ছিন্নমস্তার অভিশাপ – ৯

॥ ৯ ॥

বিলেত থেকে লেখা মহেশবাবুর দ্বিতীয় ছেলের চিঠিগুলো থেকে সত্যিই বিশেষ কিছু জানা গেল না। চিঠি বলতে সবই পোস্টকার্ড, তার একদিকে ছবি, অন্যদিকে ঠিকানা। যেখানে ঠিকানা ছাড়াও কিছু লেখা আছে, সেখানে বীরেন তার বাবার দেওয়া নাম ব্যবহার করেছে—দুরি।

ন’টায় বুলাকিপ্রসাদ ডিনার রেডি করে আমাদের ডাক দিল। ফেলুদা ডায়রি আর খাতা নিয়ে খেতে বসল। যে-সংকেতগুলো তৎক্ষণাৎ সমাধান হচ্ছে না, সেগুলো সে নিজের খাতায় লিখে রাখছে। বাঁ হাতে লিখছে, এবং দিব্যি লিখছে। লালমোহনবাবু এবার বললেন, ‘লেখা বন্ধ না করলে আজকের মাংসের কারিটার ঠিক জাসটিস করতে পারবেন না। দুর্ধর্ষ হয়েছে।’

ফেলুদা বলল, ‘বাঁদর সমস্যা নিয়ে পড়েছি, এখন মাংস-টাংস বলে ডিসটার্ব করবেন না।’

আমি লক্ষ করছিলাম ফেলুদার ভুরুটা সাংঘাতিক কুঁচকে রয়েছে, যদিও ঠোঁটের কোণে একটা হাসির আভাসও রয়েছে। জিগ্যেস করতেই হল ব্যাপারটা কি। ফেলুদা ডায়রি থেকে পড়ে শোনাল—‘অগ্নির উপাসকের অসীম বদান্যতা। নবরত্ন বাঁদরের হিসাবে দু হাজার পা।’

লালমোহনবাবু বললেন, ‘রাঁচিতে পাগলাগারদ আছে বলে ওখানকার বাসিন্দারাও নাকি একটু ইয়ে হয় বলে শুনিচি। সেটাও একটু মনে রাখবেন।’

ফেলুদা এ কথায় কোনো মন্তব্য না করে বলল, ‘অগ্নির উপাসক পার্সীদের বলে জানি, কিন্তু বাকিটা সম্পর্ণ ধোঁয়া।’

তাতে লালমোহনবাবু বললেন যে, প্রথমত নবরত্ন বাঁদর বলে কোনোরকম বাঁদর হয় কিনা সে বিষয়ে ওঁর সন্দেহ আছে; আর দ্বিতীয়ত, নটা রত্নের কী করে দু হাজার পা হয়, আর বাঁদর কী করে সে হিসেবটা করে সেটা কোনোমতেই বোধগম্য হচ্ছে না—‘এইবার আপনি খাতা বন্ধ করে একটু বিশ্রাম করুন।’

লালমোহনবাবু বলার জন্য নিশ্চয়ই নয়, হয়ত চোখ আর মাথাটাকে একটু রেস্ট দেবার জন্য ফেলুদা খাবার পরে হাঁটতে বেরোল। অবিশ্যি একা নয়, আমাদের দুজনকে সঙ্গে নিয়ে।

পূর্ণিমার চাঁদ এই কিছুক্ষণ হল উঠেছে, তার গায়ের রং থেকে এখনো হলুদের ছোপটা যায়নি। আকাশে মেঘ জমেছে, তাই দেখে জটায়ু বললেন, ‘চন্দ্রালোক ক্ষণস্থায়ী বলে মনে হচ্ছে।’ পশ্চিম দিক থেকে মাঝে মাঝে একটা দমকা বাতাস দিচ্ছে, আর তার সঙ্গে একটা শব্দ ভেসে আসছে যেটা ভালো করে শুনলে বোঝা যায় সার্কাসের ব্যাণ্ড।

ডাইনে মোড় নিয়ে দুটো বাড়ি পরেই কৈলাস। এক সারি ইউক্যালিপটাসের ফাঁক দিয়ে বাড়িটা দেখা যাচ্ছে। দোতলায় একটা ঘরের জানলা খোলা, ঘরে আলো জ্বলছে। সেই আলোর সামনে দিয়ে কে যেন দ্রুত পায়চারি করছে। ফেলুদারও চোখ সেইদিকে। আমরা হাঁটা থামিয়েছি। ওটা কার ঘর? প্রীতীনবাবুর। পায়চারি করছেন নীলিমা দেবী। একবার জানালায় এসে থামলেন, আবার সরে গিয়ে পায়চারি। অস্থির ভাব।

আমরা আবার চলা শুরু করলাম। জানালাটা ক্রমে দৃষ্টির আড়াল হয়ে গেল।

পরপর আরো বাড়ি। প্রত্যেকটাতেই বেশ বড় কম্পাউণ্ড। রেডিওতে খবর বলছে; কোন্‌ বাড়িতে চলছে রেডিও জানি না। লালমোহনবাবু আরেকটা বেমানান রবীন্দ্রসঙ্গীত ধরতে যাচ্ছিলেন—গুনগুনানি শুনে মনে হল ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায়—এমন সময় দেখলাম দূরে একজন লোক রাস্তা দিয়ে এগিয়ে আসছে আমাদেরই দিকে। গায়ে নীল রঙের পুলোভার।

আরেকটু কাছে এলেই চিনতে পারলাম।

‘আপনাদের ওখানেই যাচ্ছিলাম,’ নমস্কার করে বললেন শঙ্করলাল মিশ্র। চেহারা দেখে মনে হল অনেকটা সামলে নিয়েছেন, যদিও সেই হাসিখসি ছেলেমানুষী ভাবটা এখনো ফিরে আসেনি।

‘কী ব্যাপার?’ বলল ফেলুদা।

‘আপনাকে একটা অনুরোধ করব।’

‘কী অনুরোধ?’

‘আপনি তদন্ত ছেড়ে দিন।’

হঠাৎ এমন একটা অনুরোধে রীতিমত হকচকিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু ফেলুদা বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বলল, ‘কেন বলুন ত?’

‘এতে কারুর উপকার হবে না, মিঃ মিত্তির।’

ফেলুদা একটুক্ষণ চুপ থেকে একটা হালকা হাসি হেসে বলল, যদি বলি আমার নিজের উপকার হবে? মনে খট্‌কা থাকলে আমি বড় উদ্বেগ বোধ করি মিঃ মিশ্র; সেটাকে দূর না করা অবধি শান্তি পাই না। তাছাড়া মত্যুশয্যায় একজন একটা কাজের ভার আমাদের দিয়ে গেছেন, সেটা না করেও আমার শান্তি নেই। এইসব কারণে আমাকে তদন্ত চালাতেই হবে। উপকার-অপকারের প্রশ্নটা এখানে খুব বড় নয়। ভেরি সরি, আপনার অনুরোধ আমি রাখতে পারলাম না। শুধু তাই নয়—এই তদন্তের ব্যাপারে আমি আপনাকে অনুরোধ করব যে আমাকে একটু সাহায্য করুন। মহেশবাবু সম্বন্ধে আর কেউ যাই ভাবুন না কেন, আপনি তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন এটা ত ঠিক?’

‘নিশ্চয়ই ঠিক।’ ফেলুদার কথাটা মনে ধরতে কিছুটা সময় নিল বলেই বোধহয় জবাবটা এল একটু পরে। কিন্তু যখন এল তখন বেশ জোরের সঙ্গেই এল। ‘নিশ্চয়ই ঠিক’, আবার বললেন শঙ্করলাল। তারপর তার গলার সুরটা কেমন যেন বদলে গেল। বললেন, ‘যে শ্রদ্ধাটা বহুদিন ধরে ক্রমে ক্রমে গড়ে ওঠে, সেটাকে কি এক ধাক্কায় ভাঙতে দেওয়া উচিত?’

‘আপনি কি সেটাই করছিলেন?’

‘হ্যাঁ, সেটাই করছিলাম। কিন্তু সেটা ভুল। এখন বুঝেছি সেটা মস্ত ভুল, আর বুঝতে পেরে মনে শান্তি পাচ্ছি।’

‘তাহলে আপনার কাছে সাহায্য আশা করতে পারি?’

‘কী সাহায্য চাইছেন বলুন,’ ফেলুদার দিকে সোজাসুজি চেয়ে বেশ সহজভাবে কথাটা বললেন শঙ্করলাল।

‘তাঁর দুই ছেলের প্রতি মহেশবাবুর মনোভাব কেমন ছিল সেটা জানতে চাই। চৌধুরী পরিবার সম্বন্ধে আপনি যতটা নিরপেক্ষভাবে বলতে পারবেন, তেমন অনেকেই পারবেন না।’

শঙ্করলাল বললেন, ‘আমি যেটুকু বুঝেছি তা বলছি। আমার বিশ্বাস শেষ বয়সে বীরেন ছাড়া আর কারুর উপর টান ছিল না মহেশবাবুর। অরুণদা আর প্রীতীন দুজনেই ওঁকে হতাশ করেছিল।’

‘সেটার কারণ বলতে পারেন?’

‘সেটা পারব না, জানেন, কারণ ওই দু ভাইয়ের সঙ্গে আমার বিশেষ যোগাযোগ ছিল না অনেকদিন থেকেই। তবে অরুণদাকে যে জুয়ার নেশায় পেয়েছে সে কথা আমাকে একদিন মহেশবাবু বলেছিলেন। সোজা করে বলেন নি, ওঁর নিজস্ব ভাষায় বলেছিলেন। আমি বুঝতে পারিনি; শেষে ওঁকেই বুঝিয়ে দিতে হল। বললে, “অরুণ গুড হলে আমি খুশি হতুম, বেটার হয়েই আমায় চিন্তায় ফেলেছে। শুনছি নাকি আজকাল মহাজাতি ময়দানে যাতায়াত করছে নিয়মিত।”—বেটার ত বুঝতেই পারছেন, আর জাতি হল রেস; মহাজাতি ময়দান হল মহেশবাবুর ভাষায় রেসের মাঠ।’

ফেলুদা বলল, ‘কিন্তু প্রীতীনবাবু তাঁকে হতাশ করবেন কেন? উনি ত ইলেক্‌ট্রনিকসে বেশ—’

‘ইলেক্‌ট্রনিকস!’—শঙ্করলাল যেন আকাশ থেকে পড়লেন। ‘ও কি আপনাকে তাই বলেছে নাকি?’

‘ইণ্ডোভিশনের সঙ্গে ওঁর কোন সম্পর্ক নেই?’

শঙ্করলাল সশব্দে হেসে উঠলেন। ‘হরি, হরি! ইণ্ডোভিশন! প্রীতীন একটা সদাগরী আপিসে সাধারণ চাকরি করে। সেটাও ওর শ্বশুরের সুপারিশে পাওয়া। প্রীতীন ছেলে খারাপ নয়, কিন্তু অত্যন্ত ইমপ্র্যাকটিক্যাল আর খামখেয়ালী। এককালে সাহিত্য-টাহিত্য করতে চেষ্টা করেছে, কিন্তু সেও খুব মামুলি। ওর স্ত্রী বড়লোক বাপের একমাত্র মেয়ে। ও যে গাড়িটাতে এসেছে সেটাও ওর শ্বশুরের। আপিস থেকে ছুটি পাচ্ছিল না, তাই আসতে দেরী হয়েছে।’

এবার আমাদের আকাশ থেকে পড়ার পালা।

‘তবে ওর পাখির নেশাটা খাঁটি,’ বললেন শঙ্করলাল, ‘ওতে কোনো ফাঁকি নেই।’

ফেলুদা বলল, ‘আরেকটা প্রশ্ন আছে।’

‘বলুন।’

‘সেদিন রাজরাপ্পায় যে গেরুয়াধারীটির সঙ্গে আপনি কথা বলছিলেন, তিনিই কি বীরেন্দ্র?’

হঠাৎ এরকম একটা প্রশ্ন শুনে শঙ্করলাল থতমত খেলেও, মনে হল চট্‌ করে সামলে নিলেন। কিন্তু উত্তর যেটা দিলেন সেটা সোজা নয়।

‘আপনার যা বুদ্ধি, আমার মনে হয় ক্ৰমে আপনি সব কিছুই জানতে পারবেন।’

‘এটা জিগ্যেস করার একটা কারণ আছে,’ বলল ফেলুদা। ‘যদি তিনি বীরেন হন, তাহলে মহেশবাবুর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে আমার একটা জিনিস দিতে হবে। আপনি প্রয়োজনে বীরেনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারবেন কি?’

শঙ্করলাল বললেন, ‘মহেশবাবুর শেষ ইচ্ছা যাতে পূরণ হয়, তার চেষ্টা আমি করব। এটা আমি কথা দিচ্ছি। এর বেশি আর কিছু বলতে পারব না। আমায় মাপ করবেন।’

কথাটা বলে শঙ্করলাল যে পথে এসেছিলেন, আবার সেই পথেই ফিরে গেলেন।

আমরা যে হাঁটতে হাঁটতে বেশ অনেকখানি পথ চলে এসেছিলাম সেটা বুঝতেই পারিনি। ফেলুদা টর্চের আলোয় ঘড়ি দেখে বলল সাড়ে দশটা। আমরা ফিরতি পথ ধরলাম। কৈলাসে সব বাতি নিভে গেছে, চাঁদ ঢেকে গেছে মেঘে, সার্কাসের বাজনাও আর শোনা যাচ্ছে না। এই থমথমে পরিবেশে ফেলুদার ‘বাঁদর’ বলে চেঁচিয়ে ওঠাটা এত অপ্রত্যাশিত যে লালমোহনবাবুর সঙ্গে সঙ্গে ‘কোথায়’ বলাতে কিছুই আশ্চর্য হলাম না। আমি অবিশ্যি বুঝেছিলাম যে ফেলুদা মহেশবাবুর ডায়রির বাঁদরের কথা বলছে। ‘কী অদ্ভুত মাথা ভদ্রলোকের!’ বলল ফেলুদা। ‘বাঁদরেও যে বই লিখেছে সেটা ত খেয়ালই ছিল না।’

‘আপনি সিমপল ফ্র্যাকচারটাকে কম্পাউণ্ড ফ্র্যাকচারে পরিণত করছেন কেন বলুন ত মশাই? শুধু বাঁদরে শানাচ্ছে না, তার উপর আবার বই-লিখিয়ে বাঁদর?’

‘গিবন! গিবন! গিবন!’ বলে উঠল ফেলুদা।

আরেব্বাস্‌! সত্যিই ত। গিবন ত একরকম বাঁদর বটেই।

কিন্তু ফেলুদা হঠাৎ কেন জানি মুষড়ে পড়ল। বাড়ির ফটকের কাছাকাছি যখন পৌঁছেছি তখন চাপা গলায় বলতে শুনলাম, ‘সাংঘাতিক দাঁও মেরেছে লোকটা, সাংঘাতিক।’

‘কে মশাই?’ জিগ্যেস করলেন লালমোহনবাবু।

‘স্ট্যাম্প-অ্যালবাম চোর,’ বলল ফেলুদা।

রাত বারোটা পর্যন্ত আমাদের ঘরে থেকে লালমোহনবাবু ফেলুদার হেঁয়ালি সমাধান দেখলেন। একটা হেয়ালির উত্তরের জন্য এগারোটার সময় কৈলাসে ফোন করতে হল। ১৯৫১-র ১৮ই অক্‌টোবর মহেশবাবু লিখেছেন He passes away। কার মৃত্যু সংবাদ ডায়রিতে লেখা রয়েছে জানবার জন্য অরুণবাবুকে জিগ্যেস করে জানা গেল ওই দিনে অরুণবাবুর মা মারা গিয়েছিলেন। মা-র নাম জিগ্যেস করাতে বললেন হিরন্ময়ী। তার ফলে বেরিয়ে গেল He হল ‘হি’।

১৯৫৮-তে কিছু লেখা পাওয়া গেল যেগুলো পড়লে মনে হয় ইংরিজি ‘মটো’। যেমন ‘Be foolish’, ‘Be stubborn’, ‘Be determined।’ তারপর যখন এল ‘Be leaves for England’ তখন বোঝা গেল Be হচ্ছে বী অর্থাৎ বীরেন।

১৯৭৫-এর পাতায় পাওয়া গেল ‘এ তিনের বশ’। কাম ক্রোধ লোভ মোহ মদ মাৎসর্য। তিন হল লোভ। ‘এ’ হচ্ছে A—অরুণবাবু।

শেষ লেখা মহেশবাবুর জন্মদিনের আগের দিন।—‘ফিরে আসা। ফিরে আশা’—ব্যস—তারপর আর কিছু নেই।

ডায়রি দেখা যখন শেষ হল তখন রাত একটা। ফেলুদার তখনও ঘুম আসেনি, কারণ আমি যখন লেপটা গায়ের উপর টানছি, তখন দেখলাম ও লালমোহনবাবুর দেওয়া সার্কাসের বইটা খুলল। উনি কথাই দিয়েছিলেন ওঁর পড়া হলে ফেলুদাকে পড়তে দেবেন, আর ফেলুদার পড়া হলে আমি পড়ব।

যখন তন্দ্রার ভাব আসছে, তখন শুনলাম ফেলুদা কথা বলছে, আর সেটা আমাকেই বলছে।—

‘কোথাও খুন হলে পুলিসে গিয়ে খুনের জায়গার একটা নকশা করে লাশ যেখানে পাওয়া গেছে সেখানে একটা চিহ্ন দেয়। সে চিহ্নটা কী জিনিস?’

‘এক্স মার্কস দ্য স্পট?’ আমি জিগ্যেস করলাম।

‘ঠিক বলেছিস। এক্স মার্কস দ্য স্পট।’

এই এক্সটাই স্বপ্নে হয়ে গেল দু হাত তোলা পা ফাঁক করা কালী মূর্তি, যেটা অরুণবাবুর দিকে চোখ রাঙিয়ে বলছে ‘তুই দুইয়ের বশ, তুই দুইয়ের বশ, তুই দুইয়ের বশ,’ আর অরুণবাবু চিৎকার করে বলছেন ‘আমি দেখছিলাম! আমি দেখছিলাম!’ তারপরই কালীর মুখটা হয়ে গেল লালমোহনবাবুর মুখ, আর যেই সেই মুখটা বলেছে ‘এক মাসে তিন হাজার বিক্রী—হুঁ, হুঁ—কাল—মোহন বেঙ্গলী!’—অমনি স্বপ্নটা ভেঙে গেল একটা শব্দে।

দরজায় ধাক্কা লাগার শব্দ। আর তার সঙ্গে একটা ধস্তাধস্তির শব্দ। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে এটাও বুঝতে পারলাম।

আমার হাতটা আপনা থেকেই টেবিল ল্যাম্পের সুইচটার দিকে চলে গেল। আলো জ্বলল না। বিহারেও যে লোডশেডিং হয় এটা খেয়াল ছিল না।

মেঝেতে ধুপ্‌ করে কী একটা পড়ার শব্দের সঙ্গে সঙ্গে ফেলুদার গলা—

‘টর্চ জ্বাল, তোপসে—আমারটা পড়ে গেছে!’

টেবিলের উপর হাতড়ে জলের গেলাসটাকে মাটিতে ফেলে ভেঙে তবে টর্চটা পেলাম। ফেলুদা ইতিমধ্যে উঠে দাঁড়িয়েছে। টর্চের আলোতে তার নিষ্ফল ক্রোধটা চোখে মুখে ফুটে বেরোচ্ছে।

‘কে ছিল ফেলুদা?’

‘দেখিনি, তবে অনুমান করতে পারি। লোকটা ষণ্ডা।’

‘কী মতলবে এসেছিল, বল ত?’

‘চুরি।’

‘কিছু নেয়নি ত?’

‘নেয়নি, তবে নির্ঘাৎ নিত—যদি আমার ঘুমটা এত পাতলা না হত।’

‘কী নিত?’

ফেলুদা এ প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে কেবল বিড়বিড় করে বলল, ‘এখন দেখছি ফেলু মিত্তিরই একমাত্র লোক নয় যে মহেশ চৌধুরীর সংকেতের মানে বুঝতে পারে। যদিও এটা একটু লেটে বুঝেছে।’…

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *