০৮.  রুদ্রশেখরের কথা (২)

‘গুড আফটারনূন, মিস্টার নিয়োগী।’

‘গুড আফটারনূন।’

রুদ্রশেখর এগিয়ে এসে সোমানির বিপরীত দিকে একটা চেয়ারে বসলেন। দুজনের মাঝখানে একটা প্রশস্ত আধুনিক ডেস্ক। আপিসঘরটা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ও চারিদিক থেকে বন্ধ। তাই শহরের কোনো শব্দই এখানে পৌঁছায় না। পাশের শেলফের উপর ঘড়িটা ইলেকট্রনিক, তাই সেটাও নিঃশব্দ।

‘আপনি কি ছবিটা পেয়েছেন?’ প্রশ্ন করলেন হীরালাল সোমানি।

রুদ্রশেখর নিয়োগী কোনো জবাব দেওয়ার পরিবর্তে বললেন, ‘আপনি ত আরেকজনের হয়ে ছবিটা কিনতে চান, তাই না?’

হীরালাল একদৃষ্টে চেয়ে রইলেন রুদ্রশেখরের দিকে, ভাবটা যেন তিনি প্রশ্নটা শুনতেই পাননি।

‘আমি সেই ভদ্রলোকের নাম-ঠিকানাটা চাইতে এসেছি’, বললেন রুদ্রশেখর নিয়োগী।

হীরালাল ঠিক সেই ভাবেই চেয়ে থেকে বললেন, ‘আমি আবার জিগ্যেস করছি মিঃ নিয়োগী—ছবিটা কি এখন আপনার হাতে?’

‘সেটা বলতে আমি বাধ্য নই।’

‘তাহলে আমিও ইনফরমেশন দিতে বাধ্য নই।’

‘এবার দেবেন কি?’

রুদ্রশেখর বিদ্যুদ্বেগে উঠে দাঁড়িয়েছেন, তার হাতে এখন একটি রিভলভার, সোজা হীরালালের দিকে তাগ করা।

‘বলুন মিঃ সোমানি। আমার জানা দরকার। আমি আজই সে লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাই।’

টেবিলের তলায় সোমানি যে তাঁর বাঁ হাঁটু দিয়ে একটি বোতামে চাপ দিয়েছেন, এবং দেওয়ামাত্র রুদ্রশেখরের পিছনের একটি ঘরের দরজা খুলে গিয়ে দুটি লোক বেরিয়ে এসে তাঁর পিছনে দাঁড়িয়েছে, সেটা তাঁর জানার উপায় ছিল না।

পরমুহূর্তেই রুদ্রশেখর দেখলেন যে তিনি মোক্ষম প্যাঁচে পড়েছেন।

তিনি মোক্ষম প্যাঁচে পড়েছেন

একটি লোক তার ডান হাতটা ধরে তাতে মোচড় দেওয়াতে রিভলভারটা এখন তারই হাতে চলে গেছে, এবং সেটি এখন রুদ্রশেখরের দিকেই তাগ করা।

‘পালাবার কোনো চেষ্টায় ফল হবে না মিঃ নিয়োগী। এই দুজন লোক আপনার সঙ্গে গিয়ে আপনার কাছ থেকে ছবিটা নিয়ে আসবে। আশা করি আপনি মূর্খের মতো বাধা দেবেন না।’

বিশ মিনিটের মধ্যে লোক দুজন সমেত রুদ্রশেখর একটি ফিয়াট গাড়িতে করে সদর স্ট্রীটের একটি হোটেলে পৌঁছে গেলেন। আপাতদৃষ্টিতে কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়—দুটি লোককে সঙ্গে নিয়ে রুদ্রশেখর তাঁর ঘরে চলেছেন। দুজনের একজনের হাত কোটের পকেটে ঠিকই, কিন্তু সে হাতে যে রিভলভার ধরা সেটা বাইরের লোকে বুঝবে কি করে?

উনিশ নম্বর ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেবার পর রিভলভার বেরিয়ে এল কোটের পকেট থেকে। রুদ্রশেখর বুঝলেন কোনো আশা নেই, তাঁকে আদেশ মানতেই হবে।

সুটকেস বিছানার উপর রেখে চাবি দিয়ে ডালা খুলে একটা খবরের কাগজে মোড়া পাতলা বোর্ড বার করে আনলেন রুদ্রশেখর।

যে লোকটির হাতে রিভলভার নেই সে মোড়কটা ছিনিয়ে নিয়ে খবরের কাগজের র‍্যাপিং খুলতেই বেরিয়ে পড়ল যীশু খৃষ্টের ছবি।

লোকটা ছবিটা আবার কাগজে মুড়ে পকেট থেকে প্রথমে একটি সিল্কের রুমাল বার করে তাই দিয়ে রুদ্রশেখরের মুখ বাঁধল।

তারপর একটি মোক্ষম ঘুঁষিতে তাকে অজ্ঞান করে মেঝেতে ফেলে, নাইলনের দড়ির সাহায্যে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে সেইভাবেই ফেলে রেখে দুজনে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

পনের মিনিটের মধ্যে যীশু খৃষ্টের ছবি হীরালাল সোমানির কাছে পৌঁছে গেল। সোমানি ছবিটার উপর চোখ বুলিয়ে দুটির একটি লোকের হাতে দিয়ে বললেন, ‘এটা ভালো করে প্যাক কর।’

তারপর অন্য লোকটিকে বললেন, ‘একটা জরুরী টেলিগ্রাম লিখে দিচ্ছি। এখুনি পার্ক স্ট্রীট পোস্টাপিসে চলে যাও। টেলিগ্রাম আজকের মধ্যেই যাওয়া চাই।’

সোমানি টেলিগ্রাম লিখলেন—

মিঃ ওয়লটার ক্ৰিকোরিয়ান

ক্ৰিকোরিয়ান এনটারপ্রাইজেজ

১৪ হেনেসি স্ট্রীট

হংকং

অ্যারাইভিং স্যাটারডে নাইনথ অক্টোবর

—সোমানি

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *