• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

০৩. প্রোফেসর কানুনগো

লাইব্রেরি » সত্যজিৎ রায় » ফেলুদা সমগ্র - সত্যজিত রায় » হত্যাপুরী (উপন্যাস) (১৯৭৯) » ০৩. প্রোফেসর কানুনগো

ফেলুদা যে সত্যিই পরদিন ভোরে উঠে টেলিফোনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে তক্ষুনি প্রোফেসর কানুনগোর সঙ্গে দেখা করতে চলে যাবে, সেটা আমি ভাবিনি। আমার ইচ্ছা ছিল আজ। সমুদ্রে স্নান করব; ও থাকলে একজন সঙ্গী জুটত, কারণ লালমোহনবাবুকে বলাতে উনি আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন, দেখো তপেশী, তোমাদের বয়সে রেগুলার সাঁতার কেটেছি। আমার বাটারফ্লাই স্ট্রোক দেখে লোকে ক্ল্যাপ পর্যন্ত দিয়েছে। কিন্তু হেদো আর বে। অফ বেঙ্গল এক জিনিস নয় ভাই। আর পুরীর ঢেউ বড় ট্রেচারস। বাম্বাই-এর সমুদ্র হলে দ্বিধা করতুম না।

সত্যি বলতে কী, আজকের দিনটা স্নানের পক্ষে খুব সুবিধের নয়। সারা রাত টিপটপ করে বৃষ্টি পড়েছে, এখনও মেঘলা আর গুমোট হয়ে রয়েছে। তাই শেষ পর্যন্ত ঠিক হল স্নানটা না হয় ফেলুদার সঙ্গেই করা যাবে, আজ শুধু একটু বিচে হেঁটে আসব। সাতটার মধ্যেই চা-ডিমা-রুটি খেয়ে আমরা দুজন বেরিয়ে পড়লাম। লালমোহনবাবুর কাল রাত থেকেই বেশ খুশি-খুশি ভাব; মনে হয় লক্ষ্মণ গণংকারই তার জন্য দায়ী।

বিচে এসে দেখি খাঁ খাঁ। এই দিনে এত সকলে কে আর আসবে? দুরে জলে দু-তিনটে নুলিয়াদের নীকো দেখা যাচ্ছে। তবে কালকের সেই নুলিয়া বাচ্চাগুলো নেই। তার বদলে কয়েকটা কাক রয়েছে, ঢেউ-এর জল সরে গেলেই তিড়িং তিড়িং করে এগিয়ে গিয়ে ফেনায় ঠোকর দিয়ে কী যেন খাচ্ছে, আবার ঢেউ এলেই তিড়িং তিড়িং করে পিছিয়ে আসছে।

দুজনে ভিজে বালির উপর দিয়ে হাঁটছি, এমন সময় লালমোহনবাবু বললেন, সি-বিচে শুয়ে রোদ পোয়ানোর বাতিক আছে সাহেব-মেমব্দের এটা শুনিচি, কিন্তু মেঘ-পোয়ানোর কথা তো শুনিনি।

আমি জানি কথাটা কেন বললেন ভদ্রলোক। একজন লোক চিত হয়ে শুয়ে আছে বালির উপর, হাত পঞ্চাশেক দূরে। বাঁয়ে যেখানে বিচ শেষ হয়ে পড়ে উঠে গেছে, সেই দিকটায়। আরেকটু বাঁয়ে শুলেই লোকটা একটা ঝোপড়ার আড়ালে পড়ে যেত।

কেমন ইয়ে মনে হচ্ছে না?

আমি জবাব না দিয়ে পা চালিয়ে এগিয়ে গেলাম। খটকা লেগেছে আমারও।

দশ হাত দূর থেকেও মনে হয় লোকটা ঘুমাচ্ছে, কিন্তু আরেকটু এগোতেই বুঝলাম তার চোখ দুটো খোলা আর মাথার কোঁকড়ানো ঘন চুলের পাশে বালির উপর চাপ-বাঁধা রক্ত।

পুরু গোঁফ, ঘন ভুরু, রং বেশ ফরসা, গায়ে ছাইরঙের সুতির কোট, সাদা প্যান্ট আর নীল স্ট্রাইপড শার্ট। জুতো আছে, মাজা নেই। ডান হাতের কড়ে আঙুলে একটা নীল পাথর-বিসানো আংটি, হাতের নখ কাটা হয়নি। অন্তত এক মাস। কোটের বুক পকেট ফুলে উঁচু হয়ে আছে; মনে হয় কাগজপত্তর আছে। ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছিল কাগজগুলো বার করে দেখতে, কারণ পুলিশ তাই করবে, আর তা হলে হয়তো লোকটা কে তা জানা যাবে।

ডোন্ট টাচ, বললেন লালমোহনবাবু, যদিও সেটা বলার কোনও প্রয়োজন ছিল না। ফেলুদার সঙ্গে থেকে এসব আমার জানা আছে।

আমরাই তো ফাস্ট? বললেন লালমোহনবাবু। ভদ্রলোক পকেটে হাত ঢুকিয়ে রেখেছেন, যেন কিছুই হয়নি এমন ভাব, কিন্তু গলার স্বরে বোঝা যায় ওঁর। তালু শুকিয়ে গেছে।

আমি বললাম, তাই তো মনে হচ্ছে।

ভদ্রলোক আবার বিড়বিড় করে বললেন, যাক, তা হলে আমরাই ডিসকভার করলুম।

আমি থা ভাবটা কাটিয়ে নিয়ে বললাম, চলুন, রিপোর্ট করতে হবে।

ইয়েস ইয়েস—রিপোর্ট।

পাঁচ মিনিটের মধ্যে হোটেলে ফিরে এলাম। ইতিমধ্যে ফেলুদা হাজির। —পাপোশে যখন পা না মুছেই ঢুকলেন, এবং ঘরের মেঝেতে ছটাক খানেক বালি ছড়ালেন, তখন বেশ বুঝতে পারছি আপনি সবিশেষ উত্তেজিত, কফি হাতে খাটে বসে ফেলুদা লালমোহনবাবুকে উদ্দেশ করে বলল।

লালমোহনবাবু ঘটনায় রং চড়াতে গিয়ে দেরি করে ফেলবেন বলে আমি দু-কথায় ব্যাপারটা বলে দিলাম। এক মিনিটের মধ্যে ফেলুদা নিজেই ফোন করে থানায় খবরটা দিয়ে দিল। ওই ভাবে সংক্ষেপে গুছিয়ে আমি বলতে পারতাম না, লালমোহনবাবু তো নয়ই।

খুন সম্পর্কে ফেলুদা শুধু একটাই প্রশ্ন করল–

না, ফেলুদা।

তবে বাঙালি নয়, এ বিষয়ে আমি ডেফিনিট বললেন লালমোহনবাবু।

কেন বলছেন? ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।

জোড়া ভুরু, ভয়ংকর কনফিডেনসের সঙ্গে বললেন জটায়ু—বাঙালিদের হয় না। আর ওরকম চায়ালও হয় না। বাজরার রুটি আর গোস্তু খাওয়া চায়াল। যদ্দূর মনে হয় বুন্দেলখন্দের লোক।

ফেলুদা যে ইতিমধ্যে ডি. জি. সেনের সঙ্গে অ্যািপয়েন্টমেন্ট করে ফেলেছে সে কথা এতক্ষণ বলেনি। সাড়ে আটটায় টাইম দিয়েছেন তাঁর সেক্রেটারি, আর বলেছেন পনেরো মিনিটের বেশি থাকা চলবে না। আমরা পনেরো মিনিট হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

এবারে বিচে পৌঁছে দূর থেকেই বুঝলাম যে লাশের পাশে বেশ ভিড়। খবর এতক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে, পুরীর সমুদ্রতটে এভাবে এর আগে খুন হয়েছে কি না সন্দেহ।

আমি জানতাম যে এখানকার থানার কিছু অফিসারের সঙ্গে রাউরকেল্লার কেসটার সময় ফেলুদার আলাপ হয়েছিল। যিনি ফেলুদাকে দেখে হেসে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এলেন তিনি শুনলাম সাব-ইনস্পেক্টর মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্ৰ।

এবার কী, ছুটি ভোগ? মহাপাত্র জিজ্ঞেস করলেন।

সেই রকমই তো বাসনা, বলল ফেলুদা। কে খুন হল?

স্থানীয় লোক নয় বলেই তো মনে হচ্ছে। নাম দেখছি রূপচাঁদ সিং।

কীসে পেলেন?

ড্রাইভিং লাইসেন্স।

কোথাকার?

নেপাল।

পুরু চশমা পরা একজন বাঙালি ভদ্রলোক পুলিশের ফোটাগ্রাফারকে ঠেলে সরিয়ে এগিয়ে এসে বললেন, আমি লোকটাকে দেখেছি। কাল বিকেলে স্বৰ্গদ্বার রোডে একটা চায়ের দোকানের বাইরে বসে চা খাচ্ছিল। আমি পান। কিনছিলাম পাশের দোকান থেকে; লোকটা আমার কাছ থেকে দেশলাই চেয়ে নিয়ে সিগারেট ধরায়।

মরল কীভাবে? ফেলুদা মহাপাত্রকে জিজ্ঞেস করল।

রিভলভার বলেই তো মনে হচ্ছে। তবে ওয়েপন পাওয়া যায়নি। এইটে দেখতে পারেন, লাইসেনসের ভিতর গোঁজা ছিল।

ভদ্রলোক একটা মাঝারি সাইজের ভিজিটিং কার্ড ফেলুদার দিকে এগিয়ে দিলেন। একদিকে কাঠমাণ্ডুর একটা দরজির দোকানের নাম-ঠিকানা, অন্যদিকে বেশ কাঁচা হাতে ইংরিজিতে লেখা—এ. কে. সরকার, ১৪ মেহের আলি রোড, ক্যালকাটা। বানান ভুলগুলোর কথা আর বললাম না।

ফেলুদা কার্ডটা ফেরত দিয়ে বলল, ইন্টারেস্টিং ফ্যাকরা যদি বেরোয় তো জানাবেন। আমরা নীলাচল হোটেলে আছি।

আমরা লাশ পিছনে ফেলে এগিয়ে গেলাম।

কাল যে বাড়িটাকে দেখে আমরা তারিফ না করে পারিনি, আজ মেঘলা দিনে সেটা যেন মেদা মেরে গেছে, ভেতরে যাবার জন্য আর হাতছানি দিয়ে ডাকছে না।

গেটের বাইরে একজন লোক দাঁড়িয়ে, বয়স পচিশের বেশি না, দেখলে মনে হয়। চাকর, সে আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলল, মিত্রবাবু?

ফেলুদা এগিয়ে গেল। —আমিই মিত্রবাবু?

আসুন ভিতরে।

বাগানটাকে দুভাগে চিরে একটা নুড়ি-ফেলা পথ বারান্দার দিকে চলে গেছে। দেখলাম সেটা আমাদের পথ নয়। তিনতলায় যেতে হলে বাড়ির বাঁ পাশ দিয়ে গলির মধ্য দিয়ে যেতে হয়, কারণ তিন তলার দরজা আর সিডি বাড়ির পিছন দিকে। গলির মাঝামাঝি এসে লালমোহনবাবু হঠাৎ হিক শব্দ করে তিন হাত পিছিয়ে গিয়েছিলেন, তার কারণ মাটিতে পড়ে থাকা একটা সরু লম্বা সাদা কাগজের ফালি। লালমোহনবাবু সেটাকে সাপ মনে করেছিলেন।

সিঁড়ির সামনে গিয়ে চাকর আমাদের ছেড়ে দিল, কারণ ওপর থেকে একটি ভদ্রলোক নেমে এসেছেন।

মিস্টার মিত্ৰ? আসুন আমার সঙ্গে।

ফেলুদাকে চিনেছেন নাকি? মুখের হাসি তো তাই বলছে। ভদ্রলোকের চোখে মাইন্যাস পাওয়ারের চশমা, গায়ের চামড়া বলছে বয়স পয়ত্ৰিশের বেশি নয়, কিন্তু মাথার চুল এর মধ্যেই বেশ পাতলা হয়ে গেছে।

আপনার পরিচয়টা? সিঁড়ি উঠতে উঠতে জিজ্ঞেস করল ফেলুদা।

আমার নাম নিশীথ বোস। আমি দুৰ্গবাবুর সেক্রেটারি।

দুৰ্গবাবু? ওঁর নাম তা হলে—

দুগাৰ্গতি সেন। এখানে সবাই ডি. জি. সেনই বলে।

সিঁড়ি দিয়ে উঠে ডাইনে একটা ঘর, বোধহয় সেটাতেই সেক্রেটারি থাকেন, কারণ একটা তক্তপোশের পাশে একটা ছোট্ট টেবিলের উপর একটা টাইপরাইটার চোখে পড়ল। বাঁয়ে একটা প্যাসেজের দুদিকে দুটো ঘর, শেষ মাথায় ছাত। সেই ছাতেই যেতে হল আমাদের।

মাঝারি ছাত, একপাশে একটা কাচের ঘরের মধ্যে কিছু অর্কিড। ছাতের মাঝখানে একটা বেতের চেয়ারে বসে আছেন একটি বছর ষাটেকের ভদ্রলোক। লালমোহনবাবু পরে যে বলেছিলেন ব্যক্তিত্ব উইথ এ ক্যাপিটাল বি, সেটা খুব ভুল বলেননি। টকটকে রং, ভাসা ভাসা চোখ, কাঁচা-পাকা মেলানো ফ্রেঞ্চকটি দাড়ি আর মুগুর ভাঁজা চওড়া কাঁধ। চেয়ারে বসেই নমস্কার করছেন দেখে প্রথমে একটু কেমন-কেমন লাগছিল, তারপর কারণটা বুঝলাম। নীল প্যান্টের তলা দিয়ে ভদ্রলোকের বা পায়ের যেটুকু দেখা যাচ্ছে, সবটুকুই। ব্যান্ডোজে ঢাকা।

আমাদের জন্য আরও তিনটে চেয়ার বার করে রাখা হয়েছে; আমরা বসলে পর ফেলুদা বলল, আপনি যে আমাদের সময় দিয়েছেন তার জন্য আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ। আপনি পুরনো পুঁথি সংগ্রহ করেন শুনে আসার লোভ সামলাতে পারলাম না।

ওটা আমার অনেক’দিনের শখ। —আমাদের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে কথাটা বললেন ভদ্রলোক। চেহারার সঙ্গে মানানসই গলার স্বর।

ফেলুদা বলল, আমার এক জ্যাঠামশাই আছেন, নাম সিদ্ধেশ্বর বোস, তাঁর তিনটে পুথি আছে। আপনি বোধহয় একবার সেগুলো দেখতে গিয়েছিলেন।

কী পুঁথি?

তিনটেই বাংলা। দুটো অন্নদামঙ্গল, আর একটা গোরক্ষাবিজয়।

তা গিয়ে থাকতে পারি। পুঁথির পেছনে ঘুরেছি অনেক।

আপনার কি সব বাংলা পুঁথি?

অন্য ভাষাও আছে। যেটা বেস্ট সেটা সংস্কৃত।

কবেকার পুঁথি?

টুয়েলফথ সেঞ্চুরি।

আমি মনে মনে বললাম, জিনিসটা যদি আমাদের দেখার ইচ্ছেও থাকে, বলে কোনও লাভ হবে না। ভদ্রলোকের মার্জি হলে দেখাবেন, না তো নয়।

লোকনাথ!

বুঝলাম চাকরের নাম লোকনাথ। কিন্তু তাকে হঠাৎ ডাকা কেন?

চাকরের বদলে মুহূর্তের মধ্যে চলে এলেন নিশীথবাবু। পদার বাইরেই দাঁড়িয়েছিলেন কি?

লোকনাথ নেই, স্যার। বেরিয়েছে। কিছু বলবেন কি?

মিঃ সেন ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলেন। নিশীথবাবু সেটা ধরে ভদ্রলোককে চেয়ার থেকে উঠতে সাহায্য করলেন।

আসুন।

ভদ্রলোকের পিছন পিছন আমরা ছাত থেকে প্যাসেজ ও প্যাসেজ থেকে শোবার ঘরে গিয়ে ঢুকলাম।

বেশ বড় ঘর, বাঁয়ে একটা প্ৰকাণ্ড খাট, যাকে ইংরিজিতে বলে ফোর-পোস্টার। খাটের পাশে একটা কাশ্মীরি টেবিলে একটা ল্যাম্প, দুটো ওষুধের শিশি আর একটা কাচের গেলাস। ডাইনে একটা মাঝারি সাইজের রোলটিপ ডেস্ক, একটা চেয়ার, আর দেয়ালে লাগানো পাশাপাশি দুটো গোদরেজের আলমারি।

খোলো।

হুকুমটা হল সেক্রেটারিকে। নিশীথবাবু খাটের উপর রাখা বালিশের তলা হাতড়িয়ে একটা চাবির গোছা বার করে ডেস্কের ঠিক পাশের আলমারিটা খুললেন।

ভিতরে চারটে শেলফ। তার প্রত্যেকটাতে পাশাপাশি থরে থরে সাজানো শালুতে মোড়া লম্বা লম্বা প্যাকেট। সব মিলিয়ে আনন্দাজ চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশটা।

এতেও আছে কিছু, অন্য আলমারিটা দেখিয়ে বললেন দুগাৰ্গতি সেন। —তবে আসলটা—

আসলটা বেরোল শেলফ থেকে নয়, নীচের দিকের একটা দেরাজ থেকে। লক্ষ করলাম তার নীচে আরেকটা পুঁথি রয়েছে।

নিশীথবাবু হুকুম পেয়ে শালুর উপর ফিতের বাঁধনটা খুলে ফেললেন। ভিতর থেকে বেরিয়ে এল দুদিকে কাঠের পটার মধ্যিখানে স্যান্ডউইচ করা দ্বাদশ শতাব্দীর সংস্কৃত পুঁথি।

অষ্টাদশসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা, বললেন দুগাৰ্গতি সেন,-অন্যটা কল্পসূত্র।

কাঠের পটার উপরে আশ্চর্য সুন্দর রঙিন ছবি, এতদিনের পুরনো হওয়া সত্ত্বেও রঙের জৌলুস কমেনি। পুঁথিটা কাগজের নয়, তালপাতার। হাতের লেখা যে এত পরিপাটি আর এত সুন্দর হতে পারে তা আমার ধারণাই ছিল না। লালমোহনবাবু চাপা গলায় মন্তব্য করলেন, ধন্যি ছেলের অধ্যবসায়।

ফেলুদা বলল, এটা কোথায় পেলেন জানতে পারি কি?

ধরমশালা, বললেন ভদ্রলোক।

তার মানে কি এ জিনিস তিব্বত থেকে দালাই লামার সঙ্গে এসেছিল?

হ্যাঁ।

ভদ্রলোক পুথিটা ফেলুদার হাত থেকে নিয়ে নিশীথবাবুকে দিয়ে দিলেন। সেটা আবার ফিতে বাঁধা অবস্থায় যেখানে ছিল সেখানে চলে গেল।

আপনি কি আপনার জ্যাঠার হয়ে সুপারিশ করতে এসেছেন?

প্রশ্নটা শুনে বেশ হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। ফেলুদা কিন্তু নানান বেয়াড়া প্রশ্নের সামনে পড়েও নিজেকে দিব্যি ঠাণ্ডা রাখতে পারে। বলল, আজ্ঞে না।

আমি এসব জিনিস নিয়ে ব্যবসা করি না, বললেন মিঃ সেন, কেউ যদি দেখতে চায় তো দেখাতে পারি—এই পর্যন্ত।

আমার জ্যাঠার সামর্থ্য নেই। এ জিনিস কেনার, হেসে বলল ফেলুদা।অবিশ্যি আমার কোনও ধারণা নেই এর কত দাম হতে পারে।

অমূল্য।

কিন্তু এসবও তো দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে?

চামার। যারা বিক্রি করে তারা চামার।

আপনার ছেলের এ সবে ইন্টারেস্ট নেই?

দুগাগতিবাবু কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে পড়লেন প্রশ্নটা শুনে। খাটের পাশের টেবিলটার দিকে চেয়ে কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বললেন, ছেলেকে আমি চিনি না।

স্যার, ইনি একজন বিখ্যাত গোয়েন্দা, স্যার।

নিশীথবাবু হঠাৎ এই সময় এই কথাটা কেন বললেন বুঝলাম না। দুর্গাগতিবাবু একবার ফেলুদার মুখের দিকে চেয়ে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলে বললেন, তাতে ভয়ের কী? আমি কি খুন করেছি?

শ্যামলালবাবু ঠিকই বলেছিলেন। ভদ্রলোকের হাবভাব কথাবাতা সত্যিই পিকিউলিয়ার। অবিশ্যি এর পরের কথাটা আরও তাজ্জব, প্ৰায় একেবারে হেঁয়ালির মতো। —

যা হারিয়েছে, তা ফিরিয়ে আনা গোয়েন্দার কম্মো নয়। যে পারে। সেই করছে চেষ্টা, বন্ধ দরজা খুলছে একে একে। গোয়েন্দার কিছু করার নেই।

পনেরো মিনিট হয়ে গেছে, তাই ফেলুদা দরজার দিকে ফিরল। নিশীথবাবু যেন একটু ব্যস্ত হয়ে বললেন, আসুন। আমরা পুঁথির মালিককে ধন্যবাদ জানিয়ে নীচে রওনা দিলাম।

ভদ্রলোকের পায়ে কী ব্যাপার? ফেলুদা নীচে নামতে নামতে প্রশ্ন করল।

ওঁকে গাউটে ধরেছে। গোটে বাত, বললেন নিশীথবাবু, খুব শক্ত-সমর্থ লোক ছিলেন আগে। এই মাস তিনেক হল কাহিল হয়ে পড়েছেন।

যে ওষুধগুলো দেখলাম সে কি গাউটের?

আজ্ঞে হ্যাঁ। কেবল একটা ঘুমের ওষুধ। লক্ষ্মণবাবুর দেওয়া।

গণৎকার লক্ষ্মণ ভট্টাচার্যি? প্রশ্ন করলেন লালমোহনবাবু।

আজ্ঞে হ্যাঁ। উনি অ্যালোপ্যাথি আয়ুৰ্বেদ দুটোই বেশ ভাল জানেন। বেশ কোয়ালিফয়েড লোক। অনেক কিছু জানেন।

বটে? কর্তার সঙ্গে মাঝে মাঝে পুঁথি নিয়েও কথাবার্তা বলতে শুনিচি।

আশ্চর্য লোক! বললেন জটায়ু।

ফেলুদার ভুরুটা যে কেন কুঁচকে রয়েছে সেটা বুঝতে পারলাম না।

Category: হত্যাপুরী (উপন্যাস) (১৯৭৯)
পূর্ববর্তী:
« ০২. নীলাচল হোটেল
পরবর্তী:
০৪. লক্ষ্মণ ভট্টাচার্য »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑