘাত করে বোনের মাথাটা ফাটিয়ে দেয়। গ্রামদেশে এই জাতীয় সংবাদ প্রচারিত হতে বেশি সময় নেয় না। শুনে ভাইয়েরা লাঠি হাতে বোনের শ্বশুর বাড়ির দিকে ছুটে যায়। তাদের বাড়ি অবধি যেতে হলো না। বাজারের কাছেই ভগ্নিপতির সাথে মুলাকাত হয়ে যায়। তারা ভগ্নিপতিকে সাপের মতো পেটাতে থাকে। এদিকে বোনের কাছে খবর যায়, যে তার ভাইয়েরা এসে সোয়ামীকে পেটাচ্ছে। বোন লাজ শরম ত্যাগ করে একেবারে প্রকাশ্য রাস্তায় ছুটে . এসে ভাই এবং খসমকে মাঝখানে দাঁড়ায়। ভাইদের হাত থেকে লাঠি কেড়ে নেয়। আহত সোয়ামীর দিকে তাকিয়ে তার বুঝি একটু দয়া হয়, কিন্তু ভয় দেখাতে ভুলে না। ভাইজান এই হারামীর পুতরে মাইরা হাত গন্ধ কইর‍্যা কি লাভ। তার বদলে বড় ভাইজানরে একখানা চিঠি লেইখ্যা দেন। ভাইজান লাট সাবরে কইলে সৈন্য আইন্যা হের সাত গুষ্ঠিরে হাগাইয়া ছাড়বো। আসলেও মানুষ বিশ্বাস করতো, আলি কেনান তামাপুকুর গ্রামে সূর্য ওঠাতে আর ডোবাতে পারে।

আলি কেনানের দিনগুলো দিব্যি কাটছিলো। এই সময়ে সে গভর্ণর সাহেবের মতো দাড়ি রেখে দিয়েছে। একটা জিন্নাহ টুপি কিনে পরতে আরম্ভ করেছে। কালো কাপড় কিনে একটা শেরওয়ানী বানিয়ে নেয়ার কথাও তার মনে উদয় হয়। কিন্তু অতোটুকু সাহস করে উঠতে পারেনি। তাছাড়াও ইদানিং মনে একটা গোপন বাসনা হানা দিতে আরম্ভ করেছে। সে স্থির করেছে, আগের সে পুরোনো বউ দিয়ে তার চলবে না। সবদিক দিয়ে যোগ্য দেখে তার আরেকটা বিয়ে করা উচিত। সর্বক্ষণ বড়ো সাহেবের সঙ্গে থাকতে হয় বলে এ আকাঙ্খটি তার অপূর্ণ রয়ে গেছে।

সকলের দিন সমান যায় না। আলি কেনান ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি যে অদূর ভবিষ্যতে নীল নির্মেঘ আকাশে তার জন্য বজ্রপাত অপেক্ষা করছিলো। ঘটনাটি আচমকা ঘটে গেলো।

আরেকদিন গভর্ণর সাহেব দীর্ঘ চারঘণ্টা ধরে তাঁর দলের নেতাদের নিয়ে মিটিং করার পর একটু আরাম করে নিচ্ছিলেন। আলি কেনান অন্যান্য দিনের মতো টেলিফোনের গোড়ায় বসে ঝিমুতে ঝিমুতে নতুন বিয়ে করার বিষয়টি চিন্তা করছিলো। এমন সময়ে টেলিফোনটা তরুণ বজ্রের মতো চিৎকার করে উঠলো। আলি কেনান ভীষণ বিরক্ত হলো। আজকাল সে টেলিফোন কল রিসিভ করার সময় ভীষণ বিরক্তি বোধ করে। গভর্ণর সাহেবকে টেলিফোন করে যারা তার গভীর ভাবনায় বাধার সৃষ্টি করে, মনে মনে তাদের কুত্তার বাচ্চা বলে গাল দেয়। তবু রিসিভার কানে তুলে জিজ্ঞেস করলো, কেডা? ওপাশ থেকে গভর্ণর সাহেবের পিএ জানালেন, সাহেবকেই তার চাই। আলি কেনান তার চিরাচরিত প্যাটেন্ট জবাবটাই দিলো, বড়ো সাব আরাম করবার লাগছেন। অহন কতা অইবনা।

পি এ বললো, অত্যন্ত জরুরি। ইসলামাবাদ থেকে প্রেসিডেন্ট সাহেব কথা বলবেন। আলি কেনান এই পিএটিকে দুচোখে দেখতে পারতো না। সে মনে করতো তাকে সময়ে অসময়ে বিরক্ত করার জন্যই এই পিএ বেটার জন্ম হয়েছে। সে তার গ্রাম্য কুটবুদ্ধি দিয়ে হিসেব করলো, প্রেসিডেন্ট সাহেবের টেলিফোন ফেল করিয়ে দিলে পিএ ব্যাটার চাকুরি যাবে, তার কি!

পিএ সাহেব বারবার অনুরোধ করে আলি কেনানকে রাজি করাতে না পেরে সমস্ত প্রটোকল ভেঙে গভর্ণর সাহেবের শয়ন কক্ষে প্রবেশ করলো। তারতো চাকুরী এবং ঘাড় দুটো বাঁচানো প্রয়োজন। তিনি অনেকটা চীকার করেই ঘোষণা করলেন,

স্যার ইসলামাবাদ থেকে প্রেসিডেন্ট সাহেবের কল। গভর্ণর সাহেব পাজামার। রশিটি খুলে দিয়ে দিবান্দ্রিা উপভোগ করছিলেন। প্রেসিডেন্ট সাহেবের কল শুনেই হন্তদন্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন। পাজামার রশি বাঁধার কথাটিও ভুলে গিয়েছেন। তাড়াতাড়ি রিসিভার তুলে নিলেন। প্রেসিডেন্ট সাহেব তাঁকে কর্তব্যে গাফিলতির জন্য অনেকক্ষণ ধরে উর্দু, পশতু এবং ইংরেজি মিশিয়ে চৌদ্দ পুরুষ তুলে গাল দিলেন। গভর্ণর সাহেব থেমে থেমে ‘মাই প্রেসিডেন্ট যেয়াদা সুর হো গয়া’ শব্দ কটি উচ্চারণ করলেন। আর ওপাশ থেকে অজস্র ধারায় গালাগালির স্রোত প্রবাহিত হতে থাকলো। ঘণ্টাখানিক পরে টেলিফোন রেখে গভর্ণর সাহেব পিএকে তলব করলেন। পিএ তার সামনে এসে বলির পাঠার মতো কাঁপতে থাকে। সাহেবের মেজাজ তখন সপ্তমে। তিনি কৈফিয়ত দাবি করে বললেন,

এই কুত্তার বাচ্চা টেলিফোন দিতে এতো দেরী করলি ক্যান। পিএ ভদ্রলোক অত্যন্ত স্র স্বভাবের মানুষ। কেউ কঠোরভাবে কথা বললে যথাসম্ভব মার্জিত জবাব দেয়াটাই তার অভ্যেস। তিনি বললেন, স্যার আমি প্রথম থেকেই আলি কেনানকে অনুরোধ করে আসছিলাম। সে বারবার বলেছে আপনাকে ডেকে দিতে পারবে না। তাই শেষ পর্যন্ত আপনার বেডরুমে ঢুকে পড়তে হলো। স্যার এ বেয়াদফী মাফ করে দেবেন। আচ্ছা তুমি যাও এবং এডিসিকে আসতে বলে। এডিসি এলে গভর্ণর সাহেব রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে নির্দেশ দিলেন, এই কুত্তার বাচ্চা আলি কেনানকে এখখুনি ঘাড় ধরে বের করে দাও। সংক্ষেপে এই হলো আলি কেনানের স্বর্গ থেকে পতনের কাহিনী।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *