ঋগ্বেদ ০৬।০৯

ঋগ্বেদ সংহিতা ।  ৬ মণ্ডল । ৯ সুক্ত

বৈশ্বানর অগ্নি দেবতা। ভরদ্বাজ ঋষি ।

১। কৃষ্ণবর্ণ রাত্রি এবং শুভ্রবর্ণ দিবস জ্ঞানগম্য স্ব স্ব প্রবৃত্তি দ্বারা অখিল জগৎ রঞ্জিত করিয়া নিয়ত পরিবর্ত্তিত হইতেছে। বৈশ্বানর অগ্নি রাজার ন্যায় প্রকাশিত হইয়া দীপ্তিদ্বারা তমোনাশ করেন ।

২ । আমি তন্তু (ট্যনাসূত্র) অথবা ওতু (পড়্যান সূত্র) জানি না, কিম্বা সতত চেষ্টাদ্বারা যে বস্ত্র বয়ন করে তাহার কিছুই অবগত নহি । ইহলোকে অবস্থিত পিতাকর্তৃক উপদিষ্ট হইয়া কাহার পুত্র অন্য জগতের বক্তব্য বাক্য সকল বলিতে সমর্থ (১) ? ।

৩ । একমাত্র সেই বৈশ্বানর অগ্নি তন্তু এবং ওতু অবগত আছেন। তিনি উচিত অবসরে বক্তব্য সকল বলেন। বারিরক্ষক, ভূবিহারী অগ্নি অন্তরিক্ষে অন্য মূৰ্ত্তি অর্থাৎ সূৰ্য্য রূপ দ্বারা অখিল জগৎ প্রকাশিত করিয়৷ পরিদৃশ্যমান এই সমস্ত ভূত অবগত আছেন।

৪ । এই বৈশ্বানর অগ্নি আদ্য হোতা ; হে মানবগণ ! তোমরা এই অগ্নিকে ভজন কর । অক্ষয় এই অগ্নি এই নশ্বর দেহে অবস্থান করেন। নিশ্চল সৰ্ব্বব্যাপী, অক্ষয় এই অগ্নি শরীর ধারণপূৰ্ব্বক জাত ও বদ্ধিত হন।

৫ । চিত্ত অপেক্ষা অধিকতর বেগশালা, নিশ্চল জ্যোতিঃ সুখের পথ প্রদর্শন করিবার নিমিত্ত সমুদয় জঙ্গম জীবে অন্তনিহিত আছে। অখিল দেবগণ একমত ও সমান প্রজ্ঞ হইয়া:সম্মানসহকারে প্রধান কৰ্ম্ম কৰ্ত্ত বৈশ্বtনরের অভিমুখবর্তী হয়েন।

৬ । ত্বদীয় গুণ শ্রবণ করিবার নিমিত্ত আমার কর্ণদ্বয় ও ত্বদীয় রূপ দর্শনার্থ আমার চক্ষু ধাবিত হইতেছে । হৃদয়ে যে বুদ্ধিস্বরূপ জ্যোতিঃ নিহিত আছে তাহাও ত্বদীয় স্বরূপ অবগত হইবার জন্য সমুৎসুক হইয়াছে। দূরস্থ বিষয়ক, চিন্তা ব্যাপৃত আমার হৃদয় তাহার অভিমুখে ধাবিত হইতেছে। আমি বৈশ্বানরের কিরূপে স্বরূপ বর্ণন করিব ? কিরূপেই বা তাহাকে হৃদয়ে ধারণ করিব ?

৭ । হে বৈশ্বানর। অখিল দেবগণ ভীত হইয়। অন্ধকার অবস্থিত তোমাকে নমস্কার করেন। বৈশ্বানর .যেন নিজ রক্ষাদ্বার। আমাদিগকে রক্ষা করেন । অক্ষয় অগ্নি যেন নিজ রক্ষাদ্বারা আমাদিগকে রক্ষা করেন।

———————–

( ১ ) সায়ণ বলেন এস্থলে তন্তু শব্দদ্বারা বৈদিক ছন্দঃসমূহ, ওতু শব্দদ্বার যজুঃসমূহ ও যাগকার্য্য এবং উভয়ের সংঘটনদ্বারা বস্ত্র অর্থাৎ যজ্ঞ বুঝিতে হইবে। ঋকের শেষার্দ্ধের তাৎপর্য্য এই ঃ—কোনও মনুষ্যই যাগরহস্য বলিতে সমর্থ নহেন, একমাত্র সূর্য্য বলিতে পারেন, কারণ তিনি নিজ পিতা অগ্নিদ্বারা তদ্বিষয়ে শিক্ষিত হইয়াছেন।