হযরত সালিহ (আ)

হযরত সালিহ (আ)

ছামূদ জাতির প্রতি প্রেরিত আল্লাহর একজন নবী। ছামূদ জাতি ছিল পৌত্তলিক। তাওহীদের দাওয়াতের নিমিত্ত প্রতিমা পূজারীদের প্রতি যেই সকল নবী প্রেরিত হইয়াছিলেন, সালিহ (আ) ছিলেন তাঁহাদের অন্যতম। আল-কুরআনে তাহার কথা নূহ (আ) ও হূদ (আ)-এর পরেই আলোচনা করা হইয়াছে। তিনি ছিলেন আরব বংশোদ্ভূত, হযরত নূহ (আ) তদীয় উধ্বতন পুরুষ।

ছামূদের বংশপরিচয়

সালিহ (আ)-এর বংশ তালিকা দুইটি স্তরে লিখিত আছে। একটি স্তর হইল তাহার হইতে তদীয় পূর্বপুরুষ ছামূদ পর্যন্ত। অপর স্তর হইল ছামূদ হইতে হযরত নূহ (আ) পর্যন্ত। দুইটি স্তরেই বংশতালিকা বর্ণনায় মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। পূর্ণ বংশ তালিকায় যে সকল নাম রহিয়াছে তাহাও একেক গ্রন্থে একেকভাবে লিখিত। ইমাম বাগাবী বর্ণিত বংশতালিকা অনুসারে সালিহ ইবন উবায়দ ইবন আসিফ ইবন মাশিহ ইবন উবায়দ ইব্ন হাদির ইবন ছামূদ (আল-বাগাবী, মাআলিমুত-তানযীল, ২খ., ১৭৪)। ওয়াহ্ ইবন মুনাব্বিহ (র) হইতে বর্ণিত বংশতালিকা সালিহ ইবন উবায়দ ইবন জাবির ইব্‌ন ছামূদ (আল-আলুসী, রূহুল মাআনী, ৮ খ., ১৬২)। এই সম্পর্কে মওলানা হিফজুর রহমান বলেন, ইমাম বাগাবী (র) যদিও ওয়াহব ইব্‌ন মুনাব্বিহ (র)-এর অনেক পরের লোক, এমনকি তিনি তাওরাত গ্রন্থের একজন পণ্ডিত হওয়া সত্ত্বেও বংশতালিকা বিশেষজ্ঞগণ ইমাম বাগাবীর অভিমতকে ঐতিহাসিক দিক দিয়া গ্রহণ করিয়াছেন (কাসাসুল কুরআন, ১খ., ১২৩)। দ্বিতীয় স্তর ছামূদ হইতে উপরস্থ বংশতালিকা সম্পর্কেও দুইটি অভিমত রহিয়াছে। একটি হইল : ছামূদ ইবন আমির ইব্‌ন ইরম ইবন সাম ইব্‌ন নূহ (আ) । অপরটি হইল : ছামূদ ইব্‌ন আদ ইবন আউস ইব্‌ন ইরম ইবন সাম ইবুন নূহ (আ) । দ্বিতীয় অভিমতটিকে ইমাম ছালাবী প্রাধান্য দিয়াছেন (আল-আসী, রূহুল মাআনী, প্রাগুক্ত)। আল্লামা ইবন কাছীর সালিহ (আ)-এর বংশতালিকা নিম্নরূপ বর্ণনা করিয়াছেন ও সালিহ ইবন আদ ইবন মাশিহ ইবন উবায়দ ইব্ন হাদির ইবন ছামূদ ইব্‌ন আবির ইবন ইরাম ইবন সাম ইবন নূহ (আ) (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ১/১খ., ১২৩)। সালিহ (আ)-এর বংশতালিকা বিভিন্ন নাম সম্পর্কে বিভিন্ন গ্রন্থে বিভিন্ন রূপ পরিলক্ষিত হয় (দ্র. ইবন কাছীর, বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, আল-কুরতুবী, আল-জামি লিআহকামিল কুরআন, ৭খ., ২৩৮ পৃ.; আল-আসী, রূহুল মাআনী; ইবনুল আছীর, আল-কামিল ফিত-তারীখ, ১খ., ৬৮ পৃষ্ঠায় বলা হইয়াছে মাশিজ (cu), অন্যান্য গ্রন্থের সহিত ইহার মিল নাই। বুরুস আল-বুসতানী, দাইরাতুল মাআরিফ, বৈরূত তা. বি., ৬খ, ৩৩২; হিফজুর রহমান, কাসাসুল কুরআন, ১খ., ১২২; পৃ. ইব্‌ন খালদূন, তারীখ, বৈরূত ১৯৭৯ খৃ., ২খ., ২৩। আল-মাসউদী, মুরূজুয যাহাব; চতুর্থ সংস্করণ মিসর ১৩৮৪ বি., ২খ., ৪৩)।

আল-কুরআনে সালিহ ও ছামূদের কথা

আল-কুরআনে সালিহ (আ)-এর কথা তিনটি সূরার আটটি স্থানে আসিয়াছে। (আবদুল ওয়াহহাব আন-নাজ্জার, কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ৯৮-এ বলা হইয়াছে, সালিহ (আ) কথা কুরআনে আসিয়াছে কিন্তু বাস্তবের সাথে ইহার মিল নাই) তাহা হইল নিম্নরূপঃ

সূরা – আয়াত নম্বর – মোট

আরাফ – ৭৩, ৭৫, ৭৭ – ৩

হূদ – ৬১-৬২, ৬৬,৮৯ – ৪

শুআরা – ১৪২ – ১

সর্বমোট ৮টি

ছামূদ গোত্রের কথা নিম্নোক্ত নয়টি সূরায় রহিয়াছে : আরাফ, হূদ, হিজর, নামল, ফুসসিলাত (হামীম আস-সিজদা), আন-নাজম, আল-কামার, আল-হাক্কা, আল-শাম্স (হিফজুর রহমান, কাসাসুল কুরআন, ১খ., ১২২)। আল-কুরআনুল করীমে কোন সময় স্বতন্ত্রভাবে আবার কোন সময় অন্যান্য গোত্রের সহিত মিলিতভাবে তাহাদের কথা আলোচিত হইয়াছে, তাহারা হইল কওমে নূহ ও কওমে আ, আসহাবুর রাসস ( 1), কওমে লূত ও আসহাবুল আয়কা। আদ জাতির সহিত আলোচনা করিবার সময় একটিমাত্র স্থান ব্যতীত সকল স্থানেই তাহাদের কথা পূর্বে উল্লেখ করা হইয়াছে। স্থানটি হইলঃ 6, 2, 3 (সূরা আল-হাক্কা, আয়াত ৪)। আসহাবুর রাসসের সহিত দুইবার আলোচনা করা হইয়াছে। একবার ছামূদের কথা আগে এবং একবার পরে। যেমন–Jibon, rs, fate (সূরা আল-ফুরকান, আয়াত ৩৮)-এবং ১, 3rol,cs (সূরা কাফ, আয়াত ১২) : কওমে লূত ও আসহাবুল আয়কা–এর সহিত আলোচনার সময় ছামূদের নাম পূর্বে উল্লেখ করা হইয়াছে। যেমন : sust, ৮, ১১, (সূরা সাদ, আয়াত ১৩)। তবে কোন আয়াতেই কওমে নূহের পূর্বে ছামূদের কথা উল্লেখ করা হয় নাই (ডঃ জাওয়াদ আলী, আল-মুফাসসাল ফী তারীখিল আরাব কণবলাল ইসলাম, ১খ., ৩২২)।

ছামূদ শব্দের আভিধানিক বিশ্লেষণ

আরবী, শব্দের অর্থ হইল স্বল্প পানি। ছামূদ নামকরণের কারণ হইল : আমর ইবনুল আলা হইতে বর্ণিত, পানি কম হইলে বলা হইত [ ] যেহেতু এই জাতি পানি সংকটে জর্জরিত থাকিত এই কারণে তাহাদেরকে ছামূদ বলা হইত (রূহুল মাআনী, প্রাগুক্ত)। ছামূদ জাতিকে ছামূদ বলা হয় তাহাদের ঊর্ধ্বতন পুরুষ ছামূদের নাম অনুসারে (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, প্রাগুক্ত)। ছামূদ শব্দটি মুনসারিফ কিনা এই ব্যাপারে মতভেদ রহিয়াছে। আল্লামা কুরতুবী বলেন, শব্দটি গায়র মুনসারি। কারণ এই শব্দটি দ্বারা একটি গোত্রের নাম রাখা হইয়াছে। আবূ হাতিমের মতে শব্দটি গায়র মুনসারিফ হইবার কারণ হইল : ইহা একটি অনারব শব্দ (২৫)। এই অভিমতকে ত্রুটিযুক্ত বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন ইমাম নাহহাস। তিনি বলেন, শব্দটি ১$ আরবী শব্দ হইতে নির্গত, যাহার অর্থ হইল : dj অর্থাৎ স্বল্প পানি (কুরতুবী, আল-জামে লিআহকামিল কুরআন, বৈরূত তা. বি., ৭খ., ২৩৭)। আল্লামা ছাআলাবী তাঁহার প্রণীত তাফসীর গ্রন্থে বলেন, জুমহুর উলামা ছামূদ শব্দকে একটি গোত্রের নাম হিসাবে গায়র মুনসারিফ পড়েন। কিন্তু য়াহয়া ইব্‌ন ওয়াছছাব ও আল-আমাশ মুনসারি হিসাবে পাঠ করেন (ছাআলাবী, তাফসীর, ২খ., ৩১)। ছামূদ জাতি আদ গোত্রের কিছু কাল পর আরবের উত্তর-পূর্ব অংশে প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়া ছামূদ নামেই খ্যাতি লাভ করিয়াছিল। আরবের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই অংশটি মদীনা ও শাম (সিরিয়ার) দেশের মধ্যবর্তী স্থান। প্রাচীন আরববাসীরা ইহাকে হিজর বলিত (আবদুল হক দেহলবী, তাফসীর হাক্কানী, ২খ., ৪০০)।

ছামূদ জাতির পরিচয়

বিশিষ্ট সাহাবী আবু যার (রা) হইতে বর্ণিত আছে :

“নবী করীম (স) বলিয়াছেন, চারজন নবী হইলেন আরব বংশোদ্ভূত ও হূদ, শুআয়ব, সালিহ ও তোমার নবী (মুহাম্মাদ) হে আবু যারর” (ছাআলাবী, তাফসীর, ২খ., ৩১-৩২) । আল্সী ছামূদ সম্প্রদায়ের আদি মানব ছামূদ সম্পর্কে বলেন : কথিত আছে, ছামূদ ছিলেন তাসাম ও জাদীসের ভ্রাতা (রূহুল মাআনী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৬৩)। হিফজুর রহমান বলেন, ছামূদ সম্প্রদায় হইল নূহ (আ)-এর পুত্র সামের বংশধরগণের (সেমিটিক) একটি শাখা। সম্ভবত ইহারা প্রথম আদ জাতির ধ্বংসের পর হযরত হূদ (আ)-এর প্রাণে বাঁচিয়া যাওয়া লোকজন। উহাদেরকে দ্বিতীয় আদ বংশ বলা হয় (কাসাসুল কুরআন, ১খ., ১২৩)। আরবী অভিধান লিসানুল আরাব ও তাজুল আরূসে উল্লেখ আছে যে, ছামূদ সম্প্রদায় হইল আদ সম্প্রদায়ের অবশিষ্ট লোকদের বংশধর (ইব্‌ন মানজুর, লিসানুল আরাব, ১খ., ৫০; আয-যাবীদী, তাজুল আরূস, ১খ., ৩১২)। জ্বরজী যায়ুদান বলেন, ইতিহাসবিদগণের অভিমত হইল, আরবজাতি বড় দুইটি ভাগে বিভক্ত ছিল। একটি হইল আরবে বায়দা, আর অপরটি আরবে বাকিয়্যা। আদ ও ছামূদ জাতি হইল আরবে বায়দা বা ধ্বংসপ্রাপ্ত আরব জাতির অন্তর্ভুক্ত (জুরজী যায়দান, তারীখুত তামাদদুনিল ইসলামী, ১খ., ১৫)। আল-মাসউদী বলেন, ছামূদ জাতির প্রথম অধিপতি ছিল আবির ইব্‌ন ইরাম। সে দুই শত বৎসর রাজত্ব করিয়াছিল। তাহার পর ক্ষমতায় আরোহণ করে জুনদা ইবন আমর। সে সর্বসাকুল্যে তিন শত সাতাইশ বৎসর রাজত্ব করিয়াছিল (আল-মাসউদী, মুরূজুয যাহাব)।

ছামূদ জাতির আবাস

আল-মাসউদী বলেন, শাম (সিরিয়া) ও হিজাযের মধ্যবর্তী স্থান হইতে কৃঞ্চ সাগর উপকূলবর্তী অঞ্চল পর্যন্ত স্থান ছামূদ ইবন আবিরের অধিকৃত ছিল। তাহাদের গৃহাদি ছিল ফাঁদলুন-নাকা নামক স্থানে। গৃহগুলির চিহ্ন পাহাড়ে খোদাইকৃত অবস্থায় এখনও বিদ্যমান রহিয়াছে। সিরিয়া হইতে হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করিলে পথিমধ্যে ওয়াদিল কুরার (sad sal) নিকটবর্তী স্থানে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন অট্টালিকা পরিলক্ষিত হয় (মুরূজুয যাহাব, প্রাগুক্ত)। ইবন জারীর তাবারী (র) ইবন ইসহাক সূত্রে বলেন, ছামূদ সম্প্রদায়ের গৃহাদি ছিল হিজরের মরুভূমি অঞ্চলে। এই মরুময় স্থানটির নাম হইল ওয়াদিল কুরা। উহা হিজায ও শামের মধবর্তী স্থানে আঠার মাইল বিস্তৃত (তাবারী, তাফসীর, প্রাগুক্ত, ৮খ., ১৫৯)। আল্লামা কুরতুবী বলেন, কাতাদা বলিয়াছেন, ছামূদ সম্প্রদায়ের আবাসভূমি ছিল মক্কা ও তাবূকের মধ্যবর্তী স্থানে (কুরতুবী, প্রাগুক্ত, ১০খ., ৪৬)। মাওলানা আবুল আলা মাওদূদী তাঁহার তাফহীমুল কুরআন গ্রন্থে বলেন, ছামূদ সম্প্রদায়ের আবাস ছিল উত্তর-পশ্চিম আরবের হিজর নামক এলাকায়। বর্তমানে মদীনা তায়্যিবা ও তাবুকের মধ্যস্থিত হিজায রেলওয়ে ষ্টেশনের মধ্যে ইহা অবস্থিত। এখানেই ছামূদের কেন্দ্র ছিল। প্রাচীন কালে ইহাকে আল-হিজর বলা হইত। এই নীরব নগরীটি দেখিয়া মনে হয় কোন সময়ই এখানকার অধিবাসীর সংখ্যা চার হইতে পাঁচ লক্ষের কম ছিল না। কুরআনুল করীম অবতরণকালে হিজাযের বাণিজ্যিক কাফেলা এই স্থান দিয়া যাতায়াত করিত (তাফহীমুল কুরআন, প্রাগুক্ত, ২খ., ৪৭-৪৮)। তিনি আরও বলেন, ওয়াদিল কুরার আধুনিক নাম হইল আল-উলা। এই প্রসিদ্ধ স্থান হইতে কয়েক মাইল দূরে মদীনা তায়্যিবা ও তাবুকের মধ্যবর্তী স্থানে উত্তর দিকে ছামূদ জাতির আবাস ছিল। এখনও সেখানকার অধিবাসিগণ এই স্থানটিকে আল-হিজর বা মাদাইব্‌ন সালিহ বলিয়া স্মরণ করে (তাফহীমুল কুরআন, প্রাগুক্ত, ৩খ., ৫২২)। ডঃ জাওয়াদ আলী নুওয়ায়রী রচিত নিহায়াতুল আরাব (ali ca) গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়া তিনি বলেন, কবি বলিয়াছেন, আল্লাহ তাআলা আদ জাতিকে ধ্বংস করিবার পর ছামূদ জাতি উহাদের স্থলাভিষিক্ত হয়। আদ গোত্রের আবাসভূমি আবাদ করিয়া তাহারা সেইখানে বসবাস করিতে লাগিল । ছামূদরা ছিল দশাধিক গোত্রে বিভক্ত (ডঃ জাওয়াদ আলী, আল-মুফাসসাল ফী তারীখিল আরাব কাবলাল ইসলাম, পাদটীকা, ১খ., ৩২৪)। আবদুল ওয়াহহাব আন-নাজ্জার বলেন, আমার কোন এক সঙ্গী ছামূদ জাতির আবাস ভূমিতে ভ্রমণ করিয়া তাহাদের রাজকীয় প্রাসাদে প্রবেশ করিয়া দেখিতে পাইলেন, প্রাসাদটি বিশাল আকৃতির। ইহা খোদাইকৃত প্রস্তর নির্মিত (আবদুল ওয়াহহাব আন-নাজ্জার, কাসাসুল আম্বিয়া, ৫৮ পৃ.)। হাদরামাওতবাসীরা দাবি করে যে, ছামূদ জাতির আবাস ও গৃহাদি আদ জাতির শিল্পকর্মেরই ফসল হইয়াছে। তাহাদের এই দাবি এই কথার পরিপন্থী নহে যে, ছামূদ সম্প্রদায় স্থাপত্য শিল্পে খুবই পারদর্শী ছিল এবং প্রাসাদসমূহ তাহাদের নিজেদেরই নির্মিত। এইজন্য যে, প্রথম আদ জাতি ও দ্বিতীয় আদ জাতি প্রকৃতপক্ষে একই সম্প্রদায়ভুক্ত। সালিহ (আ) কর্তৃক স্বীয় উম্মতকে নিম্মোক্ত আহবান ইহার সমর্থক।

“স্মরণ কর, আদ জাতির পর তিনি তোমাদেরকে তাহাদের স্থলাভিষিক্ত করিয়াছেন। তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন যে, তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ ও পাহাড় কাটিয়া বাসগৃহ নির্মাণ করিতেছ” (৭ ৭৪; হিফজুর রহমান, কাসাসুল কুরআন, করাচী, ১৪০০ হি., ১খ., ১২৪; আবদুল ওয়াহহাব আন-নাজজার, কাসাসুল আম্বিয়া, বৈরূত তা. বি., পৃ. ৫৯)।

ছামূদ জাতির সময়কাল

ছামূদ জাতির সময়কাল সম্পর্কে আবদুল ওয়াহহাব নাজ্জার ও মাওলানা হিফজুর রহমান বলেন, এই সম্পর্কে ইতিহাস নীরব থাকার ফলে এই জাতির সময়কাল সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্তমূলক তথ্য প্রদান করা যায় না। তবে এই কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে ইহাদের সময়কাল হইল হযরত ইবরাহীম (আ)-এর পূর্বের যমানা। ইহারা ইবরাহীম (আ)-এর মত মহান নবীর আবির্ভাবের পূর্বে ধ্বংসপ্রাপ্ত হইয়াছিল । এই কথা লক্ষণীয় যে, ছামূদ জাতির আবাসসমূহের আশেপাশে এমন কতিপয় কবরের অস্তিত্ব দেখিতে পাওয়া যায় যেইগুলিতে “আরামী” ভাষায় অনেক কিছু লেখা রহিয়াছে। এই লেখাসমূহের উপর যেই তারিখ লিপিবদ্ধ রহিয়াছে তাহা হযরত ঈসা (আ)-এর জন্মের পূর্বের লেখা। ইহা হইতে এই ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হইতে পারে যে, হযরত মূসা (আ)-এর পরে ছামূদ জাতির আবির্ভাব ঘটিয়াছিল। আসলে ব্যাপারটি এরূপ নয়। এই কবরগুলি প্রকৃতপক্ষে ছামূদ জাতির কবর নয়, বরং কবরগুলি হইল ছামূদ জাতির ধ্বংসের হাজার হাজার বৎসর পর এই স্থানে আসিয়া বসতি স্থাপনকারী লোকজনের। এই সকল লোক তাহাদের সম্মানিত ব্যক্তিদের স্মৃতি রক্ষার লক্ষ্যে আরামী লিখন পদ্ধতিতে কবরগুলির উপর ফলক স্থাপন করিয়া রাখিয়াছিল । এই কবরসমূহ ছামূদ জাতিরও নয়, ছামূদ জাতির সময়কালেরও নয় (কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ৫৯; কাসাসুল কুরআন, পৃ. ১২৫-১২৬)। ছামূদ সম্প্রদায়ের প্রাচীনত্ব আল-কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত হইতে প্রতীয়মান হয় :

“তোমাদের নিকট কি সংবাদ আসে নাই, তোমাদের পূর্ববর্তীদের, নূহের সম্প্রদায়ের, আদের ও ছামূদের এবং তাহাদের পূর্ববর্তীদের? উহাদের বিষয় আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেহ জানে না” (১৪ : ৯)।

এই আয়াতটি উদ্ধৃত করিবার পর ডঃ জাওয়াদ আলী বলেন, ইহারা এত প্রাচীন জাতি ছিল যে, ইহাদের কথা মানবজাতি বিস্মৃত হইয়া গিয়াছিল । মহান আল্লাহ ব্যতীত ইহাদের কথা অন্য কেহ জানিত না। ইহা হইতে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (স)-এর সমকালীন লোকজন মনে করিত ইহারা অনেক পূর্বেকার লোক (ডঃ জাওয়াদ আলী, আল-মুফাসসাল ফী তারীখিল আরাব কণবলাল ইসলাম, দারুল ইলম, বৈরূত ১৯৭৬ খৃ., ১খ., ৩০৯)। মিসরীয় খ্যাতিমান খৃস্টান ঐতিহাসিক জ্বরজী যায়দান তাহার গ্রন্থ আল-আরাব কাবলাল ইসলাম গ্রন্থে লিখিয়াছেন, প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করিলে এবং গ্রন্থাদি অধ্যয়ন করিলে যেই তথ্য উদঘাটিত হয় তাহা হইল ও সালিহ (আ)-এর সম্প্রদায়ের আদি আবাসগুলি হযরত ঈসা (আ)-এর জন্মগ্রহণের কিছু কাল পূর্বে নাবাতীয়গণের আয়ত্তে আসিয়া গিয়াছিল। হইরা ছিল বেতরাহের অধিবাসী। ইহাদের নিদর্শন ও টিলাসমূহকে অনেক প্রাচ্যবিদ লেখক প্রত্যক্ষ করিয়াছেন। তাহাদের যে সকল কীর্তি পাথরসমূহে লেখা ছিল তাহারা তাহা পাঠ করিয়াছেন। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধ্বংসাবশেষ হইল কাসরুল বিত কবর বাশা কিলআঃ ও বুরজ, ঐ শিলালিপিগুলি নাবাতী লিপিতে উৎকীর্ণ ছিল। সেখানকার কবরগুলির উপর পাশ্চাত্য ঐতিহাসিকরা এই স্থানে যাহা পাইয়াছিলেন তাহা ছিল নাবাতী বর্ণমালায় খোদাইকৃত। ইহা ছিল হযরত ঈসা (আ)-এর জন্মগ্রহণের নিকটতম কালের, লেখা। লিপিবদ্ধ বাক্যের বিষয়বস্তু ছিলঃ মাকবারাটি কুমকুম বিনৃত ওয়াইলা বিন্ত হারাম এবং কুমকুমের কন্যা কালীবা নিজের জন্য এবং নিজের সন্তানাদির জন্য তৈরী করিয়াছেন। ইহার ভিত্তি শুভ মাসে স্থাপন করা হইয়াছিল। ইহা নাবালীগণের রাজা হারিছ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হইবার নবম বৎসর । এই হারিছ নিজ গোত্রকে অত্যধিক ভালবাসিতেন। সুতরাং আমাযুশ-শারা ও আরশাঃ (?) লাত, অমেন্দ, মালূত এবং কায়সের ইহাদের উপর লানত হইবে যাহারা এই কবরগুলিকে বিক্রয় করিবে অথবা বন্ধক রাখিবে অথবা এই সমস্ত হইতে কোন অঙ্গকে বাহির করিবে কিংবা কুমকুম, তাহার কন্যা ও তাহার সন্তানাদি ব্যতীত কাউকে দাফন করিবে। যেই ব্যক্তি এই লিপির লেখার বিপরীত কিছু করিবে তাহার উপর যুশ-শারা, হুবল, মানূতের পাঁচটি অভিশাপ। যেই যাদুকর ইহার বিপরীত করিবে তাহার উপর এক হাজার হারিছী দিহরাম জরিমানা দেওয়া বাধ্যতামূলক হইবে। কিন্তু তাহার হাতে কুমকুম, কালীবা অথবা তাহার সন্তানাদির মধ্য হইতে কাহারও স্বহস্ত লিখিত স্পষ্ট অনুমতি পত্র ব্যতীত এই কবরস্থানে বাহিরের কাহাকেও দাফন করা যাইবে না। কবরস্থানটি ওয়াহবুল লাত ইবন উবাদা প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন (কাসাসুল আম্বিয়া, প্রাগুক্ত; কাসাসুল কুরআন, প্রাগুক্ত, পৃ. ১২৬-১২৭)। ডঃ জাওয়াদ আলী আরও বলেন, ছামূদ জাতির ইতিহাস খৃস্ট পূর্বেরও অনেক আগের সময়ের সহিত সংশ্লিষ্ট । ইহারা ছিল সেই সকল জাতির অন্তর্গত যাহারা আশুরীদের সহিত দ্বিতীয় সারগুনের রাজত্বকালে লড়াই করিয়াছিল। দ্বিতীয় সারগুন তাহাদেরকে পরাভূত করিয়া নিজ আবাসভূমি হইতে বহিষ্কার করিয়া সুমেরিয়ার দিকে পাঠাইয়াছিলেন। আশুরীগণের সহিত তাহারা যেই স্থানে যুদ্ধে লিপ্ত হইয়াছিল তাহার নাম ছিল বারী (BARI) । কোন কোন গবেষক মনে করেন, পঞ্চম খৃস্টাব্দ পর্যন্ত কওমে ছামূদের সর্বশেষ বিশ্বাসযোগ্য আলোচনার কথা পাওয়া যায়। ইহাদের একটি গোত্র অশ্বারোহী হইয়া নোম যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিয়াছিল (Doughty, vol. 1, p. 229; Sprenger, s. 28)! ছামূদ জাতি ঈসা (আ)-এর জন্মের পর হিজায অঞ্চলের উচ্চভূমি দূওমাতুল জানদাল, হিজর ও পশ্চিম তায়মা নামক স্থানে বসবাস করিত। বর্ণিত আছে যে, ইহারা খৃস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে আল-আওয়ারিদ ও আল-ইহা নামক দুইটি প্রস্তরময় অঞ্চলের ভূমির অধিবাসী ছিল (Musil, Hegaz, P. 29) 1

ঐতিহাসিক Doughty মনে করেন ছামূদ জাতি হিজর নামক যেই স্থানে বসবাস করিত তাহা এখন অনাবাদ ভূমি। বর্তমান মাদাইনে সালিহ হইল নাবাতীদের আবাসভূমি হিজর। ইহা ছামূদ সম্প্রদায়ের হিজর নহে। নাবাতীগণের রাজধানী মাদাইনে সালিহ হইল ঐ ধ্বংপ্রাপ্ত স্থান হইতে দশ মাইল দূরে (Doughty, vol, 1, পৃ. ২২৯; ডঃ জাওয়াদ আলী, আল-মুফাসসাল ফী তারীখিল আরাব কাবলাল ইসলাম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩২৬)। ইসলামী যুগ ও ইসলামে পূর্ববর্তী সময়ের সহিত ছামূদ জাতির কোন উল্লেখযোগ্য সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় না। ইবন খালদূন বলেন, কথিত আছে যে, ইহাদের পরবর্তী উত্তর পুরুষ ছিল আহলুর-রাস্স এo-91 Jal), যাহাদের নবী ছিলেন হানজালা ইব্‌ন সাফওয়ান। এই অভিমত যথার্থ নহে। অনুরূপ কোন কোন কুলজি বিশারদ মনে করেন, ছাকীফ জাতি হইল ছামূদ সম্প্রদায়ের বংশোদ্ভূত। এই মতও গ্রহণযোগ্য নহে। ছাকীফ গোত্রীয় হাজ্জাজ ইব্‌ন ইউসুফও এই অভিমত সঠিক নহে বলিয়া মন্তব্য করিয়াছেন, (তারীখে ইবন খালদূন, বৈরূত, দারুল কুতুব ১৩৯৯ হি., ২খ., ২৩-২৪)। ইহা আসলে হাজ্জাজ ইবন ইউসুফ বিরোধীরা তাহার ছাকীক গোত্রকে হেয় প্রতিপন্ন করিবার জন্য রটাইয়াছে। যেহেতু হাজ্জাজ ছিলেন অত্যন্ত উগ্র প্রকৃতির শাসক। ছামূদ জাতির লিখিত অনেক তথ্যাদি ইউরোপীয় যাদুঘর ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের গ্রন্থাগার ও প্রাচ্যবিদদের লেখনীতে পাওয়া যায়। ইহা হইতে অনুমেয়, ইহারা ছিল কৃষিকাজে পারদর্শী এবং পশুপালনে অভ্যস্ত জাতি। তাহাদের লেখাসমূহে তাহারা যেই সকল প্রতিমার পূজা করিত বলিয়া উল্লেখ পাওয়া যায় তাহা হইলঃ ওয়াদ্দ, হুবাল, লাত, যুশ-শারা, ইত্যাদি (আল-মুফাসসাল ফী তারীখিল আরাব কাবলাল ইসলাম, পৃ. ৩৩০-৩৩১)।

পাশ্চাত্য ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিতে ছামূদ জাতি

আল্লামা আবদুল ওয়াহহাব নাজ্জার ও মাওলানা হিফজুর রহমানের মতে পশ্চিমা প্রাচ্যবিদ ঐতিহাসিকগণ আরব জাহান সম্পর্কে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণের নামে ক্রটিপূর্ণ তথ্য প্রদান করিয়া থাকেন। তাহারা ছামূদ সম্প্রদায়ের ব্যাপারে অনেক অনুসন্ধানের পর যেইসব তথ্য প্রদান করিয়াছেন তাহা বাস্তবের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ছামূদ সম্প্রদায় সম্পর্কে তাহারা গবেষণা চালাইয়া দুইটি শিবিরে বিভক্ত হইয়া পড়িয়াছেন। এক দলের অভিমত হইল, ছামূদ সম্প্রদায় ইয়াহুদীদের একটি গোত্র যাহারা ফিলিস্তীনে না গিয়া এই স্থানেই রহিয়া গিয়াছিল। এই অভিমতটি কেবল তত্ত্ব ও তথ্যগত ভুলই নহে, বরং নিতান্তই অমূলক ও ভিত্তিহীন। কারণ সকল ইতিহাসবিদ এই ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করিয়াছেন যে, ইয়াহূদীগণের নবী মূসা (আ) বনূ ইসরাঈলকে লইয়া মিসর হইতে বাহির হইবার অনেক পূর্বেই ছামূদ জাতির আবাসসমূহ ধ্বংস হইয়া গিয়াছিল। মূসা (আ) তাঁহার কওমকে লইয়া মিসর হইতে বাহির হইবার যুগ ছামূদ জাতির ধ্বংসের যুগের কাছাকাছিও নহে। আল-কুরআনও স্পস্ট ভাষায় প্রকাশ করে যে, মূসা (আ)-কে ফিরআওনের লোকেরা যখন মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করিল তখন তাহার সম্প্রদায়ের একজন মুমিন ব্যক্তি স্বীয় সম্প্রদায়কে ইহা বলিয়া সতর্ক করিয়া দিলেন যে, তোমাদের পূর্ববর্তী নূহ, আদ ও ছামূদ এবং তাহাদের পরবর্তী সম্প্রদায়সমূহ তাহাদের নবীগণকে অস্বীকার করায় যেই পরিণতি ভোগ করিয়াছিল তোমাদের অবস্থাও যেন এমন না হয়। অপর এক দল প্রাচ্যবিদ বলেন, ছামূদ জাতি হইল আমালিকা বংশোদ্ভূত জাতি। ইহারা ফুরাত নদীর পশ্চিম উপকূল হইতে চলিয়া আসিয়া এখানে আবাস স্থাপন করিয়াছিল। ইহাদের কেহ কেহ মনে করেন, ইহারা হইল সেই আমালিকা জাতি যাহাদেরকে মিসরের বাদশাহ আহমাস দেশ হইতে বিতাড়িত করিয়াছিলেন। যেহেতু তাহারা মিসরে অবস্থানকালে পাথর খোদাই সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করিয়াছিল, ইহার ফলে “হিজর” নামক স্থানে গিয়া পাহাড় এবং পাথর খোদাই করিয়া অনুপম দালান নির্মাণ করিয়াছিল। তবে পূর্বেই উল্লেখ করা হইয়াছে যে, আদ ও ছামূদ জাতি সাম ইব্‌ন নূহ (আ)-এর বংশধর। আরববাসীরা ইয়াহুদীদের ত্রুটিপূর্ণ অভিমতের অনুসরণে ইহাদেরকে আমালিকাদের অন্তর্ভুক্ত করিয়া ফেলিয়াছে। প্রকৃতপক্ষে আমালীক ইব্‌ন উদের ছামূদ বংশের সহিত কোন সম্পর্ক পাওয়া যায় না। ফলে এই অভিমতও সঠিক নহে। বিশেষজ্ঞগণের অভিমতে ছামূদ জাতি হইল আদ জাতির অবশিষ্ট অংশ। ইহাই বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য অভিমত (হিফজুর রহমান, কাসাসুল কুরআন, পৃ., ১২৭; আবদুল ওয়াহহাব আন-নাজ্জার, কাসাসুল আম্বিয়া, বৈরূত তা. বি., ৫৯)।

ডঃ জাওয়াদ আলী বলেন, প্রাচ্যবিদগণ ছামূদ জাতির পরিচয় উদ্ঘাটনে বহু চেষ্টা চালাইয়াছেন। আশূরী দলীলপত্র ও দ্বিতীয় সারজুনের একটি দলীলে ছামূদদের নাম পাওয়া গিয়াছে। তাহারা ছামূদকে Tamudi, Thamubi, Thamudeni. ইত্যাদি বিভিন্ন নামে উল্লেখ করিয়াছেন। [ ] গ্রন্থে বলা হইয়াছে :Thamudeni-গণ [ ] উপকূলে বসবাস করিত। ইহা জাহাজ চলাচলের উপযোগী ছিল না। এখানে ঝড়ো বাতাস হইতে রক্ষা পাওয়ার জন্য নৌকাগুলির কোন আশ্রয়কেন্দ্র নাই। কোন সামুদ্রিক বন্দরও নাই যেখানে জাহাজ নোঙ্গর করে যায়। এই গ্রন্থকারের বর্ণনা হইতে বুঝা যায়, ছামূদের আবাসমূহ হিজায অঞ্চলের লোহিত সাগরের উপকূলে অবস্থিত ছিল। (Musil, Destra, P. 302,The Periples of The Erythreansea. By william vincent, London 1800, Part the second, p.262) DioDrus G 475 ঘুরিয়া ফিরিয়া এইরূপই বর্ণনা দিয়াছেন। (Diodorus, Bibliotheca Historica, III, 44, Musil, Deserta, P. 291)। Pliny উল্লেখ করিয়াছেন যে, Tamudaei-গণ হইল Domata এবং Haegia–এর মধ্য স্থিত। ইহা একটি শহর যাহাকে Badanatha, Baclanaza (Pliny, Natur, History (Translated By H. Racham) Vol. 2,p. 456-457, vi,32)। টলেমির মতে ছামূদ সম্প্রদায় হইল Sarakenoi এবং Apatae-এর মধ্যবর্তী স্থানের অধিবাসীগণ । (Glaser, Sklzze, 2, s. 108, Ptolemly vi 7: 14 Vi,7: \21, V 197 Hastings, A Dictionary of the Bible, Voli. p. 630)। এই সকল মতামত প্রমাণ করে যে, ছামূদ জাতির আবাসস্থল হইল আরবের উত্তর পশ্চিমে। টলেমির ভূগোল হইতে জানা যায় যে, ছামূদ জাতির আবাসভূমি আদ জাতির আবাসস্থল হইতে দূরে নহে। তাহাদের বসতির মধ্যবর্তী স্থানে একমাত্র সারাহানী (Sarakeny) আবাস রহিয়াছে। এই সকল আবাসভূমি হিজাযের উচ্চভূমিতে অবস্থিত। এই অভিমতটি আরবী গ্রন্থসমূহের এই অভিমতের সহায়ক যে, ছামূদ জাতির আবাসভূমি আদ জাতির আবাসভূমির নিকটবর্তী (ডঃ জাওয়াদ আলী, আল-মুফাসসাল ফী তারিখীল আরাব কাবলাল ইসলাম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩২৪-৩২৫)। সালিহ (আ)-এর সহিত ছামূদ জাতির সম্পর্ক আল-কুরআনে ইরশাদ হইয়াছে : ১১ ১, “ছামূদ জাতির প্রতি তাহাদের ভাই সালিহকে পাঠাইয়াছিলাম” (৭ :৭৩)। এই স্থানে ভাই বলিতে জাতি ভাই বুঝানো হইয়াছে, ধর্মীয় নহে (তাফসীরুল বাগাবী, মূলতান তা.বি., ২খ., ১৭৪)। সালিহ (আ) ছিলেন ছামূদ জাতির মধ্যে উত্তম বংশের। তিনি ঐ জাতির প্রতি নবী হিসাবে প্রেরিত হইয়াছিলেন (আয-যামাখশারী, আল-কাশশাফ, বৈরূত তা, বি., ২খ., ৮৯)। হজরত সালিহ (আ) যখন তাহার গোত্রের প্রতি নবীরূপে প্রেরিত হন তখন তিনি যুবক ছিলেন। দাওয়াত দিতে দিতে তিনি বৃদ্ধ হইয়া গেলেন, তবুও তাঁহার সম্প্রদায়ের অল্প সংখ্যক লোক যাহারা সমাজে দুর্বল শ্রেণী হিসাবে বিবেচিত হইত, তাহারা ব্যতীত আর কেহই তাহার উপর ঈমান আনয়ন করিল না (সায়্যিদ আসী, রূহুল মাআনী, প্রাগুক্ত, ৮খ., ১৬৬)।

ছামূদ জাতির লোকদের আয়ু

মহান আল্লাহ ছামূদ জাতির লোকদেরকে দীর্ঘ জীবন দান করিয়াছিলেন। ইহারা এত দীর্ঘকাল বাঁচিয়া থাকিত যে, তাহাদের কোন লোক মজবুত গৃহ নির্মাণ করিলেও তাহার জীবদ্দশায় গৃহটি ধ্বংস হইয়া যাইত। অবস্থাদৃষ্টে তাহারা পাহাড় কাটিয়া হইতে গৃহ নির্মাণ করিতে লাগিল। এইরূপ গৃহ নির্মাণে তাহারা অত্যন্ত দক্ষতার স্বাক্ষর রাখিত । ধন-সম্পদে ইহারা অত্যন্ত সুখী ও সমৃদ্ধিশালী জাতি ছিল (ইবনুল আছীর, আল-কামিল ফিত-তারিখ, দারুল কুতুব বৈরূত ১৪০৭ হি., ১খ., ৬৮; বুরুস আল-বুসতানী, দাইফাতুল মাআরিফ, বৈরূত তা বি., ৬খ, ৩৩৯)। আল-কুরআনে [ ] আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা বাগাবী বলেন, এই সম্পর্কে আদ-দাহ্হাক বলিয়াছেন, [ ]-এর অর্থ হইল আল্লাহ তোমাদেরকে দীর্ঘায়ু দান করিয়াছেন কারণ ইহাদের কোন কোন লোক তিন শত বৎসর হইতে এক হাজার বৎসর পর্যন্ত জীবিত থাকিত (তাফসীরুল বাগাবী, প্রাগুক্ত, ২খ., ৩৯০)।

সালিহ (আ)-কে ছামূদ জাতির প্রতি প্রেরণ

ছামূদ সম্প্রদায় তাহাদের পূর্বপূরুষদের ন্যায় প্রতিমা পূজারী ছিল। তাহাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য তাহাদেরই সম্প্রদায় হইতে আল্লাহ তাআলা সালিহ (আ)-কে রাসূল হিসাবে প্রেরণ করিলেন। জগতের সকল বস্তুই আল্লাহর তাওহীদের প্রমাণ বহন করে এই কথা তিনি তাহাদেরকে স্পষ্ট ভাষায় বুঝাইয়া দেন এবং প্রতিমা পূজার অসারতা তাহাদের সম্মুখে তুলিয়া ধরেন (আবদুল ওয়াহহাব আন-নাজ্জার, কাসাসুল আম্বিয়া, ৫৯ পৃ.; হিফজুর রহমান, কাসাসুল কুরআন, প্রাগুক্ত, পৃ. ১২৭)। সালিহ (আ)-কে যখন নবী হিসাবে প্রেরণ করা হয় তখন তিনি যুবক ছিলেন। তাহার নুবুওয়াত লাভ ও হূদ (আ)-এর ইন্তিকালের মধ্যে ব্যবধান ছিল এক শত বৎসরের মত। এই সময় ছামূদ সম্প্রদায়ের অধিপতি ছিল জুনদা ইব্‌ন আমর (আল-মাসউদী, মুরূজুয যাহাব, প্রাগুক্ত, ২খ., ৪৩)। সালিহ (আ) তাহাদেরকে লা শারীক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহবান করিলেন। তাঁহার আহবানে অল্প মানুষ সাড়া দিল। কিন্তু অধিকাংশ লোক তাহা গ্রহণ করিল না। তাহারা তাহাকে গালমন্দ ও নির্যাতন করিতে লাগিল এবং তাঁহাকে হত্যা করিবার পরিকল্পনা করিল ও তাঁহার উষ্ট্ৰী হত্যা করিল। ফলে আল্লাহ তাহাদেরকে অত্যন্ত কঠোরভাবে পাকড়াও করিলেন (ইব্‌ন কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, বৈরূত ১৯৮৮ খৃ. ৩১খ., ১২৩)। ইরশাদ হইয়াছে :

“আমি ছামূদ জাতির নিকট তাহাদের ভ্রাতা সালিহকে পাঠাইয়াছিলাম। সে বলিয়াছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ নাই। তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালক হইতে স্পষ্ট নিদর্শন আসিয়াছে। আল্লাহর এই উষ্ট্রী তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন। ইহাকে আল্লাহর জমিনে চরিয়া খাইতে দাও এবং ইহাকে কোন ক্লেশ দিও না, দিলে মর্মন্তুদ শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হইবে। স্মরণ কর, আদ জাতির পর তিনি তোমাদেরকে তাহাদের স্থলাভিষিক্ত করিয়াছেন, তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন যে, তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ ও পাহাড় কাটিয়া বাসগৃহ নির্মাণ করিতেছ। সুতরাং তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটাইও না। তাহার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানেরা সেই সম্প্রদায়ের ঈমানদার, যাহাদেরকে দুর্বল মনে করা হইত, তাহাদেরকে বলিল, তোমরা কি জান যে, সালিহ আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত? তাহারা বলিল, তাহার প্রতি যে বাণী প্রেরিত হইয়াছে আমরা তাহাতে বিশ্বাসী। দাম্ভিকেরা বলিল, তোমরা যাহা বিশ্বাস কর আমরা তাহা প্রত্যাখ্যান করি। অতঃপর তাহারা সেই উষ্ট্ৰীটি বধ করে এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করে এবং বলে, হে সালিহ! তুমি রাসূল হইলে আমাদেরকে যাহার ভয় দেখাইতেছ তাহা আনয়ন কর। অতঃপর তাহারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হয়, ফলে তাহাদের প্রভাত হইল নিজগৃহে অধঃমুখে পতিত অবস্থায়। তৎপর সে তাহাদের নিকট হইতে মুখ ফিরাইয়া লইয়া বলিল, হে আমার সম্প্রদায়! আমি তো আমার প্রতিপালকের বাণী তোমাদের নিকট পৌঁছাইয়াছিলাম এবং তোমাদেরকে হিতোপদেশ দিয়াছিলাম, কিন্তু তোমরা তো হিতাকাঙ্খীদেরকে পসন্দ কর না” (৭ : ৭৩-৭৯)।

আল্লাহ্ তাআলা সূরা হূদে ইরশাদ করিয়াছেন :

“আমি ছামূদ জাতির নিকট তাহাদের ভ্রাতা সালিহকে পাঠাইয়াছিলাম। সে বলিয়াছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে মৃত্তিকা হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং উহাতেই তোমাদিগকে বসবাস করাইয়াছেন। সুতরাং তোমরা তাঁহার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁহার দিকেই প্রত্যাবর্তন কর। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক নিকটে, তিনি আহবানে সাড়া দেন। তাহারা বলিল, হে সালিহ! ইহার পূর্বে তুমি ছিলে আমাদের আশাস্থল । তুমি কি আমাদেরকে নিষেধ করিতেছ ইবাদত করিতে তাহাদের যাহাদের ইবাদত করিত আমাদের পিতৃপুরুষেরা? আমরা অবশ্যই বিভ্রান্তিকর সন্দেহে রহিয়াছি সে বিষয়ে, যাহার প্রতি তুমি আমাদেরকে আহবান করিতেছ। সে বলিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কি ভাবিয়া দেখিয়াছ, আমি যদি আমার প্রতিপালক প্রেরতি স্পস্ট প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত হইয়া থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তাহার নিজ অনুগ্রহ দান করিয়া থাকেন, তবে আল্লাহর শাস্তি হইতে আমাকে কে রক্ষা করিবে, আমি যদি তাহার অবাধ্যতা করি? সুতরাং তোমরা তো কেবল আমার ক্ষতিই বাড়াইয়া দিতেছ। হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর এই উষ্ট্ৰীটি তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন। ইহাকে আল্লাহর জমিনে চরিয়া খাইতে দাও। ইহাকে কোন ক্লেশ দিও না, দিলে আশু শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হইবে। কিন্তু তাহারা উহাকে বধ করিল । অতঃপর সে বলিল, তোমরা তোমাদের গৃহে তিন দিন জীবন উপভোগ করিয়া লও। ইহা একটি প্রতিশ্রুতি যাহা মিথ্যা হইবার নহে। এবং যখন আমার নির্দেশ আসিল তখন আমি সালিহ ও তাহার সঙ্গে যাহারা ঈমান আনিয়াছিল তাহাদেরকে আমার অনুগ্রহে রক্ষা করিলাম এবং রক্ষা করিলাম সেই দিনের লাঞ্ছনা হইতে। তোমার প্রতিপালক তো শক্তিমান, পরাক্রমশালী । অতঃপর যাহারা সীমালঙ্ঘন করিয়াছিল মহানাদ তাহাদেরকে আঘাত করিল। ফলে উহারা নিজ নিজ গৃহে নতজানু অবস্থায় শেষ হইয়া গেল। যেন তাহারা সেথায় কখনও বসবাস করে নাই। জানিয়া রাখ! ছামূদ সম্প্রদায় তো তাহাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করিয়াছিল । জানিয়া রাখ! ধ্বংসই হইল ছামূদ সম্প্রদায়ের পরিণাম” (১১ : ৬১-৬৮)।

আল্লাহ্ তাআলা সূরা আল-হিজরে ইরশাদ করেন :

“হিজরবাসীগণও রাসূলগণের প্রতি মিথ্যা আরোপ করিয়াছিল। আমি তাহাদেরকে আমার নিদর্শন দিয়াছিলাম, কিন্তু তাহারা তাহা উপেক্ষা করিয়াছিল । তাহারা পাহাড় কাটিয়া গৃহ নির্মাণ করিত নিরাপদ বাসের জন্য। অতঃপর প্রভাতকালে মহানাদ উহাদেরকে আঘাত করিল। সুতরাং তাহারা যাহা অর্জন করিত অহা তাহাদের কোন কাজে আসে নাই” (১৫ : ৮০-৮৪)।

সূরা আল-ইসরা (বানূ ইসরাঈলে) ইরশাদ হইয়াছে :

“পূর্ববর্তিগণ কর্তৃক নিদর্শন অস্বীকার করাই আমাকে নিদর্শন প্রেরণ করা হইতে বিরত রাখে । আমি শিক্ষাপ্রদ নিদর্শনস্বরূপ ছামূদ জাতিকে উষ্ট্রী দিয়াছিলাম। অতঃপর তাহারা উহার প্রতি যুলুম করিয়াছিল । আমি ভীতি প্রদর্শনের জন্যই নিদর্শন প্রেরণ করি” (১৭ : ৫৯)।

মহান আল্লাহ্ সূরা শুআরায় ইরশাদ করিয়াছেন :

“ছামূদ সম্প্রদায় রাসূলগণকে অস্বীকার করিয়াছিল। যখন উহাদের ভ্রাতা সালিহ উহাদেরকে বলিল, তোমরা কি সাবধান হইবে না? আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল । অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আমি তোমার নিকট ইহার জন্য কোন প্রতিদান চাহি না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট আছে। তোমাদেরকে কি নিরাপদ অবস্থায় ছাড়িয়া রাখা হইবে, যাহা এইখানে আছে উহাতে। উদ্যানে, প্রস্রবণে ও শস্যক্ষেত্রে এবং সুকোমল গুচ্ছবিশিষ্ট খজুর বাগানে? তোমরা তো নৈপুণ্যের সহিত পাহাড় কাটিয়া গৃহ নির্মাণ করিতেছ। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর; এবং সীমালঙ্কারীদের আদেশ মান্য করিও না। যাহারা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে, শান্তি স্থাপন করে না। উহারা বলিল, তুমি তো যাদুগ্রস্তদের অন্যতম। তুমি তো আমাদের মত একজন মানুষ। কাজেই তুমি যদি সত্যবাদী হও, একটি নিদর্শন উপস্থিত কর। সালিহ বলিল, এই একটি উজ্জ্বী, ইহার জন্য আছে পানি পানের পালা এবং তোমাদের জন্য আছে নির্ধারিত দিনে পানি পানের পালা; এবং উহার কোন অনিষ্ট সাধন করিও না; করিলে মহাদিবসের শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হইবে। কিন্তু উহারা উহাকে বধ করিল, পরিণামে উহারা অনুতপ্ত হইল। অতঃপর শাস্তি উহাদেরকে গ্রাস করিল। ইহাতে অবশ্যই রহিয়াছে নিদর্শন, কিন্তু উহাদের অধিকাংশই মুমিন নহে। তোমার প্রতিপালক, তিনি তো পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু” (২৬ : ১৪১-১৫৯)।

মহান আল্লাহ্ সূরা আন-নামূলে বলিয়াছেন :

“আমি অবশ্যই ছামূদ সম্প্রদায়ের নিকট তাহাদের ভ্রাতা সালিহকে পাঠাইয়াছিলাম এই আদেশসহ : তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, কিন্তু উহারা বিতর্কে লিপ্ত হইল। সে বলিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কেন কল্যাণের পূর্বে অকল্যাণ ত্বরান্বিত করিতে চাহিতেছ? কেন তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছ না, যাহাতে তোমরা অনুগ্রহ ভাজন হইতে পার? উহারা বলিল, তোমাকে ও তোমার সংগে যাহারা আছে তাহাদেরকে আমরা অমংগলের কারণ মনে করি। সালিহ বলিল, তোমাদের শুভাশুভ আল্লাহর এখতিয়ারে, বস্তুত তোমরা এমন এক সম্প্রদায় যাহাদেরকে পরীক্ষা করা হইতেছে। আর সেই শহরে ছিল এমন নয় ব্যক্তি, যাহারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করিত এবং সৎকর্ম করিত না। উহারা বলিল, তোমরা আল্লাহর নামে শপথ গ্রহণ কর, আমরা রাত্রিকালে তাহাকে ও তার পরিবার-পরিজনকে অবশ্যই আক্রমণ করিব; অতঃপর তাহার অভিভাবককে নিশ্চয় বলিব, তাহার পরিবার-পরিজনের হত্যা আমরা প্রত্যক্ষ করি নাই। আমরা অবশ্যই সত্যবাদী । উহারা এক চক্রান্ত করিয়াছিল এবং আমিও এক কৌশল অবলম্বন করিলাম, কিন্তু উহারা বুঝিতে পারে নাই। অতএব দেখ, উহাদের চক্রান্তের পরিণাম কী হইয়াছে–আমি অবশ্যই উহাদেরকে ও উহাদের সম্প্রদায়ের সকলকে ধ্বংস করিয়াছি। এই তো উহাদের ঘর-বাড়ী–সীমালঙ্ন হেতু যাহা জনশূন্য অবস্থায় পড়িয়া আছে; ইহাতে জ্ঞানী লোকদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রহিয়াছে। এবং যাহারা মুমিন ও মুত্তাকী ছিল তাহাদেরকে আমি উদ্ধার করিয়াছি” (২৭ : ৪৫-৫৩)।

আল্লাহ তাআলা সূরা হা-মীম আস-সজদায় বলেন :

“আর ছামূদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার তো এই যে, আমি উহাদেরকে পথনির্দেশ করিয়াছিলাম, কিন্তু উহারা সৎপথের পরিবর্তে ভ্রান্ত পথ অবলম্বন করিয়াছিল। অতঃপর উহাদেরকে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তির বজ্র আঘাত হানিল উহাদের কৃতকর্মের পরিণামস্বরূপ। আমি উদ্ধার করিলাম তাহাদেরকে যাহারা। ঈমান আনিয়াছিল এবং যাহারা তাকওয়া অবলম্বন করিত” (৪১ : ১৭-১৮)।

সূরা আল-কামারে আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন :

“ছামূদ সম্প্রদায় সতর্ককারীদেরকে অস্বীকার করিয়াছিল; তাহারা বলিয়াছিল, আমরা কি আমাদেরই এক ব্যক্তির অনুসরণ করিব? তবে তো আমরা পথভ্রষ্টতায় এবং উন্মত্ততায় পতিত হইব। আমাদের মধ্যে কি তাহারই প্রতি প্রত্যাদেশ হইয়াছে :না, সে তো একজন মিথ্যাবাদী দাম্ভিক। আগামী কল্য উহারা জানিবে, কে মিথ্যাবাদী, দাম্ভিক। আমি উহাদের পরীক্ষার জন্য পাঠাইয়াছি এক উষ্ট্ৰী, অতএব তুমি উহাদের আচরণ লক্ষ্য কর এবং ধৈর্যশীল হও। এবং উহাদেরকে জানাইয়া দাও যে, উহাদের মধ্যে পানি বণ্টন নির্ধারিত এবং পানির অংশের জন্য প্রত্যেকে উপস্থিত হইবে পালাক্রমে। অতঃপর উহারা উহাদের এক সংগীকে আহবান করিল, সে উহাকে ধরিয়া হত্যা করিল। এরূপ কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী। আমি উহাদেরকে আঘাত হানিয়াছিলাম এক মহানাদ দ্বারা; ফলে উহারা হইয়া গেল খোয়াড় প্রস্ততকারীর বিখণ্ডিত শুষ্ক শাখা-প্রশাখার ন্যায়। আমি কুরআন সহজ করিয়া দিয়াছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেহ আছে কি?” (৫৪ : ২৩-৩২)।

সূরা আশ-শামসে মহান আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

“ছামূদ সম্প্রদায় অবাধ্যতাবশত অস্বীকার করিয়াছিল, উহাদের মধ্যে যে সর্বাধিক হতভাগ্য, সে যখন তৎপর হইয়া উঠিল, তখন আল্লাহর রাসূল উহাদেরকে বলিল, আল্লাহর উষ্ট্রী ও উহাকে পানি পান করাইবার বিষয়ে সাবধান হও। কিন্তু উহারা রাসূলকে অস্বীকার করিল এবং উহাকে কাটিয়া ফেলিল। উহাদের পাপের জন্য উহাদের প্রতিপালক উহাদেরকে সমূলে ধ্বংস করিয়া একাকার করিয়াছিলেন। এবং ইহার পরিণাম সম্পর্কে তিনি ভয় করেন না” (৯১ : ১১-১৫)।

তাফসীরে মাযহারীতে উল্লেখ রহিয়াছে যে, রাসূলুল্লাহ (স) হইতে বর্ণিত আছেঃ আদ সম্প্রদায় ধ্বংস হইয়া গেলে ছামূদ জাতি তাহাদের আবাসভূমি আবাদ করে এবং তথায় বসবাস করিতে থাকে । ছামূদ সম্প্রদায় খুবই প্রাচুর্যের মধ্যে জীবন যাপন করিত। ফলে তাহারাই পৃথিবীতে ফিত্না-ফাসাদ সৃষ্টি করিল। তাহারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য বাতিল ইলাহসমূহের ইবাদত করিতে লাগিল। আল্লাহ তাআলা তাহাদের নিকট নবী সালিহ (আ)-কে প্রেরণ করিলেন। যুবক অবস্থায় প্রেরিত হইয়া তিনি বৃদ্ধ হইয়া গেলেন। এই দীর্ঘকাল তিনি আল্লাহর পথে নিজ সম্প্রদায়কে আহবান করিতে থাকিলেন। তবুও গুটিকয়েক দুর্বল শ্রেণীর লোক ব্যতীত আর কেহই তাহার অনুসরণ করিল na। সালিহ (আ) যখন বারবার স্বীয় সম্প্রদায়কে আল্লাহর পথে আহবান করিতেছিলেন এবং বারবার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করিতেছিলেন তখন একদা তাঁহার সম্প্রদায় তাহার নিকট কোন অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শনের আবেদন জানাইল। সেই অলৌকিক ঘটনার দ্বারা তাহার নবী হইবার বিষয়টি স্পষ্ট হইয়া উঠে। তিনি তাহা শুনিয়া তাহাদেরকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা কি ধরনের অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করিবার কথা ভাবিতেছ? তাহারা বলিল, আপনি আমাদের সহিত আগামী কল্য আমাদের ঈদ উৎসবে বাহির হইবেন। এখানে উল্লেখ্য যে, ছামূদ সম্প্রদায়ের একটি উৎসবের দিন ছিল। ইহাতে তাহারা বৎসরের নির্দিষ্ট একটি দিবসে তাহাদের প্রতিমাগুলিসহ বাহির হইত। তাহারা বলিল, ঐ উৎসবে আপনি আপনার ইলাহের নিকট দুআ করিবেন। আর আমরা আমাদের ইলাহসমূহের নিকট দুআ করিব। যদি আপনার দুআ কবুল হয় তাহা হইলে আমরা আপনার অনুসরণ করিব। পক্ষান্তরে যদি আমাদের দুআ কবুল হয় তাহা হইলে আপনি আমাদের অনুসরণ করিবেন। আল্লাহর নবী সালিহ (আ) তাহাদের প্রস্তাব গ্রহণ করিলেন। ছামূদ সম্প্রদায় তাহাদের প্রতিমাসমূহ লইয়া উৎসবে রওয়ানা করিল। সালিহ (আ)ও তাহাদের সহিত রওয়ানা হইলেন। লক্ষ্যস্থলে পৌঁছিয়া তাহারা নিজেদের প্রতিমাগুলির উপাসনা করিল এবং ইহাদের নিকট প্রার্থনা করিল যে, সালিহ যেই বিষয়ের প্রতি আহবান জানাইতেছেন তাহার কোন কিছুই যেন কবূল করা না হয়। অতঃপর তদানিন্তন ছামূদ সম্প্রদায়ের সরদার জুদা ইবন আমর ইবন জাওয়াস বলিল (তাফসীরে মাযহারী, আরবী, ৩খ., সূরা আরাফ, ৩৭৭), রুহুল মাআনীতে বলা হইয়াছে ইব্‌ন হাবরাশ (৮খ., ১৬৬, প্রাগুক্ত) আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়ায় জুনদা-এর নসবনামা আরও বাড়াইয়া বলা হইয়াছে জুনদা ইবন আমর ইবন মাহাল্লাত ইব্‌ন লাবীদ ইবন জাওয়াস (প্রাগুক্ত, ১খ., ১২৬)। হে সালিহ! যদি হিজরের পার্শ্বস্থিত আল-কাছিবা নামক শক্ত পাথর হইতে স্কুলোদর অধিক পশমযুক্ত দশ মাসের গর্ভবতী একটি উষ্ট্ৰী অথবা বুখী অর্থাৎ খুরাসানী উটের আকৃতিতে একটি উষ্ট্ৰী সৃষ্টি করিতে পারেন তাহা হইলে আমরা আপনাকে সত্যবাদী বলিয়া স্বীকার করিব, আপনার উপর ঈমান আনিব। তাহাদের এই স্বীকারোক্তির অনুকূলে সালিহ (আ) তাহাদের নিকট হইতে ঈমান আনার পরিপূর্ণ প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করিলেন। তাহারা এই শর্তে তাঁহাকে সত্যবাদী বলিয়া মানিয়া লইতে ও তাহার উপর ঈমান আনিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হইল। সালিহ (আ) দুই রাকআত সালাত আদায় করিয়া আল্লাহর দরবারে দুআ করিলেন। ফলে ঐ পাথর ফাটিয়া তাহার ভিতর হইতে ইহাদের প্রত্যাশিত দশ মাসের গর্ভবতী ও অধিক পশমযুক্ত একটি উষ্ট্ৰী বাহির হইয়া আসিল। উষ্ট্রীটির উভয় বাহুর মধ্যবর্তী স্থলে বড় কি জিনিস ছিল তাহা একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেহই জানে না। অতঃ উষ্ট্ৰীটি প্রকাণ্ড একটি বাছুর প্রসব করিল। ইহা প্রত্যক্ষ করিয়া জুদা ও তাহার গোত্রের কিছু সংখ্যক লোক সালিহ (আ)-এর উপর ঈমান আনিল। তাহার অনুসরণে ছামূদ সম্প্রদায়ের অন্যান্য অভিজাত শ্রেণীর লোকজন তাঁহার উপর ঈমান আনয়নের সংকল্প করিল । কিন্তু যুআব ইব্‌ন আমর ইবন লাবীদ, তাহাদের প্রতিমাবলীর তত্ত্বাবধায়ক হবাব এবং গণক রাবাব ইবন মার [ ] (তাফসীরে মাযহারীতে রাববাব ইবন মায়মাআ) তাহাদেরকে ঈমান আনিতে বারণ করিল ।.উষ্ট্ৰীটি বাচ্চা প্রসব করিবার পর সালিহ (আ) ছামূদ জাতিকে বলিলেন : [ ] “ইহা আল্লাহর উষ্ট্রী”, ইহার পানি পানের জন্য পালাক্রমে একদিন এবং তোমাদের একদিন নির্ধারিত করিয়া দেওয়া হইল। উষ্ট্ৰীটি তাহার বাছুরসহ ছামূদ সম্প্রদায়ের এলাকায় অবস্থান করিল। সে গাছপালা আহার করিত এবং পানি পান করিত, পালাক্রমে পানির ঘাটে অবতরণ করিত। তাহার পালার দিন সে আল-হিজরের কূপে মাথা রাখিত। বর্তমানে কূপটির নাম ‘বিরুন নাকা’ [ ]। কূপটির সম্পূর্ণ পানি পান না করা পর্যন্ত সে তাহার মাথা উত্তোলন করিত না। এক বিন্দু পানি কূপে বাকী থাকিত না। পানি পান সারিয়া সে তাহার উভয় রান মেলিয়া ধরিত যাহাতে ছামূদ সম্প্রদায় তাহাদের ইচ্ছামত দুধ দোহন করিতে পারে। তাহারা তাহার স্তন হইতে দুধ দোহন করিয়া তৃপ্তিসহকারে পান করিবার পর অবশিষ্ট দুধ সংরক্ষণ করিয়া রাখিত। সংরক্ষণ করিতে গিয়া তাহাদের সকল পাত্র ভরিয়া যাইত। যেই ঘাট দিয়া কূপে উষ্ট্ৰীটি অবতরণ করিত ফিরিবার সময় সে ভিন্ন পথে ফিরিয়া আসিত। অবতরণস্থল তাহার জন্য সংকীর্ণ হওয়ায় ইহা দিয়া সে ফিরিয়া আসিতে পারি না। পরবর্তী দিনে ছামূদ জাতির পানি পানের পালা আসিলে তাহারা নিজ নিজ চাহিদামত পান করিত এবং প্রয়োজন মাফিক তাহা সংরক্ষণ করিত। যাহাতে উষ্ট্ৰীটির পানের দিনে তাহাদের কোন পানি সংকট দেখা না দেয় । এইভাবে তাহারা অভাবমুক্ত উন্নত জীবন যাপন করিতে লাগিল। উষ্ট্ৰীটির বৈশিষ্ট্য ছিল, গ্রীষ্মকালে সে মাঠে বাহির হইয়া থাকিত। ইহাতে ছামূদ সম্প্রদায়ের উট, গরু ও বকরী ইত্যাদি গৃহপালিত প্রাণী উপত্যকার বহির্ভাগ ত্যাগ করিয়া উহার অভ্যন্তরে আশ্রয় গ্রহণ করিত। ইহাতে তাহাদের গৃহপালিত পশুগুলি কষ্ট অনুভব করিত। অনুরূপ শীতকালে উষ্ট্ৰীটি মাঠের অভ্যন্তরে চলিয়া যাইত। ইহাতে পালিত পশুগুলি মাঠের বাহিরে পালাইয়া আসিত। ইহাতে তাহারা বেজায় কষ্ট অনুভব করিত। পালিত পশুর এই যাতনা ছিল আল্লাহর পক্ষ হইতে ছামূদ জাতির একটি পরীক্ষা। ইহা ছামূদ জাতির বিরাট মনোবেদনার কারণ হইয়া দাঁড়াইয়াছিল। তাহারা আল্লাহর হুকুম লঙ্ঘন করিতে উদ্যত হইল। তাহারা উজ্জ্বীটিকে হত্যা করিতে ঐক্যবদ্ধ হইল । ছামূদ সম্প্রদায়ের দুই মহিলা ছিল । একজনের নাম উনায়যাঃ বিন্ত গানম, তাহার কুয়াত ছিল উমমু গানম। সে ছিল যুআব ই আমরের স্ত্রী। তাহার ছিল কয়েকজন মেয়ে এবং প্রচুর উট, গরু ও বী। অপর মহিলার নাম সাদূক (তাফসীরে মাযহারীতে সাদূফ) বিনতুল মুখতার। সে ছিল অতি সুন্দরী । তাহার অনেক পালিত পশু ছিল । তাহারা দুইজনই সালিহ (আ)-এর ঘোরতর শত্রু ছিল। তাহারা উষ্ট্রীটিকে হত্যা করিতে অতি উৎসাহী ছিল। কারণ ইহা তাহাদের গৃহপালিত পশুর কষ্টের কারণ ছিল। ইহারই লক্ষ্যে সাদূক নাম্নী মহিলাটি আল-হুঁবার নামক এক লোককে আহবান করিল। সে তাহাকে বলিল, যদি তুমি এই উষ্ট্ৰীটি বধ করিতে পার তাহা হইলে তুমি আমাকে পাইবে। হুবাব ইহা অস্বীকার করিল। অতঃপর সে তাহার চাচাত ভাই মিসদা ইবন মাহরাজকে বলিল, যদি তুমি উষ্ট্ৰীটিকে বধ করিতে পার তাহা হইলে তুমি আমাকে পাইবে। সে ইহাতে সম্মত হইল। মহিলাটি অতি সুন্দরী ও ধনবতী হইবার ফলেই তাহার এই সম্মতি। উম্ম গানম উনায়যা কুদার ইবন সালিফকে আহবান করিল । কুদার ছিল গৌরবর্ণ বেঁটে লোক। ধারণা করা হয় যে, সে সালিফের অবৈধ সন্তান ছিল। উনায়যাঃ তাহাকে প্রস্তাব করিল, তুমি যদি ঐ উষ্ট্ৰীটি হত্যা করিতে পার তাহা হইলে আমার যেই মেয়ে তোমার পছন্দ তাহাকে আমি তোমার নিকট সমর্পণ করিব। সে ছিল তৎকালীন ছামূদ সম্প্রদায়ের একজন বীর পুরুষ। সে উহাতে সম্মতি জ্ঞাপন করিল। লক্ষ্য অর্জনে কুদার ও মিসদা প্রস্তুতি গ্রহণ করিয়া স্বীয় সম্প্রদায়ের অন্যান্যদের নিকট এই ব্যাপারে সহযোগিতা প্রার্থনা করিল। তাহাদের সহযোগিতায় আরও সাত ব্যক্তি যোগ দিল। ফলে এই ষড়যন্ত্রকারীদের সংখ্যা হইল মোট নয় জন। তাহারা উজ্জ্বীটির পানি পান শেষে ফিরিয়া আসিবার অপেক্ষায় ওঁত পাতিয়া রহিল। কুদার পাথরের আড়ালে লকুইয়া রহিল, মিসদা অন্য পথে লুকাইয়া রহিল। উষ্ট্ৰীটি মিসদা যেই দিকে অবস্থান গ্রহণ করিয়াছিল সেই দিক দিয়া ফিরিতে লাগিল, তখন মিসদা তাহাকে লক্ষ্য করিয়া তীর ছুঁড়িল। তীরটি তাহার পায়ের গোছায় তীব্র আঘাত হানিল। এই সময় উম্মু গানম উনায়যা বাহির হইল। সে তাহার খুব সুন্দরী এক মেয়েকে তাহার চেহারার অবগুণ্ঠন অপসারণের আদেশ করিল। সে অবগুণ্ঠন খুলিল এবং প্রলুব্ধ করিল, তখন সে উষ্ট্ৰীটিকে তরবারি দ্বারা আঘাত হানিয়া উহার পায়ের গোড়ালির রগ কাটিয়া ফেলিল। উষ্ট্ৰীটি ভূমিতে লুটাইয়া পড়িয়া তাহার বাচ্চাটিকে সতর্ক করিবার জন্য একটি চিৎকার দিল। অতঃপর কুদার উষ্ট্ৰীটির গলায় আঘাত হানিয়া তাহাকে বধ করিয়া ফেলিল। জনপদবাসীরা মাঠে বাহির হইয়া ইহার গোশত বণ্টন করিয়া লয় এবং রান্না করিয়া ফেলে। মায়ের এই মর্মান্তিক পরিণতি দেখিয়া তাহার বাছুরটি সুউচ্চ একটি পাহাড়ে পালাইয়া আশ্রয় গ্রহণ করে। পাহাড়টির নাম ছিল সাওর (১৮), মতান্তরে ফাযা (56)। রূহুল মাআনীতে (প্রাগুক্ত) আছে, এই সময় আল্লাহর নবী সালিহ (আ) তাহাদের মধ্যে আগমন করিলেন। তাহাকে উষ্ট্ৰীটি বধ করিবার কথা জানানো হইল । তাঁহার সহিত জনপদের অধিবাসীরা সাক্ষাত করিয়া তাঁহার নিকট এই কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করিল । তাহারা বলিল, হে আল্লাহর নবী! এই অপকর্মটি অমুক ব্যক্তি ঘট ইয়াছে। ইহাতে আমাদের কোন দোষ নাই। সালিহ (আ) তাহাদেরকে বলিলেন, দেখ! ইহার বাছুরটিকে পাও কি না? যদি বাছুরটি পাও তাহা হইলে আশা করা যায়, তাহার মাধ্যমে শাস্তি হইতে পরিত্রাণ পাওয়া যাইবে। তাহারা ইহাকে সন্ধান করিয়া পাড়াড়ের উপর দেখিতে পাইল। বাছুরটিকে তাহারা ধরিবার প্রস্তুতি গ্রহণ করিল । আল্লাহ তাআলা এই সময় পাহাড়কে আদেশ দিলে তাহা আকাশ পর্যন্ত এত দীর্ঘায়িত হইল যে, পাখি পর্যন্ত সেখানে পৌঁছিতে সক্ষম হয় নাই। নবী সালিহ (আ) সেখানে গেলে তাঁহাকে দেখিয়া বাছুরটি কাঁদিতে লাগিল এবং তাহার চক্ষু দিয়া অশ্রু ঝরিতে লাগিল। সেই সময়ে বাছুরটি তিনবার চিৎকার করিল। তাহার চিল্কারের পর শক্ত একটি পাথর ফাটিয়া গেলে বাছুরটি ইহার ভিতরে প্রবেশ করিল। এই সময় সালিহ (আ) বলিলেন, প্রতিটি বেদনা বিধুর চিৎকারের বিনিময়ে একদিন করিয়া অবকাশ পাইবে।

“তোমরা তোমাদের গৃহে তিনদিন জীবন উপভোগ করিয়া লও। ইহা একটি প্রতিশ্রুতি যাহা মিথ্যা হইবার নহে” (১১৪ ৬৫)।

ইবন ইসহাক হইতে বর্ণিত আছে যে, উষ্ট্রীটিকে হত্যাকারী নয়জনের মধ্যে চারজন বাছুরটির অনুসরণ করিয়াছিল । তাহাদের মধ্যে মিসদা তাহার ভাই যাব ইবন মাহরাজও ছিল । মিসদা বাছুরটির প্রতি তীর নিক্ষেপ করিলে তাহার হূদযন্ত্রে গিয়া আঘাত হানে। অতঃপর তাহারা বাছুরটির পা ধরিয়া টানিয়া বাহির করে । ইহাকেও হত্যা করিয়া তাহারা ইহার গোশত তাহার মায়ের গোশতের সহিত মিলায়। সালিহ (আ) তাহাদেরকে বলিলেন, “তোমরা আল্লাহ তাআলার সম্মানিত বস্তুকে [ ] অপমান করিয়াছ। তাই তোমরা তাহার শাস্তি ও পরিণাম ভোগের জন্য প্রস্তুত থাক”। তাহারা তাঁহার সহিত ঠাট্টা-বিদ্রূপ করিতে লাগিল। বলিল, এই শাস্তি কখন আসিবে? ইহার লক্ষণ কি? এইখানে উল্লেখ্য যে, ছামূদ সম্প্রদায় দিবসসমূহের নাম রাখিত এইভাবে : রবিবারকে ‘আল-আওয়াল, সোমবারকে ‘আল-আওন, মঙ্গলবারকে ‘দিবার, বুধবারকে ‘হিবার, বৃহস্পতিবারকে ‘মূনিস, শুক্রবারকে ‘আল-আরূবা এবং শনিবারকে ‘শিয়ার। ছামূদেরা বুধবার দিন আল্লাহর উষ্ট্ৰীটিকে বধ করিয়াছিল। তাহাদের প্রশ্নের উত্তরে সালিহ বলিলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (তাহাদের ভাষায় মূনিস দিবসে) তোমরা হলুদ বর্ণের মুখমণ্ডল লইয়া প্রভাত করিবে। পরবর্তী দিন শুক্রবার (তাহাদের ভাষায় য়াওমুল আরূবা) লাল বর্ণের মুখমণ্ডল লইয়া তোমরা প্রভাত করিবে। পরবর্তী দিন শনিবার (তাহাদের ভাষায় য়াওমে শিয়ার) তোমাদের চেহারা কাল বর্ণের হইয়া যাইবে। অতঃপর রবিবার (তাহাদের ভাষায় য়াওমে আওয়াল) প্রভাতে তোমাদের উপর শাস্তি আপতিত হইবে। সালিহ (আ) ইহা বলিবার পর সেই নয় ব্যক্তি, যাহারা উষ্ট্ৰীটি হত্যা করিয়াছিল, তাহারা বলিল, আস আমরা সালিহকে হত্যা করিয়া ফেলি । কারণ যদি সে সত্যবাদী হয় তাহা হইলে আগেই তাঁহাকে হত্যা করিয়া ফেলি, আর যদি মিথাবাদী হয় তাহা হইলে তাঁহাকে তাহার উষ্ট্রীর সহিত মিলাইয়া দেই ।

এই উদ্দেশে তাহারা রাত্রিকালে সালিহ (আ)-এর নিকট আসিল, যাহাতে তাঁহার পরিজনের উপর আক্রমণ করিতে পারে। কিন্তু ফিরিশতাগণ আক্রমণের পূর্বেই পাথর ছুড়িয়া তাহাদেরকে ধ্বংস করিয়া দিলেন। তাহাদের সংগী-সাথীরা যখন তাহাদের প্রত্যাবর্তনে বিলম্ব হইতে দেখিল তখন তাহারা সালিহ (আ)-কে বলিল, তুমিই তাহাদেরকে হত্যা করিয়াছ। অতঃপর তাহারা সালিহ (আ)-কে হত্যা করিতে মনস্থ করিল। হযরত সালিহ (আ)-এর রক্ষণার্থে তাঁহার পরিবার-পরিজন অস্ত্র সজ্জিত হইয়া দাঁড়াইল। তাহারা বলিল, “সালিহ (আ)-কে কোন অবস্থাতেই হত্যা করিতে পারিবে না। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করিয়াছেন যে, তোমাদের উপর তিন দিন পর শাস্তি নামিবে। তিনি তাঁহার ভবিষ্যদ্বাণীতে সত্যবাদী হইলে ইহার ফলে তোমাদের উপর তোমাদের প্রভুর ক্রোধই বৃদ্ধি পাইবে, আর মিথ্যাবাদী হইলে তোমরা যাহা ইচ্ছা তাহা করিতে পারিবে”। ঐ রাত্রিতে তাহারা সরিয়া পড়িল। বৃহস্পতিবার সকালে তাহাদের চেহারা হলুদ বর্ণ ধারণ করিল, ছোট-বড়-নারী পুরুষ সকলের চেহারায় এই বিকৃতি ঘটিল। ইহাতে তাহারা শাস্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হইয়া গেল। সালিহ (আ) সত্য বলিয়াছেন ইহা তাহারা বুঝিতে পারিল । ফলে তাহারা সালিহ (আ)-কে হত্যা করিবার জন্য তালাশ করিতে লাগিল। এমতাবস্থায় সালিহ (আ) ছামূদের বানূ গানম নামক এক গোত্রে আশ্রয় গ্রহণ করিলেন, বানূ গানমের নেতা নুফায়লের নিকট অবস্থান করিতে লাগিলেন। নুফায়ল ছিল মুশরিক, তাহার কুনয়া ছিল আবু হুদার। সে সালিহ (আ)-কে লুকাইয়া রাখিল। ছামূদ সম্প্রদায় সালিহ (আ)-কে হত্যা করিতে না পারিয়া তাহার অনুসারীদের উপর চড়াও হইল। তাহারা নবী সম্পর্কে তথ্য আদায় করিবার উদ্দেশে তাহাদেরকে নির্যাতন করিতে লাগিল। তাঁহার অনুসারীদের মধ্যে এক ব্যক্তির নাম ছিল মীদা ইবন হারাম [ ]। তিনি সালিহ (আ)-কে বলিলেন, হে আল্লাহর নবী! ইহারা আপনার অবস্থানস্থল সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্য আমাদেরকে নির্যাতন করিতেছে। আমরা কি তাহাদেরকে আপনার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করিব? তিনি বলিলেন, হাঁ, বলিয়া দিতে পার। তুমি বল, সালিহ আমার নিকটেই আছেন। তবে তাঁহাকে আঘাত করিবার তোমাদের কোন সাধ্য নাই। তাহারা তাহাদের উপর আপতিত শাস্তি লইয়াই ব্যাকুল হইয়া পড়িল । তাহারা তাহাকে হত্যা করিবার পরিকল্পনা ত্যাগ করিতে বাধ্য হইল । চেহারার বিকৃতি সম্পর্কে একজন অপরজনকে বলাবলি করিতে লাগিল। সন্ধ্যায় ধ্বংসের মুখামুখি ছামূদ সম্প্রদায় সমস্বরে চিৎকার দিয়া বলিয়া উঠিল, সাবধান! অবকাশের একটি দিবস অতিক্রান্ত হইল । দ্বিতীয় দিন ভোরে ইহারা স্বীয় মুখমণ্ডল রক্তিম বর্ণ ধারণ করিতে দেখিল। তাহাদের চেহারা যেন রক্তে রঞ্জিত হইয়া গিয়াছে, চিৎকার করিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে বলিতে লাগিল, এই তো আল্লাহর আযাব আসা শুরু হইয়া গেল। সন্ধ্যা হইয়া গেলে অনুরূপ সকলে মিলিয়া চিৎকার করিয়া বলিল, সাবধান! অবকাশের দুই দিন অতিক্রান্ত হইল। তৃতীয় ভোরে ঘুম হইতে জাগিয়া তাহারা তাহাদের চেহারা কৃষ্ণবর্ণের দেখিতে পাইল। চেহারা যেন আলকাতরা মাখানো ছিল। তখন সবাই মিলিয়া সমস্বরে চিৎকার করিতে করিতে বলিতে লাগলি, এখন তো আযাব অবধারিত হইয়া গিয়াছে। রবিবার দিবাগত রাতে সালিহ (আ) তাঁহার সঙ্গীদেরকে লইয়া সিরিয়া অভিমুখে রওয়ানা করিয়া ফিলিস্তীনের রামলা নামক স্থানে গিয়া অবস্থান করেন। চতুর্থ দিনে ভোর হইলে অভিশপ্ত এই ছামূদ সম্প্রদায় কাফন ও সুগন্ধি মৃতদেহে মাখাইবার জন্য তৈরী এক প্রকার মিশ্র সুগন্ধি (হাত) লইয়া শাস্তির প্রহর গুনিতেছিল। ভীত-সন্ত্রস্ত হইয়া ভূমির উপর শুইয়া গিয়া তাহারা হত বিহ্বল দৃষ্টিতে একবার আকাশ পানে আর একবার ভূমির দিকে তাকাইয়া কোন দিক দিয়া আযাব আসিতেছে তাহা দেখিতে লাগিল। রৌদ্র প্রখর হইলে মহানাদ তাহাদেরকে আঘাত করিল, ফলে উহারা নিজ নিজ গৃহে নতজানু অবস্থায় মারা গেল। তাহাদের উপর এই সময় আকাশ হইতে বিকট গর্জন আসিয়াছিল। ভূমণ্ডলে যত প্রকার ভয়ংকর ধ্বনি বিদ্যমান সবই তাহাদের উপর আপতিত হইয়াছিল। এই বিভীষিকাময় ধ্বনিতে তাহাদের অন্তর বিদীর্ণ হইয়া গিয়াছিল। এই পরিণতি হইতে উহাদের ছোট-বড় কেহই রক্ষা পাইল না। শুধু চলাফেরায় অক্ষম এক কিশোরী এই মহাধ্বংস হইতে রক্ষা পাইয়াছিল।

কিশোরীর নাম ছিল যারীয়া

রূহুল মাআনীতে যারীআ বিন্ত সালাফ (aL…;) (তাফসীরে মাযহারী)। কোন কোন গ্রন্থে যারীকা বিনত সালাফও রহিয়াছে। আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত। কিশোরীট ছিল কাফির। সে সালিহ (আ)-এর সহিত কঠোর শত্রুতা পোষণ করিত। স্বীয় সম্প্রদায়ের ভয়ানক পরিণতি প্রত্যক্ষ করিবার পর মহান আল্লাহ তাহার দুইটি পা সচল করিয়া দিলেন। সুতরাং সে তীব্র গতিতে এই স্থান ত্যাগ করিয়া ওয়াদিল কুরার ফারখ নামক স্থানে চলিয়া গেল। ওয়াদিল কুরার অধিবাসিগণকে তাহার স্বচক্ষে দেখা ভয়াবহ পরিণতির বিবরণ প্রদান করিল। অতঃপর সে পানি চাহিল। তাহাকে পানি পান করানো হইলে সে মৃত্যুর কোলে ঢলিয়া পড়িল (আত-তাফসীরুল মাযহারী, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৩৮৭ হি., ৩৩, ৩৭৬-৩৮০; রূহুল মাআনী, বৈরূত তা, বি., ৮খ, ১৬৬-১৬৭; তাফসীরুল বাগাবী, মুলতান তা, বি, ২খ, ১৭৫)। ছানাউল্লাহ পানিপতী আরও বলেন, উষ্ট্ৰীটি বধ করিবার ব্যাপারে আস-সুদ্দী উল্লেখ করেন, আল্লাহ তাআলা সালিহ (আ)-কে এই মর্মে প্রত্যাদেশ পাঠাইলেন যে, তোমার সম্প্রদায় অচিরেই তোমার উস্ত্রী হত্যা করিবে। তিনি এই প্রত্যাদেশের কথা তাঁহার সম্প্রদায়কে অবহিত করিলেন। তাহারা বলিল, আমরা উহা করিব না। তখন সালিহ (আ) বলিলেন : অমুক ব্যক্তির অমুক মাসে একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করিবে, পরবর্তী কালে সে-ই উষ্ট্ৰীটিকে হত্যা করিবে। ফলে তোমাদের ধ্বংস তাহারই কৃতকর্মের ফলে হইবে। তাহারা বলিল, অমুক মাসে আমাদের যেই সন্তান জন্মগ্রহণ করিবে আমরা উহাকে হত্যা করিয়া ফেলিব। উক্ত মাসে দশটি সন্তান প্রসব করিয়াছিল । উহারা তাহা হইতে নয়জনকে হত্যা করিয়াছিল। একটি সন্তান বাঁচিয়া গিয়াছিল । তাহার চেহারা ছিল নীল ও লাল বর্ণের। সে খুবই দ্রুত বৃদ্ধি পাইতে থাকিল । এই ছেলেটি যখন হত্যাকৃত নয়টি ছেলের জনকদের নিকট দিয়া চলাফেরা করিত তখন তাহাকে দেখিয়া তাহারা বলিত, যদি আমাদের পুত্রগুলি বাঁচিয়া থাকিত তাহা হইলে উহারা তাহার ন্যায় হইত। এই মনোবেদনায় ঐ নয়জন সন্তানহারা পিতা সালিহ (আ)-এর উপর প্রচণ্ডভাবে ক্ষিপ্ত হইল। সুতরাং তাহারা সালিহ (আ)-কে হত্যা করিবার জন্য আল্লাহর নামে শপথ গ্রহণ করিল। তাহারা শলাপরামর্শ করিল, আমরা ভ্রমণে বাহির হইবার ভান করিয়া অবস্থানস্থল ত্যাগ করিব। অতঃপর আমরা একটি গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করিব, যাহাতে লোকজন মনে করে আমরা ভ্রমণে গিয়াছি। রাত্রি হইলে যখন সালিহ (আ) মসজিদের উদ্দেশে বাহির হইবেন তখন আমরা তাহাকে আক্রমণ করিয়া হত্যা করিয়া ফেলিব। হত্যার কাজ সম্পন্ন করিয়া আবার আমরা গুহায় ফিরিয়া যাইব। অতঃপর আমরা গৃহে ফিরিয়া বলিব, তাহার পরিবার-পরিজনের হত্যা আমরা প্রত্যক্ষ করি নাই। আমরা অবশ্যই সত্যবাদী। ইহাতে তাহারা আমাদেরকে সত্যবাদী বলিয়া মানিয়া লইবে। মনে করিবে ইহারা তো সফরে ছিল। সালিহ (আ)-এর আবাস ছিল মসজিদে। তিনি পরিবার-পরিজনের সহিত গ্রামে থাকিতেন না। তাহার মসজিদটিকে মসজিদ সালিহ বলা হইত। ভোরবেলা স্বীয় উম্মতগণের নিকট আসিয়া তিনি তাহাদেরকে ওয়াজ-নসীহত করিতেন। সন্ধ্যা হইলে আবার মসজিদে ফিরিয়া যাইতেন। এখানে রাত্রিযাপন করিতেন। উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে ঐ নয় ব্যক্তি গুহায় প্রবেশ করিল। গুহাটি তখন ধ্বসিয়া পড়িলে তাহারা নিহত হয়। এই সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন ।

“উহারা এক চক্রান্ত করিয়াছিল এবং আমিও এক কৌশল অবলম্ব করিলাম, কিন্তু উহারা বুঝিতে পারে নাই” (২৭: ৫০)।

উহাদের এই চক্রান্ত সম্পর্কে ছামূদ সম্প্রদায়ের যাহারা অবগত ছিল তাহাদেরকে প্রত্যাবর্তন করিতে না দেখিয়া তাহারা ঐ গুহার মুখে আসিয়া দেখিল উহারা ধ্বংস হইয়া গিয়োছ। তাহারা হট্টগোল করিয়া জনপদে ফিরিয়া বলিল, হে আল্লাহর বান্দাগণ! সালিহ এই নয়টি সন্তানকে হত্যা করিবার নির্দেশ দিয়াও ক্ষান্ত হইল না। সে উহাদের এই নয়জন পিতাকেও হত্যা করিয়া ফেলিল। ইহার ফলস্বরূপ জনপদবাসীরা উজ্জ্বীটিকে হত্যা করিবার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করিল। ইবন ইসহাক বলিয়াছেন, উষ্ট্ৰীটিকে হত্যা করিবার পর উক্ত নয় ব্যক্তি সালিহ (আ)-কে হত্যা করিবার শপথ করিয়াছিল। আস-সুদদী ও অন্যান্যরা বলিয়াছেন, অন্যান্য ছেলেরা এক সপ্তাহে যতটুকু বৃদ্ধি পাইত, বাঁচিয়া যাওয়া যুহার নামক ঐ দশম ছেলেটি এক দিনে সেই পরিমাণ বৃদ্ধি পাইত। অন্যরা এক বৎসরে যতটুকু বৃদ্ধি পাইত সে এক মাসে সেই পরিমাণ বৃদ্ধি পাইত। সে পরিণত বয়সের অধিকারী হইলে অন্যান্য লোকদের সহিত আসন গ্রহণ করিল । উহারা মদ্যপানে অভ্যস্ত ছিল। মদ্যপানের নেশায় একদা তাহারা মত্ত হইয়া উঠিল। মদ বানানোর জন্য তাহাদের পানির প্রয়োজন ছিল। ঘটনাক্রমে এই দিনটি ছিল উষ্ট্রীর পানি পানের পালার দিন। পানি খুঁজিতে গিয়া দেখিল, উষ্ট্ৰীটি সব পানি পান করিয়া ফেলিয়াছে। ইহা তাহাদের অসীম ক্রোধের কারণ হইয়া দাঁড়াইল । তাহারা বলাবলি করিতে লাগিল, আমরা দুধ দিয়া কি করিব? ইহার চেয়ে যদি আমরা উষ্ট্ৰীটি যেই পানি পান করিতেছে তাহা লাভ করি তাহা হইলে আমাদের পালিত জন্তুগুলি তৃপ্তিতে পানি পান করিত, আমাদের কৃষি খামার ইহার দ্বারা সিঞ্চিত হইত। ইহাই আমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণকর ছিল। ইহা শুনিয়া কুদার উষ্ট্রীটিকে বধ করিবার প্রস্তাব দিলে তাহারা তাহাতে সম্মত হইল। অতঃপর সে উহাকে বধ করিয়া ফেলিল (তাফসীরুল মাযহারী, প্রাগুক্ত; তাফসীরুল বাগাবী, প্রাগুক্ত; আল-মাসউদী, মুরূজ, ২খ, ৪৪)। “আমার রিসালাতকে সত্যায়ন করিবে তাহারা স্বীকারোক্তি করিলে তিনি তাহাদের নিকট হইতে কঠিন অঙ্গীকার আদায় করিলেন। তাহাদের অবিকল প্রত্যাশামত আল্লাহর আদেশে উষ্ট্ৰী নির্দিষ্ট পাথর হইতে বাহির হইয়া আসিলে আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও অত্যুজ্জল অৗেকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করিয়া বহু সংখ্যক লোক সালিহ (আ)-এর উপর ঈমান আনিল। কিন্তু অধিকাংশ লোক তাহাদের পথভ্রষ্টতা হইতে ফিরিল না। প্রতিহিংসাপরায়ণতা পরিহার করিল না। ঈমানদারগণের সরদার ছিল জুনদা ইব্‌ন আমির ইবন মাহাল্লা ইবন লাবীদ ইবন জাওয়াস। অন্যান্য সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গও ইসলাম গ্রহণ করিবার সংকল্প করিয়াছিল। কিন্তু তাহাদেরকে যুআব ইবন আমর ইব্‌ন লাবীদ এবং খাব্বাব দুই প্রতিমা মালিক ও রাব্বার ইব্‌ন সামআর ইবন জালমা ইসলাম গ্রহণ করিতে বারণ করিল । জুনদা তাহার চাচাত ভাই শিহাব ইবন খালীফাঁকে ইসলামের দিকে আহবান করিলেন। সেও ছিল তাহাদের বংশের অভিজাত শ্রেণীর লোক। ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা করিলেও উপরিউক্ত তিন অভিশপ্ত তাহাকে বাধা প্রদান করে। ফলে সে উহাদের প্রতিই ঝুঁকিয়া পড়িয়া ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা ত্যাগ করে। এই সম্পর্কে ইব্‌ন কাছীর মিহরাশ ইবন গানামা ইবনুয যামীল (র) রচিত কবিতার কয়েকটি লাইব্‌ন উদ্ধৃত করিয়াছেন।

“আমরের (জুনদা-এর পিতা) সহিত পারিবারিক সম্পর্ক ছিল শিহাবের । আমরের পরিজন তাহাকে আল্লাহর নবীর দীনের প্রতি আহবান জানাইয়াছিল। সে ছিল সমগ্ৰ ছামূদ জাতির মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশীয়। সংকল্প করিয়াছিল সালিহ (আ)-এর দাওয়াত গ্রহণ করিবার, কিন্তু গ্রহণ করিতে পারে নাই। সালিহ আমাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত হইয়া যান। ছামূদ সম্প্রদায়ের কেহই উচ্চ মর্যাদায় তাহার তুল্য নহে । হিজরের অধিবাসিগণের পথভ্রষ্টরা হিদায়াত লাভের পর আবার ভয়ে ফিরিয়া গেল অথবা মাছির ন্যায় ফিরিয়া গেল” (ইব্‌ন কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, মিসর ১৪০৮ হি., ১খ, ১২৬; তাফসীরে হাককানী, দিল্লী তা, বি; ২খ, ৪০০)।

হুবাব ইবন আমর স্বীয় আবাসভূমি ত্যাগ করিয়া মুমিনদের কাতারভুক্ত হইয়াছিলেন। ধ্বংসপ্রাপ্ত ছামূদ সম্প্রদায় সম্পর্কে তিনি বলেন :

“ছামূদ সম্প্রদায় বড়ই সম্মানিত ও অভিজাত শ্রেণীর লোক ছিল। প্রতিবেশীর পক্ষ হইতে তাহাদের উপর অত্যাচার করা হইত না।

“উহারা তাহাদের আশেপাশের শত্রুদের পক্ষ হইতে তাহাদের উপর তরবারি চালানোর ভয় করিত না এবং ভষ্মীভূত বৃক্ষের ন্যায় মূলোৎপাটনেরও আশংকা করিত না।

“উহারা আল্লাহর একটি উষ্ট্রীকে হত্যা করিয়া ফেলিল। অথচ তাহাদেরকে এই ব্যাপারে সতর্ক করা হইয়াছিল। উহারা পুন্যবান লোক ছিল না।

“তাহারা কুদারকে আহবান করিল, এই দিকে উজ্জ্বীটির বাছুরের পোশত তাহাদের সামনে পাড়িয়া রহিয়াছিল। বাছুর হারা মা ও বাছুরের কি কোন দোষ ছিল?

‘কুদার ও তাহার সঙ্গীটি উষ্ট্ৰীটি হত্যা করিতে সালিহ-এর পরোয়া করিল না। এই সম্প্রদায় পরিপূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিয়াছিল।

“সালিহ-এর নিকট তাহারা আল্লাহর পক্ষ হইতে প্রহরীর সম্মুখীন হইয়াছিল। অতএব চরমভাবে উহাদের মাথা পাথরের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হইয়া গিয়াছিল” (আল-মাসউদী, মুরূজুয- যাহাব, প্রাগুক্ত, ২থ, ৪৫)।

আস-সুদ্দীর বরাতে ইমাম তাবারী উষ্ট্রী সম্পর্কিত নিম্নোক্ত ঘটনা উল্লেখ করিয়াছেন। উষ্ট্ৰীটি যেই দিন পানি পান করিত সেই দিন সে দুইটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থান দিয়া যাত্রা করিত। এই দুইটি পাহাড়ে তাহার পদচিহ্ন রহিয়াছে। ইহা কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকিবে । কুদার ও মিসদা ব্যতীত উষ্ট্ৰীটির আরও তিনজন হত্যাকারীর নাম ইবন ইসহাক সূত্রে আত-তাবারী উল্লেখ করিয়াছেন। তাহারা হইল, হাবীল ইব্‌ন মীলাগ [ ], সে ছিল কুদারের মামা, হিজরবাসীর বীরপুরুষ। দাঈর ইবন গানম ইব্ন দাইর [ ]। সে ছিল হালওয়া ইবনুল মাহাল গোত্রের লোক। তৃতীয় ব্যক্তি হইল মিসদাহ ইবন মিহরাজের ভাই দাব ইবন মিহরাজ। তাবারী আবু ইসহাক হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেন, আবূ মূসা (রা) বলিয়াছেন ।

“আমি ছামুদ সম্প্রদায়ের ভূখণ্ডে আসিয়া উষ্ট্ৰীটির যাতায়াত পথ মাপিয়া দেখিলাম, ইহা ষাট হাত লম্বা” (তাবারী, তাফসীর, ১৩৯৮ হি./ ১৯৭৮ খৃ., ৮খ, ১৫৮-১৬২)।

তাবারী বলেন, কাতাদা বলিয়াছেন, উষ্ট্ৰীটি হত্যাকারী লোকটি বলিয়াছিল :

“উষ্ট্রীটি হত্যা করিবার ব্যাপারে তোমরা সকলেই সম্মতি প্রকাশ না করিলে আমি ইহাকে হত্যা করিব না। সুতরাং তাহারা মহিলাদের শিবিরগুলিতে প্রবেশ করিয়া এই সম্পর্কে মতামত গ্রহণ করিল। মহিলা ও শিশু সকলেই এই ব্যাপারে সম্মতি জ্ঞাপন করিল। ফলে উহারা উষ্ট্ৰীটিকে হত্যা করিয়াছিল” (তাবারী, তাফসীর, বৈরূত ১৩৯৮ হি. ৮খ, ১৬২)।

ঘাতকের নয় নাম

আল্লামা যামাখশারী বলেন, ওয়াহ্ ইবন মুনাব্বিহ (র) হইতে বর্ণিত এই নয়জন ঘাতকের নাম হইল : আল-হুঁযায়ল ইবন আবদ রাব্ব, গানাম ইব্‌ন গানম, রিয়াব ইবন মিহরাজ, মিসদা ইব্‌ন মিহরাজ, উমায়র ইব্‌ন কারদাবা, আসিম ইবন মাখরামা, সাবীত ইবন সাদাকা, সামআন ইব্‌ন সাফী (আবুস সাউদ শামআন), কুদার ইব্‌ন সালিফ। এই নয়জন ঘাতক উষ্ট্রীটিকে হত্যা করিবার পরিকল্পনা করিয়াছিল। ইহারা ছিল সালিহ (আ)-এর সম্প্রদায়ের অভিজাত শ্রেণীর লোক কিন্তু তাঁহার চরম শত্রু (আয-যামাখশারী, আল-কাশশাফ, বৈরূত তা, বি., ৩খ, ১৫২)। ইবন ইসহাক-এর বরাতে আল্লামা কুরতুবী বলেন, ঘাতকদের নেতা ছিল কুদার ইবন সালিফ ও মিসদা ইব্‌ন মিহরাজ। আর সাতজন তাহাদের অনুসরণ করিয়াছিল, ইহাদের নাম সম্পর্কে মতভেদ রহিয়াছে (বিস্তারিত বিবরণের জন্য দ্র. আল-কুরতুবী, তাফসীর, ৭খ, পৃ.-২১৫-১৬; আত-তাবারসী, মাজমাউল বায়ান ফী তাফসীরিল কুরআন, বৈরূত ১৪০৬ হি. / ১৯৮৬ খৃ., ৭খ, ৩৫৪)।

ইমাম বুখারী তাহার সূত্রে আবদুল্লাহ ইবন যামআ (রা) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন ।

“আবদুল্লাহ ইব্‌ন যামআ (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (স)-কে ভাষণ দিতে শুনিয়াছেন। রাসূলুল্লাহ (স) তাঁহার ভাষণে উজ্জ্বীটি ও তাহার হত্যাকারীদের কথা উল্লেখ করিয়াছেন। রাসূলুল্লাহ (স) বলিলেন, “উহাদের মধ্যে যে সর্বাধিক হতভাগ্য, সে যখন তৎপর হইয়া উঠিল” (৯১৪১২)-এর ব্যাখ্যা হইল, তৎপর হইয়া উঠিল উষ্ট্ৰীটিকে বধ করিবার জন্য। বলবান, চরম দুষ্ট, স্বীয় গোত্রের অপ্রতিরোধ্য একটি লোক, সে ছিল আবু যামআর ন্যায়” (বুখারী, কিতাবুত-তাফসীর, সূরা শামস, ২খ, ৭৩৭)।

আবু রিগালের ঘটনা

আল্লামা তাবারী জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন :

“জাবির (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) হিজর নামক স্থান দিয়া অতিক্রম করা কালে বলিলেন : তোমরা অলৌকিক নিদর্শনাবলী (মুজিযা) চাহিও না। সালিহ সম্প্রদায় এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল। তাহাদের মুজিযাটি এই প্রশস্ত রাস্তা দিয়া গমন করিত এবং ঐ রাস্তা দিয়া (উত্নী) ফিরিয়া আসিত। তাহারা আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন করিয়া উষ্ট্ৰীটিকে হত্যা করিল। উষ্ট্ৰীটি একদিন তাহাদের পানি পান করিত এবং উহারা একদিন উষ্ট্রীর দুধ পান করিত। ইহার কারণে উহারা ইহাকে বধ করিল। ইহার ফলে মহানাদ তাহাদেরকে আঘাত করিল। ইহার সূত্রপাত হইয়াছিল আকাশের নিম্নভাগ হইতে । তবে একটি লোক এই ভয়াবহ পরিণতি হইতে রক্ষা পাইয়াছিল। সে হারাম শরীফে (আশ্রয়াধীন) ছিল। সাহাবী জিজ্ঞাসা করিলেন, এই লোকটি কে? রাসূলুল্লাহ (স) বলিলেন : আবু রিগাল! সে যখন “হারাম” হইতে বাহির হইল তখন তাহার সম্প্রদায়ের ন্যায় সেও তাহা ভোগ করিল”।

আবদুর রাযযাক মুআম্মার সূত্রে এবং তিনি ইসমাঈল ইবন উমায়া সূত্রে বলেন :

রাসূলুল্লাহ (স) আবু রিগালের কবরের পাশ দিয়া অতিক্রম করিবার সময় সাহাবীদেরকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা কি জান ইহা কি? তাঁহারা বলিলেন, আল্লাহ ও তাঁহার রাসূল এই ব্যাপারে

সম্যক জ্ঞাত। রাসূলুল্লাহ (স) বলিলেন, ইহা আবু রিগালের কবর । তাহারা জিজ্ঞাসা করিলেন, আবু রিগাল কে? রাসূলুল্লাহ (স) বলিলেন, ছামূদ সম্প্রদায়ের এক লোক। সে আল্লাহর হারাম শরীফে অবস্থান করিয়াছিল। ফলে ইহা তাহাকে আল্লাহর শাস্তি হইতে রক্ষা করে। সে যখন উহা হইতে বাহির হইল তখন তাহার সম্প্রদায়ের যেই পরিণতি হইয়াছিল সেও উহা ভোগ করিল এবং তাহাকে ঐ স্থানে দাফন করা হইয়াছিল। দাফনের সময় তাহার সহিত স্বর্ণের একটি লম্বা টুকরাও দাফন করা হইয়াছিল। ইহা শুনিয়া সাহাবীগণ খুব দ্রুত তরবারি লইয়া কবরটি খুঁড়িয়া স্বর্ণের লম্বা টুকরাটি তাহারা বাহির করিলেন।

আবদুর রাক ইমাম যুহরী সূত্রে বলেন, আবু রিগাল হইল ছাকীফের পিতা (তাবারী, জামিউল বায়ান ফী তাফসীরিল কুরআন, ৮খ, ১৬২)। আবু রিগাল সম্পর্কিত প্রথমোক্ত হাদীছটি সম্পর্কে আল্লামা ইব্‌ন কাছীর বলেন, এই হাদীছটি সহীহ মুসলিমের শর্তানুযায়ী বর্ণিত। কিন্তু সিহাহ সিত্তায় ইহা বর্ণিত হয় নাই। দ্বিতীয় হাদীছ সম্পর্কে তিনি বলেন, ইহা একটি মুরসাল হাদীছ।

আবদুল্লাহ্ ইবন আমর (রা) হইতে বর্ণিত এক হাদীছে বলা হইয়াছে, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (স)-এর সাহিত তাইফের দিকে বাহির হইয়াছিলেন। অপরাপর বর্ণনাগুলিতে রহিয়াছে হিজর অভিমুখে রওয়ানার কথা। এই হাদীছটি বর্ণনা করিয়া ইবন কাছীর বলেন, আবূ দাউদের বর্ণনাও অনুরূপ। তিনি আরও বলেন, হাফিজ আবুল হাজ্জাজ আল-মিযী (র) এই হাদীছটিকে ‘হাসান আযীয বলিয়াছেন। বুহায়র ইবন আবু বুহায়র একা এই হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীছটি ব্যতীত তাহার অন্য কোন পরিচয় নাই। ইসমাঈল ইবন উমায়্যা ব্যতীত তাহার নিকট হইতে অন্য কেহ হাদীছ বর্ণনা করেন নাই। আল-মিযষী বলিয়াছেন, হাদীছটিকে মার হিসাবে বর্ণনা করা সম্ভবত ধারণাপ্রলূত। ইহা আবদুল্লাহ্ ইবন. আমরের উক্তি হইতে পারে (ইবন কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, দারুদ-দায়ান মিসর ১৪০৮ হি., ১৯৮৮ খৃ., ১খ., ১২৯-১৩০)। আল-মাসউদী বলেন, আবৃ রিগাল তাইফ ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থান আল-মুগাম্মাস নামক স্থানের রাস্তায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হইয়াছিল। তাহার কবরকে পরবর্তী কালে প্রস্তারাঘাত করা হইত। আরবরা ইহা দ্বারা উপমা দান করিত। জারীর ইবনুল খিতফী আল-ফারাযদাক সম্পর্কে উপমাস্বরূপ বলেনঃ

“আল-ফারাদাক যখন মারা যাইবে তখন তাহাকে প্রস্তরাঘাত কর, যেইভাবে তােমরা আবৃ রিগালকে প্রস্তরাঘাত কর”। আল-মাসউদী আরও বলেন ঃ কেহ কেহ বলেন, আবূ রিগালকে সালিহ (আ) সম্পদের সাদাকা আদায়ের জন্য নিয়ােগ করিয়াছিলেন। সে তাহার নির্দেশ অমান্য করিল এবং তাহার চরিত্র ছিল অসৎ । ফলে তাহার উপর ছাকীফ চড়াও ইহল। ছাকীফের নাম ছিল কাসী ইবন মুনাব্বিহ। হারাম শরীফের অধিবাসীদের সহিত তাহার অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে ছাকীফ আবৃ রিগানকে নির্মমভাবে হত্যা করিল। গায়লান ইবন সানামা তাহার পুর্বপুরুষ ছাকীফ কর্তৃক আবু রিগালের উপর কঠোরতা অবলম্বন সম্পর্কে বলেন, আমরা নির্দয় বংশীয় লােক, আমাদের পিতা কঠোরতা অবলম্বন করিয়াছেন। এই সম্পর্কে উমায়া ইবন আবিস-সালত আছ-ছাকীফ বলেন,

“আদনান বংশকে তাহারা বলপূর্বক তাহাদের ভূমি হইতে বিতাড়িত করিল। ইহারা ছিল গােত্রসমূহের উপর বল প্রয়ােগকারী। উহারা আবৃ রিগালের মত নেতাকে হত্যা করিল। হত্যা স্থলটি ছিল মক্কায় যখন সে তথায় উৎপাত করিত” ।।

‘আমার ইন দাররাক আল-আবদী এই সম্পর্কে বলেন,

“তুমি আমাকে দেখিবে যদি আমি কায়সের দড়িসমূহ কাটিয়া ফেলি এবং বান্ তামীমের চলাচলের বিরুদ্ধাচারণ করি। আমি আবৃ রিগাল হইতে অনেক বড় দুষ্ট এবং রাজ্য পরিচালনায় সাম হইতে বহু গুণ বেশি অত্যাচারী”।

মিসকীন আদ-দারিমী বলেন,

“আমি প্রতি বৎসর তাহার কবরে প্রস্তরাঘাত করি, যেইভাবে লোকে আবু রিগালের কবরে প্রস্তরাঘাত করে” (আল-মাসউদী, মুরূজুয-যাহাব, ২খ, ৭৮-৭৯)। আল্লাহর উল্লী আখ্যায়িত করার কারণ

আল-কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করিয়াছেন, “ইহা আল্লাহর উষ্ট্রী, ইহা তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন” (৭ : ৭৩)। এই সম্পর্কে আল্লামা কুরতুবী বলেন, উষ্ট্রীটিকে আল্লাহর দিকে সম্পর্ক করা হইয়াছে সৃষ্টির সহিত স্রষ্টার সম্পর্ক হিসাবে। ইহা উস্ত্রীটির মর্যাদার ইঙ্গিতবহ (কুরতুবী, আল-জামি লিআহকামিল কুরআন, ৮খ, ২৩৮)। সায়্যিদ আসী বলেন, উষ্ট্ৰীটির সম্পর্ক আল্লাহর সাথে করা হইয়াছে ইহার সম্মানার্থে, যেইভাবে মসজিদকে বায়তুল্লাহ বলা হয়। তবে এখানে ইফতটি (সম্পৰ্ক) অতি নগণ্য সামঞ্জস্যের কারণে হইয়াছে। আল্লাহর দিকে ইযাফত করার আরও কারণ হইল, উষ্ট্রীর স্বাভাবিক জন্মলাভের পদ্ধতি ও কারণসমূহের দ্বারা সৃষ্টি হয় নাই। ফলে ইহাকে আল্লাহর স্পষ্ট নিদর্শন বলা হইয়াছে। কেহ কেহ বলিয়াছেন, আল্লাহ ব্যতীত ইহার কোন মালিক ছিল না বিধায় তাহার উষ্ট্ৰী বলা হইয়াছে (আল-আসী, রূহুল মাআনী, ৮খ., ১৬৩)। ইমাম রাযী বলেন, কাহারও কাহারও মতে উহা আল্লাহর নিদর্শন হইল এই হিসাবে যে, ইহা পূর্ণ অবয়বে পাথর হইতে নির্গত হইয়াছিল। কাদী ইয়াদ বলেন, এই অভিমত সঠিক হইলে তিনটি কারণে ইহাতে অলৌকিকতা রহিয়াছে, তাহা হইলঃ পর্বত হইতে ইহার আবির্ভাব, স্বাভাবিকভাবে উস্ত্রীর পেটে জন্ম না হওয়া এবং ধাপে ধাপে বৃদ্ধি হওয়া ছাড়াই পূর্ণ উস্ত্রী হিসাবে আত্মপ্রকাশ। দ্বিতীয় অভিমত হইল, উহা আল্লাহর নিদর্শন ছিল এই হিসাবে যে, এই উষ্ট্রীর পানি পানের পালা ছিল একদিন আর সমূদয় ছামূদ সম্প্রদায়ের পানের পালা ছিল আর একদিন। তৃতীয় অভিমত হইল উজ্জ্বীটি যেইদিন পানি পান করিত সেইদিন সমগ্র ছামূদ সম্প্রদায়ের লোকজন তাহাদের চাহিদামত উষ্ট্রী হইতে দুধ দোহন করিত। চতুর্থ অভিমত হইল, উষ্ট্ৰীটি যেই দিন পানি পান করিত সেই দিন অন্যান্য সকল প্রাণী পানি পানের ঘাটে অবতরণ করা হইতে বিরত থাকিত। আর যেই দিন সে পানি পান করিত না সেই দিন সকল প্রাণী ঘাটে নামিয়া আসিত । মোটকথা, আল-কুরআন উষ্ট্রীটিকে নিদর্শন বলিয়া আখ্যায়িত করিয়াছে কিন্তু তাহা কি কারণে নিদর্শন তাহা উল্লেখ করে নাই। তবে ইহা অবশ্যই জ্ঞাতব্য যে, উষ্ট্ৰীটি নিঃসন্দেহ মুজিযা ছিল (ফাখরুদ্দীন আর-রাযী, আত-তাফসীরুল কাবীর, বৈরূত তা, বি., ১৪খ, ১৬২)।

ধ্বংসপ্রাপ্ত ছামূদ সম্প্রদায়কে সালিহ (আ)-এর সম্বোধন

ইহা কি করিয়া সম্ভব হইল যে, ছামূদ সম্পদ্রায় ধ্বংস হইয়া যাইবার পর সালিহ (আ) তাহাদেরকে ডাকিয়া বলিলেন, “হে আমার সম্পদ্রায়! আমি তো আমার প্রতিপালকের বাণী তোমাদের নিকট পৌঁছাইয়াছিলাম এবং তোমাদেরকে হিত উপদেশ দিয়াছিলাম, কিন্তু তোমরা তো হিত উপদেশ দানকারীকে পছন্দ কর না” (৭৪ ৭৯)।

এই সম্পর্কে সায়্যিদ আসী বলেন, সালিহ (আ) কর্তৃক উহাদেরকে আহবান জানানো ছিল রাসূলুল্লাহ (স) কর্তৃক বদর যুদ্ধে নিহত মুশরিকদেরকে আহবানের মত। নিহত মুশরিকদেরকে বদরের কূপে নিক্ষেপের পর রাসূলুল্লাহ (স) তাহাদের নামোল্লেখ করিয়া বলিয়াছিলেন, হে অমুক! আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে যেই প্রতিশ্রুতি দান করিয়াছিলেন, তাহা আমরা যথাযথ পাইয়াছি। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে যেই প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন তাহা কি তোমরা সঠিক পাইয়াছ। সম্বোধনের ভিত্তি ছিল এই যে, আল্লাহ তাআলা উহাদের রূহ ফিরাইয়া দিয়াছিলেন, ফলে তাহারা এই সম্বোধন শুনিতে পাইয়াছিল । এইরূপ সম্বন্ধ কেবল নবী (আ)-গণেরই বৈশিষ্ট্য। ইহাও সম্ভব যে, সালিহ (আ) এই সম্বোধন করিয়াছিলেন আক্ষেপ প্রকাশার্থে, যেইভাবে গৃহাদি ও আবাসস্থলসমূহকে সম্বোধন করা যায়। ইহাও হইতে পারে যে, সালিহ (আ) কর্তৃক এই সম্বোধন সম্বলিত আয়াতকে শাস্তি শুরুর আয়াতের সহিত ‘আত করা। ইহাতে অর্থ হইবে উহারা শাস্তির সম্মুখীন হইবার সময় সালিহ (আ) তাহাদেরকে এই সম্বোধন করিয়ািছিলেন। তবে ইহা বাহ্যিক সম্ভাবনার পরিপন্থী। কেহ কেহ বলিয়াছেন, এখানে আয়াত আগে-পিছে করা হইয়াছে। আয়াত মূলত ছিল :

এই অভিমতটি অন্যান্য সকল অভিমত হইতে অধিকতর দুর্বল (সায়্যিদ আসী, রূহুল মাআনী, ৮থ, ৬৬)।

মৃতদেরকে সম্বোধনের পক্ষে ইমাম রাযীর যুক্তি এই যে, ইহা শুনিয়া অনেক জীবিত লোক উপদেশ গ্রহণ করিবে এবং এইরূপ কর্ম হইতে সতর্ক হইয়া যাইবে (আত-তাফসীরুল কাবীর, দারু ইহয়াউত-তুরাছ, বৈরূত, তৃতীয় সংরক্ষণ, ১৪ খ, ১৬৭)। তারূক গমনকালে রাসূলুল্লাহ (স)-এর ছামূদ জনপদ অতিক্রম

“ইবন উমার (রা) হইতে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ (স) তাবুক যুদ্ধকালে হিজর নামক স্থানে অবতরণ করিলে সাহাবীগণকে আদেশ করিলেন তাহারা যেন ছামূদ জাতির কূপ হইতে পানি পানি না করে এবং পানি সংরক্ষণ না করে। তাহারা বলিলেন, আমরা তো এই পানি হইতে রুটির খামীর তৈরি করিয়াছি, পানি সংরক্ষণ করিয়াছি। রাসূলুল্লাহ (স) নির্দেশ দিলেন, তাহারা যেন খামীর এবং পানি ফেলিয়া দেয় (বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া, কলিকাতা, ১খ, ৪৭৮; আল-আসী, রুহুল মাআনী)।

“ইবন উমার (রা) হইতে বর্ণিত। হিজর (ছামূদ সম্প্রদায়ের আবাসভূমি) অতিক্রম করিবার সময় রাসূলুল্লাহ (স) বলিলেন : তোমরা কান্নারত অবস্থা ছাড়া ঐ সম্প্রদায়ের আবাসস্থলে প্রবশে করিও না, যাহারা নিজেদের উপর জুলুম করিয়াছে যাহাতে উহারা যেই শাস্তি ভোগ করিয়াছে তাহা তোমাদেরকে স্পর্শ না করে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (স) চাদর দ্বারা নিজ মাথা ঢাকিয়া খুব দ্রুত হাঁটিয়া উপত্যকাটি অতিক্রম করিলেন”।

ইমাম বুখারী (র) ইবন উমার (রা) সূত্রে বর্ণিত হাদীছটিতে রহিয়াছে, আযাবগ্রস্ত এই লোকদের নিকট কান্না বিজড়িত ভাব ব্যতীত প্রবেশ করিও না (বুখারী, কিতাবুল মাগাযী, বাব নুযুলিন- নাবী (স) আল-হিজর, ২খ, ৬৩৭)।

ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেন :

“তাবুক যুদ্ধে গমনের পথে লোকজন হিজরবাসীদের দিকে দ্রুত ধাবিত হইয়া তাহাদের নিকট প্রবেশ করিতে প্রস্তুত হইল। এই কথা রাসূলুল্লাহ (স)–এর নিকট পৌঁছিল। তিনি লোকজনকে “সালাতের জামাত আসন্ন” বলিয়া আহবান করিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি নবী কারীম (স)-এর নিকট আগমন করিলাম। এই সময় রাসূলুল্লাহ (স) তাঁহার বাহন উষ্ট্ৰীটিকে আনাইয়া বলিতেছিলেনঃ তোমরা এ সম্প্রদায়ের নিকট প্রবেশ করিও না যাহাদের উপর গযব অবতীর্ণ হইয়াছিল। অতঃপর এক লোক রাসূলুল্লাহ (স)-কে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! ইহা দেখিয়া বিস্ময় বোধ করিতেছি। তিনি বলিলেন, আমি কি তোমাদেরকে ইহা অপেক্ষাও অধিক আশ্চর্যজনক একটি সংবাদ দিব না? তোমাদেরই মধ্য হইতে এক ব্যক্তি তোমাদেরকে তোমাদের পূর্বে যাহা সংঘটিত হইয়াছিল তাহার সংবাদ দিতেছেন। তোমরা যাহার উপর বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছ তাহার উপর অবিচল থাক। কারণ আল্লাহ তোমাদেরকে শাস্তি প্রদান করিতে মোটেই পরোয়া করিবেন না। অচিরেই একদল লোকের আবির্ভাব হইবে যাহারা নিজেদের হইতে কোন কিছু দূর করিতে সক্ষম হইবে না”। হাদীছটির সূত্র হইল “হাসান” পর্যায়ের। অন্য কেহ হাদীছটি বর্ণনা করে নাই (ইবন কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, প্রাগুক্ত)।

জাবির (র) হইতে এই বর্ণনাটি ইসমাঈল হাক্কী প্রণীত তাফসীরে রূহুল বায়ানে জাবির (রা) হইতে বর্ণিত?

“অতঃপর রাসূলুল্লাহ (স) তাহার সওয়ারীকে তাড়া করিলেন এবং এই স্থানটি ত্যাগ করিবার পূর্ব পর্যন্ত দ্রুত চলিলেন” (তাফসীর রূহুল-বায়ান, ৪খ, ৪৮৪)। ছামূদ সম্প্রদায়ের শাস্তির ধরন

অবদুল ওয়াহহাব আন-নাজ্জার বলেন, ছামূদ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করা হইয়াছিল বজ্রাঘাতের (acL.) দ্বারা। এই বজ্রাঘাত, বুঝাইতে আল্লাহ তাআলা আল-কুরআনে কোন সময় আর-রাজফা, কোন সময় আত-তাগিয়া এবং কোন সময় আস-সাইকা বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। বজ্রাঘাত কোন সময় ভয়ংকর শব্দের সহিত সংঘটিত হয়, কোন সময় ভূমিকম্পের সহিত আবার কোন সময় এক স্থানে পতিত হইয়া অন্য স্থানে ইহার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় (আবদুল ওয়াহহাব আন-নাজ্জার, কাসাসুল আমবিয়া, প্রাগুক্ত, পৃ. ৬৬)। মাওলানা হিফজুর রহমান বলেন, একটি ভয়ংকর শব্দ ছামূদ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করিয়াছিল, (দ্র, কাসাসুল কুরআন, ১খ, পৃ. ১৩৯)।

[ ] শব্দগুলির বিস্তারিত বিবরণের জন্য দ্র. আন-নাজ্জার, কাসাসুল-কুরআন, পৃ. ৬২-৬৪।

আল-আসী বলেন, ১ : আয়াতে উক্ত, সম্পর্কে আল-ফাররা ও আয-যাজ্জাজ বলেন, ইহার অর্থ হইল ভয়ানক ভূমিকম্প। মুজাহিদ ও আস-সুদ্দী বলেন, ass, শব্দের দ্বারা » বা বিকট শব্দই বুঝানো হইয়াছে। এই দুইটি অভিমতের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের লক্ষ্যে বলা যায় যে, উক্ত সম্প্রদায়ের উপর নিম্নদিক হইতে ভূমিকম্প এবং উপর দিক হইতে বিকট ধ্বনি আপতিত হইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে। কেহ কেহ বলিয়াছেন, ৮, হইল কম্পমান হূদয় এবং তাহার অস্থিরতা যাহার ফলে অন্তর বিদীর্ণ হইয়া যায়। আল-আসী আরও বলেন, আল-কুরআনের কোন স্থানে, কোন স্থানে আর কোন স্থানে ৬ ব্যবহারে কোন বিরোধ নাই। অপব্যাখ্যাকারী লোক অবশ্য ইহার মধ্যে ছিদ্র অন্বেষণ করিবার চেষ্টা করিয়াছে। উহাদের ইহাতে হূদয়ের কম্পন শুরু হয় এবং উহার বিভীষিকা ও সীমাহীন প্রতিফলন হইতে ৬–এর সৃষ্টি হয়। কারণ ১৮ বলা হয় সীমা লঙ্ন করাকে। ইহা হইতেই আল্লাহর বাণী হইল,৬]। ২dadi at aft। “পানি যখন সীমা অতিক্রম করিল আমি তখন তোমাদেরকে নৌযানে উঠাইয়া লইলাম।” অথবা বলা যায় উক্ত সম্প্রদায়ের ধ্বংসের কারণ ছিল তাহাদের অবাধ্যতা। ইহাকে ৬ দ্বারা বুঝানো হইয়াছে (রূহুল মাআনী, ৮, ১৬৬৫)। সায়্যিদ আসী আরও বলেন, আল-কালী ইবন আব্বাস (রা) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন :

“ছামূদ জাতিকে যেই বিকট ধ্বনি দ্বারা ধ্বংস করা ইহয়াছিল উহা ছিল তাহাদের নিচ হইতে নির্গত। আর মাদয়ানবাসীর ধ্বংস ছিল তাহাদের উপরের দিক হইতে আগত ধ্বনি হইতে” (রূহুল মাআনী, ১১, ১২৯)।

আল্লামা বাগাবী বলেন, যেই বিকট শব্দের মাধ্যমে ছামূদ সম্প্রদায় ধ্বংস হইয়াছিল উহা ছিল জিবরাঈল (আ) কর্তৃক প্রদত্ত। ফলে উহারা সকলেই মারা গিয়াছিল। আর কেহ কেহ বলেন, উহাদের উপর আকাশ হইতে এমন বিকট ধ্বনি আসিয়াছিল যাহাতে ভূমণ্ডলের সকল বিকট ধ্বনির সংমিশ্রণ ছিল। ফলে উহাদের হূদপিণ্ড চূর্ণবিচূর্ণ হইয়া গিয়াছিল (আল-বাগাবী, তাফসীর, ২খ, ৩৯১)। আত-তাবাতাবাঈ বলেন, অর্থ রাত্রি হইয়া গেলে ছামূদ সম্প্রদায়ের নিকট জিবরাঈল (আ) আগমন করিয়া তাহাদের উদ্দেশ্যে এমন এক চিৎকার দেন যাহার ফলে উহাদের কান ফাটিয়া যায় ও হূদপিণ্ড বিদীর্ণ হইয়া পড়ে। উহারা সেই তিন দিন কাফনসহ অন্যান্য মৃত সামগ্রী লইয়া প্রস্তুত ছিল যে, উহাদের উপর আযাব নাযিল হইবে। জিবরাঈল (আ)-এর নিকট ধ্বনি শুনিয়া মুহূর্তের মধ্যে উহারা মৃত্যুকোলে ঢলিয়া পড়িয়াছিল। ছোট-বড় কেহই মৃত্যুর কবল হইতে রক্ষা পায় নাই। উহাদের পাখিদের কোন কল-কাকলী ছিল না, না ছিল কোন রাখাল ছেলের পশু হাকানোর ধ্বনি। পশুপক্ষিসহ সকল বস্তু নিমিষেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হইয়াছিল। আল্লাহ তাআলা ইহার সহিত আগুনও তাহাদের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করিয়াছিলেন। ফলে তাহারা ভস্মিভূত হইয়াছিল।

সালিহ (আ)-এর প্রস্থান ও ইনতিকাল

ওয়াহব ইব্‌ন মুনাব্বিহ (র) হইতে আবুশ-শায়খ বর্ণনা করিয়াছেন, সালিহ (আ) ও তাহার উপর যাহারা ঈমান আনিয়াছিলেন তাহারা শাস্তি হইতে পরিত্রাণ লাভ করিবার পর সালিহ (আ) তাহাদেরকে বলিলেন, হে আমার সম্প্রদায়! ইহা একটি জনপদ যাহার উপর ও যাহার অধিবাসীদের উপর আল্লাহর গযব আপতিত হইয়াছে। তোমরা এখান হইতে বাহির হইয়া আল্লাহর হারাম শরীফে ও তাহার নিরাপত্তায় চলিয়া যাও। তখন হইতে তাহারা হজের ইহরাম বাঁধিলেন এবং মক্কা শরীফে উপনীত হইলেন, তৎপর এখানেই তাহারা মৃত্যু অবধি অবস্থান করিতে লাগিলেন। প্রাচীন কালের কাবাগৃহের পশ্চিম পাশে যে সকল কবর ছিল সেইগুলি তাহাদের (আর্সী, রূহুল মাআনী, ৮খ, ১৬৮)। বাগাবী বলেন, সালিহ (আ)-এর কওমের মুমিনদের সংখ্যা ছিল চার হাজার। সালিহ (আ) তাহাদেগকে লইয়া হাদারামাওত” রওয়ানা করিলেন। এই কারণে এই শহরটি হাদারামাত নামে আখ্যায়িত হয়। অতঃপর এই চার হাজার মুমিনের প্রচেষ্টায় সেখানে একটি শহর গড়িয়া উঠে যাহাকে হাদূরা (1,28) বলা হইত। একদল আলিম সালিহ (আ) সম্পর্কে বলেন, ইন্তিকালের সময় তাহার বয়স হইয়াছিল আটান্ন বৎসর (আল-বাগাবী, তাফসীর, ২খ, ১৭৯)। আল্লামা আব্দুসী আরও বলেন, বিশেষজ্ঞদের একটি দল হইতে বর্ণিত আছে যে, সালিহ (আ) আটান্ন বৎসর বয়সে মক্কা শরীফে ইন্তিকাল করেন। ইহাই নির্ভরযোগ্য অভিমত। সম্ভবত তাঁহার পরিবার-পরিজনও তাহার সহিত ছিল। বর্ণিত আছে যে,

“প্রথম যুগের মধ্যে সর্বাধিক জঘন্য ব্যক্তি ছিল উষ্ট্রী বধকারী। আর পরবর্তী কালে সর্বাধিক জঘন্য ব্যক্তি ছিল আলী (রা)-এর হত্যাকারী। এই সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (স) ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করিয়াছিলেন” (রহুল মাআনী, ৮, ১৬৮)।

ইবনুল আছীর বলেন, সালিহ (আ) শামে চলিয়া গিয়া ফিলিস্তীনে অবস্থান করিতেছিলেন। অতঃপর তিনি মক্কা শরীফে চলিয়া যান এবং মৃত্যু পর্যন্ত এই স্থানে ইবাদত করিতে থাকেন। তিনি তাঁহার উম্মতগণের মধ্যে বিশ বৎসর পর্যন্ত দাওয়াতের কাজ চালাইয়াছিলেন (ইবনুল আছীর, আল-কামিল ফিত-তারীখ, বৈরূত ১৯৮৭ খৃ, ১খ, ৭১)। আবুল ফিদা বলেন, হাদারামাওত নামক স্থানে একটি কবর দেখিতে পাওয়া যায় যাহাকে কবরে সালিহ বলা হয়। এখানকার অধিবাসীরা বলেন, ছামূদ সম্পদ্রায়ের আদি নিবাস ছিল “হাদারামাওত”। সেখান হইতে তাহারা উত্তর দিকে চলিয়া যাইবার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হইয়াছিল। তখন সালিহ (আ) তাহার গোত্রের আদি আবাসস্থলে প্রত্যার্তন করিয়াছিলেন (আল-কামিল ফিত-তারীখ, পাদটীকা)। আবদুর রহমান ইবন ছাবিত হইতে ইবন আসাকির বর্ণনা করিয়াছেন, রুকনুল য়ামানী, মাকামে ইবরাহীম ও যমযমের মধ্যবর্তী স্থানে উনশি জন নবীর কবর রহিয়াছে। তাহাদের মধ্যে নূহ, শুআয়ব, সালিহ ও ইসমাঈল (আ) রহিয়াছেন (আলুসী, রূহুল মাআনী, প্রাগুক্ত, ৮, ১৬১)। সালিহ (আ)-কে তাঁহার যৌবনে তাহার কওমের প্রতি প্রেরণ করা হয়। তাঁহার দেহের রঙ ছিল উজ্জল শ্যামলা, চুল ছিল সোজা। নিজ কওমের মধ্যে তিনি চল্লিশ বৎসর অবস্থান করিয়াছিলেন। আশা-শামী বলেন, তাঁহাকে যুবক বয়সে প্রেরণ করা হইয়াছিল, কিন্তু তিনি তাঁহার কওমকে দাওয়াত দিতে দিতে বার্ধক্যে উপনীত হইয়াছিলেন। ইমাম নাওয়াবী বলেন, সালিহ (আ) তাঁহার কওমের মাঝে বিশ বৎসর অবস্থান করিয়াছিলেন। তিনি মক্কা শরীফে ইন্তিকাল করেন। তাঁহার বয়স হইয়াছিল আটান্ন বৎসর (রূহুল মাআনী, ৮, ১৬২)। আবদুল ওয়াহহাব আন-নাজ্জার বলেন, কোন কোন তাফসীরকার বলেন, সালিহ (আ) ও তাঁহার সহিত যাহারা ঈমান আনিয়াছিলেন ছামূদ সম্প্রদায় ধ্বংস হইবার পর তাহারা ফিলিস্তীনের রামলা-এর একটি প্রান্তে গিয়া বসবাস করিতেছিলেন। অন্য একদল তাফসীরকার বলেন, সালিহ (আ)-এর অনুসারিগণ সেখানেই রহিয়া গিয়াছিল যেখানে অবাধ্যরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হইয়া গিয়াছিল। অন্য একদল বলেন, উহারা মক্কা শরীফে চলিয়া গিয়াছিল এবং সেখানেই মৃত্যু পর্যন্ত অবস্থান করিয়াছিল । ইহাদের কবরসমূহ কাবা শরীফের পশ্চিম দিক অবস্থিত। অতঃপর আন-নাজ্জার বলেন, আমার কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য অভিমত হইল, তাহারা রামলা ও ফিলিস্তীনের আশপাশে অবস্থান করিয়াছিলেন। কারণ ইহাই ছিল তাহাদের জন্য সর্বাধিক নিকটবর্তী উৎকৃষ্ট উর্বর স্থান। আরববাসীরা চাহে তাহাদের পশু পালনের জন্য চারণভূমি ও জলাশয়। আল্লামা আল-আসী বলেন, সালিহ (আ)-এর সহিত যাহারা রক্ষা পাইয়াছিল তাহাদের সংখ্যা ছিল এক শত বিশজন। যাহারা ধ্বংসপাপ্ত হইয়াছিল তাহারা ছিল দেড় হাজার পরিবার (আবদুল ওয়াহহাব নাজ্জার, প্রাগুক্ত, ৫৭; হিফজুর রহমান, কাসাসুল-কুরআন, ১খ, ১৪১)।

তাওরাত গ্রন্থে সালিহ ও ছামূদ প্রসঙ্গ

ইবন খালদূন বলেন, তাওরাতের অনুসারীরা আদ ও ছামূদ সম্প্রদায় সম্পর্কে মোটেই অবগত নয়। কারণ উহাদের এবং হূদ ও সালিহ (আ)-এর কথা তাওরাতে উল্লেখ নাই, এমনকি আরবে আরিবার কোন প্রজন্মের কথাও তাওরাতে নাই। তাওরাত গ্রন্থে কেবল মূসা (আ) ও আদম (আ)-এর মধ্যবর্তী সময়ে যেইসব প্রতিষ্ঠিত জাতির আগমন ঘটিয়াছিল তাহাদের কথাই আলোচিত হইয়াছে (তারীখ ইবন খালদূন, ২খ, ২৪)। ইবনুল আছীর বলেন, আদ, হ্রদ, ছামূদ ও সালিহ (আ)-এর কথা তাওরাতে নাই বলিয়া ইহার অনুসারীদের ধারণা হইল, ইসলামী যুগের আরব ও জাহিলী যুগের আরবদের নিকট উহাদের পরিচিতি ইবরাহীম (আ)-এর পরিচিতির ন্যায় প্রসিদ্ধ ছিল। এই তথ্য প্রদানের পর ইবনুল আছীর নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করিতে গিয়া বলেন, তাওরাত অনুসারিগণ কর্তৃক ছামূদ ও সালিহ (আ)-কে অস্বীকার করা আশ্চর্যের কিছু নহে। কিন্তু আরবদের নিকট সকল যুগে উক্ত ঘটনা ইবরাহীম (আ)-এর ঘটনার ন্যায় প্রসিদ্ধ ও সুপরিচিত (ইবনুল আছীর, আল-কামিল, ১খ, ৭১)।

আল্লাহর নবী সালিহ (আ) ও তাঁহার সম্প্রদায়ের কথা আল-কুরআনে বহুবার আলোচিত হইলেও সবিস্তারে তাহার জীবনের কোন দিকই আলোচনা করা হয় নাই। অনেকের মতে মুজিযা বলিতে এই উষ্ট্ৰীই ছিল। আবার কেহ বলিয়াছেন, উষ্ট্ৰীটি ছাড়াও অন্য কিছু মুজিযা সালিহ (আ)-এর থাকিতে পারে। যেই পাথর হইতে উস্ত্রীর সৃষ্টি হইয়াছিল সেই পাথরটি সম্পর্কে একটি লূতন তথ্য প্রদান করিয়াছেন তাফসীরকার আত-তাবাতাবাঈ। তিনি বলেন, পাথরটিকে তাহারা সম্মান করিত, ইহার উপাসনা করিত। প্রতি বৎসরান্তে তাহারা উহার নিকট জমায়েত হইয়া পশু যবেহ করিত (আল-মীযান, ১০ খ, ৩২৬)।

গ্রন্থপঞ্জী : (১) আল-কুরআনুল করীম, ৭ : ৭৩-৭৯; ১১৪ ৬১-৬৮; ১৫ : ৮০-৮৪, ১৭ : ৫৯; ২৬ : ১৪১-১৫৯; ২৭ : ৪৫-৫৩; ৪১ : ১৭-১৮; ৫৪ : ২৩-৩২; ৯১ : ১১-১৫; (২) বুখারী, কিতাবুস-সালাত, কিতাবুল আম্বিয়া, ১খ, ৪৭৮, কিতাবুত-তাফসীর, ২খ, ৬৮২, কিতাবুল-মাগাযী, বাব গাযওয়াতি তারূক, ২খ, ৬৩৭, কলিকাতা; (৩) ইবন হাজার আল-আসকালানী, ফাতহুল-বারী, বৈরূত ১৪০৫/১৯৮৫, ৬, ২৯২; (৪) আল-কাসতাল্লানী, ইরশাদুস-সারী, বৈরূত তা, বি., ১খ, ৪৩৩; (৫) বুরুস আল-বুসতানী, দাইরাতুল মাআরিফ, বৈরূত তা. বি., ৬খ, ৩৩২; (৬) আছ-ছালাবী, তাফসীরুছ-ছালাবী, আল মাসুম বিজাওয়াহিরিল হিসান ফী তাফসীরিল কুরআন, বৈরূত তা. বি., ২খ, ৩১; (৭) আয-যামাখশারী, আল-কাশশাফ, বৈরূত তা, বি., ২খ, ৮৯, ৩খ, ১৫১; (৮) আল-কুরতুবী, আল-জামি লিআহকামিল কুরআন, বৈরূত ১৯৬৫ খৃ., ৭খ, ২৩৮, ৯খ, ৫৫, ১০খ, ৪৫, ১৩খ, ২১৪; (৯) আল-বাগাবী, তাফসীরুল বাগাবী আল-মুসাম্মা মাআলিমুত তানযীল, মুলতান তা. বি., ২খ, ১৭৩; (১০) আত-তাবারী, জামিউল বায়ান ফী তাফসীরিল কুরআন, বৈরূত ১৩৯৮/১৯৭৮, ৮, ১৫৭; (১১) আল-আলুসী-আল-বাগদাদী, রূহুল মাআনী, বৈরূত তা. বি., ৮, ১৬৩; (১২) সায়্যিদ কুতব, ফী জিলালিল-কুরআন, বৈরূত ১৯৮০, ৩খ, ১৩১২, ৪খ, ২১৫১; (১৩) হিফজুর রহমান সিউহারুবী, কাসাসুল কুরআন, দিল্লী ১৪০০/১৯৮০, ১খ, ১২২; (১৪) আল-মাসউদী, মুরূজুয-যাহাব, মিসর, ৪র্থ সংস্করণ, ১৯৬৪ খৃ; ২খ; ৪২; (১৫) ইবনুল-আছীর, আল-কামিল ফীত তারীখ, বৈরূত ১৪০৭/ ১৯৮৭, ১খ, ১৬৮; (১৬) আবদুল হক হাককানী, তাফসীরে হাক্কানী, দিল্লী তা. বি., ২খ., ৪০০; (১৭) আবুল-আলা-মাওদূদী, তাফহীমুল কুরআন, দিল্লী ১৯৮২ খৃ, ৩, ৫২২; (১৮) ইবন মানজুর, লিসানুল আরাব, বৈরূত তা.বি., ১৩, ৫০৩; (১৯) ডঃ জাওয়াদ আলী, আল-মুফাসসাল ফী তারীখিল আরাব কাবলাল ইসলাম, বৈরূত ১৯৭৬ খৃ., দ্বিতীয় সংস্করণ, ১খ., ৩২১; (২০) কারী আহমাদ, তারীখে মুসলমানানে আলম (তারিখে আমবিয়া অংশ), করাচী তা, বি., ১খ, ৯০; (২১) আবুল কালাম আযাদ, তরজমানুল কুরআন, লাহোর ১৯৭৬ খৃ, ২খ., ১৯৬; (২২) রাশীদ রিদা, তাফসীরুল-মানার, বৈরূত দ্বিতীয় সংকরণ, তা, বি,, ৮থ, ৫০১; ২৩ ইদরীস কান্দালাবী, মাআরিফুল কুরআন, লাহোর ১৪০২/১৯৮২, ৩, ৭২; (২৪) মাহমূদ যুহরান, কাসাসুম মিনাল কুরআন, মিসর, ১ম সংস্করণ ১৯৫৬ খৃ, ৩৩; (২৫) মুরতাদা আয-যুবায়দী, তাজুল-আরূস, বৈরূত তা. বি., ২খ, ৩১২; (২৬) জ্বরজী যায়দান, তারীখুত তামাদদুনিল ইসলামী, বৈরূত, দ্বিতীয় সংস্করণ তা, বি, ১৩, ১৫; (২৭) ইব্‌ন খালদূন, তারীখে ইব্‌ন খালদূন, বৈরূত ১৩৯৯/১৯৭৯, ২২, ২৩; (২৮) জারুল্লাহ আয-যামাখশারী, আল-মুসতাকসা ফী আমছালিল- আরাব, বৈরূত ১৩৯৮/১৯৭৭, ১খ, ১৭৬; (২৯) ইবনুল-ইবারী আল-হাযিমিয়া, তারীখু মুখতাসারুদ-দুওয়াল, বৈরূত ১৪০৩/১৯৮৩, ১৫৮; (৩০) গোলাম নবী অনূদিত খুলাসাতুল আমবিয়া, উরদূ, মূল গ্রন্থ কাসাসুল আমবিয়া, ফারসী প্রকাশনা উল্লেখ নাই, ১৩৭৬ হি, পৃ. ৪০; (৩১) আত-তাবারসী, মাজমাউল বায়ান ফী তাফসীরিল কুরআন, বৈরূত ১৪০৬/১৯৮৬, ৭খ, ৩৫৩; (৩২) মুহাম্মদ হুসায়ন আত-তাবাতাবাঈ, আল-মীযান ফী তাফসীরিল কুরআন, তেহরান ১৩৬২ হি, ১০ খ, ৩২৯; (৩৩) আহমাদ আশ-শাতনাবী প্রমুখ, দাইরাতুল মাআরিফিল ইসলামিয়্যা, বৈরূত তা, বি, ১৪খ, ১০৬; (৩৪) দাইরা মাআরিফ ইসলামিয়্যা (উরদূ), লাহোর ১৯৬২ খৃ., ৬খ., ১০৩১; (৩৫) ইবন কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, মিসর ১৪০৮/১৯৮৮, ১খ, ১২৩; (৩৬) আহমদ জাদ আল-মাওলা প্রমুখ, কাসাসুল কুরআন, বৈরূত ১৩৮৯/১৯৬৯, পৃ. ২৮; (৩৭) আবদুল ওয়াহহাব আন-নাজজার, কাসাসুল আমবিয়া, বৈরূত তা, বি, ৩য় সংস্করণ, পৃ. ৫৮; (৩৮) আল-মাকামাতুল- হারীরিয়্যা, দেওবন্দ তা, বি, মাকামা, ১৮, পৃ. ৩৭; (৩৯) যায়নুল আবিদীন সাজজাদ, কাসাসুল কুরআন, দেওবন্দ ১৯৯৪ খৃ., ৮৪-৯৫; (৪০) সায়্যিদ কাসিম মাহমূদ, ইসলামী ইনসাইক্লোপেডিয়া, (উরদূ) তা, বি, পৃি. ৯৮৭ (৪১) ENCYCLOPAEDIA BRITANNICA, PUBLI, 1973, VOL. VIIl., 809, POL IX, 92l; (৪২) ই. জে, ব্রিস, ইসলামী বিশ্বকোষ ১ম সং, ১৯১৩-১৯৩৬; ১৯৮৭, ৭খ; ১০৭, (৪৩) ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ ঢাকা ১৯৯২ খৃ, ১১খ, ৭৬, দ্র. প্রবন্ধ সালিহ (আ)।

ফয়সল আহমদ জালালী

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *