০৯. জীবনের মর্যাদা

নবম পরিচ্ছেদ
জীবনের মর্যাদা

কিসে হয় মর্যাদা? দামী কাপড়ে? গাড়ী-ঘোড়ায়? ঠাকুরদার উপাধিতে? না—তা নয়।

মর্যাদা ঐসব জিনিসে নাই। তুমি চরিত্রবান কি না! তুমি কঠিন সত্যের উপাসক কি না! তুমি জ্ঞানের সেবক কি না, তাই জানতে চাই।

তোমার অনেক টাকা আছে। তুমি মানুষকে শ্রদ্ধার চোখে দেখ না। মানুষের মনুষ্যত্ব তোমার স্পর্শে এলে নষ্ট হয়-আমি তোমাকে শ্রদ্ধা করি না।

সাদী বলেছেন—ভদ্রলোক সেই, বড় সেই, যে সত্যের উপাসক। সে মনুষ্যকে সমাদর করে-চরিত্র ও মহত্ত্ব যার গৌরব।

নিত্য কোর্মা-কালিয়া রাবিড়ী-ক্ষ্মীর খাও কি না, শুনতে চাইনে। তোমার বহুলোকের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় আছে কি না, জানিবার আমার দরকার নাই। তোমার পিতা জজ ছিলেন, তা শুনেও আমার কঠিন মন সুখী হবে না। আমি দেখতে চাই তোমাকে, তোমার ভিতর-বাহির, তোমার মনুষ্যত্ব ও চরিত্র। তোমার নয়।

তোমার বাড়িতে একশ দাসী থাকে, তোমার জমিদারীতে প্ৰজারা তোমায় দেখে ভীত হয়— একথা শুনলে মনে আমার সুখ হবে না! তোমার আত্মীয়-স্বজন সকলেই বড়লোক, একথা শুনে আমার কি লাভ? আমি দেখতে চাই তোমাকে, তোমার ভিতর-বাহির, তোমার মনুষ্যত্ত্ব, তোমার ঠিক মূল্য।

মানুষের পয়সা দিনের আলোতে চুরি করে এনেছ? মা আশীৰ্বাদ করেছেন, খোদা তোমার মঙ্গল করুক; পিতা সাদরে স্নেহ-মায়ায় তোমার বুকে তুলে নিচ্ছেন। মানুষের প্রশংসামাখা দৃষ্টি তোমার উপর। সম্মানী লোকেরা তোমাকে চান। আমার মন তোমার কাছে নত হবে না, অবজ্ঞায় আমি বলব, যাও।

আত্মা তোমার নির্মল, তুমি জ্ঞানের সেবক, সৃষ্টি-বৈচিত্ৰ্য অধ্যয়নে তোমার আনন্দ, চরিত্র তোমার উন্নত। মহা-মানুষকে অনুসরণ করাই তোমার জীবনের লক্ষ্য, আত্ম-শাসনে তুমি বিজয়ী বীর, মিথ্যা ও পাপের বিরুদ্ধে দাঁড়ান ধর্ম মনে করো, দৃষ্টি তোমার দিন দিন গভীর হচ্ছে, আত্মা তোমার মৃগের মতো সজাগ, ব্যাকুল, উৎকর্ণ-সম্ভ্রমে তোমায় আমি নমস্কার করি।

তুমি মিথ্যাবাদী, হৃদয় তোমার সংকীর্ণ, তোমার ভিতর আত্মা আছে কি না জানা যায় না, প্ৰাণহীন পদার্থের মতো তুমি সময়ের উপর চড়ে যাচ্ছ, তুমি মুৰ্থ, তুমি মানুষকে বেদনা দাও, তুমি পরের টাকা অপহরণ করতে লজ্জা বোধ করা না, তুমি পিতার বড় সস্তান, তোমায় আমি ঘৃণা করি। তোমার উপাসনা ও উপবাসের মূল্য কি?

জীবনকে মধুর ও পবিত্র করবার জন্য তুমি কষ্টে পড়েছ— ছিন্ন বস্তার উপর বসে তুমি রহস্যের সন্ধানে ব্যাপৃত, সংসারের মানুষেরা তোমাকে সম্মান করে না, আমি তোমাকে সম্মান করি।

তুমি চরিত্রবান ও সত্যবাদী, জ্ঞানের সাধক এবং পাপকে ঘৃণা কর, তুমি যে কোন কাজই করা না-বিশ্বাস করো তোমার মর্যাদা অল্প নয়।

আত্মার শুভ্ৰতা রক্ষা করা— চিত্তকে মিথ্যার বিরুদ্ধে স্বাধীন করে রাখাই ধর্ম-তুমিই যথার্থ ধাৰ্মিক, অতএব সম্মান তোমারই।

হাতে ঘড়ি নাই, গায়ে দামী জামা নাই, পায়ে বিলাতি জুতা নাই—কি ক্ষতি? তোমার ভিতরে মহত্ত্ব আছে? ঐ সব বিচিত্র পোষাকধারী পুরুষ যারা

সম্মুখে তারা বিনয়-ভক্তিতে ভুলুষ্ঠিত হবে।

উচ্চ রাজকর্মচারী হতে পারলে না, তোমার জীবনের মূল্য হলো না। — এমন হীন চিন্তা হৃদয়ে পোষণ করো না। রাজা, মহারাজা-উচ্চ রাজকর্মচারী-মনে রেখো, তোমার সেবক। গাড়ী ঘোড়ায় যে চড়ে প্রাসাদে যে বাস করে, যার মাথা দিয়ে কুসুমের গন্ধ বেরোতে থাকে, ইঙ্গিতে যার দশজন দাসদাসী দৌড়ে আসে, মানুষের ঘাড়ে চড়ে, যে মানুষকে দিয়ে জুতা খোলে, মানুষের ঘাড়ে চড়ে যে হাওয়া খায়, তাকে দেখে তুমি দমে যেয়ে না।

2 Comments
Collapse Comments

kub valo laglo

আমার জীবন কে পাল্টায়ছে ,এই গুরুর লেখা .

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *