কৰ্ণ : সংবেদনার জটিলতা
দ্রোণের মৃত্যুর পর দুৰ্যোধন তাঁর পূর্ব প্রতিজ্ঞা মতো সেনাপতি পদে বরণ করলেন কর্ণাকে। যুদ্ধের ষোড়শ ও সপ্তদশ দিনের সেনাপতি কর্ণ। কৌরব পক্ষে যখন মহাভারত রচনা হচ্ছিল, অর্থাৎ কৌরব রাজত্বে ভাটচারণরা যখন যুদ্ধের সময় গান বাঁধছিলেন ও গাইছিলেন, তখন স্বভাবতই সে সব গানের বিষয়বস্তু ছিল কৌরবদেরই যশোগাথা। এই কৌরবপক্ষীয় মহাকাব্যের নায়ক ছিলেন কর্ণ। পৃথিবীর সব প্রাথমিক মহাকাব্যেরই নায়ক সূর্যের পুত্র, কর্ণও তাই; এবং তাঁদের মতোই শৈশবে পরিত্যক্ত, তাদের মতো বীর ও উদার। কর্ণের এই উদারতার সুযোগ নিয়ে ব্রাহ্মণবেশী ইন্দ্র কর্ণের সহজাত কবচকুণ্ডল চেয়ে নিয়েছিলেন, বিনিময়ে কৰ্ণ একটুী অস্ত্র চেয়ে নেন।(১)
জন্মক্ষণে কৰ্ণকে কুন্তী পেটিকায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন, সারথিকুলের অধিরথ ও রাধা। তুলে নিয়ে লালন করেন, দীর্ঘকাল পর্যন্ত কৰ্ণ তাঁদেরই পিতামাতা বলে জ্ঞান করতেন।(২) ধৃতরাষ্ট্রের সভায় এসে অস্ত্রশিক্ষা করেন দ্রোণাচার্যের কাছে, বন্ধুত্ব হয়। দুৰ্যোধনের সঙ্গে। কৈশোরের প্রান্তে পরশুরামের কাছে নিজেকে ভৃগুবংশীয় ব্রাহ্মণ বলে পরিচয় দিয়ে ব্রহ্মাস্ত্র শিক্ষা করতে যান, তখনই সম্পূর্ণ ভুল করে গোহত্যা করে ফেলেন এবং অভিশপ্ত হন: যুদ্ধের শেষে তার রথের চাকা বসে যাবে এবং সেই অবসরে প্রতিপক্ষ তাকে হত্যা করবে।’(৩) পরশুরাম কর্ণের কোলে মাথা রেখে একদিন ঘুমোচ্ছিলেন, তখন অলৰ্ককীট কর্ণের উরুতে দর্শন করে, রক্তপাত করে এবং দংশন করতেই থাকে। রক্তাক্ত উরু নিয়ে কৰ্ণ অবিচলিত নিশ্চল ভাবে বসে থাকেন। ঘুম ভেঙে সব দেখে পরশুরাম নিশ্চিত বুঝতে পারলেন, যে কৰ্ণ পরিচয় গোপন করে অস্ত্রবিদ্যা অর্জন করতে এসেছেন, আসলে তিনি ক্ষত্ৰিয়; কারণ কোনও ব্ৰাহ্মাণের এত শারীরিক সহনশীলতা থাকতে পারে না। তখন কৰ্ণ সব স্বীকার করলেন। পাঠকের সংশয় থেকে যায়, কারণ সে-সময়ে কৰ্ণ নিজেকে সূতপুত্র বলেই জানতেন, ক্ষত্ৰিয় পরিচয় তখনও প্রকাশিত হয়নি। পরশুরাম অভিশাপ দিলেন: অধীত অস্ত্রবিদ্যা কার্যকালে কর্ণ স্মরণ করতে পারেন না।(৪) যৌবনের শুরুতেই এ-দুটি অভিশাপ নেমে এল কর্ণের জীবনে।
কর্ণের জীবনের এই ছোট উপাখ্যানটি এক দিকে অত্যন্ত মর্মবিদারক, কারণ ক্ষত্ৰিয় হিসেবে জন্মেও কোনও দিনই তিনি ক্ষত্রিয়োচিত কোনও সুযোগ সুবিধা পাননি। ক্ষত্ৰিয়সুলভ আগ্রহে পরশুরামের কাছে অস্ত্রশিক্ষার আশায় যান, কারণ ক্ষত্ৰিয়-বিদ্বেষী পরশুরাম ক্ষত্ৰিয় জানলে অস্ত্রবিদ্যা দেবেন না; তাই ব্ৰাহ্মণ পরিচয় দিয়েছিলেন। কৌরব গুরুরা সূতপুত্রকে অস্ত্রবিদ্যা দিতেন না। তাই এই ছলনা; কিন্তু পরশুরামের কাছে অস্ত্রবিদ্যা যা পেয়েছিলেন তাকে ছাপিয়ে উঠল এই নির্মম অভিশাপ–কার্যকালে প্রয়োগ করতে পারবেন না, এবং যুদ্ধ শেষে তাঁর রথের চাকা বসে যাবে। এই সাংঘাতিক অভিশাপে কৰ্ণ পাঠকের সহানুভূতি অর্জন করেন।
হস্তিনাপুরে অস্ত্রশিক্ষা শেষে অর্জুনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে উদ্যত হলে, অর্জুন রাজা বা রাজপুত্র ছাড়া কারও সঙ্গে যুদ্ধ করবেন না বলতে দুৰ্যোধন তৎক্ষণাৎ কর্ণকে অঙ্গরাজ্যে অভিষিক্ত করলেন। বিনিময়ে শুধু কর্ণের বন্ধুত্ব চাইলেন। এর পর প্রতিযোগিতায় কর্ণের অধিকার জন্মাল, কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই অধিরথ রাজসভায় উপস্থিত হলেন, এবং কৰ্ণ তাঁকে পিতৃসম্ভাষণ করে প্রণাম করলে ভীম ব্যঙ্গপরিহাস করলেন।’(৫) প্রতিযোগিতা হল না। দ্ৰৌপদীর স্বয়ংবর সভাতেও কৰ্ণ লক্ষ্যভেদ করতে উদ্যত হলে দ্ৰৌপদী স্পষ্টই বললেন তিনি সূতপুত্রকে বরণ করবেন না। নীরবে সরে আসতে হল কর্ণকে, কিন্তু অপমান ভোলেননি। ভেতরে ভেতরে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠলেন।
দ্যূতসভায় প্রতিশোধ নিলেন এবং তখনই কর্ণচরিত্র কলঙ্কিত হল, ক্ষোভ অপমানের অতিকৃত এবং বিকৃত প্রকাশে। যুধিষ্ঠির জুয়াতে দ্ৰৌপদীকে হারাবার পর কর্ণদুৰ্যোধন দু’জনেই হিংস্র বিদ্রুপে সভায় জোর করে টেনে আনা এক কুষ্ঠিত রাজকুলবধূকে অপমান করলেন।’(৬) মহাকাব্যের এইখানেই প্রথম কৌরব-পাণ্ডব যেন সুনীতি-দুনীতির প্রতিরূপ হয়ে উঠল, যদিও এর মধ্যেও কিছু কিছু অতিব্যাপ্তি অব্যাপ্তি থেকে গেল। দ্রৌপদীকে দাসী ও বহুভোগ্য বলে উল্লেখ ও সম্বোধন করে কর্ণ যখন আপনি উরুতে হাত রেখে অশালীন ইঙ্গিত করলেন, তখন ক্ষত্ৰিয় বীরের মর্যাদা থেকে আপনিই বিচ্যুত হয়ে নেমে এলেন এক অমার্জিত কামুকের পর্যায়ে। যদিও এর মধ্যে স্বয়ংবরসভায় প্রত্যাখ্যানের প্রতিশোধ নিহিত ছিল, তবু পাঠকের তো মনে হতেই পারে যে রাজকন্যা দ্ৰৌপদী সেকালের পরিপ্রেক্ষিতে যদি সূতপুত্রকে বিবাহ করতে অস্বীকার করে থাকেন, তবে তিনি তার অধিকারের মধ্যে থেকেই তা করতে পারেন। তার জন্যে তাঁকে জঘন্য সম্বোধনে বিশেষিত করে, প্রকাশ্য সভায় নারীকে, কুলবধূকে অপমান করতে পেরে শ্লাঘা বোধ করা ক্ষত্রিয়োচিত কাজ নয়, পুরুষোচিতও নয়।
না জেনে গোহত্যা করে মর্মান্তিক অভিশাপ পেতে হয়েছিল বলে অবশ্যই কর্ণের পক্ষে পাঠকের সহানুভূতি আসে। কিন্তু দ্ৰৌপদীকে এ ভাবে লাঞ্ছনা করায় পাঠকের মনে জুগুপ্তসা জন্মায়। তেমনই অভিমন্যুবধের সময়েও কর্ণ সক্রিয় ভাবেই উদ্যোগী ছিলেন, এটাও গৰ্হিত কাজ; তাই অভিমন্যুর পিতা অৰ্জ্জুন পরে যখন কর্ণপুত্র বৃষসেনকে হত্যা করে তখন পাঠকের উদ্যত সহানুভূতি প্রতিহত হয়।’(৭)
কর্ণের বীরত্ব, শৌর্য নিয়ে কোনও সংশয় নেই, সেখানে তিনি কারও চেয়ে কম নন। আজন্ম অবিচার দুর্বিচার ও অন্যায় লাঞ্ছনা পেয়েছেন; পরশুরামকে প্রতারণা করে যে বিদ্যা অর্জন করেছিলেন, নির্মম কীট-পদংশনে ওই রক্তপাতে অবিচলিত থেকে গুরুর নিদ্রাভঙ্গ ঘটতে দেননি, তবু ওই সাধনাও তার সম্পূর্ণই ব্যর্থ হল। সহজাত কবচ-কুণ্ডল একজন দেবতা প্রতারণা করে কেড়ে নিলেন। বিনিময়ে যে একািঘ্নী অস্ত্র দিলেন, ঘটনাচক্রে ঘটোৎকচকে বধ করতেই সেটা খরচ হয়ে গেল, তা দিয়ে কোনও পাণ্ডব বীরকে বধ করা হল না। সে দিক থেকেও সহজাত কবচকুণ্ডল দানের বিনিময়ে কৰ্ণ তেমন কিছুই পাননি; পেয়েছেন অনর্জিত অভিশাপ, দেবতার প্রতারণা, মানুষের কাছে সূতপুত্র পরিচয়ের লাঞ্ছনা, জন্মক্ষণে নিম্পরিচয়ের অন্ধকারে নির্বাসিন–শুধুমাত্র নিজের শৌর্য ও দুৰ্যোধনের সখ্য ছাড়া তাঁর জীবনে আর কোনও মূলধন ছিল না।
কিন্তু এই সব অবিচার ও অপমানের আঘাতে তাঁর জীবনের গভীরে কোথাও একটা কঠিন ইয়রে দানা বঁধেছিল। সেটা প্রকাশ হল প্রথমে কৃষ্ণ ও পরে কুন্তি যখন তাঁকে তাঁর যথার্থ পরিচয় জানিয়ে পাণ্ডব পক্ষে যোগ দিতে বলেন। কৃষ্ণকে তিনি ভবিষ্যদ্বক্তার মতোই আপন মৃত্যুর যথাযথ অগ্রিম বিবরণ দেন, এ-ও বলেন যে, কৌরব পক্ষে থাকলেও তিনি পাণ্ডবদের কল্যাণকামনা করেন; বলেন, যুধিষ্ঠিরকে যেন কোনও মতেই তার সত্য পরিচয় না জানানো হয়, তা হলে যুদ্ধই হবে না। কুন্তিকে বলেন, অধিরথ ও রাধা তাঁকে তাঁর সম্পূর্ণ অসহায় শৈশব থেকে লালন করেছেন, আজ সহসা তাঁদের পিতৃমাতৃ-পরিচয় অস্বীকার করা অন্যায় হবে। যেমন অন্যায় হবে দুৰ্যোধনের সখ্যকে পদদলিত করে কৌরবপক্ষ ত্যাগ করা: কুন্তিকে কথা দিলেন, এক অৰ্জ্জুন ছাড়া অন্য কোনও পাণ্ডবের তিনি ক্ষতি করবেন না, কাজেই তাঁকে ধরে, বা অৰ্জ্জুনকে ধরে, কুন্তির পাঁচটি পুত্রই থাকবে।’(৮) যে দিন কুন্তির মাতৃত্ব, সূর্যের পিতৃত্ব প্রকাশিত হল সে দিন তিনি সমাজে মাথা উঁচু করে থাকতে পারতেন। বাল্য-কৈশোর-যৌবনের যে-দিনগুলো কেটেছে অবহেলিত সূতপুত্র পরিচয়ে সেগুলো আড়ালে চলে যেতে পারত। কিন্তু, আজ যখন মৃত্যু আসন্ন, তখন পক্ষ পরিবর্তন করার প্রস্তাব তিনি কোনও ক্রমেই গ্রহণ করতে পারেন না। গ্রহণ করতে পারলে সুস্থতর চিত্তে ন্যায়পক্ষে যুদ্ধ করার শান্তি পেতেন, পেতেন। কুন্তিসূত ও জ্যৈষ্ঠ পাণ্ডবের গৌরব। কিন্তু কি অনায়াসে সে প্রলোভন জয় করলেন। হয়তো অনায়াসে নয়, মুহুর্তের জন্য প্রলুব্ধ হয়ে থাকতেও পারেন, কিন্তু কোথাও তার এতটুকু প্রকাশ রইল না। দৃঢ় ভাবে প্রলোভন জয় করলেন, পরিচয়ের গ্লানিমুক্তির সম্ভাবনাকে প্রত্যাখ্যান করলেন। যুদ্ধশেষে কুন্তি যখন যুধিষ্ঠিরকে বললেন কর্ণের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করতে, কারণ তিনিই জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব, তখন যুধিষ্ঠির ভর্ৎসনা করলেন কুন্তিকে, সক্ষোভে বললেন এই না-জানানোটা কুন্তির পক্ষে খুবই গৰ্হিত কাজ হয়েছে। কিন্তু কর্ণের এ প্রলোভন-জয় তাঁর চরিত্রকে অস্নান ও ভাস্বর করে তোলে।
শেষ কালে না জেনে তার গাভী হত্যার জন্য, সেই ব্রাহ্মণের সম্পূর্ণ অন্যায় অভিশাপ ফলল; রথের চাকা কাদায় বসে গেল, মহাশক্তিশালী বীর কোনও মতেই টেনে তুলতে পারলেন না। উদ্যোগপর্বে কৌরব পাণ্ডব উভয়েই যুদ্ধ সম্বন্ধে কয়েকটা সাধারণ নীতি স্বীকার করেছিলেন; তার মধ্যে একটা ছিল, প্রতিপক্ষ সময় চাইলে সময় দিতে হবে, এমনকী এ ভাবে বিপদে পড়লে তাকে সাহায্যও করতে হবে। সাহায্য পাওয়া দূরে থাক, সময় চেয়েও পেলেন না। তাঁর মৃত্যুর পুরো ব্যাপারটা আগাগোড়াই অন্যায়। ব্রাহ্মাণের শাপ সম্পূর্ণ অন্যায়, সেটা ফলে যাওয়াও অন্যায়; সময় চেয়ে না পাওয়াটা পাণ্ডবদের দিক থেকে গৰ্হিত কাজ, অসহায় বিপন্ন বীরের সংকটের সময়ে তাকে বধ করাও অন্যায়। কাজেই অন্যান্য প্রধান কৌরব বীরের মতো কর্ণও অন্যায়-সমরেই প্রাণ দিলেন। এ মুহুর্তে পাঠকের পুরো সহানুভূতিই তার প্রতি ধাবিত হয়, কোনও দ্বিধা থাকে না। কিন্তু একটু দূরে দাঁড়িয়ে ভাবলে মনে আসে, দুৰ্যোধনের সঙ্গে পরামর্শ করে আৈিকশোর পাণ্ডবদের ক্ষতির সব ষড়যন্ত্রে কর্ণ অংশগ্রহণ করেছেন, জতুগৃহদাহের ব্যাপারেও তাঁর সক্রিয় সহায়তা ছিল। দ্ৰৌপদীর লাঞ্ছনা। অমানবিক, অপুরুষোচিত, তাতে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল, এ দিক থেকে তাঁর বধ ও বিনাশ পাণ্ডবদের করণীয়ই ছিল। আবার তারও পিছনে যখন ভাবি যে, স্বয়ংম্বর সভায় দ্ৰৌপদী যে-কারণে তাকে অপমান করেন সে কারণটাই তো মিথ্যে, কৰ্ণ তো সত্যিই সূতপুত্র নন, পাণ্ডবদের মতো ‘দেবপুত্রই অস্ত্রীপরীক্ষার দিন যদি অধিরথ সভায় প্রবেশ করা মাত্রই কর্ণ উঠে দাঁড়িয়ে পিতৃসম্ভাষণ ও প্রণাম না করতেন তা হলে একটা প্রকাশ্য গৌরবের অংশভাক হতে পারতেন। কিন্তু পরিণাম জেনেও তিনি অকৃতজ্ঞ বা অমানবিক আচরণ করেননি। সে দিন ভীমের তীক্ষু বিদ্রুপের ভিত্তিটাই ছিল মিথ্যে, তিনি অধিরথের পুত্র সত্যিই তো ছিলেন না। মানবিক অহংকারের বশে তিনি বৃদ্ধ অধিরথকে পিতার প্রাপ্য সম্মান দিলেন, কারণ এই কৰ্ণই বলেছিলেন:
সূতো বা সূতপুত্রো বা যে বা কো বা ভবাম্যহম।
দৈবায়ত্তং কুলে জন্ম মদায়িত্তং তু পৌরুষম।
সারা জীবন আপনি শৌর্যের আসন ছাড়া পায়ের নীচে আর কোনও খাঁটি জমি পাননি।
একটা সম্পূর্ণ মিথ্যে কারণের অভিশাপ ফলল প্রতিপক্ষের অন্যায় আচরণের সাহায্যে। জীবনে যা কিছু অন্যায় করেছিলেন–এবং তার পরিমাণ এবং সংখ্যা কম হলেও গুরুত্ব কম নয়–তার পুরো মূল্য শোধ করে দিলেন অন্যায় সমরে ওই মুহুর্তে সম্পূর্ণ নিরাপরাধ অবস্থায় প্রাণ দিয়ে। এবং যেহেতু কৌরবপক্ষে রচিত মহাভারতের তিনিই ছিলেন নায়ক, তাই নায়কের মৃত্যুতে যে প্রতিক্রিয়া পাঠকের মনে হওয়ার কথা সেই অবিমিশ্র শ্রদ্ধা করুণা সহানুভূতি তিনি এ মুহুর্তে পুরোপুরি আকর্ষণ করেন। পাঠক সম্পূৰ্ণ ভাবে অবহিত থাকেন যে, বহু বিরুদ্ধ শক্তির এককালীন সমাপতনের ফলেই কর্ণের মৃত্যু ঘটতে পারল, কারণ মহাকাব্যের প্রথম পর্যায়ের সূর্য-পুত্র এই নায়কের মৃত্যুও তাকে এক অগ্রণী বীরের মর্যাদায় মণ্ডিত করল। তার সারা জীবনের বহু সন্ধিক্ষণে পাঠকের নানা মিশ্র ও বিরূপ সংবেদনা যেন মৃত্যুর মোহানায় এসে বৃহৎ একটি গৌরবে লীন হয়ে গেল।
—————
১. আদি; (১০৪.১৮-২০)
২. অরণ্যক; (২৯৩:১০, ১৩-১৪)
৩. কর্ণ; (২৯:৩১)
৪. কর্ণপৰ্ব; (২৯.৬)
৫. আদি; (১.১৮৬.২২)
৬. সভাপর্ব; (৬০.৩৮)
৭. সভাপর্ব; (৬১.৩৫; ৬৩.১০,১১)
৮. কর্ণপৰ্ব; (৬২:৬০)
Leave a Reply