• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

০২. শহরের একপ্রান্তে বিশাল প্ৰাসাদ

লাইব্রেরি » সমরেশ মজুমদার » সমরেশ মজুমদারের উপন্যাস সমগ্র » আট কুঠুরি নয় দরজা - সমরেশ মজুমদার » ০২. শহরের একপ্রান্তে বিশাল প্ৰাসাদ

দুই

শহরের একপ্রান্তে এই বিশাল প্রাসাদটিকে লোকে এড়িয়ে যায়। ওই বাড়ির ভেতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে যাকে নিয়ে যাওয়া হয় তার অস্থি নিতে আত্মীয়দের যেতে হয় শ্মশানে। সেই দাহ দেখতেও দেওয়া হয় না, কারণ ইলেকট্রিক চুল্লিতে ঢোকানোর পরই আত্মীয়দের কাছে যেতে দেওয়া হয়। বাড়িটার বয়স একশ বছর। ব্রিটিশরা কেন বানিয়েছিল তা নিয়ে অনেক গল্প চালু আছে। আপাতত এটি রক্ষীবাহিনীর মূল কার্যালয়।

পুরো বাড়িটাই পাহাড় কেটে বসানো। দশহাত লম্বা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। ঢোকার দরজা একটাই। তারপর বিশাল চাতাল। সেখানে কুকুরের মত ওত পেতে বসে আছে জিপগুলো। যে-কোনও মুহূর্তে সংকেত পেলেই ছুটে যায় ড্রাইভার।

দোতলার একটি ঘরের সামনে অফিসাররা একে একে পৌঁছে গেলেন। ঘরের দরজা বন্ধ। পুলিশ কমিশনার জরুরি তলব দিয়েছেন। তিনি মিটিং করবেন। এমন ব্যাপার সচরাচর হয় না। সি পি কারও সঙ্গে পরামর্শ করার প্রয়োজন মনে করেন না। তাই আজ তলব পেয়ে প্রত্যেকেই একটু নার্ভাস।

পুলিশ কমিশনার ভার্গিসের শরীরটা বেশ ভারী। মুখটা বুলডগের মত বলে মনে করে না নিন্দুকেরা। তাঁকে কেউ কখনও হাসতে দ্যাখেনি। যে সি পিকে হাসতে দেখবে তাকে এক বোতল স্কচ উপহার দেওয়া হবে বলে জুনিয়ার অফিসার ক্লাবে একটা ঘোষণা রয়েছে। অবশ্যই গোপন ঘোষণা এবং এখনও পর্যন্ত পুরস্কারের দাবিদার পাওয়া যায়নি।

ঠিক সময়ে দরজা খুলে গেল। অফিসাররা বিরাট ঘরে ঢুকে দেখলেন সি পি জানলায় দাঁড়িয়ে নীচের চাতাল দেখছেন। তাঁর চওড়া পিঠ এবং মাথার পেছনের টাক দেখা যাচ্ছে। গম্ভীর গলায় হুকুম এল, ‘সিট ডাউন জেন্টলমেন।’

অফিসাররা বসলেন। দুজন অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার, চারজন ডেপুটি। মাঝখানে বড় টেবিল, টেবিলের ওপাশে দামি চেয়ার।

পকেট থেকে একটা চুরুট বের করে তার একটা প্রান্ত দাঁতে কাটতে কাটতে সি পি ঘুরে দাঁড়ালেন, ‘আমার দুর্ভাগ্য কি তোমরা জানো?’

অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনারদের মধ্যে যিনি সিনিয়ার তিনিই জবাব দেবার অধিকারী। কিন্তু জবাবটা তাঁরও জানা ছিল না। সি পি নিজের চেয়ারে এসে সময় নিয়ে চুরুট ধরালেন। ঘরে দেওয়াল ঘড়ির আওয়াজ ছাড়া কোনও শব্দ ছিল না।

এক গাল ধোঁয়া ছেড়ে সি পি বললেন, ‘একপাল নিরেট গর্দভকে নিয়ে আমাকে কাজ করতে হচ্ছে। সোম, তুমি কথাটা স্বীকার করো না?’

অপমানটাকে হজম করে নেওয়া এখন অভ্যেসে চলে এসেছে। সোম ঠোঁট চেটে নিলেন, ‘স্যার, আমরা চেষ্টা করছি।’

‘চেষ্টা? ওঃ, আমি অনেকবার বলেছি আমার চাই এন্ড প্রোডাক্ট। তুমি অনেক চেষ্টা করে যদি জিরো পাও তাহলে আমি তোমাকে বাহবা দেব না। তোমাদের তো মজা, খাচ্ছ দাচ্ছ আর ক্লাবে গিয়ে ফুর্তি করছ। অসহ্য।’

সোম বললেন, ‘আমার বিশ্বাস চিতা আর বেশিদিন বাইরে থাকবে না।’

‘কিসে তোমার এই বিশ্বাস এল সোম?’

‘আমরা চারপাশ থেকে ওকে ঘিরে ফেলেছি। পাশের পাহাড়টাতেই ওকে থাকতে হয়েছে। এই শহরে ঢুকতে গেলে ওকে অনেকগুলো পুলিশ-চৌকি পেরিয়ে আসতে হবে। এবার আর সেটা সম্ভব নয়।’ গম্ভীর গলায় বললেন সোম।

‘পাশের পাহাড়ে চিতাটা আছে আর তুমি এখানে বসে কেন?’

‘স্যার, অতবড় পাহাড় জঙ্গলে চিরুনি অপারেশন চালাতে গেলে যে ফোর্স দরকার তা আমাদের নেই। ও সহজেই পালিয়ে যেতে পারে।’

‘ধরো ও এল না, এই শহরেই ঢুকল না, তাহলে?’

‘এখানে না এসে ও পারবে না স্যার!’

‘কেন?’

‘এখানকার মানুষ ওকে ভালবাসে।’

‘কে বলল?’

‘এটাই খবর।’

‘পরশুদিনের উৎসবে কত লোক শহরে জমবে?’

‘এক লক্ষ দশ, এমন অনুমান করা যাচ্ছে।’

‘তার মানে প্রায় প্রতিটি রাস্তায় লোক থিকথিক করবে।’

‘উপায় নেই স্যার। ধর্মীয় উৎসব, বন্ধ করা যায় না।’

‘আর সেই জনসমুদ্রে যদি তোমার চিতা মিশে থাকে তুমি তার ল্যাজও ছুঁতে পারবে না। এই পরশুদিনটার কথা ভেবে আমার ঘুম চলে গিয়েছে। কখন কোন দিক থেকে আক্রমণ হবে কেউ জানি না।’

দ্বিতীয় অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার উশখুশ করছিলেন। নীরবে সোমের অনুমতি নিয়ে তিনি বললেন, ‘স্যার, একটা ব্যাপার লক্ষণীয়, গত একমাস চিতা চুপচাপ আছে।’

‘বেশ তো নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও। যে কোনও স্তব্ধতা মানে বড় আক্রমণের প্রস্তুতি। আমি অনেকবার ভেবেছি লোকটাকে সবাই চিতা বলে কেন!’

সোম বললেন, ‘ও চিতার মত ধূর্ত, তাই।’

সি পি ঠোঁট মুচড়ালেন, ‘তোমরা কেউ চিতা দেখেছ?’

‘হ্যাঁ স্যার। পাশের জঙ্গলেও একটা চিতা আছে। লোকে অবশ্য তাকে পাগলা চিতা বলে থাকে।’ সোম জানালেন।

‘আটবছর পরে যখন আমি অবসর নেব তখনও তোমার এক বছর চাকরি থাকার কথা। তুমি সি পি হলে ফোর্সের অবস্থা কিরকম হবে তা ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়। সোম, চিতা একটি বিরল প্রাণী। যাদের লোকে চিতা বলে তারা ছোট সাইজের বাঘ। লেপার্ড। চিতা নয়। শুধু মুখের দাগে নয় ওর চালচলনই আলাদা। পৃথিবীর সর্বত্র চিতা কমে আসছে। আমি প্রমাণ করতে চাই তোমাদের এই লোকটি লেপার্ড হলেও হতে পারে, চিতা নয়। গত তিনবছরে ও কটা খুব করেছে?’

সোম বললেন, ‘বাইশটা। সবগুলো অবশ্য ও নিজে নয়।’

‘পুলিশের একজন সেপাই কিছু করলে জবাবদিহি আমাকে দিতে হয়। আর আমরা ওদের কজনকে ধরতে পেরেছি? তিনজনকে। ধরামাত্রই আত্মহত্যা করেছে তারা। কি সুন্দর লড়াই। তুমি যদি চিতা হতে আর পরশুদিন উৎসব থাকত তাহলে কি চুপচাপ বসে থাকতে? সুযোগ নিতে না?’

ঢোক গিললেন সোম, ‘হ্যাঁ স্যার।’

‘সেক্ষেত্রে অবশ্য আমি তোমাকে ছারপোকার মত পিষে মারতাম। কিন্তু ওই লোকটাকে পারছি না। তিন বছর ধরে ও আমাকে নাচিয়ে বেড়াচ্ছে আর সেটা সম্ভব হচ্ছে তোমাদের মত ইট মাথার তোক ফোর্সে আছে বলে। দশ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করার পর কটা খবর এসেছে?’

‘তিনটে। তাও টেলিফোনে। তিনটেই ভুয়ো খবর।’

‘এই শহরের লোকের কাছে তাহলে দশ লক্ষ টাকার চেয়ে ওই বদমাসটা বেশি মূল্যবান। তখন তো বলেছিলে ঘোষণা করার তিনদিনের মধ্যে খবর পাওয়া যাবে। শোনো, তোমাদের স্পষ্ট বলছি পরশুদিন ওকে আমার চাই-ই।’

‘পরশুদিন?’ সোম বিড়বিড় করলেন।

‘হ্যাঁ। পরশুদিন ও এই শহরে আসবেই। শহরের সব রাস্তায় চব্বিশঘন্টা পাহারা বসাও। দশ লক্ষ টাকার কথা প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর মাইকে ঘোষণা করা হোক। শুনতে শুনতে মানুষের নার্ভে যেন আঘাত লাগে। সি পি কথা শেষ করামাত্র টেলিফোন বাজল।

খুব বিরক্ত মুখে তিনি রিসিভার তুলে হ্যালো বললেন। ওপাশ থেকে কিছু শোনামাত্র সকলে দেখল সি পি সোজা হয়ে বসলেন।

‘ভার্গিস?’

‘ইয়েস সার।’

‘এইমাত্র আমাকে জানানো হয়েছে তুমি মাত্র তিনদিন সময় পাচ্ছ। এই তিনদিনের মধ্যে যদি তুমি পাহাড়ি চিতাটাকে খাঁচায় না ভরতে পারো তাহলে প্রমোশনের সময় যে রেজিগনেশন লেটারটা আমাকে দিয়েছিলে তাতে তারিখ বসিয়ে নেওয়া হবে। মনে রেখো, মাত্র তিনদিন অপেক্ষা করবেন তাঁরা।’ খুব ঠাণ্ডা গলায় শব্দগুলো উচ্চারিত হল। ভার্গিস কেঁপে উঠলেন। ভাঁর গলা জড়িয়ে গেল, ‘স্যার! তিনদিন খুব অল্প সময়।’

‘তিনদিন মানে তিনদিন। তুমি জানো আমাকে কাদের কথা শুনতে হয়। কাজ না হলে আমার কাছে তুমিও যা সোমও তা।’ লাইনটা কেটে গেল। এমন গলায় অনেকদিন কথা বলেননি মিনিস্টার। লোকটার অনেক উপকার করেছে ভার্গিস। টাকা পয়সা থেকে মেয়েমানুষ কি পাঠায়নি? অথচ আজ একদম অন্য গলা? যারা মিনিস্টারকে নির্দেশ দিয়েছে তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে একটা অনুমান আছে ভার্গিসের, হাতে প্রমাণ নেই। এখন বিশ্বাস হল, তাঁর মত মিনিস্টারের লেখা তারিখবিহীন পদত্যাগপত্র ওদের হাতে এসেছে।

রুমালে ঘাম মুছলেন ভার্গিস। তাঁর চোখ এবার সসামের দিকে। হারামজাদা নিরীহ মুখে তাকিয়ে আছে কিন্তু মনে মনে জানে তিনি যত নাজেহাল হবেন তত ওর সামনে সি পির চেয়ার এগিয়ে আসবে। আসাচ্ছি! তিনদিনের মধ্যে এই হুতোমটাকে ফাঁসাতে হবে।

নিঃশ্বাস ফেললেন ভার্গিস! এরা কেউ নিশ্চয়ই বুঝতে পারেনি ওই টেলিফোনটা কে করেছিল এবং কি বলেছে। তিনি উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর হাঁটু কাঁপছিল; ‘জেন্টলমেন, আমি তিনদিন সময় দিচ্ছি। সেভেনটিটু আওয়ার্স। এর মধ্যে ওকে খুঁজে বের করতে হবেই। নো এস্কিকিউজ’।

‘ভার্গিসকে উঠে দাঁড়াতে দেখে অফিসাররা চেয়ার ছাড়লেন। ওঁদের মুখগুলো শুকিয়ে গিয়েছিল। সোম বলতে চেষ্টা করলেন, ‘স্যার তিনদিন— ।’

তাঁকে কথা শেষ করতে দিলেন না ভার্গিস, ‘ওটাই হুকুম।’

অফিসাররা বেরিয়ে গেলেন। আধঘন্টার মধ্যে সমস্ত শহর জুড়ে পুলিশ তাণ্ডব শুরু করে দিল। মাইকে ক্রমাগত দশ লক্ষ টাকার কথা ঘোষণা করা হচ্ছিল। ভার্গিস তাঁর অফিসের পাশের দরজা খুলে করিডোর দিয়ে হেঁটে চলে এলেন নিজস্ব বাসভবনে। বিলাসের সমস্ত ব্যবস্থা এখানে। তিনি বিয়ে করেননি। যৌবনে কোনও নারী তাঁকে স্বামী হিসেবে বরণ করার কথা ভাবেনি না তিনি সময় পাননি এ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।

সোফাতে গা এলিয়ে দিয়েও ভার্গিস স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। মিনিস্টারের কাছে তিনি এবং সোম একই পর্যায়ের, একথা মন থেকে সরাতে পারছিলেন না। তিনদিন বড় কম সময়। তিনদিনে কিছু হবার সম্ভাবনাও তিনি দেখছেন না। আর এমনি এমনি দিনগুলো কেটে গেলে চতুর্থদিনে এই ইউনিফর্ম খুলে ফেলতে হবে। আর সেরকম হলে তিনি অবশ্যই এই শহরে থাকবেন না অবশ্য সেরকম হবার কথা তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারছেন না। হঠাৎ তাঁর মাদামের কথা মনে এল। এই শহরের সবচেয়ে দামি মহিলা। পৃথিবীর কেউ জানুক বা না জানুক ভার্গিস জানেন মিনিস্টারের টিকি ওঁর কাছে বাঁধা আছে। ভার্গিস নিজস্ব লাইনে টেলিফোন করলেন ম্যাডামের বিশেষ নম্বরে। দু’বার বাজতেই ম্যাডামের গলা পাওয়া গেল, ‘কে?’

‘নমস্কার ম্যাডাম। আমি ভার্গিস বলছি।’

‘ও ভার্গিস। আমি তোমার জন্যে দুঃখিত।’

‘আপনিও খবরটা জানেন?’ ভার্গিস অবাক।

হাসির শব্দ বাজল, ‘আপনিও মানে?’

‘সরি। ম্যাডাম, আমি অতীতের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই না কিন্তু আজ আপনার কাছে একটু সাহায্য আশা করতে পারি না?’

‘লোকটাকে ধরে ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়।’

‘এখনও সেটাই সম্ভব হয়নি।‘

‘তিনদিন পরে তোমাকে স্যাক না করলে মিনিস্টারকে পদত্যাগ করতে হবে। শোনো, আমার উপদেশ হল, এই তিনদিন চুটিয়ে জীবনটা উপভোগ করো। বাই।’ ম্যাডাম লাইন কেটে দিলেন।

দেবেনই তো। যখন ওঁর হেলথসেন্টার নিয়ে পাবলিক খেপে গিয়েছিল তখন তিনিই বাঁচিয়েছিলেন। ছয়মাস ধরে রোজ ভোর তিনটে থেকে চারটে পর্যন্ত বর্ডার থেকে সেপাই সরিয়ে নিয়েছিলেন তিনি যাতে ম্যাডামের লোকজন বিনা বাধায় যাওয়া আসা করতে পারে। আর এসব করেছিলেন মিনিস্টারকে প্রফুল্ল রাখতে। ভার্গিসের হাত নিশপিশ করতে লাগল। একেবারে মুর্খের মত তিনি কিছু করেননি। প্রমাণ রেখেছেন। সেগুলো সব এই ঘরের আলমারিতে মজুত আছে। যদি পদত্যাগ করতেই হয় সেগুলোকে আর আগলে রাখবেন না।

ভার্গিস টেলিফোন তুললেন, ‘সোম, নীচে নেমে এস। শহরটাকে দেখব।’

তৈরি হয়ে নিলেন ভার্গিস। হ্যাঁ, সোম এর মধ্যে দুদিন ম্যাডামের ওখানে গিয়েছে এই খবর তিনি পেয়েছেন। হেলথ ক্লিনিকে আরাম করতে পুলিশ অফিসারের যাওয়া নিষেধ আছে। শুনেছেন, কিছু বলেননি।

ঘর থেকে বেরিয়ে স্যালুট উপেক্ষা করতে করতে ভার্গিস মূল বারান্দায় চলে এলেন। তাঁর হিলের শব্দে চারপাশের সেপাইরা তটস্থ হয়ে উঠছিল। বাঁক ঘোরার সময় পোস্টারটা নজরে এল। এখানে এটা সেঁটে দেবার বুদ্ধি কার হয়েছে? বরং এটাকে কোনও দেওয়ালে সেঁটে দিলে কাজ হত। নির্বোধের দল।

পোস্টারটায় চোখ পড়তেই তাঁর পেটের ভেতরটা চিনচিন করে উঠেছিল। ওপরে লেখা, দশ লক্ষ টাকা পুরস্কার। মাঝখানে লোকটার ছবি। ঠোঁটের মিচকে হাসিটা মারাত্মক। নীচে লেখা, আকাশলালকে জীবিত অথবা মৃত চাই।

দশ লক্ষ টাকা। আশ্চর্য! তবু খবর নেই।

ভার্গিস হাঁটতে লাগলেন। সিঁড়ি ভেঙে নীচে এসে দেখলেন সোম ইতিমধ্যে নেমে এসেছে। কাছাকাছি পৌঁছে বললেন, ‘শহরটা দেখব।’

‘ইয়েস স্যার।’

ভার্গিস সি পির জন্যে নির্দিষ্ট গাড়িতে উঠলেন।

উঠে দরজা বন্ধ করে দিলেন। অগত্যা সোমকে আর একটা গাড়ি নিতে হল। ওদের পেছনে সেপাইদের ভ্যান।

চাতাল পেরিয়ে গেট-এর কাছে আসতেই ভার্গিস একটা জটলা দেখতে পেলেন। এখানে গার্ডদের জটলা করা ঠিক নয়। গাড়ি থামিয়ে তিনি চিৎকার করলেন, ‘আড্ডা মারা হচ্ছে, অ্যাাঁ?’

সঙ্গে সঙ্গে সেপাইরা সোজা হয়ে স্যালুট করল। একজন খুব ঝুঁকে ভয়ে ভয়ে নিবেদন করল, ‘স্যার, এই লোকটা।’ বেচারার পক্ষে কথা শেষ করা সম্ভব হল না আতঙ্কে। ভার্গিস দেখলেন একটা শীর্ণ চেহারার লোককে ওরা ধরে রেখেছে। জামাকাপড় ময়লা এবং ছেঁড়া। তিনি দেখলেন সোম তাঁর গাড়ি থেকে নেমে ওইদিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। ভার্গিস মনে মনে বললেন, ‘রাবিশ! যেখানে দরকার নেই সেখানেই কাজ দেখাবে!’

সোম সামনে যেতেই সেপাইরা ব্যাপারটা জানাল। লোকটা সি পির সঙ্গে দেখা করতে চায়। কেন দেখা করবে কাউকে বলছে না। ওরা ভয় দেখিয়েছে ভেতরে ঢুকলে হাড় ছাড়া কিছু পাওয়া যাবে না তবু জেদ ছাড়ছে না। সোম সেপাইদের সরে যেতে বললেন। একটু আলাদা হতেই চাপা গলায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি চাস তুই?’

‘দশ লক্ষ টাকা।’ লোকটা হাসল।

‘পেটে ক্যাঁক করে এমন লাথি মারব হাসি বেরিয়ে যাবে।’

‘বাঃ, আপনারাই তো বলেছেন খবর দিলে টাকা পাওয়া যাবে।’

‘কোথায় দেখেছিস ওকে?’

‘টাকাটা পাব তো?’

সোম আড়চোখে দৃরে দাঁড়ানো কমিশনারের গাড়ি দেখলেন। বেশি দেরি করা উচিত মনে হচ্ছে না। তিনি মাথা নাড়তেই লোকটা বলল, ‘চাঁদি হিলসে।’

উত্তেজনায় টগবগিয়ে উঠলেন সোম, ‘কোন বাড়ি?’

‘বাইশ নম্বর। জানলায় এসে দাঁড়িয়েছিল। নীচে লন্ড্রি আছে।’

সোম সেপাইদের কাছে চলে এলেন, ‘আমরা চলে যাওয়ার পাঁচ মিনিট বাদে ওকে এমন ভাবে মারবে যাতে না মরে।’

তারপর তিনি সোজা এগিয়ে গেলেন সি পির গাড়ির সামনে। উত্তেজনা চেপে রাখতে তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছিল।

‘কি ব্যাপার?’ ভার্গিস হুঙ্কার ছাড়লেন।

‘মাথায় গোলমাল আছে।’

‘সেটা জানতে তোমাকে যেতে হয় কেন? চলো।’ সিপির গাড়ি ছাড়ল।

নিজের গাড়িতে বসে সিগারেট ধরালেন সোম। শহর দেখতে হলে তাঁদের চাঁদি হিলস দিয়েই যেতে হবে। দশ লক্ষ টাকা আঃ। একেই বলে যোগাযোগ। হ্যাঁ, লোকটা ধরা পড়লে সিপির চাকরি বাঁধা। তাঁর প্রমোশন বন্ধ। কিন্তু দশলক্ষ টাকার জন্যে আপাতত প্রমোশন উপেক্ষা করতে পারেন তিনি। সিপি হলে তো কাঁটার চেয়ারে বসতে হবে। একবছর বসলেই তাঁর চলে যাবে।

রাস্তায় এর মধ্যেই লোক জমছে। শহরের বাইরে থেকে লোক আসতে শুরু করেছে। দেবতার মূর্তি মাথায় নিয়ে পরশু প্রসেসন বের হবে। তবে আজই পুলিশ বেশ নজরে পড়ছে। সেইসঙ্গে সমানে চলছে দশ লক্ষ টাকার ঘোষণা।

চৌমাথায় এসে সিপির গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়তেই সোম নিজের গাড়ি থেকে নেমে ছুটলেন। ভার্গিস তাঁকে বললেন, ‘বাঁ দিকের রাস্তাটায় নো এনট্রি করে দাও আগামী তিনদিন। কেউ ওখানে ঢুকতে পারবে না।’

‘কিন্তু।’

‘নো কিন্তু। যত চাপ পড়ুক অন্য রাস্তায় এটা আমার খোলা চাই। তাহলে যে কোনও জায়গায় ফোর্স সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছাতে পারবে।’

‘ঠিক আছে স্যার।’

কনভয় এগোল। চাঁদি হিলসে ঢুকছে গাড়িগুলো। সোম বাড়ির নম্বর দেখলেন। এক দুই, পর পরই আছে। কুড়ি একুশ পার হবার সময় তিনি হুইস্‌ল বাজালেন। বাইশ নম্বরের নীচে লন্ড্রি।

সামনের গাড়ি থেমে যেতেই তিনি ছুটে গেলেন, ‘স্যার, স্যার— !’ উত্তেজনায় কথা বন্ধ হয়ে গেল সোমের।

‘কি ব্যাপার?’ বিরক্ত হলেন ভার্গিস।

‘ওকে দেখতে পেলাম। ওই জানলায়।‘

‘কাকে?’

‘চিতা, আই মিন, আকাশলাল।’

সঙ্গে সঙ্গে ভার্গিসের নির্দেশে বাড়িটাকে ঘিরে ফেলা হল। ওয়ারলেসে খবর গেল, ‘আরও সেপাই পাঠাও।’

মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বাহিনী তৈরি। ভার্গিস হুকুম দিলেন, ‘ফায়ার করো।’ সঙ্গে সঙ্গে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে কাচ ভেঙে পড়তে লাগল ওপরের জানলা থেকে। সোম উত্তেজিত গলায় বলল, ‘দরজা ভাঙব স্যার?’

মাথা নাড়লেন ভার্গিস। হ্যাঁ। কিন্তু তাঁর চোখ ছোট হয়ে এল। ওপরের ঘরে আলো জ্বলছে। কেউ যদি জানলায় এসে দাঁড়ায় তাহলে কাচের আড়ালে তাকে সিল্যুট দেখাবে। মুখচোখ দেখতে পাওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে সোম কি করে লোকটাকে দেখতে পেল!

মিনিট পাঁচেকের মধ্যে সব ঘর তছনছ করে সোম রিভলভার হাতে সেই ঘরটিতে ঢুকলেন। বাড়িটার অন্যঘরের মত এখানেও কোনও মানুষ নেই। শুধু টেবিলের ওপর পেপারওয়েটের নীচে একটা কাগজ চাপা রয়েছে। সেইটে পড়ে সোমের মনে হল তাঁর হাঁটু দুটো নেই।

‘কি ওটা?’ পেছন থেকে ভার্গিসের গলা ভেসে এল।

কাঁপা হাতে সোম কাগজটা এগিয়ে দিলেন। ওপরে ভার্গিসের নাম লেখা।

ভার্গিস পড়লেন, ‘আগামী পরশু সকাল ন’টায় টেলিফোনের পাশে থাকবেন। দারুণ সুসংবাদ আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে। আকাশলাল।’

ভার্গিস চিরকুটটা হাতে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন। সোম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। ভার্গিসের হুঙ্কার শোনা গেল, ‘তোমার রিভলভারটা দাও।’

Category: আট কুঠুরি নয় দরজা - সমরেশ মজুমদার
পূর্ববর্তী:
« ০১. দুরন্ত গতিতে লাল মারুতিটা ছুটে যাচ্ছিল
পরবর্তী:
০৩. এই পরিকল্পনায় ঝুঁকি আছে »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑