০৯. ফেলুদার জখম

॥ ৯ ॥

ফেলুদার জখম যে তেমন গুরুতর হয়নি সেটা ডাক্তারখানায় গিয়েই বোঝা গেল। ডাক্তার বর্ধন বসেন ডিসপেনসারিতে, তিনিই ফার্স্ট এড দিয়ে দিলেন। ভদ্রলোক স্বভাবতই ঘটনাটা জানতে চাইলেন, আর আমাদেরও বলতে হল।

‘কিন্তু আপনার ওপর এ আক্রমণের কারণ কী?’ জিগ্যেস করলেন বর্ধন।

এর ফলে ফেলুদাকে নিজের পরিচয় দিতে হল। তাতে ভদ্রলোকের চোখ কপালে উঠে গেল। বললেন, ‘আপনিই স্বনামধন্য গোয়েন্দা প্রদোষ মিত্র? আমি ত আপনার অনেক কীর্তির বিষয় পড়েছি মশাই! চাক্ষুষ পরিচয় যে হবে সেটা কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।…কিন্তু আপনি কি মিঃ মজুমদারের খুনের তদন্ত করছেন নাকি?’

‘ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়তে হয়েছে’, বলল ফেলুদা।

‘ভদ্রলোক ত আমারই পেশেন্ট ছিলেন,’ বললেন ডাঃ বর্ধন।

‘তাই বুঝি?’

‘ইয়েস। আশ্চর্য মনের জোর ছিল মিঃ মজুমদারের। দেখে বোঝাই যেত না যে ওঁর ওপর দিয়ে এত ঝড় বয়ে গেছে, এবং এখনও যাচ্ছে। নিজের হবি নিয়ে মেতে থাকতেন, আর ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়াতেন।’

‘কিন্তু ঝড়ের কথা কী বলছেন একটু জানতে পারি কি?’

‘একে ত ওঁর নিজের অসুখ ছিল। তারপর স্ত্রীকে হারান বছর সাতেক আগে। ভদ্রমহিলার ক্যানসার হয়েছিল। তার উপর পুত্রের সমস্যা।’

‘সমীরণবাবুর কথা বলছেন?’

‘এত গুণ ছিল ছেলেটির, কিন্তু শেয়ার বাজারের খেলা খেলতে গিয়ে সব গেছে। এখন দেনার জালে জড়িয়ে পড়েছে। একটিমাত্র ছেলে, তাই ভাবতে কষ্ট হয়। আমি ত ওঁর ডাক্তার ছিলাম, তাই সুখ-দুঃখের অনেক কথাই আমাকে বলতেন। এবারও যে ছেলে এসেছে, আই অ্যাম শিওর তার কারণ বাপের কাছে হাত পাতা। কিন্তু আমি যতদূর জানি বাবা সম্প্রতি ছেলের উপর রীতিমতো বিরূপ হয়ে উঠেছিলেন। একটা আলটিমেটাম দিয়ে থাকলেও আশ্চর্য হব না। সমস্ত ব্যাপারটা কালিমাময়, আনপ্লেজেন্ট। আমার ভালো লাগছে না। খুনের কথাটা শুনে অবধি আমার মনে একটা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমি সেটা কাটিয়ে উঠতে পারছি না।’

‘ভদ্রলোক উইল করে গেছেন কিনা জানেন?’

‘তা জানি না। তবে করে থাকলে ছেলেকেই নিশ্চয় সব কিছু দিয়ে গেছেন—যদি না ইতিমধ্যে উইল বদলে থাকেন।’

ফেলুদা ডাঃ বর্ধনকে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে উঠে পড়ল। অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও ভদ্রলোক একটি পয়সাও নিলেন না। আসবার সময় ফেলুদা বলল, ‘আপনি যে আমার কত উপকার করেছেন তা আপনি জানেন না। ফাস্ট এড নিতে এসেছিলাম, তার সঙ্গে আরো অনেক এড পেয়ে গেলাম।’

বাইরে বেরিয়ে এসে ফেলুদা বলল, ‘তোরা যদি বিশ্রাম করতে চাস ত হোটেলে ফিরে যেতে পারিস। আমি কিন্তু এখন একটু নয়নপুর ভিলায় যাব। আজকের জানা সব নতুন তথ্য মাথায় রেখে নতুন করে তদন্ত শুরু করতে হবে। আমার চোখে কেসটা এখন একেবারে নতুন চেহারা নিয়েছে।’

আমরাও দুজনেই অবিশ্যি ফেলুদার সঙ্গেই যেতে চাইলাম। ও যদি এত ধকলের পরও বিশ্রাম ছাড়া চলতে পারে তাহলে আমরা ত পারবই। সত্যি, আশ্চর্য শক্ত শরীর ফেলুদার। পাহাড়ের গা গড়িয়ে প্রায় একশো ফুট নীচে চলে গিয়েছিল।

আমরা নয়নপুর ভিলায় যখন পৌঁছলাম তখন কুয়াশা প্রায় কেটে গেছে। সমস্ত বাড়িটায় একটা থমথমে ভাব, যদিও চারিদিকের আশ্চর্য সুন্দর দৃশ্য যেমন ছিল তেমনিই আছে। নুড়ির ওপর আমাদের পায়ের শব্দ শুনেই বোধ হয় রজতবাবু ঘর থেকে বারান্দায় বেরিয়ে এলেন। ফেলুদা তাঁকে নমস্কার জানিয়ে বলল, ‘আপনার যে হাত খালি খালি লাগছে সেটা বেশ বুঝতে পারছি। আমাদের কতকগুলো কাজ ছিল, সেই ব্যাপারে আপনি যদি আমাদের একটু সাহায্য করেন…’

‘কী কাজ বলুন।’

‘আমরা একবার মিঃ মজুমদারের কাজের ঘরটা দেখতে চাই। তারপর আপনার ঘরটাও একটু দেখব। অবিশ্যি তার সঙ্গে কিছু প্রশ্নও করতে হবে।’

‘বেশ ত, চলুন।’

‘সমীরণবাবুকে দেখছি না—?’

‘উনি বোধ হয় স্নান করতে গেছেন।’

‘তাহলে চলুন মিঃ মজুমদারের স্টাডিতেই বসা যাক্‌।’

আমরা চারজনে বাড়ির উত্তর দিকের পিছনের অংশে একটা ঘরে গিয়ে হাজির হলাম। বেশ সুসজ্জিত, পরিষ্কার ঘর, পূবের জানলা দিয়ে বাড়ির পিছনের ঝাউবন দেখা যায়। জানালার সামনে একটা বেশ বড় মেহগনি টেবিল, তার পিছনে একটা আর সামনে দুটো ভারী চেয়ার। এ ছাড়া, ঘরের পশ্চিম অংশেও আলাদা বসবার ব্যবস্থা রয়েছে। একটা সোফা আর দুটো মুখোমুখি আর্ম চেয়ার। আমরা সেখানেই বসলাম। ফেলুদার বসবার তাড়া নেই, সে ঘরটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। টেবিলের উপর থেকে পেপারকাটার তুলে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল।

‘এটায় ত বেশ ধার দেখছি’, বলল ফেলুদা, ‘এই দিয়েও ত মানুষ খুন করা যায়।’

লালমোহনবাবু বললেন, ওর একটা জোড়া নাকি ওঁদের শুটিং-এ ব্যবহার হচ্ছে। ‘এটা দিয়ে ভিলেনকে পিঠ চুলকোতে দেখান হয়েছে।’

সত্যিই ছুরিটাকে দেখলে বেশ ধারালো মনে হয়। ফেলুদা সেটা আবার টেবিলের উপর রেখে দিল।

ঘরের একদিকে একটা বুক-শেল্‌ফে সারি সারি বড় খাতা দাঁড় করানো রয়েছে, তার দুটো আমরা এর আগেই দেখেছি। এগুলোতেই সেই সব খুনখারাবির খবর সাঁটা আছে। ফেলুদা তার আরো দু’একটা উল্টেপাল্টে দেখল। তারপর প্রশ্ন করল, ‘আপনি আসার আগে এগুলো কে সাঁটত?’

‘মিঃ মজুমদার নিজেই।’

‘আপনি আসার পর থেকে ত উনি সে কাজটা আপনার উপরই ছেড়ে দিয়েছিলেন?’

‘হ্যাঁ, তবে আমাকে লোকনাথ মাঝে মাঝে সাহায্য করত।’

‘লোকনাথ বেয়ারা?’

‘হ্যাঁ। লোকনাথ স্কুল ফাইন্যাল পাশ করেছে। সে রীতিমলো লিখতে-পড়তে পারে।’

‘এটা একটা অপ্রত্যাশিত খবর। তবে, পড়াশুনা করে সে বেয়ারার কাজ কেন নিল সেটা বলতে পারেন?’

‘মিঃ মজুমদার ওকে খুব ভালো মাইনে দিতেন।’

‘আর সে বেয়ারাই শেষকালে এমন একটা কাজ করল?’

ফেলুদা ঘুরে ঘুরে এটা সেটা দেখছে আর প্রশ্ন করে চলেছে।

‘আপনি এখানে আসার আগে কী করতেন?’

‘একটা দিশি ফার্মে চাকরি করতাম?’

‘কোথায়?’

‘কলকাতায়।’

‘ক’ বছর করেছিলেন এই কাজ?’

‘সাত বছর।’

‘মিঃ মজুমদার কি সেক্রেটারি চেয়ে বিজ্ঞাপন দেন?’

‘হ্যাঁ।’

‘আপনি কদ্দূর পড়েছেন?’

‘আমি বি-কম পাশ।’

‘আপনার ফ্যামিলি নেই?’

‘আমি বিয়ে করিনি। বাবা-মা মারা গেছেন।’

‘ভাই-বোন নেই?’

‘না।’

‘তার মানে আপনি একা মানুষ?’

‘হ্যাঁ।’

‘এই ছবিটা কী ব্যাপার?’

একটা শেল্‌ফের উপর একটা বাঁধানো ছবি টাঙানো ছিল। একটা গ্রুপ ছবি; দেখে মনে হয় আপিসের গ্রুপ, সবশুদ্ধ জনা পঁয়ত্রিশ লোক, কিছু পিছনের সারিতে দাঁড়িয়ে, বাকি সামনের চেয়ারে বসে।

‘ও ছবিটা বেঙ্গল ব্যাঙ্কে তোলা’, বললেন বজতবাবু। ‘একজন ম্যানেজিং ডিরেক্টর চলে যাচ্ছিলেন; তাঁকে ফেয়ারওয়েল দেবার দিন ছবিটা তোলা হয়েছিল। মিঃ মজুমদার তখন ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন।’

ফেলুদা ছবিটা হাতে নিয়ে মন দিয়ে দেখল।

‘কোনজন কে সেটা লেখা নেই ছবিতে? মিঃ মজুমদারকে ত চিনতেই পারছি।’

‘ছবির তলার দিকে থাকতে পারে। হয়ত বাঁধানোর সময় মাস্কের নীচে ঢাকা পড়ে গেছে।’

‘এটা আমার কাছে দু-তিন দিন রাখতে পারি?’

‘নিশ্চয়ই।’

ফেলুদা ছবিটা আমার হাতে চালান দিল। আমি আর লালমোহনবাবু সেটা দেখলাম। আপিসের গ্রুপ যেমন হয় তেমনিই ব্যাপার। মিঃ মজুমদার প্রথম সারিতে চেয়ারে বসে আছেন বোধ হয় ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পাশে।

ফেলুদা বলল, ‘খুনের দিন সকাল বেলা আপনি কখন কী করছিলেন সেটা জানা দরকার।’

খুনের দিন সকাল বেলা

প্রশ্নটা করে ফেলুদা তার কোটের পকেট থেকে তার খাতাটা বার করে একটা পাতা খুলে তাতে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। তারপর বলল, ‘সাড়ে এগারোটার সময় মিঃ মজুমদার তাঁর স্টাডিতে আসতেন। তখন আপনার তাঁর সঙ্গে থাকতে হত। সাড়ে বারোটা পর্যন্ত কাজ চলত, তাই না?’

‘হ্যাঁ।’

‘সেদিন কী কাজ ছিল?’

‘মিঃ মজুমদারের অনেক চেনা পরিচিত ছিল দেশ-বিদেশে। উনি তাঁদের নিয়মিত চিঠি লিখতেন। তাতেই বেশিরভাগ সময় কেটে গেছিল সেদিন।’

‘সাড়ে এগারোটার আগে সকালে আপনি কী করছিলেন?’

‘ব্রেকফাস্টের কিছু পরেই শুটিং-এর দল আসতে শুরু করে। আমি দক্ষিণের বারান্দায় গিয়ে ওঁদের তোড়জোড়ের কাজ দেখছিলাম।’

‘কোনো শট নেওয়া দেখছিলেন?’

‘প্রথমটা দেখেছিলাম। মিঃ গাঙ্গুলি আর মিঃ ভার্মাকে নিয়ে শট।’

লালমোহনবাবুর মাথা নাড়া দেখে বুঝলাম তিনি রজতবাবুর কথাটার সমর্থন করছেন।

‘সেটা ক’টা নাগাত?’

‘আন্দাজ এগারোটা। আমি ঘড়ি দেখিনি। তার কিছু পরেই আমি মিঃ মজুমদারের কাজের ঘরে চলে আসি।’

‘কাজের পর ত লাঞ্চ খেতেন আপনারা?’

‘আজ্ঞে হ্যাঁ।’

‘আপনারা তিনজনে এক সঙ্গে খেতেন?’

‘হ্যাঁ।’

‘খাওয়ার পর কী করেন?’

‘লাঞ্চ শেষ হয় প্রায় একটার সময়। তারপর আমি নিজের ঘরে এসে কিছুক্ষণ বই পড়ি।’

‘কী বই?’

‘বই না, পত্রিকা। রীডারস্‌ ডাইজেস্ট।’

‘তারপর?’

‘তারপর দুটো নাগাত একটু ঝাউবনে ঘুরতে বেরোই। ঝাউবনটা খুব সুন্দর। আমি ফাঁক পেলেই ওদিকটা একবার ঘুরে আসি।’

‘তারপর?’

‘আড়াইটে নাগাত আমি ফিরে আসি। তারপর বিকেল চারটে অবধি বিশ্রাম করে আরেকবার শুটিং দেখতে যাই। তখন মিঃ গাঙ্গুলির একটা শট হচ্ছিল।’

লালমোহনবাবু আবার মাথা নেড়ে সায় দিলেন।

ফেলুদা বলল, ‘মিঃ মজুমদার যখন পাঁচটার পরেও ঘর থেকে বেরোলেন না তখন আপনার কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি?’

‘আমি ঘড়ি দেখিনি। বাড়িতে হট্টগোল, জেনারেটর চলছে, আমার সময়ের খেয়াল ছিল না।’

‘মিঃ মজুমদার বস্‌ হিসেবে কি রকম লোক ছিলেন।’

‘খুব ভালো।’

‘আপনার উপর চোটপাট করেননি কখনো?’

‘না।’

‘মাইনে যা পেতেন তাতে আপনি খুশি ছিলেন?’

‘হ্যাঁ।’

‘খুনের আগের দিন লালমোহনবাবু দুপুরের দিকে বাথরুম গিয়ে বাইরে এসে মিঃ মজুমদারের গলা শুনতে পান। তিনি কাউকে বলছিলেন, “ইউ আর এ লায়ার। আমি তোমার একটা কথাও বিশ্বাস করি না।”—এই কথাটা উনি কাকে বলতে পারেন সে ধারণা আছে আপনার?’

‘একমাত্র ওঁর ছেলে ছাড়া আর কারুর কথা ত মনে পড়ছে না।’

‘ওঁর ছেলের সঙ্গে মিঃ মজুমদারের সদ্ভাব ছিল না?’

‘ছেলের সম্বন্ধে কতকগুলো ব্যাপারে ওঁর আক্ষেপ ছিল।’

‘সেটা আপনি কি করে জানলেন?’

‘আমার সামনে দু’একবার বলেছেন—“সমুটা বড় রেকলেস হয়ে পড়ছে”—বা ওই জাতীয় কথা। উনি ছেলেকে ভালোও বাসতেন, আবার সেই সঙ্গে শাসনও করতেন।’

‘উনি কোনো উইল করে গেছেন বলে আপনি জানেন?’

‘যদ্দূর জানি করেননি।’

‘কেন বলছেন এ কথা?’

‘কারণ একদিন আমাকে বলেছিলেন—“এখন ত দিব্যি আছি; আরেকটু শরীরটা ভাঙুক, তারপর উইল করব”।’

‘তার মানে ওঁর সম্পত্তি ওঁর ছেলেই পাচ্ছেন?’

‘তাই ত হয়ে থাকে।’

‘এবার আপনার ঘরটা একবার দেখতে পারি কি?’

‘আসুন।’

রজতবাবুর শোবার ঘরে আসবাবপত্র খুবই কম। একটা খাট, একটা ছোট আলমারি, একটা তাক, একটা টেবিল আর একটা চেয়ার। দেয়ালে আলনা রয়েছে একটা, তাতে একটা শার্ট, একটা খয়েরি পুলোভার আর একটা তোয়ালে ঝুলছে। ঘরের একপাশে একটা সুটকেস রয়েছে তাতে আর. বি. লেখা।

টেবিলের উপর তিনচারখানা ইংরিজি পেপার ব্যাক আর গোটা পাঁচেক পত্রিকা রয়েছে।

‘হিন্দি পত্রিকা দেখছি যে?’ ফেলুদা প্রশ্ন করল।

‘আমার ছেলেবেলা কানপুরে কেটেছে’, বললেন রজতবাবু, ‘বাবা ওখানকার ডাক্তার ছিলেন। ইস্কুলে হিন্দি শিখেছিলাম। বাবা মারা যাবার পর কলকাতায় মামা বাড়িতে চলে আসি।’

আমরা চারজন ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। ফেলুদা প্রশ্ন করল, ‘মিঃ মজুমদার ঘুমের আগে একটা বড়ি খেতেন সেটা আপনি জানতেন?

‘হ্যাঁ। আমি অনেকবার গিয়ে সে বড়ি এনে দিয়েছি। টফ্রানিল। পুরো মাসের স্টক একবারে কিনে নিতেন।’

‘হুঁ…এবার একটু সমীরণবাবুর সঙ্গে কথা বলব।’

সমীরণবাবু স্নান সেরে তাঁর ঘরে বসে একটা খবরের কাগজ পড়ছিলেন। অশৌচ অবস্থা, তাই দাড়ি কামাননি ভদ্রলোক। ওঁর সঙ্গে কথা বলে খুব বেশি কিছু জানা গেল না। ভদ্রলোক স্বীকার করলেন যে ওঁর বাপের সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা কাটাকাটি হত। ‘বাবা আগে এরকম ছিলেন না’, বললেন ভদ্রলোক। ‘অসুখের পর থেকে এরকম হয়ে গিয়েছিলেন।’

‘আপনার দিক থেকে কি কোনো পরিবর্তন হয়নি, যাতে আপনার বাবা আপনার উপর অসন্তুষ্ট হতে পারেন?’

‘আমার দু-একটা ভুল স্পেকুলেশন হয়েছে সেটা ঠিকই, কিন্তু সে রকম ত ব্যবসায় হতেই পারে।’

‘খুনের আগের দিন দুপুরে দেড়টা নাগাত আপনার সঙ্গে মিঃ মজুমদারের কোন রকম কথা কাটাকাটি হয়েছিল?’

‘কই, না ত!’

‘আপনার বাবার কাছ থেকে কি আপনার মাঝে মাঝে টাকা চাইতে হত?’

‘তা চাইব না কেন? আমার বাবা অনেক পয়সা করেছিলেন।’

‘আপনার বাবা যে উইল করে যাননি সেটা আপনি জানতেন?’

‘জানতাম। বাবা একদিন আমাকে রাগ করে বলেছিলেন উইল করলে আমাকে এক পয়সাও দেবেন না।’

‘কিন্তু এখন ত আপনি সব কিছুই পাচ্ছেন?’

‘তা পাচ্ছি।’

‘এতে আপনার অনেক সমস্যা মিটে যাবে—তাই না?’

‘তা যাবে, কিন্তু এটার জন্য ত আমি দায়ী নই। আপনি কি ইঙ্গিত করছেন যে আমি বাবাকে খুন করেছি?’

‘ধরুন যদি তাই করি। সুযোগ ও কারণ—দুটোই ত আপনার ছিল!’

‘ঘুমের বড়ি খাওয়ানোর সুযোগ আমার কী করে থাকবে? সে বড়ি ত দিত লোকনাথ।’

‘কিন্তু সেদিন লোকনাথ দুধটা রেখে কিছুক্ষণের জন্য ঘর থেকে চলে গিয়েছিল এটা ভুলবেন না। আর ছুরি বসানোর সুযোগও আপনার ছিল। আপনার বাবার ঘরেই এ কাজের জন্য একটি উত্তম অস্ত্র ছিল—যেটা সত্যি করেই ওই কাজে লাগানো হয়।’

সমীরণবাবু একটা ব্যাঁকা হাসি হেসে বললেন, ‘এসব কী বলছেন আপনি? আমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? মূর্তি চুরির কথাটা ভাবছেন না কেন? বাবা মরলেই ত আমি টাকা পাব, সেখানে আর বালগোপালের দরকার কী?’

‘আপনার হয়ত তাড়া ছিল। বাবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই ত আর আপনার হাতে টাকা আসবে না; তার ত একটা লিগ্যাল প্রোসেস আছে!’

‘তাহলে লোকনাথ গেল কোথায়? যে আসল লোক তার সম্বন্ধে তদন্ত না করে আপনি বৃথা সময় নষ্ট করছেন কেন?’

‘সেটার কারণ আছে নিশ্চয়ই, যদিও সেটা প্রকাশ্য নয়।’

‘ঠিক আছে, আপনি আপনার গোপন কারণ নিয়ে থাকুন, কিন্তু জেনে রাখুন যে আমাকে এ ব্যাপারে জড়িয়ে পড়তে হয়েছে একেবারেই ঘটনাচক্রে। আসল অপরাধীকে পেতে হলে আপনার অন্য জায়গায় খুঁজতে হবে। এর বেশি আর আমি কিছু বলতে চাই না।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *