• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

যৌনকর্ম নাম দিয়ে পতিতাবৃত্তিকে বৈধ করার ষড়যন্ত্র

লাইব্রেরি » তসলিমা নাসরিন » বিবিধ রচনা (তসলিমা নাসরিন) » যৌনকর্ম নাম দিয়ে পতিতাবৃত্তিকে বৈধ করার ষড়যন্ত্র

পতিতাদের জন্য যত সরকারি-বেসরকারি সংগঠন কাজ করছে, সেগুলোর বেশির ভাগই পতিতাবৃত্তি নামক ভয়াবহ নারী নির্যাতনকে টিকিয়ে রাখার জন্য, এ থেকে অসহায় মেয়েদের মুক্ত করার জন্য নয়। বেশির ভাগ নারীবাদীই পতিতাদের যৌনকর্মী বলেন। পতিতাদের তাঁরা শ্রমিকের স্বীকৃতি দিতে চান। তাঁরা মনে করেন, অধিকাংশ মেয়েই এই ‘পেশা’টি পছন্দ করে বলে এই পেশায় স্বেচ্ছায় আসে।   অল্প কিছু নারীবাদী সংগঠন এবং কিছু নারীবাদীই পতিতাপ্রথাকে নারী নির্যাতন প্রথা বলে মনে করে এবং এই কুিসত প্রথাটির বিলুপ্তি চায়। তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের পতিতালয় থেকে উদ্ধার করার চেষ্টা করে।

মেয়েরা স্বেচ্ছায় পতিতা হয় না। কোনও মেয়েই শখ করে, পছন্দ করে, সংগ্রাম করে পতিতা হয় না। অন্য কোনও বৃত্তিতে যাওয়ার জন্য যত সংগ্রাম আছে, সবকটি সংগ্রামে ব্যর্থ হয়েই পতিতা হয়। এরকম নয় যে একটি মেয়ের সামনে ডাক্তার হওয়ার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার, শিক্ষক হওয়ার, ব্যাঙ্কার হওয়ার, পতিতা হওয়ার পথ খোলা ছিল, সে পতিতা হওয়াটাকে বেছে নিয়েছে। তা যদি হতো, তাহলে আমরা বলতে পারতাম ও স্বেচ্ছায় পতিতা হয়েছে। পছন্দ করার আর কিছু থাকে না বলেই পতিতা হতে মেয়েরা বাধ্য হয়। পতিতা বানাতে মেয়েদের বাধ্য করে পুরুষেরা। যদি মেয়েরা চায় পতিতা হতে, নিশ্চয়ই কোনও না কোনও কারণে বাধ্য হয়ে চায়। বাধ্য হয়ে চাওয়া আর স্বেচ্ছায় চাওয়ার মধ্যে এক সমুদ্র ব্যবধান। মেয়েরা স্বেচ্ছায় অসম্মানিত, অপমানিত আর অত্যাচারিত হতে চায় না। মেয়েরা স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে না যৌন নির্যাতন। কোনও মেয়ে শখ করে আগুনে ঝাঁপ দেয় না। সতীদাহের আগুনে মেয়েদের ছুড়ে দিয়ে বলা হতো মেয়েরা স্বেচ্ছায় ওই আগুনে ঝাঁপ দিয়েছে।

পতিতাপ্রথাকে বৈধ করার জন্য বিভিন্ন নারী সংগঠন তো আছেই, মানবাধিকার সংগঠনগুলোও চিৎকার চেঁচামেচি কম করে না। পতিতাপ্রথাকে বৈধ করার মানে নারী নির্যাতনকে বৈধ করা। যে রাষ্ট্রে পতিতাপ্রথা বৈধ, সেই রাষ্ট্র কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। গণতন্ত্র শুধু শাসক বানানো নয়। গণতন্ত্র মানবাধিকার নিশ্চিত করাও, নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করাও। কোনো সভ্যতা বা কোনো গণতন্ত্র নারীর বিরুদ্ধে পুরুষের নির্যাতনকে ছলছুঁতোয় মেনে নেয়ার চেষ্টা করে না। করতে পারে না। যদি করে, সেই গণতন্ত্রের নাম নিতান্তই পুরুষতন্ত্র, আর সেই সভ্যতার নাম বর্বরতা ছাড়া অন্য কিছু নয়।

বাংলাদেশের দৌলতদিয়া পতিতালয়ের ভেতরের জীবনগুলো দেখছিলাম সেদিন ইউটিউবে। দু’হাজার পতিতার বাস সেখানে। শতকরা ষাট ভাগ মেয়ের বয়স আঠারো বছরের নিচে। ওই পুঁতিগন্ধময় পরিবেশে বাস করতে করতে জীবন যে আবার বদলাতে পারে— এ ভাবনাটা কারও মস্তিষ্কের ধারেকাছে উঁকি দেয় না। বাংলাদেশে মোট কত সহস্র মেয়েকে পতিতা বানানো হয়েছে জানি না। অভাবের তাড়নায় বাবারা বিক্রি করে দিয়েছে মেয়েকে। প্রতারক প্রেমিকরা বিক্রি করেছে, স্বামীরা জোর করে পতিতালয়ে পাঠিয়েছে যেন শরীর বেচে টাকা রোজগার করে স্বামীর মদের আর সংসারের খরচ চালায়। পতিতাবৃত্তির সঙ্গে নারী পাচার আর শিশু পাচার অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এরা একে অপরের পরিপূরক। যারা দাবি করে পতিতালয়ের সব মেয়েই প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে, স্বেচ্ছায় এই পেশায় নাম লিখিয়েছে, তারা মিথ্যে বলে। পতিতালয়ের মেয়েদের বেশির ভাগই শিশু, বেশির ভাগকেই জোর করে বা ভুলিয়ে-ভালিয়ে বা অপহরণ করে এনে বিক্রি করা হয়েছে। পতিতার জীবন সাধারণত মেয়েরা বারো/তেরো বছর বয়সে শুরু করে, ওই বয়সে নানা রকম বয়স্ক পুরুষের ধর্ষণ থেকে নিজেকে বাঁচানোর ক্ষমতা থাকে না মেয়েদের।

পতিতাবৃত্তি কোনো অর্থেই পেশা নয়। এটি শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন। এই পতিতাবৃত্তিতে মেয়েদের দারিদ্র্য ঘোচে না। কোটি কোটি টাকা যা আয় হচ্ছে যৌন ব্যবসা থেকে, সেসব টাকা নির্যাতিত মেয়েদের হাতে পৌঁছোয় না। মেয়েদের প্রতিদিন নারী পাচারকারী, আর দালালের ভয়াবহ সন্ত্রাসের শিকার হতে হয়। মেয়েরা এই যৌন নির্যাতন থেকে বেরোতে চায়, কিন্তু তাদের বেরোতে দেওয়া হয় না। কারাগারের চেয়েও ভয়াবহ পতিতালয়। কারাগার থেকে এক সময় মুক্তি পায় মানুষ, কিন্তু পতিতালয় থেকে মৃত্যু অথবা মৃত্যুর কাছাকাছি না পৌঁছোনো পর্যন্ত পায় না।

দরিদ্র বাংলাদেশের দরিদ্র মেয়েরা মূলত দারিদ্র্য আর প্রতারকের কবলে পড়ে পতিতালয়ে আসে। কচি মেয়েদের শীর্ণ শরীর খদ্দেরদের আকর্ষণ করবে না আশঙ্কা করে, গরু বিক্রি করার আগে যেমন গরুকে মোটাতাজা করার জন্য ওরাডেক্সন নামের স্টেরোয়েড খাওয়ানো হয়, মেয়েদেরও মোটাতাজা করার জন্য তেমন স্টেরোয়েড খাওয়ানো হয়। ওরাডেক্সন স্টেরোয়েড মেয়েদের মোটাতাজা করে বটে, কিন্তু এ ওষুধ শরীরের ক্ষতি করে। পতিতাবৃত্তি জীবনের এত ক্ষতি করে যে মেয়েদের কাছে স্টেরোয়েডের ক্ষতিকে আর ক্ষতি মনে হয় না। এত যে মোটাতাজা হয় তারা, তারপরও কিন্তু গরুর মতো দাম ওঠে না মেয়েদের। মেয়েরা গরুর চেয়েও অনেক সস্তায় বিকোয়। মোদ্দা কথা, মেয়েদের তুলনায় বাংলাদেশের গরু অনেক মূল্যবান। অদ্ভুত শোনালেও বাস্তব পৃথিবীর চিত্র এটিই।

এই পৃথিবীতে মেয়েদের বিরুদ্ধে একটা যৌনযুদ্ধ চলছে। দীর্ঘ দীর্ঘকাল এই যুদ্ধটা চলছে। এটাকে পৃথিবীর প্রাচীনতম পেশা বলে লোককে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা হয় বটে, আসলে এটা কিন্তু প্রাচীনতম পেশা নয়, এটা বরং মেয়েদের বিরুদ্ধে ‘পৃথিবীর প্রাচীনতম নির্যাতন’। শুধু প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিরুদ্ধে বলাটা ঠিক নয়, মেয়ে-শিশুদের বিরুদ্ধেও বটে। আজ বিশ্বের প্রায় সর্বত্র শিশুদের জোর-জবরদস্তি করে, ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে, মেরে আধমরা করে যৌনক্রীতদাসী বানানো হচ্ছে। পুরুষের যৌনক্ষুধা মেটাতে, পুরুষের শরীরকে কিছুক্ষণের জন্য পুলক দিতে লক্ষ কোটি অসহায় মেয়ে ও শিশুকে বেঁচে থাকার সর্বসুখ বিসর্জন দিতে হচ্ছে, মানুষ হয়েও মানুষের ন্যূনতম অধিকার থেকে তারা নিজেদের বঞ্চিত করতে বাধ্য হচ্ছে। পতিতাপ্রথার সহজ সংজ্ঞা হলো, ‘মেয়েদের বিরুদ্ধে পুরুষের যৌন নির্যাতন’। আরও একটু খুলে বললে পতিতাপ্রথার মানে ‘মেয়েদের বিরুদ্ধে পুরুষের যৌন হেনস্থা, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, মেয়েদের ওপর পুরুষের অবাধ আধিপত্য, মেয়েদের মানবাধিকার লঙ্ঘন’। এসব যদিও যে কোনো গণতন্ত্রে আইনগত নিষিদ্ধ, কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পতিতালয়ের ভেতরে এসব বহাল তবিয়তে চলছে। যতটা ঘৃণ্যতম, কুৎসিততম, জঘন্যতম, উৎকটতম, কদর্যতম, নিকৃষ্টতম ব্যবহার কোনো মেয়ের সঙ্গে করা সম্ভব পুরুষের, তা নির্দ্বিধায় পুরুষেরা করে পতিতাদের সঙ্গে। যদিও এই ব্যবহার করলে আইনের চোখে তারা অপরাধী, কিন্তু পতিতাবৃত্তিকে বৈধ করলে এইসব অপরাধকে আপনাতেই বৈধ বলে মেনে নেওয়া হয়।

মানুষের ওপর ঘৃণ্য আর অমানবিক নির্যাতনের কারণে ক্রীতদাসপ্রথা আজ বিশ্বে নিষিদ্ধ। কিন্তু কী কারণে পতিতাপ্রথাকে আজো পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না! যে কারণগুলো দেখানো হচ্ছে সেগুলো কিন্তু সত্যিকার কারণ নয়। ‘এই প্রথাটি টিকে ছিল, সুতরাং টিকে থাকবেই’, অথবা ‘বাজে চরিত্রের মেয়েরা এই পেশা চালিয়ে যাবেই। ’ সত্যি কথা বলতে, এই প্রথাটি টিকে আছে মেয়েদের মন্দ চরিত্রের জন্য নয়, ক্ষমতাবান এবং বদ পুরুষরা এই প্রথাকে ছলে বলে কৌশলে টিকিয়ে রাখছে বলে টিকে আছে। টিকিয়ে না রাখলে এটি টিকে থাকত না। ক্রেতা আছে বলেই ব্যবসা টিকে আছে।

আজ পতিতাপ্রথা বা যৌন নির্যাতন পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম তো বটেই, সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়ে ওঠা সফল বাণিজ্যশিল্প। এই শিল্পের কাঁচামাল দুর্ভাগা, অনাথ শিশুদের শরীর, দরিদ্র আর প্রতারিত মেয়েদের শরীর।

যতদিন পুরুষেরা যৌন সামগ্রী বলে মনে করবে নারীকে, ততদিন পর্যন্ত তারা নারীকে পতিতা বানাবে, টিকিয়ে রাখবে পতিতালয়। যৌন দাসিত্বকে বলবে যৌনকর্ম। আমার বা আপনার প্রতিবাদে খুব কি পরিবর্তন আসবে? সরকারকেই নিতে হবে পতিতাপ্রথা নির্মূল করার দায়িত্ব।   সরকার কবে নেবে এই দায়িত্ব।

সোর্স : বাংলাদেশ প্রতিদিন, ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

Share on FacebookShare on TwitterShare on WhatsAppShare on TelegramShare on SMS
Category: বিবিধ রচনা (তসলিমা নাসরিন)
পূর্ববর্তী:
« যে বই তোমায় দেখায় ভয়, সে বইও পড়া উচিত
পরবর্তী:
যৌবনে ছেলেরা ডেয়ারিং »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑