কালবেলার সংলাপ

সুজাতা। কতকাল অন্ধকার আমাদের শাসাবে, গৌতম?
বলো, আর কতকাল? কেবলি হোঁচট খাই, ভয়
পাই প্রতি পদক্ষেপে; দূরন্ত বইলে হাওয়া, ভাবি-
এই বুঝি এলো তেড়ে মাস্তানের দল, পথ খুঁজি,
চৌকাঠে কপাল ঠেকে, পায়ে কালো পাথরের ভার।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত যেন আমি, পারি না কোথাও ছুটে
যেতে, এই অন্ধকার এত বিষ লুকিয়ে রেখেছে
নিজের থলিতে, আগে কখনো জানিনি। ভয় যাপি
সর্বক্ষণ; হবে কি সন্ত্রম লুট? হবে কি বিলীন
হলমায়্য সিঁথির সিঁদুরচিহ্ন? গৌতম, আমায়
বলে দাও। ওই শোন, ‘গৃহস্থের ঘোর অমঙ্গল’
শব্দ ছুঁড়ে উড়ে যায় ছন্নছাড়া পেঁচা।
গৌতম।
বিচলিত
হয়ো না সুজাতা অন্ধকার অধিপতি নয়, কিছু
আলো আমাদের অস্তিত্বের দিকে ঝুঁকে আছে আজো
গাঢ় চুম্বনের মতো; আছে সম্প্রীতির চন্দ্রাতপ।

সুজাতা। না, গৌতম, আশঙ্কার ভূতপ্রেত কী ভীষণ নাচে;
বাঘ-ভালুকের ভয় নেই, বিষাক্ত সাপের চেয়ে
ঢের বেশি বিষধর মানুষ এখন। আমাদের
বসতবাড়িকে ওরা বানিয়েছে চিতা; স্বপ্নগুলো
ভস্ম হয়ে ধূলায় মিশেছে। অসহায় মানবতা
কাঁটার মুকুট প’রে নুয়ে থাকে ক্রুশ কাঁধে নিয়ে;
অনেক হৃদয় আজ লাঞ্ছিত গোলাপ দিগ্ধিদিক।
গৌতম। থাক থাক সুজাতা, আগুনে ঘর পুড়ে গ্যাছে, যাক;
আত্মাকে পুড়িয়ে খাক করে দেবে এমন আগুন
নেই কোনো উন্মত্ত মশালে। বর্বরের হুঙ্কারের
মধ্যে জেগে থাকে কিছু মানুষের দীপ্ত বাণী, থাকে
তাদের গভীর চালচিত্র, যারা কখনো ধর্মের
অন্তরালে অধর্মের বাঘনখ সযত্বে পোষে না,
যারা ধ্যানে ও মননে মনুষ্যত্বকেই করে ধ্রুবতারা
চিরকাল। সুজাতা তোমার দুটি রাঙা পদতলে
চুমু খায় পুণ্য দুর্বাদল, তোমার আঁচল
ধরে রাখে চারাগাছ, মুখ ছোঁয় জবা। পুনরায়
নতুন আকাঙ্খা নিয়ে এসো ঘর বাঁধি দুজনায়।
ঘাতক শানাক তার ছুরি, মাথা নত করবো না,
শেখাবে বাঁচার মন্ত্র চিরদনকার পূর্বপুরুষের মৃত্তিকায়।
সুজাতা।। এসো হাতে হাত রাখি পূর্বপুরুষের মৃত্তিকায়,
ভাঙাচোরা স্বপ্নসমূহকে ভালোবেসে জড়ো করি।
২১।১১।৯০