ঋগ্বেদ ০৬।১৭

ঋগ্বেদ ০৬।১৭
ঋগ্বেদ সংহিতা । ৬ষ্ঠ মণ্ডল । সূক্ত ১৭
ইন্দ্র দেবতা । ভরদ্বাজ ঋষি ।

১ ! হে প্রচণ্ড বলশালী ইন্দ্ৰ ! তুমি যে সোমপান করিবার নিমিত্ত পণিগণ কর্তৃক অপহৃত গোসমূহ প্রকাশিত করিয়াছিলে, অঙ্গিরাগণ কর্তৃক স্তূয়মান হুইয়া সেই সোমরস পান কর। হে শত্রুনিধনকারী বজ্রপাণি ! তুমি বলসম্পন্ন হইয়। অখিল বিঘ্নকারী শক্রকে সংহার করিয়াছ ।
২ । হে নীরস সোমপায়ী, রক্ষণকারী, মনোজ্ঞহনু ও স্তোতৃগণের কামপূরক ইন্দ্র ! তুমি এই সোমরস পান কর। কে গোত্রভিং, বজ্রধর, অশ্বনিয়ন্তা ইন্দ্ৰ ! তুমি আমাদিগকে বিবিধ অন্ন প্রদান কর।
৩। হে ইন্দ্র ! তুমি পুরাতন সোমের ভায় এই সোম পান কর। ইহ। তোমার হর্ষ উৎপাদন করুক। আমাদিগের স্তোত্র শ্রবণ কর এবং ইহা দ্বারা বৰ্দ্ধিত হও । স্বৰ্য্যকে প্রকাশিত কর, আমাদিগকে অন্ন ভোজন করাও, আমাদিগের শক্রগণকে সংহার কর এবং পণিগণকর্তৃক অপহৃত ধেনুবৃন্দ প্রকাশিত কর ।
৪। হে অন্নসম্পন্ন ইন্দ্ৰ ! তুমি দীপ্তিশালী, এই সমস্ত পীত মাদক সোমরস তোমাকে বিশেষরূপে অভিবিক্ত করুক। বলশালী তুমি সৰ্ব্বগুণে গুণবান, সমর্থ, বিচিত্র ও শত্রুনিধনকারী ; মদকর এই সকল সোমরস তোমার নিরতিশয় আনন্দ উৎপাদন করুক।
৫ । হে ইন্দ্ৰ ! তুমি সোমরস দ্বারা উল্লাসিত হইয়া নিবিড় তমো ভেদ করিয়া সূৰ্য্য ও উষাকে স্থাপিত করিয়াছ এবং স্বস্থান হইতে অবিচলিত ধেনুগণের চারিদিকে অবস্থিত মহা অদ্রি বিদারণ করিয়াছ।
৬। হে ইন্দ্ৰ ! তুমি নিজ জ্ঞান, কাৰ্য্য ও শক্তি দ্বারা অপরিণত গোসমূহে পরিণত দুগ্ধ অর্পণ করিয়াছ ; তুমি ধেনুগণের নির্গমনের নিমিত্ত দৃঢ় দ্বার সকল উদঘাটিত করিয়াছ ; তুমি অঙ্গিরাগণের সহিত সমবেত হইয়া গোষ্ঠ হইতে ধেনুবৃন্দ উন্মুক্ত করিয়াছ।
৭ । হে ইন্দ্ৰ ! মহৎকাৰ্য্যদ্বারা বিস্তীর্ণ পৃথিবী পূর্ণ করিয়াছ । তুমি বলশালী, তুমি বিশাল স্বৰ্গকে ধারণ করিয়া রহিয়াছ। তুমি পুরাতন মাতা ঋতের কন্যা ও দেবমাতা স্বর্গ ও পৃথিবী পোষণ করিতেছ।
৮। হে ইন্দ্র ! যৎকালে পাপিষ্ঠ বৃত্র দেবগণকে আক্রমণ করিয়াছিল, তখন সমস্ত দেবগণ যুদ্ধার্থ বলশালী তোমাকে আপনাদিগের অগ্ৰে অধ্যক্ষস্বরূপ স্থাপন করিয়াছিলেন । মরুৎগণ সংগ্রামে ইন্দ্রের সহায়তা করিয়াছিলেন ।
৯ । যৎকালে অল্প প্রদাতা ইন্দ্র আক্রমণকারী অহিকে বধ করিন্থ। মহানিদ্রায় অভিভূত করিলেন তৎকালে স্বর্গ ত্বদীয় বজ্র ও ক্রোধ এই উভয়ের ভয়ে অবসন্ন হইয়াছিল ।
১০ । হে প্রচও বলশালী ইন্দ্র । ত্বষ্টা তোমার জব্য সহস্ৰধার ও শতপৰ্ব্ব বজ্ৰনিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন। হে ঋজীব সোজপায়ী ইজ ! তদ্দারা তুমি উগ্ৰকাম, উদ্ধত প্রকৃতি, বিকট শব্দকারী আহিকে নিস্পিষ্ট করিয়াছ ।
১১ । হে ইন্দ্র । অখিল মরুৎগণ সম্প্রীতিভাজন হইয়া তোমাকে স্তোত্র দ্বারা বৰ্দ্ধিত করে, তোমার জন্য পূষা ও বিষ্ণু শত মহিষ পাক করুন (১) এবং মদকর শত্রুনাশক সোমপুর্ণ তিনটা নদী প্রাবাহিত হউক।
১২ । হে ইন্দ্ৰ ! তুমি বৃত্র কর্তৃক সমাচ্ছাদিত নদী সকলের প্রকাও বারিরাশি উন্মুক্ত করিয়াছ ; তুমি জলরাশি মুক্ত করিয়াছ। তুমি সেই সমস্ত নদীকে নিম্নপথে প্রবাহিত করিয়াছ ; তুমি বেগবান সলিলরাশিকে সমুদ্রে লইয়া গিয়াছ ।
১৩ । হে ইন্দ্র । এইরূপে তুমি সমস্ত কার্য্যের অনুষ্ঠানকারী, ঐশ্বৰ্য্যশালী, মহান, ওজস্বী, ক্ষয় রহিত, বল প্রদাতা, শোভন সন্ততিমান অস্থধারী ও বজ্ৰধর ; তোমাকে আমাদিগের নবীন স্তোত্র আমাদিগের রক্ষা করণে প্রবৰ্ত্তিত করুক ।
১৪। হে ইন্দ্র । আমরা দীপ্তিসম্পন্ন ও মেধাবী ; তুমি আমাদিগকে বল, পুষ্টি, অন্ন ও ধন লাভের নিমিত্ত আশ্রয় প্রদান কর । পরিচারকগণের সহিত ভরদ্বাজকে স্তবকারী পুত্রপৌত্রাদি প্রদান কর এবং ভবিষ্যতে আমাদিগের রক্ষক হও ।
১৫। আমরা যেন এই স্তুতিদ্বারা দীপ্তিশালী ইন্দ্র কর্তৃক প্রদত্ত অন্ন লাভ করি, আমরা যেন উংকৃষ্ট পুত্রপৌত্রাদিসম্পন্ন হইয়া শত হেমন্ত সুখভোগ করি ।

————————–
(১) এখানেও মহিষ পাকের উল্লেখ আছে ।