ঋগ্বেদ ০৭।০৫৬

ঋগ্বেদ ০৭।০৫৬
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৭ম মণ্ডল সূক্ত ০৫৬

মরুৎ দেবতা। বসিষ্ঠ ঋষি।

১। ব্যক্তরূপ নেতা, সমানস্থানবাসী মনুষ্যের হিতকর, অথচ সুন্দর অশ্ববিশিষ্ট এই রুদ্র পুত্রগণ ইহাঁরা কে?।

২। কেহই ইহাঁদের জন্ম জানেন না। তাহারাই পরস্পর আপনাদের জন্ম কথা জানেন।

৩। আপনারাই সঞ্চরণকরতঃ পরস্পর মিলিত হন। বায়ুবৎ বেগশালী শ্যেন পক্ষীর ন্যায় পরস্পর স্পর্দ্ধা করেন।

৪। ধীমান ব্যক্তি এই শ্বেতবর্ণ ভূত সকলকে অবগত আছেন। মহতী পৃশ্নি ইহাঁদিগকে অন্তরিক্ষে ধারণ করিয়াছিলেন।

৫। সেই প্রজা মরুৎগণের অনুগ্রহে চিরকাল শত্রুগণের অভিভবকারিণী ও ধনের পুষ্টিপ্রদায়িনী ও বীরপুত্রবিশিষ্টা হউক।

৬। মরুৎগণ সর্বাপেক্ষা অধিক পরিমাণে গন্তব্যস্থানে গমন করেন, অলঙ্কার দ্বারা সর্বাপেক্ষা অধিক শোভা ধারণ করেন, তাহারা শ্ৰীসমন্বিত ও উগ্র।

৭। তোমাদের তেজ উগ্র; তোমাদের বল স্থির। মরুৎগণ বুদ্ধিমান হউন।

৮। তোমাদের বল সর্বত্র শোভমান; তোমাদের চিত্ত ক্রোধশীল। ধর্ষণযোগ্য, বলযুক্ত মরুৎগণের বেগ স্তোতার ন্যায় বিবিধ শব্দকারী।

৯। হে মরুৎগণ! পুরাণ আয়ুধ আমাদের নিকট হইতে পৃথক কর। তোমাদের ক্রূরবুদ্ধি যেন আমাদিগকে ব্যাপ্ত না করে।

১০। তোমরা ত্বরাবান। তোমাদের প্ৰিয় নাম ধরিয়া আহ্বান করি। অভিলাষবান মরুৎগণ ইহাতেই তৃপ্ত হন।

১১। মরুৎগণ সুন্দর আয়ুধবিশিষ্ট, গমনশীল, সুন্দর অলঙ্কারযুক্ত এবং তাঁহারা আমাদের শরীর অলঙ্কৃত করেন।

১২। হে মরুৎগণ! তোমরা শুচি, শুচি হব্য তোমাদের হউক। তোমরা শুচি, তোমাদের উদ্দেশে শুচি যজ্ঞ প্রেরণ করি। উদকস্পর্শী মরুৎগণ সত্য দ্বারা সত্য প্ৰাপ্ত হইয়াছেন। তাঁহারা শুচি, তাঁহাদের জন্ম শুচি ও তাঁহারা অন্যকে শুচি করেন।

১৩। হে মরুৎগণ! তোমাদের স্কন্ধে খাদি সকল রহিয়াছে। উত্তম রুক্ম তোমাদের বক্ষঃ আশ্রয় করিয়া রহিয়াছে (১)। বৃষ্টির সহিত বিদ্যুৎ যেরূপ শোভা পায়, সেইরূপ জল প্রদানের সময় স্বীয় আয়ুধদ্বারা তোমরা শোভা পাও।

১৪। তোমাদের অন্তরিক্ষভব তেজঃ বিশেষরূপে গমন করিতেছে। হে বিশেষরূপে যষ্টব্য মরুৎগণ! তোমরা জল বৃদ্ধি কর। হে মরুৎগণ! তোমরা সহস্রসংখ্যাবিশিষ্ট গৃহভব গৃহ মেধিদত্ত এই ভাগ সেবা কর।

১৫। হে মরুৎগণ! যেহেতু তোমরা অন্নবিশিষ্ট মেধাবীর হব্যযুক্ত স্তোত্র অবগত হও, অতএব শোভন পুত্রবিশিষ্টের ধন শীঘ্র প্রদান কর, সে ধন শত্ৰু অভিহনন করিতে পারে না।

১৬। যে মরুৎগণ সততগামী অশ্বের ন্যায় সুন্দর গমনবিশিষ্ট, উৎসবদর্শী মনুষ্যগণের ন্যায় অলঙ্কারধারী, গৃহস্থিত শিশুগণের ন্যায় শুভ্র, তাহারা ক্রীড়া পরায়ণ বৎসগণের ন্যায় পয়োদাতা।

১৭। মরুৎগণ আমাদের ধন প্রদান করতঃ সুন্দররূপবিশিষ্ট দ্যাবাপৃথিবীকে পূর্ণ করতঃ সুখী করুন। হে বাসপ্রদগণ! মেঘভেদক, মনুষ্যনাশক তোমাদের আয়ুধ আমাদের নিকট হইতে দূরে থাকুক। তোমরা সুখের সহিত আমাদের অভিমুখ হও।

১৮। নিষণ্ন হোতা তোমাদের সর্বত্রগামী দানকার্য্যের প্রশংসা করতঃ তোমাদিগকে সম্যকরূপে বারংবার আহ্বান করিতেছেন। হে কামবর্ষিগণ! যে হোতা যজমানের রক্ষক, সে কপটতারহিত হইয়া স্তোত্রদ্বারা তোমাদিগকে স্তব করে।

১৯। এই মরুৎগণ যজ্ঞে ত্বরাণ্বিত যজমানকে প্রীত করেন। ইহাঁরা বলের দ্বারা বলবান লোক সকলকে আনমিত করেন। ইহাঁরা হিংসকের হস্ত হইতে স্তোতাকে রক্ষা করেন। যাহারা হব্য প্রদান করে না, তাহাদের মহা অপ্রিয় সাধন করেন।

২০। ইহাঁরা সমৃদ্ধ লোককেও উত্তেজিত করেন, দরিদ্রকেও উত্তেজিত করেন। বন্ধুগণ যেরূপ কামনা করেন, হে কামবর্ষিগণ! তোমরা তমো বিনাশ কর, আরও আমাদিগকে বহুল পুত্র ও পৌত্র প্রদান কর।

২১। হে মরুৎগণ! তোমাদের দান হইতে আমরা যেন নির্গত হই না। হে রথবিশিষ্টগণ! ধন দান কালে আমাদিগকে পশ্চাতে ফেলিও না। স্পৃহণীয় ধনসমূহে আমাদিগকে ভাগী কর। হে কামবর্ষিগণ! তোমাদের যে সুজাত ধন আছে, তাহারও ভাগী কর।

২২। যখন বিক্রান্ত জনগণ বহুতর ওষধি ও মনুষ্যের জয়ের জন্য কোপপূর্ণ হন, তখন হে রুদ্রপুত্র মরুৎগণ! যুদ্ধে শত্রুর নিকট হইতে আমাদের ত্রাতা হও।

২৩। হে মরুৎগণ! আমাদের পূর্বপুরুষ সম্বন্ধে অনেক কাৰ্য্য করিয়াছ। তোমাদের পূর্বকালীন যে সকল কৰ্ম্ম প্রশংসিত হয়, তাহাও করিয়াছ, ওজস্বী ব্যক্তি যুদ্ধে মরুৎগণের সাহায্যে শত্ৰুগণের অভিভবিতা হন, তোমাদেরই সাহায্যে স্তোত্রকারী অন্ন ভোগ করে।

২৪। হে মরুৎগণ! আমাদের বীর বলবান হউক। সে অসুরও লোকের বিধায়ক হউক। আমরা নিবাসার্থ প্রাপ্ত শত্রুদিগকে বিনাশ করিব। আমরা তোমাদের আত্মীয় স্থানে অবস্থিতি করিব।

২৫। ইন্দ্র, বরুণ, অগ্নি, আপ, ওষধি ও বৃক্ষ আমাদের স্তোত্র সেবা করুন। মরুৎগণের ক্রোড়ে আমরা সুখে থাকিব। তোমরা সর্বদা আমাদিগকে স্বস্তিদ্বারা পালন কর।

———-

(১) খাদি অর্থে বলয় ও রুক্ম অর্থে বক্ষঃস্থলের সুবর্ণের অলঙ্কার, তাহা পূর্বে বলা হইয়াছে।