৩২. সেদিন রামচন্দ্র বিদায় নিলে

সেদিন রামচন্দ্র বিদায় নিলে শ্রীকৃষ্ট ভাবলো তার উইল করার কিছু নেই। এই কথা চিন্তা করতে করতে যেটা নিছক অনুকরণ প্রবৃত্তির উন্মেষ সেটা অর্থযুক্ত

হয়ে উঠলো। সে চিন্তা করলো, তার যেটুকু সহায়-সম্বল আছে তার কোনো ব্যবস্থা না করলে তার মৃত্যুর পর পদ্মর দুর্গতি হওয়াই সম্ভব। ছিদাম খুব নির্দয় নয়, পদ্মর সঙ্গে বর্তমানে তার অত্যন্ত সম্ভাবও আছে বটে, কিন্তু একসময়ে তার বিবাহ হবে, এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে পদ্মর বনিবনাও না-ও হতে পারে।একথা চিন্তা করতে গেলে বিস্মিত হতে হয়, পদ্ম–গত পাঁচ ছবৎসরে যার নিরন্তর পরিশ্রমে বাড়িটা বাড়ির মতো হয়েছে–তার কিছুমাত্র দাবি নেই সমাজের এবং আইনের চোখে।

একদিন পদ্ম যখন রান্না করছিলো, কেষ্টদাস নিজে থেকে পদ্মর জন্য পান সেজে এনে দিলো। রান্নার দরজায় দাঁড়িয়ে বললো, পদ্ম, অভাগার সংসারে আসে কত কষ্টই করলা, কত দুঃখই পালা।

সংসারে সুখ আর কোনখানে?

 এমন বদ্ধ খাঁচায় আবদ্ধ থাকলা?

পদ্ম একটু দ্বিধা করলো যেন, তারপরে বললো, মিয়েমানুষ আকাশে আকাশে উড়লে, ব্যাধের ফান্দে পড়া লাগে।

এখানেও ধরা যে কীসের টান তোমার? ফান্দের দড়ি যতি কেউ পাতে?

উত্তর যেন প্রস্তুতই ছিলো। পদ্ম হাসি হাসি মুখে বললো, সে ফাঁদ যতি পাতেও, ধরা দেওয়া না-দেওয়া পক্ষীর ইচ্ছায় হবি।

পদ্মর উদ্দেশ্য ছিলো কেষ্টদাসকে অহেতুক ভয় থেকে নিরস্ত করা কিন্তু কথাটা শেষ হয়ে গেলে কেষ্টদাস অনুভব করলো, এমন খাঁটি কথাও আর নেই। একটা পরিচয়ের আড়াল দরকার ছিলো পদ্মর, কেষ্টদাস সেই পরিচয়মাত্র। নতুবা যদি সে অন্য কোথাও বন্ধনে পড়তে চায় এদিকের কোনো আকর্ষণেই সেই বন্ধন তার কাছে পীড়াদায়ক হবে না।

কেষ্টদাস তখনকার মতো উঠে পড়লো। তার তো সম্পত্তি নেই রামচন্দ্রর মতো, যে তারই টানে পরও আপন হবে।

প্রথম দিকের একটি নিঃশব্দ দ্বন্দ্বের কথা মনে পড়ে গেলো কেষ্টদাসের। একটা নতুন মৃদঙ্গ জোগাড় করেছিলো সে। পদ্ম গান করে না, কিন্তু সুকণ্ঠী।নতুন মৃদঙ্গ আনার পর কেষ্টদাস একদা মাথুরের দু-এক পদ তার সুরহীন গলায় করুণ করে গেয়ে বৈষ্ণবীর গলায় সুর ফোঁটাতে চেষ্টা করেছিলো। পদ্ম হেসে লুটোপুটি–অমন করে গায়ো না, কান্না পায়।

তা পাওয়া লাগে। ভাবো তো শ্ৰীমতীর সোনার অঙ্গ পথের ধূলায় গড়াগড়ি যাতেছে।

তা যাক। তুমি তো শ্ৰীমতী না।

কেষ্টদাস ফ্যালফ্যাল করে চেয়েছিলো।

এরপর যতদিন কেষ্টদাস সুস্থ ছিলো শ্যালিকাস্থানীয়া আত্মীয়া হিসাবে সে কখনো কখনো রসিকতা করেছে। তার প্রত্যুত্তরে মধুরতর রসিকতাও পেয়েছে, কিন্তু প্রেম কিছুমাত্র জন্মায়নি।

পদ্ম রাঁধে বড়ো ভালো। পদ্ম তার সেবাও করে। বালাতে তার অসুখের বৃদ্ধি হয়। পুরনো ঘিয়ের বাটি হাতে করে পদ্ম সেদিন তার শয্যার পাশে এসে বসে। নিজের রোগজীর্ণ পাজরার উপরে পদ্মর স্বাস্থ্যপুষ্ট হাতখানি সে অনুভব করে। হয়তোবা পদ্মর মুখ অন্যদিকে ঘোরানো থাকে কিন্তু পানরাঙা তার

ঠোঁট দুটি কেষ্টদাসের চোখে পড়ে।

কতগুলি ঘটনা আছে যার আকস্মিকতা বজ্রের মতো ফেটে পড়ে নিজেকে প্রচারিত করে, আর কতগুলি আছে যা পদ্মার জলের মতো নীরবে অগ্রসর হতে হতে আচম্বিতে সমস্ত গ্রাম ধসিয়ে দেয়,কখনো সমস্ত গ্রাম প্লাবনে মুছে দেয়। মনে দৈনন্দিন চিত্রগুলির ছাপ পড়ছে, অস্পষ্ট হয়েও যাচ্ছে, কিন্তু বিশেষ একটি দিনে মনোযোগের সন্ধানী আলো পড়তেই সেই অস্পষ্ট অতীতের ছবিগুলিও ফটোর মতো কিংবা তার চাইতেও অর্থগুরু চিত্রের মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পদ্মকে কিছু প্রতিদান দেওয়া উচিত তার শ্রমের, একটু প্রিয়-সাধন করা উচিত, এই চিন্তা কেষ্টদাসকে পরর দিকে আগ্রহশীলকরলো। তার সংসার-উদাসীন মন সংসারের দিকে ফিরলো।

ছিদামের চড়া গলার শব্দে এক সকালে ঘুম ভেঙে গেলো কেষ্টদাসের। বাইরে এসে সে দেখতে পেলো উঠোনের একপ্রান্তে পদ্ম ম্লানমুখে দাঁড়িয়ে আছে, আর ছিদাম অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে তিরস্কার করছে।

ছিদাম বললো, কইছিলাম বলদেক বাঁশপাতা আনে খাওয়ায়য়া। তা মনে ছিলো না, এখন বলদ নড়বের চায় না। চাষ দিবো কি নিজে জোয়ালে লাগে?

ছিদাম গজগজ করতে করতে অসুস্থ বলদ দুটিকে বেঁধে রেখে ছোটো উঠোনটুকু পার হয়ে পাশের জঙ্গলাকীর্ণ একটা ভিটার দিকে চলে গেলো। দশ-পনেরো মিনিট বাদে যখন সে ফিরে এলো তখন তার মুখের ভাব বদলে গেছে। কিন্তু পুরুষমানুষ তো বটে। রাগটা পড়ে গেলেও সোজাসুজি পদ্মর দিকে না গিয়ে দাওয়ায় উঠে বসলো। অনেকটা সময় বসে থেকেও যখন প্রত্যাশিত খোশামোদটুকু পেলোনা তখন অবশ্য তাকেই প্রথম কথা বলতে হলো, বাঁশের পাতা না আনে পতিত ভিটায় জমি কোদলাইছো, তা কলি কি হত?

পদ্ম উত্তর দিলো না।

তা ভালোই করছে। দেবোনে দু-পয়সার চুয়া আনে। এখন পান্তা দিবা কিনা কও।

পান্তা যে খাবা, নুন আছে না তেল?

তার এখন কী জানি আমি। কাল সাঁঝবেলায় কতি পারো নাই?

কালও তো অকারণ রাগবের লাগলে। আমি তোমার কী অন্যায় করছি।

ছিদাম অভুক্ত অবস্থায় দমদম করে বেরিয়ে গেলো।

তখন পদ্ম খানিকটা সময় আপন মনে বকবক করলো, তারপর রান্নার চালাটার আগড় প্রয়োজনের অতিরিক্ত জোর দিয়ে বন্ধ করে উঠোনে এসে দাঁড়ালো। সেরাঁধলোনা। কেষ্টদাসের জন্য কিছু ফলাহারের ব্যবস্থা করে দিয়ে শরীর ভালো নেই বলে ঘরে এসে শুয়ে রইলো।

সন্ধ্যায় ছিদাম বাড়ি ফিরলে পদ্ম কথা না বলে হাত-মুখ ধোবার জন্য এক ঘটি জল এগিয়ে দিলো।

ছিদাম হাত-মুখ ধুয়ে রান্নাঘরে গেলে পদ্ম ভাত বেড়ে দিয়ে উনুনের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে রইলো।

কলাইয়ের ডাল আর ডুমুরের তরকারি দিয়ে গরম গরম ভাত খেতে খেতে ছিদাম পুলকিত হয়ে উঠলো। পেট ভরে ভাত খেয়ে উঠে রহস্য করেও বাঁকা কথা বলার মতো মন রইলো না তার। সে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, সারাদিন যে জলও খাও নাই তা বুঝছি। খায়ে নেও, আমি আসতিছি, এক বুদ্ধি আছে।

তামাক খেয়ে ছিদাম যখন ফিরে এলো তখনো পদ্মর খাওয়া হয়নি। কেষ্টদাস খেতে বসেছে। ছিদামের আর দেরি সহ্য হচ্ছিলো না। সে বললো, বাবার পুঁথি পড়া কুপিটা চুরি করবের হবি, বুঝলা না। তুমি আলো ধরে দাঁড়াবা, আমি শাকের বীজ ছড়ায়ে দিবো। কথা কও।

পদ্ম কথা না বলে ঘরের কাজগুলি শেষ করতে লাগলো।

কেষ্টদাস আজ সমস্তটা দিন এদের কলহের গতি লক্ষ্য করেছে। খানিকটা তার কানে এসেছে, খানিকটা সে কান পেতে ধরেছে। শেষের দিকে শুনবার জন্য সে আড়ালে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলো। তার মনে পড়ে গেলো যখন নিজে সে চাষী ছিলো তখন তার প্রথম বৈষ্ণবীর সঙ্গে এমনি কলহ হতো। রাত্রিতে তার মনে হলো, হয়তো পদ্ম সারাদিনে কিছু খায়নি। বাড়ির কর্তা হিসাবে এ বিষয়ে তার কি করণীয় কিছু নেই। কিন্তু কী একটা সংকোচ তাকে নিষ্ক্রিয় করে রাখলো। বরং অহেতুকভাবে তার সেই দিনটির কথা মনে পড়লো যেদিন সে ছিদাম-পদ্মদের মাঠের গাছতলায় আবিষ্কার করেছিলো।

এক রাত্রিতে বিছানা ছেড়ে সেউঠে দাঁড়ালো। কী একটা শুনবার,কী একটা জানবার আগ্রহ যেন তার। সে দেখলো বৈষ্ণবীর বিছানা খালি পড়ে আছে, বারান্দায় ছিদামের মাদুরও খালি। তার মনে হলো এরকম ঘটনা তার জীবনেও ঘটেছে। দ্বিতীয়া বৈষ্ণবী অত্যন্ত কোপনস্বভাবা ছিলো। রাগ করে সে ঘরে আসেনি, এমন একটি রাত্রিতে সে আর তার বৈষ্ণবী রাগারাগির ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলার জন্য গ্রামের অন্ধকার পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছিলো।

সে দেখতে পেলো বারান্দার নিচে বসে ছিদাম একটা জাল বুনছে, আর তার অনতিদূরে পদ্ম উদুখলে কী একটা চূর্ণ করতে করতে গুনগুন করে গান করছে। কেষ্টদাসের মনে হলো, কাজটা এমন নয় যে এই মাঝরাতে করতে হবে। কাজের চাইতেও পরস্পরের সঙ্গ পাওয়াই যেন এর সার্থকতা। বিছানায় ফিরে সে চিন্তা করতে চেষ্টা করলো–এমনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেই সংসারটাকে ওরা চালাচ্ছে।

দু-একদিন পরে অতি প্রত্যুষে তার ঘুম ভেঙে গেলো। সে লক্ষ্য করলো ছিদাম গোয়ালের পাশে লাঙল সাজাচ্ছে। চৈতন্য সাহার কাছে ঋণ নিয়ে ছিদাম একজোড়া রোগা রোগা বুড়োটে বলদ কিনেছে। বলদ জোড়ার কাঁধে জোয়াল তুলে দিয়ে পদ্ম ঘর থেকে ছিদামের মাথাল, হুঁকো তামাকের থলি প্রভৃতি নিয়ে এলো। পদ্মর পরনে আজও একটি পরিচ্ছন্ন রঙিন শাড়ি। তার শাড়ি পরার ধরনটাতেও বৈশিষ্ট্য আছে–দুখানা হাত, একটা কাঁধ,হাঁটুর কিছু নিচে থেকে পায়ের পাতা অবধি অনাবৃত। এমন স্বাস্থ্য না হলে এমন মানায় না। পদ্ম কখনো মাথায় কাপড় দেয় না। শ্রীকৃষ্ট লক্ষ্য করলো পদ্মর চুলগুলিও চকচক করছে। এত সকালেই তার স্নান হয়ে গেছে। দ্রুত অভ্যস্ত পারদর্শিতার সঙ্গে তারা কাজ করে যাচ্ছে এবং অনুচ্চ গলায় অনর্গল কথাও বলছে। ছিদাম যখন পা বাড়াবে তখন পদ্ম এসে মাথালটা তার মাথায় বসিয়ে দিলো। হুঁকোর থলেটা তুলে দিলো, হাতে।

ছিদাম চলে গেলে পদ্ম উঠে এলো কেষ্টদাসের কাছে।

এত সকালে যে উঠছো?

এমনি। মনে হলো এমন সাজায়ে যতি দিতা আমিও একটু চাষবাস করতাম।

পদ্ম হাসলো। সে বললো, হাত মুখ ধুয়ে আসো গা, খাবের দেই। চালভাজা গুড়া করে কাল মোয়া বাঁধে রাখছি।

কেষ্টদাস একটি বাধ্য ছেলের মতো গেলো। কিন্তু কোনো এক অনির্দিষ্ট অসার্থকতায় তার মন সংকীর্ণ হয়ে রইলো। পদ্মর স্বাস্থ্য ও ছেলের যৌবনের পাশে তার রোগ ও বার্ধক্যজীর্ণ দেহ বারংবার তুলনার মতো মনে ফুটে উঠতে লাগলো।

কিছুদিন পরে কেষ্টদাস হাটে গিয়েছিলো। দীর্ঘদিন সে এ পথে চলেনি। হাটে পৌঁছে সে বুঝতে পারলো সংসারের জন্য কী কিনতে হবে সে সম্বন্ধে কোনো ধারণাই তার নেই এখন। তারপর তার মনে হলো ছিদাম এ হাট থেকে সওদা করে না, বুধবারের হাটেই তার কেনাকাটা করে। তখন কেষ্টদাস দু পয়সার পান, পয়সা চারেকের চুয়া, যা প্রয়োজনের নয় এমন একগাছি চুল বাঁধবার ফিতে কিনে খুশি খুশি মুখে বাড়ির দিকে চলতে লাগলো। কিন্তু বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে সে থেমে দাঁড়ালো। শোবার ঘর থেকে ছিদাম আর পদ্মর হাসির শব্দ ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের রাগারাগির সময়ে যেমন একটি কৌতূহল তাকে আবিষ্ট করেছিলো, এখন তেমনি একটি সংকোচ তাকে আচ্ছন্ন করলো। আকস্মিকভাবে তার অনুভব হলো, তার এই হাটে যাওয়ার ব্যাপার নিয়েই তারা হাসাহাসি করছে। তার মনে পড়লো না, তার পান চুয়া কিংবা চুলের ফিতে কেনার সংবাদ কারো জানার কথায়। সে পায়ে পায়ে ফিরে গিয়ে রাস্তার ধারের জিওল গাছটার নিচে গাঢ় অন্ধকারে একটি ক্লান্ত বৃদ্ধ পথ-হারানো বলদের মতো ধুকতে লাগলো।

অনেক দুঃখে, অনেক আঘাতে আহত হয়ে এই কুঁড়েগুলির আশ্রয়ে সে পড়ে থেকেছে। সেই অভ্যাসেই যেন তার পা দুটি তাকে বহন করে নিয়ে এলো তার ঘরের দরজায়, তারপর ঘরের ভিতরে বিছানার কাছে। রাতটা তার জেগে জেগে কেটে গেলো।

দিন দশ-পনেরোর ব্যবধানে সে দর্শনের সাহায্যে ব্যাপারটার একটা নিষ্পত্তি করতে চেষ্টা করলো। রাধা কি কখনো কিশোরের সান্নিধ্যে না হেসে পারে? দ্যাখো তো ওদের? অন্য অনেক জোড়া মানুষের কথা মনে হয় না? কিন্তু তার দর্শন ব্যর্থ হলো। সে নিজেকে ধিক্কার দিলো-ছি, ছি, নিজের ছেলের সম্বন্ধে এ কী ভাবনা! সম্বন্ধে পদ্ম মাতৃস্থানীয়া।

আর একদিন তার মনে হলো পাড়ার সব লোকের কাছে সে কেঁদে কেঁদে বলবে তার ব্যর্থতার কথা। সঙ্গে সঙ্গে তার চোখের সম্মুখে যেন প্রতিবেশীদের ঠোঁটের চাপা হাসির দৃশ্যটা ভেসে উঠলো।

কিন্তু আনন্দের লহরের মতো ছিদাম এসে দাঁড়ায়, শুনছো না, বাবা, নায়েবমশাই রাজি হইছে। কন্ যে বলদ যখন কিনছে ফসলের তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ো।

অবশেষে কেষ্টদাস স্থির করলো কৃতকর্মের ফলভোগ তাকে করতেই হবে। সহ্য করতে পারবে না সে–মহৎ মানুষরা যেমন পারে; প্রাণটাকেই বার করে দিতে হবে। কেবল হাঁটা আর। হাঁটা, না-খাওয়া, না-মান। নবদ্বীপ থেকে হেঁটে বৃন্দাবন। সেই ধুলোর পথে হাঁটতে হাঁটতেও যদি প্রাণ না যায় তবে বৃন্দাবন থেকে বুকে হেঁটে মথুরা। ঝোলা নয়, গোপীযন্ত্রে নাম নয়। রোদ হিম ধুলোর সাহায্যে দেহটাকে ধ্বংস করতে হবে। ছি, ছি, কী মন তার! ছেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা? কু-এ মন আচ্ছন্ন।

একদিন অতি প্রত্যুষে রামচন্দ্র দেখলো, তার দরজায় শ্রীকৃষ্ট দাঁড়িয়ে।

কী খবর, গোঁসাই?

কেষ্টদাস রামচন্দ্রর উপহার নতুন মহাভারতখানা তাকে ফিরিয়ে দিলো–এটা রাখেন, ভাই। কেষ্টদাসের চোখের কোণ বেয়ে অশ্রু পড়তে লাগলো।

কেন, কী হলো?

কেষ্টদাস একবার হাসির চেষ্টা করে বললো, তীত্থ করবের যাই। মনস্থির করে যতি ফিরে আসি আবার পড়বো।

শ্রীকৃষ্ট চলে গেলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *