• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

০৩. দোয়ারি স্টিমার

লাইব্রেরি » অতুলচন্দ্র গুপ্ত » নদীপথে » ০৩. দোয়ারি স্টিমার

দোয়ারি স্টিমার

২৫ ডিসেম্বর ১৯৩৬
শুক্রবার

ঢাকা মেল ভোর পাঁচটায় গোয়ালন্দ পৌঁছল। অর্থাৎ তখনও ভোর হয়নি, বেশ অন্ধকার। নারায়ণগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের যাত্রীদের হাকডাক আরম্ভ হল, কিন্তু আমার তাড়া নেই। যদিও স্টিমার-কোম্পানির জগন্নাথ ঘাটের সাহেব জানিয়েছিল, তাদের যে স্টিমার ১৯শে কলকাতা থেকে রওনা হয়েছে সুন্দরবন ঘুরে তার ২৩শে গোয়ালন্দ পৌঁছবার কথা, কিন্তু আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানতুম, ২৪শে পর্যন্ত যে স্টিমার পৌঁছলেই মঙ্গল। সুতরাং পাশ ফিরে শোবার চেষ্টা করছি, এমন সময় তোমার চাকর অনন্ত নিজেকে রাস্তাঘাটে চটপটে প্রমাণ করার জন্য, আমি নেমে না-ডাকতেই বিছানা বঁধতে হাজির। তার এই অভূতপূর্ব কর্মপ্রবণতায় বাধা না দিয়ে উঠে পড়া গেল। বেশ ফরসা হলে গাড়ি থেকে নামব এবং নেমে দিনটা এবং সম্ভব রাত ও তার পরদিন দুপুর পর্যন্ত কোথায় কাটাব ভাবছি, এমন সময় দুটি টিকিট-চেকার ভদ্রলোক উপস্থিত হলেন, একটি হিন্দু অন্যটি মুসলমান। টিকিট দেখানো গেল, কিন্তু তখনই বুঝলুম টিকিট দেখা একটা অছিলা মাত্র। মুসলমান ভদ্রলোকটি একটি খাজনার মোকদ্দমা প্ৰথম আদালতে হেরেছিলেন। কিন্তু আপীলে জিতেছেন; প্রতিপক্ষ হাইকোর্ট করেছে। মোকদ্দমার হাইকোটে ফলাফল সম্বন্ধে আমার মতটা জানলে বাধিত হবেন। অবশ্য অনন্তের কাছে আমার ব্যবসায়ের পরিচয়টা সংগ্ৰহ হয়েছে। শুকনো ডাঙায় মাছ ও আরও একটা জিনিসের লোভ সামলানো কঠিন–কবিকঙ্কণ বলেছেন; উকিল দেখলে মোকদ্দমার পরামর্শ লিস্টে জুড়ে দেওয়া যেতে পারে।

এদের কাছে জানলুম, গোয়ালন্দে দিন-রাত কাটাবার ও সুসানাহারের প্রশস্ত জায়গা হচ্ছে চাঁদপুর মেল স্টিমার। চাঁদপুরগামী স্টিমােরখানি ঘাটে লেগেই আছে, বেলা একটার আগে ছাড়বে না। এবং সেখানি রওনা হবার অল্প সময়-মধ্যেই কলকাতাগামী চাটগা মেলের যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর থেকে স্টিমার পৌঁছবে এবং পরদিন বেলা একটায় ছাড়বে। নিশ্চিন্ত হয়ে বেলা সাতটা আন্দাজ চাদপুর মেল স্টিমারে গিয়ে ওঠা গেল। যে ফ্ল্যাট দিয়ে ওঠার পথ সেখানেই ঘাট-সুপারভাইজারবাবুর আপিস। তার কাছে যেতেই তিনি অত্যন্ত ভদ্রতা দেখালেন এবং জানালেন, আমার আগমনবার্তা পূর্বেই হেড-আপিস থেকে পেয়েছেন। আমার স্টিমার ‘দোয়ারি’ এখনও পৌঁছয়নি। পৌঁছনোমাত্র আমাকে খবর দেবেন।

চাদপুর মেল স্টিমারগুলি, যা ঢাকা মেল স্টিমারও বটে, বেশ আরামের। এ স্টিমারখানির নাম ‘গুরুখা’। দুপুরের খাবার অর্ডার দিয়ে স্টিমার থেকে নেমে পড়া গেল। অভিপ্ৰায়, মেঠো রাস্তা দিয়ে প্রাতভ্ৰমণ ও কিঞ্চিৎ কবিত্ব করা। একটা রাস্তা ধরে অনেকটা দূর যাওয়া গেল, কিন্তু রাস্তার ধারে মাঝে মাঝে দু-এক জায়গায় সরষে-ফুল ফুটলেও চার দিকে কেমন একটা অগ্ৰাম্য নীরস ভাব। গোয়ালন্দের নদীর ধারের যাত্রী ও মাল-চলাচলের ক্ষিপ্ৰ জীবন ও তার আনুষঙ্গিক দরমার-বেড়া-দেওয়া টিনের চালের বাজার তার পিছনের গ্রাম্য প্রকৃতির রস শুষে নিয়েছে। বিরক্ত হয়ে ফিরে এসে বাজারে ঢোকা গেল। অগ্ৰাম্য গ্রামের চেয়ে বাজারের জীবনাচাঞ্চল্য অনেক ভাল। মনে হল একটি নাপিত পেলে নিজের হাতে কামানোর দায় থেকে একটা দিন রেহাই পাওয়া যেত। লুঙ্গিপরা চেকদার কোটি গায়ে একজনকে জিজ্ঞাসা করলুম। এখানে নাপিত পাওয়া যায় কি না। লোকটি বোধহয় গোয়ালন্দের অধিবাসী; তার ‘পেট্রিয়টিজমে’ আঘাত লাগল। বিজ্ঞ তাচ্ছিল্যের ভাবে জানালে, গোয়ালন্দ শহরে আবার নাপিতের ভাবনা। একটা দিক দেখিয়ে বললে, সেদিকে অনেক নাপিত দেখতে পাব। গিয়ে দেখি দুজন নাপিত রয়েছে; একজন নিজ ব্যবসায়ের কাজে ব্যস্ত, অন্যটি যন্ত্রপাতি শানাচ্ছে। বেকার নাপিতৃটিকে স্টিমারে এনে ক্ষৌরি হওয়া গেল। লোকটির বাড়ি মুঙ্গের জেলায়, বাইশ বছর গোয়ালন্দে নাপিতি করছে। নাপিত-ভাবনাহীন গোয়ালন্দ শহরে কোনও বাঙালি নাপিত চোখে পড়েনি।

নেয়ে-খেয়ে গুরখা স্টিমারে বসে বসে গোয়ালন্দের শীতের পদ্মা দেখছি। সামনে একটা প্রকাণ্ড চর পড়েছে। ওপরের জল দেখা যাচ্ছে না, দূর-গাছের কালো রেখায় তার প্রসারটা অনুমান করছি। দুপুরবেলা স্টিমার-নৌকার চলাচল অনেকটা কম। ক্রমে গুরখার ছাড়বার সময় হল; কলকাতা থেকে চাটগা মেল এসে পৌঁছেছে। স্টিমার থেকে নেমে সুপারভাইজারবাবুর ফ্ল্যাটে মালপত্র রেখে, উপরে এক টুকরো ঘাসের জমি ছিল সেখানে আস্তানা করা গেল। চাঁদপুর থেকে স্টিমার পৌঁছল বেশ একটু দেরি করে। খুব ভিড়। সাদা সাহেব ও পোশাকি কালো সাহেবদের সংখ্যাও কম নয়। লোকজন নেমে গেলে ধীরে সুস্থে সে স্টিমারে ওঠা গেল। নাম ‘এমু, অর্থ যা-ই হোক। কেবিনে মালপত্র রেখে সেখানেই রাত কাটাব স্টিমারের লোকজনদের জানাচ্ছি, এর মধ্যে সুপারভাইজারবাবুর লোক এসে খবর দিল, আমার স্টিমার ‘দোয়ারি’ এসে ঘাটে লেগেছে এবং আমাকে নেবার জন্য তাঁরা এখনই স্টিম-লঞ্চ আনছেন। একটু পরেই। ‘হাতি’ নামধেয় লঞ্চ ‘এমু’র পাশে এসে লাগল। এ লঞ্চখানিকে ইতিমধ্যে বহুবার উজান-ভাটি করতে দেখেছি। হাতি-আরোহণ যে আমার ভাগ্যেও ছিল তা তখন মনে করিনি। দু-চার মিনিটের মধ্যেই হাতি আমাকে দোয়ারিতে পৌঁছে দিলে। দূর অতি সামান্য, এর জন্য স্টিম-লঞ্চ আনবার কোনও দরকার ছিল না। স্টিমার-কোম্পানির অতিরিক্ত সৌজন্যে তাদের শুভকামনা না করে পারছি না। তাদের ব্যাবসা বর্ধিত হোক। যত কমে হয় তাঁরা যেন এদেশি লোকদের খাটিয়ে নিতে পারে। এখানে ওখানে ছোটখাটো দেশি স্টিমার-কোম্পানি গড়ে উঠে তাদের মুনাফার অঙ্কে যেন ঘাটতি না ঘটায়।

 

২

‘দোয়ারি’ বেশ বড় স্টিমার। উঠে সামনের ডেকে আসতেই জানা গেল, আমার এ বাহনটি বড় কেউকেটা নয। সেলুনের সামনে এক পিতলের ছোট প্লেট আঁটা, তাতে খোদা রয়েছে। যে, যুদ্ধের সময়, ১৯১৭ সাল থেকে ১৯২০ সাল, এ স্টিমার নিজের স্টিমে (‘under her own steam’) ৩৪২৬ মাইল চলে বসরা পৌঁছে টাইগ্রিস নদীতে ‘rendered invaluable transport service’–সৈন্য ও মাল টানার অমূল্য কাজে নিজেকে লাগিয়েছিল; এবং যুদ্ধশেষে নিজ বাষ্পবলেই আবার কলকাতায় ফিরে আসে। সুতরাং যে সেলুনে বসে আমি খাচ্ছি ও লেখাপড়া করছি, সার্জেন্টি-মেজর ও সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট প্রমুখ বীরেরা ছোট বড় ‘পেগ’ পার করে নিশ্চয়ই তাকে ধন্য করেছেন, এবং তাদের কেউ কেউ কুট-আল-আমারায় তুর্কিদের হাতে ধরাও বোধহয় পড়েছিলেন। স্টিমারটির উপর সন্ত্রম জন্মাল।

বাটলার সাদের আলির বয়স কম, হাসিমুখ ও চটপটে। লোকটিকে দেখে খুশি হলুম। বাড়ি বিক্রমপুর। অসমে চা-কর সাহেবদের বাটলারি অনেকদিন করেছে। বছরখানেক নানা সাংসারিক গোলযোগে বাড়ি বসেছিল। স্টিমার-কোম্পানির বাবুরা গোয়ালন্দ থেকে তাকে আমার জন্য জুটিয়েছেন, কারণ সে নাকি দেশি ও ইংলিশ খানা দুই-ই রাঁধতে ওস্তাদ। পরীক্ষায় দেখছি সাটিফিকেটটা ভুয়ো নয়। লোকটা রাধে ভাল। কোম্পানির এক বাবু এসে আমার তদবির করে গেলেন এবং যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সে বিষয়ে স্টিমারের লোকদের সতর্ক করলেন।

চারটে-আন্দাজ বেলায় দোয়ারিতে উঠেই শুনলুম, স্টিমার এখনই ছাড়বে। ছাড়তে ছাড়তে হল সন্ধ্যা সাতটা। দু’খানা ফ্ল্যাট দু’দিকে বেঁধে রওনা হওয়া গেল। আশা ছিল ভূতপূর্ব তারিণীগঞ্জ স্টেশনের ঝাউগাছের সার ও তেওতা ইস্কুলের নদীর ধারের বোর্ডিং দেখতে পাব। কিন্তু রওনা হওয়ার আগেই রাত্রি এসে গেল, চোখে আর কিছু পড়ল না।

 

৩

ভোরবেলা উঠে খবর নিয়ে জানলুম, আমাদের টাঙ্গাইল যাওয়ার স্টিমার-স্টেশন পোড়াবাড়ি ছাড়িয়ে এসেছি এবং সিরাজগঞ্জের দিকে চলেছি। আমাদের এ স্টিমার ফুলছড়ি ঘাটের আগে কোথাও ভিড়বে না, কারণ তার পূর্বের কোনও জায়গার মাল এতে নেই এবং এটা প্যাসেঞ্জার স্টিমার নয়। বেলা এগারোটায় সিরাজগঞ্জ ছাড়ালুম। শহর থেকে অনেক দূরে এক চরের নীচে স্টেশনের ফ্ল্যাট; চারের উপর কয়েকখানা মালগাড়ি রেল-স্টিমারের সংগমস্থল ঘোষণা করছে। বিকােল তিনটের পর স্টিমার জগন্নাথগঞ্জ ঘাটে একটু থামল, কোনও মাল দেওয়া-নেওয়ার ব্যাপারে নয়, বোধহয় নিজেকে রিপোর্ট করতে।

স্টিমারে একলা চলেছি; এ পর্যন্ত স্টিমারের বা দুই ফ্ল্যাটের বাবুদের কেউ আলাপ-পরিচয় করতে আসেননি। কিন্তু একটু পরেই জানলুম তাদের মধ্যে গুণী লোকের অভাব নেই। সন্ধ্যার একটু আগে অনন্তের হাত দিয়ে আমাকে একটুকরো কাগজ পাঠিয়ে একটি ভদ্রলোক একটু সরে দাড়ালেন। কাগজখানি দেখলুম একটি বিজ্ঞাপন, লাল কালিতে ইংরেজি হরফে ছাপা। ‘Very nice Very nice!! Horbolla Sound’– অতি চমৎকার! অতি চমৎকার!! হরবোলার বোল’। এবং তারপর বিড়াল, মুরগি, দাড়কাক, দুই বিড়ালের ঝগড়া, শেয়াল-কুকুরের কলহ প্রভৃতি দ্বাদশ দফার উল্লেখ করে বলা হয়েছে ‘that’s all? — ‘এই শেষ’। নীচে নাম ‘হেমেন্দ্রমোহন রায়, Sounder— শব্দোৎপাদক’। গ্রাম ও পোস্ট আপিস বিঝারি, জেলা ফরিদপুর।

এগিয়ে গিয়ে নমস্কার করে পরিচয় দিলুম। গোলগাল কালো চেহারা, মুখে পাকা-কাঁচা দাড়িগোঁফের খোঁচা, মাথায় একটি নাতিকৃশ টিকি, বয়স আন্দাজ পঞ্চাশ। স্টিমারের ডাইনে যে ফ্ল্যাটখানি বাঁধা আছে তার কেরানি; ছব্বিশ বছর স্টিমার-কোম্পানির কাজ করছেন। ঠিক হল আগুমীকাল সুকালে, খ্রিস্টমাসের দিনে, হরবোলার বৈঠক বসবে।

রাত দুটোয় ফুলছড়ি ঘাটে স্টিমার পৌঁছল এবং মালপত্ৰ নামিয়ে উঠিয়ে ছাড়ল ভোরা-রাত সাড়ে চারটেয়। লােগবার ডাকাডাকি ও ছাড়বার হাঁকাহীকিতে আমারও ঘুম ভেঙেছিল।

বৃহস্পতিবার সমস্ত দিন এসেছি শীতের যমুনার পরিচিত রূপ দেখতে দেখতে। ভাঙন-ধরা উচু পাড়, কলাগাছ আমগাছে ঘেরা খোড়ে চালের বসতি; সাদা বালুর নিচু চর রৌদ্রে ঝিকি ঝিক করছে; সাদা পাল তুলে, কচিৎ রঙিন পালের, নৌকা চলেছে; মাঝে মাঝে জেলে-ডিঙি’। গোয়ালন্দের দিকে ছোট বড় স্টিমার যাচ্ছে, স-ফ্ল্যাট ও ফ্ল্যাটহীন। ব্ৰহ্মপুত্রের এ অংশকে আমাদের দেশে বলে যমুনা। একসময় এখােন দিয়ে যমুনা নামে ছোট এক নদী ছিল, ব্ৰহ্মপুত্ৰ চলত ভিন্ন ধারায় ময়মনসিংহ শহরের নীচ দিয়ে। উনবিংশ শতাব্দীর আরম্ভকালে কি-এক নৈসৰ্গিক বিপ্লবে, ব্ৰহ্মপুত্রের মূলধারা নিজের পথ ছেড়ে এই যমুনার খাদ দিয়ে বহতা হল। ব্ৰহ্মপুত্রের পুরনো খাদ আজ হীনস্রোত। লাঙলবন্দের অষ্টমীমান তার পূর্ব-গৌরবের স্মৃতি জাগিয়ে রেখেছে।

 

8

আজ সকাল ন’টায় সেকেন্ড ক্লাস কেবিনের পিছনে হাওয়া থেকে একটু আড়ালের জায়গায় হরবোলার মজলিস বসল। স্টিমারের বাবু ও খালাসিদের অনেকে এবং ডেকযাত্রীদের প্রায় সকলেই উপস্থিত হল। কেবল এলেন না হেমেন্দ্রবাবুর সহকমী তার ফ্ল্যাটের বাবুরা কেউ। ঈর্ষা এমনি জিনিস! গায়ের র্যাপারে মাথা-মুখ ঢেকে দু-একটা বাদে বিজ্ঞাপনের লিস্ট-মাফিক সব ডাক হেমেন্দ্রবাবু আমাদের শোনালেন। প্রতি ডাকের প্রস্তাবনা করলেন ইংরেজি শব্দে বা ছোট ইংরেজি বাক্যে এবং কেন জানি না, তার ব্যাখ্যা দিলেন হিন্দিতে, যদিও তার শ্রোতাদের সকলেই ছিল বাঙালি। বোধহয় হেমেন্দ্রবাবু দূরদর্শী লোক, ভবিষ্যতের রাষ্ট্রভাষায় এখন থেকেই নিজেকে অভ্যস্ত করছেন। মজলিস ভাঙলে তাকে কেবিনে ডেকে এনে কিছু দক্ষিণা দিলুম; বললেন, টাকার জন্য কিছু নয়, শুনিয়েই তার আনন্দ। একেবারে খাঁটি গুণীর কথা। বাড়ির পরিচয় নিয়ে জানলুম, তাঁরা পাঁচ ভাই, চারজন নানা জায়গায় চাকরি করেন, একজন বাড়িতে থাকেন। চারটি মেয়ে, দুটি ছেলে। বড় ছেলেটির বয়স চোদো, ইস্কুলে পড়ে। একটি মেয়ের বিয়ে দিতে বাকি। বাপ অনেক সম্পত্তি রেখে গিয়েছিলেন, কীসব মামলা-মোকদ্দমায় বিশেষ কিছু অবশিষ্ট নেই। বললেন, সবই অদৃষ্ট। আমার কলকাতার ঠিকনােটা নিলেন। জানালেন, যদি কলকাতায় যান (র্তার এক ভাই সেখানে চাকরি করে) তবে আমার বাড়ির ছেলেমেয়েদের একবার হররোলার বোল শুনিয়ে আসকেন। বোধহয় সন্দেহ হয়েছে, আমি হরবোলার ডাকের তেমন রসজ্ঞ শ্রোতা নাই।

ফুলছড়ি ঘাটের পর থেকে ধুবড়ি পর্যন্ত আমাদের স্টিমার প্রতি স্টেশনে থেমে থেমে যাবে। কারণ, এই জায়গাটা চলাচলের রাজ্যে নন-রেগুলেটেড প্ৰভিন্স। কোনও রেল নেই এবং স্টিমার-সার্ভিস যা আছে তা আমাদের সময়কার ‘সবুজপত্রের চেয়েও তারিখের শাসন কম মানে। অসম-সুন্দরবন ডেসপ্যাচ সার্ভিসের অনিয়মগামী স্টিমারগুলিই (যা স্টিমার-কোম্পানির টাইম-টেবলের ভাষায় ‘are not run to a timing—কোনও নির্দিষ্ট সময় মাফিক চলে না) এখানকার দূর-গমনের একমাত্র বাহন। সেইজন্য এ স্টিমারগুলি উজান-ভাটিতে এ জায়গাটায় প্রতি স্টেশনে প্ৰায় থামে, মালও নেয়, লোকও নেয়। এবং কাপড়ের গাট, কেরোসিন তেলের টিন, রঙের ড্রাম, হালকা জাপানি মালের কাঠের বাক্স (দেখলুম একটা প্ৰকাণ্ড বাক্স একজন মুটেই স্টিমার থেকে নামাচ্ছে), লোহার শিক, তার, কড়াই, গ্যালভানাইজড় বালতি প্রভৃতি সভ্যতার উপকরণ ব্ৰহ্মপুত্রের দুই কুলে ছড়িয়ে চলে। বেলা একটায় চিলমারি এলুম। চিলমারির কাঁসা-পিতলের বাসন, বিশেষ এখানকার অতি সুডৌল গাভু, একসময় বিখ্যাত ছিল। এখন কিছু নেই। চিলমারির বন্দরে এখন যে কারবার চলে সে শুধু পাট ও অন্য কৃষিবস্তু চালান দেবার। দেশ হয়তো industrialized হচ্ছে, কিন্তু বাংলার গ্রামগুলিকে আমরা খুব দ্রুতগতিতে বিশুদ্ধ Agriculturize করছি। সঙ্গে যে দুই ফ্ল্যাট এসেছিল তার একখানিকে এখানে রেখে যাওয়া হল; ওতে পাট বোঝাই হয়ে চালান যাবে। চিলমারি থেকে গারো পাহাড়ের সার আকাশের সীমান্তে ঝাপসা দেখা যাচ্ছে।

চিলমারি থেকে অল্প দূরে ব্ৰহ্মপুত্রের অন্য পারে রৌমারি স্টেশন। সেখানে পৌঁছতে হল ফ্ল্যাটখানি খুলে রেখে দুই চরের মাঝ দিয়ে একটি অপেক্ষাকৃত অপ্রশস্ত ধারায় অনেক দুর উজিয়ে গিয়ে। এখানে-ওখানে তার মধ্যে বহু নিচু কাঁচি চর। নদীর কালো জল ও চারের শুভ্র বালু পাশাপাশি অপরাহের রৌদ্রে অপূর্ব মায়ার সৃষ্টি করেছে। একটু দূরে একটা চর প্রায় ঢেকে চখাচখির বাঁেক বসেছে। তাদের ধূসর চঞ্চল পাখায় চারটি যেন কঁপিছে, মনে হয় পন্মের পাতায় ঢাকা পদ্মকন। একদিকের উচু কায়েম চরে একটা তাঁবু পড়েছে, অনেক লোক আনাগোনা করছে; নীচে একখানা বড় নৌকা বাঁধা। হাকিমের সফর না জমিদারবাবুর শিকার ঠিক বোঝা গেল না।

রাত প্ৰায় এগারোটায় স্টিমার যাত্রাপুর পৌঁছল। যাত্ৰাপুর রংপুর জেলায় এবং বাংলাদেশের শেষ স্টিমার-স্টেশন। এরপর থেকে অসমের গোয়ালপাড়া জেলার এলাকা।

 

২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৬
রবিবার

শনিবার ভোর সাতটায় ধুবড়ি আসা গেল। ধুবড়ি গোয়ালপাড়া জেলার হেড কোয়ার্টার্স এবং স্টিমার-লাইনের একটা অংশের হেড-আপিস। নদীর ধারে ধারে ছোটখাটো সুন্দর শহরটি। বছর-কয়েক পূর্বে এক মোকদ্দমায় ধুবড়ি এসে অনেকদিন ছিলুম, বোধহয় মনে আছে। ব্ৰহ্মপুত্রের পাড়ের উপরে যে রাস্তা দিয়ে সকাল-সন্ধ্যা বেড়াতে যৌতুম সে রাস্তার ধারে ফরেস্ট-আপিসের দোতলা টিনের বাংলো, এস ডি ও-র (যিনি এখানকার combined hand–একাধারে ম্যাজিষ্ট্রেট, সাবিজজ, রেভিনিউ অফিসার) বাংলো, নদীর খাড়া পাড়ের উপর তিন দিক জলে ঘেরা, বেশ কবিত্বপূর্ণ কিন্তু একটু আশঙ্কাজনক অবস্থিতির উকিল-লাইব্রেরি, ধুবড়ি ছাড়ার পথে স্টিমার থেকে সব দেখতে দেখতে গেলুম। ভিক্টোরিয়া গার্ডেনের লগাও নদীর ধারেব যে বাংলোটিতে ছিলুম সেটি কিন্তু চোখে পড়ল না।

ধুবড়িতে স্টিমার প্রায় তিন ঘণ্টা দাঁড়াল। স্টিমার থেকে লোকজন নেমে গেল বাজার করতে। আমার বাটলার একটা বড় কাতলা মাছ কিনে নিয়ে এল। অতি সুস্বাদু টাটকা মাছ। ধুবড়ি থেকে আমাদের স্টিমার চলল। ফ্ল্যাট-বিনির্মুক্ত হয়ে। বাকি ফ্ল্যাটখানি হেমেন্দ্ৰবাবুকে নিয়ে এখানেই রয়ে গেল এবং সম্ভব দু-একদিন থাকবে। আশা করি ধুবড়ি শহরে গুণজ্ঞ লোকের অভাব নেই।

ধুবড়ি ছাড়ার পর থেকেই নদীর দুই ধারে পাহাড়ের সারা দেখতে দেখতে এসেছি। ব্ৰহ্মপুত্রের মতো প্ৰকাণ্ড নদীর মাঝ থেকে দুই তীরে এমন পাহাড়ের দৃশ্য পৃথিবীতে নাকি খুব কম দেখা যায়। গাছে-গুলো ঢাকা কৃষ্ণাভ সবুজ সব পাহাড়। নন-কো-অপারেশনের সময় মহাত্মা যখন অসমে এসেছিলেন তখন এক অভিনন্দনের উত্তরে অসমবাসীদের বলেছিলেন, ‘Your bewitchingly beautiful ountry–জাদুকরী সৌন্দর্যের দেশ তোমাদের। ব্ৰহ্মপুত্র ও তার দুই কুলে নীল পাহাড়ের এই সারা দেখলে এ বর্ণনার যাথার্থ্য বোঝা যায়।

বিকাল তিনটেয় স্টিমার বিলাসীপাড়া এল। শীতের ব্ৰহ্মপুত্ৰ নিস্তরঙ্গ, মনে হয় যেন স্থির। কেবল পূর্ব-বাংলার ধানখেতের দিকে দ্রুতধাবমান কচুরিপানার ছোট বড় ঝাড় তার অন্তরের গতিবেগ জানান দিচ্ছে। এই জলের উপর রৌদ্রের খেলা ও স্টিমারের সামনের ডেকের ছাদে তার আলোছায়ার কঁপিন-লীলা সারা দুপুর দেখতে দেখতে এসেছি। বিলাসীপাড়ার স্টেশন-ফ্ল্যাটের ঠিক পিছনেই এক সারা পাহাড় এবং বিলাসীপাড়ার পর অনেক পাহাড় নদীর বেশ কাছাকাছি। একটা তিন-চুড়াওয়ালা পাহাড়ের দিকে আমাদের স্টিমার এগিয়ে চলেছে। নদীর জলে তার অকম্পিত ছায়া বহুক্ষণ ধরে দেখছি, যেন কোনও মন্দিরের ছায়া।

স্টিমারের পিছনে সূর্যস্ত হল। পশ্চিম-আকাশের সোনার রং নদীর এদিকের জল রাঙিয়ে রাখল অনেকক্ষণ।

রাত আটটায় স্টিমার গোয়ালপাড়া পৌঁছল।

 

২

আজ রবিবার সকাল থেকেই আকাশে মেঘ, নদীর উপর কুয়াশা এবং প্রচণ্ড শীত। সমস্ত দিন সূর্যের অস্তিত্বের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি, কেবল দুপুরকেলার কাছাকাছি দু-চার মিনিটের জন্য এক ঝলক রোদ, আর বিকালে সূৰ্যাস্তের সময় পশ্চিম-আকাশের কালো মেঘে। গলানো সোনার একটা চওড়া রেখা।

নদী ও তার পাড়ের দৃশ্যও বদলে গেছে। পাহাড় বড় চোখে পড়ছে না। নদীতে নৌকা বিরল এবং দক্ষিণের যে উচু পাড়ের কাছ ঘেঁষে প্রায় সারাদিন স্টিমার চলেছে তাতে লোকালয় খুব কম। কেমন একরকম শুকনো চেহারার লম্বা ঘাস সে পাড়ের উপর। আকাশের ধূসর মেঘে ঢেউশূন্য ঘোলাটে নদী। মনটা দমে গেল। সারা দুপুর একটামাত্র জানিলা খোলা রেখে কেবিনে শুয়ে শুয়ে জে বি প্রিস্টালির একটা উপন্যাস পড়ছি। ইয়র্কশায়ারের নিম্ন-মধ্যশ্রেণির তরুণ-তরুণীর লন্ডনে প্রণয়লীলার কাহিনিতে ব্ৰহ্মপুত্রের উপর কেমন মন বসছে না।

বিকাল চারটেয় পলাশবাড়ি স্টেশন এল। পাড়ে অনেকগুলি বড় নৌকা বাঁধা। ঘাটের উপর কমললেবু, ডিম ও পায়রা বিক্রি হচ্ছে। পলাশবাড়ি থেকে আবার উত্তরদিকে পাহাড়ের সার দেখা দিল এবং ঘণ্টাখানেক পর পলাশবাড়ি ছাড়লে এক পশলা অল্প বৃষ্টি হয়ে ভাঙা মেঘের মধ্যে দিয়ে চাঁদের দেখা পাওয়া গেল। আজ বোধহয় পূর্ণিমা। পাতলা মেঘে ঢাকা চাঁদের আলোতে তীরের পাহাড় ও নদীতে তার ছায়া কেমন একটু অবাস্তব মনে হচ্ছে। সাড়ে ছাঁটার মধ্যে স্টিমার পাণ্ডুঘাট এসে পৌঁছেছে। শিলংযাত্রীদের পারাপারের স্টিমার অনেক আলো জ্বলিয়ে ঘাটে লেগে আছে। রাত সাড়ে আটটা বেজে গেল, এখনও পাণ্ডুঘাটেই আছি। সামনে গৌহাটি শহরের আলো দেখা যাচ্ছে।

 

২৮ ডিসেম্বর ১৯৩৬
সোমবার

কাল সমস্ত রাত স্টিমার পাণ্ডুঘাটেই নোঙর করেছিল। আজ ভোর ছাঁটায় সেখান থেকে রওনা হল। স্টিমার ছাড়ার শব্দ পেয়ে ওভারকোট চাপিয়ে সামনের ডেকে এলুম। গৌহাটি ও শিলং যাত্রাপথের অল্পবিস্তর পরিচিত পাহাড় নদীর দু’ধারে; তাদের মাথায় মাথায় কালচে সাদা মেঘের মতো কুয়াশা জমে আছে। স্টিমার উমানন্দভৈরবের কাছ দিয়ে গেল। ব্ৰহ্মপুত্রের মাঝখানে গ্রানাইট পাথরে ধার-বঁধানো উচুভিতের উপর বড় বড় গাছের ঘন বন, তার মধ্য দিয়ে ভৈরবের মন্দিরের চুড়া দেখা যাচ্ছে। গৌহাটি শহরের তখনও ঘুম ভাঙেনি, নদীর ধারের রাস্তায় লোক-চলাচল নেই। শহরের একদিকটার প্রায় সমস্ত দৈর্ঘ্য উজিয়ে গৌহাটির বাজার-ঘাটে স্টিমার লাগল। বেলা তখন সাতটা।

গৌহাটি শহর কামরূপ জেলার সদর; অসমীয়াদের রাষ্ট্র, শিক্ষা ও সাহিত্য-প্রচেষ্টার কেন্দ্র। কিন্তু প্রদেশের রাজধানী শিলংয়ের শৈলচুড়ায়, যা না উত্তর-অসমের অসমীয়াদের, না। দক্ষিণ-অসমের বাঙালিদের জায়গা। সেই পাহাড়ের চূড়ায় বসে বোধহয় রাজপুরুষেরা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে উত্তর-দক্ষিণ দেখেছেন, অসমীয়া ও বাঙালি কেউ কারও চেয়ে প্রবল হয়ে না ওঠে।

প্রাচীন পুথিপত্রে ও শিলালেখ-তাম্রশাসনে গৌহাটির নাম দেখা যায় গুবাকহট্ট, বোধহয় গোরুর হাট নয়, সুপারির হাট। মেধাতিথির মনুভাষ্যে দেখেছি, দেশের একটা নির্দিষ্ট ভূভাগকে বলত হাট্ট। বোধহয় ওটা ছিল ইকনমিক ইউনিট’-এর নাম, যে ভূখণ্ডের লোকেরা বড় বড় বেচাকেন। একজায়গায় করত এবং সম্ভব হাটবাজারের হাট কথাটা সেখান থেকেই এসেছে। যা হোক, শব্দের প্রত্নতত্ত্বে আর দরকার নেই। ক্ৰমে বেলা বাড়তে লাগল। স্টিমার থেকে মাল নামছে বিস্তর। ডাকহাঁকে জনছি গৌহাটি ও শিলং দু’জায়গার মাল নামছে, আর তাদের তফাত করে রাখা হচ্ছে। ক্ৰমে বাজারঘাটে ধোপাদের কাপড় কাচা শুরু হল। একটা ছোট ফ্ল্যাটের সামনে বসে একটি খালাসি খুব মনোযোগ দিয়ে একটা নীল কোর্তায় সাবান ঘািষছে। রাস্তা দিয়ে দু’খানা মোটরগাড়ি চলে গেল। আজ পাঁচদিনের পর মোটরগাড়ি দেখে মনটা একটু খুশি হয়ে উঠল। নাগরিক জীবনের অভ্যাসের এমনি ফল!

 

২

গৌহাটি থেকে রওনা হতে বেলা বাজল এগারোটা। বেলা দুটোরও পর পর্যন্ত ডাইনে পাহাড়ের সার চলছে নদীর প্রায় পাড় ঘেঁষে। নিবিড বনে ঢাকা পাহাড়; হঠাৎ মাঝে মাঝে এক-একটা পাহাড়ের খানিকটা অনাবৃত কালে পাথরে মোড়া, প্ৰকাণ্ড ঐরাবতের পাশের মতো। এক সার পাহাড়ের পিছনে আর-এক সার তারপর আবার এক সার, দূরে দূরে আরও সব সারের মাথা দেখা যাচ্ছে, অতি পাতলা নীল ওড়নার মতো ফিকে নীল কুয়াশায় Tাকা। এক জায়গায় একটা পাহাড় তার সঙ্গীদের ছেড়ে আড়াআড়ি সোজা চলে এসেছে জলের মধ্যে, নদীর সঙ্গে পরিচয় নিবিড় করতে। উলটোদিকের পাড় একটা চরের জিহ্বা অনেকদূর নদীর মধ্যে এগিয়ে দিয়েছে। এ জায়গাটা স্টিমার পর হল অতি ধীরে ও সাবধানে। পাশ দিয়ে যাবার সময় নদীর এই দুঃসাহসী প্রণয়ীর রূপটি দেখতে পেলাম। প্রকাণ্ড প্ৰকাণ্ড পাথরে মোড়া পা, তার উপর পালিশ-কালো পাথরের চওড়া বুক খাড়া উঠে গেছে, রুদ্ধদুয়ার মন্দিরের কপাটের মতো।

বাঁদিকের পাহাড় সব দূরে দূরে। তৃণলেশহীন উচু চর চলেছে মাইলের পর মাইল— ব্ৰহ্মপুত্রের তরঙ্গলাঞ্ছনা পাশে আঁকা। অনুজ্জ্বল রৌদ্রে মনে হচ্ছে যেন চুনারি পাথরে তৈরি। আজও আকাশে মেঘ আছে, তবে রোদকে ঢাকতে পারেনি, শুধু নিষ্প্রভ করেছে।

ডানদিকের পাহাড়ের প্রাচীরটা যখন একটু একঘেয়ে বোধ হচ্ছে এমন সময় হঠাৎ পাহাড়

গেল দূরে সরে। পূর্ব-বাংলার শীতের নদীর পরিচিত রূপটি ফুটে উঠল। এখানে ওখানে ছড়ানো চরের শুভ্ৰ বালু কেটে কালো নীল জলের ধারা, দিকচক্রবালে গাছের ঘন সবুজ রেখা।

বেলা পড়ে আসছে; কেবিনের সামনে বেতের কুর্সিতে রোদে বসে আছি। সম্মুখে একটা গোল চর, চারদিকে নীল পাহাড়; যাঁরা ছিল নদীর পাশে, বাঁেক ঘুরে মনে হচ্ছে তাঁরা যেন নদীর মাঝ থেকে উঠেছে। একখণ্ড কালো মেঘ। সূর্যকে আড়াল করেছে–রুপালি জরির পাড়-দেওয়া নীলাম্বরীর আঁচল; মাঝখানে একটা চোখ-ঝলসানো গোল ফুটো দিয়ে নীল আকাশ দেখা যাচ্ছে; নদীতে রঙের স্রোত। সব মিলে মনে হচ্ছে যেন টার্নারের একখানা छदि।

একটা চরের ওপারে নদীর মধ্যে সূৰ্য অস্ত গেল; আগুনের প্রকাণ্ড গ্লোব। ঘড়িতে পাঁচটা ছ’ মিনিট। অনেকটা পুবে চলে এসেছি। শুক্রবার দিন সূৰ্যাস্তের সময় ঘড়িতে ছিল পাঁচটা পনেরো মিনিট। তবে আমার এ হাতঘড়িকে বৈজ্ঞানিক পৰ্যবেক্ষণের ভিত্তি করা চলে না। ওর তিনদিনের গতিবিধির ফল। অনেক সময় চমকপ্ৰদ।

স্তব্ধ ব্ৰহ্মপুত্রের বুকের উপর সন্ধ্যা নেমে এল। পুবে প্রতিপদের সোনালি চাঁদ, পশ্চিম-আকাশে বৃহস্পতি জ্বলজ্বল করছে।

Category: নদীপথে
পূর্ববর্তী:
« ০২. মুলতানি স্টিমার
পরবর্তী:
০৪. ইন্দ্র ফ্ল্যাট, তেজপুর »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑