রাত নিঝুম - ১
রাত নিঝুম - ২

২৬. শেষের কথা

শেষের কথা

পানুর ঘুম ভেঙে যায়। নিঃশব্দ নিঝুম জমিদার বাড়ি।

আঁধারে বাগানের গাছপালা গুলি রাতের চোরা হাওয়ায় যেন মাঝে মাঝে কেঁপে কেঁপে ওঠে। ওই দুরে শুকতারা। একাকী বোবা পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে জেগে থাকে, ঘুম আসছে না পানুর, শয্যার উপর উঠে বসল।

শয্যার উপরে বসে বসে কিছুক্ষণ যেন কি ভাবল।

সুইচ টিপে আলো জুলিয়ে দেখলে, রাত্রি দেড়টা।

পানু শয্যা থেকে উঠে নীচে নেমে দাঁড়াল।

সেই রাত্রে নৌক ভাড়া করে পানু জোয়ারের টানে শ্ৰীরামপুর এসে যখন পৌঁছল তখন রাত্রি শেষ হতে আর দেরী নেই। পূব গগনে উষার অরুণ আলোর আভাস জেগেছে।

প্রাচীর টপকে পানু তীর পরিচিত গৃহে গিয়ে ঢুকল… মেঝের উপরে রমা উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে।

পানু ধীর পদে গিয়ে তার মাথার কাছটিতে বসল।

মা? ও, মা। পানু তার হাতটি রমার মাথার উপরে রাখলে।

মাগো।

কে, ধড়ফর করে রমা উঠে বসে।

আমি পানু।–

পানু এসেছিস বাবা। দুহাতে গভীর স্নেহে রমা পানুকে বুকের মধ্যে টেনে নেয়। দুজনের চোখের কোল বেয়ে অশ্রুধারা নামে।

পানুর গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে গভীর স্নেহে রমা বলে, এত রোগা হয়ে গেছিস কেন বাবা?

পানু নীরবে মায়ের বুকে মুখ গুজে মাথাটা ঘষতে থাকে। তারপর কত কথা যে দু’জনে বলে—কখন একসময় পরমেশবাবু চৌকাঠের উপরে এসে দাঁড়িয়েছেন-কারুরই তা খেয়াল নেই।

একি পানু?

পানু চমকে চেয়ে দেখে ভোরের প্রথম আলোয় ঘরের অন্ধকার কখন দূর হয়ে গেছে। চৌকাঠের উপর দাঁড়িয়ে দাদু।

হ্যাঁ দাদু আমি। আমি আবার তোমাদের কাছেই চলে এলাম, মাকে ছেড়ে থাকতে পারলাম না। বলতে বলতে সস্নেহে পানু দুহাতে রামার গলা জড়িয়ে ধরে।

পরমেশবাবুর চোখের কোল দুটি জলে ভরে উঠল।

সকালবেলাই পরমেশবাবু ডাকঘরে গিয়ে শশাঙ্কমোহনকে ‘তার’ করে দিলেন : পানু আমার এখানে এসেছে, চিন্তার কোন কারণ নেই।

বেলা-বারোটায় ‘তারের’ জবাব এলো, নিশ্চিন্ত হলাম। সে নিরাপদ জেনে, আর সুখী হলাম, সে স্নেহ ও ভালবাসাকে ভুলতে পারেনি জেনে, বিকেলের দিকেই আমরা যাচ্ছি। তারপর অন্যান্য ব্যবস্থা হবে।

শশাঙ্ক মোহন।

পাশের ঘরে তখন রমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পানু তার জীবনের এ কয়টা দিনের বিচত্ৰ অভিজ্ঞতার কাহিনীই বলছিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *