০২. জলেশ্বরী

তার মনে হয় কেউ যেন তার সঙ্গে চলছে। একবার থমকে দাঁড়ায় সে। কান খাড়া করে রাখে। কিছু শোনা যায় না। দুএকটা পাখির ডাক, গাছের পাতায় পাতায় বাতাসের সরসর, ও পাশের বাঁশবনে একবার হঠাৎ ট্যাশ করে একটা শব্দ, আর কিছু না।

বাঁকটা পেরিয়ে যায় সে। পেছনের ইস্টিশান আর চোখে পড়ে না। এবার সমুখে দেখা গুমটি ঘন্ধু। আর অনেক দূর পর্যন্ত ফসলের খোলা মাঠ। রেললাইনটাও দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত। হঠাৎ করে সে যেন একটা অনন্তের ভেতর গিয়ে পড়ে। মুহূর্তের জন্যে অবসন্ন বোধ করে। কিন্তু চলার গতি সে থামায় না।

অচিরে তার চোখের সমুখ থেকে সমস্ত কিছু অদৃশ্য হয়ে যায়। দৃষ্টি আচ্ছন্ন করে দাঁড়িয়ে থাকে তার মা, ভাই, বোন, টিনের লম্বা সেই ঘর, ঘরের পেছনে টক আমগাছ। জলেশ্বরীতে অনেক দূর থেকে গাছটা চোখে পড়ে সব সময়। বিলকিস যেন সেই গাছটা লক্ষ করেই এক রোখার মতো এগোতে থাকে।

এবার সে পেছনে শব্দটা শুনতে পায় পরিষ্কার।

ঘুরে তাকিয়ে দ্যাখে, একটা ছেলে, সেই ছেলেটি কাঠের ওপর দিয়ে দৌড়ে আসছে। বিলকিস ঘুরে তাকাতেই ছেলেটি দৌড়ের মুখে আরো কয়েক ক্লিপার এগিয়ে থমকে দাঁড়ায়। অনেকক্ষণ সে স্থির দাঁড়িয়ে থাকে। না এগোয়, না ফিরে যায়।

মুহূর্তের জন্যে মনে হয়, ছেলেটির ঐ স্থির দাঁড়িয়ে থাকা নিসর্গের অনিবাৰ্য একটি অংশ। ছেলেটি ধীরে পায়ে আরো কয়েক স্লিপার এগিয়ে আবার থেমে যায়।

তখন মৃদু কৌতূহল অনুভব করে বিলকিস। হাত তুলে সে কাছে আসতে ইশারা করে ছেলেটিকে। নিজেও সে কয়েক পা এগিয়ে যায়।

হাত দশেকের দূরত্বে স্থির হয় দুজন।

এই কী চাও?

তার ছোট ভাইয়ের চেয়েও ছোট হবে বলে বিলকিস তুমি বলতে ইতস্তত করে না। তার একটু রাগও আছে। ছেলেটি সেই ট্রেন থামবার পর থেকেই পিছু লেগেছে।

কী নাম তোমার?

ছেলেটি উত্তর দেয় না, দ্রুত চোখে বিলকিসকে আপাদমস্তক দেখতে থাকে।

তখন থেকে আমার পিছু নিয়েছ কেন?

কেমন অস্বস্তি বোধ করতে থাকে বিলকিস, ঠিক ভয় নয়, ভয়ের কাছাকাছি। অথচ করবার কিছু নেই। ছেলেটি বরং ভয় পেয়েছে বলে মনে হয় বিলকিসের। কীসের ভয়?

এই এদিকে শোন।

ছেলেটি কাছে আসে। এবং এই প্ৰথম কথা বলে। আপনি ঢাকা থেকে আসছেন?

হাঁ!

জলেশ্বরী যাবেন?

হাঁ, তাই তো যাচ্ছি।

আপনি যাবেন না। ছেলেটির কণ্ঠস্বর হঠাৎ খুব ব্যাকুল শোনায়।

কেন?

আপনি যে একা!

ট্রেন ফিরে গেল। কী করব?

এখন না হয় না-ই গেলেন।

আমাকে যেতেই হবে।

আপনি যাবেন না।

ছেলেটি আবার নিষেধ করে। এবার তার কথার গুরুত্ব বিলকিস উপেক্ষা করতে পারে না। তার ধারণা হয়, ছেলেটি জলেশ্বরী সম্পর্কে ইস্টিশান মাস্টারের চেয়ে কিছু বেশি খবর রাখে।

তুমি মানা করছি কেন? জলেশ্বরীর অবস্থা খুব খারাপ?

খারাপ আর কত হবে। এরই ভেতরে অনেকেই তো যাতায়াত করছে।

আজ ভোরের ঘটনা কিছু জান?

এখনো ভালো করে জানি না। আপনি এভাবে যাবেন না।

সন্ধের আগে পৌঁছতে পারব না?

তাড়াতাড়ি গেলে হয়তো পারবেন।

ছেলেটির ভেতরে কোথায় একটা সারল্য আছে, মিনতি আছে, বিলকিসকে হঠাৎ স্পর্শ করে যায়। সস্নেহে তার দিকে তাকিয়ে থেকে বিলকিস বলে, তাহলে আমি আর দাঁড়াই না।

সে হাঁটতে থাকে। ছেলেটিও সঙ্গ নেয়।

বিলকিসের ধারণা হয় ছেলেটি সামনে কিছু দূর গিয়েই ফিরে যাবে। কিন্তু ছেলেটিকে নিয়ে তার ভাববার সময় নেই। পুরো পাঁচ মাইল পথ তাকে ভাঙ্গতেই হবে। তার মনে পড়ে না। আর কখনো এতটা পথ সে একটানা হেঁটেছে।

ছেলেটি হঠাৎ বলে, আপনার মতো আমার একটা বোন ছিল।

থমকে দাঁড়ায় বিলকিস। সে আরো একটি দুঃসংবাদ শোনবার জন্যে অপেক্ষা করে। ক্রিয়াপদের অতীত রূপটি একই সঙ্গে তাকে বিষণ্ণ এবং উন্মুখ করে তোলে।

ছেলেটি আর কিছু বলে না। বিলকিস তখন আবার হাঁটতে শুরু করে। ছেলেটি নীরবে তার পাশে পাশে চলে।

দুধারে জনশূন্য মাঠ। এরকমও মনে হতে পারত মানুষের বসতি এখানে নেই। কিন্তু আছে। মানুষ এমন একটা সময়ে নিজেকে গোপন রাখতেই ক্রিয়াশীল। তাই জামগাছের তলা নির্জন, হঠাৎ যে একটা বসবার বাঁশের মাচা খাঁ খ্যা করছে। এমনকি গৃহস্থের পালিত পশুও চোখে পড়ে না। ডোবার সবুজ পানিতে ঝুঁকে পড়া বেত গাছের তীক্ষ্ণ পাতা থর থর করে। একটি কাক স্তব্ধতাকে কাঁপয়ে দিয়ে উড়ে যায়।

ছেলেটি এখনো ফিরে যায় নি দেখে বিলকিস কৃতজ্ঞ বোধ করে। মনে মনে সে আশা করে, আরো কিছুদূর তার সঙ্গে আসবে ছেলেটি। এই মুহূর্তে একটা সেতু রচনার প্রয়োজন সে অনুভব করে। বলে, ছেলেটির বোনের কথা মনে রেখে, মিলিটারি?

হাঁ তারপর, ওরা ওকে মেরে ফেলে।

তারপর? কীসের পর? কিন্তু সে প্রশ্ন চিন্তায় আসা মাত্র শিউরে ওঠে বিলকিস।

ছেলেটি বিলকিসের হাত থেকে নীরবে সুটকেসটা এবার নেয়। বলে, আপনি যাবেনই?

এতখানি এসে ঢাকায় ফিরে যাব?

তা ঠিক।

তোমার বোন কোথায় ছিল?

জলেশ্বরীতে।

বিয়ে হয়েছিল?

হবার কথা ছিল। সব ঠিক হয়ে ছিল। তারপর এই সব হয়ে গেল।

বিলকিস ঠিক বুঝতে পারে না, অবিবাহিত বোন ছিল জলেশ্বরীতে, ছেলেটি নবগ্রামে, ওদের বাড়ি কোথায়–নবগ্রামে, না জলেশ্বরীতে?

মানুষ অনেক সময় প্রশ্ন উচ্চারণের আগেই উত্তর পেয়ে যায়। ছেলেটি বলে, আমার বাবা মা ছোট ভাই, সবাই এক রাতে বিহারীদের হাতে খুন হয়। আমি ইন্ডিয়া চলে যেতাম, আমার এক বন্ধু নবগ্রামের, সে আমাকে জলেশ্বরী থেকে এখানে নিয়ে আসে। একা যেতে সাহস পাই নি।

বোঝা যায় ছেলেটি আসলে জলেশ্বরীর। বিলকিস আরো অনুভব করে, ছেলেটি তাকে বিশ্বাস করে। নইলে ইন্ডিয়া চলে যাবার কথা বলতে পারত না। তার একটু কৌতূহল হয়, ছেলেটি অচেনা একজনকে এতটা বিশ্বাস করতে পারছে কী করে?

অনেকখানি চলে এসেছে তারা, আবার রেললাইনের দুধারে জঙ্গল চেপে আসছে। দূরে সুড়ঙ্গের মতো দেখাচ্ছে জঙ্গলের ভেতরে পথটুকু।

বিলকিস জিগ্যেস করে, তুমি আর কতদূর আসবে? চলুন না দেখি।

তোমার ভয় করে না?

কীসের ভয়?

জলেশ্বরীতে আজ নাকি মিলিটারি গুলি করেছে?

শুনেছি।

ওরা যদি তোমাকে ধরে?

আমি তো পথঘাট চিনি। আপনি তো তাও চেনেন না।

আমার জন্যে বিপদে পড়বে কেন?

ছেলেটি এ প্রশ্নের উত্তর দেয় না। তাকে লজ্জিত এবং অপ্রস্তুত দেখায়।

তার চেয়ে তুমি ফিরে যাও।

দুজন এক সঙ্গে থাকলে ভয় নেই।

তারপর নবগ্রামে ফিরে আসবে কী করে? রাত হয়ে যাবে না?

আপনাদের বাড়িতে যদি থাকতে দেন।

তুমি চেনো আমাদের বাড়ি?

ছেলেটি উৎসাহের সঙ্গে বলে, কেন চিনব না? আপনি তো কাদের মাস্টারের—

আমার বাবাকে তুমি দেখেছ?

দেখেছি, খুব ভালো মনে নেই। যেবার আমি মাইনর স্কুল থেকে হাই স্কুলে গেলাম, উনি তার আগেই মারা গেলেন তো! ওঁর কাছে যদি ইংরেজি শিখতে পারতাম!

কেন?

সকলেই বলে, কাদের মাস্টারের মতো ইংরেজি কেউ জানে না।

সবুজ সুড়ঙ্গের ভেতর এখন ঢুকে যায় ওরা। ভারি শীতল লাগে। বুনো ঝোঁপের পাতাগুলো সজল ঝকঝাক করে। পায়ে চলা সরু পথটা এখানে হারিয়ে গেছে বলে দুজনের লাইনের ওপর উঠে আসতে হয়।

তোমরা থাক কোথায়?

প্রশ্ন করেই বিলকিসের মনে পড়ে যায়, এখন তো ছেলেটির কেউই বেঁচে নেই। বাড়ির কথা মনে করিয়ে দেওয়াতে সে অপরাধ বোধ করতে থাকে। বিষণ্ণ হয়ে যায়।

ছেলেটি ইতস্তত করে বলে, পোস্টাপিসের পেছনে জলার ঐ পারে।

বিশদ জিগ্যেস করে আর তাকে কষ্ট দিতে চায় না বিলকিস। অপ্রত্যাশিতভাবে জুটে যাওয়া তরুণ এই সঙ্গীটির অদেখা বাবা, মা, বোনের কথা সে ভাবে।

পথ চলে। তার নিজের কথা মনে পড়ে যায়। আলতাফ কি বেঁচে আছে? যে খবরের কাগজে। আলতাফ কাজ করত, পচিশে মার্চ রাতে মিলিটারি সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাতের শিফটে ছিল আলতাফ। সে আর ফেরে নি। যে দুটি লাশ পাওয়া গেছে, আলতাফের বলে সনাক্ত করা যায় নি। আলতাফের বন্ধু এক সাংবাদিক, অন্য কাগজের শমশের, সে কয়েকবার বলেছে–ভাবি, আমি আপনাকে জোর দিয়ে বলতে পারি। আলতাফ বেঁচে আছে।

তাহলে সে ফিরল না কেন? প্ৰতিদিন বিলকিস রাতের অন্ধকারে কানের কাছে রেডিও নিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার শুনেছে। প্রতি রাতে সে আশা করেছে। হয়তো আলতাফের গলা শোনা যাবে। কিন্তু যায় নি। শমশের আবার বলেছে, ভাবি, আলতাফ ইন্ডিয়াতে গেছে। গেলে তো আর খবর দেওয়ার উপায় নেই, খবর আপনি পাবেনই। আজ হোক কাল হোক, আপনি দেখবেন আলতাফ বেঁচে আছে।

বিলকিস ছেলেটিকে হঠাৎ জিগ্যেস করে, কই, তোমার নাম বললে না তো।

আমার নাম? আমার নাম সিরাজ।

সিরাজ?

ছেলেটিকে বেশ উদ্বিগ্ন দেখায়। কারণটা ঠাহর করতে পারে না বিলকিস। আশে পাশে কিছু টের পেয়ে গেছে সে, যা বিলকিস বুঝতে পারে নি?

দুপাশে এখনো ঘন জঙ্গল। সেই জঙ্গলের ভেতর মিলিটারি ওঁৎ পেতে নেই তো?

বিলকিস ছেলেটির কাছে সরে আসে চলতে চলতে।

সিরাজ, আমরা কতদূর এসেছি?

এখনো অনেক দূর আছে।

অনেক দূর?

কতটুকু আর হেঁটেছেন?

দুমাইল হবে না?

সিরাজ হেসে ফেলে। বলে, কী যে বলেন, দিদি। পরমুহূর্তেই সিরাজ সজাগ হয়ে বিলকিসের মুখের দিকে তাকায়। ভীত গলায় বলে, পা চালিয়ে চলতে হবে। নইলে সন্ধে হয়ে যাবে।

জঙ্গল পেরিয়ে আবার ফাঁকা মাঠের ভেতর পড়ে তারা।

সিরাজ পরামর্শ দেয়, আপনি যদি স্লিপারের ওপর দিয়ে চলতে পারতেন তাহলে তাড়াতাড়ি হতো।

শাড়ি পরে স্লিপার লাফানো যায় না, বাধ্য হয়েই লাইনের পাশ দিয়ে তাকে হাঁটতে হয়।

সিরাজ বলে, একটা গরুর গাড়িও যদি পাওয়া যেত। জলেশ্বরীতে ভোরে ডিনামাইট ফাটার কথা শুনে কেউ আর ওদিকে যেতে চাইল না।

কখন চেষ্টা করলে?

আপনি যখন ইস্টিশান মাস্টারের সঙ্গে কথা বলছিলেন।

বিলকিস অবাক হয়ে যায়। ছেলেটি সেই তখন থেকে তাহলে তার সুবিধে-অসুবিধের কথা ভাবছে! তার বাবার যারা ছাত্র তারা এখনো নাম শুনলে দাঁড়িয়ে পড়ে। সিরাজ তাঁর ছাত্র নয়, তবু সে তাঁর মেয়ের জন্যে এতটা ভাবছে, ভেবেছে। বিলকিসের গর্ব হয় বাবার জন্যে।

মায়ের মুখ চোখের সমুখে ভেসে ওঠে বিলকিসের।

হাই স্কুলের অ্যাসিস্ট্যান্ট হেড মাস্টারের চেয়ে বেশি কিছু হতে পারেন নি বাবা, মা পদে পদে গঞ্জনা দিতেন তাকে। বাবা বলতেন, আমি না হই, আমার ছাত্ররা তো হয়েছে।

জলেশ্বরীতে আজ ভোরের ঘটনার পর মা, ভাই বোন ভালো আছে তো? বিলকিস বড় বিচলিত বোধ করে।

সিরাজ, সত্যি দেরি হয়ে যাচ্ছে।

বিলকিস স্লিপারের ওপর পা রাখে। তারপর শাড়ি একটু তুলে, হাতে গুটিয়ে নিয়ে, লম্বা পা ফেলে ডিঙোতে থাকে। প্রথমে একটু বেসামাল ঠেকে, অচিরে অভ্যোস হয়ে যায়।

আর কতদূর, সিরাজ?

আপনি হাঁপিয়ে গেছেন?

না, না।

একটু দাঁড়িয়ে যান, না হয়?

না দেরি হয়ে যাবে। মন কেমন করছে। বাড়ির কথা ভেবে কিছু ভালো লাগছে না, সিরাজ।

মাস্টার বাড়িতে কেউ কিছু করবে না।

ঢাকার কথা তুমি জান না। ইউনিভার্সিটির প্রফেসরদের বাড়িতে ঢুকে গুলি করে মেরেছে। হিন্দু প্রফেসরদের বেনোয়েট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরেছে।

সিরাজ শিউরে ওঠে।

তুমি শোন নি?

সিরাজ ভয়ার্ত চোখে ম্লান হাসে।

আর কতদূর আছে আমাকে বল।

মাইল দুয়েক।

তুমি না হয় ফিরে যাও, সিরাজ। তোমার জন্যেই এখন আমার ভয় করছে। তুমি জান না, তোমার বয়সী ছেলেদেরই মিলিটারি ধরে নিয়ে যাচ্ছে, ইনজেকশন দিয়ে সব রক্ত টেনে নেয় ওরা, হাত বাধা অনেক লাশ পাওয়া গেছে, নদীতে ভেসে আছে, তোমার বয়সী সব। তুমি ফিরে যাও, আমি ঠিক যেতে পারব।

সিরাজ দাঁড়িয়ে পড়ে। হয়তো সে মনের ভেতর অনুরোধটি নিয়ে নাড়াচাড়া করে, বাইরে থেকে বোঝা যায় না, কেবল তাকে মূর্তির মতো স্থির দেখায়।

তারপর সে নীরবেই আবার চলতে শুরু করে। যেন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, ফিরে যাবে না। তুমি অদ্ভুত ছেলে তো!

সিরাজ উত্তর দেয় না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *