সাঁজোয়া গাড়ির সামনের দিকে

সাঁজোয়া গাড়ির সামনের দিকে

সাঁজোয়া গাড়ির সামনের দিকে উখিত লিঙ্গের মতো
কামানের ডগায়
কেউ একটা ফুলের মালা পরিয়ে দিল।
বৃষ্টি ভেজা সেই মালার সাদা ফুল, কোনো নারীর নরম করতল ছুঁয়ে এসেছে
সেই ফুল থেকে উড়ে এলো একটা পাপড়ি, বাতাসে এক পাক ঘুরে
লাগলো সৈনিকটির হেলমেটের ঠিক নীচে, কপালে
সৈনিকটি সেটা তুলে ফেলতে গিয়ে অনুভব করলো
তার অস্ত্রগুলো হঠাৎ খুব ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, এত ঠাণ্ডা
তার শরীর কাঁপিয়ে দিচ্ছে
সাব মেশিনগানের ম্যাগাজিন খালি করে সবকটা বুলেট
সে ছড়িয়ে দিল রাস্তায়
তারপর গা গরম করে নাচতে লাগলো দুহাত তুলে…

রাস্তায় গড়িয়ে যাওয়া সেই বুলেটগুলোর একটা
কুড়িয়ে পেল এক পাঁচ বছরের বাচ্চা
দৌড়োত দৌড়াতে বাড়ি ফিরে সে হাতের রক্তিম মুঠো খুলে
সদ্য জেগে ওঠা একটা ঝর্নার স্বরে বললো,
মা, এই দ্যাখো
মা তখন বাগানে একটা মুমূর্ষ টিউলিপ চারায় জল দিচ্ছিলেন
পাহাড়ের কুয়াশার মতন মুখ তুলে দেখলেন
ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
ছিঃ, এটা নোংরা, ধরতে নেই রে!
মায়ের হাতে কোন বীজাণু লাগে না, তিনি সেটা তুলে নিয়ে
ছুঁড়ে ফেলে দিলেন নদীর জলে
নদীও সেটা গ্রহণ করতে চাইলো না, নদী ভুরু কোঁচকালো
মেঘের মতন ঢেউ তুলে যাচ্ছে নদী, একটা আলাদা তরঙ্গে
বুলেটটাকে গর্ভ থেকে তুলে
ফেলে দিল এক নির্জন বালিমাখা ঝোপের মধ্যে….

তারপর অনেকদিন কেটে গেছে
এই পৃথিবী থেকে মুছে গেছে সমস্ত সীমান্তের কাঁটাতার
এখন অস্ত্র বলতে আছে শুধু মানুষের শরীর
এখন সব যুদ্ধই অতি ব্যক্তিগত, খুবই নিভৃত, যে
হেরে যায়, সে বেশি হাসে
সেই রকমই একটি দিনে এক যুবতী আর তার সখা ছুটে যাচ্ছে
নদীর প্রান্ত দিয়ে
একটা ঝোপের পাশে এসে তারা দেখতে পেল সেই বুলেট
যুবতীটি সেটা কৌতূহলে তুলে নিতেই বুলেটটি বলে উঠলো
এতদিনে আমার মুক্তি হলো, শোনো একটা
ফুলের মালার গল্প….
সেই ঝোপটাতে ফুটে আছে অনেক নাম-না-জানা কুসুম
গল্প শুনতে শুনতে ছেলেটি তুলতে লাগল একটির পর একটি
মেয়েটি মাথার চুল ছিড়ে গেঁথে নিল দুটি মালা
তারপর সমস্ত পোশাক খুলে ফেলে মালা দুটিকেই
দুলিয়ে নিল গলায়
ফুল-শরীরে নগ্ন হয়ে নামতে লাগলো নদীর জলে
নদী ছলোচ্ছল খুশিতে বললো, এসো—