০৬. মৰ্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের আসন-নিজের শক্তি সাধনা

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
মৰ্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের আসন
নিজের শক্তি সাধনা

কোন বংশ চিরকাল পুরানো মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে টিকে থাকতে পারে না। জাতির। যেমন পতন হয়, পরিবারেরও তেমন পতন হয়।

শিক্ষা, চরিত্র ও জ্ঞান মানুষ ও পরিবারকে সম্মানী করে-অর্থে সম্মানে সব দিক দিয়েই বড় করে। মানুষ যখন মূর্থি ও চরিত্রহীন হয়ে পড়ে তখন তার প্ৰভুত্ব ও সম্মান থাকে না।

তুমি আজ ছোট আছ—চরিত্রবান ও জ্ঞানী হও, তুমিও শ্রেষ্ঠ হবে ৷ কপালে ভদ্র বলে কারো কিছু লেখা নাই।

জান? মুসলমান জাতি কত বড় ছিল? জগৎ তার সভ্যতা অনুসরণ করতে গৌরব বোধ করতো। তাদের পতন হয়েছে কিসে?

জাপানকে সেদিন পর্যন্ত লোকে অসভ্য মনে করতো। সাধনার ফলে এখন তাদের স্থান কত উচ্চে। আমাদের নাসিকা কুঞ্চনের মূল্য কি?

আজ যে পরিবারকে তুমি হীন বলে মনে করছে—যাদের সাধনা ও পরিশ্রমের ফলকে তুমি ঘৃণার চাঃেখে৷ দেখছো, কিছুদিন পরে তোমাকে তাদের কৃপা ভিক্ষা করতে হবে। তোমার কুড়ে সস্তানকে তার বাড়ীর চাকর হতে হবে! এজগতে শুধু সাধনা, চরিত্র ও জ্ঞানের জয়। মূর্থি, কুড়ে ও মার্কামারা ভদ্রলোকের কোন মূল্য নাই। বাপের নামে তুমি পরিচিত হতে যেয়ো না! তুমি ভদ্রঘরে জন্মেছ, এ কথা তুমি বল না।

সম্রাট জনকে যে সমস্ত জমিদার হাতের পুতুল করে রেখেছিলেন নাম করবার মতো তাদের একজনও বেঁচে নেই।

সম্রাট প্রথম এডওয়ার্ডের এক বংশধরকে মাংস বেচে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। ডিউক অভ ক্লারেন্সের এক বংশধরকে স্ত্রপস্যারায় শহরে জুতো সারিতে হয়েছিল। বিলাতের শ্ৰেষ্ঠ জমিদার সাইমনের বংশের একজন লণ্ডন শহরে ঘোড়ার জিন তৈরী করতো।

অতীতকালে যাঁরা শ্রেষ্ঠ আসন অধিকার করেছিলেন, তাদের শক্তি ও সম্মান নতুন নতুন মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে।

তুমি ছোট আছ? মহত্ত্ব, সাধনা ও জীবন-সংগ্রামে তুমি জয়ী হও-জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের বিকাশ তোমাতে হোক—তোমার বড় আসন হবে।

রিচার্ড নামে এক দরিদ্র কৃষকশ্রেণীর যুবক বিলেতে এক মিলে কাজ করতো। সে-মিলে লোহার কাটা তৈরী হতো। এই মিলের ব্যবসা ক্রমে নষ্ট হতে লাগলো। কারণ, সুইডেন হতে এক রকম কাঁটা আসতো, সেগুলি যেমন সস্তা তেমনি মজবুত। যুবক রিচার্ড মিলে আপন মনে কাজ করতো আর ভাবতো, কি করে কাঁটাগুলি সুইডেনের কাঁটার মত সস্তা এবং মজবুত করা যায়?

কিছু দিন যায়—হঠাৎ একদিন রিচার্ডকে মিলে কাজ করতে দেখা গেল না। সকলে মনে করল, রিচার্ড আলসেমী করে সেদিন কাজ করতে আসেনি। বস্তুত তখন পাগলবেশে একখানা বেহালা কাঁধে ফেলে একটা মহা উদ্দেশ্য বুকের ভিতর চেপে রেখে সুইডেনের জাহাজে পাড়ি দিলেন। স্বদেশের এই লাভজনক ব্যবসাটিকে বাঁচিয়ে দেশের মানুষের সম্পদ অক্ষুন্ন রাখাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। তার গান গাইবার ক্ষমতা ছিল! যথাসময়ে সুইডেন পৌঁছে সেখানকার মিলওয়ালাদিগকে গানের দ্বারা মুগ্ধ করে একটা আধ-বোঝা বোকারূপে সে কারখানায় প্রবেশ করবার ও থাকবার অনুমতি পায়। সকলে মনে করতে লাগলো, লোকটির বুদ্ধি নাই—শুধু একটু গাইতে পারে। কেউ তাকে সন্দেহ করলো না।

কারোর সন্দেহের পাত্র না হয়ে রিচার্ড দেখতো, কি উপায়ে এরা কাটা তৈরী করে।তাদের মিলের বিশেষত্ব কোথায়, এমন করে কয়েক বছর কেটে গেল। এক প্ৰভাতে মিলওয়ালা দেখলো তাদের বহুদিনের সঙ্গী সেই চেনা পাগলা আর নাই।

রিচার্ড যখন বুঝেছিলেন, কাঁটা তৈরীর সব কৌশল শেখা হয়েছে তখনই তিনি পালিয়েছিলেন।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে তাঁর সহসা অন্তহিত হবার অর্থাৎ সুইডেন যাত্রার কারণ যখন সকলে জানলেন, তখন মহাজনেরা লাভের আশায় উৎসাহিত হয়ে রিচার্ডকে ম্যানেজার করে এক বৃহৎ কারখানা স্থাপন করলেন। রিচার্ডের নির্দেশ অনুযায়ী যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হলো, কিন্তু বড় দুঃখের বিষয় কল চললো না। সকলে নিরুৎসাহ হয়ে পড়লো-রিচার্ডও যথেষ্ট অপ্ৰস্তুত হলেন। রিচার্ড ভাবলেন, এত কষ্ট, অর্থ ও পরিশ্রম সবই কি বৃথা হলো। রিচার্ডের বিশ্বাস ও মনের বল কিন্তু কমলো না।

ভাবলেন তাঁর নিজের পর্যবেক্ষণের ভুল আছে। আবার তিনি একদিন ছদ্মবেশে দেশ ত্যাগ করে সুইডেন উপনীত হলেন।

বহুকাল পরে মিলওয়ালা তাদের পুরান বন্ধুকে দেখে খুবই খুশী হলো। এবার অধিকতর মনোযোগ ও অভিনিবেশ সহকারে তিনি তাদের মিল পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। আবার অনেক বছর তার সেখানে কেটে গেল।

অধ্যবসায়, মনোযোগ ও চেষ্টার ফলে সমস্ত ভুলের যখন মীমাংসা হয়ে গেল, তখন রিচার্ড আবার একদিন পলায়ন করেন। এবার আর তাকে অপ্ৰস্তুত

হতে হলো না।

ইংলন্ডের একটি অতি লাভজনক ব্যবসার পথ তিনি প্ৰস্তুত করলেন। স্বদেশের ধনসম্পদ তাঁর অমানুষিক চেষ্টার ফলে অনেক পরিমাণে বেড়ে গেল।

সম্রাট দ্বিতীয় চার্লস এই ত্যাগী মহাপুরুষের গুণ স্বীকার করে তাকে স্যার উপাধিতে ভূষিত করলেন। সামান্য কৃষকের সন্তান ইংলন্ডের শ্রেষ্ঠ মনীষী সম্পপ্রদায়ের আসন লাভ করলেন।

উইলিয়াম ফিলিপসের জীবন-কাহিনী অতি বিস্ময়জনক। সামান্য রাখাল বালক উইলিয়ম নিজের শক্তিতে সম্রাটের দ্বারা সম্মানিত হয়েছিলেন। রাখালের পক্ষে দেশের শ্রেষ্ঠ উপাধি লাভ করা সামান্য কথা নয়। মানুষ শক্তি ও গুণকে অবহেলা করে না। তাতে যে তাদের নিজেরই ক্ষতি। গুণ ও শক্তি মহা মানুষের অবলম্বন-পিতার নাম নহো জান না, খোদার কাছে গুণ ছাড়া অন্য কিছুর আদর নাই।

উইলিয়মের বাপ বন্দুক সারার কাজ করতেন। উইলিয়ম আর তার ভাইয়েরা একুনে ছিল ছাব্বিশ জন। সকল ভাই মজুরের কাজ করে ব্যাপকে সাহায্য করতো। উইলিয়ম গরু চরাতেন। রাখালের জীবন নিয়ে থাকতে উইলিয়াম জন্মেছিলেন না। ভিতরে তার শক্তি ঘুমিয়েছিল। তাঁর ইচ্ছা হলো উত্তাল সাগর তরঙ্গের সঙ্গে তিনি খেলা করেন। অন্তহীন নীলসমুদ্রের উপর দিয়ে জাহাজে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে তাঁর বাল্য হৃদয়ে ইচ্ছা হলো। কোন সুবিধা না হওয়ায় তিনি এক জাহাজের মিন্ত্রীর কাছে কাজ শিখতে লাগলেন। অল্প সময়ে জাহাজ নির্মাণে তিনি দক্ষ হয়ে উঠলেন। এই কাজ শিখবার কালে উঅবসর সময়ে তিনি বই পড়তেন। জাহাজের কাজ আরও ভাল করে শিখে তিনি বোস্টন শহরে নিজেই জাহাজ নির্মাণ আরম্ভ করেন। এখানে তিনি এক বিধবার পাণিগ্রহণ করেন।

ব্যবসা বেশ চলছিল। একদিন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন-সহসা কতগুলি লোকের মুখে শুনতে পেলেন, একখানা জাহাজ বহু দ্রব্যসম্ভারে পরিপূর্ণ হয়ে সমুদ্র দিয়ে আসছিল—পথে জলমগ্ন হয়েছে। যে এই জাহাজ উদ্ধার করতে পারবে, সে কোটি টাকা পুরস্কার পাবে।

ঘৃতের ভিতর আগুন দিলে যেন সে ভীষণ ভাবে জ্বলে ওঠে-এই শুভ সংবাদটিও তেমনি করে উইলিয়মের বুকের ভিতর উদ্যম ও আশার আগুন জ্বেলে দিলা সমুদ্রমগ্ন জাহাজটি যদি উদ্ধার করা যায়, তাহলে কত লক্ষ লক্ষ টাকা লাভ হয়।

অবিলম্বে উইলিয়ম নাবিক ও সব কিছু সংগ্রহ করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেন। এই জাহাজখানা ড়ুবেছিল আমেরিকার সন্নিকটে বাহামা দ্বীপপুঞ্জের কাছে।

উইলিয়মের আশা ও পরিশ্রম ব্যর্থ হলো না। তিনি ড়ুবোজাহাজের সন্ধান পেলেন এবং বহু মূল্যবান সামগ্ৰী উদ্ধার করলেন। কিন্তু বিস্তর খরচের সম্মুখে বিশেষ লাভ হলো না।

এর কিছুকাল পরে তিনি লোক মুখে গল্পকারে শুনতে পেলেন আর একখানা জাহাজের কথা। সেখানে সমুদ্রগর্ভে প্রচুর রত্নসামগ্ৰী নিয়ে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে একটি জাহাজ ড়ুবেছিলা জনশ্রুতি ও উড়ো কথাকে অবলম্বন করে উইলিয়ম নতুন করে রত্ন লাভের আশায় সাগর অম্বেষণে বহির্গত হতে ইচ্ছা করলেন।

উইলিয়মের অবস্থা তত ভাল ছিল না। ভাল হলেও একজন মানুষের পক্ষে অত বড় একটা ব্যয়সাপেক্ষ কাজ ঘাড়ে নেওয়া নিতান্তই অসম্ভব।

উপায়াত্তর না দেখে তিনি সমাট দ্বিতীয় চার্লসের কাছে সাহায্যের জন্য সকল কথা নিবেদন করলেন। তার কথা, উৎসাহ ও বিশ্বাস দেখে শেষকালে সম্রাট চার্লস তাকে সাহায্য করতে প্ৰস্তুত হলেন।

বিপুল উদ্যমে রত্ন উদ্ধার আশায় উইলিয়াম আবার সমুদ্র যাত্রা করলেন। যারা তাঁর সঙ্গে গিয়েছিল তাদেরও উৎসাহের সীমা ছিল না, তাদের দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছিল বহু অর্থ লাভ করে তারা বাড়ী ফিরবে।

নির্দিষ্ট স্থানে উপনীত হয়ে উইলিয়াম লোকজনসহ সমুদ্রগর্ভ অন্বেষণে ব্যাপৃত হলেন। অন্ধের মত অজানা রাজ্যে রত্বের সন্ধান করার কাজ সোজা নয়।

এইভাবে ক্লান্তি ও পরিশ্রমে মাসের পর মাস চলে যেতে লাগলো-কিন্তু কোন সুবিধা হলো না। ক্রমে নাবিকগণের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দিল। উইলিয়মের বিশ্বাস কিন্তু একটুও শিথিল হলো না।

একজন বিশ্বাসী কর্মচারীর সাহায্যে উইলিয়ম জানতে পারলেন তাকে সমুদ্রের ভিতর ফেলে দেবার ষড়যন্ত্র চলছে। জাহাজও স্থানে স্থানে ভেঙ্গে গিয়েছিল। অবশেষে নানা কারণে উইলিয়ামকে ফিরে আসতে হলো।

উইলিয়াম নিমজিত জাহাজ সম্বন্ধে আরও অনেক সংবাদ জেনেছিলেন। বিলেতে এসে তিনি সকলকে সেই জাহাজ সম্বন্ধে নতুন নতুন তথ্য জানালেন। তাঁর উৎসাহ একটুও কমেছিল না-নতুন মানুষ নিয়ে তিনি আবার সেখানে যাত্রা করতে ইচ্ছক হলেন। কিন্তু এবার সম্রাটের কাছে তার কথা ও বিশ্বাসের মূল্য হলো না।

অগত্যা তিনি সাধারণের কাছ থেকে দ্বিতীয় বার যাত্রার ব্যয় তুলতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু কে তাকে বিশ্বাস কররে? নতুন করে সাধারণের বিশ্বাস জন্মতে তাঁর দীর্ঘ চার বছর ধরে চেষ্টা করতে হয়েছিল। দীর্ঘ চার বছরের চেষ্টায় কেউ কেউ তাকে বিশ্বাস করতে অগ্রসর হলেন।

সাধারণের অর্থ সাহায্যে উইলিয়ম চার বছর পরে নতুন জাহাজে আবার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেন। আগের মতই দিনের পর দিন, মাসের পর মাস সমুদ্রতল অন্বেষণে কেটে যেতে লাগল। উইলিয়ম মাঝে মাঝে ভাবতে লাগলেন, তার বিশ্বাস কি মিথ্যা হলো?

হঠাৎ একদিন একজন ড়ুবুরি জলের তল থেকে উঠে বললো, একখানা জাহাজের পাটাতনের মত কি যেন আমার হাতে ঠেকেছে।

বিপুল উদ্বেগে উইলিয়ম আরও কয়েকজন ড়ুবুরি পাঠালেন। কয়েক মুহূর্তের ভিতর একজন এক খণ্ড সোনার টুকরা নিয়ে ভেসে উঠলো। উইলিয়ম আনন্দে করতালি দিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন-ভাগ্য আমাদের ফিরেছে—আর ভয় নাই।

এত পরিশ্রম, আশা ও বিশ্বাস ব্যর্থ হলো না। উইলিয়মের অধ্যবসায় ও সাধনার মূল্যস্বরূপ কয়েকদিনেই ড়ুবোজাহাজ হতে ৪৫,০০,০০০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হলো।

ইংলণ্ডে উইলিয়ম যখন প্ৰত্যাবর্তন করলেন তখন অনেকে সম্রাটকে বলেছিলেন—এই অর্থে উইলিয়মের কোন দাবী নাই, এসবই রাজ্যভাণ্ডারের প্ৰাপ্য। উইলিয়ম ভাল করে সব কথা সরকারকে জানিয়ে ছিল না, এই অপরাধে তার সমস্ত টাকা বাজেয়াপ্ত করা হউক।

ন্যায়নিষ্ঠ সম্রাট সে কথায় কৰ্ণপাত না করে কঠোর সাধনা ও অধ্যবসায়কে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করলেন। তিনি উইলিয়ামকে স্যার উপাধি প্ৰদান করে শ্রেষ্ঠ আভিজাত্যের গৌরব প্ৰদান করলেন।

উইলিয়ম শেষ বয়স পর্যন্ত বিনয়ী ও সরল ছিলেন। তিনি কখনো কারো কাছে তাঁর পূর্ব জীবনের ইতিহাস গোপন করতেন না। হীন বংশে তাঁর জন্ম হয়েছিলো— আত্মশক্তিতে তিনি উচ্চাসন ও বিলেতের শ্রেষ্ঠ সম্মান লাভ করেন— একথা বলতে তিনি সব সময়েই গৌরব বোধ করতেন।

উইলিয়াম পেটিট বলে এক মহাত্মার কথা জানি। তাঁর বাপের ছিল। কাপড়ের দোকান। পেটিট ফরাসী দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। সেখানে যেভাবে তিনি কলেজ ও নিজের ব্যয় নির্বাহ করতেন, তা শুনলে তোমাদের অনেকের মনে সাহস আসবে। কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় ছোট ছোট মনোহারী দোকান দেখেছ? পেটিট তেমনি করে পথে পথে ফেরী করে ছাত্রজীবনের ব্যয় সংগ্ৰহ করতেন।

পড়া এক রকম শেষ হলে তিনি দেশে ফিরে এক জাহাজে চাকরি গ্ৰহণ করেন। সে কাজ তার পোষাল না।

জাহাজের কাপ্তান তাঁকে একদিন অপমান, এমনকি প্রহার করেন। ঘৃণায় ও লজ্জায় পেটিটি কাজ পরিত্যাগ করে পৌরী শহরে ডাক্তারী পড়তে চলে গেলেন।

পেরী শহরে এসে তার যারপরনাই কষ্ট হতে লাগিল। খালি পেট জলে ভর্তি করে অনেক সময় তাকে পড়ে থাকতে হতো।

এই দুঃখ ও অভাবের মধ্যেই অতি কষ্টে কয়েকটি টাকা সংগ্রহ করে। পেটিট আগের মতো আবার ফেরী করা আরম্ভ করলেন। ফেরী করেই তিনি ডাক্তারী পড়া শেষ করলেন।

ডাক্তারীর সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যসেবা করতে লাগলেন। ক্রমে তার শক্তি ও প্রতিভার সুখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো-দেশের মানুষের শ্রদ্ধা। তিনি লাভ করতে আরম্ভ করলেন। নানা বিষয়ে তিনি প্ৰবন্ধ লিখতেন। চিত্তা-কখনো দর্শনের জটিল তত্ত্বে, কখনো অঙ্কশাস্ত্রে, কখনও কাপড় তৈরীর পন্থা নির্ধারণে, কখনও রং প্ৰস্তুত করবার কৌশল নির্বাচনে নিবদ্ধ থাকতেন।

ব্যবসা করে পেটিটি যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করেছিলেন। এই কমী উইলিয়াম পেটিটের গুণ ও শক্তি-সাধনা সম্রাট শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করেছিলেন। সম্রাট কর্তৃক উইলিয়ম শ্ৰেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।

নেলসন ও ওয়েলিংটন আদৌ বনেদী ঘরের ছেলে নন-অথচ বৃটিশ জাতির পিতা তাঁরাই। বিলেতের এক লর্ড একখানা ছোট স্যাতসেঁতে গর্তের মতো ঘরের দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে তাঁর ছেলেকে একদিন বলেছিলেন—ঐ ঘরখানিতে তোমার বুড়ো দাদা মানুষকে ক্ষেউরি করতেন। তোমার দাদা ছিলেন। নাপিত—আমি হয়েছি। লর্ড। শক্তি-সাধনায় মানুষ বড় হয়—এই বিশ্বাস দেবার জন্য তোমাকে এখানে এনেছি।

উনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরুষ গোখেল ছিলেন দরিদ্র সস্তান। নিজের শক্তিতে তিনি ভারত ছাড়া বিদেশেও উচ্চাসন ও শ্রদ্ধা লাভ করেছিলেন। স্যার উপাধি গ্রহণ করতে তিনি স্বীকৃত হন নাই। দরিদ্র গোখেল নিজেকে কত উচ্চ আসন দিতে পেরেছিলেন।

সম্রাট সবুক্তশীন ছিলেন ক্রীতদাস। কুতুবুদ্দীন ও পরের কতিপয় সম্রাট ছিলেন দাস। দাসের জীবন হতে হয়েছিলেন তারা সম্রাট-মানুষের মহাসেবকজগতের ধর্ম, সভ্যতা ও শান্তিরক্ষক।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *