০৩. তাহারাত বা পবিত্রতা (তৃতীয় খণ্ড)

তৃতীয় খণ্ড তাহারাত বা পবিত্রতা

তাহারাত বা পবিত্রতার বর্ণনা

 তাহারাত’ আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা। পারিভাষিক অর্থে শরীরের বিশেষ অঙ্গসমূহ বিশেষ পদ্ধতিতে ধৌত করাকে তাহারাত বা পবিত্রতা বলা হয়। ভিন্ন মতে, নাপাকী দূর করাকে তাহারাত বলা হয়।–(কাওয়াইদুল ফিকহ্)

ইসলামে পবিত্রতার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলাম বিশেষ অবস্থায় গোসল করাকে ফরয করেছে। স্বামী-স্ত্রীর সম্ভোগের পর উভয়ে যে পর্যন্ত গোসল না করবে পবিত্র হবে না এবং নামায আদায় করতে পারবে না। এরশাদ হয়েছে :

وإن كنتم جيبا فاطهروا

অর্থ : যদি তোমরা নাপাক থাক তবে বিশেষভাবে পাক হবে।–(সূরা মায়িদা, আ : ৬)

নামায আদায়ের জন্য পরিধেয় কাপড়ও পাক হওয়া আবশ্যক। ইসলামী শরীয়াত এই পাক হওয়াকে অপরিহার্য করেছে। এরশাদ হয়েছে।

وثيابك فطهر

অর্থ : তোমার পরিচ্ছদ, পবিত্র রাখ।–(সূরা মুদ্দাসসির, আ : ৪)

যদি পানি না পাওয়া গেলে অথবা কোন রোগের কারণে পানি ব্যবহার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ালে পাক মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করেনঃ

وإن كنتم مرضى أو على سفر أو جاء أحد منكم من الغائط أو تشتم البناء فلم تجدوا ماء فتيمموا صعيدا طيبا فامحو بوجوهكم وأيديكم منة

উচ্চারণ : অইন কুতুম মারদ্বোয়া–আও আলা-ছাফারিন আও জ্বা-আ আহাদুম মিনকুম মিনাল গা-য়িত্বি আও লা-মাছতুমুন নিছা-আ ফালাম তাজ্বিদূ মা-আন ফাতাইয়াম্মামূ ছাঈদান ত্বোয়াইয়্যিবান ফামছাহূ বিউজুহিকুম ওয়া আইদীকুম মিনহু;

অর্থ : তোমরা যদি পীড়িত হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ শৌচাগার থেকে আগমন করে অথবা তোমরা স্ত্রীর সাথে মিলন কর এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে এবং তা তোমাদের মুখে ও হাতে মাসেহ্ করবে।–(সূরা মায়িদা, আ : ৬).

অনুরূপ জুমু’আর দিন নামায আদায়ের পূর্বে গোসলের হুকুম দেয়া হয়েছে, যেন মানুষ গোসলের মাধ্যমে পাক সাফ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে জুমু’আর জামায়াতে অংশ গ্রহণ করতে পারে এবং অপরিচ্ছন্নতা ও দেহের দুর্গন্ধের কারণে যেন কোন নামাযীর কষ্ট না হয়। পেশাব-পায়খানার পর ইসৃতিজা করা এবং নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হতে ময়লা দূর করা অপরিহার্য করা হয়েছে।

এই নির্দেশাবলীর মাধ্যমে জানা যায় যে, ইসলামে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এমনকি একে ঈমানের অর্ধেক বলা হয়েছে। নবী করীম (ছঃ) বলেন :

الطهور شطر الإيمان

অর্থ : পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।–(মেশকাত)

শুধু তাই নয়, বরং পবিত্রতা অর্জন করাকে আল্লাহ্ পাকের ভালবাসা লাভের উপায় বলে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে :

إن الله يحب التوابين ويحب المتطهرين

অর্থ : আল্লাহ্ তাওবাকারীকে ভালবাসেন এবং যারা পাক থাকে তাদেরকেও।
–(সূরা বাকারা, ২ঃ ২২২)

মুসলমান যেন পবিত্র ও পরিচ্ছন্নতার পা-বন্দী করে এবং সকল প্রকার অপবিত্রতা ও কলুষতা থেকে মুক্ত থাকার লক্ষ্যে নবী করীম (ছঃ) স্বীয় উম্মতের জন্য কিছু বিধি-বিধান জারী করেছেন, যা সকলের জন্য অবশ্য পালনীয়।

নবী করীম (ছঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার পর তিনবার হাত ধুয়ে পানির পাত্রে হাত প্রবেশ করবে না। কেননা নিদ্রা অবস্থায় তার হাত কোথায় ছিল তা তার জানা নেই।-(মেশকাত, পৃঃ ৪৫)।

এই হাদীসে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, জাগ্রত ও নিদ্রা অবস্থায় তথা সর্বদাই পাক পবিত্রতার দিকে লক্ষ্য রাখা আবশ্যক। নিদ্রাবস্থায় কোন স্বপ্নের কারণে যদি দেহ নাপাক হয়ে যায় তবে গোসল করা অপরিহার্য। হাতের পবিত্রতার প্রতি এ জন্য জোর তাকীদ করা হয়েছে যাতে নাপাক হাত পাক পানিতে ভিজে পাক পানিকে নাপাক না করে দেয়। কাজেই ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর নাপাক হাত কোন ক্রমেই পানির পাত্রে প্রবেশ করাবে না।

দাঁতে জমে থাকা ময়লার কারণে বিভিন্ন প্রকার পীড়ার সৃষ্টি হয়। এ জন্য দাঁত পরিস্কার করাকে শরীয়াতে সুন্নাত সাব্যস্ত করা হয়েছে। নবী করীম (ছঃ) বলেছেন, যদি আমার উম্মতের উপর কঠিন ও কষ্টকর না হত তবে আমি তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের সময় মিস্ওয়াক করার হুকুম করতাম।-(মা’রিফুস সুনান, পৃঃ ১৪৪)

একবার কিছুসংখ্যক মুসলমান নবী করীম (ছঃ)-এর দরবারে হাযির হলেন। তাদের দাঁত অপরিষ্কার হওয়ায় লাল দেখাচ্ছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের দাঁত লাল দেখছি কেন? তোমরা মিস্ওয়াক করো না।–(মুসনাদে আহমদ, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২১৪)।

রাস্তায় চলাচলকারী লোকদের এবং বৃক্ষের নীচে আশ্রয়গ্রহণকারী পথিকদের যেন ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে কষ্ট না হয় এ উদ্দেশ্যে নবী করীম (ছঃ) বলেছেন, তিনটি লা’নতযোগ্য কাজ থেকে বেঁচে থাকবে। অর্থাৎ পানির ঘাট, চলার পথ এবং গাছের ছায়ায় প্রস্রাব-পায়খানা করা থেকে বেঁচে থাকবে।–(মেশকাত, পৃঃ ৪৩)

স্থির পানিতে পেশাব করে পুনরায় তাতে গোসল করা ইসলামী বিধান মতে অবৈধ। হাদীসে এ সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া দাঁড়িয়ে পেশাব করা ইসলামে নিষিদ্ধ, কেননা, এভাবে পেশাব করলে পেশাবের ছিটাফোট দেহে লাগার আশংকা রয়েছে। এমনকি শক্ত মাটিতে পেশাব না করে নরম মাটিতে পেশাব করার হুকুম দেয়া হয়েছে। কেননা, শক্ত ও কঠিন যমীনে পেশাব করলে এর ছিটাফোঁটা শরীরে পড়ার আশংকা থাকে। কাজেই পেশাবের স্থানের মাটি যেন নরম ও ঢালু হয় এ দিকে খেয়াল রাখা আবশ্যক।

গোসলখানায় পেশাব করাও শরীয়াতে নিষিদ্ধ। বিশেষভাবে এর মাটি কাঁচা থাকলে এবং পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকলে। কেননা, এরূপ গোসলখানায় পেশাব করলে গোসলের সময় পেশাব মিশ্রিত পানির ছিটা শরীরে লেগে শরীর নাপাক হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। যদি তা নাও হয় তথাপি নাপাক হওয়ার সন্দেহ মনের মাঝে অবশ্যই জাগ্রত হবে। পেশাব-পায়খানা করার পর ইসতিনজা করার বিধান শরীয়াতে রয়েছে। মাটির ঢেলা অথবা অন্য কোন এমন পাক জিনিস যা মানুষ ও জিনের খাদ্যদ্রব্য নয়, তবে নাজাসাতকে পরিচ্ছন্ন করতে পারে এর দ্বারা পরিষ্কার করার পর পানি দ্বারা ধুয়ে নেয়া উত্তম। পবিত্রতা অর্জনের পর পানি ছাড়া মাটি দিয়ে হাত পরিষ্কার করার কথাও হাদীসে রয়েছে। এতে ব্যবহৃত হাতের মধ্যে কোন প্রকার দূষিত জীবাণু থাকার আশংকা থাকে না। এ কাজে বাম হাত ব্যবহার করার হুকুম দেয়া হয়েছে। ডান হাত ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।

উল্লেখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে ইসলামে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা যে কত গুরুত্বপূর্ণ, তা সহজেই অনুমেয়।

সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন গোসল করা, কাপড় ধোয়া, কাপড় পরিবর্তন করা, আতর ব্যবহার করা এবং তৈল মাখা খুবই উত্তম কাজ।

জুমু’আর দিন গোসল করার ব্যাপারে ইসলামে জোর তাকীদ রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, আরবের লোকেরা চামড়া জাতীয় ভারী পোশাক পরিধানে অভ্যস্ত ছিল। তাঁরা ছিল কঠোর পরিশ্রমী। মেহনত ও মজদুরীর উপর তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করত। তাছাড়া মসজিদ ছিল খুবই সংকীর্ণ এবং ছাদ ছিল খুবই নিচু। আর মসজিদের ছাদ নির্মিত হত নানা প্রকার পত্র-পল্লব দিয়ে। একবার গরমের দিন রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) জুমু’আর নামায আদায় করার জন্য মসজিদে আসলেন। তখন চামড়ার পোশাক পরিধানের কারণে উপস্থিত লোকজন ঘর্মেসিক্ত হয়ে গেলেন এবং তাঁদের দেহের দুর্গন্ধ মসজিদের ভেতর ছড়িয়ে পড়েছিল। নবী করীম (ছঃ) এই দুর্গন্ধ অনুভব করলেন এবং বললেন, হে লোক সকল! শুক্রবার আসলে তোমরা গোসল করবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি সাধ্যানুযায়ী উত্তম তৈল ও খুশবু ব্যবহার করবে।

জুমু’আর দিন ছাড়া অন্যান্য সময়ও দুর্গন্ধযুক্ত জিনিস ব্যবহার করে বা আহার করে মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন পিয়াজ, রসুন ইত্যাদি। কেননা, এতে উপস্থিত মুসল্লীদের কষ্ট হয় এবং স্বাস্থ্য নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে।

দৈহিক ও পোশাক-পরিচ্ছদের পরিচ্ছন্নতা জুমু’আর দিনের সাথেই কেবল সম্পৃক্ত নয় বরং পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতার এ হুকুম জীবনের সকল অবস্থার সাথেই সম্পর্কিত। একবার নবীজী (ছঃ) এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, তার মাথার চুলগুলো বিক্ষিপ্ত ও অপরিচ্ছন্ন। তখন তিনি বললেন, তার মাথার চুল পরিপাটি করার কোন কিছু নেই কি? আরেকবার তিনি অপর এক ব্যক্তিকে ময়লা ও অপরিচ্ছন্ন বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় দেখে বললেন, এ লোকটির কি কাপড় ধোয়ার মত কোন পানি পায়নি?

মোটকথা, ইসলাম পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব বস্ত্র।

ইমাম গাযালী (রঃ)-এর মতে তাহারাত এর চারটি স্তর রয়েছে।

এক. বাহ্যিক পবিত্রতা।

দুই. দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ পাপাচার থেকে পবিত্র রাখা।

তিন. মনকে অসৎ চিন্তা থেকে মুক্ত রাখা।

চার, মন-মস্তিষ্ককে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য সবকিছু থেকে মুক্ত ও পবিত্র রাখা।

উপরোক্ত চারটি স্তরের একটি অপরটির সাথে পর্যায়ক্রমে সম্পর্কযুক্ত। প্রথমে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বাহ্যিক নাপাকী থেকে পবিত্র করা।

তারপর এগুলোকে পাপাচার হতে মুক্ত রাখা। তারপর অন্তর পাক-পবিত্র রাখা। অবশেষে মন-মস্তিষ্ক আল্লাহ্ ছাড়া সবকিছু থেকে পবিত্র রাখার সাধনায় আত্মনিয়োগ করা।

.

তাহারাত বা পবিত্রতার উপকারিতা ও ফযীলত

তাহারাত বা পবিত্রতার উপকারিতা অনেক। হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী (রঃ) বলেন, পবিত্রতার বদৌলতে মানুষ মহান মর্যাদার অধিকারী হয়। মানুষের অন্তরাত্মা পশুত্বের প্রভাবমুক্ত হয়ে ঈমানী আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। এতে বান্দার পাপ মোচন হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। পবিত্রতা মানুষকে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে এবং কবরের আযাব থেকে রক্ষা করে। এতে দেহ ও শরীর সজীব এবং সতেজ হয়। মনে প্রফুল্লতা আসে। এবাদতের স্বাদ অনুভূত হয়।

হাদীস শরীফে তাহারাতের অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। নবী করীম (ছঃ) বলছেন, ছলাতের চাবি হল তাহারাত। (তিরমিযী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩)

অন্য হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) বলেছেন, যখন কোন মুসলিম অথবা মু’মিন বান্দা ওযূ করে আর সে তার মুখ ধোয় তখন ওযূর পানি অথবা ওযূর পানির শেষ ফোটার সাথে সাথে তার চেহারা থেকে সব গুনাহ্ বের হয়ে যায়, যা সে তার দু’চোখ দিয়ে করেছিল। যখন সে তার দু’হাত ধোয় তখন ওযূর পানি অথবা ওযূর পানির শেষ ফোটার সাথে সাথে তার উভয় হাত থেকে সকল গুনাহ্ ঝরে যায়, যা সে হাত দিয়ে করেছিল। শেষ পর্যন্ত সে তার গুনাহ থেকে পাক হয়ে যায়।–(তিরমিযী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২)

.

নাজাসাত ও এর প্রকারভেদ

নাজাসাত অর্থ অপবিত্রতা। মানুষ বা জীব-জন্তুর দেহ থেকে যে ময়লা বা নাপাক বস্তু বের হয় একে শরী’আতের পরিভাষায় নাজাসাত বলা হয়।

হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহলভী (র.) বলেন, নাজাসাত বলতে এমন বস্তুকে বোঝায় যাকে সুস্থ প্রকৃতি অপবিত্র মনে করে, তা পরিহার করে এবং বস্ত্রে লাগলে ধুয়ে ফেলে। যেমন, মল-মূত্র, রক্ত ইত্যাদি।-(হুজ্জাতুল বালিগা)

নাজাসাত দু প্রকার, নাজাসাতে হাকীকী ও নাজাসাতে হুকমী।

নাজাসাতে হাকীকীঃ নাপাকীর এমন এক অবস্থা যা দেখা যায় এবং যা সাধারণত মানুষের অন্তরে ঘৃণার উদ্রেক করে এবং সে সব নাপাকী থেকে মানুষ নিজের দেহ, জামা-কাপড় ও অন্যান্য ব্যবহায্য জিনিসপত্রকে রক্ষা করতে চায়। যেমন, মল-মূত্র, বীর্য, রক্ত, মদ ইত্যাদি। –(মারাকিল ফালাহ্। পৃঃ ১১৯-১০)

নাজাসাতে হুকমীঃ নাপাকীর এমন এক অবস্থা যা দেখা যায় না। বরং শরীআতের মাধ্যমে তা জানা যায়। যেমন ওযূহীন অবস্থায় থাকা, গোসলের প্রয়োজন হওয়া। নাজাসাতে হুকমীকে হাদাসও বলা হয়। উল্লেখ্য যে, উভয় প্রকারের নাপাকী হতে শরীর পাক থাকাতে হবে।–(ঐ)

নাজাসাতে হাকীকী আবার দু’ প্রকার, নাজাসাতে গালীযা এবং নাজাসাতে খফীফা।

নাজাসাতে গালীযাঃ মানুষের মল-মূত্র, রক্ত, মুখভর্তি বমি, বীর্য, পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে নির্গত যে কোন তরল বস্তু, মদ, হারাম পশুর পেশাব-পায়খানা ও দুধ, শূকরের গোশত, পশম, হাড়সহ সবকিছু, হালাল পশুর পায়খানা এবং হাঁস, মুরগী, পানকৌড়ি ও তিতিরের পায়খানা, পশুর রক্ত, ক্ষতস্থান থেকে নির্গত পূজ অথবা অন্য কোন তরল পদার্থ, নাপাক বস্তু থেকে নিঃসৃত নির্যাস, সকল পশুর পায়খানা, রক্ত, মৃত পশুর গোত, চর্বি ইত্যাদি এবং পাকহীন চামড়া নাজাসাতে গলীয়া।

তরল নাজাসাতে গালীযা দেহে বা কাপড়ে লাগলে তা এক দিরহাম তথা হাতের তালুর পরিমাণ হলে মাফ। আর গাঢ় হলে ওজনে সাড়ে চার মাশা পরিমাণ মাফ। বর্ণিত পরিমাণের অতিরিক্ত হলে উভয় ক্ষেত্রেই তা ধোয়া ছাড়া পাক হবে না।–(হোদায়া, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৫৭)।

নাজাসাতে খফীফা : নাজাসাতে খফীফা নাজাসাতে গালীযার তুলনায় হালকা ও লঘু। নাজাসাতে খফীফা যে স্থানে লাগে তার এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ হলে তা মাফ। কাপড়ের যে স্থানে নাপাকী লাগে তার এক-চতুর্থাংশ যেমন কাপড়ের আঁচল, জামার হাতা ইত্যাদি, অথবা, শরীরের যে অঙ্গে নাপাকী লাগে তার এক-চতুর্থাংশ যেমন, হাত, পা ইত্যাদি।

গরু-মহিষ ইত্যাদি হালাল পশুর পেশাব, কাক চিল ইত্যাদি হারাম পাখির মল, হালাল পাখির পায়খানা যদি দুর্গন্ধযুক্ত হয়।

নাজাসাতে হুকমীঃ নাজাসাতে হুকমী দু’ প্রকার, হাদাসে আসগর বা ছোট নাপাকী এবং হাদাসে আকবর বা বড় নাপাকী।

হাদাসে আসগর বলতে ঐ সব অবস্থা বুঝায় যার কারণে ওযূ থাকে না।

.

হাদাসে আসগার বা ঘোট নাপাকীর হুকুম

 হাদাসে আসগর থেকে পবিত্র হতে হলে ওযূ করতে হবে। পানি পাওয়া না গেলে অথবা পানি ব্যবহার ক্ষতিকর হলে তায়াম্মুম দ্বারাও পাক হওয়া যায়। উক্ত হাদাস অবস্থায় নামায আদায় করা যাবে না। কোরআন স্পর্শ করা যাবে না। তবে ওযূ ব্যতীত অর্থাৎ হাদাসে আসগার অবস্থায় মৌখিকভাবে কোরআন তিলাওয়াত করা যায়।

.

হাদাসে আকবর বা বড় নাপাকীর হুকুম

হাদাসে আকবর বলতে ঐ সব অবস্থা বুঝায় যার কারণে গোসল ফরয হয়। এ হাদাস থেকে পবিত্র হতে হলে গোসল করতে হয়। গোসল করা সম্ভব নাহলে তায়াম্মুম দ্বারা পাক হওয়া যায়। হাদাসে আকবার অবস্থায় নামায আদায় করা যাবে না। কোরআন স্পর্শ করা যাবে না এমনকি মৌখিকভাবেও কোরআন পড়া যাবে না এবং মসজিদে প্রবেশ করাও যাবে না।

.

নাজাসাতে হাকীকী থেকে পবিত্র করার নিয়ম

 ধাতু নির্মিত বস্তু যেমন তলোয়ার, ছুরি, চাকু, সোনা, রূপা, তামা, পিতল, এলুমিনিয়াম ও স্টীলের বাসন, বাটি, পাতিল, চিনামাটি, কাঁচ, আয়না অথবা পাথরের থালাবাটি ইত্যাদি যা নাজাসাত শোষণ করতে পারে না; অপবিত্র হয়ে গেলে মাটি দিয়ে ঘষে মেজে নিলে তা পাক হয়ে যাবে। এমনভাবে ঘষে মেজে বা মুছে নিতে হবে যেমন নাজাসাতের কোন চিহ্ন বা গন্ধ না থাকে। উপরোক্ত জিনিসগুলো নকশাখচিত হলে সেক্ষেত্রে এ হুকুম প্রযোজ্য হবে না। এসব জিনিসপত্র যদি নক্শাখচিত হয় যেমন অলংকার অথবা নক্‌শী করা থালাবাটি, তবে তা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। শুধু ঘষলে অথবা ভিজা কাপড় দিয়ে মুছে ফেললে পবিত্র হবে না। ধাতু নির্মিত থালাবাটি অথবা অন্যান্য জিনিসপত্র যেমন চাকু, ছুরি, চিমটা, মাটি বা পাথরের থালাবাটি প্রভৃতি আগুনে দিলে পাক হয়ে যায়।

চাটাই, চৌকি, টুল, বেঞ্চ, অথবা এ ধরনের কোন জিনিসের উপর ঘন বা তরল নাজাসাত লেগে গেলে শুধু মুছে ফেললে পবিত্র হবে না। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

.

শরীর পবিত্র করার পদ্ধতি

দেহে নাজাসাতে হাকীকী লাগলে তিনবার ধুয়ে নিলে পবিত্র হয়ে যায়। শরীরে নাপাক তেল অথবা অন্য কোন তৈলাক্ত কিছু মালিশ করার পর শুধু তিনবার ধুয়ে ফেললেই দেহ পাক হয়ে যাবে। তৈলাক্ততা দূর করা আবশ্যক নয়। যদি নাপাক রঙে শরীর বা চুল রাঙানো হয়, তবে এতটুকু ধুয়ে ফেললে যথেষ্ট হবে যাতে পরিষ্কার পানি বের হয়। রঙ তুলে ফেলার প্রয়োজন নেই।-(কায়যাবী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৭৯)

মোজা, জুতা অথবা চামড়ার তৈরি অন্যান্য জিনিস যদি নাপাক হয়ে যায় আর নাজাসাত জমাটবাঁধা ঘন হয় যেমন গোবর, পায়খানা, রক্ত, বীর্য প্রভৃতি, তবে নাজাসাত ঘষে তুললে পাক হয়ে যাবে।

আর নাজাসাত যদি তরল হয় এবং শুকিয়ে গেলে দেখা না যায়, তাহলে না দেয়া পর্যন্ত পবিত্র হবে না। ধুয়ে ফেলার নিয়ম হল, প্রত্যেক বার ধোয়ার পর এতটা দেরি করতে হবে যেন। পানি টপকানো বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে তিনবার ধুতে হবে।

কাপড়ে নাজাসাত লাগলে তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং প্রত্যেকবার ভালো করে চাপ দিয়ে নিংড়াতে হবে। ভালো করে নিংড়িয়ে ধুবার পরও যদি দুর্গন্ধ থেকে যায় কিংবা দাগ থাকে তাতে কোন দোষ নেই। হয়ে যাবে।-(আলমগীরী)

নাজাসাত যদি এমন জিনিসে লাগে যা নিংড়ানো যায় না যেমন, খাট, পালং, মাদুর, পাটি, চাটাই, মাটির পাত্র, কলস, বাসন, চীনা মাটির বরতন, পেয়ালা, বোতল ইত্যাদি তবে তা পবিত্র করার নিয়ম হল, একবার ধুয়ে এমনভাবে রাখতে হবে যেন সমস্ত পানি ঝরে। বন্ধ হলে আবার ধুবে এরূপ তিনবার ধুয়ে নিলে পবিত্র হয়ে যাবে।

দু পাল্লা বিশিষ্ট কাপড়ের এক পাল্লা যদি পবিত্র ও অপর পাল্লা অপবিত্র হয়, আর ঐ পবিত্র পাল্লার উপর নামায আদায় করলে নামায আদায় হবে না। কিন্তু সেলাই করা না হলে অপবিত্র পাল্লা নীচে রেখে নামায আদায় করলে নামায আদায় করা দুরুস্ত হবে।-(বেঃ জেঃ)

অপবিত্র মাটি শুকিয়ে গেলেই তা পবিত্র হয়ে যাবে। এমন মাটিতে নামায আদায় করা যাবে, তবে তা দিয়ে তায়াম্মুম করা জায়েয হবে না।–(আলমগীরী)।

মাটি থেকে উদ্গত ঘাস, শস্য গাছের চারা নাপাক হওয়ার পর তা শুকিয়ে গেলে পাক হয়ে যায়।

চুনসুরকী বা সিমেন্ট, বালি দিয়ে গাঁথা ইট নাপাক হলে তা শুকিয়ে গেলে পবিত্র হয়ে যাবে। আর গাঁথুনি ছাড়া বিছানো আলগা ইট নাপাক হলে তা ধুয়ে পাক করতে হবে। -(বেঃ জেঃ)

নাপাক মাটি দ্বারা হাঁড়ি পাতিল বানালে কাঁচা থাকা পর্যন্ত নাপাক থাকবে তবে আগুনে পোড়াবার সাথে সাথে তা পাক হয়ে যাবে।

যে যমীন গোবর দিয়ে লেপা হয় তা নাপাক। তার উপর পাক বিছানা না বিছালে নামায হবে না। তবে লেপা গোবর ভালভাবে শুকিয়ে গেলে তার উপর এমনকি ভিজা কাপড় বিছিয়ে নামায আদায় করাও জায়েয। অবশ্য কাপড় যদি এত বেশি ভিজা হয় যে এতে গোবর লেগে যাবার সম্ভাবনা থাকে তাহলে নামায জায়েয হবে না।

নাপাক চামড়া পাকা করার পর প্রত্যেক চামড়া পবিত্র হয়ে যায়। সে চামড়া হালাল পশুর হোক বা হারাম পশুর হোক। কিন্তু শূকরের চামড়া কোন ক্রমেই পাক হবে না।

.

তরল ও তৈলাক্ত জিনিস পাক করার নিয়ম

নাপাক তৈল অথবা চর্বি থেকে সাবান তৈরি করলে সাবান পবিত্র হয়ে যাবে।

তেল, ঘি, মধু, সিরাপ বা শরবত যদি নাপাক হয়ে যায় তবে তাতে সমপরিমাণ বা ততোধিক পানি ঢেলে জ্বাল দিতে হবে। পানি শেষ হবার পর আবার ঐ পরিমাণ পানি দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। এ ভাবে তিনবার করলে তা পাক হয়ে যাবে।

জমাট ঘি, চর্বি অথবা মধু যদি নাপাক হয়, তবে নাপাক অংশটুকু ফেলে দিলেই পাক হয়ে যাবে।

.

পানির প্রকারভেদ ও এর হুকুম

 পানি পবিত্র। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছেঃ

وانزلنا من الشماء ماء طهورا

আমি আসমান থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি।–(সূরা ফুরকান, ২৫ঃ ৪৮)।

তাই যতক্ষণ পর্যন্ত পানি নাপাক হওয়ার প্রমাণ না পাওয়া যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তা পাক বলে গণ্য হবে।

পানি পাঁচ প্রকারঃ

১. তাহির মুতাহহির গায়র মাকরূহ। অর্থাৎ এমন পানি যা নিজে পাক ও অন্য বস্তুকেও পবিত্র করে এবং যার দ্বারা ওযূ, গোসল করা মাকরূহ নয়। যেমনঃ বৃষ্টি, নদী, সমুদ্র, পুকুর, নালা, ঝর্ণা, কূপ, টিউবওয়েল প্রভৃতির পানি; সে পানি মিঠা হোক অথবা লোনা, শিশিরের হোক অথবা বরফের হোক।

২. তাহির মুতাহহির মাকরূহ। অর্থাৎ এমন পানি যা নিজে পবিত্র এবং অন্য বস্তুকেও পবিত্র করে তবে তার দ্বারা ওযূ ও গোসল করা মাকরূহ। যেমন বিড়াল বা এমন কোন প্রাণী পানিতে মুখ লাগিয়েছে যার উচ্ছিষ্ট মাকরূহ।

৩. তাহির গায়রে মুতাহহির। অর্থাৎ এমন পানি যা নিজে পবিত্র তবে অন্য বস্তুকে পবিত্র করে না। এ পানি দিয়ে ওযূ ও গোসল জায়েয নয়। যেমন ব্যবহৃত পানি। অর্থাৎ যা হাদাস (নাপাকী) দূর করার জন্য বা আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও ছওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, দেহ হতে পৃথক হওয়া মাত্রই পানি ব্যবহৃত হয়ে যায়। সুতরাং এরূপ পানি দিয়ে ওযূ ও গোসল দুরস্ত হবে না। তবে এমন পানি দেহে বা কাপড়ে লাগলে তা নাপাক হবে না।

৪. নাপাক পানি। যেমন প্রবাহমান পানিতে নাপাকী পড়ে এমন অবস্থা সৃষ্টি করলো যে, পানির রং, গন্ধ এবং স্বাদ বদলে দিল, অথবা আবদ্ধ অনেক পানি কিন্তু নাপাকী পড়ার কারণে সব দিকের পানির রং, গন্ধ বা স্বাদ বদলে গেলে অথবা অল্প আবদ্ধ পানি তাতে যদি সামান্য নাজাসাত পড়ে এবং তার দ্বারা পানির রং, গন্ধ এবং স্বাদে কোন পরিবর্তন না আসে তথাপিও সেসব পানি দিয়ে ওযূ ও গোসল দুরুস্ত হবে না এবং তা দিয়ে কোন নাপাক বস্তু পবিত্র করা যাবে না।

৫. মাশকূক পানি। অর্থাৎ এমন পানি যা দিয়ে ও গোসল দুরুস্ত হওয়া বা না হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ থাকে। যেমন, যে পানিতে গাধা বা খচ্চর মুখ দিয়েছে, সে পানির হুকুম হল, এ পানি দিয়ে ওযূ করার পর তায়াম্মুমও করতে হবে। -(তাহতাবী আলাল মারাফিল কালাহ, পৃঃ ১৬-১৭)

.

ঝুটা উচ্ছিষ্ট এবং ঘামের হুকুম

উল্লেখ্য যে, ঝুটা বা উচ্ছিষ্ট এবং ঘামের হুকুম চার প্রকারঃ

১. পাক–যেমন মানুষ ও হালাল পশুর ঝুটা।

২. মাকরূহ–যেমন বিড়ালের ঝুটা

৩. নাপাক–যেমন শূকর ও অন্যান্য হারাম পশুর ঝুটা।

৪. মাশকূক–যেমন গাধা ও খচ্চরের ঝুটা।–(হেদায়া, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২৮)

পানির সাথে কোন পবিত্র জিনিস মিশে গেলে এবং তা দ্বারা পানির রং, ঘ্রাণ অথবা স্বাদ বদলে যায়, যেমন স্রোতের পানির সাথে বালু মিশে গেলে অথবা জাফরান বা সাবান পড়ে পানিতে তার কিছুটা রং এসে গেলে অথবা এ ধরনের আরো কোন পবিত্র জিনিস পড়ে গেল, এসব অবস্থায় পানি পবিত্র থাকবে এবং তরল থাকার শর্তে তা দিয়ে ওযূ ও গোসল জায়েজ হবে।–(হিদায়া, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৪)

আর যদি কোন পাক জিনিস দিয়ে পানি জ্বাল দেয়ার পর পানির গুণাবলী বলদে যায় তবে এ পানি দিয়ে ওযূ ও গোসল জায়েয হবে না। তবে বরই পাতা বা উশনানা জাতীয় সুগন্ধি ঘাস দিয়ে জ্বাল দেয়া পানি দিয়ে ওযূ ও গোসল জায়েয হবে।–(হেদায়া)

স্রোতের পানিতে যদি নাপাকী পড়ে এবং তাতে পানির রং গন্ধ এবং স্বাদে পরিবর্তন না দেখা গেলে তা দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করা দুরুস্ত।-(আলমগীরী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৬-১৭)।

বড় পুকুর যার একদিকে পানি নাড়া দিলে অন্য দিকে নড়ে না এ ধরনের পুকুরের একদিকে নাপাকী পড়লে অন্যদিক দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করা জায়েয।–(হেদায়া, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৭)।

যে জীবের দেহে প্রবাহমান রক্ত না থাকে যেমন মাছি, মশা, ভোমর, বিচ্ছ, প্রভৃতি তা পানিতে পড়ে মরে গেলে অথবা মরে যাওয়ার পর পানিতে পড়লে সে পানি পবিত্র থাকে এবং তা দিয়ে ওযূ ও গোসল করা জায়েয।–(হেদায়া, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৭)

পানিতে বসবাসকারী জীব যদি পানিতে মরে, যেমন মাছ, কাকড়া, ব্যাঙ ইত্যাদি তবে পানি পবিত্র থাকবে। যে পানি গাছ বা ফল-ফলাদি থেকে বের হয় যেমন আখের রস, ফলের রস, ডাবের পানি ইত্যাদি দিয়ে ওযূ ও গোসল জায়েয নেই।

পবিত্র পানিতে ব্যবহৃত পানি মিশে গেলে এবং ব্যবহৃত পানি পরিমাণে বেশি হলে সমস্ত . পানি ব্যবহৃত পানি বলে গণ্য হবে এবং তা দিয়ে ওযূ ও গোসল না জায়েয। –(আলমগীরী, ১ম খণ্ড)

যেসব জীবের দেহে প্রবাহমান রক্ত আছে এমন জীব অল্প পানিতে পড়ে মরে গেলে অথবা মরে যাওয়ার পর পড়লে পানি অপবিত্র হয়ে যাবে।

.

ঝুটার মাসয়ালা

[খাদ্য পানীয় বস্তু মুখে লাগিয়ে বা খেতে শুরু করে পরে রেখে দিলে তাকে ঝুটা বলে]

১। মাসয়ালা : বেদ্বীন, ঋতুবর্তি হোক, নাপাক, নেফাছওয়ালী যাই হোক–সব ধরনের মানুষের ঝুটা পবিত্র। এমনিভাবে এদের ঘামও পবিত্র। কিন্তু হাতে বা মুখে কোন নাপাকী থাকলে অবশ্য ঝুটা নাপাক হয়ে যাবে।-(হেদায়া, অলমগীরী)

২। মাসয়ালা : কুকুরের ঝুটা নাপাক। কুকুর কোন পাত্রে মুখ দিলে তা নাপাক হয়ে যায়। মাটি কিংবা তামা, কাঁসার পাত্র যাই হোক, সবই তিন বার ধৌত করলে পাক হয়ে যায়, কিন্তু সাত বার ধোয়া উত্তম। আর একবার মাটি দিয়ে মেজে ফেলা আরও উত্তম।–(হেদায়া)

৩। মাসয়ালা : শূকরের ঝুটা, এরূপ বাঘ, চিতাবাঘ, বানর, শৃগাল ইত্যাদি হিংস্র জন্তুর ঝুটাও নাপাক।-(হেদায়া)।

৪। মাসয়ালা : বিড়ালের ঝুটা পাক বটে, কিন্তু মাকরূহ্। যদি অন্য পানি থাকে তবে বিড়ালের ঝুটা পানি দিয়ে ওযূ করবে না। অবশ্য পানি পাওয়া না গেলে ঐ পানি দ্বারাই ওযূ করবে।-(বেদায়া)

৫। মাসয়ালা : যে দুধ বা তরকারি ইত্যাদির মধ্যে বিড়াল মুখ লাগিয়েছে, যদি তার মালিক অবস্থাপন্ন হয়, তা ভক্ষণ করবে না। যদি গরীব হয় তবে খাওয়াতে কোন দোষ হবে না। গরীব লোকের জন্য বিড়ালের ঝুটা মাকরূহ্ নয়।-(হেদায়া)।

৬। মাসয়ালাঃ বিড়াল ইঁদুর ধরে সাথে সাথে এসে কোন হাঁড়িতে মুখ লাগালে তা নাপাক হয়ে যাবে; আর যদি কিছুক্ষণ দেরী করে চেটে চুষে মুখ দিয়ে থাকে, তবে পবিত্র হবে না; তবে উল্লিখিত মাসআলার ন্যায় মারূহ হবে।-(শরহে বেকায়া)

৭। মাসয়ালা : যে মুরগী খোলা থাকে, এদিকে ওদিকে ঘুরে ফিরে নাপাক বস্তু খায়, সেটির ঝুটা মাকরূহ্ আর যে মুরগী বন্ধ করে রাখা হয় সেটির ঝুটা পাক, মাকরূহ্ নয়। (হেদায়া)

৮। মাসয়ালা : যে সমস্ত পাখী শিকার করে খায়, যেমন–শিকরা, বাজ ইত্যাদি, সেগুলোর ঝুটা মাকরূহ্, কিন্তু যদি ঘরে পোষা হয় এবং মরা না ভক্ষণ করে, ঠোঁটেও কোন প্রকার নাপাকী থাকার সন্দেহমুক্ত থাকে, তবে তার ঝুটা পাক।-(হেদায়া)

৯। মাসয়ালা : হালাল পশু যেমন : ভেড়া, বকরী, গরু, মহিষ, হরিণ ইত্যাদি এবং হালাল পাখী, যেমন–ময়না, তোতা, ঘুঘু, চড়ই ইত্যাদির ঝুটা পাক; তদরূপ ঘোড়ার ঝুটাও পাক। -(আলমগীরী)

১০। মাসয়ালা : যে সব প্রাণী গৃহে থাকে, যেমন–সাপ, বিচ্ছু, ইঁদুর, টিটিকি, এসবের ঝুটা মাকরূহ্।-(হেদায়া)

১১। মাসয়ালা : ইঁদুর যদি রুটির অংশ বিশেষ খেয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে যে দিকে খেয়েছে সে দিকের কিছু ছিঁড়ে ফেলে বাকী অংশ খাওয়ায় কোন দোষ হবে না।–(রদ্দুল মোহতার)

১২। মাসয়ালা : যদি গাধা এবং খচ্চরের ঝুটা পানি ব্যতীত অন্য পানি না পাওয়া যায় তবে ওই পানি দিয়ে ওযূ করতে হবে এবং তায়াম্মুমও করবে। প্রথমে তায়াম্মুম করুক কিংবা ওযূ করুক উভয়ই সমান।–(হেদায়া) .

১৩। মাসয়ালা : যে সব পশুর ঝুটা নাপাক তার ঘামও নাপাক। যেগুলোর উচ্ছিষ্ট পাক সেগুলোর ঘামও পাক। আর যেগুলোর ঝুটা মাকরূহ্ সেগুলোর ঘামও মাকরূহ। গাধা এবং খচ্চরের ঘাম পাক, যদি তা বস্ত্রে লাগে, তবে ধোয়া ওয়াজিব নয়, কিন্তু ধুয়ে ফেলা উত্তম। –(দুররুল মুখতার)

১৪। মাসয়ালা : কেউ হয়ত বিড়াল পোষে, এখন বিড়াল কাছে এসে বসে এবং ঐ ব্যক্তিরা হাত পা চাটে তবে যেখানে যেখানে চেটেছে বা লালা লেগেছে, সে সব জায়গা ধুয়ে ফেলবে, ধোয়া মাকরূহ এবং অন্যায় হবে।–(মুনইয়া, আলমগীরী)।

১৫। মাসয়ালা : জেনেশুনে নিজের স্বামী ছাড়া পর পুরুষের ঝুটা খাদ্য পানীয় স্ত্রীলোকের জন্য মাহ যদি না জেনে খায়, তবে মাকরূহ নয়। এমনিভাবে নিজের পুরুষের জন্যও স্ত্রী ব্যতীত বেগানা স্ত্রীলোকের ঝুটা মাকরূহ।

.

ইসতিনজার নিয়ম

 পেশাব-পায়খানার পর পবিত্রতা অর্জনকে ইসতিনজা বলা হয়। শরীয়াতে ইসতিনজার উপর বিশেষ তাকীদ প্রদান করা হয়েছে। ইসতিনজায় অবহেলা করাকে বড় হুনাহ্ এবং কবরে আযাবের কারণ বলে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে।

হযরত ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছঃ) দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এমন সময় বললেন : এ দু’জন মুর্দার উপর আযাব হচ্ছে, (এ আযাব) কোন কঠিন কারণের জন্যে নয়। এদের মধ্যে একজন পেশাবের পর ভালোভাবে পাক হত না। -(মেশকাত শরীফ)

পেশাব-পায়খানার পর আবশ্যক মত মাটির ঢিলা, নেকড়া, টয়লেট পেপার ইত্যাদি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন সুন্নাত। শুধু পানি দিয়েও পবিত্রতা অর্জন করা যায়। পানি না পাওয়া গেলে ঢিলা দিয়ে ইসতিনজা করাও দুরস্ত আছে।–(মারাকিল ফালাহ)

মলদ্বার বা প্রস্রাবের রাস্তা ভালোভাবে পরিষ্কার করা সুন্নাত। অবশ্য তিনটি বা পাঁচটি প্রয়োজনে সাতটি অর্থাৎ বেজোড় সংখ্যক ঢিলা ব্যবহার করা মুস্তাহাব।-(ঐ)

পেশাব করতে বসার সময় হাঁটুর উপরের কাপড় খুলে বসা উচিত নয়। পেশাব করার সময় এর ছিটা যাতে কাপড়ে বা শরীরে না লাগে সে ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে। (ঐ)

পেশাব-পায়খানার জন্য নির্ধারিত স্থানে যাওয়ার পূর্বে নিম্নের দোয়া পড়া উত্তমঃ

بسم الله اللهم إني أعوذبك من الخبث والخبائث

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা উন্নী আউযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবা-য়িস্।

প্রথমে বাম পা দিয়ে পেশাব পায়খানার স্থানে প্রবেশ করবে এবং সম্ভব হলে বাম পায়ের উপর ভর করে বসবে। পায়খানা ইসতিনজার পর ডান পা আগে দিয়ে বের হয়ে নিম্নের দোয়াটি পড়বে।

الحمد لله الذي أذهب عني الأذى وعافاني

উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লা-হি ল্লাযী আযহাবা আন্নিল আযা ওয়া আ-ফা-নী।

পেশাব-পায়খানার সময় কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ করা, কোন গর্তে পেশাব করা, ছায়াদানকারী বা ফলবান গাছের নিচে, নদী ও পুকুরের তীরে এবং চলাচলের পথে পেশাব-পায়খানা করা মাকরূহ।–(ঐ)

বিনা কারণে দাঁড়িয়ে পেশাব করা মাকরূহ।

.

হায়েয ও এস্তেহাযার মাসয়ালাসমূহ

 ১। মাসয়ালাঃ মেয়ে সাবালিকা হলে প্রতিমাসে স্বাভাবিক নিয়মে পেশাবের রাস্তা দিয়ে যে রক্তস্রাব হয়, তাকে হায়েয বা ঋতু বলে।

২। মাসয়ালা : হায়েযের মেয়াদ কম পক্ষে তিন দিন তিন রাত এবং ঊর্ধে দশ দিন দশ রাত। সুতরাং, যদি তিন দিন তিন রাত অর্থাৎ বাহাত্তর ঘন্টা অপেক্ষা কম রক্তস্রাব হয়, তবে তা হায়েয হিসেবে ধর্তব্য হবে না, তাকে এস্তেহাযা বলা হবে। এরূপ যদি দশ দিন দশ রাতের বেশি, অর্থাৎ দু’শ চল্লিশ ঘন্টা অপেক্ষা বেশি রক্তস্রাব হয়, তাহলে অতিরিক্ত রক্তস্রাবকে হায়েয বলা যাবে না, তাকে এস্তেহাযা বলা হবে। (এ সময় নামায বাদ দেয়া যাবে না। গোসল করে যথারীতি নামায আদায় করতে হবে।)।

৩। মাসয়ালা : যদি তিন দিন তিন রাতের চেয়ে সামান্য কমও হয়, তবুও তাকে হায়েয বলা যাবে না। যেমন, শুক্রবার সূর্য উদয়ের সময় আরম্ভ হয়েছে এবং সোমবার সূর্য ওঠার কিছু পূর্বে বন্ধ হয়েছে, তবে এটা হায়েয নয়, এস্তেহাযা।

৪। মাসয়ালা : হায়েযের মেয়াদের মধ্যে লাল, হলদে, সবুজ, কালো, মেটে যে কোন রং দেখা যাক না কেন, হায়েযের রক্ত বলে ধর্তব্য হবে, যখন সম্পূর্ণ সাদা রং দেখা দেবে তখন। বুঝতে হবে যে, হায়েয বন্ধ হয়ে গেছে।

৫। মাসয়ালাঃ নয় বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মেয়েদের ঋতুস্রাব হয় না। সুতরাং কোন মেয়ের যদি নয় বছরের আগে রক্তস্রাব দেখা দেয়, তবে তা হায়েয নয় বরং তা এস্তেহাযা। তদ্রুপ পঞ্চান্ন বছরের পরে সাধারণতঃ মহিলাদের হায়েয হয় না, কিন্তু যদি কোন নারীর পঞ্চান্ন বছরের পরও রক্তস্রাব দেখা দেয় এবং রক্তের রং লাল, কালো দেখা দেয়, তাহলে তা হায়েয হবে। আর যদি হলদে, সবুয বা মাটি রংগের হয় তবে তা হায়েজ হবে না, এস্তেহাযা হবে। কিন্তু যদি ওই স্ত্রীলোকের এর পূর্বেও হলদে, সবুজ বা মাটি রংগের স্রাব হওয়ার অভ্যাস থেকে থাকে, তবে পঞ্চান্ন বছরের পরও তা হায়েয হবে।

৬। মাসয়ালা : যে স্ত্রীলোকের হামেশা তিন বা চার দিন হায়েয হওয়ার অভ্যাস ছিল, তার কোন মাসে রক্ত বেশি আসল, কিন্তু দশ দিনের বেশী না হলে সব ক’দিনকেই হায়েয বলে ধরতে হবে, কিন্তু দশ দিন দশ রাতের চেয়ে বেশি হলে পূর্ব অভ্যাসের ক’দিন হায়েয হবে, অবশিষ্ট ক’দিন এস্তেহাযা। যেমনঃ কোন মহিলার বরাবর তিন দিন স্রাব হওয়ার অভ্যাস ছিল, হঠাৎ এক সাথে তার নয় দিন দশ রাতের চেয়ে এক মুহূর্ত বেশি রক্তস্রাব দেখা দিয়ে থাকে, তবে তার তিন দিন তিন রাতের রক্তকে হায়েয ধরতে হবে, অতিরিক্ত দিনগুলোর রক্তকে এস্তেহাযা বলতে হবে এবং ঐ দিনগুলোর নামায কাযা করা ওয়াজিব হবে।

৭। মাসয়ালা : কোন এক স্ত্রীলোকের হায়েযের কোন নিয়ম ছিল না। কোন মাসে চার দিন, কোন মাসে সাত দিন, কোন মাসে দশ দিনও হতো। এটা সবই হায়েয, কিন্তু হঠাৎ একমাসে দশ দিনের চেয়ে বেশি দেখা দিল, এখন দেখতে হবে যে, এর আগের মাসে কয়দিন স্রাব হয়েছিল, এ মাসেও সে ক’দিনই হায়েয হবে, বাকী দিনগুলো এস্তেহাযা।

৮। মাসয়ালা : একজন মহিলার সর্বদা প্রতি মাসে চারদিন স্রাব হতো, কিন্তু হঠাৎ একমাসে পাঁচদিন রক্ত দেখা দিল এবং তার পরের মাসে পনর দিন রক্ত দেখা দিল। অতএব, যে মাসে পনর দিন রক্ত দেখা গেছে, সেই মাসের পূর্বের মাসে পাঁচ দিন হিসাবে হায়েয ধরতে হবে। অবশিষ্ট দশ দিন এস্তেহাযা ধরতে হবে। পূর্বের অভ্যাস ধর্তব্য নয়। মনে করতে হবে যে, অভ্যাস বদলে গেছে এবং পাঁচ দিনের অভ্যাস হয়েছে। এ অবস্থায় দশ দিন দশ রাত পার হবার পর গোসল করে নামায শুরু করবে এবং গত পাঁচ দিনের নামায ক্বাযা করতে হবে।

৯। মাসয়ালা : মহিলাদের হায়েয নেফাসের মাসয়ালা-মাসায়েল ভাল করে বুঝে নেয়া জরুরী। অনেকে লজ্জায় কারও কাছে জিজ্ঞেস করে না। ভাল আলেমের নিকট সকল সয়ালা ভালভাবে জেনে নেয়া উচিত। মহিলাদের জন্য কোন্ মাসে কতদিন রক্তস্রাব দেখা দিল, তা মনে রাখাও একান্ত কর্তব্য। কারণ, পরবর্তী মাসের হুকুম কখনও পূর্ববর্তী মাসের ঘটনার ওপর নির্ভর করে। যেমনঃ যদি কোন স্ত্রীলোক কোন মাসে দশ দিনের চেয়ে বেশি রক্তস্রাব হয়, আর তার পূর্বের মাসের কথা মনে করতে না পারে এবং পূর্বের অভ্যাসও মনে করতে না পারে, তবে এ মাসয়ালা এত কঠিন হয়ে যায় যে, সাধারণ লোক তো দূরের কথা, অনেক আলেমও তা বুঝে ওঠতে পারে না। এ জন্যই যে ভুল করে তার মাসয়ালা এখানে লেখা হল না। আলেমের কাছে জিজ্ঞেস করে নেবে।

১০। মাসয়ালাঃ একটি মেয়ে প্রথম হায়েজ দেখতে পেল। এর পূর্বে তার হায়েয হয়নি। অতএব, যদি দশ দিন বা তদপেক্ষা কম স্রাব হয়, তবে যে কয়দিন ঋতুস্রাব হবে সব ক’দিনই তার হায়েযের মধ্যে ধর্তব্য হবে। আর যদি দশদিন দশ রাতের চেয়ে বেশি স্রাব হয়, তাহলে দশ দিন দশ রাত পুরা হায়েযের মধ্যে ধর্তব্য হবে এবং বাকী যে কদিন বা ঘন্টা বেশি হয়, তা এস্তেহাযা বলে গণ্য হবে।

১১। মাসয়ালা : যদি কোন মেয়ের প্রথমবারই হায়েজ শুরু হয়ে আর বন্ধ না হয়, ক্রমাগত কয়েকমাস যাবত জারী থাকে, তাহলে যে দিন থেকে রক্তস্রাব শুরু হয়েছে, সেদিন থেকে দশ দিন দশ রাত হায়েয ধরতে হবে। আর পরের বিশ দিন এস্তেহাযা ধরতে হবে। এভাবে প্রতি মাসে তার দশ দিন হায়েয এবং বিশ দিন এস্তেহাযা হিসেবে ধরতে হবে।

১২। মাসয়ালা : দু’ হায়েযের মাঝে পাক থাকার মেয়াদ কমপক্ষে পনর দিন, আর বেশির কোন সীমা নেই। সুতরাং যদি কোন মহিলার কোন কারণে কয়েকমাস পর্যন্ত হায়েয বন্ধ থাকে, তাহলে যে পর্যন্ত হায়েয না হবে, সে পর্যন্ত সে পবিত্র থাকবে।

১৩। মাসয়ালা : কোন মহিলার যদি তিন দিন তিন রাত রক্ত দেখা দেয়, তার পর পনের দিন পাক থাকে তারপর আবার তিন দিন তিন রাত রক্ত দেখে, তাহলে প্রথমবারে তিন দিন তিন রাত এবং পনের দিনের পর তিন দিন তিন রাত হায়েয ধরবে। আর মধ্যকার দিন পাক থাকার সময়।

১৪। মাসয়ালা : যদি কোন মহিলা এক দু দিন হায়েজের পর পনের দিন পাক থাকে এবং পুনরায় একদিন বা দু দিন রক্ত দেখে, তাহলে সে যে পনর দিন পাক রয়েছে তা তো পবিত্রতারই সময় এবং এদিক ওদিক যে কয়দিন রক্ত দেখেছে, তাও হায়েয নয়, এস্তেহাযা।

১৫। মাসয়ালা : একদিন, দু’দিন বা কয়েকদিন রক্তস্রাব দেখা দেয়ার পর যদি কয়েক দিন–পাঁচ দিন, সাত দিন, দশ দিন বা পনের দিনের কম সময় রক্ত বন্ধ থেকে আবার রক্ত দেখা দেয়, তবে মাঝখানের রক্ত বন্ধের দিনগুলোকে পাক ধরা যাবে না, সে দিন গুলোকেও হায়েযের দিন ধরতে হবে। অতএব, যে ক’দিন হায়েযের নিয়ম ছিল, সেই ক’দিনকে হায়েয ধরে অবশিষ্ট দিনগুলোকে এস্তেহাযার দিন ধরতে হবে। যেমনঃ একজন স্ত্রীলোকের নিয়ম ছিল, চাঁদের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয়–এ তিন দিন তার হায়েয আসত। তারপর এক মাসে এমন হল যে, প্রথম তারিখে স্রাব দেখা দিয়ে চৌদ্দ দিন বন্ধ থাকল। মোল তারিখে আবার রক্ত দেখা দিল, এমন অবস্থা হলে মনে করতে হবে যে, ষোল দিনই রক্তস্রাব জারী ছিল। এ ষোল দিনের মধ্যে প্রথম তিন দিনকে হায়েয ধরে বাকী তের দিনকে এস্তেহাযা ধরতে হবে। অতএব প্রথম তারিখে রক্ত দেখা দিলে নামায পড়া বন্ধ করতে হবে। পরে যখন দু’ একদিন পর রক্ত বন্ধ হল, তখন গোসল করে নামায পড়া শুরু করতে হবে এবং ওই দু’একদিনের নামায ক্বাযা আদায় করতে হবে। পরে যখন আবার ষোল তারিখে রক্ত দেখা দিল এবং ঠিক হলো যে, প্রথম তিন দিন হায়েয ছিল পরের তের দিন এস্তেহাযা ছিল, তখন জানা গেল যে, প্রথম তিন দিন নামায মাফ থাকে, কাজেই সেই ক’দিনের নামাযের কৃাযা পড়তে হবে না। তার পরের ক’দিনের নামায যদি গোসল করে পড়ে থাকে, তাহলে নামায হয়ে গেছে। আর যদি গোসল না করে পড়ে থাকে, তবে সে ক’দিনের নামায ক্বাযা পড়তে হবে। পরে যখন মোল তারিখে রক্ত দেখা দিয়েছে, তখন রক্ত দেখা সত্বেও গোসল করে নামায পড়তে হবে। কেননা, তা হায়েযের রক্ত নয়, এস্তেহাযার। এ স্ত্রীলোকের যদি চার, পাঁচ ও ছয় তারিখে হায়েয আসার নিয়ম থাকে, তাহলে চার, পাঁচ ও ছয় এ তিন দিন তার হায়েযের মধ্যে গণ্য হবে। আর প্রথম তিন দিন এবং পরের দশ দিন এস্তেহাযা ধরতে হবে। আর কোনই নিয়ম না থাকলে বরং প্রথম বারেই এরূপ হয়ে থাকে, তবে প্রথম দশ দিনকে হায়েয এবং পরের ছয় দিনকে এস্তেহাযা ধরতে হবে।

১৬। মাসয়ালা : গর্ভকালীন সময় কোন কারণে রক্তস্রাব দেখা দিলে সেই রক্তকে হায়েয বলা যাবে না। যে ক’দিনই হোক তা এস্তেহাযা।

১৭। মাসয়ালা : প্রসবকালে শিশু জন্ম হওয়ার পূর্বে রক্তস্রাব হলে তাকে এস্তেহাযা বলা হবে। এমন কি, যে পর্যন্ত শিশুর অর্ধাংশের বেশি বের না হবে, সে পর্যন্ত যে রক্ত দেখা দেবে, তাকে এস্তেহাযাই বলতে হবে।

.

হায়েযের হুকুমসমূহ

১। মাসয়ালাঃ হায়েয অবস্থায় ফরয, নফল কোনপ্রকার নামায পড়া জায়েয নয় এবং রোযা রাখাও জায়েয নয়। শুধু তফাৎ এতটুকু যে, হায়েয অবস্থায় যত ওয়াক্ত নামায আসে সব মাফ। কিন্তু যে কয়টি রোযা বাদ পড়ে তার ক্বাযা করতে হবে।

২। মাসয়ালা : তবে ওয়াক্তের ফরয নামাযরত অবস্থায়ই যদি হায়েয শুরু হয়, তবে ওই নামায মাফ হয়ে যাবে। পবিত্র হওয়ার পর ক্বাযা করতে হবে না। অবশ্য যদি নফল বা সুন্নাত নামাযরত অবস্থায় হায়েয হয়, তবে সে নামাযের ক্বাযা আদায় করতে হবে। এরূপে রোযারত অবস্থায় যদি হায়েয হয়, এমন কি যদি সামান্য বেলা থাকতেও হায়েয হয়, তবুও সে রোযার ক্বাযা করতে হবে। এরূপ অবস্থা হলে নফল রোযারও ক্বাযা করতে হবে।

৩। মাসয়ালা : ওয়াক্তের নামায এখনও আদায় করেনি কিন্তু নামায পড়ার মত ওয়াক্ত এখনও আছে, এমন সময় যদি হায়েয হয়, তবে ঐ ওয়াক্তের নামায মাফ হয়ে যাবে।

৪। মাসয়ালা : হায়েয অবস্থায় স্ত্রীসহবাস দুরস্ত নয়, কিন্তু একত্রে থাকা, খাওয়া, বসা, রান্না করা, এক বিছানায় শোয়া (চুম্বন করা ও আলিঙ্গন করা) জায়েয আছে। হায়েয অবস্থায় স্ত্রীসহবাস করলে গুনাহ্ হয়। এ থেকে নিজেকে রক্ষা করার মত ধৈর্য যদি স্বামীর না থাকে তবে তার চুম্বন আলিঙ্গন থেকে বিরত থাকাই উচিত।

৫। মাসয়ালা : একজন মহিলার পাঁচ দিন বা নয় দিন হায়েয থাকার নিয়ম ছিল। নিয়ম মত ঋতুস্রাব হয়ে রক্ত আসা বন্ধ হয়ে গেছে। রক্ত বন্ধ হওয়ার সাথে সাথেই তার ওপর গোসল ফরয। গোসলের পূর্বে সহবাস দুরস্ত হবে না। অবশ্য যদি কোন কারণে গোসল করতে না পারে এবং এ পরিমাণ সময় অতিক্রম হয়ে যায় যে, তাতে এক ওয়াক্ত নামাযের ক্বাযা তার যিম্মায় ফরয হয়ে যায়, তখন সঙ্গম জায়েয হবে, এর আগে নয়।

৬। মাসয়ালা : যে মহিলার পাঁচ দিন হায়েয হওয়ার নিয়ম আছে। তার যদি এক মাসে চার দিন রক্তস্রাব হয়ে বন্ধ হয়ে যায়, তবে রক্ত বন্ধ হওয়া মাত্র গোসল করে নামায পড়া ওয়াজিব। কিন্তু পাঁচ দিন পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সঙ্গম করা দুরস্ত হবে না। কেননা, হয়ত পুনরায় রক্ত দেখা দিতে পারে।

৭। মাসয়ালা : যদি পূর্ণ দশ দিন হায়েয হয়ে রক্ত বন্ধ হয়, তবে গোসলের আগেই সহবাস করা দুরস্ত হবে।

৮। মাসয়ালাঃ যদি এক বা দু’ দিন রক্ত দেখা দিয়ে বন্ধ হয়ে যায়, তবে গোসল করা ফরয নয়। ওযূ করে নামায পড়বে কিন্তু সহবাস করা দুরস্ত হবে না। অতঃপর যদি পনর দিন পবিত্র থাকার আগে আবার রক্ত দেখা দেয়, তবে বোঝা যাবে যে, তা হায়েযের রক্ত ছিল।

সুতরাং, হায়েযের ক’দিন বাদ দিয়ে এখন গোসল করে নামায আদায় করবে। আর যদি পূর্ণ পনর দিন পবিত্র থেকে থাকে তবে বোঝা যাবে তা এস্তেহাযার রক্ত ছিল। কাজেই এক বা দু দিন রক্ত দেখার কারণে যে ক’ ওয়াক্ত নামায আদায় করেনি, তার ক্বাযা পড়তে হবে।

৯। মাসয়ালা : কোন রমণীর তিন দিন হায়েয হবার নিয়ম ছিল। এক মাসে তার এরূপ অবস্থা হল যে, তিন দিন পূর্ণ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও রক্ত বন্ধ হল না। এ অবস্থা হলে সে তখন গোসলও করবে না, নামাযও পড়বে না। যদি পূর্ণ দশ দিনের দিন অথবা তার চেয়ে কম সময়ে রক্ত বন্ধ হয়, তবে ওই সব ক’দিনের নামায মাফ, ক্বাযা করতে হবে না, মনে করতে হবে যে, নিয়মের পরিবর্তন হয়েছে। সুতরাং এ ক’দিনই হায়েযের মধ্যে ধর্তব্য হবে, আর যদি দশ দিনের পরও রক্ত আসতে থাকে, তবে বুঝা যাবে যে, হায়েয মাত্র তিন দিন ছিল, অবশিষ্ট সব এস্তেহাযা ছিল। অতএব, দশ দিন শেষ হওয়ার পর গোসল করবে এবং রক্ত জারী থাকা সত্ত্বেও নামায পড়বে এবং গত সাত দিনের নামায ক্বাযা পড়বে।

১০। মাসয়ালা ও হায়েয যদি দশ দিনের চেয়ে কম হয় এবং এমন সময় রক্ত বন্ধ হয় যে, নামাযের ওয়াক্ত প্রায় শেষ হয়ে গেছে, তৎক্ষনাৎ গোসল করে যদি এতটুকু সময় পায় যে, নিয়্যত করে কেবল আল্লাহু আকবার বলে তাহরীমা বেঁধে দাঁড়াতে পারে, এর চেয়ে বেশি সময় নেই, তবে ওই ওয়াক্তের নামায তার ওপর ওয়াজিব এবং ক্বাযা আদায় করতে হবে, আর যদি এ পরিমাণ সময় না পায় যে, গোসল করে তাহরীমা বাঁধতে পারে, তবে ঐ ওয়াক্তের নামায মাফ।

১১। মাসয়ালাঃ আর যদি পূর্ণ দশ দিনে হায়েযের রক্ত বন্ধ হয় এবং এমন সময় রক্ত বন্ধ হয় যে, গোসলের সময় নেই, মাত্র একবার আল্লাহু আকবার বলার সময় আছে, তবুও ঐ ওয়াক্তের ক্বাযা আদায় করতে হবে।

১২। মাসয়ালাঃ রমযান মাসে দিনে যদি হায়েযের রক্ত বন্ধ হয়, তবে সাথে সাথে গোসল করবে এবং নামাযের ওয়াক্ত হলে নামায পড়বে এবং যদিও এই দিনের রোযা তার হবে না, কিন্তু বাকী দিনে তার জন্য কিছু খাওয়া ও পান করা জায়েয হবে না, অন্যান্য রোযাদারের ন্যায় তারও ইফতারের সময় পর্যন্ত না খেয়ে থাকা ওয়াজিব হবে। পরে এ দিনের রোযাও ক্বাযা করতে হবে।

১৩। মাসয়ালা : যদি পূর্ণ দশ দিন হায়েয হওয়ার পর রাতে পবিত্র হয়, তবে যদি এতটুকু রাত অবশিষ্ট থাকে যে, তাতে একবার আল্লাহু আকবার বলা যায় না, তবুও সকাল থেকে রোযা। ওয়াজিব হবে। আর যদি দশ দিনের কম হায়েয হয় এবং এ পরিমাণ রাত বাকী থাকে যে, তৎক্ষনাৎ গোসল করতে পারে কিন্তু গোসলের পর একবারও আল্লাহু আকবার বলতে পারে না, তবু সকাল থেকে রোযা ওয়াজিব হবে। এ অবস্থায় গোসল না করলেও রোযার নিয়্যত করবে। রোযা ছাড়বে না, সকালে গোসল করবে। আর যদি রাত এ থেকে কম থাকে যে, গোসলও করতে পারে না, তবে সকালে রোযা রাখা দুরস্ত নয় কিন্তু দিনের বেলা কিছু পানাহার করাও জায়েয নয় এবং দিনের বেলা রোযাদারের ন্যায় থাকবে, পরে তার ক্বাযা করবে।

১৪। মাসয়ালা : যোনিদ্বারের বাইরে যে পর্যন্ত রক্ত না আসবে সে পর্যন্ত হায়েয ধরা যাবে। অতএব, যদি কোন স্ত্রীলোকের পেশাবের রাস্তার ভেতর রুই তুলার গদ্দি রেখে রক্তকে পেশাবের রাস্তার ভেতরেই বন্ধ করে রাখে, তবে যে পর্যন্ত রক্ত বের হয়ে না আসবে বা গদ্দি টেনে বের না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত হায়েয ধরা যাবে না। যখন রক্তের চিহ্ন বাইরের চামড়া পর্যন্ত আসবে বা তুলা টেনে বের করবে, তখন হতে হায়েযের হিসাব ধরা হবে।

১৫। মাসয়ালা : কোন স্ত্রীলোক এশার নামায পড়ে পাক অবস্থায় ছিদ্রের মধ্যে রুই, তুলার গদ্দি রেখে ঘুমিয়েছে। ভোর বেলা ঘুম থেকে ওঠে তুলায় রক্তের চিহ্ন দেখলে তখন থেকে হায়েয ধরতে হবে।

.

এস্তেহাযা

১। মাসয়ালা : এস্তেহাযার জন্য নামায, রোযা কোনটাই বাদ দেয়া যাবে না। ইচ্ছা করলে সহবাস করতে পারবে। অবশ্য তাড়াতাড়ি ওযূ করে নামায পড়তে হবে।

বিঃ দ্রঃ নাক দিয়ে রক্ত বের হতে থাকলে অথবা অনবরত পেশাব, পায়খানা, রক্ত বা বায়ু নির্গত হতে থাকলে যেরূপ মা’যূরের হুকুম হয়, সেরূপ এস্তেহাযার রক্তের কারণেও মা’যূরের হুকুম হবে। মা’যূরের হুকুম মা’যূরের বর্ণনায় দেখুন।

.

নেফাস

১। মাসয়ালাঃ সন্তান প্রসবের পর পেশাবের রাস্তা দিয়ে যে রক্তস্রাব হয়, তাকে নেফাস বলে। নেফাসের সময় ঊর্ধ্বে চল্লিশ দিন। চল্লিশ দিনের চেয়ে বেশি নেফাস হতে পারে না। কমের কোন সীমা নেই। কারো যদি দু’এক ঘন্টা রক্তস্রাব হয়ে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ওই দু’এক ঘন্টার রক্তস্রাবকেই নেফাস বলা হবে।

২। মাসয়ালা : কারো সন্তান প্রসবের পর যদি মোটেই রক্তস্রাব না হয়, তবুও তার ওপর গোসল ফরয।

৩। মাসয়ালাঃ প্রসবকালে সন্তানের অর্ধেকের বেশী বের হওয়ার পর যে রক্তস্রাব হবে তা নেফাস। আর যদি অর্ধেক হতে কম বের হবার পর রক্তস্রাব হয়, তবে তা এস্তেহাযা হবে। সুতরাং যদি হুঁশ থাকে, তবে নামাযের সময় হলে ওই অবস্থায়ও ওযূ করে নামায আদায় করতে হবে। সাবধান! হুঁশ থাকতে নামায ক্বাযা করবে না। অবশ্য যদি নামায পড়লে সন্তানের জীবন নাশ হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে সন্তানের জীবন রক্ষার্থে নামায ছেড়ে দেবে।

৪। মাসয়ালা : যদি কোন স্ত্রীলোকের গর্ভপাত ঘটে এবং সন্তানের এক আধটা অঙ্গ পরিস্কার দেখা যায়, তবে গর্ভপাতের পর যে রক্তস্রাব হবে, তাকে নেফাস ধরতে হবে। আর যদি সন্তানের আকৃতি একটুও দেখা না যায়, কেবল মাত্র একটা মাংশ পিণ্ড দৃষ্টিগোচর হয়, তাহলে দেখতে হবে যে, ইতোপূর্বে কমপক্ষে পনর দিন পবিত্র ছিল কিনা এবং রক্তস্রাব তিন দিন তিন রাত জারী থাকে কিনা। যদি এরূপ হয়, তবে তাকে হায়েয ধরে হায়েযের কয়দিন নামায রোযা ত্যাগ করতে হবে। আর এরূপ না হলে ওই রক্তস্রাবকে এস্তেহাযা ধরতে হবে।

৫। মাসয়ালা : কোন মহিলার প্রসবের পর চল্লিশ দিনের বেশি রক্তস্রাব হলে এবং এটাই প্রথম প্রসব হলে চল্লিশ দিন পর্যন্ত নেফাস ধরতে হবে। চল্লিশ দিন পর গোসল করে নামায আদায় করতে হবে। আর ইতোপূর্বে আরও সন্তান হয়ে থাকলে এবং তার নেফাসের কোন মুদ্দত যদি থাকে, তবে নিয়মের কয়দিন নেফাস হবে, বেশী কয়দিন এস্তেহাযা হবে।

৬। মাসয়ালা : কোন মহিলার নিয়ম ছিল, প্রসবের পর ত্রিশ দিন রক্তস্রাব হওয়ার, কিন্তু একবার ত্রিশ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরও রক্তস্রাব বন্ধ হল না, এই অবস্থায় মহিলা গোসল না করে অপেক্ষা করবে। যদি পূর্ণ চল্লিশ দিনের শেষে বা চল্লিশ দিনের মাঝে রক্ত বন্ধ হয়; তবে সব কয়দিনই নেফাসের মধ্যে ধরতে হবে। আর যদি চল্লিশ দিনের অধিক রক্তস্রাব হয় তবে ত্রিশ দিন নেফাসের মধ্যে এবং অবশিষ্ট দিনগুলো এস্তেহাযা, চল্লিশ দিনের পর গোসল করবে এবং নামায পড়বে। ত্রিশ দিনের পরের দশ দিনের নামায ক্বাযা করবে।

৭। মাসয়ালা : চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই যদি নেফাসের রক্তস্রাব বন্ধ হয় তবে রক্ত বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে গোসল করে নামায পড়বে। গোসল করলে যদি স্বাস্থ্যহানি হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়, তবে তায়াম্মুম করে নামায পড়বে। সাবধান! এক ওয়াক্ত নামাযও কার্য হতে দেবে না।

৮। মাসয়ালা : নেফাসের সময়ও হায়েযের সময়ের ন্যায় নামায একেবারেই আফ। কিন্তু রোযার ক্বাযা করতে হবে এবং নামায, রোযা, সহবাস সবই হারাম।

৯। মাসয়ালা : কোন স্ত্রীলোকের যদি ছয় মাসের মধ্যে আগে পরে দুটি সন্তান প্রসব হয়। যেমন-প্রথম সন্তান হওয়ার দু চারদিন পর অথবা দশ বিশ দিন পর যদি দ্বিতীয় সন্তান প্রসব হয়, তাহলে প্রথম সন্তান হওয়ার পর হতেই নেফাসের সময় গণনা করতে হবে, দ্বিতীয় সন্তান হতে নয়।

.

হায়েয-নেফাসের হুকুমসমূহ

১। মাসয়ালা : যে মহিলা হায়েয বা নেফাস অবস্থায় আছে অথবা যার ওপর গোসল ফরয হয়েছে তার জন্য মসজিদে প্রবেশ করা, কাবা শরীফ তাওয়াফ করা, কোরআন তেলাওয়াত করা ও স্পর্শ করা জায়েয নেই। অবশ্য কোরআন শরীফ যদি যুযদানের ভেতর থাকে অথবা রুমালে জড়ানো থাকে, তবে তার ওপর দিয়ে ধরা দুরস্ত আছে কিন্তু চামড়া, কাপড় বা কাগজ যদি কোরআন শরীফের সাথে সেলাই করা না থাকে, তবে উল্লিখিত অবস্থায় কোরআন শরীফ ধরাও দুরস্ত আছে।

২। মাসয়ালা : যার ওযূ নেই তার জন্যও কোরআন স্পর্শ করা দুরস্ত নেই। অবশ্য মুখস্ত পড়াতে নিষেধ নেই।

৩। মাসয়ালা : যদি টাকা, পয়সা অথবা তশতরী, তাবীয বা যে কোন পাতা বা কাগজের . মধ্যে কোরআনের আয়াত লেখা থাকে, তবে তাও উল্লিখিত অবস্থায়, অর্থাৎ বিনা ওযূতে, হায়েয-নেফাস এবং জানাবাতের অবস্থায় স্পর্শ করা দুরস্ত নয়। অবশ্য যদি এ সমস্ত জিনিস কোন থলির মধ্যে বা অন্য কোন পাত্রের ভেতর থাকে, তবে সে থলি বা পাত্র ধরতে বা ওঠাতে পারবে।

৪। মাসয়ালা : উল্লিখিত অবস্থাসমূহে পরিধানের বস্ত্রের আঁচল দিয়ে বা গায়ের জামার আস্তিন বা দামান দিয়েও কোরআন শরীফ স্পর্শ করা দুরস্ত নয়। অবশ্য যে বস্ত্র, চাঁদর, রুমাল, উড়না বা জামা পরিধানে নেই, পৃথক আছে তা দ্বারা কোরআন শরীফ ধরা দুরস্ত আছে।

৫। মাসয়ালা : যদি পূর্ণ আয়াত না পড়ে, আয়াতের অংশ বিশেষ যেমনঃ আয়াতের সামান্য শব্দ অথবা অর্ধেক আয়াত পড়ে, তবে জায়েয আছে কিন্তু ঐ অর্ধেক আয়াত এত বড় আয়াত না হওয়া চাই যে, ছোট একটি আয়াতের সমান হয়ে যায়।

৬। মাসয়ালাঃ হায়েয, নেফাস ও জানাবাত অবস্থায় আল্লাহ্র নিকট দোয়া করা দুরস্ত আছে। সুতরাং কোরআনের যে আয়াতের মাঝে দোয়া আছে সে আয়াত যদি কেউ তেলাওয়াত রূপে না পড়ে দোয়ারূপে পড়ে, তবে তা জায়েয আছে, যেমনঃ যদি কেউ উল্লেখিত অবস্থায় অর্থের দিকে খেয়াল করে?

ربنا اتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب اللار–

এভাবে পড়ে বা–1…। k aj 6.। অথবা–al Aff দোয়ারূপে পাঠ করে বা–I c2jj 2.5, 6,

মুনাজাতরূপে পড়ে, তবে তা দুরুস্ত আছে।

৭। মাসয়ালা : উল্লিখিত অবস্থায় দোয়া কুনূত পাঠ করা দুরস্ত আছে।

৮। মাসয়ালা : যদি কোন মহিলা মেয়েদের কোরআন শরীফ পড়ায়, তাহলে উল্লিখিত অবস্থায় বানান করা জায়েয আছে, মিলিয়ে পড়ার সময় পূর্ণ আয়াত পড়বে না বরং এক বা দু শব্দের পর নিঃশ্বাস ছাড়বে এবং কেটে কেটে আয়াতকে মিলিয়ে মিলিয়ে বলে দেবে।

৯। মাসয়ালা : উল্লিখিত অবস্থায় কলেমা, দুরূদ, আল্লাহ্র যিকির, এস্তেগফার, তসবীহ্ পাঠ অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ্, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্, আল্লাহু আকবার, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম ইত্যাদি পড়া দুরস্ত।

১০। মাসয়ালা : হায়েয অবস্থায়ও ওযূ করে পাক জায়গায় কেবলামুখী হয়ে বসে নামাযের সময়টুকু আল্লাহর যিকিরে মগ্ন থাকা মুস্তাহাব, যেন নামাযের অভ্যাস ছুটে না যায়, পবিত্র হওয়ার পর নামায পড়তে ঘাবড়িয়ে না যায়।

১১। মাসয়ালা : কোন মহিলার ওপর গোসল ফরয হয়েছিল কিন্তু গোসল না করতেই হায়েয শুরু হলো, এ অবস্থায় তার আর গোসল করার প্রয়োজন নেই। যখন হায়েয থেকে পবিত্র হবে, তখন এক গোসলেই উভয় গোসল আদায় হয়ে যাবে।

.

ওযূ

ওযূর তরতীব

ওযূর প্রারম্ভে আল্লাহর দিকে মনকে রুজু করবে। চিন্তা করে ঠিক করতে হবে কেন ওযূ করা হচ্ছে, যথা–হয়ত নামায আদায়ের জন্য ওযূ করবে–তখন চিন্তা করবে, নামায আদায় করা হলো আল্লাহর দরবারে হাযির হওয়া। আল্লাহর দরবার পবিত্র, সে দরবারে বিনা ওযূতে প্রবেশ করা যায় না। তাই আমি নামায পড়ার অর্থাৎ আল্লাহ্ পাকের সমীপে উপস্থিত হওয়ার জন্য ওয়ূ করছি। এভাবে যদি কোরআন শরীফ তেলাওয়াতের জন্যে ওযূ করা হয়, তখন একাগ্র মনে চিন্তা করবে, আমি আল্লাহর পবিত্র কালাম কোরআন শরীফ তেলাওয়াতের জন্য ওযূ করছি।

.

ওযূর ফযীলত

১। হাদীসঃ হযরত রাসূলে করীম (ছঃ) ফরমান, যে ব্যক্তি ওযূ আরম্ভ করার সময় বিসমিল্লাহ পাঠ করবে—(air 222i .বিসমিল্লহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি পাঠ করা আরও উত্তম) এবং প্রতিটি অঙ্গ ধৌত করার সময়, Atn। 30 31 ala 11 12 +, আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু পাঠ করবে এবং ওযূ শেষ করে পড়বে :  

، و و

ة م

اللهم اجعلني من التوابين واجعلني من المتطهرين۔

অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারী এবং পাক পবিত্র অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে। সে মনের খুশিতে যে কোন দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যদি ওযূ করার পর দু রাক’আত তাহিয়্যাতুল ওযূ নামায একাগ্রতার সাথে বুঝে আদায় করে যখন এ নামায থেকে পৃথক হয়, তখন তার সব ছগীরা গুনাহ (ছোট ছোট গুনাহসমূহ) ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং সে সদ্য জন্মগ্রহণকারী শিশুর ন্যায় মাসুম হয়ে যায়।

২। হাদীস : Luk 144“আত্ত্বুরু শাত্বরুল ঈমান মহানবী রাসূলে করীম (ছঃ) বলেছেন, পবিত্র ও পরিষ্কার থাকা ঈমানের অর্ধেক।

৩। হাদীসঃ যে ব্যক্তি ওযূ করার সময় দুরূদ শরীফ পাঠ না করবে, তার ওযূ পরিপূর্ণ হবে না।

৪। হাদীসঃ যে ঈমানদার খালেছ অন্তরে ওযূ করবে সে ব্যক্তি যখন মুখ ধৌত করবে তখন চক্ষু দিয়ে যত ছগীরা গুনাহ করেছে পানির শেষ ফোঁটার সাথে সাথে, সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। তারপর যখন দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে তখন হাত দিয়ে যত ছগীরা গুনাহ হয়েছে, পানির শেষ ফোঁটার সাথে সাথে সেসব ছগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। অতঃপর যখন উভয় পা ধৌত করবে তখন পায়ের সাহায্যে যত ছগীরা গুনাহ হয়েছে, পানির শেষ ফোঁটার সাথে সাথে সেসব ছগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। এভাবে ওযূ শেষ করে সে ব্যক্তি সম্পূর্ণ নিষ্পাপ হয়ে যাবে।–(মুসলিম শরীফ)।

৫। হাদীসঃ $311:32 0-11 11-1215

অর্থ : মু’মিন বান্দার হাত ও পায়ে যে পর্যন্ত ওযূর পানি পৌঁছবে কিয়ামতের দিন তাকে সে। পর্যন্ত নূরের জেওরে বিভূষিত করা হবে।

.

ওযূর মাসয়ালাসমূহ

১। মাসয়ালা : কাবার দিকে মুখ করে একটু উঁচু স্থানে বসবে যেন ওযূর পানির ছিটা নিজের শরীরে আসতে না পারে।–(মুনিয়া)

২। মাসয়ালা : বিসৃমিল্লাহ্ বলে ওযূ আরম্ভ করবে। (ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া)

৩। মাসয়ালা : সর্বপ্রথমে দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)

 ৪, ৫, ৬। মাসয়ালা : এর পর তিনবার কুলি করবে এবং মিসওয়াক করবে, মিস্ওয়াকের অভাবে মোটা কাপড় অথবা হাতের অঙ্গুলি বা অন্য কিছু দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করবে। রোযা না ইলে গরগরা করে ভালরূপে মুখগহ্বরে পানি পৌঁছাবে। রোযা অবস্থায় গরগরা করবে না। কারণ, এতে হয়ত কিছু পানি গলার ভেতর চলে যেতে পারে।–(আলমগীরী)

৭। মাসয়ালা : অতঃপর তিন বার নাকে পানি দেবে। বাম হস্ত দ্বারা নাক পরিষ্কার করবে। রোযা অবস্থায় নাকের ভেতরে নরম অংশ পর্যন্ত পানি পৌঁছাবে না।–(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)

৮। মাসয়ালাঃ এরপর তিন বার কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনি পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন্ত মুখমণ্ডল ভাল করে দু হাত দ্বারা মলে ধৌত করবে যেন সব স্থানে পানি পৌঁছে। উভয় ভ্রূর গোড়ায়ও খেয়াল করে পানি পৌঁছাবে, যেন কোন স্থান শুষ্ক না থাকে।-(মারাকিউল ফালাহ)।

৯। মাসয়ালা : তারপর ডান হাতের কনুইসহ ভাল করে তিন বার ধৌত করবে অতঃপর বাম হস্ত ও তদরূপ কনুইসহ ধুবে। এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুলের ভেতর ঢুকিয়ে খেলাল করবে। হাতে আংটি, চুড়ি ইত্যাদি থাকলে নেড়েচেড়ে উত্তমরূপে পানি পৌঁছাবে, যেন একটি পশমও শুকনা না থাকে।-(কবীরী, মুনিয়া)

১০। মাসয়ালা : এরপর সমস্ত মাথা একবার মায়ূহে করবে। শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা কানের ভেতরে ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা বাইরের দিক মাছুহে করবে এবং হাতের অঙ্গুলির পিঠ দ্বারা ঘাড় মাম্‌হে করবে, কিন্তু গলা মাহে করবে না। কারণ, গলা মায়ূহে করা ভাল নয়; বরং নিষেধ আছে। কান ও মাথা মায়ূহে করার জন্য নতুন পানি নেয়ার প্রয়োজন নেই, ভেজা হাত দ্বারাই মায়ূহে করবে।–(কবীরী, মুনিয়া)

১১। মাসয়ালা : তারপর তিন বার টাখনুসহ উভয় পা ধৌত করবে। প্রথমে ডান পা এবং পরে বাম পা উত্তমরূপে ডলে-মলে ধুবে। পায়ের তলা এবং গোড়ালির দিকে খুব খেয়াল করে ধুবে, যেন কোন অংশ শুষ্ক থেকে না যায়। বাম হস্তের কনিষ্ঠাঙ্গুলি নীচের দিক থেকে প্রবেশ করিয়ে পায়ের আঙ্গুলগুলো খেলাল করবে। ডান পায়ের কনিষ্ঠা অঙ্গুলি হতে আরম্ভ করে বাম পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলে গিয়ে শেষ করবে। এটাই ওয়ূর নিয়ম।

.

ওয়ূর দোয়াসমূহ

ওযূর প্রারম্ভে আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ পড়ে নিম্নের দোয়া পাঠ করবে।

بسم الله العلي العظيم والحمد لله على دين الإسلام الإسلام حق

والكفر بال الإسلام و المحترمة

উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হিল আলিয়্যিল আযীম, ওয়াল হামদু লিল্লা-হি আলা–দ্বীনিল ইসলাম, আল ইস্লামু হাক্বকুন ওয়াল কুফরু বা-তিলুন আল-ইসলামু নূরুন, ওয়াল কুফর যুলুমাহ্।

অর্থ : মহান ও সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহর নামে শুরু করছি। সকল প্রশংসাই একমাত্র তাঁরই জন্য যিনি (আমাকে) ইসলামের ওপর রেখেছেন। ইসলাম আলো, কুফর আঁধার; ইসলামই সত্য দ্বীন, কুফর মিথ্যা।

মাঝে মাঝে-কালেমা শাহাদাত; দুরূদ শরীফ ও নিম্নের দোয়া পাঠ করবে।

اللهم اغفرلی نبى ووسع لى في داری وبارك لي في رزقي–

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলী যামবী ওয়া ওয়াসসি’লী ফী দা-রী ওয়াবা-রিকলী ফী রিযকী।

অর্থ : হে আল্লাহ্ আমার পাপ মার্জনা করে দাও, আমার বাসস্থান প্রশস্ত ও শান্তিময় করে দাও এবং আমার রোজগারে বরকত দান কর।

 কব্জি পর্যন্ত ধৌত করার সময় নিম্নের দোয়া পড়বেঃ

اللهم اني اسئلك اليمن والبركة واعوذبك من الشوم والهلكة

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ইয়ামনা ওল বারকাতা ওয়া আউযুবিকা মিনাশ শাউমি ওয়াল হালকাতি।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে বরকত ও ভালাই দান কর এবং বে বরকতী ও অমঙ্গল থেকে হেফাজত কর।

কুলি করার সময় নিম্নের দোয়া পাঠ করবেঃ

اللهم اعني على ذكرك وشكرك وكثرة تلاوة كتابك وكثرة الصلوة على

حبيبك

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আইন্নী আলা–যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া কাছরাতিন তিলাওয়াতি কিতাবিকা ওয়া কাছরাতিছ ছলাতি আলা–হাবীবিকা।

অর্থ : হে আল্লাহপাক! এ মুখ দ্বারা অধিক পরিমাণ তোমার যিকির ও তোমার শোকর করার তৌফিক দাও এবং বেশি বেশি কোরআন পাক তেলাওয়াত ও তোমার প্রিয় হাবীবের প্রতি বেশি বেশি দুরূদ পাঠের তৌফিক দান কর।

নাকে পানি দেয়ার সময় নিম্নের দোয়া পাঠ করবেঃ

ي ژاض ولا رحنى رائحة الاره

اللهم انى رائحة الجنة وانت

 অর্থ : হে আল্লাহ! এ নাক দিয়ে যেন জান্নাতের সুঘ্রাণ গ্রহণ করতে পারি, আর তুমি যেন আমার ওপর রাযী থাক, আর জাহান্নামের দুর্গন্ধ যেন নিতে না হয়।

মুখমণ্ডল ধৌত করার সময় নিমের দোয়া পড়বে।

اللهم بيض وجهي يوم تبيض وجوه وتسود وجوه

অর্থ : হে আল্লাহ্! সে দিন আমার চেহারাকে উজ্জ্বল রেখো যেদিন অনেক লোকের (খোদাভীরুদের) চেহারা উজ্জ্বল এবং অনেক লোকের (বিধর্মীদের) চেহারা মলিন হবে।

ডান হাতের কনুইর উপর পর্যন্ত ধৌত করার সময় নিম্নের দোয়া পড়বেঃ

 অর্থ : হে আল্লাহ্! আমার আমলনামা আমার ডান হাতে প্রদান করো এবং আমার হিসেব সহজ করে দিও।

বাম হাতের কনুইর ওপর পর্যন্ত ধৌত করার সময় নিম্নের দোয়া পড়বেঃ

نابی بیمینی وحاسبنی جس

اللهم لاتطنی کتابی بشمالی امن قراء ظهري

অর্থ : হে আল্লাহ! আমার আমলনামা আমার বাম হাতে বা পেছন দিক দিয়ে দিও না।

মাথা মাছহের সময় নিম্নের দোয়া পড়বেঃ

اللهم شنی برحمتك وانزل على من بركاتك واظنى تحت ظل

عرشك يوم لا ظل الا كه

অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার রহমত দিয়ে আমাকে আবৃত করে নাও এবং তোমার বরকত আমার ওপর অবতীর্ণ কর এবং যে দিন তোমার ছায়া ও আশ্রয় ছাড়া অন্য কোন ছায়া ও আশ্রয় থাকবে না, সে দিন দয়া করে তোমার আশ্রয়ে তোমার আরশের নীচে আমাকে একটু স্থান দিও।

কান মাছহের সময় নিম্নের দোয়া পাঠ করবেঃ

بعون أحسنه

القول في

شمعو

اللهم اجعلنی

অর্থ : হে আল্লাহ! যারা ভাল কথা শ্রবণ করে ও তদানুসারে আমল করে, আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত রেখো।

গর্দান মাছহের সময় নিম্নের দোয়া পাঠ করবেঃ

اللهم أعتق رقبتي من النار

অর্থ : হে আল্লাহ্! জাহান্নামের আগুন থেকে আমার গর্দানকে ছাড়িয়ে নাও।

ডান পা ধোয়ার সময় নিম্নের দোয়া পাঠ করবেঃ

اللهم ثبت قدمى على النيراط المستقيم به

অর্থ : হে আল্লাহ্! ইসলামের সরল রাস্তার ওপর আমাকে দৃঢ়পদে রেখো।

বাম পা ধোয়ার সময় নিম্নের দোয়া পাঠ করবেঃ

اللهم اجعل ثى مففورا وسعي مشكورا وتجارتي لن تبوره

অর্থ : হে আল্লাহ্! আমার পাপারাশি ক্ষমা করে দাও। আমার আমল কবুল করে নাও। আমার ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না।

ওযূ শেষে দাঁড়িয়ে সূরা ক্বদর ও নিম্নের দোয়া পড়বেঃ

سبحنك اللهم وبحمدك استغفرك واتوب اليك اشهد ان لا اله

من

محمدا عبده ورسوله . اللهم اجعلنی

التوابين واجعلني من المتطهرين واجعلني من عبادك الصالحين

واجعلني من الذين لا خوف عليهم ولا هم يحزنون

অর্থ : হে আল্লাহ্! তুমি পবিত্র, তোমারই প্রশংসা, তোমার নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই দিকে আমি ফিরি; আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক অদ্বিতীয় আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন হুকুম কর্তা নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, হযরত মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্ বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! আমাকে সর্বদা তওবাকারী ও পাক-পবিত্রদের অন্তর্ভূক্ত রেখো এবং তোমার ভক্ত বান্দাদের শ্রেণীভূক্ত রেখো এবং কিয়ামতের দিন যে সব নেক বান্দার আদৌ কোন ভয় বা চিন্তা থাকবে না আমাকে সে বান্দাদের দলভূক্ত রেখো।

হাদীস শরীফে আছে : ওযূ মু’মিনদের অস্ত্র; কাজেই দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের পথ হলো পবিত্রতা ও পরিছন্নতা। আর পবিত্রতা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ওয়ূ গোসল। কাজেই ওযূ গোসলের দিকেই আমাদেরকে সর্বদা বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে।

মাসয়ালা : ওযূর মধ্যে কতিপয় এমন রয়েছে, যা বাদ পড়লে বা তার কিছু বাকী থাকলে ওযূ একেবারেই হয় না; পূর্বে যেমন ওযূহীন ছিল এখনও তেমনি রইল। এসব কাজগুলোকে ফরয বলে। আর কিছু কার্য এমন রয়েছে যা ছুটে গেলে ওযূ হয় বটে, কিন্তু করলে সওয়াব হয়, তা করার জন্য তাকিদও আছে। এমন কি যদি কেউ অধিকাংশ সময়ে ছেড়ে দেয় তবে সে গুনাহগার হয়। এসব কাজকে সুন্নত বলে। আর যে সকল কাজ করলে সওয়াব হয়, কিন্তু গুনাহ্ হয় না এবং তৎপ্রতি শরীয়তের কোন তাকিদও নেই, এ ধরনের কাজগুলোকে মুস্তাহাব বলে।-(কবীরী, রদ্দুল মোহতার)

মাসয়ালা : ওযূর ফরয : ওযূর ফরয চারটি-১। সমস্ত মুখমণ্ডল একবার ধৌত করা। ২। কনুইসহ উভয় হাত এক একবার ধৌত করা ৩। মাথা একবার মাছহে করা ৪। টাখনুসহ উভয় পা একবার ধৌত করা। এগুলোর মধ্যে যদি একটি কাজও ছুটে যায় বা চুল পরিমাণ স্থানও শুষ্ক থাকে, তাহলে ওযূ হবে না।–(মাজমাউল আনহুর)।

মাসয়ালা : ওযূর সুন্নতঃ ওর মধ্যে দশটি কাজ সুন্নত। ১। বিসমিল্লাহ্ বলে ওযূ শুরু করা। ২। দু’হাত কব্জিসহ তিন বার ধৌত করা ৩। কুল্লি করা। ৪। নাকে পানি দেয়া ৫। মেসওয়াক করা ৬। সম্পূর্ণ মাথা একবার মাছহে করা। ৭। তিন তিন বার করে প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়া ৮। কান মাছহে করা। ৯-১০। হাত ও পায়ের আঙ্গুল খেলাল করা। উল্লিখিত সুন্নত এবং ফরয কাজগুলো ব্যতীত ওয়ূর মধ্যে আর যে কাজগুলো রয়েছে তা মুস্তাহাব। –(মারাকিউল ফালাহ্)

মাসয়ালা : ওযূতে যে চারটি অঙ্গ ধৌত করা ফরয সেগুলো ধৌত হয়ে গেলে ওযূ হয়ে যাবে। ইচ্ছা করে ধৌত করুক বা অনিচ্ছায় ধৌত করুক, নিয়ত করুক বা না করুক। যেমন গোসলের সময় ওযূ ব্যতীত সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে দিলে বা পুকুরে পড়ে গেলো বা বৃষ্টিতে ভিজলে, এ চারটি অঙ্গ পূর্ণরূপে ধোয়া হয়ে গেলে ওযূ হয়ে যাবে, কিন্তু নিয়ত না করার দরুন ওযূর সওয়াব পাবে না।–(মুনিয়া)

মাসয়ালা : ওযূ উল্লিখিত তরতীব অনুসারে করাই সুন্নত, কিন্তু যদি কেউ তার ব্যতিক্রম করে, যেমন, প্রথমে পা ধৌত করলো, এরপর মাথা মাসহে করল অতঃপর হাত বা অন্য কোন অঙ্গ আগে পরে ধৌত করলো, তবুও ওযূ শুদ্ধ হবে, কিন্তু সুন্নতের খেলাফ হবে। এতে গুনাহর আশঙ্কা আছে; অর্থাৎ, এ রকম উল্টা ওযূ করলে গুনাহ্ হবে।-(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)

মাসয়ালাঃ যদি বাম পা বা বাম হাত আগে ধৌত করে তবুও ওযূ হয়ে যাবে, কিন্তু মুস্তাহাবের খেলাফ হবে।–(মারাকী)

মাসয়ালা : এক অঙ্গ ধুয়ে অন্য অঙ্গ ধুতে এতটুকু দেরী করা ঠিক নয় যাতে দ্বিতীয় অঙ্গ ধুতে ধুতে প্রথম অঙ্গ শুকিয়ে যায়। এরূপ দেরী করলে ওযূ হয়ে যাবে, কিন্তু সুন্নতের খেলাফ হবে।–(আলমগীরী)

মাসয়ালা : প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় হাত দ্বারা ঘষে মেজে ধৌত করাও সুন্নত, যেন কোন স্থান শুষ্ক না থাকে (শীতকালে ডলে থোয়ার বেশি প্রয়োজন; কারণ, তখন ওযূর অঙ্গগুলোর কোন স্থান শুকনা থাকার বেশি আশঙ্কা থাকে।-(মারাকী)।

মাসয়ালাঃ নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বেই ওযূ করে নামাযের আয়োজন করা এবং নামাযের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা ভাল এবং মুস্তাহাব।–(মারাকী)।

মাসয়ালা : বিশেষ কোন কারণ ব্যতীত নিজের হাতেই ওযূ করবে, অন্যকে দিয়ে পানি ঢালবে না। ওযূর সময় অনাবশ্যক দুনিয়াবী কথা বলবে না; বরং প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় বিসমিল্লাহ্ এবং কলেমা পড়বে। পানি যত বেশিই থাকুক না কেন, এমন কি নদীতে ওযূ করলেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি খরচ করবে না; আবার এত কমও খরচ করবে না যাতে অঙ্গগুলো উত্তমরূপে ধুতে কষ্ট হয়। কোন অঙ্গ তিন বারের অধিক ধুবে না। মুখ ধোয়ার সময় বেশি জোরে মুখে পানির ঝাঁপটা মারবে না, ফুঁক দিয়ে পানি উড়াবে না, মুখ এবং চোখ অতি জোরে বন্ধ করবে না। কেননা, তাতে ওযূই হবে না।–(কবীরী),

মাসয়ালা : আংটি, চুড়ি, বালা যদি এমন ঢিলা হয় যে, সহজেই ওর নীচে পানি পৌঁছতে পারে, তবুও সেগুলো নাড়িয়ে উত্তমরূপে খেলাল করে নীচে পানি প্রবেশ করানো মুস্তাহাব। কিন্তু যদি ঢিলা না হয় এবং পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থাকে, তবে সেগুলো উত্তমরূপে নেড়েচেড়ে নীচে পানি প্রবেশ করানো ওয়াজিব। নাকের নথ চুঙ্গির জন্যও এ হুকুম। যদি ছিদ্র ঢিলা হয় তবে নেড়ে পানি প্রবেশ করানো মুস্তাহাব; আর যদি ছিদ্র আঁটা হয়, তবে মুখ ধোয়ার সময় নথ, বালি ভালভাবে ঘুরিয়ে পানি প্রবেশ করানো ওয়াজিব।

মাসয়ালাঃ নখের ভেতরে আটা জমে (অথবা কোন জায়গায় চুন ইত্যাদি) শুকিয়ে থাকলে ওযূর সময় তার নীচে পানি না প্রবেশ করলে ওযূ হবে না, যখন মনে আসে এবং আটা দেখে, তখন আটা (চুন ইত্যাদি) ছাড়িয়ে সেখানে পানি ঢেলে দেবে (সম্পূর্ণ ওযূ পুনরায় করতে হবে। পানি ঢালার পূর্বে নামায পড়ে থাকলে সে নামায পুনরায় পড়তে হবে।–(গুন্‌ইয়া–পৃঃ ৪৬)

মাসয়ালা : কপালে ও মাথায় আশান (নখে নখ-পালিশ) ব্যবহার করলে তা উঠিয়ে ধৌত করতে হবে, অন্যথায় ওযূ গোসল কিছুই হবে না।

.

মোজার ওপর মাছহের মাসয়ালা

 মাসয়ালা ১। ওযূ করে চামড়ার মোজা পরিধান করার পর ওযূ ভঙ্গ হলে পুনরায় ওযূ করার সময় মোজার ওপর মাছহে করা জায়েয। তবে মোজা খুলে পা ধৌত করা ভাল।

মাসয়ালা ২। চামড়ার মোজা যদি এত ছোট হয় যে, টাখনু গিরা পর্যন্ত ঢাকা যায় না, তবে মোজার ওপর মাছহে করা জায়েয হবে না। তেমনিভাবে ওযূ ছাড়া চামড়ার মোজা পরে থাকলে তার ওপরও মাছহে করাও জায়েজ হবে না; মোজা খুলে পা ধৌত করতে হবে।

মাসয়ালা ৩। শরয়ী সফর অবস্থায় তিন দিন তিন রাত আর বাড়ীতে থাকা অবস্থায় একদিন এক রাত পর্যন্ত মাছহে করতে পারবে। আর ওযূ করে মোজা পরার পর প্রথম যখন ওযূ ভঙ্গ হবে তখন থেকে একদিন এক রাত অথবা তিন দিন তিন রাতের হিসাব ধরা হবে। যখন থেকে মোজা পরিধান করা হয়েছে তখন থেকে হিসাব ধরা হবে না। যেমন কেউ যোহর নামাযের সময় ওযূ করে মোজা পরিধান করেছে, তারপর সূর্যাস্তের সময় ওযূ ভঙ্গ হলো, তবে পরের দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত মাছহে করতে পারবে। সূর্যাস্ত গেলে আর মাছহে করতে পারবে না।

মাসয়ালা ৪। যদি গোসলের প্রয়োজন হয়, তবে মোজা খুলে গোসল করতে হবে, গোসলের বেলায় মোজার ওপর মাছহে জায়েয নেই।

মাসয়ালা ৫। মোজার ওপর পায়ের পিঠের মাছহে করতে হবে, পায়ের তলায় মাছহে করলে হবে না।

মাসয়ালা ৬। মোজার ওপর মাছহে করার সময় হাতের আঙ্গুলগুলো পানিতে ভিজিয়ে পায়ের পাতার অগ্রভাগে এমনভাবে রাখবে যেন সমস্ত মোজার ওপর আঙ্গুলগুলোর চাপ পড়তে পারে। অতঃপর হাতের পাতাসহ মোজার ওপর রেখে আস্তে আস্তে আঙ্গুলগুলো টেনে পায়ের টাখনু গিরার দিকে আনবে। আর হাতের পাতা মোজার ওপর রেখে হাত টেনে আনলে তাও জায়েয আছে।

মাসয়ালা ৭। কেউ উল্টা মাছহে করলে অর্থাৎ টাখনু গিরার দিক থেকে টেনে পায়ের আঙ্গুলের দিকে আনলেও মাছহে দুরুস্ত হবে; কিন্তু এরূপ করা মুস্তাহাবের খেলাফ। লম্বাভাবে মাছহে করে মোজার চওড়া দিকে মাছহে করলে মাছহে জায়েয হবে, কিন্তু মুস্তাহাবের খেলাফ হবে।

মাসয়ালা ৮। কেবল মোজার তলার দিকে বা গোড়ালির দিকে মাছহে করলে তাও জায়েয হবে।

মাসয়ালা ৯। সম্পূর্ণ না লাগিয়ে যদি কেবল আঙ্গুলের আগা লাগিয়ে ওপরের দিকে টেনে আনা হয় তবে মাছহে হবে না। কিন্তু যদি আঙ্গুল থেকে অনবরত পানি পড়তে থাকে এমনকি মোজার ওপর ওই পানি বেয়ে তিন আঙ্গুল পরিমাণ লাগে, তবে অবশ্য মাছহে জায়েয হবে।

মাসয়ালা ১০। মাছহের মুস্তাহাব নিয়ম হল হাতের আঙ্গুলের ভেতর দিক দ্বারা মাছহে করবে। আঙ্গুলের পিঠ দ্বারা মাছহে করাও জায়েয আছে।

মাসয়ালা ১১। আবার কেউ হয়তো মোজার ওপর মাছহে করল না; কিন্তু বৃষ্টির মধ্যে অথবা শিশিরের ওপর দিয়ে হাঁটার কারণে মোজা ভিজে গেল, তবে এতেই মাছহে হয়ে যাবে।

মাসয়ালা ১২। প্রত্যেক মোজার ওপর হাতের তিন আঙ্গুল পরিমাণ জায়গা মাছহে করা ফরয; এর কম মাছহে করলে জায়েয হবে না।

মাসয়ালা ১৩। যে সব কারণে ওযূ ভঙ্গ হয় সে সব কারণে মাছহেও ভঙ্গ হয়। সুতরাং উল্লিখিত মুদ্দতের মধ্যে ওযূ করতে যে সব স্থান ধৌত করতে হয় মাছহে করার সময়ও সে সব স্থানে মাছহে করতে হবে। মোজা খুললেও মাছহে ভঙ্গ হয়ে যায়। কাজেই যদি কারও ওযূ ভঙ্গ হয়ে থাকে, কেবল মোজা খুলে গিয়ে থাকে, তবে তার মাছহে ছুটে যাবে। তখন কেবল পা ধৌত করে নিলেই চলবে, পুনরায় সম্পূর্ণ ওযূ করতে হবে না।

মাসয়ালা ১৪। যদি একটি মোজা খোলে তবুও মাছহে ছুটে যাবে; এখন অপর মোজাটিও খুলে দু’পা ধৌত করা ওয়াজিব হবে।

মাসয়ালা ১৫। মাছহের মুদ্দত পূর্ণ হয়ে গেলেও মাছহে ছুটে যায়। সুতরাং যদি ওযূ না ভঙ্গ হয়ে থাকে, আর মাছহের মুদ্দত শেষ হয়ে যায়, তবে মোজা খুলে কেবল উভয় পা ধৌত করে নেবে; সম্পূর্ণ পা ধৌত করতে হবে না। আর যদি ওযূ ভঙ্গ হয়ে থাকে, তবে মোজা খুলে পুরো ওযূ করতে হবে।

মাসয়ালা ১৬। মোজার ওপর মাছহে করার পর কোথাও পানির মধ্যে পা পড়ে গিয়েছে, মোজা ঢিলা থাকার কারণে ভেতরে পানি প্রবেশ করে সম্পূর্ণ পা বা পায়ের অর্ধেকের বেশী ভিজে গেছে, এরূপ অবস্থায় মাছহে ছুটে যাবে, এবং মোজা খুলে ভালরূপে উভয় পা ধৌত করতে হবে।

মাসয়ালা ১৭। মোজা এত ছিঁড়ে গেছে যে, হাঁটার সময় পায়ের ছোট আঙ্গুলের তিন আঙ্গুল পরিমাণ বের হয়ে যায়, এ অবস্থায় মোজার ওপর মাছহে করা জায়েয হবে না। আর যদি তদপেক্ষা কম বের হয় তবে মাছহে করা জায়েয আছে।

মাসয়ালা ১৮। মোজার সেলাই খুলে গেছে; কিন্তু পা দেখা যায় না, এ অবস্থায় মাছহে জায়েয হবে। যদি হাঁটার সময় তিন আঙ্গুল পরিমাণ স্থান দেখা যায়; কিন্তু দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা যায় না, তবে মাছহে জায়েয হবে না।

মাসয়ালা ১৯। একটি মোজা এ পরিমাণ ছিঁড়ে গেছে যে, তাতে দু’আঙ্গুল পরিমাণ পা দেখা যায় না, তবে এর জন্য মাছহে জায়েয হবে। একটা মোজারই কয়েক স্থান মিলিয়ে তিন আঙ্গুল পরিমাণ ছেঁড়া হয়, তবে মাছহে জায়েয হবে না। যদি সব ছেঁড়া একত্র করেও তিন আঙ্গুল পরিমাণ না হয়, তবে মাছহে জায়েয হবে।

মাসয়ালা ২০। কেউ বাড়ীতে মাছহে করতে আরম্ভ করেছে; কিন্তু একদিন এক রাত সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই সফরে বের হলো; তবে এখন থেকে সে তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত মাছহে করতে পারবে। আর যদি সফর আরম্ভ করার আগেই একদিন এক রাত অতিক্রম করে থাকে, তবে মুদ্দত পুরা হয়ে গেছে, এখন আর মাছহে করতে পারবে না। পা ধৌত করে পুনরায় মোজা পরিধান করতে হবে।

মাসয়ালা ২১। কেউ সফরে থাকা অবস্থায় মাছহে শুরু করেছিল, এখন বাড়ী এসে যদি এক দিন এক রাত হয়ে গিয়ে থাকে তবে মোজা খুলে ফেলবে, আর মাছহে করতে পারবে না। একদিন এক রাত না হয়ে থাকলে একদিন এক রাত পর্যন্ত মাছহে করতে পারবে। এর অতিরিক্ত পারবে না।

মাসয়ালা ২২। কাপড়ের মোজার ওপর চামড়ার মোজা পরে থাকলেও মাছহে দুরুস্ত হবে।

মাসয়ালা ২৩। কাপড়ের মোজার ওপর মাছহে করা জায়েয নেই; কিন্তু যদি কাপড়ের মোজার ওপর চামড়া লাগিয়ে নেয় বা অন্ততঃ পুরুষের জুতার পরিমাণ চামড়া লাগিয়ে নেয়া। অথবা কাপড়ের মোজা যদি এমন মজবুত ও মোটা হয় যে, বাঁধা ব্যতীতই পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে এবং পায়ে দিয়ে তিন চার মাইল রাস্তা যেতে পারে, এমতাবস্থায় কাপড়ের মোজার ওপর মাছহে। করা জায়েয হবে।

মাসয়ালা ২৪। বোরকা এবং হাতের মোজার ওপর মাছহে করা দুরুস্ত নেই।

মাসয়ালা ২৫। বুটজুতা যদি পাক থাকে এবং ফিতা দ্বারা খুব এঁটে বাঁধা হয়, যাতে গিরা পর্যন্ত পা আবৃত থাকে, তবে যেমন চামড়ার মোজার ওপর মাছহে করা দুরস্ত আছে, দ্রুপ বুটজুতার ওপরও মাছহে করা দুরুস্ত আছে।

মাসয়ালা ২৬। যার ওপর গোসল ফরয হয়েছে, তার পক্ষে চামড়ার মোজার ওপর মাহে করা জায়েয নেই।

মাসয়ালা ২৭। মা’যূর ব্যক্তি মাছহে করলে নামাযের ওয়াক্ত পার হয়ে গেলে ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে। ওযূ করার সময় তার মোজা খুলে পা ধুতে হবে। কিন্তু ওযূ করার এবং মোজা পরার সময় কোন অসুবিধা না থাকলে অন্যান্য সুস্থ ব্যক্তির মত সেও মাছহে করতে পারবে।

মাসয়ালা ২৮। কোন প্রকারে চামড়ার মোজার ভেতর পানি ঢুকে পায়ের অধিকাংশ ভিজে গেলে মাছহে করা চলবে না, মোজা খুলে পা ধৌত করতে হবে।

.

শরমের মাসায়েল

যে সব কারণে ওযূ ভঙ্গ হয়ঃ

মাসয়ালা ১। স্বামীর স্পর্শ লাগা বা স্বামীর চিন্তা করার কারণে সামনের রাস্তা দিয়ে এক প্রকার পানির মত তরল পদার্থ (মযী বলে) বের হলে, ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

মাসয়ালা ২। রোগের (প্রদর বা প্রমেহ) কারণে সম্মুখের রাস্তা দিয়ে বিজলা পানির মত বের হলে ওযূ ভঙ্গ হয়ে যায়।

মাসয়ালা ৩। পেশাব বা মযীর ফোঁটা ছিদ্র হতে বের হয়ে এসেছে, কিন্তু এখনও তা চামড়ার মধ্যে রয়েছে, বের হয়ে আসেনি, তবু ওযূ ভেঙ্গে যাবে। কেননা, ওযূ ভঙ্গ হবার জন্য ওপরের চামড়ার বাইরে বের হওয়া জরুরী নয়।

মাসয়ালা ৪। স্বামীর পেশাবের রাস্তা স্ত্রীর পেশাবের রাস্তার সাথে মিলিত হলেই (কিছু বের হোক বা না হোক) ওযূ ভেঙ্গে যাবে (যদি উভয়ের মাঝে কোন আড় না থাকে)। এমনি ভাবে যদি দু’জন স্ত্রীলোক স্ব স্ব পেশাবের রাস্তা একত্রিত করে, তবুও ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে, কিছু বের হোক বা না হোক। কিন্তু তা অত্যধিক পাপ এবং গর্হিত কাজ।

.

ওযূর আরও কিছু মাসয়ালা

১। মাসয়ালা : পুরুষরা ওযূর সময় তিন বার সমস্ত মুখমণ্ডল ধৌত করার পর দাড়ি খেলাল করবে। অর্থাৎ, ভেজা হাতের অঙ্গুলি দাড়িতে ঢুকিয়ে দাড়ি ভেজাবে। তিন বারের অধিক খেলাল করবে না।-(দোররে মুখতার)

২। মাসয়ালাঃ ওযূর সময় দাড়ি এবং কানের মধ্যবর্তী জায়গাটুকু ধোয়া ফরয, সেখানে দাড়ি থাকুক বা না থাকুক।–(শরহে তানবীরুল আবছার)

৩। মাসয়ালা : ওযূর ভেতর থুতনি ধৌত করা ফরয, থুতনির ওপর দাড়ি থাকুক বা না থাকুক।–(শহরে তানবীরুল আবছার)

৪। মাসয়ালা : ওযূর সময় মুখ বন্ধ করে ঠোঁটের যে অংশ স্বাভাবিকভাবে বাইরে দেখা যায়, তাও ধোয়া ফরয।–(শামী)

৫। মাসয়ালা? দাড়ি, মোচ বা ভ্রূ ঘন হওয়ার দরুন ভেতরের চামড়া দেখা না গেলে তার নীচের চামড়া ধোয়া ফরয নয়; বরং ওই দাড়িকেই চামড়ার বদল ধরতে হবে এবং দাড়ির ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত করলেই ফরয আদায় হয়ে যাবে।

৬। মাসয়ালা : দাড়ি, মোচ ও ভ্রূ হালকা হওয়ার জন্য যদি নীচের চামড়া দেখা যায়, তবে মুখমণ্ডলের সীমার মধ্যে ধৌত করা ফর, তার বাইরের দাড়ি বোয়া ফরয নয়।

৭। মাসয়ালা : কারও মলদ্বারের ভেতরের অংশ যদি বের হয়ে আসে (এক ধরনের রোগ) তবে ওযূ ছুটে যাবে। যদিও সে অংশ পুনরায় নিজে নিজেই ভেতরে প্রবেশ করে কিংবা হাত বা কাপড়ের সাহায্যে ভেতরে প্রবেশ করানো হয়।-(শামী)

৮। মাসয়ালা : যদি উত্তেজনা ছাড়া (যেমন ভারী কোন বোঝা উঠালে বা ওপর থেকে নীচে পড়ে গেলে) মনি বের হয়, তবে গোসল ফরয হবে না বটে, কিন্তু ওযূ ছুটে যাবে।-(কাযীখান)।

৯। মাসয়ালা : বেহুঁশ অথবা পাগল হলে ওযূ ছুটে যাবে, কিন্তু যদি মস্তিষ্ক সামান্য পরিমাণে বিকৃত হয় এবং তাতে হুঁশহারা অথবা পাগল না হয়, তবে ওযূ নষ্ট হবে না।

১০। মাসয়ালা : নামায অবস্থায় তার মধ্যে উচ্চহাসি হাসলে ওযূ যাবে না।

১১। মাসয়ালা : জানাযার নামায ও তেলাওয়াতের সেজদারত অবস্থায় উচ্চহাসি হাসলে বালেগ ব্যক্তিরও ওযূ যাবে না, না-বালেগ ব্যক্তিরও না।–(মুনিয়া)

.

ওযূ ভঙ্গের কারণ

১। মাসয়ালাঃ পায়খানার ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে মলমূত্র এবং পায়খানার রাস্তা দিয়ে বাতাস বের হলে ওযূ ভঙ্গ হয়। যদি রোগের কারণে পেশাবের রাস্তা দিয়ে কখনও বাতাস বের হয় তবে ওযূ ভঙ্গ হবে না। আর যদি পায়খানা পেশাবের রাস্তা দিয়ে পোকা বা পাথর বের হয়। তবে ওযূ ভঙ্গ হবে।-(কবীরী)

২। মাসয়ালাঃ ক্ষত স্থান বা কান থেকে পোকা বের হলে কিংবা ক্ষত স্থান থেকে কিছু গোত কেটে পড়ে গেলে এবং রক্ত বের না হলে তাতে ওযূ ভঙ্গ হয় না।

৩। মাসয়ালাঃ সিঙ্গা দিয়ে রক্ত বের করলে, নাক দিয়ে রক্ত বের হলে, কিংবা শরীরের অন্য কোন জায়গা বা কোন ফোড়া-বাগি থেকে রক্ত পুঁজ বের হলে ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে, কিন্তু রক্ত পুঁজ যদি জখমের ভেতরেই থাকে, নির্গত স্থান থেকে বয়ে না যায়, তবে ওযূ ভঙ্গ হবে না। যদি হাতে সঁচ বিদ্ধ হয়ে রক্ত বের হয় এবং বয়ে না যায়, তবে ওযূ ভাঙবে না। কিন্তু যদি এক বিন্দুও গড়িয়ে যায়, তবে ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে।–(গুনইয়া)।

৪। মাসয়ালাঃ নাক পরিষ্কার করার সময় যদি জমাটবাঁধা রক্ত বের হয় তবে ওযূ ভঙ্গ হবে না। কেননা, পাতলা তরল রক্তে দাগ দেখা যায়, কিন্তু সে রক্ত গড়িয়ে না আসে, তবে ওযূ ভঙ্গ হবে না।–(গুনইয়া)

৫। মাসয়ালা : চোখে কোন গোটা ছিল, তা ভেঙ্গে পানি বয়ে গেছে, কিন্তু চোখের বাইরে আসেনি, ভেতরেই রয়ে গেছে, তাতে ওযূ ভঙ্গ হবে না; কিন্তু বাইরে আসলে ওযূ ভঙ্গ হবে। তদ্রূপ যদি কানের ভেতর কোন গোটা থাকে আর তা হতে পুঁজ বা রক্ত বের হয়, আর তা যদি গোসলের সময় যে-পর্যন্ত ধোয়া ফরয সে পর্যন্ত না আসে, তবে ওযূ ভঙ্গ হয়নি, আর যদি সে পর্যন্ত আসে, তবে ওযূ ভঙ্গ হয়ে গেছে।-(গুনইয়া)

৬। মাসয়ালা : ফোঁড়া, ফোস্কার ওপরের চামড়া তুলে ফেললে যদি ভেতরে রক্ত বা পুঁজ দেখা যায় কিন্তু গড়িয়ে বাইরে না আসে, তবে ওযূ ভঙ্গ হয় না, বাইরে গড়িয়ে আসলে ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে।-(গুনইয়া)

৭। মাসয়ালা : ফোঁড়া ইত্যাদির জখম খুব গম্ভীর হলেও যতক্ষণ পর্যন্ত রক্ত বা পুঁজ ফোঁড়ার বাইরে না আসে, সে পর্যন্ত ওযূ ভঙ্গ হয় না।

৮। মাসয়ালা : ফেঁড়া বা বাঘির রক্ত আপনা হতে বের হয়নি, কিন্তু যদি টিপে বের করা হয়ে থাকে এবং জখমের বাইরে গড়িয়ে পড়ে তবে ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

৯। মাসয়ালা : কারও জখম থেকে অল্প অল্প করে রক্ত বের হচ্ছে আর সে তার ওপর মাটি ছড়িয়ে দিচ্ছে বা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলছে, যাতে রক্ত গড়িয়ে এদিক সেদিক যেতে পারে, তবে এখন তার ভেবে দেখতে হবে, যদি সে না মুছতো তবে রক্ত গড়িয়ে জখমের মুখ থেকে ছড়িয়ে পড়ত কি না, যদি ছড়িয়ে পড়ত বলে মনে হয়, তবে ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে, আর যদি এরূপ বিশ্বাস হয় যে, না মুছলেও রক্ত এদিকে সেদিকে ছড়িয়ে পড়ত না, তবে ওযূ ভঙ্গ হবে না।-(কবীরী)

১০। মাসয়ালাঃ যদি থুথুর সাথে রক্ত দেখা যায় এবং নেহায়েত কম হয়, বর্ণ সাদা বা হলদে রঙ্গের ন্যায় হয়, তবে ওযূ ভঙ্গ হবে না; আর যদি রক্ত অধিক হয় এবং লাল রঙ্গের ন্যায় হয়, তবে ওযূ ভেঙ্গে যাবে।-(কবীরী)।

১১। মাসয়ালা : দাঁত দিয়ে কোন বস্তু চিবানোর সময় বস্তুর ওপর রক্তের দাগ দেখা গেল, কিন্তু থুথুর সঙ্গে আদৌ রক্তের রং দেখা গেল না, এতে ওযূ ভঙ্গ হবে না।

১২। মাসয়ালা : জোঁকে ধরলে যদি তা এ পরিমাণ রক্ত পান করে থাকে যে, জোকটাকে কেটে ফেললে রক্ত গড়িয়ে পড়বে, তবে ওযূ ভঙ্গ হবে। যদি সামান্য পরিমাণ পান করে থাকে, তবে ওযূ ভঙ্গ হবে না। মশা, মাছি বা ছারপোকা যে রক্ত পান করে থাকে তাতে ওযূ যায় না। -(গুনইয়া)

১৩। মাসয়ালা : যদি কানের ভেতর বেদনা অনুভূত হয় এবং পানি বের হয়, যদিও কোন ফোড়া, ফুসি আছে বলে মনে না হয়, তথাপিও এরূপ পানি নাপাক, তা কানের ছিদ্রের বাইরে। এমন স্থান পর্যন্ত আসলে ওযূ ভঙ্গ হবে যা ওয়ূর মধ্যে ধৌত করা ফরয। যদি নাভি থেকে পানি বের হয় এবং বেদনাও অনুভূত হয়, তবে তাতে ওযূ ভঙ্গ হবে। কিংবা যদি চক্ষু থেকে পানি নির্গত হয় এবং বেদনাও অনুভূত হয়, তবে তাতে ওযূ ভঙ্গ হবে, নতুবা শুধু চোখ দিয়ে পানি বের হলে ওযূ ভঙ্গ হবে না।-(শরহে তানবীর)

১৪। মাসয়ালা : স্তন থেকে পানি বের হলে যদি বেদনা অনুভূত হয় তবে এ পানি নাপাক এবং ওযূ ভঙ্গ হবে, আর যদি বেদনা অনুভূত না হয়, তবে সে পানি অপবিত্র নয় এবং ওযূও ভঙ্গ। হবে না।-(গুনইয়া)।

১৫। মাসয়ালা : বমনকালে ভাত, পানি বা পিত্তরস যদি মুখ ভর্তি হয়ে বের হয়, তবে ওয়ূ ভঙ্গ হবে। মুখ ভর্তি হয়ে না আসলে ওযূ ভঙ্গ হবে না, (মুখ ভর্তি হয়ে আসার অর্থ, মুখের মধ্যে ধারণ করে রাখা কষ্টকর হয়) এ পরিমাণ। মুখ ভর্তি হয়ে কফ বমি করলে ওযূ ভঙ্গ হবে না। বমিতে প্রবহমান তরল রক্ত বের হলে ওযূ ভঙ্গ হবে, তা মুখ ভর্তি হয়ে আসুক বা কম আসুক। জমাট রক্ত মুখ ভরে বের হলে ওযূ ভঙ্গ হবে, অন্যথায় ওযূ ভঙ্গ হবে না।–(কবীরী)।

১৬। মাসয়ালাঃ একটু একটু করে বমি হলে যদি সমস্ত বমি একত্র করলে এত পরিমাণ হয় যে, সে সব একবারে হলে মুখ ভর্তি হয়ে যেতো, তবে যদি একবারের উদ্বেগে সে পরিমাণ বমি হয়ে থাকে, তবে ওযূ ভঙ্গ হবে। আর যদি প্রথম বারের উদ্বেগ সম্পূর্ণ চলে গিয়ে বমন ভাব দূর হয়ে পুনরায় উদ্বেগের সাথে সামান্য বমি হয় এবং দ্বিতীয় বারের উদ্বেগ থেকে গেলে তৃতীয় বার পুনরায় নতুন উদ্বেগ হয়ে সামান্য পরিমাণ বমি হয়ে থাকে, তবে সে সব যোগ করা হবে না এবং ওযূও ভঙ্গ হবে না।

১৭। মাসয়ালা : শুয়ে শুয়ে সামান্য কিছু ঘুমালেও ওযূ ভঙ্গ হবে, আর যদি কোন বেড়া বা দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে বসে বসে ঘুমায়, তবে ঘুম যদি এত গম্ভীর হয় যে, ঐ বেড়া বা দেয়াল সেখানে না থাকলে ঘুমের ঝেকে পড়ে যেতো, তবে ওযূ ভঙ্গ হবে। নামাযে দণ্ডায়মান অবস্থায় নিদ্রা গেলে ওযূ ভঙ্গ হয় না, (কিন্তু নিদ্রিতাবস্থায় কোন রোকন আদায় করলে তা পুনরায় আদায় করতে হবে। সেজদা অবস্থায় (বিশেষ করে স্ত্রীলোকদের) ঘুম আসলে ওযূ ভঙ্গ হবে।-(রদ্দুল মোহ্তার)

১৮। মাসয়ালা : নামাযের বাইরে কোন বেড়া বা দেয়ালে হেলান না দিয়ে নিতম্বের উপর দৃঢ়ভাবে চেপে বসে নিদ্রা গেলে ওযূ ভঙ্গ হবে না।–(কবীরী)

১৯। মাসয়ালা : বসে বসে এমন তন্দ্রা এসেছে যে, পড়ে গেছে। তবে যদি পড়া মাত্রই সজাগ হয়ে যায়, তবে ওযূ ভঙ্গ হবে না। আর যদি কিছুমাত্রও দেরীতে জাগে, তবে ওযূ ভঙ্গ হবে। আর যদি শুধু বসে বসে ঝিমাতে থাকে, না পড়ে তবে ওযূ নষ্ট হবে না।–(শামী)।

২০। মাসয়ালাঃ সামান্য সময়ের জন্যও হুঁশহীন বা পাগল হয়ে গেলে ওযূ ভঙ্গ হবে। যদি তামাক ইত্যাদি কোন নেশার জিনিস খেয়ে এরকম অবস্থা হয়ে যে, ভালভাবে হাঁটতে পারে না, পা এদিক সেদিকে চলে যায়, তাতেও ওযূ ভঙ্গ হবে।–(দুররুল মোখতার)।

২১। মাসয়ালা : নিজেও শব্দ শুনতে পায় এবং পাশের লোকেও শব্দ শুনতে পায় নামাযের মধ্যে এরকমভাবে হাসলে অর্থাৎ, অট্টহাসি হাসলে ওযূ ভঙ্গ হবে এবং নামাযও নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি হাসি এমন হয় যাতে নিজেও আওয়ায শুনে এবং অতি নিকটে যদি কেউ থাকে সেও শুনতে পায়, কিন্তু পাশের লোকেরা সাধারণতঃ শুনতে না পায়, তবে তাতে শুধু নামায ভঙ্গ হবে। ওযূ নয়। আর যদি হাসতে শব্দ মোটেও না হয়, শুধু ঠোঁট ফাঁক হয়ে দাঁত বের হয়, তবে তাতে ওযূও ভঙ্গ হবে না, নামাযও নষ্ট হবে না। নাবালেগ ছেলে বা মেয়ে অট্টহাসি হাসলেও তার ও ভঙ্গ হবে না। তেমনি তেলাওয়াতের সেজদায় কোন বালেগ ছেলে বা মেয়ে অট্টহাসি হাসলে। তার ওযূ ভঙ্গ হবে না; তবে সেদা ও নামায আদায় হবে না, আবার আদায় করতে হবে। -(মুনিয়া)

২২। মাসয়ালা : ওযূর পর নখ কাটলে বা জখমের ওপরের মরা চামড়া তুলে ফেললে তাতে ওযূর কোন ক্ষতি হয় না–পুনরায় ওযূ করতে হবে না অথবা শুধু সেই স্থানটুকু ধোয়ারও কোন হুকুম নেই।-(শরহে তানবীর)

২৩। মাসয়ালা : ওযূ করে অন্য কারও সতরে দৃষ্টি পড়লে বা নিজের সতর খুলে গেলে তাতে ওযূ ভঙ্গ হয় না। হ্যাঁ, বিনা প্রয়োজনে অন্যের সতর দেখা বা নিজের সতর খোলা গুনাহের কাজ। তেমনি গোসলখানায় কাপড় খুলে গোসল করে ওই কাপড় খোলা অবস্থায়ই যদি ওযূ করে তবে তাতেই ওযূ হবে; পুনরায় ওযূ করতে হবে না।–(কবীরী)

২৪। মাসয়ালা : যে বস্তু দেহ থেকে নির্গত হলে ওযূ চলে যায়, সে বস্তু নাপাক, আর যে বস্তু বের হলে ও ভঙ্গ হয় না, সে বস্তু নাপাক নয়। সুতরাং, যদি সামান্য এক বিন্দু রক্ত বের হয়। আর জখমের মুখ থেকে গড়িয়ে না যায়, বা সামান্য কিছু বমি হয়ে থাকে আর তাতে ভাত, পানি, পিত্তরস বা জমাট রক্ত বের হয়, তবে ঐ রক্ত এবং বমি নাপাক নয়। অতএব, কাপড়ে বা দেহে লাগলে তা ধৌত করা ওয়াজিব নয়। আর যদি মুখ ভরে বমি হয় বা রক্ত জখমের মুখ থেকে গড়িয়ে পড়ে, তবে তা নাপাক এবং তা ধৌত করা ওয়াজিব। যদি এ পরিমাণ বমি করে গ্লাস, পেয়ালা বা বদনায় মুখ লাগিয়ে কুলি করার জন্য পানি নিয়ে থাকে, তবে ঐ পাত্রগুলোও নাপাক হয়ে যাবে। সুতরাং সতর্ক হতে হবে। হাতে পানি নিয়ে কুলি করাই নিরাপদ।-(শামী)

২৫। মাসয়ালাঃ শিশু যে দুধ উদ্‌গিরণ করে তারও এ নির্দেশ। যদি মুখ ভর্তি করে উদগিরণ না তবে হয় নাপাক নয়। কিন্তু মুখ ভর্তি হয়ে এসে থাকলে তা নাপাক। -(দুররে মুখতার)

২৬। মাসয়ালা : ওযূর কথা মনে আছে, কিন্তু ভঙ্গ হয়েছে কি না স্মরণ নেই; তবে শুধু এতটুকু সন্দেহে ওযূ ভঙ্গ হবে না। পূর্বের ওযূই ঠিক আছে বলে মনে করতে হবে। ওই ওযূ দিয়ে নামায আদায় করলে নামায আদায় হবে, তবে সন্দেহের কারণে আবার ওযূ করাই উত্তম। –(দুররে মুখতার)

২৭। মাসয়ালা : ওযূর সময় সন্দেহ হলো যে, অমুক স্থান পোয়া হলো কি না, এ অবস্থায় ঐ স্থান ধুয়ে নেবে। ওযূর শেষে এমন সন্দেহ হলে কোন তোয়াক্কা করতে নেই। কিন্তু অমুক স্থান পোয়া হয়নি বলে নিশ্চিত বিশ্বাস হলে ধুয়ে নেবে।–(শামী)

৩২। মাসয়ালা : ওযূ ছাড়া কোরআন শরীফ স্পর্শ করা জায়েয নয়। অবশ্য যদি আলাদা কোন বস্ত্র দিয়ে ধরে তবে জায়েয। কিন্তু নিজের পরনের বস্ত্র বা জামার আঁচল দিয়ে ধরা জায়েয নয়। যদি মুখস্থ পড়ে, তবে ওযূ ব্যতীতও দুরুস্ত আছে, আর যদি কোরআন শরীফ সামনে খোলা থাকে, ওতে হাত না লাগায়, তবে দেখে পড়াও দুরুস্ত আছে। এরূপে যে সব তাবিজ বা তশতরিতে কোরআনের রূপে আয়াত লেখা থাকে তাও ওযূ ছাড়া স্পর্শ করা জায়েয নয়। এ মাসয়ালা খুব ভালরূপে মনে রাখবে।-(দূররে মুখতার)

.

মা’যূর ব্যক্তির ওযূর মাসয়ালা

১। মাসয়ালা : যার নাক বা অন্য কোন জখম থেকে অনবরত রক্ত নির্গত হতে থাকে বা অনর্গল পেশাবের ফোঁটা পড়তে থাকে, এমন কি নামাযের সম্পূর্ণ ওয়াক্তের মধ্যে এতটুকু সময়ও বিরাম হয় না যাতে শুধু ফরয অঙ্গগুলো ধৌত করে ওযূর সাথে সংক্ষেপে ফরয নামায আদায় করে নিতে পারে, এরকম ব্যক্তিকে মা’যূর বলে। মা’যূরের হুকুম হল, প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে নতুন ওযূ করে নামায আদায় করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ ওয়াক্ত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার ওযূও থাকবে (ওযরবশতঃ রক্ত বা পেশাব বের হওয়ার কারণে তার ওযূ ভঙ্গ হবে না। কিন্তু যে। রোগের জন্য মাযূর হয়েছে তা ছাড়া ওযূ ভঙ্গের অন্য কোন কারণ পাওয়া গেলে অবশ্য ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং পুনরায় ওযূ করতে হবে। যেমন, কারও নাক দিয়ে অনবরত রক্ত বের হতে থাকে, একেবারেই বন্ধ হয় না, সে যদি যোহরের সময় ওযূ করে তবে যে পর্যন্ত যোহরের ওয়াক্ত থাকবে সে পর্যন্ত ঐ নাকের রক্তের কারণে তার ওযূ ভঙ্গ হবে না; কিন্তু যদি মল-মূত্র ত্যাগ করে, সূচ বিদ্ধ হয়ে রক্ত বের হয়, তবে ওযূ ভঙ্গ হবে এবং আবার ওযূ করতে হবে। যখন যোহরের ওয়াক্ত পার হয়ে আছরের ওয়াক্ত আসবে, তখন পুনরায় ওযূ করতে হবে। এভাবে প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে নতুন ওযূ করতে হবে এবং এ ওযূ দিয়ে ফরয, নফল সব নামাযই আদায় কতে পারবে।-(শরহে তানবীর)

২। মাসয়ালা : মা’যূর ব্যক্তি যদি ফজরের সময় ওযূ করে তবে সূর্যোদয় হলে সে ওযূ দিয়ে আর নামায আদায় করতে পারবে না, পুনরায় ওযূ করতে হবে। যদি সূর্যোদয়ের পর ওযূ করে থাকে, তবে সে ওযূ দিয়ে যোহরের নামায আদায় করতে পারবে, নতুন ওযূ করতে হবে না। কিন্তু আছরের ওয়াক্ত আসলে নতুন ওযূ করতে হবে। যদি অন্য কোন কারণে ওযূ ভঙ্গ হয় তবে আলাদা কথা। (শরহে হেদায়া)

৩। মাসয়ালা : কারও একটি যখম ছিল, তা হতে সর্বদা রক্ত নির্গত হতো; কিন্তু ওযূ করার পর আর একটা জখম হয়ে আরও রক্ত নির্গত হতে লাগল, তখন তার ওযূ ভেঙ্গে গেছে, পুনরায় ওযূ করতে হবে।-(শরহে তানবীর)

৪। মাসয়ালা : মা’যূর হওয়ার জন্য শর্ত হল, একটা সম্পূর্ণ ওয়াক্ত এমনভাবে শেষ হয়ে যাবে, যাতে অবিরাম রক্ত বের হতে থাকে, এতটুকু সময়ের জন্যও বন্ধ হয় না যে, শুধু ওই ওয়াক্তের ফরয নামাযটা ওযূর সাথে আদায় করে নিতে পারে। যদি সম্পূর্ণ ওয়াক্তের মধ্যে এতটুকু সময় মিলে যে, ওযূর সাথে ওয়াক্তের ফরয নামায আদায় করে নিতে পারে, তবে আর তাকে মা’যূর বলা যাবে না। মা’যূরের জন্য যে আদেশ আর যে মাফ আছে, তাও সে পাবে না; কিন্তু এক ওয়াক্ত সম্পূর্ণ এরূপভাবে শেষ হয়ে গেল যে, পবিত্রতার সাথে নামায আদায়ের সুযোগ পায়নি, তখন সে মা’যূর হলো! এখন তাকে প্রতি ওয়াক্তে নতুন ওযূ করতে হবে। এরপর যখন দ্বিতীয় ওয়াক্ত আসবে, তখন আর সম্পূর্ণ ওয়াক্তের রক্ত বের হওয়ার শর্ত চলবে না; বরং তখন যদি পূর্ণ ওয়াক্তের ভেতর একবারও রক্ত বের হয় আর সব সময় ভাল থাকে, তবুও সে মা’যুরের হুকুমেই পড়বে। যদি এক ওয়াক্ত সম্পূর্ণ এরকম অবস্থায় শেষ হয় যে, রক্ত একবারও বের হয়নি, তখন আর সে মায়ূর বলে গণ্য হবে না। যতবার রক্ত বের হবে ততবারই ওযূ ভঙ্গ হবে (মাসয়ালাটা কিছু কঠিন, ভালভাবে বুঝতে হবে)!

৫।’ মাসয়ালা : যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর যদি কারও রক্ত বের হতে আরম্ভ হয়, তবে তার সোহরের শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত (অর্থাৎ, যখন এতটুকু সময় থাকে যে, ওযূর ফরয অঙ্গগুলো ধৌত করে শুধু চার রাকআত ফরয নামায পড়তে পারবে, তখন পর্যন্ত) অপেক্ষা করতে হবে। যদি রক্ত বন্ধ হয়ে যায়, তবে তো ভালই, অন্যথা ওযূ করে নামায আদায় করে নেবে (কিন্তু মা’যূরের হুকুম পাবে না)। অতঃপর পুনরায় আছরের সময়ও যদি সম্পূর্ণ ওয়াক্ত একইভাবে রক্ত বের হতে থাকে যে, নামায পড়ার জন্য ফুরসত পাওয়া যায় না, তবে এখন আছরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার পর তার ওপর মা’যূরের হুকুম প্রযোজ্য হবে। যদি আছরের ওয়াক্ত কিছুক্ষণ থাকতে রক্ত বন্ধ হয়ে যায়, তবে আর সে মা’যূর হবে না। যে সব নামায এ ওয়াক্তের ভেতর আদায় করেছে তা দুরুস্ত হয় নি; সুতরাং পুনরায় পড়তে হবে। (আছরের ওয়াক্তেও মাহ ওয়াক্তের পূর্ব পর্যন্ত দেরী করতে হবে। যদি রক্ত বন্ধ হয়ে যায় তবে ত ভালই, নতুবা ওযূ করে নামায মাকরূহ ওয়াক্তের পূর্বেই পড়ে নেবে, কিন্তু (মাকরূহ) ওয়াক্ত থাকতে থাকতে যদি বন্ধ হয়ে যায় তবে ঐ নামায পুনরায় পড়তে হবে।)–(রদ্দুল মোহতার)

৬। মাসয়ালা : উল্লিখিত নিয়মানুসারে যার ওপর মা’যূরের হুকুম বর্তাবে এরকম একজন লোক মল-মূত্র ইত্যাদি কারণে ওযূ করেছিল, ওযূ করার সময়, রক্ত (অর্থাৎ যে জন্য সে মা’যুরের হুকুম পেয়েছে তা) বন্ধ ছিল, ওযূ শেষ করার পর রক্ত বের হতে আরম্ভ হয়েছে, এখন এ রক্ত বের হওয়ায় তার ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে; কিন্তু ওই রক্ত বের হওয়ায় যে ওযূ করবে, সে ওযূ পুনরায় রক্ত বের হওয়ার কারণে ভঙ্গ হবে না।–(আলমগীরী)

৭। মাসয়ালা : যদি এ রক্ত ইত্যাদি (অর্থাৎ, যার কারণে মা’যূরের হুকুম দেয়া হয়েছে) কাপড়ে লাগে এবং এমন মনে হয় যে, নামায শেষ করার পূর্বে আবার লেগে যাবে, তবে ওই রক্ত ধৌত করা ওয়াজিব নয়। আর যদি মনে হয় যে, এত অল্প সময়ের মধ্যে রক্ত লাগবে না; পাক কাপড়েই নামায শেষ করা সম্ভব হয়, তবে ধৌত করে নেয়া ওয়াজিব, রক্ত এক দেরহাম অপেক্ষা বেশি হলে তা না ধৌত করলে নামায হবে না।–(শরহে তানবীর)

.

গোসলের বর্ণনা

 হাদীস : হযরত রসূলে করীম (ছঃ) স্বীয় খাদেম হযরত আনাস (রাঃ)-কে উদ্দেশ করে বলেছেন, হে আনাস! তুমি ফরয গোসল করার সময় খুব ভাল করে গোসল করবে (শরীরে একটি পশমের পরিমাণ জায়গাও যেন শুষ্ক না থাকে। কেননা, একটি পশমের পরিমাণ জায়গাও শুষ্ক থাকলে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।) যদি তুমি (এভাবে) উত্তমরূপে গোসল কর, তবে গোসলের জায়গা থেকে তুমি এমন ভাবে বের হবে যে, তোমার সকল ছগীরা গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। হযরত আনাস (রাঃ) আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! উত্তমরূপে গোসল করার অর্থ কি? হযরত নবী করীম (ছঃ) ফরমান, চুল এবং পশমের গোড়াসমূহকে উত্তমরূপে ভিজাবে এবং সম্পূর্ণ শরীর উত্তমরূপে (ডলে ডলে ময়লা) পরিস্কার করে গোসল করবে। অতঃপর হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও ফরমান, প্রিয় বৎস, সব সময় ওযূর সাথে থাকার চেষ্টা করবে। যদি এ অভ্যাস করতে পার, তবে এতে খুবই ফযীলত রয়েছে। কেননা, যার মৃত্যু ওযূ অবস্থায় হবে, তাকে শহীদের মর্যাদা দান করা হবে।–(আবু ইয়ালা)

১। মাসয়ালা : (গোসলের পূর্বে প্রথম মনে মনে নিয়ত করবে অর্থাৎ, চিন্তা করবে, আমি পবিত্র হওয়ার উদ্দেশে গোসল করছি!) অতঃপর প্রথমে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করবে এরপর এস্তেঞ্জার স্থান ধৌত করবে। হাতে এবং এস্তেঞ্জার স্থানে নাজাছাত থাকুক বা না থাকুক, ওই স্থান প্রথমে ধুবে। তারপর শরীরের কোথাও নাজাসাত লেগে থাকলে তা ধৌত করবে, অতঃপর ওযূ করবে। যদি কোন চৌকি বা পাথরের ওপর গোসল করে (যাতে পরে আর পা ধোয়ার প্রয়োজন হবে না), তবে ওযূ করার সাথে সাথেই পা ধুয়ে নেবে, আর যদি এমন স্থানে গোসল করে যে, পায়ে কাদা লেগে যাবে এবং পরে পুনরায় ধুতে হবে, তবে পূর্ণ অযূ করবে, কিন্তু পা ধৌত করবে না। এর পর তিন বার মাথায় পানি ঢালবে, তার পর তিন বার ডান কাঁধে পানি ঢালবে, অতঃপর তিন বার বাম কাঁধে পানি এমনভাবে পানি ঢালবে যেন সারা শরীর ধুয়ে যায়। এরপর পাক স্থানে সরে পা ধুয়ে নেবে, আর যদি ওযূর সাথে ধুয়ে থাকে, তবে পুনরায় ধোয়ার প্রয়োজন নেই।-(শরহে তানবীর)

২। মাসয়ালা : পানি ঢালার পূর্বে সমস্ত শরীর উত্তমরূপে ভেজা হস্ত দ্বারা মুছে নেবে, তারপর পানি ঢালবে। এরূপ করলে শরীরের সমস্ত স্থানে সহজে পানি প্রবেশ করবে। কোথাও শুকনা থাকবে না।–(মুনুইয়া)।

৩। মাসয়ালা : ওপরে গোসলের যে নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে, তাই সুন্নত তরিকার গোসল। কিন্তু এর মধ্যে এমন কয়েকটি কাজ আছে যা না হলে গোসলই হয় না; সেগুলোকে ফরয’ বলে। আর কতকগুলো কাজ এমন আছে যা করলে ছওয়াব পাওয়া যায়, কিন্তু না করলে গোসল হয়ে যায়, এগুলোকে সুন্নত বলে। গোসলের মধ্যে ফরয তিনটি। যথা : (১) এমনভাবে কুলি করা যাতে সমস্ত মুখে পানি প্রবেশ করে, (২) নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছান, (৩) সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছান।-(হেদায়া)।

৪। মাসয়ালা : গোসল করার সময় কাবার দিকে মুখ করবে না। অযথা পানি খরচ করবে না যে, গোসলও ভালভাবে হয় না। গোসল এমন স্থানে করবে যে কেউ দেখতে না পায়। গোসলের সময় কথা বলবে না। গোসল শেষ হলে আলাদা বস্ত্র দিয়ে শরীর মুছে ফেলে (স্ত্রীলোক) খুব তাড়াতাড়ি শরীর ঢেকে ফেলবে। এমন কি, যদি গোসলের ওযূর সময় পা না ধুয়ে থাকে, তবে গোসলের স্থান থেকে সরে আগে দেহ আবৃত করে নেবে, পরে উভয় পা ধুবে। -(মারাকী)

৫। মাসয়ালা : কেউ দেখতে পারে এমন সম্ভাবনা নেই, এমন স্থানে উলঙ্গ হয়ে গোসল করাও জায়েয আছে বসে হোক অথবা দাঁড়িয়ে, গোসলখানার ছাদ থাকুক বা না থাকুক; কিন্তু (এরকম প্রয়োজন হলে) বসে গোসল করাই উত্তম। কেননা, এতে পর্দা বেশি রক্ষিত হয়। নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত মহিলাদের জন্য অন্য মহিলার সামনেও ভোলা জায়েয নয়। সাধারণতঃ স্ত্রীলোকেরা এদিকে লক্ষ্য রাখে না। তারা ভাবে, মহিলার সামনে মহিলার আবার পর্দা কি? কিন্তু এটা মস্ত বড় ভুল এবং লজ্জাহীনতার কথা।–(মারাকী)

৬। মাসয়ালাঃ গোসলের নিয়ত করুক বা না করুক, সমস্ত শরীরে পানি বয়ে গেলে। কুল্লি করলে এবং নাকে পানি দিলে গোসল হয়ে যাবে। এরূপ শরীর ঠাণ্ডা করার জন্য বৃষ্টিতে যদি দাঁড়ায় বা হঠাৎ পুকুর ইত্যাদিতে পড়ে যায় এবং সমস্ত শরীর ভিজে যায়, কুল্লিও করে নেয় এবং নাকেও পানি দিয়ে নেয়, তবে গোসল হয়ে যাবে। গোসলের সময় কালেমা পড়া বা কালেমা পড়ে পানিতে ফুঁক দিয়ে নেয়ারও কোন প্রয়োজন নেই; কালেমা পড়ুক বা না পড়ুক গোসল হয়ে যাবে, বরং গোসল করার সময় কালেমা বা অন্য কোন দোয়া না পড়াই উত্তম। (মুনইয়া)

৭। মাসয়ালা : সমস্ত দেহের একটা পশম পরিমাণ স্থান শুষ্ক থাকলেও গোসল হবে না। তেমনি, কুল্লি করতে বা নাকে পানি দিতে যদি ভুলে গিয়ে থাকে তাহলেও গোসল হবে না। নাপাকই থেকে যাবে। নামায ইত্যাদি কিছুই হবে না।-(মুন্‌ইয়া)।

৮। মাসয়ালা : যদি গোসল শেষে মনে পড়ে যে, অমুক স্থান শুকনো রয়েছে, তবে পুনরায় সম্পূর্ণ গোসল করার প্রয়োজন নেই, কেবল সে স্থানটুকু ধুয়ে নিলেই চলবে; কিন্তু শুধুমাত্র ভেজা হাত দিয়ে মুছে নিলে হবে না, কিছু পানি নিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। আর কুল্লি করতে ভুলে গিয়ে থাকলে তখন শুধু কুল্লি করবে; যদি নাকে পানি দিতে ভুলে গিয়ে থাকে তবে নাকে পানি দেবে। মোট কথা, যেটুকু ধোয়ার বাকী রয়েছে কেবল সেটুকু ধুলেই হবে; সম্পূর্ণ গোসলের প্রয়োজন হবে না।–(মুন্‌ইয়া)

৯। মাসয়ালা : রোগের কারণে মাথায় পানি দিলে যদি ক্ষতি হয়, তবে মাথা ব্যতীত সমস্ত শরীর ধৌত করে নিলেও গোসল হয়ে যাবে। সুস্থ হওয়ার পর মাথা ধৌত করলে চলবে। সম্পূর্ণ গোসল পুনরায় করতে হবে না।-(শরহে তানবীর)

১০। মাসয়ালা : গোসলের সময় পেশাবের স্থানের ওপরের চামড়ায় পানি পৌঁছাতে হবে, এটা ফরয, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। নতুবা গোসল হবে না। (এ মাসয়ালাটি মূল গ্রন্থে অন্যত্র বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে ধারাবাহিকতা ঠিক রাখার জন্যই কেবল সংযোজন করা হলো।)

১১। মাসয়ালা : যদি মাথার চুল বেণী না পাকানো হয়, তবে সমস্ত চুল এবং চুলের গোড়ায় পানি প্রবেশ করানো ফরয। একটি চুল বা একটি চুলের গোড়াও যদি শুষ্ক থাকে তবে গোসল হবে না। আর যদি চুল বেণী পাকানো হয়, তবে সমস্ত চুল না ভিজালেও হবে। তবে চুলের গোড়ায় পানি প্রবেশ করানো ফরয। একটি গোড়াও শুষ্ক থাকা চলবে না। বেণী না খুলে সমস্ত চুলের গোড়ায় পানি প্রবেশ করানো সম্ভব না হলে খুলে ফেলতে হবে এবং সমস্ত চুলও ভেজাতে হবে (পুরুষের চুলে বেণী থাকলেও তা খুলে সমস্ত চুল ভেজাতে হবে।)–(মুন্‌ইয়া)।

১২। মাসয়ালা : নথ, আংটি, বালি, কানফুল, নাকফুল ইত্যাদি ভালভাবে নেড়ে ছিদ্রের ভেতরে পানি পৌঁছে দেবে, আর বালি ইত্যাদি না থাকলে সতর্কতার সাথে ছিদ্রগুলোর ভেতরে পানি প্রবেশ করিয়ে দেবে। কেননা, অসতর্কতাহেতু কোন জায়গা শুষ্ক থাকলে গোসল হবে না। আংটি ইত্যাদি খুব ঢিলা থাকলে অনায়াসে পানি পৌঁছতে পারে, কাজেই নেড়েচেড়ে পানি প্রবেশ করানো ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব।–(মুন্‌ইয়া)

১৩। মাসয়ালা : যদি নখের ভেতর (বা অন্য কোথাও) কিছু আটা, চুন ইত্যাদি লেগে শুকিয়ে থাকে, তবে তাতে পানি না পৌঁছলে গোসল হবে না। মনে হলে এবং দেখামাত্র তা বের করে কিছু পানি দ্বারা ঐ স্থানটুকু ভিজিয়ে দেবে। ভেজানোর পূর্বে যদি কোন নামায পড়ে থাকে তবে পুনরায় পড়তে হবে।–(শামী)

১৪। মাসয়ালাঃ হাত বা পা ফেটে যাওয়ার কারণে যেখানে (আমের আঠা) মোম, তেল, বা অন্য কোন ওযূধ ভরে দেয়া হয়েছে, সেখানে ওযূধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত করে দিলেই গোসল হয়ে যাবে।–(মুন্‌ইয়া)

১৫। মাসয়ালা : কান এবং নাভিতেও খুব খেয়াল করে পানি প্রবেশ করাবে। কেননা, পানি প্রবেশ না করালে গোসল হবে না।-(শরহে তানবীর)

১৬। মাসয়ালা : গোসল করার সময় কেউ কুল্লি করেনি, কিন্তু মুখ ভর্তি করে পানি পান করেছে এবং সমস্ত মুখে পানি লেগেছে এক্ষেত্রে তার গোসল হয়ে যাবে। কেননা, সমস্ত মুখের। মধ্যে পানি পৌঁছান উদ্দেশ্য, কুল্লি করুক বা না করুক। কিন্তু যদি এমনভাবে পানি পান করে যে, সমস্ত মুখে পানি লাগেনি, তবে অবশ্য কুল্লি করতে হবে, এরূপ পানি পানে কুল্লির কাজ সমাধা হবে না।-(মুন্‌ইয়া)।

১৭। মাসয়ালা : যদি চুলে বা হাতে-পায়ে এমনভাবে তেল লাগান থাকে যে, শরীরে পানি ভালভাবে দাঁড়াতে পারে না, তাতেও কোন ক্ষতি নেই। শরীরের সব স্থানে ও মাথায় পানি ঢেলে দিলেই গোসল হয়ে যাবে।

১৮। মাসয়ালা : সুপারি বা অন্য কিছু দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকলে খেলাল করে তা বের করে ফেলবে। কারণ, আটকানো সুপারি বা অন্য কিছুর কারণে যদি দাঁতের গোড়ায় পানি প্রবেশ না করে তবে গোসল হবে না।–(মুন্‌ইয়া)

১৯। মাসয়ালা : মাথায় যদি আফশান লাগানো হয়ে থাকে, বা চুলে এমন আঠা লেগেছে যে চুল ভালভাবে ভিজে না, তবে তা ছাড়িয়ে ফেলে চামড়া পর্যন্ত পানি প্রবেশ করাবে, এক্ষেত্রে কেবল পানি প্রবাহিত করলে গোসল হবে না।–(মুন্‌ইয়া)

২০। মাসয়ালাঃ দাঁতে মিসি জমে থাকলে তা কুল্লি করবে অন্যথা গোসল হবে না। -(মুনইয়া)

২১। মাসয়ালা : চোখে পিচুটি যদি এমনভাবে জমে থাকে যে, তা পরিষ্কার না করলে নীচে পানি পৌঁছবে না, তবে তা পরিষ্কার করে নীচ পর্যন্ত পানি প্রবেশ করাতে হবে। নতুবা ওযূ-গোসল কিছুই শুদ্ধ হবে না।–(মুনইয়া)

গোসল ফরয হওয়ার কারণসমূহ পরে লেখা হয়েছে।

.

গোসলের মাসয়ালা

গোসল ওয়াজিব হওয়ার কারণঃ

১। মাসয়ালাঃ নিদ্রিত বা জাগ্রত যে অবস্থায়ই হোক, যৌন উত্তেজনার সাথে মণী (বীর্য) বের হলে গোসল ওয়াজিব হবে। স্বামীর হাতের স্পর্শ বা শুধু চিন্তা বা অন্য কোন কারণেই হোক, উত্তেজনার সাথে বীর্য বের হলেই গোসল ওয়াজিব হবে।

২। মাসয়ালা : কেউ নিদ্রা থেকে উঠে যদি দেখে যে, কাপড়ে ও শরীরে আঠা আঠা বীর্য লেগে আছে, কোন বদ স্বপ্ন দেখে বা অন্য কোন কারণে হয়ে থাকুক গোসল করতে হবে।

উত্তেজনাবশতঃ প্রথমে যে পানি বের হয় এবং যা বের হলে উত্তেজনা কমে না বরং আরও বেড়ে যায়, তাকে মযী বলে। আর খুব স্ফুর্তি এবং মজা লেগে অতঃপর যে পানি বের হয় তাকে মণী বলে। মযী ও মণীর মধ্যে পার্থক্য বোঝার এটাই একমাত্র উপায় যে, মণী বের হওয়ার সময় খুব আনন্দ লাগে এবং বের হয়ে গেলে আগ্রহ উত্তেজনাও কমে যায়। আর মযী বের হলে তাতে উত্তেজনা কমে না বরং বৃদ্ধি পায়। আর এও এক পার্থক্য যে, মযী তরল আর মণি অপেক্ষাকৃত গাঢ়। তবে শুধু মযী বের হলে গোসল ওয়াজিব হবে না তবে ওযূ ছুটে যাবে।

৩। মাসয়ালা : স্বামীর প্রস্রাবের স্থানের শুধু অগ্রভাগ অর্থাৎ খতনার স্থানটুকু মাত্র স্ত্রীর যৌনঙ্গের ভেতরে প্রবেশ করলেই গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়, যদি কিছুই বের না হয় তবুও গোসল ওয়াজিব। যেমন প্রস্রাবের রাস্তার এ হুকুম, তদ্রুপ যদি কোন পাপিষ্ঠ স্ত্রীলোক বা পুরুষ লোকের গুহ্যদ্বার দিয়ে তার যৌনাঙ্গ প্রবেশ করায় তবুও মণী বের হোক বা না হোক, শুধু খতনার স্থানটুকু প্রবেশ করালেই (মহারাম হওয়া সত্ত্বেও) গোসল ওয়াজিব হবে। স্মরণ থাকে যে, কোন পাপিষ্ঠ স্বামী যদি স্ত্রীর পেছনের রাস্তা দিয়ে তার যৌনাঙ্গ প্রবেশ করাতে চায়, তবে স্ত্রী কিছুতেই প্রবেশ করাতে দেবে না; কেননা, এরকম করায় দুজনাই মহাপাপী হবে।

৪। মাসয়ালাঃ স্ত্রীলোকের যৌনাঙ্গ দিয়ে মাসে মাসে যে রক্ত নির্গত হয় তাকে হায়েয বলে। যখন এ রক্ত বন্ধ হয়ে যায় তখন গোসল ওয়াজিব হয়। সন্তান প্রসবের পরে যে রক্ত ঝরে তাকে নেফাস বলে। এ রক্ত বন্ধ হলেও গোসল ওয়াজিব হয়। মোট কথা, নিম্নলিখিত চার কারণে গোসল ওয়াজিব হয়

(১) উত্তেজনাবশতঃ মণী বের হলে। (২) স্বামীর বিশেষ স্থানের অগ্রভাগ বিশেষ স্থানের ভেতরে প্রবেশ করালে। (৩) হায়েয বন্ধ হলে এবং (৪) নেফাস বন্ধ হলে।

৫। মাসয়ালা : অপ্রাপ্ত বয়স্কা মেয়ের সাথে যদি বৈধ বা অবৈধ সহবাস করা হয়, তবে ঐ মেয়ের ওপর গোসল ফরয নয় বটে, কিন্তু অভ্যাস সৃষ্টির জন্য গোসল করানো উচিত।

৬। মাসয়ালা : কেউ স্বপ্নে দেখল, স্বামীর সঙ্গে সহবাস করছে এবং আনন্দও পেয়েছে, কিন্তু যদি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে দেখে যে, মণী বের হয় নি, তবে গোসল করা ওয়াজিব হবে না; কিন্তু মণি বের হয়ে থাকলে অবশ্যই গোসল ওয়াজিব হবে। আর যদি কাপড় বা শরীর কিছু ভিজা ভিজা বোধ হয়, কিন্তু মনে হয় যে, এটা মযী বা মনী নয়; তবুও গোসল ওয়াজিব হবে।

৭। মাসয়ালা : সামান্য পরিমাণ মণী বের হওয়ার পর গোসল করে ফেলেছে, গোসল করার পর পুনরায় মণী বের হয়েছে, এক্ষেত্রে পুনরায় গোসল করতে হবে। কিন্তু যদি গোসল করার পর স্বামীর যে মণী রেহেমের মধ্যে চলে গিয়েছিল সেই মণী বের হয় এবং সঠিকভাবে চিনতে পারে যে, এটা স্বামীর মণী, তবে পুনরায় গোসল ওয়াজিব হবে না, পূর্বের গোসল জায়েজ হয়েছে।

৮। মাসয়ালা : কোন কারণ বশতঃ হয়ত মণী বের হয়, কিন্তু উত্তেজনা এবং খাহেশ . মাত্রও থাকে না, তবে গোসল ওয়াজিব হবে না; কিন্তু ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

৯। মাসয়ালা : স্বামী-স্ত্রী একত্রে সোয়ার পর, সজাগ হয়ে কাপড়ে মণী দেখতে পেলো; কিন্তু স্বপ্নে কিছু দেখেছে কিনা কেউ স্মরণ করতে পারছে না। তবে দু’জনেরই গোসল করা ওয়াজিব হবে। কেননা, তাদের জানা নেই যে, এটা কার মণী।

১০। মাসয়ালা : অমুসলমান যদি মুসলমান হয় তবে তার গোসল করা মুস্তাহাব।

১১। মাসয়ালা : মূর্দাকে গোসল করানোর পর গোসল করা মোস্তাহাব।

১২। মাসয়ালা : গোসলের প্রয়োজন হওয়ার পর গোসলের পূর্বেই যদি কিছু খেতে চায়, তবে হাত মুখ ধুয়ে কুলি করে তারপর খাবে। কেউ যদি এ রকম না করেও খায়, তবুও গুনাহগার হবে না।

১৩। মাসয়ালা : যার গোসল ফরয হয়েছে, তার জন্য কোরআন স্পর্শ বা তেলাওয়াত করা এবং মসজিদে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ; কিন্তু আল্লাহ পাকের নাম উচ্চারণ করা, কালেমা পাঠ করা, দুরূদ শরীফ পড়া দুরস্ত আছে।

১৪। মাসয়ালাঃ বিনা ওযূ-গোসলে কোরআন পাকের তাফসীর স্পর্শ করা মাকরূহ; আর তরজমাসহ কোরআন পাক স্পর্শ করা একেবারে স্বরাম।

১৫। মাসয়ালা : ওযূহীন অবস্থাকে হদছে আসগার বা ছোট নাপাকী এবং গোসল ফরয হওয়ার অবস্থাকে হদছে আকবর বা বড় নাপাকী বলে।

১৬। মাসয়ালা : হদছে আসগার থেকে পাক হওয়ার জন্য ওযূ এবং হদছে আকবর থেকে পাক হওয়ার জন্য গোসল করতে হয়।

.

নিম্নোক্ত কারণে গোসল ফরয হয়

প্রথম : মণী বা বীর্য বের হলে গোসল ফরয হয়–বীর্য স্বাভাবিক পদ্ধতিতে, বা অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে, জাগ্রত অবস্থায় বা নিদ্রিত অবস্থায় বের হোক, স্বপ্নদোষ হয়ে কিংবা স্ত্রী সহবাসের কারণে, বৈধভাবে বা অন্য কোন হারাম, অসদুপায়, কুকল্পনা, কুকর্মজনিত কিম্বা হস্তমৈথুন ইত্যাদি কারণে বের হোক। মোট কথা বীর্য মানুষের দেহের রাজা, এ রাজাই মানুষ জন্মানোর বীর্য, এ বীর্যের সদ্ব্যবহার করে স্ত্রী-গর্ভে বপন করলেও গোসল ফরয হবে, আর যদি কেউ মহাপাপী হয়ে স্বীয় স্বাস্থ্য, শরীর এবং ঈমান নষ্ট করে হস্তমৈথুন, কুকল্পনা, পুংমথুন, গুহ্যদ্বার ব্যবহার, ব্যভিচার ইত্যাদি দ্বারা এ বীর্যের অপব্যবহার করে তবুও গোসল ফরয হবে।

দ্বিতীয়ঃ সহবাস করলে স্বামী-স্ত্রী দুজনের ওপর গোসল তো ফরয হয়ই, এমন কি কেউ স্ত্রী-সহবাস করতে উদ্যত হয়ে পূর্ণ সহবাস না করলেও কেবলমাত্র পুরুষাঙ্গের খতনার স্থান স্ত্রী-লিঙ্গে মিলিত হলে বীর্য বের না হওয়া সত্ত্বেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ওপর গোসল ফরয হবে।

তৃতীয়ঃ স্ত্রীলোকের হায়েয (মাসিক ঋতুস্রাব) হলে যখন রক্ত বন্ধ হবে, তখন পাক হওয়ার জন্য এবং নামায আদায়ের জন্য গোসল ফরয হবে। এর বিস্তৃত মাসয়ালা হায়েযের বিবরণে বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে দেখে নেবেন।

চতুর্থঃ স্ত্রীলোকের নেফাস হলে অর্থাৎ সন্তান হওয়ার পর যে রক্তস্রাব হয় সে রক্তস্রাব বন্ধ হলে পবিত্র হওয়ার জন্য এবং নামায আদায়ের জন্য গোসল ফরয হবে। এরও বিস্তারিত মাসয়ালা নেফাসের বিবরণে বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে দেখে নেবেন।

১৭। মাসয়ালা : শরীরে উত্তেজনা এসে বীর্য বের হতে থাকলে যদি চেপে রাখে এবং উত্তেজনা চলে গেলে মণী বের হয়, তথাপি যখন বীর্য বের হবে তখন গোসল ফরয।

১৮। মাসয়ালাঃ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে কেউ যদি তার কাপড়ে ভিজা বা শুকনা বীর্যের দাগ দেখতে পায়, তবে স্বপ্ন দেখার কথা স্মরণ থাকুক বা না থাকুক, তার ওপর গোসল ফরয। এমনকি ঐ দাগ বা ভেজা বীর্য কি মযী না মণী এ ব্যাপারে যদি সন্দেহ থাকে, তা হলেও গোসল করতে হবে।

১৯। মাসয়ালাঃ যদি কারও খতনার সুন্নত আদায় না হয়ে থাকে এবং মণী বের হয়ে ওই চামড়ার ভেতর আটকে থাকে, তবুও গোসল ফরয হবে।

২০। মাসয়ালা : পাপাচারী পুরুষ যেমন অসদুপায়ে উত্তেজনার সৃষ্টি করে দেহের রাজা নষ্ট করলে পাপী হবে গোসলও ফরয হবে, তেমনি পাপাচারী রমণীও যদি অসদুপায়ে আঙ্গুল ইত্যাদি শরমগাহের ভেতর প্রবেশ করিয়ে দিয়ে কৃত্রিম উত্তেজনা সৃষ্টি করে, এতে মণি বের হোক বা না হোক সেও গুনাহগার হবে এবং তার ওপরও গোসল ফরয হবে।

.

যে কারণে গোসল ফরয হয় না

১। মাসয়ালাঃ যদি কোন রোগের কারণে বীর্য পাতলা হয়ে বা আঘাত লেগে বিনা উত্তেজনায় বীর্য বের হয়, তবে তাতে গোসল ফরয় হবে না।

২। মাসয়ালা : স্বামী-স্ত্রী শুধু পরস্পর লিঙ্গ স্পর্শ করে যদি ছেড়ে দেয়, কিছুমাত্র ভেতরে না ঢুকায় এবং বীর্যও বের না হয়, তাতে গোসল ফরয হয় না।

৩। মাসয়ালা : শুধু মযী বের হলে তাতে কেবল ওযূ ভঙ্গ হবে, গোসল ফরয হবে না।

৪। মাসয়ালাঃ নিদ্রা থেকে ওঠার পর যদি স্বপ্ন স্মরণ থাকে এবং পরিধানের বস্ত্রে কোন কিছু না দেখা যায়, তবে তাতে গোসল ফরয হবে না।

৫। মাসয়ালাঃ পায়খানার রাস্তায় ঢুস-যন্ত্র লাগিয়ে যে পায়খানা করান হয়, তাতে গোসল ফরয হয় না।

৬। মাসয়ালা : মহিলাদের যে রক্ত প্রবাহিত হয় তা তিন প্রকার : (১) হায়েয, (২) নেফাস এবং (৩) এস্তেহাযা। হায়েয ও নেফাসের রক্ত রেহেম অর্থাৎ জরায়ু থেকে বের হয় বলে গোসল ফরয হয়; কিন্তু এস্তেহাযার খুন রেহেম থেকে বের হয় না, রোগবশতঃ অন্য কোন শিরা বা রগ হতে আসে, তাতে গোসল ফরয হয় না। এস্তেহাযার রক্ত চিনার উপায় এস্তেহাযার মাসায়েলে বর্ণিত হয়েছে।

.

ওয়াজিব গোসল

১। মাসয়ালা : যদি কেউ নতুন মুসলমান হয় এবং কাফের অবস্থায় গোসল ফরয হয়ে থাকে, অথচ গোসল করেনি, অথবা শরীয়ত অনুযায়ী গোসল করেনি, তবে তার ওপর গোসল ওয়াজিব হবে।

২। মাসয়ালা : যদি কেউ পনের বছর বয়সের পূর্বে বালেগ হয় অর্থাৎ স্বপ্নদোষ হয়, তবে তার প্রথম স্বপ্নদোষের জন্য গোসল ওয়াজিব; কিন্তু পরে যে স্বপ্নদোষ হবে তাতে তার ওপর গোসল ফরয হবে।

৩। মাসয়ালা : মৃত মুসলমানকে গোসল দেয়া জীবিত মুসলমানদের ওপর ফরযে কেফায়া।

.

সুন্নাত গোসল

 ১। মাসয়ালা : জুম’আর নামাযের জন্য (২) ঈদের নামাযের জন্য (৩) হজ্জ অথবা মরার এহরাম বাঁধার জন্য, (৪) আরাফার ময়দানে উপস্থিতির জন্য গোসল সুন্নাত।

.

মুস্তাহাব গোসল

 ১। মাসয়ালা : ইসলাম গ্রহণের জন্য গোসল মুস্তাহাব (যদিও সে সম্পূর্ণ পবিত্র অবস্থায় থাকে)।

২। মাসয়ালা : ছেলে বা মেয়ে যদি বালেগ হওয়ার কোন চিহ্ন প্রকাশিত না হয়, অথচ পনের বছর পূর্ণ হয়ে যায়, তবে পনের বছর পূর্ণ হওয়া মাত্র বালেগ ধরা হবে, তখন তার গোসল করা মুস্তাহাব।

৩। মাসয়ালাঃ মৃত ব্যক্তিকে যারা গোসল দেবে গোসল দেয়ার পরে গোসলদাতাদের গোসল করা মুস্তাহাব।

৪। মাসয়ালা : শবে বরাত এবং

৫। মাসয়ালা : শবে ক্বদরে গোসল করা মুস্তাহাব।

৬-৭। মাসয়ালা : মদীনা শরীফ এবং মক্কা শরীফে প্রবেশ করার সময় গোসল করা মুস্তাহাব।

৮। মাসয়ালা : মোযদালেফায় ওকুফের সময় ১০ই যিলহজ্জ সুবহে সাদেকের পর গোসল করা মুস্তাহাব।

৯। মাসয়ালা : হজ্জের তাওয়াফের জন্য এবং

১০। মাসয়ালা : হজ্জের সময় মিনায় রমী করার জন্য।

১১। মাসয়ালা : সূর্য গ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ এবং বৃষ্টির নামায আদায় করার জন্য গোসল করা মুস্তাহাব।

১২। মাসয়ালা : বিপদকালে নামায আদায়ের জন্য।

১৩। মাসয়ালা : তওবার নামায আদায়ের জন্য এবং সফর থেকে বাড়ী পৌঁছে গোসল করা মুস্তাহাব।

১৫। মাসয়ালা : কোন ভাল মাহফিলে যোগদান করার সময় গোসল করা মুস্তাহাব।

১৬। মাসয়ালা : নতুন পোশাক পরিধান করার পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব।

১৭। মাসয়ালাঃ যদি কারও প্রাণদণ্ডের আদেশ হয়, তবে তার পক্ষে গোসল করে দু রাকাত নামায আদায় করা মুস্তাহাব।

.

গোসলহীন অবস্থার মাসয়ালা

১। মাসয়ালা : যার ওপর গোসল ফরয হয়েছে জন্য তার কোরআন শরীফ ধরা, পড়া, মসজিদে ঢোকা হারাম। অবশ্য যদি কারও মসজিদে পা রাখার একান্ত প্রয়োজন হয়, যেমন হয়ত মসজিদের হুজরা হতে বের হওয়ার রাস্তাই মসজিদের ভেতর দিয়ে, এ ছাড়া অন্য কোন রাস্তা নেই, অথবা কেউ অন্য কোথাও জায়গা না পেয়ে ঠেকাবশতঃ মসজিদে শয়ন করেছিল, এমতাবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে তখন সাথে সাথে তায়াম্মুম করে বের হয়ে গোসল করবে।

২। মাসয়ালাঃ ঈদগাহ্, খানক্বাহ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ইত্যাদিতে বিনা গোসলে প্রবেশ করা অথবা কোন মুসলমানের সাথে দেখা করা বা মোসাফাহা করা হারাম নয়।

৩। মাসয়ালা : হায়েয-নেফাস অবস্থায় সহবাস করা হারাম এবং স্বামীর জন্য স্ত্রীর নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত দেখা বা ধরা হারাম।

৪। মাসয়ালাঃ হায়েয-নেফাস অবস্থায় স্ত্রীর হাতের পানি পাক। এক সাথে আহার করা বা এক গ্লাসে পানি পান করা, একত্রে ভাত খাওয়া বা চুম্বন করা, কাপড়ের ওপর দিয়ে আলিঙ্গন করা নাভির ওপরের শরীর বা হাঁটুর নীচের শরীর স্পর্শ করা বা কাপড় এঁটে পরিধান করে এক বিছানায় শয়ন করা নাজায়েয নয়; বরং নাজায়েয মনে করা পাপ। এ অবস্থায় আল্লাহর কালাম তেলাওয়াত করা নাজায়েয; কিন্তু কালেমা শরীফ বা দুরূদ শরীফ পাঠ করা, আল্লাহ পাকের যিকির করা নাজায়েয নয়।

৫। মাসয়ালা : কেউ ঘুম থেকে ওঠে যদি পুরুষাঙ্গ উত্তেজিত অবস্থায় পায় এবং স্বপ্নদোষ হয়ে শুধু পেশাবের রাস্তার অগ্রভাগে কিছু মযী পাওয়া যায়, কাপড়ে অথবা শরীরে কোন দাগ বা ভেজা পাওয়া না যায়, তবে গোসল ফরয হবে না। আর যদি বস্ত্রে বা দেহে দাগ বা ভেজা দেখা যায় তবে গোসল ফরয হবে।

৬। মাসয়ালা : স্বামী-স্ত্রী দু’জনে পরিষ্কার বিছানায় শুয়েছিল। ঘুম থেকে ওঠে বিছানায় দাগ দেখতে পেলো; কিন্তু কারও স্বপ্নদোষের কথা স্মরণ নেই বা কার মণী তাও ঠিক করতে পারছে না, এমতাবস্থায় উভয়ের গোসল করতে হবে।

৭। মাসয়ালা : ফরয গোসল করার সময় যদি বেপর্দা হওয়া ছাড়া কোন পথ না থাকে তবে পুরুষ সমাজে পুরুষ এবং নারী সমাজে নারী বেপর্দা হয়ে গোসল করবে। কিন্তু পুরুষ সমাজে  নারী এবং নারী সমাজে পুরুষ উলঙ্গ হবে না, তখন তায়াম্মুম করবে।’

.

তায়াম্মুম–তায়াম্মুমের মাসয়ালা

১। মাসয়ালা : কেউ হয়ত এমন মাঠে এসে পড়েছে যে, কোথাও পানি আছে বলে সে মোটও জানে না এবং কোন লোকও পায় না যে, জিজ্ঞেস করবে, এ অবস্থায় তায়াম্মুম করে নামায আদায় করবে। আর যদি কোন লোক পাওয়া যায় আর সে বলে দেয় যে, শরয়ী এক মাইলের ভেতর পানি আছে এবং মনেও সায় দেয়, সে সত্য বলেছে, অথবা কোন লোক পাওয়া যায়নি, কিন্তু কোন লক্ষণে সে নিজেই বুঝতে পারল, শরয়ী এক মাইলের ভেতর কোথাও অবশ্যই পানি আছে, তবে এ অবস্থায় সে পানি এতদূর পর্যন্ত খোঁজ করতে যাবে, যাতে তার নিজের ও সাথীদের কোন প্রকার কষ্ট না হয়। খোঁজ না করে তায়াম্মুম করা জায়েয হবে না যদি সাথীদের কষ্ট হয় তবে খোজা ওয়াজিব নয়। আর যদি দৃঢ় আস্থা থাকে যে, শরয়ী এক মাইলের ভেতর পানি আছে, তবে (সাথীদের কষ্ট হলেও) সে স্থানে গিয়ে পানি আনা ওয়াজিব। ইংরেজী এক মাইল এবং এক মাইলের আট ভাগের এক ভাগ মিলে শরয়ী এক মাইল হয়।-(মুন্‌ইয়া)

২। মাসয়ালাঃ পানির খবর পাওয়া গেল, কিন্তু শরয়ী মাইল থেকে দূরে, তবে সে স্থান থেকে পানি এনে ওযূ করা ওয়াজিব নয়; বরং তায়াম্মুম করা জায়েয।

৩। মাসয়ালা : কেউ জনবসতি থেকে এক মাইল দূরে আছে। যদি সে এক মাইলের কমে কোথাও পানি না পায় তবে তার জন্যও তায়াম্মুম করা দুরুস্ত হবে, সে মুসাফির হোক বা না হোক।

ও! মাসয়ালা : রাস্তায় কূপ আছে, কিন্তু কূপ থেকে পানি উঠাবার জন্য সাথে কিছু নেই, কোথাও চেয়েও পাওয়া গেল না; এ ক্ষেত্রে তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে।

৫। মাসয়ালাঃ পানি অছে, কিন্তু এত সামান্য যে, একবার হাত, মুখ ও উভয় পা ধোয়া যায়, তবে তায়াম্মুম করা জায়েয হবে না; একবার করে ওই সব অঙ্গ ধৌত করবে এবং মাথা মাছহে করবে। কুলি ইত্যাদি ওযূর সুন্নতগুলো ছেড়ে দেবে; আর যদি এ পরিমাণ পানিও না হয় তবে তায়াম্মুম করবে।

৬। মাসয়ালা : ওযূ গোসল করলে রোগ বাড়ে অথবা দেরীতে আরোগ্য লাভের আশংকা থাকে। এ অবস্থায় তায়াম্মুম করা দুরুস্ত হবে। আর যদি শীতল পানি ক্ষতির কারণ হয় আর গরম পানি ক্ষতি না করে, তবে গরম পানি দিয়ে ওযূ-গোসল ওয়াজিব। এ অবস্থায় গরম পানি পাওয়া না গেলে তবেই তায়াম্মুম করা জায়েয হবে।

৭। মাসয়ালা : যদি পানি নিকটে থাকে অর্থাৎ নিশ্চিতভাবে জানা থাকে যে, শরয়ী এক মাইলের মধ্যে পানি আছে, তবে তায়াম্মুম জায়েয হবে না। সেখান থেকে পানি এনে ওযূ করা ওয়াজিব। লোকলজ্জার খাতিরে বা পর্দার জন্য পানি আনতে না গিয়ে তায়াম্মুম করা দুরুস্ত নয়। শরীয়তের নির্দেশ ছুটে যায়, এমন পর্দা হারাম; বরং বোরকা পরিধান করে বা চাদর দ্বারা সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে পানি এনে ওযূ করা ওয়াজিব। কিন্তু মানুষের সামনে বসে ওযূ করবে না, মুখ হাতও খোলা জায়েয হবে না।

৮। মাসয়ালা : যতক্ষণ পর্যন্ত পানি দিয়ে ওযূ করা না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত তায়াম্মুমই করতে থাকবে এতে যতদিনই হোক না কোনরূপ সন্দেহ করবে না। ওযূ গোসল দ্বারা যেভাবে পাক হওয়া যায়, তদ্রুপ তায়াম্মুম করেও পাক হওয়া যায়। তায়াম্মুমে ভালভাবে পাক হওয়া যায় না এমন ভাববে না।

৯। মাসয়ালা : যদি পানি বিক্রি হয় এবং ক্রয় করার মূল্য না থাকে, তবে তায়াম্মুম জায়েয হবে। যদি মূল্য থাকে, আর পথের আবশ্যক খরচেরও অভাব না হয়, তাহলে পানি ক্রয় করে ওযূ করা ওয়াজিব, তায়াম্মুম জায়েয হবে না। অবশ্য যদি এত বেশি মূল্য চায় যে, এত মূল্যে কেউ ক্রয় করে না, সেক্ষেত্রে তায়াম্মুম করা দুরুস্ত হবে, পানি খরিদ করা ওয়াজিব নয়। যদি কেরায়া ইত্যাদি পথখরচের অতিরিক্ত অর্থ না থাকে, তবে কেনা ওয়াজিব নয়, তায়াম্মুম জায়েয হবে।

১০। মাসয়ালা : শীতের দরুন যদি বরফ জমে এবং গোসল করলে মৃত্যুর বা রোগ বেড়ে যাওয়ার পূর্ণ আশংকা থাকে এবং শরীর গরম করার জন্য লেপ ইত্যাদি কোন প্রকার গরম কাপড় না থাকে, এ অবস্থায় তায়াম্মুম করা জায়েয হবে।

১১। মাসয়ালা : যদি কারও অর্ধেকের চেয়ে বেশি শরীরে জখম থাকে বা বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়, তবে তার জন্য গোসল ওয়াজিব নয়, তায়াম্মুম জায়েয।

১২। মাসয়ালা : কেউ তায়াম্মুম করে নামায পড়েছে, অথচ নিকটেই পানি ছিল, কিন্তু সে আদৌ জানতে পারেনি, তার তায়াম্মুম এবং নামায দুই দুরুস্ত হয়েছে, তার পুনরায় নামায পড়তে হবে না।

১৩। মাসয়ালা : সফরে যদি অন্য কারও নিকট পানি থাকে, তবে নিজে চিন্তা করে দেখবে, যদি এক্কীন হয় যে, চাইলে দিতে পারে, তবে না চেয়ে তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে না। আর যদি মনে হয়, চাইলে দেবে না তবে না চেয়েও তায়াম্মুম করে নামায আদায় করা জায়েয; কিন্তু এ অবস্থায় নামাযের পর চাইলে যদি পানি দেয়, তবে নামায পুনরায় পড়তে হবে।

১৪। মাসয়ালা : পাত্রে বন্ধ যমযমের পানি সাথে থাকলে তায়াম্মুম জায়েয হবে না, পাত্র খুলে ওই পানি দিয়ে ওযূ গোসল করা ওয়াজিব।

১৫। মাসয়ালাঃ সাথে পানি আছে, কিন্তু পথ এমন ধরনের যে, কোথাও পানি পাওয়ার আশা নেই, পানির অভাবে (নিজের বা বাহন জন্তুর) মৃত্যু বা কষ্ট পাওয়ার আশংকা আছে, এমন অবস্থায় ওযূ করবে না, তায়াম্মুম জায়েয হবে।

১৬। মাসয়ালা : গোসলে ক্ষতি করে কিন্তু ওযূতে ক্ষতি করে না, তবে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে। কিন্তু গোসলের তায়াম্মুমের পরে যখন ওযূ ছুটে যাবে, তখন ওযূর পরিবর্তে তায়াম্মুম জায়েয হবে না, ওযূই করতে হবে। যদি গোসলের তায়াম্মুমের আগে ওযূ ভঙ্গ হওয়ার কোন কারণ হয়ে থাকে, তারপর গোসলের তায়াম্মুম করে, তবে এ তায়াম্মুমই গোসল এবং ওযূর বদলে যথেষ্ট হবে।

১৭। মাসয়ালা : তায়াম্মুমের নিয়ম : প্রথমে মনে মনে নিয়ত করবে, আমি পবিত্র হওয়া বা নামায আদায়ের উদ্দেশে তায়াম্মুম করছি। এমন নিয়্যত করে তারপর দুহাত পাক মাটিতে মেরে মুখমণ্ডলে হাত বুলায়ে দেবে। তারপর আবার দুহাত মাটিতে মেরে উভয় হাতের কনুই সমেত বুলিয়ে দেবে। চুড়ি ও বালার ভেতর খুব ভাল করে হাত বুলাবে। সাবধান, এক বিন্দু স্থানও যেন অবশিষ্ট না থাকে; তা হলে তায়াম্মুম হবে না। আংটি খুলে রেখে তায়াম্মুম করবে, যেন কোন স্থান বাকী না থাকে। হাতের আঙ্গুলের মধ্যে খেলাল করবে, এ দুটি কাজ করলেই তায়াম্মুম হয়ে গেল।

১৮। মাসয়ালা : মাটির ওপর হাত মেরে হাত ঝেড়ে নেবে, যেন চোখে মুখে মাটি লেগে কদাকার না হয়ে যায়।

১৯। মাসয়ালাঃ যমীন ব্যতীত মাটি জাতীয় অন্যান্য বস্তুর ওপরও তায়াম্মুম করা জায়েয। আছে; যেমন, মাটি, বালু, পাথর, বিলাতী মাটি, পাথুরে চুন, হরিতাল, সুরমা, গেরুমাটি ইত্যাদি। কিন্তু যদি মাটি জাতীয় বস্তু না হয় তবে তার ওপর তায়াম্মুম করা জায়েয নয়; যেমন সোনা, রূপা, রাং, গেহু, কাঠ, কাপড় এবং অন্যান্য শস্য ইত্যাদি। কিন্তু যদি এ সব বস্তুর ওপর মাটি জমে থাকে, তবে অবশ্য মাটির কারণে তায়াম্মুম জায়েয হবে।

২০। মাসয়ালা : যে বস্তু আগুনে দিলে জ্বলে না, গলে না, তা মাটি জাতীয়। তার ওপর তায়াম্মুম দুরুস্ত আছে। যে বস্তু জ্বলে ছাই হয় বা গলে যায়, তার ওপর দুরুস্ত নয়। ছাইয়ের ওপর তায়াম্মুম জায়েয নয়।

২১। মাসয়ালাঃ তামার পাত্র, বালিশ বা গদি ইত্যাদির ওপর তায়াম্মুম জায়েয নয়। কিন্তু যদি এ সব জিনিসের ওপর এ পরিমাণ ধুলা জমে যে, হাত মারলে বেশ ধুলা উড়ে এবং হাতে কিছু ধুলা ভালরূপে লেগে যায়, তবে অবশ্য তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে। আর যদি হাত মারলে যৎসামান্য ধুলা উড়ে তবে তার ওপর তায়াম্মুম দুরুস্ত নয়। পানি পূর্ণ থাকুক বা খালি থাকুক, মাটির কলস বা মাটির গোটা বদনার ওপর তায়াম্মুম জায়েয আছে, কিন্তু মাটির পাত্রের ওপর রং বা বার্নিশ করা হলে তার ওপর তায়াম্মুম জায়েয হবে না।

২২। মাসয়ালা : পাথরের ওপর ধুলা মাত্রও যদি না থাকে, তথাপি তার ওপর তায়াম্মুম জায়েয আছে; বরং যদি পানি দ্বারা উত্তম রূপে ধুয়ে তার ওপর তায়াম্মুম করে তবুও তায়াম্মুম জায়েয হবে। হাতে ধুলা লাগা জরুরী নয়। ধুলা থাকুক বা না থাকুক, পাকা ইটের উপরও তায়াম্মুম দুরুস্ত আছে।

৩। মাসয়ালাঃ কাদা দিয়ে তায়াম্মুম করা জায়েজ বটে; কিন্তু ভাল নয়। যদি কোন স্থানে কাদা ড়া অন্য কোন বস্তু পাওয়া না যায়, তবে কাপড়ে কাদা মেখে দিবে, কাদা শুকিয়ে যাওয়ার পর তা দিয়ে তায়াম্মুম করবে। কিন্তু নামাযের ওয়াক্ত চলে যেতে থাকলে কাদা হলেও তা দ্বারা তায়াম্মুম করে নামায পড়বে; কিছুতেই নামায ক্বাযা হতে দেবে না।

২৪। মাসয়ালা : মাটিতে পেশাব জাতীয় কোন নাজাসাত পড়েছিল, কিন্তু রৌদ্রে শুকিয়ে গেছে এবং দুর্গন্ধও চলে গেছে, এ মাটি পাক হয়ে গেছে। তার ওপর নামায পড়া যাবে; কিন্তু ওই মাটি দ্বারা তায়াম্মুম জায়েয হবে না। যদি জানা থাকে যে, পেশাব পড়েছিল তবেই এ হুকুম, নতুবা সন্দেহ করবে না।

২৫। মাসয়ালাঃ ওযূর বদলে যেমন তায়াম্মুম দুরুস্ত, তদরূপ ওযর বশতঃ গোসলের পরিবর্তেও তায়াম্মুম দুরুস্ত। যে স্ত্রীলোক হায়েয বা নেফাস হতে পাক হয় আর ওযরবশতঃ গোসল করতে না পারে, তার জন্যও তায়াম্মুম জায়েয আছে। ওযূর তায়াম্মুম এবং গোসলের তায়াম্মুম একই নিয়মে করতে হয়; এতে কোন পার্থক্য নেই।

২৬। মাসয়ালা : কেউ যদি কাকেও শিক্ষা দেবার উদ্দেশে তায়াম্মুম করে, কিন্তু নিজের তায়াম্মুমের ইচ্ছা ছিল না, কেবল অন্যকে শিক্ষা দেয়াই উদ্দেশ্য এতে তায়াম্মুম হবে না। কেননা, তায়াম্মুম ঠিক হওয়ার জন্য মনে মনে তায়াম্মুমের নিয়ত করা আবশ্যক। নিয়্যত না করলে তায়াম্মুম হয় না। যেহেতু নিজের তায়াম্মুমের নিয়্যত করা হয়নি, উদ্দেশ্য ছিল অন্যকে শেখানো, সুতরাং তার তায়াম্মুম হয়নি।

২৭। মাসয়ালাঃ আমি পাক হওয়ার বা নামায আদায়ের উদ্দেশে তায়াম্মুম করছি, কেবল এতটুকু অন্তরে পোষণ করলেই তায়াম্মুম হয়ে যাবে; গোসলের তায়াম্মুম বা ওয়ূর তায়াম্মুম করছি এরূপ বলার প্রয়োজন নেই।

২৮। মাসয়ালা : যদি কোরআন শরীফ স্পর্শ করার জন্য কেউ তায়াম্মুম করে, তবে সে তায়াম্মুম দ্বারা নামায আদায় করা জায়েয হবে না। এক ওয়াক্ত নামাযের তায়াম্মুম দ্বারা অন্য ওয়াক্তের নামায আদায় করা জায়েয এবং কোরআন শরীফ স্পর্শ করাও জায়েয।

২৯। মাসয়ালা : একই তায়াম্মুমে ফরয গোসল ও ওযূ দুয়েরই কাজ হয়; পৃথক পৃথক তায়াম্মুম করার প্রয়োজন হয় না।

৩০। মাসয়ালা : কেউ উল্লিখিত নিয়মানুসারে তায়াম্মুম করে নামায আদায়ের পর যদি পানি পায় এবং নামাযের ওয়াক্ত তখনও বাকী থাকে, তবুও ঐ নামায আর পুনরায় পড়তে হবে না। তায়াম্মুমেই নামায হয়ে গেছে।

৩১। মাসয়ালা : পানি শরয়ী এক মাইল থেকে দূরে নয়; কিন্তু নামাযের সময় কম, পানি আনতে গেলে সময় চলে যাবে, তবুও তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে না, পানি এনে ওযূ করে নামাযের ক্বাযা আদায় করবে।

৩২। মাসয়ালাঃ পানি থাকা অবস্থায় কোরআন শরীফ ধরার জন্য তায়াম্মুম করা দুরুস্ত নয়।

৩৩। মাসয়ালাঃ সম্মুখে যদি পানি পাওয়ার আশা থাকে তবে প্রথম ওয়াক্তে নামায না পড়ে মোস্তাহাব ওয়াক্ত পর্যন্ত পানির অপেক্ষা করা উত্তম; কিন্তু অপেক্ষা করতে করতে মাকরূহ ওয়াক্ত যেন এসে না পড়ে; আর যদি তায়াম্মুম করে প্রথম ওয়াক্তেও নামায আদায় করে নেয় তবুও জায়েয।

৩৪। মাসয়ালা : পানি কাছেই, কিন্তু পানি আনতে গাড়ি থেকে নামলে গাড়ী ছেড়ে দেয়ার আশংকা রয়েছে, তবে তায়াম্মুম দুরুস্ত হবে; তদ্রপ সাপ, বাঘ ইত্যাদি হিংস্র জন্তুর ভয়ে পানি আনা সম্ভব না হলে তায়াম্মুম জায়েয হবে।

৩৫। মাসয়ালাঃ মালপত্রের সাথে পানি ছিল কিন্তু মনে ছিল না; তায়াম্মুম করে নামায আদায়ের পর পানির কথা মনে হলো, এ অবস্থায় নামায পুনরায় পড়া ওয়াজিব নয়।

৩৬। মাসয়ালা : যে সকল কারণে ওযূ ভঙ্গ হয় সে সব কারণে তায়াম্মুমও ভঙ্গ হয়। তাছাড়া পানি পাওয়া গেলেও তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়। এভাবে তায়াম্মুম করে চলতে চলতে শরয়ী এক মাইল হতে অল্প দূরে পানি পাওয়া গেলে, তখন তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে।

৩৭। মাসয়ালা : ওযূর পরিবর্তে তায়াম্মুম করে থাকলে পরে ওযূর পরিমাণ পানি পেলে (অর্থাৎ এ পরিমাণ পানি যাতে শুধু ওযূর ফরযগুলো আদায় হতে পারে) ওই তায়াম্মুম ছুটে যাবে; আর গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে থাকলে গোসলের পরিমাণ পানি পেলে (অর্থাৎ এ পরিণ পানি যাতে শুধু গোসলের ফরযগুলো আদায় হতে পারে) ওই তায়াম্মুম ছুটে যাবে। যদি এ পরিমাণ অপেক্ষা কম পানি পাওয়া যায় তবে তাতে তায়াম্মুম ভঙ্গ হবে না।

৩৮। মাসয়ালা : পথে পানি পাওয়া গেছে, কিন্তু সে আদৌ জানতে পারেনি, এখানে পানি আছে, তবে তার তায়াম্মুম ভঙ্গ হবে না। আবার পথে পানি পাওয়া যায়, দেখাও যায়, জানাও যায়, কিন্তু গাড়ী হতে নামা যায় না; তাতেও তায়াম্মুম ভঙ্গ হবে না।

৩৯। মাসয়ালা : যে রোগের কারণে তায়াম্মুম করা হয়েছিল যখন সে রোগ ভাল হবে অর্থাৎ, ওযূ-গোসলে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই; তখন তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং ওযূ-গোসল করা ওয়াজিব হবে।

৪০। মাসয়ালাঃ পানি না পেয়ে তায়াম্মুম করেছিল, পরে এমন রোগ দেখা দিয়েছে যে, পানি ব্যবহার করতে পারে না, এখন পানি পাওয়া গেলে পূর্বের তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং নতুন তায়াম্মুম করতে হবে।

৪১। মাসয়ালাঃ প্রয়োজন হওয়ায় গোসল করেছে, সামান্য অংশ শুকনা রয়েছে, এমন অবস্থায় পানি শেষ হয়ে গেছে; আর পানি পাওয়া যাচ্ছে না, তবে সে পাক হয়নি, এখন গোসলের তায়াম্মুম করতে হবে, পরে যখন পানি পাবে তখন ঐ শুনা স্থানটুকু ধুয়ে নিলে চলবে, সম্পূর্ণ শরীর ধুতে হবে না।

৪২। মাসয়ালাঃ যদি এমন সময় পানি পায় যে, ওযূও ভঙ্গ হয়েছে, তবে পূর্বের শুকনা স্থান ধুবে, আর ওযূর বদলে তায়াম্মুম করবে যদি পানি এত অল্প হয় যে, ওযূ করা সম্ভব, কিন্তু ওই শুষ্ক স্থানটুকু ধোয়া, যাবে না, তবে সে পানি দিয়ে ওযূ করবে এবং শুকনা স্থানের জন্য তায়াম্মুম কার প্রয়োজন নেই; পূর্বের তায়াম্মুমই ঠিক আছে।

৪৩। মাসয়ালা : কারও হয়ত পরনের কাপড় বা শরীর নাপাক, আর ওযূও নেই, কিন্তু পানি আছে কম, তবে ঐ পানি দিয়ে কাপড় এবং শরীর পাক করবে আর ওযূর জন্য তায়াম্মুম করবে।

৪৪। মাসয়ালা : যে কারণে তায়াম্মুম করেছে তা যদি মানুষের পক্ষ থেকে হয়, যেমন, যদি জেলখানায় পানি দেয়া না হয় বা কেউ বলে, যদি তুই ওযূ করিস তবে তোকে হত্যা করব এ অবস্থায় তায়াম্মুম করে নামায আদায় করবে, কিন্তু পরে যখন ওই কারণ চলে যাবে, তখন আদায়কৃত সকল নামায পুনরায় পড়তে হবে; আর যদি কারণ আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, তবে আদায়কৃত নামায পুনরায় পড়তে হবে না।

৪৬। মাসয়ালাঃ একই জায়গার মাটিতে বা একই ঢেলায় কয়েকজনের তায়াম্মুম করা দুরুস্ত আছে।

৪৭। মাসয়ালা : যদি ওযূর জন্য পানি কিংবা তায়াম্মুমের জন্য মাটিও না পায়, যেমন, রেলগাড়ীতে বা জেলখানায় কেউ পানিও পায় না পাক মাটিও পায় না, সে বিনা ওযূতে এবং বিনা তায়াম্মুমেই নামায পড়বে, তবুও ওয়াক্তের নামায ছাড়বে না; কিন্তু পরে যখন পানি পাবে তখন ঐ নামায পুনরায় পড়বে।

৪৮। মাসয়ালা : মুস্তাহাব ওয়াক্তের শেষ পর্যন্ত পানি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা ভাল। যেমন, মুস্তাহাব ওয়াক্তের শেষ পর্যন্ত কূপের পানি বের করার জন্য পাত্র বা রশি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, অথবা রেলগাড়ী মুস্তাহাব ওয়াক্তের ভেতর এমন স্টেশনে পৌঁছবে যেখানে পানি পাওয়ার আশা আছে, এমন অবস্থায় মুস্তাহাব ওয়াক্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করে নামায আদায় করা উত্তম।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *