৫ণ. গীতিসংগ্রহ – মালসী

গীতিসংগ্রহ – মালসী

৮৭২

আশ্বিনে অম্বিকা দিলেন সুদেখা
জীবের উদ্ধারে
যেই ভাগ্যবান করবে পুজন
সপ্তমী বাসরে।।
হেরি মা-র শোভা অতি মনোলোভা
আনন্দ সাগরে।
দীন দুঃখী জনে অতি শ্রদ্ধা মনে
অন্নদান করে।।
দৃঢ় ভক্তি ভাবে যেই জন ডুবে
বাঞ্ছা পূর্ণ করে।
দীন দয়াময়ী ত্ৰিভুবন জয়ী
বিদিত সংসারে।।
মায়ের চরণ যে নেয় শরণ
দুঃখ যায় দূরে।
হয় অট্টালিকা বালক বালিকা
ধন জন বাড়ে।।
মহীর পয়সা পিতল কাসা
তাতি ঘোড়া চড়ে।
তারা মনোমত দান যজ্ঞ ব্রত
করছে সকাতরে।
দুৰ্গা নাম গুণে হলাহল পানে
বিশ্বনাথ না মরে।
সুরথ রাজার হইল নিস্তার
গোদাবরী নীরে।।
রামচন্দ্র রাজা করিয়া পূজা
বসিয়া সাগরে।
রাক্ষস বংশ করিলা ধ্বংস
উদ্ধারে সীতারে।।
ঐ দ্বাপর যুগে গোপী অনুরাগে
মা-র ব্ৰত কৈরে।
শ্ৰীকৃষ্ণের সঙ্গে করেছেন কেলি
গোপিকা নিকরে।।
মা এই মিনতি করে গো প্ৰণতি
অধম কাতরে।
শ্রীরাধারমণ অতি অভাজন
ডাকে মা কাতরে।।

য/১২

৮৭৩

এই মহামায়া যুগল মালা
লীলা ব্ৰজপুরে।
ঐ মাখন চুরি করিয়ে আয়
গোপীঘরে।।
জগৎ মাতৃ জগৎ ধাত্রী
বিদিত সংসারে।
এসে অবনীতে জীব তরাইতে
গিরিরাজপুরে।।
মা গো দশভূজা অতিশয় তেজা
ভুবন আলো করে।
সবাই সমান নাথি অন্য জ্ঞান
ভুবন মাঝারে।।
মারি কোলাতল অতি সুশীতল
জননী উদরে।
রাধারমণ বলে বিপদ কালে
ডাকি তোমারে।

দীনে দয়া করে মনদুঃখ হর
বস গো কাতারে
শ্রীহরি শ্রীহরি নামে যাত্রা করি
যাব ব্ৰজপুরে।

য/ ১৫

৮৭৪

এস মা জগজননী দুৰ্গে দুৰ্গতিনাশিনী
ভব ভয় বিপদ নাশিনী।
কালী ভৈরবীবাসা সারদা নিভা শিবানী
মা কাত্যায়নী কাৰ্যরূপিণী।
সঙ্গে লক্ষ্মী সরস্বতী কার্তিক শ্ৰীগণপতি
এসো গো মা মৃগেন্দ্ৰবাহিনী
তুমি সত্ত্ব রজঃ তমঃ ক্ষিতিতেজ মরুৎব্যোম
তুমি গঙ্গে পতিত পাবনী।।
তুমি চন্দ্ৰ তুমি সূর্য তুমি মা জগৎ আর্য
দেবদেব হরের ঘরণী।
তুমি মা ব্ৰহ্মাসাবিত্রী তুমি মা বেদগায়ত্রী
স্বাহা সদা প্ৰণাবরদপিণী।
তুমি দিবা নিশা কাল তুমি নক্ষত্রমণ্ডল
তুমি পুর্ণ ব্ৰহ্ম সনাতনী।
শ্ৰীরাধারমণের আশা মা না করিও নিরাশা
অন্তে দিও চরণ দুখানি।

য/১৭

৮৭৫

ঐ অষ্টমী তিথি অতিপুণ্যবতী
মহাষ্টমী গনি।
যাগ যজ্ঞ ধর্ম জপ তপ কৰ্ম
করে ঋষি মুনি।
কেহা চণ্ডী পাঠে আর কেহ ঘাটে
কুলবন্দন আনি
নব বেল পত্র করি মন্ত্রপুত
দিতেছে অমনি।।
অষ্টমী গতে এই নবমীতে
কম্পিত মেদিনী।
ঢেলে যজ্ঞে ঘৃত নব বোম্যপত্র
জ্বলন্ত আগুনী।।
হল পুজা সাঙ্গ করল মন ভঙ্গ
এল ত্ৰিশূলপাণি।
কাল দশমীতে ঐ ভবের সাথে
যাবেন ভবানী।।
শুনি নন্দী কথা ঐ শিবের বার্তা
দুঃখের কাহিনী।।
ভজন নয়ন তারণ রানী উমা কুশল
বিদরে পরানী।।
দিন দিন তার দিলেন উধার
দেব শূলপাণি।
রাধারমণ ভনে ভাবতেছো কেনে
শুন গো কাহিনী।।
মা যে তোমার তুমি মায়ের
পরানের পরানী।।
আস গো ফিরে প্ৰতি বৎসরে
মনে অনুমানি
হল কবি সাঙ্গ অতি সুপ্ৰসঙ্গ
বৰ্ণনা না জানি।
যা ছায়া লিখায় শ্ৰীতারিণী সায়
তা লিখে লেখনী।

য/১৯

৮৭৬

জগজননী ভবান্দারা আসিয়াছে।।ধু।।
তপ্ত কাঞ্চন রূপের কিরণ ভুবন আলো করিয়াছে।।চি।।
শুকনামা সুকেশিনী ত্ৰিভঙ্গ বাঁকা ত্রিনয়নী
ওষ্ঠাধর বিম্ব জিনি দশভুজে বেড়িয়াছে
ইন্দ্ৰধনু জিনি ভুরু যেন রামে রম্ভা-উরু
শ্ৰীচরণ পল্লব কল্পতরু একশচন্দ্ৰে শোভিয়াছে
কী শোভাবাসা চন্দ্রিমা জগতে নাই তমসা
হরিহরের মনোরমা সিংহোপরি দাঁড়াইয়াছে
সঙ্গে লক্ষ্মী সরস্বতী কার্তিক আর গণপতি
রাধারমণের এই মিনতি অন্তে যেন রেখা কাছে।

য/৫০

৮৭৭

তুমি ঋতু অবর্ণমাস তুমি পঞ্চ ভয় ত্ৰাস
মরণকালে কাল গণি
আশচর্য তোমার লীলা গিরিগর্ভে জপমানা
প্ৰকাশিত ভক্তির কাহিনী।
অপারে ভবের পাড়ি জীর্ণতরী কি তরি
ডুবে মারি সাঁতার না জানি।
আমি যদি মারি ডুবে নামেতে কলঙ্ক রবে
অপযশ রহিবে অবনী।।
তরঙ্গ আকুল নদী তুমি পার করা যদি —
সাঁতার দিয়াছি নাম শুনি–
দুৰ্গা মামে দুঃখ যায় অন্ত যেন কৃষ্ণ পায়
শ্ৰীরাধারমণের এ বাণী।

য/ ৫৩

৮৭৮

৮৭৮

দেবাদিদৈত্য মানব কীটপতঙ্গাদি যত
যক্ষগন্ধৰ্বদি প্ৰসূতিনী
তুমি কল্প তরুলতা পল্লবাদি পুষ্পলতা
তুমি ধাত্যস্বত স্বরাপিনী।।
তুমি তুল্য তুলসী তুমি গয়া তুমি কাশী
বৃন্দাবনে যশোদা নন্দিনী
তুমি রাধা তুমি রাম তুমি কৃষ্ণ বলরাম
শ্ৰীরাম তারিণী তারা শুনি।।
অবতার অবতারি সৃষ্টিস্থিতি ভঙ্গকারী
তুমি গো মা অনন্তরূপিণী
নিরাকারে বটপত্ৰ তাহে স্থিতি পথনেত্র
অখণ্ড ব্ৰহ্মাণ্ড প্ৰসূতিনী।
শ্ৰী রাধারমণ আশা মা না করিও নিরাশা
অন্তে দিও চরণ দুখানি।

য/৫৯

৮৭৯

নমস্তে তারিণী কৈলাসবিলাসিনী ত্রিনামী ত্রিপদগামী
ত্ৰাহিমাং পতিত জনে।।ধু।।
অনন্তরাপিনীণী গো মা কে জানে তোমার মহিমা
বেদাগমে না পায় সীমা জানে গো পঞ্চাননে।
সাধনভজন ছিল নাহি বিদ্যাবুদ্ধি জ্ঞান নাহি
ভক্তি প্ৰেম রস রক্ষা মাং রাধারমণে।।

য/৬৫

৮৮০

পতিতপাবনী মা তারা ভবদারা ব্ৰহ্মময়ী গো।
অজ্ঞান বালকে ডাকি ভাববন্ধন বিমোহিত করুণাময়ীগো।
আমি অনিত্য সংসারে সুখে মত্ত
ভুলে ভুলে দিন যায় শ্ৰী পুত্রধনের মায়ায়
মোহের মদিরা পানে না চিন্তিলোম পরমতত্ত্ব
ত্রিতাপে তাপিত অঙ্গ অনুষঙ্গ হইল মা
মা গো মা বিনে সন্তানের দুঃখ কার কাছে কহি গো।
মিছে মায়ামোহে দেহ পরিপুর্ণ
এ তনু আপনা নয় রিপুর বশে রয়
আত্মবশে হইয়ে মাগো না চিস্তিলোম ধন
কহে শ্ৰী রাধারমণ এই নিবেদন মা
মাগো মা বিনে সস্তানের দুঃখ কার কাছে কহি গো।।

য/৬৮

৮৮১

হইল বর্ষাগত শরৎ আগত
অশ্বিন যামিনী
অতি মনো রঙ্গে নারীপুত্র সঙ্গে
মহানন্দ ধারণী।।
এল দেবীপক্ষ অতিশয় মুখ্য
বিচিত্র বাখানি
যারা ভক্তি যেমন করেরে চয়ন
পুজিতে জননী।
তারা মনোমত দান যজ্ঞব্রত
করছে যত ধনী
কায়মনোবাক্যে অতি মন সুখে
দ্রব্যের আমদানি।।
এল সপ্তমী তিথি উমা ভগবতী
উদয় অবনী
হেরি মারি শোভা অতি মনোলোভা
হরের ঘরণী।।

বিষ ওড়াইতে এই অবনীতে
মৃগেন্দ্ৰবাহিনী
দেখিতে যেমন তপ্ত কাঞ্চন
চটকে দামিনী।।
তাতে দুশভূজা অতিশয় তেজা
হেরি অশ্রুপানি
সঙ্গে দুটি কন্যা জগৎ ধন্যা
বৈকুণ্ঠ বাসিনী।
দুইজন শিশু একটির পশু
মুষিক অনুমানি
দেখিতে যেমন রূপের কিরণ
জনক জননী।।
শঙ্খঘণ্টাধ্বনি
খোল করতাল অমৃত মিশাল
রাধারমণবাণী।

য/১০২

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *