৬. মহাগোলমাল হট্টগোল

আমরা জনগণরা শুনতে পাচ্ছি মহাগোলমাল হট্টগোল এমনকি মারামারি ছিড়াছিড়ি চলতেছে খোজারাজবংশে–এই বংশটা বুঝি টিকলো না দাঁড়াইতে পারলো না এই বংশটা বুঝি নির্বংশ হইলো; এই বংশে ভাঙনের চড়চড় ধপাশ ধুম ক্যারৎ ঠাশঠাশ নানা শব্দ হচ্ছে, ওই শব্দ চট্টগ্রাম রংপুর দিনাজপুর ঝালকাঠি রাঙ্গুনিয়া পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে। শুনতে পাই এই দল ভেঙেচুরে খানখান হয়ে পড়ছে ভেতর থেকে বাইরে; মহাজননেতার মহীয়সী স্ত্রী গুলবদন বেগম, বিশ্বাস করার মতো গুজব ছড়িয়ে পড়ছে রাস্তাঘাটে, খোঁয়াড়ে গিয়ে মহাজননেতার সঙ্গে দেখা করা বন্ধ করে দিয়েছেন; এইভাবেই তিনি কম যাচ্ছিলেন, এখন যাওয়া বন্ধ; সত্য গুজব শুনছি মহাজননেতাই তাঁকে ধমক দিয়ে নিষেধ করে দিয়েছেন। কারণ নাকি বেগম মর্জিনা আবদুল্লার সাথে গুলবদন বেগম প্রায় চুলোচুলি শুরু করেছিলেন, গালে নখ লেগে অনেকখানি ছিঁড়ে গেছে বেগম মর্জিনার, যা মহাজননেতার মতো হৃদয়বান মানুষের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব হয় নাই। মহাজননেতা আর তার স্ত্রী অনেক বছর ধরে ফ্যামিলি ভ্যালুজ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে আসছিলেন, যেমন কমবেশি আমরা সবাই টিকিয়ে রাখার সাধ্যসাধনা করে যাচ্ছি, এখন বুঝি আর ওই ফ্যামিলি ভ্যালুজ টিকলো না। কিন্তু পলিটিক্সে এইটা খুবই দরকার। আমরা গোপনে আড়ালে আবডালে যাই করি না কেননা বাইরে আমাদের ফ্যামিলি ভ্যালুজ রক্ষা করা অত্যন্ত দরকার, সমাজসংসার এইটা চায়; ফ্যামিলি হচ্ছে আসল রাষ্ট্র, আর এইটাকে যদি চুনকাম করে না রাখি তাহলে বড়ো রাষ্ট্রকে কীভাবে বছরের পর বছর চুনকাম করবো? আমরা আমাদের গরিব মানুষের মনের কথা যতোটা জানি তাতে মনে হয় আমরা গরিবরা সম্ভবত বেগম মর্জিনা আবদুল্লার আর গুলবদন বেগম কাউকেই পছন্দ করি না; তাদের মধ্যে গোলমাল চুলোচুলি গাল কাটাকাটি হলে চারদিকের দুঃখের মধ্যেও বেশ একটা মজা পাই। ফ্যামিলি ভ্যালুজের চুলোচুলিতে আমরা মজা পেলেও মহাজননেতা যে মজা পাচ্ছেন না, তা আমরা বুঝতেই পারছি; খোয়াড়ের ভেতরেও তাকে হয়তো কুঁকড়ে থাকতে হচ্ছে। বাইরে তো আর যাই থাক সমাজ সংসার রাষ্ট্র আছে। তাই তিনি অভ্যাসমতো প্রায় একটি সামরিক নির্দেশ জারি করে ফেলেছেন–গুলবদন বেগমকে খোঁয়াড়ে দেখা করতে যেতে নিষেধ করেছেন। তবে ভেতরের ভাঙার থেকেও মারাত্মক হচ্ছে তার রাজবংশ বাইরেও ভেঙে পড়ছে, অনেকেই রাজবংশ ছেড়ে যাওয়ার জন্যে নানা নীতিমালা তৈরি করছেন, অনেকখানি চলে গেছেন অনেকেই; মহাজননেতা আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। তবে তিনি বিশ্বাস করেন মনোয়ার হোসেন মোল্লা আর মর্জিনা আবদুল্লাকে, আমরা জনগণরা মনে করতেছি এই দুইজনকে নানা কারণেই বিশ্বাস করা যায় সব মানুষ সব সময় বেইমানি করতে পারে না; এই দুইজনেরই ভবিষ্যৎ আছে–মনোয়ার হোসেন মোল্লার গাড়িতে পতাকা ওড়ার ইশারা আছে, আর মর্জিনা আবদুল্লার ইশারা অত্যন্ত নিবিড় অন্তরঙ্গ।

তাঁদের ভাঙাচোরা রাজবংশেরও বেঠক বসে, নদীতে পড়লে কি আমরা শ্মশানের পোড়া চলা ধরে ভাসতে চাই না? তাদের বৈঠকে প্রধান হচ্ছেন মনোয়ার হোসেন মোল্লা; এইটা বৃদ্ধ শ্রদ্ধেয় ও অশ্রদ্ধেয় শাহ আলম চৌধুরীর জন্যে বিশেষ কষ্টের, কিন্তু তিনি এখনও কষ্ট করে এই কষ্ট সহ্য করে চলছেন।

মনোয়ার মোল্লা বলেন, এইবার ইলেকশনে আমাগো একটাই প্রিন্সিপাল, সেইটা হচ্ছে সারভাইভের প্রিন্সিপাল। আমরা সারভাইভ করতে পারি যদি আমাগো মহাজননেতা সারভাইভ করেন, তিনি থাকলেই আমরা আছি। এইটা সব সময় মনে রাখতে হবে, ভোললে চলবো না। এইটা আমাগো বাচনের প্রিন্সিপাল।

মনোয়ার মোল্লাকে বেশ প্রফুল্ল দেখায়; মনে হয় তারা সারভাইভ না করলেও তিনি সারভাইভ করবেন। তিনি খুব ফিট আছেন, এমন ফিট আছেন ইংরেজিতে যাকে আমরা ফিটেস্ট বলি।

শাহ আলম চৌধুরী বলেন, ন্যাতা সারভাইভ করুক এইটা ত আমরা সবাই চাই, তার সারভাইভ করা দরকার, কিন্তু কথা হচ্ছে আমাগো নিজেগোও সারভাইভ করতে হইবো। সেই কথাও ভাবতে হইবো আমাগো।

মর্জিনা আবদুল্লা একটু বিষণ্ণ ও রাগান্বিত হয়ে ওঠেন।

মর্জিনা আবদুল্লা বলেন, মহাজননেতা না থাকলে আমরা কে? আমাদের কে ভ্যালু দেয়? তিনি যখন রাজা আছিলেন তখন আমাদের অবস্থা কেমন ছিলো, আর এখন কেমন। তিনি বাচলেই আমরা বাচবো এইটা মনে রাখতে হবে। আমাদের এই ধরনের কথা বলা বেইমানি।

ইমাজউদ্দিন ঝন্টু বলেন, এইটা কোনো তর্কের সাবজেক্ট না, মহাজননেতাকে লইয়া ডিবেট চলে না, তিনি সব ডিবেটের উর্ধে, তবে তারে ছাড়ানের জইন্যে যাদের সঙ্গে প্যাক্ট করবো দেখতে হইবো তারা আমাগো কয়জনরে মন্ত্রী করবো।

মনোয়ার মোল্লা বলেন, সেইটা ডিপেন্ড করে আমরা ইলেকশনে কেমন করি, কয়টা সিট পাই, বারগেইন করার মতো পাওয়ার আমাগো থাকে কিনা? পলিটিক্সে বারগেইন করার জইন্যে স্ট্রেংথ লাগে আমরা জানি।

ব্যারিস্টার শাহেদ মিয়া বেশ দেরি করে এসেছেন, তাঁকে বেশ চঞ্চল দেখাচ্ছে।

শাহেদ মিয়া বলেন, তাইলে কি আমরা জনগণবংশরেই সাপোর্ট করতে যাচ্ছি। এইটা আবার একটু ভাইব্যা দেখা উচিৎ।

মনোয়ার মোল্লা বলেন, লাস্ট মোমেন্ট পর্যন্ত এইটা আমরা ভাববো, এইবার তাগোই পসিবিলিটি বেশি পাওয়ারে যাওয়ার, সেইজইন্যে তাগো সঙ্গে আইজও আছি, লাস্ট মোমেন্ট কি হবে তা আল্লায় জানে।

শাহেদ মিয়া বলেন, ম্যাডাম গুলবদন বেগমের পছন্দ অন্য রকম, তিনি শক্তির উ ৎসআলাদেরই প্রেফার করেন।

মর্জিনা আবদুল্লা এইবার পুরোপুরি রেগে ওঠেন, পারলে তিনি ব্যারিস্টারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তেন, অন্তত সবগুলো নখ তাঁর দুই গালে ঢুকিয়ে দিতেন।

মর্জিনা আবদুল্লা বলেন, তার পছন্দে অপছন্দে কিছু যায় আসে না, শি ইজ নট ইন দি পার্টি, শি ইজ নট আওয়ার ডিসিশন মেকার। তার নামও তোলবেন না, মহাজননেতা বলে দিয়েছেন সে আর নেই, শি ইজ জিরো।

মনোয়ার মোল্লা বলেন, এইবার পঞ্চাশটা সিট যদি পাই তাইলেই আমরা দরাদরি করতে পারবো।

শাহেদ মিয়া জিজ্ঞেস করেন, আমাদের কয়জনরে তারা মিনিস্টার করবো এইটা ক্লিয়ার করে নিতে হবে, আমরা কয়েকজনে মিনিস্টার হতে চাই। আমরা তাদের সাপোর্ট দিবো মিনিস্টার করলে, আদারওয়াইজ নট।

মনোয়ার মোল্লা হেসে বলেন, শাহেদভাই মিনিস্টার ত কম হইলেন না, সব মিনিস্ট্রিতেই আপনে বসছেন, সব মিনিস্ট্রর চেয়ারেই আপনের দাগ লাইগ্যা আছে, ভবিষ্যতেও লাগবো, দেখতে হইবো এইবারও আপনারে মিনিস্টার করন যায় কি না, তবে ইলেকশনে আপনারে পাশ করতে হবে।

শাহেদ মিয়া রেগে উঠতে গিয়ে গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করেন।

মর্জিনা আবদুল্লা বলেন, আমাদের মহাজননেতা ইজ এ ম্যান অফ প্রিন্সিপাল, তিনি তার নীতিতে চিরকাল ঠিক থাকেন, এই জইন্যেই তিনি এখন ওইখানে আছেন, নীতি থিকা মহাজননেতা কখনো সইরা যান না, এইবারও যাইবেন না; তিনি যা বলে দিয়েছেন, তাই আমাদের করতে হবে। আমাদের প্রধান কাজ তারে বাইর করে আনা, তাহলে একটা দুইটা না সব মিনিস্টার আমরাই হবে।

মর্জিনা আবদুল্লার কথায় ও ওষ্ঠে অভিজ্ঞতাজাত নিশ্চয়তা ফুটে ওঠে।

শাহেদ মিয়া উঠে দাঁড়ান, বেরোতে বেরোতে বলেন, আমি যাই, আমার কাম আছে, আপনেরা তারে বাইর করে আনেন, দেখেন পারেন কিনা।

মনোয়ার মোল্লা বলেন, ব্যারিস্টার দল ছাড়নের চেষ্টা করছে মাসখানেক ধইর‍্যাই, আইজ বুঝি ছাইরা গেলো। তাতে আমাগো লস নাই, ব্যারিস্টার এইবার পাশ করতে পারবো না, আমি খবর নিয়া দেখছি।

ইমাজউদ্দিন ঝন্টু বলেন, আরো কয়জন বাইর হওনের জইন্যে পা বাড়াইয়া আছে, তারা আইজকাইল দিনরাইত উৎসআলাগো লগে ওঠে বসে।

শাহ আলম চৌধুরী বলেন, পলিটিশিয়ানগো নিজের ভবিষ্যৎ দেখতে হয়, নিজের ফিউচার ঠিক মতন দেইখ্যা সেই মতন কাম করতে যে পারে, সেই খাঁটি পলিটিশিয়ান শাহেদ মিয়া খাঁটি পলিটিশিয়ান, তারে দোষ দিতে পারি না।

তিনি কথাটি বলে গম্ভীর হয়ে চুপ করে থাকেন;তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয় তিনিও নিজের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন।

আমরা কয়েক দিন ধরে দেশ জুড়ে বাঘের গায়ের গন্ধ পাইতে শুরু করছি।

দিনাজপুর না গাইবান্ধা না কাউখালির না কিশোরগঞ্জের এক চাষাভাই এই গন্ধটা প্রথম পায়। শেষ রাতে উঠে হালটের পাশে পাটক্ষেতে হাগতে বসে সে বাঘের গন্ধ পেয়ে হাগা চেপে দৌড়ে ঘরে ফিরে এসে বউরে ঠেলা দিতে দিতে বলে, অই, ওট ওট, বাগ আইছে, অই, ওট।

চাষাভাই কাঁপতে থাকে আর তার বউ ভয় পেয়ে জেগে উঠে বলে, কি কও, কি আইছে? যা ইচ্ছা আহুক।

চাষাভাই বলে, বাগ আইছে, বাগের গন্ধ পাইলাম, ওট।

তার বউ বলে, কোন জায়গায় বাগ? কোন জায়গায় বাগের গন্ধ পাইলা? বাগ আইব কই থিকা?

চাষাভাই বলে, ক্যান, আমি ত অখনও গন্ধ পাইতাছি, তুই পাছ না?

বউ বলে, বাগের গন্ধ কোনখানে? আমি গরুর চনার গন্ধ পাইতাছি।

চাষাভাই বলে, তুই মাইয়ামানুষ, কোনদিন বাগ দেখছ নাই বাগের গায়ের গন্ধ কেমন তা জানবি কেমনে, চনার গন্ধই ত তুই চিনবি। মাইয়ামাইনষের জন্মই হইছে চনায় প্যাট বোঝাই করনের লিগা।

বউ বলে, আমার নাকে সর্দি হইছে লাগে, হেই লিগা খালি চনা চনা গন্ধ পাইতাছি।

চাষাভাই বলে, তুই চনার গন্ধ পাইতাছছ, আর আমি বাগের গন্ধে মইরা যাইতাছি।

বউ বলে, সগলে যে বলে তোমার মাথায় ছিট আছে সেইটা মিছা না।

বউ আবার ঘুমিয়ে পড়ে, কিন্তু ওই চাষাভাই বাঘের গন্ধে আর ঘুমোতে পারে না; সকাল হওয়ার পরও ক্ষেতে যেতে তার ভয় করতে থাকে।

এমন খবর আমরা দেশের নানান জায়গা থিকাই পাইতে শুরু করছি।

আরেক জায়গায় বাচ্চাদের, আহা আমাগো সোনামণিগো, ইস্কুল শুরু হয়েছে, একটি বাচ্চা ওই সময় চিৎকার করে ওঠে, আফা, আমার ডর লাগতেছে, আমার ডর লাগতেছে।

আফা রেগে উঠে বলেন, ক্যান, তর ডর লাগতাছে ক্যান?

বাচ্চাটি বলে, কিয়ের জানি গন্ধ পাইতাছি।

তখন সব বাচ্চাই চিৎকার করে ওঠে, আমাগো ডর লাগতাছে, আমরা গন্ধ পাইতাছি, আমাগো ডর লাগতাছে।

আফা রেগে উঠতে গিয়ে নিজেও গন্ধ পান।

আফা বলেন, সত্যই ত বাগের গন্ধ, মনে হয় বাগ আইছে।

বাচ্চাদের সারা ইস্কুলে চিৎকার কান্নাকাটি শুরু হয়ে যায়, সব দরোজা জানালা বন্ধ করে দেয়া হয়। তাদের চিৎকার শুনে চারপাশ থেকে লোকজন ছুটে আসে।

লোকজন চিৎকার করে বলে, তোমাগো কি হইছে, তোমরা দরজা জানলা আটকাইয়া চিকইর পারতাছ ক্যান, কি হইছে তোমাগো?

বাচ্চাদের চিৎকার আরো বেড়ে যায়।

দুজন আফা এক সময় জানালা খুলে বলেন, আমরা সব বাগের গন্ধ পাইতাছি, মনে হয় বাগ আইছে।

লোকজন চারদিকে তাকিয়ে কোনো বাঘ দেখতে পায় না, গন্ধও পায় না বাঘের; এমনকি কাছে দূরে একটা খট্টাশও তারা দেখতে পায় না।

তারা চিৎকার করে বলে, তোমরা মনে হয় পাগল হইছো, এইহানে বাগ আইবো কোনহান থিকা, দরজা জানলা খোলো।

সব জায়গায়ই যে বাঘের গন্ধ পেতে শুরু করেছি আমরা, তা নয়; কোনো কোনো জায়গায় শুয়োরের গন্ধও পেতে শুরু করেছি আমরা।

ফুলঝুরিয়ার মানুষ কয়েক দিন ধরে শুয়োরের গন্ধ পাচ্ছিলো; প্রথম তারা অবশ্য বুঝতে পারে নি যে ওই গন্ধটা শুয়োরের গায়ের গন্ধ না বোঝার কারণ তো একটাই, তারা কখনো শুয়োরই দেখে নি; তাই তার গায়ের গন্ধ কেমন তারা জানতো না। তারা জানে শুয়োর হারাম, তাই শুয়োরের নাম উঠলেই আমরা সবাই গন্ধ পাই। কয়েক দিন ধরে গন্ধটা বাড়তে থাকে; এবং একজন প্রথম বলে যে গন্ধটা শুয়োরের গায়ের গন্ধ। তখন ফুলঝুরিয়ার মানুষ মাঝেমাঝে বমি করতে থাকে, অনেকে খেতে গিয়ে গন্ধে খাওয়া বন্ধ করে, নানা রকম ঔষধ খেতে শুরু করে তারা। কিন্তু তারা বুঝতে পারে না কোথা থেকে আসতে পারে শুয়োরের গায়ের দুর্গন্ধ, যাতে বমি না করে পারা যায় না।

তারা আশা করছিলো পাবে পবিত্র সুগন্ধ, কিন্তু শুয়োরের গন্ধে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে।

ফুলঝুরিয়ায় রাজাকারবংশের আমির অধ্যাপক আলি গোলাম পদার্পণ করবেন বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে; জনগণ খুবই উদ্দীপ্ত, অনেকে নতুন টুপিও কিনেছে, দিকে দিকে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে তার পবিত্র আগমনের, দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগানো হয়েছে, সোয়াবের কথা ভেবে খুশিতে ভরে উঠতে চাচ্ছিলো লোকজন, কিন্তু তারা শুয়োরের গন্ধ পেতে থাকে। ফুলঝুরিয়ার ঘরবাড়ি বমিতে পিছল হয়ে উঠতে থাকে, পচা টক দুর্গন্ধে ভারি হয়ে ওঠে ফুলঝুরিয়ার বাতাস; মরিচ ধান ধনেপাতা লাউয়ের দিকে তাকালেও মনে হয় তারা বমি করছে।

গন্ধ তাড়ানোর জন্যে তারা বাড়িতে বাড়িতে ধূপ জ্বালাতে শুরু করে।

যেদিন অধ্যাপক আলি গোলাম ফুলঝুরিয়ায় উপস্থিত হন, সেদিন গন্ধটা চরম রূপ ধারণ করে। আলি গোলাম ভাষণ দিতে শুরু করলে লোকজন চিৎকার করে আবেদন

জানাতে শুরু করে, তিনি প্রথম শুনতে পান না।

শুনতে পাওয়ার পর তিনি জিজ্ঞেস করেন, আপনেরা চিৎকার করিছেন কেনো, আপনারা কি আবেদন করিতে চান?

লোকজন বলে, হে হুজুর হে আমির, আমরা শুয়ারের গন্ধ পাইতেছি, গন্ধে টিকতে পারতেছি। আপনে আগে দোয়া পইর‍্যা গন্ধ খ্যাদাইয়া আমাগো  বাঁচান।

তিনি বলেন, আমি কোনো গন্ধ পাইতেছি না।

তারা বলে, হে আমির, আমরা পাইতাছি।

আলি গোলাম সারা বিকেল আর সন্ধ্যা ভরে সকলকে নিয়ে দোয়াদরুদ পাঠ করেন, অনেক দিন ধরে তিনি নিজে দোয়াদরুদ পড়েন না বলে দেখতে পান অনেক দোয়াই তিনি ভুলে গেছেন, তবু তিনি থামেন না; কিন্তু তাতে গন্ধ কমে না, লোকজন বলতে থাকে, হে আমির, আমরা গন্ধ পাইতাছি, আরও দোয়া পড়েন, গন্ধ বাইর‍্যা যাইতাছে। ক্লান্ত হয়ে আলি গোলাম সভা ছেড়ে দলের অফিসে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন–ঘুমোতে পারেন না, জেগে থাকেন।

পরদিন ভোর হওয়ার আগেই তিনি ফুলঝুরিয়া ছেড়ে যান, ঠিক করেন এখানে আর আসবেন না। আরো তিন চার দিন ধরে ফুলঝুরিয়ার মানুষ শুয়োরের গন্ধ পায়; ধীরে ধীরে গন্ধ কমে আসে। তারা আবার শিশুর মুখে শিশুর গন্ধ ধানক্ষেতে ধানের গন্ধ বাড়া ভাতে ভাতের গন্ধ পেতে শুরু করে।

ফুলঝুরিয়ার মানুষ বুঝতে পারে না ওই ক-দিন তারা কেননা পেয়েছিলো অমন দুর্গন্ধ। ওই গন্ধের কথা ভেবে তারা মাঝেমাঝে শিউরে ওঠে, আল্লার কাছে প্রার্থনা করে যাতে ওই গন্ধ তারা আর না পায়।

কিন্তু গন্ধ আমরা কমবেশি পাচ্ছি।

মহাজননেতার প্রিয়তমা মর্জিনা আবদুল্লার সঙ্গে চুলোচুলি রক্তারক্তি আর আর পারিবারিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করার পর বাসায় ফিরেই গুলবদন বেগম পানীয়র বোতল গেলাশ চারপাঁচখানা সেলুলার নিয়ে শক্ত হয়ে বসেন। তাঁর মুখে আমরা জনগণরা সব সময়ই ছোটোবেলায় নানীর কাছে শোনা ডাইনিটার মুখের আদল দেখতে পাই, কাগজে তার ছবি উঠলে পোলাপানরা ছবি দেখে ভয় পায় বলে আমরা সেই দিনকার কাগজ লুকিয়ে রাখি, তবে আল্লায় যারে যেই মুখ দিছে তা নিয়া কথা বলা ঠিক না, আমরা সেই বিষয়ে কথা বলতে চাই না, তবে এই মুহূর্তে তিনিও তার মুখটা দেখলে ভয় পাইতেন। তিনি সেলুলার টিপতে শুরু করেন; কিন্তু আমাগো দেশ এমন দেশ এখানে কাফেরগো দেশ থেকে যা আসে তাই আটকে যায়, খালি পিপপিপ করতে থাকে; তিনি রেগে গোটা দুই সেলুলার ছুঁড়ে ফেলে দেন, বার তিনেক পানীয়তে চুমুক দেন। আহ্, কি সুখকর! তিনি বোধ হয় আর পলিটিকেল ফ্যামিলি ভ্যালুজ টিকিয়ে রাখতে পারছেন না; ওই বদমাইশটারে দেখাইয়া দিতে হবে। ওইটারে খোয়াড়ে চিরকাল আটকাইয়া রাখতে হইব, ওইখান থিকাই অরে বনানী গোরস্থানে পাঠাতে হবে।

উৎসবাদী রাজবংশের রুস্তম আলি পন্টু সাহেবকে তার খুবই দরকার, তার সঙ্গে আলাপ করেই তিনি এখন ছেঁড়াফাড়া কলজেটিতে শান্তি পেতে পারেন; তবে মনে হইচ্ছে রুস্তম আলি পন্টু অইত্যান্ত ব্যস্ত আছেন, তাঁর সেলুলার তিনি আটকাইয়া রাখছেন। সেলুলার আটকাইয়া রাখনের মিনিং কী? তিনি নিজে কখন আটকাইয়া রাখেন? নিশ্চয়ই কারো লগে কোনো গোপন প্যাক্ট করতে বসছে রুস্তম আলি। পলিটিশিয়ানগুলি সবই হারামি, খালি হারামি না হারামির বাচ্চা হারামি, কার লগে যে কি কইব তার ঠিক নাই। মনোয়ার মোল্লার সঙ্গে বসলো না তো? এই ভাবনাটা আসতেই একটানে তিনি গেলাশটি শেষ করে দেন; তারপর টিপতেই অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টুকে পাওয়া যায়।

গুলবদন বেগম বলেন, ভাই, আপনেরে পাওনের থিকা আইজকাইল আল্লারে পাওনও সোজা। এক ঘণ্টা ধইর‍্যা ফোন টিপছি, আপনের ফোন বাজে না।

রুস্তম আলি পন্টু বিনয়ের সঙ্গে বলেন, মাফ কইরা দেন ম্যাডাম, আর গালি দিয়েন না, আপনে যে আমারে খোঁজছেন এইটা আমার ভাইগ্য, একটু পর আমিই আপনেরে রিং করতাম, আপনেরে খুবই দরকার। আপনে আমাগো একজন বড় গার্জিয়ান, ওয়েল-উইশার, আপনেরে আমি কখনোই ভুলি না।

গুলবদন বেগম বলেন, ভাই, আইজকাইল আমারে আর কার দরকার, আপনে পলিটিশিয়ান বইল্যা কথাটা ঘুরাই বললেন, আপনেরেই আমার দরকার। এইটা সত্য খালি পলিটিক্স না, আপনের সঙ্গে আলাপ কইর‍্যা আমি আরাম পাই।

রুস্তম আলি পন্টু বলেন, ম্যাডাম, আমি সত্য কথাই বলতেছি, আপনের লগে আমি পলিটিক্স করি না, সকলের সঙ্গে পলিটিক্স করন যায় না। আপন মাইনষের সঙ্গে আবার পলিটিক্স কি।

গুলবদন বেগম বলেন, আমি ফাইনাল ডিসিশন নিয়া নিছি, সেইটা আপনেরে জানানের জইন্যেই ফোন করলাম।

রুস্তম আলি পন্টু বলেন, বলেন ম্যাডাম, কি ডিসিশন নিলেন? আপনের ডিসিশনের ওপর কারো কোনো কথা থাকতে পারে না।

গুলবদন বেগম বলেন, আইজ থিকা আমাগো রাজবংশ দুই ভাগে ভাগ হইয়া গেছে, বাইরে কারে তা জানান হইবে না, খালি আপনে জানলেন।

রুস্তম আলি পন্টু বলেন, এইটা খুবই দরকার আছিল, আপনেগো বংশে যেই গোলমাল তাতে এক সঙ্গে থাকন ইমপসিবল। অনেক ডিজঅনেস্ট লোকে ওই বংশ ভইরা গেছে, অপরচুনিস্ট বিট্রেয়ারে আপনেগো দল গিজগিজ করতেছে।

গুলবদন বেগম বলেন, আমি আপনেগো সাপোর্ট দিব, আমার সঙ্গের কমপক্ষে পঁচিশজন পাশ কইর‍্যা আসবো, খালি আমাগো কয়টা দাবি মিটাতে হবে।

রুস্তম আলি বলেন, আপনের সব দাবিই আমরা মিটাব।

গুলবদন বেগম বলেন, ওইটারে যে খোয়ারে ঢুকাইছেন সেই খোয়ারেই মউত পর্যন্ত রাখতে হবে, বাইর হইতে দিবেন না; অইটা খোয়ারে থাকব নাইলে কবরে থাকব, বাইরে থাকতে দিবেন না।

রুস্তম আলি খুশিতে ভরে উঠে বলেন, আপনে ম্যাডাম একেবারে আমাগো মহাদেশনেত্রীর মনের কথাটা বলছেন, মহাদেশনেত্রী বলেন ওইটারে আর বাইরে আসতে দেয়া হবে না, ওইখানেই ওইটা ধুইক্যা ধুইক্যা মরবো, তারপর গ্রামের বাড়িতে পাঠাই দেয়া হবে। আমাগো মহাদেশনেত্রী বলেন, ওইটা জানয়ার, ওইটারে খাঁচায় রাখনই ভাল।

গুলবদন বেগম বলেন, হ্যাঁ, তাই করবেন।

রুস্তম আলি পন্টু বলেন, অই জানয়ারটার নিচে যে কেমন কইর‍্যা আপনে এত বছর শুইলেন অইটারে আপনার এত সুন্দর দেহখানা দিলেন, তা ভাইব্যা আমি এই বয়সেও মাঝেমাঝে কাইপ্যা উঠি, ম্যাডাম।

গুলবদন বেগম বলেন, মাইয়ামানুষের এই কপাল, জানোয়ারগো নিচেই শুইতে হয়। তবে এই জানোয়ারটাকে শিক্ষা দিতে হইবে।

রুস্তম আলি পন্টু বলেন, ম্যাডাম, দুঃখের ব্যাপার হইল বাংলাদ্যাশটা পাকিস্থান না, পাকিস্থান হইলে আগেই দেখাই দিতাম। জানেন ত ম্যাডাম, পাকিস্থানে জুলফিকার ভুট্টরে জ্যানারেল জিয়াউল হক খালি জেলে আটকাইয়া রাখে নাই; জ্যানারেল জ্যালে তারে প্রত্যেক রাইতে আইচ্ছা ডলন দিত। একে ত খাইতে দিত না, না খাইয়া খাইয়া ভুটু দরিদরি হইয়া যাইতেছিল, আর রাইতে এক ব্রিগেডিয়ার গিয়া ঘণ্টা দুই ধইর‍্যা আইচ্ছা ছ্যাচন দিত। এক রাইতে ছ্যাচনের সময় ব্যাটা মইরা যায়, আর তারে তারাতারি ফাঁসিতে ঝুলাই দিয়া কাগজে খবর ছাপাইয়া দেয় যে জুলফিকার ভুট্টরে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। দ্যাশটা পাকিস্থান হইলে তা করন যাইত, এই কারণেই ত পাকিস্থানরে আমরা পছন্দ করি, ওইখানে ইচ্ছামত কাম করন যায়, ওইটা কামের দ্যাশ।

গুলবদন বেগম বলেন, আর মনোয়ার মোল্লার সঙ্গে কোনো প্যাক্ট করবেন না। রুস্তম আলি বলেন, ওই বদমাইশটার কথা বলবেন না, ম্যাডাম। ওইটা এক নম্বর অপরচুনিস্ট, মিনিস্টার হওন ছারা আর কিছু বোঝে না। ওইটা সবার লগে লাইন দিতেছে। এইবার ভাবছে ওই ইন্ডিয়াআলারা পাওয়ারে আসবো, সেই জইন্য তাগো লগে দিনরাইত পইর‍্যা আছে, ওই ব্যাটারে দেখাই দিব।

গুলবদন বেগম বলেন, আর আমারে মিনিস্টার করতে হইব।

রুস্তম আলি বলেন, সেই কথা বলতে হবে না ম্যাডাম, আমরা পাওয়ারে গেলে আপনে মিনিস্টার হবেনই, আপনে আমাগো এক নম্বর মিনিস্টার হবেন, আর এমন যদি দেখি আপনারে প্রাইম মিনিস্টার করলে বেশি সুবিধা হয় তাইলে আপনেরে আমরা প্রাইম মিনিস্টার করবো, এইটা আমরা ভাইব্যা রাখছি।

গুলবদন বেগম বলেন, ভাই, আপনের এই সিনসিয়ারিটির জইন্যেই আপনেরে আমি এত লাইক করি, আপনের মতন পলিটিশিয়ান দ্যাশে আর নাই।

তাদের কথা এক সময় শেষ হয়; কিন্তু গুলবদন বেগম সেলুলার টিপতে আর পান করতে থাকেন; এবং এক সময় জড়িয়ে জড়িয়ে বলেন, সালামালাইকুম ভাই, আপনেরে আইজকাইল পাওন যায় না।

ওই দিকে সেলুলার কানে চেপে ধরেছেন জনগণবংশের মোহাম্মদ আবদুল হাই। একবার আবদুল হাইর মনে হয় নিজের নামটা বদলে দিই, রং নাম্বার বলে রেখে দিই; কিন্তু তিনি তা করেন না, বলেন, আপনেরেই পাওন যায় না, ম্যাডাম, পাওনের চ্যাষ্টা ত কম করি না।

গুলবদন বেগম বলেন, মিছা কথা বইল্যন না ভাই, পাওনের চ্যাষ্টা ত করেন। মনোয়ার মোল্লারে, তাইলে আমারে পাইবেন কেমনে? আমি ত আপনের বংশের কাছে ফুরাই গেছি, তবে মনে রাখবেন আমি ফুরাই নাই, আমার সাপোর্ট ছাড়া পাওয়ারে যাইতে পারবেন না।

আবদুল হাই বলেন, কি যে বলেন ম্যাডাম, আপনে হলেন আপনের বংশের লিডার, আপনের কথায় সবাই ওঠে বসে, আপনেরে ছাইর‍্যা কি মনোয়ার মোল্লার পিছে আমি ঘুরতে পারি?

গুলবদন বেগম গেলাশে কয়েকটি চুমুক দেন, তাঁর অন্য কিছুতেও চুমুক দিতে ইচ্ছে করে;–হায়রে দেহ, হায়রে চুমুক, বাতিল হওয়ার পরও ক্ষুধা যায় না।

গুলবদন বেগম বলেন, এইবারে পাওয়ারে আসবেন ভাইব্যা আমাদের ইগনোর করতেছেন ভাই, কিন্তু তা কি পারবেন? ভাবছেন মনোয়ার মোল্লারে লইয়া পাওয়ারে যাইতে পারবেন, আমারে ছারা হবে না।

আবদুল হাই বলেন, এমন কথা বলবেন না ম্যাডাম, আপনে আমাদের এক নম্বর ওয়েল-উইশার আমরাও আপনের ওয়েল-উইশার, আপনেরে ছাড়া আমরা পাওয়ারে যাইতে পারুম না। এই বছর আমরা সকলের দোয়া চাই, দেশে ড্যামোক্রেসি ফিরাই আনার জইন্যে সকলের দোয়া চাই। আপনে ড্যামোক্রেসিতে বিশ্বাস করেন, আমরাও করি; আমাগো একলগে থাকতে হবে।

গুলবদন বেগম বলেন, কিন্তু ভাই মনে হয় আপনেরা মনোয়ার মোল্লারে নিয়াই পাওয়ারে যাবেন, আমারে ইগনোর করছেন। মনে রাইখেন মনোয়ারের বাপেরও সেই শক্তি নাই, বংশের আমিই আসল লোক।

গুলবদন বেগম গেলাশে আরো কয়েকটি চুমুক দেন; আর কিছুতে তাঁর এখন চুমুক দিতে ইচ্ছে করছে না, একটা খাঁটি খুন করতে ইচ্ছে করছে।

আবদুল হাই বলেন, ম্যাডাম, আপনে একজন খাঁটি পলিটিশিয়ান আর আমরাও পলিটিক্স কইর‍্যা খাই, আপনে জানেন পলিটিশিয়ানরা কাগোই কোনদিন ইগনোর করে না, আমরা ত করিই না।

আরো কয়েকটি চুমুক দেন গুলবদন বেগম। কথা বলতে গিয়ে গুলবদন বেগমের জিভ জড়িয়ে আসতে চায়, জিভটাকে ভেজা চামড়ার স্যান্ডেলের মতো ভারি মনে হয়, তবু তিনি কথা বলার চেষ্টা করেন।

গুলবদন বেগম বলেন, অই বদমাইশ জানোয়ারটা আমারে ছারছে, আপনেরাও আমারে…

তিনি আর কথা বলতে পারেন না; তাঁর বাঁ হাত থেকে গেলাশটিকে তিনি ছুঁড়ে ফেলে দেন, দেয়ালে গিয়ে গেলাশটি চুরমার হয়ে যায়; আর ডান হাত থেকে সেলুলারটি খসে পড়ে। গুলবদন বেগম প্রথম সোফার ওপর গড়িয়ে পড়েন, সেখান থেকে গড়িয়ে পড়েন মেঝের ওপর। তার মুখ থেকে লালা বেরোতে থাকে; লালার সাথে দুটি শব্দ বেরোতে থাকে–বদমাইশ জানোয়ার বদমাইশ জানোয়ার।

আবদুল হাই ওই দিকে চিৎকার করতে থাকেন ‘হ্যালো, হ্যালো’; কোনো সাড়া না পেয়ে সেলুলার বন্ধ করে বলেন, বুড়ী বিচ, কুত্তার সঙ্গে কুত্তী।

দিকে দিকে আমাগো অপসর পাওয়া বুড়াগুলিও খুব জাইগ্যা উঠছে। আমাগো এই সুন্দর দেশে তরতাজা পোলপানগুলি কোনো কাজ পায় না, ইনভারসিটি থেকে বার হইয়া ফ্যা ফ্যা করতে থাকে, কিন্তু বুড়াগুলির কামের কোনো শ্যাষ নাই। ওইগুলি সাতান্ন হওয়ার পরও চাকুরি জড়াইয়া ধইর‍্যা পড়ে থাকে, ওরা না থাকলে সূর্য আন্ধার হইয়া যাবে চান উঠবে না মাইয়ালোকের প্যাটে পোলা আসবে না, তিন চার বচ্ছর কাম বাড়াই নেয়; ড্যাকরা ছেলেগুলিন ব্যাকার হইয়া রাস্তায় রাস্তায় পার্কে পার্কে গাঁজা টানে, ল্যাখাপড়া জানা মাইয়াগুলির আর বিয়া হইতে চায় না। অপসর পাওয়া বুড়াগুলি এখন পলিটিক্সে মেতে উঠছে, কাম ছাড়া তারা থাকতে পারে না; আর বুড়াকালের জইন্যে সবচে ভালো কাম হইছে পলিটিক্স। পলিটিক্সে তাদের দরও খুব বেশি, বিশেষ করে দুই ধরনের বুড়ার : একটা হইল ওই অপসর পাওয়া জ্যানারেল, আরেকটা হইল অপসর পাওয়া সেক্রেটারি, মাছের বাজারে পাঙ্গাশের মতন।

এই পাঙ্গাশগুলি খুব জাইগ্যা উঠছে, আমরা তাগো চর্বি দেখতে পাইতেছি।

এই পাঙ্গাশ মাছগুলির খেলা খুবই মজার।

আমাদের রাজবংশগুলি পাঙ্গাশমাছ খুব পছন্দ করে, তারা পাঙ্গাশমাছ কিননের জইন্যে পাঙ্গাশমাছ ধরনের জইন্যে পাগল হয়ে গেছে। যেমন করেই হোক ড্যামোক্রেসির ইলেকশনের মেজবানিতে চল্লিশায় পাঙ্গাশমাছ তাগো চাই-ই চাই। পাঙ্গাশমাছ না হলে ইলেকশনের চল্লিশা জমবে না, সবাই মনে করবে দাওয়াত দিয়ে ডালভাত খাওয়ানো হচ্ছে। তাই আমরা দেখতে পাচ্ছি রাজবংশগুলি যেখানে সেখানে জাল ফেলছে পাঙ্গাশমাছ ধরার জন্যে, আর যদি ধরাই না যায় তাহলে কিনতে যাচ্ছে বাজার থেকে আস্ত পাঙ্গাশ। আমাগো দুইখানা বড়ো রাজবংশ বেরিয়ে পড়েছে পাঙ্গাশমাছ ধরতে পাঙ্গাশমাছ কিনতে; আর পাঙ্গাশমাছেরাও খুব চালাক, জালের নিচে পড়তে পড়তে পড়ছে না, কোন জালের নিচে পড়বে তা মেশিন দিয়ে হিশেব করছে, তারা নিজেদের বেচতে বেচতে বেচছে না, কোন বংশের কাছে নিজেকে বেচবে তা পকেট ক্যালকুলেটর দিয়ে দিনরাত হিশেব করছে। আমরা পাঙ্গাশগুলির খুব নামডাক শুনতে পাচ্ছি, খবরের কাগজগুলি বড়ো বড়ো করে খবর ছেপে ছবি ছেপে আমাদের জানাই দিচ্ছে কোন বংশ কয়টা পাঙ্গাশ ধরলো, কয়টা পাঙ্গাশ কোন দলের জালের ভিতর ঢুকলো।

আমাদের জনগণমন গণতান্ত্রিক রাজবংশ আর শক্তির উৎসবাদী গণতান্ত্রিক রাজবংশ মাঝেমাঝে বৈঠকে বসছে পাঙ্গাশ ধরার কৌশল বের করার জন্যে। জনগণমন গণতান্ত্রিকরা বৈঠকে এমন কৌশল নিচ্ছে :

মহাজননেত্রী বলছেন, এইবার আমাগো দলে দশ পনরটা সেক্রেটারি আর জ্যানারেল থাকতেই হইব, নাইলে দলের মুখ থাকব না।

মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলছেন, এইটা ত আমরা দলের বেসিক প্রিন্সিপাল হিশাবেই গ্রহণ করছি, জ্যানারেল আর সেক্রেটারিরা হইব দলের মাথার মণি।

কলিমউদ্দিন মৃধা বলছেন, তা আমাগো নিতেই হইব, নাইলে দল মুখ দেখাইতে পারব না, তবে একেকটার বাগরাবাই কম না।

মহাজননেত্রী জানতে চান, বাগরাবাই কেমুন?

নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, তারা প্রত্যেকেই মিনিস্টার হইতে চায়, আলাপের আগেই বইল্যা ফেলে মিনিস্টার করলে দল থিকা দারাইব।

মহাজননেত্রী বলেন, হ, আমরা তাগো মিনিস্টার ত করুমই; এইবার আমরা পাওয়ারে যেতে চাই, পাওয়ারে যাওয়ার জইন্যে যদি তাগো মিনিস্টার করতেই হয় তাইলে তাগো মিনিস্টার করুম।

মোহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, এইজইন্যে আমরা পার্সোন্যাল ইন্টারেস্টও ত্যাগ করতে প্রস্তুত, নিজেরা মিনিস্টার না হয়ে তাগো মিনিস্টার করুম, কিন্তু পাওয়ারে যেতেই হবে, এই ছাড়া উপায় নাই।

শক্তির উৎসবাদী গণতান্ত্রিক রাজবংশ পাঙ্গাশ ধরার জন্যে এমন কৌশল নেয় : মহাদেশনেত্রী বলেন, এইবার দলে কয়জন নতুন জ্যানারেল আসবেন?

অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু বলেন, আশা করতেছি পনর কুড়িজন জ্যানারেল আমাগো সঙ্গে আসবেন।

মহাদেশনেত্রী বলেন, এত কম কেন? দলে আরো জ্যানারেল লাগবে।

অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু বলেন, আরও ধরনের চ্যাষ্টা করছি, ম্যাডাম, দ্যাশে জ্যানারেলের অভাব ঘইট্যা গেছে, এত বড় একটা দ্যাশে হাতে গণা কয়টামাত্র জ্যানারেল, দ্যাশে হাজারখানি রিটায়ার্ড জ্যানারেল থাকা দরকার আছিল।

মহাদেশনেত্রী জানতে চান, নাই কেন?

অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু বলেন, আমাগো আমফোর্সে প্রমোশন এত কম যে জ্যানারেল বেশি নাই। তাগো মতন যোগ্য আর স্মার্ট লোক দ্যাশে নাই, তাগো প্রত্যেকের জ্যানারেল হইলে মানায়।

মহাদেশনেত্রী বলেন, এইবার পাওয়ারে গেলে প্রমোশন দিয়া এক হাজার জ্যানারেল বানাইবেন। জ্যানারেল ছাড়া দ্যাশ বিশ্বে মর্যাদা পায় না।

সোলায়মান হাওলাদার বলেন, আমরা সেই স্টেপ নিছিলাম, ম্যাডাম, আর কিছু দিন পাওয়ারে থাকলেই তা হইত, দ্যাশে জ্যানারেলের অভাব হত না।

মহাদেশনেত্রী জানতে চান, কয়জন সেক্রেটারি সাহেব এইবার আমাদের দলে আসতেছেন? সেক্রেটারি সাহেবদের খুব দরকার।

অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু বলেন, পনর বিশজন হইব, ম্যাডাম। রিটায়ার্ড সেক্রেটারি ছাড়া দ্যাশ চালান খুব ডিফিকাল্ট, তারা অন্ধিসন্ধি সব জানে।

মহাদেশনেত্রী বলেন, আরো লাগবে, এই কয়জনে হবে না, পঁচিশ তিরিশজন সেক্রেটারি ছাড়া হবে না।

অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু বলেন, আমরা সেই চ্যাষ্টা করতেছি, ম্যাডাম। আমলাগুলি সব সময়ই আনফেইথফুল, যেই দিকে সুবিধা ওইগুলি সেই দিকেই দৌরায়, আগে আমাগো দিকে দৌরাইত এখন অন্য দিকে দৌরাইতেছে। এইবার সেক্রেটারিগুলি বড় বদমাইশ, তারা ইন্ডিয়াআলাগো দিকে লাইন দিতেছে।

মহাদেশনেত্রী বলেন, অই লাইন থিকা ধরে নিয়া আসেন, তাদের বলেন তাদের মিনিস্টার করা হবে। জ্যানারেল আর সেক্রেটারি ছাড়া দল দেখতে ভাল লাগে না, দলের মর্যাদা থাকে না।

ওই পাঙ্গাশগুলি তীব্র উত্তেজনায় সময় কাটাচ্ছে; চারদিক থেকে অফারের পর অফার পাচ্ছে, মিনিস্টার করা হবে মিনিস্টার, মাথা ঠিক রাখতে পারছে না। মিনিস্টার তো করা হবেই, সেটা কোনো ব্যাপার না; ব্যাপার হলো যেই দলে জয়েন করবো যেই জালে ধরা দিবো, তারা পাওয়ার পাবে তোর পাওয়ার না পেলে মিনিস্টার করবো কোন হান থিকা? তাই ধরা দেয়ার আগে চারদিকে তাকাই দেখন দরকার, গরিবগরবা পিপলের মুখের দিকে চেয়ে দেখন দরকার, পারলে তাদের ভিতর থিকা খবরটা বাইর করন দরকার, তারা কোন বংশরে পাওয়ারে পাঠাইব? পিপল কি জনগণআলাদের চায়? এইবার কি জনগণআলাদের অবস্থা বেশ ভালো না? মনে হয় পিপল এইবার তাদের পাওয়ারে পাঠাইয়া পরীক্ষা করে দেখতে চায়। কিন্তু…কিন্তু? যদি না পাঠায়? পিপল কি শক্তির উৎসআলাদের আবার চায়? এই কিছু দিন আগে না তাদের ঠেলে ফেলে দিলো?.চাইর মাসেই কি সেই কথা ভুইল্যা আবার পাওয়ারে পাঠাবে? পাঠাতেও পারে। মূর্খ পিপলের মতিগতি সাইকলজিস্টরাও বুঝতে পারে না। পাঠাতেও পারে? তার মানে কোনো শিউরিটি নাই, সবই আনসারটেন, কেউ জানে না কোনটায় জয়েন করবো, কোনটার জালে ধরা দিবো, কোনটার টোপ গিলবো? অত্যন্ত উত্তেজনায় আছেন পাঙ্গাশগণ। কে বলে দিতে পারে কোন বংশ জিতবে, পাওয়ারে যাবে?, পলিটিকেল প্যান্ডিটগুলো মাথা আরো খারাপ করে দিচ্ছে; একেক দিন একেক রকম বৈজ্ঞানিক ভবিষ্যদ্বাণী করে মাথা বিগড়ে দিচ্ছে। রাস্তার গণকের কাছে যাবো? হাত বাড়িয়ে বলবো, কোন দল জিতবে বলে দিন, আমি মিনিস্টার হইতে চাই? অ্যায়ারকন্ডিশন্ড অ্যাস্ট্রোলোজারের কাছে যাবো? পিরের বাড়ি যাবো? স্ত্রী, প্রাক্তন স্ত্রী, প্রেমিকা, প্রাক্তন প্রেমিকা, উপপত্নী, প্রাক্তন উপপত্নীর বাড়ি যাবো? কাজের মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করবো? বলে দাও কোন বংশ জিতবে? কোন বংশ এইবার পাওয়ারে যাবে? মাথা গরম হয়ে উঠছে পাঙ্গাশগণের।

অবজেনারেল করিম ইউসুফ ফোন করেন অবজেনারেল আল হাক্কানিকে, আই অ্যাম পাসিং এ টেরিবল টাইম, ডিসাইড করতে পারছি না হুইচ পার্টি টু জয়েন। অল দি পার্টিজ আর অফারিং মি ইনক্রেডিবল প্রাইজেস।

আল হাক্কানি বলেন, আমার কন্ডিশনও একই, আই অ্যাম এট এ লস, ইটস মোর ডিফিকাল্ট দ্যান ওয়ার স্ট্র্যাটেজি। ভাই, বলেন তো কারা পাওয়ারে আসবো?

করিম ইউসুফ বলেন, অনলি গড নোজ, মে বি ইভেন হি ডাজ নট নো। আমার একবার মনে হয় শক্তির উৎসবাদীরা উইল স্টেজ এ কামব্যাক, আবার মনে হয় জনগণআলাস উইল গো টু পাওয়ার দিইস টাইম।

আল হাক্কানি জিজ্ঞেস করেন, আপনারে কি অফার করছে?

করিম ইউসুফ বলেন, এনি মিনিস্ট্রি আই ওয়ান্ট অ্যাকসেপ্ট দি পোস্ট অফ দি প্রাইম মিনিস্টার।

আল হাক্কানি বলেন, হোয়াই নট দি পোস্ট অফ দি প্রাইম মিনিস্টার, হা হা হা। আমারেও এই রকমই অফার করছে, বাট ক্যান্ট ডিসাইড হুইচ পার্টি টু জয়েন। নাউ আই অ্যাম প্র্যাকটিচিং আটারিং জয় বাংলা অ্যান্ড বাংলাদেশ জিন্ডাবাড, বাংগালি অ্যান্ড বাংলাডেশি; যেইটা আটার করতে আমার ভাল লাগবে আমি ঠিক করছি সেই পার্টিতেই জয়েন করবো।

তা%রা অনেকক্ষণ ধরে হাসাহাসি উপভোগ করেন।

করিম ইউসুফ বলেন, টু বি এ মিনিস্টার ইজ নট সো ব্যাড, ইটস্ এ হাইলি। ইন্টারেস্টিং পোস্ট আই থিংক, বাট দুই পার্টিতেই অনেকগুলি বুড়া হ্যাগার্ড টুথলেস। ককলেস জেনারেল জয়েন করছে, তাদের রেখে শ্যাষ পর্যন্ত আমাদের মিনিস্ট্রি দিবো তো? আই ক্যান্ট ট্রাস্ট দি পলিটিকেল বাস্টার্ডস, দে আর লায়ার্স, ফাদার্ড বাই ডেভিলস্। একবার জয়েন করার পর তো তাদের পেছনে পেছনে হাঁটতে হবে, তাদের কথায় উঠতে বসতে হবে।

আল হাক্কানি বলেন, যৌল্ড হ্যাঁগার্ডগুলি খালি শোভা, ওইগুলিরে অরা নিচ্ছে, বাট একেবারে পাত্তা দেয় না, তারা পাত্তা দেয় আমাদের মতো ইয়ং এনার্জিটিক জেনারেলদেরই, তারা জানে আমরা হ্যাভ জাস্ট রিটায়ার্ড, উই আর অলমোস্ট ইন। সার্ভিস হুয়িচ ইজ ভেরি ইম্পরটেন্ট, উই আর মাচ মোর অ্যাট্রাকটিভ টু দেম দ্যান দোজ আৌল্ড হ্যাঁগার্ড জেনারেলস। দে আর ডেড বডিজ ইন দি গাইজ অফ রিটায়ার্ড জেনারেলস।

করিম ইউসুফ বলেন, লেটু ওয়েট অ্যান্ড সি ফর এ ফিউ মোর টেরিবল ডেইজ, তারপর একদিন ফুলের তোড়া নিয়ে গিয়ে হাজির হবো। বিয়াও ত এইভাবেই করেছিলাম, ডিফারেন্স হচ্ছে এইবার বিয়া বসতে হবে। হা হা হা। আফটার অল স্লিপিং উইথ এ হোর ইজ মাচ বেটার অ্যান্ড ইন্টারেস্টিং দ্যান সেলিব্যাসি।

আমাদের অপসরপ্রাপ্ত সেক্রেটারিগণও ভুগছেন একই ইনসোমনিয়ায়।

তাঁদের ঘুম আসছে না, স্থির করতে পারছেন না, জীবনে এমন জটিল ফাইলের মুখোমুখি কখনো বসেন নি, আগে অন্যের লেখা ফাইলে না দেখে মাল গুণে সই করেছেন, এইবার মনে হচ্ছে সাইন করছেন নিজের ফাইলে; বারবার জায়নামাজে বসে আল্লারে ডেকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছে, হে সর্বশক্তিমান, হে দয়াময়, হে অতীত ভবিষ্যতের দ্রষ্টা, হে গণতান্ত্রিক ইলেকশন সম্পর্কে সদাসচেতন, আপনার নামেই সবাই ইলেকশন করতেছে, ইউ নো এভরিথিং, আপনার ইঙ্গিতেই সব হয়ে থাকে, স্বৈরাচার বিদায় নিয়া পিপলের ড্যামোক্রেসি দেখা দেয়, আপনে দয়া করে বলে দিন এইবার কোন বংশ পাওয়ারে যাবে, রাজা হবে, পিপল এইবার কোন বংশরে পাওয়ারে বসাইয়া খুশি হয়ে প্রতারিত হবে, আমি কোন বংশের কাছে, মহাদেশনেত্রী না মহাজননেত্রীর কাছে, ফুলের তোড়া নিয়া উপস্থিত হবো?

তাঁরা দুই বংশের টানাটানিতে ছিঁড়েফেড়ে যাচ্ছেন, কথা দিতে গিয়ে কথা দিতে পারছেন না; যদি ভুল হয়ে যায়? পার্টি পাওয়ারে না গেলে তো মন্ত্রী হওয়া হবে না। কিন্তু মন্ত্রী হতে ইচ্ছা করছে, গাড়িতে নিশান উড়াইতে ইচ্ছা করছে। কতো গরু গাধা নিশান উড়ইিয়া পচাইয়া ফেললো, নিশানের দিক করে গাড়িতে বসলো, আমি নিশানের গাড়িতে চড়তে চাই, ওইভাবে বসতে চাই। বছরের পর বছর গরু গাধা খচ্চর মূর্খগুলিরে ‘স্যার, স্যার’ করতে করতে ঘেন্না ধরে গেছে, এইবার মূর্খগুলির মতো ‘স্যার’ হ’তে ইচ্ছে করছে।

প্রাক্তন সেক্রেটারি আবদুল মোরশেদ সেলুলার করেছেন প্রাক্তন সেক্রেটারি আইউব আলিকে, ভাই, আপনে কোন দলে যোগ দিতেছেন? ডিসিশন নিতে পারছেন? আমি ত পাগল হয়ে যাচ্ছি, পাসিং এ টেরিবল টাইম।

আইউব আলি বলেন, ধরাধরির মধ্যে আছি। সকালে এই দল ধরছে বিকালে ওই দল ধরছে, আমিও সকালে এই দল ধরছি বিকালে ওই দল ধরছি। বুঝতে পারছি না কারা পাওয়ারে যাবে।

আবদুল মোরশেদ বলেন, আপনে তো ধার্মিক মানুষ, রোজা নামাজ করেন, হজও করছেন চাইর পাঁচবার, শক্ত একটি পিরও আছে, ইসলামটা ভালো করে জানেন, পাকিস্থানেরও আপনে অ্যাডমায়রার, আপনে তো উৎসবাদীদের সঙ্গেই যাবেন মনে হয়। আপনের জন্যে ডিসিশন নেয়া সহজ।

আইউব আলি বলেন, আরে ভাই ধর্ম আছে ধর্মের জায়গায়, পলিটিক্স আছে পলিটিক্সের জায়গায়। ধর্ম না, আসল কথা হচ্ছে হুয়িচ পার্টি উইল গো টু পাওয়ার, ধর্ম ত আমি জায়নামাজেই করতে পারি, বাট আই ক্যান্ট বি এ মিনিস্টার আনলেস আই জয়েন দি পার্টি হুয়িচ উইল গো টু পাওয়ার। ধর্মের মিনিস্টার করার পাওয়ার থাকলে মসজিদের মোল্লাগুলিই মিনিস্টার হইত।

আবদুল মোরশেদ বলেন, ওরা সব সেক্রেটারি আর জেনারেলদের মিনিস্টার করার প্রমিজ করছে, কিন্তু এতোজনকে ওরা মিনিস্টার করবে হাউ?

আইউব আলি বলেন, সেটাই তো চিন্তার কথা, পলিটিশিয়ানগুলি বর্ন লায়ার, পিপলকে মিথ্যা বলতে বলতে অভ্যাস হয়ে গেছে, এখন আমরাও অদের ট্র্যাপে পড়ছি কি না বুঝতে পারছি না। বাট আই মাস্ট জয়েন এ পার্টি, খোদা চাইলে মিনিস্টার হইতেও পারি।

আবদুল মোরশেদ বলেন, আমিও তাই ভাবছি। মিনিস্টার হলে টাকাগুলি উঠে আসবে, এমপি হ’লেও উঠবে, টাকা মার খাবে না। এনজিওগুলির চাকর খাটার থেকে এটা খারাপ না।

আইউব আলি বলেন, উই আর আর্নিং এ লট অ্যাজ অ্যাডভাইজারজ টু দি এনজিওস, দে আর আওয়ার গোল্ড মাইনস, ওটা থাকবে, এমপি বা মিনিস্টার হলে ওটা আরো জমবে।

আবদুল মোরশেদ জানতে চান, আপনের কি মনে হয়? কোন পার্টি পাওয়ারে যাবে ব’লে আপনের মনে হয়? আপনে পিপলের মতিগতি কিছুটা বুঝতে পারছেন?

আইউব আলি বলেন, এইবার জনগণআলাজ হ্যাঁজ এ চান্স, দি গার্ল ইজ এ গুড ইন্টেলিজেন্ট কমিটেড পলিটিশিয়ান, শি ব্রট অ্যাবাউট দি ডাউনফল অফ দি উ ৎসআলাজ, পিপল আর ভেরি মাচ সিম্পেথিটিক, শি হ্যাঁজ এ চান্স।

পাওয়ার তারা উইল টিচ দি ব্যুরোক্র্যাটস্ এ গুড সিভিয়ার লেসন; এটা ছোটবড় সব ব্যুরোক্র্যাটই বোঝে, তার ফলও ফলবে ইলেকশনে।

আইউব আলি বলেন, আই হোপ সো।

আমরা জনগণরা দূর থিকা খালি শুনছি, দূর থিকা খালি দেখছি। ভিতরে আমরা জনগণরা আবার কোন দিন ঢুকলাম যে কাছে থিকা শুনবো কাছে থিকা দেখবো? আমরা ব্যালট বাক্সের ছিদ্রিটারেই শুধু কাছে থিকা দেখি। ওই ছিদ্রির ভিতর দিয়া আমাগো কপালরে আমরা নিচে ফেলাই দেই।

অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু খুবই উত্তেজিত আর উদ্বিগ্ন, দেখা যাচ্ছে পার্টির ফান্ডে চান্দা পড়ছে না; ব্যাংক ডিফল্টারগুলি চান্দা দেয়া কমাই দিছে, বন্ধ করে দিছে অনেকে। চার পাঁচ বছর ধরে না চাইতেই দিয়ে আসছিলো, এখন বারবার চাওয়ার পর যা দেয় তাতে পোলাপানদের ক্যাডারদের চাও হবে না। ক্যাডাররা কয়েক বছর ধইর‍্যাই বেশ বানাইছে, মিছিলে যাওয়ার সময় তারা ছাত্রগো মতন ময়লা কাপড় পরেই যায়, রাতের বেলা পাজেরো হাঁকায়, তিন পিস স্যুট পরে, মিস্ট্রেসগো বাড়ি যায়, টাওয়ারে। টাওয়ারে ফ্ল্যাট কিনছে, বনানী উত্তরায় জায়গা নিয়ে রেখেছে, তবু ত তাদের দিতে হবে। নইলে ভাইগ্যা যেতে পারে, জনগণআলারা ত ধরার জইন্যে খাড়া হয়েই আছে। নমিনেশন দেওনের সময় ফান্ডে ট্যাকা আসবে, কিন্তু ওই ট্যাকা ত কিছুই না; ডিফল্টারগুলি ট্যাকা না দিলে চলবো কেমনে? কয় বছরে তারা হাজার কোটি বানাইল, আর এখন ভাইগ্যা পড়তে চায়? ওইগুলিরে জ্যালে ঢুকানই দরকার আছিল। তিনি কয়েকজন নেতা নিয়ে বসেন, মহাদেশনেত্রীরে এই কথা জানান যাইবো না, তাহলে তিনি ঘুমোতে পারবেন না।

রুস্তম আলি পন্টু বলেন, আপনাদের জানান দরকার যে ডিফল্টাররা চান্দা দিতেছে না, ফান্ড খালি হইয়া যাচ্ছে।

জেনারেল কেরামত বলেন, বাস্টার্ডরা চা নিচ্ছে, মে বি দে থিংক দি জনগনালাজ উইল গো টু পাওয়ার। তারা অখন অইদিকে লাইন দিছে, কোটি কোটি টাকায় অগো ভইরা দিছে।

সোলায়মান হাওলাদার বলেন, এই রাঙ্কেল ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টগুলি বাস্টার্ডের বাস্টার্ড, বাতাস ঘুরতে দেখলেই তারা ঘোরে, কয়েকটা ক্যাডার পাঠান দরকার।

রুস্তম আলি পন্টু বলেন, দরকার হইলে ক্যাডার পাঠাইতে হবে, চান্দা না দিয়া দ্যাশে থাকতে পারবো না।

জেনারেল কেরামত বলেন, দুই চাইরটারে ফোন করে এখনই ধমক দ্যান।

রুস্তম আলি পন্টু অনেকক্ষণ ধরে সেলুলার টেপেন, কাজ হয় না; শেষে এক ডিফল্টারকে পেয়ে যান।

রুস্তম আলি পন্টু বলেন, আছছেলামালাইকুম খাজা সাহেব, ভাল আছেন ত? আশা করছিলাম এইর মইধ্যে একদিন আসবেন, নাইলে কাউরে পাঠাইবেন।

খাজা সাহেব বলেন, আমি খুব সরি, দ্যাশে ছিলাম না, সিংগাপুর ব্যাংকক ওসাকায় একটু কাম ছিল। আপনে ভাল আছেন ত? আপনের কথা আমি ভুলি নাই, আই গট সাম প্রেজেন্টস্ ফর ইউ ফ্রম ওসাকা, ইউ উইল লাইক ইট।

রুস্তম আলি পন্টু বলেন, থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ, প্রেজেন্টা পাইলে অইত্যান্ত খুশি হবো, তবে আরেকটা কথা আছিল।

খাজা সাহেব বলেন, বুঝতে পারছি, কিন্তু দিনকাল খুব খারাপ যাচ্ছে, বিজনেস একেবারে নাই, সোনার চালানগুলি বন্ধ রইছে। আপনেরা থাকলে অসুবিধা হইত না, বড় ডিফিকাল্টিতে আছি।

রুস্তম আলি পন্টু বলেন, লাইফে ডিফিকাল্টি মাঝেমইধ্যে আসেই, চিরকাল থাকে না, আমরাও এখন ডিফিকাল্টিতে আছি, দুই তিন মাসের ব্যাপার, ওই জিনিশটা আইজই পাঠাইবেন, ফান্ডে ট্যাকা নাই।

খাজা সাহেব বলেন, আইজই আধা লাখ পাঠাই দিব।

রুস্তম আলি পন্টু হাহাকার করে ওঠেন, বলেন কি খাজা সাহেব, আপনের থিকা পুরা এককোটি পাওনের আশা কইর‍্যা আছি, আধা লাখে টয়লেটও হবে না। পুরাটাই দিবেন।

খাজা সাহেব বলেন, এইটা পারুম না, ভাই, মাফ করবেন। বড় ডিফিকাল্ট সময় যাইতেছে, ব্যবসা নাই চালান আসে না।

রুস্তম আলি পন্টু বলেন, সব চান্দা কি অই জনগনআলাগোই দিয়া দিছেন, মনে রাইখেন পাওয়ারে আমরাই যাবো।

আমরা তাদের পলিটিকেল ইন্টিমেট আলাপ আর শুনতে চাই না; তারা পলিটিশিয়ান বলে কি তাদের প্রাইভেসি নাই?

জনগণমনাদের এইবার বোধ হয় ভালো সময় যাচ্ছে। ডিফল্টার শুকুর মজিদের সঙ্গে সোনারগাঁয়ে সন্ধ্যার একটি ঘণ্টা মাত্ৰ উপভোগ করতে এসেছেন জনগণমন নেতা কলিমউদ্দিন মৃধা।

তিনি একটু গোপনেই এসেছেন, যাতে জনগণ তাকে দেখে না ফেলে।

শুকুর মজিদ বলেন, এইমাত্র আপনে দিনাজপুর থেকে ফিরলেন, আমার জইন্যে যে একটা ঘণ্টা দিতে পারলেন আই অ্যাম ভেরি গ্রেটফুল।

কলিমউদ্দিন মৃধা বলেন, আমরা পিপলের পলিটিশিয়ান, আমাগো ডাক দিলে আমরা ফিরাইতে পারি না, আপনের সঙ্গে আমার আগেই বসা দরকার ছিল।

শুকুর মজিদ বলেন, সেইটা আমরা ভাইগ্যে হয় নাই, এই ইভনিংটা আমার জইন্যে আনফরগেটবল হয়ে থাকবে, আপনে ত বড় মিনিস্ট্রি পাবেন।

কলিমউদ্দিন মৃধা বলেন, জনগণ যদি দয়া করে, যদি পাওয়ারে যাইতে পারি, মিনিস্ট্রি ত একটা পাবই, এখন আপনেরা দোয়া করবেন।

শুকুর মজিদ বলেন, আমাদের লাইনের মিনিস্ট্রি পাইলে ভাল হয়, আমরা দুই চাইরবার দেখা করতে যেতে পারবো। গত বচ্ছরগুলি খুবই খারাপ গেছে, তবে ছাড়ি নাই, আশায় আশায় আছিলাম আপনেরা পাওয়ারে আসবেন। আমি ত মনেপ্রাণে খাঁটি বাঙ্গালি, মনে মনে সব সোম সোনার বাংলা গাই।

কলিমউদ্দিন মৃধা বলেন, বাঙ্গালি হইতেই হইব, দ্যাশরে ভালবাসতেই হইব, অরা, ত আইজও পাকিস্থান চায়, অদের মুক্তিযুদ্ধের চ্যাতনা নাই।

শুক্কুর মজিদ বলেন, একটা কথা বলতে চাই, আমি সামান্য কিছু কন্ট্রিবিউট করতে চাই, দয়া কইর‍্যা নিবেন।

কলিমউদ্দিন মৃধা বলেন, জনগণের কন্ট্রিবিউশনের উপরই ত আমাদের চলতে হয়, আমরা ত বিশ বচ্ছর ধরে খাই নাই। অরা খাইছে, অগো অভাব নাই, আরো খাইতে চায়। একটু বেশি কইরাই দিয়েন, পাওয়ারে আসলে আদায় কইর‍্যা দিব।

শুকুর মজিদ বলেন, পার্টি আর আপনের জইন্যে এককোটি ধইর‍্যা রাখছি, আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ, সমাজতন্ত্রেও আগে বিশ্বাস করতাম, আল্লার রহমতে ট্যাকার আমার অভাব নাই, আপনেরা আসলে আরো হইব। আমরা এদেরও পলিটিকেল ইন্টিমেট আলাপ আর শুনতে চাই না; কারো প্রাইভেসিতে উঁকি দেওন ঠিক না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *