• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

০২. মাইক্রোক্যাসেট রেকর্ডার

লাইব্রেরি » সত্যজিৎ রায় » ফেলুদা সমগ্র - সত্যজিত রায় » এবার কাণ্ড কেদারনাথে (গল্প) (১৯৮৪) » ০২. মাইক্রোক্যাসেট রেকর্ডার

ফেলুদা যে কেসটা নেবে, সেটা আমি আগে থেকেই জানতাম। আজকাল আমরা মক্কেলের কথাবার্তা হংকং থেকে কেনা একটা মাইক্রোক্যাসেট রেকর্ডারে তুলে রাখি। মিঃ পুরীর বেলাতে ওঁর অনুমতি নিয়ে তাই করেছিলাম। ফেলুদা দুপুরে সেই সব কথাবার্তা প্লে ব্যাক করে খুব মন দিয়ে শুনে বলল, কেসটা নেবার সপক্ষে দুটো যুক্তি রয়েছে; একটা হল এর অভিনবত্ব, আর দুই হল-গোয়েন্দাগিরির প্রথম যুগে দেখা হরিদ্বার-হৃষীকেশটা আর একবার দেখার লোভ।

বাদশাহী আংটির ক্লাইম্যাকস্-টা যে হরিদ্বারেই শুরু হয়েছিল, সেটা আমিও কোনও দিন ভুলব না।

পার্ক হোটেলে টেলিফোন করে কেসটা নিচ্ছে বলে ফেলুদা মিঃ পুরীকে জানিয়ে দিয়েছিল। আর মিঃ পুরীও আধা ঘণ্টার মধ্যে এসে আগাম টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পুষ্পক ট্র্যাভেলাসে ফোন করে ফেলুদ। ডুন এক্সপ্রেসে আমাদের বুকিং-এর জন্য জানিয়ে দিয়েছিল। হঠাৎ দুদিন পরে এক অদ্ভুত ব্যাপার। রূপনারায়ণগড় থেকে মিঃ পুরীর এক টেলিগ্রাম এসে হাজির–

রিকেগয়েস্ট ড্রপ কেস। লেটার ফলোজ।

ড্রপ কেস! এ তো তাজ্জব ব্যাপার। এমন তো আমাদের অভিজ্ঞতায় কখনও হয়নি।

মিঃ পুরীর চিঠিও এসে গেল দু দিন পরে। মোদ্দা কথা হচ্ছে-ছোটকুমার মত পালটেছে। সে হরিদ্বার-হৃষীকেশ গিয়ে ছবি তুলবে, তাতে উপাধ্যায় থাকবেন, কিন্তু তাতে শুধু দেখানো হবে তিনি কীভাবে নিজের তৈরি ওষুধ দিয়ে স্থানীয় লোকের চিকিৎসা করেন। রূপনারায়ণগড়ের রাজার চিকিৎসাও যে উপাধ্যায় করেছিলেন, সেটা ছবিতে বলা হবে, কিন্তু মহামূল্য পারিতোষিকের কথাটা বলা হবে না।

ফেলুদা টেলিগ্রামে উত্তর দিল—ড্রপিং কেস, বাট গোইং অ্যাজ পিলগ্রিমস। অর্থাৎ কেস বাতিল করছি, কিন্তু তীর্থযাত্রী হিসেবে যাচ্ছি।

আমি জানি, ফেলুদা ও কথা লিখলেও ও নিজের গরজেই চোখ-কান খোলা রাখবে, আর তদন্তের কোনও কারণ দেখলে তদন্ত করবে! সত্যি বলতে কী, ভবানী উপাধ্যায় আর ছোটকুমার পবনদেও সিং-এই দুটি লোককেই আমার খুব ইণ্টারেস্টিং বলে মনে হচ্ছিল।

 

আমরা তিনজন এখন ডুন এক্সপ্রেসের একটা থ্রি টিয়ার কম্পার্টমেন্টে বসে আছি! ফৈজাবাদ স্টেশনে মিনিট দু-এক হল গাড়ি থেমেছে, আমরা ভাঁড়ের চা কিনে খাচ্ছি।

আপনি যে বলছিলেন। হরিদ্বার গেসলেন, সেটা কবে? ফেলুদা তার সামনের সিটে বসা লালমোহনবাবুকে জিজ্ঞেস করল।

আমার ঠাকুরদা একবার সপরিবারে তীর্থভ্রমণে যান, বললেন লালমোহনবাবু, ইনকুডিং হরিদ্বার; তখন আমার বয়সে দেড়; কাজেই নো মেমরি।

এবার অন্য দিক থেকে একটা প্রশ্ন এল।

আপনারা কি শুধু হরিদ্বারই যাচ্ছেন, না। ওখান থেকে এ দিকে ও দিকেও ঘুরবেন?

এ-প্রশ্ন করলেন লালমোহনবাবুর পাশে বসা এক বৃদ্ধ। মাথায় সামান চুল যা আছে তা সবই পাকা, কিন্তু চামড়া টান, দাঁত সব ওরিজিনাল, আর চোখের দুপাশে যে খাঁজগুলো রয়েছে, সেগুলো যেন হাসবার জন্য তৈরিই হয়ে আছে।

হরিদ্বারে একটু কাজ ছিল, বলল ফেলুদা। সেটা হয়ে গেলে পর.দেখা যাক–

কী বলছেন মশাই! বৃদ্ধের চোখ কপালে উঠে গেছে-অ্যাদাপূর এসে কেদার-বস্ত্রীটা দেখে যাবেন না? বন্দ্রীনাথ তো সোজা বাসে করেই যাওয়া যায়। কেদারের শেষের কাটা মাইল অবিশ্যি এখনও বাসা-রুটি হয়নি। তবে এও ঠিক যে কেদারের কাছে বস্ত্রী কিছুই নয়। যদি পারেন তো একবার কেদারটা ঘুরে আসবেন। শেষের হাঁটা পথটুকু আর– ফেলুদা আর আমার দিকে তাকিয়ে-আপনাদের বয়সে কী! আরি- লালমোহনবাবুর দিকে তাকিয়ে–এনার জন্য তো ডাণ্ডি আর টাটু ঘোড়াই আছে। টাটু ঘোড়ায় কখনও?

শেষের প্রশ্নটা অবিশ্যি লালমোহনবাবুকেই করা হল। লালমোহনবাবু হাতের ভাঁড়টায় একটা শেষ চুমুক দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়ে গম্ভীরভাবে অন্য দিকে চেয়ে বললেন, আজ্ঞে না, তবে থর ডেজার্টে একবার উটের পিঠে চড়ে দৌড়ের অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেটা আপনার হয়েছে কি?

বৃদ্ধ মাথা নাড়লেন। —ত হয়নি। আমার চরবার ক্ষেত্র হল হিমালয়ের এই বিশেষ অংশ। তেইশবার এসেছি কেদার-বস্ত্রী। ভক্তি-টিক্তি আমার যে তেমন আছে তা নয়, তবে এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য থেকেই আমি সব আধ্যাত্মিক শক্তি আহরণ করি। কোনও বিগ্রহের দরকার হয় না।

ভদ্রলোকের নাম পরে জেনেছিলাম মাখনলাল মজুমদার। শুধু কেদার-বন্দ্রী নয়, যমুনেত্রী, গঙ্গোত্রী, গোমুখ, পঞ্চকেদার, বাসুর্কিতাল-এ সবও এঁর দেখা আছে। নেহাত একটা সংসার আছে, না হলে হিমালয়েই থেকে যেতেন। অবিশ্যি এটাও বললেন যে, আজকের বাস-ট্যাক্সিতে করে যাওয়া আর আগেকার দিনের পায়ে হেঁটে যাওয়া এক জিনিস নয়। বললেন, আজকাল তো আর কেউ পিলগ্রিম নয়, সব পিকনিকারস। তবে হ্যাঁ, গাডির রাস্তা তৈরি করে তো আর হিমালয়ের দৃশ্য পালটানো যায় না। নয়নাভিরাম বলতে যা বোঝায়, সে রকম দৃশ্য এখনও অফুরন্ত আছে।

ভোর ছটায় ডুন এক্সপ্রেস পৌঁছাল হরিদ্বার।

সেই বাদশাহী আংটির সময় যেমন দেখেছিলাম, পাণ্ডার উপদ্রবটা যেন তার চেয়ে একটু কম বলে মনে হল। স্টেশনেই একটা রেস্টোরান্টে চা-বিস্কুট খেয়ে নিলাম। উপাধ্যায়ের নাম এখানে অনেকেই জানে আন্দাজ করেই বোধহয় ফেলুদা রেস্টোরান্টের ম্যানেজারকে তাঁর হদিস জিজ্ঞেস করল।

উত্তর শুনে বেশ ভালরকম একটা হোঁচট খেলাম।

ভবানী উপাধ্যায় তিন-চার মাস হল হরিদ্বার ছেড়ে রুদ্রপ্রয়াগ চলে গেছেন।

তাঁর বিষয়ে আরও খবর কে দিতে পারে, বলতে পারেন? জিজ্ঞেস করল ফেলুদা। উত্তর এল-এখনকার খবর পেতে হলে রুদ্রপ্ৰয়াগ যেতে হবে, আর যদি আগেকার খবর চান। তো কাস্তিভাই পণ্ডিতের কাছে যান। উনি ছিলেন উপাধ্যায়জীর বাড়িওয়ালা। তিনি সব খবর জানবেন।

তিনিও কি লক্ষ্মণ মহল্লাতেই থাকেন?

হ্যাঁ হ্যাঁ। পাশাপাশি বাড়িতে থাকতেন ওঁরা। সবাই ওঁকে চেনে ওখানে। জিজ্ঞেস করলেই বলে দেবে।

আমরা আর সময় নষ্ট না করে বিল চুকিয়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

কান্তিভাই পণ্ডিতের বয়স ষাট-পয়ষট্টি, বেঁটেখাটো চোখাচাখা ফরসা চেহারা, খোঁচা খোঁচা গোঁফ, কপালে চন্দনের ফোঁটা আর চোখে বাইফোকাল চশমা। আমরা ভবানী উপাধ্যায়ের খোঁজ করছি জেনে উনি রীতিমতো অবাক হয়ে বললেন, কী ব্যাপার বলুন তো? আর একজন তো ওঁর খোঁজ করে গেলেন এই তিন-চার দিন আগে।

তাঁর চেহারা মনে আছে আপনার?

তা আছে বইকী।

দেখুন তো এই চেহারার সঙ্গে মেলে। কিনা।

ফেলুদা পকেট থেকে ছোটকুমার পবনদেও-এর ছবিটা বার করে দেখাল।

হ্যাঁ হ্যাঁ, এই তো সেই লোক, বললেন। কান্তিভাই পণ্ডিত। আমি রুদ্রপ্রয়াগের ঠিকানা দিয়ে দিলাম তাঁকে।

সে ঠিকানা অবিশ্যি আমরাও চাই, বলে ফেলুদা তার একটা কার্ড বার করে দিল মিঃ পণ্ডিতের হাতে।

কার্ডটা পাওয়ামাত্র মিঃ পণ্ডিতের হাবভাব একদম বদলে গেল। এতক্ষণ আমরা দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম, এবার আমাদের সকলকে চেয়ার, মোড়া আর তক্তপোশে ভাগাভাগি করে বসতে দেওয়া হল।

কেয়া, কুছ গড়বড় হুয়া মিঃ মিত্তর?

যত দূর জানি, এখনও হয়নি, বলল ফেলুদা। তবে হবার একটা সম্ভাবনা আছে। এবার আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই, মিঃ পণ্ডিত; আপনি সঠিক উত্তর দিতে পারলে খুব উপকার হবে।

আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট।

মিঃ উপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত সংগ্রহে কি কোনও একটা মূল্যবান জিনিস ছিল?

মিঃ পণ্ডিত একটু হেসে বললেন, এ প্রশ্নটাও আমাকে দ্বিতীয়বার করা হচ্ছে। আমি মিঃ সিংকে যা বলেছি, আপনাকেও তাই বলছি। মিঃ উপাধ্যায়ের একটা থলি উনি আমার সিন্দুকে রাখতে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে যে কী ছিল, সেটা আমি কোনও দিন দেখিনি বা জিজ্ঞেসও করিনি।

সেটা উনি রুদ্রপ্ৰয়াগ নিয়ে গেছেন?

ইয়েস স্যার। অ্যান্ড অ্যানাদার থিং-আপনি ডিটেকটিভ, তাই এ খবর আমি আপনাকে বলছি, আপনার হয়তো কাজে লাগতে পারে-পাঁচ-ছে। মহিনে আগে দুজন লোক—তখনও মিঃ উপাধ্যায় ছিলেন। এখানে—একজন সিন্ধী কি মাড়োয়ারি হবে।–হি লুকড় এ রিচ ম্যান-অ্যান্ড অ্যানাদার ম্যান-দুজন উপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। অনেক কথা হচ্ছিল সেটা আমি বুঝতে পারছিলাম। এক ঘণ্টার উপর ছিল। তারা যাবার পর উপাধ্যায় একটা কথা আমাকে বলে–পণ্ডিতজী, আজ আমি একটি রিপুকে জয় করেছি। মিঃ সিংঘানিয়া আমাকে লোভের মধ্যে ফেলেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি সে লোভ কাটিয়ে উঠেছি।

আপনি উপাধ্যায়ের এই সম্পত্তির কথা আর কাউকে বলেননি?

দেখুন মিঃ মিত্তর, ওঁর যে একটা কিছু লুকোবার জিনিস আছে, সেটা অনেকেই জানত। আর সেই নিয়ে আড়ালে ঠাট্টাও করত। আমার আবার সন্ধাবেলায় একটু নেশা করার অভ্যাস আছে, হয়তো কখনও কিছু বলে ফেলেছি। কিন্তু উপাধ্যায়জীকে সকলে এখানে এত ভক্তি করত যে, সিন্দুকে কী আছে সেই নিয়ে কেউ কোনও দিন মাথা ঘামায়নি।

এই যে রুদ্রপ্ৰয়াগ গেলেন তিনি, এর পিছনে কোনও কারণ আছে?

আমাকে বলেছিলেন, গঙ্গার ঘাটে ওঁর একজন সাধুর সঙ্গে আলাপ হয়। তাঁর সঙ্গে কথা বলে উপাধ্যায়ের মধ্যে একটা মানসিক চেঞ্জ আসে। আমার মনে হয়, চেঞ্জটা বেশ সিরিয়াস ছিল। কথা-টথা সব কমিয়ে দিয়েছিলেন। অনেক সময় চুপচাপ বসে ভাবতেন।

ওঁর ওষুধপত্তর কি উনি সঙ্গেই নিয়েছিলেন?

ওষুধ বলতে তো বেশি কিছু ছিল না; কয়েকটা বৈয়াম, কিছু শিকড়-বাকল, কিছু মলম, কিছু বড়ি—এই আর কী। এগুলো সবই উনি নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে আমার নিজের ধারণা উনি ক্ৰমে পুরোপুরি সন্ন্যাসের দিকে চলে যাবেন।

উনি বিয়ে করেননি?

না। সংসারের প্রতি ওঁর কোনও টান ছিল না। যাবার দিন আমাকে বলে গেলেন-ভোগের রাস্তা, ত্যাগের রাস্তা, দুটোই আমার সামনে ছিল। আমি ত্যাগটাই বেছে নিলাম।

ভাল কথা বলল ফেলুদা, আপনি যে বললেন, ওঁর রুদ্রপ্ৰয়াগের ঠিকানা আপনি দিয়ে দিয়েছেন ওই ভদ্রলোকটিকে-আপনি ঠিকানা পেলেন কী করে?

কেন, উপাধ্যায় আমাকে পোস্টকার্ড লিখেছে সেখান থেকে।

সে পোস্টকার্ড আছে?

আছে বইকী।

মিঃ পণ্ডিত তাঁর পিছনের একটা তাকে রাখা বাক্সের ভিতর হাত ঢুকিয়ে একটা পোস্টকার্ড বার করে ফেলুদাকে দিলেন। হিন্দিতে লেখা আট-দশ লাইনের চিঠি। সেটা ফেলুদা বার বার পড়ল কেন, আর পড়ে বিড়বিড় করে দু বার মোস্ট ইন্টারেস্টিং বলল কেন, সেটা বলতে পারব না।

মিঃ পণ্ডিত আমাদের একটা ভাল ট্যাক্সির কথা বলে দিলেন। আপাতত রুদ্রপ্ৰয়াগ, তার পর যেখানেই যাওয়া দরকার-সেখানেই যাবে। গাড়োয়ালি ড্রাইভারের নাম যোগীন্দরীরাম। লোকটিকে দেখে আমাদের ভাল লাগল। আমরা বললাম, বারোটা নাগাদ খেয়েদেয়ে রওনা দেব হৃষীকেশ থেকে। হৃষীকেশ। এখান থেকে মাইল পনেরো। হরিদ্ধারে কিছুই দেখবার নেই, গঙ্গার ঘাটটা পর্যন্ত আগের বার যা দেখেছিলাম, তেমন আর নেই। বিশ্ৰী দেখতে সব নতুন বাড়ি উঠেছে আর তাদের দেওয়াল-জোড়া বিজ্ঞাপন। হৃষীকেশে যাওয়া দরকার, কারণ আমাদের রুদ্রপ্ৰয়াগে থাকার বন্দোবস্ত করতে হবে। ইচ্ছে করলে ধরমশালায় থাকা যায়; এখানে প্রায় সব শহরেই বহু দিনের পুরনা নাম-করা কালীকমলী ধরমশালা রয়েছে, কিন্তু ফেলুদা জানে যে রূপনারায়ণগড়ের ছোটকুমার ও সব ধরমশালায় থাকবে না।

আমরা হৃষীকেশে গিয়ে গাড়ওয়াল মণ্ডল বিকাশ নিগমের রেস্ট হাউসে একটা ডবল-রুম পেয়ে গেলাম। ওরা বলল যে, তিনজন লোক হলে বাড়তি একটা খাটিয়া পেতে দেবে। বারোটা নাগাদ খেয়ে আমরা রওনা দিলাম রুদ্রপ্ৰয়াগ। কয়েক মাইল যাবার পর ডাইনে পড়ল। লছমনঝুলা। এখানেও দুদিকে বিশ্ৰী বিশ্ৰী নতুন বাড়ি আর হোটেল হয়ে জায়গাটার মজাই নষ্ট করে দিয়েছে। তাও বাদশাহী আংটির শেষ পর্কের ঘটনা মনে করে গা-টা বেশ ছমছম করছিল।

রুদ্রপ্ৰয়াগ জরুরি দুটো কারণে; এক হল জিম করবেট। দ্য ম্যান-ইটিং লেপার্ড অফ রুদ্রপ্ৰয়াগ যে পড়েছে, সে কোনও দিন ভুলতে পারবে না। কী আশ্চর্য ধৈর্য, অধ্যবসায়, আর সাহসের সঙ্গে করবেট মেরেছিল। এই মানুষখেকোকে আজ থেকে পঞ্চান্ন বছর আগে। আমাদের ড্রাইভার যোগীন্দর বলল, সে ছেলেবেলায় তার বাপ-ঠাকুন্দর কাছে শুনেছে। এই বাঘ মারার গল্প। করবেট যেমন ভালবাসত এই গাড়োয়ালিদের, গাড়োয়ালিরাও ঠিক তেমনই ভক্তি করত করবেটকে।

রুদ্রপ্রয়াগের আর একটা ব্যাপার হচ্ছে—এখান থেকে বস্ত্রী ও কেদার দু জায়গাতেই যাওয়া যায়! দুটো নদী এসে মিশেছে রুদ্রপ্রয়াগে—মন্দাকিনী আর অলকানন্দা। অলকানন্দ ধরে গেলে বন্দ্রীনাথ আর মন্দাকিনী ধরে গেলে কেদারনাথ। বন্দ্রীনাথের শেষ পর্যন্ত বাস যায়; কেদারনাথ যেতে বাস থেমে যায় ১৪ কিলোমিটার আগে গৌরীকুণ্ডে। সেখান থেকে হয় হেঁটে, না হয় ডাণ্ডি বা টাটু ঘোড়া ভাড়া করে যাওয়া যায়।

হৃষীকেশ থেকে বেরিয়েই বনের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের পথ আরম্ভ হয়ে গেল। পাশ দিয়ে বয়ে চলছে স্থানীয় লোকেরা যাকে বলে গঙ্গা মাঈ। হৃষীকেশ থেকে রুদ্রপ্ৰয়াগ ১৪০ কিলোমিটার; পাহাড়ে রাস্তায় ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার করে গেলেও সেই সন্ধ্যার আগে পৌঁছানো যাবে না। তা ছাড়া পথে তিনটে জায়গা পড়ে–দেবপ্রয়াগ, কীর্তিনগর, আর শ্ৰীনগর। এই শ্ৰীনগর কাশ্মীরের রাজধানী নয়, গাড়ওয়াল জেলার রাজধানী।

পাহাড় ভেদ করে বনের মধ্য দিয়ে কেটে তৈরি করা রাস্তা ঘুরে ঘুরে উঠছে, আবার ঘুরে ঘুরে নামছে। মাঝে মাঝে গাছপালা সরে গিয়ে খোলা সবুজ পাহাড় বেরিয়ে পড়ছে, তারই কোলে ছবির মতো ছোট ছোট গ্রাম দেখা যাচ্ছে।

দৃশ্য সুন্দর ঠিকই, কিন্তু আমার মন কেবলই বলছে ভবানী উপাধ্যায়ের কাছে একটা মহামূল্য লকেট রয়েছে। একজন সন্ন্যাসীর কাছে এমন একটা জিনিস থাকবে, আর তাই নিয়ে কোনও গোলমাল হবে না, এটা যেন ভাবাই যায় না। তা ছাড়া মিঃ পুরীর একবার ফেলুদাকে কাজের ভার দিয়ে, তার পরই টেলিগ্রাম করে বারণ করাটাও কেমন যেন গণ্ডগোল লাগছে। অবশ্য তিনি চিঠিতে কারণ দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এ জিনিস এর আগে কক্ষনও হয়নি বলেই বোধহয় একটা খটকা মন থেকে যাচ্ছে না।

লালমোহনবাবু কিছুক্ষণ থেকেই উসখুসি করছিলেন, এবার বললেন, আমি ভূ-গণ্ডগোল আর ইতিহাস-ফাঁসে চিরকালই কাঁচা ছিলাম ফেলুবাবু—সেটা তো আপনি আমার লেখা পড়েও অনেক বার বলেছেন। তাই, মানে, আমরা ভারতবর্ষের এখন ঠিক কোনখানে আছি, সেটা একটু বলে দিলে নিশ্চিন্ত বোধ করব।

ফেলুদা তার বাথোলোমিউ কোম্পানির বড় ম্যাপটা খুলে বুঝিয়ে দিল—এই যে দেখুন হরিদ্বার। আমরা এখন যাচ্ছি। এই দিকে। এই যে রুদ্রপ্রয়াগ। অথাৎ পুবে নেপাল, পশ্চিমে কাশ্মীর, আমরা তার মধ্যিখানে, বুঝেছেন?

হ্যাঁ। এই বারে ক্লিয়ার।

Category: এবার কাণ্ড কেদারনাথে (গল্প) (১৯৮৪)
পূর্ববর্তী:
« ০১. কী ভাবছেন ফেলুবাবু
পরবর্তী:
০৩. রুদ্রপ্রয়াগ »

Reader Interactions

Comments

  1. Sumit Das

    August 18, 2018 at 4:43 pm

    Darun….

    Reply
  2. BUbun

    November 11, 2018 at 12:26 am

    Jim corbatee er golpo gulo BANGALA LIBRARY te ad korle valo hoto.

    Reply
    • Bangla Library

      November 13, 2018 at 1:07 am

      চেষ্টা করব আমরা। ধন্যবাদ।

      Reply
  3. Hiya

    May 20, 2019 at 5:44 pm

    1st part missing..please ektu upload korben

    Reply
    • Bangla Library

      May 20, 2019 at 9:40 pm

      প্রথম পার্ট আগেই ছিল, অন্য একটি ক্যাটাগরির ভেতর ঢুকে গেছিল। এখন ঠিক করে দেয়া হয়েছে। ভুলটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
      http://ebanglalibrary.com/%e0%a7%a6%e0%a7%a7-%e0%a6%95%e0%a7%80-%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%9b%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%ab%e0%a7%87%e0%a6%b2%e0%a7%81%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a7%81/

      Reply
      • Hiya

        May 22, 2019 at 9:08 pm

        Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑